সহিহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুস স্বলাত-১ম
পরিচ্ছেদঃ ১. আযান এর সুচনা
৭২৩. ইসহাক ইবন ইবরাহীম আল-হানযালী, মুহাম্মাদ ইবন রাফি' ও হারুন ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুসলমানরা মদিনায় আসার পর একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে নিত। এ জন্য কেউ আযান দিত না। একদিন তারা ব্যাপারটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তাদের একজন বলল, নাসারাদের নাকূসের অনুরূপ একটা নাকূস (শঙ্খ) ব্যবহার কর। তাদের অপরজন বলল, ইহুদীদের শিঙ্গার অনুরূপ একটি শিঙ্গা ব্যবহার কর। উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আহবান করতে একটি লোক পাঠাওনা কেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বিলাল! উঠো এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ডাক দাও (আযান দাও)।
পরিচ্ছেদঃ ২. আযানের শব্দ গুলো দুই-দুইবার এবং ইকামাতের শব্দগুলো قد قامت الصلواة ছাড়া একবার বলা
৭২৪. খালাফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দগুলো দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দগুলো এক বার করে বলতে। ইয়াহইয়া তার হাদীসে ইবনু উলায়্যার মাধ্যমে এতটুকু যোগ করেন যে, আমি আইউব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, قد قامت الصلوة শব্দটি ছাড়া (এটি দু’বার বলবে) বাকী শব্দ গুলো একবার করে বলবে।
৭২৫. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন (একদা) সাহাবায়ে কিরাম কোন পরিচিত জিনিসের মাধ্যমে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত জানিয়ে দেয়া সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করলেন। এ ব্যাপারে তারা আগুন জ্বালানো অথবা নাকুস (শঙ্খ) বাজানোর কথা উল্লেখ করলেন। শেষে বিলাল (রাঃ) কে নির্দেশ দেয়া হল, আযানের শব্দগুলোকে দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দগুলোকে এক বার করে বলতে।
৭২৬. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) … খালিদ আল হাযযা থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত আছে যে, যখন লোকজন বেশী হয়ে গেল তখন তারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত জানিয়ে দেয়ার আলোচনা করল। এরপর সাকাফীর হাদীস-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে أَنْ يُنَوِّرُوا نَارًا এর স্থলে أَنْ يُورُوا نَارًا উল্লেখ রয়েছে।
৭২৭. উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দ গুলো দু'বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দগুলো একবার করে বলতে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. আযানের পদ্ধতি
৭২৮. আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মাহযুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই আযান শিখিয়ে ছিলেন اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ (আল্লাহ মহান); أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই); أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল); এরপর আবার বলবে شْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ দুইবার أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ দুইবার। حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য এস) দুইবার, حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ (কল্যাণের দিকে এস) দুইবার। ইসহাক তার বর্ণনায় اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ এবং لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বাক্য দু’টি বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. এক মসজিদের জন্য দুইজন মু'আযযিন নির্ধারণ করা মুস্তাহাব
৭২৯. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই জন মু’আযযিন ছিল। বিলাল এবং দৃষ্টিহীন সাহাবী ইবনু উম্মু মাকতূম।
৭৩০. ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) সুত্রেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. যদি দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন কেউ সাথে থাকে তবে অন্ধ ব্যাক্তির আযান দেয়া জায়েয
৭৩১. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল হামদানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতিক্রমে আযান দিতেন। আর তিনি ছিলেন দৃষ্টিহীন।
৭৩২. মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) ... হিশাম এর সুত্রেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দারুল কুফর বা অমুসলিম দেশে কোন গোত্রে আযানের ধ্বনি শোনা গেলে সেই গোত্রের উপর হামলা করা থেকে বিরত থাকা
৭৩৩. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে শক্রর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতেন। আযান শোনার অপেক্ষা করতেন। আযান শুনতে পেলে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন। আযান শুনতে না পেলে আক্রমণ করতেন। একবার তিনি কোন এক ব্যাক্তিকে اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলতে শুলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ফিতরাত (দ্বীন ইসলাম) এর উপর রয়েছ। এর পর সে ব্যাক্তি أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে এলে। সাহাবায়ে কিরাম লোকটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখতে পেলেন যে, সে ছিল একজন ভেড়ার রাখাল।
পরিচ্ছেদঃ ৭. আযানের জবাবে মু'আযযিনের অনুরূপ বলা মুস্তাহাব। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর দুরুদ পাঠ করা এবং তার জন্য ওয়াসীলার দু'আ করা
৭৩৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমরা আযান শুনবে তখন মু-আযযিন যা বলে তাই বলবে।
৭৩৫. মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মু'আযযীনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৭৩৬. ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু'আযযিন যখন اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলে তখন তোমাদের কেউ যদি اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলে। তারপর মু-আযযিন যখন أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে, তখন সেও أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে। অতঃপর মু’আযযিন যখন أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে, তখন সেও أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে। পরে মু’আযযিন যখন حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলে, তখন সে لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ বলে। এরপর মু’আযযিন যখন اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলে, তখন সেও اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলল। তারপর মু’আযযিন যখন لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে, তখন সেও لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলল-এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৭৩৭. মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি মু-আযযিনের আযান শুনে নিম্নের দুঁআটি পাঠ করে তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়ঃ
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا
"আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি সন্তুষ্ট আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে এবং মুহাম্মাদ কে রাসুল হিসেবে পেয়ে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. আযানের ফযীলত এবং তা শুনে শয়তানের পলায়ন
৭৩৮. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... তালহা ইবনু ইয়াহইয়ার চাচা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি (একবার) মু’আবিয়া (রাঃ) ইবনু আবূ সুফিয়ানের কাছে ছিলাম। মু’আযযিন এসে তাকে সালাত (নামায/নামাজ) এর জন্য ডাকল। মু’আবিয়া (রহঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনদের ঘাড় সকলের চেয়ে লম্বা হবে।*
* বেশী মর্যাদা হবে।
৭৩৯. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... মুঅবিয়া (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭৪০. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান শোনে তখন (মদিনা থেকে) রাওহা পর্যন্ত চলে যায়। সুলায়মান (আ’মাশ) বলেন, আমি রাবী আবূ সুফিয়ান কে (রাওহা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ জায়গাটি মদিনা থেকে ছত্রিশ (৩৬) মাইল দুরে অবস্থিত।
৭৪১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়বের সুত্রে আ’মাশ থেকেও হাদীসটি বর্ণিত আছে।
৭৪২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শয়তান যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান শোনে তখন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালায় যাতে সে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। অতঃপর আযান যখন থেমে যায় তখন ফিরে এসে ওয়াসওসা (ধোঁকা) দেয়। তারপর যখন ইকামাত শোনে তখন আবার চলে যায় যাতে তার শব্দ সে শুনতে না পায়। অতঃপর যখন তা (ইকামাত) শেষ হয় তখন ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা (ধোঁকা) দেয়।
৭৪৩. আব্দুল হামীদ ইবনু বায়ান আল ওয়াসিতী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু’আযযিন যখন আযান দেয় শয়তান তখন পেছন ফিরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে।
৭৪৪. উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) ... সূহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বানূ হারিসা নামক গোত্রের কাছে পাঠালেন। আমার সাথে তখন আমাদেরই একটি গোলাম ছিল, বর্ণনান্তরে (তিনি বলেন) আমার একজন সঙ্গী ছিল। অতঃপর একটি বাগানের প্রাচীর থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাক দিল। তিনি বলেন, আমার সঙ্গী তখন প্রাচীরের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল, কিন্তু কিছু দেখতে পালনা। পরে এ ঘটনা আমি আমার পিতার কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আমি যদি জানতাম যে, তুমি এরুপ অবস্থসার সম্মূখীন হবে তাহলে তোমাকে আমি পাঠাতাম না। তুমি (ভবিষ্যতে) যখন এরুপ আওয়াজ শুনবে তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিবে। কারণ আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে।
৭৪৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পিছন ফিরে দৌড় দেয়, যাতে সে আযানের ধ্বনি শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে আবার ফিরে আসে। আর যখন ইকামাতের তাকবীর বলা হয় তখন আবার পিছন দিকে ফিরে দৌড় দেয়। ইকামাত শেষ হলে ফিরে আসে এবং মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা (ধোঁকা) দেয়। সে তাকে এমন সব জিনিসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যা সে ইতিপূর্বে মনেও করেনি। ফলে সে কয় রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল তা ঠিক মনে করতে পারে না।
৭৪৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তাতে আছে যে, ফলে সে কিভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল তা খেয়াল করতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. তাকবীরে তাহরীমা, রুকু এবং রুকু থেকে উঠার পর উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠানো মুস্তাহাব; সিজদা থেকে উঠার পর এরূপ করতে হবে না
৭৪৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বাকর ইবন আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সালিম-এর পিতা ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তা একেবারে তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। আর রুকু করার পূর্বে এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন (তখনো অনুরুপ ভাবে হাত উঠাতেন)। কিন্তু উভয় সিজদার মাঝখানে তিনি হাত উঠাতেন না।
৭৪৮. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমন কি তা তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। তারপর তাকবীর বলতেন। পরে যখন রুকু করার ইরাদা করতেন তখন ও অনুরুপ করতেন। আবার রুকু থেকে যখন উঠতেন তখনও অনুরুপ করতেন। কিন্তু সিজদা থেকে যখন মাথা তুলতেন তখন এরুপ করতেন না।
৭৪৯. মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাহযায (রহঃ) ... যুহরি (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে ইবনু জুরায়জ (রহঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন তারপর তাকবীর বলতেন।
৭৫০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রাঃ) কে দেখলেন, তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বলে উভয় হাত উঠালেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করলেন তখন উভয় হাত উঠালেন। আর রুকু থেকে যখন মাথা উঠালেন তখন আবারও হাত উঠালেন এবং (পরে) বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করতেন।
৭৫১. আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) … মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবির (তাকবীরে তাহরিমা) বলে উভয় কান বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখনও কান বরাবর উভয় হাত উঠাতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা তুলে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন তখনো অনুরুপ করতেন।
৭৫২. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন যে, মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রহঃ) বলেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কান বরাবর হাত তুলতে দেখেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. সালাতের মধ্যে প্রত্যেক নিচু এবং উঁচু হবার সময় الله اكبر বলা, তবে রুকু থেকে উঠার সময় বলবে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
৭৫৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) (একবার) তাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামতি করলেন, তিনি সব কয়বার নিচু হওয়ার এবং উঠার সময় الله اكبر বললেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করার পর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিক দিয়ে তোমাদের অপেক্ষা আমিই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সদৃশ্যপূর্ণ।
৭৫৪. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এ দাঁড়াতেন তখন দাঁড়িয়ে الله اكبر বলতেন। তারপর রুকু করার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকু থেকে পিঠ তুলতেন তখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন। তারপর দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ তারপর সিজদায় ঝুকবার সময় তাকবির বলতেন। তারপর সিজদা থেকে যখন মাথা উঠাতেন তখন তাকবীর বলতেন। তারপর সিজদা করার সময় (আবার) তাববীর বলতেন। তারপর মাথা তুলবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করা পর্যন্ত পূর্ণ সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করতেন। তারপর দুই রাকআতের বৈঠকের পর উঠে দাঁড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, তোমাদের সকলের চাইতে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সঙ্গে অধিক সদৃশ্যপূর্ণ।
৭৫৫. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এ দাঁড়াতেন তখন দাঁড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। অতঃপর ইবনু জুরায়জ এর হাদীসের অনুরুপ। কিন্তু তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর উক্তি 'তোমাদের সকলের চেয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিক দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সঙ্গে অধিক সদৃশ্যপূর্ণ' এর উল্লেখ করেননি।
৭৫৬. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে মারওয়ান যখন মদিনার গভর্ণর নিযুক্ত করেন, তখন তিনি ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়ালে তাকবীর বলতেন। এরপর ইবনু জুরায়জ-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তার হাদীসে (আরো) রয়েছে যে, অতঃপর তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন এবং সালাম ফিরাতেন তখন মসজিদে উপস্থিত লোকদের দিকে মুখ করে বলতেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জান! তোমাদের সকলের চেয়ে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সাথে বেশী সদৃশ্যপূর্ণ।
৭৫৭. মুহাম্মদ ইবনু মিহরান আর রাযি (রহঃ) ... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) প্রত্যেকবার উঁচু এবং নিচু হবার সময় তাকবীর বলতেন। আমরা বললাম, হে আবূ হুরায়রা! এ কেমন তাকবীর? তিনি বললেন, এটাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)।
৭৫৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ এর সুত্রে সুহায়ল-এর পিতা থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রত্যেকবার নিচু এবং উঁচু হবার সময় তাকবীর বলতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করতেন।
৭৫৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ... মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আলী আবূ তালিব (রাঃ) এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেন। আর যখন (সিজদা থেকে) মাথা তূললেন তখন তাকবীর বললেন। আর যখন দু’রাকআতের পর দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বললেন। অতঃপর আমরা যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলাম তখন ইমরান (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেন, ইনি আমাদের কে নিয়ে ঠিক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। অথবা তিনি বলেন, ইনি আমাকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রতি রাক'আতে সূরা ফাতিহা পড়া জরুরী, যে ফাতিহা ভালো করে জানে না এবং তা শিক্ষা করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়, সে তার জন্য যা সহজ তাই পাঠ করবে
৭৬০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উবাদা ইবনুুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করবে না তার (পরিপূর্ণ) সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬১. আবূত তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করল না তার সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬২. আল হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানি (রহঃ) ... উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে উম্মুল কুরআন পাঠ করবে না তার সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ হুমায়দ- (রহঃ) এর সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত আছে। সেখানে فَصَاعِدًا ‘আরেকটূ বেশী’ শব্দটি অতিরিক্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
৭৬৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আল হানযালী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল (অথচ) তাতে উম্মুল কুরআন পাঠ করল না সে সালাত (নামায/নামাজ) হবে অসম্পূর্ণ। তিনি তিনবার এটা বললেন। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা তো ইমামের পেছনে থাকি (তখনো কি ফাতিহা পড়ব?) তিনি বললেন, তখন মনে মনে তা পড়। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক করে ভাগ করেছি। আর বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য); আল্লাহ তা’আলা এর জবাবে বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু); আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুনাবলী বর্ণনা করেছে, গুণগান করেছে। অতঃপর সে যখন বলে, مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (কর্মফল দিবসের মালিক), তিনি বলেন, আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে। আর কখনো বলেছেন, আমার বান্দা (তার সব কাজ) আমার উপর সোপর্দ করেছে। সে যখন বলে, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি); তিনি বলেন- এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। যখন সে বলে, اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ (আমাদের সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথে যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, যারা ক্রোধ নিপতিত নয়, পথভ্রষ্টও নয়); তখন তিনি বলেন, এটা কেবল আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা চায় তা সে পাবে।
সুফিয়ান বলেন, আলা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ইয়া‘কুব (রহঃ) আমার কাছে তখন বর্ণনা করেন যখন তিনি বাড়ীতে অসুস্থ ছিলেন। আমি (শুশ্রূষার জন্য) তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। অতঃপর এ সম্পর্কে তার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
৭৬৫. কুতায়বা ইবন সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবন রাফি' (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ইবন রুমহের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল যাতে সে উম্মুল কুরআন পড়েনি। অতঃপর সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাদের উভয়ের হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি সালাত (নামায/নামাজ)কে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক করে ভাগ করেছি, এর অর্ধেক আমার জন্য এবং অর্ধেক আমার বান্দার জন্য।
৭৬৬. আহমাদ ইবনু জা’ফর আল মা'কিরী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল (অথচ) তাতে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করল না সে সালাত (নামায/নামাজ) অসম্পূর্ণ। তিনি তিনবার এ বাক্যটি বললেন, উপরের বর্ণনাকারীদের হাদীসের অনুরুপ।
৭৬৭. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সালাত (নামায/নামাজ) হবে না কিরা’আত ছাড়া। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সালাত (নামায/নামাজ) উচ্চস্বরে আদায় করেছেন তোমাদের জন্য আমরাও তা উচ্চ স্বরে আদায় করি আর যা নিম্নস্বরে আদায় করেছেন আমরাও তা নিম্ন সবরে আদায় করি।
৭৬৮. আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতে (নামায)-এই কিরা’আত পাঠ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের কে শুনিয়ে কিরা’আত পাঠ করেছেন সে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমরাও তোমাদের কে শুনিয়ে পাঠ করি। আর যে সব সালাত (নামায/নামাজ)-এ কিরা’আত নীরবে পাঠ করেছেন সে সব সালাত (নামায/নামাজ)-এ আমরাও নীরবে পাঠ করি। অতঃপর তাকে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, আমি যদি উম্মুল কুরআন এর চেয়ে আর বেশী না পড়ি? তিনি বললেন, তুমি যদি উম্মূল কুরআনের পর আরো বেশী পড় তাহলে তা হবে উত্তম। আর যদি শুধু উম্মুল কুরআনই পড় তাহলে তা হবে তোমার জন্য যথেষ্ট।
৭৬৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতে কিরা’আত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে সালাত (নামায/নামাজ)-এ [কিরা’আত] শুনিয়েছেন, আমরাও সে সালাত (নামায/নামাজ)-এ তোমাদের কে শোনাই আর যে সালাত (নামায/নামাজ)-এ তিনি নীরবে পাঠ করেছেন আমরাও সে সালাত (নামায/নামাজ)-এ নীরবে পাঠ করি। যে ব্যাক্তি উম্মুল কিতাব (সূরা ফাতিহা) পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। আর যে আরো বেশী পাঠ করবে তা হবে উত্তম।
৭৭০. মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন একটি লোক প্রবেশ করল। সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তারপর এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন , ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কারণ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে সালাম করল। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিয়ে বললেন, ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কারণ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। এই রুপ তিনবার করলেন।
অতঃপর লোকটি বলল, আপনাকে সত্য নাবী করে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম! সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের এর চেয়ে ভাল কোন পন্থা থাকলে আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে। তারপর তুমি কুরআনের যতটুকু জানো তা থেকে যা সহজ হয় তাই পাঠ করবে। তারপর রুকু করবে। এমন কি নিবিষ্টভাবে (কিছুক্ষণ) রুকু করতে থাকবে। তারপর (রুকু থেকে) উঠবে, সোজা ভাবে (কিছুক্ষণ) দণ্ডায়মান থাকবে। তারপর সিজদা করবে। (কিছুক্ষণ) নিবিষ্টভাবে সিজদারত থাকবে। তারপর উঠে বসবে। এবং (কিছুক্ষণ) সোজাভাবে বসে থাকবে। তোমার গোটা সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করবে।
৭৭১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এক পাশে ছিলেন। এরপর রাবী উপরোক্ত ঘটনার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এ রিওয়ায়াতটিতে রাবীদ্বয় আরেকটু যোগ করেছেন যে, "যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইচ্ছা করবে তখন সুন্দর করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে তারপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীর বলবে"।
পরিচ্ছেদঃ ১২. ইমামের পেছনে মুকতাদীর জোরে কিরা'আত পাঠ নিষেধ
৭৭২. সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) আমাদের কে নিয়ে যুহর অথবা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে) তিনি বললেন, তোমাদের কে আমার পেছনে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى সুরাটি পড়ছিলে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। আর এর দ্বারা মঙ্গল লাভ ছাড়া আমার ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। তিনি বললেন, আমার মনে হল, তোমরা কেউ এ নিয়ে আমার পাঠে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭৩. মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এক লোক তার পেছনে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى সূরাটি পড়ল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে কিরা’আত পাঠ করেছ? অথবা বললেন, তোমাদের মধ্যে কিরা’আত পাঠ কারী কে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। তিনি বললেন , আমার মনে হচ্ছিল তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বললেন, আমি মনে করলাম তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. বিসমিল্লাহ্ সরবে পাঠ না করা
৭৭৫. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ) এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি, কিন্তু তাঁদের কাউকে بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ সরবে পড়তে শুনিনি।
৭৭৬. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি (নিজে) কি এটা আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম।
৭৭৭. মুহাম্মাদ ইবনুল মিহরান আর রাযী (রহঃ) ... আবদা থেকে বর্ণিত যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এই বাক্যগুলি সরবে পাঠ করতেনঃ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে লিখিতভাবে আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে জানান যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমার ও উসমান (রাঃ) এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তারা সবাই সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করতেন الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ পাঠ দিয়ে। তারা কিরাআতের শুরুতেও بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ উল্লেখ করতেন না, শেষেও না।
৭৭৮. মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান (রহঃ) ... ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে এই হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. যারা বলেন, বিসমিল্লাহ্ সূরা বারা'আত (তাওবা) ছাড়া সকল সুরার শুরুর আয়াত, তাদের দলীল
৭৭৯. আলী ইবনু হূজর আাস সা’দী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রার ভাব হল, এরপর তিনি মুচকি হেসে মাথা উঠালেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! কিসে আপনার হাসি এল? তিনি বললেন , এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এই বলে তিনি পড়লেন,
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ * فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ * إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الأَبْتَرُ
এরপর বললেন, তোমরা কি জানো (কাওসার) কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, সেটা হল একটি নহর। আল্লাহ তাআলা আমাকে যার ওয়াদা করেছেন। সেখানে বহু কল্যাণ রয়েছে। সেটি একটি জলাশয়। কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাত (পানি পানের জন্য) সেখানে আসবে। তার গ্লাসের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমান।
অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে একজন বান্দাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, পরোয়ারদেগার! সে তো আমার উম্মত। বলা হবে, আপনার জানা নেই যে, আপনার পরে এরা কি নতুন রীতি (বিদাআত) উদ্ভাবন করেছিল। ইবনু হুজর আরো একটু যোগ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে মসজিদে বসা ছিলেন। শেষে আছে আল্লাহ বলবেন, এ ব্যাক্তি যে আপনার পর কি কি বিদআত সৃষ্টি করেছিল (তা আপনি জানেন না)।
৭৮০. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইবনু মুসহির বর্ণিত (উপরিউক্ত) হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছুটা তন্দ্রার ভাব দেখা দিল । এ রিওয়াতে ‘হাউযের গ্লাসের সংখ্যা তারকার সমপরিমাণ' কথাটির উল্লেখ নেই। শুধূ এতটুকু বলা হয়েছে যে, তা (কাওসার) হল জান্নাতের একটি নহর যা আমার রব আমাকে দেয়ার ওয়াদা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তাক্বীরে তাহরিমার পর বুকের নীচে নাভীর উপরে বাম হাতের উপর ডান এবং সিজদায় উভয় হাত মাটিতে কান বরাবর রাখা
৭৮১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। রাবী হাম্মাম বলেন, উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। তারপর কাপড়ে ঢেকে নিলেন (গায়ে চাঁদর দিলেন)। তারপর তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। তারপর রুকু করার সময় তার উভয় হাত কাপড় থেকে বের করলেন। পরে উভয় হাত উঠালেন এবং তাকবীর বলে রুকুতে গেলেন। যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন , তখন উভয় হাত তুললেন। পরে উভয় হাতের মাঝখানে সিজদা করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. সালাতে তাশাহুদ পাঠ
৭৮২. যুহায়র ইবন হারব, উসমান ইবন আবু শায়বা ও ইসহাক ইবন ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সময় (বৈঠকে) বলতাম, السَّلاَمُ عَلَى اللَّهِ السَّلاَمُ عَلَى فُلاَنٍ (আল্লাহর উপর সালাম, অমুকের উপর সালাম) একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন, আল্লাহর নামই সালাম। তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এ বসে সে যেন বলেঃ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ
যাবতীয় মান-মর্যাদা, প্রশংসা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী, আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি নেমে আসুক। যখন সে একথাগুলো বলে তখন তা আল্লাহর প্রতিটি নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যায়, সে আসমানেই থাক অথবা জমীনে।
পরে বলবে أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।” এরপর তা যা মন চায় দু'আ করবে।
৭৮৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবন বাশশার (রহঃ) ... মানসুর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি "অতঃপর যা মনে চায় দু'আ করবে" কথাটি উল্লেখ করেন নি।
৭৮৪. আবদ ইবন হুমায়দের সুত্রে মানসূর (রহঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। তিনি তার রেওয়ায়াতে উল্লেখ করেন যে, তারপর যে দু'আ তার ইচ্ছা বা পছন্দনীয়, তা করবে।
৭৮৫. ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যখন সালাতে (তাশাহুদের জন্য) বসতাম, এরপর মনসূর এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। শেষে তিনি বলেন, "এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর যে কোন দু'আ করবে।"
৭৮৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাশাহুদ শিক্ষা দিয়েছেন, আমার হাত তাঁর হাতের মধ্যে রেখে, যেমনিভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। এবং তিনি অন্যান্য রাবীর তাশাহুদের ন্যায় বর্ণনা করেছেন।
৭৮৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনি ভাবে আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন তেমনি ভাবে আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন,
التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
ইবনু রুমহ এর বর্ণনায় রয়েছে, "যেভাবে আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন।"
৭৮৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন, যেমনিভাবে শিক্ষা দিতেন আমাদেরকে কুরআনের সূরা।
৭৮৯. সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ কামিল আল জাহদারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক আল উমাবী (রহঃ) ... হিত্তান ইবনু আবদুল্লাহ আর রুকাশী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন (একবার) আমি আবূ মূসা (রাঃ) এর সাথে এক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি যখন তাশালূদের বৈঠকে ছিলেন তখন মুসল্লীদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি বলে উঠল, أُقِرَّتِ الصَّلاَةُ بِالْبِرِّ وَالزَّكَاةِ (সালাত (নামায/নামাজ) নেকী ও যাকাতের সাথে ফরয করা হয়েছে)। হিত্তান বলেন, আবূ মূসা যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন এবং সালাম ফিরালেন তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে এই ধরনের কথা কে বলেছে? সবাই চুপ করে রইল। তিনি আবার বললেন, এরকম কথা তোমাদের কে বলেছে? সবাই চুপ রইল। তিনি বললেন, “হিত্তান! তুমিই হয়ত এরকম বলেছ। হিত্তান বললেন, আমি এটা বলিনি। আমি ভয় করলাম যে, আপনি এ কারনে আমাকে তিরস্কার করবেন। অতঃপর এক ব্যাক্তি বলল, আমি এটা বলেছি। আর আমি এটা কেবলমাত্র সাওয়াব হাসিলের জন্য বলেছি”।
আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) কি বলবে তা জান না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে খুতবা দিলেন। তিনি আমাদের করনীয় কাজসমূহ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করলেন এবং আমাদেরকে সালাত (নামায/নামাজ) শিক্ষা দিয়ে বললেন যখন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইচ্ছা করবে তখন তোমাদের কাতার সোজা করবে। তারপর তোমাদের একজন ইমামত করবে। ইমাম যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরা সবাই তাকবীর বলবে আর যখন وَلاَ الضَّالِّينَ বলবে তখন তোমরা آمِينَ বলবে। এতে আল্লাহ তোমাদের দুই দু’আ কবুল করবেন।
অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলবে এবং রুকু করবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং রুকু করবে। কারন ইমামকে তোমাদের আগে রুকুতে যেতে হয় এবং তোমাদের আগে উঠতে হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফলে তোমাদের এই দেরি করাটা (ইমামকতৃক আগে করা) এর বদলা হয়ে যায়। আর যখন ইমাম سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলবে তখন তোমরা বলবে اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ আল্লাহ তাআলা তোমাদের দুয়া শুনেন।
কারন তিনি তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যবানিতে বলেছেন যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শুনেন। আর যখন ইমাম তাকবীর বলবে এবং সিজদা করবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং সিজদা করবে। কারণ ইমাম তোমাদের আগে সিজদা করে এবং তোমাদের আগে উঠে।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফলে তোমাদের এই দেরী করা (ইমামকতৃক আগে করা) এর বদলা হয়ে যায়। ইমাম যখন তাশাহুদে বসবে তখন সর্বপ্রথমে তোমরা বলবে,
التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
৭৯০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) আরো একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, "ইমাম যখন কিরা’আত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে।" আবূ কামিল (রহঃ) আবূ আওয়ানা (রহঃ) থেকে যে রিওয়াত করেছেন সেটিতে ছাড়া আর কারো বর্ণনায় এ বাক্যটি নেই যে, কারণ আল্লাহ তাআলা তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যবানীতে বলেছেন, যে তার প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন।
ইসহাক (ইমাম মূসলিমের ছাত্র) বলেন, আবূ নযর-এর ভাগিনা আবূ বাকর (রহঃ) এ রিওয়াত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বললেন, তুমি কি কাউকে সুলায়মান থেকে বেশী স্মরণশক্তিসম্পন্ন বলে মনে কর? আবূ বাকর (রহঃ) বললেন, তাহলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীস? অর্থাৎ ইমাম যখন কিরা’আত পড়ে তখন তোমরা চুপ থাক” (এটার কি হবে?) তিনি বললেন, এটা আমার কাছে সহীহ। আবূ বাকর বললেন, তাহলে সেটা আপনি এখানে কেন আনলেন না? তিনি জবাব দিলেন, আমি সব সহীহ হাদীসই এখানে আনছি না বরং এখানে কেবল সেগুলোই আনছি যার উপর মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
৭৯১. ইসহাক ইবন ইবরাহীম ও ইবন আবু উমর (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে এ হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি তার রেওয়ায়াতে বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর নাবীর যবানীতে বলেছেন, "যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ্ তা শোনেন।"
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তাশাহুদ এর পর নবী (ﷺ) এর উপর দুরুদ পাঠ
৭৯২. ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া আত-তামিমী (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর মস্লিসে বিসা ছিলাম। অতঃপর বশীর ইবনু সা‘দ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা'আলা আপনার উপর সালাত পাঠ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত পাঠ করব? আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। এমনকি আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম যে, তাঁকে যদি এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা না হত (ত হলে খুবই ভালো হত)। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলন, তোমরা বলবেঃ
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
আর সালাম দেয়ার নিয়ম তো তোমাদের জানাই আছে
৭৯৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এক বার কাবা ইবনু উজরা (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না? একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন! আমরা বললাম, (ইয়া রাসুলাল্লাহ!) আপনাকে কিভাবে সালাম দিতে হয় তাতো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর সালাত আমরা কি ভাবে পাঠ করব? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
[উচ্চারনঃ “আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।]
৭৯৪. যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব এর সুত্রে হাকাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি ‘আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না’ বাক্যটি উল্লেখ করেন নি।
৭৯৫. মুহাম্মাদ ইবনু বাককার-এর সুত্রে হাকাম (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি তার রিওয়াতে শুধু وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ এর উল্লেখ করেছেন। اللَّهُمَّ শব্দটির উল্লেখ করেন নি।
৭৯৬. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ আস সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত পাঠ করব? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ
للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
৭৯৭. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রাব্বানা লাকাল হামদ এবং আমীন বলা
৭৯৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামীদা) বলেন, তোমরা তখন اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ) বলবে। কেননা, যার বাক্য ফিরিশতাদের বাক্যের অনুরুপ হবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে।
৭৯৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮০০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম আমীন বলবেন, তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা, যে ব্যাক্তি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে একই সময় আমীন বলবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে। রাবী ইবনু শিহাব বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলতেন।
৮০১. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, এই বলে মালিকের হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনু শিহাবের কথা উল্লেখ করেননি।
৮০২. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আমীন বলবে ও ফেরেশতারা আকাশের উপর আমীন বলবে এবং উভয়টি একই সময় হবে, যখন তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮০৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা আল কানাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমীন বলবে এবং ফেরেশতারা আকাশের ওপর আমীন বলবেন, আর উভয়টি একই সময় উচ্চারিত হবে তখন তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮০৪. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮০৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআন পাঠকারী (ইমাম) যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন এবং তাঁর পিছনের ব্যাক্তি (মুকতাদী) آمِينَ বলবে, এবং তার বাক্য আকাশবাসীর (ফেরেশতার) বাক্যর অনুরুপ একই সময় উচ্চারিত হবে, তখন তার পূর্ববর্তী সমুদয় পাপ মোচন হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. মুকতাদী কর্তৃক ইমামের অনুসরণ
৮০৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার দরুণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের দক্ষিন পাশ ছিলে যায়। আমরা তাকে দেখতে গেলাম। ইতিমধ্যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হল। তিনি আমাদের নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও বসে বসে তার পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার পর তিনি বললেন, অনুসরণ করার জন্য ইমাম মনোনীত হন। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বল, তিনি যখন সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা কর, তিনি যখন উঠেন, তোমরাও উঠবে। তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলবেন, তোমরা তখন رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বল। আর তিনি যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তোমরাও তখন বসেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।
৮০৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্বপৃষ্ঠ হতে পড়ে গিয়ে তাঁর ডান পাজরে আঁচড়ে গেল। অতঃপর বসে বসে আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ তিনি উপরোক্তরূপ বর্ণনা করেন।
৮০৮. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া হতে পড়ে গেলেন। তাঁর ডানপাশ আঁচড়ে গেল। তারপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি একটি কথা বেশী বলেছেন, তা হলো, ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তোমরাও তখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮০৯. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সাওয়ার হলেন। তারপর পড়ে গিয়ে তার ডান পার্শ্বদেশ আঁচড়ে গেল। এরপর তিনি উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ননা করেন। এতেও বলা হয়েছে যে, "ইমাম যখন দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন তখন তোমরাও দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।"
৮১০. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং দক্ষিণ পার্শ্বদেশ আঁচড়ে গেল। তারপর তিনি পূর্বানুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। কিন্তু এতে ইউনুস ও মালিকের বর্ণিত অতিরিক্ত কথাটি নেই।
৮১১. আবূ বাকর ইবনু আবু শায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে তার শুশ্রূষার জন্য সাহাবায়ে কিরাম আগমন করলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিছুলোক দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলে তিনি তাদেরকে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে ইশারা করলেন। তাই তারা বসে পড়লেন। সালাত (নামায/নামাজ) সমাপনান্তে তিনি বললেন, ইমাম নিয়োগ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। আর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১২. আবূ রাবী আয-যাহরানী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) … হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৮১৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুগ্নবস্থায় আমরা তাঁর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) (মুকাব্বির হিসাবে) লোকদেরকে তাঁর তাকবীর শোনাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে দেখলেন যে, আমরা দাঁড়িয়ে। তিনি আমাদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন আমরা বসলাম। এবং আমরা তার পেছনে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। অতঃপর সালামান্তে তিনি বললেন, এই মুহূর্তে যে কাজটি করেছ, তা পারস্য ও রোমবাসীদের অনুরুপ। তারা তাদের সম্রাটের সন্মুখে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সম্রাট থাকে বসে। তোমরা এরুপ কখনো করবে না। বরং সর্বদা স্বীয় ইমামের অনুসরণ করবে। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ালে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে আদায় করবে।
৮১৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং আবূ বাকর তার পিছনে ছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলতেন আবূ বকরও আমাদেরকে শোনাবার জন্য তাকবীর বলতেন। তারপর লায়স কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮১৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অনুসরণের জন্য ইমাম মনোনীত হন। তোমরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললে তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে।। তিনি সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করবে। আর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও সকলে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০. তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ইমামের অগ্রগামী হওয়া নিষেধ
৮১৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তালিম দিতেন এবং বলতেন যে, তোমরা ইমামের থেকে আগে বেড়ে যেও না। তিনি তাকবীর বললে তোমরা তাকবীর বলবে। তিনি وَلاَ الضَّالِّينَ বললে তোমরা آمِينَ বলবে। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললে তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে।
৮১৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন। এই সনদের বর্ণনায় وَلاَ الضَّالِّينَ এরপর آمِينَ বলার কথাটি নেই। তবে "তোমরা ইমামের আগে (মাথা) উঠাবে না" এই কথাটি বেশী আছে,
৮১৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... অবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম হলেন ঢালস্বরুপ। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললে তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে। পৃথিবীবাসীর (মুসল্লির) কথা যখন আকাশবাসীর (ফেরেশতার) কথার অনুরুপ হবে, তখন তার বিগত সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮২০. আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় অনুসরণের উদ্দেশ্যে। তিনি তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললে তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও দাড়িয়ে আদায় করবে। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
পরিচ্ছেদঃ ২১. ইমাম কর্তৃক রোগ, সফর ইত্যাদি ওযরের কারণে সালাত আদায়ে স্বীয় প্রতিনিধি নিযুক্তকরণ; ইমাম যদি কোন ওযরে বসে সালাত আদায় করেন এবং মুকতাদী দাঁড়াতে সক্ষম হয়, তবে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে; কেননা দণ্ডায়মানাক্ষম মুকতাদীর বসে সালাত আদায় করার হুকুম রহিত হয়ে গেছে
৮২১. আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুখের বৃত্তান্ত জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগাক্রান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন লোকজন কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম, জী না। তারা আপনার প্রতীক্ষায় আছে। তিনি বললেন আমার জন্য গামলায় পানি রাখ। আমি পানি দিলাম। তিনি গোসল করলেন। অতঃপর গমনোদ্যত হলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। চেতনা পেয়ে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম জী না, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! তারা আপনার অপেক্ষা করছে।
তিনি বললেন, গামলায় পানি দাও আমি তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। অতঃপর গমনোদ্যত হলে পূনরায় সংজ্ঞাহারা হলেন। সংজ্ঞা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম, জী না, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! তারা আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বললেন, গামলায় পানি দাও। আমি তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন এবং গমনোদ্যত হয়ে বেহুশ হয়ে পড়লেন। অতঃপর হুশ হলে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে। আমি বললাম জী না, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের অপেক্ষায় মসজিদে বসেছিল। অবশেষে তিনি লোক মারফত আবূ বকর (রাঃ) কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বলে পাঠালেন। লোকটি আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করার আদেশ করেছেন। আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাই উমার (রাঃ) কে বললেন হে উমার! তুমি সালাত (নামায/নামাজ) পড়িয়ে দাও। উমার (রাঃ) বললেন জী না, আপনই এই কাজের অধিক যোগ্য ব্যাক্তি।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, সুতরাং আবূ বকর (রাঃ) ঐ কয়েক দিন সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করেন। ইত্যবসরে একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিত সুস্থবোধ করলেন। এবং দুই জন মানুষের কাঁধে ভর করে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে মসজিদে গেলেন। ঐ দু’জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ)। রাসুলূল্লাহ মসজিদে পৌছে দেখেন যে, আবূ বকর (রাঃ) ইমাম হিসাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। তিনি তাঁকে দেখে পিছে হাটতে চাইলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাঁকে পিছে হটতে বারণ করলেন। এবং স্বীয় সঙ্গী দু’জনকে বললেন যে, আমাকে আবূ বকর (রাঃ) এর পাশে বসিয়ে দাও তারা তাঁকে আবূ বকর (রাঃ) এর পাশে বসিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করতে লাগলেন।লোকজন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে আবূ বকর (রাঃ) এর অনুসরণ করছিল।
উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট পৌঁছে বললাম, আমি কি আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগকালীন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আয়িশা (রাঃ) কতৃক বর্ণিত হাদীসটি শোনাবো? তিনি বললেন, বর্ণনা কর। আমি তাঁকে হাদীসটি শোনালাম, তিনি পুরা হাদীসের কোথাও আপত্তি করলেন না বটে, কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আব্বাস (রাঃ) এর সাথে অপর ব্যাক্তিটির নাম কি তোমার কাছে আয়িশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম, জী না! তিনি বললেন, সেই ব্যাক্তি ছিলেন আলী (রাঃ)।
৮২২. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মায়মুনা (রাঃ) এর গৃহে অসুস্থ হয়ে পড়েন! অতঃপর তাঁর সকল সহধর্মিনীর নিকট আয়িশা (রাঃ) এর গৃহে পরিচর্যা লাভের আকাংখা প্রকাশ করেন। তারা সকলেই অমুমতি প্রকাশ করলেন। একদিন তিনি মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হলেন। তার একখানা হাত ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাঁধের উপর এবং অপর হাত খানা অন্য এক ব্যাক্তির কাঁধের উপর ছিল। দুর্বলতার জন্য মাটিতে পা হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে চলছিলেন। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীসটি ইবনু আববাস (রহঃ) কে শোনালে তিনি বললেন, আয়িশা (রাঃ) অন্য যে ব্যাক্তির নাম উচ্চারণ করেননি, তাঁর নাম কি তুমি জানো? তিনি ছিলেন আলী (রাঃ)।
৮২৩. আব্দুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনুল লায়স (রহঃ) … রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত হয়ে পড়লেন এবং ক্রমেই পীড়া বৃদ্ধি পেয়ে চলল, তখন তিনি আমার ঘরে পরিচর্যা লাভের জন্য তার স্ত্রীগণের নিকট অনুমতি চাইলেন। তারা সকলেই তাঁকে অনুমতি প্রদান করলেন। (ঐ সময়ে একদিন) তিনি দুই ব্যাক্তির সহায়তায় মাটিতে দুই পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন। একজন আব্বাস ইবনু আবাদুল মুত্তালিব (রাঃ) এবং আরেকজন অন্য ব্যাক্তি। উবায়দুল্লাহ বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর এই বর্ণনাটি আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে অবহিত করলে তিনি বললেন, আয়িশা (রাঃ) যে ব্যাক্তির নাম উচ্চারন করেননি, তার নাম কি তুমি জানো? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি আলী (রাঃ)।
৮২৪. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনুল লায়স (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার পিতা আবূ বাকর (রাঃ) কে সালাত পড়াবার আদেশ দিলেন তখন আমি এই নির্দেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তাঁকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলাম। আমার এই পূনঃপূনঃ অনুরোধ এই কারণে ছিল আমার মনে এই ধারণার উদ্রেক যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্থানে যে দাঁড়াবে (ইমামত করবে) লোকেরা তাকে সর্বদা ভালবাসবে, বরং আমার ধারণা হল যে, তারপর যে ব্যাক্তি তাঁর স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামত করবে লোকেরা তাকে অপয়া বলবে, তাই আমি চেয়েছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই নির্দেশ আবূ বকর (রাঃ) হতে অন্যত্র সরে যাক।
৮২৫. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পীড়িত অবস্থায়) আমার গৃহে প্রবেশ করে পরে বললেন, আবূ বকরকে আদেশ (শুনিয়ে) দাও, সে যেন লোকদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামত করে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয় ব্যাক্তি। তিনি যখন কুরআন পাঠ করেন, তখন অশ্রু সংবরণ করতে পারেননা। আপনি যদি আবূ বকর (রাঃ) কে ব্যতীত অন্য কাউকে আদেশ করতেন (তবে উত্তম হতো)। আল্লাহর কসম! আমার এ কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল, যেন লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্থানে সর্বপ্রথম দাঁড়ানোর কারনে তাঁর সম্পর্কে অপয়া হবার ধারণা করতে না পারে। তাই আমি এ ব্যাপারে তাঁর সাথে দু-তিন বার অনুরোধের পীড়াপীড়ি করেছি। এরপরেও তিনি বললেন, আবূ বাকর যেন লোকের সালাত (নামায/নামাজ)-এ ইমামতি করে। (এবং বললেন) তোমরা হচ্ছ ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সঙ্গিনীদের অনুরুপ।
৮২৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্থ অবস্থায় বিলাল (রাঃ) তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামতের জন্য ডাকতে আসলেন। তিনি বললেন, যাও, আবূ বকরকে ইমামতি করতে বল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! তিনি নিতান্ত নরম মানুষ। তিনি আপনার স্থানে দাড়িয়ে লোকদেরকে কুরআন পাঠ করে শোনাতে পারবেন না। আপনি উমারকে আদেশ করলে উত্তম হবে। কিন্তু তিনি তবুও বললেন, যাও, আবূ বকরকে ইমামতি করতে বল।
এরপর আমি হাফসাকে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবূ বকর অতি নরম লোক। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে মানুষকে কুরআন শোনাতে পারবেন না! আপনি উমারকে আদেশ করলে ভাল হবে। হাফসা তাঁকে তাই বললেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, তোমরা অবশ্যই ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সঙ্গিনীদের ন্যায়। যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। শেষ পর্যন্ত লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) -কে নির্দেশ শোনালেন এবং তিনি লোকদের ইমামত করলেন।
তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করার এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিৎ সুস্থবোধ করলেন। তিনি দুই জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে মসজিদে প্রবেশ করলে তাঁর আগমন শব্দ পেয়ে আবূ বকর (রাঃ) পিছনে সরে আসার উপক্রম করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাকে তাঁর স্থানে দন্ডায়মান থাকতে বললেন এবং নিজে এসে আবূ বকর (রাঃ) এর বামপাশে বসে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামত করছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দন্দায়মান অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করছিলেন। আর অন্য মুসল্লীগণ আবূ বকর (রাঃ) এর সালাত (নামায/নামাজ) এর অনুসরণ করছিল।
৮২৭. মিনজাব ইবনুল হারিস আত-তামীমী (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। এদের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু রোগে যখন আক্রান্ত হলেন। ইবনু মুসহিরের হাদীসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে এসে তার [আবূ বকর (রাঃ) এর] পাশে বসিয়ে দেওয়া হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের ইমামতি করছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) তাদেরকে তাকবীর শোনাচ্ছিলেন। ঈসার হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পাশে থেকে লোকদেরকে শোনাচ্ছিলেন।
৮২৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ) এবং ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত অবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) কে ইমামতি করার নির্দেশ দান করেন। সে মতে তিনি ইমামতি করতে থাকেন। রাবী উরওয়া (রহঃ) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিৎ সুস্থ বোধ করলে মসজিদে গমন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তাঁকে দেখতে পেয়ে আবূ বকর (রাঃ) পশ্চাতে সরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইশারায় তাঁর স্থানে থাকতে বললেন এবং নিজে তাঁর বরাবর পাশে বসে পড়লেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইমামতিতে আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং অন্যান্য মুসল্লীগণ আবূ বকরের ইমামতিতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৮২৯. আমর আন নাকিদ (রহঃ), হাসান আল হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুরোগ শয্যায় শায়িতাবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) তাদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করতে থাকেন। এভাবে যখন সোমবার দিন সকলে সারিবদ্ধ হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কক্ষের পর্দা উত্তোলন করে দাঁড়ানো অবস্থায় আমাদের দিকে তাকালেন। (উজ্জলতায়) তাঁর পবিত্র মুখমন্ডল যেন কুরআনের পৃষ্ঠা। তিনি ঈষৎ হাসলেন। এদিকে আমরাও সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যেই তাঁর আগমনের খুশিতে অভিভুত হয়ে উঠলাম।
আবূ বকর (রাঃ) মনে করলেন যে, সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হচ্ছেন। তাই পিছনে সরে আসতে উদ্যত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করে বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পন্ন কর। অতঃপর তিনি তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে দরজার পর্দা ফেলে দিলেন। এবং ঐ দিনই তিনি ইন্তেকাল করেন। আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শেষ বারের মত দেখেছিলাম যখন তিনি সোমবার দিন হূজরার পর্দা উত্তোলন করেছিলেন। এবং এ প্রসঙ্গে রাবী সালিহ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি অধিক পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ।
৮৩০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন সোমবার হল, তারপর উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৩১. মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট তিন দিন যাবত বের হননি। (তিন দিনের পরের ঘটনা) এক সালাত (নামায/নামাজ)-এ ইকামত দেয়া হল। আবূ বকর (রাঃ) সামনে অগ্রসর হবেন ইত্যবসরে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা উত্তোলন করলেন। আমরা তাঁর চেহারা মুবারক অবলোকন করলাম তাকে এমন দেখা যাচ্ছিল যে, সেরুপ অপূর্ব দৃশ্য আগে আর আমরা ইতিপূর্বে কখনো দেখি নি। তিনি হাতের ইশারায় আবূ বাকর (রাঃ) কে সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। এরপর আর তিনি ওফাত পর্যন্ত আর বের হতে পারেননি।
৮৩২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত হয়ে পড়লেন। ক্রমেই তার পীড়া বৃদ্ধি পেতে লাগল। তিনি বললেন, আবূ বকরকে নির্দেশ শুনিয়ে দাও, যেন সে লোকদের সালাতে ইমামতি করে। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আবূ বকর হচ্ছেন নরম মানুষ। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়াতে পারবেন না। তবু তিনি বললেন, যাও, আবূ বকরকেই ইমামতি করতে বল। তোমরা হচ্ছো ইউসুফের সঙ্গিনীদের অনুরূপ। এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আবূ বকর (রাঃ)-ই লোকদের সালাত (নামায/নামাজ)-এ ইমামতি করেন।
No comments: