Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৫ম খন্ড। অধ্যায়: বিবাহ - ২য়




পরিচ্ছেদঃ ১১. শাওয়াল মাসে বিবাহ করা বা বিবাহ দেওয়া মুস্তাহাব এবং এই মাসে স্ত্রীর সহিত মিলনও মুস্তাহাব


৩৩৫২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবন হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাওয়াল মাসে বিবাহ করেন এবং শাওয়াল মাসে আমার সহিত প্রথম মিলিত হন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন স্ত্রী তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিক ভাগ্যবান ছিলেন? আয়িশা (রাঃ) তার বংশের মেয়েদের শাওয়াল মাসে বাসর ঘরে পাঠানো উত্তম মনে করতেন।
৩৩৫৩.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সূত্রে আয়িশা (রাঃ) এর কর্মপন্থা উল্লেখিত হয় নি।

পরিচ্ছেদঃ ১২. কোন মহিলাকে বিবাহ করতে চাইলে বিবাহের পূর্বে তার মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় এক নজর দেখে নেয়া উত্তম


৩৩৫৪.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তার নিকট এসে তাকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি তাকে একবার দেখেছ? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ যাও! তুমি তাকে এক নযর দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছুটা ক্রটি আছে।
৩৩৫৫.    ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলল, আমি জনৈকা আনসারী মহিলা বিবাহ করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি দেখে নিয়েছিলে? কেননা আনসারদের চোখে ক্রটি থাকে। লোকটি বললো, আমি তাকে দেখে নিয়েছি। তিনি বললেন, কি পরিমাণ বিনিময়ে তুমি তাকে বিবাহ করেছ? লোকটি বললো, চার উকিয়ার বিনিময়ে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, চার উকিয়ার বিনিময়ে? মনে হয় তোমরা পাহাড়ের পার্শ্বদেশ থেকে রৌপ্য তুলে এনে থাক। আমাদের নিকট এমন কিছু নেই যা দিয়ে তোমাকে দান করতে পারি। তবে আমি তোমাকে শীঘ্রই একটি ষূদ্ধাভিযানে পাঠিয়ে দিচ্ছি যার লব্ধ গনীমাত থেকে তুমি একাংশ লাভ করতে পারবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি বনু আব্‌সের বিরুদ্ধে একটি অভিযান দল প্রেরণ করেন যার সাথে তিনি ঐ লোকটিকে পাঠিয়ে দেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. মাহর প্রসঙ্গ- কুরআন শিক্ষা দেওয়া, লোহার আংটি ইত্যাদি বস্তু কম বা বেশি মাহর হতে পারে এবং যার জন্য কষ্টকর না হয়, তার জন্য পাঁচশত দিরহাম মাহর দেওয়া মুস্তাহাব


৩৩৫৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ আস-সাকাফী (রহঃ) ইয়াকুব ও ইবনু আবু হাযিম থেকে ... সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) বলেন, জনৈকা মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি নিজকে আপনার জন্য হেবা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে লক্ষ্য করলেন এবং দৃষ্টি উপরের দিকে উঠিয়ে নিচে নামালেন। তারপর তিনি তাঁর মাথা নিচু করলেন। মাহিলা যখন বুঝতে পারল যে, তার সম্বন্ধে কোন সিদ্ধাতে পৌছেন নি, তখন সে বসে পড়ল। তারপর জনৈক সাহাবী দাঁড়িয়ে আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আপনার প্রয়োজন না হয় তাহলে তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সাহাবী বললেন, না, আল্লাহর কসম ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি বাড়ী যাও দেখ, কোন কিছু পাও কিনা। 

সাহাবী বাড়ী গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, আমি বাড়ীতে কোন কিছুই পাই নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দেখ, লোহার আংটি হলেও (পাও কিনা)। সাহাবী আবার গেল এবং ফিরে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি লোহার একটি আংটিও পাই নি। তবে আমার এ লুঙ্গীটি আছে। (বর্ণনাকারী) সাহল (রাঃ) বলেন, তার চাঁদরও ছিল না এর অর্ধেক তার জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার লুঙ্গি দ্বারা কি করবে? তা যদি তুমি পর তাহলে স্ত্রীর জন্য সেটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। আর যদি সে তা পরিধান করে তাহলে (তোমার জন্য) সেটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। 

এরপর সে ব্যক্তি অনেকক্ষণ বসার পর উঠে গেলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে ডেকে পাঠালেন। যখন সে এল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কুরআনের কোন অংশ তোমার জানা আছে? উত্তরে সে বললঃ অমুক সূরা, অমুক সূরা আমার জানা আছে। এভাবে তিনি সূরাগুলোর সংখ্যা বলে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি এগুলো মুখস্ত পাঠ করতে পার? সাহাবী বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যাও তোমাকে এসব সূরার কারণে এই মহিলাকে তোমার অধিকারে দিয়ে দিলাম। এ হল ইবনু আবূ হাযিমের বর্ণনা। আর ইয়াকুবের বর্ণনা শব্দের দিকে দিয়ে এর কাছাকাছি।
৩৩৫৭.    খালফ ইবনু হিশাম, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) সূত্রে সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য কেউ কেউ কারও থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। তবে যায়িদার হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যাও, আমি তোমার সাথে একে বিবাহ দিলাম। তুমি তাকে কুরআন শিক্ষা দাও।
৩৩৫৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবাহে মাহর কি পরিমাণ ছিল? তিনি বললেন, তাঁর বিবিগণের মাহরের পরিমাণ ছিল বার উকিয়া ও এক নাশ। তিনি বললেন, তুমি কি জান এক নাশ এর পরিমাণ কতটুকু? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, এক নাশ এর পরিমাণ হল আধা উকিয়া। সুতরাং মোট হল পাঁচ শত দিরহাম। এই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণের মাহর।
৩৩৫৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আবুর রাবী, সুলায়মান ইবনু দাঊদ আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু আঊফ (রাঃ) এর কাপড়ে হলুদ রং দেখে বললেন, এ কি? তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি এক নওয়াত (খেজুরের বীচি) ওযনের সোনার বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দন করুন, তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি বকরী দ্বারা হয়।
৩৩৬০.    মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ গুবারী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এক নওয়াত ওযনের সোনার বিনিময়ে বিবাহ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ‘তুমি ওলীমা কর, যদি তা একটি বকরী দ্বারাও হয়।’
৩৩৬১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও ওয়াকী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এক নওয়াত ওযনের সোনার বিনিময়ে এক মাহিলাকে বিবাহ করেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ‘তুমি ওলীমা কর যদি একটি বকরী দিয়েও হয়।’
৩৩৬২.    মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না, আবু দাউদ থেকে মুহাম্মদ ইবনু রাফি, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ওয়াহব ইবন জারীর থেকে এবং আহমাদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) শায়বা থেকে আর তারা সকলে শুবা সুত্রে হুমায়দ থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে ওয়াহবের হাদীসের রয়েছে, আবদুর রহমান (রাঃ) বললেনঃ আমি এক মহিলাকে বিবাহ করেছি ......।
৩৩৬৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারায় বাসর যাপনের প্রফুল্লতা দেখতে পেলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি এক আনসার মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে কি পরিমাণ মাহর দিয়েছ? আমি বললাম, এ নওয়াত। ইসহাক (রহঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ স্বর্নের।
৩৩৬৪.    ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রহমান (রাঃ) এক নওয়াত ওযনের স্বর্ণের টুকরার বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেন।
৩৩৬৫.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে এতে রয়েছে, তিনি বললেনঃ আবদুর রহমান ইবনু আউফের সন্তানদের একজন বলেছেনঃ স্বর্ণের।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. দাসী আযাদ করে তাকে বিবাহ করা ফযীলত

৩৩৬৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধে যান। বর্ণনাকারী বলেন আমরা খায়বারের কাছে অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ তালহা (রাঃ) সাওয়ার হলেন। আমি ছিলাম আবূ তালহা (রাঃ) এর রাদীফ (তাঁর বাহনে তার পশ্চাতে উপবিষ্ট) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের গলি দিয়ে রওনা দিলেন। এ সময় আমার হাটু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উরুদেশ স্পর্শ করছিল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরু থেকে লুঙ্গী সরে যাচ্ছিল। আর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উকর শুভ্রতা দেখছিলাম। যখন তিনি বসতীতে প্রবেশ করলেন তখন বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। বস্তুত আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের অঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্ককৃতদের প্রভাত হয় কত মন্দা’ একথা তিনি তিনবার বলেন। 

বর্ণনাকারী বলেন ঐ সময় লোকজন তাদের কাজে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো, আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ। বর্ণনাকারী আবদুল আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন উস্তাদ বলেছেন, পুরা বাহিনী। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বার জয় করলাম, এবং বন্দীদের একত্রিত করা হল। তখন দিহয়া (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কায়েদীদের মধ্যে থেকে আমাকে একজন দাসী প্রদান করুন। তিনি বললেনঃ যাও একজন দাসী নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই কে নিয়ে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া নাবী আল্লাহ! আপনি বনু কুরায়যা ও বনু নযীরের সর্দার হুযাইনের কন্যা সাফিয়্যাকে দিহয়াকে দিয়ে দিয়েছেন? ইনি একমাত্র আপনারই উপযুক্ত হতে পারে। তিনি বললেন, তাকে সাফিয়্যাসহ ডাক। 

তারপর দিহয়া (রাঃ) সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তিনি দিহয়া (রাঃ) কে বললেন, তুমি সাফিয়্যা ব্যতীত কয়েদীদের মধ্য থেকে অন্য কোন দাসী নিয়ে নাও। বর্ণনাকারী বলেন তিনি সাফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন। 

আনাসকে লক্ষ্য করে সাবিত (রাঃ) বললেন, হে আবূ হামযা! তিনি তাঁকে কী মাহর দিলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সত্তাকে মুক্তি দান করেন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে বিবাহ করেন। তারপর তিনি যখন (ফেরার) পথে ছিলেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ) কে তাঁর জন্য প্রস্তুত করেন এবং রাতে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাসর উদযাপনের পর ভোর হলে তিনি ঘোষণা করলেন, যার নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে যেন উপস্থিত হয়। আর তিনি চামড়ার বড় দস্তরখান বিছালেন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে কেউ পানীয়, কেউ খেজুর ও কেউ ঘি নিয়ে হাযির হল। তারপর এসব মিলিয়ে তারা হায়স তৈরী করেন। আর তাই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওলীমা।

৩৩৬৭.    আবূর রাবী যাহরানী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ গুবারী, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু রফি (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সাফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তার আযাদীকে মাহর ধার্য করলেন। অপর এক হাদীসে মু’আয তাঁর পিতা থেকে বর্ননা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যাকে বিবাহ করেন এবং তাঁর আযাদীকে মাহর ধার্য করেন।’
৩৩৬৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে তার দাসী আযাদ করে তাকে বিয়ে করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব।
৩৩৬৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধে আমি আবূ তালহা (রাঃ) এর পিছনে সাওয়ার ছিলাম। আমার পা তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কদম মুবারক স্পর্শ করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সূর্যোদয়ের সময় খায়বারবাসীদের নিকট পৌঁছলাম। তারা তখন চতুষ্পদ জন্তু, কোদাল, বস্তা ও রশি নিয়ে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো মুহাম্মদ তাঁর পঞ্চবাহিনী (পূর্ণ বাহিনী) নিয়ে এসে গেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খায়বার ধ্বংস হোক, আমরা যখন কোন শক্র দলের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃত লোকদের প্রভাত হয় মন্দ। বর্ণনাকারী বলেন, (ঐ অভিযানে) আল্লাহ তাদের পরাজিত করেছেন। দিহয়া (রাঃ) এর ভাগে পড়ে সুন্দরী দাসী। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতজন দাসের বিনিময়ে সে দাসীকে খরীদ করে নেন। 

অতঃপর তাকে উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর হাওয়ালা করেন যাতে তিনি তাঁকে ঠিকঠাক করে প্রস্তুত করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাবী একথাও বলেছেন, সে যেন তাঁর ঘরে ইদ্দত পুর্ণ করে। তিনি ছিলেন হুয়াইর কন্যা সাফিয়্যা। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর, পানীয় ও ঘি দিয়ে তার ওলীমা করলেন। এ উদ্দেশ্যে যমীনের কিছু অংশ গর্ত আকারের করে তাতে চামড়ার বড় দস্তরখান বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতেই পানীয় ও ঘি রাখা হয়। সকলেই তা তৃপ্তির সাথে আহার করলেন। 

বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বলতে লাগলঃ আমরা জানি না, তিনি তাকে বিবাহ করলেন, না উম্মু ওলাদ (দাসী) রূপে গ্রহণ করলেন। আবার কয়েকজন বলতে লাগল, যদি তিনি তার পর্দার ব্যবস্থা না করেন তবে তার উম্মু ওলাদ। তিনি যখন বাহনে সাওয়ার হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তার জন্য পর্দার ব্যবস্থা করলেন। এরপর সাফিয়্যা (রাঃ) উটের পিছনের দিকে বসলেন। তখন লোকেরা জানতে পারল যে, তিনি তাঁকে বিবাহ করেছেন। 

সাহাবীগণ যখন মদিনার নিকটবর্তী হলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দ্রুত অগ্রসর হতে থাকলেন এবং আমরাও দ্রুত চললাম। তখন নাবীজীর আসবাব উটনীটি হোঁচট খেয়ে যমীনে পড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমীনে পড়ে যান এবং সাফিয়্যা (রাঃ)ও পড়ে যান। তিনি দাঁড়িয়ে সাফিয়্যা (রাঃ)-কে পর্দার দ্বারা আবৃত করে দেন। এ দেখে কতিপয় মহিলা বলতে লাগল, ইয়াহুদী মাহিলাকে আল্লাহ তার রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। 

বর্ণনাকারী বলেন আমি বললাম, হে আবূ হামযা! সত্যই কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনী থেকে যমীনে পড়ে গিয়েছিলেন? তিনি শপথ করে বললেন, হ্যাঁ। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নিজে যায়নাব (রাঃ) এর ওলীমা অনুষ্ঠানে ছিলাম। সে অনুষ্ঠানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের তৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত আহার করিয়ে ছিলেন। সেই ওলীমার দাওয়াত দেওয়ার জন্য তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন ওলীমার কাজ শেষ করে উঠলেন আমিও তাঁর পিছনে চললাম। তখনও দুজন লোক ঘরে কথা বার্তায় ব্যস্ত রইল, তারা বের হলেন না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের নিকট গেলেন এবং প্রত্যেককেই আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গৃহবাসী! তোমরা কেমন আছ? উত্তরে প্রত্যেকেই বলেন, ‘আমরা ভাল আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কেমন আছেন? উত্তরে প্রত্যেকেই বলেন, আপনি আপনার নব পরিনীতাকে কেমন পেয়েছেন? বললেন, ভালই। 

তিনি যখন এ কাজ শেষ করে ফিরে এলেন আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। যখন তিনি দরজার কাছে এলেন দেখলেন যে, সে দু'জন আলোচনায় রত আছে। তারা তাঁকে ফিরে যেতে দেখে উঠে চলে গেল। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার মনে নেই, ঘর থেকে ঐ দু’জন লোকের বের হয়ে যাওয়ার কথা আমি তাঁকে জানিয়ে ছিলাম, না এ ব্যাপারে তার উপর ওহী নাযিল হয়েছিল। তিনি আবার ফিরে এলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। যখন দরযার চৌকাঠে পা রাখলেন তখন তিনি আমার ও তাঁর মাঝে পর্দা টেনে দিলেন, আর আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ন করেনঃ ‘তোমরা নাবীর ঘরে তার বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবে না।’
৩৩৭০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম ইবনু হায়্যান (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাফিয়্যা (রাঃ) দিহয়া (রাঃ) এর ভাগে পড়েন। লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁর প্রশংসা করে বলতে লাগলো, আমরা কয়েদীদের মধ্যে তাঁর কোন জুড়ি দেখি নি। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তিনি দিহয়াকে ডেকে পাঠালেন এবং সাফিয়্যার বদলে তাকে যা তিনি চাইলে তা দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি সাফিয়্যাকে আমার মায়ের হাওয়ালা করলেন এবং বললেন, তুমি তাকে (সাজিয়ে) ঠিকঠাক করে দাও। 

আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার থেকে বের হয়ে পড়লেন। খায়বার পিছনে ছেড়ে আসার পর তিনি একজায়গায় যাত্রা বিরতি দিলেন। তারপর সাফিয়্যার উপর একটি তাঁবু খাটিয়ে দিলেন। ভোরে উঠে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার কাছে উদ্বৃত্ত খাদ্য আছে সে যেন তা আমার কাছে নিয়ে আসে। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকজন তাদের উদ্বৃত্ত খেজুর এবং উদ্ধুত্ত ছাতু আনতে লাগল। এমনকি এগুলোর একটি স্তুপ পরিমাণ জমা করে হায়স তৈরী করল তারপর সকলে হায়স থেকে খেতে লাগল এবং বৃষ্টির পানির হাউয থেকে তারা পানি পান করতে লাগল। বর্ণনাকারী (সাবিত) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেন, তাই ছিল সাফিয়্যা (রাঃ)-এর ওলীমা।

তিনি বলেন, তারপর আমরা এরপর রওনা দিলাম এবং যখন মদিনার প্রাচীরগুলো দেখতে পেলাম তখন মদিনার জন্য আমাদের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। আমরা আমাদের সাওয়ারীগুলোকে দ্রুত চালনা করলাম এবং তিনিও তাঁর সাওয়ারীকে দ্রুত চালালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সাফিয়্যা তার পিছনে তার সাথে সাওয়ার করে গিয়েছিলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উটনী হোঁচট খায়। ফলে তিনি ও সাফিয়্যা পড়ে যান। 

বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা কেউ তাঁর ও সাফিয়্যার দিকে দৃষ্টিপাত করেননি। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাকে আবৃত করলেন। তিনি বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা মদিনায় প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপরাপর সহধর্মিনীদের দাসীরা বের হয়ে সাফিয়্যাকে পরস্পর দেখাতে লাগলেন এবং তাঁর মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে আফসোস করতে লাগলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. যায়নাব বিনত জাহশকে বিবাহ করা, পর্দার হুকুম নাযিল হওয়া এবং বিবাহের ওলীমা সাবিত প্রসঙ্গ


৩৩৭১.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যয়নাব (রাঃ) এর ইদ্দত পূর্ণ হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়িদ (রাঃ) কে বললেন, তুমি যয়নাবের নিকট আমার কথা উল্লেখ কর। আনাস (রাঃ) বলেন, যায়িদ (রাঃ) রওনা হলেন এবং তাঁর নিকট গেলেন। তখন তিনি আটার খামির করছিলেন। যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমি যখন তাঁকে দেখলাম তাঁর মর্যাদা আমার অন্তরে এমনভাবে জাগ্রত হল যে, আমি তার প্রতি তাকাতে পারলাম না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে স্মরণ করেছেন। তাই আমি তাঁর দিকে পিঠ ফিরে দাঁড়ালাম এবং পিছনের দিকে সরে পড়লাম। এরপর বললাম, হে যয়নাব! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে স্মরণ করে আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে কিছুই করব না যে পর্যন্ত না আমি আমার রবের কাছ থেকে নির্দেশ লাভ না করি। এরপর তিনি তার সালাতের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। 

এদিকে কুরআন নাযিল হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যয়নাবের বিনা অনুমতিতেই তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা দেখেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যয়নাবের সেই বিবাহ উপলক্ষে) দুপুর বেলায় আমাদের গোশত খাইয়েছেন। খাওয়া দাওয়ার পর লোকেরা বের হয়ে গেল কিন্তু কয়েকজন লোক খাওয়ার পর আলাপে মশগুল থাকল। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পড়লেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি তাঁর বিবিগণের ঘরে ঘরে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সালাম করতে লাগলেন। আর বিবিগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার এ স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মনে নেই, (আলাপরত) সে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার কথা আমিই তাঁকে জানিয়ে ছিলাম না তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তারপর তিনি চললেন এবং সে ঘরে প্রবেশ করলেন আমিও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা টেনে দিলেন। আর পর্দার বিধান নাযিল হল। আনাস (রাঃ) বলেন, লোকদের উপদেশ দেওয়া হল, যে উপদেশ দেওয়ার ছিল। 

ইবনু রাফি তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করতে গিয়ে এ আয়াত উল্লেখ করেনঃ (অর্থ) ‘তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নবীগৃহে প্রবেশ করবে না ...... কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না।
৩৩৭২.    আবূর রাবী যাহরানী, আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন ও কুতায়বা ইবন সাঈদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন মহিলার জন্য- আবূ কামিল বলেন, তাঁর কোন স্ত্রীর জন্য সেরূপ ওলীমা করতে দেখি নি যেমন ওলীমা করেছেন যয়নাবের জন্য। তার জন্য তিনি একটি বকরী যবাই করেছেন।
৩৩৭৩.    মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওযাদ ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়নাব (রাঃ) এর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত অধিক পরিমাণ অথবা উত্তমভাবে ওলীমা করেছিলেন যা তিনি তাঁর সহধার্মিনীদের জন্য কারো জন্য করেননি। সাবিত বুনানী জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কী দিয়ে ওলীমা করেছিলেন? তিনি (আনাস (রাঃ) বললেনঃ সবাইকে তিনি রুটি ও গোশত খাওয়ালেন। এমনকি তারা উদ্বৃত্ত রেখে গেল।
৩৩৭৪.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী, আসিম ইবনু নযর তায়মী এবং মুহাম্মদ ইবনু আবদুর আ'লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) কে বিবাহ করেন তখন তিনি লোকদের দাওয়াত করেন। তারা খাওয়া-দাওয়া করে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন দাঁড়াতে উদ্যত হলেন তবুও তারা উঠল না। এরূপ দেখে তিনি উঠে গেলেন। তারা উঠে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে যারা উঠবার তারা উঠে গেল। 

আসিম ও ইবনু আবদুল আ’লার বর্ননায় অতিরিক্ত রয়েছে, আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তিনজন লোক ঘরে বসে রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করার জন্য এসে দেখতে পান যে, কয়েকজন লোক বসে আছে। এরপর তারাও উঠে চলে গেল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি এসে তাদের চলে যাবার সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি এসে প্রবেশ করলেন। আমিও তার সঙ্গে প্রবেশ করতে অগ্রসর হলাম। এ সময় তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আর আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেনঃ ‘তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে নবীগৃহে প্রবেশ করবে না ... আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা গুরুতর অপরাধ'
৩৩৭৫.    আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি পর্দার হুকুম সংক্রান্ত ঘটনা সম্পর্কে সবার চাইতে বেশী অবগত। এ ব্যাপারে উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনত জাহশের স্বামী হন। তিনি বলেন, তাঁকে বিবাহ করেন মদিনায়া এ উপলক্ষে তিনি দ্বিপ্রহরের সময় খাওয়ার জন্য লোকদের দাওয়াত দেন। লোকজন উঠে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন এবং তারা তার সঙ্গে বসল। লোকদের যারা উঠে যাবার উঠে গেল। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠলেন এবং রওনা হলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে চলতে থাকলাম। তিনি আশিয়া (রাঃ) এর হুজরায় পৌঁছলেন। যখন তিনি ধারণা করলেন যে, তারা (উপবিষ্ট লোকজন) বেরিয়ে গেছে তখন তিনি ফিরে এলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। দেখা গেল তখন তারা তাদের জায়গায় বসা আছে। তখন তিনি ফিরে গেলেন এবং আমি ও তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বার ফিরে গেলাম। তিনি আশিয়া (রাঃ) এর হুজরায় পোঁছলেন। আবার তিনি যয়নাবের ঘরের দিকে ফিরলেন। দেখা গেল লোকেরা চলে গেছে। তখন তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা টেনে দিলেন। আর পর্দার আয়াত অবতীর্ন হয়।
৩৩৭৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যয়নাব বিনত জাহশকে) বিবাহ করেন এবং তাঁর সহধর্মিনীর কাছে গেলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হায়স তৈরী করেছিলেন এবং তা একখানি ছোট পাত্রে রেখে আমাকে বললেন, হে আনাস! ইহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাও এবং তাঁকে বল, ইহা আমার মা আপনার খিদমতে পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে সালাম পৌঁছিয়েছেন। (আরও বলো যে) তিনি বলেছেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে এটা অতি সামান্য। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি হায়স নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ আমাদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য এটা অতি সামান্য 

তিনি বললেন, ইহা রাখ। তারপর বললেনঃ তুমি যাও, অমুক অমুক অমুককে দাওয়াত দাও এবং সেসব লোককেও যাদের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে। এ বলে, তিনি লোকদের নাম বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তখন বর্ণিত লোকদের দাওয়াত দিলাম এবং তাদেরও যাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। সাবিত (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, (আমন্ত্রিত লোকদের) সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, প্রায় তিনশত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আনাস! (হায়সার) পাত্রটি নিয়ে এসো। আনাস (রাঃ) বলেন, দাওয়াত প্রাপ্ত লোকজন আসল। এমনকি ঘর ও চত্তর ভরে গেল। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা দশ দশ জন করে একত্রিত হয়ে প্রত্যেকেই পাত্র থেকে নিজের সামনের স্থান থেকে খাদ্য গ্রহণ কর। আনাস (রাঃ) বললেন, সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হলেন। তিনি বলেন, একদল গেল আরেক দল প্রবেশ করল। এভাবে সকলে খাবার কাজ সেরে নিল। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে আনাস! (হায়সার পাত্র) উঠাও। তিনি বলেন, এরপর আমি পাত্রটি তুলে নিলাম। পাত্রটি রাখার সময় এতে খাদ্য বেশী ছিল কি না সেটি উঠাবার সময় তা আমি বুঝতে পারি নি। আনাস (রাঃ) বলেন, তাদের কিছু লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখানে) বসা ছিলেন এবং তাঁর সহধর্মিনী (যায়নাব) দেয়াল মুখী হয়ে পিছনে ফিরে রইলেন। তাদের উপস্থিতি তার কাছে কষ্টকর মনে হল। 

তারপর তিনি তাঁর অন্যান্য বিবিদের কাছে বেরিয়ে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর তিনি এলেন। তাঁরা যখন দেখল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসেছেন, তারা বুঝতে পারল যে, তাদের অবস্থিতি তাঁর জন্য কষ্টকর হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলন, তখন তারা তাড়াতাড়ি দরযার দিকে এগিয়ে গেল এবং সবাই বেরিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং পর্দা টেনে দিলেন এবং পর্দার ভিতরে প্রবেশ করলেন। আমি ঘরে বসে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি আমার কাছে ফিরে এলেন। তখন এই আয়াত নাযিল হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আয়াত লোকদের কাছে পাঠ করলেনঃ 

(অর্থ) হে মুমিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতের জন্য অপেক্ষা না করে আহার গ্রহণের জন্য নবীর গৃহে প্রবেশ করবে না, তবে তোমাদের আহবান করলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং আহারের পর তোমরা চলে যাবে এবং কথাবার্তায় মশশুল হয়ে পড়বেনা। কারণ তোমাদের এ আচরণ নাবীকে কষ্ট দেয় ...... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। 

রাবী জা'দ (রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, এ সকল আয়াত লোকদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম জেনেছি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণকে পর্দার আড়ালে নেওয়া হল।
৩৩৭৭.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাবকে বিবাহ করলেন তখন উস্মু সুলায়ম (রাঃ) পাথরের একটি পাত্রে তাঁর জন্য হায়স পাঠালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যাও, মুসলিমদের মধ্যে যার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে আমার পক্ষ থেকে দাওয়াত দাও। তারপর যার সাথে সাক্ষাৎ হল আমি তাকে দাওয়াত দিলাম। তারা তাঁর কাছে আসতে শুরু করল এবং খেয়ে চলে যেতে লাগল। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত খাদ্যের উপর রাখলেন এবং তাতে দুআ পড়লেন। এতে আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি যা পাঠ করার তা পড়লেন। 

যারই সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তাকেই দাওয়াত দিতে বাদ দেইনি। সকলেই খেল এবং তৃপ্ত হল। তারা বেরিয়ে গেল কিন্তু তাদের একদল রয়ে গেল। তারা তাঁর সেখানে দীর্ঘালাপে লিপ্ত রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু বলতে লজ্জাবোধ করছিলেন। তাই তিনি নিজেই বেরিয়ে গেলেন এবং তাদের ঘরে রেখে গেলেন। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ (অর্থ) হে মুমিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে আহার্য প্রস্তুতের জন্য অপেক্ষা না করে আহার গ্রহণের জন্য তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করবে না। 

কাতাদা (রহঃ) বলেন, غير ناظرين إناه এর অর্থ তোমরা অ্যহার্য প্রস্তুতির সময়ের যদি অপেক্ষা না কর তবে তোমাদের আহবান করলে তোমরা প্রবেশ করবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হীদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।’ (৩৩ঃ ৫৩)।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দাওয়াতে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ


৩৩৭৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন ঐ দাওয়াতে সাড়া দেয়।
৩৩৭৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না খালিদ থেকে ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন তা কবুল করে। খালিদ (রহঃ) বলেন, উবায়দুল্লাহ (রহঃ) একে বিবাহের ওলীমা বলে গ্রহণ করেছেন।
৩৩৮০.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কাউকে বিবাহের ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তা কবুল করে।
৩৩৮১.    আবূর রাবী ও আবূ কামিল ও কুতায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হলে তাতে সাড়া দিবে।
৩৩৮২.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তার ভাইকে দাওয়াত দেয় সে যেন তার দাওয়াতে সাড়া দেয়, বিবাহনুষ্ঠানই হোক বা সে রকম (অন্য কোন অনুষ্ঠান)।
৩৩৮৩.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কাউকে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে অথবা এ ধরনের অন্য কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন সাড়া দেয়।
৩৩৮৪.    হুমায়দ ইবনু মাস'আদা বাহিলী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যখন তোমাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় তখন তোমরা দাওয়াতে আসবে।’
৩৩৮৫.    হারুন ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দাওয়াতে সাড়া দিবে যখন তোমাদেরকে তার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বিবাহের দাওয়াতে বা বিয়ে ছাড়া অন্য যে কোন দাওয়াতে আসতেন। এমনকি তিনি সায়িম অবস্থায়ও (দাওয়াতে আসতেন)।
৩৩৮৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের বকরীর পায়া খাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন তোমরা তাতে সাড়া দিও।
৩৩৮৭.    মুহাম্মদ ইবনু মাসান্না (রহঃ) ও ইবন আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন দাওয়াতে সাড়া দেয়। তারপর ইচ্ছা করলে আহার করবে, না হয় না করবে। ইবনু মুসান্না (রহঃ) তার বর্ণনায় ‘খাবারের প্রতি' কথাটি উল্লেখ করেন নি।
৩৩৮৮.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৩৩৮৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে সায়িম হয় তাহলে সে (ওখানে গিয়ে) দুঃআ সালাত-রত থাকবে। আর যদি সায়িম না হয় তাহলে সে আহার করবে।
৩৩৯০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, সে ওলীমার খাদ্য কতই না মন্দ যা খাওয়ার জন্য কেবল ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয় আর গরীবদের তা থেকে বঞ্চিত করা হয়। যে ব্যক্তি দাওয়াতে সাড়া দেয় না সে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানী করল।
৩৩৯১.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি যুহরী (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ বকর! এই যে হাদীস 'সব চাইতে মন্দ খাদ্য ধনীদের খাদ্য'--এ সম্পর্কে আপনার কি মত? শুনে তিনি হাসলেন এবং বললেন, না ধনীদের খাদ্য সব চাইতে মন্দ খাদ্য নয়। সুফিয়ান (রহঃ) বললেন, আমার পিতা যেহেতু ধনী লোক ছিলেন এ জন্য এ হাদীস খানি আমাকে ঘাবড়িয়ে তুলেছিল, যখন আমি তা শুনতে পেলাম। তাই আমি এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম যুহরী (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করি। (ইমাম) যুহরী (রহঃ) উত্তর দিলেন, আমার নিকট আবদুল রহমান আরাজ (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, ওলীমার খাদ্য সবচাইতে নিকৃষ্ট খাদ্য। অতঃপর মালিক (রহঃ) এর হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করেন।
৩৩৯২.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিকৃষ্ট খাদ্য হলো ওলীমার খাদ্য। মালিক এর হাদীসের অনুরূপ।
৩৩৯৩.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত।
৩৩৯৪.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিকৃষ্টতম খাদ্য হল ওলীমার খাদ্য যেখানে আগমনকারীদের বাধা দেওয়া হয়। আর অনিচ্ছুকদের দাওয়াত দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি দাওয়াতে সাড়া দেয় না সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানী করল।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তালাকদাতার জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে তাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিবাহ করে এবং সে তার সাথে সহবাস করে এবং তারপর তাকে তালাক দেয় এবং তার ইদ্দিত শেষ হয়


৩৩৯৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থোকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রিফা'আ এর স্ত্রী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমি রিফা'আর নিকট ছিলাম। সে আমাকে তালাক দিয়েছে চুড়ান্ত তালাক। তারপর আমি আবদুর রহমান ইবনু যুবায়রকে বিবাহ করি। তার কাছে রয়েছে কাপড়ের ঝাললের মত। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি হাসলেন এবং বললেন, তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, (তা হয় না) যে পর্যন্ত না তুমি তার রসস্বাদন করবে এবং সে তোমার রসাস্বাদন করবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন তাঁর কাছে এবং খালিদ ইবনু সাঈদ (রাঃ) ছিলেন দরযায়। তিনি (প্রবেশের) অনুমতির অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ডাক দিয়ে বললেন, হে আবূ বকর! আপনি কি শুনেন না এই মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উচ্চস্বরে কি কথা বলছে।
৩৩৯৬.    আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছে যে, রিফা'আ কুরাযী (রাঃ) তার স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং সে তাকে পুরাপুরি তালাক দিয়ে দেয়। তারপর সে স্ত্রী লোকটি আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ) কে বিবাহ করে। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে ছিলো রিফা'আর অধীনে। সে তাকে পুরোপুরি তিন দিন তালাক দেয়। অতঃপর সে আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ) কে বিবাহ করে। আল্লাহর কসম, তার সাথে তো রয়েছে কাপড়ের ঝালরের মত। এ বলে মহিলা তার উড়নার আচল ধরে দেখাল। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সম্ভবত রিফা'আর নিকট ফিরে যেতে চাও? না তা হয় না, যতক্ষন না সে তোমার রসাস্বাদন করে এবং তুমি তার রসাস্বাদন কর। আবূ বকর (রাঃ) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলেন। আর খালিদ ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রাঃ) ছিলেন হুজরার দরযায় বসা। তাকে (ঘরে প্রবেশ করার) অনুমতি দেওয়া হয় নি। রাবী বলেন, তখন খালিদ (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) কে ডেকে বললেন, আপনি কেন মহিলাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার এ সব কথা প্রকাশ করা থেকে বারণ করছেন না?
৩৩৯৭.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রিফা’আ কুরাযী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। এরপর সে আবদুর রহমান ইবনু যুবায়রকে বিয়ে করে। তারপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! রিফাআ তাকে পুরোপুরি তিন তালাক দিয়ে দেয়। এরপর ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
৩৩৯৮.    মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) ... আয়িশা থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যাকে একজন বিবাহ করে, অতঃপর সে তাকে তালাক দেয়। এরপর সে মহিলা আরেক জনকে বিয়ে করে। কিন্তু সে তার সাথে সংগমের আগেই তালাক দেয়। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে কি? তিনি বললেনঃ না, যে পর্যন্ত না সে তার রসাস্বাদন করে।
৩৩৯৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মুআবিয়া সহ সকলেই হিশাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেন।
৩৪০০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়। তারপর অন্য একজন তাকে বিয়ে করে। এরপর সে তাকে সংগমের আগেই তালাক দিয়ে দেয়। পরে প্রথম স্বামী তাকে বিয়ে করতে চায় এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেনঃ না, তা হবে না যে পর্যন্ত না তারা একে অন্যের রসাস্বাদন করবে, যেভাবে প্রথম স্বামী রসাস্বাদন করেছিল।
৩৪০১.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইয়াহইয়া অর্থাৎ ইবনু সাঈদ সহ সকলেই উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। উবায়দুল্লাহ সুত্রে ইয়াহইয়ার হাদীসে বলেন যে, কাসিম আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. মিলনের প্রাক্কালে যা পাঠ করা মুস্তাহাব


৩৪০২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলতে চায় সে যেন বলে (অর্থঃ) ‘বিসমিল্লাহ হে আল্লাহ! আমাদের শয়তান থেকে রক্ষা করুন, আর আমাদের যা তুমি দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দুরে রাখুন’। কেননা এ মিলনে তাদের ভাগ্যে যদি কোন সন্তান হয় তবে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।
৩৪০৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) থেকে ইবনু নুমায়র তাঁর পিতা থেকে। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুর রাযযাক (রহঃ) থেকে, সকলেই সাওরী (রহঃ) থেকে রিওয়ায়াত করেন। তারা উভয়ে মানসূর থেকে জারীরের হাদীসের মর্মানুযায়ী, তবে শু'বা তার হাদীসে ‘বিসমিল্লাহ এর উল্লেখ করেননি এবং সাওরী সুত্রে আবদুর রাযযাক এর রিওয়ায়াতে ‘বিসমিল্লাহ রয়েছে। আর ইবনু নুমায়র এর রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, মানসূর বলেছেন, আমি মনে করি তিনি বলেছেন, 'বিসমিল্লাহ'।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. মলদ্বার ব্যতীত স্ত্রীর সম্মুখ বা পশ্চাদ দিক থেকে সঙ্গম করা জায়েয


৩৪০৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বরক ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইয়াহুদীরা বলত, কোন লোকে স্ত্রীর পিছন দিক থেকে তার যোনিপথে সঙ্গম করলে এতে সন্তান টেরা চক্ষু বিশিষ্ট হবে। এ প্রসঙ্গে নাযিল হয়ঃ "স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভারে ইচ্ছা গমন করতে পার।"
৩৪০৫.    মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়াহুদীরা বলত যে, স্ত্রীর পিছন দিক থেকে যোনীপথে সঙ্গম করা হলে এতে সে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার সন্তান হবে টেরা চক্ষু বিশিষ্ট। রাবী বলেন, এ প্রসঙ্গে নাযিল হয়" "স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র, অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।"
৩৪০৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদস সামাদ, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, আবূ মা'আন রাকাশী ও সূলায়মান ইবনু মা’বাদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে যুহরী সুত্রে বর্ণিত। নু'মান অতিরিক্ত বলেছেন, স্বামী ইচ্ছে করলে উপুড় করে, ইচ্ছা করলে উপুড় না করে তবে একই দারে হতে হবে।

পরিচ্ছেদঃ ২০. স্বামীর বিছানা পরিহার করা স্ত্রীর জন্য নিষিদ্ধ


৩৪০৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্বামীর বিছানা পরিহার করে কোন স্ত্রী রাত্রি যাপন করলে ফজর পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার প্রতি লানত করতে থাকে।
৩৪০৮.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) সুত্রে এই সনদের বর্ণনায় বলেছেন, "ফিরে না আসা পর্যন্ত" কথার উল্লেখ আছে।
৩৪০৯.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহবান করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট না হয়, ততক্ষন আসমানবাসী তার প্রতি অন্তুষ্ট থাকে।
৩৪১০.    আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে এবং সে না আসে, ফলে তার স্বামী তার প্রতি অন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফিরিতাগণ ভোর হওয়া পর্যন্ত লা'নত করতে থাকে।

পরিচ্ছেদঃ ২১. স্ত্রীর গোপনীতা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ


৩৪১১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সে ব্যাক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, তারপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়।
৩৪১২.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় আমানত খিয়ানতকারী যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়। এরপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। ইবনু নুমায়র বলেন, إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ স্থলে إِنَّ أَعْظَمَ হবে।

পরিচ্ছেদঃ ২২. আযলের হুকুম


৩৪১৩.    ইয়াহইয়া ইবনু আবূ আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু মুহায়রীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আবূ সিরমাহ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আবূ সিরমাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ সাঈদ! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আযল সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বনূ মুস্তালিকের যুদ্ধ করছি। সে যুদ্ধে আমরা অনেক ভাল ভাল আর সুন্দরী বাঁদী হিসেবে লাভ করি। এদিকে আমরা দীর্ঘকাল স্ত্রী সংস্পর্শ বর্জিত ছিলাম। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সম্পদের প্রতি অনুরাগী। এমতাবস্থায় আমরা বাদীদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার এবং আযল করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমরা এ কথাও আলোচনা করলাম যে, আমরা কি এ কাজ করতে যাব, অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর নিকট আমরা এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করব না? তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ কাজ না করাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ পাক কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করার কথা লিখে রেখেছেন সে সব মানুষ সৃষ্টি হবেই।
৩৪১৪.    বনূ হাশিমের মুক্ত দাস মুহাম্মাদ ইবনু ফারাজ (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে রাবী'আর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সে হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "কেননা আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যত মাখলুক সৃষ্টি করবেন তা লিখে দিয়েছেন।"
৩৪১৫.    আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমান যুবাঈ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কিছু সংখ্যক যুদ্ধ বন্দিনী লাভ করেছিলাম। (তাদের সাথে) আমবা আযল করছিলাম। এরপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের বললেন, অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। (বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন) বস্তুত কিয়ামত পর্যন্ত যত প্রানী সৃষ্টি হওয়ার তা সৃষ্টি হবেই।
৩৪১৬.    নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) মা'বাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) সুত্রে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (আনাস ইবনু সীরীন) বলেন, আমি তাকে (মা'বাদ ইবনু সীরীন) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। তিনি বলেন, এটা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, এটা হল তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত।
৩৪১৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতীম (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) এর সূত্রে আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে অনুরূপ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন তবে তাদের হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযল সম্পর্কে বলেছেনঃ এ কাজ না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা এটা তাকদীরের অন্তর্গত। রাবী বাহযের বর্ণনায় রয়েছে যে, শু’বা (রহঃ) বলেছেনঃ আমি তাকে (আনাস ইবনু সীরীন) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৩৪১৮.    আবূর রাবী যাহরানী ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা এ হল তাকদীরের অন্তভুক্ত। মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি ‘লা আলাইকুম' 'তোমাদের কোন ক্ষতি নেই' নিষেধাজ্ঞারই নিকটবর্তী।
৩৪১৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আযল সম্পর্কে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমরা তা কেন করতে চাও? তারা বলল, এমন লোক আছে যার স্ত্রী সন্তানকে দুধ পান করায় সে তার সঙ্গে সঙ্গত হয়। অথচ এতে সে গর্ভবতী হোক তা সে পছন্দ করে না। আবার কোন লোকের দাসী আছে, সে তার সঙ্গে সঙ্গত হন কিন্তু এতে সে গর্ভবতী হোক তা সে অপছন্দ করে। তিনি বললেন, ‘তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তা তাকদীরের উপর নির্ভরশীল। 

ইবনু আওন (রহঃ) বলেন, আমি এ হাদীস হাসান (রহঃ) এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, এ হল সতর্কবাণী স্বরূপ।
৩৪২০.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... ইবনু আওন (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ সুত্রে ইবরাহিমকে হাদীস বর্ণনা করেছি অর্থাৎ আযল সম্পর্কে। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) হাদীসটি আমার কাছেই বর্ণনা করেছেন।
৩৪২১.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... মা'বাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আযল সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ এ বলে তিনি বর্ণিত ইবনু আওনের হাদীসের ন্যায় الْقَدَرُ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
৩৪২২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আযল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উল্লেখ করা হল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কেন এ কাজ করে? তিনি এ ব্যাপারে একথা বলেন নি, "তোমাদের কেউ যেন এ কাজ না করে।"যে প্রান সৃষ্টি হওয়ার আল্লাহ্‌ তাকে সৃষ্টি করবেনই।
৩৪২৩.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনঃ সব পানিতেই সন্তান পয়দা হয় না। মূলত আল্লাহ যখন কোন বস্তু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন তখন কোন কিছুই তাকে বাধা দিতে পারে না।
৩৪২৪.    আহমাদ ইবনু মুনযির বাসরী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৩৪২৫.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমার একটি দাসী আছে যে আমাদের খিদমত ও পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। আমি তার নিকট আসা যাওয়া করে থাকি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তখন তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছে করলে তার সাথে আযল করতে পার। তবে তার তাকদীরে সন্তান থাকলে তা তার মাধ্যমে আসবেই। সে কিছু দিন অতিবাহিত করল তারপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, দাসীটি গর্ভবতী হয়েছে। তিনি বললেন, আমি তোমাকে এ মর্মে জানিয়েছিলাম যে, তার তাকদীরে যা আছে তা আসবেই।
৩৪২৬.    সাঈদ ইবনু আমর আশ'আসী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, আমার একটি দাসী আছে। আমি তার সাথে আযল করে থাকি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কাজ আল্লাহ যা চান তা কিছুতেই প্রতিহত করতে পারে না। রাবী বলেন, এরপর সে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে দাসীটির কথা আপনার কাছে উল্লেখ করেছিলাম সে গর্ভবতী হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ 'আমি আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসুল।’
৩৪২৭.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ আসল ...... সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
৩৪২৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আযল করতাম আর কুরআনও নাযিল হত। ইসহাক আরো বলেছেন যে, সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, এতে যদি নিষেধ করার মতো কিছু থাকত, তবে কুরআন তা নিষেধ করে দিত।
৩৪২৯.    সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ "আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যমানায় আযল করতাম।"
৩৪৩০.    আবূ গাসসান মিসমায়ী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যমানায় আযল করতাম। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে এ থেকে তিনি নিষেধ করেন নি।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. গর্ববতী যুদ্ধবন্দিণী দাসীর সাথে সঙ্গম করা হারাম


৩৪৩১.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা আসন্ন প্রসবা জনৈকা গর্ভবতী দাসীকে তাঁবুর দরজায় আনা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত ঐ ব্যক্তি তার সাথে সঙ্গম করতে চায়। লোকেরা বলল, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি মনে করেছি, তাকে এমন লা'নত দেই, যে লা'নতসহ সে কবরে প্রবেশ করে। কিভাবে সে তাকে দাসীর গর্ভস্থ সন্তানকে ওয়ারিস বানাবে অথচ তা তার জন্য বৈধ নয়? কেমন করে সে তাকে (সন্তানকে) খাদিম বানাবে অথচ সে তার জন্য বৈধ নয়।
৩৪৩২.    আবূ বকর ইবনু শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) সুত্রে এই সনদে বর্ণিত।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. 'গীলা' অর্থাৎ স্তন্যদায়িনি স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং আযল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গ


৩৪৩৩.    খালফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জুদামা বিনত ওয়াহাব আসাদিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, আমি গীলা (স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম) নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যবাসী লোকেরাও তা করে থাকে, অথচ তাতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। খালফ তার সনদ বর্ণনায় বলেছেন যে, জুযামা আসদিয়া থেকে বর্ণিত। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, বিশুদ্ধ হল 'জুদামা' যা ইয়াইয়া তার বর্ণনায় বলেছেন।
৩৪৩৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সাঈদ ইবনে আবু আয়্যুব (রহঃ) আসওয়াদ থেকে তিনি উরওয়া থেকে তিনি আয়শা (রাঃ) এবং তিনি উকাশার ভগ্নি জুদামা বিনত ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হলাম। তিনি তখন বলছিলেন, আমি স্তন্যদায়িনী মহিলার সাথে সঙ্গম করা নিষেধ করার ইচ্ছা করলাম, এমতাবস্থায় আমি রোম ও পারস্যবাসী লোকদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে অবগত হলাম যে, তারা গীলা করে থাকে, কিন্তু তা তাদের সন্তান সন্ততির কোনরূপ ক্ষতি করে না। তারপর লোকেরা তাকে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হল গোপন হত্যা। 

রাবী উবায়দুল্লাহ তার বর্ণনায় সুত্রে আয়াতটুকুও উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ‘যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে’ (৮১ঃ ৮- ৯)
৩৪৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জুদামা বিনত ওয়াহব আসাদিয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। (এরপর) সাঈদ ইবনু আবূ আয়্যুব (রহঃ) থেকে বর্ণিত আযল ও গিলা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি (গিলার পরিবর্তে) "গিয়াল" উল্লেখ করেন।
৩৪৩৬.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সাথে আযল করে থাকি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এ কাজ কেন কর? লোকটি বলল, আমি তার সন্তানের ক্ষতির আশংকা করি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি এ কাজ ক্ষতিকর হত তাহলে তা পারস্য ও রোমবাসীদেরকেও ক্ষতিসাধন করত। 

রাবী যুহায়র তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, এ কাজ (আযল) যদি এ উদ্দেশ্যেই হয় তাহলে তা করা সঠিক নয়। কেননা তা পারস্য ও রোমবাসীদের কোন প্রাকার ক্ষতি করে নি।

No comments:

Powered by Blogger.