Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান-৪র্থ




পরিচ্ছেদঃ ৬১. যুলিম করে কারো সম্পদ গ্রাস করতে চাইলে প্রতিরোধে যালিমকে হত্যা করা অন্যায় নয় এবং সে জাহান্নামী; আর যে ব্যাক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষায় নিহত হয়, সে শহীদ


২৫৯.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থের্কে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয়, তবে আমি কি করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দিবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সাথে এ নিয়ে লড়াই করে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তার মুকাবিলায় লড়বে। লোকটি বলল, আপনার কি অভিমত যদি সে আমাকে হত্যা করে বসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে তুমি শহীদ বলে গণ্য হবে। লোকটি বলল, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জাহান্নামী।
২৬০.    আল হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী, ইসহাক ইবনু মানসুর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... উমর ইবনু আবদুর রহমানের আযাদকৃত গোলাম সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর ও আমবাসা ইবনু আবূ সুফিয়ানের মধ্যে কিছু সম্পদ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয়। আর তারা উভয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্যত হয়ে পড়ে। তখন খালিদ ইবনু আস আবদুল্লাহ ইবনু আমরের কাছে গেলেন এবং বোঝাতে চেষ্টা করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আমর বললেন, তুমি কি জানো না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। 

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ রেওয়ায়াত করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ জনগনের সঙ্গে খিয়ানতকারী শাসক জাহান্নামের যোগ্য


২৬১.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মাকিল ইবনু ইয়াসারের মৃত্যু শয্যায় উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তার সাক্ষাতে যান। মাকিল তাকে বললেন, আজ তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শোনা এমন একটি হাদীস শোনাব যা আমি আরো বেঁচে থাকব বলে জানলে তা কিছুতেই শোনাতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা যে বান্দাকে জনগণের দায়িত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে খেয়ানতকারীরুপে যদি তার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।
২৬২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, মাকিল ইবনু ইয়াসারের অসুস্থ অবস্হায় উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তার সাক্ষাতে গেলেন এবং কিছু জানতে চাইলেন। তখন মা’কিল (রাঃ) বলেন, আজ তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব, যা আমি আগে তোমাকে বর্ণনা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যে বান্দাকে জনগণের শাসনভার প্রদান করেন আর সে যদি তাদের সঙ্গে খেয়ানতকারীরুপে মৃত্যুবরণ করে, তবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। উবায়দুল্লাহ বললেন, আপনি কি আজ পর্যন্ত এ হাদীস আমাকে বর্ণনা করেননি? তিনি বললেন, না কখনো বর্ণনা করি নাই। অথবা রাবী এ কথা বলেছেন, বর্ণনা করতে ইচ্ছুক ছিলাম না।
২৬৩.    আল কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমরা মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) এর অসুস্থতাকালে তাঁর কুশলাদি জানতে গিয়েছিলাম। ইত্যবসরে উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হন। মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তাকে বললেন, আজ তোমাকে একটি হাদীস শোনাব, যা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি...। পরে তিনি উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের অর্থের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
২৬৪.    আবূ গাসসান আল মিসমাঈ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূল মালীহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, উবায়দুল্লাহ মা’কিল ইবনু ইয়াসার-এর অসুস্থকালে তার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আজ আমি তোমাকে একটি হাদীস বলব আমি মূত্যুশয্যায় না থাকলে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, মুসলিমদের দায়িত্বে নিযূক্ত কোন আমীর (শাসক) যদি তাদের কল্যাণ কামনা না করে এবং তাদের সার্থ রক্ষায় সর্বাত্মক প্রয়াস না চালায়, তবে সে মুসলিমদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৬৩. কতকের অন্তর থেকে ঈমান ও আমানতদারী উঠিয়ে নেয়া এবং অন্তরে ফিতনার সৃষ্টি হওয়া


২৬৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুটি কথা বলেছিলেন, সে দুটির একটি তো আমি স্বচোখেই দেখেছি আর অপরটির জন্য অপেক্ষা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানব হৃদয়ের মূলে আমানত নাযিল হয়, তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অনন্তর তারা কুরআন শিখেছে এবং সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করেছেন তারপর তিনি আমাদেরকে আমানত উঠিয়ে নেওয়ার বর্ণনা দিলেন। বললেনঃ মানুষ ঘুমাবে আর তখন তার অন্তর হতে আমানত ভুলে নেয়া হবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে একটি নুকতার মত। এরপর আবার সে ঘূমায় তখন তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেয়া হবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে ফোস্কার মত যেন একটি অঙ্গার, তা তুমি তোমার পায়ে রগড়ে দিলে। তখন তাতে ফোস্কা পড়ে যায় এবং তুমি তা ফোলা দেখতে পাও অথচ তাতে (পুঁজ-পানি ব্যতীত) কিছু নেই। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি কাকর নিয়ে তার পায়ে ঘষলেন এবং বললেনঃ যখন এমন অবস্থা হয়ে যাবে, তখন মানুষ বেচাকেনা করবে কিন্তু কেউ আমানত শোধ করবে না। (আমানতদার ব্যাক্তি এত কমে যাবে যে) এমনকি বলা হবে যে, অমুক বংশে একজন আমানতদার আছেন। এমন অবস্থা হবে যে, কাউকে বলা হবে সে কতই না বাহাদুর, কতই না হুশিয়ার, বড়ই বুদ্ধিমান অথচ তার অন্তরে দানা পরিমাণ ঈমান নেই। 

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, এমন এক যুগও গেছে যখন যে কারো সাথে লেনদেন করতে দ্বিধা করতাম না। কারণ সে যদি মুসলমান হতো তবে তার দ্বীনদারীই তাকে আমার হক পরিশোধ করতে বাধ্য করত। আর যদি সে খৃষ্টান বা ইহুদী হতো তবে তার প্রশাসক তা শোধ করতে তাকে বাধ্য করত্য কিন্তু বর্তমানে আমার অমুক অমুক ব্যতীত কারোর সাথে লেনদেন করার নই।
২৬৬.    ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) এর সূত্রে পূর্ব বর্ণিত সনদের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
২৬৭.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন আমরা উমর (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছ? উপস্থিত একদল বললেন, আমরা শুনেছি। উমর (রাঃ) বললেন, তোমরা হয়ত একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা মনে করেছ। তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ), রোযা ও সা’দকার মাধ্যমে এগুলোর কাফফারা হয়ে যায়। উমর (রাঃ) বললেন, না, আমি জানতে চেয়েছি, তোমাদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে বৃহৎ ফিতনার কথা আলোচনা করতে শুনেছে, যা সমুদ্র তরঙের মত ধেয়ে আসবে। 

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, আমি (শুনেছি)। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি শুনেছ, মা-শা আল্লাহ। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মত এক এক করে ফিতনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায়, তাতে একটি করে কাল দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করবে, তাতে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়বে। এমনি করে দুটি অন্তর দুধরনের হয়ে যায়। একটি শ্বেত পাথরের মত; আসমান ও যমীন যতদিন থাকবে ততদিন কোন ফিতনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হযে যায় উল্টানো কাল কলসির মত, প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা সেঁধে দিয়েছে তা ছাড়া ভালমন্দ বলতে সে কিছুই সে চিনে না। 

হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, উমর (রাঃ) কে আমি আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। অচিরেই সেটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রাঃ) বললেন, সর্বনাশ! তা ভেঙে ফেলা হবে? যদি ভেঙে ফেলা না হতো, তাহলে হয়ত পূনরায় বন্ধ করা যেত। হুযায়ফা (রাঃ) উত্তর করলেন, না ভেঙে ফেলাই হবে। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হল একজন মানুষ; সে নিহত হবে কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবে। এটি কোন গল্প নয় বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস। বর্ণনাকারী আবূ খালিদ বলেন, আমি সা’দকে জিজ্ঞেস করলাম, أَسْوَدُ مُرْبَادًّا এর অর্থ কি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কালো-সাদায় মিশ্রিত রং-। আমি বললাম, الْكُوزُ مُجَخِّيًا এর অর্থ কি? তিনি বললেন ‘উল্টানো কলসি’।
২৬৮.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... রিবঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, হুযায়ফা (রাঃ) উমর (রাঃ)-এর কাছ থেকে ফিরে এসে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, গতকাল যখন আমি আমীরুল মুমিনীন উমর (রাঃ) এর কাছে বসা ছিলাম, তখন তাঁর সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কার ফিতনা সষ্পকীয় হাদীস স্মরণ আছে ...। এরপর রাবী আবূ খালিদ বর্ণিত পূর্বের হাদীসটির মত বর্ণনা করেন। তবে তিনি مُجَخِّيًا ও مُرْبَادًّا এর আবূ মালিক বর্ণিত ব্যাখ্যার উল্লেখ করেননি।
২৬৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, আমর ইবনু আলী ও উকবা ইবনু মুকরাম আল আাম্মী (রহঃ) ... রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনা সম্পর্কে কি ইরশাদ করেছেন এ সম্পর্কে তোমাদের কেউ আমাকে হাদীস বর্ণনা করতে পারবে? তখন হুযায়ফা (রাঃ)-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি পারব ...। এরপর রিবঈ এর সুত্রে বর্ণিত আবূ মালিকের রেওয়ায়েতের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে এও উল্লেখ করেন যে, হুযায়ফা (রাঃ) বলেছেন, আমি উমর (রাঃ) কে যে হাদীস বর্ণনা করেছি, তা কোন বানোয়াট কথা নয় বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই তা বর্ণনা করেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৬৪. শুরুতে ইসলাম ছিল অপরিচিত; অচিরেই আবার তা অপরিচিতের মত হয়ে যাবে এবং তা দুই মসজিদ (মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুন নববী) এর মাঝে আশ্রয় নিবে


২৭০.    মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইসলাম শুরুতে অপরিচিত ছিল, অচিরেই তা আবার শুরুর মত অপরিচিত হয়ে যাবে। সূতরাং এরুপ অপরিচিত অবস্থায়ও যারা ইসলামের উপর কায়েম থাকবে, তাদের জন্য মুবারকবাদ।
২৭১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আল ফাযল ইবনু সাহল আল আরাজ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইরশাদ করেনঃ অপরিচিতের বেশে ইসলাম শুরু হয়েছিল, অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে তার গর্তে প্রবেশ করে তদ্রুপ ইসলামও দুই মসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।
২৭২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সাপ যেমন সঙ্কুচিত হয়ে আপন গর্তে আশ্রয় নেয়, তদ্রুপ ইসলামও (সঙ্কুচিত হয়ে) মদিনায় আশ্রয় নেবে।

পরিচ্ছেদঃ ৬৫. শেষ যুগে ঈমান বিদায় নেবে


২৭৩.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পৃথিবীর বুকে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলার মত লোক অবশিষ্ট থাকবে না, যতক্ষন পর্যন্ত এরুপ অবস্থার সৃষ্টি না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।
২৭৪.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ আল্লাহ বলার মত একটি মানুষ অবশিষ্ট থাকতেও কিয়ামত হবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৬৬. ভয়-ভীতির কারণে ঈমান গোপন রাখার বৈধতা


২৭৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে বললেনঃ গণনা কর তো, কতজন মানুষ ইসলামের কথা স্বীকার করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন? আমরা তো প্রায় ছয়শত থেকে সাতশ” লোক আছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জানো না, অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সাহাবী বলেন, পরবর্তীকালে সত্যই আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হই, এমন কি আমাদের কোন কোন ব্যাক্তিকে গোপনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে হতো।

পরিচ্ছেদঃ ৬৭. ঈমানের দুর্বলতার কারণে যার সম্পর্ক ধর্মত্যাগের আশঙ্কা হয়, তার অন্তরে জয়ের উদ্দেশ্যে বিশেষ সৌজন্য প্রদর্শন এবং অকাট্য প্রমান ব্যাতিরেকে কাউকে নিশ্চিত মু'মিন বলে আখ্যায়িত করা থেকে বিরত থাকা


২৭৬.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কিছু মাল বন্টন করছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে কিছু দিন, কেননা সে নিশ্চয়ই একজন মুমিন ব্যাক্তি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল যে, সে একজন মুসলিম। সাহাবী বললেন, আমি কথাটি তিনবার পূনরাবৃত্তি করেছি, তিনিও তিনবারই আমাকে ঐ একই উত্তর দিয়েছেন এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অপরজন আমার কাছে অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি কাউকে এ কারণে (মাল) দিয়ে থাকি যে, আল্লাহ তা'আলা যেন তাকে উপূড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ না করেন।*
২৭৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে কিছু মাল দিলেন। তখন সা’দ (রাঃ) তাদের মধ্যে বসা ছিলেন। সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে এক ব্যাক্তিকে কিছু দিলেন না; অথচ আমার দৃষ্টিতে সে ছিল পাওয়ার বেশি উপযুক্ত। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেওয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম, অবশ্যই আমি তাকে তো মুমিন বলে জানি! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ র্নীরব থাকলাম। তার সম্পর্কে আমি যা জানি তা আমার কাছে প্রবল হয়ে উঠল, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেওয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম, আমি তো তাকে অবশ্যই মুমিন বলে ধারনা করি! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল, সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। পূনঃ তার সম্পর্কে আমি যা জানি, তা প্রবল হয়ে উঠল, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম, আমি তো তাকে অবশ্যই মুমিন বলে জানি! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল, সে মুসলিম। অন্যজন আমার কাছে অধিক প্রিয় হওয়হ সত্ত্বেও আমি কাউকে এ আশঙ্কায় কিছু দান করে থাকি যে, সে যেন নিম্নমুখী হয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ্ত না হয়।
২৭৮.    আল হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে কিছু দিলেন। তখন আমি তাদের মধ্যে বসা ছিলাম। এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেওয়ার কারণ কি?
২৭৯.    আল হাসান আল হুলওয়ানী (রহঃ) ... ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনু সা’দকে এ হাদীস বর্ননা করতে শুনেছি। তবে তিনি তাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, সা’দ (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গ্রীবা ও কাঁধের মাঝখানে সজোরে হাত রেখে বললেনঃ হে সা’দ তুমি কি এজন্য বিতর্ক করতে চাও? আমি কাউকে দান করি ...।

পরিচ্ছেদঃ ৬৮. প্রকাশ্য প্রমানের দ্বারা হৃদয়ের প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়


২৮০.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর তূলনায় আমাদের মনে অধিক সন্দেহ জাগতে পারো তিনি বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। আল্লাহ বললেনঃ তবে কি তুমি বিশ্বাস কর নি? তিনি উত্তরে বললেন, কেন করব না? তবে তা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য। (২ঃ ২৬০)। আল্লাহ তা’আলা লূত (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর রহমত বর্ষণ করুন, তিনি কোন শক্তিশালী জনগোষ্ঠীর আশ্রয় গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ইউসুফের দীর্ঘ কারাবরণের মত আমাকেও যদি কারাগারে অবস্থান করতে হতো, তবে আমি রাজদুতের- আহবানে সাড়া দিতাম। 

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা আয যুবাঈ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রেও ইউনুস ... যুহুরি (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে মালিক (রহঃ) এর হাদিসে আছে, তা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য। তারপর তিনি এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন।
২৮১.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে মালিকের সুত্রে বর্নিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৬৯. আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকল মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছেন এবং অন্য সকল দীন ও ধর্ম তার দীনের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে, এ কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য


২৮২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে এমন মুজিযা দেয়া হয়েছে, যে মুজিযা অনুযায়ী মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। পক্ষান্তরে আমাকে যে মুজিযা প্রদান করা হয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী। সূতরাং কিয়ামতের দিন আমার অনুসারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে বলে আমি আশা রাখিি।
২৮৩.    ইউনূস ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যাক্তই আমার এ আহবান শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।
২৮৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সালিহ ইবনু সালিহ আল হামদানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ইমাম শাবীর কাছে এসে জনৈক খুরাসানী ব্যাক্তিকে প্রশ্ন করতে দেখলাম। সে বলল, হে আবূ আমর! আমাদের অঞ্চলে কতিপয় খুরাসানীর মতামত হল, যে-ব্যাক্তি নিজের দাসীকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিয়ে করল, সে যেন নিজ কুরবানীর উটের উপর সাওয়ার হলো (অর্থাৎ তারা তা নিন্দনীয় কাজ মনে করে)। শা’বী উত্তরে বললেন, আমাকে আবূ বুরদা (রাঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তিন ধরনের লোককে দ্বিগুন সাওয়াব দান করা হবে। (তারা হলঃ) (১) যে আহলে কিতাব তার নাবীর প্রতি ঈমান এনেছে এবং পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পেয়ে তার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাঁকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে এবং তাঁর অনুসরণ করেছে সে দ্বিগুন সাওয়াব পাবে। (২) যে দাস আল্লাহ তা’আলার হক আদায় করেছে এবং তার মালিকের হুকুমও আদায় করেছে, সেও দ্বিগুন সাওয়াব লাভ করবে। (৩) যে ব্যাক্তি তার দাসীকে উত্তম খাবার দিয়েছে, উত্তমরুপে আদব কায়দা শিখিয়েছে, তারপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; সেও দ্বিগুন সাওয়াবের অধিকারী হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর শা’বী উক্ত খুরাসানীকে বললেন, কোন বিনিময় ছাড়াই তুমি এ হাদীস নিয়ে যাও; অথচ এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের জন্যও এক সময় মদিনা পর্যন্ত লোকেরা সফর করত।
২৮৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমর ও ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায (রহঃ) ... সালিহ (রহঃ) থেকে পূর্বোল্লিখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭০. আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শরীআত অনুসারী প্রশাসক হিসেবে ঈসা ইবন মারইয়াম (আঃ) এর অবতরন করা, আল্লাহ্‌ কর্তৃক এ উম্মাতকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা, এ দীন রহিত না হওয়া এবং কিয়ামত পর্যন্ত এ উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকার প্রমান


২৮৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সে সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) কে একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে অবতীর্ন করা হবে। তখন তিনি ক্রুশ (চিহ্ন) ধ্বংস করবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া রহিত করবেন। তখন সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, তা গ্রহণ করার কেউ থাকবে না।
২৮৭.    আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যূহায়র ইবনু হারব হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহুরি (রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সনদের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (তবে প্রত্যেক রেওয়ায়েতে কিছু শব্দের হেরফের বিদ্যমান, যেমন) ইবনু উআয়না তার রেওয়ায়েতে إِمَامًا مُقْسِطًا وَحَكَمًا عَدْلاً কথাটির উল্লেখ করেন। ইউনুস তার রেওয়ায়েতে حَكَمًا عَادِلاً এর উল্লেখ করেছেন إِمَامًا مُقْسِطًا উল্লেখ করেননি। 

সালিহ তাঁর রেওয়ায়েতে লাইস বর্নিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় আরও রয়েছে, সে সময় এক একটি সিজদা পৃথিবী ও পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ অপেক্ষা অধিক শ্রেয় বলে বিবেচিত হবে। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পড়তে পারঃ (অর্থ) “আহলে কিতাব-এর মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন।” (৪ঃ ১৫৯)
২৮৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহর কসম! ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ প্রশাসকরুপে অবতীর্ণ হবেন এবং ক্রশ চুর্ণ করবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিযিয়া রহিত করবেন। মোটাতাজা উটগুলো বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে; কিন্তু তা নেবার জন্য কেউ চেষ্টা করবে না। পরস্পর হিংসা, বিদ্বেষ, শক্রতা বিদায় নিবে এবং সস্পদ গ্রহণের জন্য মানুষকে আহবান করা হবে; কিন্তু তা কেউ গ্রহণ করবে না।
২৮৯.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের জীবন কতই না ধন্য হবে, যখন ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন এবং তোমাদেরই একজন তোমাদের ইমাম হবেন।
২৯০.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের জীবন কতই না ধন্য হবে, যে সময়ে ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) কে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হবে আর তিনি তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন।
২৯১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা কতই না ধন্য হবে, যে সময়ে ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) অবতীর্ণ হবেন এবং তোমাদেরই একজন তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। ওয়ালীদ বলেন, আমি ইবনু আবূ যিবকে জিজ্ঞেস করলাম, আওযায়ী ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ সুত্রে আমাদেরকে إِمَامُكُمْ مِنْكُمْ শব্দে হাদীস বর্ণনা করছেন। তদুত্তরে তিনি বললেন, إِمَامُكُمْ مِنْكُمْ কথাটির মর্ম জানো কি? আমি বললাম, বলুন। তিনি বললেন, অর্থাৎ তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত কিতাব ও তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসৃত আদর্শ অবলম্বনে তিনি তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন।
২৯২.    আল ওয়ালীদ ইবনু শুজা, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন। মুসলমানদের আমীর বলবেন, আসুন। সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের ইমামত করুন। তিনি উত্তর দিবেনঃ না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবেন। এ হল আল্লাহ তা'আলা প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান।

পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না


২৯৩.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পশ্চিমাকাশে সুর্যোদয়ের পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবে না, আর যখন পশ্চিম গগনে সূর্য উদিত হবে, তখন সকল মানুষ একত্রে ঈমান আনবে। কিন্তু যে ইতিপূর্বে ঈমান আনে নাই অথবা যে ঈমান অনুযায়ী নেক কাজ করে নাই, সে সময়ে ঈমান আনায় তার কোন উপকার হবে না।
২৯৪.    আবূ বকর ইবনু শায়বা, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে আলী (রাঃ) ও আবদুর রহমান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
২৯৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি বিষয় প্রকাশিত হলে ইতিপূর্বে বে ঈমান আনে নাই বা ঈমান অনুযায়ী নেক কাজ করে নাই, সে সময়ে ঈমান আনায় তার কোন উপকার হবে না, (সে তিনটি বিষয় হল) 

১. পশ্চিামাকাশে সূর্যোদয় 
২. দাজ্জাল ও 
৩. দাব্বাতূল আরদ।
২৯৬.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো, এ সূর্য কোথায় যায়? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থানস্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থানস্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়লে হয়েই উদিত হয়। 

সে আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথার্রীতি আরশের নিচে তার নিদৃষ্টস্থলে যাবে। তাকে বলা হবে, ওঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিম গগনে উদিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জানো? সে দিন ঐ ব্যাক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যাক্তি পুর্বে ঈমান আনে নাই কিংবা যে ব্যাক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করে নাই।
২৯৭.    আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান আল ওয়াসিতী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদেরকে লক্ষ করে বললেনঃ তোমরা কি জানো, এ সুর্য কোথায় গমন করে?... এরপর রাবী ইবনু উলায়্যা বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
২৯৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় উপবিষ্ট ছিলেন। সূর্য অন্তমিত হলে তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! জানো, এ সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তার গন্তব্য স্থলে যায় এবং আল্লাহর কাছে সিজদার অনুমতি চায়। তখন তাকে অনুমতি দেয়া হয়। পরে একদিন যখন তাকে বলা হবে যেদিক থেকে এসেছো সেদিকে ফিরে যাও। অনন্তর তা অস্থাচল থেকে উদিত হবে। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের কিরাআত অনুসারে তিলাওয়াত করেনঃ ذَلِكَ مُسْتَقَرٌّ لَهَا এ তার গন্তব্যস্থল
২৯৯.    আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আামরা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا “এবং সূর্য ভ্রমণ করে উহার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিবে” (৩৬ঃ ৩৮) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ আরশের নিচে তার গন্তব্য স্থল।

পরিচ্ছেদঃ ৭২. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অহীর সুচনা


৩০০.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। আর তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন, তা প্রভাত জ্যোতির মত সুষ্পষ্টরুপে সত্যে পরিণত হতো। তাঁর কাছে একাকী থাকা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তারপর তিনি হেরা গুহায় নির্জনে কাটাতে থাকেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসার পুর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন এবং এর জন্য কিছু খাদ্য-সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তারপর তিনি খাদীজার কাছে ফিরে যেতেন এবং আরও কয়েকদিনের জন্য অনুরুপ খাদ্য-সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে আসতেন। তিনি হেরা গুহায় যখন ইবাদতে রত ছিলেন, তঁখন তাঁর কাছে ফেরেশতা আসলেন। বললেনঃ পড়ুন! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তো পড়তে জানিনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন ফেরেশতা আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হয়। 

তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন! -আমি বললাম, আমি তো পড়তে সক্ষম নই। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং দ্বিতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। পরে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন! আমি বললাম আমি তো পড়তে পারি না। এরপর আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তৃতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হল। এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন! আপনার প্রতিপালকের নামে, করেছেন; সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পড়ুন! আর আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।” (৯৬ঃ ১-৫)। 

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ওহী নিয়ে ফিরে এলেন। তার স্কন্ধের পেশিগুলো কাপছিল। খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেনঃ তোমরা আমাকে চাঁদরাবৃত কর, তোমরা আমাকে চাদরাবৃত -কর, তোমরা আমাকে চাদরাবৃত কর। তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তার ভীতি দূর হল। এরপর খাদীজা (রাঃ) কে সকল ঘটনা উল্লেখ করে বললেনঃ খাদীজা, আমার কি হল? আমি আমার নিজের উপর আশঙ্কা করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন না, কখনো তা হবে না; বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোজখবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথির সেবা করেন এবং প্রকৃতি দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। 

এরপর খাদীজা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওরাকা ইবনু নাওফাল ইবনু আসা’দ ইবনু আবদুল উযযা-এর কাছে নিয়ে আসেন। ওরাকা হলেন খাদীজা (রাঃ)-এর চাচাত ভাই। ইনি জাহিলিয়াতের যুগে খৃষ্টানধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী লিখতে জানতেন এবং ইনজীল কিতাবের আরবী অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ এবং দূষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ চাচা, (সম্মানার্থে চাচা বলে সম্মোধন করেছিলেন। অন্য রেওয়ায়েতে ‘হে চাচাত ভাই’ এ কথার উল্লেখ রয়েছে) আপনার ভ্রাতুষ্পূত্র কি বলছে শুনুন তো! ওরাকা ইবনু নাওফাল বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! কি দেখেছিলেন? রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা দেখেছিলেন, সবকিছু বিবৃত করলেন। 

ওরাকা বললেন, এ তো সে সংবাদবাহক যাকে আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। হায়! আমি যদি সে সময় যুবক থাকতাম, হায়! আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম, যখন আপনার জাতিগোষ্ঠী আপনাকে দেশ থেকে বের করে দিবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সত্যি কি আমাকে তারা বের করে দিবে? ওরাকা বললেন, হ্যাঁ। যে ব্যাক্তিই আপনার মত কিছু (নবুওয়াত ও রিসালাত নিয়ে আগমন করেছে, তাঁর সঙ্গেই এরুপ দুশমনী করা হয়েছে। আর আমি যদি আপনার সে যুগ পাই, তবে আপনাকে অবশ্যই পূর্ণ সহযোগিতা করব।
৩০১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওহীর সুচনা হয়েছিল... এরপর বর্ণনাকারী ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপই বর্ণনা করেন। তবে তিনি لاَ يُحْزِنُكَ اللَّهُ أَبَدًا (অর্থাৎ আল্লাহ তায়াআলা আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না) এর স্থলে لاَ يُحْزِنُكَ اللَّهُ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা কখনো আপনাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করবেন না উল্লেখ করেছেন এবং অন্যত্র أَىِ ابْنَ عَمِّ বলেছেন।
৩০২.    আবদুল মালিক ইবনু শুয়াইব ইবনু লাইস (রহঃ) ... উম্মুল মূমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে ... এ রেওয়ায়েতে فَرَجَعَ إِلَى خَدِيجَةَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কম্পিত হৃদয়ে খাদিজা (রাঃ)-এব কাছে ফিরে এলেন...] একথার উল্লেখ রয়েছে। এরপর রাবী ইউনুস ও মা’মারের অনুরুপ বর্ননা করেন, তবে أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ওহীর সুচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে।” এ কথার উল্লেখ করেননি। অন্যদিকে فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا (আল্লাহর শপথ, তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না) এতটুকু ইউনুসের অনুরুপ বর্ণনা কঁরেছেন। আর খাদীজার সম্বোধন এভাবে উল্লেখ করেছেন أَىِ ابْنَ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ (চাচাত ভাই! শুন তো আপনার ভাতিজা কি বলছেন)
৩০৩.    আবূ তাহির (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ ওহীর বিরতি প্রসঙ্গে পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর বিরতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, আমি পথ চলছিলাম, সে মুহূর্তে আকাশ হতে একটি শব্দ শুনে মাথা ভুলে তাকালাম, দেখি, সেই হেরা গুহায় যে ফেরেশতা আমার কাছে এসেছিলেন সে ফেরেশতা যমীন ও আসমানের মধ্যস্থলে কুরসীর উপর বসে আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আর জলদি বাড়ি ফিরে এসে বলতে লাগলামঃ আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত কর, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত কর। তারা আমায় বস্ত্রাচ্ছাদিত করল। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (অর্থ) “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠূন! সতর্কবানী প্রচার করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পরিচছদ পবিত্র রাখুন এবং অপবিত্রতা হতে দুরে থাকুন” (৭৪ঃ ১-৫)। 

এখানে الرُّجْزَ অপবিত্রতা الأَوْثَانُ বলে প্রতিমাকে-বোঝানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তারপর ধারাবাহিকভাবে ওর্হীর অবতরণ আরম্ভ হয়।
৩০৪.    আবদুল মালিক ইবনু শু’আইব ইবনু লাইস (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ তারপর কিছুদিন যাবত আমার প্রতি ওহীর অবতরণ বন্ধ ছিল। পরে একদিন আমি পথ চলছিলাম...। এরপর রাবী ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে উকায়ল خشيت এর স্থলে فَجُثِثْتُ مِنْهُ فَرَقًا حَتَّى هَوَيْتُ إِلَى الأَرْضِ (তাকে দেখে আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম, এমনকি আমি মাটিতে পড়ে গেলাম) বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন তিনি বর্ণনা করেছেন ثُمَّ حَمِيَ الْوَحْىُ بَعْدُ وَتَتَابَعَ (অতঃপর অহী নিয়মিত হয়ে গেল ও ক্রমাগত নাযিল হতে থাকল)
৩০৫.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যুহুরি (রহঃ) থেকে ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ (অর্থ) “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত ... এবং অপবিত্রতা থেকে দুরে থাকুন”। (৭৪ঃ ১-৫) এ আয়াতটি সালাত (নামায/নামাজ) ফরয হওয়ার পূর্বেই নাযিল হয়। الرُّجْزَ অর্থ الأَوْثَانُ (প্রতিমা) এবং মা’মার এ হাদীসে উকায়লের মতো خشيت স্থলে جُئِثْت বর্ণনা করেন।
৩০৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি আবূ সালামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ন হায়ছে? তিনি বললেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (৭৪ঃ ১-৫)। আমি বললাম اقْرَأْ (৯৬ঃ ১-৫)। তিনি বললেন, আমিও জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুরআনের কোন আয়াতর্টি প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেছেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ আমি বললাম, اقْرَأْ ? জাবির (রাঃ) বললেন, আমি তোমাদের তাই বর্ণনা করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমি একমাস হেরা শুহায় অবস্থান করি। অবস্থান শেষে আমি নিচে নেমে এলাম। উপত্যকার মাঝখানে যখন পৌছলাম তখন আমাকে ডাকা হল। আমি সামনে পেছনে ডানে-বায়ে তাকালাম, কাউকে দেখলাম না। তারপর আমাকে ডাকা হল, তখনো কাউকে দেখতে পেলাম না। পূনঃ আমাকে ডাকা হল। আমি তাকালাম, দেখি সে ফেরেশতা অর্থাৎ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) শূন্যে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট। আমার প্রবল কম্পন গুরু হল। অনন্তর খাদীজার কাছে আসলাম। বললাম তোমরা আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করো। তারা আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিল। আমার উপর পানি ঢালল। অনন্তর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠূন, সতর্কবানী প্রচার করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন।” (৭৪ঃ ১-৪)
৩০৭.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সনদে বর্ননা করেছেন। তবে তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেনঃ ‘সে ফিরিশতা, আসমান যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট'।

পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি'রাজ এবং নামায ফরয হওয়া


৩০৮.    শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম। 

জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরারের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) এর সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) এর সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
৩০৯.    আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম আল আবদী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার কাছে ফেরেশতা আসলেন এবং তাঁরা আমাকে নিয়ে যমযমে গেলেন। আমার বক্ষ বিদীর্ন করা হল। তারপর যমযমের পানি দিয়ে আমাকে গোসল করান হল। এরপর নির্ধারিত স্থানে আমাকে ফিরিয়ে আনা হল।
৩১০.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁর হৎপিন্ডটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিন্ড বের করলেন এবং বললেন এ অংশটি শয়তানের। এরপর হৎপিণ্ডটিকে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পূনঃস্থাপন করলেন। তখন ঐ শিশুরা দৌড়ে তাঁর দুধমায়ের কাছে গেল এবং বলল, মুহাম্মাদ -কে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে আছেন! আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্ষে সে সেলাই-এর চিহ্ন দেখেছি।
৩১১.    হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... শারীক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ নামির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কা'বার মসজিদ থেকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাত সম্পর্কে আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, ওহী প্রাপ্তির পূর্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মাসজিলে হারামে নিদ্রিত অবস্থায় ছিলেন। এরুপে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত সাবিতুল বুনানীর হাদীসেরই অনুরুপ বর্ণনা করে যান। তবে এ বর্ণনায় শব্দের কিছু আগপাছ ও শব্দের কিছু বেশকম রয়েছে।
৩১২.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া আত তুজিবী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ আমি মক্কাতে ছিলাম। আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হলো। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করলেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি পাত্র আনা হলো এবং তা আমার বুকে ঢেলে বক্ষ বন্ধ করে দিলেনা এরপর আমার হাত ধরলেন এবং ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করলেন। আমরা যখন প্রথম আসমানে গিয়ে পৌছলাম, তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এ আসমানের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! তিনি বললেন, কে? বললেন, জিবরীল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি অন্য কেউ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার সাথে মুহাম্মদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দেওয়া হলো। 

আমরা প্রবেশ করে দেখি, এক ব্যাক্তি, তাঁর ডানে একদল মানুষ এবং বায়ে একদল মানুষ। যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন, আর যখন বাঁ দিকে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি আমাকে বললেন মারহাবা হে সুযোগ্য সন্তান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিবরীলকে বললাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি আদম (আলাইহিস সালাম) আর ডানে ও বায়ের এ লোকগুলো তার বংশধর। ডান পার্শ্বস্থরা হচ্ছে জান্নাতবাসী আর বাম পার্শ্বস্থরা হচ্ছে জাহান্নামবাসী। আর এ কারণেই তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন এবং বাঁ দিকে তাকালে কাদেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বারোহণ করলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌছলেন এবং এর দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি প্রথম আসমানের দ্বাররক্ষীর মত প্রশ্নোত্তর করে দরজা খূলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, তিনি আসমানসমূহে . আদম, ইদূরীস, মূসা ও ইবরাহীম (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেছেন। আদম (আলাইহিস সালাম) প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ষষ্ঠ আসমানে। এছাড়া অন্যান্য নাবীর অবস্থান সম্পর্কে এ রেওয়ায়েতে কিছু উল্লেখ নেই। 

আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল (আলাইহিস সালাম) ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী ! সুযোগ্য ভ্রাতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন; ইনি ইদরীস (আলাইহিস সালাম) তারপর আমরা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা (আলাইহিস সালাম)। 

তারপর আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)। তারপর আমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য সন্তান! জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি . ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)। 

ইবনু শিহাব, ইবনু হাযম, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বে চললেন। আমরা এমন এক স্তরে পৌঁছলাম যে, তথায় আমি কলম-এর খশমশ (লেখার) শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ইবনু হাযম ও আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তখন আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করার পথে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি উত্তরে বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) , ফরয করা হয়েছে। 

মূসা (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি আল্লাহর নিকটে ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ এর অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে এসে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানালে তিনি বললেন, না, আপনি পুনরায় ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত এতেও সক্ষম হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি আল্লাহর নিকটে ফিরে গেলে তিনি বললেন, এ নির্দেশ পাঁচ, আর পাঁচই পঞ্চাশের সমান করে দিলাম, আমার কথার কোন রদবদল নেই। 

এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসি। তিনি তখনো বললেন, আপনি ফিরে যান আল্লাহর নিকটে। আমি বললাম আমার লজ্জা অনুভূত হচ্ছে। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চললেন, আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলাম। তা এত বিচিত্র রঙে আবৃত যে, আমি বুঝতে পারছি না যে, আসলে তা কী। তারপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হল। সেখানে ছিল মুক্তার গম্বুজ আর তার মাটি ছিল মিশকের।
৩১৩.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা আমি কাবা শরীফের কাছে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। তখন তিন ব্যাক্তির মধ্যবতী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যাহোক তিনি আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল, তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর তিনি আমার বক্ষ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ন করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পার্শ্বস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত- বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন? 

তিনি জবাব দিলেন, “বক্ষ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমার হৃদপিণ্ডটি বের করা হল এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করে পূনরায় যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হল। ঈমান ও হিকমতে আমার হৃদয় পূর্ন করে দেয়া হয়েছে। এরপর আমার কাছে ‘বুরাক’- নামের একটি সাদা জন্তু উপস্থিত করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদুর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে সে ততদুর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করান হল। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত পৌছলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগন্তুকের আগমন হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর আমরা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আসলাম ... এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আসমানে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতূর্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারুন (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা ডাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু, এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন; অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম ও . ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। সাহাবী তাঁর এ হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। তন্মধ্যে দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদূরাতূল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বললাম, হে জিবরীল! এ নহর গুলো কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহরদ্বয় তো জান্নাতের নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফূরাত। অর্থাৎ এ দুটি নহরের সা’দূশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ দুটি নহরের সাথে। 

এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরীল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ‘বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দূটি পাত্র পেশ করা হলো, একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন। আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওসীলায় ফিতরাত এর উপর কায়েম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়... এভাবে বর্ণনাকায়ী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
৩১৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে আছে, এরপর আমার কাছে ঈমান ও হিকমত ভর্তি একটি স্বর্ণের রেকাবি আনা হলো এবং আমার বক্ষের উপরিভাগ হতে নিয়ে পেটের নিম্নাংশ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল ও যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করে হিকমত ও ঈমান দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো, এ অংশটূকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
৩১৫.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মিরাজ ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে বলেছেনঃ মূসা (আলাইহিস সালাম) হচ্ছে শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত দীর্ঘদেহী, গৌর বর্ণের। ঈসা (আলাইহিস সালাম) মধ্যমাকৃতির সূঠাম দেহ বিশিষ্ট। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের রক্ষী মালিক এবং দাজ্জালের উল্লেখ করেছিলেন।
৩১৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মিরাজ রজনীতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে গিয়েছি। তিনি দেখতে গৌরবর্ণের, দীর্ঘদেহী, অনেকটা যেন শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত। ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছি, তার রং ছিল শ্বেত-লোহিত; সুঠামদেহী আর তার চুলগুলো ছিল স্বাভাবিক। বর্ণনাকারী বলেন, যে নিদর্শনসমুহ কেবল তাঁকেই দেখান হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে জাহান্নামের রক্ষী মালিককে এবং দাজ্জালকে দেখান হয়। ইরশাদ হয়েছেঃ “অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ সমন্ধে সন্দেহ কর না”, (২ঃ ৩২) কাতাদা (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
৩১৭.    আহমাদ ইবনু হান্‌বাল ও সুবায়হ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গিগণ উত্তর দিলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি যেন মূসা (আলাইহিস সালাম) কে গিরিপথ থেকে অবতরণ করতে দেখছি, তিনি উচ্চম্বরে তালবিয়া পাঠ করছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারশা গিরিপথে আসলেন। তিনি বললেনঃ এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা গিরিপথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন ইউনূস ইবনু মাত্তা (আলাইহিস সালাম) কে দেখছি। তিনি সুঠামদেহী লাল বর্নের উষ্ট্রের পিঠে আরোহিত; গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর উষ্টের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি, তিনি তালবিয়া পাঠ করছিলেন। ইবনু হানবাল তার হাদীসে বলেন, হুশায়ম বলেছেন, خُلْبَةٌ এর অর্থ لِيفًا - খেজুর বৃক্ষের ছাল।
৩১৮.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আমরা মক্কা ও মদিনার মধ্যকার এক স্থানে সফর করছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর করলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন এখনও মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর কর্ণদ্বয়ের ছিদ্রে আঙ্গূল স্থাপন পূর্বক উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আলাইহিস সালাম) এর দেহের বর্ণ ও চুলের আকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাবী দাঊদ তা স্মরণ রাখতে পারেন নি। 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা সামনে আরো অগ্রসর হলাম এবং একটি গিরিপথে এসে পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা কিংবা লিফ্‌ত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন এখনও ইউনূস (আলাইহিস সালাম)-কে দেখতে পাচ্ছি তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় তিনি গিরিপথ অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একটি পশমী জোব্বা আর তিনি একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রির পিঠে আরোহিত। তাঁর উষ্ট্রির রশিটি খেজুর বৃক্ষের বাকল দ্বারা তৈরি।
৩১৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত সবাই দাজ্জালের আলোচনা উঠালেন। তখন কোন একজন বললেন, তার (দাজ্জালের) দুই চোখের মাঝামাঝিতে ‘কাফির’ শব্দ খচিত থাকবে। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছু বলেছেন বলে আমি শুনিনি। তবে এতটুকু বলতে শুনেছি যে, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম-এর আকৃতি জানতে হলে তোমাদের এ সাথীরই (নিজের দিকে ইঙ্গিত) দিকে তাকাও। (তিনি অনুরুপই ছিলেন) আর মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন গৌরবর্ণের সুঠামদেহী। তাঁকে লাল বর্নের একটি উষ্টের পিঠে আরোহিত দেখেছি। আমি যেন এখনও তাঁকে তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় উপত্যকার ঢাল দিয়ে নামতে দেখছি।
৩২০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমুহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণকে উপস্থিত করা হল। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে দেখলাম, একজন মধ্যম ধরনের মানুষ, অনেকটা শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত। আর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-কে দেখলাম, তাঁর নিকটতম ব্যাক্তি হলেন উরওইয়া ইবনু মাসঊদ। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে দেখলাম; তার অনেকটা কাছাকাছি সদৃশ ব্যাক্তি হচ্ছে তোমাদের এ সাথী অর্থাৎ স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখলাম; তাঁর কাছাকাছি সদৃশ ব্যাক্তি হচ্ছেন দাহইয়া। ইবনু রুমহের বর্ণনায় আছে, দিহইয়া ইবনু খলীফার মত।
৩২১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরুশাদ করেছেনঃ মিরাজ রজনীতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দেহের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। আমার ধারনা তিনি বলেছেন, তিনি মৃদু কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। দেখতে শানূয়া গোত্রের লোকদের মত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এরপর তিনি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তিনি মধ্যম ধরনের লোহিত বর্ণের পুরুষ। মনে হচ্ছিল যেন এক্ষণি স্নানাগার থেকে বেরিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-কে দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আমিই তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। এরপর আমার সন্মুখে দুটি পাত্র পেশ করা হয়, এর একটি দুধের ও অপরটি শরাবের। আমাকে বলা হল, এর মধ্যে যেটা আপনার ইচ্ছা সেটা গ্রহণ করুন। আমি দুধ গ্রহণ করে তা পান করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেনঃ আপনাকে ফিতরাতেরই হিদায়াত করা হয়েছে। আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তবে আপনার উম্মাত গুমরাহ হয়ে যেত।

পরিচ্ছেদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে


৩২২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একরাতে (স্বপ্নে) আমি কা’বা শরীফের কাছে আমাকে দেখতে পেলাম। গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের যতলোক তোমরা দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। ঘাড় পযন্ত লম্বা কেশ ছিল তাঁর। এ ধরনের কেশের অধিকারী যত ব্যাক্তি তোমরা দেখেছ, তাদের মধ্যে তিনি হলেন সবচেয়ে সুন্দর। তিনি এ কেশ আচড়ে রেখেছেন আর তা থেকে পানি ঝরছিল। দু-জনের উপর বা বর্ণনাকারী বলেন, দূ-জনের কাঁধের উপর ভর করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছেন। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হলঃ ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তারপর দেখি আরেক ব্যাক্তি, ঘন কোঁকড়ানো চুল, ডান চক্ষুটি টেরা, যেন একটি আঙ্গুর (থোকা থেকে উপরে উঠে আছে) জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, এ হচ্ছে মাসীহুদ্‌ দাজ্জাল।
৩২৩.    মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল মূসায়্যাবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা টেরাচোখবিশিষ্ট নন। জেনে রাখ, দাজ্জালের ডান চোখ টেরা, যেন থোকা থেকে উঠে আসা একটি আঙুর। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কা’বা শরীফের কাছে পেলাম। তখন গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। কেশ তাঁর গ্রীবার উপর ঝুলছিল। তার কেশ গুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দুব্যাক্তির কাঁধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হল, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তাঁরই পেছনে দেখলাম আরেক ব্যাক্তি, ঘন কোকড়ানো চুল। তার ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখতে ছিল ইবনু কাতানের মত। সেও দু’ ব্যাক্তির কাঁধে হাত রেখে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছে। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, মাসীহুদ দাজ্জাল।
৩২৪.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কাবা গৃহের কাছে গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম, দু’জনের কাঁধে হাত রেখে তাওয়াফ করছেন। আর তাঁর চুল থেকে পানি ঝরছে বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো يَسْكُبُ শব্দ অথবা يَقْطُرُ শব্দ ব্যবহার করেছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ মারইয়াম তনয় ঈসা অথবা الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ মারইয়াম তনয় মাসীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দেখলাম, তার পশ্চাতেই আরে-ক ব্যাক্তি, ঘন কুঞ্চিত কেশ। গায়ের রং তার লাল। আমার দেখা মতে তার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাক্তি ইবন কাত্তান। ডান চোখ ট্যারা। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, মাসীহুদ্‌ দাজ্জাল।
৩২৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (মিরোজের সংবাদে) কুরায়শরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিল। তখন আমি হাজরে আসওয়াদের পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়ালাম। আল্লাহ তায়ালা আমার সন্মুখে বায়তুল মাকদাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন, আর আমি চোখে দেখেই তার সকল নিদর্শন উল্লেখ করে যেতে লাগলাম।
৩২৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন দেখি যে, আমি কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছি। গৌরবর্ণের মধ্যমাকৃতির এক ব্যাক্তিকে সেখানে দেখলাম। তাঁর কেশগুলো ছিল সোজা। তিনি দু-জনের কাঁধে ভর করে তাওয়াফ করছেন। আর তাঁর মাথা হতে টপটপ করে পানি ঝরছে বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো يَنْطِفُ অথবা يُهَرَاقُ শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ইনি ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)। তারপর আমি চোখ ফিরিয়ে তাকালাম, লোহিত বর্ণের মোটা এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। তার চুলগুল ছিল কুঞ্চিত। তার চোখ ছিল টেরা, যেন থোকা থোকার উপরে উঠে আসা একটি আঙুর দানা। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, এ হলো দাজ্জাল। তার নিকটতম সদৃশ হল ইবনু কাতান।
৩২৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি হিজর অর্থাৎ হাতামে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, যা আমি ভালভাবে মনে রাখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মাকদিসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নাবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে দেখলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) কে সালাতে (নামায/নামাজ) দণ্ডায়মান দেখলাম তিনি শানূয়া গোত্রের লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কেও সালাতে (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবনু মাসঊদ আবূ সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কেও সালাতে (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর সালাত (নামায/নামাজ) এর সময় হল, আমি তাঁদের ইমামতি করলাম। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে এক ব্যাক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’ ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭৫. সিদরাতুল মুনতাহা প্রসঙ্গে


৩২৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নূমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মি’রাজ রজনীতে সিদরাতূল মুনতাহা- পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হল। এটি ৬ষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। যমীন থেকে যা কিছু উত্থিত হয়, তা সে পর্যন্ত গিয়ে পৌছে এবং সেখান থেকে তা নিয়ে যাওয়া হয়। তদ্রূপ ঊর্ধ্বলোক থেকে যা কিছু অবতরণ হয়, তাও এ পর্যন্ত এসে পৌছে এবং সেখান থেকে তা নেওয়া হয়। এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) তিলাওয়াত করলেনঃ إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى “যখন প্রান্তবর্তী (৫৩ঃ ১৬) এবং বলেন, এখানে যদ্দ্বারা কথাটির অর্থ স্বর্ণের পতঙ্গ। তিনি বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিনটি বিষয় দান করা হলঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ), সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং শিরক মুক্ত উম্মাতের মারাত্মক গুনাহ ক্ষমার সুসংবাদ।
৩২৯.    আবূ রাবী আয যাহরানি (রহঃ) ... শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যির ইবনু হুবায়শকে فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান থাকল কিংবা তারও কম-- (৯ঃ ৫৩) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছিলেন, তাঁর ছয়শ ডানাবিশিষ্ট অবস্থায়।
৩৩০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى তিনি যা দেখেছেন তাঁর অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি” (১১ঃ ৫৩) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর ছয়শ, ডানাযুক্ত অবস্থায় দেখেছেন।
৩৩১.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আম্বারী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى‏ “তিনি যা দেখেছেন তা তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিলেন (১৮ঃ ৫৩) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর আকৃতিতে দেখেছিলেন- তার ছয়শ ডানা আছে।

পরিচ্ছেদঃ ৭৬. আল্লাহর বানীঃ 'তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার' এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে


৩৩২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন-- (১৩ঃ ৫৩)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছিলেন।
৩৩৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (আল্লাহকে) অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন।
৩৩৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى - وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى “তিনি যা দেখেছেন, তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করে নাই নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন” (৫৩ঃ ১১ -১৩) আয়াতদ্বয় তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] স্বীয় অন্তর্দৃষ্টিতে তাঁকে (আল্লাহকে) দুবার দেখেছিলেন।
৩৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, হাফস ইবনু গিয়াস ও আঁমাশ (রহঃ) ... থেকে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্নিত হয়েছে।
৩৩৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে আবূ আয়িশা! তিনটি কথা এমন, যে এর কোন একটি বলল, সে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেগুলো কি? তিনি বললেন, যে এ কথা বলে যে, মুহাম্মাদ তার প্রতিপালককে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। আমি তো হেলান অবস্থায় ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম, হে উমুল মু”মিনীন! থামুন। আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হবেন না। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কি ইরশাদ করেননিঃ “তিনি (রাসুল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন-, (২৩ঃ ৮১), অন্যত্র “নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন” (৫৩ঃ ১৩) 

আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমিই এ উষ্মতের প্রথম ব্যাক্তি, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কেবলমাত্র এ দু-বারই আমি তাঁকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও যমীনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান। 

আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনই সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” (৬ঃ ১০৩) এরুপ তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দুত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাময়” (৪২ঃ ৫১)। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, আর ঐ ব্যাক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার রুকন, যদি তা না করেন তবে আপনি তার বার্তা প্রচারই করলেন না। (৫ঃ ৬৭) 

তিনি (আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, যে ব্যাক্তি এ কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষন অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “বল, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না। ” (২৭ঃ ৬৫)
৩৩৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে এতটুকু অতিরিক্ত আছে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উপর অবতীর্ণ ওহীর কোন অংশ গোপন করতেন, তবে তিনি এ আয়াতটি অবশ্য গোপন করতেনঃ (অর্থ) “স্মরণ করুন, আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ দান করেছেন এবং আপনিও যার [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পোষ্যপূত্র যায়িদ] প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আপনি তাকে বলেছিলেন, তুমি তোমার ন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি আপনার অন্তরে যা গোপন করেছেন, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিয়েছেন। আপনি লোকভয় করছিলেন; অথচ আল্লাহকে ভয় করা আপনার জন্য অধিকতর সঙ্গত” (৩৩ঃ ৩৭)
৩৩৮.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ কি তাঁর প্রতিপালককে দেখেছিলেন? তিনি বললেন, আপনার কথা শুনে আমার শরীরের পশম খাড়া হয়ে গেছে... বর্ণনাকারী পূর্ব হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে দাঊদ বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও সুদীর্ঘ।
৩৩৯.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। মাসরুক (রহঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম, [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি’রাজ রজনীতে যদি আল্লাহর দর্শন না পেয়ে থাকেন তাহলে] আল্লাহর এ বলার অর্থ কি দাঁড়াবে। “এরপর তিনি [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] তাঁর (আল্লাহর) নিকটবর্তী হলেন এবং আরো নিকটবর্তী; ফলে তাদের মধ্যে ধনুকের ব্যবধান রইল বা তারও কম; তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন।” (৫৩ঃ ৮-১০)। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (সাধারণ) পুরুষের আকৃতিতে আসতেন। কিন্তু তিনি এবার (আয়াতে উল্লেখিত সময়) নিজস্ব আকৃতিতেই এসেছিলেন। তাঁর দেহ আকাশের সীমা ঢেকে ফেলেছিল।
৩৪০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? তিনি [রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] বললেনঃ “তিনি (আল্লাহ) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করব”।
৩৪১.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার, হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ) কে বললাম, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ পেতাম, তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতাম। আবূ যার (রাঃ) বললেন, কি জিজ্ঞেস করতেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, এ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেনঃ আমি নূর দেখেছি।
৩৪২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে পাঁচটি কথা বললেনঃ আল্লাহ কখনো নিদ্রা যান না। নিদ্রিত হওয়া তাঁর সাজেও না। তিনি তাঁর ইচ্ছানূসারে তুলাদণ্ড নামান এবং উত্তোলন করেন। দিনের পূর্বেই রাতের সকল আমল তার কাছে উত্থিত করা হয় এবং রাতের পূর্বেই দিনের সকল আমল তাঁর কাছে উত্থিত করা হয়। এবং তার পর্দা হল নূর (বা জ্যোতি)। 

আবূ বকরের অন্য এক বর্ণনায় النُّورُ এর স্থলে النَّارُ (আগুন) শব্দের উল্লেখ আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি সে আবরণ খুলে দেয়া হয়, তবে তাঁর নূরের বিভা সৃষ্টি জগতের দূশ্যমান সব কিছু ভস্ম করে দেবে। আবূ বকরের অন্য রেওয়ায়েতে حَدَّثَنَا শব্দের স্থলে عَنْ শব্দের উল্লেখ আছে।
৩৪৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে পূর্ববর্ণিত সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্মূখে চারটি কথা নিয়ে দাঁড়ালেন...। বর্ণনাকারী আবূ মুআবিয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি مِنْ خَلْقِ শব্দ উল্লেখ করেন নাই এবং حِجَابُهُ النار "তার পর্দা আগুন" না বলে النُّورُ বলেছেন।
৩৪৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সন্মুখে চারটি কথা নিয়ে আলোচনা করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা কখনো নিদ্রা যান না, আর নিদ্রা তাঁর জন্য শোভাও পায় না, তুলাদণ্ড উচু এবং নিচু করেন, তাঁর কাছে রাতের পূর্বে দিনের আমল উত্থিত হয় এবং দিনের পূর্বে রাতের আমল উত্থিত হয়।

No comments:

Powered by Blogger.