সহিহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, অধ্যায়ঃ তাহারাত (পবিত্রতা)-১ম
পরিচ্ছেদঃ ১. উযুর ফযীলত
৪২৭. ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ মালিক আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, পবিত্রতা হল ঈমানের অংশ। “আলহামদুলিল্লাহ” (শব্দটি) পাল্লাকে ভরে দেয়। “সূবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ (পাল্লাকে) ভরে দেয়, কিম্বা [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন] আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবতীঃ স্থান ভরে দেয়। সালাত (নামায/নামাজ) হল আলো, সাদাকা হল প্রমাণিকা, ধৈর্য হল জ্যোতি। কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ প্রত্যহ আপন সত্তাকে বিক্রি করে, তখন কেউ সত্তার উদ্ধারকারী হয় আর কেউ হয় ধবংস কারী।
পরিচ্ছেদঃ ২. সালাত আদায়ের জন্য তাহারাতের (পবিত্রতার) আবশ্যিকতা
৪২৮. সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে তিনি বর্ণিত। বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) অসুস্থ ইবনু আমিরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ইবনু আমির তাকে বললেন, হে ইবনু উমর! আপনি কি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন না? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তাহারাত ব্যতিরেকে সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ থেকে সাদাকা কবুল হয় না। আর তুমিতো ছিলে বসরার শাসনকর্তা।
৪২৯. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) থেকে, অন্য সুত্রে আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইসরাঈল (রহঃ) থেকে, সকলে সিমাক ইবনু হারব (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৩০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুত্রে কয়েকটি হাদীস বর্ননা করেছেন। (তন্মধ্যে একটিতে তিনি বলেন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারোর উযূ (ওজু/অজু/অযু) ভেঙ্গে গেলে তার সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হয় না উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার পূর্ব পর্যন্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৩. উযু করার নিয়ম ও উযুর পূর্ণতা
৪৩১. আবূত তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজীবী (রহঃ) ... উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান থেকে বর্ণিত যে, উসমান (রাঃ) উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি চাইলেন। এরপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি [উসমান (রাঃ)] তিনবার তাঁর হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুইলেন এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমন্ডল ধুইলেন। এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরুপভাবে ধুইলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত ধুইলেন এরপর বাম পা অনুরুপভাবে ধুইলেন।
এরপর তিনি বললেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি। এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু)র শেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে এবং দাঁড়িয়ে এরুপে দু-রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে যে, সে সময়ে মনে মনে অন্য কোন কিছু কল্পনা করেনি, সে ব্যাক্তির পুর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের আলিমগণ বলতেন যে, সালাত (নামায/নামাজ) এর জন্য কারোর এ নিয়মের উযূ (ওজু/অজু/অযু)ই হল পরিপূর্ণ উযূ (ওজু/অজু/অযু)।
৪৩২. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... হুমরান মাওলা উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উসমান (রাঃ) কে দেখেছেন যে, উসমান (রাঃ) পানির পাত্র আনতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি দু-কবজির উপর তিনবার পানি ঢাললেন এবং উভয়টি ধুয়ে নিলেন। তারপর তাঁর ডান হাত পাত্রের ভিতর প্রবেশ করিয়ে তিনি কুলি করলেন এবং নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনি তাঁর মুখমন্ডল ধৌত করলেন- তিনবার। দু'হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন তিনবার। তারপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর উভয় পা ধুইলেন তিনবার। এরপর তিনি বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে এবং এর পরে এরুপে দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে যাতে সে মনে মনে ভিন্ন কোন কল্পনা করেনি তার পূর্ববতী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. উযু এবং তারপর সালাত আদায়ের ফযীলত
৪৩৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, উসমান ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... হুমরান মাওলা উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি মসজিদের চত্বরে ছিলেন এমন সময়ে আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মুয়াজ্জ্বীন আসলেন। উসমান (রাঃ) উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি আনতে নির্দেশ দিলেন, অতঃপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস শোনাব যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকত তাহলে কখনোই আমি তোমাদেরকে হাদীস শোনাতাম না। আমি শুনেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যেই মুসলিম ব্যাক্তি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) কে সুন্দরভাবে আদায় করবে, অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে সেই ব্যাক্তির এই সালাত (নামায/নামাজ) ও তার পূর্ববর্তী সালাত (নামায/নামাজ) এর মধ্যবতী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
৪৩৪. আবূ কুরায়ব, আবূ উসামা থেকে, অন্য সুত্রে যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব ওয়াকী (রহঃ) থেকে অন্য সুত্রে ইবনু আবূ উমার সুফিয়ান থেকে আবার সকলে হিশামের মাধ্যমে উপরোক্ত সুত্রেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ উসামার সুত্রে অতিরিক্ত বলা হয়েছে যে, “অতঃপর সে তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)কে সুন্দর রুপে করে তারপর ফরয সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে।
৪৩৫. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) উযূ (ওজু/অজু/অযু)র কাজ সেরে বললেন যে, আল্লাহর কসম আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস শোনাব। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে একটি আয়াত না থাকত তাহলে আমি তোমাদেরকে কখনোই হাদীসটি শোনাতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যাক্তি যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু)কে উত্তমরুপে আদায় করে তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন তার সালাত (নামায/নামাজ) ও পূর্ববর্তী সালাত (নামায/নামাজ) এর মধ্যবতী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। উরওয়া (রহঃ) বলেন, আয়াতটি হলঃ “আমি যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে, তা সূস্পষ্টভাবে বলে দেয়ার পরেও যারা তা গোপন রাখে, আল্লাহ তাদেরকে লানত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়”। (সূরা বাকারাঃ ১৫৯)
৪৩৬. আবদ ইবনু হুমায়দ ও হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... আমর ইবনু সাঈদ ইবনুল আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময়ে তিনি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কোন মুসলিম ব্যাক্তির যখন কোন ফরয সালাত (নামায/নামাজ) এর ওয়াক্ত হয় আর সে সালাত (নামায/নামাজ) এর উযূ (ওজু/অজু/অযু) কে উত্তমরুপে আদায় করে, সালাত (নামায/নামাজ) এর বিনয় ও রুকুকে উত্তমরূপে আদায় করে তা হলে যতক্ষন না সে কোন কবীরা গোনাহে লিপ্ত হবে, তার এই সালাত (নামায/নামাজ) তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান।
৪৩৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আহমদ ইবনু আবদা আয-যাব্বী (রহঃ) ... হুমরান মাওলা উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর নিকট উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি আনলাম। অতঃপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন, তারপর তিনি বললেন, লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদীস বর্ণনা করে থাকে। আমি ওসব জানিনা তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি তিনি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেছেন। তারপর বলেছেন, যে ব্যাক্তি এভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর তার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় ও মসজিদের দিকে গমনের সাওয়াব থাকবে অতিরিক্ত। ইবনু আবদা-এর সনদে بوضوء কথাটি বাদ দিয়ে اتيت عثمان فتوضاء কেবল বলা হয়েছে।
৪৩৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উসমান (রাঃ) মাকাইদে আসনে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে বসে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করা দেখাব? তারপর তিনি তিন-তিনবার ধুয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। কুতায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, আনাস (রাঃ) বলেছেন, তখন উসমান (রাঃ)-এর পাশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
৪৩৯. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হুমরান ইবনু আবান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান (রাঃ) কে উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি দিতাম। আর তিনি প্রত্যহ গোসল করতেন। উসমান (রাঃ) বলেছেন, আমাদের এ সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর, মিস’আর বলেন, আমার মনে হয় সালাত (নামায/নামাজ)টি ছিল আসরের - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কিছু বলতে মনস্থ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ঠিক করতে পারছিলাম না যে তোমাদেরকে একটি বিষয়ে কিছু বলব না নীরব থাকবো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি তা কল্যাণকর হয় তাহলে আমাদেরকে বলুন, আর অন্য কিছু হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভাল জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, কোন মুসলমান যখন পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহ তার উপর যে পবিত্রতা অপরিহার্য করেছেন তা পূর্ণাঙ্গরুপে অর্জন করে এবং তারপর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাহলে এ সকল সালাত (নামায/নামাজ) তাদের মধ্যবর্তী সময়ের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।
৪৪০. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয তাঁর পিতার সুত্রে, অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উসমান (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু)কে পূর্ণভাবে করে, তাঁর পাঁচ ওয়াক্তের ফরয সালাত (নামায/নামাজ) এর মধ্যবতী সময়ে (গুনাহের) কাফফারা হয়ে যায়। ইবনু মুআযের হাদীসে এভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু গুনদার বর্ণিত হাদীসে বিশরের শাসনকাল ও ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা উল্লেখ নেই।
৪৪১. হারুন ইবনু সাঈদ আল আইলী (রহঃ) ... হুমরান মাওলা উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উসমান (রাঃ) খুব উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেছেন এবং উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেছেন তারপর বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ নিয়মে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে এবং তারপর কেবল সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বেরিয়ে যায়, তার বিগত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
৪৪২. আবূ তাহির ও ইউনুস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে এবং পরিপূর্নভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে, অতঃপর ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে হেঁটে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, কিংবা তিনি বলেন, জামাআতের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, কিংবা তিনি বলেন, মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আল্লাহ সেই ব্যাক্তির গুনাহ সমূহকে ক্ষমা করে দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু'আ থেকে আরেক জুমু'আ এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কবীরা গুনাহ পরিহার করা হয়
৪৪৩. ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) এবং এক জুম'আ থেকে আরেক জুমুআ পর্যন্ত এসব তাদের মধ্যবতী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যায় যতক্ষন পর্যন্ত কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়।
৪৪৪. নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) এবং এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ পর্যন্ত এসব তাদের মধ্যবতী সময়ের জন্য কাফফারা স্বরুপ।
৪৪৫. আবূ তাহির ও হারুন ইবনু সাঈদ আল আইলী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ), এক জুমূআ থেকে আরেক জুমুআ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এইসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. উযুর শেষে মুস্তাহাব দু'আ
৪৪৬. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের উট চরানোর দায়িত্ব নিজেদের উপরে ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, “যে মুসলমান সুন্দর রুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। ”
উক্বা বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম ওহ, কথাটি কত উত্তম! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে দেখেছি, এইমাত্র এসেছা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে এই দু’আ পাঠ করবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল” তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে।
৪৪৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমীর জুহানী (রাঃ) রাসুল থেকে উপরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এই বর্ণনায় বলেছেনঃ “যে ব্যাক্তি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে পাঠ করবেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসুল”।
পরিচ্ছেদঃ ৭. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উযুর পদ্ধতি
৪৪৮. মুহাম্মদ ইবনুস সাব্বাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ইবনু আসিম আনসারী (রাঃ) যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। রাবী বলেন, তাঁকে বলা হল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে আমাদের দেখিয়ে দিন। তখন তিনি পানির পাত্র আনালেন। তারপর তা থেকে দুই হাতের উপর পানি ঢেলে উভয় হাত তিনবার ধুইলেন, তারপর পাত্রে হাত ঢূকিয়ে পানি নিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন একই আজলা দিয়ে। এরুপ তিনবার করলেন। আবার পানিতে হাত ঢূকিয়ে পানি নিয়ে আবার মুখমন্ডল ধুইলেন। দুই হাত কনুই পর্যন্ত দুইবার করে ধুইলেন। তারপর হাত ঢূকিয়ে বের করে মাথা মাসেহ করলেন- দুই হাত সামনের দিকে আনলেন ও পিছন দিকে নিলেন। তারপর উভয় পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধুইলেন, এরপর বললেনঃ এরুপ ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)।
৪৪৯. কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা, খালিদ ইবনু মাখলাদ, সুলায়মান ইবনু বিলাল, আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে ঐ সুত্রেই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ‘পায়ের গ্রন্থি’ পর্যন্ত শব্দটি উল্লেখ করেন নাই।
৪৫০. ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী ... মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) থেকে আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উপরোক্ত সুত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এতে বলেছেন, “কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন তিনবার” আর আজলার কথা বলেন নি। অবশ্য “সম্মুখের দিকে আনলেন ও পিছনের দিকে নিলেন- কথার পর বৃদ্ধি করেছেন, “মাথার সম্মুখ থেকে পেছন পর্যন্ত মাসহ করেছেন এভাবে যে, মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে মাসহ আরম্ব করলেন, এরপর উভয় হাত ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে গেলেন; পুনরায় উভয় হাত ফিরিয়ে আনলেন যে স্হান থেকে আরম্ভ করেছিলেন সে স্থান পর্যন্ত, তারপর উভয় পা ধুইলেন।
৪৫১. আবদুর রহমান ইবনু বিশর আবদী (রহঃ) ... আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সনদের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের রাবী বলেনঃ অতঃপর তিনি তিনবার তিন অঞ্জলী দিয়ে কুলি করেন, নাকে পানি দেন ও নাক ঝেড়ে নেন। তিনি আরো বলেনঃ এরপর সম্মুখ থেকে পেছনে এবং পিছন থেকে সম্মুখে (হাত নিয়ে) একবার মাথা মাসহ করেন। রাবী বাহয বলেনঃ উহায়ব আমাকে হাদীসটি লিখিয়েছেন, উহায়ব বলেনঃ আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আমাকে এই হাদীসটি দুইবার লিখিয়েছেন।
৪৫২. হারুন ইবনু মারুফ, হারুন ইবনু সাঈদ আল-আয়লী এবং আবূত তাহির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ইবনু আসিম মাযিনী আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছেন। তিনি প্রথমে কুলি করলেন, নাক ঝাড়লেন। তারপর তিনবার মুখ ধুইলেন, তিনবার ডান হাত এবং বাম হাত তিনবার। আর এমনটি পানি দিযে মাথা মাসেহ করলেন, যা হাতের অবশিষ্ট পানি নয়। তারপর উভয় পা পরিষ্কার করে ধুইলেন। আবূত তাহির (রহঃ) বলেন, ইবনু ওহাব (রহঃ) হাদীসটি আমর ইবনুল হারিসের সুত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৮. নাক ঝাড়া ও ঢেলা ব্যাবহারে বেজোড় সংখ্যা
৪৫৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আমরুন নাকিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঢেলা ব্যবহার করবে, তখন বেজোড় সংখ্যার ঢেলা নিবে। আবার যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে তখন নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে নিবে।
৪৫৪. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এগুলি আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। তারমধ্যে এও ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে তখন দুই নাসারন্ধ্রে পানি টেনে নিবে, এরপর ঝেড়ে ফেলবে।
৪৫৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে, সে যেন নাক ঝাড়ে, আর যে ইসতিনজা করবে, সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢেলা ব্যবহার করে।
৪৫৬. সাঈদ ইবনু মানসূর এবং হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ আল খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন... বাকী অংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৪৫৭. বিশর ইবনুল হাকামী আবদী (রাঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ঘূম থেকে উঠবে সে যেন প্রথমত (পানি দিয়ে) তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কারণ শয়তান নাসারন্ধ্রে রাত্রি যাপন করে।
৪৫৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন ঢেলা ব্যবহার করবে তখন রেজোড় সংখ্যক নিবে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. উভয় পা পুরোপুরি ধোয়ার আবশ্যিকতা
৪৫৯. হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী, আবূত তাহির ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসের ইন্তেকালের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ-ধর্মিনী আয়িশার কাছে উপস্থিত হই। সে সময়ে আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকরও এলেন এবং তাঁরা সেখানে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে লাগলেন। তখন আয়িশা (রাঃ)বললেনঃ হে আবদুর রহমান! পূর্ণভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করো। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি যে, আফসোস ঐ গোড়ালীগুলোর জন্য, যেগুলোর ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
৪৬০. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন। এরপর তিনি আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৬১. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও আবূ মা’ন রুকাশী (রহঃ) ... সালিম মাওলা মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ও আবদুল রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) মা’ন ইবনু আবূ ওয়াক্কাসের জানাযার উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা আয়িশা (রাঃ) এর ঘরের দরজার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৬২. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... সালিম মাওলা শাদ্দাদ ইবনু হাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। তখন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৬৩. যুহায়র ইবনু হারব এবং ইসহাক (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা মক্কা থেকে মদিনার দিকে ফিরছিলাম। রাস্তায় এক যায়গায় পানি ছিল। তখন কিছু লোক জলদী আসরের সময়ে এগিয়ে গেল এবং তাড়াহুড়া করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করল। অতঃপর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়ে পৌছিলাম, দেখলাম তাদের পায়ের গোড়ালি এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌছেনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আফসোস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য যেগুলোর ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অতএব পূর্ণভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) সম্পাদন কর।
৪৬৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুফিয়ান সুত্রে এবং ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার শু’বা (রহঃ) সুত্রে উভয়ে উক্ত সনদে মানসূর থেকে বর্ণনা করেন, তবে শু'বা বর্ণিত হাদীসে পূর্ণভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) সম্পাদন করবে” - কথাটি নাই। এই হাদীসের সনদে “আবূ ইয়াহইয়া” শব্দের সহিত “আল আ'রাজ” পদবী যুক্ত আছে।
৪৬৫. শায়বান ইবনু ফাররুখ ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন এক সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পিছনে পড়ে যান। অবশেষে তিনি আমাদের পেলেন যখন আসরের সময় উপস্থিত। আর আমরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে গিয়ে পা মাসহ করছি। তখন তিনি ঘোষণা দিলেন, আফসোস, ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য, যেগুলোর ঠিকানা জাহান্নাম।
৪৬৬. আবদুর রাহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দেখলেন, সে তার গোড়ালি ধোয়নি। তখন তিনি বললেনঃ ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য দুর্ভোগ জাহান্নামের।
৪৬৭. কুতায়বা, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কয়েকজন লোককে দেখলেন, তারা পাত্র থেকে পানি নিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছে। তখন তিনি বললেনঃ পূর্ণরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) কর। কারণ, আমি আবূল কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আফসোস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য দুর্ভোগ জাহান্নামের।
৪৬৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আফসোস, গোড়ালিগুলোর জন্য, দুর্ভোগ জাহান্নামের।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তাহারাতের সকল অঙ্গ পূর্ণভাবে ধোয়ার আবশ্যিকতা
৪৬৯. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে তার পায়ের উপর নখ পরিমাণ অংশ ছেড়ে দেয়। তা দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যাও, আবার ভালভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে আস। লোকটি ফিরে গেল। তারপর (পূনরায়) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল।
পরিচ্ছেদঃ ১১. উযুর পানির সঙ্গে গুনাহ ঝরে যাওয়া
৪৭০. সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ এবং আবূ ততাহির (রহঃ) শব্দগুলো আবূ ততাহির থেকে গৃহীত ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমান কিংবা বলেছেন, কোন মুমিন বান্দা যখন যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তখন মুখ ধোয়ার সাথে অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যার দিকে তার দুচোখের দৃষ্টি পড়েছিল; এবং যখন দুইহাত ধোয়, তখন, পানির সাথে অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল শোনাহ বের হয়ে যায়। যেগুলো তার দু হাতে ধরেছিল; এবং যখন দুই পা ধোয় তখন পানির সাথে অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলোর দিকে তার দু'পা অগ্রসর হয়েছিল; ফলে (উযূ (ওজু/অজু/অযু)র শেষে) লোকটি “তার সমুদয় গুনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠে।
৪৭১. মুহাম্মাদ ইবনু মা’মার রিবঈ আল-কায়সী (রহঃ) ... উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে এবং তা উত্তমরুপে করে, তার দেহ থেকে সমুদয় গুনাহ বের হয়ে যায়, এমন কি তার নখের ভিতর থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১২. উযুতে মুখমণ্ডলের শুভ্রতা এবং হাত-পায়ের দীপ্তি বাড়িয়ে নেয়া মুস্তাহাব
৪৭২. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ), কাসিম ইবনু যাকারিয়া ইবনু দ্বীনার ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... নূ’আয়ম ইবনু আবদুল্লাহ আল-মুজমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখলাম। তিনি তার মুখমন্ডল ধুইলেন এবং পরিপূর্ণ ও উত্তমরুপেই তা ধুইলেন। এরপর তিনি ডান হাত ধুইলেন এমন কি বাহুর কিছু অংশও ধুয়ে ফেললেন। তারপর বাম হাত ও বাহুর কিছু অংশসহ ধুয়ে ফেললেন। এরপর মাথা মাসহ করলেন। তারপর তিনি ডান পা ধুইলেন এমনকি গোছারও কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। তারপর বাম পা গোছার কিছু অংশসহ ধুইলেন। তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এভাবেই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি তিনি আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পরিপূর্ণ ও উত্তমরুপে করার কারণে কিয়ামতের দিন তোমাদের মুখমন্ডল জ্যোর্তিময় এবং হাত পা উজ্জ্বল হবে। অতএব, তোমাদের যার ইচ্ছা সে যেন তার মুখমন্ডলের নূর এবং হাত-পায়ের দীপ্তি বাড়িয়ে নেয়।
৪৭৩. হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... নু’আয়ম ইবনু আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখলেন। অতঃপর তিনি (আবূ হুরায়রা) তাঁর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত ধুইলেন। এমনকি ধুইতে উভয় কাঁধ পর্যন্ত পৌছে যাবার উপক্রম হল। তারপর উভয় পা ধুইলেন এবং গোছা ধুয়ে নিলেন। তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মাত কিয়ামতের দিন উযূ (ওজু/অজু/অযু)র বদৌলতে মুখমন্ডল শুভ্র এবং হাত-পা উজ্জ্বল অবস্থায় আসবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে তার মুখমন্ডলের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চায় সে যেন তা করে।
৪৭৪. সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার হাউয হবে আদন থেকে আয়লার যত দুরত্ব তার থেকেও বেশী দীর্ঘ। আর তা হবে বরফের থেকেও সাদা এবং দুধ মধু থেকেও মিস্টি। আর তার পাত্রের সংখ্যা হবে তারকা রাজির চেয়েও অধিক। আমি কিছু সংখ্যক লোককে তা থেকে ফিরিয়ে দিতে থাকব যেমনিভাবে লোকে তার হাউয থেকে অন্যের উট ফিরিয়ে দেয়। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, "হ্যাঁ তোমাদের এমন চিহ্ন হবে যা অন্য কোন উাম্মাতের হবে না। উযূ (ওজু/অজু/অযু)র বদৌলতে তোমাদের মুখমন্ডল নুরানী ও হাত-পা দীপ্তিমান অবস্থায় তোমরা আমার কাছে আসবে।
৪৭৫. আবূ কুরায়ব ও ওয়াসিল ইবনু আতা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মাত হাউযের পাড়ে আমার কাছে আসবে আর আমি তখন (অন্যান্য উম্মাতের) লোকজনকে সে হাউয থেকে ফিরিয়ে দিতে থাকব যেমনিভাবে লোকে অন্যের উটকে নিজের উট থেকে ফিরিয়ে রাখে। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ! আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের এমন এক চিহ্ন থাকবে যা তোমাদের ছাড়া অন্য কারো থাকবে না। (আর তা হল) তোমরা আমার কাছে আসবে মুখমন্ডল শুভ্র এবং হাত-পা দীপ্তিমান অবস্থায়। এটা হবে উযূ (ওজু/অজু/অযু)র কারণে। আর তোমাদের মধ্য থেকেই একটি দলকে আমার কাছে আসতে বাধা দেয়া হবে তাই তারা আমার কাছে আসতে পারবে না। তখন আমি বলব, প্রভু! এরা তো আমার লোকজন! তখন এর জবাবে একজন ফেরেশতা আমাকে বলবে, আপনি কি জানেন, এরা আপনার পরে কী অঘটন ঘটিয়েছিল?
৪৭৬. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার হাউয আদন থেকে আয়লার যত দুরত্ব তার চেয়েও বড় হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি সে হাউয থেকে (অন্যান্য) লোকজনকে দূর করে করে দেব যেমনিভাবে লোকে অপরিচিত উটকে তার হাউয থেকে দূর করে দেয়। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমরা আমার কাছে এ অবস্থায় আসরে যে, উযূ (ওজু/অজু/অযু)র কারণে তোমাদের মুখমন্ডল শুভ্র হবে এবং তোমাদের হাত-পা ঝলমল করতে থাকবে। তোমাদের ছাড়া আর কারো এরকম হবে না।
৪৭৭. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, সুরায়জ ইবনু ইউনুস, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরস্থানে এসে বললেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটা মুমিনদের বাড়ী। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা তো আমার সাহাবী। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সাহাবায় কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন?
তিনি বললেন, “কেন, যদি কোন ব্যাক্তির কপাল ও হাত-পা সাদাযুক্ত ঘোড়া ঘোর কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, তাঁরা (আমার উম্মাত) সেদিন এমন অবস্থায় আসবে যে, উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ফলে তাদের মুখমন্ডল হবে নূরানী এবং হাত-পা দীপ্তীময়। আর হাউযের পাড়ে আমি হব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখ, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউয থেকে হটিয়ে দেয়া হবে যেমনিভাবে পথহারা উটকে হটিয়ে দেয়া হয়। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, “এরা আপনার পরে (আপনার দ্বীনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তখন আমি বলবঃ "দূর হ, দূর হ।”
৪৭৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) এবং ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গেলেন ও বললেন, “তোমাদের ওপর শাস্তি বর্ষিত হোক। এটা মুমিনদেরবাড়ী। আর আমরা ইনশা আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে শামিল হবো। ইসমাঈল ইবনু জাফর-এর বর্ণিত (পূর্বের) হাদীসের অনুরুপ। তবে মালিক-এর হাদীসে الا لَيُذَادَنَّ رِجَالٌ عَنْ حَوْضِ স্থলে فَلَيُذَادَنَّ رِجَالٌ عَنْ حَوْضِي (অবশ্যই কিছু লোককে আমার হাউয থেকে হটিয়ে দেয়া হবে) রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. যে পর্যন্ত উযুর পানি পৌঁছবে সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হবে
৪৭৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন। অতঃপর তিনি হাত (ধোয়ার সময়) লম্বা করে দিলেন এমন কি (ধুইতে ধুইতে) বগল পর্যন্ত পৌছলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ হুরায়রা! এটা কেমন উযূ (ওজু/অজু/অযু)! তিনি বললেন, হে ফারুখের বংশধর! তোমরা এখানে আছ নাকি? আমি যদি জানতাম যে তোমরা এখানে আছ, তাহলে আমি এরকম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতাম না। (এ জন্য এরকম করেছি যে), আমি আমার দোস্ত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, মু’মিনের উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি যে পর্যন্ত পৌছবে, কিয়ামতের দিন তার অলঙ্কারও সে পর্যন্ত পৌঁছবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে উযু করার ফযীলত
৪৮০. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ), কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যদ্বারা আল্লাহ তায়ালা পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উচু করে দিবেন? সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, তা হল, অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করা, মসজিদে আসার জন্য বেশী পদচারণা এবং এক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর অন্য সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রাখ, এটাই হল রিবাত (তথা নিজকে আটকে রাখা ও শয়তানের মুকাবিলায় নিজকে প্রস্তুত রাখা)।
৪৮১. ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহঃ) ... আলা ইবনু আবদুল রাহমান থেকে এই সনদে উক্ত হাদীসটি বর্ণিত আছে। কিন্তু শু’বার বর্ণিত হাদীসটিতে رباط শব্দটির উল্লেখ নেই। আবার মালিকের বর্ণিত হাদীসে هذا لكم رباط শব্দটি দুবার উল্লিখিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. মিসওয়াকের বিবরণ
৪৮২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আমর আননাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিনদের ওপর (যুহায়র-এর হাদীসে আছে আমার উম্মাতের উপর) যদি কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
৪৮৩. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... মিকদামের পিতা সুরায়হ (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তাঁর-ঘরে ঢূকে সর্ব প্রথম কোন কাজটি করতেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন।
৪৮৪. আবূ বাকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর ঘরে প্রবেশ করতেন তখন প্রখমেই মিসওয়াক করতেন।
৪৮৫. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তখন মিসওয়াকের একপ্রান্ত তার জিহ্বার উপর ছিল।
৪৮৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ মার্জনা (পরিস্কার) করতেন।
৪৮৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন এরপর অনুরুপ বর্ননা রয়েছে। এ হাদীসে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
৪৮৮. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে উঠতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।
৪৮৯. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে রাত যাপন করেছিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাতে উঠলেন। বেরিয়ে এসে তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। এরপর আলে-ইমরানের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ থেকে فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ পর্যন্ত। এরপর ঘরে ফিরে এসে মিসওয়াক করলেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ), আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। তারপর আবার-উঠে বাইরে রেরিয়ে গেলেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে এ উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তারপর ফিরে এসে মিসওয়াক করলেন, উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. মানবীয় ফিতরাতের (অভ্যাসের) বিবরণ
৪৯০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত (তথা সুন্নাত) পাঁচটি অথবা ভিনি বলেছেন, পাঁচটি কাজ ফিতরাতের অন্তভুক্ত; খাতনা করা, নাভির নিচের পশম কাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং গোঁফ ছাঁটা।
৪৯১. আবূত্ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত পাঁচটি। খাতনা করা, নাভির নিচের পশম কাটা, গোঁফ ছাটা, নখ কাটা এবং বগলের পশম উপড়ে ফেলা।
৪৯২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাড়ির নীচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে- চল্লিশ দিনের অধিক যেন না রাখি।
৪৯৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা কর।
৪৯৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোঁফ ছাটতে এবং দাড়ি লন্বা করতে নির্দেশ দিয়েছে।
৪৯৫. সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর- গোফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা কর।
৪৯৬. আবূবকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা কর (এভাবেই) তোমরা অগ্নি পুজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর।
৪৯৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তভুক্ত- গোঁফ খাটো করা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া, নখ কাটা, নাক কানের ছিদ্র এবং আঙ্গুলের গিরাসমুহ ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাড়ির নিচের পশম কাটা এবং পানি দ্বারা ইসতিনজা করা। হাদীসের রাবী মুস’আব বলেন, দশম কাজটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। এ হাদীসের বর্ণনায় কুতায়বা আরো একটি বাক্য বাড়ান যে, ওয়াকী বলেন, انْتِقَاصُ الْمَاءِ অর্থ ইসতিনজা করা।
৪৯৮. এই হাদীসটিই আবূ কুরায়ব এর সুত্রে মুসআব ইবনু শায়বা (রহঃ) থেকে একই সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। অবশ্য তিনি বলেন যে, তার পিতা বলেন, আমি দশম কাজটির কথা ভুলে গিয়েছি।
No comments: