Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ হাজ্জ-২য়




পরিচ্ছেদঃ ১৩. ইহরাম অবস্থায় মারা গেলে তার বিধান


২৭৬২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি তার উটের পিঠ থেকে পড়ে গেল। ফলে তার ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং মারা গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড়েই কাফন দাও এবং তার মাথা অনাবৃত রাখ। কারণ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
২৭৬৩.    আবূর-রবী যাহরানী (রহঃ) হাম্মাদ থেকে, তিনি আমর ইবন দীনার থেকে ও আয়্যুব থেকে তিনি সাইদ ইবন জুবায়র থেকে এবং তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যাক্তি আরাফাতের ময়দানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উকুফরত ছিল। হঠাৎ সে তার বাহন থেকে নীচে পড়ে গেল। এতে তার ঘাড় মটকিয়ে গেল এবং সে মারা গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা অবহিত করা হলে তিনি বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দিয়েই তাকে কাফন করাও, তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত কর না। আয়্যুব বলেন কারণ আল্লাহ তা আলা কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন। আমর (রহঃ) বলেছেন, এ অবস্থায় উঠাবেন যে, সে তালবিয়া পড়ছে।
২৭৬৪.    আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উকুফ করছিল।...... অবশিষ্ট বর্ণনা হাম্মাদ...... আইয়্যুবের হাদীসের অনুরূপ।
২৭৬৫.    আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এসেছিল। সে উট থেকে পড়ে গেল এবং তার ঘাড় মটকে গেল। ফলে সে মারা গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও এবং তার পরনের কাপড়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মাথার চুল আবৃত করো না। কারণ সে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় তাকে উপস্থিত হবে।
২৭৬৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এসেছিল...... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এই বর্ণনায় আছে, “তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠান হবে।" এতে আরও আছে, কোথায় সে উটের পিঠ থেকে পড়ে গেল তা সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) উল্লেখ করেননি।
২৭৬৭.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তিকে ইহরাম অবস্থায় তার বাহনের পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে তার ঘাড় ভেঙ্গে দিল, ফলে সে মারা গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও, তার পরিধেয় বস্ত্র দুটি দিয়ে তার কাফন দাও, কিন্তু তার মুখমন্ডল ও মাথা অনাবৃত রাখ। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠান হবে।
২৭৬৮.    মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিল। তার উষ্ট্রী তার ঘাড় ভেঙ্গে দিল, ফলে সে মারা গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও, তার পরিধেয় বস্ত্র দু'খানা দিয়ে তাকে কাফন পরাও, কিন্তু তার দেহে সুগন্ধি মাখিও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় উঠান হবে।
২৭৬৯.    আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তিকে তার উট নীচে ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় (এবং সে মারা যায়)। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে, সুগন্ধি না লাগাতে এবং মাথা অনাবৃত রাখতে নির্দেশ দেন। কারণ কিয়ামতের দিন তাকে মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে।
২৭৭০.    মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছেন, এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত হল। হঠাৎ সে তার উষ্ট্রীর পিঠ থেকে পড়ে গেল এবং ঘাড় মটকে যাওয়ার ফলে মারা গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে, তার পরিধেয় দু'খণ্ড বস্ত্রে কাফন দিতে, সুগন্ধি না লাগাতে এবং মাথা কাফনের বাইরে রাখতে নির্দেশ দিলেন।

শুবা (রহঃ) বলেন, অতঃপর আবূ বিশর আমাকে এভাবে বললেন, তাকে এভাবে কাফন পরাও যাতে তার মাথা ও মুখমন্ডল বাইরে থাকে। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় উঠান হবে।
২৭৭১.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এক ব্যাক্তিকে তার বাহন নীচে ফেলে দিলে ঘাড় মটকে সে মারা যায়। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকদের আদেশ দিলেন যেন তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করায় এবং তার মুখমন্ডল খোলা রাখে। রাবী বলেন, আমার ধারণা তিনি বলেছেন এবং তার মাথাও। কারণ কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে।
২৭৭২.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিল। তার উষ্ট্রী তাকে থেকে ফেলে দেওয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় এতে সে মারা যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে গোসল দাও, তার দেহে সুগন্ধি মাখিও না এবং তার মুখমণ্ডলও ঢেকে দিও না। কারণ তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠান হবে।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. রোগ-ব্যাধি বা অন্য কোন অক্ষমতার কারণে শর্ত সাপেক্ষে ইহরাম বাঁধা জায়েয


২৭৭৩.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়র বিনত যুবায়র (রাঃ) এর নিকট গেলেন এবং তাকে বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইচ্ছা পোষণ করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! কিন্তু আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি হাজ্জ (হজ্জ) কর এবং শর্ত রাখ ও বল, হে আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দেবে (সেখানে আমি ইহরাম খুলব)। তিনি মিকদাদ (রাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন।
২৭৭৪.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়র ইবনু আবদিল মুত্তালিব কন্যা যুবাআহ (রাঃ) এর নিকট আসলেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি হাজ্জের (হজ্জ) সংকল্প করেছি-কিন্তু আমি অসুস্থ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ এবং এই শর্ত কর যে, আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দেবে সেখানে আমি ইহরাম খুলব।
২৭৭৫.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭৭৬.    মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যুবায়র ইবনু আবদিল মুত্তালিব কন্যা যুবাআহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, আমি একজন পিড়িত মহিলা এবং আমি হাজ্জের (হজ্জ) সংকল্প রাখি। আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধ এবং শর্ত কর যে, আল্লাহ! তুমি আমাকে যেখানে আটকিয়ে দেবে সেখানে আমি ইহরাম খুলব। রাবী বলেন, তিনি হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পালনে সক্ষম হয়েছিলেন।
২৭৭৭.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যুবাআহ (রাঃ) হাজ্জের (হজ্জ) ইরাদা করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শর্ত সাপেক্ষে ইহরাম বাধার নির্দেশ দিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মুতাবিক তাই করলেন।
২৭৭৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবূ আয়্যুব গায়লানী ও আহমদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাআহ (রাঃ) কে বললেন, তুমি হাজ্জ (হজ্জ) কর এবং শর্ত রাখ যে, আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে থামিয়ে দেবে, সেখানে আমি ইহরাম খুলব। ইসহাকের বর্ণনায় আছে, তিনি যুবাআহ (রাঃ) কে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. হায়য-নিফাস অবস্থায় ইহরাম বাঁধা জায়েয এবং ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব


২৭৭৯.    হান্নাদ ইবনুল সারী, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) আশ-শাজার নামক স্থানে আবূ বকর (রাঃ) এর পুত্র মুহাম্মাদকে প্রসব করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) এর মাধ্যমে তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন।
২৭৮০.    আবূ গাসসান মুহাম্মদ ইবনু আমর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে সন্তান প্রসব করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তদনূযায়ী তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধতে বললেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. ইহরামের প্রকারভেদ, ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা জায়েয, একত্রে উমরা ও হজ্জের ইহরাম বাধাও জায়েয এবং কিরান হজ্জ পালনকারী কখন ইহরামমুক্ত হবে


২৭৮১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার সাথে হাদী অর্থাৎ কুরবানীর পশু আছে সে যেন একত্রে উমরার সাথে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধে, অতঃপর উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) অমুষ্ঠান শেষ না করে যেন ইহরামমুক্ত না হয়। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি হায়য অবস্থায় মক্কায় পৌছলাম। তাই আমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করতে পারিনি। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম। 

তিনি বললেন, তোমার চুলের বেনী খূলে ফেল এবং চিরুনি কর, হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ এবং উমরা পরিত্যাগ কর। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। আমাদের হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (আমার ভাই) আবদুর রহমানের সাথে তানঈম নামক স্থানে পাঠালেন। আমি সেখান থেকে ইহরাম বেধে উমরা পালন করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তোমার (ইহরাম বাধার) স্থান। যেসব লোক শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিল, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করার পর ইহরামমুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তারা মিনা থেকে ফিরে এসে পূনরায় তাদের হাজ্জের (হজ্জ) তাওয়াফ করল আর যারা উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) জন্য একত্রে ইহরাম বেঁধেছিল, তারা একবার তাওয়াফ করল।
২৭৮২.    আবদুল মালিক ইবনু শু'আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের কেউ শুধু উমরার ইহরাম বাধল, আর কেউ শুধু হাজ্জের ইহরাম বাঁধল। এভাবে আমরা মক্কায় পৌছলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু আনেনি, তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে এবং সাথে কুরবানীর পশুও এনেছে, তারা কুরবানী করার পরই কেবল ইহরামমুক্ত হবে। আর যারা হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছে, তারা যেন হাজ্জ (হজ্জ) পুর্ণ করে। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার হায়য শুরু হয়ে গেল এবং আরাফাত দিবস পর্যন্ত তা চলতে থাকল। আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মাথার চুল খুলে ফেলতে, তাতে চিরুনি করতে, হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধতে এবং উমরা পরিত্যাগ করতে নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম এবং হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পূর্ণ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে (আমার ভাই) আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকরকে পাঠালেন এবং তিনি আমাকে তানঈম থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করার নির্দেশ দিলেন- যেহেতু আমি উমরার ইহরাম পরিত্যাগ করে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেধেছিলাম; অথচ আমি উক্ত উমরা সমাপ্ত করতে পারি নাই।
২৭৮৩.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমি উমরার ইহরাম বাঁধলাম এবং সাথে কুরবানীর পশু নিইনি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে যেন তার উমরার সাথে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামও বাঁধে এবং উভয়ের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করার পূর্বে যেন ইহরাম না খোলে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার মাসিক ঋতু শুরু হওয়া গেল। আরাফাতের রাত শুরু হলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম, অতএব আমি কিভাবে হাজ্জ (হজ্জ) করব? তিনি বললেন, তোমর চুল খুলে ফেল এবং চিরুনী কর, উমরা স্থগিত রাখ এবং হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন হাজ্জ (হজ্জ) সমাপ্ত করলাম, তখন তিনি (আমার ভাই) আবদুর রহমানকে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তদনুযায়ী আমাকে তার বাহনের পেছন দিকে বসিয়ে তানঈম থেকে উমরা করালেন- এটা সেই উমরার বদলে, (ঋতুর কারণে) আমি যা পালন থেকে বিরত থেকে ছিলাম।
২৭৮৪.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন তাই করে। আর যে ব্যাক্তি শুধু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধতে চায়, সেও যেন তাই করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মাত্র হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন এবং তার সাথের লোকেরাও তাই করল। কতিপয় লোক উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল এবং কতিপয় লোক শুধু উমরার ইহরাম বাঁধল। আমি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
২৭৮৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের প্রাক্কালে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মক্কা) রওনা হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে তা করতে পারে। আমার সঙ্গে হাদী বা কুরবানীর পশু না থাকলে আমি উমরার ইহরাম বাধতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকদের মধ্যে কতক উমরার ইহরাম বাঁধল এবং কতক হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল। তিনি বললেন, আমি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমরা রওনা হলাম, অতঃপর মক্কায় পৌঁছে গেলাম। আরাফাত দিবস পর্যন্ত আমার মাসিক ঋতু অব্যাহত ছিল এবং উমরা করে ইহরাম খোলার সুযোগ পেলাম না। 

এ সংকটের বিষয়ে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবহিত করলে তিনি বললেন, তুমি তোমার উমরা পরিত্যাগ কর, চুলের বাঁধন খুলে ফেল এবং তাতে চিরুনী কর আর হাজ্জের (হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। অতঃপর যখন মুহাসসাবের রাত এল এবং আল্লাহ তাআলা আমাদের হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন করার তৌফিক দিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) কে পাঠালেন এবং তিনি আমাকে তার বাহনের পেছনে বসিয়ে তানঈমে রওনা হলেন। অতঃপর আমি উমরার ইহরাম বাঁধলাম। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা সমাপনের তৌফিক দান করলেন। তাতে কোন হাদী (কুরবানী), সদকা বা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কোনটই পালন করতে হয়নি।
২৭৮৬.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবনু নুমায়র থেকে ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওনা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সেই তাই করুক...... হাদীসের অবশিষ্ট অংশ আবদা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
২৭৮৭.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কতক উমরার, কতক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের এবং কতক শুধু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল। আমি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীদের অন্তভুক্ত ছিলাম...... অবশিষ্ট বর্ণনা (পূর্বোক্ত) উভয়ের হাদীসের অনুরূপ। তবে উরওয়ার বর্ণনায় আছে, “আল্লাহ তা'আলা আয়িশা (রাঃ) কে তার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা সমাপনের তৌফিক দিলেন।” আর হিশাম বলেন, "এজন্য (উমরার ইহরাম পরিত্যাগ করে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধার কারণে তাকে) হাদী বা কুরবানীও করতে হয়নি, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন করতে হয়নি, সদকাও দিতে হয়নি।"
২৭৮৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কতক উমরার উদ্দেশ্যে, কতক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের উদ্দেশ্যে এবং কতক শুধু হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে ইহরাম ধাঁধল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন। যারা উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিল, তারা (উমরা সমাপনান্তে)হালাল হয়ে গেল। আর যারা শুধু হাজ্জের (হজ্জ), বা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিল, তারা কুরবানী দিবসের পূর্ব পর্যন্ত হালাল হতে পারে নি।
২৭৮৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একমাত্র হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা সারিফ নামক স্থানে বা এর কাছাকাছি পৌঁছলে আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হায়য হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এটা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কন্যাদের জন্য অবধারিত করে দিয়েছেন। অতএব তুমি হাজ্জের (হজ্জ) যাবতীয় অনুষ্ঠান পূর্ণ কর, শুধূ (হায়য শেষ হওয়ার পর) গোসল না করা পর্যন্ত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীগণের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেন।
২৭৯০.    সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ আবূ আয়্যুব গায়লানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কেবল হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে পৌছলাম, আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যদি এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) করতে না আসতাম! তিনি বললেন, কি হয়েছে তোমার? সম্ভবত তুমি ঋতুমতী হয়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এটা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তুমি হাজ্জ (হজ্জ) পালনকারীগণ যা করে, তাই কর কিন্তু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করো না। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন মক্কায় পৌছলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, তোমরা উমরার জন্য ইহরাম বাঁধ। যাদের সাথে হাদী বা কুরবানীর পশু ছিল, তারা ব্যতীত সকলে উমরার ইহরাম বাঁধল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও অন্যান্য স্বচ্ছল লোকদের সাথে কুরবানীর পশু (হাদী) ছিলো, তারা (ইতিপূর্বে যারা ইহরাম খুলে ফেলেছিল, মিনার দিকে) অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কালে পূনরায় (হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল। তিনি বলেন, আমি কুরবানীর দিন পবিত্র হলাম এবং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে তাওয়াফে ইফাযা করলাম। 

আমাদের জন্য গরুর গোশত পাঠান হল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কি? তারা বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীদের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছেন। যখন হাসবার রাত এল, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! লোকেরা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা পালন করে প্রত্যাবর্তন করছে, আর আমি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করে প্রত্যাবর্তন করছি। রাবী বলেন, তিনি বলেন, তিনি আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী তিনি আমাকে তার উটের পিছিন দিকে বসিয়ে রওনা হলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা এবং আমার মনে আছে যে, তন্দ্রাছন্ন হয়ে আমার মাথা বারবার পালানের খুটির সাথে আঘাত খাচ্ছিল। এভাবে আমরা তানঈম পৌছলাম। সেখান থেকে আমি আবার ইহরাম বাঁধলাম- যা লোকেরা ইতিপূর্বে আদায় করেছে।
২৭৯১.    আবূ আয়্যুব গায়লানী (রহঃ) ... হাম্মাদ (রহঃ) আবদুর রহমান হতে তিনি নিজ পিতা হতে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আমরা হাজ্জের (হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধলাম। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে পৌছলাম তখন আমি ঋতুমতী হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন, আমি তখন কাঁদছিলাম...... অবশিষ্ট বর্ণনা (পুর্ববর্তী) মাজিশুনের হাদীসের অনুরূপ। 

তবে হাম্মাদের বর্ণনায় নিন্নোক্ত কথার উল্লেখ নাইঃ "নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও অন্যন্য স্বচ্ছল লোকদের সাথে (হাদী) কুরবানীর পশু ছিল, তাঁরা অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কালে পূনরায় (হাজ্জের) ইহরাম বাঁধলেন।" 

তার বর্ণনায় আয়িশা (রাঃ) এর নিম্নোক্ত কথারও উল্লেখ নাইঃ "আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা এবং আমার উত্তমরুপে মনে আছে যে, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় আমার মাথা বারংবার পালানের খুঁটির সাথে টক্কর খাচ্ছিল।"
২৭৯২.    ইসমাঈল ইবনু আবূ উওয়ায়েস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফরাদ হাজ্জ (হজ্জ) করেছিলেন।
২৭৯৩.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের মাসসমূহে, হজ্জের মাওসুমে ও হাজ্জের স্থানসমুহে (অথবা হাজ্জের সময়কার বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে) এবং হাজ্জের (হজ্জ) রাতসমুহে ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নাই, সে যদি চায় তবে সে এই হাজ্জ (হজ্জ) কে উমরায় পরিবর্তিত করে নিক। আর যার সাথে কুরবানীর পশু (হাদী) আছে, সে যেন এরূপ না করে। তাদের মাঝে কিছু সংখ্যক এটা গ্রহণ করল এবং কিছু সংখ্যক যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, তারা উমরা করল না। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্বচ্ছল সাহাবীদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট প্রবেশ করলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম আমি আপনার সাহাবীদের উদ্দেশ্যে আপনার কথাবার্তা শুনেছি যে, আপনি উমরা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি তা করতে পারছি না। তিনি বললেন, কেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি সালাত আদায় করতে পারছি না। তিনি বললেন, এতে তোমার কোন ক্ষতি নেই, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পালন কর। আশা করি আল্লাহ তায়ালা তোমাকে উমরা পালনের সুযোগ দিবেন। তুমি আদম (আলাইহিস সালাম) এর কন্যাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তোমার জন্যও তা নির্ধারণ করেছেন। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতএব আমি হাজ্জের (হজ্জ) জন্য বের হলাম। অবশেষে মিনায় অবতরণ করলাম এবং পাক হয়ে গেলাম। এরপর আমি বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাসসাবে অবতরণ করলেন এবং আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) কে ডেকে বললেন, তোমার বোনকে হারাম সীমার বাইরে নিয়ে যাও, সে (সেখানে গিয়ে) উমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে এবং বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমরা রওনা হয়ে (তানঈম) গেলাম এবং (সেখানে) ইহরাম বাঁধলাম, তারপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওইয়া সাঈ করলাম। অতঃপর আমরা মধ্যরাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি স্বস্থানেই ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি উমরা সম্পাদন করে নিয়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তাঁর সাহাবীদের রওনা হওয়ার জন্য ঘোষণা দিলেন। তিনি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহ পৌছলেন এবং ফজরের সালাতের পূর্বে তাঁর তাওয়াফ করলেন, তারপর মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
২৭৯৪.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কেউ ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ), কেউ কিরান হাজ্জের (হজ্জ) এবং কেউ তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল।
২৭৯৫.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য এসেছিলেন।
২৭৯৬.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, যিলকদ মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) পালন ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্যে ছিল না। আমরা মক্কার নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম ভঙ্গ করবে। আযেশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন কেউ আমাদের জন্য গরুর গোশত নিয়ে এল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ কি? বলা হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন।

ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীস কাসিম ইবনু মুহাম্মাদের নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (আমরাহ) তোমার নিকট হাদীসটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন।
২৭৯৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) এই সনদেও পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭৯৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও কাসিম (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন [আয়িশা (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! লোকেরা দুটি ইবাদতসহ (হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা) প্রত্যাবর্তন করছে, আর আমি একটি মাত্র ইবাদতসহ (হাজ্জ (হজ্জ) ফিরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, অপেক্ষা কর। তুমি পাক হয়ে যাওয়ার পর তানঈম চলে যাও এবং সেখানে ইহরাম বাঁধ, অতঃপর অমুক অমুক সময় আমাদের সঙ্গে মিলিত হও। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি ভোরবেলার কথা বলেছেন এবং তুমি তোমার পরিশ্রম অথবা খরচ অনুযায়ী (এই উমরার সাওয়াব পাবে)।
২৭৯৯.    ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোকেরা দুটি ইবাদতের সওয়াব নিয়ে ফিরে যাচ্ছে...... অতঃপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
২৮০০.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মানসুর ইবরাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শুধুমাত্র হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যেই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা (মক্কায়) পৌছে বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করলাম। যারা কুরবানীর পশু (হাদী) সাথে আনে নাই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ইহরাম খোলার নির্দেশ দিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতএব যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে আনে নাই, তারা ইহরাম ছেড়ে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ সাথে কুরবানীর পশু আনেন নাই। তাই তারাও ইহরাম খূলে ফেললেন। আয়িশা (রাঃ) আরও বললেন, আমার মাসিক দেখা দিল এবং বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করতে পারলাম না। হাসবায় অবস্থানের রাতে আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ লোকেরা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা করে ফিরে যাচ্ছে, আর আমি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করে ফিরছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা যে রাতে মক্কায় পৌছেছি, তখন তুমি কি বায়তূল্লাহ এর তাওয়াফ করনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে তানঈম যাও এবং (সেখানে) উমরার ইহরাম বাধ। 

অতঃপর তুমি অমুক অমূক জায়গায় (আমাদের সাথে) মিলিত হতে পারবে। উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা (রাঃ) বললেন, মনে হয় আমি আপনাদের আটকিয়ে রাখব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হায়, দুর্ভোগ, কি সর্বনাশ! তুমি কি কুরবানীর দিন বায়তূল্লাহ এর তাওয়াফ করনি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে কোন অসুবিধা নেই, তুমি অগ্রসর হও। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে সাক্ষাত করলেন, তিনি মক্কার উচ্চভূমিতে উঠছিলেন। আর আমি নীচে নামছিলাম। অথবা আমি উচ্চভূমিতে উঠছিলাম আর তিনি তা থেকে নামছিলেন।
২৮০১.    সূয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করতে করতে রওনা হলাম। আমরা সুষ্টভাবে হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরা কোনটিরই উল্লেখ করিনি...... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত মানসূর (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
২৮০২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) গুনদার থেকে, তিনি মুহাম্মাদ ইবন জা'ফার থেকে, তিনি শু'বা থেকে, তিনি হাকাম থেকে, তিনি আলী ইবন হুসায়ন থেকে তিনি যাকওয়ান থেকে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহাজ্জ মাসের ৪র্থ অথবা ৫ম দিনে (মক্কায়) এলেন। এরপর রাগান্বিত অবস্থায় আমার কাছে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কে আপনাকে রাগান্বিত করল, আল্লাহ তাকে আগুনে নিক্ষেপ করুন? তিনি বললেন, তুমি কি জান না আমি লোকদের একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছিলাম অথচ তারা ইতস্ততঃ করছে? 

রাবী হাকাম বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, যেন তারা ইতস্ততঃ করছে। আমি যদি পূর্বেই জানতাম, যে বিষয়ের আমি পরে সন্মুখীন হয়েছি, তবে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না; বরং পরে তা কিনে নিতাম এবং আমিও ইহরাম খুলে ফেলতাম যেমন অন্যরা ইহরাম খুলেছে।
২৮০৩.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহাজ্জ মাসের চার অথবা পাঁচ তারিখে (মক্কায়) পৌছলেন...... পূর্বোক্ত গুনদারের হাদীসের অনুরূপ। কিন্তু এই সনদে তিনি (রাবী) হাকামের উক্তিতে, “ত্যরা ইতস্ততঃ করেছে” এ সন্দেহ উল্লেখ করেননি।
২৮০৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উমরার ইহরাম বাঁধলেন, এরপর (মক্কায়) পৌছলেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করতেই ঋতুমতী হলেন। এরপর তিনি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন এবং এর যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন (তাওয়াফ ব্যতীত)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীনায় অগ্রসর হওসার দিন তাকে বললেন, তোমার (একবারের) তাওয়াফই তোমার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তিনি তাতে তৃপ্ত হলেন না। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবদুর রহমানের সাথে তানঈম পাঠালেন। অতএব তিনি হাজ্জের (হজ্জ) পর (এখান থেকে) ইহরাম বেঁধে উমরা করলেন।
২৮০৫.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি সারিফ নামক স্থানে ঋতূমতী হলেন এবং আরাফাত দিবসে পবিত্র হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যকার সাঈ তোমার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের জন্য যথেষ্ট।
২৮০৬.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... সাফিয়্যা বিনত শায়বা বলেন, আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোকেরা দুটি সওয়াবসহ প্রত্যাবর্তন করবে আর আমি কি মাত্র একটি সওয়াব নিয়ে ফিরে যাব? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন তাকে নিয়ে তানঈম যাওয়ার জন্য। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি তার উটের পিঠে আমাকে তার পেছনে বসিয়ে রওনা হলেন। আমি আমার ওড়না উঠাচ্ছিলাম এবং তা ঘাড় থেকে সরিয়ে রাখলাম। তিনি আমার পায়ে আঘাত করছিলেন, যেমন উটকে আঘাত করেন। আমি তাকে বললাম, আপনি এখানে কাউকে দেখতে পাচ্ছ কি? তিনি বলেন, আমি (তানঈম পৌছে) উমরার ইহরাম বাঁধলাম, অতঃপর (মক্কায়) ফিরে এসে (তাওয়াফ শেষে) হাসবা নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হলাম।
২৮০৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন আয়িশা (রাঃ) কে (বাহনে) তার পিছনে বসিয়ে তানঈম নিয়ে যাওয়ার জন্য যাতে তিনি তাকে (তানঈম থেকে) উমরা করান।
২৮০৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) লায়স (রহঃ) থেকে ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মক্কার দিকে) অগ্রসর হলাম আর আয়িশা (রাঃ) উমরার ইহরাম বেঁধে আসলেন। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে পৌঁছলাম, আয়িশা (রাঃ)-এর মাসিক ঋতু শুরু হল। অবশেষে আমরা মক্কায় পৌছে কাবা ঘর তাওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করলাম। আমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আমরা বললাম, কি প্রকারে ইহরাম খোলা হবে? তিনি বললেন, "সম্পূর্ণরুপে ইহরামমুক্ত হওয়া।" অতএব আমরা স্ত্রী সহবাস করলাম, সূগন্ধি ব্যবহার করলাম এবং সাধারণ পোশাক পরিধান করলাম। তখন আরাফাত দিবস ও আমাদের মাঝে আর মাত্র চার দিনের ব্যবধান ছিল। অতঃপর তালবিয়া দিবসে (১০-ই যিলহাজ্জ) আমরা পূনরায় ইহরাম বাঁধলাম। এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? আয়িশা (রাঃ)বললেন, ব্যাপার এই যে, আমার হায়েয দেখা দিয়েছে। লোকেরা ইহরাম খুলেছে কিন্তু আমি ইহরামমুক্ত হতে পারিনি এবং বায়তুল্লাহ এরও তাওয়াফ করতে পারিনি, আর এখন লোকেরা হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা এমন একটি ব্যাপার যা আল্লাহ তাআলা আদম (আঃ) এর কন্যা সন্তানদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতএব তুমি গোসল কর এবং হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। তিনি তাই করলেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) স্থানসমূহে অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি পবিত্র হলেন, কাবা ঘর তাওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়টিই পূর্ণ হল। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার অবস্থা এই যে, হাজ্জ (হজ্জ) না করা পর্যন্ত আমি (উমরার জন্য) বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করতে পারি নি, কিন্তু হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নিয়েছি। তিনি বললেন, হে আবদুর রহমান! তাকে নিয়ে চলে যাও এবং তানঈম থেকে তাকে উমরা করাও। এটা ছিল হাসবার রাতের ঘটনা।
২৮০৯.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি কাঁদছিলেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ পূর্বোক্ত লায়স (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। অবশ্য উক্ত হাদীসের প্রথমাংশ এই হাদীসে বর্ণনা করা হয় নি।
২৮১০.    আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) উপলক্ষে আয়িশা (রাঃ) উমরার ইহরাম বাঁধলেন ...... অবশিষ্ট অংশ পূর্বোক্ত লায়স (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। তবে এই বর্ণনায় আরও আছে জাবির (রাঃ) বলেন, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নমনীয় স্বভাবের। অতএব আয়িশা (রাঃ) যখনই কোন কিছু আবদার ধরতেন, তিনি সে আবদার রক্ষা করতেন। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে আবদুর রহমানের সাথে পাঠালেন এবং তিনি তানঈম থেকে উমরার ইহরাম বাঁধলেন। (অধস্তন রাবী) মাতার (রহঃ) বলেন, আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেনঃ আয়িশা যখনই হাজ্জ (হজ্জ) করতেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যেভাবে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন, তদনুরূপ করতেন।
২৮১১.    আহমদ ইবনু ইউনূস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। আমাদের সাথে মহিলাগণ এবং শিশুরাও ছিল। আমরা মক্কায় পৌছে বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খূলে ফেলে। আমরা বললাম, কি ধরনের ইহরাম ভঙ্গ করব? তিনি বললেন, পূর্ণরূপে ইহরাম ভঙ্গ কর। রাবী বলেন, অতএব আমরা আমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন করলাম, (সাধারণ) পোশাক পরলাম এবং সুগন্ধি মাখলাম। তারবিয়ার দিন আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধলাম এবং পূর্বেকার তাওয়াফ ও সাঈ আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি কুরবানীর গরু এবং উটে সাতজন করে শরীক হওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন।
২৮১২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা ইহরামমুক্ত হওয়ার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (পূনরায়) ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন- যখন আমরা মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অতএব আমরা আল আবতাহ নামক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধলাম।
২৮১৩.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ একবার মাত্র সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর-এর বর্ণনায় আছে “তাঁর প্রথমবারের তাওয়াফ।”
২৮১৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... রাবী আতা (রহঃ) বলেন, আমি একদল লোকের মধ্যে ছিলাম। এ অবস্থায় জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) বলতে শুনলাম, আমরা মুহাম্মাদ এর সাহাবীগণ কেবল হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামই বাঁধলাম। আতা (রহঃ) বলেছেনঃ জাবির (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার যিলহাজ্জের (হজ্জ) ভোরে (মক্কায়) পৌছে আমাদেরকে হালাল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। আতা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা হালাল হও এবং স্ত্রীদের কাছে যাও। কিন্তু তার এ নির্দেশ বাধ্যতামূলক ছিল না, বরং তাদেরকে ন্ত্রী সহবাসের অনুমতি দেয়া হয়েছিল মাত্র। 

জাবির (রাঃ) বলেন, আরাফাত দিবসের আর পাঁচ দিন মাত্র বাকী। অতএব আমরা এ অবস্থায় আমাদেরকে স্ত্রীগমনের নির্দেশ দিলেন। তাহলে তো আমরা এমন অবস্থায় আরাফাতে পৌঁছব যে, আমাদের যৌনাঙ্গ থেকে বীর্য ঝরছে। আতা (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) তার হাত নেড়ে কথাগুলো বলছিলেন এবং আমি যেন তার হাতের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছি। জাবির (রাঃ) বলেন, ইত্যবসরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা নিশ্চিত জান, আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে অধিক ভয় করি, আমি তোমাদের চেয়ে অধিক সত্যবাদী এবং পূণ্যবান। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি অবশ্যই হালাল হয়ে যেতাম যেমন তোমরা হালাল হয়েছ। আমি আমার বিষয়টি যদি আগে জানতাম, যেমন পরে জেনেছি, তবে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না, অতএব তোমরা হালাল হও (ইহরাম ভঙ্গ কর)। 

আতা (রহঃ) বলেছেন, জাবির (রাঃ) বলেনঃ অতএব আমরা হালাল হলাম, তার কথা শুনলাম এবং তাঁর আনুগত্য করলাম। জাবির (রাঃ) আরও বলেন, আলী (রাঃ) (ইয়েমেনবাসীদের থেকে আদায়কৃত) খারাজ নিয়ে উপস্থিত হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কোন ধরনের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ধরনের ইহরাম বেঁধেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কুরবানী কর এবং ইহরাম অবস্থায় থাক। জাবির (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কুরবানীর পশু এনেছিলেন। সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশুম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি শুধু এই বছরের জন্য, না সব সময়ের জন্য? তিনি বললেন, সর্বকালের জন্য।
২৮১৫.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। আমরা মক্কা শরীফ পৌছলে তিনি আমাদেরকে হালাল হওয়ার এবং এই ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন। আমাদের জন্য তাঁর এই নির্দেশ কঠোর মনে হল এবং আমাদের মনোকষ্ট হল। এই খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছল। আমাদের জানা নেই তিনি কি ওহীর মাধ্যমে এ খবর পেয়েছেন, না কেউ তাঁর কাছে এ কথা পৌছিয়েছে? তিনি বললেন, হে জনগণ! তোমরা হালাল (ইহরামমুক্ত) হও। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমিও তোমাদের অনুরূপ করতাম। জাবির (রাঃ) বলেন, অতএব আমরা ইহরামমুক্ত হলাম, এমনকি স্ত্রী সংগত এবং হালাল ব্যক্তি যা কিছু করে, তাই করলাম। অতঃপর তারবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আমরা মক্কা ত্যাগ করলাম (মিনা ও আরাফাতের উদ্দেশ্যে) এবং হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম।
২৮১৬.    ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... মূসা ইবনু নাফি, (রহঃ) বলেন, আমি উমরাসহ তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে তারবিয়া দিবসের চারদিন পুর্বে (৪ যিলহাজ্জ) মক্কায় পৌছলাম। লোকেরা বলল, এখন তো আপনার হাজ্জ (হজ্জ) মক্কাবাসীদের অনুরূপ হাজ্জ (হজ্জ) হয়ে যাবে। অতএব আমি আতা ইবনু আবী রাবাহ এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করলাম। আতা (রহঃ) বললেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন- যে বছর তিনি সঙ্গে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন এবং তারা কেবল হাজ্জের (ইফরাদ হাজ্জের) ইহরাম বেধেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ইহরাম খুলে ফেল, বায়তুল্লাহ- এর তাওয়াফ কর, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ কর, মাথার চুল ছাট এবং ইহরামমুক্ত অবস্থায় থাক। যখন তারবিয়ার দিন আসবে তখন পূনরায় হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ এবং এটা তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামে পরিণত কর। তারা বললেন, কিভাবে আমরা তা তামাত্তুতে পরিণত করব, অথচ আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছি? তিনি বললেন, আমি তোমাদের যে নির্দেশ দিচ্ছি, তাই কর। কারণ আমি যদি সাথে করে কুরবানীর পশু না আনতাম তবে তোমাদের যে নির্দেশ দিচ্ছি আমিও তদ্রুপ করতাম। কিন্তু হাদী যথাস্থানে কুরবানী না করা পর্যন্ত আমার জন্য ইহরাম খোলার সূযোগ নেই। অতএব তারা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলেন।
২৮১৭.    মুহাম্মদ ইবনু মামার ইবনু রিবঈ কায়সী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মক্কায়) পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার এবং (উমরা পালনের পর) ইহরামমুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কুরবানীর পশু থাকায় তিনি নিজের হাজ্জের ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করতে পারেননি।
২৮১৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ নাযরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করার নির্দেশ দিতেন এবং ইবনু যুবায়র (রাঃ) তামাত্তু হজ্জ করতে নিষেধ করতেন। আমি বিষয়টি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সামনে পেশ করলাম। তিনি বললেন, এ ঘটনাটি আমার সামনেই ঘটেছে। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। উমর (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর বললেন, আল্লাহ তাআলা তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য যে জিনিস ইচ্ছা এবং যে কারণে ইচ্ছা, হালাল করেন এবং কুরআন নাযিল হওয়া সমাপ্ত হয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা সম্পাদন কর, যেভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এবং যে সব নারীকে তোমরা মুত'আর মাধ্যমে বিবাহ করেছ, তাদের সঠিক বিবাহ বন্ধনে নিয়ে নাও। আমার নিকট মুত'আর শর্তে বিবাহকারী কোন পুরুষ লোক এলে আমি অবশ্যই তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব।
২৮১৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... কাতাদা (রাঃ) এর সূত্রেও উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই বর্ণনায় আরও আছে, উমর (রাঃ) বলেন, “তোমাদের হাজ্জ (হজ্জ) কে উমরা থেকে পৃথক কর। কারণ এতে তোমাদের হাজ্জ (হজ্জ)ও পূর্ণাঙ্গ হবে এবং উমরাও পূর্ণাঙ্গ হবে।”
২৮২০.    খালফ ইবনু হিশাম, আবূর-রবী ও কুতায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মক্কায়) পৌঁছলাম হাজ্জের (হজ্জ) জন্য তালবিয়া উচ্চারণ করতে করতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. নবী (ﷺ) এর হজ্জের বিবরণ


২৮২১.    আবূ বকর ইবনু শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হাতিম ইবন ইসমাইল জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে, তিনি তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি সকলের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। অবশেষে আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু হুসায়ন। অতএব তিনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আমার মাথার উপর রাখলেন। তিনি আমার জামার উপরদিকের বোতাম খুললেন তারপর নীচের বোতাম খুললেন। তারপর তার হাত আমার বুকের মাঝে রাখলেন। আমি তখন ছিলাম যুবক। বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তোমাকে স্বাগত জানাই, তুমি যা জানতে চাও, জিজ্ঞাসা কর। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি (বার্ধক্যজনিত কারণে) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ইতিমধ্যে সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তিনি নিজেকে একটি চাঁদর আবৃত করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি যখনই চাঁদরের প্রান্ত নিজ কাঁধের উপর রাখতেন- তা (আকারে) ছোট হওয়ার কারণে নীচে পড়ে যেত। তার আরেকটি বড় চাঁদর তার পাশেই আলনায় রাখা ছিলো। তিনি আমাদের নিয়ে সালাতের ইমামতি করলেন। 

অতঃপর আমি বললাম- আপনি আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (বিদায়) হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে অবহিত করুন। জাবির (রাঃ) স্বহস্তে নয় সংখ্যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর (মদিনায়) অবস্থান করেন এবং এ সময়কালের মধ্যে হাজ্জ (হজ্জ) করেননি। অতঃপর ১০ম বর্ষে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়া হল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বছর হাজ্জে (হজ্জ) যাবেন। এবং মদিনায় বহুলোকের আগমণ হল। তাদের প্রত্যেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করতে এবং তার অনুরূপ আমল করতে আগ্রহী ছিল। 

আমরা তাঁর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে পৌছলাম- আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন এখন আমি কি করব? তিনি বললেন, তুমি গোসল কর, একখন্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে নাও এবং ইহরামের পোশাক পরিধান কর। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (ইহরামের দু'রাকআত) সালাত আদায় করলেন। অতঃপর “কাসওয়া” নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অতঃপর বায়দা নামক স্থানে তাঁর উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল, আমি সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে দেখলাম লোকে লোকারন্য কতক সওয়ারীতে, কতক পদব্রজে অগ্রসর হচ্ছে। ডানদিকে, বাঁদিকে এবং পেছনেও একই দৃশ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তার উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনিই এর আসল তারপর্য জানেন এবং তিনি যা করতেন, আমরাও তাই করতাম। তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত এই তালবিয়া পাঠ করলেনঃ 

লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা না শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নি মাতা লাকা ওয়াল মূলক, লা শারীকা লাক। 

অর্থঃ আমি তোমার নিকটে হাযির আছি হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকটে হাযির, আমি তোমার নিকটে হাযির, তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমার নিকটে উপস্থিত। নিশ্চিত সমস্ত প্রশংসা, নি'আমত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব তোমার, তোমার কোন শরীক নেই। 

লোকেরাও উপরোক্ত তালবিযা পাঠ করল যা (আজকাল) পাঠ করা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে বেশি কিছু বলেন নাই! আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন। 

জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়া অন্য কিছুর নিয়্যত করিনি, আমরা উমরার কথা জানতাম না। অবশেষে আমরা যখন তাঁর সঙ্গে বায়তুল্লাহ শরীফে পৌছলাম তিনি রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, তারপর সাতবার কা’বা ঘর তাওয়াফ করলেন- তিনবার দ্রুতগতিতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর তিনি মাকামে ইবরাহীমে পৌছে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ 

وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى 
অর্থঃ “তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে সালাতের স্থানরুপে গ্রহণ কর”- (সূরা বাকারাঃ ১২৫)। 

তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বায়তূল্লাহর মাঝখানে রেখে (দু'রাক'আত সালাত আদায় করলেন)। (জাফর বলেন) আমার পিতা (মুহাম্মদ) বলতেন, আমি যতদুর জানি, তিনি (জাবির) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি দু-রাক'আত সালাতে সূরা 'কুল হুআল্লাহু আহাদ' ও 'কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন' পাঠ করেন। 

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমো খেলেন। তারপর তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ‏ অর্থঃ নিশ্চয়ই সাফা-মারওইয়া আল্লাহর দুটি নিদর্শনসমূহের অন্যতম” (সূরা বাকারাঃ ১৫৮) 

এবং আরো বললেন আল্লাহ তা’আলা যে পাহাড়ের উল্লেখ করে আরম্ভ করেছেন, আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড় থেকে শুরু করলেন এবং তারপর এতটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বায়তুল্লাহ শরীফ দেখতে পেলেন। তিনি কিবলামুখী হলেন, আল্লাহর একত্ব ও মাহাত্ন ঘোষণা করলেন এবং বললেনঃ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহুদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া হুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহ ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।" 

অর্থঃ "আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন ও শত্রু বাহিনীকে একাই পরাস্ত করেছেন" 

তিনি এ দু’আ পড়লেন এবং তিনি অনুরূপ তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি নেমে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন- যাবত না তাঁর পা উপত্যকার সমতল ভূমিতে গিয়ে ঠেকল। তিনি দ্রুত চললেন- যাবত না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। সর্বশেষ তাওয়াফে যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌছলেন, তখন (লোকদের সম্মোধন করে) বললেনঃ যদি আমি আগেই ব্যাপারটি বুঝতে পারতাম, তাহলে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না এবং (হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামকে উমরায় পরিবর্তন করতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নাই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং একে উমরায় পরিণত করে। এ সময় সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু'শুম (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যবস্থা কি আমাদের এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের আংগুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢূকালেন এবং দু'বার বললেন, উমরা হাজ্জের (হজ্জ) মধ্যে প্রবেশ করেছে। আরও বললেনঃ না, বরং সর্বকালের জন্য, সর্বকালের জন্য। 

এ সময় আলী (রাঃ) ইয়েমেন থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কুরবানীর পশু নিয়ে এলেন এবং যারা ইহরাম খুলে ফেলেছে, ফাতিমা (রাঃ) কে তাদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীণ কাপড় পরিহিতা ছিলেন এবং চোখে সুরমা দিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) তা অপছন্দ করলেন। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

রাবী বলেন, আলী (রাঃ) ইরাকে থাকতেন, অতএব ফাড়িমা (রাঃ) যা করেছেন তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে আমি তাকে জানালাম যে আমি তার এ কাজ অপছন্দ করেছি। তিনি যা উল্লেখ করেছেন, সে বিষয়ে জানার জন্য আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফাতিমা সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধার সময় কি বলেছিলে? আলী (রাঃ) বললেন আমি বলেছি, ইয়া আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধলাম, যেরুপ ইহরাম বেঁধেছেন আপনার রাসুল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার সঙ্গে হাদী (কুরবানীর পশু) আছে অতএব তুমি ইহরাম খুলবে না। 

জাবির (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) ইয়েমেন থেকে যে পশুপাল নিয়ে এসেছেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সঙ্গে করে যে সব পশু নিয়ে এসেছিলেন, সর্বসাকুল্যে এর সংখ্যা দাঁড়াল একশত। অতএব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেললেন এবং চুল কাটলেন। তারপর যখন তারবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আসল, লোকেরা পুনরায় ইহরাম বাঁধল এবং মিনার দিকে রওনা হল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাহনে সওয়ার হয়ে গেলেন এবং সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন এবং নামিরা নামক স্থানে গিয়ে তার জন্য একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন এবং নিজেও রওনা হয়ে গেলেন। 

কুরায়শগণ নিঃসন্দেহ ছিল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাশ'আরুল হারামের কাছে অবস্থান করবেন যেমন জাহিলী যুগে কুরায়শগণ করত। কিন্তু তিনি সামনে অগ্রসর হলেন, তারপরে আরাফাতে পৌছলেন এবং দেখতে পেলেন নামিরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলেন। তারপর যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তখন তিনি তাঁর কাসওয়া (নামক উষ্ঠী) কে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলেন। তার পিঠে হাওদা লাগান হল। তখন তিনি বাতনে ওয়াদীতে এলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ 

“তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সস্পদ তোমাদের জন্য হারাম (মর্যাদাপূর্ণ) যেমন তা হারাম (মর্যাদাপূর্ণ) তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে।” 

"সাবধান! জাহিলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নীচে। জাহেলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল হল। আমি সর্ব প্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হল আমাদের বংশের রবীআ ইবনু হারিসের পূত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বানূ সা’দ এ দুগ্ধপোষ্য ছিল, তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। 

জাহেলী যুগের সুদও বাতিল হল। আমি প্রথমে যে সুদ বাতিল করছি তা হল আমাদের বংশের আব্বাস ইবনু আবদূল মুত্তালিরের সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল হল। 

তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে স্থান না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছেদের হুকুম রয়েছে। 

আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।” 

“আমার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কি বলবে?” তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি (আল্লাহর বানী) পৌছিয়েছেন, আপনার হক আদায় করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন। তারপর তিনি তর্জনী আকাশের দিকে তুলে লোকদের ইশারা করে বললেন, “ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক, তিনি তিনবার এরূপ বললেন। 

তারপর (মুআযযিন) আযান দিলেন ও ইকামত দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর ইকামত দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করলেন। তিনি এই দুই সালাতের মাঝখানে অন্য কোন সালাত আদায় করেননি। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে মাওকিফ (অবস্থানস্থল) এলেন, তাঁর কাসওয়া উষ্ট্রীর পেট পাথরের স্তুপের দিকে করে দিলেন এবং লোকদের একত্র হওয়ার জায়গা সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি এভাবে উকুফ করলেন। হলদে আভা কিছু দূরীভূত হল, এমনকি সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি উসামা (রাঃ) কে তাঁর বাহনের পেছনদিকে বসালেন এবং কাসওয়ার নাকের দড়ি সজোরে টান দিলেন, ফলে তার মাথা মাওরিক (সওয়ারী ক্লান্তি অবসাদর জন্য যাতে পা রাখে) স্পর্শ করল। তিনি ডান হাতের ইশারায় বলেন, হে জনমণ্ডলী! ধীরে সুস্থে, ধীরে সুস্থে অগ্রসর হও। যখনই তিনি বালূর স্তূপের নিকট পৌছতেন, কাসওয়ার নাকের রশি কিছুটা ঢিল দিতেন যাতে সে উপরদিকে উঠতে পারে। 

এভাবে তিনি মুযদালিফায় পৌছলেন এবং এখানে একই আযানে ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাম আদায় করলেন। এই সালাতের মাঝখানে অন্য কোন নফল সালাত আদায় করেননি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে পড়লেন যাবত না ফজরের ওয়াক্ত হল। অতঃপর ভোর হয়ে গেলে তিনি আযান ও ইকামত সহ ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি কাসওয়ার পিঠে আরোহণ করে মাশ'আরুল হারাম নামক স্থানে আসলেন। এখানে তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন, তার মহাত্ব বর্ণনা করলেন, কালেমা তাওহীদ পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা করলেন। দিনের আলো যথেষ্ট উজ্জ্বল না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন। 

সূর্য উদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওনা করছিলেন এবং ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) সওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসলেন। 

তিনি ছিলেন যুবক এবং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অগ্রসর হলেন- পাশাপাশি একদল মহিলাও যাচ্ছিলো। ফযল (রাঃ) তাদের দিকে তাকাতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত ফযলের চেহারার উপর রাখলেন এবং তিনি তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন এবং ফযল (রাঃ) অপরদিক হতে দেখতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূনরায় অন্যদিক হতে ফযল (রাঃ) এর মূখমন্ডলে হাত রাখলেন। তিনি আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন। "বাতনে মুহাসসাব" নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সওয়ারীর গতি কিছুটা দ্রুত করলেন। তিনি মধ্যপথে অগ্রসর হলেন যা জামরাতুল কুবরার দিকে বেরিয়ে গেছে। তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় এলেন এবং নীচের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে এখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন এবং প্রত্যেকবার আল্লাহু আকবার- বললেন। 

অতঃপর সেখানে থেকে কুরবানীর স্থানে এলেন এবং নিজ হাতে ৬৩ পশু যবেহ করলেন। তিনি কুরবানীর পশুতে আলী (রাঃ) কেও শরীক করলেন। অতঃপর তিনি প্রতিটি পশুর গোশতের কিছু অংশ নিয়ে একত্রে রান্না করার নির্দেশ দিলেন। অতএব তাই করা হল। তারা উভয়ে এই গোশত থেকে খেলেন এবং ঝোল পান করলেন। 

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহর দিকে রওনা হলেন এবং মক্কায় পৌছে যোহরের সালাত আদায় করলেন। অতএব বনু আবদিল মূত্তালিব এর লোকদের কাছে আসলেন, তারা লোকদের যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! পানি তোল। আমি যদি আশংকা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভুত করে দেবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি তুলতাম। তখন তারা তাঁকে এক বালতি পানি দিল এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন।
২৮২২.    উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ... জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট এলাম এবং তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম...... হাদীসের অবিশষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাতিম ইবনু ইসমাঈলের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। 

তবে এই বর্ণনায় আরও আছেঃ আবূ সাইয়ারা নামক এক ব্যাক্তি (জাহেলী যুগে) লোকদেরকে জিনবিহীন গাধার পিঠে করে (মুযদালিফা থেকে) নিয়ে যেত। রাসুলূলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুযদালিফা থেকে মাশ'আরুল-হারাম-এর দিকে অগ্রসর হলেন, তখন কুরায়শরা নিঃসন্দেহ ছিল যে, তিনি এখানে থামবেন এবং অবস্থান করবেন। কিন্তু তিনি আরও সামনে অগ্রসর হলেন এবং এদিকে কোন ভ্রক্ষেপ করলেন না, অবশেষে তিনি আরাফাতে পৌঁছে সেখানে অবতরণ করলেন।
২৮২৩.    উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তার এই হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "আমি এখানে কুরবানী করেছি এবং মিনার গোটা এলাকা কুরবানীর স্থান। অতএব তোমরা যার যার অবস্থানে কুরবানী কর। আর আমি এখানে অবস্থান করছি এবং গোটা আরাফাতই অবস্থানস্থল (মাওকিফ)। মুযদালিফার সবই অবস্থানস্থল এবং আমি এখানে অবস্থান করছি।"
২৮২৪.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এসে পৌঁছলেন প্রথমে হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে তাতে চুমু খেলেন, অতঃপর তাওয়াফ করলেন।
২৮২৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরায়শগণ এবং তাদের ধর্মের অনুসারীরা (জাহেলী যুগে) মুযদালিফায় অবস্থান করত। তারা নিজেদের নামকরণ করেছিল, “আল হুমস” আর সমস্ত আরববাসীরা আরাফাতে অবস্থান করত। যখন ইসলামের আবির্ভাব হল, আল্লাহ তা'আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আরাফাতে অবস্থান করার ও সেখানে থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেন। সে কথাই আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেছেনঃ "অতঃপর অন্যান্য লোক যেখানে থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখানে থেকে প্রত্যাবর্তন করবে" (সূরা বাকারাঃ ১৯৯)
২৮২৬.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি (উরওয়া) বলেন, আল হুমস ব্যতীত সকল আরব উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করত। কুরায়শ ও তাদের বংশধরগণকে “আল হুমস” বলা হতো। আরবরা উলঙ্গ অবস্থায়ই তাওয়াফ করত কিন্তু আল হুমস তাদেরকে কাপড় দান করলে স্বতন্ত্র কথা। তাদের পুরুষরা পূরুষদের এবং মহিলারা মহিলাদের কাপড় দান করত। আল-হুমস মুযদালিফার বাইরে যেত না, আর সব লোক আরাফাতে চলে যেত। হিশাম বলেন, আমার পিতা (উরওয়া) আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আল হুমস, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এই আযাত নাযিল করেছেনঃ “অতঃপর অন্যান্য লোক যেখানে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখানে থেকে প্রত্যাবর্তন করবে” (সূরা বাকারাঃ ১৯৯)। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা আরাফাত থেকে প্রত্যার্বতন করত আর আল-হুমস মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন করত। তারা বলত, আমরা কেবলমাত্র হারাম এলাকা থেকেই প্রত্যাবর্তন করব। অতঃপর যখন "তোমরা প্রত্যাবর্তন কর যেখান থেকে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে" আয়াত নাযিল হল তখন থেকে তারা আরাফাতে গেল।
২৮২৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) বলেন, আমার একটি উট হারিয়ে গেল। আরাফাত দিবসে আমি তার খোঁজে বের হলাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লোকদের সাথে আরাফাতে অবস্থানরত দেখলাম। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! ইনি তো হুমস এর অন্তর্ভুক্ত, কি ব্যাপার ইনি এখানে কেন? অথচ কুরায়শদেরকে হুমস এর মধ্যে গণ্য করা হতো।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. ইহরামকে সংযুক্ত করা জায়েয। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বলল, আমি অমুক ব্যক্তির ইহরাম এর অনুরূপ ইহরাম বাঁধলাম। এ ক্ষেত্রে তার ইহরাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইহরামের অনুরূপ হবে


২৮২৮.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু'বা কায়স ইবন মুসলিম থেকে, তিনি তারিক ইবন শিহাব থেকে এবং তিনি আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। তিনি বাতহা নামক স্থানে উট বসিয়ে যাত্রা বিরতি করছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি হাজ্জের (হজ্জ) নিয়্যত করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি ধরনের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, আমি বলেছি, লাব্বাইকা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও তদ্রুপ ইহরাম বাঁধলাম। তিনি বললেনঃ তুমি ভালই করেছ। এখন বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ কর এবং সাফা-মারওয়ার সাঈ কর, অতঃপর ইহরাম খুলে ফেল। 

তিনি বলেনঃ আমি বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম, সাফা-মারওয়ার সাঈ করলাম, অতঃপর কায়স গোত্রের এক স্ত্রীলোকের নিকট এলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। আমি লোকদের এভাবেই ফতওয়া দিতে থাকলাম উমর (রাঃ) এর খিলাফত পর্যন্ত। এ সময় এক ব্যাক্তি তাকে বলল, হে আবূ মূসা অথবা (বলল) আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আপনার কিছু ফতওয়া আপাতত স্থগিত রাখুন। কারণ আমীরুল মুমিনীন (উমর) আপনার পরে হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে যে নতূন বিধান প্রবর্তন করেছেন, তা আপনি জ্ঞাত নন। 

তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! আমি যাদের ফতওয়া দিয়েছি (ইহরাম খোলা সম্পর্কে) তারা যেন অপেক্ষা করে। কারণ আমীরুল মূমিনীন অচিরেই তোমাদের নিকট আসছেন, অতএব তার আনুগত্য করা তোমাদের কর্তব্য। রাবী বলেন, উমর (রাঃ) এলেন এবং আমি তাঁর সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী চলি, তবে তা আমাদের নির্দেশ দেয় (হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা) পুর্ণ করার। আমরা যদিঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের উপর আমল করি, তবে কুরবানীর পশু তার (কুরবানীর) স্থানে না পৌছা পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম খুলেননি। 

وَحَدَّثَنَاهُ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، فِي هَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ ‏.‏ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... শুবা থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৮২৯.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... সুফইয়ান ইবন কায়স থেকে, তিনি তারিক ইবন শিহাব থেকে এবং তিনি আবূ মূসা (রাঃ) থেকে। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। তিনি বাতহা নামক স্থানে উট বসিয়ে অবস্থান করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরূপ ইহরাম বেঁধেছি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কুরবানীর পশু এনেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেল। অতএব আমি বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম খূলে ফেললাম। এপর আমার গোত্রের এক মহিলার নিকট এলাম, সে আমার মাথার চুল আচড়িয়ে দিল এবং আমার মাথা ধুয়ে দিল। আমি আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে লোকদের অনুরূপ ফতওয়া দিতাম। 

হাজ্জের (হজ্জ) মৌসূম আগত, এ সময় এক ব্যাক্তি আমার নিকট এসে বলল, আপনি হয়ত জানেন না আমীরুল মুমিনীন (উমর) হাজ্জের (হজ্জ) ব্যাপারে কি নতুন বিধান প্রবর্তন করেছেন। আমি বললাম, হে জনগণ! আমি যাদেরকে কতগুলো বিষয় সম্পর্কে যে ফতওয়া দিয়েছি তারা যেন অপেক্ষা করে। কারণ, ইতিমধ্যেই আমীরুল মুমিনীন তোমাদের মধ্যে এসে পৌঁছবেন। তোমরা তার অনুসরণ করবে। 

তিনি (উমর) এসে পৌছলে আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি হাজ্জের (হজ্জ) ব্যাপারে নতুন কি বিধান দিচ্ছেন? তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাব আকড়ে ধরি, তবে আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা পূর্ণ কর” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬)। আর আমরা যদি আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণ করি, তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে করে নিয়ে আসা পশু যবেহ না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতেন না।
২৮৩০.    ইসহাক ইবনু মানসূর ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়েমেনে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি যে বছর হাজ্জ (হজ্জ) করেছিলেন, আমি সে বছর (হাজ্জে (হজ্জ) এসে তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ মূসা! ইহরাম বাঁধার সময় তুমি কি নিয়্যত করেছিলে? আমি বললাম, লাব্বাইকা! আমার ইহরাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরামের অনুরুপ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তাহলে যাও, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ কর, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ কর, অতঃপর ইহরাম খুলে ফেল। তিনি হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত শু’বা ও সুফয়ানের হাদীস দু'টির অনুরূপ।
২৮৩১.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) অনুকুলে ফতওয়া দিতেন। এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, আপনি আপনার কোন কোন ফতওয়া স্থগিত রাখুন। আপনি হযত জানেন না, আপনার পরে আমীরুল মুমিনীন হাজ্জের (হজ্জ) ব্যাপারে কি বিধান প্রবর্তন করেছেন। পরে তিনি (আবূ মূসা) তার সাথে সাক্ষাত করলেন এবং (এ ব্যাপারে) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। উমর (রাঃ)বললেন, আমি অবশ্যই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ (তামাত্তু) করেছেন। কিন্তু আমি এটা পছন্দ করি না যে, বিবাহিত লোকেরা গাছের ছায়ায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করবে, অতঃপর এমন অবস্থায় হাজ্জের (হজ্জ) জন্য রওনা হবে যে, তাদের মাথার চুল দিয়ে পানি টপকে পড়ছে।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. তামাত্তু হজ্জের বৈধতা


২৮৩২.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) বলেছেন, উসমান (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করতে নিষেধ করতেন। আর আলী (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করার নির্দেশ দিতেন। অতএব উসমান (রাঃ) আলী (রাঃ) এর সঙ্গে কথা বললেন। অতঃপর আলী (রাঃ) বললেন, আপনি অবশ্যই জানেন, আমরা নিশ্চিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। উসমান (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু আমরা তখন আতঙ্কিত ছিলাম।
২৮৩৩.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৮৩৪.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) 'উসফান' নামক স্থানে একত্রে হলেন। উসমান (রাঃ) তামাত্তু ও উমরা করতে নিষেধ করতেন। আলী (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেছেন, আপনি তা নিষেধ করছেন- এতে আপনার উদ্দেশ্যে কি? উসমান (রাঃ) বললেন, আপনি আমাকে আপনার কথা থেকে রেহাই দিন। আলী (রাঃ) বললেন, আমি আপনাকে ছাড়তে পারি না। আলী (রাঃ) যখন এই অবস্থা দেখলেন, তিনি একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের ইহরাম বাঁধলেন।
২৮৩৫.    সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের জন্যই বিশেষভাবে খাস ছিল।
২৮৩৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু হজ্জ আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা হিসেবে অনুমোদিত ছিল।
২৮৩৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ যর (রাঃ) বলেন, দু'টি মুত’আ কেবল আমাদের যুগের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। অর্থৎ মুত’আ বিবাহ ও তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ)।
২৮৩৮.    কুতায়বা (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আবূ শা'সা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবরাহীম নাখঈ ও ইবরাহীম আত-তায়মীর নিকট এলাম এবং বললাম, আমি এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে করতে চাই। ইববাহীম নাখঈ বললেন, কিন্তু তোমার পিতা তো এরূপ সংকল্প করেননি। 

কুতায়বা (রহঃ) ... ইবরাহীম তায়মী তার পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি (পিতা) রাবযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তার সামনে এই প্রসং উপস্থাপন করলেন। আবূ যর (রাঃ) বললেন, তা আমাদের জন্য (একটা সুবিধা স্বরূপ) নিদিষ্ট ছিল, তোমাদের জন্য নয়।
২৮৩৯.    সাঈদ ইবনু মানসূর ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সুলায়ম ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) কে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমরা উমরা আদায় করেছি। এটা সেই সময়কার কথা যখন তিনি (আমীর মুআবিয়া) কাফির ছিলেন এবং মক্কার বাড়িতে বসবাস করতেন।
২৮৪০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সুলায়মান তায়মী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তিনি এই রিওয়ায়াতে মুআবিয়া (রাঃ) এর নাম উল্লেখ করেছেন।
২৮৪১.    আমরুন-নাকিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ... সুলায়মান তায়মী (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে উভয়ের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং সুফয়ানের হাদীসে তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) উল্লেখ রয়েছে।
২৮৪২.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... মূতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি আজ তোমাকে একটি হাদীস বলব, পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তাআলা এরদ্বারা তোমাকে উপকৃত করবেন। জেনে রাখ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখের মধ্যে উমরা করিয়েছিলেন। এটা রহিত করে কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত তা করতে নিষেধ করেননি। পরে লোকেরা নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী মত পোষণ করে।
২৮৪৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আল জুরায়রী (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে হাতিম তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, এক ব্যাক্তি অর্থাৎ উমর (রাঃ) নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী মত পোষণ করেন।
২৮৪৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি তোমাকে একটি হাদীস শুনাব। আশা করি আল্লাহ তোমাকে এরদ্বারা উপকৃত করবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে আদায় করেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এরূপ করতে নিষেধ করেননি এবং তা হারাম বলে কুরআনের কোন আয়াতও নাযিল হয়নি। (রোগের কারণে) তপ্ত লোহার দাগ গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত আমাকে (ফিরিশতাগণ কর্তৃক) সালাম দেওয়া অব্যাহত ছিল। আমি দাগ গ্রহণ করলে সালাম দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন দাগ দেওয়া বন্ধ করলাম, পুনরায় সালাম দেওয়া শুরু হয়।
২৮৪৫.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন...... পরবর্তী অংশ উপরোক্ত মু’আয বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
২৮৪৬.    মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) মৃত্যুকালীন রোগে আমাকে ডেকে পাঠান। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কয়েকটি হাদীস বলব, আশা করি আল্লাহ তা'আলা আমার পরে তোমাকে এরদ্বারা উপকৃত করবেন। আমি বেচে থাকলে তুমি আমার সুত্রে বর্ণনা করা গোপন রাখবে। আর আমি মারা গেলে তুমি চাইলে তা বর্ণনা করতে পার। আমাকে সালাম করা হতো। জেনে রাখ, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে আদায় করেছেন। অতঃপর এ বিষয়ে কোন আয়াতও নাযিল হয়নি এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা নিষিদ্ধ করেননি। এক ব্যাক্তি (উমর) এ বিষয়ে যা ইচ্ছা করলেন, তা বললেন।
২৮৪৭.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জেনে রাখ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে (একই ইহরামে) আদায় করেছেন। এরপর এ বিষয় কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অনুরূপ করতে আমাদের নিষেধ করেননি। এরপর এক ব্যাক্তি এ বিষয়ে নিজ ইচ্ছামত যা বলার, তা বললেন।
২৮৪৮.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। এ বিষয়ে কুরআনে কোন আয়াত নাযিল হয়নি। এক ব্যাক্তি ইচ্ছামত যা বলার তাই বললেন।
২৮৪৯.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেছেন এবং আমরাও তার সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি।
২৮৫০.    হামিদ ইবনু উমর আল বাকরাবী ও মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাবে মুত'আ অর্থাৎ তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কিত আয়াত রহিতকারী কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তা করতে নিষেধ করেননি। পরবর্তীকালে এক ব্যাক্তি নিজ ইচ্ছামত যা বলার তাই বলেছেন।
২৮৫১.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি বলেছেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এ হাজ্জ (হজ্জ) করেছি।” তিনি বলেননি যে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

পরিচ্ছেদঃ ২০. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীর জন্য কুরবানী ওয়াজিব। যে ব্যক্তি এর সামর্থ্য না রাখে, সে হজ্জের অনুষ্ঠান চলাকালে তিন দিন এবং বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরে সাত দিন সাওম পালন করবে


২৮৫২.    আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু করেছেন, প্রথমে উমরা ও পরে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন এবং পশু কুরবানী করেছেন। যুল-হুলায়ফা থেকে সাথে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন। এখানে থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে উমরার, অতঃপর হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ শুরু করেন। লোকেরাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণে হাজ্জের (হজ্জ) সাথে উমরা যুক্ত করে তামাত্তু করেন। কতক লোকের কুরবানীর পশু ছিল এবং তারা তা সাথে নিয়েছিল, আর কতকের কুরবানীর পশু ছিলনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা শরীফে উপনীত হয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে, হাজ্জ (হজ্জ) শেষ না করা পর্যন্ত তাদের জন্য (সাময়িকভাবে) নিষিদ্ধ কোন জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নাই তারা যেন বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যায়। অতঃপর তারা (৮ যিলহাজ্জ) পূনরায় হাজ্জের (হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধবে এবং (নিদিষ্ট দিনে) কুরনানী করবে। কোন ব্যাক্তি কুরবানীর পশু না পেলে হাজ্জ (হজ্জ) চলাকালীন সময়ে তিন দিন এবং বাড়িতে ফেরার পর সাত দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌছে প্রথমে রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করলেন, তিন চক্কর সামান্য দ্রুতগতিতে এবং চার চক্কর ধীরগতিতে। বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ সমাপ্ত করে মাকামে ইবরাহীমের নিকট দু'রাকআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করলেন। অতঃপর তিনি সাফা পাহাড়ে এলেন এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সাঈ করলেন। এরপর তিনি এমন কোন জিনিস হালাল করেননি- যা হারাম হয়েছিল (ইহরামের কারণে অর্থাৎ তিনি ইহরামমুক্ত হননি) যে পর্যন্ত না হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন করেন। কুরবানীর দিন নিজের পশু কুরবানী করেন এবং কাবাঘর এর তাওয়াফ করেছেন। তারপর যে সব জিনিস হারাম ছিল, তা তার জন্য হালাল হয়ে গেল (অর্থাৎ তিনি ইহরাম খুললেন) আর যেসব লোক সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছিল, তারাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরূপ করেছিল।
২৮৫৩.    আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) পালন এবং তাঁর সাথের লোকদের তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পাদন সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২১. কিরান হজ্জ সমাপনকারী ইফরাদ হজ্জ সম্পাদনকারীর সাথেই ইহরাম খুলতে পারবে, তার আগে নয়


২৮৫৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কি ব্যাপার লোকেরা ইহরামমুক্ত হল অথচ আপনি উমরা করার করও ইহরাম খুলেননি? তিনি বললেন, আমি আমার মাথার চুল জমিয়েছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধেছি। অতএব আমি কুরবানী না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারি না।
২৮৫৫.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হাফসা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কি ব্যাপার আপনি ইহরাম খুলেন নি?...... উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
২৮৫৬.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কি ব্যাপার লোকেরা ইহরাম খুলেছে অথচ আপনি উমরা করার পরও ইহরাম খুলেননি? বললেন, আমি কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধেছি এবং মাথার চুল জমাট করেছি। অতএব হাজ্জের (হজ্জ) যাবতীয় অনুষ্ঠান শেষ না করা পর্যন্ত আমি ইহরাম খুলতে পারব না।
২৮৫৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হাফসা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ!...... মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ- কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি হালাল হতে পারি না।
২৮৫৮.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) দিন তাঁর স্ত্রীদের (উমরা সমাপনের পর) নির্দেশ দিলেন তারা যেন ইহরাম খুলেন। হাফসা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনাকে ইহরাম খুলতে কিসে বাধা দিচ্ছে? তিনি বললেন, আমি মাথার চুল আঠালো করেছি এবং সাথে কুরবানীর পশু এনেছি। অতএব কেউ কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি ইহরাম খুলতে পারি না।

No comments:

Powered by Blogger.