সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ ফযীলত-২য়
পরিচ্ছেদঃ ২৩. নবী (ﷺ) এর নিকট ওহী আসার সময় এবং শীতের সময়ও তিনি ঘেমে যেতেন
৫৮৫০. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শীতের দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হতো আর তাঁর কপাল বেয়ে ঘাম পড়তো।
৫৮৫১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, আপনার কাছে ওহী কী ভাবে আসে? তিনি বললেনঃ কখনো তা আসে ঘন্টার ধ্বনির মতো আর তা আমার জন্য খুবই কষ্টকর হয়। তারপর তা (ওহীর আগমন) থেমে যায়, আর আমি শিখে নিই। আবার কখনো পুরুষের বেশে এক ফিরিশতা ওহী নিয়ে (আসেন) এবং তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্ত করতে থাকি।
৫৮৫২. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যখন ওহী আসতো তখন তাতে তাঁর খুব কষ্ট হতো এবং তার চেহারা মুবারক ফ্যাকাশে হয়ে যেতো।
৫৮৫৩. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যখন ওহী নাযিল হতো তখন তিনি মাথা নিচু করে ফেলতেন এবং তাঁর সাহাবীরাও মাথা নিচু করতেন। তারপর যখন ওহী শেষ হয়ে যেতো, তিনি তাঁর মাথা তুলতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. নবী (ﷺ) এর সিঁথি না করে চুল আঁচড়ানো এবং (পরবর্তীতে) সিঁথি করা
৫৮৫৪. মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম ও মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহলে কিতাবরা তাদের কেশ কপালের উপর ঝুলিয়ে রাখতো, আর মুশরিকরা সিঁথি কাটতো। যে বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি কোন আদেশ আসতো না, সে বিষয়ে তিনি আহলে কিতাবদের অনুসরণ করা পছন্দ করতেন। তাই তিনি তাঁর কেশ মুবারক কপালে ঝুলিয়ে রাখেন এবং পরবর্তী সময় সিঁথি কাটতে থাকেন।
আবূ তাহির (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. নবী (ﷺ) এর দৈহিক সৌন্দর্যের বিবরণ, তিনি ছিলেন সকল মানুষের চেয়ে সুন্দর চেহারার অধিকারী
৫৮৫৫. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ। তাঁর উভয় কাঁধের দুরত্ব ছিল বেশি (চওড়া কাঁধ)। চুল ছিল কানের লতিকা পর্যন্ত লম্বিত। তিনি লাল পোশাক পরিহিত ছিলেন। তাঁর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি কখনো দেখি নি।
৫৮৫৬. আমর আন-নাকিদ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাবরী চুলধারী, লাল পোশাক পরিহিত কোন লোককে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে সুন্দর দেখিনি। তাঁর চুল কাঁধ স্পর্শ করতো। উভয় কাঁধের মধ্যে দূরত্ব ছিল। তিনি লম্বাও ছিলেন না, বেঁটেও ছিলেন না। আবূ কুরায়ব (তার রিওয়ায়াতে) (شَعْرُهُ স্থলে) لَهُ شَعَرٌ বলেছেন।
৫৮৫৭. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার চেয়ে সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন, আর তিনি ছিলেন সবার চাইতে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি খুব লম্বাও ছিলেন না, বেঁটেও ছিলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. নবী (ﷺ) এর কেশ এর বিবরণ
৫৮৫৮. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কেশ কেমন ছিল? তিনি বললেন, হালকা কোঁকড়ানো ছিল, না খুব কোকড়ানো (পেঁচানো), আর না একেবারে সোজা, তা ছিল দু'কান ও দু'কাঁধের মাঝ বরাবর।
৫৮৫৯. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কেশ (কখনো কখনো) তার দু'কাঁধ স্পর্শ করত।
৫৮৬০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কেশ মুবারক তার দু'কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঝুলান ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. নবী (ﷺ) এর মুখ, তাঁর দুই চোখ ও দুই গোড়ালির বর্ণনা
৫৮৬১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না এবং মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন প্রশস্ত মুখ, লাল সাদা মিশ্রিত টানা প্রলম্বিত চোখ ও কম গোশতের গোড়ালী বিশিষ্ট। বর্ণনাকারী শু'বা (রহঃ) সিমাক (রহঃ) কে প্রশ্ন করলেন, ضَلِيعُ الْفَمِ কেমন? তিনি বললেন, বড় মুখ। শু'বা বলেনঃ আমি বললাম, أَشْكَلُ الْعَيْنِ কেমন? তিনি বললেন, চোখ দুটো দীঘল লম্বা ফাঁকযুক্ত। তিনি বলেন যে, আমি বললাম, مَنْهُوسُ الْعَقِبِ কেমন? তিনি বললেন, হালকা অমাংসাল গোড়ালী।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. নবী (ﷺ) এর দিলে কমনীয় (লালচে) শুভ্র চেহারার অধিকারী
৫৮৬২. সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (জুরায়রী) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি ছিলেন ফর্সা, লাবণ্যময় চেহারার অধিকারী।
মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, একশ হিজরীতে আবূ তুফায়ল (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে তিনই সর্বশেষে ইন্তেকাল করেন।
৫৮৬৩. উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবূ তুফায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন আমি ছাড়া এমন কেউ দুনিয়ায় আর অবশিষ্ট নেই। রাবী বলেন, আমি বললাম, তাঁকে কেমন দেখেছেন? তিনি বললেন, ফর্সা, লাবণ্যময় এবং মধ্যমাকৃতির।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বার্ধক্য
৫৮৬৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খেযাব (কলপ) লাগাতেন? তিনি বললেনঃ তিনি তো তেমন বার্ধক্য দেখেন নি তবে ...... ইবনু ইদরীস (রহঃ) বলেন, তিনি [আনা (রাঃ)] যেন কম বুঝাচ্ছিলেন। অবশ্য আবূ বাকর ও উমর (রাঃ) মেহদী এবং নীল রঙের খেযাব লাগিয়েছেন।
৫৮৬৫. মুহাম্মাদ ইবনু বাককার ইবনু রায়য়্যান (রহঃ) ... ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খেযাব ব্যবহার করেছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন (তিনি) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেযাব ব্যবহারের সময় (বার্ধক্যে) পৌছোনি। অতঃপর তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়িতে কয়েকটি চুল সাদা ছিল। রাবী বললেন, আমি তাকে [আনাস (রাঃ) কে] বললাম, আবূ বকর (রাঃ) কি খেযাব ব্যবহার করেছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, মেহদী ও নীল দ্বারা।
৫৮৬৬. হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খেযাব লাগিয়েছেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সামান্য মাত্র বার্ধক্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
৫৮৬৭. আবূ রবী আতাকী (রহঃ) ... সাবিত (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেযাব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করলে তার মাথার সাদা চুল গুণে ফেলতে পারতাম। তিনি বলেন, তিনি খেযাব লাগান নি। অবশ্য আবূ বকর (রাঃ) মেহদী এবং নীল দিয়ে খেযাব দিয়েছেন। আর উমর (রাঃ) শুধু মেহদী দিয়ে খেযাব দিয়েছেন।
৫৮৬৮. নসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারো চুল ও দাঁড়ির সাদা কেশ উপড়িয়ে ফেলা মাকরুহ। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেন নি। কিছু সাদা ছিল তাঁর অধরের নীচের ছোট দাঁড়িতে, কানপট্রিতে কিছু, আর মাথায় কিছু।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) এ সনদই এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮৬৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার, আহমদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবু ইয়াস (রহঃ) সুত্রে, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বার্ধক্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, তাঁকে আল্লাহ বার্ধক্য দ্বারা পরিবর্তিত করেন নি।
৫৮৭০. আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এতটুকু সাদা হতে দেখেছি এবং যুহায়র (রহঃ) তার ক'টি অংগুলি ছোট দাঁড়িতে রেখে বলতে লাগলেন; তখন লোকেরা আবূ জুহায়ফাকে বললো, সে দিন আপনি কার মত (বয়সের) ছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি তীর চাঁচতাম এবং তীরে শর লাগাতাম (কিশোর ছিলাম)।
৫৮৭১. ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি তার রং ছিল ফর্সা, তিনি প্রায় বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) দেখতে তাঁর সদৃশ ছিলেন।
৫৮৭২. সাঈদ ইবনু মানসুর ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে এ হাদীসটই বর্ণনা করেছেন; কিন্তু বর্ণনাকারীরা "ফর্সা এবং বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন" এ কথাগুলো উল্লেখ করেন নি।
৫৮৭৩. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বার্ধক্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, যখন তিনি মাথায় তেল দিতেন, তখন সাদা বর্ণ দেখা যেত না। তবে যখন তেল দিতেন না তখন দেখা যেতো।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. মোহরে নবুওয়াত, তার বর্ণনা এবং নবী (ﷺ) এর দেহে এর অবস্থান
৫৮৭৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল এবং দাঁড়ির সম্মুখভাগ সাদা হয়ে গিয়েছিল। যখন তিনি তেল দিতেন, তখন সাদা দেখা যেত না, আর যখন চুল এলোমেলো হতো, তখন (শুভ্রতা) দেখা যেতো। তাঁর চুল খুব ঘন ছিল। এক ব্যক্তি বললো, তাঁর চেহারা মুবারক ছিল তলোয়ারের মত। জাবির (রাঃ) বললেন, না, তার চেহারা মুবারক ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মত (উজ্জ্বল) গোলাকার। তাঁর কাঁধের কাছে আমি কবুতরের ডিমের মত নবুওয়াতের মোহর দেখেছি। (এটির রং ছিল) তাঁর শরীরের রংয়ের সদৃশ।
৫৮৭৫. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে মোহরে নুবুওয়াত দেখেছি, যেন কবুতরের ডিম।
৫৮৭৬. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সিমাক (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮৭৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি আমার বোনের ছেলে। সে অসুস্থ তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। এরপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমি তাঁর উযুর পানি থেকে পান করলাম। তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম এবং তাঁর দুকাঁধের মাঝে মোহরে নূবুওয়াত দেখতে পেলাম বাসর সজ্জার চাদরের ঘুন্ডির মতো (হাজালার ডিমের মতো)।
৫৮৭৮. আবূ কামিল, সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ ও হামিদ ইবনু উমর আল বাকরাবী (রহঃ) ... আসিম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি এবং তাঁর সঙ্গে গোশত ও রুটি খেয়েছি অথবা বলেছেন 'সারীদ' (খেয়েছি)। তিনি (আসিম) বলেন যে, আমি তাঁকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমার জন্যও। পরে এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ ‘ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার পাপের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের জন্য’ (৪৭ঃ ১৯)। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে গেলাম আর মোহরে নবুওয়াত দেখলাম, দু'কাঁধের মাঝে বাম বাহু সন্ধিতে-কাঁধে হাড়ের কাছে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের মতো, যাতে শরীরের গোটার ন্যায় তিলক ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ২৯. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বয়স এবং মক্কা ও মদীনায় তার অবস্থানকাল
৫৮৭৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি লম্বাও ছিলেন না বা বেশি খাটোও ছিলেন না। একেবারে সাদাও ছিলেন না এবং শ্যামলাও ছিলেন না। তার চুল অতিরিক্ত কোঁকড়ানোও ছিলো না এবং একেবারে সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নুবুওয়াত দান করেন। এরপর তিনি মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন এবং মদিনায় দশ বছর। ষাট বছরের মাথায় আল্লাহ তাআলা তাঁকে ওফাত দান করেন। এ সময় তার মাথায় ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা ছিল না।
৫৮৮০. ইয়াইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আলী ইবনু হুজর ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে মালিক বর্ণিত (পূর্বোক্ত) হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাঁরা তাদের হাদীসে ‘উজ্জ্বল সাদা বর্ণের ছিল’ অধিক বলেছেন।
৫৮৮১. আবূ গাসসান আর রাযী মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু হয়েছে তেষট্টিবছর বয়সে, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এরও তেষট্টি বছর বয়সে, উমর (রাঃ) এরও তেষট্টি বছর বয়সে।
৫৮৮২. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হল, তখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর।
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) আমাকে অনুরূপ বর্ণনা অবহিত করেছেন।
৫৮৮৩. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে দু'টো সনদে উকায়ল এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৮৮৪. আবূ মামার ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম হুযালী (রহঃ) ... আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উরওয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় কতদিন ছিলেন? তিনি বললেন, দশ বছর। রাবী বলেন, আমি বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো বলেন, তেরো বছর।
৫৮৮৫. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উরওয়া (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন দশ বছর। রাবী বলেন, আমি বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো বলেন দশ বছরের অধিক। রাবী বলেন, ইবনু আব্বাসের জন্য দু’আ করলেন এবং বললেন, তিনি এ তথ্য কবিদের কথা থেকে নিয়েছেন।
৫৮৮৬. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় তের বছর ছিলেন এবং তেষট্টি বছর বয়সে তাঁর ওফাত হয়।
৫৮৮৭. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নবুওতের পর) তের বছর মক্কায় অবস্থান করেছিলেন, তখন তাঁর উপর ওহী নাযিল হয়। আর মদিনায় দশ বছর ছিলেন। তিনি ওফাত বরণ করেন যখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর।
৫৮৮৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান আল-জুফী (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রাঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। তাদের কেউ কেউ বললো, আবূ বকর (রাঃ) (বয়সে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে বড় ছিলেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় তখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর, আবূ বকর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর বয়সও তেষট্টি বছর, উমর (রাঃ) শহীদ হন তখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর।
রাবী বলেন লোকদের ভেতর আমর ইবনু সা’দ নামক একজন বললো, জারীর আমাকে বলেছেন যে, আমরা মুআবিয়া (রাঃ) এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়সের উল্লেখ করলো। তখন মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় তখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর, আবূ বকর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর, উমর (রাঃ) শহীদ হন তখন তাঁর বয়সও তেষট্টি বছর।
৫৮৮৯. ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মুআবিয়া (রাঃ) কে ভাষণ দিতে শুনেছেন। মুআবিয়া (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হয় তখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর, আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-ও তেষট্টি বছর (বয়সে ইন্তেকাল করেন)। আমি (এখন) তেষট্টি বছর (বয়সের এবং এ বয়সে মৃত্যুর আশা রাখি)।
৫৮৯০. ইবনু মিনহাল দারীর (রহঃ) ... বনূ হাশিমের ক্রীতদাস আম্মার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর (বয়স) কত ছিল? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি ভাবি নি যে, তুমি তাঁর সম্প্রদায়ের লোক হয়েও এ কথটিা জানবে না। আমি বললাম, আমি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তাই এ বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসা করাই আমি বেশি ভাল মনে করলাম।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি কি হিসাব জান? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আচ্ছা চল্লিশ ধরে রেখো। এ সময় তিনি রাসুল হন। এর সঙ্গে পনেরো বছর যোগ কর, যখন মক্কায় অবস্থান করেন ভীতি এবং নিরাপত্তায়। আরো দশ হিজরতের পর থেকে মদিনায়।
৫৮৯১. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইউনুস (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইয়াযীদ ইবনু যুরাঈ-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৮৯২. নাসর ইবনু আলী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পঁয়ষট্টি বছর বয়সে ওফাত লাভ করেন।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এ সনদে খালিদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫৮৯৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পনেরো বছর অবস্থান করেন, সাত বছর (বিভিন্ন) শব্দ শুনতেন এবং আলো দেখতেন, কিছু অন্য কিছু দেখতেন না। আর আট বছর তার কাছে ওহী আসতো। তারপর মদিনায় অবস্থান করেন দশ বছর।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নামসমুহ
৫৮৯৪. যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত), আমি আহমাদ (অত্যধিক প্রশংসাকারী), আমি আল-মাহী (বিলুপ্তকারী), এমন ব্যক্তি যে, আমার মাধ্যমে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি আল-হাশির (একত্রকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকদের সমবেত করা হবে। আমি আল-আকিব (সর্বশেষ), আর আল-আকীব ঐ ব্যক্তি, যার পর কোন নাবী নেই।
৫৮৯৫. হারামালা ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ... যুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার অনেক নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমদ, আমি আল-মাহী (বিলোপ সাধনকারী) ঐ ব্যক্তি যে, আমার মাধ্যমে আল্লাহ কুফরকে বিলুপ্ত করবেন। আমি আল-হাশির (সমবেতকারী), এমন ব্যক্তি যে, আমার পায়ের কাছে লোকেরা সমবেত হবে। আমি আন-আকীব (সমাপ্তি), এমন ব্যক্তি, যার পর কেউ নেই এবং আল্লাহ তার নাম রেখেছেন রাঊফ ও রাহীম (স্নেহময়, দয়াবান)।
৫৮৯৬. আবদুল মালিক ইবনু শু'আয়ব ইবনু লাইস, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। শুআয়ব এবং মা'মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে 'আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি’ উল্লেখ রয়েছে; এবং মা'মারের হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, 'আমি যুহুরী (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল-আকিব কী? তিনি বললেন, এমন ব্যক্তি যার পর আর নবী নেই।
মামার ও উকায়ল এর হাদীসে আছে ‘الْكَفَرَةَ, আর শু'আয়ব এর হাদীসের রয়েছে الْكُفْرَ (কাফিরদের বিলুপ্ত করবেন)।
৫৮৯৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের নামগুলো আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ, আহমদ, আল-মুকাফ্ফী (সর্বশেষ), আল-হাশির (সমবেতকারী), তাওবার নাবী ও রহমতের নাবী।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর আল্লাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান এবং তার প্রতি তার প্রচণ্ড ভীতি।
৫৮৯৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একটি কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করলেন এবং তাতে 'রুখসাত' (সহজে অবকাশমূলক) পন্থা গ্রহন করলেন। এ খবর তাঁর কতক সাহাবার কাছে পৌছলে তাঁরা (নিজেদের জন্য) সে কাজটি অপছন্দ করলেন এবং এ থেকে আত্মরক্ষামূলক বিরত রইলেন। এ কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পেরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ লোকদের কি হল, তাদের কাছে এ সংবাদ পৌছেছে যে, একটা কাজ আমি অনুমোদন করেছি, এরপরও তারা একে খারাপ মনে করছে আর এ থেকে বিরত থাকছে? আল্লাহর কসম! আল্লাহকে আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জানি এবং তাকে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় করি।
৫৮৯৯. আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে জারীর এর সনদে তার বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।।
৫৯০০. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কাজকে বৈধরূপে অনুমোদন করলেন, কিছু কিছু লোক তা থেকে আত্মরক্ষায় প্রবৃত হলো। এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি রাগান্বিত হলেন; এমনকি তাঁর চেহারায় ক্রোধ প্রকাশিত হলো। তখন তিনি বললেনঃ লোকদের কী হলো যে, আমার জন্যে সহজকৃত (অনুমোদিত) একটা কাজে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি আল্লাহকে তাদের চেয়ে বেশি জানি এবং তাদের চেয়ে বেশি ভয় করি।
পরিচ্ছেদঃ ৩২. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুসরণ ওয়াজিব হওয়া
৫৯০১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আনসারদের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে যুবায়র (রাঃ) এর সঙ্গে মদিনার হাররা (অঞ্চলের) নালা নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হল, যা থেকে তারা খেজুর বাগানে সেচ দিত। আনসারী লোকটি বলল, পানি ছেড়ে দাও, (আমার জমিনে) প্রবহমান থাকুক। যুবায়র (রাঃ) মানলেন না। শেষ পর্যন্ত সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তর্ক করলে তিনি যুবায়রকে বললেন, হে যুবায়র! তুমি পানি ব্যবহার করে তোমার পড়শীর জন্য ছেড়ে দাও।
তখন আনসারী লোকটি রেগে গিয়ে বল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যুবায়র তো আপনার ফুফাতো ভাই! এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার রং বদলে গেলো। তিনি বললেনঃ হে যুবায়র! নিজের গাছগুলোকে পানি দাও এবং পানি আটকে রাখো, যতক্ষন না পানি বাঁধ পর্যন্ত পৌছে যায়। যুবায়র (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমার মনে হয় এ আয়াত সে সম্পকেই অবতীর্ণ হয়ঃ
‘তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তারা তাদের অভ্যন্তরীণ বিবাদের বিষয়ে আপনাকে বিচারক মেনে নেয়, অতঃপর (আপনার বিচারে) তাদের অন্তরে কোন সংকট অনুভব না করে ...... (৪ঃ ৬৫)।
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. রাসুল (ﷺ) কে সম্মান প্রদর্শন করা, অপ্রয়োজনীয় অথবা এমন বিষয় যার সাথে শরী'আতের বিধি-বিধানের সম্পর্কে নেই এবং যা সংগঠিত হবে না এবং অনুরূপ বিষয়ে অধিক প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকা
৫৯০২. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজিবী (রহঃ) ... আবদুর রহমান ও সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, আমি তোমাদের যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক এবং যা তোমাদের আদেশ করেছি, তা থেকে যা সম্ভব তা পালন কর। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে তাদের প্রশ্নের আধিক্য এবং নিজ নবীদের সাথে বিরোধ।
৫৯০৩. মুহাম্মাদ ইবনু আহমদ ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯০৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, ইবনু নুমায়র, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু আবূ উমর, উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা সকলেই বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের যার উপর ছেড়ে রেখেছি, তোমরা আমাকে তাতে রেখে দাও অর্থাৎ তা নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন বা বাড়াবাড়ি করো না। হাম্মাম (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে, "যে অবস্থায় তোমাদের ছাড়ে রাখা হয়েছে।" কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে ...... তারপর তাঁরা যুহরী এবং আবূ সালামা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৯০৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানদের মধ্যে মুসলমানদের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অপরাধী সে ব্যক্তি, যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা মুসলমানদের জন্য হারাম করা হয়েছিল না, কিন্তু তার প্রশ্ন করার কারণে সে বিষয়টি তাদের উপর হারাম করে দেয়া হল।
৫৯০৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী মুসলমান সে-ই, যে মুসলমানদের জন্য যা হারাম নয়, এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে আর সে বিষয়টি তার প্রশ্ন করার কারণে লোকদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়।
হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে ভিন্ন সনদে আবদ ইবনু হুমায়দ ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে মা'মার এর হাদীসে যুহরীর রিওয়াতে অতিরিক্ত রয়েছে, "কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং তার খুঁটিনাটি জানতে চায়।" ইবনু সা'দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত ইউনুসের হাদীসে রয়েছে যে, (যুহরী (রহঃ) বলেছেন), আমের ইবনু সা’দ থেকে, তিনি সা’দ (রহঃ) থেকে শুনেছেন।
৫৯০৭. মাহমূদ ইবনু গায়লান, মুহাম্মদ ইবনু কুদামাহ সুলামী এবং ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মাদ লুলুঈ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তাঁর সাহাবীদের কোন কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলো। তখন তিনি এক ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ আমার সন্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়। আজকের মতো ভাল এবং মন্দ আমি আর দেখি নি। আমি যা জানতে পেরেছি তা যদি তোমরা জানতে, তবে অবশ্যই তোমরা খুবই কম হাসতে এবং বেশি কাদতে।
আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের উপর এর চেয়ে ভয়াবহ কোন দিন আর আসে নি। তারা নিজেদের মাথা ঢেকে ফেলল এবং তাদের ভেতর থেকে কান্নার শব্দ আসতে লাগলো। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর উমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমরা সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহকে রব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসেবে মেনে নিলাম।
রাবী বলেন, এরপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুকা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা প্রকাশ করা হলে তোমরা দুঃখিত হবে।"
৫৯০৮. মুহাম্মদ ইবনু মা'মার ইবনু রিবঈ কায়সী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। আর তখনই অবতীর্ণ হয়ঃ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে" ...... আয়াতের শেষ পর্যন্ত (৫ঃ ১০১)।
৫৯০৯. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হারামালা ইবনু ইমরান তূজীবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর বাইরে এলেন এবং লোকদের নিয়ে যোহরের সালাত আদায় করলেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন মিম্বরে উঠে কিয়ামতের আলোচনা করলেন এবং উল্লেখ করলেন যে, এর আগে অনেক বড় বড় ব্যাপার সংঘটিত হবে। এরপর বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে চায়, সে যেন সে সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করে। আল্লহর কসম! যতক্ষন পর্যন্ত আমি এ স্থানে রয়েছি, ততক্ষন তোমরা আমাকে যে বিষয়েই প্রশ্ন করবে, আমি তা বলে দিব।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে লোকেরা খুবই কান্নাকাটি শুরু করে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারংবার বলতে থাকলেন, আমাকে প্রশ্ন কর। তখন আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমার পিতা কে? ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ। এরপর যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারংবার বলতে থাকলেন আমাকে প্রশ্ন কর। তখন উমর (রাঃ) হাটু গেড়ে বসে বললেন, সন্তুষ্ট চিত্তে আমরা আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছি।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) যখন এ কথা বললেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন। রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিপদ (সন্নিকটে)। মুহাম্মাদের প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম! এ দেয়ালটির পাশে এখনই আমার সম্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়। অতএব আজকের মত ভাল এবং মন্দ আমি আর দেখি নি।
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহ আমাকে বলেছেন, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফার মা আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফাকে বলেছেন, তোমার চেয়ে বেশি অবাধ্য কোন সন্তানের কথা আমি শুনিনি নি। তুই কি এ কথা থেকে নিশ্চিন্ত ছিলি যে, তোর মাও হয়ত এমন কোন পাপ করে বসেছে যা জাহেলী যুগের নারীরা করতো, আর তুই তোর মাকে লোকদের সামনে অপমান করতিস! আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা (রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর কসম! যদি তিনি আমাকে একটা কাল হাবশীর সাথেও সস্পর্কিত করতেন (তাকে আমার পিতা সাব্যস্ত করতেন) তবে আমি তা গ্রহণ করে নিতাম।
৫৯১০. আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং উবায়দুল্লাহব হাদীসটি এর সঙ্গে রয়েছে, তবে শুআয়ব বলেছেন, যুহরী সুত্রে উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ থেকে, তিনি বলেন, আমাকে জনৈক আলিম ব্যক্তি হাদীস শুনিয়েছেন, আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফার মা বললেন ...... ইউনুসের হাদীসের অনুরূপ বলেছেন।
৫৯১১. ইউসুফ ইবনু হাম্মাদ মা'নী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করতে লাগল। এমনকি তারা তাঁকে প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেললো। তখন একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে মিম্বরে উঠে বললেনঃ আমাকে জিজ্ঞাসা কর, যে কোন বিষয়ে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে আমি অবশ্যই তোমাদের বর্ণনা করে দেব। লোকেরা একথা শুনে তাঁকে প্রশ্ন করা থেকে মুখ বন্ধ রাখল এবং ঘাবড়িয়ে গেল, না জানি সম্মুখে কোন বিষয় উপস্থিত হয়ে পড়ে!
আনাস (রাঃ) বলেন আমি ডানে বাঁয়ে দেখতে লাগলাম। সব মানুষ নিজ নিজ মাথা কাপড়ে ঢেকে কাঁদছিল। তখন মসজিদ থেকে একজন লোক উঠল যাকে ঝগড়া লাগলে তার পিতা ব্যতীত অন্যের দিকে তাকে সম্পর্কিত করা হতো। সে বলল, হে আল্লাহর নাবী! কে আমার পিতা? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফা।
এরপর উমর (রাঃ) উঠে বললেন, আমরা সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাসুল হিসেবে মেনে নিলাম। (আর) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি ফিতনার অকল্যাণ থেকে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেনঃ আজকের মতো ভাল এবং মন্দ আমি কখনো দেখি নি। আমার সন্মুখে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র তুলে ধরা হয়। তাই আমি উভয়টিকে এ দেয়ালের পাশে দেখতে পাই।
৫৯১২. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আসিম ইবনু নাযর তায়মী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে এ ঘটনাসহ (বর্ণনা করেছেন)।
৫৯১৩. আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ আরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যা তিনি পছন্দ করেননি। যখন এ ধরনের প্রশ্ন অত্যধিক করা হলো, তিনি রাগাম্বিত হয়ে লোকদের বললেনঃ যা ইচ্ছে, তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর। এক ব্যক্তি বললো, কে আমার পিতা? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফা। আরেক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো ইয়া রাসুলাল্লাহ! কে আমার পিতা? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বার আযাদকৃত গোলাম সলিম।
উমর (রাঃ) যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারায় রাগের লক্ষণ দেখতে পেলেন, তখন বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণনায় (শুধু এটুকু) আছে, বললো, কে আমার পিতা, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বার আযাদকৃত গোলাম সালিম।
৫৯১৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ সাকাফী ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খেজুর গাছের পাশে দাঁড়ানো লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এরা কি করছে? লোকেরা বললো, এরা প্রজনন করছে। মাদীকে নর-নারী ফুলের গর্ভাশয়ে পুরুষ ফুলের রেণু ও (কেশর) লাগায় এতে তা গর্ভবতী হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি মনে করি না এতে কোন উপকার হয়।
রাবী বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ মন্তব্য সাহাবাদের কাছে পৌছলে তারা প্রজনন কর্ম বন্ধ করে দিল। এরপর এ খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেওয়া হলো। তিনি বললেন, এতে যদি তাদের উপকার হয়ে থাকে, তবে তারা করুক। আমি তো একটা ধারণা করেছি মাত্র। অতএব তোমরা আমার ধারণাকে অবলম্বন করো না। কিন্তু আমি যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কথা বলি, তবে তার উপর আমল করো। কেননা আমি মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহর প্রতি কখনই মিথ্যারোপ করবো না।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. শরী'আত হিসেবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা ওয়াজিব আর পার্থিব বিষয়ে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন, তা নয়
৫৯১৫. আবদুল্লাহ ইবনু রুমী ইয়ামামী, আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আনবারী ও আহমদ ইবনু জাফর মা'কিরী (রহঃ) ... রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন। লোকেরা খেজুর গাছ তাবীর করত। রাবী বলেন, অর্থাৎ নর ও নারী ফুলের রেণুতে মিশ্রণ ঘটিয়ে খেজুর গাছকে গর্ভদান করত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি করছ? তারা বললো আমরা এরূপ করে আসছি। তিনি বললেনঃ তোমরা এমন না করলেই বোধ হয় ভাল হয়।
রাবী বললেন, সুতরাং তারা তা বর্জন করল। আর এতে খেজুর ঝরে পড়ল অথবা (রাবী বলেছেন,) তার উৎপাদন কমে গেল। রাবী বলেন, লোকেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ ঘটনা বলল। তখন তিনি বললেন, আমি তো একজন মানুষ। দ্বীন সম্পর্কে যখন তোমাদের আমি কোন আদেশ দেই, তখন তোমরা তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার মতানুসারে বলি, তখন তো আমি একজন মানুষ মাত্র। রাবী ইকরামা (রহঃ) বলেনঃ অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেছেন। আর মা'কিরী (রহঃ) সন্দেহ ব্যতিরেকে কেবল نَفَضَتْ (ঝরে পড়ল) বলেছেন।
৫৯১৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে এবং ভিন্ন সুত্রে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছে গর্ভদানরত কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি বললেন, যদি এটা না কর তাহলে ভাল হবে। লোকেরা তা করল না। এতে 'চিটা' খেজুর উৎপন্ন হলো। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের খেজুর গাছের কি হলো? লোকেরা বললো, আপনি এমন এমন বলেছিলেন (তা করায় এরূপ হয়েছে)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের পার্থিব বিষয়ে তোমরাই অধিক অবগত।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখার ফযীলত ও এর আকাঙ্ক্ষা
৫৯১৭. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এটা তা, যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর তিনি কতক হাদীস উল্লেখ করেছেন। তার মধ্য থেকে একটি হাদীস হল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহাম্মাদের প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম! তোমাদের কারো উপর এমন এক সময় আসবে যখন সে আমাকে দেখতে পাবে না আর আমার দর্শন লাভ তার কাছে তখন তার ধন-ঐশ্বর্য্য ও পরিবার-পরিজনের চেয়েও প্রিয় হবে। আবূ ইসহাক বলেন, এতে আমার নিকট অর্থ হলো, নিশ্চয়ই আমাকে তাদের সঙ্গে দেখা তাদের কাছে তার পরিবার ও ধন-সম্পদ থেকে অধিক প্রিয় হবে, আমার মতে বাক্যে (مَعَهُمْ শব্দ) অগ্র-পশ্চাৎ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. ঈসা (আঃ) এর ফযীলত
৫৯১৮. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি মরিয়ম তনয়ের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী। (কেননা) নাবীগণ পরস্পরে বৈমাত্রেয় ভ্রাতা সমতুল্য। আর আমার ও তাঁর মধ্যে কোন নাবী নেই।
৫৯১৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী। নাবীগণ পরস্পরে বৈমাত্রেয় ভাই। আর আমার ও ঈসার মধ্যে কোন নবী নেই।
৫৯২০. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বরেন, ইহ ও পরজগতে আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী। লোকেরা বললো, কিরূপে হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেনঃ নাবীগণ একই পিতার সন্তানের মত। তাদের মা বিভিন্ন। তাঁদের দ্বীন একটই। আর তাঁর এবং আমার মধ্যে কোন নবীও নেই।
৫৯২১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন কোন নবজাতক নেই যাকে শয়তান খোঁচা না দেয়। যাতে শয়তানের খোঁচায় সে চিৎকার করতে শুরু করে। শুধু মরিয়ম তনয় এবং তাঁর মাতা ছাড়া। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমাদের ইচ্ছে হলে পড়ঃ "নিশ্চয়ই আমি অভিশপ্ত শয়তান হতে তাঁর ও তাঁর বংশধরদের জন্য তোমার শরণ নিচ্ছি" (৩ঃ ৩৬)।
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন, এবং তাঁরা বলেন, "জন্মের সময়ে তাকে স্পর্শ করে, তখন শয়তানের ছোঁয়ায় সে চিৎকার করে উঠে।" শুয়াইবের হাদীসে রয়েছে "শয়তানের ছোঁয়া।"
৫৯২২. আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানকেই শয়তান ছুঁয়ে দেয়, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করে, শুধু মারিয়াম ও তাঁর ছেলে ব্যতীত।
৫৯২৩. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জন্ম হওয়ার সময় নবজাতকের চিৎকার শয়তানের একটি খোঁচার কারণে।
৫৯২৪. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রাঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মরিয়ম পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম) এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি চুরি করেছ। সে বললো, কখনো না। যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর শপথ (আমি চুরি করি নি)। তখন ঈসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম আর আমি নিজেকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলাম।
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. ইবরাহীম খলীল (আঃ) এর মর্যাদা
৫৯২৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে সৃষ্টির সেরা! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিনি তো ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)।
৫৯২৬. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯২৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ...... অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯২৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) খাতনা করেছেন কুড়াল (জাতীয় অস্ত্র) দিয়ে, তখন তাঁর বয়স ছিল আশি বছর।
৫৯২৯. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর চেয়ে অধিকতর সন্দেহ প্রবণ হওয়ার যোগ্য। যখন তিনি বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। তিনি বললেনঃ তুমি কি তবে বিশ্বাস কর নি? তিনি বললেনঃ কেন করব না, তবে তা কেবল আমার চিত্ত-প্রশান্তির জন্য (২ঃ ২৬০)।
(অনুরূপ) লুত (আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহ রহম করুন, তিনি শক্ত-কঠিন স্তম্ভের আশ্রয় চাইতেন। (অনুরূপ) আমি যদি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর ন্যায় দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দী থাকতাম, তবে আহবানকারীর ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতাম।
৫৯৩০. ইনশা-আল্লাহ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ... ইউনুস সুত্রে যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৩১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ লূত (আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন, তিনি (এমন কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন যে) শক্ত-কঠিন স্তম্ভের আশ্রয় চেয়েছিলেন।
৫৯৩২. আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাবী ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কখনো মিথ্যা বলেন নি; তিনবার (রূপক মিথ্যা) ব্যতীত। দু'বার আল্লাহ সস্পর্কিত। একবার তো তিনি বলেছিলেন, আমি অসুস্থ আর তাঁর কথা, "বরং এদের বড়টাই একাজ করেছে" (মূর্তি ভেঙ্গেছে)। আরেকটা 'সারা' সম্পর্কে। যখন তিনি এক অত্যাচারীর দেশে গিয়েছিলেন, (স্ত্রী) সারাও সঙ্গে ছিলেন। সারা ছিলেন সেরা সুন্দরী। তখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সারাকে বললেন, এ অত্যাচারী রাজা যদি জানতে পারে যে, তুমি আমার স্ত্রী, তবে তোমাকে ছিনিয়ে নেবে। কাজেই তোমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, তুমি বলবে যে, তুমি আমার বোন। ইসলামের দিক দিয়ে তুমি তো আমার বোনই হও। কেননা তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম আছে বলে আমার জানা নেই।
যখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সে অত্যাচারীর দেশে পৌছলেন, তখন রাজার লোকজন তাঁর কাছে নারীকে দেখতে পেয়ে রাজার কাছে এসে বলল, আপনার দেশে এমন একজন স্ত্রীলোক এসেছে, আপনই শুধু তার উপযুক্ত। রাজা সারাকে ডেকে পাঠালে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। সারা যখন রাজার কাছে পৌছলেন, সে সম্মোহিতের মত সারার দিকে হাত বাড়াতেই তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এটে গেলো। রাজা বললো, তুমি আল্লাহর কাছে আমার হাত খুলে যাওয়ার জন্য দুআ কর, আমি তোমাকে বিরক্ত করবো না। তিনি দুআ করলেন।
পুনরায় সে হাত বাড়াল, তখন প্রথম মুষ্টির চেয়ে অধিক শক্ত হয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। সারাকে সে আগের মতই বললো। তিনি দুআ করলেন। পুনরায় সে হাত বাড়াল। তখন প্রথম দুবারের চেয়ে আরো অধিক কঠিনভাবে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। তখন রাজা বললো, তুমি আল্লাহর কাছে আমার হাত খুলে দেয়ার জন্য দুআ কর। আল্লাহর কসম, তোমাকে আমি উত্যক্ত করব না। তিনি দুআ করলেন। তার হাত খুলে গেলো।
তখন সে ঐ লোকটিকে ডাকলো যে সারাকে এনেছিলো। বললো, তুই তো আমার কাছে শয়তান নিয়ে এসেছিস, মানুষ আনিস নি। একে আমার দেশ থেকে বের করে দে। সাথে হাজেরাকে দিয়ে দে। বর্ণনাকারী বলেন, সারা এগিয়ে চললেন। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাঁদের দেখে এগিয়ে এলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি খবর? তিনি বললেন, ভালোই আল্লাহ তাআলা আমার উপর থেকে পাপাচারীর হাতকে ফিরিয়ে রেখেছেন। আর একটা সেবিকাও দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এই (সেবিকাই) তোমাদের মা, হে আসমানের পানির সন্তানেরা!
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. মুসা (আঃ) এর ফযীলত
৫৯৩৩. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলরা উলংগ হয়ে গোসল করত ও একে অপরের লজ্জা স্থান দেখত। মূসা (আলাইহিস সালাম) একাকী গোসল করতেন। লোকেরা বলত, মূসা আমাদের সাথে গোসল করে না। কারণ তার অণ্ডকোষে রোগ আছে। রাবী বলেন, একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করেছিলেন। তখন পাথরটি তাঁর কাপড় চোপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) "ও পাথর আমার কাপড় দে", "পাথর আমার কাপড় দে" বলে পাথরটির পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলেন, এতে বনী ইসরাঈল তাঁর গোপনাঙ্গ দেখে ফেলল এবং বলল, আল্লাহর কসম! মূসার তো কোন রোগ নেই! এরপর পাথরটি থেমে গেলো, ততক্ষণে ভালোভাবে দেখা হয়ে গেলো। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি [মূসা (আলাইহিস সালাম)] কাপড় নিলেন এবং পাথরটিকে মারতে আরম্ভ করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! এ পাথরটির গায়ে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর মারের ছয় কি সাতটি দাগ হয়েছে।
৫৯৩৪. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মূসা (আলাইহিস সালাম) অত্যন্ত লজ্জাশীল ব্যক্তি ছিলেন। রাবী বলেন, সুতরাং তাঁকে (কেউ) বিবস্ত্র দেখেনি। তিনি আরো বললেন, বনী ইসরাঈলরা বললো, মূসার অণ্ডকোষ রোগাক্রান্ত। রাবী বললেন, একবার তিনি পানিতে গোসল করলেন এবং কাপড় একটা পাথরের উপর রাখলেন। পাথরটি দৌড়ে চলতে লাগলো। তিনি তাঁর লাঠি হাতে পাথরটিকে মারতে মারতে এর পিছু পিছু চললেন। (বলতে লাগলেন), হে পাথর আমার কাপড়, হে পাথর আমার কাপড়! পাথরটি বনী ইসরাঈলের এক লোক সমাবেশে গিয়ে থামলো। এ বিষয়ে এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ "হে ঈমানদারগণ তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে কষ্ট দিয়েছে। তাদের দেওয়া অপবাদ থেকে আল্লাহ তাঁকে মুক্ত করেছেন, আর তিনি আল্লাহর নিকট ছিলেন সম্মানিত (৩৩ঃ ৬৯)।"
৫৯৩৫. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মালাকুল মাউতকে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। যখন ফিরিশতা তার কাছে এলেন তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে একটা থাপ্পড় মারলেন এবং এতে তাঁর একটা চোখ নষ্ট করে দিলেন। এরপর আল্লাহর কাছে ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। রাবী বলেন, আল্লাহ তাআলা ফিরিশতার চোখ ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন, আবার তাঁর নিকট যাও এবং তাকে বল, সে যেন তাঁর হাত একটি বলদের পিঠের উপর রাখে। এতে যতগুলো পশম তাঁর হাতের নীচে পড়বে, প্রতিটি পশমের বদলে সে এক বছর জীবিত থাকবে।
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে পালনকর্তা! এরপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, এরপর মরণ। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, তা হলে এখনই। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমির একটি টিলার নিকটবতীঁ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমি ওখানে হতাম তা হলে রাস্তার পাশে লাল বালির কাছে [মূসা (আলাইহিস সালাম)] এর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।
৫৯৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ সুত্রে বর্ণিত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত কয়েকটি হাদিসের অন্যতম হাদীস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালাকুল মাঊত মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বললো, মূসা, আপনার পালনকর্তার ডাকে সাড়া দিন। রাবী বলেন, তখন মালাকুল মাউতের চোখের উপর মূসা (আলাইহিস সালাম) একটা থাপ্পড় মারলেন, এতে তাঁর চোখ নষ্ট করে ফেলেছিলেন। এরপর ফিরিশতা আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে আপনার এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না এবং সে আমার চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ তাঁর চোখ ভালো করে দিলেন এবং বললেন, আমার বান্দার কাছে আবার যাও এবং বল, তুমি কি আরও হায়াত চাও? যদি তা চাও তবে তোমার হাত একটি বলদের পিঠের উপর রাখ। এতে তোমার হাত যতগুলো পশম ঢেকে ফেলবে, তত বছর তুমি বেঁচে থাকবে।
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর কি? আল্লাহ বললেন, এরপর মৃত্যু বরণ করবে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, তবে এখনই ভালো। আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমির একটি পাথরের টিলার নিকটে নিয়ে মৃত্যু দান করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি যদি ওখানে হতাম তবে পথের কিনারে লাল বালিয়াড়ির পাশে তাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।
আবূ ইসহাক (রহঃ) ... মামার (রহঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৩৭. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, এক ইয়াহুদী কিছু মাল বিক্রি করছিল, মূল্য বলা হলে সে তা অপছন্দ করল অথবা তাতে সন্তুষ্ট হলো না, অথবা এটাকে খারাপ মনে করল। বলল, না হবে না, তাঁর শপথ যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে মানুষদের জন্য মনোনীত করেছেন। এ কথা এক আনসারী শুনতে পেয়ে ইয়াহুদীর মুখে একটি থাপ্পড় মারলেন এবং বললেন, তুই বলিস, মূসা (আলাইহিস সালাম) কে লোকদের ভেতর হতে মনোনীত করেছেন অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদ্যমান রয়েছেন! ঐ ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আবূল কাসিম! আমি যিম্মী এবং (মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত) চুক্তিবদ্ধ। আমাকে অমুক ব্যক্তি থাপ্পড় মেরেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তুমি তার মুখে থাপ্পড় দিলে? আনসারী বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে বলেছে, যিনি মানুষের মাঝে মূসা (আলাইহিস সালাম) কে মনোনীত করেছেন। অথচ আপনি আমাদের মাঝে রয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব রাগাম্বিত হলেন। রাগের চিহ্ন তাঁর চেহারায় ফুটে উঠলো। বললেনঃ নবীদের মধ্যে একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদা দিও না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন আসমান ও যমীনের সবাই বেহুশ হয়ে পড়বে শুধু আল্লাহ যাদের চাইবেন তাঁরা ছাড়া। পরে দ্বিতীয়বার যখন ফুৎকার দেওয়া হবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম উপস্থিত হব এবং দেখতে পাব যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) আরশ ধরে রয়েছেন। আমার জানা নেই যে, তুর পাহাড়ে তাঁর বেহুশ হওয়াটাই হিসাব করা হয়েছে (যা তার এখনকার বেহুশ না হওয়ার কারণ), না আমার আগেই তাঁকে হুশ দান করা হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে, কোনো পয়গাম্বর ইউনূস ইবনু মাত্তা (আলাইহিস সালাম) এর চেয়ে বেশি মর্যাদাবান।
মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবদুল আযীয ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৩৮. যুহায়র ইবনু হারব এবং আবূ বকর ইবনু নযর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী ও এক মুসলমান গালাগালি করল। মুসলমান বললো, তাঁর শপথ! যিনি সারা জাহানের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মনোনীত করেছেন। ইয়াহুদী বলল, শপথ তাঁর, যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে মনোনীত করেছেন সারা জাহানের উপরে! রাবী বলেন, এমন সময় মুসলমান হাত তুলল এবং ইয়াহুদীটির মুখে থাপ্পড় মারল।
এরপর ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেল এবং তার ও মুসলমানের ঘটনা বলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমাকে মুসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর মর্যাদা দিও না। কারণ (হাশরের ময়দানে) লোকেরা বেহুশ হবে। সর্বপ্রথম আমিই হুশ ফিরে পাব, তখন দেখতে পাব যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) আরশ ধরে রয়েছেন। জানি না তিনি কি বেহুশ হয়ে আমার আগেই হুশ ফিরে পেয়েছেন, নাকি যারা বেহুশ হননি, তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত।
৫৯৩৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী এবং আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মুসলমান ও এক ইয়াহুদী গালাগালি করলো ... এরপর ইবন শিহাব হতে ইবরাহীম ইবনু সা'দ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
৫৯৪০. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, তার মুখে থাপ্পড় দেয়া হয়েছে ...... যুহরীর হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি শুধু এ কথাই বলেছেন যে, "জানি না তিনি কি বেঁহুশ হয়ে আমার আগেই হুশ ফিরে পেয়েছেন, না কি তূরের বেহুশই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে।"
৫৯৪১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নবীদের মধ্যে একের উপরে অন্যকে শ্রেষ্ঠ প্রদান করবে না ...... এবং ইবনু নুমায়রের হাদীসে আছে, আমর ইবনু ইয়াহইয়া থেকে তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন ......।
৫৯৪২. হাদ্দাব ইবনু খালিদ এবং শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রাতে আমার মি'রাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে গেলাম। লাল বালূকা স্তূপের কাছে তাঁর কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।
৫৯৪৩. আলী ইবনু খাশরাম, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, তখন তিনি তার কবরে সালাত আদায় করছিলেন। আলী (রহঃ) এর শায়খ ঈসা (রহঃ) এর হাদীসে অধিক রয়েছে "আমাকে যে রাতে মি'রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতে আমি অতিক্রম করছিলাম।"
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. ইউনুস (আঃ) এর আলোচনা এবং নবী (ﷺ) এর বানীঃ কোন বান্দার জন্য আমি ইউনুস ইবন মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ- এ কথা বলা সমীচীন নয়
৫৯৪৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেছেন, আমার কোন বান্দার পক্ষেই বলা উচিৎ নয় যে, "ইউনুস ইবনু মাত্তা থেকে আমি উত্তম।"
ইবনু আবূ শায়বা (حَدَّثَنَا شَيْبَةَ স্থলে) عَنْ شُعْبَةَ বলেছেন।
৫৯৪৫. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাত ভাই ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার পক্ষেই এ কথা বলা উচিত নয়, আমি ইউনুস ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম।’ ইউনুস (আলাইহিস সালাম) কে এখানে তাঁর পিতা মাত্তার প্রতি সম্পর্কিত করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪০. ইউসুফ (আঃ) এর ফযীলত
৫৯৪৬. যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ তাদের মধ্যে সবচেয়ে মুত্তাকি ব্যক্তি। প্রশ্ন কারীরা বললেন, আমরা এ সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেনঃ তবে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর নবী যিনি আল্লাহর নবীর পুত্র, তিনি আল্লাহর খলীলের পুত্র। তারা বললো, এ সম্পর্কেও আমরা আপনাকে প্রশ্ন করি নি। তিনি বললেনঃ তবে কি তোমরা আরবের বংশ-উৎস (তার শ্রেষ্ঠত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছো? জাহেলী যুগে যারা তাদের মধ্যে উত্তম ছিল, ইসলামের পরও তারা উত্তম বলে গণ্য, যদি তারা দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানবান হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. যাকারিয়া (আঃ) এর ফযীলত
৫৯৪৭. হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. খিযির (আঃ) এর ফযীলত
৫৯৪৮. আমর ইবনু মুহাম্মাদ আন-নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাওফ বিকালী বলেন যে, বনী ইসরাঈলের নাবী মূসা খিযির (আলাইহিস সালাম) এর সাথী মূসা নন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। আমি উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) বনী ইসরাঈলের মধ্যে ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বড় আলিম? তিনি উত্তর দিলেন, আমি সবচেয়ে বড় আলিম। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। কারণ মূসা (আলাইহিস সালাম) জ্ঞানকে আল্লাহর প্রতি ন্যস্ত করেননি।
অতঃপর আল্লাহর তার ওহী পাঠালেন যে, দু'সাগরের সঙ্গম স্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা আছে, যে তোমার চেয়েও অধিক জ্ঞানী। মূসা (আলাইহিস সালাম) প্রশ্ন করলেন আয় রব্ব! আমি কী করে তাঁকে পাব? তাঁকে বলা হলো, থলের ভেতর একটি মাছ নাও। মাছটি যেখানে হারিয়ে যাবে, সেখানেই তাঁকে পাবে। তারপর তিনি রওনা হলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর খাদিম ইউশা ইবনু নূনও চললেন এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) একটি মাছ থলিতে নিয়ে নিলেন।
তিনি ও তাঁর খাদিম চলতে চলতে একটি বিশাল পাথরের কাছে উপস্থিত হলেন। এখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। তাঁবু সাথীও ঘুমিয়ে পড়ল। মাছটি নড়েচড়ে থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়লো। এদিকে আল্লাহ তা’আলা পানির গতিরোধ করে দিলেন। এমনকি তা একটি খোপের মত হয়ে গেল এবং মাছটির জন্য একটি সুড়ঙ্গের মতো হয়ে গেল। মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তার খাদিমের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হল।
এরপর তাঁরা আবার দিন-রাতভর চললেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথী খবরটি দিতে ভুলে গেলো। যখন সকাল হলো, মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর খাদিমকে বললেন, আমাদের নাশতা বের কর। আমরা তো এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আদেশকৃত (নির্ধারিত) স্থান অতিক্রম না করা পর্যন্ত তাঁরা ক্লান্ত হন নি। খাদিম বলল, আপনি কি জানেন, যখনই আমরা পাথরের উপর আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথাটি ভুলে যাই, আর শয়তানই আমাকে আপনাকে বলার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে মাছটি সমুদ্রে তার নিজের পথ করে চলে গেল।
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ জায়গাটই তো আমরা খুজছি। অতঃপর উভয়েই নিজ নিজ পদচিহ্ন অনুসরণ করে পাথর পর্যন্ত পৌছলেন। সেখানে (পানির উপরে ভাসমান অবস্থায়) চাঁদরে আচ্ছাদিত একজন লোক দেখতে পেলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম দিলেন। খিযির বললেন, তোমার এ দেশে সালাম কোত্থেকে? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি মূসা। তিনি প্রশ্ন করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। খিযির বললেন, আল্লাহ তার জ্ঞানের এমন এক ইলম আপনাকে দিয়েছেন যা আমি জানি না। আর আল্লাহ তাঁর জ্ঞানের এমন এক ইলম আমাকে দিয়েছেন যা আপনি জানেন না।
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি আপনার সাথে থাকতে চাই যেন আপনাকে প্রদত্ত জ্ঞান আমাকে দান করেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। আর কী করে ধৈর্য ধারণ করবেন, ঐ বিষয়ের উপর যা সম্পর্কে আপনি জ্ঞাত নন? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। আর আপনার কোন নির্দেশ আমি অমান্য করব না। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আচ্ছা আপনি যদি আমার অনুসরণ করেন, তবে আমি নিজে কিছু উল্লেখ না করা পর্যন্ত কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আাচ্ছা।
খিযির এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) উভয়ে সমুদ্র তীর ধরে চলতে লাগলেন। সম্মুখ দিয়ে একটি নৌকা আসল। তারা নৌকাওয়ালাকে তাঁদের তুলে নিতে বললেন। তারা খিযির (আলাইহিস সালাম) কে চিনে ফেললো, তাই দু'জনকেই বিনা ভাড়ায় তুলে নিল। এরপর খিযির (আলাইহিস সালাম) নৌকার একটি তক্তার দিকে লক্ষ্য করলেন এবং তা উঠিয়ে ফেললেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরা তো এমন লোক যে, আমাদের বিনা ভাড়ায় নিয়েছে আর আপনি তাদের নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন যাতে নৌকা ডুবে যায়? আপনি তো সাংঘাতিক কাজ করেছেন! খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি কি আপনাকে বলি নি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে সক্ষম হবেন না? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি আমার এ ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিবেন। আর আমাকে কঠিন অবস্থায় ফেলবেন না। তারপর নৌকার বাইরে এলেন এবং উভয়ে সমুদ্র তীর ধরে চলতে লাগলেন।
হঠাৎ একটি বালকের সম্মুখীন হলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) তার মাথাটি হাত দিয়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলে হত্যা করলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেন, আপনি কোন প্রাণের বিনিময় ছাড়াই একটা নিষ্পাপ প্রাণকে শেষ করে দিলেন? আপনি তো বড়ই খারাপ কাজ করলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি কি আপনাকে বলি নি যে, আমার সাথে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হবেন না? রাবী বলেন, আর এ ভুল প্রথমটার চেয়ে আরো গুরুতর। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আচ্ছা, এরপর যদি আর কিছু সম্পর্কে প্রশ্ন করি, তাহলে আমাকে সাথে রাখবেন না। নিঃসন্দেহে আমার ব্যাপারে আপনার আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
এরপর উভয়েই চলতে লাগলেন এবং একটি গ্রামে পৌঁছে গ্রামবাসীর কাছে খাবার চাইলেন। তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলো। তারপর তাঁরা একটি দেয়াল পেলেন, যেটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে অর্থাৎ ঝুঁকে পড়েছে। খিজির (আলাইহিস সালাম) আপন হাতে সেটি ঠিক করে সোজা করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমরা এ সম্প্রদায়ের কাছে এলে তারা আমাদের মেহমানদারী করে নি এবং খেতে দেয় নি। আপনি চাইলে এদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন? খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, এবার আমার ও আপনার মাঝে বিচ্ছেদের পালা।
এখন আমি আপনাকে এসবের তাৎপর্য বলছি, যে সবের উপর আপনি ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হন নি (সূরা কাহফঃ ৬০-৮২)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর রহম করুন, আমার আকাঙ্ক্ষা হয় যে, যদি তিনি ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো ঘটনাসমূহের বিবরণ দেওয়া হতো।
রাযী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রথমটা মূসা (আলাইহিস সালাম) ভুলে যাওয়ার কারণে করেছিলেন। এও বলেছেন, একটি চড়ুই এসে নৌকার পার্শ্বে বসে সমুদ্রে চঞ্চু মারল। তখন খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসাকে বলেন, আমার ও আপনার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় এতই কম, যতখানি সমূদ্রের পানি থেকে এ চড়ুইটি কমিয়েছে।
সাঈদ জ্যুায়র বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) পড়তেনঃ وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالِحَةٍ غَصْبًا (এদের সম্মুখে একজন বাদশাহ ছিল, যে সমস্ত ভালো নৌকা কেড়ে নিতো) তিনি আরো পড়তেনঃ وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا (আর সে বালকটি ছিল কাফির)।
৫৯৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা কায়সী (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলা হলো, নাওফ দাবি করে যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) যিনি জ্ঞান অন্বেষণে বের হয়েছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলের মূসা নন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, হে সাঈদ, তূমি কি তাকে এটা বলতে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, নাওফ মিথ্যা বলেছে। কেননা উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মূসা (আলাইহিস সালাম) একদা তার জাতির সামনে আল্লাহ তা'আলার নিয়ামত এবং তাঁর শাস্তি পরীক্ষাসমূহ স্মরণ করিয়ে নসীহত করছিলেন। ক(থা প্রসঙ্গে কারো প্রশ্নের জবাবে) তিনি বলে ফেললেন, পৃথিবীতে আমার চেযে উত্তম এবং বেশি জ্ঞানী কোন ব্যক্তি আছে বলে আমরে জানা নেই।
রাবী বলেন। আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি ওহী পাঠালেনঃ আমি জানি তার (মূসা) থেকে উত্তম কে বা কার কাছে কল্যাণ রয়েছে। অবশ্যই পৃথিবীতে আরো ব্যক্তি আছে যে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আয় রব্ব! আমাকে তার পথ বাতলিয়ে দিন। তাকে বলা হলো লবণাক্ত একটি মাছ সঙ্গে নিয়ে যাও। যেখানে এ মাছটি হারিয়ে যাবে, সেখানেই সে ব্যক্তি। মূসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর খাদিম রওনা হলেন, অবশেষে তাঁরা একটি বিশাল পাথরের কাছে পৌছলেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর সাথীকে রেখে অগোচরে চলে গেলেন। এরপর মাছটি নড়েছরে পানিতে চলে গেল এবং পানিও খোপের মত হয়ে গেল মাছের পথে মিলিত হল না।
মূসা (আলাইহিস সালাম) এর খাদিম বললেন, আচ্ছা আমি আল্লাহর নাবীর সাথে মিলিত হয়ে তাঁকে এ ঘটনা বলবো। পরে তিনি ভুলে গেলেন। যখন তারা আরো সামনে অগ্রসর হলেন, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার নাশতা দাও, এ সফরে তো আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতক্ষন তারা এ স্থানটি অতিক্রম করেন নি, ততক্ষণ তাদের ক্লান্তি আসে নি।
রাবী বলেন, তাঁর সাথীর যখন স্মরণ হল, এবং সে বলল, আপনি কি জানেন যখন আমরা পাথরে আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গেছি। আর শয়তানই আমাকে আপনার কাছে বলার কখা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং বিস্ময়করভাবে মাছটি সমুদ্রে তার পথ করে নিয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ-ই তো ছিল আমাদের উদ্দীষ্ট। অতএব তাঁরা পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে চললেন। তখন তার খাদিম মাছের স্থানটি তাকে দেখালো।
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ স্থানের বিবরনই আমাকে দেওয়া হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) খুজতে লাগলেন, এমন সময় তিনি বস্ত্রাবৃত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে গ্রীবার উপর চিৎ হয়ে শায়িত দেখতে পেলেন। অথবা (অন্য বর্ননায়) সোজাসুজি গ্রীবার উপর। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আসসালামু আলাইকুম। খিযির (আলাইহিস সালাম) মুখ খেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, ওয়া আলাইকুম সালাম, তুমি কে? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি মূসা। তিনি বললেন, কোন মূসা? মূসা (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, কোন মহান ব্যাপারই আপনাকে নিয়ে এসেছে? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি এসেছি যেন আপনাকে যে সৎজ্ঞান দান করা হয়েছে, তা থেকে কিছু আপনি আমায় শিক্ষা দেন।
খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার সঙ্গে আপনি ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবেন না। আর কেমন করে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান দেওয়া হয় নি। এমন বিষয় হতে পারে যা করতে আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, আপনি যখন তা দেখবেন, তখন আপনি সবর করতে পারবেন না। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। আর আমি আপনার কোন নির্দেশ অমান্য করব না।
খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি যদি আমার অনুগামী হন তবে আমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজেই এ বিযয়ে উল্লেখ করি। এরপর উভয়ই চললেন, অবশেষে তারা একটি নৌকায় চড়লেন। [খিযির (আলাইহিস সালাম) তখন[ তা ছিদ্র করলেন অর্থাৎ তাতে (একটি তক্তায়) সজোরে চাপ দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেন, আপনি কি নৌকাটি ভেঙ্গে ফেলেছেন, আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে? আপনি তো বড় আপত্তিকর কাজ করেছেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবেন না? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি ভুলে গিয়েছি, আমাকে আপনি দোষী করবেন না। আমার বিষয়টিকে আপনি কঠোরতাপূর্ণ করবেন না।
আবার দু'জন চলতে লাগলেন। এক জায়গায় তাঁরা বালকদের পেলেন যারা খেলা করছে খিযির (আলাইহিস সালাম) অবলীলাক্রমে একটি শিশুর কাছে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। এতে মূসা (আলাইহিস সালাম) খুব ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, আপনি প্রাণের বিনিময় ব্যতীত একটি নিষ্পাপ প্রাণকে হত্যা করলেন? বড়ই গর্হিত কাজ আপনি করেছেন। এ স্থলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর রহমত বর্ষণ করুন আমাদের ও মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর। তিনি যদি তাড়াহুড়া না করতেন তাহলে আরো বিস্ময়কর ঘটনা দেখতে পেতেন। কিন্তু তিনি সহযাত্রী [খিযির (আলাইহিস সালাম)] এর সামনে লজ্জিত হয়ে বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমায় সঙ্গে রাখবেন না। তখন আপনি আমার ব্যাপারে অবশ্যই চূড়ান্ত অভিযোগ করতে পারবেন (এবং দায়মুক্ত হবেন)।
যদি মূসা (আলাইহিস সালাম) ধৈর্য ধরতেন, তাহলে আরো বিস্ময়কর বিষয় দেখতে পেতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন নাবীর উল্লেখ করতেন, প্রথমে নিজকে দিয়ে শুরু করতেন, বলতেন, আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন এবং আমার অমুক ভাইয়ের উপরও। এভাবে নিজেদের উপর আল্লাহর রহমত কামনা করতেন।
তারপর উভয়ে চললেন এবং ইতর লোকের একটি জনপদে গিয়ে উঠলেন। তাঁরা লোকদের বিভিন্ন সমাবেশে ঘুরে তাদের কাছে খাবার চাইলেন। তারা তাঁদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। এরপর তাঁরা একটি পতনোন্মুখ দেয়াল পেলেন। তিনি [খিযির (আলাইহিস সালাম)] সেটি ঠিকঠাক করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি চাইলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, এবার আমার আর আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ (এর পালা)।
খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাপড় ধরে বললেন, আপনি যেসব বিষয়ের উপর অধৈর্য হয়ে পড়েছিলে সে সবের তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
'নৌকাটি ছিল কতিপয় গরীব লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করতো'-- আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তারপর যখন এটাকে দখলকারী লোক আসলো তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। এরপর তারা একটা কাঠ দিয়ে নৌকাটি ঠিক করে নিলো। আর বালকটি সৃষ্টিতেই ছিল জন্মগত কাফির। তার মা-বাবা তাকে বড়ই স্নেহ করতো। সে বড় হলে ওদের দুজনকেই অবাধ্যতা ও কুফরির দিকে নিয়ে যেতো। সুতরাং আমি ইচ্ছে করলাম, আল্লাহ যেন তাদেরকে এর বদলে আরো উত্তম, পবিত্র স্বভাবের ও অধিক দয়াপ্রবন ছেলে দান করেন। 'আর দেয়ালটি ছিল শহরের দুটো ইয়াতীম বালকের' আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরা কাহফঃ ৬০-৮২)।
৫৯৫০. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... তায়মীর সনদে আবূ ইসহাক (রাঃ) থেকে এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৫১. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেনঃ لَتَخِذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا
৫৯৫২. হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস এবং হুরের ইবনু কায়স ইবনু হিসন ফাযারী মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথী সম্বন্ধে বিতর্ক করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি ছিলেন খিযির (আলাইহিস সালাম)। তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) সেখান থেকে পথ চলছিলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবূ তুফায়ল! এদিকে আসুন, আমি এবং সে বিতর্ক করছি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথীর ব্যাপারে, যার কাছে তিনি গিয়েছিলেন। আপনি কি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছেন?
উবাই ইবনু কাব (রাঃ) বললেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি, মূসা (আলাইহিস সালাম) এক সমাবেশে কিছু বলছিলেন, এমন সময় একটা লোক এসে প্রশ্ন করলো, আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী কোন ব্যক্তি সম্পর্কে কি আপনার জানা আছে? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, না। তখন আল্লাহ ওহী পাঠালেন, আমার বান্দা খিযির তোমার চেয়ে বেশি জানেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাত লাভের উপায় জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তাআলা মাছকে নিদর্শন হিসেবে ঠিক করলেন এবং তাকে বলা হল, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে, তখন ফিরবে আর তাঁর দেখাও মিলবে।
মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর ইচ্ছা মতো চললেন। এরপর তাঁর সাথীকে বললেন, আমাদের নাশতা পরিবেশন কর। খাদিম বললো, আপনার কি জানা নেই যে, আমরা যখন বিশাল পাথরের কাছে পৌঁছলাম তখন মাছের কথা ভুলে গিয়েছি; আর শয়তানই তা (আপনাকে) বলার বিষয়টি আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এটাই তো সে স্থান যা আমরা খুঁজছিলাম। অতঃপর উভয়েই পদাংক অনুসরণ করে ফিরলেন (সূরা কাহফঃ ৬৩-৬৪) এবং খিযির (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। পরবর্তী ঘটনা আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তবে ইউনুস (রহঃ) এর বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, "তাঁরা সমুদ্রগামী মাছটির চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরছিলেন।"
No comments: