সহিহ মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান-৩য়
পরিচ্ছেদঃ ৪১. যে কাফির ব্যাক্তি 'لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ' বলল, তাকে হত্যা করা হারাম
১৭৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম তা হলে ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে হত্যা করো না। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে হত্যা করব না? তিনি বললেনঃ না, হত্যা করতে পারবে না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পুর্বে তোমার যে অবস্থান ছিল সে ব্যাক্তি সে স্থানে পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যাক্তি যে অবস্থানে ছিল তুমি সে স্থানে পৌছবে।
১৭৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ, ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যুহুরি (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে আওযাঈ ও ইবনু জুরায়জ তাদের হাদীসে বলেন, সে লোকটি বলেছিল, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম, যেমন পূর্বোক্ত হাদীসে লায়স বর্ণনা করেছেন। আর মা’মার বর্ণিত হাদীসে যখন আমি তাকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলাম, তখন সে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলল, কথাটির উল্লেখ আছে।
১৭৮. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... মিকদাদ ইবনু আমর ইবনু আসওয়াদ আল কিন্দী (রাঃ) যিনি বনী যুহরার মিত্র এবং বদরের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাযির ছিলেন তার থেকে বর্ণিত। তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যুদ্ধের ময়দানে কোন কাফিরের সমুখীন হই। বাকি অংশ লায়স বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
১৭৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইব্রাহিম (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এক সেনাভিযানে পাঠালেন। আমরা অতি প্রত্যুষে জুহায়ানা গোত্রের হুরাকা শাখার উপর হামলা করলাম। যুদ্ধে আমি এক ব্যাক্তিকে মুখোমুখি পেয়ে গেলাম। সে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে উঠল আমি তাকে বর্শা দ্বারা আঘাত হানলাম। এতে আমার অন্তরে খটকা সৃষ্টি হল। পরে আমি রাসুল এর খেদমতে ঘটনাটি উল্লেখ করি। তিনি বললেনঃ সেকি لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলেছিল, আর তুমি তাকে হত্যা করে ফেললে? আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে তো এ কথা আমার অস্ত্রের ভয়ে বলেছিল।
তিনি বললেনঃ তুমি কি তার অন্তর ছিড়ে দেখেছ, যাতে তুমি জানতে পারলে যে সে এ কথাটি ভয়ে বলেছিল? তিনি বারবার এ কথাটির পুনরাবৃত্তি করছিলেন। ফলে আমার মনে হচ্ছিল যে, আজই যদি আমি ইসলাম কবুল করতাম! সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করবনা, যতক্ষন না “যুল বুতায়ন” (ভুড়িওয়ালা) উসামা তাকে হত্যা করে। এক ব্যাক্তি আরয , আল্লাহ কি ইরশাদ করেননিঃ وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ “তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যতক্ষন পর্যন্ত ফিতনা বিদুরিত না হয় এবং এবং দ্বীন পরিপূর্ণ রুপে আল্লাহর জন্য। প্রতিষ্ঠিতনা হয়। ” (বাকারাঃ ১৯৩) সা’দ বললেন, আমরা তো কাফিরদের বিরুদ্ধে এ জন্য লড়াই করেছি যে, ফিতনা যেন দূর হয়। আর তুমি ও তোমার সঙ্গীরা (খারিজী সম্প্রদায়) তো এজন্যই লড়ছ, যাতে ফিতনা সৃষ্টি হয়।
১৮০. ইয়াকুব আল দাওরাকী (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ ইবনু হারিছা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুহায়না গোত্রের হুরাকা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের পাঠালেন। আমরা অতি প্রত্যুষে সে সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করলাম এবং আমরা তাদের পরাজিত করলাম। আমি এবং একজন আনসার এক ব্যাক্তির পশ্চাদ্ধাবন করলাম। আমরা যখন তা কে ঘিরে ফেললাম তখন সে “اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ” বলল আনসার তার মুখে কালিমা শুনে নিবৃত্ত হলেন। কিন্তু আমি তাকে বল্লম দ্বারা এমন আঘাত করলাম যে, তাকে মেরেই ফেললাম।
আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ খবরটি পৌছল। তিনি আমাকে ডেকে বললেনঃ হে উসামা! তুমি কি তাকে اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলার পরেও হত্যা করে ফেলেছ? আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে ব্যাক্তি তো আত্নরক্ষার জন্য একথা বলেছিল। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ তুমি কি তাকে اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলার পরে হত্যা করেছ? এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার আমার প্রতি একথা বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আমার মনে এ আকাঙ্ক্ষা উদয় হল যে হায়! যদি আজকের দিনের আগে আমি ইসলাম ধর্মগ্রহণ না করতাম।
১৮১. আহমাদ ইবনু হাসান ইবনু খিরাশ (রহঃ) ... জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রের ফিতনার যুগে আস’আস ইবনু সালামাকে বলে পাঠালেন যে, তুমি তোমার কিছু বন্ধু আমার জন্য একত্র করবে, আমি তাদের সাথে কথা বলব। আস‘আস তাদের কাছে লোক পাঠালেন। তারা যখন সমবেত হল, জুনদুব তখন হলুদ বর্ণের বুরনূস (এক ধরনের টূপি) পরে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা আগের মত কথাবার্তা বলতে থাক। সুতরাং তারা চক্রাকারে কথা বলতে থাকল। অবশেষে যখন তার পালা আসল তিনি তাঁর মাথার বুরনূস নামিয়ে ফেললেন। বললেন, আমি তোমাদের কাছে যখন এসেছি তখন আমি তোমাদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস বর্ণনা করতে চাইনি, কিন্তু এখন শোনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বাহিনী মুশরিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠালেন। উভয় দল পরস্পর সম্মুর্খীন হল। মুশরিক বাহিনীতে এক ব্যাক্তি ছিল। সে যখনই কোন মুসলিমকে হামনা করতে ইচ্ছা করত, সে তাকে লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়ত এবং শহীদ করে ফেলত। একজন মুসলিম তার অসতর্ক মূহৃর্তের অপেক্ষা করতে লাগলেন। জুনদুব বললেন, আমাদের বলা হলো যে, সে ব্যাক্তি ছিল উসামা ইবনু যায়িদ। তিনি যখনঁ তার উপর তলোয়ার উত্তোলন করলেন তখন সে বলল, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ তবুও উসামা (রাঃ) তাকে হত্যা করলেন।
দুত যুদ্ধে জয়লাভের সুসংবাদ নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হল। তিনি তার কাছে যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। সে সব ঘটনাই বর্ণনা করল, এমন কি সে ব্যাক্তির ঘটনাটিও বলল যে তিনি কি করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে ডেকে পাঠালেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি সে ব্যাক্তিকে হত্যা করলে কেন? উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে অনেক মুসলিমকে ঘায়েল করেছে এবং অমুক অমুককে শহীদ করে দিয়েছে। এ বলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন।
আমি যখন তাকে আক্রমণ করলাম এবং সে তলোয়ার দেখল অমনি সে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে মেরে ফেললে? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মাগফিরাতের জন্য দু’আ করুন। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (কালিমা) নিয়ে আসবে তখন তুমি কি করবে? তারপর তিনি কেবল এ কথাই বলছিলেনঃ কিয়ামতের। দ্বীন যখন সে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উক্তিঃ "যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্রধারন করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়"
১৮২. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমাদের দলভূক্ত নয়।
১৮৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে তলোয়ার উত্তোলন করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
১৮৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আল আশয়ারী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তলোন করবে সে আমাদের দলভূক্ত নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উক্তিঃ "যে ব্যাক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়"
১৮৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ এবং আবূল আহওয়াস মুহাম্মাদ ইবনু হাইয়ান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যাক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভূক্ত নয়।
১৮৬. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়া যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো আদ্র দেখতে পান। তিনি বললেনঃ হে খাদ্যশস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসুল বললেনঃ কেন তুমি ভিজা অংশ খাদ্যশস্যের উপরে রাখনি, যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। যে ব্যাক্তি ধোকা দেয় সে আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. (মৃতের শোকে) গাল চাপড়ানো, জামা ছিঁড়ে ফেলা এবং জাহিলী যুগের ন্যায় উচ্চঃস্বরে বিলাপ করা হারাম
১৮৭. য়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (মৃতের জন্য) গাল চাপড়াবে, জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলবে অথবা জাহিলী যুগের মত বিলাপ করবে, সে আমাদের দলভূক্ত নয়। ইবনু নূমায়ের ও আবূ বকর أَوْ شَقَّ এর স্থলে وَشَقَّ وَدَعَا বর্ণনা করেছেন।
১৮৮. উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম এবং আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ)-এর সুত্রে উপরোক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তারা وَشَقَّ وَدَعَا বর্ণনা করেছেন।
১৮৯. আল হাকাম ইবনু মূসা আল কানতারী (রহঃ) ... আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ মূসা (রাঃ) কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার মাথা তার পরিবারের এক মহিলার কোলে ছিল। সে মহিলা চিৎকার করে উঠল। তিনি তাকে তা থেকে বাধা দিতে পারেন নি। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে ফেলেন তখন বললেন, আমি তার থেকে সস্পর্কহীন, যার থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কছেদ করেছেন। যে ব্যাক্তি (মৃতের শোকে) সজোরে রোদন করে, কেশ মুন্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
১৯০. আবদ ইবনু হুমায়দ ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ ও আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) বেহুশ হয়ে পড়েন। তাঁর ন্ত্রী উম্মে আবদুল্লাহ চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে আসলেন। তারা বলেন, অতঃপর তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন এবং বললেন, তুমি কি জানো না? তারপর তিনি তাকে এ হার্দীস শোনান যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সে ব্যাক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন, যে ব্যাক্তি মাথার কেশ মুন্ডন করে, চিৎকার করে কান্নাকাটি করে এবং জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে।
১৯১. আবদুল্লাহ ইবনু মুতী, হাজ্জাজ ইবনু শাইর এবং হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী ইয়ায আল আশ আরীর হাদীসে لَيْسَ مِنَّا (সে আমার দলভূক্ত নয়) কথাটি রয়েছে। তিনি بَرِيءٌ (তিনি বিচ্ছিন্ন) শব্দটি বলেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. চোগলখুরী জঘন্যতম হারাম
১৯২. শায়বান ইবনু ফাররুখ ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয-যুবায়ী (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) এর থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযায়ফা (রাঃ) এর কাছে খবর পৌছল যে, এক ব্যাক্তি চোগলখুরী করে বেড়ায়। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
১৯৩. আলী ইবনু হুজর আল সা’দী ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু হারীস (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে এক ব্যাক্তি সাধারণ লোকজনের কথাবার্তা শাসনকর্তার কাছে পৌছাত। একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। উপবিষ্ট লোকেরা বলল এ সে ব্যাক্তি যে লোকের কথাবার্তা শাসনকর্তার কাছে পৌছায়। রাবী বললেন, এরপর সে উপস্থিত হল এবং আমাদের প্যশে বসে পড়ল। তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ কোন চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
১৯৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং মিনজাব ইবনু হারিস তামীমী (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু হারিস (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা হুযায়ফা (রাঃ) এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি হাযির হলো ও আমাদের সাথে বসে পড়ল। তখন হুযায়ফা (রাঃ) এর কাছে আরয করা হল, এ ব্যাক্তি শাসকের কাছে নানা বিষয়ে খবরাখবর পৌছায়। হুযায়ফা (রাঃ) তাকে শোনানোর উদ্দেশ্যে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. কাপড় টাখনুর নিচে নামিয়ে পরা, দান করে খোঁটা দেওয়া ও শপথের মাধ্যমে মালামাল বেচাকেনা করা হারাম এবং সে তিন ব্যাক্তির বর্ণনা যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলা কথা বলবেন না, রহমতের নযরে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি
১৯৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যাক্তির সাথে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি তাকালেন না, তাদের পবিত্র করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাবী বলেন, তিনি এটা তিনবার পাঠ করলেন। আবূ যার (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা হচ্ছে- যে ব্যাক্তি টাখনুর নিচে ঝূলিয়ে কাপড় পরে, সে ব্যাক্তি দান করে খোটা দেয় এবং যে ব্যাক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে।
১৯৬. আবূ বকর ইবনু খাল্লাদ আল বাহিলী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যাক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ জন্য কথা বলবেন না। (১) খোটা দাতা যে ব্যাক্তি কিছু দান করেই খোটা দেয়, (২) যে ব্যাক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করে এবং (৩) যে ব্যাক্তি টাখনুর নিচে ঝূলিয়ে ইযার পরিধান করে।
বিশর ইবনু খালিদ (রাঃ) শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি সুলায়মানকে এ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, তিন ব্যাক্তির সাথে আল্লাহ জন্য কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেন না এবং তাদের (শোনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১৯৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যাক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়াআলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মূআবিয়া বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেনও না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হল) যিনাকারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও অহংকারী দরিদ্র ব্যাক্তি।
১৯৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যাক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (তারা হল) সে ব্যাক্তি, যে কোন প্রান্তরে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রাখে এবং মূসাফিরকে তা থেকে দেয় না, যে ব্যাক্তি আসরের (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) পর কারো কাছে কোন পণ্য বিক্রি করে এবং আল্লাহর শপথ করে বলে যে, সে এত দামে কিনেছে আর ক্রেতা তার কথায় বিশ্বাস করে অথচ শপথকারী সে মুল্যে উক্ত পণ্য খরিদ করেনি। যে ব্যাক্তি পার্থিব ইমামের কাছে বায়আত করে এবং ইমাম যদি তার পার্থিব স্বার্থ পূর্ণ করে তবে সে ওয়াফাদারী করে; আর যদি পার্থিব স্বার্থ পূর্ণ না করে তাহলে সে ওয়াফাদারী করে না।
১৯৯. যুহায়র ইবনু হারব এবং সাঈদ ইবনু আমর আল আশআসী ... আমাশ এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী জারীর বর্ণিত হাদীসে رَجُلٌ سَاوَمَ رَجُلاً (যে ব্যাক্তি তার পণ্যের ব্যাপারে অন্যের সাথে দামদর করে) কথাটির উল্লেখ আছে।
২০০. আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যতদূর সম্ভব মারফূহ সনদে [অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে] বর্ণনা করেন যে, তিন ব্যাক্তির সাথে আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহমতের নযরে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তিা (তারা হচ্ছেন) যে ব্যাক্তি আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর কোন মুসলমানের মালের উপর শপথ করে, তা আত্মসাৎ করে। হাদীসের বাকি অংশ আ'মাশের হাদীসের অনুরুপ।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. আত্মহত্যা করা মহাপাপ, যে ব্যাক্তি যে বস্তুদ্বারা আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে সে বস্তু দ্বারা তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং মুসলিম ব্যাতিত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না
২০১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা আত্নহত্যা করবে, সে অস্ত্র তার হাতে থাকবে, জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দ্বারা সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি বিষপানে আত্নহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করে উক্ত বিষ পান করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি নিজকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে আত্নহত্যা করবে, সে ব্যাক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে ব্যাক্তি সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
২০২. যুহায়র ইবনু হারব, সাঈদ ইবনু আমর আল আশ-আসী এবং ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... তাঁরা সবাই উপরোক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। শু’বার বর্ণনায় সুলায়মানের সুত্রে বর্ণিত আছে, “আমি যাকওয়ানকে বলতে শুনেছি”।
২০৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (হুদায়বিয়া প্রান্তরে) বৃক্ষের নিচে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়অোত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের উপর মিথ্যা শপথ করে, সে সেই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যাক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্নহত্যা করবে, কিয়ামত দিবসে উক্ত বস্তু দ্বারা তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। যে ব্যাক্তি এমন বস্তুর মানত করে যার মালিক সে নয় তার মানত কার্যকরি নয়।
২০৪. আবূ গাসশান আল মিসমাঈ (রহঃ) ... সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সে বস্তুর মানত কার্যকরী নয়, যার মালিক সে নয়। মু'মিনকে অতিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার শামিল। যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে, কিয়ামত দিবসে উক্ত বস্তু দ্বারা তাকে শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যাক্তি সম্পদ বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা দাবি করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য স্বল্পতরই বৃদ্ধি করবেন। আর যে ব্যাক্তি বিচারকের সামনে মিথ্যা শপথ করবে (তার অবস্থাও মিথ্যা দাবিদারদের অনুরুপ হবে)।
২০৫. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইসহাক ইবনু মানসুর, আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সেচ্ছায় ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করবে, সে যেরুপ বলেছে সেরুপ হবে। আর যে ব্যাক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্নহত্যা করবে, তাকে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামে সে বস্তু দ্বারা শাস্তি দিবেন। এ হল রাবী সুফিয়ানের বর্ণনা।
আর রাবী শুবার বর্ণনা হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করবে, সে যেরুপ বলেছে সেরুপই হবে। যে ব্যাক্তি কোন বস্তু দ্বারা নিজকে যবেহ করবে, কিয়ামত দিবসে উক্ত জিনিস দ্বারা তাকে যবেহ করা হবে।
২০৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হুনায়নে উপস্তিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবিদার এক ব্যাক্তি সম্পর্কে বললেন যে, এ ব্যাক্তি জাহান্নামী। তারপর যুদ্ধ শুরু হল, উক্ত লোকটি ভীষণভাবে যুদ্ধ করল, পরে সে ক্ষতবিক্ষত হল। আরয করা হলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এইমাত্র যে ব্যাক্তিকে জাহান্নামী বলেছেন, সে তো আজ খুব লড়েছে এবং মারা গিয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জাহান্নামে গিয়েছে। ব্যাপারটি কিছুসংখ্যক মুসলিমের কাছে সন্দেহজনক লাগছিল।
ইত্যবসরে খবর ছড়িয়ে পড়ল যে, সে মরে নি, কিন্তু ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। রাতের বেলায় সে ক্ষতের কষ্ট বরদাশত করতে পারছিল না। তাই সে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলল। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ আকবার, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তার বান্দা এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল। তারপর বিলালকে ডেকে তিনি নির্দেশ দিলেন, লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা পাপী বান্দা দ্বারাও এ দ্বীনের (ইসলামের) শক্তি বাড়িয়ে দেন।
২০৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ আল সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুশরিকরা পরস্পর মুখোমুখি হলেন এবং যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সেনাবাহিনীর দিকে অগ্রসর হলেন এবং অপরপক্ষও তাদের সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গীদের মধ্যে সে সময় এমন এক ব্যাক্তি ছিল যে সেদিন বীরত্বের সাথে লড়েছিল। কোন কাফিরকে দেখামাত্র সে তার পিছনে লেগে যেত এবং তরবারি দ্বারা খতম করে দিত। লোকেরা তার বীরত্ব দেখে বলাবলি করছিল যে, অমুক ব্যাক্তি আজ যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে, আমাদের কেউ তা পারেনি। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মনে রেখ, সে ব্যাক্তি জাহান্নামবাসী।
উপস্থিত লোকদের একজন বলল, আমি সর্বক্ষণ তার সাথে থাকব। তারপর সে ব্যাক্তি তার পিছনে থাকল। যেখানে সে থামত, সেও সেখানে থেমে যেত। যখন সে দ্রুতবেগে কোথাও যেত, সেও তার সাথে দ্রুতবেগে সেখানে গমন করত। শেষ পর্যন্ত সে ব্যাক্তি মারাত্মকভাবে যখম হল। তারপর ক্ষতের জ্বালার তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে ত্বরায় মৃত্যু কামনা করল। সে তার তরবারি যমীনে রেখে এর অগ্রভাগ তার উভয় স্তনের মাঝামাঝি ঠেকিয়ে তার উপর ঝুঁকে পড়ল এবং নিজেকে হত্যা করল।
তাকে অনুসরণকারী লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেল এবং সাক্ষ্য প্রদান করল, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেনঃ ব্যাপার কি? সে বলল, আপনি একটু আগে যে ব্যাক্তিকে জাহান্নামী বলেছিলেন এবং লোকেরা এতে আশ্চর্যানিত হয়েছিল; আমি বলেছিলাম, আমি তার সাথে থেকে তোমাদেরকে খবর পৌছাব। আমি অপেক্ষায় রইলাম। অবশেষে সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং ত্বরায় মৃত্যুর জন্য নিজের তরবারি যমীনে রেখে এর অগ্রভাগ তার উভয় ন্তনের মাঝামাঝি ঠেকিয়ে দিল। তারপর এর উপর ঝুঁকে পড়ল এবং নিজেকে হত্যা করল। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকের দৃষ্টিতে কোন ব্যাক্তি জান্নাতের কাজ করছে অথচ সে জাহান্নামী হয়। আবার লোকের দৃষ্টিতে কোন ব্যাক্তি জাহান্নামের কাজ করছে; অথচ সে জান্নাতবাসী হয়।
২০৮. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... শায়বান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাসান (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমাদের আগের যুগের এক ব্যাক্তির ফোঁড়া হয়েছিল, ফোঁড়ার যন্ত্রনা অসহ্য হওয়ায় সে তার তূণ থেকে একটি তীর বের করল আর তা দিয়ে আঘাত করে ফোঁড়াটি চিরে ফেলল। তখন তা হতে সজোরে রক্তক্ষরণ শুরু হল, অবশেষে সে মারা গেল। তোমাদের প্রতিপালক বলেন, আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। তারপর হাসান আপন হাত মসজিদের দিকে প্রসারিত করে বললেন, আল্লাহর কসম, জুনদুব (ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী) এ মসজিদেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।
২০৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) ... হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী এ মসজিদে বসেই আমাদিগকে নসীহত করেছেন। তারপর আমরা তা ভুলে যাইনি। আর আমরা আশঙ্কা করি না যে, জুনদুব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পুর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে এক ব্যাক্তির ফোঁড়া হয়েছিল ... তারপরের অংশ উপরের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা হারাম; ঈমানদার ব্যতিত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না
২১০. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, খায়বারের যুদ্ধ শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একদল সাহাবী এসে বলতে লাগল, অমুক শহীদ, অমুক শহীদ। এভাবে কথাবার্তা চলছিল, অবশেষে এক ব্যাক্তি প্রসঙ্গে তাঁরা বললেন যে, সেও শহীদ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনই না। এ আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি, সে চাঁদর বা জোব্বার কারণে (যা সে ব্যাক্তি গনীমতের মাল থেকে আত্মসাৎ করেছিল)। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! যাও লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, জান্নাতে কেবলমাত্র প্রকৃত মুমিন ব্যাক্তিরাই প্রবেশ করবে। উমর ইবনু খাত্তাব বলেন, তারপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করে দিলাম, “সাবধান! শুধু প্রকৃত মুমিনরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
২১১. আবূ তাহির ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বার প্রান্তরে গমন করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদিগকে বিজয়ী করলেন। গনীমতের মধ্যে আমরা স্বর্ণ, রৌপ্য পাইনি পেয়েছি আসবাবপত্র, খাদ্যশস্য ও কাপড়-চোপড়। তারপর আমরা সেখান থেকে একটি উপত্যকার দিকে রওয়ানা হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তার একটি গোলাম ছিল। জুযাম গোত্রের যুবায়ব শাখার রিফা’আ ইবনু যায়দ নামে এক ব্যাক্তি তাঁকে গোলামটি উপহার দিয়েছিল। আমরা সে উপত্যকায় উপনীত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সে গোলামটি তার হাওদা খুলতে লাগল। এ সময় তার গায়ে একটি তীর এসে লাগল এবং তার মৃত্যু ঘটল। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তার শাহাদতের সৌভাগ্যের জন্য মূবারকবাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনো নয়, সে মহান সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, যে চাঁদরখানা খায়বার যুদ্ধের গনীমত বনানের পূর্বেই সে নিয়ে গিয়েছিল, তা আগুন হয়ে তার উপর জ্বলতে থাকবে। রাবী বলেন, এতে লোকেরা ঘাবড়ে গেল। এক ব্যাক্তি জুতার একটি কিংবা দুঁটি ফিতা নিয়ে হাযির হলো। সে আরয করলো, হে আল্লাহর রাসুল! খায়বারের দিন আমি এটি পেয়েছিলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ একটি আগুনের ফিতা; কিংবা বললেনঃ এ দু'টি আগুনের ফিতা।
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. আত্মহত্যাকারী কাফির হবে না তার প্রমান
২১২. আবূ বকর ইবনু শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তুফায়ল ইবনু আমর দাওসী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন এবং আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি চান যে, আপনার জন্য একটি মযবুত দুর্গ ও সেনাবাহিনী হোক? রাবী বলেন, দাওসী গোত্রের জাহিলিয়্যাহ যুগের একটি দুর্গ ছিল। (তিনি সেদিকে ইঙ্গিত করেন)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কবুল করলেন না। কারণ আল্লাহ তাআলা আনসারদের জন্য এ সৌভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিযরত করলেন, তখন তুফায়ল ইবনু আমর এবং তার গোত্রের একজন লোকও তাঁর সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। কিন্তু মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকুল হয়নি। তুফায়ল ইবনু আমর (রাঃ)-এর সাথে আগত লোকটি অসুস্থ হয়ে পড়ল। রোগযন্ত্রণা বরদাশত করতে না পেরে তীর নিয়ে তার হাতের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলল। এতে উভয় হাত থেকে রক্ত নির্গত হতে থাকে। অবশেষে সে মারা যায়।
তুফায়ল ইবনু আমর দাওসী (রাঃ) স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্থায় দেখতে পেলেন, কিন্তু তিনি তার উভয় হাত আবৃত দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার রব তোমার সাথে কিরুপ ব্যবহার করেছেন? সে বলল, আল্লাহর জন্য তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে হিজরত করার কারণে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুফায়ল (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে যে, আমি তোমার হাত দুটি আবৃত দেখছি? সে বলল, আমাকে বলা হয়েছে যে, আমি তা দুরস্ত করব না, তুমি স্বেচ্ছায় যা নষ্ট করেছ। তুফায়ল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তার হাত দুটিকেও ক্ষমা করে দিন।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. কিয়ামতের পূর্বে এক বাতাস প্রবাহিত হবে, সামান্য ঈমানও যার অন্তরে আছে তার রূহ সে বাতাস কব্য করে নিবে
২১৩. আহমাদ ইবনু আবদা আয যাব্বী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা'লা কিয়ামতের আগে ইয়ামন থেকে এক বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা হবে রেশম অপেক্ষাও নরম। যার অন্তরে দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে, তার রুহ ঐ বাতাস কবয করে নিয়ে যাবে। আবূ আলকামাহ مِثْقَالُ حَبَّةٍ বলেছেন এবং রাবী আবদুল আযীয (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় مِثْقَالُ حَبَّةٍ স্থলে مِثْقَالُ ذَرَّةٍ (অনু পরিমাণ) উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫১. ফিতনা প্রকাশের পূর্বেই নেক আমলের প্রতি অগ্রসর হওয়ার জন্য উৎসাহ দান
২১৪. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ অন্ধকার রাতের মত ফিতনা আসার আগেই তোমরা নেক আমলের প্রভি অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫২. আমল নষ্ট হওয়া সম্পর্কে মু'মিনের আশঙ্কা
২১৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ এ আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) “হে মুমিনগণ, তোমরা নাবীর কণ্ঠের উপর নিজেদের কন্ঠ উচু করবে না! এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল তাঁর সাথে সেরুপ উচ্চস্বরে কথা বলবে না। এতে তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; অথচ তোমরা টেরও পাবে না।” (হুজরাতঃ ২) (উপরোক্ত আয়াত নাযিল হলে) সাবিত (রাঃ) নিজের ঘরে বসে গেলেন এবং বলতে নাগলেনঃ আমি একজন জাহান্নামী। এরপর থেকে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী সা’দ ইবনু মু’আযকে সাবিত (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললেনঃ হে আবূ আমর, সাবিতের কি হল? সা’দ (রাঃ) বললেন, সে তো আমার প্রতিবেশী, তার কোন অসূখ হয়েছে বলে তো জানিনা। আনাস (রাঃ) বলেন, পরে সা’দ (রাঃ) সাবিতের কাছে গেলেন এবং তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্তব্য উল্লেখ করলেন। সাবিত (রাঃ) বললেন, এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আর তোমরা জানো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর আমার কন্ঠস্বর সবচেয়ে উচু হয়ে যায়। সূতরাং আমি তো জাহান্নামী। সা’দ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে সাবিতের কথা বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ না, বরং সে তো জান্নাতী।
২১৬. কাতান ইবনু নুসায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস ছিলেন আনসারদের খাতীব। এ আয়াত নাযিল হলোঃ (অর্থ) তোমরা নাবীর কণ্ঠের উপর নিজেদের কণ্ঠ উচু করো না। ” বাকি অংশ হাম্মাদ বর্ণিত উল্লেখিত রেওয়ায়েতের অনুরুপ। তবে এ রেওয়ায়েতে সা’দ ইবনু মু’আয-এর উল্লেখ নাই।
আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর আদ দারিমী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন এ আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) তোমরা নাবীর কণ্ঠের উপর নিজেদের কণ্ঠ উচু করো না।” এ বর্ণনায় সা’দ ইবনু মু’আয-এর উল্লেখ নাই।
২১৭. হুরায়ম ইবনু আবদুল আলা আল আসা’দী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হালা...। এতেও সা’দ ইবনু মূআযের উল্লেখ নাই। তবে শেষে আছে, আমরা তাঁকে ভাবতাম, একজন জান্নাতী লোক আমাদের মাঝে বিচরন করছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. জাহেলী অবস্থার আমলেরও কি শাস্তি হবে?
২১৮. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, কিছু সংখ্যক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, জাহিলী যুগে আমরা যা করেছি, এর জন্যও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেনঃ ইসলাম অবস্থায় যে ব্যাক্তি ভাল করবে, তার জন্য জাহিলী যুগের আমলের জন্য পাকড়াও হবে না। কিন্তু যে ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণের পরও মন্দ করবে, তাকে জাহিলী ও ইসলাম উভয় যুগের আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে।
২১৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা জাহেলী যুগে যা করেছি, এর জন্যও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম অবস্থায় ভাল করবে, জাহেলী যুগে সে কি করেছে, তার জন্য পাকড়াও করা হবে না। আর ইসলাম। গ্রহনের পর যে মন্দ করে, তাকে প্রথম ও শেষ, সব আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে।
২২০. মিনজাব ইবনু হারিস আত তামীমী (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫৪. ইসলাম গ্রহন, হিজরত ও হজ্জ দ্বারা পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে
২২১. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না আল আনাযী, আবূ মাআন আল রাকাশী ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... ইবনু শামাসা আল মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনু আস (রাঃ)-এর মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন। তার পুত্র তাঁকে তাঁর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত বিভিন্ন সুসংবাদের উল্লেখ পূর্বক প্রবোধ দিচ্ছে যে, আব্বা! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাবী বলেন, তখন তিনি পুত্রের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, আমার সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে "লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" এ কালিমার সাক্ষ্য দেয়া। আর আমি অতিক্রম করেছি আমার জীবনের তিনটি পর্যায়।
এক সময় তো আমি এমন ছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোরতর আর কেউই ছিল না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কবজায় পেতাম আর হত্যা করতে পারতাম, এ ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাবনা। যদি সে অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো, তবে নিশ্চিত আমাকে জাহান্নামে যেতে হতো।
এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানোানাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বায়আত করতে চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন, তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমর, কি ব্যাপার? বললাম, পূর্বে আমি শর্ত করে নিতে চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ কি শর্ত করবে? আমি উত্তর করলাম, আল্লাহ যেন আমার সব শোনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমর! তুমি কি জানো না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়। হিজরত পূর্বেকৃত শোনাহসমুহ মিটিয়ে দেয় এবং হাজ্জ (হজ্জ)ও পূর্বের সকল শোনাহ মিটিয়ে দেয়। আমর বলেন, এ পর্যায়ে আমার অন্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা বেশি প্রিয় আর কেউ ছিল না। আমার চোখে তিনি অপেক্ষা মহান আর কেউ ছিল না। অপরির্সীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তার প্রতি চোখ ভরে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তাঁর দেহ আকৃতির বর্ণনা করতে বলা হয়, তবে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। কারণ চোখভরে আমি কখনোই তাঁর প্রতি তাকাতে পারি নি। ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হতো তবে অবশ্যই আমি জান্নাতী হওয়ার আশাবাদী থাকতাম।
পরবর্তীকালে আমরা নানা বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছি, তাই জানিনা, এতে আমার অবস্থান কোথায়? সুতরাং আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিনা অথবা আগুন যেন আমার জানাযার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যবাই করে তার গোশত বল্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষন আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার প্রতিপালকের দূতের কি জবাব দেব।
২২২. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন ও ইবরাহীম ইবনু র্দ্বীনার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, মুশরিকদের কতিপয় লোক যারা ব্যাপকভাবে হত্যা ও ব্যাভিচারে লিপ্ত ছিল, তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে এসে জিজ্ঞেস করল, আপনি যে দ্বীনের প্রতি মানুষদের আহবান জানোাচ্ছেন, এ তো অনেক উত্তম বিষয়। তবে আমাদের পূর্বকৃত গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কে আপনি যদি আমাদের নিশ্চিতভাবে কিছু অবহিত করতেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) “এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে। (ফুরকানঃ ৬৮) আরো নাযিল হয়ঃ (অর্থ) বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না।” (যুমারঃ ৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ৫৫. ইসলাম গ্রহনের পূর্বেকার কুফরী জীবনের নেককাজসমূহের প্রতিদান প্রসঙ্গে
২২৩. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, জাহিলী যুগে আমি যেসব নেক কাজ করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ তোমার সৎকর্মের ফলেই তুমি ইসলাম গ্রহনের সৌভাগ্য লাভ করেছ। রাবী বলেন, হাদীসে উক্ত التَّحَنُّثُ শব্দটির অর্থ التَّعَبُّدُ ‘নির্জনে ইবাদত করা’।
২২৪. হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ)- থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সা’দকা, দাসমুক্তি ও আত্নীয়-স্বজনদের সাথে সুসস্পর্ক রাখা ইত্যাদি যেসব নেক কাজ জাহির্লী যুগে আমি করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ তোমার পূর্বেকৃত সৎকর্মের ফলেই তুমি ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছ।
২২৫. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিছু কিছু বিষয় যা আমি যাহিলী যুগে নেক কাজ হিসাবে করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান পাব? তদুত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ তোমার সেসব নেক কাজের ফলেই তুমি ইসলাম গ্রহনের সৌভাগ্য লাভ করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! জাহেলী যুগে যেসব নেক কাজ আমি করেছি, ইসলামী যিন্দেগীতেও আমি তা করে যাব।
২২৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, হাকীম ইবনু হীযাম (রাঃ) জাহিলী যুগে একশ' ক্রীতদাস আযাদ করেছিলেন, মাল বোঝাই একশ' উট দান করেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পরেও তিনি একশ' ক্রীতদাস আযাদ করেন এবং মালামাল বোঝাই একশ উট সা’দকা করেন। পরে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে এসে প্রশ্ন করেন। এরপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫৬. ঈমানে সততা ও নিষ্ঠা
২২৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, (আল্লাহ তা’আলার বানী) ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করে নাই নিরাপত্তা তাদের জন্য, তারাই সৎ পথ প্রাপ্ত” (৬ঃ ৮২)। এ আয়াতটি অবতীর্ণ হলে বিষয়টি সাহাবীদের কাছে খুবই কঠিন মনে হল। তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে নিজের উপর আদৌ জুলুম করে নাই? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমরা যা মনে করেছ বিষয়টি তা নয়, বরং লূকমান তাঁর পুত্রকে সম্মোধন করে যা বলেছিলেন এর মর্ম, হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শরীক করো না, নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম।” (৩১ঃ ১৩)
২২৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আলী ইবনু খাশরাম, মিনজাব ইবনু হারিস আত তামীমী এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। আবূ কুরায়ব (রহঃ) বলেন, ইবনু ইদরীস (রহঃ) বলেছেন, প্রথমত আমার পিতা আমাকে আবান ইবনু তাগলিব থেকে আ'মাশ এ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, পরবর্তীকালে আমি নিজেই আমাশ থেকে সরাসরি এ হাদীস শুনেছি।
পরিচ্ছেদঃ ৫৭.মনের কল্পনা বা খটকা আল্লাহ্ তা'আলা মাফ করে দেন; যদি সে তাতে স্থির না হয়; মানুষের সামর্থ্যানুযায়ীই আল্লাহ্ তাকে দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং ভালো বা মন্দ কর্মের অভিপ্রায় প্রসঙ্গ
২২৯. মুহাম্মাদ ইবনু মিনহাল আয যারীর ও উমায়্যা ইবনু বিসতাম আল আয়শী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, (মহান আল্লাহর বানী) “আসমান ও যমীনে যত কিছু আছে, সমস্ত আল্লাহরই। তোমাদের মনের অভ্যন্তরে যা আছে তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব গ্রহণ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। ” (২ঃ ২৮৪) এ আয়াত নাযিল হলে বিষয়টি সাহাবীদের কাছে খুবই কঠিন মনে হল। তাই সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন এবং হাটু গেড়ে বসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাত (নামায/নামাজ), রোযা, জিহাদ, সা’দকা প্রভৃতি যে সমস্ত আমল আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ছিল এ যাবত আমাদেরকে সেগুলোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এ বিষয়টি তো আমাদের ক্ষমতার বাইরে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আহলে কিতাব- ইহুদি ও খৃষ্টানের মত তোমরাও কি এমন কথা বলবে যে, শুনলাম কিন্তু মাননাম না! বরং তোমরা বলো; শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ নির্দেশ শুনে সাহাবা কিরাম বললেন, আমরা শুনেছি ও মেনেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল।
রাবী বলেন, সাহাবীদের সকলে এ আয়াত পাঠ করলেন এবং বিনয়াপূত হয়ে মনেপ্রাণে তা গ্রহণ করে নিলেন। অনন্তর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ রাসুল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তিনি ঈমান আনয়ন করেছেন এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহতে, তার ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমুহে এবং তাঁর রাসুলগনে ঈমান আনয়ন করেছেন তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর তাঁরা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম! হে আমাদের রব! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই আর তোমারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। (২ঃ ২৮৪)
যখন তাঁরা সর্বতোভাবে আনুগত্য জ্ঞাপন করলেন তখন আল্লাহ তা’আলা উক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে নাযিল করলেনঃ “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়-দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার জন্য সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তা তারই এবং মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিম্মৃত হই কিংবা ভুল করে ফেলি তবে তুমি আমাদিগকে পাকড়াও করো না।” আল্লাহ্ বললেনঃ হ্যাঁ তাই হবে।
"হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।” আল্লাহ্ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই হবে।
"হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আল্লাহ্ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই হবে।
“আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে মাফ কর, রহম কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদিগকে জয়যুক্ত কর।” আল্লাহ্ বললেন, হ্যাঁ, মঞ্জুর করা হল।
২৩০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বানী) “তোমাদের মনে যা আছে, তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব গ্রহণ করবেন।” (২ঃ ২৮৪) আয়াতটি নাযিল হলে সাহাবীগণ খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। আর কোন বিষয়ে তারা এমন উদ্বিগ্ন হননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ বরং তোমরা বলোঃ শুনলাম, আনুগত্য স্কীকার করলাম এবং মেনে নিলাম।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন। তিনি নাযিল করলেনঃ আল্লাহ তা’আলা কারুর উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তা তারই, আর মন্দ যা উপার্জন করে, তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিম্মৃত হই অথবা ভুল করে ফেলি তবে আমাদের পাকড়াও করো না। আল্লাহ্ বললেনঃ আমি গ্রহন করলাম।
"হে আমাদের রব! আমাদের -পূর্বতীগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।" আল্লাহ্ বললেনঃ আমি গ্রহন করলাম।
“আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের রব।” আল্লাহ্ বললেনঃ আমি তা করলাম।
২৩১. সাঈদ ইবনু মানসুর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়দ আল-গুবারি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ জন্য আমার উম্মতের মনের কল্পনাগুলো মাফ করে দিয়েছেন।
২৩২. আমর আবূ নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের ক্ষেত্রে কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত তাদের মনের কল্পনাগুলো মাফ করে দিয়েছেন।
২৩৩. যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) সুত্রেও হাদীসটি অনুরুপভাবে বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫৮. বান্দার সুচিন্তাগুলো লিখা হয় কিন্তু কুচিন্তাগুলো লিখা হয় না
২৩৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলেছেনঃ আমার বান্দা কোন পাপ কর্মের কথা ভাবলেই তা লিখবে না; বরং সে যদি তা কার্যে পরিণত করে তবে একটি পাপ লিখবে। আর যদি সে কোন নেক কাজের নিয়ত করে কিন্তু তা সে কার্যে পরিণত না করে, তাহলেও এর জন্য প্রতিদানে তার জন্য একটি সাওয়াব লিখবে আর তা সম্পাদন করলে লিখবে দশটি সাওয়াব!
২৩৫. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আমার বান্দা যখন কোন সৎকর্মের সংকল্প গ্রহণ করে অথচ এখনও তা সম্পাদন করে নি তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি কার্যত সম্পাদন করে তবে দশ থেকে সাতশ- গুন পর্যন্ত সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি অসৎ কর্মের ইচ্ছা করে অথচ এখনো সম্পাদন করে নি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কার্যে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি।
২৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ আমার বান্দা কোন নেক কাজ করবে বলে যদি মনে মনে ভাবে, তবে তা সস্পাদন করার পূর্বে আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখে দেই। পরে যদি কার্যত তা সম্পাদন করে নেয় তবে তার দশগুন সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি কোন অসৎ কাজ করবে বলে মনে মনে ভাবে তবে তা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত মাফ করে দেই। কিন্তু তা সম্পাদন করলে তদনূরুপ একটি শোনাহ লিখি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ ফেরেশতাগণ আবেদন জানায়ঃ হে প্রতিপালক! এ তোমার বান্দা, পাপ কর্মের ইচ্ছা করছে। আল্লাহ তা’আলা উত্তর করেন অপেক্ষা করো, যদি সম্পাদন করে ফেলে, তবে সে অনুপাতে লিখবে, আর যদি তা পরিত্যাগ করে তবে সে স্থলে একটি সাওয়াব লিখে দিবে। কারণ আমার জন্যই সে তা পরিত্যাগ করেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে তার ইসলামে নিষ্ঠাবান হয় তার কৃত প্রত্যেকটি নেক কাজের বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে তার কৃত প্রত্যেকটি বদ কাজের বিনিময়ে তদনুরুপ লেখা হয়। (মৃত্যুর মাধ্যমে) আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে।
২৩৭. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে অথচ সস্পাদন করে নি, তার জন্য একটি সাওয়াব লেখা হয়। আর যে ইচ্ছা করার পর কার্যত সস্পাদন করে, তবে তার ক্ষেত্রে দশ থেকে সাতশ, গুন পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে তবে কোন গুনাহ লেখা হয় না; আর তা করলে (একটি) গুনাহ লেখা হয়।
২৩৮. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সমুদয় সৎ ও অসৎ কর্মের হিসাব লেখেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে আরও বিস্তূত করে বলেনঃ সুতরাং যে ব্যাক্তি নেক কাজের ইচ্ছা গ্রহণ করেছে অথচ তা সম্পাদন করে নি আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সাওয়াব লিখে দেন। তার ইচ্ছার পর কাজে পরিণত করলে আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত সাওয়াব লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি কোন মন্দ কর্মের অভিপ্রায় করে এবং তা কাজে পরিণত না করে তবে আল্লাহ তা’আলা তার বিনিময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সাওয়াব লিখে দেন। আর অভিপ্রায়ের পর তা সম্পাদন করে ফেললে তিনি একটি মাত্র গুনাহ লেখেন।
২৩৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জা’দ আবূ উসমান (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে আবদুল ওয়ারিস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ রেওয়ায়েত করেন। তবে এ হাদীসের বর্ণনাকারী নিম্নের বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, 'আল্লাহ উক্ত গুনাহ মাফ করে দেন।' আল্লাহর বিরুদ্ধে গিয়ে একমাত্র সে ধ্বংস হয়, যার ধ্বংস অনিবার্য।
পরিচ্ছেদঃ ৫৯. ঈমান সম্পর্কে ওয়াসওয়াসার (সংশয়) সৃষ্ট হওয়া এবং কারো অন্তরে যদি তা সৃষ্টি হয় তবে সে কি বলবে
২৪০. যুহায়ের ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবী তাঁর সমীপে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু সংশয়ের উদয় হয়, যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করতেও মারাত্মক মনে করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব দিলেন, জ্বী, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটই স্পষ্ট ঈমান। (কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াসওয়াসা ও সংশয়কে মারাত্মক মনে করা হয়।)
২৪১. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার, মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
২৪২. ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব আল সাফফার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ তা প্রকৃত ঈমান।
২৪৩. হারুন ইবনু মা’রুফ ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মানুষের মনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয় যে, এ সৃষ্টি জগততো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে কে আল্লাহ কে সৃষ্টি করেছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয়, সে যেন বলে, “আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি।”
২৪৪. মাহমুদ ইবনু গায়লান (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) এর সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ শয়তান তোমাদের কাছে এসে বলে, আকাশ কে সৃষ্টি করেছেন? যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? উত্তরে সে বলে, আল্লাহ। এরপর রাবী পূর্ব হাদীসটির অনুরুপ এ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি এর সাথে وَرُسُلِهِ (এবং তার রাসুলগনের প্রতি) শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেন।
২৪৫. যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ শয়তান তোমাদের কারো কাছে আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, কে তোমার রবকে সৃষ্টি করেছে? এই পর্যায়ে পৌছলে, আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো এবং এ ধরনের ভাবনা থেকে বিরত হও।
২৪৬. আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ শয়তান আল্লাহর বান্দার কাছে আসে এবং কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে এটা কে সৃষ্টি করেছেন?... (বাকি অংশ) পূর্ববতী হাদীসের অনুরুপ।
২৪৭. আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদস সামাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মানুষ তোমাদেরকে জ্ঞানের বিষয়ে কথা জিজ্ঞেস করবে, এক পর্যায়ে তারা এ কথাও জিজ্ঞেস করে বসবে, আল্লাহ তো আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন? রাবী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যাক্তির হাত ধরা অবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সত্যই বলেছেন। আমাকে দুই ব্যাক্তি এ ধরনের প্রশ্ন করেছে, আর এ হলো তৃতীয়জন। বর্ণনাকারী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, আমাকে এক ব্যাক্তি প্রশ্ন করেছে আর এ হল দ্বিতীয়জন।
যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব আদ-দাওরাকী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, মানুষ সর্বদা ... এরপর রাবী আবদুল ওয়ারিসের রেওয়ায়েতের মত বর্ণনা করেন। তবে তিনি এই সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উল্লেখ করেননি। তবে হাদীসটির শেষে 'আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সত্যই বলেছেন' কথাটি সংযুক্ত করেন।
২৪৮. আবদুল্লাহ ইবনু রুমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে একদিন বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! মানুষ তোমাকে প্রশ্ন করতে থাকবে। এমন কি এ প্রশ্নও করবে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন; তা হলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে একদিন আমি মসজিদে (নববীতে) উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে কতিপয় বেদুঈন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, হে আবূ হুরায়রা! এ তো আল্লাহ তা’আলা। তা হলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাতে কিছু কংকর নিয়ে তাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, আমার বন্ধু [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] সত্য কথা বলে গিয়েছেন।
২৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ অবশ্যই লোকেরা তোমাদিগকে সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে। এমনকি তারা বলবে, আল্লাহ তো সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাকে কে সৃষ্টি করেছে?
২৫০. আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু যুরারা আল হাযরামী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ আপনার উম্মাত সর্বদা এটা কে সৃষ্টি করল, ওটা কে সৃষ্টি করল এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকবে। এমনকি এ প্রশ্নও জিজ্ঞেস করবে যে, সকল সৃষ্টই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?
২৫১. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ রেওয়ায়েত করেছেন। তবে রাবী ইসহাক তার রেওয়ায়েতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আপনার উম্মাত ... এ কথাটি উল্লেখ করেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ৬০. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের হক তসরুপকারীর (বিনষ্টকারী) প্রতি জাহান্নামের হুমকি
২৫২. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের হক বিনষ্ট করে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম অবধারিত করে রেখেছেন এবং জান্নাত হারাম করে রেখেছেন। তখন জনৈক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! অতি সামান্য বস্তু হলেও? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আরাক (বাবলা গাছের মত এক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছের) গাছের ডাল হলেও এ শাস্তি দেয়া হবে।
২৫৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ উমামা আল হারিসী (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৫৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি তার উপর অর্পিত চুড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের সম্পদ গ্রাস করে অথচ সে মিথ্যাবাদী, এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রোধাম্বিত থাকবেন। রাবী বলেন, আশ‘আস ইবনু কায়স সেখানে প্রবেশ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আবূ আবদুর রহমান (আবদুল্লাহ) তোমাদেরকে কি বর্ণনা করলেন? তদুত্তরে সকলে উক্ত হাদীসটির কথা বললেন। তিনি বললেন, আবূ আবদুর রহমান সত্যই বর্ণনা করেছেন, ঘটনাটি আমাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল।
ব্যাপার হলো, ইয়ামনে জনৈক ব্যাক্তির সাথে আমারও এক খন্ড ভূমি ছিল। এর মীমাংসা করার নিমিত্ত আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত হই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার দাবির স্বপক্ষে তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে বিবাদীর কসম লওয়া হবে। আমি বললাম, এ ব্যাক্তি তো কসম করবেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি তার উপর অর্পিত চুড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের সম্পদ গ্রাস করে অথচ সে মিথ্যাবাদী, আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধানিত থাকবেন।
এরপর এই আয়াত নাযিল হয়ঃ “যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মুল্যে বিক্রি করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ব করবেন না; তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৩ঃ ৭৭)
২৫৫. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিঁনি বলেন, যে ব্যাক্তি মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কোন সম্পদ গ্রাস করে, এমন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন। পরে বর্ণনাকারী আ’মাশ বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি (ইয়ামনের ভূমির স্থলে) বলেন, জনৈক ব্যাক্তির সাথে আমার একটি কুপ নিয়ে বিরোধ ছিল। আমরা এর মীমাংসার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার দু-জন সাক্ষী লাগবে অথবা বিবাদী থেকে কসম নেওয়া হবে।
২৫৬. ইবনু আবূ উমর আল মাক্কী (রহঃ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ গ্রাসের জন্য মিথ্যা কসম করবে, এমন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রোধানিত থাকবেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রমাণ হিসাবে এ আয়াত পাঠ করেনঃ ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রতি এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না; তাদের জন্য মর্মন্তুদ শান্তি রয়েছে।” (৩ঃ ৭৭)
২৫৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, হান্নাদ ইবনু সারী এবং আবূ আসিম আল হানাফী (রহঃ) ... ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ওয়াইল (রাঃ) বলেন, হাযরামাউতের জনৈক ব্যাক্তি কিনদার এক ব্যাক্তিকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়। হাযরামাউতবাসী লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এ ব্যাক্তি আমার পৈতৃক ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে। কিনদী বলে উঠল, না, এতো আমারই সম্পত্তি এবং আমারই দখলে আছে। এতে আমি চাষাবাদ করি, এতে কারো কোন অধিকার নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাযরামাউতবাসীকে বললেনঃ তোমার কোন সাক্ষী আছে? সে উত্তর করল, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে এ বিষয়ে বিবাদী কসম করবে।
হাযরামাউতবাসী বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এ তো অসৎ লোক, কসম করার বিষয়ে তার আদৌ পরোয়া নেই। আর সে কোন কিছুরই বাছবিচার করে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার কাছ থেকে তোমার এতটুকু প্রাপ্য। এরপর হাযরামাউতবাসী শপথ করতে উদ্যোগ নিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ যদি সে (কিনদী) অন্যায়ভাবে সম্পদ গ্রাস করার জন্য শপথ করে থাকে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন অর্থাৎ তিনি তার উপর ক্রোধাম্বিত থাকবেন।
২৫৮. যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে দু'ব্যাক্তি তাঁর কাছে এসে একটি ভূমি সম্পর্কে বিচার প্রার্থনা করে। তন্মধ্যে একজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহিলিয়্যাত যুগে এ ব্যাক্তি আমার ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, বিচার প্রার্থনাকারী ছিল ইমরাউল কায়স ইবনু আবিস আল কিনদী আর তার বিবাদী ছিল রাবীআ ইবনু আবদান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার সাক্ষী পেশ কর। লোকটি বলল, আমার কোন সাক্ষী নাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে বিবাদী থেকে কসম নেয়া হবে। লোকটি বলল, তবে তো সে মিথ্যা কসম করে সম্পতি গ্রাস করে ফেলবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার কাছ থেকে তোমার এতটুকু প্রাপ্য। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বাদী যখন শপথ করার জন্য প্রস্তুত হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে সম্পতি গ্রাস করবে, সে আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন। রাবী ইসহাক তার বর্ণনায় عيدان এর স্থলে رَبِيعَةُ بْنُ عَيْدَانَ উল্লেখ করেন।
No comments: