Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান-৫ম




পরিচ্ছেদঃ ৭৭. আখিরাতে মু'মিনগন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে


৩৪৫.    নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী, আবূ গাসনান আল মিসমাঈ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ দুটি জান্নাত এমন যে, এগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত এমন, যেগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি। “আদন” নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর মহিমার চাঁদর ব্যতীত আর কোন অন্তরায় থাকবে না।
৩৪৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মায়সারা (রহঃ) ... সুহায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জান্নাতিগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা কি চাও আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবেঃ আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেননি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেননি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা আবরণ তুলে নিবেন। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেওয়া হয়নি।
৩৪৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু সালামা (রাঃ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তঁবে এতে তিনি আরও বলেন, “তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ (অর্থ) ‘যারা ভাল করে তাদের জন্য আছে মঙ্গল এবং আরো অধিক কিছু। ”
৩৪৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকেি বর্ণিত যে, কতিপয় সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে তোমাদের পরস্পরের মাঝে কি ধাক্কাধাক্কি কি হয়? সাহাবীগণ বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের পরস্পরের কি ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয়? তাঁরা বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তদ্রূপ তোমরাও তাঁকে দেখবে। 

কিয়ামত দিবসে আল্লাহ সকল মানুষকে জমায়েত করে বলবেন, পৃথিবীতে তোমাদের যে যার ইবাদত করেছিলে আজ তাঁকেই অনুসরণ কর। তখন সূর্যের উপাসক দল সূর্যের পেছানে, চন্দ্রের উপাসক দল চন্দ্রের পেছনে এবং দেব-দেবীর উপাসকদল দেব-দেবীর পিছনে চলবে। কেবল এ উম্মাত অবশিষ্ট থাকবে। তন্মধ্যে মুনাফিকরাও থাকবে। তখন আল্লাহ তায়াআলা তাদের কাছে এমন আকৃতিতে উপস্থিত হবেন যা তারা চেনে না। তারপর (আল্লাহ তা-আলা) বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক (সূতরাং তোমরা আমার পেছনে চল)। তারা বলবে, নাউযূবিল্লাহ। আমাদের প্রভূ না আসা পর্যন্ত আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। আর তিনি যখন আসবেন, তখন আমরা তাঁকে চিনতে পারব। 

এরপর আল্লাহ তায়াআলা তাদের কাছে তাদের পরিচিত আকৃতিতে আসবেন, বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভূ। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রভূ। এ বলে তারা অনুসরণ করবে। ইত্যবসরে জাহান্নামের উপর দিয়ে সিরাত (রাস্তা) স্থাপন করা হবে। আর আমি ও আমার উম্মাতই হব প্রথম এ পথ অতিক্রমকারী। সেদিন রাসুলগণ ব্যতীত অন্য কেউ মুখ খোলারও সাহস করবে না। আর রাসুলগণও কেবল এ দুআ করবেনঃ হে আল্লাহ! নিরাপত্তা দাও, নিরাপত্তা দাও। আর জাহান্নামে থাকবে সাদান বৃক্ষের কাটার মত অনেক কাঁটাযুক্ত লৌহ দন্ড। তোমরা সাদান বৃক্ষটি দেখেছ কি? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা সাদান বৃক্ষের কাটার মতই, তবে সেটা যে কত বিরাট তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জাননা। মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী পাকড়াও করা হবে। কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে, আর কেউ আমলের শাস্তি ভোগ করবে যতদিন না তারা নাজাত পেয়েছে। এরুপে বান্দাদের মধ্যে যখন আল্লাহ তা’আলা বিচারকার্য সমাপ্ত করবেন, এবং দয়া করে কিছু জাহান্নামীকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা করবেন, তখন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যেন কালিমায় বিশ্বাসীদের মধ্যে যাদের উপর আল্লাহ জন্য রহম করতে চাইবেন এবং যারা আল্লাহর সাথে শিরক করেনি, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। 

অনন্তর ফেরেশতাগণ জান্নাতীদের শনাক্ত করবেন। তারা সিজদার চিহ্নের সাহায্যে তাদের চিনবেন। কারণ অগ্নি মানুষের সবকিছু ভস্ম করে দিলেও সিজদার স্থান অক্ষত থাকবে। আল্লাহ তায়াআলা সিজদার চিহ্ন নষ্ট করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। মোট কথা ফেরেশতাগণ এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। তাদের দেহ আগুনে দগ্ধ। তাদের উপর আবে-হায়াত (সঞ্জীবনী পানি) ঢেলে দেওয়া হবো তখন তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমনভাবে শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে উঠে। আল্লাহ তা'আলা বান্দাদের বিচার সমাপ্ত করবেন। শেষে এক ব্যাক্তি থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল হবে জাহান্নামের দিকে। এই হবে সর্বশেষ জান্নাতী। 

সে বলবে, হে প্রভূ! (অনুগ্রহ করে) আমার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিন। জাহান্নামের উত্তপ্ত বায়ু আমাকে ঝলসে দিচ্ছে; এর লেলিহান শিখা আমাকে দগ্ধ করে দিচ্ছে আল্লাহ যতদিন চান ততদিন পর্যন্ত সে তাঁর কাছে দুআ করতে থাকবে। পরে আল্লাহ বলবেন, তোমার এ দুআ কবুল করলে তুমি কি আরো কিছু কামনা করবে? সে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গীকার করে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তা’আলা তার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। তার চেহারা যখন জান্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, আর জান্নাত তার চোখে ভেসে উঠবে, তখন আল্লাহ যতদিন চান সে নীরব থাকবে। 

পরে আবার বলবে, হে প্রতিপালক! কেবল জান্নাতের তোরণ পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিন! আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি না কথা দিয়েছিলে যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তাছাড়া আর কিছু চাইবে না। হতভাগা, তুমি তো সাংঘাতিক ওয়াদাভঙ্গকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! এই বলে মিনতি জানাতে থাকবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি যা চাও তা যদি তাই দেই, তবে আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তখন তার থেকে এ বিষয়ে ওয়াদা এবং অঙ্গীকার নিবেন। এরপর তাঁকে জান্নাতের তোরণ পর্যন্ত এগিয়ে আনা হবে। 

এবার যখন সে জান্নাতের তোরণে দাড়াবে, তখন জান্নাত সুনিশ্চিত হয়ে তাঁর সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। সে জান্নাতের সুখ-সমূদ্ধি দেখতে থাকবে। সেখানে আল্লাহ যতক্ষন চান সে ততক্ষন চুপ করে থাকবে। পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি না সকল ধরনের ওয়াদা ও অঙ্গীকার করে বলেছিলে, আমি যা দান করেছি, এর চাইতে বেশি আর কিছু চাইবে না? দূর হতভাগা! তুমি তো ভীষণ ওয়াদাভঙ্গকারী। সে বলবে, হে আমার রব! আমি যেন সৃষ্টির সবচেয়ে দুর্ভাগা না হই। সে বারবার দুআ করতে থাকবে। পরিশেষে এক পর্যায়ে সে আল্লাহকে হাসিয়ে ফেলবেন। আল্লাহ তা’আলা হেসে উঠে বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাকে বলবেন, যা চাওয়ার চাও। তখন সে তার সকল কামনা চেয়ে শেষ করবে। এরপর আল্লাহ নিজেই স্বরণ করিয়ে বলবেন, অমুক অমূকটা চাও। এভাবে তার কামনা শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেওয়া হলো। 

আতা ইবনু ইয়াযীদ বলেন, আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের কোন কথাই রদবদল করেননি। তবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন এ কথা উল্লেখ করলেন, “আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে এসব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেওয়া হলো” তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! বরং তাসহ আরো দশগুন দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘এর সমপরিমাণ’- এ-শব্দ স্মরণ রেখেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘আরো দশগুন’- এ শব্দ সংরক্ষিত রেখেছি। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) পরিশেষে বলেন, এ ব্যাক্তি হবে জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী ব্যাক্তি।
৩৪৯.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আদ দারিমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব?... এরপর রাবী ইবরাহীম ইবনু সা’দ বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।
৩৫০.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মান ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদেরকে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে এটিও ছিল। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের জান্নাতীকে বলা হবে যে, তুমি আকাঙ্ক্ষা কর। সে আকাঙ্ক্ষা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার যা আকাঙ্ক্ষা করার তা কি করেছ? সে বলবে, জ্বী! আল্লাহ বলবেন, যা আকাঙ্ক্ষা করেছ তা এবং এর অনুরুপ তোমাকে প্রদান করা হল।
৩৫১.    সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কতিপয় সাহাবী তাঁকে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি আরো বললেনঃ দুপূরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য অবলোকন করতে কি তোমাদের ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয়? সকলে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! না, তা হয় না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঠিক তদ্রুপ কিয়ামত দিবসে তোমাদের প্রতিপালককে অবলোকন করতে কোনই বাধার সৃষ্টি হবে না। সেদিন এক ঘোষনাকারী ঘোষণা দিবে, “যে যার উপাসনা করতে, সে আজ তার অনুসরণ করুক”। 

তখন আল্লাহ ব্যতীত যারা অন্য দেব-দেবী ও বেদীর উপাসনা করত, তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না ; সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সৎ হোক বা অসৎ যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তারাই কেবল অবশিষ্ট থাকবে এবং কিতাবীদের যারা দেব-দেবী ও বেদীর উপাসক ছিল না তারাও বাকি থাকবে। এরপর ইহুদীদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হবে! তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আল্লাহর পূত্র উযায়েরের। তাদেরকে বলা হবে মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন পত্নী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের খুবই পিপাসা পেয়েছে। আমাদের পিপাসা নিবারণ রুকন। প্রার্থনা শুনে তাদেরকে ইঙ্গিত করে মরীচিকাময় জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে। এর একাংশ আরেক অংশকে গ্রাস করতে থাকবে। তারা এতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। 

এরপর খৃষ্টানদেরকে ডাকা হবে, বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আল্লাহর পুত্র মসীহের উপাসনা করতাম। বলা হবে, মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন পত্নী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। জিজ্ঞেস করা হরে, এখন কি চাও? তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের দারুন তৃষ্ণা পেয়েছে, আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করুন। তখন তাদেরকেও (পানির ঘাটে যাবার) ইঙ্গিত করে জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে। একে মরীচিকার মত মনে হবে। এর এক অংশ অপর অংশকে গ্রাস করে নিবে। তারা তখন জাহান্নামে ঝাপিয়ে পড়তে থাকবে। শেষে মুমিন হউক বা গুনাহগার, এক আল্লাহর উপাসক ব্যতীত আর কেউ (ময়দানে) অবশিষ্ট থাকবে না। 

তখন আল্লাহ জন্য তাদের কাছে আসবেন। বলবেন, সবই তাদের স্ব স্ব উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে, আর তোমরা কার অপেক্ষা করছ? তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যেখানে আমরা বেশি মুখাপেক্ষী ছিলাম, সেই দুনিয়াতে আমরা অপরাপর মানুষ থেকে পৃথক থেকেছি এবং তাদের সঙ্গী হইনি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রভূ। মুমিনরা বলবে, “আমরা তোমার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি- আল্লাহর সঙ্গে আমরা কিছুই শরীক করি না। এই কথা তারা দুই বা তিনবার বলবে। এমন কি কেউ কেউ অবাধ্যতা প্রদর্শনেও অবতীর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলবেন, আচ্ছা, তোমাদের কাছে এমন কোন নিদর্শন আছে যদ্দ্বারা তাকে তোমরা চিনতে পার? তারা বলবে, অবশ্যই আছে। এরপর “সাক” উন্মোচিত হবে, তখন পৃথিবীতে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা করত, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা সিজদা করার অনুমতি দিবেন। আর যারা লোক দেখানো বা লোকভয়ে আল্লাহকে সিজদা করত, সে মুহূর্তে তাদের মেরুদন্ড শক্ত ও অনমনীয় করে দেয়া হবে। যখনই তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে তখনই তারা চিত হয়ে পড়ে যাবে। তারপর তারা মাথা তুলবে। 

ইত্যবসরে তারা আল্লাহকে প্রথমে যে আকৃতিতে দেখেছিল তা পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তিনি তার আসল রুপে আবির্তূত হবেন। অনন্তর বলবেন, আমি তোমাদের রব, তারা বলবে হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রতিপালক। তারপর জাহান্নামের উপর জিস্‌র (পূল) স্থাপন করা হবে। শাফায়াতেরও অমুমতি দেয়া হবে। মানুষ বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের নিরাপত্তা দিন। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল জিসর কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটি এমন স্থান, যেখানে পা পিছলে যায়। সেখানে আছে নানা প্রকারের লৌহ শলাকা ও কাঁটা, দেখতে নজদের নাদান বৃক্ষের কাঁটার মত। 

মুমিনগণের কেউ এ পথ পলকের গতিতে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ অশ্বগতিতে, কেউ উষ্ট্রের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ অক্ষত অবস্থায় নাজাত পাবে আর কেউ হবে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নাজাতপ্রাপ্ত। আর কতককে কাঁটাবিদ্ধ অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাঁদের ঐসব ভাইয়ের স্বার্থে আল্লাহর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে। তোমরা পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হও না। 

তারা বলবে, হে রব! এরা তো আমাদের সাথেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত, রোযা পালন করত, হাজ্জ (হজ্জ) করত। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দিবেনঃ যাও তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমন্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকবে। (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।) মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর পায়ের অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ অগ্নি ভস্ম করে দিয়েছে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। 

আল্লাহ বলবেন, পূনরায় যাও, যার অন্তরে এক দ্বীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন তারা আরও একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে, হে রব! অনুমতি প্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আন। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন, তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেনঃ আবার যাও, যার অন্তরে অণূ পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা বলেছিলেন, তাদের কাউকেই রেখে আসিনি। 

সাহাবী আবূ সাঈদ আল খূদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি এ হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে না কর তবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটিও তিলাওয়াত করতে পারঃ (অর্থৎ আল্লাহ অণূ পরিমাণও জুলুম করেন না এবং অণূ পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুন করে করে দেন এবং তাঁর কাছ থেকে মহা-পুরস্কার প্রদান করেন।” (৪ঃ ৪০) এরপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেনঃ ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবল আরহামূর রাহিমীন-পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে একু মুঠো তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে, যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি, এবং আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ মুখের ‘নাহরুল হায়াতে’ ফেলে দেয়া হবে। তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়ালে কোন শস্য দানা অংকুরিত হতে দেখনি? যেগুলো সূর্য কিরণের মাঝে থাকে সেগুলো হলদে ও সবুজ রুপ ধারণ করে আর যেগুলো ছায়ামুক্ত স্থানে থাকে, সেগুলো সাদা হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! মনে হয় আপনি যেন গ্রামাঞ্চলে পশু চরিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপর তারা নহর থেকে মূক্তার মত ঝকঝকে অবস্থায় উঠে আসবে এবং তাদের গ্রীবাদেশে মোহরাঙ্কিত থাকবে, যা দেখে জান্নাতিগণ তাদের চিনতে পারবেন। এরা হলো ‘উতাকাউল্লাহ’ আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। ”আল্লাহ তায়ালা সৎ আমল ব্যতীতই তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন।

এরপর আল্লাহ তাদেরকে লক্ষ করে বলবেনঃ যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা কিছু দেখছ সবকিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে রব! আপনি আমাদেরকে এতই দিয়েছেন যা সৃষ্ট-জগতের কাউকে দেননি। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের জন্য আমার কাছে এর চেয়েও উত্তম বস্তু আছে। তারা বলবে, কি সে উত্তম বস্তু? আল্লাহ বলবেনঃ সে হল আমার সন্তুষ্টি। এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অন্তুষ্ট হবো না। 

ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ শাফা’আত সম্পর্কীয় এ হাদীসটি আমি ঈসা ইবনু হাম্মাদ যুগবা আল মিসরী-এর কাছে পাঠ করে বললাম, আপনি লায়স ইবনু সা’দ থেকে নিজে এ হাদীসটি শুনেছেন? আমি কি আপনার পক্ষ থেকে এ হাদীসটি এরুপ বর্ণনা করতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি ঈসা ইবনু হাম্মাদকে হাদীসটি এ সুত্রে শুনিয়েছি যে, ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ মেঘমূক্ত আকাশে সূর্য দর্শনে ভিড়ের কারণে তোমাদের কি কোন অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না...। এভাবে হাদীসটির শেষ পর্যন্ত তুলে ধরলাম। 

এ হাদীসটি হাফস ইবনু মায়সারা বর্ণিত হাদীসেরই অনুরুপ। তিনি بِغَيْرِ عَمَلٍ عَمِلُوهُ وَلاَ قَدَمٍ قَدَّمُوهُ এই অংশটূকুর পর فَيُقَالُ لَهُمْ لَكُمْ مَا رَأَيْتُمْ وَمِثْلُهُ مَعَهُ অর্থাৎ তোমাদের জন্য যা রয়েছে যা তোমরা দেখছ তা এবং তদসঙ্গে অনুরুপ আরও কিছু। আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, আমার কাছে রেওয়ায়েত পৌছেছে যে, “জিসর (সিরাত) চুল অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম ও তরবারি অপেক্ষা অধিক তীক্ষ্ণ। তা ছাড়া লায়সের হাদীসে فَيَقُولُونَ رَبَّنَا أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ বাক্যটি এবং এর পরবর্তী অংশটির উল্লেখ নেই। ঈসা ইবনু হাম্মাদ তা স্বীকার করেন।
৩৫২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসদ্বয়ের সনদের হাফস ইবনু সা’দের অনুররূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে শব্দগত কিছু বেশকম আছে।

পরিচ্ছেদঃ ৭৮. শাফায়াত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমান


৩৫৩.    হারুন ইবনু সাইদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতবাসীদেরকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাঁর রহমতেই তিনি যাকে ইচ্ছা তা করবেন। আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তারপর (ফেরেশতাদেরকে) বলবেনঃ যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমাণও ঈমান দেখতে পাবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনবে এবং অনন্তর ফেরেশতাগণ তাদেরকে দগ্ধ অঙ্গার অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এবং ‘হায়াত” বা ‘হায়া’, নামক নহরে নিক্ষেপ করবে। তখন তারা এতে এমন সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। তোমরা কি দেখনি, কত সুন্দররুপে সে শস্যদানা কেমনভাবে হরিদ্রাভ মাথা মোড়ানো অবস্থায় আংকুরিত হয়?
৩৫৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি দ্ব্যর্খহীনভাবে الْحَيَاةُ শব্দ উল্লেখ করেছেন। খালিদ বর্ণিত রেওয়ায়েতে এবং উহায়বের রেওয়ায়েতে كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِئَةٍ أَوْ حَمِيلَةِ السَّيْلِ বাক্যের উল্লেখ রয়েছে।
৩৫৫.    নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ আল খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে যারা প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামী, তাদের মৃত্যুও ঘটবে না এবং তারা পূনর্জীবিতও হবে না। তবে তন্মধ্যে তোমাদের এমন কতিপয় লোকও থাকবে, যারা গুনাহের দায়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এরপর আল্লাহ তা’আলা (তাদের উপর পতিত আযাবের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে) তাদেরকে কিছুক্ষন নির্জীব করে রেখে দিবেন। অবশেষে তারা পূড়ে সম্পূর্ণ অঙ্গার হয়ে যাবে। এ সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফাআতের অনুমতি হবে। তখন এদেরকে দলে দলে নিয়ে আসা হবে এবং জান্নাতের নহর গুলিতে ছড়িয়ে দেয়া হবে। পরে বলা হবে, হে জান্নাতীরা তোমরা এদের গায়ে পানি ঢেলে দাও! ফলত স্রোতবাহিত পানিতে গজিয়ে ওঠা শস্যদানার মত তারা সজীব হয়ে উঠবে। উপস্থিতদের মধ্যে একজন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন এককালে গ্রামে অবস্থান করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭৯. জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যাক্তি প্রসঙ্গ


৩৫৭.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আল হানযালী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। যে নিতান্ত হেঁচড়ে হেঁচড়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেনঃ যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে সেখানে আসবে। তার ধারণা হাব যে এটা পরিপূর্ণ। তাই ফিরে গিয়ে আল্লাহকে বলবে, হে প্রতিপালক! আমি জান্নাতকে পরিপূর্ন দেখলাম। আল্লাহ আবার বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে আবার এসে দেখবে, এ তো ভরপূর হয়ে আছে। তাই ফিরে গিয়ে আল্লাহকে বলবে, হে প্রতিপালক! এ তো ভরপূর হয়ে আছে। আল্লাহ পূনরায় বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাকে পৃথিবী ও পৃথিবীর দশগুন পরিমাণে প্রদান করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে নিয়ে কি ঠাট্টা করছেন। অথচ আপনি তো মহান রাজাধিরাজ! সাহাবী বলেন এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত হেসে উঠলেন যে তাঁর মাড়ির প্রান্তের দাঁতগুলোও প্রকাশিত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর ঘোষণা করা হবে, এ ব্যাক্তই জান্নাতের সর্বনিম্নস্তরের অধিবাসী।
৩৫৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ উদ্ধারপ্রাপ্ত লোকটিকে অবশ্যই আমি জানি। সে নিতম্ব হেঁচড়ে হেঁচড়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। তারপর তাকে বলা হবে যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করে দেখবে, লোকেরা পূর্বেই জান্নাতের সকল স্থান দখল করে রেখেছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার কি পূর্বকালের কথা স্মরণ আছে? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন, তুমি আমার কাছে কামনা কর। সে তখন কামনা করবে। তখন তাকে বলা হবে, যাও তোমার আশা পূর্ণ করলাম। সেই সাথে পৃথিবীর আরও দশগুন বেশি প্রদান করলাম। লোকটি হতভম্ব হয়ে বলবে, ওগো প্রতিপালক! আপনি আমাদের প্রভূ, আর আপনি আমার সাথে কৌতুক করছেন? সাহাবী বলেন, এ কথাটি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত প্রকাশিত হয়ে গেল।
৩৫৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সবার শেষে এক ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে হাটবে আবার উপূড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের আগুন তাকে ঝাপটা দেবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে, সে সত্তা কত মহিমাময়, যিনি আমাকে তোমা থেকে নাজাত দিয়েছেন। তিনি আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা পূর্বাপর কাউকেও প্রদান করেননি। এরপর তাঁর সম্মুখে একটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, (যা দেখে) সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহন করতে পারি এবং এর নিচে প্রবাহিত পানি থেকে পিপাসা নিবারণ করতে পারি। 

আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ হে আদম সন্তান! যদি আমি তোমাকে তা দান করি, তবে হয়তো তুমি আবার অন্য একটি প্রার্থনা করে বসবে। তখন সে বলবে, না, হে প্রভু! সে এর অতিরিক্ত আর চাইবে না বলে আল্লাহ তা’আলার কাছে অঙ্গীকার করবে এবং আল্লাহও তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে সবর করা যায় না। অতএব, আল্লাহ জন্য তাকে ঐ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে এর ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে। 

তারপর আবার একটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে; যেটি প্রথমটি অপেক্ষা অধিক সুন্দর। তা দেখেই সে প্রার্থনা করবে, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে এর নিকটবর্তী করে দিন যেন আমি তা থেকে পানি পান করতে পারি এবং এর ছায়া গ্রহণ করতে পারি। তারপর আর কিছুর প্রার্থনা করব না। আল্লাহ উত্তর দিবেনঃ আদম সন্তান! তুমি না আমায় কসম করে বলেছিলে আর কোনটি প্রার্থনা জানাবে না। তিনি আরো বলবেনঃ যদি আমি তোমাকে তার নিকটবর্তী করে দেই, তরে তুমি হয়তো আরও কিছুর জন্য প্রার্থনা করবে। সে আর কিছু চাইবে না বলে অঙ্গীকার করবে। আল্লাহ তা'আলা তার এ ওযর কবুল করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে যা দেখে সবর কবা যায় না। যাহোক তিনি তাকে এর নিকটবতী করে দিবেন। আর সে ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে। 

এরপর আবার জান্নাতের দরজার কাছে আরেকটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, এটি পূর্বের বৃক্ষদ্বয় অপেক্ষাও নয়নাভিরাম। তাই সে বলে উঠবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করতে ও পানি পান করতে পারি। আমি আর কিছু প্রর্থেনা করব না। আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার কাছে আর কিছু চাইবে না বলে কসম কর নি? সে উত্তরে বলবে, অবশ্যই করেছি। হে প্রভু! তবে এটই আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে সবর করা যায় না। তিনি তাকে এর নিকটবতী করে দিবেন। যখন তাকে নিকটবতী করে দেওয়া হবে, আর জান্নাতীদের কণ্ঠসূর তাঁর কানে ধ্বনিত হরে, তখন সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তোমার কামনা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? আমি যদি অেমাকে পৃথিবী এবং তার সমপরিমাণ বস্তু দান করি তবে কি তুমি পরিতৃপ্ত হবে? সে বলবে, হে প্রতিপালক! আপনি কৌতূক করছেন! আপনি তো সারা জাহানের প্রভূ। 

এ কথাটি বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ণনাকারী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হেসে ফেললেন। আর বললেন, আমি কেন হেসেছি তা তোমরা জিজ্ঞেস করলে না? তারা বলল, কেন হেসেছেন? তখন তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ হেসেছিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেন হাসছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এজন্য যে, ব্যাক্তিটির এ উক্তি “আপনি আমার সাথে কৌতূক করছেন, আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক? শুনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হেসেছেন বলে আমিও হাসলাম। যা হোক, আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তোমার সাথে কৌতুক করছি না। মনে রেখ, আমি আমার সকল ইচ্ছার ওপর ক্ষমতাবান।

পরিচ্ছেদঃ ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী


৩৬০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিম্নতম জান্নাতী ঐ ব্যাক্তি, যার মুখমন্ডলটি আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দিক থেকে সরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দিবেন। তার সামনে একটি ছায়াযুক্ত বৃক্ষ উদ্ভাসিত করা হবে। সে ব্যাক্তি প্রার্থনা জানাবে, হে প্রতিপালক। আমাকে এ বৃক্ষ পর্যন্ত এগিয়ে দিন। আমি এ ছায়ায় অবস্থান করতে চাই... এভাবে তিনি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেন। 

তবে এ হাদীসে يَا ابْنَ آدَمَ مَا يَصْرِينِي مِنْكَ এর উল্লেখ নেই। অবশ্য এতটুকু বলেছেন যে, আল্লাহ তাঁকে বিভিন্ন নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেনঃ এটা চাও। এভাবে যখন তার সকল আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেনঃ যাও, তোমাকে এসব সস্পদ প্রদান করলাম সে সাথে আরও দশগুন দান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন লোকটি জান্নাতে তার গৃহে প্রবেশ করবে। তার সাথে ডাগর চোখ বিশিষ্ট দু-জন হুর তার পত্নী হিসাবে প্রবেশ করবে। আর তারা বলবে, সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জীবন দান করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জীবন দান করেছেন। লোকটি বলবে, আমাকে যা দেয়া হয়েছে, এমন আর কাউকে দেওয়া হয়নি।
৩৬১.    সাঈদ ইবনু আমর আল আশআসী, ইবনু আবূ উমর এবং বিশর ইবনু হাকাম (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেনঃ সে হল এমন এক ব্যাক্তি, যে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে প্রতিপালক! তা কিরুপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে, পৃথিবীর কোন সম্রাটের সামরাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে, হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে উক্ত পরিমাণ সস্পদ দেওয়া হলো। সাথে দেওয়া হল আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ। পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন, আরো দশগুন দেওয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যদ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে, হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ এরা তারাই যাদের মর্যাদা আমি চুড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি, কারো অন্তরে কখনও কল্পনায়ও উদয় হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, কুরআনের এ আয়াতটি এর প্রমাণ বহন করেঃ (অর্থ) “কেউ জাননা, তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুকায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পূরস্কারস্বরুপ। ” (সাজদাঃ ১৭)
৩৬২.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) থেঁকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তা'আলাকে জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যাক্তিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন... এরপর বর্ণনাকারী পূর্ববর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৩৬৩.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জাহান্নাম হতে সবার শেষে উদ্ধারপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সবার শেষে প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। কিয়ামতের দিন তাকে উপস্থিত করে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, এ ব্যাক্তির সগীরা গুনাহগুলো তার সামনে পেশ কর, আর কবীরা শোনাহগুলো আলাদা তুলে রাখ। ফেরেশতাগণ তার সম্মুখে সগীরা গুনাহগুলো উপস্থিত করবেন। ঐ ব্যাক্তিকে বলা হবে, তুমি অমুক দিন এ পাপ কাজ করেছিলে? অমুক দিন এ কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। সে কোনটার অস্বীকার করতে পারবে না। আর কবীরা গুনাহগুলো পেশ করা হলে সে ভয় করতে থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তোমার এক একটি গুনাহর স্থলে একটি নেকী দেওয়া হল। লোকটি বলবে, হে প্রতিপালক! আমি আরও অনেক অন্যায় কাজ করেছি, যেগুলো এখানে দেখছি না। এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত ভেসে উঠল।
৩৬৪.    ইবনু নুমায়র, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব ... আ’মাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৩৬৫.    উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে الْوُرُودِ অর্থাৎ “অতিক্রম করতে হবে” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ একত্রিত হবে। আমি মানুষের উপর থেকে-তা দেখব। (এ উম্মাতকে একত্র করা হবে একটি টিলায়) এরপর একে একে প্রতিটি জাতিকে তাদের নিজ নিজ দেব-দেবী ও উপাস্যের নামসহ ডাকা হবে। তারপর আল্লাহ আমাদের (মুমিনদের) কাছে এসে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কার অপেক্ষায় রয়েছ? মুমিনগন বলবে, আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, যতক্ষন পর্যন্ত আপনাকে না দেখব (আমরা তা মানছি না)। এরপর আল্লাহ তখন সহাস্যে স্বীয় তাজাল্লীতে উদ্ভাসিত হবেন। অনন্তর তিনি তাদের নিয়ে চলবেন এবং মুমিনগণ তাঁর অনুসরণ করবে। মুনাফিক কি মুমিন, প্রতিটি মানুষ কেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। জাহান্নামের পূলের উপর থাকবে কাটাযুক্ত লৌহ শলাকা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করবে। 

মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ নাজাত পাবেন। প্রথম দল হবে সত্তর হাজার লোকের, তাদের কোন হিসাবই নেয়া হবে না। তাঁদের চেহারা হবে পূর্নিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর আরেক দল আসবে, তাদের মুখমন্ডল হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্ত। এভাবে পর্বায়ক্রমে সকলে পার হয়ে যাবে। তারপর শাফাআতের অনুমতি প্রদান করা হবে। ফলে সকলেই শাফাআত লাভ করবে। এমন কি যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করেছে, এবং যার অন্তরে সামান্য যব পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। পরে এদেরকে জান্নাতের আঙ্গিনায় জমায়েত করা হবে, আর জান্নাতিগণ তাদের গায়ে পানি সিঞ্চন করবেন, ফলে তারা এমন সতেজ হয়ে উঠবেন, যেমন কোন উদ্ভিদ স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। আগুনে পোড়া দাগসমূহ মুছে যাবে। এরপর তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাবে। আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। তাদের প্রত্যেককে পৃথিবীর মত এবং তৎসহ আরো পৃথিবীর দশগুন প্রতিদান দেওয়া হবে।
৩৬৬.    আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইরশাদ করতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা কতিপয় লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
৩৬৭.    আবূ রাবী (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমর ইবনু দ্বীনারকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বরাত দিয়ে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা কতিপয় মানুষকে শাফাআতের ম্যধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তখন তিনি বললেন- হ্যাঁ।
৩৬৮.    হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদূল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ জন্য কতিপয় মানুষকে এমতাবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করবেন, যখন জাহান্নামে তাদের মুখমন্ডলের চারপাশ ব্যতীত অন্য সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, অবশেষে তারা (আল্লাহর অনুগ্রহে) জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩৬৯.    হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... ইয়াযীদ আল ফাকীর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, খারিজীদের একটি মত, আমাকে বড়ই আকৃষ্ট করছিল। আমরা একবার একটি দলের সাথে বের হই। উদ্দেশ্য ছিল হজ্জ করা তারপর মানুষের সাথে যোগাযোগ করা। আমরা মদিনা দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) একটি খুঁটির পাশে বসে লোকদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ননা করছেন। বর্ননাকারী বলেন, আর একটু এগিয়ে দেখি, তিনি জাহান্নামীদের আলোচনা তুলেছেন। আমি বললাম, হে রাসুলের সাহাবী! আপনারা এ কি বলছেন? অথচ আল্লাহ তায়াআলা ইরশাদ করেছেনঃ (অর্থ) “কাকেও আপনি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো আপনি নিশ্চয়ই হেয় করলেন” (৩ঃ ১১২)। আরো ইরশাদ করেনঃ (অর্থ) যখনই তারা জাহান্নাম হতে বেরোবার চেষ্টা করবে, তখনই ফিরিয়ে দেয়া হবে।” (৩২ঃ ২৫) 

জাবির (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হলে কুরআনে তুমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সে সম্মানিত আসন, যেখানে আল্লাহ তাঁকে (কিয়ামত দিবসে) সমাসীন করবেন, সে আসনের কথা শুননি? বললাম, হ্যাঁ। জাবির (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে আসনটি হচ্ছে “মাকামে মাহমুদ” যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা যাকে জাহান্নাম থেকে বের করার, বের করবেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর জাবির (রাঃ) পুলসিরাত স্থাপন ও মানুষ তা অতিক্রম করার কথা বর্ণনা করেন। 

বর্ণনাকারী আরো বলেন, আলোচনাটি পুরোপুরি সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে আমার আশঙ্কা হয়। তবে তিনি অনশ্যই একথা উল্লেখ করেছেন যে, কতিপয় মানুষ কিছু কাল জাহান্নামে অবস্থান করার পর, তাদেরকে বের করা হবে। জাহান্নামে আগ্নি দগ্ন হয়ে রোদেপোড়া তিল গাছের মত কালো বর্ণ ধারণ করবে, তখন তাদেরকে বের করে আনা হবে। এরপর তারা জান্নাতের একটি নহরে নেমে গোসল করবে। পরে সকলে কাগজের মত সাদা ধবধবে হয়ে সে নহর থেকে উঠে আসবে। ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস নিয়ে আমরা আমাদের এলাকায় ফিরে এলাম এবং সকলকে বললাম, অমঙ্গল হোক তোমাদের! তোমরা কি মনে কর যে, এ বৃদ্ধ (জাবির) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন? পরিশেষে আমাদের সকলেই (ঐ ভ্রান্ত বিশ্বাস) থেকে ফিরে আসে। আল্লাহর কসম! মাত্র এক ব্যাক্তি ছাড়া কেউ আমাদের এ সঠিক আকীদা পরিত্যাগ করে নাই, বা আবূ নূয়ায়ম যা বলেছেন তার অনুরুপ।
৩৭০.    হাম্মাদ ইবনু খালিদ আল আযদী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ চার ব্যাক্তিকে (বিচারের জন্য) জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত করা হবে। তন্মধ্যে একজন বারবার পশ্চাৎ দিকে ফিরে তাকারে আর বলবে, হে আমার রব! যখন আমাকে এ জাহান্নাম থেকে বের করেছেন, তখন আমাকে আর সেখানে ফিরিয়ে নেবেন না। আল্লাহ তা’আলা এ লোকটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।
৩৭১.    আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী ও মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ আল শুবারী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হাশরের মাঠে আল্লাহ জন্য সকল মানুষকে একত্র করবেন। তখন সংকটমুক্তির জন্য সুপারিশ প্রার্থনার ব্যাপারে তারা তৎপর হবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবনু উবায়দ يُلْهَمُونَ শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থ, অন্তরে উৎসারিত করা হবে। তারা বলবে, আমরা যদি কাউকে আল্লাহর কাছে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করতাম, যেন তিনি আমাদের সংকটময় স্থান থেকে মুক্তি দেন। 

সে মতে তারা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে এসে বলবে, আপনি আদম (আলাইহিস সালাম), আপনি মানুষের আদি পিতা, আল্লাহ তা’আলা স্বহস্তে আপনাকে করেছেন, আপনার দেহে আত্না ফুকেছেন, আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা আপনাকে সিজদাও করেছেন। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এ সংকটময় স্থান থেকে মুক্তি দেন। তিনি তাঁর ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা নূহের কাছে যাও। তিনি প্রথম রাসুল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকেই সর্বপ্রথম রাসুলরুপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। 

তখন সকল মানুষ নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে অনুরোধ করবে। তিনিও তার ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন। বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও। তাকে আল্লাহ তা’আলা বন্ধুরুপে গ্রহণ করেছেন। তখন সবাই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনি স্বীয় ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। আল্লাহ তার সাথে কথোপকথন করেছেন। তাঁকে আল্লাহ তাওরাত প্রদান করেছেন। তখন সবাই মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনি তাঁর ক্রটির কথা স্বরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। 

তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত “কালিমা”। তখন সবাই ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন বান্দা যে, তার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন সবাই আমার কাছে আসবে, আর আমি আল্লাহর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। তখন আমি তাঁকে দেখামাত্র সিজদাবনত হয়ে যাব। যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন আমাকে এ অবস্থায় রেখে দিবেন। 

তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হবে, আপনি প্রার্থনা করুন, তা পূর্ণ করা হবে, আপনি শাফা’আত করুন, আপনার শাফাআত কবুল করা হবে। তারপর আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব, যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ করব। আমার জন্য (শাফাআতের) সীমা নির্ধারিত করে দেয়া হবে। সেমতে আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে এনে জান্নাতে প্রবেশ করাব। পূনরায় আমি শাফাআতের জন্য আসব এবং সিজদাবনত হব। যতক্ষন আল্লাহ এ অবস্থায় আমাকে রাখতে ইচ্ছা করবেন ততক্ষন রেখে দিবেন। পরে বলা “হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, তা পূর্ণ করা হরে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। 

তারপর আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব, যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। আমার জন্য (শাফা’আতের) সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সে মতে আমি এদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী বলেন, নিশ্চিতভাবে স্মরণ নেই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় কিংবা চতূর্থবারে এ কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, আমি বলবঃ হে আমার প্রতিপালক! কুরআন যাদেরকে আটকে দিয়েছে (অর্থাৎ কুরআনের আলোকে যারা চিরদিন জাহান্নামে থাকা নির্ধারিত) তারা ছাড়া জাহান্নামে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। ইবনু উবায়দ-এর বর্ণনায় রয়েছে (অর্থাৎ তার জন্য চিরদিন জাছান্নামে থাকা অবধারিত)।
৩৭২.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামতের দিন মুমিনগণ (হাশরের ময়দানে) একত্র হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে يُلْهَمُونَ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারপর বর্ণনাকারী পূর্বোল্লিখিত আবূ আওয়ানার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, এরপর আমি চতুর্থবার এসে বলবঃ হে প্রভূ! আর কেউ অবশিষ্ট নেই, কেবল তারাই আছে, যাদেরকে কুরআন আটকে রেখেছে।
৩৭৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা'আলা মুমিন বান্দাদেরকে একত্র করবেন। বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসদ্বয়ের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে চতুর্থবারের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (চতুর্থবারে) তারপর আমি বলবঃ হে প্রতিপালক! আর কেউ অবশিষ্ট নেই, তবে তারাই আছে, যাদেরকে পবিত্র কুরআন আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের ব্যাপারে চিরকালের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে।
৩৭৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মিনহাল আয যারীর, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ঐ ব্যাক্তিকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে একটি যবের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে সামান্য একটি গমের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই” আর তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। ইবনু মিনহাল তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেন যে, ইয়াযীদ (রহঃ) বলেছেন, এরপর আমি শু’বার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এ হাদীস শোনলাম। তখন তিনি বললেন, আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন কাতাদা (রহঃ), আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূত্রে। তবে শু’বা الذَّرَّةِ (অনু) শব্দের স্থলে ذُرَةً (ভুট্ট্রা) বর্ণনা করেছেন। ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, আবূ বিসতাম এতে তাসহীফ (এক শব্দ স্থলে অন্য শব্দ ব্যবহার) করেছেন।
৩৭৫.    আবূ রাবী আল আতাকী, সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) ... মা’বাদ ইবনু হিলাল আল আনাযী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি এবং সুপারিশকারী হিসাবে সাবিতকে সাথে নিয়ে যাই। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা যখন আনাসের কাছে গিয়ে পৌছি, তখন তিনি সালাতুদ্দোহা আদায় করছিলেন। সাবিত (রাঃ) প্রার্থনা করলেন, অনুমতি হল। আমরা আনাস (রাঃ) এর মজলিসে প্রবেশ করলাম। আনাস (রাঃ) সাবিতকে চৌকিতে তাঁর পাশে বসালেন। তারপর সাবিত (রাঃ) আনাস (রাঃ) কে বললেন, হে আবূ হামযা! আপনার এ বাসরী ভাইয়েরা আপনার কাছ থেকে শাফাআত বিষয়ক হাদীস জানতে চাচ্ছে। 

তখন আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষ বিপর্যন্ত অবস্থায় এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে। অবশেষে সবাই আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বসবে, আপনার বংশধরদের জন্য সুপারিশ করুন। তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, বরং তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর বন্ধু। 

সবাই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলে, তিনি বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই, তবে তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী। তখন সকলে তার কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রুহ ও তাঁর কালিমা। এরপর তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলবঃ ‘আমিই এর জন্য, আমি যাচ্ছি। অনন্তর আমি আমার পরওয়ারদিগারের অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁর সন্মুখে দাঁড়াব এবং এমন প্রশংসাসূচক বাক্যে তার প্রশংসা করতে থাকব, যা তখনই আল্লাহ আমার প্রতি ইলহাম করবেন; এখন আমি তা বর্ণনা করতে পারছি না। 

এরপর আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবেঃ হে মুহাম্মাদ! বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; শাফা’আত করুন, আপনার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার, ‘উাম্মাতী” ‘উম্মাতী’ (আমার উম্মাত, আমার উম্মাত)। এরপর আমাকে বলা হবেঃ চলূন, যার অন্তরে গম বা যবের পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবেন তাকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনুন। আমি যাব এবং তদনূসারে উদ্ধার করব। 

পূনরায় আমার পরওয়ারদিগারের নিকটে ফিরে যাব এবং পূর্বানুরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তার প্রশংসা করব, এরপর আমি সিজদায় লূটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবেঃ হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। তখন আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী , উম্মাতী আমার উম্মাত (আমার উম্মাত, আমার উম্মাত)। আল্লাহ বলবেনঃ যান, যে ব্যাক্তির অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও অবশিষ্ট থাকবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন। 

এরপর আমি যাব এবং তাদের উদ্ধার করে আনব। পূনরায় আমি পরওয়ারদিগারের নিকটে ফিরে যাব এবং পৃর্বানূরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সিজদায় লূঁটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; শাফাআত করুন, শাফা’আত গৃহীত হবে। আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী (আমার উম্মাত, আমার উম্মাত)। আল্লাহ বলবেন, যান, যে ব্যাক্তির অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও আরো আরো কম পরিমাণ ঈমান পারেন, তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন। এরপর আমি যাব এবং তাদের উদ্ধার করে আনব। 

বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) এ পর্যন্ত আমাদেরকে বলেছেন। এরপর আমরা সেখান থেকে বের হয়ে পথ চলতে শুরু করলাম। এভাবে যখন “জাব্বান” এলাকায় পৌছলাম, তখন নিজেরা বললাম, আমরা যদি হানান বসরীর সাথে সাক্ষাৎ করতাম এবং তাঁকে সালাম পেশ করতাম, কতই না ভাল হতো! সে সময় তিনি আবূ খলীফার ঘরে আত্মগোপন করেছিলেন। আমরা তাঁর বাড়িতে গেলাম এবং তাঁকে সালাম পের্শ করলাম। আমরা তাঁকে বললাম, আবূ সাঈদ! আমরা আপনার ভাই আবূ হামযার নিকট থেকে আসছি। আজ তিনি আমাদেরকে শাফা’আত সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছেন, যা আর কখনও শুনিনি। তিনি বললেন, আচ্ছা শোনাও তো? তখন আমরা তাঁকে হাদীসটি শোনালাম। তারপর তিনি বললেন, আরও বল। আমরা বললাম, এর চেয়ে বেশি কিছু তো আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেননি। তখন তিনি বললেন, আনাস (রাঃ) আমাদের কাছে আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি সুস্থ-সবল ছিলেন, তখন এ হাদীসটি শুনিয়েছেন। কিন্তু আজ তোমাদের কাছে কিছু ছেড়ে দিয়েছেন মনে হচ্ছে। জানিনা, তিনি তা ভুলে গেছেন, না তোমরা এর উপর ভরসা করে আমলের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করবে, আশংকায় তিনি তা বর্ণনা করাটা পছন্দ করেননি। 

আমরা বললাম আমাদের তা বর্ণনা করুন। তিনি ঈষৎ হেসে উত্তর করলেন, মানূষ তো খুব ত্বরাপ্রিয়। তোমাদের তা বর্ণনা করব বলেই তো এর উল্লেখ করলাম। তারপর তিনি হাদীসটির অবশিষ্ট অংশ এরুপ বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরপর আমি পুনরায় আমার পরওয়ারদিগারের কাছে ফিরে আসব এবং চতুর্থবারও উক্তরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সিজদায় লূটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা তুলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, তা কবুল করা হবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। 

আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! আমাকে সেসব মানুষের জন্য অনুমতি দিন, যারা “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই” একথা স্বীকার করেছে। আল্লাহ বলবেনঃ না, এটা আপনার দায়িত্বে নয়; বরং আমার ইজ্জত, প্রতিপত্তি, মহত্ত্ব ও পরাক্রমশীলতার কসম! আমি নিজেই অবশ্য এদের মুক্তি দেব, যারা একথার স্বীকৃতি দিয়েছে যে, “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই”। হাদীসটি শেষ করে বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হাসান আমাদেরকে হাদীসটি আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য আমার বিশ্বাস তিনি এ কথা বলেছেন যে, বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি পূর্ণ সুস্থ-সবল ছিলেন।
৩৭৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) এল, তার সামনে সামনের রান পেশ করা হলো। (ছাগলের) গোশত তার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা জানো? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের আহবান সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবতী হবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কটূ ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে, কী দুর্দশায় তোমরা আছ, দেখছ না? কী অবস্থায় তোমরা পৌছেছ উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না, যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন? 

তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, চল, আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাই। অনন্তর তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ- স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রুহ ফুকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন; তাঁরা আপনাকে সিজদা করেছে। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি? আদম (আলাইহিস সালাম) উত্তরে বলবেনঃ আজ পরওয়ারদিগার এত বেশি ক্রোধাম্বিত আছেন যা পূর্বে কখনো হননি, আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আর আমি সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, ‘নাফসী’, নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহের কাছে যাও। 

তখন তারা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে; বলবে, হে নূহ! আপনি আমাদের প্রথম রাসুল। আল্লাহ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরুওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি? অ্যমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? নূহ (আলাইহিস সালাম) বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রোধানিত আছেন যে এমন পূর্বেও কখনো হননি আর কখনও হবেন না। আমাকে তিনি একটি দুঁআ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি ‘নাফসী’, ‘নাফসী’, (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। 

তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নাবী পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে বলবেনঃ আল্লাহ আজ এতই ক্রোধানিত আছেন যে, পূর্বে এমন কখনও হন নাই আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি তাঁর কিছুঁ বহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, -‘নাফসী”, ‘নাফসী’ (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। 

তারা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসুল, আপনাকে তিনি তাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে বলবেনঃ আজ আল্লাহ এতই ক্রোধানিত অবস্থায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হন নাই আর পরেও কখনো হবেন না। আমি তার হুকুমের পূর্বে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে যাও। 

তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল, দোলনায় অবস্থানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া বানী, যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে ঢেলে দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা। সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন অবস্থায় পৌছেছে? ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলবেনঃ আজ আল্লাহ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরুপ না পূর্বে কখনও হয়েছেন, আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান) তোমরা জন্য কারো কাছে যাও। 

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নিচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ আমার অন্তরকে সূপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ “গ্রহণ করা হবে”। 

অনন্তর আমি। মাথা তুলব। বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, (আমার উাম্মাত, আমার উম্মাত, এদেরকে মুক্তি দান করুন)। আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কার ও হাজরের দূরত্বের মত; অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত।* 

* হাজার- বাহরায়ানের একটি শহর। বুসর- দামেশকের নিকটবর্তী একটি শহর।
৩৭৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেঁন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে সারীদ ও গোশতের একটি পেয়ালা পেশ করা হলে তিনি তা থেকে গোশতের একটি বাহু নিয়ে এক কামড় গ্রহণ করলেন। আর বকরীর গোশতের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বাহু অধিকতর পছন্দনীয় ছিল। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের সর্দার। এরপর আরেক কামড় গ্রহণ করে বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের সর্দার। তিনি যখন দেখলেন সাহাবীগণ কোন প্রশ্ন করছেন না, তখন নিজেই বললেন, তোমরা কেন জিজ্ঞাসা করছ না যে তা কেমন করে হবে? সাহাবীগন বললেন, বলুন হে আল্লাহর রাসুল! তা কিভাবে হবে? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর করলেনঃ হাশরের ময়দানে সকল মানুষ আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। অবশিষ্টাংশ আবূ হায়্যান ... আবূ যুর’আ সূত্রে বর্নিত হাদীসেরই অনুরুপ। 

তবে এ হাদীসে ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) প্রসঙ্গে তিনি নক্ষত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি আমার প্রতিপালক; দেব—দেবীর সম্পর্কে বলেছিলেন, "বরঞ্চ এদের বড়টাই তো হত্যা করেছে ও আমি অসুস্থ"-এ কথা অতিরিক্ত আছে। শপথ সে সত্তার, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, জান্নাতের দু’চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের দূরত্বের মত বা হাজর ও মক্কার দুরত্বের মত, কোনটি বলেছেন আমি জানিনা।
৩৭৮.    মুহাম্মাদ ইবনু তারীফ ইবনু খলীফা আল-বাজালী ও আবূ মালিক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা'আলা সকল মানুষকে একত্র করবেন। মুমিনগণ দাঁড়িয়ে থাকবে। জান্নাত তাদের নিকটবতী করা হবে। অবশেষে সবাই আদমের কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেওয়ার প্রার্থনা করুন। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমাদের পিতা আদমের পদন্থলনের কারনেই আমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আমার পুত্র ইব্রাহীমের কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বন্ধু। 

[এরপর সবাই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এলে] তিনি বলবেনঃ না, আমিও এর যোগ্য নই, আমি আল্লাহর বন্ধু ছিলাম বটে, তবে তা ছিল অন্তরাল থেকে। তোমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি বাক্যালাপ করতেন। সবাই মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। বলবেনঃ আমিও এর যোগ্য নই; বরং তোমরা ঈসার কাছে যাও। আল্লাহর দেওয়া কালিমা ও রুহ। সবাই তাঁর কাছে আসলে তিনি বলবেনঃ আমিও তার উপযুক্ত নই। তখন সকলে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে আসবে। তিনি দু’আর নিমিত্তে দাড়াবেন এবং তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হবে। আমানতকারী আত্নীয়তার সম্পর্ক পুলসিরাতের ডানে-বামে এসে দাঁড়াবে। আর তোমাদের প্রথম দলটি এ সিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে। 

সাহাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার জন্য আমার পিতামাতা উৎসর্গ হউক। আমাকে বলে দিন “বিদ্যুৎ গতির ন্যায়” কথাটির অর্থ কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আকাশের বিদ্যুৎ চমক কি কখনো দেখনি? চক্ষের পলকে এখান থেকে সেখানে চলে যায় আবার ফিরে আসে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর পরবর্তী দলগুলি যথাক্রমে বায়ুর বেগে, পাখির গতিতে, তারপর লম্বা দৌড়ের গতিতে পার হয়ে! যাবে। প্রত্যেকেই তার আমল হিসাবে তা অতিক্রম করবে। আর তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে অবস্থায় পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে এ দুআ করতে থাকবেঃ আল্লাহ এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন। এরুপে মানুষের আমল মানুষকে চলতে অক্ষম করে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা এ সিরাত অতিক্রম করতে থাকবে। 

শেষে এক ব্যাক্তিকে দেখা যাবে, সে নিতম্বের উপর ভর করে পথ অতিক্রম করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ সিরাতের উভয় পার্শের ঝূলান থাকবে কাঁটাযুক্ত লৌহশলাকা। এরা আল্লাহর নির্দেশক্রমে চিহ্নিত পাপীদেরকে পাকড়াও করবে। তন্মধ্যে কাউকে তো ক্ষত-বিক্ষত করেই ছেড়ে দিবে; সে নাজাত পাবে। আর কতক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের গর্ভে নিক্ষিপ্ত হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, শপথ সে সত্তার, যার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ। জেনে রাখ, জাহান্নামের গভীরতা সত্তর খারীফ (অর্থাৎ সত্তর হাজার বছরের পথ তুল্য। )
৩৭৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমি প্রথম ব্যাক্তি যে জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহর কাছে শাফা’আত করব। নাবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি।
৩৮০.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত দিবসে আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।
৩৮১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন জান্নাত সম্পর্কে আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং এত অধিক সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি ঈমান আনবে, যা অন্য কোন নাবীর বেলায় হবে না। নাবীদের কেউ কেউ তো এমতাবস্থায়ও আসবেন, যার প্রতি মাত্র এক ব্যাক্তই ঈমান এনেছে।
৩৮২.    আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করব, মুহাম্মাদ। খাজাঞ্চি বলবেন, “আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি নির্দেশিত হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না।
৩৮৩.    ইউনূস ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্যই বিশেষ একটি দু’আ নির্ধারিত আছে, যা তিনি করবেন। আমি আমার বিশেষ দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত রাখার সংকল্প নিয়েছি।
৩৮৪.    যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু’আ আছে। আমার বিশেষ দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য সংরক্ষিত রাখব বলে ইচ্ছা করেছি, ইনশাআল্লাহ।
৩৮৫.    যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আমর ইবনু আবূ সুফিয়ান ইবনু আর্সীদ ইবনু জারিয়া আল সাকাফী (রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৩৮৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন কা'ব আল আহবারকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু'আ আছে। আমি আমার দু'আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি। কা’ব (রাঃ) আবূ হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এ হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি শুনেছেন? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন- হ্যাঁ।
৩৮৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু'আ আছে তন্মধ্যে সকলেই তাদের দু’আ পৃথিবীতেই করে নিয়েছেন। আমি আমার দু'আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের জন্য রেখে দিয়েছি। আমার উম্মতের যে ব্যাক্তি কোন প্রকার শিরক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে ইনশাআল্লাহ আমার এ দুআ পাবে।
৩৮৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে একটি বিশেষ দুআর অনুমতি প্রদান করা হয়েছে; এর মাধ্যমে তিনি যে দুআ করবেন, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করবেন। সকল নাবী তাঁদের দুআ করে ফেলেছে। আবূ আমি আমার দুআটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি।
৩৮৯.    আবদুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আনবারি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে তাঁর উম্মাতের ব্যাপারে একটি করে এমন দু’আর অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা অবশ্যই কবুল করা হবে। আমি সংকল্প করেছি, আমার দু’আটি পরে আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য করব।
৩৯০.    আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবীর কাছে তাঁর উম্মাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য একটি দু’আর অনুমতি আছে। আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি। যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ খালাফ, আবূ কুরায়ব, ইবরাহিম ইবনু সা’দ আল জাওহারী (রহঃ) ও মিসআর (রহঃ) এ সুত্রে কাতাদা থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৩৯১.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আ’লা (রাঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে কাতাদা এর অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৩৯২.    মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে একটি করে কবুল দুআর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সবাই তাদের দুআ করে ফেলেছিল, তবে আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি।

পরিচ্ছেদঃ ৮১. উম্মাতের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু'আ ও তাদের প্রতি মমতায় তার ক্রন্দন


৩৯৩.    ইউনূস ইবনু আবদুল আলা আস সাদাফী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তায়ালা কুরআনে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ বর্ণনা করেনঃ (অর্থ) হে আমার প্রতিপালক! এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভূক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালূ” (১৪ঃ ৩৬) তিলাওয়াত করেন। আর ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর দুয়া বর্ণনা করেছেনঃ (অর্থ) “তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তরে তো তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (৫ঃ ১১৮)। 

তারপর তিনি তাঁর উভয় হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত! আর কেঁদে ফেললেন। তখন মহান আল্লাহ বললেনঃ হে জিবরীল! মুহাম্মদের কাছে যাও, তোমার রব তো সবই জানেন, তাঁকে জিজ্ঞেস কর, তিনি কাঁদছেন কেন? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, তা তাঁকে অবহিত করলেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাঁকে বল, আপনার উম্মাতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেব, আপনাকে অন্তুষ্ট করব না।

পরিচ্ছেদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না


৩৯৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কোথায় আছেন (জান্নাতে না জাহান্নামে)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন পিছনে ফিরে যাচ্ছিল, তখন তিনি ডাকলেন এবং বললেনঃ আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।”

পরিচ্ছেদঃ


৩৯৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ন হয়ঃ (অর্থ) “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও—” (২৬ঃ ২১৪) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের ডাকলেন। তারা একত্রিত হল। তারপর তিনি তাঁদের সাধারণ ও বিশিষ্ট সকলকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে কা'ব ইবনু লূওয়াইর বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে মুররা ইবনু কাবের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে আবদ মানাফের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাঁচাও। হে হাশিমের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর। হে আব্দুল মূত্তালিবের বংশধর! জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাচাও। হে ফাতিমা! জাহান্নাম থেকে নিজেকে বাঁচাও! কারন আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। অবশ্য তোমাদের সঙ্গে আমার আত্নীয়তার রসে আমি তোমাদের সিঞ্চিত করব।
৩৯৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবদুল মালিক ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন; তবে জারীর বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক।
৩৯৭.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও (২৬ঃ ২১৪); তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতে আরোহণ করেন এবং বললেন, হে ফাতিমা বিনূত মুহাম্মাদ! হে সাফিয়্যা বিন্‌ত অবদুল মুত্তালিব! হে আবদুল মূত্তালিবের বংশধর! আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার আমার কোন ক্ষমতা নেই। তোমরা আমার কাছে আমার সম্পদের যা খুশি চাইতে পার।
৩৯৮.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (অর্থ) “তোমার নিকট আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও।” (২৬ঃ ২১৪) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে কুরাইশগণ! আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমরা নিজেদের কিনে নাও (বাঁচাও) আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমাদের রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। ওহে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! তোমাদের আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা করতে পারব না। হে সাফিয়্যা! তোমাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারব না। হে ফাতিমা বিন্‌ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তোমার যা ইচ্ছা চাইতে পার। আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমাকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই।
৩৯৯.    আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪০০.    আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ... কাবীসা ইবনু মুখারিক ও যুহায়র ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) “তোমার নিকট- আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও” (২৬ঃ ২১৪)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্বতের স্তরে স্তরে সাজানো বৃহদাকার পাথরের দিকে গেলেন এবং তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ প্রস্তর খণ্ডে আরোহণ করলেন। এরপর তিনি আহবান জানালেন, ওহে আবদ মানাফের বংশধর! আমি (তোমাদের) সতর্ককারী। আমার ও তোমাদের উপমা হল এমন এক ব্যাক্তির মত, যে শক্রকে দেখতে পেয়ে তার লোকদের রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হল। পরে সে আশঙ্কা করল যে, শক্র তার আগেই এসে যাবে। তখন সে ইয়া সাবাহ (হায় মন্দ প্রভাত!) বলে চিৎকার শুরু করল।
৪০১.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... যুহায়র ইবনু আমর ও কাবীসা ইবনু মুখারিক (রাঃ) থেকে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪০২.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ’লা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয় (অর্থ) “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও, (২৬ঃ ২১৪)। এবং তাদের মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও।” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন এবং সাফা পর্বতে উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত! সকলে বলাবলি করতে লাগল, কে এই ব্যাক্তি যে ডাক দিচ্ছে? লোকেরা বলল, মুহাম্মাদ। তারপর সবাই তাঁর কাছে উপস্থিত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের বংশধর! হে অমূকের বংশধর! হে অমুকের বংশধর! হে আবদ মানাফের বংশধর! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! এতে সবাই তাঁর কাছে সমবেত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী জিজ্ঞেস করলেনঃ দেখ যদি আমি তোমাদের এই সংবাদ দেই যে, এই পর্বতের পাদদেশে শক্র সৈন্য এসে পড়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা উত্তর করল, তোমাকে কখনো মিথ্যা বলতে তো আমরা দেখিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের সতর্ক করছি সামনের কঠোর আযাব সম্পর্কে। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ লাহাব তখন এই বলে উঠে গেল “ধ্বংস হও, তুমি এ জন্যই কি আমাদের একত্র করেছিলে?" তখন এই সূরা অবতীর্ণ হয়ঃ ধবংস আবূ লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও সূরার শেষ পর্যন্ত। (১১১ঃ ১-৫)। অবশ্য রাবী আমাশ وَتَبَّ এর স্থলে وَقَدْ تَبَّ পাঠ করেন।
৪০৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাফা পর্বতে আরোহণ করেন এবং বলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত”! (বাকী অংশ) আবূ উসামা বর্ণিত হার্দীসের অনুরুপ। অবশ্য তিনি وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ আয়াতটি অবতরণের কথা উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ৮৩. আবু তালীবের জন্য নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শাফায়াত এবং তাতে তার আযাব কম হওয়া


৪০৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারিরী, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর আল মূকাদ্দামী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক আন উমাবী (রহঃ) ... আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আবূ তালিবের কোন উপকার করতে পেরেছেন? তিনি তো আপনার হিফাযত করতেন, আপনার পক্ষ হয়ে (অন্যের প্রতি) ক্রোধান্বিত হতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ, তিনি কেবল পায়ের গ্রন্থি পর্যন্ত জাহান্নামের আগুনে থাকবেন, আর যদি আমি না হতাম, তবে জাহান্নামের অতল তলেই তাকে অবস্থান করতে হতো।
৪০৫.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবূ তালিব তো আপনার হিফাযত করতেন, আপনাকে সাহায্য করতেন এবং আপনার পক্ষ হয়ে (অন্যের প্রতি) রাগ করতেন। তার এই কর্ম তার কি কোন উপকারে এসেছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ। আমি তাকে জাহান্নামের গভীরে পেয়েছিলাম এবং সেখান থেকে (তার পায়ের) গ্রন্থি পর্যন্ত বের করে নিয়ে এসেছি। 

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আব্বাস ইবনু আবদুল মূত্তালিব (রাঃ) থেকে এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে ঐ সনদে পুর্ব বর্ণিত আবূ-আওয়ানার হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৪০৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁর চাচা আবূ তালিবের কথা আলোচিত হলে তিনি বলেনঃ কিয়ামত দিবসে তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ কাজে আসবে বলে আশা রয়েছে। তাঁকে জাহান্নামের উপরিভাগে এমনভাবে রাখা হবে যে, আগুন তার পায়ের গিরা পর্যন্ত পৌছবে; এতেই তার মগজ উথ্‌লাতে থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ৮৪. সর্বাপেক্ষা লঘু শান্তিপ্রাপ্ত জাহান্নামী


৪০৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামের সবচেয়ে কম আযাব সে ব্যাক্তির হবে, যাকে আগুনের দুটি জুতা পরান হবে, ফলে এই দুটির কারণে তার মগজ উথলাতে থাকবে।
৪০৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (চির) জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে আবূ তালিবের। তাকে দুটি (আগুনের) জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, ফলে এ দুটির কারণে তার মগজ পর্যন্ত উথলাতে থাকবে।
৪০৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত দিবসে জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে ঐ ব্যাক্তির, যার দুপায়ের তলায় দুটি (জ্বলন্ত) অঙ্গার রাখা হবে, যার কারণে তার মগজ উথলাতে থাকবে।
৪১০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... নূ'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা আযাব ঐ ব্যাক্তির হবে, যাকে এমন দুটি পাদুয়া পরিয়ে দেয়া হবে, যার তলা এবং ফিতা হবে আগুনের। ফলে এর দহনে (তার উপরে রাখা) পাতিলের মত মগজ উথলাতে থাকবে। আর তার অনুভব হবে যে, সে-ই বুঝি সর্বাপেক্ষা বেশি শান্তি ভোগ করছে; অথচ এটি হচ্ছে সবচেয়ে হালকা আযাব।

পরিচ্ছেদঃ ৮৫. যে ব্যাক্তি কুফরী অবস্থায় মারা যায়, তার কোন আমল তার উপকারে আসবে না


৪১১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইবনু জুদআন জাহেলী যুগে আত্নীয়-স্বজনদের হক আদায় করত এবং দরিদ্রদের আহার দিত। আখিরাতে এসব কর্ম তার উপকারে আসবে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন উপকারে আসবে না। সে তো কোনদিন এ কথা বলেনি যে হে আমার রব! কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ ক্ষমা করে দিও।

পরিচ্ছেদঃ ৮৬. মু'মিনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করা ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কে ছিন্ন করা


৪১২.    আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ... আমর ইব্‌ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চুপে চুপে নয়, স্পষ্ট বলতে শুনেছি যে, জেনে রাখ- অমুক বংশ (আত্নীয়তার কারণে) আমার বন্ধু নয়, বরং আল্লাহ এবং নেককার মুমিনগণই হলেন আমার বন্ধু।

পরিচ্ছেদঃ ৮৭. হিসাব ও শাস্তি ছাড়াই একদল মুসলিমের জান্নাতে প্রবেশে করার প্রমান


৪১৩.    আব্দুর রহমান ইবনু সাল্লাম ইবনু উবায়দুল্লাহ জুমাহী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। জনৈক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, আমাকে যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন, ইয়া আল্লাহ! ওকে এদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। তারপর আরেকজন সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার জন্যও আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন আমাকেও তাঁদের অন্তভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই সুযোগ লাভে উককাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪১৪.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি ... পরবর্তী অংশ উপরোল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ।
৪১৫.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একটি দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সংখ্যা হবে সত্তর হাজার। তাঁরা পূর্ণিমার চাঁদের মত চমকাতে থাকবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তখন উককাশা ইবনু মিহসান আসাদী দাঁড়ালেন। তার গায়ে একটি চাঁদর ছিল। বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! একে তাঁদের অন্তভুক্ত করে নিন। এরপর আরেকজন আনসারী দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই সুযোগ লাভে উক্‌কাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪১৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজারের একটি দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের একটি দলের চেহারা হবে চাঁদের মত (উজ্জ্বল)।
৪১৭.    ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ বাহিলী (রহঃ) ... ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা কে? রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যারা লোহার দাগ লাগায় না এবং ঝাড়ফুক করায় না; বরং তাদের রবের উপর নির্ভরশীল থাকে। 

তখন উক্‌কাশা (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাদেরই একজন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এরপর আরেক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নাবী ! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। রাসুল বললেনঃ এই সূযোগ লাভে উক্‌কাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪১৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরা কারা? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা ঝাড়ফুক করায় না, শুভাগমনের লক্ষণ মেনে চলে না, অগ্নি দাগ গ্রহন করে না বরং সর্বদাই আল্লাহর উপর নির্ভর করে (তারাই)।
৪১৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার বা সাত লক্ষ (এখানে রাবী আবূ হাযিম কোন সংখ্যাই নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি) লোক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একে অন্যের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রথম ব্যাক্তি শেষ ব্যাক্তির প্রবেশের আগে প্রবেশ করবে না, বরং সবাই একত্রে প্রবেশ করবে! তাদের চেহারা পূর্মিমার চাঁদের মত চমকাবে।
৪২০.    সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) ... হুসায়ন ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনু আবদুর রহমানের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, গতকাল রাতে যে তারকাটি বিচ্যুত হয়োছিল তা তোমরা কেউ দেখেছ কি? আমি বললাম, আমি দেখেছি। অবশ্য আমি রাতের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলাম না; আমাকে বিচ্ছু দংশন করেছিল। সাঈদ বললেন, দংশন করার পরে তুমি কি করেছিলে? আমি বললাম, ঝাড়-ফুঁক করিয়েছি। তিনি বললেন, তোমাকে এই ঝাড়-ফুঁক গ্রহণে কিসে উদ্বুদ্ধ করল? আমি বললাম, সেই হার্দীস যা আমি শাবী থেকে শুনেছি। তিনি বললেন, শাবী কী হাদীস বর্ণনা করেছেন? 

আমি বললাম, শাবী বুরায়দা ইবনু হুসায়ন আল আসলামী (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, কুদৃষ্টি বা বিচ্ছু দংশন ব্যতীত অন্য বিষয়ে ঝাঁড়-ফুঁক করান উচিত নয়। তিনি বললেন, ভাল বলেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, স্বপ্নে আমার সামনে সকল উম্মাতকে উপস্থিত করা হয়, তখন কোন কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম যে, তাঁর সঙ্গে ছোট্ট একটি দল রয়েছে; আর কাউকে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে একজন কিংবা দুজন লোক; আবার কেউ এমনও ছিলেন যে, তাঁর সাথে কেউ নেই। হঠাৎ আমার সামনে এক বিরাট দল দেখা গেল। মনে হল, এরা আমার উম্মাত। তখন আমাকে বলা হল, ইনি . মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর উম্মাত; তবে আপনি উপর দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন। আমি ওদিকে তাকালাম, দেখি বিরাট এক দল। আবার বলা হল, আপনি উপর দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন, (আমি ওদিকে তাকালাম) এক বিরাট দল। 

বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। এদের মধ্যে সত্তর হাজার এমন লোক আছে যারা শাস্তি ব্যতীত হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এই বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে চলে গেলেন। আর উপস্থিত সাহাবীগণ তখন এই হিসাব ও আযাব বিহীন জান্নাতে প্রবেশকারী কারা হবেন, এই নিয়ে বিতর্ক শুরু করলেন। কেউ বললেন, তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী। কেউ বললেন, তাঁরা সেসব লোক যারা ইসলামের উপর জন্মলাভ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কোন প্রকার শিরক করেনি। এসব বিতর্ক শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, তোমরা কি নিয়ে বিতর্ক করছ? সবাই বিষয়টি খুলে বললেন।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরা সেই সব লোক, যারা ঝাঁড়-ফুক করে না বা তা গ্রহণও করে না, অশুভ লক্ষণ মানে না বরং সর্বদাই আল্লাহর উপর নির্ভর করে। তখন উককাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার জন্য দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের অন্তভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাদেরই একজন থাকবে। তারপর আরেক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমার জন্যও দু’আ করুন, আল্লাহ যেন আমাকেও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ এই সুযোগ লাভে উককাশা তোমার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪২১.    আবূ বকর আবূ ইবনু শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বপ্নে আমার সামনে সকল উম্মাতকে পেশ করা হয়... এভাবে বর্ণনাকারী হুসায়ন বর্ণিত হাদীসের অনুরুপই বর্ণনা করেন। কিন্তু হাদীসটির প্রথমাংশ উল্লেখ করেন নাই।

পরিচ্ছেদঃ ৮৮. জান্নাতিদের অর্ধেক হবে এই উম্মাত


৪২২.    হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরাই জান্নাতবাসীদের এক চতুর্থাংশ হবে। (আবদুল্লাহ বলেন) এ শুনে আমরা (খুশিতে) অোল্লাহু আকবার- ধ্বনি দিলাম। রাসুল বললেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরাই জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ হবে? সাহাবী বলেন, আমরা আবার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিলাম তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে আমি আশা করি তোমরাই জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে। আর এ সম্পর্কে তোমাদের আরও বলছি কাফিরদের ভিড়ে তোমাদের অবস্থান এমনই স্পষ্ট হবে, যেমন কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা পশম অথবা একটি শ্বেত ষাঁড়ের গায়ে কালো পশম।
৪২৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা প্রায় চল্লিশজনের মত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একটি গম্বুজের নিচে অবস্থান করছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরা জান্নাতীদের এক তৃতীয়াংশ হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম তাঁর, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আশা করি যে, অবশ্যই তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। কেননা কেবল মুসলিমই সেখানে প্রবেশের অনুমতি লাভ করবে। আর মুশরিকদের মধ্যে তোমাদের অবস্থান হবে, যেমন কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা পশম অথবা লাল ষাড়ের গায়ে একটি কালো পশম।
৪২৪.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চর্ম নির্মিত গম্বুজে হেলান দিয়ে বসে আমাদের সম্মোধন করে বললেনঃ জেনে রাখ, মুসলিম ব্যতীত কেউ-ই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এরপর বললেনঃ আল্লাহ! আমি পৌছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। তারপর বললেনঃ তোমরা কি পছন্দ কর যে, তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি পছন্দ কর যে, তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। তোমরা অন্যান্য উম্মতের তুলনায় অথবা (সংখ্যায়) সাদা ষাড়ের গায়ে একটি কাল পশমের মত অথবা কাল ষাড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের মত।
৪২৫.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা-আবাসী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ (কিয়ামত দিবসে) আহবান করবেন, হে আদম ! তিনি উত্তরে বলবেন, আমি আপনার সামনে হাজির, আপনার কাছে শুভ কামনা করি এবং সকল মঙ্গল আপনারই হাতে। মহান আল্লাহ বলবেনঃ জাহান্নামী দলকে বের কর। আদম (আলাইহিস সালাম) জিজ্ঞেস করবেনঃ জাহান্নামী দল কতজনের? মহান আল্লাহ বলবেনঃ প্রতি হাজার থেকে নয়শ নিরানব্বই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এই-ই সেই মুহর্ত, যখন বালক হয়ে যাবে বৃদ্ধ, সকল গর্ভবতী তাদের গর্ভপাত করে ফেলবে আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বস্তুত আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। 

রাবী বলেন, কথাগুলো সাহাবাগণের কঠিন মনে হল। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আম্যদের মধ্যে কে সেই ব্যাক্তি? বললেনঃ আনন্দিত হও। ইয়াজুজ ও মাজুজের সংখ্যা এক হাজার হলে তোমাদের সংখ্যা হবে একজন।” তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম সে সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে। সাহাবী বলেন, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করলাম এবং ‘আল্লাহু আকবার’- ধ্বনি দিলাম। 

তারপর আবার বললেন, শপথ সে সত্তার, যার হাতে আমার প্রান! অবশ্যই আমি আশা রাখি, জান্নাতীদের মধ্যে তোমরা তাদের এক তৃতীয়াংশ হবে। সাহাবী বলেন, আমরা বললাম, আলহামদু-লিল্লাহ- এবং আল্লাহু আকবার, ধ্বনি দিলাম। তারপর আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম সে সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে এবং তোমরা অন্যান্য উম্মাতের মধ্যে কালো ষাড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের মত অথবা গাধার পায়ের চিহ্নের মত।
৪২৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবু কুরায়ব (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়ে বর্ণনা করেন, তোমরা সকল মানুষের মধ্যে কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের মত হবে অথবা সাদা ষাঁড়ের গায়ে কালো পশমের মত হবে।” তাঁরা “গাধার পায়ের চিহ্নের মত” এ কথা উল্লেখ করেননি।

No comments:

Powered by Blogger.