Sunday, April 13 2025
Breaking News
recent

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৮ম খন্ড, অধ্যায়ঃ সাহাবী (রাঃ) গনের ফজিলত




পরিচ্ছেদঃ ২৭. আবু জুলায়বীব (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৩৪.    ইসহাক ইবনু আমর ইবনু সালীত (রহঃ) ... আবূ বারযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জিহাদে ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে গনীমতের সম্পদ দিলেন। তিনি তার সাহাবাদের বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ? লোকেরা বললো, হ্যাঁ, অমুক, অমুক ও অমুককে। তিনি বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ? লোকেরা বললো, হ্যাঁ, অমুক, অমুক এবং অমুককে। তিনি আবার বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ? লোকেরা বললো, জি-না। তিনি বললেন, কিন্তু আমি জুলায়বীবকে হারিয়েছি। তোমরা তাঁকে খোঁজ কর। তখন নিহতদের মধ্যে তাকে খোঁজ করা হল। এরপর তারা সাতটা লাশের পাশে তাকে পেলো। তিনি এই সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। এরপর দুশমনরা তাকে হত্যা করে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন এবং ওখানে দাঁড়িয়ে বললেন, সে সাতজন হত্যা করেছে; এরপর দুশমনরা তাঁকে হত্যা করে। সে আমার আর আমিও তার। সে আমার আর আমি তাঁর। অতঃপর তিনি তাঁকে দুঁবাহুর উপর তুলে ধরলেন। একমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাহুই তাঁকে বহন করছিল। তাঁর কবর খোঁড়া হল এবং তাকে তার কবরে রাখলেন। বর্ণনাকারী তাঁর গোসলের উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ২৮. আবু যার (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৩৫.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমাদের গিফার গোত্র থেকে বের হলাম। তারা হারাম মাসগুলোকে হালাল গণ্য করত। আমি আমার ভাই উনায়স এবং আমাদের মা সহ বের হলাম এবং আমরা আমাদের এক মামার কাছে উঠলাম। আমাদের মামা খুব সম্মান দেখালেন এবং আমাদের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করলেন। এতে তাঁর গোত্রের লোকেরা আমাদের প্রতি হিংসা করতে লাগল। তারা বলল, তুমি যখন তোমার পরিবার থেকে বের হও তখন উনায়স (রাঃ) তোমার অনুপস্থিতিতে তাদের কাছে যাতায়াত করে। 

এরপর আমাদের মামা আসলেন এবং তাকে যা বলা হয়েছে তিনি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিলেন। তখন আমি বললাম আপনি আমাদের সাথে অতীতে যে সদ্ব্যবহার করেছেন তাকে ম্লান করে দিলেন। এরপর আপনার সঙ্গে আমাদের একত্রে থাকার অবকাশ নেই। তারপর আমরা আমাদের উটগুলোকে নিকটবর্তী করলাম এবং তাদের উপর আরোহণ করলাম। তখন আমাদের মামা তাঁর কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে কাঁদতে শুরু করলেন। আমরা রওনা হয়ে মক্কার নিকটে অবতরণ করলাম। উনায়স আমাদের পশুগুলো এবং সে পরিমাণ পশুর মধ্যে (কবিতা রচনার) বাজি ধরল। তারপর তারা উভয়ে এক গণকের কাছে গেল। 

গণক উনায়সকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করল। এরপর উনায়স আমাদের উটগুলো এবং তার সমপরিমাণ উট নিয়ে আমাদের নিকট ফিরে এল। আবূ যার (রাঃ) বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাতের তিন বছর পূর্বে সালাত আদায় করেছি। আমি (রাবী) বললাম, কার জন্যে? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্যে। আমি (রাবী) “বললাম, কোন দিকে মুখ ফিরাতেন? তিনি বললেন, আমার মহান প্রতিপালক যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সে দিকে মুখ ফিরাতাম। আমি ইশার সালাত আদায় করতে করতে রাতের শেষ অংশে নিদ্রার চাঁদরে ঢলে পড়তাম, যতক্ষননা সূর্য আমার উপর পড়ত। 

তারপর উনায়স (রাঃ) বললেন, মক্কায় আমার একটু প্রয়োজন আছে। কাজেই আপনি আমার সংসার তত্ত্বাবধান করবেন। তারপর উনায়স (রাঃ) চলে গেল এবং মক্কায় পৌছলো এবং সে বিলম্বে আমার কাছে ফিরে এল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী করলে? সে বলল, আমি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ লাভ করেছি, যে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি দাবী করেন যে, আল্লাহ তাকে (রাসুল হিসেবে) প্রেরণ করেছেন। [আমি আবূ যার (রাঃ)] বললাম, লোকেরা তাঁর সম্পর্কে কী বলে? সে বলল, তারা তাঁকে কবি, গণক ও যাদুকর বলে। 

উনায়স (রাঃ) নিজেও একজন কবি ছিল। উনায়স (রাঃ) বলল, আমি অনেক গণকের কথা শুনেছি; কিন্তু ঐ ব্যক্তির কথা গণকের মত নয়। আমি তাঁর বাক্যকে কবিদের রচনার সাথে তুলনা করে দেখেছি; কিন্তু কোন কবির ভাষার সাথে তার কোন মিল নেই। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তিনি সত্যবাদী এবং ওরা মিথ্যাবাদী। তিনি বললেন, আমি বললাম, তুমি আমার সংসার দেখাশোনা কর এবং আমি গিয়ে একটু দেখে নিই। 

তিনি বললেন, আমি মক্কায় এলাম এবং তাদের এক দুর্বল ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললাম, সে ব্যক্তি কোথায়, যাকে তোমরা সাবী (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলে ডাক? সে আমার প্রতি ইশারা করল এবং বলল, এই সাবী। এরপর মক্কা উপত্যকার লোকেরা ঢিল ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হল, এমন কি আমি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলাম। তিনি বললেন, আমি যখন উঠলম তখন লাল মূর্তির (অর্থাৎ রক্তে রঞ্জিত) অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি যমযম কুপের কাছে এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। এরপর তার পানি পান করলামা হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি সেখানে ত্রিশ রাত্র-দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ছাড়া আমার কাছে কোন খাদ্য ছিলনা। অতঃপর আমি স্থুলদেহী হয়ে গেলাম। এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়ে গেল। আমি আমার কলিজায় ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করিনি। 

তিনি বললেন, ইতিমধ্যে মক্কাবাসীরা যখন এক উজ্জল চাঁদনী রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দুজন মহিলা ইসাফ ও নায়েলাকে[১] ডাকাছিল। তিনি বললেন, তারা তাওয়াফ করতে করতে আমার কাছে এসে পড়ল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তিনি বললেন, তবু তারা তাদের কথা থেকে বিরত হল না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সম্মুখ দিয়ে এল। আমি (বিরক্ত হয়ে) বললাম, (ওদের) লজ্জাস্থা কাঠের মত। তিনি বললেন, আমি তাদের নাম স্পষ্ট উচ্চারণ করিনি। এতে তারা অভিশাপ দিতে দিতে চলে গেল এবং বলতে লাগল এখানে যদি আমাদের লোকদের কেউ থাকত (তাহলে এই বেআদবকে শাস্তি দিত)! 

প্রতিমধ্যে এই দুই মহিলার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) এর সাক্ষাৎ হল। তখন তারা দু’জন নীচে (অর্থাৎ বাইরে থেকে কা’বা চত্বরে) অবতরন করছিলেন। তিনি তাদের দু’জনকে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল কা’বা ও তাঁর পর্দার মাঝখানে এক বিধর্মী অবস্থান করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে তোমাদের কি বলেছে? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভোরে যায় (অর্থাৎ মুখে উচ্চারন করা সম্ভব নয়)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাঁর সঙ্গীসহ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি তাঁর সালাত সমাপন করলেন [তখন আবূ যার (রাঃ) বললেন] আমিই প্রথম ব্যাক্তি, যে তাকে ইসলামী কায়দায় সালাম জানিয়ে বললাম, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক)। উত্তরে তিনি বলেলেন, ওয়া আলায়কা ওয়া রাহমাতুল্লাহ (তোমার প্রতিও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)। 

অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি গিফার গোত্রের লোক। তিনি বললেন, তখন তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন, এবং তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো কপালে রাখলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, গিফার গোত্রের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি অপছন্দ করছেন। এরপর আমি তাঁর হাত ধরতে চাইলাম। তাঁর সঙ্গী আমাকে বাঁধা দিলেন। তিনি তাকে আমার চাইতে অনেক বেশি ভালো জানতেন। তারপর তিনি মাথা তুলে তাকালেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কতদিন জাবত এখানে আছ? আমি বললাম, আমি এখানে ত্রিশটি রাতদিন অবস্থান করছি। তিনি বললেন, তোমাকে কে খাওয়াত? আমি বললাম, যমযম কুপের পানি ছাড়া আমার জন্য কোন খাদ্য ছিল না। এই পানি পান করেই আমি মোটাতাজা হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধা (জঠর জ্বালা) অনুভব করি নি। তিনি বললেন, তাতো বরকতময় এবং তা অনেক খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ খাবার। 

এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাঁর আজ রাতের খানার (মেহমানদারীর) জন্য আমাকে অনুমতি দিন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) রওনা হলেন এবং আমিও তাদের সাথে চললাম। আবূ বকর (রাঃ) একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্য তিনি মুষ্টি ভরে তায়েফের কিসমিস পরিবেশন করলেন। এটাই ছিল আমার প্রথম খাদ্য যা সেখানে (মক্কায়) আমি খেলাম। তারপর যতদিন থাকার ততদিন রইলাম। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমাকে খেজুর গাছ সমৃদ্ধ একটি দেশের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আমার ধারনা সেটি ইয়াসরিব (মদিনার পূর্ব নাম) ছাড়া অন্য কোন স্থান নয়। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমার পক্ষ থেকে তোমার গোত্রের কাছে আমার পয়গাম পৌঁছিয়ে দিবে? হয়ত তোমার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাদের উপকৃত করবেন এবং এদের (হিদায়াতের) কারনে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। এরপর আমি উনায়সের কাছে ফিরে এলাম। সে বলল, আপনি কি করেছেন? আমি বললাম, আমি তো ইসলাম গ্রহন করেছি এবং বিশ্বাস করেছি। সে (উনায়স) বলল, আপনার দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহন করেছি এবং বিশ্বাস করছি। 

এরপর আমরা উভয়ে মায়ের কাছে এলাম, তিনি বললেন, তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই, আমিও ইসলাম গ্রহন করলাম এবং বিশ্বাস করলাম। তারপর আমরা সাওয়ার হয়ে আমদের গিফার গোত্রের কাছে এলাম। তাদের অর্ধেক লোক ইসলাম গ্রহন করল এবং ঈমা ইবনু রাহাদা গিফারী তাদের ইমমত করেন। তিনি ছিলেন তাদের সর্দার। তাদের বাকী অর্ধেক বলল, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসবেন তখন আমরা ইসলাম গ্রহন করব। 

পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে আসলেন এবং তাদের (গিফার গোত্রের) অবশিষ্ট অর্ধেক লোক ইসলামে দীক্ষিত হল। তারপর আসলাম গোত্রের লোকেরা এল, তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের ভাইয়েরা (মিত্রেরা) যার উপরে ইসলাম কবুল করছেন আমরাও তাদের মত ইসলাম গ্রহন করলাম। এভাবে তারাও ইসলামে দীক্ষিত হল। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, গিফার গোত্রকে আল্লাহ্‌ তা’আলা মাগফিরাত দান করুন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ্‌ তা’আলা সালামাত (নিরাপত্তা) দান করুন। 

১. ইসাফ ও নায়েলা নামে সাফা ও মারওযাতে দুটি মুর্তি ছিল। ইসাফ ছিল পুরুষ এবং নায়েলা স্ত্রী। মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল যে এরা উভয়ে হারামে যিনায় লিপ্ত হয়েছিল বলে শাস্তিস্বরূপ ওদের বিকৃত করে পাথরে ব্ধপান্তরিত করে দেওয়া হয়, কিন্তু তারা প্রতীমা হিসেবে এগুলির পৃজা করত।
৬১৩৬.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... হুমায়দ ইবনু হিলাল (রাঃ) থেকে এই সনদে (রাবী) আবূ যার (রাঃ) এর কথা “আমি বললাম, তুমি এখানে অবস্থান কর, আমি গিয়ে সে ব্যক্তিকে দেখে নই।” এরপরে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বললেন, আচ্ছা, তবে মক্কাবাসীদের ব্যপারে সতর্ক থাকবেন। তারা তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং কঠোর ও রুঢ় আচরণ করে।
৬১৩৭.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বলেছেন , হে ভ্রাতুষ্পুত্র! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাবের পূর্বে আমি দুই বছর সালাত আদায় করেছি। রাবী বললেন, আমি বললাম, আপনি কোন দিকে মুখ করতেন। তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বললেন, আল্লাহ্‌ যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সেদিকে। ...... এরপর তিনি সুলায়মান ইবনু মুগীরা (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। 

আর তিনি হাদীসে বলেছেন, এরপর (কাব্য রচনায় শ্রেষ্ঠত্বের বাজি ধরেন) উভয়ে এক জ্যোতিষীর কাছে গেলেন। তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বলেন, আমার ভাই উনায়স কবিতায় এই জ্যোতিষীর প্রশংসা করতে লাগল, অবশেষে প্রতিপক্ষের উপর জয়ী হল। রাবী বলেন, তারপর আমরা তার পশুগুলো নিলাম এবং আমাদের পশুগুলোর সাথে মিলিয়ে ফেললাম। 

তিনি তার হাদীসে আরও বলেছেন, তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। এরপর মাকামে ইবরাহীম এর পিছনে দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বলেন, আমি তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এলাম এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তাঁকে ইসলামী নিয়মে সালাম করলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (হে আল্লাহর রাসূল আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!) তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘ওয়া আলাইকাস সালাম’ (তোমার প্রতিও সালাম বর্ষিত হোক)। তুমি কে? 

তার বর্ণিত হাদীসে আরও আছে যে, তারপর তিনি বললেন, তুমি এখানে কতদিন যাবৎ আছ? আমি বললাম, পনের (দিন) ধরে অবস্থান করছি। এই হাদীসে আরও আছে, তারপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন , তাঁকে এক রাত্রির মেহমানদারীর সুযোগ আমাকে দিন।
৬১৩৮.    ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা সামী ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবূ যার (রাঃ) এর কাছে খবর পৌছল যে, মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন, তখন তিনি তাঁর ভাইকে বললেন, তুমি সওয়ারীতে আরোহণ করে সেই (মক্কা) উপত্যকায় যাও এবং সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আমাকে জানাও, যিনি দাবি করেন যে, আসমান থেকে তাঁর কাছে ওহী আসে। তাঁর কথা ভাল করে শুনবে এবং তারপর তুমি আমার কাছে আসবে। তখন অপর ব্যক্তি (তার ভাই) রওনা হয়ে মক্কা এল এবং তার কথা শুনল। 

তারপর সে আবূ যার (রাঃ)-এর কাছে ফিরে এল এবং সে বলল, আমি তাঁকে লক্ষ্য করেছি যে, তিনি উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দেন এবং এমন বাণী শোনান, যা কবিতা নয়। তখন তিনি (আবূ যার (রাঃ) বললেন, তুমি আমার চাহিদা মেটাতে পারলে না। তারপর তিনি পাথেয় জোগাড় করলেন এবং একটি পানি ভর্তি মশক নিলেন। অবশেষে মক্কায় পৌছ তিনি মসজিদুক হারামে এলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তালাশ করলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে চিনতেন না। আর তাঁর সম্পর্কে (কারও কাছে) জিজ্ঞাসা করাও অপছন্দ করলেন। 

অবশেষে রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। তখন আলী (রাঃ) তাকে দেখলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে ইনি একজন আগন্তুক। যখন তিনি তাকে দেখলেন (তাঁর আহবানে) তাঁর [আলী (রাঃ)] অনুসরণ করলেন; কিন্তু কেউ কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি (এভাবে) ভোর হয়ে গেল। এরপর তিনি [আবূ যার (রাঃ)] তাঁর আসবাবপত্র ও মশক মসজিদে রাখলেন এবং সেদিনটি সেখানে অতিবাহিত করলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলেন না, এমনকি সন্ধ্যা হয়ে গেল। তারপর তিনি তাঁর শোবার জায়গায় ফিরে এলেন। 

আলী (রাঃ) তাঁর কাছে এলেন, তিনি বললেন, এখনো সময় আসেনি, যে সে ব্যাক্তি (আপনি) তাঁর উদ্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে অবগত হবে। এরপর তিনি তাকে উঠিয়ে সঙ্গে নিয়ে চললেন। তবে কেউ কারোর কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি তৃতীয় দিন এসে গেল। এই দিনও সেইরূপ করলেন। আলী (রাঃ) তাকে তাঁর সঙ্গে উঠিয়ে নিয়ে নিলেন এবং তাকে বললেন, আপনি কি আমাকে জানাবেন না, কিসে আপনাকে এই শহরে এনেছে? তিনি (আবূ যার (রাঃ) বললেন, আপনি যদি আমাকে সঠিক পথ দেখানোর পতিশ্রুতি দেন ও প্রতিজ্ঞা করেন তাহলে আমি আপনার কাছে বলব। তিনি ওয়াদা করলেন। 

তখন (আবূ যার (রাঃ) তাকে সব অবহিত করলেন। এরপর আলী (রাঃ) বললেন, তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সত্য এবং তিনি আল্লাহর রাসুল। সকাল হলে আপনি আমাকে অনুসরন করবেন। আমি যদি এমন কিছু দেখতে পাই যাতে আপনার আশংকা আছে, তখন আমি দাঁড়িয়ে যাব, যেন আমি মুত্র ত্যাগ করছি। আর যদি আমি চলতে থাকি তাহলে আমাকে অনুসরণ করবেন। অবশেষে আমার প্রবেশস্থলে আপনি ঢুকে পড়বেন। তিনি তাই করলেন। তিনি তাঁর পিছনে চললেন, শেষ পর্যন্ত তিনি [আলী (রাঃ)] নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশ করলেন আর আবূ যার (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করলেন।

তারপর তিনি তার (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) কথা শুনলেন এবং সেখানেই ইসলাম গ্রহন করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তোমার গোত্রের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দাও। এ আমার নির্দেশ তোমার কাছে পৌছা পর্যন্ত (এভাবে থাকবে)। এরপর তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বললেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রান, আমি তা মক্কাবাসীদের মাঝে চিৎকার করে ঘোষণা করব। তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন। তারপর উচ্চস্বরে ঘোষণা করেলেনঃ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।" 

এতে লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলল। আব্বাস (রাঃ) সেখানে এলেন এবং ঝুকে পড়ে তাকে দেখলেন। তিনি [আব্বাস (রাঃ)] বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি জাননা যে, ইনি গিফার গোত্রের লোক? তোমাদের সিরিয়া দেশে বানিজ্যের যাতায়াতের রাস্তা তাদের এলাকায়। তারপর তিনি তাকে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনলেন। পরের দিন তিনি আবার আগের দিনের মতই করলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করল। আব্বাস (রাঃ) তাকে আড়াল করলেন এবং তাকে তিনি মুক্ত করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৯. জারীর ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৩৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী ও আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহন করার পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (তাঁর কাছে প্রবেশে) বাধা দেননি। আর তিনি আমার প্রতি হাসিমুখে ছাড়া তাকাতেন না।
৬১৪০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ উসামা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (প্রবেশে) বাধা দেন নি। তিনি আমার চেহারায় মৃদু হাসি ছাড়া আমার চেহারার দিকে দেখেননি। ইবনু নুমায়র (রহঃ) তাঁর হাদীসে ইবনু ইদরীস (রহঃ) থেকে অধিক বর্ণনা করেছেন, “আমি তার কাছে অভিযোগ করলাম যে, আমি ঘোড়ার পিঠে দৃঢ়ভাবে থাকতে পারি না। তখন তিনি তাঁর হাতে আমার বুকে মৃদু আঘাত করে দু’আ করলেনঃ اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا হে আল্লাহ্‌! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।
৬১৪১.    আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলী যুগে একটি ঘর ছিল, যেটিকে ‘যুলখালাসা’ বলা হত এবং এটাকে ইয়ামানী কা’বা আর (প্রকৃত) কা’বা কেবলা হত ‘শামিয়া’র (ঝঞ্জাট)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জারীরকে) বললেন, তুমি কি আমাকে যুলখালাসা এবং ইয়ামানী কা’বা ও শামী কা’বা থেকে চিন্তা মুক্ত করতে পারবে? তখন আমি গোত্রের একশ পঞ্চাশজনসহ আহমাসকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম। যুলখালাসাকে ভেংগে ফেললাম এবং সেখানে যাদের পেলাম তাদের হত্যা করলাম। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করলাম। বারী বলেন, তখন তিনি আমাদের জন্য ও আহমাসের জন্য দু’আ করলেন।
৬১৪২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে জারীর! তুমি কি আমাকে খাছ’আম গোত্রের গৃহ (প্রতিমা মন্দির) যুলখালাসা থেকে চিন্তা মুক্ত করবে না? যেটিকে ইয়ামানী কা’বাও বলা হত। জারীর বলেন, আমি দেড়শ অশ্বারোহীসহ সেদিকে রওনা হলাম। আমি অশ্বপৃষ্ঠে স্থিরভাবে থাকতে পারতাম না। আমি এই বিষয়টি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি আমার বুকে তাঁর হাত মারলেন এবং দু’আ করলেনঃ اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا “হে আল্লাহ্‌! তাকে (অশ্বপৃষ্ঠে) স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।”

রাবী বলেন, এরপর তিনি চলে গেলেন এবং সেটি (যুল খালাসা মন্দির) আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। তারপর জারীর (রাঃ) আমাদের মধ্যে থেকে আবূ আরতাত (রাঃ) নামে এক ব্যক্তিকে সুসংবাদ পৌঁছানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পাঠালেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে তাঁকে বললেন, আমরা যুলখালাসাকে পাঁচড়ার কারণে আলকাতরার প্রলেপযুক্ত (কালো) উটের মত করে দিয়ে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আহমাস’ এর ঘোড়া সওয়ার ও পদাতিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু’আ করলেন।
৬১৪৩.    বিভিন্ন সনদে আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে (পূর্বানুরূপ হাদীস বর্ণিত) মারওয়ান (রহঃ) থেকে ইবনু আবূ উমরের হাদীসে বলেছেন যে, জারীর (রাঃ) এর সুসংবাদদাতা আবূ আরতাত হুসায়ন ইবনু রাবীআ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৪৪.    যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বকর ইবনু নযর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্তিঞ্জায় গেলেন। আমি তাঁর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি রাখলাম। তিনি হাজত সেরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, এই পানি কে রেখেছে? [যুহায়র (রহঃ) এর বর্ণনায়] ‘তারা বলল’ অথবা [এবং আবূ বকর (রাঃ) এর বর্ণনায়] ‘আমি বললাম,’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) (রেখেছে)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ “হে আল্লাহ্‌! তাকে দিনের ‘ফিকর’ (সুক্ষ গভীর জ্ঞান) দান করুন।”

পরিচ্ছেদঃ ৩১. আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৪৫.    আবূর রাবী আতাকী, খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার হাতে সুক্ষ রেশমী বস্ত্রের একটি টুকরা এবং জান্নাতের যেথায় আমি ইচ্ছা করতাম সেই বস্ত্র খন্ডটি আমাকে সেখানেই উড়িয়ে নিয়ে যেত। তিনি বলেন, এরপর আমি হাফসা (রাঃ) এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। হাফসা (রাঃ) তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আবদুল্লাহকে একজন সৎলোক দেখতে পাচ্ছি।
৬১৪৬.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করতেন। আমি আশা করেছিলাম যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তা বর্ণনা করি। রাবী বলেন, সে সময় আমি নওজোয়ান অবিবাহিত যুবক ছিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আমি মসজিদে নিদ্রা যেতাম। তখন আমি স্বপ্ন দেখলাম যেন দুজন ফিরিশতা আমাকে পাকড়াও করলেন এবং তাঁরা আমাকে জাহান্নামের নিকট নিয়ে গেলেন। তখন দেখলাম যে, সেটি একটি গভীর গর্ত, একটি কুপের গর্তের মতা তাতে দুইটি কাষ্ঠখন্ড দেখলাম যা কুপের উপরে স্বাভাবিকভাবে থাকে। সেখানে কিছু লোক ছিল যাদের আমি চিনলাম। 

আমি তখন বলতে শুরু করলাম أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর পানাহ চাই, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর পানাহ চাই, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর পানাহ চাই”। রাবী বলেন, সে দুই ফিরিশতার সঙ্গে আরও একজন ফিরিশতা মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কোন ভয় নেই। তারপর আমি এই স্বপ্নের কথা হাফসা (রাঃ) এর কাছে বর্ণনা করলাম। হাফসা (রাঃ) তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ব্যক্ত করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবদুল্লাহ কতই না ভাল লোক! যদি সে রাতে (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায় করত। সালিম (রাঃ) বলেন, এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাত্রে খুব কম সময়ই নিদ্রা যেতেন।
৬১৪৭.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে রাত্রি যাপন করতাম। সে সময় আমার কোন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী) ছিল না। একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যেন আমাকে একটি কূপের নিকট নেয়া হয়েছে। অতঃপর রাবী (উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর) সালিম (রহঃ) তার পিতা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যুহরীর হাদীসের মর্মে বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২. আনাস বিন মালিক (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৪৮.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সূত্রে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার খাদিম আনাসের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। তখন তিনি দু’আ করলেন, اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ “ইয়া আল্লাহ্‌! তাকে ধন-সম্পদ ও তার সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাঁকে যা দান করবেন তাতে বরকত দিন।”
৬১৪৯.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার খাদিম আনাস ...... তারপর তাঁর পুর্বানুরূপ উল্লেখ করেন।
৬১৫০.    মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত ...... অনুরূপ।
৬১৫১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন। সে সময় আমি, আমার মা ও আমার খালা উম্মু হারাম ছাড়া সেখানে কেউ ছিল না। আমার মা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার ছোট খাদিমের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। রাবী বলেন, তিনি আমার জন্য সব রকমের কল্যাণের দু’আ করলেন। তিনি আমার জন্য যে দু’আ করেছিলেন তার শেষাংশ ছিল اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ “হে আল্লাহ্‌! তাঁকে ধনে-জনে বাড়িয়ে দিন এবং তাতে তাঁকে বরকত দিন।”
৬১৫২.    আবূ মা’আনি রাকাশী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা উম্মু আনাস (রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে গেলেন। তখন তিনি তাঁর ওড়নার অর্ধেক দিয়ে আমার ইযার (লুঙ্গী) এবং বাকী অর্ধেক দিয়ে আমার চাঁদর বানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই আমার বালক ছেলে উনায়স (ছোট আনাস), আমি তাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি, সে আপনার খিদমত করবে। তার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। তখন তিনি দু’আ করলেন, اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ “ইয়া আল্লাহ্‌! তাঁর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন।” আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমার ধন-সম্পদ প্রচুর আর আজ আমার সন্তান ও সন্তানের সন্তান-সন্ততি গণনায় একশ’র মত।
৬১৫৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তখন আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন এবং তিনি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এই ছোট আনাস। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তিনটি দু’আ করলেন। এর দু’টি আমি দুনিয়াতেই পেয়েছি এবং তৃতীয়টি পাওয়ার দৃঢ় আশা রাখি।
৬১৫৪.    আবূ বকর ইবনু নাফি' (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি তখন বালকদের সাথে খেলছিলাম। তিনি বলেন তিনি আমাদের সালাম জানালেন। তিনি আমাকে একটি বিশেষ প্রয়োজনে পাঠালেন। আমি আমার মায়ের কাছে ফিরতে দেরী করলাম। আমি মায়ের কাছে গেলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে কিসে আটকিয়ে ছিল? আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বললেন, প্রয়োজনটি কি? আমি বললাম, তা গোপনীয়। তিনি বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন তথ্য কখনো কাউকে বলবে না। আনাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, হে সাবিত! সেই গোপন তথ্য কারও কাছে ব্যক্ত করলে তা তোমাকে অবশ্যই জানাতাম।
৬১৫৫.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গোপনীয় বিষয় আমার কাছে বলেছিলেন। পরে আমি কারও কাছে তা ব্যক্ত করিনি এমনকি (আমার মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন; কিন্তু আমি তাঁকেও তা অবহিত করিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৫৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ব্যতিরেকে ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন জীবিত ব্যক্তি সম্পর্কে বলতে শুনিনি যে, সে জান্নাতে (যবে)।
৬১৫৭.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... কায়স ইবনু আব্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনাতে এমন লোকদের মধ্যে ছিলাম, যাদের মাঝে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর করিপয় সাহাবী বিদ্যমান ছিলেন। সে সময় এক ব্যাক্তি এল, যার মুখমণ্ডলে ভয় ভীতির চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। তখন লোকদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বললেন, এই ব্যাক্তি জান্নাতিদের একজন, এই ব্যাক্তি জান্নাতিদের একজন। তিনি সেখানে দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং তা সংক্ষেপ করলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন, আমি তাকে অনুসরণ করলাম। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। আমিও প্রবেশ করলাম। তারপর আমরা আলাপ আলোচনা করলাম। যখন তিনি অন্তরঙ্গ হলেন তখন আমি তাকে বললাম, আপনি যখন একটু আগে (মসজিদে) প্রবেশ করেছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি এইরূপ বলেছিল (এ ব্যাক্তি জান্নাতিদের একজন)। 

তিনি বললেন, সুবহানআল্লাহ! কারো পক্ষে এমন কিছু বলা উচিৎ নয়, যা সে (নিশ্চিত) জানে না। তিনি বললেন, আমি আপনাকে বলছি, কেন এরূপ বলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় একবার আমি একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি সেই স্বপ্নের কথা তাঁর কাছে ব্যাক্ত করেছিলাম। আমি আমাকে একটি বাগানে দেখতে পাই। এই বাগানের প্রশস্ততা, ঘাসপাতা (সজীবতা) ও সৌন্দর্যের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এই বাগানের মধ্যভাগে একটি লৌহদণ্ড ছিল যার নিম্নভাগ ছিল মাটির মধ্যে আর উপরভাগ ছিল আকাশে। এর উপরিভাগে ছিল একটি রজ্জু। তখন আমাকে বলা হল, তুমি এতে আরোহণ কর। আমি বললাম, আমি পারব না। এরপর একজন মিনসাফ (সেবক) আসলো। তিনি বলেন, ইবনু আউন (রহঃ) বলেন, মিনসাফ (মানে খাদিম)। 

তিনি বলেন, তিনি পিছন থেকে আমার কাপড় ধরলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, সে (খাদিম) তাঁর হাত দ্বারা তাঁর পিছন থেকে তাকে তুলে দিল। আমি আরোহণ করলাম, এমনকি সেই স্তম্ভের চুড়ায় পৌঁছলাম, এরপর রজ্জুটি ধরলাম। তারপর আমাকে বলা হল, একে মজবুত করে ধর। যখন আমি জাগ্রত হলাম, তখনও ঐ রজ্জুটি আমার হাতে। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, সেই বাগানটি হচ্ছে ইসলাম। আর সে স্তম্ভটি হচ্ছে ইসলামের স্তম্ভ এবং সেই রজ্জুটি হচ্ছে মজবুত দৃঢ় রজ্জু। তুমি আমৃত্যু ইসলামের উপরে থাকবে। রাবী বলেন, আর সেই ব্যাক্তই আবদুল্লাহ ইবনু সালামা (রাঃ)।
৬১৫৮.    মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) ... কায়স ইবনু উবাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সমাবেশে ছিলাম, সেখানে সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) ও ইবনু উমর (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) যাচ্ছিলেন। তারা বললেন, এই লোকটি জান্নাতীদের একজন। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং তাকে বললাম, তারা আপনাকে এরূপ এরূপ বলেছেন। তিনি বললেন, সুবহানআল্লাহ! তাদের এমন কথা বলা উচিৎ নয়, যে বিষয়ে তাদের (নিশ্চিত) জানা নেই। 

একবার (স্বপ্নে) আমি দেখতে পেলাম, যেন একটি সবুজ শ্যামল উদ্যানের মাঝখানে একটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে, এর চুড়ায় ছিল একটি রজ্জু। এর নিম্নভাগে একজন মিনসাফ (দণ্ডায়মান) ছিল। মিনসাফ (মানে খাদিম)। তখন আমাকে বলা হল, এতে আরোহণ কর। আমি তাতে আরোহণ করলাম। শেষপর্যন্ত রজ্জুটি দৃঢ়ভাবে ধরলাম। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তা বর্ণনা করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মজবুত রজ্জুটি আঁকড়ে ধরা অবস্থায় আবদুল্লাহ (রাঃ) ইন্তেকাল করবে।
৬১৫৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... খারাশা ইবনু হুরর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনার মসজিদে একটি মজলিসে বসা ছিলাম। তিনি বলেন, সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন সুন্দর অবয়ব বিশিষ্ট একজন প্রবীণ ব্যাক্তি। তিনই আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)। তিনি (রাবী) বলেন, তিনি তাদের সামনে সুন্দর সুন্দর কথা বলছিলেন। তিনি (রাবী) বলেন, যখন তিনি মজলিস থেকে উঠে দাঁড়ালেন তখন লোকেরা বলল, যে ব্যাক্তি কোন জান্নাতিকে দেখে আনন্দিত হতে চায় সে যেন এই লোকটিকে দেখে। তিনি (খারাশা) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি তাঁর অনুসরন করব, যেন আমি তাঁর আবাসস্থল জেনে নিতে পারি। 

তিনি (রাবী) বললেন, তারপর আমি তাকে অনুসরণ করলাম। তিনি রওনা হলেন এবং মদিনা থেকে প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আমিও তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। তারপর বললেন হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তোমার কি প্রয়োজন? রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, যখন আপনি মজলিস থেকে উঠে আসছিলেন তখন আমি আপনার সম্পর্কে লোকদের বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি কোন জান্নাতিকে দেখে খুশী হতে চায়, সে যেন এই ব্যাক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করে। তখন আমার মনে আপনার সাহচর্য লাভের আগ্রহ জাগে। তিনি বললেন, জান্নাতিদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ই সম্যক জ্ঞাত আছেন। তবে লোকদের এই কথা বলার কারন আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি। 

একবার আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম, স্বপ্নে দেখালাম যে, এক ব্যাক্তি আমার কাছে এসেছে। সে আমাকে বলল, উঠ। তারপর সে আমার হাত ধরল। আমি তাঁর সঙ্গে রওনা করলাম। আমি আমার বাম দিকে কয়েকটি রাস্তা দেখতে পেলাম এবং আমি সে পথ ধরে চলতে চাইলাম। সে আমাকে বলল, ও পথে চলবে না। কেননা, এটা হচ্ছে বামপন্থিদের (জাহান্নামীদের) রাস্তা। তিনি বলেন, তারপর আমি আমার ডানদিকে কয়েকটি উজ্জল সরল পথ দেখতে পেলাম। তারপর সে বলল, এই পথে চল। তিনি বলেন, তারপর সে আমাকে একটি পাহাড়ের কাছে নিয়ে এল। এরপর আমাকে পাহাড়ে উঠতে বলল। আমি যখনই উঠতে চেষ্টা করছিলাম তখন (হোঁচট খেয়ে) পড়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বলেন, আমি বেশ ক’বার এরূপ চেষ্টা করলাম। তিনি বলেন, তারপর সে আমাকে নিয়ে রওনা হল এবং একটি স্তম্ভের কাছে পৌঁছল, যার মাথা ছিল আকাশে এবং নিম্নভাগ ভূপৃষ্ঠে নীচে। স্তম্ভটির চূড়ায় একটি কড়া ছিল, সে বলল, এর উপরে আরোহণ কর। 

তিনি বলেন, আমি বললাম, কিভাবে এতে আরোহণ করব? এর মাথা তো আকাশের উপরে। তিনি বলেন, তারপর সে আমার হাত ধরল এবং আমাকে উপরে নিক্ষেপ করল। হঠাৎ আমি দেখলাম যে, আমি কড়ার সাথে ঝুলন্ত আছি। তিনি বলেন তারপর সে স্তম্ভের উপর আঘাত হানল এবং তা পড়ে গেল। তিনি বলেন, আর আমি কড়ার সাথে ঝুলন্ত রয়ে গেলাম। এভাবে আমার প্রভাত হল। 

তিনি বলেন, এরপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, তুমি তোমার বাম দিকে যে রাস্তাগুলি দেখছ, তা হচ্ছে বামপন্থীদের (কাফিরদের) পথ এবং তোমার ডানদিকে যে সব রাস্তা দেখেছ, তো হচ্ছে আসহাবুল ইয়ামীন (বা জান্নাতিগণের) রাস্তা। তুমি যে পাহাড়টি দেখেছিলে তা হচ্ছে শহীদগনের বাসস্থান, তা তুমি পাবে না। তুমি যে স্তম্ভটি দেখেছিলে সেটা হচ্ছে ইসলামের স্তম্ভ। যে কড়াটি তুমি দেখেছিলে সেটা হচ্ছে ইসলামের কড়া। আর তুমি মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. হাসসান ইবন সাবিত (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৬০.    আমর নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা উমর (রাঃ) হাস্‌সান (রাঃ) এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। উমর (রাঃ) তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। তখন তিনি বললেন, আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম এমন অবস্থায়, যখন মসজিদে আপনার চাইতে উত্তম ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, তুমি আমার পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ! তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দ্বারা সাহায্য কর। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, “ইয়া আল্লাহ! হ্যাঁ।”
৬১৬১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনুল মুসায়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার হাসসান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সহ সাহাবীদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, হে আবূ হুরায়রা, আল্লাহর কসম! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছে? ...... এরপর তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬১৬২.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হাসসান ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) কে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে সাক্ষী করে বলতে শুনেছেন যে, হে আবূ হুরায়রা! আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, হে হাসসান! তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ্‌! তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দ্বারা মদদ করুন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।
৬১৬৩.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাসসান ইবনু ছাবিতের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তুমি তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনা কর, অথবা বলেছেন, তুমি তাদের ব্যাঙ্গ কবিতার উত্তর দাও। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তোমার সঙ্গে রয়েছেন। 

জুহায়র ইবনু হারব, আবূ বাকর ইবনু নাফি, ইবনু বাশশার (রহঃ) ভিন্ন ভিন্নরূপে ... শু’বা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬১৬৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) সেসব লোকের মধ্যে শামিল ছিলেন, যারা আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছিলেন। তাই আমি তাকে গালাগালি করেছিলাম। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আমর ভগ্নিপুত্র! তাকে ছেড়ে দাও। কেননা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কাফিরদের বিরুদ্ধে (ব্যাঙ্গ) কবিতা দ্বারা প্রতিরোধ করতেন।
৬১৬৫.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৬১৬৬.    বিশর ইবনু খালিক (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তাঁর কাছে হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি সে সময় তাঁর জন্য কবিতা আবৃতি করে শোনাচ্ছিলেন এবং তাঁর কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি দ্বারা (নাবীর) স্তুতিকাব্য আবৃতি করছিলেন। তিনি বলছিলেন, 

“তিনি সতী (আত্মা)! বুদ্ধিমতী, কোন সন্দেহ দ্বারা তাকে অপবাদ দেয়া যাবে না। তিনি উদাসীনদের গোশত থেকে অভুক্ত থেকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় শয্যা ত্যাগ করেন (কারো গিবত করেন না)” 

তখন আয়িশা (রাঃ) তাকে বললেন, কিন্তু আপনি তো এমন নন। মাসরুক (রাঃ) বলেন, আমি তাকে (আয়িশাকে) বললাম, আপনি তাকে আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি দেন কেন? অথচ আল্লাহ বলেছেন وَالَّذِي تَوَلَّى كِبْرَهُ مِنْهُمْ لَهُ عَذَابٌ عَظِيمٌ‏ “এবং তার মধ্যে যে এ ব্যাপারে [আয়িশা (রাঃ)]–র দুর্নাম করার ব্যাপারে প্রধান ভুমিকা গ্রহন করেছেম তাঁর জন্য রয়েছে মহাশাস্তি” (২৪ঃ ১১) 

তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, এর চাইতে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে যে, সে অন্ধ হয়ে গিয়েছে? এরপর তিনি বললেন, তিনি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে কবিতা দ্বারা প্রতিহত (যুদ্ধ) করতেন অথবা ব্যাঙ্গ কবিতার দ্বারা বাকযুদ্ধ করতেন।
৬১৬৭.    ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করতেন। তবে তিনি বর্ণনায় حَصَانٌ ও رَزَانٌ উল্লেখ করেননি।
৬১৬৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসসান (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে আবূ সুফিয়ানের (ইবনুল হারিস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব) বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনার অনুমতি দিন। তিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা অবস্থায় তা কিভাবে (করবে)? তখন তিনি বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন, আটার খামির থেকে যেভাবে চুল সন্তপর্ণে বের করে নেওয়া হয়, আমি আপনাকে সেভাবে তাদের ভিতর থেকে বের করে নেব। এরপর হাসসান (রাঃ) বললেনঃ “মান-সম্মান ও আভিজাত্যের শীর্ষ চূড়া বানু হাশিমের বংশধরদের মধ্যে বিনতে মাখযুমের সন্তানদের জন্য। আর তোমার বাপ তো গোলাম ছিল।“ এই হচ্ছে তাঁর কাসীদাহ।
৬১৬৯.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রাঃ) এর সুত্রে এই সনদে বর্ণিত যে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মুশরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনার অনুমতি চাইলেন। তবে তাঁরা এই বর্ণনায় আবূ সুফিয়ানের কথা উল্লেখ করেননি। আবদার বর্ণনায় الْخَمِيرِ এর স্থলে الْعَجِينِ রয়েছে।
৬১৭০.    আবদুল মালিক ইনব শু’আয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরায়শদের বিরুদ্ধে তোমরা ব্যাঙ্গাত্তক কবিতা রচনা কর। কেননা, তা তাদের বিরুদ্ধে তীর নিক্ষেপের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহ (রাঃ) এর কাছে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করলেন। তিনি তাকে বললেন, ওদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা রচনা কর। তিনি ব্যাঙ্গ কবিতা আবৃতি করলেন, কিন্তু তিনি তাতে খুশী হলেন না। তখন তিনি কা’ব ইবনু মালিককে ডেকে পাঠালেন। এরপর তিনি হাসসান ইবনু সাবিতের কাছে লোক পাঠালেন। সে যখন তাঁর কাছে গেল তখন হাসসান (রাঃ) বললেন, তোমাদের জন্য সঠিক সময় এসেছে যে, তোমরা সেই পশুরাজ সিংহকে ডেকে পাঠিয়েছ, যে তাঁর লেজ দ্বারা সাবাড় করে দেয়। এরপর তিনি তাঁর জিহবা বের করে নাড়াতে লাগলেন। 

এরপর বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছনে, আমি আমার জিহবা দ্বারা ওদেরকে ফেড়ে টুকরো টুকরো করে দেব, যেমনিভাবে হিংস্র বাঘ তার থাবা দিয়ে চামড়া খসিয়ে ফেলে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে হাসসান! তুমি তড়িঘড়ি করো না। কেননা, আবূ বকর (রাঃ) কুরায়শদের বংশলতিকা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন। কারণ, তাদের মধ্যে আমারও আত্নীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং তিনি এসে আমার বংশ তোমাকে পৃথক করে বাতলে দিবেন। 

এরপর হাসসান (রাঃ) তাঁর (আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং (বংশলতিকা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়ে) ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি আপনার বংশপঞ্জী সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেছেন। সেই মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনাকে তাদের মধ্য থেকে এমন সুকৌশলে বের করে আনব, যেমনিভাবে অটার মণ্ড থেকে সূক্ষ্ম কেশাগ্র বের করা হয়। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাসসান সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে কাফিরদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত 'রুহুল কুদ্দুস’ অর্থাৎ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সারাক্ষণ তোমাকে সাহায্য করতে থাকবেন। আর তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, হাসসান তাদের (বিরুদ্ধে) নিন্দাবাদ করলেন। তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দিলেন এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করলেন। হাসসান (রাঃ) বললেনঃ 

তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিন্দাবাদ করছ, আর আমি তার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছি এতে আছে আল্লাহর কাছে পুরষ্কার ও প্রতিদান। 

তুমি ব্যাঙ্গ করেছ এমন মুহাম্মদকে, যিনি পুন্যবান, একনিষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেযগার, 

তিনি হচ্ছে আল্লাহর রাসুল, যার চরিত্র মাধুর্য অনুপম। 

আমার পিতা ও তাঁর পিতা, আমার ইজ্জত আবরু 

মুহাম্মদের সম্মানের জন্য রক্ষাকবচ (অতন্দ্র প্রহরী)। 

আমি কসম করে বলছি, কাদা (পার্বত্য ঘাঁটি)-র দুই প্রান্তে (মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর) বিজয় ধুলি উড়বে 

তা তোমরা দেখতে পাবে, নতুবা আমার জন্য মতম করা হবে (আমি ধ্বংস হয়ে যাব) 

যুদ্ধাভিযানকালে সে অশ্বারোহী বাহিনীর লাগামের সাথে দৌড় পাল্লা দেয় 

(অথবা বললাম নিয়ে ঠোকাঠুকি করে) 

(আর) তাদের কাঁধের উপরে রয়েছে রক্তের তৃষ্ণার্ত বর্শা (অথবা ক্ষুধার্ত সিংহ) 

আমাদের অশ্বারোহীরা ছুটে চলে দ্রুতবেগে দুরন্ত। 

আর মহিলারা আদর ও সম্মান করে নিজেদের ওড়না দিয়ে তাদের (ঘোড়াদের) মুছে দেয়। 

তোমরা যদি আমাদের (ইসলামের) বিমুখ হও, (জনশূন্যকর) 

তাহলেও আমরা উমরা পালন করবই এবং ইসলামের বিজয় নিশান উড়বে 

আর আবরণ উন্মুক্ত হয়ে যাবে (অন্ধকার চিরদিনের জন্য বিদূরিত হয়ে যাবে)। 

নতুবা তোমরা প্রতিক্ষায় থাক ঐ সময়ের, যে দিন (মুসলমানদের সাথে কাফিরদের) মুকাবিলা হবে; 

আর সেদিন আল্লাহ যাকে চান বিজয় মাল্য পরিয়ে দেবেন। 

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি আমার বান্দাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছি; 

যিনি সত্য বলেন (সর্বদা লোকদের সত্যের দিকে আহবান জানান) যার মধ্যে নেই কোন কপটতা, অস্পষ্টতা। 

আল্লাহ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন, 

আমি এমন এক বাহিনী তৈরি করেছি যারা আনসার। 

যাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শত্রু মুকাবিলা করা 

(প্রতহ্য তারা শত্রু মুকাবিলায় থাকে সতত প্রস্তুত) 

প্রতিদিন আমাদের ভাগ্যে জুটে মা’আদ (কুরায়শ গোষ্ঠী) এর পক্ষ থেকে 

কখনো বা গাল মন্দ, যুদ্ধ বিগ্রহ অথবা নিন্দাবাদ। 

তোমাদের মধ্যে যে, আল্লাহর রাসুলের নিন্দাবাদ করে; 

অথবা তাঁর, প্রশংসা ও সাহায্য সহায়তা করে এ দুইই সমান। 

(কেননা) জিবরাঈল (আঃ) আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত সম্মানিত বাণীবাহক (দূত) 

এবং তিনি রুহুল কুদ্দুস (পবিত্র আত্মা) যার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. আবু হুরায়রা আদ-দুসী (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৭১.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ কাসীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যেন, আমি আমার মাকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাতাম, তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। একদিন আমি তাকে ইসলাম কবুলের জন্য আহবান জানালাম। তখন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আমাকে এমন এক কথা শোনালেন যা আমার কাছে খুবই অপ্রিয় ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম। আর তিনি অস্বীকার করে আসছিলেন। এরপর আমি তাকে আজ দাওয়াত দেওয়াতে তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শোনালেন, যা আমি পছন্দ করি না। সুতরাং আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেন। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আবূ হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান কর”। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর কারনে আমি খুশি মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি (ঘরের) দরজায় পৌঁছলাম তখন তা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! একটু দাড়াও (থাম)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং গায়ে চাঁদর পরলেন। আর তড়িঘড়ি করে দোপাট্টা ও ওড়না জড়িয়ে নিলেন, এরপর ঘরের দরজা খুলে দিলেন। 

এরপর বললেন, “হে আবূ হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যাতিত কোন ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল”। তিনি বলেন, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে রওনা হলাম। এরপর তাঁর কাছে গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সুসংবাদ গ্রহন করুন। আল্লাহ্‌ আপনার দু’আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেছেন। তখন তিনি আল্লাহ্‌র শুক্‌র আদায় করলেন ও তাঁর প্রশংসা করলেন এবং ভাল ভাল (কথা) বললেন। 

তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের কাছে প্রিয় করেন এবং তাদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তোমার এই বান্দা (আবূ হুরায়রা) কে এবং তাঁর মাকে মুমিন বান্দাদের কাছে প্রিয়ভাজন করে দাও এবং তাদের কাছেও মুমিন বান্দাদের প্রিয় করে দাও”। এরপর এমন কোন মুমিন বান্দা সৃষ্টি হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে অথবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালোবাসেনি।
৬১৭২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহাযুর ইবনু হারব (রহঃ) ... আরাজ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বৃলতে শুনেছি যে, তোমরা ধারণা করছ যে, আবূ হুরায়রা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বেশী হাদীস বর্ননা করেছে। এর হিসাব নিকাশ আল্লাহ্‌র কাছেই হবে। আমি ছিলাম একজন গরীব লোক। আমি কোন রকমে পেট পুরে খেয়ে না খেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করতাম (তাঁর সাহচর্যে থাকতাম)। তখন মুহাজিরগণ বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মশগুল থাকতেন এবং আনসারগণ তাঁদের ধন-সম্পদের (ক্ষেত খামারে) রক্ষণাবেক্ষণ ও হিফাযতে ব্যস্ত থাকতেন। এরপর একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার কাপড়ের আচল বিছিয়ে দেবে সে আমার কাছ থেকে যা কিছু শুনবে তা ভুলবে না। আমি আমার কাপড়ের আচল বিছিয়ে দিলাম এবং তিনি হাদীস বর্ণনা করলেন। এরপর আমি সেই কাপড়টা আমার বুকের সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। তখন থেকে আমি তাঁর নিকট হতে যা কিছু শুনেছি তার কিছুই ভুলিনি।
৬১৭৩.    আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু খালিদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আ’রাজ (রহঃ) সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) এর হাদিস আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর বক্তব্য পর্যন্ত শেষ হয়েছে এবং তিনি তাঁর হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে “যে তার কাপড় বিছাবে” শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেননি।
৬১৭৪.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজীবী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আশ্চর্য বলে মনে হয় না যে, তিনি বলেন, (হে উরওয়া!) তোমার কাছে কি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর আচরনে সে আমার হুজরার এক পাশে বসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করলেন এবং তা আমাকে শোনাতে লাগলেন কিন্তু আমি সে সময় তাসবীহ পাঠে মশগুল ছিলাম। সে আমার নফল সম্পন্ন করার পুর্বেই উঠে চলে গেল। আমি যদি তখন তাঁকে পেতাম তাহলে তাকে প্রতিবাদ জানাতাম। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রকম তড়িঘড়ি কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না যেমন তোমরা কর। 

ইবনু শিহাব ও ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) বলেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, আবূ হুরায়রা অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেন আর আল্লাহর কাছেই এ অভিযোগের বিচার। তিনি বলেন যে, লোকেরা এই মর্মে আরও বলাবলি করত যে, মুহাজির ও আনসারগণ আবূ হুরায়রার মত বেশী বেশী হার্দীস বর্ণনা করেন না কেন?

এর জবাবে আমি তোমাদের অবহিত করতে চাই যে, আমার আনসার ভাইয়েরা তাদের জমিজমার (কৃষি) কাজে ব্যস্ত থাকতো আর আমার মুহাজির ভাইয়েরা হাট-বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যর উদ্দেশ্যে বেচা কেনার কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আর আমি রাসুলুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুহবত আমার জন্য অপরিহার্য করে নিতাম এবং খেয়ে না খেয়ে তাঁর সাহচর্যে থাকতাম। তাঁরা যখন অনুপস্থিত থাকতেন তখন আমি হাযির থাকতাম এবং তাঁরা ভুলে যেতেন আমি মুখস্থ করতাম। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে তাঁর কাপড়ের আচল বিছিয়ে দেবে আর আমার হাদীস গ্রহণ করবে? এরপর তা (কাপড়) নিজের বুকে মিলিয়ে নিলে সে যা শুনবে কখনও ভুলবে না। আমি আমার চাদর পেতে দিলাম এবং তিনি তাঁর হাদিস বর্ণনার সমাপ্তি টানলেন। এরপর আমি চাঁদরখানি আমার বুকে মিলিয়ে নিলাম। সেদিন হতে আমি কোন বিষয়ি বিস্মৃত হইনি যা তিনি বলেছেন (সবটুকুই স্মরণে আছে)। 

আল্লাহ্‌ তাঁর কিতাবে দুটি আয়াত যদি নাযিল না করতেন তাহলে আমি কখনও হাদিস বর্ণনা করতাম না। আয়াত দুই এইঃ إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى‏‏ إِلَى آخِرِ الآيَتَيْنِ “আমি যে স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য, কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ্‌ তাদেরকে লানত দেন এবং অভিশাপকারীরাও অভিশাপ দেয়; কিন্তু যারা তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর (সত্যকে) স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করে, এ সকল লোক তারাই যাদের তাওবা আমি কবুল করি। (কারন) আমি তো তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু” (২ঃ ১৫৯-১৬০)।
৬১৭৫.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু মূসাইয়্যাব ও আবূ সালামা ইবনুুন আবদুর রহমান (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, তোমরা বলাবলি করছ যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেন ...... হাদিসের বাকি অংশ তাদের বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬. হাতিব ইবন আবু বালতা'আ (রাঃ) এবং বদরী সাহাবীগণ (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৭৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আলী (রাঃ) এর কাতিব উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এবং যুবায়র, মিকদাদ (রাঃ) কে (বিশেষ কাজে) পাঠালেন এবং বললেনঃ তোমরা রাওযা খাখ (মদ্বীনার নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম) যাও। সেখানে উটের পিঠে আরোহি এক মহিলা আছে। তার কাছে একখানা গোপন চিঠি আছে। তোমরা তার কাছ থেকে সেটা নিয়ে এসো। আমরা ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে ছুটে চললাম। সেখানে আমরা এক মহিলাকে দেখতে পেলাম। 

আমরা তাকে বললাম, চিঠি বের করে দাও সে বলল, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। আমরা বললাম, তোমাকে চিঠি বের করতেই হবে, অন্যথায় তোমার পোশাকাদি খুলে ফেলেতে হবে। এরপর সে তার চুলের বেনীর মধ্য থেকে তা বের করে দিল। তখন আমরা তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। চিঠিতে দেখা গেল যে, হাতিব ইবনু আবূ বালতা (রাঃ) এর পক্ষ থেকে মক্কার কতক মুশরিকের প্রতি লেখা ছিল। তিনি (এই চিঠিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় বিষয় সম্পর্কে তাদের অবহিত করছিলেন (গুরুত্বপূর্ণ কাজের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন)। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে হাতিব! তুমি একি কাজ করলে? সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন না। আমি কুরায়শ সংযুক্ত একজন লোক। সুফয়ান (রহঃ) বলেন, তিনি তাদের (চুক্তিবদ্ধ) মিত্র ছিলেন, তাদের গোত্রভুক্ত ছিলেন না। আর আপনার মুহাজির সাহাবীদের অনেকের আত্মীয় স্বজন সেখানে রয়েছে, যাদের বদৌলতে তাদের পরিবার পরিজনের নিরপত্তা নিশ্চিত হচ্ছিল। তাই আমি মনস্থ করলাম যে, কুরায়শের শঙ্গে যখন আমার কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই তখন তাদের প্রতি এমন কোন (কাজ) উপকার করি যার কারনে তারা আমার পরিবার পরিজন রক্ষা করবে। আমি এ কাজটি এজন্য করিনি যে, আমি কাফির হয়ে গেছি কিংবা দ্বীন থেকে মুরতাদ হয়েছি। আমি ইসলাম গ্রহনের পরে কফরের প্রতি আসক্তও হইনি। 

এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্যই বলেছ। উমর (রাঃ) বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন তিনি বললেন, সে তো বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিল এবং তুমি কি জান যে (এমন হতে পারে যে) আল্লাহ্‌ বদরী (সাহাবী)–দের প্রতি দর্শন দিয়ে বলেছেনঃ اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ অর্থাৎ “তোমরা যা খুশী করতে পার, আমি তোমাদের (অগ্রিম) ক্ষমা করে দিয়েছি”। এরপর আল্লাহ্‌ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ‏ অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরুপে গ্রহন কর না”। (সূরা মুমতাহানাঃ ১)। 

আবূ বকর ও যুহায়র বর্ণিত হাদিসে আয়াতের উল্লেখ নেই। আর ইসহাক তাঁর বর্ণনায় আয়তটিকে সুফিয়ানের তিলাওয়াত হিসাবে গণ্য করেছেন।
৬১৭৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আবূ মারসাদ গানাবী ও জুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) কে পাঠালেন। আমরা সবাই অশ্বারোহী ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা ‘রাওয়া খাখ’ এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাও। সেখানে এক মুশরিক নারীকে পাবে। তাঁর কাছে হাতিবের পক্ষ থেকে মুশরিকদের কাছে লেখা একখানা চিঠি আছে। ...... এরপর তিনি (বর্ণনাকারী) আলী (রাঃ) থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬১৭৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাতিবের এক গোলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করল। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হাতিব অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, সে সেখানে (জাহান্নামে) যাবে না, কেননা সে বদর ও হুদায়বিয়ায় শরীক হয়েছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহনকারী (বৃক্ষতলে উপস্থিত) 'আশাবুস শাজারা' (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৭৯.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, আমাকে উম্মু মুবাশ্‌শির (রাঃ) অবহিত করেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাফসা (রাঃ) এর কাছে বলতে শুনেছেন, ইনশাআল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌ চাহে) তো (হুদায়বিয়ায় বাবলা) গাছের নিচে বায়য়াত (রিদওয়ানে) অংশগ্রহণকারীদের কেউই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তিনি (হাফসা) বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (কেন যাবে না?)। তখন তিনি তাকে ধমক দিলেন। হাফসা (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাতে (জাহান্নামে) অবতরন না করবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্‌ তো এও বলেছেনঃ ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا‏ অতঃপর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে আমি তাদের নাজাদ দেব এবং যালিমদের অধমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮. আবু মুসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৮০.    আবূ আমির আশআরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে ছিলাম। সে সময় তিনি মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী জিইররানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিলাল (রাঃ)ও ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক আরব বেদুঈন এল। সে বলল, ইয়া মুহাম্মাদ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কি পুরন করবেন না? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ “তুমি সুসংবাদ গ্রহন কর”। তখন সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আপনি তো অনেকবারই বলেছেনঃ “সুসংবাদ গ্রহন কর”। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবূ মূসা ও বিলাল (রাঃ) এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, দেখ এই ব্যাক্তি সুসংবাদ প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং তোমরা দুইজন তা গ্রহন কর। 

তখন তারা দুইজনে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কবুল করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানি ভর্তি পেয়ালা আনালেন। তিনি তাঁর দুই হাত ও মুখমণ্ডল ধুইলেন এবং তাতে কুলি করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা দুইজনে এ থেকে পানি পান কর এবং তোমাদের মুখমণ্ডলে ও বক্ষদেশে ঢেলে দাও, আর তোমরা সুসংবাদ গ্রহন কর। তারা দুইজনে পেয়ালাটি গ্রহন করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামা (রাঃ) পর্দার আড়াল থেকে তাদের ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্য তোমাদের পাত্রে কিন্তু পানি রেখে দাও। তখন তারা তাঁর জন্য সামান্য পরিমান উদ্বৃত্ত রাখলেন।
৬১৮১.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আবূ আমির আশআরী ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ বুরদাহ (রাঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হুনায়ন যুদ্ধ সম্পন্ন করেন তখন আবূ আমির (রাঃ) কে একটি বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করা ‘আওতাস’ অভিযানে প্রেরণ করেন। তিনি দুরায়দ ইবনু সিম্মাহ এর মুখোমুখি হলে। দুরায়দ নিহত হল এবং আল্লাহ্‌ তাঁর বাহিনীকে পরাস্থ করলেন। এরপর আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আবূ আমিরের সঙ্গে পাঠিয়ে ছিলেন। আবূ আমিরের হাঁটুতে তীরের আঘাত লেগেছিল। জুছাম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি সেই তীরটি নিক্ষেপ করেছিল। এই তীরটি তাঁর ঘাড়ে বিদ্ধ হয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, চাচাজান! কে আপনাকে তীর বিদ্ধ করেছে? তখন আবূ আমির ইশারায় আবূ মূসা (রাঃ) কে জানালেন, ঐ আমার ঘাতক যাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ, সেই আমাকে তীরবিদ্ধ করেছে। 

আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে আক্রমন করে হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি তাঁর মুখোমুখি হলাম, সে আমাকে দেখা মাত্রই পালিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে ধাওয়া করলাম এবং বলছিলাম, হে বেহায়া, বেশরম! পালাচ্ছ কেন? তুমি কি আরবী নও? বীরত্ব আছে তো দাঁড়িয়ে যাও, ভাগছ কেন? তখন সে থামল। এরপর সে ও আমি কাছাকাছি হলাম। আমরা পরস্পরে দুইবার আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করলাম। আমি তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে ধরাশায়ী করলাম এবং শেষাবধী হত্যা করলাম। এরপর আমি আবূ আমির (রাঃ) এর কাছে ফিরে এলাম এবং তাকে বললাম, আল্লাহ্‌ আপনার ঘাতককে হত্যা করেছেন। 

তখন আবূ আমির (রাঃ) বললেন, এই তীরটি বের করে নাও। আমি সেটি তুলে ফেললাম। তখন তা থেকে পানি বের হচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দিও। আর তাঁর কাছে গিয়ে আরয করবে, আবূ আমির আপনাকে তাঁর জন্য মাগফিরাতের দু’আ চেয়েছেন। তিনি (আবূ মূসা) বলেন, আবূ আমির আমাকে লোকের উপর কর্মকর্তা শাসক নিয়োগ করলেন এবং কিছু সময় এ অবস্থায় থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। 

আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। তখন তিনি চাটাইপাতা খাটের উপর ছিলেন এবং ঐ খাটের উপর চাঁদর বিছানো ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে ও পাজরে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি তাঁর কাছে আমাদের ও আবূ আমিরের খবর দিলাম এবং আমি তাকে বললাম, তিনি (আবূ আমির) বলেছেন, তাঁর জন্য আপনাকে মাগফিরাতের দু’আ করতে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনালেন এবং তা দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এরপর দু’হাত দুলে বললেনঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ “হে আল্লাহ্‌! উবায়দ আবূ আমিরকে ক্ষমা করে দাও” (হাত উচু করার কারনে) তখন আমি তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখছিলাম। পুনরায় তিনি বললেনঃ اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ أَوْ مِنَ النَّاسِ “হে আল্লাহ্‌! তাকে কিয়ামতের দিন তোমার মাখলুকের অনেকের উপরে অথবা অনেক মানুষের উপরে স্থান দিও”। 

তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জন্যও মাগফিরাতের দু’আ করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلاً كَرِيمًا “হে আল্লাহ্‌! আবদুল্লাহ ইবনু কায়েসের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং তাকে কিয়ামত দিবসে সম্মানজনক জান্নাতে প্রবেশ করাও।“ আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন, একটি দু’আ আবূ আমিরের জন্য এবং অন্যটি আবূ মূসা আশআরীর জন্য।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯. আশআরী গোত্রের লোকজনের ফযীলত


৬১৮২.    আবূ করায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি অবশ্যই আশআরী বন্ধুদের কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ চিনতে পারি যখন তারা রাতে প্রবেশ করে। আর রাতের বেলা তাদের কুরআন পাঠের কণ্ঠস্বর দ্বারা তাদের চিনে ফেলি যদিও দিনের বেলা আমি তাদের আবাসসমুহ দেখিনি। তাদের মধ্যে রয়েছে একজন প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী ব্যাক্তি। যখন সে অশ্বারোহী কিংবা (তিনি বলেছেন) শত্রুর সাক্ষাৎ লাভ করে তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলে আমাদের লোকজন তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, একটু অপেক্ষা কর।
৬১৮৩.    আবূ আমির আশআরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আশআরী গোত্রের লোকজন যখন যুদ্ধের ময়দানে সমবেত হয় অথবা বলা হয়েছে মদ্বীনাতে তাদের পরিবার-পরিজনের যখন খাদ্য সংকট দেখা দেয় তখন তাঁদের কাছে যা কিছু থাকে তা এক কাপড়ে জড়ো করে নেয়। এরপর তা নিজেদের একটি পাত্র দ্বারা সমানভাবে বন্টন করে দেয়। তখন তিনি বললেন তাঁরা আমার থেকে এবং আমি তাঁদের থেকে। (অর্থাৎ আমি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট)।

পরিচ্ছেদঃ ৪০. আবু সুফইয়ান ইবন হারব (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৮৪.    আব্বাস ইবনু আবদুল আযীয আল আম্বারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, মুসলমানরা আবূ সুফিয়ানের দিকে তাকাতেন না এবং তাঁর সঙ্গে উঠাবসা করতেন না। তখন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ। তিনটি জিনিস আমাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (আবূ সুফিয়ান) বললেনঃ আমার কাছে আরবের সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সুন্দরী উম্মে হাবীবা বিনতে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) ছিল, যাকে আমি আপনার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) আবার বললেন, আমার পুত্র মুআবিয়া যাকে আপনি ওহী লিখক নিযুক্ত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আমাকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিন, যেমন আমি (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে) মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলাম। তিনি বললেন, বেশ তো, হ্যাঁ। আবূ যুমায়ল (রাঃ) বলেন, যদি তিনি এই সব বিষযে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রশ্ন না করতেন তাহলে তিনি তা দিতেন না। কেননা, তার কাছে যা চাওয়া হত (তা দিয়ে দিতেন)।

পরিচ্ছেদঃ ৪১. জা'ফার ইবন আবু তালিব, আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) ও তাদের নৌযান সঙ্গীদের ফযীলত


৬১৮৫.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল হামদানী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের খবর পৌছল তখন আমরা ইয়ামানে ছিলাম। তখন আমরা আমি ও আমার দুই ভাই তার কাছে হিজরত করার জন্য রওনা হলাম। আমি ছিলাম সে দুইজনের ছোট। তাঁদের একজনের নাম ছিল আবূ বুরদাহ (রাঃ) অপরজন ছিলেন আবূ রুহম (রাঃ)। তিনি হয়ত বলেছেন, আমাদের গোত্রের (কিছু লোক) তিপ্পান্ন জন কিংবা বায়ান্নজন লোক ছিল। আমরা একটি (পালের) জাহাজে আরোহণ করলাম। জাহাজটি আমাদের নিয়ে আবিসিনিয়ায় গিয়ে উপনীত হল, যেখানের বাদশাহ ছিলেন নাজ্জাশী। 

তখন আমরা তার কাছে জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের দেখা পেলাম। এরপর জাফর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। এবং এখানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা আমাদের সঙ্গে অবস্থান করুন। তিনি বলেন, আমরা তার সঙ্গে থাকতে লাগলাম, অবশেষে আমরা সবাই একত্রে ফিরে এলাম।

তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খায়বর বিজয়ের সময়ে মিলিত হলাম। তিনি আমাদেরও গনীমতের মালের অংশ দিলেন অথবা তিনি বলেছেন, তিনি তা থেকে আমাদেরও দান করেছেন। খায়বার বিজয়ে অনুপস্থিত কাউকে তিনি হিসসা দেননি। শুধু যারা তার সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন (তাদের দিয়েছেন) তাদের ব্যাতিত কাউকে গনিমতের হিসসা দেননি। তবে জাফর ও তাঁর সংগীদের সংগে আমাদের জাহাজে আরোহী সাথীদেরও তাঁদের সংগে হিসসা প্রদান করেছিলেন। 

বর্ণনাকারী বলেন, লোকদের কেউ কেউ আমাদের অর্থাৎ জাহাজের আরোহীদের বলে বেড়াত যে, আমরা অগ্রগামী হিজরতকারী। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমাদের নৌকায় সফর সংগিনী আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হাফসা (রাঃ) এর সঙ্গে দেখা করার জন্য গমন করেন। যাঁরা নাজ্জাশীর কাছে হিজরত করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতমা। 

ইত্যবসরে উমর (রাঃ) হাফসার কাছে এলেন। আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) তখন তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তখন উমর (রাঃ) আসমাকে দেখে বললেন, ইনি কে? হাফসা (রাঃ) বললেন, ইনি আসমা বিনত উমায়স। উমর (রাঃ) বললেন, এই কি হাবশায় হিজরতকারিণী, জাহাজে আরোহণকারিণী? তখন আসমা (রাঃ) বললেন, জী হ্যাঁ। উমর (রাঃ) বললেন, হিজরতে আমরা তোমাদের চাইতে অগ্রগামী। সূতরাং তোমাদের তুলনায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে অধিকতর হকদার। 

তখন আসমা (রাঃ) রাগাম্বিত হলেন এবং বললেন, হে উমর। কথাটি সঠিক নয়। কখনো নয়। আল্লাহর কসম! তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্যে ছিলে। তিনি তোমাদের ক্ষুধার্তদের আহার দান করতেন, জ্ঞানহীনদের জ্ঞানের আলো বিলাতেন। আর আমরা আবিসিনিয়ায় প্রবাসে অনাত্মীয়দের মাঝে প্রতিকুল পরিবেশে অবস্থান করছিলাম। এটা ছিল কেবল আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টির জন্যই। আল্লাহর কসম! তুমি যা বলেছ তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আলোচনা না করা পর্যন্ত আমি কোন আহার গ্রহণ করব না এবং পানীয় দ্রব্য স্পর্শ করব না। আমরা (বিদেশ বিভুঁইয়ে) সারাক্ষণ বিপদ ও ভয়ভীতির মধ্যে থাকতাম। 

আমি বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পেশ করব এবং জিজ্ঞাসা করব। আল্লাহর কসম! আমি মিথ্যা বলব না, কোন কিছু বিকৃত করব না এবং প্রকৃত ঘটনার চাইতে বাড়িয়ে বলব না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আসমা (রাঃ) বললেন, ইয়া নাবীয়্যাল্লাহ! উমর (রাঃ) এই এই বলেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার প্রতি তোমাদের চেয়ে তার হক বেশী নেই। কেননা তার ও তার সঙ্গীদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র হিজরত। আর তোমাদের জাহাজ আরোহীদের জন্য রয়েছে দুটি হিজরত। 

আসমা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ মূসা (রাঃ) ও জাহাজের আরোহীদের দলে দলে এসে আমার কাছে এই হাদীস খানি জিজ্ঞাসা করতে দেখেছি। তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তাঁদের কাছে এর চাইতে অধিকতর আনন্দদায়ক ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কোন বিষয় দুনিয়াতে ছিল না। আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি আবূ মূসা (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি আমার কাছ থেকে বারবার এই হাদীসখানি শুনতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪২. সালমান ফারসী (রাঃ) সুহায়ব (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) এর ফযীলত


৬১৮৬.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িয ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) একদল লোকের সাথে সালমান ফারসী (রাঃ), সুহায়ব (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)-এর কাছে এলেন। তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর তরবারীসহ আল্লাহর দুশমনদের গর্দানে যথাসময়ে তার লক্ষ্যস্থলে আঘাত করেনি। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তোমরা কি একজন প্রবীণ কুরায়শ নেতাকে এমন কথা বলছ? এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাকে বিষয়টি অবহিত করলেন। তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ বকর! তুমি বোধ হয় তাদের রাগিয়েছ। যদি তুমি তাদের রাগিয়ে থাক তাহলে তুমি তাদের রবকেই রাগিয়েছ। এরপর আবূ বকর (রাঃ) তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, হে ভাই সকল! আমি তোমাদের রাগিয়েছি, তাই না? তারা বললেন, না, হে ভাই! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩. আনসার (রাঃ)-গনের ফযীলত


৬১৮৭.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, إِذْ هَمَّتْ طَائِفَتَانِ مِنْكُمْ أَنْ تَفْشَلاَ وَاللَّهُ وَلِيُّهُمَ “তোমাদের দু'টি গোত্র যখন পলায়ন করতে যাচ্ছিল, আর আল্লাহই তাদের অভিভাবক”। এই আয়াত আমাদের অর্থাৎ বানূ সালিমাহ ও বানূ হারিসাহ সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। আর আমরা চাই না যে, এই আয়াতটি নাযিল না হোক। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ এদের দু'দলের অভিভাবক (বন্ধু)।”
৬১৮৮.    মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আনসারদের ক্ষমা করুন, (ক্ষমা করে দিন) পুত্রদের এবং তাদের পুত্রদের পুত্রদের। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... সূত্রে শুবা (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত।
৬১৮৯.    আবূ মা’আন রাকাশী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু তালহার পুত্র ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আনাস (রাঃ) তাকে হাদিস শুনিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে করি যে, তিনি বলেছেনঃ আনসারদের সন্তান সন্ততি ও তাদের ‘মাওলা’ (আযাদকৃত গোলাম) দের জন্য আশ্রিত ব্যাক্তিবর্গের মাগফিরাতের দু’আ করেছেন। আমি তাতে কোন সন্দেহ পোষণ করছি না।
৬১৯০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতক বালক ও মহিলাকে কোন এক উৎসব অনুষ্ঠান থেকে আসতে দেখেন। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমরা (আনসাররা) আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ, তোমরা আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ।
৬১৯১.    মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনুল বাশশার (রহঃ) ... হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এক আনসারী মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে নির্জনে আলাপ করলেন এবং বললেন, যার হাতে আমার জীবন সেই সত্তার কসম, তোমরা আমরা কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। তিনি এই কথাটি তিনবার বলেন। 

ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) অন্য সুত্রে বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ করায়ব (রহঃ) ... শু’বার সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬১৯২.    মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারিগন আমার পাকস্থলী ও সিন্দুক তুল্য। আমার একান্ত ও বিশিষ্ট জন। আর মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে এবং তাদের (আনসারদের) সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। সতরাং তাদের ভালো আচরণকারীদের গ্রহন করবে এবং তাদের মন্দ আচরণকারীদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪. আনসারীদের (রাঃ) শ্রেষ্ঠ পরিবার (গোত্র) প্রসঙ্গ


৬১৯৩.    মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসার গোত্রসমুহের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্র হচ্ছে বনু নাজ্জার, এরপর বনু আশহাল, এরপর বনু হারিস ইবনু খাযরাজ, এরপর হচ্ছে বনু সাইদাহ গোত্র। আনসারীদের সকল গোত্রের কল্যান নিহিত আছে। সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উপর অন্যদের প্রাধ্যান্য দিয়েছেন। (তাঁকে) বলা হল, তোমাদেরকেও অনেকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন।
৬১৯৪.    ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত।
৬১৯৫.    কুতায়বা ও ইবনু রুমহ, অন্য সুত্রে কুতায়বা, অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তাঁর বর্ণিত হাদিসে সা’দ (রাঃ) এর কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬১৯৬.    মুহাম্মদ ইবনুল আব্বাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান (রহঃ) ... ইবরাহিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ উসায়দ (রাঃ) কে ইবনু উতবার কাছে ভাষণ দিতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারদের ঘরসমুহের মধ্যে উত্তম গোত্র হচ্ছে বনু নাজ্জার, বনু আবদুল আশহাল, বনু হারিছ ইবনু খাযরাজ এবং বনু সাইদাহ। 

তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি এই বিষয়ে কাউকে (মর্যাদায়) প্রাধান্য দিতাম তাহলে আমার গোত্রকে অগ্রাধিকার দিতাম।
৬১৯৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) ... আবূ সালাম (রহঃ) সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) কে সাক্ষ্য দিতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারীদের গোত্রসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে বনু নাজ্জার, এরপর বনু আবদুল আশহাল, এরপর বনু হারিস ইবনু খাযরাজ, এরপর বনু সাঈদার ঘর। এ ছাড়া প্রত্যেক আনসারীর ঘরেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। 

আবূ সালাম (রহঃ) বলেন, আবূ উসায়দ (রাঃ) বলেছেন, যদি আমি মিথ্যাবাদী হতাম তাহলে আমি আমার গোত্র বনু সাইদাহ দিয়ে শুরু করতাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত হব? বিষয়টি সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর নিকট পৌছলে তিনি মনকষ্ট পেলেন এবং তিনি বললেন, আমাদের পেছনে রাখা হয়েছে। আমরা চার জনে মধ্যে শেষ স্থানে (পড়ে গেছি)? আমার গাধার পীঠে গদি লাগাও। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাব। 

তখন তাঁর সঙ্গে আমার ভাইপো সাহল কথা বলল। সে বলল, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রতিবাদ জানানোর জন্য যাবেন, অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। চার জনের মধ্যে চতুর্থ হওয়া কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? তখন তিনি থামলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল সর্বাধিক জ্ঞাত। এরপর তিনি তাঁর গাধার জ্বীন খুলতে নির্দেশ দিলেন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন।
৬১৯৮.    আমর ইবনু আলী ইবনু বাহর (রহঃ) ... আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, خَيْرُ الأَنْصَارِ “সর্বোত্তম আনসার” অথবা خَيْرُ دُورِ الأَنْصَارِ “আনসারদের সর্বোত্তম গোত্র” الدُّورِ উল্লেখ করার ক্ষেত্রে তাদের বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। তবে তিনি তাঁর বর্ণনায় সা’দ ইবনু উবাদার ঘটনা উল্লেখ করেননি।
৬১৯৯.    আমর নাকিদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ সালাম ও উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাসউদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বিরাট গনজমায়েতে বললেনঃ আমি কি তোমাদের কাছে আনসারদের সর্বাপেক্ষা উত্তম গোত্র সম্পর্কে বর্ণনা করব? তখন তারা বললেন, জি হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বনু আবদুল আশাহাল। তারা বললেন, এরপর কারা ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন এরপর বনু নাজ্জার। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এরপর কারা? তিনি বললেনঃ এরপর বনু হারিস ইবনু খাযরাজ। তারা বললেন, এরপর কারা ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ বনু সাইদাহ। তারা বললেন, এরপর কারা? তখন তিনি বললেন, আনসারীদের প্রত্যেক গোত্রেই কল্যাণ নিহিত আছে। 

তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমরা কি চারের মধ্যে সর্বশেষ? যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করলেন তখন তিনি তাঁর সাথে কথা বলার ইচ্ছা করছিলেন। তখন তাঁর গোত্রের কতিপয় ব্যাক্তি তাকে বলল, আপনি বসে পড়ুন। আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে চারটি গোত্রের কথা বলেছেন তাঁর মধ্যে আপনার গোত্রকে স্থান দিয়েছেন? এমন অনেক ঘরই রয়েছে, যাদের কথা তিনি উল্লেখ করেননি। তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা বলা থেকে বিরত থাকলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫. আনসার (রাঃ)-গনের উত্তম সান্নিধ্য


৬২০০.    নাসর ইবনু আলী জাহযামী, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। (এই সফরে) তিনি আমার খিদমত আঞ্জাম দিতেন। তখন আমি তাকে বললাম, এরূপ করবে না। তিনি বললেন, আমি আনসারগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এরূপ কিছু (খিদমত) করতে দেখেছি। যাতে আমি কসম করেছি যে, যখন আমি আননারদের ক্যরো সাথী হব তখন তাঁর খিদমত করব। ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার তাদের হাদীসে আরো বলেছেন, وَكَانَ جَرِيرٌ أَكْبَرَ مِنْ أَنَسٍ ‏.‏ وَقَالَ ابْنُ بَشَّارٍ أَسَنَّ مِنْ أَنَسٍ অর্থাৎ জারীর আনাসের চাইতে বড় ছিলেন। আর ইবনু বাশশার বলেছেন, তিনি আনাসের তুলনায় প্রবীণ ও অধিক বয়স্ক ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬. গিফার, আসলাম গোত্রের জন্য নবী (ﷺ) এর দুয়া


৬২০১.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তা'আলা নিরাপত্তা ও শান্তি প্রদান করেছেন।
৬২০২.    উবায়দুল্লাহ আল কাওয়ারীরী, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি তোমার গোত্রের কাছে যাও এবং বলে দাও যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তা দান করেছেন এবং গিফার গোত্রকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন।
৬২০৩.    ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু'বার সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত।
৬২০৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার, সুয়াইদ ইবনু সাঈদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে অন্য সনদে উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ), অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ), আরেক সনদে ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ), অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আরেক সনদে সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আসলাম গোত্রের নিরাপত্তা বিধান করুন এবং গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিন।
৬২০৫.    হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তা দান করেছেন এবং গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। শোন এ কথা আমি বলিনি বরং আল্লাহ তাআলাই ইরশাদ করেছেন।
৬২০৬.    আবূ তাহির (রহঃ) ... খাফফাফ ইবনু ঈমা আল গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সালাতের দুআয় বলেছেনঃ হে আল্লাহ! বানূ লিহয়ান, রি'ল ও যাকওয়ান গোত্রের উপর লানত বর্ষণ কর। আর উসায়্যা (গোত্র) তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নাফরমানী করেছে। আর গিফারকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিন। এবং আসলামকে নিরাপত্তা দান করুন।
৬২০৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গিফার গোত্রকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, আসলাম গোত্রকে নিরাপত্তা দান করেছেন। আর উসায়্যাহ গোত্র আল্লাহ ও তার রাসুলের নাফরমানী করেছে।
৬২০৮.    ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... অন্য সুত্রে আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ), আরেক সুত্রে যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুত্রে অনুরূপ বর্নিত। তবে সালিহ ও উসামা বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ পূর্বক এই কথা বলেছেন। 

হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) সুত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি ...... উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭. গিফার, আসলাম, জুহায়না, আশজা, মুযায়না, তামীম, দাউস ও তাঈ গোত্রের ফযীলত


৬২০৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ আয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসার, মুযায়না, জুহায়না, গিফার, আশজা এবং বানূ আবদুল্লাহ আমার একান্ত আপনজন, অন্যরা নয়। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এদের অভিভাবক (বন্ধু)।
৬২১০.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরায়শ, আনসার, মুযায়না, জুহায়না, আসলাম, গিফার, আশজা আমার আপনজন। আর আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল ব্যতিরেকে তাদের কোন অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক নেই।
৬২১১.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে সা’দ তাঁর বর্ণিত হাদীসে কোন কোন সময় বলেছেন, فِيمَا أَعْلَمُ “আমার জানা মতে।
৬২১২.    মুহাম্মদ ইববুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আসলাম, গিফার, মুযায়না এবং যারা জুহায়নার অন্তর্ভুক্ত অথবা (বলেছেন) জুহায়না গোত্র বানূ তামীম, বানূ আমির এবং তাদের দুমিত্র আসা’দ ও গাতফানের চাইতে উত্তম।
৬২১৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... অন্য সুত্রে আমর নাকিদ, হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আ'রাজ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই সত্তার কসম যার নিয়ন্ত্রণে মুহাম্মাদের জীবন! অবশ্যই গিফার, আসলাম, মুযায়না এবং যারা জুহায়নার অন্তর্ভুক্ত (অথবা বলেছেন) জুহায়ন গোত্র এবং যারা মুযায়নার অন্তর্ভুক্ত তাঁরা আল্লাহর নিকট কিয়ামত দিবসে আসাদ, তাঈ ও গাতফান গোত্র থেকে উত্তম বলে বিবেচিত হবেন।
৬২১৪.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব আদ দাওরাকী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়নার কিছু অংশ অথবা (বলেছেন) জুহায়না ও মুযায়নার কিছু অংশ আল্লাহর নিকট- বর্ণনাকারী বলেন যে, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, কিয়ামত দিবসে আসাদ, গাতফান, হাওয়াযিন ও তামীম গোত্রের চাইতে উত্তম (বলে গণ্য হবে)।
৬২১৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ বাকারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। এরপর তিনি বললেন, আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছেন। হাজীদের মাল সামান চুরিতে অভস্ত্য আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়নার লোকেরা (জুহায়নার উল্লেখের ব্যাপারে রাবী মুহাম্মদের সন্দেহ)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি মনে কর? যদি আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়না (নামটি উল্লেখে রাবীর সন্দেহ) ও বনূ তামীম, বনূ আমির, আসাদ ও গাতফানের চাইতে উত্তম হলে (কেমন হয়)। আর তাহলে এরা লোকসানের সম্মুখীন হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে কে? তখন তিনি (আবার) বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সেই সত্তার কসম যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, নিশ্চয়ই এরা তাদের তুলনায় উত্তম। তবে ইবনু আবূ শায়বার হাদিসে রাবী মুহাম্মদের সন্দেহের কথাটির উল্লেখ নেই।
৬২১৬.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... বনূ তামীম গোত্রের দলপতি মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াকুব দাবীয়্যা (রহঃ) এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনায় রাবী وَجُهَيْنَةُ (এবং জুহায়না নিশ্চিত রূপে বলেছেন) এবং أَحْسِبُ (আমি মনে করি) বলেন নি।
৬২১৭.    নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) ... আবূ বাকর (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়না গোত্র, বনূ তামীম, বনূ আমির এবং তাদের দুই মিত্র আসাদ ও গাতফানের চাইতে উত্তম।
৬২১৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... অন্য সুত্রে আমর নাকিদ (রহঃ) ... আবূ বিশর (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত।
৬২১৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বলতো যে, যদি জুহায়না, আসলাম, গিফার গোত্র বনূ তামীম, বনূ আবদুল্লাহ ইবনু গাতফান ও আমির ইবনু সা’সা’আহ এর চাইতে উত্তম হয়? (এ কথা বলার সময়) তিনি তাঁর আওয়াজ বুলন্দ করলেন। তখন তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তবে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই এরা তাদের চাইতে উত্তম। তবে আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণিত হাদিসে “তোমরা বলতো যে যদি জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, ও গিফার” – এভাবে কথাটির উল্লেখ রয়েছে।
৬২২০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে এলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, প্রথম যে সাদাকা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের চেহারা (আনন্দে) উজ্জল করেছিল তা হচ্ছে তাঈ গোত্রের সাদাকা- যা আমি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এসেছিলাম অথবা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল।
৬২২১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফায়ল ও তাঁর সঙ্গিরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দাওস গোত্রের কুফরী (ইখতিয়ার) করেছে এবং (ইসলাম গ্রহনে) অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। সুতরাং আপনি তাদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করুন। তখন বল হল, দাওস নিপাত হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَائْتِ بِهِمْ “হে আল্লাহ্‌ দাওসকে হিদায়াত নসীব করুন এবং তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসুন”।
৬২২২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ যুরআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি তিনটি কারনে বনূ তামীমকে ভালবাসতে থাকব। যা (তিনটি বিষয়ে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, এরা আমার উম্মাতের মধ্যে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তাদের সাদাকা এল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা আমাদের সম্প্রদায়ের সাদাকা। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের গোত্রের কোন বন্দিনী আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্তি দাও! কেননা, সে ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর বংশধর। 

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনূ তামীম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তিনটি কথা শোনার পর আমি তাদের ভালবাসতে থাকব ...... এরপর তিনি অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬২২৩.    হামিদ ইবনু উমর আল-বাকরাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বনূ তামীম সম্পর্কে তিনটি বৈশিষ্টের কথা শুনেছি। এরপর থেকে আমি তাদের ভালবাসতে শুরু করি। এরপর তিনি এই উপরোক্ত অর্থযুক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তবে এই বর্ণনায় দাজ্জালের কথা উল্লেখ করেননি। এর স্থলে هُمْ أَشَدُّ النَّاسِ قِتَالاً فِي الْمَلاَحِمِ "তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা দুর্ধর্ষ লড়াকু" কথাটি বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮. সর্বাপেক্ষা উত্তম লোকদের বর্ণনা


৬২২৪.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লোকদের মৌলিক গুনাবলী সম্পন্ন (খনিজ ও গুপ্তধনের মত) দেখতে পাবে। সুতরাং যারা জাহিলিয়াত যুগে উত্তম ছিল তারা ইসলামেও উত্তম হবে, যখন তাঁরা দ্বীনে সমঝদার হবে। অথবা তোমরা এই বিষয়ে অর্থাৎ ইসলামে উত্তম লোক দেখতে পাবে যারা এতে প্রবিষ্ট হওয়ার আগে চরম ইসলাম বিদ্বেষী ছিল, আর তোমরা সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক হিসাবে দেখতে পাবে সে সব মানুষকে, যারা দু’মুখো এর এই দলের কাছে একমুখে কথা বলে আবার আরেক দলের কাছে এসে আরেক মুখে কথা বলে।
৬২২৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লোকদের মৌলিক গুনাবলী ভূষিত (খনির মত) পাবে। ...... এরপর যুহরীর হাদিসের অনুরূপ। তবে আবূ যুর’আ ও আ’রাজের বর্ণিত হাদিসঃ تَجِدُونَ مِنْ خَيْرِ النَّاسِ فِي هَذَا الشَّأْنِ أَشَدَّهُمْ لَهُ كَرَاهِيَةً حَتَّى يَقَعَ فِيهِ অর্থাৎ তোমরা এ (ইসলামের) বিষয়ে উত্তম লোকদের মধ্যে পাবে তাদের যারা এতে প্রবিষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এর প্রতি অতিশয় বিদ্বেষ পোষণকারী।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯. কুরায়শী মহিলাদের ফযীলত


৬২২৬.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম নারী যারা উটে সওয়ার হয়। বর্ণনাকারীদের একজন বলেন, কুরায়শী পুণ্যবতী মহিলারা। অন্যজন বলেন, কুরায়শী মহিলারা যারা ইয়াতিমের প্রতি তাদের শৈশবে অত্যন্ত মায়াবতী এবং যারা তাদের স্বামীর ধন-সম্পদের অত্যন্ত হিফাযতকারিণী।
৬২২৭.    আমর নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে (অর্থাৎ মারফু করেছেন) এবং ইবনু তাউস (রহঃ) থেকে যা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন (মারফু করেছেন)। তবে এই বর্ণনায় এইটুকু পার্থক্য রয়েছেঃ أَرْعَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ ‏"‏ ‏.‏ وَلَمْ يَقُلْ يَتِيمٍ অর্থাৎ তারা তাদের শিশুদের প্রতি অতন্ত্য দয়াশীল, তাদের শৈশবে” এবং তিনি “ইয়াতিম” শব্দটি বলেন নি।
৬২২৮.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কুরায়শী মহিলারা সর্বোত্তম মহিলা। তারা উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে থাকেন। তারা শিশুদের প্রতি অধিক মমতাময়ী এবং স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অধিক যত্নবান। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এরপর বলতেন, মারযাম বিনত ইমরান (রাঃ) কখনো উটের পিঠে আরোহণ করেননি।
৬২২৯.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মে হানীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার সন্তান সন্ততি আছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম নারী। যারা উটে আরোহণ করে ......। এরপর মা'মার ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তরে তার বর্ণনায় এতটুকু পার্থক্য যে, তিনি বলেন, أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ অর্থাৎ "তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি মেহেরবান ও যত্নশীল হয়ে থাকেন।"
৬২৩০.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম মহিলা হচ্ছে তারাই যারা উটে সাওয়ার হয়ে থাকে। (তারা হচ্ছে) কুরায়শী পুণ্যবতী মহিলা। তারা সন্তানদের প্রতি তার শৈশবে অতি মমতাময়ী এবং স্বামীর ধন-সস্পদের প্রতি অধিক যত্নবান।
৬২৩১.    আহমাদ ইবনু উসমান ইবনু হাকীম আল আওদী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ... বর্ণিত মা'মার এর হাদীসের অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ৫০. নবী (ﷺ) কর্তৃক তার সাহাবী (রাঃ)-গনের মধ্যে পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করার বর্ণনা


৬২৩২.    হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) ও আবূ তালহা (রাঃ) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন।
৬২৩৩.    আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) ... আসিম ইবনুল আহওয়াল (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার কাছে এ মর্মে রেওয়ায়াত পৌঁছেছে কি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে কোন হিলফ-(মৈত্রী বন্ধন নেই)? তখন আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শ ও আনসারদের মধ্যে তাঁর ঘরে বসেই মৈত্রী স্থাপন করেছিলেন।
৬২৩৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শ ও আনসারদের মধ্যে মদীনাতে তার ঘরে বসেই মৈত্রী বন্ধন ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিলেন।
৬২৩৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে কোন হিলফ (জাহিলী যুগে প্রচলিত মৈত্রীতা চুক্তি) নেই। তবে জাহিলিয়া যুগে ভাল কাজের জন্য যে সব (মৈত্রী চুক্তি) করা হয়েছে তাকে ইসলামে আরও দৃঢ় ও মযবুত করেছে।

পরিচ্ছেদঃ ৫১. নাবী (ﷺ) এর জীবনাবস্থিতি তার সাহাবীদের জন্য নিরাপত্তা এবং সাহাবীগনের জীবন উপস্থিতি সমগ্র উম্মাতের জন্য নিরাপত্তা


৬২৩৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আবান (রহঃ) ... আবূ বুরদাহ (রাঃ) এর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। এরপর আমরা বললাম- যদি আমরা তাঁর সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করা পর্যন্ত বসতে পারতাম (তাহলে ভাল হত)। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বসে থাকলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। এরপর বললেনঃ তোমরা এখানে কতক্ষণ পর্যন্ত বসে আছ? আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনার সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করেছি। এরপর আমরা বললাম যে, ইশার সালাত আপনার সঙ্গে আদায় করার জন্যে বসে আছি। তিনি বললেনঃ তোমরা বেশ ভাল করেছ অথবা (বললেন) তোমরা ঠিকই করেছ। 

তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আসমানের দিকে মাথা উত্তোলন করলেন এবং তিনি অনেক সময়ই তাঁর মাথা আসমানের দিকে তুলতেন। এরপর বললেনঃ তারকারাজি আসমানের জন্য নিরাপত্তা (রক্ষাকবচ) স্বরূপ। যখন তারকারাজি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তখন আসমানের জন্য প্রতিশ্রুত বিপদ আসন্ন হবে (অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে)। আর আমি আমার সাহাবীদের জন্য রক্ষাকবচ স্বরূপ। যখন আমি বিদায় নেব তখন আমার সাহাবীদের উপর প্রতিশ্রুত সময় সমুপস্থিত হবে (অর্থাৎ ফিতনা-ফাসাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়ে যাবে)। আর আমার সাহাবীগণ সমগ্র উম্মাতের জন্য নিরাপত্তা (রক্ষাকবচ) স্বরূপ। যখন আমার সাহাবীগণ বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উম্মাতের উপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে (অর্থাৎ শিরক, বিদআত ছড়িয়ে পড়বে, ফিতনা-ফাসা’দ সৃষ্টি হবে, শয়তানের শিং উদয় হবে, নাসারাদের রাজত্ব কায়েম হবে, মক্কা ও মদ্বীনার অবমাননা করা হবে ইত্যাদি)।

পরিচ্ছেদঃ ৫২. সাহাবা, অতঃপর যারা তাদের সন্নিকটে, অতঃপর যারা তাদের সন্নিকটে (অর্থাৎ তাবিঈ ও তাবে তাবিঈগনের) ফযীলত


৬২৩৭.    আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব ও আহমাদ ইবনু আবদা আদ-দাবিয়্যু (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন যুগ আসবে, যখন তাদের একদল জিহাদ করতে থাকবে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন? তারা বলবে, জ্বি হ্যাঁ। তখন তাঁরা বিজয় লাভ করবে। এরপর মানুষের মধ্য থেকে একদল যুদ্ধ করতে থাকবে। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন ব্যক্তি আছেন, যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণকে দেখেছো? তারা বলবে, জি হ্যাঁ। তখন তারা বিজয় লাভ করবে। এরপর মানুষের আরেকটি দল জিহাদ করতে থাকবে। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে।, যিনি সাহাবীদের সাহচর্য লাভকারী অর্থাৎ তাবিঈকে দেখেছেন? তখন লোকেরা বলবে, জি হ্যাঁ। তখন বিজয় তাদের মুঠোয় এসে যাবে। এরপর আরেকদল যুদ্ধরত থাকবে। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যারা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচর্য লাভকারীদের (তাবিঈনের সাহচর্য লাভকারী অর্থাৎ তাবি-তাবিঈকে) দেখেছেন? লোকেরা বলবে, জি হ্যাঁ। তখন তাঁদের হাতেই বিজয় দেয়া হবে।
৬২৩৮.    সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ উমাবী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মনে করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন যুগ আসবে, যখন তাদের মধ্য থেকে কোন যোদ্ধা দল প্রেরণ করা হবে। এরপর লোকেরা বলাবলি করবে, খুঁজে দেখ, তোমাদের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের কাউকে পাও কি না। তখন একজন সাহাবী পাওয়া যাবে। এরপর তাঁর বদৌলতে তাদের বিজয় অর্জিত হবে। 

এরপর দ্বিতীয় সেনাদল পাঠানো হবে। তখন লোকেরা বলবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন ব্যক্তি আছেন, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের দেখেছেন? [তখন একজন (তাবিঈ) কে পাওয়া যাবে] তখন এর বদৌলতে তাদের বিজয় অর্জিত হবে। 

এরপর তৃতীয় সেনাদল পাঠানো হবে। তখন জিজ্ঞাসা করা হবে, অনুসন্ধান করে দেখ, এদের মধ্যে তাদের কাউকে দেখতে পাও কি না, যারা এমন কাউকে দেখেছেন যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের দেখেছেন (অর্থাৎ তাবিঈ)। 

এরপর চতুর্থ সেনাদল পাঠানো হবে। তখন বলা হবে দেখ, তোমরা এদের মধ্যে এমন কাউকে পাও কি-না, যারা এমন কাউকে দেখেছেন, যিনি এমন কাউকে দেখেছেন, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের দেখেছেন অর্থাৎ কোন তাবে-তাবিঈকে দেখেছ? তখন (এমন) এক ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে। এরপর তার বদৌলতে তাদের বিজয় অর্জিত হবে।
৬২৩৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও হান্নাদ ইবনু সাররী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগের সংযুক্ত (অর্থাৎ সাহাবীগন), এরপর তাদের নিকটবর্তী সন্নিহিত যুগ (অর্থাৎ তাবিঈগন), এরপর তাদের সন্নিহিত যুগ (অর্থাৎ তাবে-তাবেঈন)। এরপর এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে যারা কসমের আগে সাক্ষ্য দেবে এবং সাক্ষ্যের আগে কসম করবে। 

আর হান্নাদ তাঁর হাদিসে لْقَرْن (অর্থাৎ যুগ বা সময়) শব্দটি উল্লেখ করেননি এবং কুতায়বা বলেছেন ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ অর্থাৎ অনেক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে।
৬২৪০.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল-হানযালী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ কারা? তিনি বললেন, আমার যুগ। এরপর তাদের নিকটবর্তী যুগ, এরপর তাদের নিকটবর্তী যুগ। এরপর এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে, যাদের কসম সাক্ষ্যের আগেই ত্বরান্বিত হবে এবং সাক্ষ্য কসমের আগেই সংঘটিত হবে। ইবরাহীম বলেছেন, আমাদের শৈশবে তারা (মুরুব্বিগণ) আমাদের কথায় কথায় সাক্ষ্যদান থেকে নিষেধ করতেন।
৬২৪১.    মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূল আহওয়াস ও জারীর (রহঃ) এর সনদে মানসুর (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে তাদের দুই জনের হাদিসেঃ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسل “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল” এটার উল্লেখ নেই।
৬২৪২.    হাসান ইবনু আলী আল-হুলওয়ানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ আমার যুগ (অর্থাৎ সাহাবীগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবীঈগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবে-তাবেঈগন)। এরপর তিনি বলেন, আমি সঠিক জানি না তৃতীয় কিংবা চতুর্থটি সম্পর্কে। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তাদের পরবর্তীতে এমন লোক আসবে, যাদের কেউ কেউ কসমের আগে সাক্ষ্য দেবে এবং সাক্ষ্যের আগে কসম করবে।
৬২৪৩.    ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা চাল মানুষ তারা, যাদের মধ্যে আমি প্রেরিত হয়েছি (অর্থাৎ সাহাবীগণ)। এরপর তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন (অর্থাৎ তাবীঈগণ)। আর আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত যে, এরপর তিনি তৃতীয়টি উল্লেখ করেছেন কি করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর এমন এক জাতির উদ্ভব হবে, যারা মোটাতাজা হওয়া (বিলাসিতাপূর্ণ) পানাহার ও জীবন যাপন পছন্দ করবে এবং সাক্ষ্য চাওয়ার পূর্বেই সাক্ষ্য দান করবে।
৬২৪৪.    ভিন্ন ভিন্ন সনদে মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) এজাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... আবূ বিশর (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে শু’বা বর্ণিত হাদিসে এতটুকু পার্থক্য রয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি জানি না যে, তিনি দু’বার কিংবা তিনবার বলেছেন।
৬২৪৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম আমার যুগের লোকেরা। এরপর তারা যারা তাদের সন্নিহিত। এরপর যারা তাদের সন্নিহিত যুগ। এরপর তারা যারা তাদের সন্নিহিত যুগ। ইমরান (রাঃ) বলেন, আমি জানি না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর যুগের পর দু’বার না কি তিনবার উল্লেখ করেছেন। এরপর তাদের পরবর্তী এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। আর তারা খিয়ানত করবে এবং তাদের আমানতদার মনে করা হবে না। তারা মানত করবে অথচ তা পুরন করবে না। আর তাদের মধ্যে স্থুলতা (বিলাসিতা) প্রকাশ পাবে।
৬২৪৬.    ভিন্ন ভিন্ন সনদে মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু বিশর আবদী (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... শু’বা (রাঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত। আর তাদের (অর্থাৎ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, বাহয ও শাবাবাহ) বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেছেনঃ “আমি জানি না যে, তিনি কি তাঁর যুগের পরে দু’যুগ অথবা তিন যুগের কথা উল্লেখ করেছেন? শাবাবাহ বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেছেন, আমি যাহদাম ইবনু মুদাররাব থেকে শুনেছি, তিনি আমার কাছে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে কোন প্রয়োজনে এসেছিলেন। এরপর তিনি আমাকে হাদিস শোনান যে, তিনি ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে শুনেছেন। আর ইয়াহহিয়া ও বাহয বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছেঃ يَنْذُرُونَ وَلاَ يَفُونَ তারা মানত করবে কিন্তু তা পুরন করবে না। আর বাহয বর্ণিত হাদিসে ইবনু জাফর এর বর্ণনা অনুযায়ী يُوفُونَ শব্দ আছে।
৬২৪৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদিসটি বর্ণিত। এই বর্ণনায় আছে, এই উম্মাতের সর্বাপেক্ষা উত্তম হচ্ছে সে যুগ, যাদের মধ্যে আমি প্রেরিত হয়ছি (অর্থাৎ সাহাবীগণ) এরপর তারা যারা এদের সন্নিহিত। আবূ আওয়ানা বর্ণিত হাদিসে অধিক আছে যে, তিনি বলেন, আল্লাহই ভালো জানেন, তিনি তৃতীয়টি উল্লেখ করেছেন কি না? ইমরান (রহঃ) থেকে যাহদাম (রহঃ) বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। কাতাদা (রহঃ) এর সুত্রে হিশাম বর্ণিত হাদিসে এতটুকু বেশি আছে যে, يَحْلِفُونَ وَلاَ يُسْتَحْلَفُونَ অর্থাৎ "তারা হলফ করবে অথচ তাদের কাছে হলফ চাওয়া হবে না।"
৬২৪৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও শুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ কে? তিনি বললেনঃ সেই যুগ, যাতে আমি প্রেরিত হয়েছি। এরপর দ্বিতীয় (যুগ), এরপর তৃতীয় (যুগ)।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩. নবী (ﷺ) এর বানীঃ একশ' বছরের মাথায় বর্তমান কোন ব্যক্তি ভূপৃষ্ঠে জীবিত থাকবে না


৬২৪৯.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ প্রান্তে একরাতে আমাদের সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করলেন। তিনি সালাম শেষে দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা এই রাত সম্পর্কে লক্ষ্য করেছ? (শোন) এর একশ বছরের মাথায়, আজ যারা পৃথিবীর পৃষ্ঠে বিদ্যমান আছে তাদের কেউ জীবিত থাকবে না। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তখন লোকেরা একশ বছর সংক্রান্ত এই সব হাদিসের বর্ণনায় ভ্রান্তিতে পড়ে গেল। মুলতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আজ যারা পৃথিবী পৃষ্ঠে বর্তমান আছে তাদের কেউ বাকী থাকবে না” দ্বারা এই যুগের পরিসমাপ্তির কথা বুঝাতে চেয়েছেন।
৬২৫০.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রাঃ) ... থেকে যুহুরী (রহঃ) থেকে মা’মার (রহঃ) তাঁর সনদে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
৬২৫১.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শা'ইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ইন্তেকালের এক মাস পুর্বে বলতে শুনেছি যে, তোমরা আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ, অথচ তার জ্ঞান তো আল্লাহরই কাছে। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণবন্ত জীব নেই, যার উপর একশ বছর পূর্ণ হবে। 

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জের সুত্রে এই সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি "তার ওফাতের এক মাস পূর্বে" কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬২৫২.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর ইন্তেকালের একমাস পূর্বে বা অনুরূপ সময়ে বলেছেন যে, যেসব প্রানীধারী আজ জীবিত আছে, তাদের উপর একশ বছর অতিবাহিত হতেই তারাও সেদিন জীবিত থাকবে না। ‘সিকায়া’ গ্রন্থাকার আবদুর রহমান (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত। আবদুর-রহমান (রহঃ) "আয়ু হ্রাস" পাবে বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
৬২৫৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সুলায়মান তাইমী (রহঃ) সুত্রে দুই সনদে তাঁর অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৬২৫৪.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) অন্য সুত্রে আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক অভিযান থেকে ফিরে এলে লোকেরা তাঁকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একশ বছর অতিক্রান্ত হলে এখনকার কোন ব্যক্তি জীবিত থাকবে না।
৬২৫৫.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জীবন (ব্যক্তি) শতবর্ষ পর্যন্ত পৌছবে না। তখন সালিম (রহঃ) বললেন, আমরা বিষয়টি তাঁর (জাবির) নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, এই কথা দ্বারা আজকের সৃষ্ট সকল প্রানধারীকে বুঝানো হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪. সাহাবী (রাঃ)-গণকে গালমন্দ করা হারাম


৬২৫৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল আ'লা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করবে না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের কারোর এক মুদ অথবা অর্ধ মুদ্দের সমান হবে না।
৬২৫৭.    উসমান ইবন আবু শায়বা (রহঃ) ... আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার খালিদ ইবন ওয়ালীদ ও আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর মধ্যে (অপ্রীতিকর) কিছু একটা ঘটেলছিল। তখন খালিদ (রাঃ) তাকে গালি দেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গালি দিবে না। কেননা, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদের সমান হবে না।
৬২৫৮.    আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... অন্য সূত্রে উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায (রহঃ) আরেক সূত্রে ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে জারীর ও আবূ মুয়াবিয়ার সনদে তাঁদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে শু’বা ও ওয়াকী এর হাদীসে আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) ও খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) এর উল্লেখ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫. উওয়াস করনী (রহঃ) এর ফযীলত


৬২৫৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুফার একটি প্রতিনিধি দল উমর (রাঃ) এর কাছে এলো। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও ছিল, যে উওয়াস (রহঃ) কে উপহাস করত। তখন উমর (রাঃ) বললেন, এখানে করনী গোত্রের কোন লোক আছে কি? তখন সেই লোকটি এলো। এরপর উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে ইয়ামন থেকে এক ব্যক্তি আসবে, যে উওয়াস নামে পরিচিত। ইয়ামানে তাঁর মা ব্যতীত কেউ থাকবে না। তার শ্বেতরোগ হয়েছিল। সে আল্লাহর কাছে দুআ করার বদৌলতে আল্লাহ তাকে শ্বেত রোগ মুক্ত করে দেন। তবে কেবল মাত্র এক দ্বীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী থাকে। তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর সাক্ষাৎ পায় সে যেন নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনা করে।
৬২৬০.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে উওয়াস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছে এবং তার শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দুআ করে।
৬২৬১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর অভ্যাস ছিল, যখন ইয়ামনের কোন সাহায্যকারী দল তার কাছে আসত তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মধ্যে কি উওয়াস ইবনু আমির আছে? অবশেষে তিনি উওয়াসকে পান। তখন তিনি বললেন, তুমি কি উওয়াস ইবনু আমির? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, মুরাদ গোত্রের কারান বংশের? বললেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি শ্বেত রোগ ছিল এবং তা নিরাময় হয়েছে, কেবলমাত্র এক দিরহাম স্থান ব্যতীত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা কি আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। 

তখন উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ “তোমাদের কাছে মুরাদ গোত্রের কারান বংশের উওয়াস ইবনু আমির ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে আসবে। তাঁর ছিল শ্বেত রোগ। পরে তা নিরাময় হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র এক দিরহাম ব্যতিরেকে। তার মা রয়েছেন। সে তাঁর প্রতি অতি সেবাপরায়ন। এমন ব্যক্তি আল্লাহর উপর কসম করে নিলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। কাজেই যদি তুমি তোমার জন্য তার কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনার সুযোগ পাও তাহলে তা করবে।” সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দুআ করুন। 

তখন উওয়াস (রহঃ) তার মাগফিরাতের জন্য দুআ করলেন। এরপর উমার (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কোথায় যেতে চাও? তিনি বললেন, কুফা এলাকায়। উমার (রাঃ) বললেন, আমি কি তোমার জন্য কুফার গভর্ণরের কাছে চিঠি লিখে দেব? তিনি বললেন, আমি অখ্যাত গরীব লোকদের মধ্যে থাকাই পছন্দ করি। 

বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছরে তাদের অতিজাত লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাজ্জ করতে এলো এবং উমার (রাঃ) এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি তাকে উওয়াস কারানী (রহঃ) এর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমি তাঁকে জীর্ণ ঘরে সম্পদহীন অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কাছে কারান বংশের মুরাদ গোত্রের উওয়াস ইবনু আমির (রহঃ) ইয়ামানের সাহায্যকারীর সেনাদলের সঙ্গে আসবে। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে তা থেকে আরোগ্য লাভ করে, এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ব্যতীত। তাঁর মা রয়েছেন, সে তার অতি সেবাপরায়ণ। যদি সে আল্লাহর নামে কসম খায় তবে আল্লাহ তা’আলা তা পূর্ণ করে দেন। তোমরা নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ চাওয়ার সুযোগ পেলে তা করবে। 

পরে অভিজাত সে ব্যক্তি উওয়াস (রহঃ) এর কাছে এল এবং বলল, আমার জন্য মাগফিরাত এর দুআ করুন। তিনি বললেন, আপনি তো নেক সফর (হজ্জের সফর) থেকে সদ্য আগত। সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দুআ করুন। সে ব্যক্তি বলল আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের এর দুআ করুন। উওয়াস (রহঃ) বললেন, আপনি সদ্য নেক সফর থেকে এসেছেন আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের এর দুআ করুন। 

এরপর তিনি বললেন। আপনি কি উমর (রাঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন? সে বললঃ হ্যাঁ। তখন তিনি তার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করলেন। তখন লোকেরা তার (মর্যাদা) সম্পর্কে অবহিত হল। তারপর তিনি যেদিকে মুখ সেদিকে চললেন (অর্থাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন)। উসাইর (রহঃ) বলেন, আমি তাকে একখানি ডোরাদার চাদর দিয়েছিলাম। এরপর যখন কোন ব্যক্তি তাকে দেখত তখন বলত, উওয়াসার এই চাদরখানি কোথায় গেল?

পরিচ্ছেদঃ ৫৬. মিসরবাসীদের ব্যাপারে নবী (ﷺ) এর ওসীয়্যত


৬২৬২.    আবু তাহির ও হারুন ইবন সাঈদ আইলী (রহঃ) ... আবু যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই তোমরা এমন একটি দেশ জয় করবে, যেখানে কীরাতের প্রচলন রয়েছে। তোমরা সেখানকার অধিবাসীদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। কেননা (তোমাদের উপর) তাদের প্রতি রয়েছে যিম্মাদারী দায়বোধ এবং আত্মীয়তা। যদি তোমরা সেখানে দু’ ব্যক্তিকে একখানি ইটের জায়গার ব্যপারে ঝগড়া করতে দেখ তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়বে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি (আবু যার) সুরাহবীল ইবন হাসানার দুই পুত্র রাবী’আ ও আবদুর রহমানের নিকট দিয়ে যাবার সময় একটি ইটের জায়গা নিয়ে ঝগড়া করতে দেখলেন। তখন তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
৬২৬৩.    যুহায়র ইবন হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবন সাঈদ (রহঃ) ... আবু যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই তোমরা মিসর জয় করবে। সেটা এমন একটি দেশ, যেখানে ‘কীরাত’ নামের মুদ্রা প্রচলিত। যখন তোমরা সেই দেশ জয় করবে তখন সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে সদাচারন করবে। কেননা তাদের জন্য রয়েছে দায়িত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক। অথবা তিনি বলেছেনঃ যিম্মাদারী ও দাম্পত্য সম্পর্কে রয়েছে। যখন তোমরা সেখানে দু’ব্যক্তিকে একখানি ইটের জায়গা নিয়ে ঝগড়া করতে দেখবে তখন সেখান থেকে সরে পড়বে। 

রাবী আবু যার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি যখন আবদুর রহমান ইবন শুরাহবীল ইবন হাসান ও তার ভাই রাবী’আকে একখানি ইটের জায়গা নিয়ে ঝগড়া করতে দেখলাম তখন আমি সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

পরিচ্ছেদঃ ৫৭. উমানের অধিবাসীগনের ফযীলত


৬২৬৪.    সাঈদ ইবন মানসুর (রহঃ) ... আবু বারযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কোন এক আরব গোত্রের কাছে পাঠালেন। তারা তাকে গালি গালাজ ও মারপিট করল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাকে ঘটনা অবহিত করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তুমি উমানের অধিবাসীদের কাছে যেতে তাহলে তারা তোমাকে গালি দিত না এবং প্রহারও করত না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৮. ছাকীফ গোত্রের মিথ্যাবাদী ও দুর্ধর্ষ খুনীর বর্ণনা


৬২৬৫.    উকবা ইব্‌ন মুক্‌রাম আল-আম্মী (রহঃ) ... আবূ নাওফাল (রহঃ) বলেন যে, আমি (মক্কায়) আকাবাতুল মদীনা নামক ঘাঁটিতে আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) কে (শুলীকাষ্ঠে ঝুলতে) দেখতে পেলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তখন কুরায়শী ও অন্যান্য লোকজন তাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তাঁর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় থামলেন এবং বললেন, আসসালামু আলায়কা ইয়া আবু খুবায়ব, আসসালামু আলায়কা ইয়া আবু খুবায়ব, আসসালামু আলায়কা ইয়া আবু খুবায়ব। আল্লাহ্‌র কসম ! আমি অবশ্য আপনাকে এ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম, আমি অবশ্য আপনাকে এ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম, আমি অবশ্য আপনাকে এ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। 

আল্লাহ্‌র কসম ! আমি যতদূর জানি আপনি ছিলেন অত্যধিক (নফল) সিয়াম পালনকারী, অত্যধিক সালাত আদায়কারী এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অধিক রক্ষাকারী। আল্লাহ্‌র কসম, যে উম্মতের আপনি নিকৃষ্ট ব্যক্তি (যদি তা-ই বাস্তব হয়) তবে সে উম্মতে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ উম্মত। এরপর আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) সেখান থেকে চলে গেলেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) এর এই অবস্থান (থামা) ও তাঁর বক্তব্য হাজ্জাজ্জের কানে পৌঁছল। তখন সে আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়রের কাছে লোক পাঠাল এবং তাঁকে শূলীর উপর থেকে নামানো হল। 

এরপর ইয়াহুদীদের কবরস্থানে তাঁকে নিক্ষেপ করা হোল। এরপর সে তাঁর মা আসমা বিন্‌ত আবূ বকর (রাঃ) কে ডেকে পাঠাল। তিনি তাঁর কাছে আসতে অস্বীকার করলেন। হাজ্জাজ পুনরায় তাঁর কাছে লোক পাঠাল, তাঁকে তাঁর কাছে আসার জন্য এই বলে যে, তোমাকে অবশ্যই আসতে হবে। অন্যথায় তোমার কাছে এমন লোক পাঠাবো যে তোমাকে তোমার চুলের বেণী ধরে টেনে আনবে। বর্ণনাকারী বললেন, এরপরও তিনি অস্বীকার করলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র কসম ! আমি সে পর্যন্ত তোমার কাছে আসব না যতক্ষণ না তুমি আমার কাছে এমন লোক পাঠাবে, যে আমার চুলের বেণী ধরে টেনে নিয়ে যাবে। 

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর হাজ্জাজ বলল, আমার জুতা মোজা আন। তারপর সে জুতা পরিধান করলো এবং দ্রুতগতিতে আসমা বিন্‌ত আবু বকর (রাঃ) এর কাছে পৌঁছল এবং সে বলল, তুমি তো দেখলে আল্লাহ্‌র দুশমন (তোমার পুত্র ইব্‌ন যুবায়র) এর সঙ্গে আমি কী আচরণ করেছি। তিনি বললেন, “হ্যাঁ আমি তোকে দেখছি, তুই তাঁর দুনিয়া নষ্ট করে দিয়েছিস। আর সে তোর আখিরাত বরবাদ করে দিয়েছে। আমি জানতে পেরেছি যে, তুই তাঁকে (তিরস্কার সরূপ) দুই কোমরবন্দ পরিহিতার পুত্র বলে সম্বোধন করে থাকিস। আল্লাহ্‌র কসম ! আমিই দুই কোমরবন্দ পরিহিতা। 

এর একটির মধ্যে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আবু বক্‌র (রাঃ) এর আহার্য সামগ্রী বেঁধে তুলে রাখতাম, বাহনের পশু থেকে। আরেকটি হল যা স্ত্রীলোকের জন্য অপরিহার্য। জেনে রাখ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছে যে, সাকীফ গোত্রে এক মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটবে এবং এক রক্ত প্রবাহকারী (খুনীর)। মিথ্যুককে তো আমরা সবাই দেখেছি, আমি রক্ত প্রবাহকারী তোকে ছাড়া আর কাউকে মনে করছি না” একথা শুনে সে (হাজ্জাজ) উঠে দাঁড়াল এবং তাঁর [আসমা (রাঃ) এর] কথার কোন প্রতি উত্তর করল না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৯. পারস্যবাসীর ফযীলত


৬২৬৬.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যদি দ্বীন (আসমানের দূরবর্তী) ছুরায়য়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত, তাহলেও পারস্যের কিছুলোক; অথবা তিনি বলেছেন, পারস্যের সন্তানরা তা নিয়ে এসে (তা) আত্মস্থ করত।
৬২৬৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তার উপর সূরা জুমু'আ নাযিল হল। যখন তিনি এই আয়াত পড়লেন وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ‏ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরা কারা? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন উত্তর দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু'বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করল। 

রাবী বলেন তখন আমাদের মধ্যে সালমাল ফারসী (রাঃ) ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত সালমান (রাঃ) এর উপর রাখলেন; এরপর বললেন, যদি ঈমান ছুরায়য়া তারকার কাছে (অর্থাৎ বহু দুরে) থাকত তাহলে অবশ্যই এদের লোকেরা তা আরোহণ করত।

পরিচ্ছেদঃ ৬০. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীঃ মানুষ সেই একশ উটের মত, যার মধ্যে সাওয়ারীর উপযুক্ত একটিও (হয়ত) তুমি পাবে না


৬২৬৮.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লোকদের পাবে সেরূপ একশ উটের মত, যার মধ্যে মানুষ ভার বহনকারী একটি (উট)-ও পায় না।

No comments:

Powered by Blogger.