সহিহ মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান-২য়
পরিচ্ছেদঃ ২১. ঈমানের ক্ষেত্রে মুমিনদের পারস্পারিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং এ বিষয়ে ইয়ামানবাসীদের প্রাধান্য
৮৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব এবং ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... আবূ মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে ইয়ামনের দিকে ইশারা করে বললেনঃ জেনে রাখ, ঈমান সেখানেই। কঠোর ও পাষাণ-হৃদয় হচ্ছে শয়তানের দুই শিং এর স্থলে বসবাসকারী সেসব লোক, যারা উটের লেজের গোড়ায় থেকে চিৎকার দিয়ে থাকে, অর্থাৎ রাবীআ ও মূযার গোত্র।
৮৮. আবূ রাবী আয যাহার্নী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়ামনের অধিবাসীরা এসেছে, তাদের হৃদয় বড়ই কোমল। ঈমান রয়েছে ইয়ামেনবাসীদের মধ্যে, ধর্মীয় প্রজ্ঞা রয়েছে ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হীকমতও রয়েছে ইয়ামনবাসীদের মধ্যে।
৮৯. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না এবং আমর আল নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ... পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৯০. আমর আবূ-নাকিদ ও হাসান আল হুলওয়ানি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে ইয়ামনবাসীরা এসেছো তারা নমরচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ধর্মীয় প্রজ্ঞা ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে রয়েছে।
৯১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুফুরের মূল পুর্ব দিকে। অহংকার ও দাম্ভিকতা রয়েছে উচ্চঃস্বরে চিৎকারকারী পশুপালক-- ঘোড়া ও উটওয়ালাদের মধ্যে। আর নম্রতা রয়েছে বকরিওয়ালাদের মধ্যে।
৯২. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান ইয়ামনবাসীদের মধ্যে, কুফূর পূর্বদিকে এবং নম্রতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে। আর অহংকার ও রিয়া চিৎকারকারী ঘোড়া ও উট-পালকদের মধ্যে।
৯৩. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, অহংকার ও দাম্ভিকতা চিৎকারকারী উট-পালকদের মধ্যে এবং নম্রতা বকরিওয়ালাদের মধ্যে।
৯৪. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আদ দারমী (রহঃ) ... যুহুরি (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে এতে এ বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে, "ঈমান ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে।"
৯৫. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়ামনবাসীরা এসেছে। তারা কোমল-হৃদয় ও নম্রচিত্ত। ঈমান ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে। নম্রতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে এবং অহংকার ও দাম্ভিকতা চিৎকারকারী উট-পালকদের মধ্যে যাদের অবস্থান সুর্যোদয়ের দিকে।
৯৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে ইয়ামনের লোকেরা উপস্থিত হয়েছে। তারা নম্রচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ঈমান ইয়ামনীদের মধ্যে এবং হিকমত ইয়ামনীদের। আর কুফরের মূল রয়েছে পূর্বদিকে।
৯৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ)-এর সুত্রে এ সনদেই অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর রিওয়ায়েতে -কুফরের মূল রয়েছে পূর্ব দিকে, কথাটি উল্লেখ করেননি।
৯৮. মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে জারীর (রাঃ) বর্নিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে বর্ণনাকারী শু’বা, অহংকার ও দাম্ভিকতা উট-মালিকদের মধ্যে আর নম্রতা ও মর্যাদা বকরীর মালিকদের মধ্যে, অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
৯৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জারির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মনের কঠোরতা ও গোয়ার্তুমী পূর্বাঞ্চলে আর ঈমান হিজাযবাসীদের মধ্যে।
পরিচ্ছেদঃ ২২. মু'মিন ব্যাতিত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করবে না, মু'মিনদের ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ আর তা অর্জনের উপায় হল পরস্পর অধিক সালাম বিনিময়
১০০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষন না ঈমান আনবে আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষন না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বাতলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে? তা হল, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে।
১০১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষন না তোমরা ঈমান আন। পরবর্তী অংশ আবূ মুআবিয়া ও ওয়াকী-এর হাদীসের অনুরুপ।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. কল্যাণ কামনাই দীন
১০২. মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ আল মাক্কী (রহঃ) ... তামীমদারী থেকে বর্ননা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কল্যাণ কামনাই দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেনঃ আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসুলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের।
১০৩. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... তামীমদারী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০৪. উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) ... তামীমদারী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১০৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের, যাকাত দেওয়ার এবং প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়আত করেছি।
১০৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নূমায়ের (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার শর্তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়আত করেছি।
১০৭. সুরায়হ ইবনু ইউনূস ও ইয়াকুব আদু-দাওরাকী (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়আত করলাম শোনার ও মান্য করার ব্যাপারে। তিনি আমাকে বলে দিলেনঃ “আমার সাধ্যানুসারে ” একথাটিও বল। আর প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার জন্য বায়আত করলাম। ইয়াকুব এক বর্ণনায় "হুসায়শ"--এর নাম না বলে "সাইয়ার" এর নাম উল্লেখ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. গুনাহ দ্বারা ঈমানের ক্ষতি হয় এবং গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ঈমান থাকে না, অর্থ ঈমানের পূর্ণতা থাকে না
১০৮. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইমরান আত তূর্জীবী ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যবিচারী ব্যাক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মুমিন থাকে না, চুরি করার সময় চোরও ঈমানদার থাকে না, মদ্যপায়ীও মদ্যপান করার সময় মুমিন থাকে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) অন্য সুত্রে এর সাথে এও বলেছেনঃ মূল্যবান সামগ্রী লুটেরা যখন লুট করতে থাকে যে, লোকে তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে, তখন সে মুমিন থাকে না।
১০৯. আবদুল মালিক ইবনু শুআইব ও ইবনু লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না... বাকি অংশ লুটতরাজের বর্ণনাসহ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এতে মূল্যবান সামগ্রী- কথাটির উল্লেখ নেই। ইবনু শিহাব বলেন, সাঈদ ইবনুল মূসায়্যাব ও আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ বকরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি النُّهْبَةَ ‘লুটের’ কথা উল্লেখ করেননি।
১১০. মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আল-রাযী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উকায়লের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন এবং -লুটের- কথাও বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ذَاتَ شَرَفٍ ‘মুল্যবান’- কথাটি বলেন নি।
১১১. হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে সকলেই যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে আ’লা ও সাফওয়ান ইবনু সুলায়মের বর্নিত হাদিসে 'লোকে তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে' কথাটি নেই আর হাম্মামের বর্ণনায় রয়েছে- يَرْفَعُ إِلَيْهِ الْمُؤْمِنُونَ أَعْيُنَهُمْ فِيهَا وَهُوَ حِينَ يَنْتَهِبُهَا مُؤْمِنٌ (লুটেরা যখন লুটে লিপ্ত আর মুমিনরা তার প্রতি চোখ তুলে তাকিয়ে আছে, এমতাবস্থায় সে মুমিন থাকে না, কথাটির উল্লেখ রয়েছে। হাম্মাম তাঁর হাদীসে আরো বলেছেন, খেয়ানতকারী যখন খেয়ানত করে, তখন মুমিন থাকে না। সুতরাং তোমরা সাবধান, তোমরা সাবধান।
১১২. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। চোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। মদ্যপ ব্যাক্তি যখন মদ পানে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। তবে এরপরও তওবার দরজা খোলা থাকে।
১১৩. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... মারুফ সনদে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত ... এরপর শু’বার হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. মুনাফিকের স্বভাবের বর্ণনা
১১৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুনায়র এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে রয়েছে সে সত্যিকার মুনাফিক; যার মধ্যে উক্ত চারটির একটিও থাকে সে তা না ছাড়া পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব রয়ে যায়। (১) সেকথা বললে মিথ্যা বলে, (২) চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে, (৩) ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং (৪) ঝগড়া করলে কটূক্তি করে। রাবী সুফিয়ানের বর্ণনায় হাদিসটিতে خَلَّةٌ শব্দের স্থলে خَصْلَةٌ রয়েছে, (উভয় শব্দের অর্থ একই)।
১১৫. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকের আলামত তিনটি --- (১) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে সে তা খেয়ানত করে।
১১৬. আবূ বকব ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকদের আলামত তিনটি -(১) সে কথা বললে মিথ্যা বলে, (২) ওয়াদা করলে সে খেলাফ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে সে খেয়ানত করে।
১১৭. উকবা ইবনু মুকরাম আল আম্মী (রহঃ) ... তার উস্তাদ ইয়াহইয়া ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি উপরোক্ত সনদে আলা ইবনু আবদুর রহমান থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি, যদিও সে রোযা পালন করে এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আর মনে করে যে সে মুসলমান।
১১৮. আবূ নাসর আত তামমার ও আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণিত 'আ'লা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এতে আছে ... যদিও সে রোযা পালন করে, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এবং মনে করে যে সে মুসলিম।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. যে ব্যাক্তি তার মুসলমান ভাইকে 'হে কাফির! বলে সম্বোধন করে, তার ঈমানের অবস্থা
১১৯. আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুল বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি তার ভাইকে কাফির বলে আখ্যায়িত করলে সে কুফরী তাদের উভয়ের কোন একজনের উপরে বর্তাবে।
১২০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ এবং আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ তার ভাইকে কাফির- বলে সম্মোধন করলে উভয়ের একজন তার উপযুক্ত হয়ে যাবে। যাকে কাফির বনা হয়েছে সে কাফির হলে তো হলই নতুবা কথাটি বক্তার উপরই ফিরে আসবে।
১২১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যাক্তি জেনেশুনে আপন পিতার পরিবর্তে অন্য কাউকে পিতা বলে, সে কুফরী করল। আর যে ব্যাক্তি এমন কিছু দাবি করে যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার আবাসস্থল বানিয়ে নেয়। আর কেউ কাউকে কাফির বলে সম্মোধন করলে বা ‘আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকলে, সম্ভোধিত ব্যাক্তি যদি অনুরুপ না হয়, তা হলে এ কুফরী সম্ভোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. যে ব্যাক্তি জেনেশুনে নিজের পিতাকে অস্বীকার করে, তার ঈমানের অবস্থা
১২২. হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আপন পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। যে ব্যাক্তি তার পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে কাফির।
১২৩. আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... সা'দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার উভয় কর্ণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছে যে, ইসলাম গ্রহণের পর যে ব্যাক্তি জেনেশুনে নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়, তার উপর জান্নাত হারাম। রাবী আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছি।
১২৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সা’দ ও আবূ বাক্রা (রাঃ) উভয় থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা প্রত্যেকে বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমার দুই কান শুনেছে এবং আমার অন্তর স্মরণ রেখেছে যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবি করে, অথচ সে জানে যে সে তার পিতা নয়, তার উপর জান্নাত হারাম।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বানীঃ মুসলমানদের গালি দেওয়া গুনাহের কাজ এবং তাদের সাথে মারামারি করা কুফরী
১২৫. মুহাম্মদ ইবনু বাককার ইবনু আর-রাইয়ান ও আওন ইবনু সাল্লাম এবং মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেওয়া গোনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারিতে প্রবৃত্ত হওয়া কুফুরি। রাবী যুবায়দ বলেন, আমি (আমার উস্তাদ) আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রেওয়ায়েত করতে শুনেছেন? তিনি (আবূ ওয়াহোল) বললেন, হ্যাঁ। তবে রাবী শু’বার হাদীসে আবূ ওয়ায়েলের সঙ্গে যুবায়েরের উক্ত কথার উল্লেখ নেই।
১২৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না এবং ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৯. নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বানীঃ তোমরা আমার পরে পরস্পর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে কাফিরে পরিনত হয়ো না
১২৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) দিনে আমাকে বললেন, লোকদের চুপ করাও। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার পরে পরস্পর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে তোমরা কাফিরে পরিণত হয়ো না।
১২৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১২৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ বকর ইবনু খাল্লাদ আল বাহিলী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) দিন তিনি বলেছেনঃ তোমাদের জন্য আফসোস অথবা (বললেন) দুর্ভোগ তোমাদের। আমার পরে তোমরা পরস্পর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।
১৩০. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওয়াকিদের সুত্রে শু’বার বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. বংশের প্রতি কটাক্ষের এবং উচ্চস্বরে বিলাপের উপর কুফুরী শব্দের প্রয়োগ
১৩১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যে দুটি কুফুর বলে গণ্য (১) বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং (২) মৃতের জন্য উচ্চঃস্বরে বিলাপ করা।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. পলাতক দাসকে 'কাফির' আখ্যায়িত করা
১৩২. আলী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) ... শা’বী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি জারীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যে দাস তার মনিবের কাছ থেকে পালিয়ে গেল, সে কুফরী করল, যতক্ষন না সে তার প্রভুর কাছে ফিরে আসে। মানসূর বলেন, আল্লাহর কসম! এ হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এখানে বসরায় আমার থেকে এ হাদীস বর্ণিত হোক তা আমি অপছন্দ করি।*
১৩৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দাস পালিয়ে যায়, তার থেকে (আল্লাহ ও রাসুলের) যিম্মাদারী শেষ হয়ে যায়।
১৩৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দাস পালিয়ে যায়, তখন তার সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হয় না।
পরিচ্ছেদঃ যে ব্যাক্তি বলেঃ 'আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি নক্ষত্র দ্বারা' তার কুফরীর বর্ণনা
১৩৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হুদায়বিয়া প্রান্তরে রাতে (বৃষ্টিপাতের পরে) ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) সম্পন্ন করে তিনি উপস্থিত লোকদের লক্ষ করে বললেনঃ তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা উত্তরে বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল -ই সম্যক অবগত আছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ কতিপয় বান্দা সকালে উঠেছে আমার প্রতি মুমিনরুপে এবং কতিপয় বান্দা উঠেছে কাফিররুপে। যারা বলেছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী, আর যারা বলেছে যে, অমুক অমূক নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী।
১৩৬. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আমর ইবনু সাওয়াদ আল আমিরী এবং মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো না, - তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ আমি যখন আমার বান্দার উপর অনুগ্রহ করি, তখনই তাদের একদল তা অস্বীকার করে এবং বলতে থাকে নক্ষত্র, নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের কাজ হয়।
১৩৭. মুহাম্মাদ ইবনু নালামা আন মুরাদী এবং আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে কোন বরকত (বৃষ্টি) অবতীর্ণ করলে, একদল লোক প্রত্যুষে তা অস্বীকার করে, বৃষ্টিপাত করান আল্লাহ তায়ালা আর তারা বলতে থাকে যে, অমুক অমুক নক্ষত্র। মুরাদীর হাদীসে "অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে" কথার উল্লেখ রয়েছে।
১৩৮. আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আল আম্বারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায় একবার বৃষ্টিপাত হলে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকদের কেউবা শোকরগোযার রয়েছে আর কেউবা অকৃতজ্ঞ রয়েছে। একদল বলে আল্লাহর রহমত, অপর দল বলে অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেনঃ আমি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের শপথ করছি, অবশ্যই এটা এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত রয়েছে। যারা পবিত্র তারা ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করতে পারবে না, এ বিশ্বজগৎসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ তবুও কি তোমরা এ বানীকে তুচ্ছ মনে করবে? আর মিথ্যাচারকেই তোমরা তোমাদের জীবনের সম্বল করে নিয়েছ? (সূরা ওয়াকিয়াহঃ ৭৫-৮২)
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. আনসারদের এবং আলী (রাঃ) কে ভালবাসা ঈমানের অংশ ও তার আলামত এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা নিফাকের আলামত
১৩৯. মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ মুনাফিকের চিহ্ন এবং আনসারদের প্রতি মুহব্বত মুমিনের চিহ্ন।
১৪০. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারদের প্রতি মুহাব্বত ঈমানের চিহ্ন এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ নিফাকের চিহ্ন।
১৪১. যুহায়র ইবনু হারব এবং উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে বলেছেনঃ মুমিনরাই তাদের মুহব্বত করে থাকে এবং মুনাফিকরাই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে। যারা তাঁদের ভালবাসে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন, যারা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আল্লাহ তাদের ঘূণা করেন। শু’বা বলেন, আমি রাবী আদীকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বারাআ (রাঃ) থেকে এটি শুনেছেন? তিনি বললেন, বারাআ (রাঃ) স্বয়ং আমার কাছে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৪২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী ব্যাক্তি আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না।
১৪৩. উসমান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবূ শায়বা এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে আনসারদের সাথে দুশমনী রাখতে পারে না।
১৪৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অংকুরোদ্গম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যাক্তই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যাক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. ইবাদতের ত্রুটিতে ঈমান হ্রাস পাওয়া এবং কুফর শব্দটি আল্লাহর সাথে কুফুরী ছাড়া নিয়ামত ও হুকুম অস্বীকার করার বেলায়ও প্রযোজ্য
১৪৫. মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ ইবনু মুহাজির আল মিসরি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হে রমনীগন! তোমরা দান-খয়রাত করতে থাক এবং বেশি করে ইস্তিগফার কর। কেননা আমি দেখেছি যে, জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। জনৈকা বুদ্ধিমতী মহিলা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ কি? বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিসম্পাত করে থাকো এবং স্বামীর প্রতি (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করে থাকো। আর দ্বীন ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে ক্রটিপূর্ণ কোন সম্প্রদায়, জ্ঞানীদের উপর তোমাদের চেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে আমি দেখিনি।
প্রশ্নকারিনী জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনে আমাদের কমতি কিসে? তিনি বললেনঃ তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির ক্রটি হলো দু-জন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান; এটাই তোমাদের বুদ্ধির ক্রটির প্রমাণ। স্ত্রীলোক (প্রতিমাসে) কয়েকদিন সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত থাকে আর রমযান মাসে রোযা ভঙ্গ করে; (ঋতুমতী হওয়ার কারণে) এটাই দ্বীনের ক্রটি।
আবূ তাহির ... ইবনু হাদ-এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৪৬. হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) সুত্রে এবং ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. নামায পরিত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দের প্রয়োগ
১৪৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী আদম যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দুরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায়! দুর্ভাগ্যা! ইবনু কুরায়বের বর্ণনায় রয়েছে, হায়রে, আমার দুর্ভাগ্য! বনী আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হল। তারপর সে সিজদা করল এবং এর বিনিময় তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হল, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম, ফলে আমার জন্য জাহান্নাম।
১৪৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আমাশ (রাঃ)-এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে فَعَصَيْتُ فَلِيَ النَّارُ "আমি অমান্য করলাম; ফলে আমার জন্য নির্ধারিত হল জাহান্নাম"।
১৪৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়াহ আততামীমী এবং উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা।
১৫০. আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা।
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সর্বোত্তম আমল
১৫১. মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম এবং মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। প্রশ্ন করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ত্রুটিমুক্ত হাজ্জ (হজ্জ)।
মুহাম্মাদ ইবনু জাফরের রেওয়ায়েতে আছেঃ তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি ঈমান আনা। মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরীর সুত্রেও এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৫২. আবূ রাবী' আয-যাহরানী এবং খালফ ইবনু হিশাম (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আমি আবার প্রশ্ন করলামঃ কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা উত্তম? তিনি বললেনঃ সে গোলাম আযাদ করা উত্তম, যে মুনীবের কাছে অধিক প্রিয় এবং অধিক মূল্যবান। আমি আরয-করলাম আমি যদি তা করতে না পারি? তিনি বললেনঃ তা হলে অন্যের কর্মে সাহায্য করবে অথবা কর্মহীনের কাজ করে দেবে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আমি এমন কোন কাজ করতে অক্ষম হই? তিনি বললেনঃ তোমার মন্দ আচরণ থেকে লোকদের মুক্ত রাখবে। এ হল তোমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি সা’দকা।
১৫৩. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তার বর্ণনার একটু শাব্দিক পার্থক্য রয়েছে, অর্থ একই।
১৫৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ সময়মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি, জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পাছে তিনি বিরক্ত হন, এ ভেবে আমি অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত রইলাম।
১৫৫. মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর আল মাক্কী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা-করেন যে, তিনি বললেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নাবী! কোন আমল জান্নাতের অধিক নিকটবতী করে? তিনি বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) তার সঠিক সময়ে আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর কোনটি হে আল্লাহর নাবী? তিনি বললেনঃ মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম আর কোনটি হে আল্লাহর? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা।
১৫৬. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায আল আনবারী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) সঠিক সময়ে আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তারপর পিতামাতার প্রতি সদ্বব্যাবহার করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর কোনটি হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্থায় জিহাদ করা। তিনি আমাকে একথা গুলো ইরশাদ করলেন, যদি আমি আরো প্রশ্ন করতাম, তাহলে তিনি আরও অতিরিক্ত বিষয় বলতেন।
১৫৭. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু’বার সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে وَأَشَارَ إِلَى دَارِ عَبْدِ اللَّهِ وَمَا سَمَّاهُ لَنَا (তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের ঘরের দিকে ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু আমাদের সামনে তার নাম উল্লেখ করেননি) কথাগুলো অতিরিক্ত রয়েছে।
১৫৮. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) সঠিক সময়ে আদায় করা এবং পিতামাতার প্রতি সদ্যবহার করা আমল সমূহের মধ্যে বা আমলের মধ্যে সর্বোত্তম আমল।
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. শিরক ঘৃন্যতম গুনাহ এবং শিরকের পর সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ
১৫৯. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় গোনাহ কোনটি? তিনি বললেনঃ কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা; অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটা তো গুরুতর গোনাহ বটে। এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আপন সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে, সে তোমার আহারের সঙ্গী হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
১৬০. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর জন্য সমকক্ষ সাব্যস্ত করবে অথচ তিনই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করবে যে, সে তোমার আহারের সঙ্গী হবে। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে! এ উক্তির সমর্থনে আল্লাহ তাঁআলা নাযিল করেনঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে ব্যাক্তি এগুলো করে, সে শাস্তি-ভোগ করবে। (সূরা ফুরকানঃ ২৫- ৬৮)।
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. কবীরা গুনাহ এবং এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ
১৬১. ৩৮. কবীরা গুনাহ এবং এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ
১৬২. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তা হল, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা; কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কথা বলা।
১৬৩. মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ ইবনু আবদুল হামীদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবীরা গুনাহর বর্ণনা করেন অথবা তাঁকে কবীরা গুনাহর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, পিতামাতার নাফরমানী করা। আর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় শোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বললেনঃ মিথ্যা কথা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। রাবী শু’বা বলেন, আমার প্রবল ধারণা যে, কথাটি হলোঃ شَهَادَةُ الزُّورِ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।
১৬৪. হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেচে থেকে। আরয করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কি? তিনি বললেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) যাদু করা, (৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা, (৪) ইয়াতীমের মাল (অন্যায়ভাবে) খাওয়া, (৫) সুদ খাওয়া, (৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সধবা, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।
১৬৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পিতামাতাকে গালমন্দ করা কবীরা গুনাহ। সাহাবা কিরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেউ কি তার পিতামাতাকে গালমন্দ করতে পারে? বললেন, হ্যাঁ। কোন ব্যাক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেয়, প্রতি উত্তরে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। কেউবা অন্যের মাকে গালি দেয়, জবাবে সেও তার মাকে গালি দেয়।
১৬৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার এবং মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. অহংকারের বিবরণ ও তা হারাম হওয়া
১৬৭. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে অনু পরিমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এও কি অহংকার? রাসুল বললেনঃ আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। অহমিকা হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।
১৬৮. মিনজাব ইবনু হারিস আত তামীমী ও সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমান ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যে ব্যাক্তির অন্তরে এক সরিষার দানা পরিমাণ অহমিকা থাকবে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
১৬৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪০. শিরক না করা অবস্থায় যার মৃত্যু হয়, সে জান্নাতী এবং মুশরিক অবস্থায় যার মৃত্যু হয়, সে জাহান্নামী
১৭০. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্য বর্ণনায় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা অবস্থায় যার মৃত্যু হয় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি (আবদুল্লাহ) বলি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৭১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবধারিতকারী দুটি বিষয় কি? তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কোনকিছু শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কোনকিছু শরীক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে।
১৭২. আবূ আইয়্যুব গায়লানী সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সম্মুখে হাযির হবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি তার সম্মুখে উপস্থিত হবে এমন অবস্থায় যে, সে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
১৭৩. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ …পরবর্তী অংশ পূর্ববতী হাদীসের অনুরুপ।
১৭৪. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমার কাছে এসে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করে ইন্তেকাল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে। তিনি বললেনঃ যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে।
১৭৫. যুহায়র ইবনু হারব ও আহমাদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলাম। সে সময় তিনি ঘুমাচ্ছিলাম এবং তার গায়ের উপর একথানা সাদা চাদর ছিল। আবার এসে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলাম। পরে আবার এসে দেখি, তিনি ঘুম থেকে উঠেছেন। আমি তাঁর কাছে বসলাম। তারপর বললেনঃ যে কোন বান্দা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই) বলবে এবং এ বিশ্বাসের উপর মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি আরয করলাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তবুও? রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে। আমি আবার আরয করলাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তবুও? রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে। এ কথাটি তিনবার পূনরাবৃত্তি করা হল। চতুর্থবারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদিও আবূ যারের নাক ধূলিমলিন হয় (অর্থাৎ আবূ যারের অপছন্দ হলেও)। রাবী বলেন, আবূ যার (রাঃ) এ কথা বলতে বলতে বের হলেন, وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ أَبِي ذَرٍّ (যদিও আবূ যারের নাক ধূলিমলিন হয়)।
No comments: