সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ সাহাবী (রাঃ) গনের ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ১. আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর ফযীলত
৫৯৫৩. যুহায়র ইবনু হারব, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা গুহায় থাকা অবস্থায় আমাদের মাথার উপর মুশরিকদের পা দেখতে পেলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায়, তা হলে পায়ের নিচেই আমাদের দেখতে পাবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ বকর! তুমি সে দু'জন সম্পর্কে কি মনে কর যাদের সাথে তৃতীয়জন (হিসেবে) আল্লাহ রয়েছেন।
৫৯৫৪. আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর বসলেন এবং বললেন, আল্লাহর একজন বান্দা, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ইখতিয়ার দিয়েছেন যে, তাকে পার্থিব সম্পদ দিবেন, না আল্লাহর কাছে যা আছে, তা। অতএব এ বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা বেছে নিলেন। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমাদের পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক। ইখতিয়ার প্রাপ্ত এ বান্দাটি ছিলেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আবূ বকরই আমাদের সবার চেয়ে জ্ঞানী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উপর সর্বাধিক অনুগ্রহ আবূ বকরের, সম্পদে ও সঙ্গ দানেও। আমি যদি কাউকে পরম বন্ধু বলে গ্রহণ করতাম, তাহল আবূ বকরকেই করতাম। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্বই (যথেষ্ট) আছে। মসজিদে যেন কারো ছোট দরজা না থাকে, শুধু আবূ বকরের ছোট দরজা ব্যতীত।
৫৯৫৫. সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে ভাষন দিলেন ...... এরপর মালিক (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বললেন।
৫৯৫৬. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আল আবদী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি বন্ধু গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বকরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম। কিন্তু তিনি আমার ভাই এবং সাথী। আর তোমাদের সাথীকে আল্লাহ তা’আলা বন্ধু বানিয়েছেন।
৫৯৫৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে কাউকে যদি আমি বন্ধু বানাতাম, তাহলে আবূ বকরকেই বানাতাম।
৫৯৫৮. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোন বন্ধু বানাতাম তবে আবূ কুহাফার পুত্রকেই বানাতাম।
৫৯৫৯. উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর কাউকে যদি আমি পরম বন্ধু বানাতাম তবে আবূ কুহাফার পুত্রকেই বানাতাম; কিন্তু তোমাদের সাথী তো আল্লাহর বন্ধু।
৫৯৬০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জেনে রাখো! কারো সঙ্গে আমার একান্ত বন্ধুত্ব, এ থেকে আমি দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। যদি আমি কাউকে বন্ধু বানাতাম তবে আবূ বকরকেই বানাতাম। আর তোমাদের সাথী আল্লাহর পরম বন্ধু।
৫৯৬১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যাতুস-সালাসিলের সৈন্য বাহিনীর (সেনাপতির) দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন, তখন আমি তার (রাসূলের) কাছে এসে বললাম, আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় কে? তিনি বললেন, আয়িশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেনঃ আয়িশার পিতা। আমি বললাম, এরপর? তিনি বললেনঃ উমর। এরপর তিনি আরো কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন।
৫৯৬২. হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কাউকে খলীফা বানাতেন তাহলে কাকে বানাতেন? আয়িশা (রাঃ) বললেন, আবূ বকরকে। প্রশ্ন করা হলো, আবূ বকরের পর কাকে? বললেন, উমরকে। প্রশ্ন করা হলো, উমরের পর কাকে? তিনি বললেন, আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহকে। এ পর্যন্ত বলেই তিনি শেষ করলেন।
৫৯৬৩. আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ) ... জুবায়র ইবনু মুতইম (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অন্য সময় আসার জন্য বললেন। মহিলাটি বললো, যদি আমি এসে আপনাকে আর না পাই তবে (মহিলাটি মৃত্যুর ব্যাপারেই বলেছিলেন)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমাকে না পাও তবে আবূ বকর এর কাছে এসো।
৫৯৬৪. হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর পিতা যুবায়র ইবনু মুতইম তাকে বলেছেন যে, একজন স্ত্রীলোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে কোন বিষয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন ...... আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
৫৯৬৫. উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর রোগ শয্যায় বললেনঃ তোমার আব্বা ও ভাইকে তুমি ডাক। আমি একটা পত্র লিখে দই। কেননা আমি ভয় করছি যে, কোন বাসনা পোষণকারী বাসনা করবে, আর কেউ বলবে, আমিই অগ্রাধিকারী (অধিক যোগ্য)। অথচ আবূ বকর ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ অস্বীকার করেন এবং মুসলমানরাও (অস্বীকার করে)।
৫৯৬৬. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজ তোমাদের মধ্যে কে সিয়াম পালনকারী? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ একটা জানাযাকে অনুসরণ করেছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে কোন মিসকীনকে আজ আহার করিয়েছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ একজন রোগীকে দেখতে গিয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মাঝে এ কাজগুলোর সমাবেশ ঘটেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৫৯৬৭. আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি পিঠে বোঝা দিয়ে একটি গাভীকে হাঁকাচ্ছিল। গাভীটি লোকটির দিকে চেয়ে বললো, আমাকে তো এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমার সৃষ্টি তো হাল-চাষ করার জন্য। লোকেরা আশ্চার্যাম্বিত ও ভীত হয়ে বলে উঠলো, সুবহানাল্লাহ! গাভী কথা বলে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা আমি বিশ্বাস করি এবং আবূ বকর, উমারও বিশ্বাস করে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক রাখাল ছাগল চরাচ্ছিল। এমন সময় একটি নেকড়ে এসে একটী ছাগল নিয়ে গেলে রাখাল নেকড়ের থেকে ছাগলটিকে মুক্ত করলো। তখন নেকড়ে রাখালটির দিকে তাকিয়ে বললো, যে দিন আমি ছাড়া আর কোন রাখাল থাকবে না, সেদিন বকরীগুলোকে কে রক্ষা করবে? লোকেরা বলে উঠলো, সুবহানাল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি, আবূ বকর এবং উমার এ ব্যাপারটি বিশ্বাস করি।
৫৯৬৮. আবদুল মালিক ইবনু শুয়ায়ব ইবনু লাইস (রহঃ) ... ইবন শিহাব থেকে এ সনদেই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যাতে রাখাল ও ছাগলের কাহিনী রয়েছে, কিন্তু গাভীর ঘটনাটি তিনি উল্লেখ করেন নি।
৫৯৬৯. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর বরাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যুহরী (রহঃ) সুত্রে ইউনুস বর্ণিত হাদীসের সমর্থনে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাদের হাদীসে একই সাথে গাভী ও ছাগলের কাহিনী রয়েছে। তাদের দু'জনের বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ ব্যাপারটি আমি, আবূ বকর এবং উমার বিশ্বাস করি। তাঁরা দু'জন [আবূ বকর এবং উমার (রাঃ)] তখন সেখানে ছিলেন না।
৫৯৭০. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার ও মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. উমর (রাঃ) এর ফযীলত
৫৯৭১. সাঈদ ইবনু আমর আল-আশআসী, আবূর রবীহ আল আতাকী ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) কে তাঁর খাটিয়ায় রাখা হলে লোকেরা তার পাশে জমা হয়ে দুআ, প্রশংসা ও রহম কামনা করছিলো, তখনও তাঁর জানাযা হয় নি। আমিও লোকদের সঙ্গে ছিলাম। এক ব্যক্তি পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখলে আমি ভয় পেলাম। ফিরে দেখি আলী (রাঃ)। তিনি বললেন, আল্লাহ উমার (রাঃ) এর উপর রহম করুন। তারপর উমারকে সম্বোধন করে বললেন, হে উমার! আপনি আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় কোন ব্যক্তি রেখে যাননি (যার আমল এমন যে), তার মত আমল নিয়ে আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে পছন্দ করি। আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয়, আল্লাহ আপনাকে আপনার দুই সাথীর সঙ্গেই রাখবেন। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রায়ই বলতে শুনেছি, আমি, আবূ বকর ও উমার এসেছি; প্রবেশ করেছি আমি, আবূ বকর ও উমার; বেরও হয়েছি আমি, আবূ বকর ও উমার। এ জন্যে আমার দৃঢ় আশা ও বিশ্বাস এই যে, আল্লাহ আপনাকে তাঁদের সাথেই রাখবেন।
৫৯৭২. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উমার ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে একই সনদে অনুরূপ (হাদীস বর্ণনা করেন)।
৫৯৭৩. মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, দেখি আমার সামনে লোকদের আনা হচ্ছে, এদের পরনে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত কারো বা এর নীচে। উমারকে আনা হলো তার গায়ের জামাটি সে টেনে চলছিল (ঝুল মাটিতে গিয়ে ঠেকেছিল)। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এর ব্যাখ্যা কি করেন? তিনি বললেনঃ দ্বীন।
৫৯৭৪. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঘুমিয়ে আছি, দেখলাম দুধ ভর্তি একটি পেয়ালা আনা হলো। আমি তা থেকে পান করলাম এবং আমার মুখে তৃপ্তি ও সজীবতা ফুটে উঠলো। এরপর যা বেচে রইল তা উমার ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এর ব্যাখ্যা কি? তিনি বললেন, ইলম।
৫৯৭৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সালিহ (রাঃ) থেকে ইউনুসের সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৭৬. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি ঘুমের মধ্যে আমাকে একটি কূপের পাড়ে দেখলাম, এতে একটি বালতি। আমি আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা মতো পানি তুললাম। এরপর আবূ কুহাফার পুত্র বালতি হাতে নিলো এবং এক বা দুই বালতি পানি তুললো। তাঁর উত্তোলনে কিছু দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন। বালতিটি এবার বড় হয়ে গেল। ইবনু খাত্তাব সেটি নিলো। আমি উমার ইবনু খাত্তাবের মতো (পারদর্শী) পানি উত্তোলনকারী আর কাউকে দেখি নি। তখন লোকেরা নিজেদের উটগুলোকে (পানি পান করিয়ে) বিশ্রামের স্থানে নিয়ে গেলো।
৫৯৭৭. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) ... সালিহ (রহঃ) থেকে ইউনুস (রহঃ) এর সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৭৮. হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ইবনু আবূ কুহাফাকে পানি তুলতে দেখেছি ... (পরবর্তী অংশ) যুহরীর হাদীসের অনুরূপ।
৫৯৭৯. আহমদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওয়াহব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুমের মধ্যে আমি দেখলাম, আমার হাউয হতে পানি উত্তোলন করছি। আর লোকদের পানি দিচ্ছি। আবূ বকর এসে আমাকে বিশ্রাম করতে দেয়ার জন্য আমার হাত থেকে বালতি নিয়ে দু'বালতি পানি উঠালেন এবং তার উত্তোলনে দুর্বলতা ছিলো। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর ইবনু খাত্তাব এসে তার হাত থেকে বালতি নিলেন। তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী উত্তোলনকারী আমি আর কোনদিন দেখি নি। লোকেরা (তৃপ্ত হয়ে) ফিরে গেলো আর তখন হাউয পরিপূর্ণ অবস্থায় প্রবাহমান ছিল।
৫৯৮০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি স্বপ্লে দেখলাম যেন কূপের চাক্কির বালতি দ্বারা একটি কুয়া থেকে পানি উঠাচ্ছি। তখন আবূ বকর এসে এক বালতি বা দুই বালতি তুললেন। তাঁর উত্তোলনে ছিল দূর্বলভাব। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর উমার এসে পানি তোলা শুরু করলেন। আর বালতিটি বিরাট আকার ধারণ করল। লোকদের মাঝে এত বড় সবল জওয়ান আমি আর দেখি নি যে, তার মত কাজ করে। এমন কি লোকেরা তৃপ্তি লাভ করল এবং সেখানে উটশালা বানিয়ে ফেলল।
৫৯৮১. আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে আবূ বকর ও উমার (রাঃ) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বপ্ন সম্বলিত তাঁদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৯৮২. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, ওখানে একটা বাড়ি বা প্রাসাদ দেখলাম। বললাম, এটা কার? লোকেরা বললো, উমার ইবনুল খাত্তাবের। আমি এতে প্রবেশের ইচ্ছা করলাম। তখনি তোমার আত্মমর্যাদাবোধের কথা আমার মনে পড়লো। এ কথা শুনে উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আত্নমর্যাদাবোধ কি আপনার প্রতিও চলে?
৫৯৮৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু নুমায়র ও যুহায়রের সুত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৯৮৪. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমাকে আমি জান্নাতে দেখতে পাই। ওখানে একটি প্রাসাদর কোণে একজন মহিলা উযু করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটি কার? তারা বললো উমার ইবনুল খাত্তাবের। তখন উমারের আত্নমর্যাদাবোধের কথা আমার মনে পড়ে, আমি ফিরে চলে এলাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে উমার (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা সবাই এ মজলিসে ছিলাম। তারপর উমার (রাঃ) বললেন, আপনার উপর আমার মা-বাবা কুরবান হোক, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার প্রতিও কি আমি আত্মমর্যাদাবোধ দেখাবো?
আমর আন-নাকিদ, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৫৯৮৫. মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তখন কুরায়শ মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আলাপরত ছিল এবং উচ্চস্বরে তারা বেশি বেশি কথা বলছিল। যখন উমার (রাঃ) অনুমতি চাইলেন, এরা উঠে আড়ালে চলে গেলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসছিলেন। উমার বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর আপনার মুখকে হাস্যোজ্জ্বল রাখুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এদের ব্যাপারে আশ্চোর্যবোধ করছি যারা আমার কাছে বসা ছিল। আর তোমার শব্দটি শোনামাত্রই আড়ালে চলে গেল। উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকেই তো এদের বেশি ভয় কলা উচিত। এরপর উমার (রাঃ) বললেন, ওহে! নিজের প্রাণের শক্ররা! তোমরা আমাকে ভয় কর আর আল্লাহর রাসুলকে ভয় কর না! তারা বললো, হ্যাঁ, তুমি তো আল্লাহর রাসূলের চেয়ে বেশি কঠোর এবং রাগী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! শয়তান যখন তোমাকে কোন পথে চলতে দেখে, তখন সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরে চলে।
৫৯৮৬. হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু স্ত্রীলোক উচ্চঃস্বরে কথা বলছিল। যখন উমার প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, মহিলারা সব ততক্ষণাৎ আড়ালে চলে গেল ...... (পরবর্তী অংশ) যুহরী (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৯৮৭. আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেনঃ তোমাদের পুর্ববর্তী উম্মাতসমূহের মধ্যে কিছু লোক ছিলেন মুহাদ্দাস, আমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ এমন থেকে থাকে তবে সে উমার ইবনুল খাত্তাবই হবে।
ইবনু ওয়াহব বলেন 'মুহাদ্দাস' এর ব্যাখ্যা হল যার প্রতি (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ইলহাম হয়।
৫৯৮৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৯৮৯. উকবা ইবনু মুকরিম আম্মী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেনঃ যে, তিনটি বিষয়ে আমি আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার অনুরূপ (পূর্বেই) মত ব্যক্ত করেছি। মাকামে ইবরাহীম (এ সালাত আদায়) সম্পর্কে, মাহিলাদের পর্দা এবং বদরের যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে।
৫৯৯০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল মারা যায়, তখন তার পুত্র আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে আবেদন করলেন, তিনি যেন নিজ জামা তার পিতার কাফনের জন্য দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দান করলেন।
তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর পিতার জানাযা পড়ার অনুরোধ জানালেন। তিনি তার জানাযা পড়ার জন্য উঠে দাড়ালেন। তখন উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিধেয় বস্ত্র ধরে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি ওর জানাযা পড়বেন অথচ আল্লাহ আপনাকে তার জানাযা পড়তে নিষেধ করেছেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ অবশ্য আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন। বলেছেনঃ আপনি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর নাই করুন, যদি আপনি সত্তরবারও এদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন’ ...... (৯ঃ ৮০) সুতরাং আমি সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা চাইবো।
উমর (রাঃ) বললেন, সে তো মুনাফিক। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়লেন। তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘মুনাফিকদের মধ্যে কেউ মরে গেলে কখনো তার জানাযা পড়বেন না; আর তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেন না’ (৯ঃ ৮৪)।
৫৯৯১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে এ সনদে আবূ উসামার হাদীসের সমার্খক হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং অতিরিক্ত বলেছেন, ‘এরপর তিনি তাদের উপর জানাযা পড়া ছেড়ে দেন।’
পরিচ্ছেদঃ ৩. উসমান ইবন আফফান (রাঃ) এর ফযীলত
৫৯৯২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হাজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে শোয়া ছিলেন তার উরু অথবা পায়ের গোছা খোলা ছিল। আবূ বকর (রাঃ) এসে অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্থাতেই কথাবার্তা বললেন। এরপর উমর (রাঃ) অনুমতি চাইলে অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্থায়ই কথাবার্তা বললেন। উসমান (রাঃ) অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করলেন।
রাবী মুহাম্মাদ বলেন, এ ব্যাপারটি একই দিনে ঘটেছে বলে আমি বলতে পারি না। এরপর উসমান (রাঃ) এসে কথা বলে চলে যাওয়ার পর আয়িশা (রাঃ) বললেন,’আবূ বকর (রাঃ) এলেন, আপনি পরিবর্তিত হলেন না এবং বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করলেন না। উমর (রাঃ) এলেন, আপনি পরিবর্তিত হলেন না এবং বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করলেন না। উসমান (রাঃ) আসতেই আপনি উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করে নিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি সে ব্যক্তিকে লজ্জা করবো না, ফিরিশতারা যাকে লজ্জা করে থাকেন।
৫৯৯৩. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লাইস ইবনু সা’দ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনুল আস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা ও উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজের বিছানায় আয়িশার চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। তিনি আবূ বকরকে অনুমতি দিলেন। আর তিনি এ অবস্থায়ই রইলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর প্রয়োজনে শেষ করে চলে গেলেন। এরপর উমার (রাঃ) অনুমতি চাইলে তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায়ই রইলেন। উমার (রাঃ) তাঁর কাজ সেরে চলে গেলেন।
উসমান (রাঃ) বলেন, এরপর আমি অনুমতি চাইলাম, তিনি উঠে বসে পড়লেন এবং আমাকে বললেন, ভালোমতো তোমার গায়ে কাপড় ঠিক করে নাও। আমি আমার কাজ শেষ করে চলে গেলে আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কি ব্যাপার, আবূ বকর ও উমার (রাঃ) এলে আপনাকে এমন ব্যতিব্যস্ত হতে দেখলাম না, যেমন উসমান আসতেই আপনি ব্যাতিব্যস্ত হলেন! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উসমান (রাঃ) বড়ই লাজুক পুরুষ। তাই আমি ভাবলাম, এ অবস্থায় তাকে আসতে বললে হয়ত সে তার প্রয়োজন আমার কাছে পেশ করতে পারবে না।
৫৯৯৪. আমর আন-নাকিদ, হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনুল আস উসমান ও আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন ...... পরবর্তী অংশ যুহরী (রহঃ) থেকে উকায়ল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
৫৯৯৫. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার একটি বাগানে হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় একটি লাকড়ি কাদামাটিতে গাড়তে চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় কেউ দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন আমি দেখি তিনি আবূ বকর (রাঃ)। আমি দরজা খুললাম এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। এরপর আরেক ব্যক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন আমি গিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাঃ)। (দরজা) খুলে দিলাম এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম।
এরপর আরেক ব্যক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা হয়ে বসে পড়লেন এবং বললেনঃ (দরজা) খুলে দাও এবং তাঁকে আসন্ন বিপদসহ জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)। আমি দরজা খুলে দিয়ে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন (বিপদের কথা) তা উল্লেখ করলাম। উসমান (রাঃ) বললেনঃ ‘হে আল্লাহ! আমাকে ধৈর্য দান কর। আল্লাহর কাছে (আমি) সাহায্য প্রার্থনা করছি।
৫৯৯৬. আবূ রবী আতাকী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাগানে গেলেন এবং আমাকে দরজায় প্রহরা দিতে বললেন ... (এরপর) উসমান ইবনু গিয়াস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন।
৫৯৯৭. মুহাম্মদ ইবনু মিসকীন ইয়ামামী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর বাড়ি থেকে উযু করে বের হয়ে এসে বলেন, আজকের দিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থাকব। তিনি মসজিদে আসলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বললো, এ দিকে গিয়েছেন। আবূ মূসা (রাঃ) লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করে করে তার পায়ের চিহ্ন দেখে দেখে আরীস কূপে (-র বাগানে) গিয়ে পৌছলেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ আমি দরজায় বসলাম। এর দরজাটি ছিল কাঠের।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রাকৃতিক কাজ সেরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলে আমি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আরীস কূপের উপর বসা ছিলেন অর্থাৎ তার কিনারের মধ্যে তাঁর পা দুটো নলা পর্যন্ত খুলে রেখেছিলেন এবং তা দু'পা কুপের ভেতর ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে দরজার কাছে চলে গেলাম। বললাম, আমি আজ অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দারোয়ান হবো। আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলে আমি বললাম কে? তিনি বললেন, আবূ বকর। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন! এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবূ বকর (রাঃ) এসেছেন এবং অনুমতি চাচ্ছেন।
তিনি বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এগিয়ে গিয়ে আবূ বকরকে বললাম, প্রবেশ করুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আবূ বকর (রাঃ) প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তার ডানদিকে কুপের কিনারায় কুপে পা ঝুলিয়ে বসলেন যেমনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন আর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা রাখলেন। এরপর আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে রেখে এসেছিলাম, তিনি উযু করছিলেন। তিনি আমার সাথে দেখা করবেন। আমি মনে করলাম, আল্লাহ তায়াআলা যদি তাঁর কল্যাণ চান তাহলে তাঁকে এখনই এনে দিবেন।
এমন সময় একজন মানুষ দরজা নাড়লো। বললাম, কে? উত্তর দিলো, উমার (রাঃ) ইবনুল খাত্তাব। বললাম, একটু অপেক্ষা করুন! পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, উমার (রাঃ) এসেছেন, তিনি প্রবেশর অনুমতি চাইছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি উমর (রাঃ) এর কাছে এসে বললাম, অনুমতি দিয়েছেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। উমার (রাঃ) প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামপাশের কূপের কিনারায় বসলেন এবং কূপের ভিতরে পা ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম, বললাম, আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের কল্যাণ চান তাহলে তাঁকে এনে দিবেন।
একজন লোক এসে দরজা নাড়লো। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, উসমান ইবনু আফফান। বললাম, একটু অপেক্ষা করুন! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে খবর দিলাম। তিনি বললেনঃ তাকে ঢুকতে দাও এবং আসন্ন বিপদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এসে বললাম, প্রবেশ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে একটি আসন্ন বিপদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। রাবী বলেন, তিনি [উসমান (রাঃ)] প্রবেশ করে দেখলেন কুপের একপাশ ভরে গেছে। তিনি তাঁদের মুখোমুখি হয়ে কুপের অন্যপাশে বসলেন।
শুরাইক (রহঃ) বলেনঃ সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহঃ) বলেন, আমি এ বৈঠকের ব্যাখ্যা করলাম যে, এ হচ্ছে তাদের কবর এর অবস্থান।
আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুঁজতে বের হয়ে দেখলাম, তিনি মালসমুহের (বাগানের) দিকে গিয়েছেন। আমি তাঁর পিছনে গিয়ে দেখি তিনি মালে (বাগানে) ঢুকে কুয়ার চাকের উপর পা দু'টো ঝুলিয়ে বসে আছেন, তাঁর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা। এরপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। এখানে সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ) এর কথা "আমি এটিকে, তাদের কবররূপে" কথাটি নেই।
৫৯৯৮. হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে মদিনার এক বাগানে গেলেন। আমি তাঁর পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করলাম ...... অতঃপর সুলায়মান ইবনু বিলাল-এর হাদীসের অনুরূপ অর্থে রাবী এ হাদীস বর্ণনা করেন। এ হাদীসে এও উল্লেখ আছে যে, ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) বলেন আমি এ ব্যাখ্যা করলাম যে, তা হচ্ছে তাঁদের কবরের নমুনা। এরা এখানে একত্রে, আর পৃথকভাবে আছেন উসমান (রাঃ)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) এর ফযীলত
৫৯৯৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবনুুস সাব্বাহ, উবায়দুল্লাহ কাওয়ারীরী ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আমির ইবন সা'দ সুত্রে সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বলেছেনঃ তুমি আমার জন্য মূসা (আলাইহিস সালাম) এর হারুন এর মতো। কিন্তু আমার পর কোন নাবী নেই। সাঈদ (রহঃ) বলেন, (আমিরের কাছে শোনার পরে) আমি ভাল মনে করলাম যে, হাদীসটি প্রত্যক্ষভাবে সা’দ (রাঃ) থেকে শুনে নেই। অতএব আমি সা’দর সাথে মিলিত হলাম এবং আমের আমাকে যা বলেছেন, আমি তাঁকে তা বললাম। তিনি বললেন, আমি এ কথা শুনেছি। আমি বললাম, আপনি কি এ কথা শুনেছেন? তিনি দু'কানে দুটো আংগুল দিয়ে বললেন, হ্যাঁ শুনেছি, অন্যথা এ কান দুটো বধির হয়ে যাবে।
৬০০০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে মদিনায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে কি মহিলা ও শিশুদের কাছে রেখে যাচ্ছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি খুশি হবে না যে, তোমার মর্যাদা আমার কাছে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর মতো। তবে (পার্থক্য এই যে) আমার পর আর কোন নাবী নেই।
৬০০১. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) শুবা থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬০০২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... আমির ইবন সা'দ (রহঃ) সুত্রে সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) সা’দ (রহঃ) কে আমীর বানালেন এবং বললেন, আপনি আলী (রাঃ) কে কেন মন্দ বলেন না? সা’দ বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে যে তিনটি কথা বলেছেনঃ তা মনে করে এ কারণে আমি কখনও তাকে মন্দ বলবো না। ওসব কথার মধ্য হতে যদি একটিও আমি লাভ করতে পারতাম তাহলে তা আমার জন্য লাল উটের চেয়েও বেশি পছন্দনীয় হতো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আলী (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি, আলী (রাঃ) কে কোন যুদ্ধের সময় প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলে তিনি বললেন, মহিলা ও শিশুদের মাঝে আমাকে রেখে যাচ্ছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি এতে আনন্দবোধ কর না যে, আমার কাছে তোমার মর্যাদা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর মতো। তবে মনে রাখতে হবে যে, আমার পর আর কোন নাবী নেই।
খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেবো যে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার রাসুলও তাকে ভালবাসেন। এ কথা শুনে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। তখন তিনি বললেন, আলীকে ডাকো। আলী আসলেন, তাঁর চোখ উঠেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে লালা দিলেন এবং তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করলেন। পরিশেষে তাঁর হাতেই বিজয় তুলে দিলেন আল্লাহ।
আর যখন (মুবাহালা সংক্রান্ত) আয়াতঃ “আমরা আমাদের এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকি” (৩ঃ ৬১) অবতীর্ণ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসায়ন (রাঃ) কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার।
৬০০৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বলেছেনঃ তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার তুলনায় হবে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর তুলনায় হারুন (আলাইহিস সালাম) এর অবস্থানে।
৬০০৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের সময় বললেন, অবশ্যই খায়বরের দিন আমি ঐ ব্যক্তির কাছে পতাকা অর্পণ করবো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে। তাঁর হাতেই আল্লাহ তাআলা বিজয় দিবেন। উমার (রাঃ) বলেনঃ শুধু ঐ দিনটি ছাড়া আমি কখনো নেতৃত্বে বাসনা করি নি। এ আশা নিয়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দৌড়িয়ে গেলাম, হয়ত এ কাজের জন্য আমাকে ডাকা হতে পারে। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনু আবূ তালিবকে ডেকে তার হাতে পতাকা দিলেন এবং বললেনঃ এগিয়ে চলো, এদিক ওদিক তাকিও না। তোমার হাতেই আল্লাহ বিজয় তুলে দেয়া পর্যন্ত।
রাবী বলেন, এরপর আলী (রাঃ) কিছু দুরে চললেন, মৃদু স্বরে কিছু বললেন এবং থামলেন, এদিক সেদিক দেখেন নি। এরপর চিৎকার করে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন কথার উপর আমি লোকদের সাথে লড়াই করবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের সাথে লড়াই চালিয়ে যাও যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। যখনই তারা এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, তখনই তারা তাদের প্রাণসমূহ (জানমাল) তোমার হাত থেকে রক্ষা করে ফেলবে। তবে কোন আইনগত কারণে (হলে ভিন্ন কথা) আর তাদের (আন্তরিকতার) হিসাব আল্লাহর কাছে।
৬০০৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন বললেনঃ আমি অবশ্যই এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা অর্পণ করবো যার হাতে আল্লাহর তাআলা বিজয় দান করবেন। সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালবাসে আর আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসেন। রাবী বলেন, অতঃপর লোকেরা রাতভর এ আলোচনাই করতে থাকলো যে, কাকে এ পতাকা অর্পণ করা হয়। তিনি বলেন, তারপর সকাল হলে সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। প্রত্যেকের এটাই আশা যে আমাকেই হয়ত দেয়া হবে এ পতাকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আলী ইবনু আবূ তালিব কোথায়? লোকেরা বললো, ইযা রাসুলাল্লাহ! তাঁর চোখে অসুখ। তিনি বলেনঃ তোমরা তাকে ডেকে পাঠাও, পরে তাকে আনা হলো। তিনি তার চোখে লালা লাগালেন এবং দু’আ করলেন তার জন্য। তিনি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলেন, এমনভাবে, যেন তাঁর কোন রোগই ছিল না।
রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পতাকা দিলেন। আলী (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাদের সাথে লড়াই করবো যতক্ষন না তারা আমাদের মতো হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার উদ্দেশ্যে চলে যাও ব্যস্ত না হয়ে এবং ওদের মাঠে অবতীর্ণ হয়ে তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দাও। আর তাদের অবশ্য করণীয় আল্লাহর হকগুলো সম্পর্কে অবহিত করা। কেননা আল্লাহর শপথ! তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একটা মানুষকেও হিদায়েত করেন তবে তা তোমার জন্য লাল উট থেকেও উত্তম।
৬০০৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধে আলী (রাঃ) পেছনে রয়ে গেলেন। তাঁর চোখ উঠেছিল। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছেড়ে পিছনে পড়ে থাকবো? তিনি বের হলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলিত হলেন। বিজয় প্রভাতের আগের দিন সন্ধ্যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা প্রদান করবো, অথবা (বললেন) পতাকা এমন এক ব্যক্তি গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালবাসেন। অথবা (বললেন) যিনি আল্লাহ ও তাঁবু রাসুলকে ভালবাসেন। তার হাতেই আল্লাহ বিজয় দিবেন। হঠাৎ আমরা আলী (রাঃ) কে দেখলাম। আমরা তাঁকে আশা করি নি। লোকেরা বললো, ইনি তো আলী। আর একেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পতাকা দিলেন এবং আর আল্লাহ বিজয় দান করলেন!
৬০০৭. যুহায়র ইবনু হারব ও শুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবনু হায়্যান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি, হুসায়ন ইবনু সাবুরা এবং উমার ইবনু মুসলিম-- আমরা যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমরা যখন তার কাছে বসি, তখন হুসায়ন বললেন, হে যায়দ! আপনি তো বহু কল্যাণ প্রত্যক্ষ করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তার পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। আপনি বহু কল্যাণ লাভ করেছেন, হে যায়দ! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমাদের বলুন না। যায়দ (রাঃ) বললেন, ভ্রাতূষ্পূত্র! আমার বয়স হয়েছে, আমি পুরানো যুগের মানুষ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যা আমি সংরক্ষণ করোছিলাম, এর কিছু অংশ ভুলে গিয়েছি। তাই আমি যা বলি, তা কবুল কর আর আমি যা না বলি, সে ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিও না।
তারপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী “খুম্ম” নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং নূর রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন কর, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন।
তারপর বললেনঃ আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। হুসায়ন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর 'আহলে বাইত' কারা, হে যায়দ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণ কি আহলে বাইতর অন্তভুক্ত নন?
যায়দ (রাঃ) বললেন, বিবিগণও আহলে বাইতর অন্তর্ভুক্ত; তবে আহলে বাইত তাঁরাই, যাদের উপর যাকাত গ্রহন হারাম। হুসায়ন বললেন, এ সব লোক কারা? যায়দ (রাঃ) বললেন, এরা আলী, আকীল, জাফের ও আব্বাস (রাঃ) এর পরিবার-পরিজন। হুসায়ন বললেন, এদের সবার জন্য যাকাত হারাম? যায়দ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।
৬০০৮. মুহাম্মদ ইবনু বাক্কার ইবনু রাইয়্যান (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যুহায়র (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬০০৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু হায়্যান (রহঃ) থেকে এ সনদেই ইসমাঈলের হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেন। জারীরের হাদীসে "আল্লাহর কিতাব, তাতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো, যে এটাকে ধরে রাখরে, হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর যে এটা ছেড়ে দেবে, সে পথ হারিয়ে ফেলবে" বাক্যটি অধিক উল্লেখ আছে।
৬০১০. মুহাম্মাদ ইবনু বাক্কার ইবনু রায়্যান (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবন হায়্যাব (রহঃ) সুত্রে যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (ইয়াযীদ) বলেন আমরা তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি তো বহু কল্যান প্রত্যক্ষ করেছেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্যে রয়েছেন, তার পেছনে সালাত আদায় করেছেন। এরপর আবূ হায়্যানের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মাঝে দুটো ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। আল্লাহর কিতাব যেটি আল্লাহর রশি, যে এর অনুসরণ করবে, হিদায়াতের উপর থাকবে; আর যে একে ছেড়ে দেবে, সে পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।
এ বর্ণনায় আরো আছে যে, আমরা বললাম, রাসূলের আহলে বায়াতের মধ্যে কি তাঁর বিবিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন? যায়দ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! স্ত্রীরা একটা সময় পূরুষদের সাথে থাকে, এরপর তাকে স্বামী তালাক দিলে সে তার পিতা এবং গোষ্ঠীর কাছে ফিরে যায়। আহলে বাইত হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মূল বংশ এবং তাঁর স্বগোত্রীয়রা, যাদের জন্য (নবীর তিরোধানের) পর যাকাত হারাম।
৬০১১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মারওয়ানের বংশের এক ব্যক্তি মদিনার শাসনকর্তা নিহত হলো, সে সাহলকে ডেকে এনে আলী (রাঃ) কে গালি দিতে বলল। সালব (রাঃ) অস্বীকার করলেন। শাসক ব্যক্তিটি বললো, তুমি যদি গালি নাই দাও তবে অন্তত বল যে, আবূ তুরাবের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। সা’দ (রাঃ) বললেন, আলী (রাঃ) এর কাছে কোন নামই এর চেয়ে বেশি পছন্দনীয় ছিল না। এ নামে ডাকলে তিনি খুশি হতেন। সে ব্যক্তি বললো, তা হলে আবূ তুরাব নাম হওয়ার ঘটনা বর্ণনা কর।
তিনি বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে পদার্পণ করলেন; কিন্তু আলী (রাঃ) কে ঘরে পেলেন না। ফাতিমা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তাঁর আর আমার মাঝে একটা (বাক-বিতন্ডা) ঘটেছিল, যার ফলে তিনি রাগ করে চলে গেছেন, আর তিনি আমার কাছে ঘুমোন নি।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, দেখ তো, আলী কোথায়। লোকটি এসে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন। আলী (রাঃ) শুয়েছিলেন। তাঁর এক পাশের চাঁদর সরে গিয়েছিল, ফলে শরীরে মাটি লেগে গিয়েছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মাটি ঝাড়তে শুরু করলেন এবং বললেন, হে আবূ তুরাব, উঠ! হে আবূ তুরাব, উঠ!
পরিচ্ছেদঃ ৫. সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) এর ফযীলত
৬০১২. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত রইলেন আর তিনি বললেন, যদি আমার কোন পুণ্যবান সাহাবী এ রাতটিতে আমাকে প্রহরা দিতো! এমন সময় আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কে? উত্তর এলো, (আমি) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস। আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি ইয়া রাসুলাল্লাহ! আয়িশা (রাঃ) বললেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দও শুনতে পেলাম।
৬০১৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনা আগমনের প্রথম সময়ে এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত রইলেন। আর তিনি বললেনঃ আমার সাহাবীদের মধ্য হতে কোন নেক ব্যক্তি আমাকে এ রাত্রে পাহারা দিলে কতই না ভালো হতো! আয়িশা (রাঃ) বলেন যে, এমতাবস্থায়ই আমরা অস্ত্রের ঝনঝন শব্দ শুনতে পেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কে? তিনি বললেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসেছো? তোমার আসার কারণ? তিনি [সা’দ (রাঃ)] বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে আমার মনে ভয় জেগেছে, তাই তাকে পাহারা দিতে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্যে দু'আ করলেন, তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ইবনু রুমহ (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে, “আমরা বললাম, ইনি কে”?
৬০১৪. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত রইলেন ...... (পরবর্তী অংশ) সুলায়মান ইবনু বিলালের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
৬০১৫. মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) ছাড়া আর কারো জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাতাপিতা উভয়ের (উৎসর্গীকরণের) উল্লেখ এক সাথে করেন নি। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি সা’দকে বলেছিলেন, তীর নিক্ষেপ কর সা’দ! আমার মা-বাবা তোমার জন্য উৎসর্গ হোন।
৬০১৬. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, ইসহাক হানযালী ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদিস হাদীস বর্ণিত আছে।
৬০১৭. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ দিবসে আমার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পিতা ও মাতাকে একত্রে উৎসর্গিত করেছেন।
৬০১৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু রুমহ ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রাঃ) সুত্রে এ সনদেই বর্ণনা করেছেন।
৬০১৯. মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন তাঁর জন্য তাঁর পিতা ও মাতাকে একত্রে উল্লেখ করেছিলেন। সা’দ (রাঃ) বলেন, মুশরিকদের একটা লোক মুসলমানদের জ্বালিয়ে মারছিলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে সা’দ তীর মারো। আমার পিতামাতা তোমার জন্য উৎসর্গ। আমি তার উদ্দেশ্যে একটা তীর বের করলাম যাতে ফলা (ধারালো অংশটি) ছিলো না, ওটা তার পাঁজরে লাগলে সে পড়ে গেলো, এতে তার লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হাসলেন, আমি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
৬০২০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, তাঁর সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তিনি বলেন, তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষন তিনি ইসলামকে অস্বীকার না করবেন ততক্ষন তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তোকে আদেশ করেছেন, পিতামাতার কথা মানতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদু’আ করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যব্যাবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।” (২৯ঃ ৮) আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।” (৩১ঃ ১৫)
সা’দ বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বিপূল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সস্পদ আসলো। এতে একটি তলোয়ারও ছিল। আমি সেটা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম, বললাম এ তলোয়ারটি আমায় দান করুন। আর আমার অবস্থা তো আপনি জানেনই। তিনি বললেন এটা যেখান থেকে নিয়েছ সেখানেই রেখে দাও। আমি গেলাম এবং ইচ্ছে করলাম যে, এটাকে ভাণ্ডারে রেখে দেই; কিন্তু আমার মন আমাকে ধিক্কার দিল। অমনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এলাম। বললাম, আমায় এটা দান করুন তিনি উচু আওয়াযে বললেন, এটা যেখানে থেকে এনেছ সেখানে রেখে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেনঃ তারা আপনাকে যুদ্ধ লব্ধ মাল সম্পর্কে প্রশ্ন করে।” (৮ঃ ১)।
তিনি বলেন, অসুস্থ হয়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আসতে বললাম, তিনি আসলেন। আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দান করতন, আমি যাকে ইচ্ছা তাকে আমার ধন-মাল বণ্টন করে দিয়ে দিই। তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। আমি বললাম, আচ্ছা অর্ধেক (ধন-মাল বণ্টন করি)। তিনি তাও অস্বীকৃতি জানালেন। আমি বললাম আচ্ছা তবে এক-তৃতীয়াংশ (মাল দিয়ে দেই)। তিনি চুপ হয়ে রইলেন। পরবর্তীতে এক-তৃতীয়াংশ ধন-সম্পদ দান করাই অনুমোদিত হলো।
সা’দ বলেন একবার আমি আনসার ও মুহাজিরদের কিছু লোকের কাছে গেলাম। তারা আমাকে বললো, এসো, তোমায় আমরা আহার করাবো এবং মদ পান করাবো। এ ঘটনা মদ হারাম হওয়ার পুর্বের। আমি তাদের কাছে একটি বাগানে গেলাম। সেখানে উটের মাথার গোশত ভুনা হয়েছিল আর মদের একটা মশক ছিল। আমি তাদের সাথে গোশত খেলাম এবং মদ পান করলাম। সেখানে মুহাজির ও আনসারদের আলোচনা উঠলে আমি বললাম, মুহাজিররা আনসারদের চেয়ে উত্তম। এক লোক মাথার একটি চেয়াল (এর হাড়) দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। আমার নাকে যখম হয়ে গেলো। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তা অবহিত করলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আমার সম্পর্কে আয়াত নাযিল করলেনঃ “মদ, জুয়া, মুর্তি (পূজার বেদী) ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ (৫ঃ ৯০)।
৬০২১. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমার পিতার প্রসঙ্গে চারটি আয়াত অবতীর্ন হয়েছে। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। শু’বা শুধু এটুকু কথা অধিক বলেছেন “সা’দ (রাঃ) বলেনঃ লোকেরা আমার মাকে খানা খাওয়ানোর সময় একটি কাঠি দিয়ে তার মুখ ফাঁকা করত, পরে তার মুখে খাদ্য দিতো।” এ বর্ণনায় এরূপ আছে, "সা’দর নাকে আঘাত করলো, এতে তার নাক ভেঙ্গে ফেটে গেলো। এরপর সব সময়ই তাঁর নাক ভাংগাই ছিল।"
৬০২২. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভার্থে ডাকে, তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না।” (৬ঃ ৫২)-এ আয়াতটি ছয় ব্যক্তি প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়। তন্মধ্যে আমিও একজন ছিলাম এবং আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদও ছিলেন। মুশরিকরা বলতো, এ সব (ছোট) লোককে আপনি সাথে রাখবেন না।
৬০২৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা ছয় ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। মুশরিকরা বললো, আপনি এসব লোককে আপনার কাছে থেকে তাড়িয়ে দিন। তারা আমাদের মাঝে আসার সাহস করবে না। সা’দ (রাঃ) বলেন, তাদের মধ্যে আমি, ইবনু মাসউদ, বনূ হুযায়লের এক ব্যক্তি, বিলাল এবং আর দু'জন ব্যক্তি ছিলাম, যাদের নাম আমি নিচ্ছি না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনে আল্লাহ তাআলার অবতীর্ণ করলেনঃ "যারা তাদের প্রতিপালককে প্রভাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভার্থে ডাকে, তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না (৬ঃ ৫২)।"
৬০২৪. মুহামাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী, হামিদ ইবনু আমর বকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) ... আবূ উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের সাথে লড়াই করছিলেন, তখন কোন কোন দিন তালহা এবং সা’দ (রাঃ) ব্যতীত আর কেউই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে থাকতো না। এটা তাদের দু’জনের বর্ণিত হাদিস অনুসারে।
৬০২৫. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের জিহাদের প্রেরণা দিলেন। যুবায়র (রাঃ) ডাকে সাড়া দিলেন। আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডাকলেন। তখনও যুবায়রই সাড়া দিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার ডাকলেন। যুবায়রই সাড়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক নাবীরই একজন একান্ত সাহায্যকারী থাকে, আর আমার একান্ত সাহায্য- কারী হল যুবায়র।
৬০২৬. আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, হাদীসটি তিনি ইবনু উয়ায়নার হাদীসের সমার্থক বর্ণনা করেছেন।
৬০২৭. ইসমাঈল ইবনু খলীল ও সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের দিন আমি এবং উমর ইবনু আবূ সালামা, হাসসান (ইবনু সাবিত) এর কিল্লায় মহিলাদের সাথে ছিলাম। কখনো সে আমার দিকে ঝুকে পড়ত (পিঠ নিচু করে দিত), তখন আমি দেখতাম, আর কোন সময় আমি তার জন্য নিচু হতাম, তখন সে দেখত। আমার পিতাকে আমি চিনে ফেলতাম, যখন তিনি সমস্ত্র অবস্থায় ঘোড়ায় চড়ে বনূ কুরায়যার দিকে যেতেন। অন্য সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, আমি পিতার কাছে এ কথার উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, বাছা, তুমি আমায় দেখেছিলে,? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তাঁর পিতামাতা উভয়কে একত্রে উল্লেখ করেছেন। আর বলেছেনঃ তোমার জন্য আমার মা-বাবা উৎসর্গ হোন।
৬০২৮. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন আমি এবং উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) ঐ কিল্লায় ছিলাম, যেখানে মহিলারা ছিলেন অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (পরিবারের) নারীগণ। এ সনদেই ইবনু মুসহিরের হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনু উরওয়ার উল্লেখ করেননি। কিন্তু হিশাম তাঁর পিতা সুত্রে ইবনু যুবায়র থেকে বর্ণিত হাদীসে এ ঘটনাটি হাদীসের মাঝে প্রবিষ্ট করে বিবৃত করেছেন।
৬০২৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা পর্বতের উপর ছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর, উমর, উসমান আলী, তালহা ও যুবায়র (রাঃ)। তখন পাথরটি কেঁপে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ স্থির হও। তোর উপর নবী, সিদ্দীক বা শহীদ ছাড়া আর কেউ নয়।
৬০৩০. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু ইয়াযীদ ইবনু খুনায়স ও আহবদ ইবনু ইউসূফ আযদী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা পর্বতের উপর ছিলেন, পর্বত নড়ে উঠলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শান্ত হও, হেরা! তোমার উপর নাবী, সিদ্দীক বা শহীদ ছাড়া আর কেউ নয়। (তখন) তার উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর, উমর, উসমান, আলী, তালহা, যুবায়র ও সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) ছিলেন।
৬০৩১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) আমাকে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমার দুই পৃর্ব পূরুষ [পিতা যুবায়র (রাঃ) ও নানা আবু বকর (রাঃ)] ঐ সব লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাদের কথা এ আয়াতে রয়েছে- "ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে (৩ঃ ১৭২)।"
৬০৩২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হিশাম (রাঃ) থেকে একই সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি "অর্থাৎ আবূ বকর এবং যুবায়র" কথাটি বর্ধিত করেছেন।
৬০৩৩. আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন, "যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও" তোমার দুই পূর্ব পুরুষ তাঁদের অন্তর্ভুক্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৭. আবু উবায়দা ইবন জাররাহ (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৩৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক উম্মাতের একজন আমীন থাকে। আর হে উম্মাত! আমাদের 'আমীন' হলেন, আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ)।
৬০৩৫. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়েমান থেকে কিছু লোক এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো, আমাদের সঙ্গে একজন লোক প্রেরণ করুন, যিনি আমাদের ইসলাম ও সুন্নাত শিখাবেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবূ উবায়দার হাত ধরে বললেন, তিনি হলেন এ উম্মাতের আমীন।
৬০৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাজরান থেকে লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদেরকে একজন আমীন (বিশ্বস্ত) লোক দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের মাঝে একজন আমীন (বিশ্বস্ত) লোককে পাঠাবো, তিনি সত্যই আমীন, সত্যই আমীন। রাবী বললেন, লোকেরা অপেক্ষায় ছিল যে, (তিনি কাকে পাঠান)। রাবী বলেন, অবশেষে তিনি আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ) কে পাঠালেন।
৬০৩৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ... আবু ইসহাক থেকে একই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৮. হাসান ও হুসায়ন (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৩৮. আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান (রাঃ) সম্পর্কে বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি! তুমিও তাকে ভালবাসো, আর যে তাকে ভালবাসে, তাকেও ভালবাসুন।
৬০৩৯. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, দিনের এক প্রহরে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম। তিনি আমার সাথে কথা বলছিলেন না, আমিও তাঁর সাথে কথা বলছিলাম না। অবশেষে বনূ কায়নুকা এর বাজারে পৌঁছলেন, এরপর চললেন এবং ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে গেলেন। বললেন, এখানে দুষ্টটা (খোকা) আছে, দুষ্টটা (খোকা) আছে, অর্থাৎ হাসান। আমরা ধারণা করলাম যে, তাঁর মা তাকে আটকিয়ে রেখেছেন গোছল করানো এবং সুবাসিত মালা পরানোর জন্য। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসান দৌড়ে চলে এলেন এবং তাঁরা একে অপরকে গলায় জড়িয়ে ধরলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি তাকে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাসো, আর ভালবাসো ঐ লোককে, যে তাকে ভালবাসে।
৬০৪০. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হাসান ইবনু আলী (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধের উপর দেখেছি। তিনি বলছেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি, আপনিও তাকে ভালবাসুন।
৬০৪১. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, হাসান ইবনু আলীকে তাঁর কাঁধে বসিয়ে রেখেছেন। তিনি বলছেনঃ হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি, আপনিও তাকে ভালবাসুন।
৬০৪২. আবদুল্লাহ ইবনু রুমী ইয়ামামী ও আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আম্বারী (রহঃ) ... ইয়াস তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর 'শাহবা' (সাদা) খচ্চরটিকে চালিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুজরা পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। এর উপর আরোহী ছিলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসায়ন। একজন সামনে, একজন পেছনে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. নবী (ﷺ) এর আহলে বায়তের ফযীলত
৬০৪৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কাল পশম দ্বারা খচিত একটি পশমী চাঁদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনিও তার সঙ্গে (চাদরে) ঢুকে পড়লেন। ফাতিমা (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। পরে বললেনঃ হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে বিদুরিত করে তোমাদের অতিশয় পবিত্রময় করতে চান।
পরিচ্ছেদঃ ১০. যায়দ ইবন হারিসা ও তার পুত্র উসামা (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৪৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমরা যায়দ ইবনু হারিসাকে যায়দ ইবনু মুহাম্মাদ বলতাম, যতক্ষন না কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ "তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সঙ্গত (৩৩ঃ ৫)।"
৬০৪৫. আহমদ ইবনু সাঈদ দারিমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬০৪৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা সৈন্যদল প্রেরণ করলেন, এতে উসামা ইবনু যায়দকে আমীর (সেনাপতি) নিয়োগ করলেন। লোকেরা তাঁর নের্তৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেনঃ এর নেতৃত্বের যদি তোমরা সমালোচনা কর, তোমরা এর পিতার নেতৃত্ব নিয়েও পূর্বে সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর শপথ! তার পিতা নের্তৃত্বের যোগ্য ছিল। সে আমার কাছে সবচে প্রিয় মানুষ ছিল। আর তারপর এখন আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় মানুষ হলেন [উসামা (রাঃ)]।
৬০৪৭. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে বলেছেনঃ তোমরা যদি তাঁর নেতৃত্বের ব্যাপারে সমালোচনা কর এখানে উসামা ইবনু যায়দকে বুঝাতে চেয়েছেন, তবে তোমরা তো ইতিপূর্বে এর পিতার নেতৃত্ব নিয়েও সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর শপথ! সে নেতৃত্বের যোগ্য ছিল। সে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিল। এও খুব যোগ্য- তিনি উসামাকেই বুঝাতে চেয়েছেন; তার পরে এ-ই আমার সর্বাধিক প্রিয়। সুতরাং আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি, (উসামার সাথে সুন্দর ব্যবহার কর)। সে তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীলদের অন্যতম।
পরিচ্ছেদঃ ১১. আবদুল্লাহ ইবন জা'ফার (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৪৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) কে বললেন, তোমার মনে আছে কি যখন আমি, তুমি এবং ইবনু আব্বাস, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলিত হয়েছিলাম? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ মনে আছে তিনি আমাদের আরোহণ করালেন, আর তোমাকে রেখে দিলেন। তিনি (ইবন জা'ফার) বললেন, হ্যাঁ।
৬০৪৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হাবীব ইবনু শাহীদ (রহঃ) থেকে ইবনু উলাইয়ার সনদ ও হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬০৫০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু জা'ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন বাড়ির শিশুদের সাথে তিনি মিলিত হতেন। রাবী বলেন, একবার তিনি সফর থেকে এলেন, প্রথমে আমার সাথে সাক্ষাত হয়, তখন তিনি আমাকে তাঁর সামনে বসিয়ে দিলেন, এরপর ফাতিমা (রাঃ) এর এক ছেলেকে নিয়ে আসা হলে তাকে তিনি পেছনে বসালেন। আমরা তিনজন একই সওয়ারে চড়ে মদিনায় প্রবেশ করলাম।
৬০৫১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু জা'ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে আসতেন, তখন আমাদের তার কাছে নিয়ে যাওয়া হত। তিনি বলেন, একবার আমাকে এবং হাসান অথবা হুসায়নকে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হল। তিনি আমাদের একজনকে বসালেন তার সামনে, অন্য জনকে পেছনে। এভাবে আমরা মদিনায় প্রবেশ করলাম।
৬০৫২. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর পিছনে সওয়ারীতে বসালেন এবং চুপি চুপি আমাকে একটা কথা বললেন, এটা আমি কোন লোককেই বলবো না।
পরিচ্ছেদঃ ১২. উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৫৩. আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আলীকে কুফায় বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন সে যুগে মরিয়ম বিনত ইমরান, আর এ যুগে খাদীজা বিনত খুওয়াইলিদ। রাবী আবূ কুরায়ব (রহঃ) বলেন, ওয়াকী ইঙ্গিত করলেন আসমান ও যমীনের প্রতি।
৬০৫৪. আবূ শায়বা, আবূ কুয়ায়ব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার ও ইবনু মুআয আম্বারী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছেন, কিন্তু মহিলাদের মধ্যে মরিয়ম বিনত ইমরান ও ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া (রাঃ) ছাড়া আর কেউ পূর্নতা লাভ করেননি। আর অন্যান্য মাহিলাদের উপর আয়িশার ফযীলত অন্যান্য খাদ্যের উপর সারীদের ফযীলতের মত।
৬০৫৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও উবন নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিবরীল (আলাহিস সালাম) এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই তো খাদীজা আপনার কাছে একটা পাত্র নিয়ে আসছেন, যারা মধ্যে কিছু তরকারি, খাদ্য ও পানীয় রয়েছেন। তিনি যখন আপনার কাছে আসবেন তখন তাকে তার পালনকর্তার এবং আমার পক্ষ হতে সালাম দিবেন। আর তাঁকে জান্নাতের একটি ঘরের সুসংবাদ দিবেন, যা এমন একটি মুক্তা দিয়ে তৈরি, যার ভিতর খোলা। যেখানে কোন হৈচৈ আর দুঃখ-কষ্ট নেই।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে তার বর্ণনায় বলেছেন এবং তিনি سَمِعْتُ (আমি শুনেছি) বলেন নি এবং আমরা হাদীসে وَمِنِّي অর্থাৎ 'আমার পক্ষ হতে' বলেন নি।
৬০৫৬. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইসমাঈল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খাদীজা (রাঃ) কে কোন ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন জান্নাতের মধ্যে? বললেন, হ্যাঁ, তাকে জান্নাতের মধ্যে একটি মুক্তা দ্বারা নির্মিত ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন। যেখানে কোন হৈ চৈ আর দুঃখ-কষ্ট নেই।
৬০৫৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬০৫৮. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজাকে জান্নাতের একটা ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন।
৬০৫৯. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন মহিলার প্রতই আমি এত ঈর্ষা পোষণ করি নি যতটুকু খাদীজার প্রতি করেছি; অথচ তিনি আমাদের বিয়ের তিন বছর আগেই মারা গিয়েছিলেন। কারণ আমি শুনতাম যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কথা আলোচনা করতেন, আল্লাহ তায়াআলা তাকে আদেশ করেছিলেন যে, আপনি খাদীজাকে জান্নাতে একটি মুক্তা দ্বারা নির্মিত ঘরের সুসংবাদ দিন। এবং তিনি বকরী যবেহ করলে তার (খাদীজার) বান্ধবীদের গোশত হাদিয়া দিতেন।
৬০৬০. সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাদীজা ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাঁকে রাগান্বিত করার জন্য বললাম, শুধু খাদিজা খাদিজা (খাদীজাকে এতই ভালবাসেন?) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেয়া হয়েছে।
৬০৬১. যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে একই সনদে আবূ উসামার হাদীসের বকরীর ঘটনা পর্যন্ত অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এর পরবর্তী কথাগুলো তিনি উল্লেখ করেননি।
৬০৬২. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের কারো উপর আমি এত ঈর্ষা করি নি যতটুকু ঈর্ষা খাদীজাকে করেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাঁকে অধিক স্মরণ করার কারণে। অথচ আমি তাঁকে কখনো দেখি নি।
৬০৬৩. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা থাকা অবস্থায় আর কোন বিবাহ করেননি। যতদিন না তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৬০৬৪. সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাদীজা (রাঃ) এর বোন হালা বিনত খুওয়াইলিদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করে শিহরিত হয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ! এতো খূওয়াইলিদের কন্যা হালা। এতে আমি ঈর্ষানিত হয়ে বললাম, আপনি কি স্মরণ করছেন কুরায়শের এক লাল মাড়ি এবং সরু পায়ের গোছাওয়ালা বৃদ্ধাকে, যিনি যুগের আবর্তনে বিলীন হয়ে গেছেন। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আপনাকে তাঁর পরিবর্তে উত্তম সহধর্মিনী দান করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. আয়শা (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৬৫. খালফ ইবনু হিশাম ও আবূর রাবি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে স্বপ্নযোগে তিনদিন তোমায় দেখানো হয়েছে। একজন ফিরিশতা তোমাকে একটি রেশম বস্ত্র খণ্ডে আবৃত করে নিয়ে এসে বললো, এটা আপনার স্ত্রী। আমি তোমার মুখের কাপড় সরিয়ে দেখি সেটি তুমিই। আমি বললাম, যদি এ স্বপ্ল আল্লাহর পক্ষ হতে হয়, তবে তা তিনি বাস্তবায়িত করবেন।
৬০৬৬. ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উত্তম সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬০৬৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমায় বলেছেনঃ আমি বুঝতে পারি তুমি কখন আমার উপর খুশি থাকো, আর কখনো আমার উপর রাগ করো। আমি বললাম, এটা কিসের দ্বারা বুঝতে পারেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন তুমি আমার উপর খুশি থাকো তখন তুমি বলে থাকো, না, মুহাম্মাদের রব্বের শপথ! আর যখন তুমি রেগে যাও তখন বল, না, ইবরাহীমের রব্বের কসম! আমি বললাম, হ্যাঁ। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আপনার নামটা শুধু বাদ দেই।
৬০৬৮. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে “না, ইবরাহীমের রব্বের কসম” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেন নি।
৬০৬৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (পুতুল) নিয়ে খেলতেন। তিনি বলেন, আমার কাছে আমার বান্ধবীরা আসতো। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে লজ্জায় সংকুচিত হয়ে সরে পড়তো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে (ডেকে) আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন।
৬০৭০. আবূ কুরায়ব, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। জারীর এর হাদীসে আছে, "আমি মেয়ে নিয়ে তাঁর ঘরে খেলা করতাম, সেগুলো হলো খেলনা পুতুল।"
৬০৭১. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। লোকেরা হাদিয়া পাঠাবার জন্য আয়েশা (রাঃ) আমার এর পালার অপেক্ষা করতো। এর দ্বারা তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুশি করার চেষ্টা করত।
৬০৭২. হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী, আবূ বকর ইবনু নযর ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ রাসুল তনয়া ফাতিমাকে তাঁর কাছে পঠেলেন। সে এসে অনুমতি চাইলো। তিনি তখন আমার চাদর গায়ে, আমার সাথে শোয়া ছিলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিবিগণ আমাকে পাঠিয়েছেন, আবূ কুহাফার কন্যার (আয়শা) ব্যাপারে তাঁরা আপনার সুবিচার চান। আমি চুপ করে রইলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ হে স্নেহের মেয়ে! আমি যা ভালবাসি, তা কি তুমি ভালবাস না? সে বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে একে ভালবাসো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ কথা শুনে ফাতিমা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের কাছে ফিরে গেলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিনি যা বলেছেন, আর তিনি তাঁকে যা উত্তর দিয়েছেন, তা তাঁদেরকে বললেন। তারা বললেনঃ তুমি আমাদের কোন উপকার করতে পারলে না। তুমি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে তাঁকে বল, আপনার বিবিগণ আবূ কুহাফার মেয়ের ব্যাপারে আপনার কাছে সুবিচার চাচ্ছে। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তার ব্যাপারে আমি কোনদিন তার সাথে কথা বলতে যাবো না।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (অন্যতম) স্ত্রী যয়নব বিনত জাহাশ (রাঃ) তাঁর কাছে পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখে তিনি ছিলেন আমার সমপর্যায়ের। যয়নবের চেয়ে দ্বীনদার, আল্লাহভীরু, সত্যভাষিনী, মায়ামযী, দানশীনা এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের পথে ও দান-খয়রাতের জন্যে নিজেকে শক্তভাবে ব্যবহার করার মত কোন মহিলা আমি দেখি নি। তবে তাঁর মাঝে শুধু একটা হঠাৎ ক্ষিপ্ততা ছিল, এটা থেকেও তিনি খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যেতেন।
তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি চাইলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চাঁদরে আবৃত থাকা অবস্থায়ই অনুমতি দিলেন, যে অবস্থায় ফাতিমা (রাঃ) তার কাছে এসেছিল। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিবিগণ আমাকে পাঠিয়েছেন। আবূ কুহাফার মেয়ের ব্যাপারে তাঁরা আপনার সুবিচার চান।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে এলেন এবং কিছু বড় বড় কথা বললেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখের দিকে দেখছিলাম, তিনি আমায় কিছু বলার অনুমতি দিবেন কিনা? আমি বুঝতে পারলাম যে, যয়নবের কথার উত্তর দিলে তিনি কিছু মনে করবেন না। তিনি বলেন, তখন আমিও তাঁর উপর কথা বলতে লাগলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে চুপ করিয়ে দিলাম। তিনি বলেন, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে বললেনঃ এটা তো আবূ বকরের মেয়ে (না)।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এর সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি "যখন আমিও তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করলাম তখন অল্প সময়েই তাকে পরাভূত করে দিলাম" বলেছেন।
৬০৭৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (শেষ অসুস্থতাকালে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোঁজ নিয়ে থাকত, আজ আমি কোথায় থাকব, কাল আমি কোথায় থাকব? আয়িশা (রাঃ) এর পালা হয়ত বহু দেরী মনে করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন আমার কাছে তাঁর অবস্থানের দিন এলো, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার বুক এ গলার মাঝে থেকে (হেলান দেয়া অবস্থায়) তুলে নিলেন।
৬০৭৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন তিনি তাঁর বুকে হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন,এবং তার প্রতি কান লাগিয়ে রেখোছিলেন। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর এবং আমাকে (ঊর্ধ্ব জগতের) বন্ধুর সাথে মিলিত কর।
৬০৭৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদেই অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৬০৭৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনতাম যে, কোন নবীই মৃত্যুবরণ করবেন না, যতক্ষন না তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্য থেকে একটি বেছে নেয়ার সাধীনতা দেওয়া হবে। মৃত্যু শয্যায় শায়িতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তখন তাঁর আওয়াজ ভারী হয়ে গিয়েছিল, "ওদের সাথে, যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল (লোকদের সাথে), তাঁরা কতই না ভালো বন্ধু।" আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমার ধারণা তখনই তাঁকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল।
৬০৭৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৬০৭৮. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়র ইবনু লাইস (রহঃ) ... নাবী স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থবস্থায় বলেছেনঃ কোন নাবীই মৃত্যুবরণ করেন নি যতক্ষন না তিনি জান্নাতে তাঁর স্থানটি দেখে নিয়েছেন। আর তাঁকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতায় আক্রান্ত হলেন, তখন তাঁর মাথা আমার রানের উপর, কিছুক্ষণ তিনি বেহুশ হয়ে রইলেন। হুশ ফিরে এলে তিনি ছাদের দিকে চেয়ে রইলেন। অতঃপর বলবেন, আল্লাহ, সুউচ্চ (জগতের) বন্ধুদের সাথে মিলিত কর।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এখন তিনি আর আমাদের গ্রহণ করবেন না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমার ঐ হাদীসটি মনে পড়লো যেটি তিনি সুস্থ থাকাকালে বলেছিলেন যে, কোন নবী মৃত্যুবরণ করেন না, যতক্ষন না তিনি জান্নাতে তাঁর স্থানটি দেখে নেন। এরপর তাঁকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়। আযেশা (রাঃ) বলেন, এটাই সেই শেষ কথা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অর্থাৎ তার উক্তি “হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুদের সাথে”।
৬০৭৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে বের হতেন, তখন নিজ বিবিদের ব্যপারে লটারি করতেন। একবার লটারিতে আয়িশা ও হাফসার নাম উঠলো। উভয়েই তার সাথে বের হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সফর করতেন তখন তিনি আয়িশার সাথে আলাপ করে করে চলতেন। হাফসা (রাঃ) আয়িশাকে বললেন, আজ রাত তুমি আমার উটে চড় আর আমি তোমার উটে চড়ি। এরপর তুমি অপেক্ষা করবে আমিও অপেক্ষা করব। অতঃপর আয়িশা (রাঃ) হাফসার উটে আর হাফসা (রাঃ) আয়িশার উটে আরোহণ করলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশার উটের কাছে এলেন এবং এতে সওয়ার ছিলেন হাফসা (রাঃ) তখন তিনি সালাম দিলেন এবং তাঁর সাথে চললেন। অবশেষে মনযিলে গিয়ে অবতরণ করলেন। আয়িশা (রাঃ) তাঁকে না পেয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লেন। যখন সবাই মনযিলে গিয়ে নামলেন, আয়িশা তাঁর পা ইযখির ঘাসের উপর রেখে বলতে লাগলেন, হে রব্ব! একটা সাপ বা বিচ্ছু আমার দিকে ধাবিত করে দিন যেন আমাকে দংশন করে। তিনি তো আপনার রাসুল, আমি তাঁকে কিছু বলতেও পারি না।
৬০৮০. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, অন্যান্য মহিলাদের উপর আছে আয়িশার শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত খাদ্যের উপর 'সারীদের' শ্রেষ্ঠত্বের মতো।
৬০৮১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাদের দু'জনের হাদীসে “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি” নেই। ইসমাঈলের হাদীসে “আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছি” রয়েছে।
৬০৮২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। আমি বললাম, তার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত।
৬০৮৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে তাঁদের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। ইসহাক (রহঃ) ... যাকারিয়া (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৬০৮৪. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আয়িশা! এই যে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তোমাকে সালাম বলছেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ (তাঁর উপরও সালাম এবং আল্লাহর রহমত)। এরপর আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি তো এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখতে পাই না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. উম্মে যারা এর হাদীস
৬০৮৫. আলী ইবনু হুজর সা’দী ও আহমদ ইবনু জানাব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এগারজন মহিলা বসে অঙ্গীকার ও চুক্তিবদ্ধ হলো যে, তারা নিজ নিজ স্বামীর ব্যাপারে কিছু গোপন করবে না। প্রথম মহিলা বললো, আমার স্বামী লাল উটের গোশতের মতো, যা দুর্গম এক পাহাড়ের চুড়ায় রক্ষিত। না ওখানে আরোহণ করা সম্ভব, আর না এমন মোটা তাজা যা সংরক্ষণ করা যায়। দ্বিতীয় মহিলা বললো, আমি আমার স্বামীর খবর ছড়াতে পারবো না। আমার ভয় হয়, আমি তাকে ছেড়ে না দেই। আমি যদি তার বিবরণ দিতে যাই তবে তার গোপনীয় ও প্রকাশ্য সব দোষই বর্ণনা করতে হবে।
তৃতীয় মহিলা বললো, আমার স্বামী খুব লম্বা। ওর দোষ বললে আমি পরিত্যক্ত হবো, আর চুপ থাকলে ঝুলে থাকবো। চতুর্থ মহিলা বললো, আমার স্বামী ‘তিহামা’ (নির্জন মরু আরব) এর রজনীর মতো (নিথর)। নাতিশীতোষ্ণ (গরমও নয় আর ঠাণ্ডাও নয়) ভয়ও নেই, বিরক্তিও নেই। পঞ্চম মহিলা বললো, আমার স্বামী যখন ঘরে আসে তখন চিতা বাঘ, আর যখন বাইরে যায় তখন সিংহ। রক্ষিত মাল-সম্পদ নিয়ে সে কোন প্রশ্ন করে না। ষষ্ঠ মহিলা বললো, আমার স্বামী খেতে বসলে সব খেয়ে ফেলে পান করলে একেবারে নিঃশেষ করে ফেলে। আর শুতে গেলে একদম হাত পা গুটিয়ে রয়। আমার প্রতি হাত বাড়ায় না, যাতে আমার (মনের) অবস্থা বুঝতে পারে।
সপ্তম মহিলা বললো, আমার স্বামী নির্বোধ, অক্ষম ও বোবার মত। সব দোষই তার মধ্যে বিদ্যমান। চাইলে তোমার মাথায় আঘাত করবে অথবা অঙ্গে প্রহার করবে অথবা উভয়ই একত্রে সংঘটিত করবে। অষ্টম মহিলা বললো, আমার স্বামীর গন্ধ যারনাবের সুগন্ধির মতো, তার স্পর্শ খরগোশের মতো। নবম মহিলা বললো, আমার স্বামী এমন যার প্রাসা’দর খাম্বাগুলো সুউচ্চ, তরবারির খাপগুলো দীর্ঘ, বাড়ির আঙ্গিনায় অধিক ছাই। কাচারী ঘরের পার্শ্বেই তার বাড়ি। দশম মহিলা বললো, আমার স্বামী মালিক। আর মালিক এর কথা কি বলব, আমার এ প্রশংসার চেয়ে আরো শ্রেষ্ঠ সে। তার আছে অনেক উট, তাদের জন্য উটশালাও অনেক, তবে চারণভূমি কম। উটেরা যখন বাদ্য-বাজনার শব্দ শোনে, তখন নিজেদের যবেহের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পড়ে।
একাদশ মহিলা বললো, আমার স্বামীর নাম আবূ যার। কি চমৎকার আবূ যার। অলংকার দিয়ে সে আমর দুকান ঝুলিয়ে দিয়েছে, বাহুদ্বয় ভরপুর করেছে চর্বিতে। আমাকে আদর সোহাগ দিয়েছে, আমিও নিজেকে আদরনীয়া-সোহাগিণী বোধ করছি। সে আমাকে পাহাড়ের পাদদেশে ভেড়া ও বকরীওয়ালাদের মাঝে পেয়েছিলাম। এরপর সে আমাকে উট, ঘোড়া, জমি-জমা ও ফসলাদির অধিকারী বানিয়েছে। তার কাছে আমি কথা বললে সে তা ফেলে না। আমি ঘুমালে ভোর পর্যন্ত শুয়ে থাকি আর পান করলে তৃপ্তি অর্জন করি। আবূ যার এর মা, কতই না ভালো আবূ যারা এর মা। তার পাত্র বিরাট আকারের। তার কুঠুরি প্রশ্বস্ত। আবূ যার এর ছেলে, কত ভালো আবূ যার এর ছেলে, তার শয্যা যেন তরবারির খাপ। বকরির একটি বান (দুধ) খেয়েই সে তৃপ্তিবোধ করে। আবূ যার এর মেয়ে কতই না ভালো আবূ যারা এর মেয়ে। মা-বাবার অনুগত, পোশাকভরা শরীর, প্রতিবেশীর ঈর্ষার পাত্রী। আবূ যার এর বাদী, কত ভালো আবূ যার এর বাদী। আমাদের কথা প্রচার করে বেড়ায় না। আমাদের খাদ্য নষ্ট করে না, ঘর-বাড়ি আবর্জনা পূর্ণ রাখে না।
উম্মু যারা বলেন, একদা আবূ যার বাইরে বের হলেন। তখন আমাদের অবস্থা ছিল, বড় বড় দুধের পাত্র থেকে মাখন তোলা হতো। তখন এক মহিলার সাথে তার সাক্ষাত ঘটে। তার সাথে ছিলো দুটো শিশু। (শিশু দুটো ছিল) দুটি চিতার মত। তারা তার কোকের নীচ দিয়ে দুটি ডালিম নিয়ে খেলা করছিল। তখন আবূ যার আমাকে তালাক দেয় এবং সে মহিলাকে বিয়ে করে।
তারপর আমি এক ব্যক্তিকে বিবাহ করলাম। সে ছিল সরদার, খুব ভালো ঘোড় সওয়ার ও বর্শা ধারণকারী। সে আমার আস্তাবলে বহু চতুষ্পদ জন্তু সমবেত করে। প্রত্যেক প্রকার থেকে সে আমাকে একেক জোড়া দান করে এবং সে আমাকে বলে, হে উম্মু যারা! তুমি খাও এবং তোমার আপনজনকে দান কর। তবে দ্বিতীয় স্বামী আমায় যা কিছু দিয়েছে তার সব যদি জমা করি, তবু আবূ যার এর ছোট্ট একটি পাত্রের সমান হবে না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তোমার জন্য আমি উম্মে যার এর জন্য আবূ যার এর মতো।
হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ননা করেছেন। তবে এতে বর্ণনা সন্দেহ ছাড়া يَايَاءُ طَبَاقَاءُ রয়েছে, আরো রয়েছে قَلِيلاَتُ الْمَسَارِحِ এবং রয়েছে صِفْرُ رِدَائِهَا وَخَيْرُ نِسَائِهَا وَعَقْرُ جَارَتِهَا (অর্থাৎ তার কটিদেশ ছিল কৃশ, অন্যান্য মহিলার তুলনায় ছিল শ্রেষ্ঠ, সতীনের ঈর্ষার পাত্র) এবং বলেছেন لاَ تَنْقُثُ مِيرَتَنَا تَنْقِيثًا আরো বলেছেন أَعْطَانِي مِنْ كُلِّ ذَابِحَةٍ زَوْجً ।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. নবী (ﷺ) এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৮৬. আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরের উপর থেকে বলতে শুনেছেন, হিশাম ইবনু মুগীরার সন্তানরা আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে যে, তাদের কন্যাকে আলী ইবনু আবূ তালিবের কাছে তারা বিয়ে দিতে চায়। আমি তাদের অনুমতি দিচ্ছি না, আবার (বলছি) আমি তাদের অনুমতি দিচ্ছি না। আবার আমি তাদের অনুমতি দিচ্ছি না। তবে যদি আলী ইবনু আবূ তালিব আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, তা ভিন্ন কথা। কেননা আমার মেয়ে আমারই একটা অংশ। যা তাকে বিষন্ন করে, তা আমাকেও বিষন্ন করে, তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তা কষ্ট দেয়।
>৬০৮৭. আবূ মা'মার ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম হুযালী (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফাতিমা আমারই অঙ্গ, তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়।
৬০৮৮. আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ... আলী ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এর শাহাদতের পর ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া (রাঃ) এর কাছ থেকে তারা যখন মদিনায় এলেন, মিসওয়ার ইবনু মাখরামা তখন তার সাথে দেখা করলেন এবং তাকে বললেন, আপনার কোন প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলবেন। আমি বললাম, না। মিসওয়ার বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরবারিখানা কি আপনি আমাকে দান করবেন? কারণ আমার ভয় হয় যে, আপনার লোকেরা এটি আপনার কাছ থেকে কবজা করে নিবে। আল্লাহর কসম, আপনি যদি সে তরবারিটি আমাকে দিয়ে দেন তাহলে যতক্ষন আমার প্রাণ থাকে এটি কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। (মিসওয়ার আরো বলেন) ফাতিমার জীবিত থাকাকালে আলী (রাঃ) আবূ জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রন্তাব দিয়েছিলেন। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ বিষয় নিয়ে লোকদের সামনে এ মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে শুনেছি। আমি সে সময় সদ্য বালিগ বয়সের। তখন তিনি বললেন, ফাতিমা আমারই অঙ্গ। আমার ভয় হচ্ছে, সে তার দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় না পতিত হয়। অতঃপর তিনি আবদ ই-শামস গোত্রীয় তাঁর জামাতার আলোচনা করলেন। তার আত্নীয়তার সুন্দর প্রশংসা করলেন, এবং বললেন, সে আমায় যা বলেছে সত্য বলেছে, সে অঙ্গীকার করেছে, আর আমি কোন হালালকে হারাম করি না বা হারামকে হালাল করি না। তবে আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে কখনো এক জায়গায় একত্রিত হবে না।
৬০৮৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল রহমান দারিমী (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তনয়া ফাতিমাকে ঘরে রেখেই আবূ জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) যখন এ খবর শুনলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের ব্যাপারে রাগ প্রকাশ করেন না। আর এই যে আলী (রাঃ) আবূ জাহলের মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। এ সময় আমি শুনলাম তিনি তাশাহুদ পড়লেন এবং বললেনঃ আমি আবূল আস ইবনুল রাবীর কাছে বিয়ে দিয়েছি, সে আমাকে যা বলেছে, তা সত্য পরিণত করেছে। আর মুহাম্মাদ তনয়া ফাতিমা আমারই একটা টুকরা, আমি পছন্দ করি না যে, লোকে তাকে ফিতনায় ফেলুক। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূলের মেয়ে ও আল্লাহর দুশমনের মেয়ে কোন ব্যাক্তির কাছে কখনো একত্রিত হতে পারে না। মিসওয়ার (রাঃ) বলেন, এরপর আলী (রাঃ) প্রস্তাব ছেড়ে দেন।
আবূ মা'আন রাক্কাশী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৬০৯০. মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে ডেকে চুপি চুপি কিছু বললেন। তখন তিনি কাঁদলেন। আবার চুপে চুপে তিনি কিছু বললেন। তখন তিনি হেসে ফেললেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি ফাতিমাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে চুপেচুপে কি বললেন যে, তুমি কেঁদে ফেললে এবং তারপর কি বললেন যে, তুমি হেসে ফেললে? ফাতিমা (রাঃ) বললেন চুপে চুপে তিনি আমাকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দিলেন, তাই আমি কাঁদলাম। এরপর চুপি চুপি তিনি বললেন, তাঁর পরিজনদের মধ্যে তার পরে আমি সর্বপ্রথম (মিলিতি হব) যাবো আমি, তাই হাসলাম।
৬০৯১. আবূ কামিল জাহদারী ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিরা সকলেই তার কাছে ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ বাদ ছিলেন না। এমন সময় ফাতিমা (রাঃ) এলেন। তাঁর চলার ভঙ্গি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চলার ভঙ্গি থেকে একটুও পৃথক ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে দেখলেন তখন তিনি এ বলে খোশ আমদেদ জানালেন মারহাবা, হে আমার স্নেহের কন্যা! এরপর তাঁকে তাঁর ডানপাশে অথবা বামপাশে বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপে চুপে কিছু বললেন। এতে তিনি খুব কাঁদলেন। যখন তিনি তাঁর অস্থিরতা দেখলেন, তিনি পুনরায় তাঁর সাথে চুপেচুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হেসে দিলেন। আমি তাঁকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীগণের মধ্যে (কাউকে না বলে) তোমার সঙ্গে বিশেষভাবে কোন গোপন কথা বলেছেন। আবার তুমি কাঁদছো? অতঃপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গেলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে কি বলেছেন?
তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা প্রকাশ করবো না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়ে গেলো, তখন আমি তার উপর আমার অধিকারের শপথ দিয়ে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছেন, অবশ্যই আমাকে বলতে হবে। তিনি বললেন, আচ্ছা। এখন তবে, হ্যাঁ। প্রথমবার তিনি আমাকে গোপনে বললেনঃ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) প্রতি বছর একবার কি দু'বার আমাকে কুরাআন পুনরাবৃত্তি করান। এ বছর তিনি দু'বার পুনরাবৃত্তি করালেন। আমার মনে হয় আমার সময় কাছে এসে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। কেননা আমি তোমার জন্য কত উত্তম পূর্বসূরী। তখন আমি কঁদলাম যা আপনি দেখেছেন। এরপর আমার অস্থিরতা দেখে তিনি দ্বিতীয়বার চুপি চুপি বললেন, হে ফাতিমা! মুমিন রমনীদের প্রধান ও এ উম্মাতের সকল মহিলাদের সরদার হওয়া কি তুমি পছন্দ কর না? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তখন আমি হাসলাম। আমার যে হাসি আপনি দেখেছেন।
৬০৯২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল বিবি একত্রিত হলেন। তাঁদের মধ্যে একজনও বাদ রইলেন না। তখন ফাতিমা (রাঃ) হেঁটে আসলেন। তার হাটার ভঙ্গী যেন একেবারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চলার মত। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ স্নেহের মেয়ে আমার! অতঃপর তাকে তাঁর ডানদিকে কিংবা তাঁর বামদিকে বসালেন এবং চুপি চুপি কিছু কথা বললেন। এতে ফাতিমা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। তারপর তিনি তাঁকে চুপি চুপি আবার কিছু বললেন, এতে তিনি হাসলেন। আমি তাঁকে বললাম, কিসে তোমাকে কাদালো? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা ফাস করতে পারি না। আমি বললাম আমি আজকের মতো কোন আনন্দকে বেদনার এতো নিকটবর্তী দেখি নি। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ছেড়ে তোমাকে তাঁর কথা বলার জন্য বিশেষত্ব দান করলেন। আর তুমি কাঁদছো? আবার তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেনঃ তা জিজ্ঞাসা করলাম।
তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা প্রকাশ করতে পারি না। অবশেষে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) প্রতি বছর একবার তাঁর সঙ্গে কুরআন আবৃতি করতেন। আর এ বছর তিনি তাঁর সঙ্গে দু'বার আবৃতি করেছেন। এতে আমার মনে হয় নিশ্চয়ই মৃত্যু আমার নিকটবর্তী। আর তুমিই আমার পরিজনদের মাঝে সর্বপ্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হবে। তোমার জন্য আমি কতই না উত্তম অগ্রগামী। তখন আমি কেঁদেছি। এরপর তিনি আমাকে চুপ চুপি বললেন, তুমি ঈমানদার মহিলাদের প্রধান অথবা এ উম্মাতের মহিলাদের সরদার হওয়া কি পছন্দ কর না? একথা শুনে আমি হেসেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. উম্মুল মউ'মিনীন উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৯৩. আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা কায়সী (রহঃ) ... সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবে বাজারে প্রবেশকারীদের মধ্যে তুমি প্রথম হয়ো না এবং তথা হতে বহির্গমণকারীদের মধ্যে তুমি শেষ ব্যক্তি হয়ো না। বাজার হলো শয়তানের আড্ডাখানা। আর তথায়ই সে তার ঝান্ডা উত্তোলন করে রাখে। সালমান (রাঃ) বলেন, আমাকে এ খবরও দেওয়া হয়েছে যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। তখন তাঁর পাশে উম্মু সালামা (রাঃ) ছিলেন। রাবী বলেন, অতঃপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কথা বলতে লাগলেন এবং পরে চলে গেলেন।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে ছিলেন? বা এরূপ কথা বললেন। উম্মে সালামা (রাঃ) উত্তর দিলেন, দাহইয়া কালবী। তিনি বলেন, উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে দাহইয়া কালবী বলেই ধারণা করেছিলাম। যতক্ষন না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষণ শুনলাম। তিনি আমাদের কথা বলছিলেন অথবা এরূপ বলেছিলেন। অর্থাৎ জিবরীলের আগমনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাবী আবূ উসমানকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি এ হাদীস কার মাধ্যমে শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. উম্মুল মু'মিনীন যায়নাব (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৯৪. মাহমুদ ইবনু গায়লান আবূ আহমদ (রহঃ) ... উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সাথে মিলিত হবে যার হাত সর্বাধিক লম্বা। সুতরাং তারা (সব বিবিরা) নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অবশেষে আমাদের মধ্যে যয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা বলে স্থির হল। কারণ তিনি হাত দিয়ে কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. উম্মু আয়মান (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৯৫. আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু আয়মানের কাছে গেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি তাঁর দিকে একটি শরবতের পাত্র এগিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, আমি জানি না যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করছিলেন, না তা (পান করার) ইচ্ছা করলেন না। উম্মু আয়মান (রাঃ) এতে চীৎকার করে উঠলেন এবং তাঁর উপর রাগ প্রকাশ করতে লাগলেন।
৬০৯৬. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ) কে বললেন, চলো উম্মু আয়মানের কাছে যাই, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাবো যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাক্ষাতে যেতেন। যখন আমরা তার কাছে গেলাম, তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। তাঁরা দুজন বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহ তাআলার কাছে যা কিছু রয়েছে তা তাঁর রাসুলের জন্য বেশি উত্তম। উম্মু আয়মান (রাঃ) বললেন, এজন্য আমি কাদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য উত্তম; বরং এ জন্য আমি কাদছি যে, আসমান থেকে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেলো। উম্মু আয়মানের এ কথা তাঁদের মধ্যেও কান্নার আবেগ সৃষ্টি করল। সুতরাং তারাও তার সাথে কাঁদতে লাগলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. উম্মু আনাস ইবন মালিকের মাতা উম্মু সুলায়ম এবং বিলাল (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৯৭. হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের ছাড়া অন্য কোন মহিলার বাড়িতে প্রবেশ করতেন না। কিন্তু উম্মু সুলায়মের কাছে যেতেন। লোকেরা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এর উপর আমার বড় করুণা হয়। আমার সঙ্গে থেকে তার ভাই নিহত হয়েছে।
৬০৯৮. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতে গেলাম, সেখানে আমি কারও চলার শব্দ পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে? লোকেরা বললো, তিনি গুমায়সা বিনত মিলহান (রাঃ), আনাস ইবনু মালিকের মা।
৬০৯৯. আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু ফারাজ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে জান্নাত দেখানো হয়েছে যে, আমি আবূ তালহার স্ত্রীকে দেখলাম। অতঃপর আমার সামনে পদধ্বনি শুনতে পেলাম তাকিয়ে দেখি বিলাল।
পরিচ্ছেদঃ ২০. আবু তালহা আনসারী (রাঃ) এর ফযীলত
৬১০০. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তালহার ঔরষজাত উম্মু সুলায়মের ছেলে মারা গেলো। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তার পরিবারে লোকদের বললো, আবূ তালহাকে তাঁর ছেলের খবর দিও না, যতক্ষন আমি না বলি। তিনি বলেন, অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) এলেন। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রাতের খানা সামনে আনলে তিনি পানাহার করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম ভালোমতো সাজগোজ করলেন। আবূ তালহা (রাঃ) তাঁর সাথে মিলিত হলেন। যখন উস্মু সুলায়ম (রাঃ) দেখলেন যে, তিনি মিলনে পরিতৃপ্ত, তখন তাঁকে বললেন, হে আবূ তালহা! কেউ যদি কাউকে কোন জিনিস রাখতে দেয়, এরপর তা নিয়ে নেয়, তবে কি সে তা ফিরাতে পারে? আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, না। উম্মে সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আমি তোমার ছেলের মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছি।
আবূ তালহা (রাঃ) রেগে গিয়ে বললেন, তুমি আমাকে আগে বল নি, আর এখন আমি অপবিত্র, এখন খবরটা দিলে? তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে খবরটা দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমাদের বিগত রাতটিতে আল্লাহ তাআলা বরকত দিন, উম্মু সুলায়ম অন্তসত্তা হয়ে গেছে। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মু সুলায়মও এ সফরে ছিলেন। তিনি যখন সফর থেকে ফিরতেন, তখন রাতের বেলা মদিনায় প্রবেশ করতেন না। লোকেরা যখন মদিনার কাছে পৌছলো তখন উম্মু সুলায়মের প্রসব বেদনা শুরু হল। আবূ তালহা (রাঃ) তাঁর কাছে রয়ে গেলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন।
আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে পরোয়ারদিগার তুমি তো জানো যে, তোমার রাসূলের সাথে বের হতে আমার ভাল লাগে যখন তিনি বের হন, আর তাঁর সাথে যেতে আমার ভালো লাগে যখন তিনি যান। কিন্তু তুমি জানো কেন আমি থেকে গিয়েছি। রাবী বলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আবূ তালহা! আগের মতো বেদনা আমার নেই। চলুন আমরা চলে যাই। স্বামী-স্ত্রী মদিনায় পৌছলে উম্মু সুলায়মের বেদনা পুনরায় শুরু হলো। আর তিনি একটি শিশু পুত্র প্রসব করলেন। আমার মা বললেন, হে আনাস! শিশুটিকে যেন কেউ দুধপান না করায় যতক্ষন তুমি তাকে ভোরবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাও।
সকাল হলে আমি শিশুটিকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। আমি দেখলাম তাঁর হাতে উট দাগানোর যন্ত্র। আমাকে যখন তিনি দেখলেন, বললেন, সম্ভবত উম্মু সূলায়ম (এ ছেলেটি) প্রসব করেছে। আমি বললাম, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সে যন্ত্রটি হাত থেকে রেখে দিলেন। আমি শিশুটিকে নিয়ে তার কোলে রাখলাম। তিনি মদিনার আজওয়া খেজুর আনালেন এবং নিজের মুখে দিয়ে চিবুলেন। যখন খেজুর গলে গেল, তখন শিশুটির মুখে দিলেন। শিশুটি তা চুষতে লাগলো। তিনি বললেন, দেখো আনসারদের খেজুর প্রীতি। পরে তিনি শিশুর মুখে হাত বুলালেন এবং এর নাম রাখলেন আবদুল্লাহ।
৬১০১. আহমদ ইবনু হাসান ইবনু খারাশ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তালহার একটি ছেলে মারা গেল ...... এর পরের অংশ উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ।
পরিচ্ছেদঃ ২১. বিলাল (রাঃ) এর ফযীলত
৬১০২. উবায়দ ইবনু ইয়াঈশ, মুহাম্মদ ইবনু আলা হামদানী ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরের সালাতের সময় বিলাল (রাঃ) কে বলেন, হে বিলাল! তুমি আমাকে বল, ইসলামের পর তুমি এমন কোন আমল করেছ যার উপকারের ব্যাপারে তুমি বেশি আশাবাদী। কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি। বর্ণনাকারী বলেন, বিলাল বলেন, ইসলামের মধ্যে এর চেয়ে বেশি লাভের আশা আমি অন্য কোন আমলে করতে পারি না যে, আমি দিনে বা রাতে যখনই পূর্ণ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করি, তখনই আল্লাহ তাআলা আমার ভাগ্যে যতক্ষন লিখেছেন, ততক্ষন ঐ উযু দিয়ে সালাত আদায় করে থাকি।
পরিচ্ছেদঃ ২২. আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) ও তার মায়ের ফযীলত
৬১০৩. মিনজাব ইবনু হারিস তায়মী, সাহল ইবনু উসমান, আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু যুরারাহ হাজরামী, সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও ওয়ালীদ ইবনু শুজা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের রক্ষিত বস্তুর মধ্যে কোন অসুবিধা নেই যখন তারা (আল্লাহকে) ভয় করে এবং ঈমানদার হয়” ...... শেষ পর্যন্ত (৫ঃ ৯৩), রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাকে বললেন, “আমাকে বলা হয়েছে যে, তুমিও এদের অন্তর্ভুক্ত।”
৬১০৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আমার ভাই ইয়েমেন থেকে এলাম। আমরা দীর্ঘদিন থাকার পর ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও তার মাকে রাসুল পরিবারেরই লোক বলে মনে করেছি। কেননা তারা রাসুলের কাছে খুব যাওয়া-আসা এবং সব সময় এক সঙ্গে থাকার কারণে।
মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আমার ভাই ইয়েমেন থেকে এলাম ... পরবর্তী অংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
৬১০৫. যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এলাম আমার ধারণা ছিল যে, আবদুল্লাহ তাঁরই পরিজনের অন্তর্ভুক্ত অথবা ... তিনি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬১০৬. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূল আহওয়াস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর ইন্তেকালের সময় আমি আবূ মাসউদ ও আবূ মূসার পাশে ছিলাম। তাঁরা একজন আরেকজনকে বললেন, আপনার কি মনে হয়, তাঁর পর তার মতো আর কাউকে কি রেখে গেছেন? অন্যজন বললেন, তুমি এ কথা বলছো, তার অবসাথাই ছিলো এ রকম যে, [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশের ব্যাপারে] আমাদের বাধা দেওয়া হতো, আর তাকে অনুমতি দেওয়া হতো; আমরা অনুপস্থিত থাকতাম, আর সে উপস্থিত থাকতো।
৬১০৭. আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আ'লা (রহঃ) ... আবূল আহওয়াস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ কতিপয় সাহাবীর সঙ্গে আবূ মূসা (রাঃ) এর বাড়িতে ছিলাম। তাঁরা একটি কুরআন শরীফ দেখছিলেন। আবদুল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন (চলে গেলেন)। তখন আবূ মাসউদ বললেন, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সম্পর্কে দন্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে বেশি পরিজ্ঞাত কোন মানুষ তাঁর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গেছেন বলে আমি জানি না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, আপনি যদি এ কথা বলেন, তবে তার কারণ, তাঁর অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা অনুপস্থিত থাকতাম, তখন সে থাকতো উপস্থিত; আর আমাদের যখন বাধা দেওয়া হতো, তখন তাঁকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হতো।
৬১০৮. কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) ... আবূল আহওয়াস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি আবূ (রাঃ) এর কাছে এলাম। তখন আবদুল্লাহ ও আবূ মূসাকে পেলাম ...... অন্য সনদে আবূ কুরায়ব ... যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুযায়ফা ও আবূ মূসা (রাঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলাম ... এরপর হাদীসের বাকী অংশ বর্ণনা করেছেন তবে কুতায়বা বর্ণিত হাদীস পূর্ণ ও অধিক প্রচলিত।
৬১০৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "আর যে ব্যক্তি কোন কিছু আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে সে উঠবে।" অতঃপর বললেন, তোমরা আমাকে কার কিরাআত অনুসরনে পড়ার কথা বল? আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে সত্তরের ঊর্ধ্বে সুরা পড়েছি। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ জানেন যে, আমি তাঁদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। আমি যদি জানতাম যে, আর কেউ আমার চেয়ে বেশি কুরআন জানে, তবে আমি তার দিকে সফর করে যেতাম।
শাকীক (রহঃ) বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের বিভিন্ন মজলিসে বসেছি। তার (আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের) এ বক্তব্যকে রদ করতে কাউকে শুনি নি এবং তাকে দোষারোপ করতেও শুনি নি।
৬১১০. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তার শপথ! আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার অবতীর্ণ হওয়ার স্থান সম্পর্কে আমী না জানি, এমন কোন আয়াত নেই যার অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে আমি না জানি। আমি যদি এমন কোন ব্যক্তিকে জানতাম যিনি আমার চেয়েও বেশি কুরআন জানেন, আর তার কাছে উট যেতে পারে, তবে আমি তার কাছে সওয়ার হয়ে তার কাছে অবশ্যই যেতাম।
৬১১১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমরের কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতাম। একদিন আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের উল্লেখ করলাম, তিনি বললেন, তোমরা এমন এক ব্যক্তির উল্লেখ করেছ, যাকে এ হাদীসে শোনার পর থেকে আমি ভালোবেসে আসছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, তোমরা চারজনের কাছে কুরআন শিখ। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব প্রথম আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করেন; মুয়ায ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ হুযায়ফার ক্রীতদাস গোলাম সালিমের কাছ থেকে।
৬১১২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। তখন আমরা ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর একটি হাদীসের উল্লেখ করি। এ সময় আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বললেন, ইনি ঐ ব্যক্তি যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি কথা শোনার পর থেকে ভালোবেসে আসছি। আমি তাকে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যক্তির কাছ থেকে কুরআন পড়। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ তাঁর নামই প্রথমে বললেন এবং উবাই ইবনু কা’ব, সালিম –আবূ হুযায়ফার ক্রীতদাস ও মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ)। আর একটি অক্ষর যা যুহায়র ইবনু হারব উল্লেখ করেননি, ওটা হলো (যা তিনি বলতেন) يَقُولُهُ শব্দটি।
৬১১৩. আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে জারীর ও ওয়াকীর সনদে আবূ মুআবিয়া থেকে আবূ বকর বর্নিত রিওয়াতে মুয়ায (রাঃ) কে উবাইয়ের পুর্বে রেখেছেন। আর আবূ কুরায়বের বর্ণনায় উবাই এর নাম মুআয (রাঃ) এর আগে।
৬১১৪. ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে তাঁদের সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শু'বার সুত্রে বর্ণনায় চারজনের ক্রমবিন্যাস এ দু'জনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
৬১১৫. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মাসরুক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তাঁরা ইবনু আমর এর সামনে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের আলোচনা করলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথা শোনার পর থেকে আমি ঐ লোকটিকে ভালোবেসে আসছি। চারজনের কাছ থেকে তোমরা কুরআন পড়, ইবনু মাসউদ,আবূ হুযায়ফার আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই ইবনু কা’ব ও মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ)।
৬১১৬. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয তার পিতা মু’আয (রাঃ) থেকে শু'বা সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তিনি অধিক বলেছেন “এ দু'জনকে দিয়ে শুরু করা হয়েছে, কিন্তু কার নাম প্রথমে, তা আমি জানি না।”
পরিচ্ছেদঃ ২৩. উবাই ইবন কা'ব (রাঃ) ও আনসারদের এক দলের ফযীলত
৬১১৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগেই চারজন কুরআন সংকলন করেছেন। ঐদের সবাই আনসার। মুআয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব, যায়দ ইবনু সাবিত ও আবূ যায়িদ (রাঃ)। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাসকে জিজ্ঞাসা করলাম, আবূ যায়দ কে? তিনি বললেন আমার চাচাদের মধ্যে একজন।
৬১১৮. আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনু মা’বাদ (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কে কে কুরআন একত্রিত করেছিলেন? তিনি বললেন, চারজন, ঐদের সবাই আনসারী। উবাই ইবনু কা’ব, মুয়ায ইবনু জাবাল, যায়দ ইবনু সাবিত ও আনসারদের মধ্যে একজন তাঁর কুনিয়াত আবূ যায়দ (রাঃ)।
৬১১৯. হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাইকে বললেন, তোমাকে কুরআন পড়ে শোনানোর জন্যে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন। উবাই (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা কি আপনার কাছে আমার নাম নিয়ে বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহই আমার কাছে তোমার নাম নিয়েছেন। এতে উবাই (রাঃ) কাঁদতে আরম্ভ করলেন।
৬১২০. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) কে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন, তোমাকে لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا (সূরা বায়্যিনাহ) পড়ে শোনাবার জন্য। উবাই (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তাআলা কি আমার নাম নিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আনাস (রাঃ) বলেন, উবাই (রাঃ) তখন কেঁদে ফেললেন।
ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাসকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাইকে অনুরূপ কথা বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. সা'দ ইবন মু'আয (রাঃ) এর ফযীলত
৬১২১. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সা’দ ইবনু মুয়ায (রাঃ) এর জানাযা সামনে রাখা হয়েছিলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার জানাযার জন্যে রহমান (দয়ালু আল্লাহর) আরশ কেঁপে উঠেছে।
৬১২২. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সা'দ ইবনু মুয়াযের মৃত্যুতে দয়ালু রহমান (দয়ালু আল্লাহর) আরশ কেঁপে ওঠে।
৬১২৩. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রুযযী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন মুআয (রাঃ) এর জানাযা রাখা ছিল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার জন্য রহমান (দয়ালু আল্লাহর) আরশ কেঁপে উঠেছে।
৬১২৪. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা' (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক জোড়া রেশমী পোশাক হাদিয়া দেওয়া হল। সাহাবারা তখন তা স্পর্শ করে এর কোমলতায় আশ্চর্যবোধ করতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এ কোমলতায় আশ্চর্যাম্বিত হচ্ছো? জান্নাতের মধ্যে সা’দ ইবনু মুআয এর রুমালগুলো হবে এর চেয়েও উত্তম ও মোলায়েম।
৬১২৫. আহমদ ইবনু আবদাহ দাব্বী (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রেশমী বস্ত্র দেওয়া হলো ...... তারপর তিনি পুর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইবনু আবদাহ ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও অনুরূপ অর্থযুক্ত বা অনুরূপ শব্দের হাদীসে বর্ণনা করেছেন।
৬১২৬. মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু জাবাল (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) থেকে এ দুটো সনদেই আবূ দাউদের রিওয়ায়াতের মতো বর্ণনা করেন।
৬১২৭. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিহি রেশমের একটি জোব্বা হাদিয়া দেওয়া হলো। অবশ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশম পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা এতে (এর কোমলতায়) আশ্চর্যাম্বিত হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার কবজায় মুহাম্মদের জীবন, তাঁর কসম! জান্নাতে সা’দ ইবনু মুআযের রুমালগুলো এর চেয়েও উৎকৃষ্ট।
৬১২৮. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, দাওমাতুল জান্দালের (বাদশাহ্) উকায়দির রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে একজোড়া পোশাক উপহার পাঠালো ...... তারপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করলেন। তবে এতে "তিনি রেশম পরতে নিষেধ করতেন" কথাটি উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. আবু দুজানাহ সিমাক ইবন খারাশাহ (রাঃ) এর ফযীলত
৬১২৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন একটি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন এটা আমার কাছ থেকে কে গ্রহণ করবে? তখন তাঁদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তই হাত বাড়িয়ে বলতে লাগল, আমি, আমি। তিনি বললেন, এর হক আদায় করে কে গ্রহণ করবে? এ কথা শুনেই লোকজন দমে গেল। তখন সিমাক ইবনু খারাশাহ আবূ দুজনাহ (রাঃ) বললেন, আমি এটির হক আদায় করার অঙ্গীকার গ্রহণ করব। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি এটি নিয়ে নিলেন আর এ দ্বারা মুশরিকদের মাথার খুলি বিদীর্ণ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. জাবির (রাঃ) এর পিতা আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম (রাঃ) এর ফযীলত
৬১৩০. উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী ও আমর নাকিদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উহুদ যুদ্ধের দিন আমার পিতাকে কাপড়ে আবৃত করে আনা হলো, তার কান-নাক, হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে। আমি তার কাপড় সরাতে চাইলে লোকেরা আমায় নিষেধ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় সরালেন অথবা তিনি সরানোর আদেশ দেওয়ায় সরানো হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ক্রন্দনকারিনী অথবা চিৎকার (বিলাপ) কারিনীর আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? লোকেরা বললো, আমরের মেয়ে অথবা আমরের বোন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে কাঁদছে কেন? উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত ফিরিশতারা পাখা মেলে তাকে ছায়া দিয়েছে।
৬১৩১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা উহুদের দিন শহীদ হলেন, আমি তাঁর মুখ থেকে কাপড় সরাই আর কাদি। লোকেরা আমাকে বারণ করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেননি। আর আমরের মেয়ে ফাতিমাও তার জন্য কাঁদতে থাকলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সে (কেউ) তার জন্য কাঁদুক বা নাই কাঁদুক, ফিরিশতাগণ তার উপর আপন পাখার ছায়া বিস্তার করে রয়েছে, যতক্ষন না তোমরা তাকে উঠিয়ে নিয়েছ।
৬১৩২. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে জুরায়েজের বর্ণনায় ফিরিশতা ও ক্রন্দনকারিণীর কান্নার উল্লেখ নেই।
৬১৩৩. মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালফ (রাঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে বস্ত্রাবৃত অবস্থায় আনা হলো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে রাখা হল ...... অতঃপর তাদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
No comments: