Monday, April 7 2025

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৮ম খন্ড, অধ্যায়ঃ অসদ্ব্যাবহার, আত্নীয়তার সম্পর্ক-১ম




পরিচ্ছেদঃ ১. মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবুং দু'জনের কে তার বেশী হকদার


৬২৬৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ইবনু জামীল ইবনু তারীফ সাকাফী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কছে এলো এবং সে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাধিক ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বললঃ এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। আর কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে “আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে” এর উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর বর্ণনায় (النَّاسَ) মানুষ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
৬২৭০.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা হামদানী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে? তিনি বললেন তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপর তোমার পিতা। এরপর তোমার নিকটবর্তী জন। এরপর তোমার নিকটবর্তী জন।
৬২৭১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো ......। এরপর তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। এতে তিনি অধিক বলেছেন, এরপর সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তোমার পিতা...। তোমাকে অবশ্যই অবগত করা হচ্ছে।
৬২৭২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) ... ইবনু শুবরমা (রহঃ) থেকে এই সনদে উহায়ব বর্ণিত হাদীসে (সর্বাপেক্ষা সদ্ব্যবহার যোগ্য কে?) উল্লেখ রয়েছে। আর মুহাম্মাদ ইবনু তালহার হাদীসে- মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা বেশী হকদার কে রয়েছে। ... এরপর তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
৬২৭৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। এরপর সে তাঁর কাছে জিহাদে অংশ গ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেনঃ তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তাদের উভয়ের সন্তষ্টি অর্জনের জিহাদ-সাধনা (চেষ্টা) কর।
৬২৭৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবূল আব্বাস (রহঃ) বলেন যে, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসল। ...... এরপর রাবী আগের মত উল্লেখ করেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূল আব্বাসের নাম সায়িব ইবনু ফাররুখ মাক্কী (রহঃ)।
৬২৭৫.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... অন্য সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আরেক সূত্রে কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) হাবীব (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ননা করেন।
৬২৭৬.    সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুুূল আস (রাঃ) খেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। এরপর সে বলল, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়আত গ্রহণ করব। এতে আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি। তিনি বললেনঃ তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে বিনিময় আকাঙ্খা করছ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দু'জনের সঙ্গে সদাচরণপূর্ণ জীবন যাপন কর।

পরিচ্ছেদঃ ২. নফল সালাত ইত্যাদির মাতাপিতার খিদমত অগ্রগণ্


৬২৭৭.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতা তিনি বলেন, জুরায়জ (বনী ইসরাঈলের এক আবিদ) তার ইবাদতখানায় ইবাদতে মশণ্ডল থাকতেন। (একবার) তাঁর মাতা তাঁর কাছে এলেন। হুমায়দ (রহঃ) বলেন, আমাদের কাছে আবূ রাফি এমন আকারে ব্যক্ত করেন, যেমনভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের ডাকের আকার আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর কাছে ব্যক্ত করেছেন। কিরূপ তাঁর হাত তাঁর ভ্রুর উপর রাখছিলেন। এরপর তাঁর দিকে মাথা উচু করে তাকে ডাকছিলেন। বললেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, আমার সাথে কথা বল। এই কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরায়জ সালাতে মশগুল ছিলেন। 

তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা আর (অপর দিকে) আমার সালাত (আমি কী করি?)। রাবী বলেন, অবশেষে তিনি তাঁর সালাতকে অগ্রাধিকার দিলেন। এবং তার মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার আসলেন এবং বললেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সঙ্গে কথা বল। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ! আমার মা, আমার সালাত। তখন তিনি তাঁর সালাতে মশগুল রইলেন। তখন তাঁর মা বললেন, হে আল্লাহ! এই জুরায়জ আমারই ছেলে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যূ দিয়ো না, যে পর্যন্ত না তাকে ব্যভিচারিণীর অপবাদ দেখাও। 

তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তাঁর মাতা তার বিরুদ্ধে অন্য কোন বিপদের জন্য বদ দুআ করতেন তাহলে অবশ্যই সেই বিপদে পতিত হত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক মেষ রাখাল জুরায়জের ইবাদত খানায় (মাঝে মাঝে) আশ্রয় নিত। তিনি বলেন, এরপর গ্রাম থেকে এক মহিলা বের হয়েছিল। উক্ত রাখাল তার সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হয়। এতে মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, এই (সন্তান) কোথা থেকে? সে উত্তর দিল, এই ইবাদতখানায় যে বাস করে, তার থেকে। 

তিনি বলেন, এরপর তারা শাবল-কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এল এবং চীৎকার করে ডাক দিল। তখন জুরায়জ সালাতে মশগুল ছিলেন। কাজেই তিনি তাদের সাথে কথা বললেন না। তিনি বলেন, এরপর তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করতে লাগল। তিনি এ অবস্থা দেখে নীচে নেমে এলেন। এরপর তারা বলল, এই মহিলাকে জিজ্ঞাসা কর (সে কী বলছে)। তিনি বলেন, তখন জুরায়জ মুচকী হেসে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তোমার পিতা কে”? তখন শিশুটি বলল, আমার পিতা সেই মেষ রাখাল। 

যখন তারা সে শিশুটির মুখে একথা শুনতে পেল তখন তারা বলল, আমরা তোমার ইবাদতখানার যেটুকু ভেঙ্গে ফেলেছি তা সোনা-রূপা দিয়ে পূনঃনির্মাণ করে দেব। তিনি বললেন, না; বরং তোমরা মাটি দ্বারাই পূর্বের ন্যায় তা নির্মাণ করে দাও। এরপর তিনি তার ইবাদতগাহে উঠে গেলেন।
৬২৭৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তিনজন ব্যতীত কেউ দোলনায় কথা বলেনি। তার মধ্যে একজন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম), আরেকজন জুরায়জ এর ঘটনার শিশু। জুরায়জ ছিলেন একজন ইবাদতগুজার ব্যক্তি। তিনি একটি ইবাদতখানা তৈরী করে সেখানে অবস্থান করতেন। তখন তার কাছে তার মা আসলেন। তিনি সে সময় সালাতে মশগুল ছিলেন। মা ডাকলেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বলতে লাগলেন, হে পরওয়ারদিগার! (একদিকে) আমার মা ও (অপর দিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতে মশগুল রইলেন। মা ফিরে গেলেন। 

পরের দিন তিনি আবার তার কাছে আসলেন। তখনও তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বললেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! একদিকে আমার মা (আমাকে ডাকছেন) আর (অন্য দিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতে মশগুল রইলেন। তখন মা বললেন, হে আল্লাহ! বদকার স্ত্রীলোকের চেহারা দেখার আগে তুমি তার মৃত্যু দিয়ো না। 

এরপর বনূ ইসরাঈলদের মধ্যে জুরায়জ ও তার ইবাদত সম্পর্কে আলোচনা হতে লাগল। (বনী ইসরাঈলের মধ্যে) সৌন্দর্য উপমেয় এক দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। সে বলল, যদি তোমরা চাও তাহলে আমি তোমাদের সামনে তাকে (জুরায়জকে) ফিতনায় ফেলতে পারি। তিনি বলেন, এরপর সে সাজসজ্জা করে জুরায়জের সামনে উপস্থিত। কিন্ত্বু জুরায়জ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। অবশেষে সে এক মেষ রাখালের কাছে এল। সে জুরায়জের ইবাদতখানায় আশ্রয় নিত। সে তাকে নিজের দিকে প্রলুব্ধ করল। সে (রাখাল) তার উপর উপগত হল। এতে সে গর্তবতী হয়ে গেল। 

যখন সে সন্তান প্রসব করল তখন বলে দিল যে, এই সন্তান জুরায়জের। লোকেরা (একথা শুনে) তার কাছে এসে জড়ো হল এবং তাঁকে নীচে নেমে আসতে বাধ্য করল এবং তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করে দিল আর তাকে প্রহার করতে লাগল। তখন তিনি (জুরায়জ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের ব্যাপার কী? তারা বলল, তুমি তো এই দূশ্চরিত্রা স্ত্রীলোকের সাথে ব্যাবিচার করেছ এবং তোমার পক্ষ থেকে সে সন্তান প্রসব করেছে। তখন তিনি বললেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটি নিয়ে এলো। এরপর তিনি বললেন, আমাকে একটু অবকাশ দাও, আমি সালাত আদায় করে নেই। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং সালাত শেষে কাছে এলেন। 

এরপর তিনি শিশুটির পেটে টোকা দিয়ে বললেন হে বৎস! তোমার পিতা কে? সে উত্তর করল। অমুক রাখাল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন লোকেরা জুরায়জের দিকে এগিয়ে আসল এবং তাঁকে চুম্বন করতে এবং তাঁর গায়ে হাত বুলাতে লাগল। এরপর বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানা স্বর্ণ দ্বারা নির্মাণ করে দেব। তিনি বললেন, না বরং পুনরায় মাটি দিয়ে তৈরি করে দাও, যেমন ছিল। লোকেরা তাই করল। 

একদা এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। তখন উত্তম পোষাকে সজ্জিত এক লোক একটি হৃষ্টপুষ্ট সাওয়ারীর উপর সাওয়ার হয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তার মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মত বানিয়ে দাও। তখন শিশুটি মাতৃস্তন ছেড়ে তার প্রতি লক্ষ্য করে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মত বানিও না। এরপর সে আবার স্তনের দিকে ফিরে দুধ পান করতে লাগল। 

রাবী বলেন, মনে হয় যেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এখনো দেখছি যে, তিনি তার শাহাদাত অঙ্গুলি নিজ মুখে দিয়ে তা চুষে সেই শিশুটির দুধ পানের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। এরপর বর্ণনা করলেন যে, কিছু লোক একজন যুবতীকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাকে তারা প্রহার করছিল এবং বলাবলি করছিল যে, তুই যিনা করেছিস আর তুই চুরি করেছিস। আর সে বলছিল, حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ আল্লাহরই উপর আমার ভরসা; আর তিনি উত্তম কর্ম বিধায়ক। তখন তার মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার পুত্রকে এর (দাসীর) মত বানিও না। 

তখন শিশুটি দুধপান ছেড়ে তার (দাসীর) প্রতি লক্ষ্য করে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর (এই দাসীর) মত বানিয়ে দাও। সে সময় মা ও পুত্রের মধ্যে আলাপ হল। তখন মা বলল, ঠাটা পড়ুক (দুর্ভাগা! এ কেমন কথা)। সুদর্শন এক ব্যক্তি যাচ্ছিল তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মত বানিও”। এরপর তুমি বললে হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মত বানিও না। এরপর লোকেরা এই দাসীকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তারা তাকে প্রহার করছিল এবং বলছিল, যিনা করেছিস এবং চুরি করেছিস। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে তার মত বানিও না। আর তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানাও। 

সে বলল, সেই আরোহী ব্যক্তি ছিল অত্যাচারী। তাই আমি বলেছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানিও না। আর যে দাসীকে ওরা বলছিল, তুই যিনা করেছিস। আসলে সে ব্যভিচারে লিপ্ত না এবং বলেছিল, চুরি করেছিস, অথচ সে চুরি করেনি। তাই আমি বললাম, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানিয়ে দাও”।

পরিচ্ছেদঃ ৩. ধ্বংস সে ব্যক্তির, যে বার্ধক্যে মাতা-পিতা তাদের একজনকে পেয়েও জান্নাত পেল না


৬২৭৯.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলীন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলীন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলীন হোক! বলা হল ইয়া রাসুলুল্লাহ! কার? যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ লাভ করল না।
৬২৮০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার নাক ধুলিমলীন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলীন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলীন হোক। জিজ্ঞাসা করা হল, কার ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, এরপরও সে জান্নাতে প্রবেশ করল না।
৬২৮১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার নাক ধূলিমলীন হোক-কথাটি তিনবার বলেছেন। ...... এরপর তিনি উক্ত হাদীসের অনুরূপপ উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪. পিতা-মাতার বন্ধু বান্ধব প্রমুখের সাথে সম্পর্কে রক্ষা


৬২৮২.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা মুয়াযযামার এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হল। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে সাওয়ার হতেন সে গাধা তাকে সাওয়ারীর জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর মাথার পাগড়ী তাকে দান করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) তাকে বললেন যে, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। (এত দেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল?) তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, এই ব্যক্তির পিতা উমর ইবনুল খাজব (রাঃ) এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার পিতার বন্ধুজনের সঙ্গে সদাচারনের সম্পর্ক রক্ষা করা।
৬২৮৩.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম সদাচারন (পুণ্য) হল পিতার বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা।
৬২৮৪.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হতেন তখন তাঁর সঙ্গে একটি গাধা থাকত। উটের সাওয়ারীতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষণিক স্বস্তি লাভের জন্য তাতে আরোহণ করতেন। আর তাঁর সাথে একটি পাগড়ী থাকত, যা তিনি মাথায় বেঁধে নিতেন। একদা তিনি উক্ত গাধায় আরোহণ করে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর পাশ দিয়ে একজন বেদুঈন অতিক্রম করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক নও? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, এতে আরোহণ কর। তিনি তাকে পাগড়ীটিও দান করলেন এবং বললেন, এটি দ্বারা তোমার মাথায় বেঁধে নাও। 

তখন তাঁর সঙ্গীদের কেউ কেউ তাকে বললেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি এই বেদুইনকে গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর সাওয়ার হয়ে আপনি স্বস্তি লাভ করতেন এবং পাগড়ীটিও দান করলেন, যার দ্বারা আপনার মাথা বাঁধতেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হল কোন ব্যক্তির পিতার ইন্তেকালের পর তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা। আর এই বেদুঈনের পিতা ছিলেন উমর (রাঃ) এর অন্তরঙ্গ বন্ধু।

পরিচ্ছেদঃ ৫. পুণ্য ও পাপের ব্যাখ্যা


৬২৮৫.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) ... নাওয়াস ইবনু সাম'আন আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তখন উত্তর দিলেন, পূণ্য হচ্ছে সচ্চরিত্র। আর পাপ হচ্ছে যা তোমার (অন্তরে) খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকে তা জানূক তা তুমি অপছন্দ কর।
৬২৮৬.    হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) ... নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদ্বীনা মুনাওয়ারাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক বছর অবস্থান করি। আর একটি মাত্র কারণ আমাকে হিজরত থেকে বিরত রাখে। তা হল দ্বীনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ। আমাদের কেউ যখন হিজরত করে আসতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতো না। তিনি বলেন, অতএব আমি তাঁকে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেনঃ সদাচারণই পূণ্য আর যা তোমার অন্তরে খটকা সৃষ্টি করে এবং তুমি যা লোক সন্মুখে প্রকাশ করতে অপছন্দ কর, তাই পাপ।

পরিচ্ছেদঃ ৬. আত্মীয়তার সম্পর্কে রক্ষা করা এবং তা বিচ্ছিন্ন করা হারাম


৬২৮৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ইবনু জামীল ইবনু তারীফ ইবনু আবদুল্লাহ সাকাফী ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যখন মাখলুক সৃষ্টি করে তা সমাপ্ত করলেন, তখন “রেহম” (আত্মীয়তা ও রক্ত সম্বন্ধ) দাঁড়িয়ে বলল, এ হচ্ছে আত্নীয়তার সম্পর্ক বিছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি (আল্লাহর রাসুল) বললেনঃ হ্যাঁ। তুমি কি এতে তুষ্ট নও যে, যে তোমাকে সংযুক্ত রাখবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব, আর যে তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে, আমিও তাকে আলাদা করে দেব? তখন সে বলল, হ্যাঁ। 

তিনি বললেন, তোমার জন্য তাই হবে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তোমরা চাও তাহলে তিলাওয়াত করতে পার, "তোমরা কি অস্বীকার করতে পারবে যে, তাদের উপর দায়িত্ব প্রাপ্ত করা হলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ফাসা’দ সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেবে, এরাই তারা যাদের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। এরপর তিনি তাদের বধির করে দিয়েছেন। ও তাদের চোখগুলো দৃষ্টিহীন করে দিয়েছেন। তারা কি কুরআন সম্পর্কে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তর, তালাবদ্ধ?"
৬২৮৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রেহম (আত্মীয়তার সম্বন্ধ) আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত রয়েছে। সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক রাখবেন। আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।
৬২৮৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... যুহায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, অর্থাৎ আত্নীয়তা সম্বন্ধ ছিন্নকারী।
৬২৯০.    আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা দুবাঈ (রহঃ) ... জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
৬২৯১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরীর সুত্রে এই সনদে তার অনুরূপ বর্ণিত আছে। আর তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
৬২৯২.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজায়বী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যাকে এ বিষয়টি আনন্দিত করে যে, তার রিযিক (জীবিকায়) সচ্ছলতা দেয়া হোক অথবা (এবং) তার অবদান আলোচিত হোক (দীর্ঘায়ু দেয়া হোক) সে যেন তার আত্নীয়তার সংযুক্ত রাখে।
৬২৯৩.    আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার জীবিকার প্রশস্ততা চায় এবং সে দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন তার আত্নীয়তার সম্বন্ধ সংযুক্ত রেখে চলে।
৬২৯৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার আত্নীয়-স্বজন আছেন। আমি তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্বন্ধ রক্ষা করি; কিন্তু তারা আমার সাথে সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি; কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সঙ্গে সহনশীলতার ব্যবহার করি আর তারা আমার সঙ্গে মূর্খতার আচরণ করে। তখন তিনি বললেনঃ তুমি যা বললে, যদি প্রকৃত অবস্থা তাই হয় তাহলে তুমি যেন তাদের উপর গরম ছাই নিক্ষেপ করছ। সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফিরিশতা) থাকবে, যতক্ষন তুমি এই অবস্থায় বহাল থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ৭. পারস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ ও পশ্চাতে শত্রুতা হারাম


৬২৯৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা করবে না, বিদ্বেষ করবে না এবং পরস্পর পশ্চাতে শত্রুতা করবে না। তোমরা সবই আল্লাহ্‌র বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে আর কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষে তার ভাই এর সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা পরিত্যাগ করা হালাল নয়।
৬২৯৬.    হাজিব ইবনুল ওয়ালীদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিকের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত।
৬২৯৭.    যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ উমর ও আমর নাকিদ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত। তবে ইবনু উয়ায়না وَلاَ تَقَاطَعُوا (এবং তোমরা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করো না) অধিক বলেছেন।
৬২৯৮.    আবূ কামিল মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে যুহরী সূত্রে ইয়াযীদের বর্ণনা, যুহরী থেকে সুফিয়ানের বর্ণনার অনুরূপ। তিনি চারটি বিষয় একত্রে উল্লেখ করেছেন। আর আবদুর রাযযাক (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, وَلاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَقَاطَعُوا وَلاَ تَدَابَرُوا (তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না, পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করবে না, পরস্পর পশ্চাতে শত্রুটা করবে না)।
৬২৯৯.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা একে অপরের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না, পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে না এবং তোমরা আল্লাহ্‌র বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে। 

আলী ইবনু নাসর জাহযামী (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি অধিক বলেছেন, كَمَا أَمَرَكُمُ اللَّهُ (যেভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদের আদেশ করেছেন)।

পরিচ্ছেদঃ ৮. শরী'আত সম্মত ওযর ব্যতিরেকে কোন মুসলমানের সঙ্গে তিন দিনের বেশী সম্পর্কে ছিন্ন রাখা হারাম


৬৩০০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ আয়্যুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের পক্ষে তার ভাই এর সঙ্গে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক চ্ছিন্ন রাখা হালাল নয়। পথে ঘাটে দু'জনের সাক্ষাত হলে একজন এই দিকে মুখ ফিরিয়ে, অন্যজন ঐ দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। আর তাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে প্রথমে সালাম করে।
৬৩০১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... অন্য সূত্রে হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আরেক সুত্রে হাজিব ইবনুল ওয়ালীদ (রহঃ) ... অন্য সূত্রে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সবাই যুহরী (রাঃ) থেকে মালিকের সনদে ও তাঁর হাদিসের অনুরূপ বর্ননা করেন। তবে তার বক্তব্য فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا এর পরিবর্তে মালিক ব্যতীত তাদের সকলেই বর্ণনা করেন, فَيَصُدُّ هَذَا وَيَصُدُّ هَذَا (দুই বাক্যই অভিন্ন অর্থে)।
৬৩০২.    মুহাম্মাদ ইবনু নাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ঈমানদারের জন্য তার ভাইকে তিন দিনের বেশী পরিত্যাগ করা হালাল নয়।
৬৩০৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন দিনের পরে সম্পর্ক পরিত্যাগ নেই (বৈধ নয়)।

পরিচ্ছেদঃ ৯. কু-ধারণা, দোষ অনুসন্ধান, (পার্থিব) লোভনীয় বিষয়ে প্রতিযোগিতা, ধোঁকাবাজী ইত্যাদি হারাম


৬৩০৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অনুমান করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, অনুমান সর্বাপেক্ষা মিথ্যা। আর তোমরা ছিদ্রানেষ্বণ করো না, গোপনদোষ অনুসন্ধান করো না, তোমরা পরস্পর পার্থিব বিষয়ে সীমাহীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, পরস্পর বিদ্ধেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না; পরস্পরে পশ্চাতে শক্রতা করো না বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা রূপে ভাই ভাই হয়ে থাক।
৬৩০৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সম্পর্ক ছিন্ন করো না। একে অন্যের পেছনে শক্রতা করো না, একে অন্যের ছিদ্রানেষ্বণ করো না, অন্যের বেচা-কেনার উপর তুমি বেচা-কেনার চেষ্টা করো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক।
৬৩০৬.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে হিংসা করবে না, একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে না, ছিদ্রান্বেষণ করবে না, গুপ্ত দোষ অনুসন্ধান করো না এবং পরস্পরে ধোঁকাবাজী করবে না। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা রূপে ভাই ভাই হয়ে থাক।
৬৩০৭.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আলী ইবনু নাসর জাহযামী (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত যে, তোমরা একে অপরের সঙ্গে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করো না, একে অপরের পেছনে শক্রতা করো না, পরস্পরে বিদ্ধেষ পোষণ করো না। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক, যেমন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের আদেশ করেছেন।
৬৩০৮.    আহমাদ ইবনু সাঈদ দারেমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে অন্যের পেছনে শক্রতায় লিপ্ত হয়ো না, পরস্পরে (পার্থিব বিষয়ে) লভের প্রতিযোগিতা করবে না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ১০. মুসলমানের উপর যুলুল করা, তাকে অপদস্থ করা, তুচ্ছ জ্ঞান করা হারাম এবং তার খুন, ইযযত-আবরু ও মালও (অমর্যাদাপূর্ণ হারাম)


৬৩০৯.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে হিংসা পোষণ করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজী করো না, পরস্পর বিদেষ পোষন করো না। একে অপরের (ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে) পশ্চাতে শক্রতা করো না এবং একের বেচাকেনার উপর অন্যে বেচা-কেনার চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা রূপে ভাই ভাই হয়ে থাক। 

এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং হেয় করবে না। তাকওয়া এইখানে, এই কথা বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সীনার প্রতি ইশারা করলেন তিনবার। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় করে। কোন মুসলমানের উপর (প্রত্যেক) মুসলমানের সবকিছু জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু হারাম।
৬৩১০.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ... এরপর উসামা ইবনু যায়িদ দাঊদের হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। তরে এই বর্ণনায় তিনি কিছুটা কমবেশী করেছেন। তারা উভয়ে যেটুকু অধিক উল্লেখ করেছেন, তা হচ্ছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীর ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি নযর করেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। আর তিনি তাঁর আংগুলের দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন।
৬৩১১.    আমর নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি নযর করেন না; বরং তিনি নযর করেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি।

পরিচ্ছেদঃ ১১. শত্রুতা ও সম্পর্ক ত্যাগ করার নিষেধাজ্ঞা


৬৩১২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শক্রতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে, এই দুজনকে আপোষ রফা করার জন্য অবকাশ দাও, এই দুজনকে আপোষ রফা করার জন্য অবকাশ দাও, এই দু-জনকে আপোষ রফার জন্য অবকাশ দাও। 

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... অন্য সূত্রে কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আহমাদ ইবনু আবাদাহ দাব্বী (রহঃ) ... সুহায়ল (রাঃ) এর পিতার সুত্রে মালিকের সনদে তার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে দারাওয়ার্দী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ইবনু আবাদাহ এর বর্ননায় إِلاَّ الْمُتَهَاجِرَيْنِ আছে। আর কুতায়বা, (রহঃ) বলেছেন, إِلاَّ الْمُهْتَجِرَيْنِ (তবে সম্পর্ক পরিত্যাগকারী দুজনকে ক্ষমা করা হবে না)।
৬৩১৩.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... মারফু রূপে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার আমলের ফিরিস্তি পেশ করা হয়। তখন আল্লাহ জাল্লা শানুহু সেদিন প্রত্যেক এমন বান্দাকে ক্ষমা করেন, যারা তার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করে না। তবে এমন ব্যক্তিকে নয়, যার (দীনি) ভাই ও তার মধ্যে শক্রতা আছে। তখন বলা হবে, এই দু'জনকে অবকাশ দাও যতক্ষন না তারা আপোষের দিকে ফিরে আসে, এই দু'জনকে অবকাশ দাও যতক্ষন না তারা আপোষের দিকে ফিরে আসে।
৬৩১৪.    আবূ তাহির ও আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মানুষের আমলনামা সপ্তাহে দু'বার সোমবার ও বৃহস্পতিবার পেশ করা হয়। এরপর প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই এর সাথে তার শক্রতা আছে। তখন বলা হবে, এই দুজনকে রেখে দাও অথবা অবকাশ দাও যতক্ষন না তারা আপোষের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

পরিচ্ছেদঃ ১২. আল্লাহর জন্য ভালবাসার ফযীলত


৬৩১৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পরকে ভালবেসেছে তারা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।
৬৩১৬.    আবদুল আ'লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার ভাইকে দেখার জন্য অন্য এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তাআলা তার জন্য রাস্তায় একজন ফিরিশতা মোতায়েন করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফিরিশতার কাছে পৌছল, তখন ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছ? সে বলল, আমি এই গ্রামে আমার এক ভাইকে দেখার জন্য যেতে চাই। ফিরিশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোন অনুগ্রহ আছে, যা তুমি আরো বৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালবাসি। ফিরিশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে এ পয়গাম নিয়ে এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তাঁরই জন্য ভালবেসেছ।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. রোগীর দেখাশুনা ও সেবা-শুশ্রূষার ফযীলত


৬৩১৭.    সাঈদ ইবনু মানসুর ও আবূ রাবী (রহঃ) ... সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ রাবী (রহঃ) বলেছেন, তিনি হাদীসটি মারফূ রূপে (অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে) বর্ননা করেছেন। আর সা'দ (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগীর সেবা শুশ্রুষাকারী বেহেশতের বাগানে অবস্থান করে, যতক্ষন পর্যন্ত সে না ফিরে আসে।
৬৩১৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন রোগীকে দেখতে যায় সে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত জান্নাতের ফলমূলের (বাগানে) অবস্থান করে।
৬৩১৯.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলমান তার মুসলমান ভাইকে রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেখতে যায় তখন সে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত জান্নাতের ফলমূলে (বাগানে) অবস্থান করে।
৬৩২০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন রোগীকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের 'খুরফায়' (خُرْفَة) অবস্থান করতে থাকে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ خُرْفَةُ الْجَنَّةِ (জান্নাতের খুরফায় অবস্থান করা) কী? তিনি বললেন, তার ফলমূল (বাগান)।
৬৩২১.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আসিম আহওয়াল (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণনা করেছেন।
৬৩২২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার খোজ-খবর করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে। 

হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়োছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কি করে তোমাকে আহার করাতে পারি! তুমি তো সারা জাহানের প্রতিপালক। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিল? তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে। 

হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমাকে পান করাব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেতে।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. মু'মিন ব্যক্তি কোন রোগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিতে পতিত হলে এমন কি তার পায়ে কাঁটা বিধলে তার সাওয়াব


৬৩২৩.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাইতে অধিকতর রোগ যন্ত্রনার তীব্রতা অন্য আমি কোন ব্যক্তির উপর দেখিনি। উসমানের বর্ননায় ‘الْوَجَعِ এর স্থলে وَجَعًا উল্লেখ আছে।
৬৩২৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু'আয, ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশশার, বিশর ইবনু খালিদ, আবূ বকর ইবনু নাফি ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আমাশ থেকে জারীরের সনদে তার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৩২৫.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তিনি ছিলেন জ্বরাক্রান্ত। আমি তাঁকে আমার হাতে স্পর্শ করে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তো ভীষণভাবে জ্বরাক্রান্ত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, আমি এমন জ্বরাক্রান্ত হয়েছি, যেমন তোমদের দু'জনের হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমি বললাম, এ কারণেই আপনার জন্য দ্বিগুন পুরস্কার। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জ্বর কিংবা অন্য কোন কারণে বিপদ আপতিত হলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা এমনভাবে তার গোনাহসমূহ মাফ করে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝরায়। তবে যুহায়র বর্ণিত হাদীসে "আমি আমার হাতে তাকে স্পর্শ করি" অংশটুকু নেই।
৬৩২৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ’মাশ থেকে জারীর (রাঃ) এর সনদে তাঁর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আর আবূ মু'আবিয়া (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত আছে, তিনি বলেন, “হ্যাঁ, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, পৃথিবীতে এমন কোন মুসলমান নেই ......' (শেষ পর্যন্ত)।
৬৩২৭.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কতিপয় কুরায়শী যুবক আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গেল। তখন তিনি মিনায় অবস্থান করছিলেন। সে সময় তারা হাসছিল। আয়িশা (রাঃ) বললেন, কিসে তোমাদের হাসাচ্ছে? তারা বলল, অমুক ব্যক্তি তার রশির উপর পড়ে গেছে ফলে তার ঘাড় কিংবা চোখ নিষ্পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি বললেন, তোমরা হেসো না। কেননা আমি শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলমানের গায়ে কাটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চাইতে অধিক (কোন আঘাত লাগে), তার পরিবর্তে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
৬৩২৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব ও ইসহাক-হানযালী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ঈমানদার ব্যক্তির গায়ে একটি কাটার আঘাত কিংবা তার চাইতে অধিক কোন আঘাত লাগলে আল্লাহ তা’আলা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন কিংবা তার একটি গোনাহ মাফ করে দেন।
৬৩২৯.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ঈমানদার ব্যক্তির শরীরে একটি কাঁটা বিদ্ধ হলে কিংবা তার চাইতে বড় কোন মুসীবত আপতিত হলে তার বদলে আল্লাহ তায়ালা তার একটি গোনাহ মাফ করে দেন।
৬৩৩০.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশামের সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৩৩১.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তার বিনিময়ে তার গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়, এমনকি ক্ষুদ্রতর কোন কাঁটা বিদ্ধ হলেও।
৬৩৩২.    আবূ তাহির (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার ব্যক্তির উপর কোন বিপদ আপতিত হলে, এমন কি একটি কাঁটা বিদ্ধ হলে, তার বিনিময়ে তার গোনা কর্তন করা হয় কিংবা (রাবী বলেছেন) তার গোনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়। ইয়াযীদ সঠিক বলতে পারেন না যে, উরওয়া (রহঃ) কোন শব্দটি উল্লেখ করেছেন (قص না كفر)।
৬৩৩৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ঈমানদার ব্যক্তির উপর কোন বিপদ আপতিত হলে, এমনকি কোন কাঁটা বিঁধলেও তার বিনিময়ে তাকে একটি সাওয়াব দেওয়া হয়। কিংবা তার একটি গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
৬৩৩৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, কোন ঈমানদার ব্যক্তির এমন কোন ব্যথা-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, দুঃখ ভোগ করে, এমনকি দুর্ভাবনা পর্যন্ত, যার বিনিময়ে তার কোন গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
৬৩৩৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ (যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে, তাকে তার শাস্তি দেয়া হবে) অবতীর্ণ হল তখন কতক মুসলমাল ভয়ানক দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর এবং সঠিক পন্থায় চলমান থাক। একজন মুসলমান তার প্রত্যেকটি বিপদের বিনিময়ে এমনকি সে আছাড় খেলে কিংবা তার শরীরে কোন কাঁটা বিদ্ধ হলেও তাতে তার (গোনাহের) কাফফারা হয়ে যায়। 

ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, সনদের মধ্যবর্তী রাবী ইবন আবূ মুহায়সিন ছিলেন মক্কার অধিবাসী উমর ইবনু আবদুর রহমান ইবনু মুহায়সিন (রহঃ)।
৬৩৩৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন উম্মু সায়িব কিংবা উম্মূল মূসায়্যিব (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার কি হয়েছে হে উম্মু সায়িব অথবা উযুল মুসায়্যিব! কাঁপছ কেন? তিনি বললেন, ভীষণ জ্বর, একে আল্লাহ বরকত না দিন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি জ্বরকে গালি দিয়ো না। জ্বর আদম সন্তানের গোনাহসমূহ মোচন করে দেয়, যেভাবে হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়।
৬৩৩৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আতা ইবনু রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এক জান্নাতী মহিলার কথা বলবো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এই কৃষ্ণকায় মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেছিল, আমি মৃগীরোগে আক্রান্ত হই এবং এই অবস্থায় আমি বিবস্ত্র হয়ে পড়ি। তাই আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করুন। তিনি বললেন, যদি তুমি চাও, ধৈর্য ধারণ কর। তাহলে তোমার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর যদি তুমি চাও তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি যেন তিনি তোমাকে নিরাময় করে দেন। তখন সে বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তবে আমি যে সে অবস্থায় ছতর বিবস্র হয়ে পড়ি! কাজেই আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন আমি বিবস্র না হয়ে পড়ি। তখন তিনি তার জন্য দুআ করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. জুলুম করা হারাম


৬৩৩৮.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু বাহরাম দারেমী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, যা তিনি আল্লাহ তা’আলা থেকে বর্ণনা করেন (অর্থাৎ হাদীছে কুদসী), ওহে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। কাজেই তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে পথহারা, আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। 

হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার্য চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন উলঙ্গ আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন গোনাহ করে থাক। আর আমিই সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কছে মাগফিরাত কামনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। 

হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করার মত কিছু খুজে পাবে না যা দিয়ে তোমরা আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করার মত কিছু খুজে পাবে না, যাতে আমি উপকৃত হতে পারি। হে আমার বান্দারা! তোমাদের প্রথম ব্যক্তি হতে তোমাদের শেষ ব্যক্তি, তোমাদের সকল মানুষ ও জ্বীন তোমাদের মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশী ভয় পায়, তোমরা সত্যই যদি তার মত হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। 

হে আমার বান্দারা! তোমাদের প্রথম, তোমাদের শেষ, তোমাদের সকল মানুষ, সকল জ্বিন তোমাদের মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তার মত হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জ্বীন যদি কোন বিস্তীর্ণ মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে চাও আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী ঘাটতি হবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সুচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু ঘাটতি হয়। 

হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় দান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ লাভ করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজকেই দোষারোপ করে। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আবূ ইদরীস খাওলানী (রহঃ) যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তিনি দুহাটুর উপর ভর দিয়ে বসতেন। 

আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) এই সনদে বর্ণনা করেন। তবে মারওয়ান তাদের মধ্যে অধিক পরিপূর্ন হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, বিশর (রহঃ) এর পুত্রদ্বয় হাসান ও হুসায়ন এবং মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া বলেছেন, আমাদের কাছে আবূ মুসহির এই হাদীস বর্ণনা করেছেন ...... এই হাদিসটি পুরোপুরি উল্লেখ করেছেন।
৬৩৩৯.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার বরকতময় মহিমান্বিত পরওয়ারদিগার (থেকে হাদীসে কুদসী রূপে) বর্ণনা করেন, আমি আমার নিজের উপর ও বান্দাদের উপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যুলুম করো না। এরপর রাবী হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর আবূ ইদরীস (রহঃ) বর্ণিত যে হাদীস আমরা বিবৃত করেছি তা এর চাইতে পূর্ণাঙ্গ।
৬৩৪০.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যুলুমকে ভয় কর। কেননা কিয়ামত দিবসে যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা লোভ-লালসা থেকে সাবধান থেকো।। কেননা এই লোভ-লালসাই তোমাদের পুর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। তাই তাদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলুব্ধ করেছে।
৬৩৪১.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই যুলুম কিয়ামত দিবসে অন্ধকারে পরিণত হবে।
৬৩৪২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালিমের পিতা থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করে না এবং তাকে দুশমনের হাতে সোপর্দও করে না। যে ব্যক্তি তার ভাই এর প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহন করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে কিয়ামত দিবসে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষক্রটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে তার দোষক্রটি গোপন রাখবেন।
৬৩৪৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি বলতে পার, দরিদ্র (দেউলিয়া) কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও আসবাপত্র (ধন-সম্পদ) নেই সেই তো দরিদ্র। তখন তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এই অবস্থায় আসবে যে, একে গালি দিয়েছে, একে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ ভোগ করেছে, একে হত্যা করেছে ও একে মেরেছে। এরপর একে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে, একে নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর তার কাছে (পাওনাদারের) প্রাপ্য তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না গেলে ঋণের বিনিময়ে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
৬৩৪৪.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা চুকিয়ে দিতে হবে। এমনকি শিং বিশিষ্ট বকরীর নিকট থেকে শিং বিহীন বকরীর জন্য প্রতিশোধ গ্রহন করা হবে।
৬৩৪৫.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ যালিমকে অবকাশ দেন। এরপর তিনি যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তাকে ছাড়েন না। এরপর তিনি তিলাওয়াত করেন, "এভাবেই তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও- যখন কোন যালিম জনপদবাসীকে তিনি পাকড়াও করেন। নিশ্চয়ই তার পাকড়াও অত্যন্ত মর্মান্তিক, কঠোর।"

পরিচ্ছেদঃ ১৬. (দীনি) ভাই জালিম হোক কিংবা মাজলুম হোক তাকে সাহায্য করা


৬৩৪৬.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরদের দু'টি গোলাম মারামারি করছিল। তখন মুহাজির গোলাম এ বলে ডাক দিল, হে মুহাজিরগণ! এবং আনসারী গোলামও ডাকল হে আনসারগণ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং বললেনঃ এ কী ব্যাপার, জাহিলি যুগের লোকদের মত হাঁক-ডাক করছ? তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! না, দুটি গোলাম ঝগড়া করেছে। তাদের একজন অপরজনের নিতম্বে আঘাত করেছে। তখন তিনি বললেনঃ (ঠিক আছে) অসুবিধা নেই। 

প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত যেন সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে, সে যালিম হোক কিংবা মাযলুম। যদি সে যালিম হয় তাহলে তাকে (যুলুম থেকে) বিরত রাখবে। এই হচ্ছে তার জন্য সাহায্য। আর যদি সে মাযলুম হয় তাহলে তাকে সাহায্য করবে।
৬৩৪৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, আহমাদ ইবনু আবাদা দাব্বিয়্যু ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সুফইয়ান ইবনুু উয়ায়না (রহঃ) বলেন যে, আমর (রহঃ) জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, আমরা এক যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তখন একজন মুহাজির একজন আনসারের নিতম্বে আঘাত করল। সে সময় আনসারী চীৎকার করে বলল, হে আনসারীরা! আর মুহাজির ব্যক্তি ডাক দিল, হে মুহাজিরগণ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কী ব্যাপার! জাহিলিয়্যা যুগের মত হাঁক-ডাক কেন? তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! একজন মুহাজির একজন আনসারকে পাছায় আঘাত করেছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এরুপ কথাবার্তা ছেড়ে দাও। কেননা, এ-তো (দুর্গন্ধময়ী) ন্যাক্কারজনক। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ঘটনাটি শুনে বলল, তারা কি এরূপ কাণ্ড ঘটিয়েছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদ্বীনায় ফিরে গেলে সেখানকার সবলরা অবশ্যই দুর্বলকে বহিস্কৃত করে দেবে। উমর (রাঃ) বললেন, (ইয়া রাসুলাল্লাহ!) আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন তিনি বললেন, একে ছেড়ে দাও, যাতে লোকেরা বলাবলি না করে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের কতল করেন।
৬৩৪৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইসহাক ইবনু মানসুর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মুহাজির একজন আনসারীকে থাপ্পড় মেরেছিল। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল এবং তার কাছে প্রতিশোধ চাইল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা ছেড়ে দাও। কেননা, এ-তো নোংরা কাজ। আমর সুত্রের হাদীসে ইবনু মানসুর (রহঃ) বলেছেন যে, তিনি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. মু'মিনদের পারস্পরিক দয়ার্দ্রতা সহমর্মিতা ও সহযোগিতা


৬৩৪৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ আমির আশআরী, আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন (ব্যক্তিগন) ইমারত সদৃশ, যার এক অংশ আরেক অংশকে মযবুত করে।
৬৩৫০.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনদের দৃষ্টান্ত তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, দয়দ্রতা ও সহমর্মিতার দিক দিয়ে একটি মানব দেহের মত। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন তার সমগ্র দেহ তাপ ও অনিদ্রা ডেকে আনে ।
৬৩৫১.    ইসহাক হানযালী (রহঃ) ... নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
৬৩৫২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন সম্প্রদায় এক ব্যক্তির ন্যায়। যখন তার মাথায় অসুস্থতা দেখা দেয় তখন সমগ্র দেহই তাপ ও অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
৬৩৫৩.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সমস্ত মুসলমান এক ব্যক্তির মত। যদি তার চক্ষু পীড়িত হয় তবে তার সমগ্র দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে সমগ্র শরীরই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
৬৩৫৪.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. গালি-গালাজ নিষিদ্ধ হওয়া


৬৩৫৫.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু'ব্যক্তি যখন গালি-গালাজে লিপ্ত হয় তখন তাদের উভয়ের গোনাহ তার উপরই বর্তাবে, যে প্রথমে শুরু করেছে; যতক্ষন না মাজলুম সীমালংঘন করে।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. ক্ষমা ও বিনয় পছন্দনীয়


৬৩৫৬.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাদাকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উঁচুতে তুলে দেন।

পরিচ্ছেদঃ ২০. গীবত করা হারাম


৬৩৫৭.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, (গীবত হল) তোমার ভাই এর সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তা হলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে।

পরিচ্ছেদঃ ২১. দুনিয়াতে আল্লাহ্‌ যার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন আখিরাতেও তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার সু-সংবাদ


৬৩৫৮.    উমাইয়া ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ দুনিয়াতে যে বান্দার দোষ-ক্রটি গোপন রেখেছেন, কিয়ামাত দিবসেও তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখবেন।
৬৩৫৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা যদি অপর কারোর দোষ-ক্রটি দুনিয়াতে গোপন রাখে আল্লাহ তাআলা তার দোষ-ক্রটি কিয়ামত দিবসে গোপন রাখবেন।

পরিচ্ছেদঃ ২২. কারো দুরাচরণের ভয়ে সহনশীলতা প্রদর্শন


৬৩৬০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে আসার অনুমতি দাও। সে তো সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তি (অথবা বললেন) তার গোত্রের সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক। সে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশ করল তখন তিনি তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বললেন। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তো তার সমন্ধে যা বলার বললেন। এরপর তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললেন? তিনি বললেন, হে আয়িশা! কিয়ামতের দিনে আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তি নিকৃষ্ট স্তরের বলে গণ্য হবে, যাকে লোকজন তার দুর্ব্যবহারের জন্য পরিত্যাগ করে।
৬৩৬১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু মুনকাদির থেকে এই সনদে এ মর্মে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি بِئْسَ أَخُو الْقَوْمِ وَابْنُ الْعَشِيرَةِ (গোত্রের মন্দ সদস্য এবং সমাজের নিকৃষ্ট লোক) বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. নম্র ব্যবহারের ফযীলত


৬৩৬২.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।
৬৩৬৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) অন্য সনদে যুহায়র ইবন হারব ও ইসহাক ইবন ইবরাহীম ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।
৬৩৬৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নম্রতা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। কিংবা বলেছেন, যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত হবে সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে।
৬৩৬৫.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজায়বী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়িশা, আল্লাহ তা’আলা নম্র ব্যবহারকারী। তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্রতার জন্য এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার জন্য দান করেন না; আর অন্য কোন কিছুর জন্যও তা দান করেন না।
৬৩৬৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বরী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মির্ণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নম্রতা যে কোন বিষয়কে সৌন্দর্য মণ্ডিত করে। আর যেকোন বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে।
৬৩৬৭.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু'বা মিকদাম ইবনু শুরায়হ ইবনু হানী (রহঃ) কে এই সনদে বর্ণনা করতে শুনেছেন। তিনি তাঁর হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন, আয়িশা (রাঃ) একটি উটের পিঠে সওয়ার হয়েছিলেন। উটটি ছিল কঠোর স্বভাবের। তাই তিনি তাকে শক্তভাবে ফিরাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার উচিত নম্র ব্যবহার করা। ...... পরবর্তী অংশ রাবী উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. চতুষ্পদ প্রাণী ইত্যাদিকে লা'নত করা নিষিদ্ধ


৬৩৬৮.    আবূ বকর আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে ছিলেন। সে সময় এক আনসারী মহিলা একটি উষ্ট্রীর পিঠে সাওয়ার ছিলেন। তিনি (তার (আচরণে) বিরক্ত হয়ে তার উপর লানত করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেনঃ এর উপরে যা আছে তা নিয়ে নাও এবং একে ছেড়ে দাও। কেননা, সে তো অভিশপ্ত হয়ে পড়েছে। তখন ইমরান (রাঃ) বললেন, আমি যেন সেই উষ্ট্রীটি এখনও দেখছি, যে মানুষের মাঝে হাঁটছে; অথচ কেউ তাকে বিরক্ত করছে না।
৬৩৬৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ রাবী ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইসমাঈল (রহঃ) এর সনদে আইউব (রহঃ) থেকে তাঁর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে হাম্মাদ বর্ণিত হাদীসে ইমরান বলেছেন, فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهَا نَاقَةً وَرْقَاءَ (আমি যেন সেই মেটো রং এর উষ্ট্রীটি এখানো দেখতে পাচ্ছি) আর সাকাফী (রহঃ) বর্নিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ خُذُوا مَا عَلَيْهَا وَأَعْرُوهَا فَإِنَّهَا مَلْعُونَةٌ এর উপর যা কিছু আছে তা নামিয়ে ফেল এবং তাকে খালি করে দাও। কেননা সে তো অভিশপ্ত।
৬৩৭০.    আবূ কামিল জাহদারী ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... আবূ বারযাহ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার একটি বালিকা একটি উষ্ঠ্রীর উপর আরোহিত ছিল। সেটির উপরে তার গোত্রের কিছু মালামাল ছিল। হঠাৎ সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেল এবং তাদের জন্য রশি সংকীর্ণ হলে বলল, حَلْ اللَّهُمَّ الْعَنْهَا হাল (উট চালনার শব্দ) হে আল্লাহ! এর উপর লানত বর্ষণ করুন। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে উটনীর উপর লানত করা হয়েছে, সেটি যেন আমাদের সঙ্গে না থাকে।
৬৩৭১.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও সুলায়মান তায়মী (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ননা করেছেন। আর তিনি মু'তামির (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে এইটুকু বেশী বলেছেন, “আল্লাহর কসম! আমাদের সঙ্গে যেন সেই উষ্ট্রী না থাকে, যার উপর আল্লাহর তরফ থেকে অভিশাপ বর্ষণ করা হয়েছে, (কিংবা তিনি যেভাবে বলেছেন)।
৬৩৭২.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন সিদ্দীকের পক্ষে লানতকারী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। 

আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আলা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৩৭৩.    সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান উম্মু দারদা (রাঃ) এর কাছে তার নিজের পক্ষ থেকে কিছু গৃহ নির্মাণ সামগ্রী পাঠালেন। রাতে আবদুল মালিক নিদ্রা থেকে জেগে তার খাদিমকে ডাকলেন। সে তার কাছে আসতে দেরী করে ফেলল। এতে তিনি তাকে লা'নত করলেন। সকাল হলে উম্মু দারদা (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি শুনলাম যখন আপনি রাতে আপনার খাদিমকে ডেকেছিলেন তখন তাকে অভিশাপ দিয়েছেন? এরপর তিনি বললেন, আমি আবূ দারদা (রাঃ) কে বলতে জনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লানতকারীরা কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী কিংবা সাক্ষ্যদাতা হতে পারবে না।
৬৩৭৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ গাসসান মিসমাঈ ও আসিম ইবনুু নাযর তায়মী ইসহাক ইবন ইবরাহীম ... যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে এই সনদে হাফস ইবনু মায়সারা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৩৭৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, লা'নতকারীরা কিয়ামত দিবসে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবে না।
৬৩৭৬.    মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি মুশরিকদের বদ দুআ করুন। তিনি বললেনঃ আমি তো লানতকারী রূপে প্রেরিত হইনি; বরং প্রেরিত হয়েছি রহমত স্বরূপ।

No comments:

Powered by Blogger.