সহিহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুস স্বলাত-২য়
পরিচ্ছেদঃ ২২. ইমামের আসাতে দেরী হলে এবং ফিতনা-ফাসাদের আশংকা না থাকলে উপস্থিত লোকজন কর্তৃক অন্য কাউকে ইমাম বানানো
৮৩৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … সাহল ইবনু সা'দ আস-সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রে তাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসার কাজে গমন করলেন। ইত্যবসরে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত উপস্থিত হলে মু’আযযিন (আযান দিয়ে) আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি কি ইমামত করবেন? আমি ইকামত বলছি। আবূ বকর (রাঃ) বললেন -হ্যাঁ। আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিক হতে আগমন করেন এবং মানুষের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ)-এর কাতারে শরীক হলেন। মুকতাদীগণ তালি বাজাতে লাগলেন। কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে অন্য কোন দিকে মনোযোগ দিতেন না।
যখন মুকতাদীগণ অধিক তালি বাজাতে লাগলে তখন তিনি ফিরে তাকালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেয়ে পিছনে হটতে চাইলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করে বললেন, তুমি তোমার জায়গায় দণ্ডায়মান থাক। আবূ বকর (রাঃ) দুই হাত উপরে তুলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাকে এই ইমামতির মর্যাদা প্রদানে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করলেন এবং পশ্চাতে হটে এসে মুকতাদীর কাতারে দাঁড়ালেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ বকর! তুমি তোমার জায়গায় দন্ডায়মান থাকলে না কেন? আমি তো তোমাকে দণ্ডায়মান থাকতেই বলেছিলাম।
আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আবূ কুহাফার পূত্রের এমন দুঃসাহস নেই যে, আল্লাহর রাসূলের সামনে ইমামত করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুকতাদীদের প্রতি তাকিয়ে) বললেন, কী ব্যাপার! তোমরা এত তালি বাজালে কেন? তোমাদের কারো সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয়, তখন তোমরা ‘সূবহানাল্লাহ’ বলবে, তোমরা ‘সূবহানাল্লাহ’ বললেই ইমাম তোমাদের প্রতি মনোযোগ দিবেন। তালি বাজানোর বিধান তো নারীদের জন্য।
৮৩৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সুহায়ল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন। এবং এদের উভয়ের বর্ণনায় আছে, আবূ বাকর (রাঃ) তার হস্তদয় উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং পিছনে সরে এসে সারিতে দন্ডায়মান হলেন।
৮৩৫. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রে একটি আপোস-মীমাংসার কাজে গমন করেন। সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে পিছনের কাতারসমুহ ভেদ করে সামনের কাতারে এসে দাঁড়ালেন এবং আবূ বকর (রাঃ) পাশ্চাৎ দিকে হটে আসলেন।
৮৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও হাসান ইবনু আলী আল হূলওয়ানী (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবুক যুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করে ছিলেন। মুগীরা (রাঃ) বলেন, একদিন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে (উক্ত তাবূক নামক স্থানে) রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রাতঃকৃত) সমাধার্থে নিম্নভুমির দিকে রওয়ানা হলে আমি পানির পাত্র নিয়ে তার সঙ্গে গেলাম। যখন তিনি আমার নিকট ফিরে আসলেন আমি তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি প্রথমে তিনবার হাত ধৌত করলেন, অতঃপর মুখমন্ডল। তারপর তাঁর জুব্বার আস্তিন হাতের উপর দিকে উঠাতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন ছোট ছিল বিধায় তিনি জুব্বার নিচের দিক দিয়ে হাত ঢূকিয়ে দুই হাত জুব্বার নিচ দিয়ে বের করলেন। তারপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর উভয় মোজার উপর মাসহ করলেন।
তারপর রওয়ানা হলেন এবং আমিও তার সাথে রওয়ানা হলাম। ফিরে এসে দেখতে পেলাম, লোকজন আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) কে আগে বাড়িয়ে দিয়েছে, তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক’আত পেলেন এবং লোকজনের সাথে দ্বিতীয় রাক’আত আদায় করলেন। আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) যখন সালাম ফিরালেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ন করার নিমিত্তে দাঁড়ালেন। মুসলমানগণ এই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে গেলেন এবং বেশী করে তাসবীহ পড়তে নাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তাদের লক্ষ্য করে বললেন তোমরা উত্তম কাজ করেছ। সঠিক ওয়াক্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে লাগলেন।
৮৩৭. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আল হূলয়ানী (রহঃ) ... হামযা ইবনুল মুগীরা (রাঃ) থেকে আব্বাদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস সদৃশ বর্ণনা করেছেন। মুগীরা (রাঃ) বলেন, আমি অবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) কে পিছনে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. সালাতে ভুল-ত্রুটি হলে পুরুষ 'সুবহানাল্লাহ' বলবে এবং নারী করতালি দেবে
৮৩৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), আমর আন নাকিদ (রহঃ), হরুন ইবনু মারুফ (রহঃ), ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন পুরুষের জন্য ‘সূবহানাল্লাহ’ এবং নারীদের জন্য হল হাততালি। হারামালা তাঁর বর্ণনায় আরও বলেন যে, ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেছেন, আমি কতিপয় আলেমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে সুবহানাল্লাহ, বলতে এবং ইশারা করতে দেখেছি।
৮৩৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৪০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তার বর্ণনায় ‘সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে’ কথাটি অতিরিক্ত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. পূর্ণভাবে, উত্তমরূপে ও বিনীতভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ
৮৪১. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল-হামদাযী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় শেষে বললেন, হে অমূক! তোমার সালাত (নামায/নামাজ) উত্তমরূপে আদায় করবে না কি? মুসুল্লী যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন সে কিরুপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তা কি সে লক্ষ্য করে না? অথচ সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী তার নিজের কল্যাণের জন্যই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি যেমন সামনের দিকে দেখি, তেমনি পিছনের দিকেও দেখি।*
* এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মু'জিযা ছিল, এর সাথে ইলমে গায়েবের কোন সম্পর্ক নেই।
৮৪২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি দেখছ-আমার কিবলা এই দিকে? অথচ আল্লাহর শপথ! আমার নিকট তোমাদের রুকু এবং সিজদা কোনটাই গোপন নয়। আমি তোমাদেরকে পিছন হতেও দেখছি।
৮৪৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু এবং সিজদা যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তখন তা আমি পিছন দিক হতে (রাবী কখনও বলেছেন) আমি পৃষ্ঠদেশের দিক হতে দেখে থাকি।
৮৪৪. আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু-সিজদাগুলো পুর্ণরুপে আদায় করবে। আল্লাহর কসম! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তা আমি পিছন দিক হতে অবলোকন করি।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. ইমামের পূর্বে রুকু সিজদা করা নিষেধ
৮৪৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং রুকু, সিজদা, কিয়াম ও সালামে আমার আগে চলে যেও না। কারণ আমি সম্মুখ ও পাশ্চাৎ হতে তোমাদেরকে দেখতে পাই। অতঃপর বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ, আমি যা দেখছি, তোমরা তা দেখতে পেলে হাসতে কম, কাঁদতে বেশী। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনি কী দেখেছেন? তিনি বললেন, আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছি।
৮৪৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), ইবনু নুমায়র (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে উপরোক্তরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জারীর কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে ‘সালাম ফিরানোর’ কথাটি নেই।
৮৪৭. খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ), আবূ রাবী আয যাহরানী (রহঃ) ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামের পূর্বে সিজদা হতে যে ব্যাক্তি মাথা তুলবে, তার ভয় করা উচিত, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথার মত করে দিবেন।
৮৪৮. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের পূর্বে সিজদা হতে তার শির উত্তোলন করবে, সে কি এ বিষয়ে নিশঙ্ক হয়ে গেল যে, আল্লাহ তার চেহারাকে গাধার চেহারায় রূপান্তরিত করে দিবেন।
৮৪৯. আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম আল-জুমাহী, আবদুর-রহমান ইবনুুর রাবী ইবনু মুসলিম, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও আবূ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্তরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আর-রাবী ইবনু মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তার মুখমন্ডলকে গাধার চেহারায় রূপান্তরিত করে দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. সালাতের মধ্যে আকাশের দিকে তাকান নিষেধ
৮৫০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আকাশের দিকে তাকায়, অবশ্যই তাদের তা হতে বিরত হওয়া উচিত, অন্যথায় তাদের দৃষ্টি আর ফিরে না আসতে পারে।
৮৫১. আবূ তাহির ও আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে দু’আর সময় আকাশের দিকে না তাকায়। অন্যথায় তার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. সালাতে নড়াচড়া করা, সালামের সময় হাতের ইশারা করা ও হাত উঠান নিষেধ এবং সামনের কাতার পূর্ণ করা ও পরস্পর হয়ে এবং একত্র হয়ে দাঁড়াবার নির্দেশ
৮৫২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করে বললেন, তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজের মত হাত উঠাচ্ছ কেন? সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে স্থির থাকবে। একবার তিনি আমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত দেখে বললেন, তোমরা পৃথক পৃথক রয়েছ কেন? আরেকবার আমাদের সামনে এসে বললেন, তোমরা এমনভাবে কাতার বাধবে, যেমনিভবে ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতারবন্দী হয়ে থাকেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! ফেরেশতাগণ তাঁদের রবের সামনে কীভাবে কাতারবন্দী হন? তিনি বললেন, ফেরেশতাগণ সামনের কাতারগুলী আগে পূর্ণ করেন এবং গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ান।
৮৫৩. আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮৫৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষে ডান-বাম দিকে হাত ইশারা করে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতাম। তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজ নাড়ার মত হাত ইশারা করছ কেন? (সালাত (নামায/নামাজ)-এর বৈঠকে) উরুর ওপর হাত রেখে ডানে-বামে অবস্থিত তোমাদের ভাইকে (মুখ ফিরিয়ে) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতূল্লাহ’ বলাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
৮৫৫. আল-কাসিম ইবন যাকারিয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের শেষে ‘আসসালামু আলাইকুম’ ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার সময় হাত দিয়েও ইশারা করতাম। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল যে, তোমরা এমনভাবে হাত দ্বারা ইশারা করছ, যেন তা চঞ্চল ঘোড়ার লেজ? তোমরা সালাতশেষে যখন সালাম করবে, তখন ভাইয়ের দিকে মুখ করবে, হাতদ্বারা ইশারা করবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. কাতার সোজা করা ও মিশে দাঁড়ানো, ক্রমানুসারে প্রথম কাতারের ফযীলত, প্রথম কাতারে দাঁড়াবার জন্য প্রতিযোগিতা করা এবং জ্ঞানী ব্যাক্তিদের পক্ষে ইমামের নিকট ও সামনের কাতারে দাঁড়াবার বিধান
৮৫৬. আবু বকর ইবন আবু শায়বাহ (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন, তোমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়াও এবং আগে-পিছে হয়ো না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরেও বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা অধিক সমঝদার ও জ্ঞানী, তারা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী, তারা তাদের পর, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী, তারা তাদের পর দাঁড়াবে। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, কিন্তু আজকাল তোমাদের মধ্যে চরম বিভেদ বিরাজ করছে।
৮৫৭. ইসহাক, ইবন খাশরাম ও ইবন আবু উমার (রহঃ) ... ইবনু উয়ানায়া থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্তরূপ বরনন করেছেন।
৮৫৮. ইয়াহইয়া ইবন হাবীব আল-হারিসী ও সালিহ ইবন হাতিম ইবন ওয়ারদান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা অধিক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। অতঃপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা, অতঃপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা, অতঃপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে। আর তোমরা বাজারী হট্রগোল হতে দূরে থাকবে।
৮৫৯. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা রাখবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্ণতার অংশ।
৮৬০. শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার পূরা কর। কেননা আমি তোমাদেরকে পিছন হতে দেখে থাকি।
৮৬১. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) কতিপয় হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের নিকট বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কাতার সোজা রাখবে। কেননা, কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
৮৬২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের কাতার সমূহ সোজা রাখবে। নতুবা আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।
৮৬৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলোকে এমন ভাবে সোজা করে দিতেন যেন তিনি ধনুকের কাঠিটি সোজা করছেন। যতক্ষন না তিনি বুঝলেন, আমরা বিষয়টি তাঁর নিকট হতে যথাযথভাবে বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন (হুজরা হতে) বের হয়ে এসে স্বীয় স্থানে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবেন, এমন সময় দেখতে পেলেন যে, এক ব্যাক্তির বক্ষদেশ কাতার হতে আগে বেড়ে আছে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর বান্দারা! তোমরা তোমাদের কাতার অবশ্যই সোজা কর। নতুবা আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।
৮৬৪. হাসান ইবনুর-রাবী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ আওয়ানাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৬৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের সাওয়াবের কথা জানত এবং লটারী ছাড়া তা লাভের কোন উপায় না থাকত তবে তারা এর জন্য অবশ্যই লটারী করত এবং যদি (যূহরের সালাতে) আউয়াল ওয়াক্তে গমনের ফযিলত যদি তারা জানত তবে তারা এর জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতা করত। আর এশা ও ফজরের মাহাত্ম্য যদি জানত, তবে তারা ঐ দুটির জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগমন করত।
৮৬৬. শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ আল খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবাগণকে পিছনের কাতারে দেখে বললেন, সামনে এসো এবং আমার অনুসরণ কর, অতঃপর দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা তোমাদের অনুসরণ করবে। এমন কিছু লোক সবসময় থাকবে যারা সালাত (নামায/নামাজ)-এ পিছনে থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে (নিজ রহমত হতেও) পিছনে রাখবেন।
৮৬৭. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর-রহমান আদ-দারিমী (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল-খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে দেখলেন, তারা মসজিদের পেছনের দিকে আছেন। তারপর উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৮৬৮. ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার ও মুহাম্মাদ ইবনু হারব আল-ওয়াসিতী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (অথবা বলেছেন তারা) যদি সামনের কাতারের মাহাত্ম্য অবগত হতো, তবে লটারী করতে হতো। ইবনু হারব (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, প্রথম কাতারের। তবে অবশ্যই লটারী করা হত।
৮৬৯. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল প্রথম কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট হচ্ছে শেষ কাতার। আর স্ত্রী লোকদের কাতারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে শেষ কাতার (যা পুরুষের কাতার হতে দুরে থাকে), এবং সর্বনিকৃষ্ট হলো প্রথম কাতার (যদি পুরুষদের কাতারের নিকটবর্তী হয়)।
৮৭০. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সূহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৯. পুরুষের পিছনে সালাত আদায়কারিনী নারীদের প্রতি নির্দেশ, তারা যেন পুরুষদের মাথা উঠানোর পূর্বে নিজেদের মাথা না উঠায়
৮৭১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি লোকদেরকে তাদের লুঙ্গী খাটো হবার দরুন বালকদের মত তা তাদের গলায় বেঁধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তখন জনৈক ব্যাক্তি বলল, হে নারী সমাজ! পুরুষরা তাদের মাথা না তোলা পর্যন্ত তোমরা সিজদা হতে মাথা তুলবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. ফিতনার আশংকা না থাকলে নারীগণ মসজিদে যেতে পারবে কিন্তু খোশবু লাগিয়ে (বাইরে) বের হবে না
৮৭২. আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … সালিমের পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো ন্ত্রী মসজিদে যেতে চাইলে তাকে নিষেধ করবে না।
৮৭৩. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের স্ত্রী লোকগণ মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিবে না। বিলাল ইবনু আবদুল্লাহ বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব। তখন আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) এমন রুঢ় ভাষায় তাঁকে তিরস্কার করলেন যে, ইতিপূর্বে আমি কখনো তাঁকে এভাবে তিরস্কার করতে শুনিনি। তিনি আরো বললেন, আমি তোমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস শোনাচ্ছি আর তুমি বলছ, আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই তাদেরকে নিষেধ করব।
৮৭৪. মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করবে না।
৮৭৫. ইবন নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের স্ত্রীগণ মসজিদে যেতে অনুমতি চাইলে তাদেরকে মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে।
৮৭৬. আবু কুরায়ব (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রাত্রিকালে স্ত্রীলোকদের মসজিদে যেতে নিষেধ করবে না, তখন তার পুত্র বলল, আমরা তাদেরকে নিষেধ করব,যাতে তারা ছলনা করতে না পারে। তখন তিনি তার পুত্রকে তিরস্কার করার পর বললেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ শোনাচ্ছি, আর তুমি তার বিরোধিতা করে বলছ যে, আমরা তাদের ছেড়ে দিব না।
৮৭৭. আলী ইবন খাশরাম (রহঃ) ... আল-আ’মাশ (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮৭৮. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের ন্ত্রীলোকদের রাতে মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে। তখন ওয়াকিদ নামক তার এক পূত্র বলল যে, তারা সেখানে গিয়ে প্রতারণা করবে। একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তার বুকে হাত মেরে বললেন, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করছি আর তুমি বলছ, তাদেরকে যেতে দিবে না।
৮৭৯. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা তোমাদের ন্ত্রীলোকগণকে রাতে মসজিদে পূণ্যলাভের জন্য যেতে নিষেধ করো না, যখন তারা তার অনুমতি চাইবে। তখন বিলাল বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তাদেরকে নিষেধ করব। একথা শুনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমি বলছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর তুমি বলছ, আমরা তাদেরকে নিষেধ করব।
৮৮০. হারুন ইবনু সাঈদ আন-আয়লী (রহঃ) ... যায়নাব আস-সাকাফিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন স্ত্রীলোক যখন ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে (মসজিদে) আসে, তখন সে যেন ঐ রাতে খোশবূ না লাগায়।
৮৮১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী মসজিদে আসবে, সে যেন খোশবূ স্পর্শও না করে।
৮৮২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী কোন সুগন্ধির ধুনি নিবে, সে যেন ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের সাথে শরীক না হয়।
৮৮৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) … আমরা বিনতে আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এ যুগের নারীদের আচরণের অবস্থা দেখতেন, তবে তাদেরকে বনী ইসরাঈলী নারীদের ন্যায় মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করতেন। রাবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি আমরকে জিজ্ঞাসা করলাম, বনী ইসরাঈলী নারীদেরকে কি মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৮৮৪. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, আমর আন-নাকিদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি অনুরুপ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. যখন বিপদের আশংকা থাকে, জাহরী সালাতেও মধ্যম কিরা'আত পড়া যায়
৮৮৫. আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনুুস-সাব্বাহ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহ তায়াআলার পবিত্র বাণী وَلاَ تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ وَلاَ تُخَافِتْ بِهَا সম্পর্কে বলেন, (মধ্যম আওয়াজে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ সম্বলিত) এই আয়াত এমন সময় অবতীর্ণ হয়, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আত্মগোপন করে অবস্থান করছিলেন। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় উচ্চস্বরে কিরা-আত পাঠ করতেন। মুশরিকরা তা শ্রবণ করে কুরআন, তা অবতীর্ণকারী এবং যার প্রতি তা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে গালি-গালাজ করত। তখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন ............ وَلاَ تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ আপনি সালাত (নামায/নামাজ) এত উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করবেন না যে, মুশরিকগণ তা শুনতে পায় এবং এত নিম্নস্বরেও পাঠ করবেন না যে, আপনার সাহাবীগণ তা শুনতে না পায়। বরং মধ্যম আওয়াজে কুরআন পাঠ করুন।
৮৮৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশ وَلاَ تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ وَلاَ تُخَافِتْ بِهَا দু’আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে (অথাৎ অধিক উচ্চস্বরেও দুআ করবে না, আর অধিক নিম্নস্বরেও না)
৮৮৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩২. মনোযোগ সহকারে কিরা'আত শ্রবন
৮৮৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণীঃ لاَ تُحَرِّكْ بِهِ সম্পর্কে বলেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন ওহী নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসতেন তখন তার জিব্বা ও ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন এতে তাঁর ভীষণ কষ্ট হতো এবং এ তার চেহার দেখে চিনা যেত। অতঃপর আল্লাহ তা’য়াআলা নাযিল করলেন, لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ অর্থাৎ তড়িঘড়ি তা আয়ত্ত করার নিমিত্তে ওষ্ঠ সঞ্চালন করবেন না, আপনার সীনায় আমিই তো সংরক্ষন করব। যেন পরে আপনি তা পাঠ করতে পারেন। আপনি মনোযোগ সহকারে শুনূন এবং চুপ থাকুন। إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ আপনার যবানে পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই।
রাবী বলেন এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন আগমণ করতেন তখন তিনি মাথা নত করে করে থাকতেন এবং জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নির্গমন করলে তিনি আল্লাহর অঙ্গীকার মুতাবিক হুবহু তা আবৃত্তি করতেন।
৮৮৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণী لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ সম্পর্কে বলেন, কুরআন নাযিলের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তড়িঘড়ি তা আয়ত্ত করার নিমিত্ত ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন। এতে তাঁর অত্যধিক কষ্ট হতো। (রাবী বলেন) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন আমি সেরুপ ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করব। সাঈদ বলেন, যেভাবে ইবনু আব্বাস (রাঃ) স্বীয় ওষ্ট নাড়াচ্ছিলেন, আমিও তদ্রূপ ওষ্ট নাড়াচ্ছি এরপর তার ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এই আয়াত নাযিল করলেনঃ لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ * إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ "তাড়াতাড়ি মুখস্ত করার লক্ষে আপনি জিহ্বা নাড়াবেন না। আমরা আপনার সীনায় তা সংরক্ষণ করব। যেন পরে আপনি তা পাঠ করতে পারেন।"
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ "আমি যখন তা পড়ি, আপনি আমার পাঠ অনুসরণ করুন" অর্থাৎ আপনি মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ থাকুন। এরপর তা আপনার দ্বারা পাঠ করানোর দায়িত্ত আমারই। রাবী বলেন, এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন ওহীসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করতেন, তখন তিনি তা নীরবে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতেন এবং জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নির্গমন করলে পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু তা আবৃতি করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. ফজর সালাতে এবং জিনদের সম্মুখে উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করা
৮৯০. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বীনদের নিকট কুরআন পাঠ করেন নি এবং তাদের দেখেন নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীর সঙ্গে উকায বাজারে গমন করেন তখন শয়তানদের জন্য আকাশের সংবাদ সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তানদের উপর অগ্নিশিখা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। তাই একদল শয়তান তাদের নিকট গিয়ে বলল, যে, আকাশের খবরাখবর জ্ঞাত হওয়া আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং আমাদের উপর আগুনের শিখা বর্ষিত হচ্ছে। তারা বলল, নিশ্চয়ই কোন নতূন ঘটনা ঘটে থাকবে। তোমরা দুনিয়ার পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত খোজ নিয়ে দেখ, কি কারণে আমাদের নিকট আকাশের খবর আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তারা দুনিয়ার পূর্ব-পশ্চিম ঘূরে বেড়াতে লাগল।
তাদের কিছু সংখ্যক লোক তেহামার পথে উকায বাজারে গমন করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ‘নাখল’ নামক স্থানে স্বীয় সাহাবীগণ সহ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ছিলেন। তারা (জ্বীন সম্প্রদায়) যখন কুরআন পাঠ শুনল, তখন তাতে মনোনিবেশ করল এবং বলল আকাশের খবরাখবর বন্ধ হওয়ার কারণ একমাত্র এটাই। এরপর তারা তাদের কাওমের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমাদের কাওম। আমরা এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সত্য পথ-নির্দেশক। আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। তখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ এর উপর (এ ওহী) অবতীর্ণ করেনঃ قُلْ أُوحِيَ إِلَىَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নযিল হয়েছে যে, জ্বীনদের একটি দল শুনেছে ......।
৮৯১. মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আমির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলকামাকে জিজ্ঞাসা করলাম জ্বীন-এরজনী (অর্থাৎ যে রজনীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জ্বীনদের সহিত সাক্ষাৎ হয়েছিল) কি ইবনু মাসউদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন? তিনি বললেন, আমি ইবনু মাসঊদ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছি, জ্বীন-রজনী তে কি তোমাদের মধ্য হতে কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিল? তিনি বললেন, না! কিন্তু একরাত্রি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ আমরা তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। এবং তাঁকে পর্বতের উপত্যকা ও ঘাঁটিসমূহে খোঁজাখুজি করলাম। আমরা ভাবলাম জ্বীনেরা তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে কিংবা শুপ্ত ঘাতক তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা রাত্রটি দ্বারুন উদ্বেগে কাটালাম। ভোরবেলা আমরা (দেখলাম যে,) তিনি হিরা (জাবাল-ই-নূর) পর্বতের দিক হতে আসছেন।
রাবী বলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনাকে আমরা হারিয়ে বহু খোঁজাথুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। ফলে দারুন উদ্বেগের মধ্যে আমরা রাত কাটিয়েছিা তিনি বললেন, জ্বীনদের একজন প্রতিনিধি আমাকে নেওয়ার জন্য এসেছিল। আমি তার সঙ্গে গেলাম এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করলাম। এরপর তারা আমাকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেল এবং তাদের নিদর্শন ও তাদের আগুনের নিদর্শনগুলো দেখাল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জ্বীনেরা তার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করল। তিনি বললেন, যে সমস্ত প্রাণী আল্লাহর নামে যবেহ হবে, তাদের হাড্ডি তোমাদের খাদ্য। তোমাদের হস্তগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা গোস্তে পরিণত হয়ে যাবে, এবং সকল উষ্ট্রের বিষ্ঠা তোমাদের জীব জন্তুর খাদ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ঐ দুটি জিনিস (অস্থি ও উষ্ট্রের বিষ্ঠা) দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে না। কেননা, ওগুলো তোমাদের ভাই (জ্বীন ও তাদের জানোয়ার)-দের খাদ্য।
৮৯২. আলী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) ... দাঊদ (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে آثَارَ نِيرَانِهِمْ পর্যন্ত আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। শাবী বলেন, জ্বীনেরা তার নিকট তাদের খাদ্যের জন্য গ্রার্থনা করেছিল এবং তারা ছিল জাযীরার অধিবাসী।
৮৯৩. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পর্যন্ত বর্ণনা করেন। পরবর্তী অংশ তিনি বর্ণনা করেন নি।
৮৯৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জ্বীন-রজনী তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম না। কিন্তু আমার বাসনা জাগে যে, আহা! সেদিন যদি আমি তাঁর সঙ্গে থাকতাম।
৮৯৫. সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ আল জারমী ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … মা’ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি, তিনি বলেন আমি মাসরূককে জিজ্ঞাসা করেছি যে রাতে জ্বীনেরা এসে কুরআন শ্রবণ করল সে রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কে তাদের উপস্থিতির সংবাদ দিয়েছিল? তিনি বলেন, আমাকে তোমার পিতা অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, তাঁকে জ্বীনের উপস্থিতি একটি বৃক্ষ সংবাদ দিয়েছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. যোহর ও আসরের কিরা'আত পাঠ
৮৯৬. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না আল আনাযী (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যুহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও দুটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও কখনও আমরা আয়াত শুনতে পেতাম। আর যুহারের প্রথম রাকআত লম্বা করতেন এবং দ্বিতীয় রাকআত খাট করতেন। অনুরুপ ফজরের সালাতেও।
৮৯৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও আরও একটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও আয়াত আমাদেরকে শোনাতেন। আর শেষের দু রাকআতে শুধু-সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।
৮৯৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিয়াম (দাঁড়ান) এর পরিমাপ করতাম। যুহরের প্রথম দুই রাকআতে তাঁর কিয়াম, আলিফ লা-ম মীম তানযীল আস-সাজদাহ পাঠের সময়ের পরিমাণ হত। আর শেষ দুই রাকআতে তার অর্ধেক পরিমাণ। আসরের প্রথম দুই রাকআত যুহুরের শেষ দু-রাকআতের পরিমাণ দাঁড়াতেন এবং আসরের শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ এবং আবূ বাকর (রাঃ) তার রিওয়ায়াতে সূরা আলিফ লা-ম মীম তানযীল-এর উল্লেখ করেন নি, বরং ত্রিশ আয়াত পরিমাণ বলেছেন।
৮৯৯. শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দুই রাকআতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ কিরা’আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকা'আত পনের আয়াত পরিমাণ। অথবা বলেন, এর অর্ধেক পরিমাণ। এবং আসরের প্রথম দুই রাকআতের প্রত্যেক রাক'আতে পনের আয়াত পরিমাণ কিরা-আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ।
৯০০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, কুফাবাসিগণ সা’দের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে উমার ইবনুল খাত্তাবের নিকট অভিযোগ করল। উমার (রাঃ) তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি আগমন করলে উমার তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে কুফা বাসীদের অভিযোগের কথা অবহিত করলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতই তাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাকি। তাতে একটুকুও ক্রটি করিনা। আমি প্রথম দুই রাকআত লম্বা করি এবং শেষের দুই রাকআত সংক্ষেপে আদায় করে থাকি। তখন উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ ইসহাক! তোমার নিকট হতে এটাই আশা করা যায়।
পরিচ্ছেদঃ
৯০১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল মালিক উমায়র (রাঃ) সুত্রে এই সনদে বর্ণনা করেন।
৯০২. মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) সা’দ (রাঃ) কে বললেন, মানুষ তোমার বিরুদ্ধে সকল ব্যাপারে অভিযোগ করছে এমন কি সালাত (নামায/নামাজ)-এর ব্যাপারেও। সা’দ (রাঃ) বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করার ক্ষেত্রে মোটেই কসুর করি না। উমার (রাঃ) বললেন, তোমার থেকে এটাই আশা করা যায়। অথবা বললেন, তোমার সম্পর্কে আমার এই রূপই ধারণা।
৯০৩. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। অবশ্য তিনি এ কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, সা’দ (রাঃ) বললেন, "আরব বেদূঈনগণ আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) শিক্ষা দিবে!"
৯০৪. দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হত। অতঃপর কোনও আগমনকারী ‘বাকী’ নামক স্থানে গমন করত এবং তার প্রয়োজন সেরে পরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে ফিরে আসত। তখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিরা’আত) দীর্ঘ করার কারণে প্রথম রাকআতেই থাকতেন।
৯০৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... কাযা’আহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ) এর নিকট আগমন করলাম। তখন তাঁর নিকট অনেক লোকের সমাগম ছিল। তারা চলে গেলে আমি বললাম, এরা যা জিজ্ঞাসা করেছে, আমি আপনার নিকট তা জিজ্ঞাসা করব না, বরং আমি আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। তিনি বললেন, এতে তোমার কোনও ফায়দা নেই (কেননা, তুমি ঐরূপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সক্ষম হবে না) তিনি (কাযা’আহ) পূনরায় তাই জিজ্ঞাস করলেন। তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হত। তারপর আমাদের মধ্য হতে কেউ ‘বাকী’ পর্যন্ত যেত এবং (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন সেরে নিজ গৃহে এসে উযূ (ওজু/অজু/অযু) বানাত। অতঃপর মসজিদে ফিরে যেত, তখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক’আতেই থাকতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. ফজরের সালাতে কিরা'আত পাঠ
৯০৬. হারূন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু সাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং সূরা মু’মিনূন শুরু করলেন। যখন মূসা ও হারুন (আলাইহিস সালাম) অথবা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর নাম সম্বলিত আয়াত পর্যন্ত পৌছলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাশি আসল। তিনি রুকুতে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনুুস সাইব (রাঃ) তখন উপস্থিত ছিলেন। আবদুর রাযযাক এর হাদিসে, وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو এর সাথে ابْنِ الْعَاصِ শব্দটি নেই।
৯০৭. যুহায়র ইবনু হারব, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আমর ইবনু হুরাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ وَاللَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَঅর্থাৎ সূরা তাকভীর পাঠ করতে শুনেছেন।
৯০৮. আবূ কামিল আল-জাহদারী, ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... কুত্বা ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি যখন সূরা কাফ তিলাওয়াত শুরু করে وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ আয়াত পর্যন্ত পৌছলেন (রাবী বলেন) আমি আয়াতটি বারবার আবৃত্তি করতে লাগলাম। তারপর তিনি কি বললেন জানি না।
৯০৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... কুতবা ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَهَا طَلْعٌ نَضِي (এবং সমুন্নত খেজুর গাছ যাতে আছে গুচ্ছ খেজুর (সূরা ক্বাফঃ ১০) পড়তে শুনেছেন।
৯১০. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... যিয়াদ ইবনু 'ইলাকা এর চাচার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম রাক’আতে وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَهَا طَلْعٌ نَضِيدٌ এই আয়াত পড়লেন এবং কখনও বলেছেন, সূরা ‘ক্বাফ’ (পড়েছেন)।
৯১১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ ق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ সূরা পড়তেন। তাঁর অন্যান্য সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত হত।
৯১২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... সিমাক (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করতেন ঐ সকল লোকের মত (দীর্ঘ করে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে ق وَالْقُرْآنِ কিংবা তৎসদৃশ (সুরাসমূহ) পড়তেন।
৯১৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ اللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى পড়তেন এবং আসরের সালাতেও অনুরুপ সূরা এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ তার চেয়েও দীর্ঘ সুরা পড়তেন।
৯১৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى পাঠ করতেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ তদপেক্ষা দীর্ঘ সূরা পাঠ করতেন।
৯১৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ ষাট হতে একশ’ আয়াত পাঠ করতেন।
৯১৬. আবূ কুরায়র (রহঃ) ... আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এ ষাট হতে একশ, আয়াত পাঠ করতেন।
৯১৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উম্মল ফযল বিনত হারিস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে সূরা وَالْمُرْسَلاَتِ عُرْفًا পাঠ করতে শুনে বললেন, হে বৎস! তুমি এই সূরাটি পাঠ করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে যে, এটি এমন এক সূরা যা আমি সর্বশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এ পাঠ করতে শুনেছি।
৯১৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... যুহরি (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন। কিন্তু সাহিল কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত এই কথাটি আছে, এরপর ওফাত পর্যন্ত তিনি আর কোনও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন নি।
৯১৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এ সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি।
৯২০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. ইশার সালাতে কিরা'আত পাঠ
৯২১. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বারী (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ছিলেন। তিনি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং এক রাকআতে وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ সূরাটি পাঠ করেন।
৯২২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি তাতে সূরা وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ পাঠ করলেন।
৯২৩. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এ وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ পাঠ করতে শুনেছি। আমি তার থেকে অধিক সুন্দর আওয়াজ কারও শুনিনি।
৯২৪. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর ফিরে আসতেন এবং তার নিজ লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করতেন। এক রাতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর স্বীয় লোকদের কাছে আসলেন। এবং তাদের ইমামতি করলেন। এতে তিনি সূরা বাকারা পড়া শুরু করেন। এতে জনৈক ব্যাক্তি সরে গিয়ে সালাম ফিরাল এবং একাকী সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে চলে গেল।
লোকেরা তাকে বলল, তুমি কি মুনাফিক হয়ে গিয়েছ? সে বলল, না আল্লাহর কসম আমি মুনাফিক নই। আমি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাব এবং তাকে একথা জানাব। অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসল এবং বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো দিনে উট দিয়ে পানি সেচের কাজ করি। আর মু’আয (রাঃ) আপনার সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আসেন এবং সূরা বাকারা পাঠ করা শুরু করেন।
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুা’আযের প্রতি ফিরলেন এবং বললেন, হে মু’আয তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তুমি এই সূরা পাঠ করবে। সুফিয়ান বলেন, আমি আমরকে বললাম, আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا . وَالضُّحَى . وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى . وَسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى পাঠ করবে। আমর (রাঃ) বললেন এমনই।
৯২৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু’আয ইবনু জাবাল আল-আনসারী (রাঃ) তাঁর লোকজনদের নিয়ে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন এবং তা খুবই দীর্ঘ করেন। আমাদের মধ্যে জনৈক ব্যাক্তি সরে গিয়ে একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। মু’আযকে এ বিষয়ে অবগত করা হল। তখন বললেন, ঐ ব্যাক্তি মুনাফিক! এই খবর ঐ ব্যাক্তির নিকট পৌছল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেল এবং মু’আযের উক্তি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয (রাঃ) কে বললেন, হে মু’আয তুমি ফিতনা সৃষ্টি কারী হতে চাও? তুমি যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এ ইমামতি করবে, তখন وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا وَسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى . وَاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ . وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى পাঠ করবে।
৯২৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর ম্বীয় লোকদের নিকট আসতেন এবং তাদের নিয়ে সেই সালাতেই ইমামতি করতেন।
৯২৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূর-রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর স্বীয় কাওমের মসজিদে এসে তাদেরকে নিয়ে সেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
No comments: