শিয়া-সুন্নি ফেরকার সৃষ্টি
শিয়া-সুন্নি ফেরকার সৃষ্টি
হুসাইনের এই রক্তপাতকে কিছু লোক কোনমতেই মেনে নিতে পারলো না। তারা বিদ্রোহী হলো। তারা ইয়াজিদ এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলো। এরা ইতিহাসে শীয়া নামে পরিচিত হলো। ১০ই মহররমই এই শিয়াদের জন্ম। মুসলমানরা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। একপক্ষ অসন্তুষ্ট হলেও ইয়াজিদের শাসন মেনে নিলো। তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামে একটা নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। যারা এর কিছুই মানলো না তারা শীয়া-নামীয় আরেক নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো।
মাযহাবীয় এ বিভক্তি ধীরে ধীরে স্থায়ী রুপ নিলো, যা ইসলামী সমাজকে দুর্বল করে দিলো। কারবালার ঘটনা থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল প্রকটভাবে। ফাতেমী খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী শীয়া মতের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। এটা যারা বলেন তার ইতিহাসের বিপরীত এবং সরাচর মিথ্যা বলেন। এছাড়া ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী মা ফাতেমার বংশধর ছিলেন কিনা তা নিয়ে তার শাসনামলের এবং তৎপরবর্তী একশ বছর পর্যন্ত কোন বিতর্ক ছিল না।
১০১১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসীয়রা যে প্রচারপত্র প্রকাশ করে তাতে তাকে ইহুদীর সন্তান বলে গন্য করা হয়। তবে ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন, মাকরিজী, ইবনুল আসীর, আবদুল ফিদা এরা সকলেই বলেছেন তিনি ফাতেমার বংশধর ছিলেন। দরবারী আলেমরা এই বিতর্ককে ভালভাবে কাজে লাগিয়ে খুবই ফায়দা তুলেছেন। আসলে তিনি ইহুদীর সন্তান ছিলেন কি ফাতেমার বংশধর ছিলেন তা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। আসল কথা হলো তিনি শীয়া মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। কারবালার ঘটনা থেকেই শীয়া মতবাদের সুত্রপাত হয়েছিল।
শীয়া এবং সুন্নি-- উভয় মাযহাবের লোকজন নিজ নিজ আকীদা বিশ্বাসকে সহী শুদ্ধ মনে করেন। এই ধরনের মাযহাব ও বিভক্তি ইসলামে সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। মুসলমানেরা এখন পরিচয় দেন, সুন্নি মুসলমান বা শীয়া মুসলমান হিসাবে, যা আদৌ ইসলাম সম্মত নয়। বরং সরাসরি বিদআত হয়।
আল্লাহপাক বলেন,
আর কে বেশী উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে এবং আল্রাহর নির্দেশ মেনে চলে এবং বলে, আমি 'মুসলিম'[আল কোরআন, ৪১: ৩৩]
সুরা আল ইমরানে বলা হয়েছে, তাহলে বলে দিন (ওদেরকে) তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা সর্বান্তকরনে আল্লাহতে আত্মসমর্পনকারী 'মুসলিম' [৩: ৬৪]
কাজেই এই বিভক্তি মোটেই কাম্য নয়। কোরআনে বিশ্বাস থাকলে মুসলিম ছাড়া অন্য কোন পরিচয় গ্রহনযোগ্য নয়। সঙ্গত কারনেই এ বিষয়টার অবতারনা করলাম। কোরআন এবং হাদীস যারা মানবে না তারা অমুসলিম হবেন, শীয়া বা সুন্নি হবেন কেন ? কিন্তু অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও, এই শীয়া সুন্নির বিভক্তিও সেই কারবালার ঘটনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
No comments: