Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ, ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ হাজ্জ -৩য়




পরিচ্ছেদঃ ২২. অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে ইহরাম খোলা জায়েয, কিরান হজ্জের বৈধতা এবং কিরান হজ্জকারীর কেবল এক তাওয়াফ এক সাঈ করা প্রসঙ্গ


২৮৫৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হাঙ্গামা [হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ও আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর মধ্যকার সংঘাত] চলাকালীন সময়ে উমরা করার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি বলেন, বায়তুল্লাহ পৌঁছতে আমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হই তবে (অনুরূপ পরিস্থিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যেরূপ করেছিলাম, এখন তদ্রুপ করব। অতএব তিনি রওনা হলেন এবং উমরার ইহরাম বাঁধলেন, তিনি সফর অব্যাহত রাখলেন; যতক্ষন না আর বায়দা নামক স্থানে পৌছলেন। 

এখানে তিনি নিজের সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের নিয়ম একই। আমি তোমাদের সাক্ষী করছি যে, আমি নিজের জন্য হজ্জকে উমরার সাথে বাধ্যতামূক করলাম। (রাবী বলেন) অতএব তিনি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহ পৌছলেন, সাতবার তাওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করলেন, এর অতিরিক্ত কিছু করেননি এবং নিজের (হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার) জন্য এটাই (এক তাওয়াফ ও এক সাঈ) যথেষ্ট বিবেচনা করলেন এবং কুরবানী করলেন।
২৮৬০.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ এবং সালিম ইবনু আবদুল্লাহ উভয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সাথে কথা বললেন- যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফ আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল। তারা উভয়ে বললেন, এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) না করলে আপনার কি ক্ষতি আছে? কারন আমাদের আশংকা হচ্ছে- গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আপনি বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন না। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, যদি তা আমার ও বায়তুল্লাহ এর মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়ও তবে (অনুরূপ পরিস্থিতিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন, আমিও তদ্রুপ করব। 

কুরায়শ কাফিররা যখন তাঁর ও বায়তুল্লাহর মাঝে প্রতিবন্ধক হয়েছিল, এ সময় আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি উমরার নিয়্যত করলাম। অতঃপর তিনি রওনা হয়ে যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে পৌঁছে উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, যদি আমার পথ উন্মুক্ত থাকে, তবে আমি উমরা পূর্ণ করব। আর যদি আমার ও বায়তুল্লাহ এর মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তবে (অনুরূপ পরিস্থিতিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন আমিও তাই করব। সে সময় আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ” (সুরা আহযাবঃ ২১)। 

তিনি আবার চলতে লাগলেন, যতক্ষন না বায়দার উপকণ্ঠে পৌঁছলেন। এখানে পৌছে তিনি বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার বিধান একই। যদি আমার এবং উমরার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তবে আমার এবং হাজ্জের (হজ্জ) মাঝেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। আমি তোমাদের সাক্ষী করছি যে, আমি আমার উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)কেও বাধ্যতামূলক করে নিলাম। অতঃপর তিনি অগ্রসর হলেন এবং কুদায়দ নামক স্থানে পৌঁছে কুরবানীর পশু ক্রয় করলেন। অতঃপর হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের জন্য এক তাওয়াফ (সাত চক্কর) ও এক সাঈ (সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার দৌড়) করলেন এবং ইহরাম খুললেন না, বরং হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন করে কুরবানীর দিন উভয়ের ইহরাম খুললেন।
২৮৬১.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... নাফি, (রহঃ) থেকে বর্ণিত। হাজ্জাজ যে বছর ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল ঐ বছর ইবনু উমর (রাঃ) হাজ্জের (হজ্জ) সংকল্প করলেন। অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এই সুত্রে হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ আছে যে, তিনি বলতেন, যে ব্যাক্তি হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধল, তার জন্য এক তাওয়াফই (সাত চক্কর) যথেষ্ট এবং উভয়ের অনুষ্ঠান সমাপ্ত না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলবে না।
২৮৬২.    মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফ যে বছর ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল সেই বছর আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হাজ্জে (হজ্জ) যাওয়ার সংকল্প করলেন। তাকে বলা হল, লোকদের মধ্যে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে এবং আমাদের আশংকা হচ্ছে- তারা আপনাকে বাধা দিবে। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ (সূরা আহযাব ২১)। এইরুপ পরিস্থিতিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন, আমিও অনুরূপ করব। আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে নিশ্চয়ই আমি উমরার সংকল্প করেছি। অতঃপর তিনি রওনা হলেন। অবশেষে যখন বায়দার উপকণ্ঠে পৌছলেন তখন তিনি বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার অবস্থা একই, তোমরা সাক্ষী থাক। 

ইবনু রুমহের বর্ণনায় আছে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি নিশ্চয়ই আমার উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ) অনিবার্য করে নিলাম। অতঃপর তিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে নিলেন যা তিনি কুদায়দ নামক স্থানে ক্রয় করেছিলেন। 

অতঃপর তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার একত্রে ইহরাম বেধে অগ্রসর হলেন। অবশেষে মক্কায় পৌঁছে তিনি বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করলেন, এর অতিরিক্ত কিছু করলেন না। তিনি কুরবানীও করেননি। মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটেননি এবং (ইহরামের কারণে) যা কিছু তার জন্য হারাম হয়েছিল তার কোনটি হালাল করেননি। অবশেষে কুরবানীর দিন এলে তিনি কুরবানী করলেন ও মাথা কামালেন এবং তার মত অনুযায়ী তিনি তার প্রথম তাওয়াফ দ্বারাই হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার তাওয়াফ সস্পাদন করে ফেলেন। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।
২৮৬৩.    আবূর-রবী যাহরানী, আবূ কামিল ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... নাফি, সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেন। তবে এ সুত্রে হাদীসের প্রথমাংশে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উল্লেখ করেছেন যখন তাকে বলা হল, আপনি বায়তুল্লাহ পৌছতে বাধাগ্রস্ত হবেন। তখন তিনি বললেন, তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ করেছেন, আমিও তদ্রুপ করব। তিনি হাদীসের শেষে উল্লেখ করেননি যে, "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন"- যেমন লায়স (রহঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. ইফরাদ ও কিরান হজ্জ


২৮৬৪.    ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব ও আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ইয়াহইয়ার রিওয়ায়াতে আছে যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। ইবনু আওন এর রিওয়ায়াতে আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন।
২৮৬৫.    সূরায়জ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। বাকর বলেন, আমি এই হাদীস ইবনু উমর (রাঃ) এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ করেছেন। অতঃপর আমি আনাস (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে তার কাছে ইবনু উমর (রাঃ) এর বক্তব্য উল্লেখ করি। তখন আনাস (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদেরকেও শিশুই মনে কর। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি।
২৮৬৬.    উমায়্যা ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা আদায় করতে দেখেছেন। রাবী বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা শুধু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছি। আমি (বকর) পুনরায় আনাস (রাঃ) এর নিকট ফিরে আসি এবং ইবনু উমর (রাঃ) যা বলেছেন, সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করলাম। আনাস (রাঃ) বললেন, আমরা বুঝি তখন শিশু ছিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. হাজিদের জন্য তাওয়াফে কুদুম, অতঃপর সাঈ মুস্তাহাব


২৮৬৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ওয়াবারা (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি তার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, আল-মাওকিফ (আরাফাত) এ যাওয়ার পূর্বে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা আমার জন্য সঠিক হরে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, কিন্তু ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তুমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ কর না যে পর্যন্ত না মাওকিফে আস। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন এবং মাওকিফে যাওয়ার পূর্বেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। অতএব তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে বল, তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথামত আমল করা উচিত, না ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কথা মত?
২৮৬৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ওয়াবারা (রহঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করব অথচ আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছি? তিনি বললেন, কিসে তোমাকে বাঁধা দিচ্ছে? সে বলল, আমি অমুকের পুত্রকে দেখেছি, তিনি তা পছন্দ করেন না ।কিন্তু তার তুলনায় আপনি আমাদের অধিক প্রিয়। আমরা লক্ষ্য করছি যে, এই দুনিয়া তাকে প্রলুব্ধ করেছে। 

ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যাকে দুনিয়া প্রলূব্ধ করেনি? অতঃপর তিনি বললেন, আমরা দেখেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করেছেন। অতএব তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর হুকুম ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অমুকের সুন্নাতের তুলনায় অনুসরণের বেলায় অগ্রগণ্য।

পরিচ্ছেদঃ ২৫. উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীর জন্য তাওয়াফের পরে সাঈর পূর্বে ইহরাম খোলা জায়েয নয়। হজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরামকারীও তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম খুলতে পারবে না। কিরান হজ্জকারীর হুকুমও অনুরূপ


২৮৬৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আমর ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট এক লোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে উমরা করার উদ্দেশ্যে আগমণ করেছে, অতঃপর বায়লাহ তাওয়াফ করেছে কিন্তু সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করেনি- সে কি তার স্ত্রীর সাথে মিলতে পারে? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমণ করে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু'রাকআত সালাত আদায় করেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করেন। আর তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
২৮৭০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৮৭১.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইরাকের অধিবাসী এক ব্যাক্তি তাকে বলল, আমার পক্ষ থেকে আপনি উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করুন যে, এক ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল, সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পর ইহরাম খুলতে পারবে কিনা? তিনি যদি আপনাকে বলেন, সে ইহরাম খুলতে পারবে না তবে তাকে বলুন এক ব্যাক্তি বলেছে, সে ইহরাম খুলতে পারবে। রাবী বলেন, অতএব আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, যে ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছে, সে তা সমাধান না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারবে না। আমি বললাম, কিন্তু এক ব্যাক্তি তাই বলেছে। তিনি বললেন, সে যা বলছে তা দুঃখজনক। 

ইরাকের লোকটি আমার সাথে পুনরায় সাক্ষাত করলে আমি তাকে উপরোক্ত কথা বললাম। সে বলল, আপনি তাকে বলুন, কিন্তু এক ব্যাক্তি বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করেছেন এবং আসমা (রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ) অনুরূপ করেছেন কেন? রাবী বলেন, আমি তার নিকট গিয়ে এই বিষয় তাকে জানাই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটি কে? আমি বললাম, জানি না। তিনি বললেন, তার কি হয়েছে যে, সে নিজে আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করছে না? আমার মনে হয়, সে ইরাকী। আমি বললাম, জানি না। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা শরীফে পৌছে সর্বপ্রথম যে কাজ করেছেন তা ছিল এই যে, তিনি উযু করেন, এরপর বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করেছেন, অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন। তিনি (মক্কায় পৌছে) সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করেছেন। এবং এরপর উমর (রাঃ)-ও অনুরূপ করেছেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন। আমি তাকে সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করতে দেখেছি এবং এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর মুআবিয়া (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-ও (অনুরূপ করেছেন)। এরপর আমি আমার পিতা যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) এর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। তিনিও সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করেছেন। এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর আমি মুহাজির ও আনসারদের অনুরূপ করতে দেখেছি। এছাড়া তারা অন্য কিছু করেননি। 

অতঃপর সর্বশেষে আমি যাকে অনুরূপ করতে দেখেছি, তিনি হচ্ছেন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)। তিনি হাজ্জ (হজ্জ) কে উমরা দ্বারা ভঙ্গ করেননি। আর সেই ইবনু উমর (রাঃ) তোমাদের মধ্যে বর্তমান আছে। তারা কেন তাকে জিজ্ঞাসা করছে না? 

এভাবে যত লোক অতীত হয়েছে, তারা মক্কা শরীফে পা রেখেই সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করতেন। অতঃপর তারা ইহরাম খুলতেন না। আর আমি, আমার মা আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) ও আমার খালা আয়িশা (রাঃ)-কেও দেখেছি যে, তারা মক্কায় পৌঁছে প্রথমেই বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করেছেন। এরপর ইহরাম খুলেননি। আমার মা (আসমা) আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি তার বোন (আয়িশা), যুবায়র (রাঃ) এবং অমুক অমুক শুধুমাত্র উমরার ইহরাম বেধে মক্কায় এসেছেন এবং তারা (তাওয়াফ ও সাঈর পরে) রুকন (হাজারে আসওয়াদ) চুম্বন করার পর ইহরাম খুলেছেন। এই ব্যাক্তি (ইরাকী) এ ব্যাপারে যা বলেছে, মিথ্যা বলেছেন।
২৮৭২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন ইহরাম অবস্থায় থাকে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আমার সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, তাই আমি ইহরাম খুলে ফেললাম। কিন্তু (আমার স্বামী) যুবায়র (রাঃ) এর সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তাই তিনি ইহরাম খুলেননি। রাবী বলেন, আমি আমার স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে বের হয়ে গিয়ে যুবায়র (রাঃ) এর পাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার নিকট থেকে উঠে যাও। আমি বললাম, তুমি কি আকাঙ্খা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়ব?
২৮৭৩.    আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আরারী (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে (মক্কায়) পৌছলাম। অবশিষ্ট বর্ণনা ইবনু জুরায়জের হাদীসের অনুরূপ। তবে এই বর্ণনায় আছে, যুবায়র (রাঃ) বললেন, “তুমি আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাও, দুরে সরে যাও।” আমি (আসমা) বললাম, "তুমি কি আশংকা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়ব?"
২৮৭৪.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। আসমা (রাঃ) যখনই আল হাজুন (হারাম শরীফের সীমার মধ্যে মক্কার উচ্চভূমিতে একটি পাহাড়) অতিক্রম করতেন, তখনই তিনি তাকে বলতে শুনতেন, সাল্লাল্লাহু আলা রাসুলিহী (আল্লাহ তা’আলা তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুগ্রহ করুন)। আমরা তার সঙ্গে এখানে অবতরণ করেছিলাম, আমাদের বোঝা ছিল কম, বাহনের সংখ্যা অত্যল্প এবং রসদও ছিল সামান্য। আমি, আমার বোন আয়িশা (রাঃ), যুবায়র (রাঃ) এবং আরও অমুক অমুক উমরা পালন করেছিলাম। আমরা যখনই বায়তূল্লাহ স্পর্শ করলাম, তখনই ইহরাম খুলে ফেললাম। এরপর তিনি তৃতীয় বিকালে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। অধস্তন রাবী হারুন তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, "আসমা (রাঃ) এর মুক্ত দাস" তিনি 'আবদুল্লাহ' নাম উল্লেখ করেননি।
২৮৭৫.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... মুসলিম কুররী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি তার অনুমতি দিলেন কিন্তু ইবনু যুবায়র তা নিষেধ করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এই তো ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর মা, তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা করার অনুমতি দিয়েছেন। তোমরা তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা কর। রাবী বলেন, আমরা তার কাছে গেলাম, তিনি ছিলেন স্থুলদেহী এবং তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) অনুমতি দিয়েছেন।
২৮৭৬.    ইবনু মূসান্না আবদুর রহমান থেকে এবং ইবনু বাশশার (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবন জা'ফার থেকে আর তারা উভয়ে ... শু’বা (রহঃ) থেকে এই সুত্রে বর্ণনা করেছেন। আবদুর রহমানের বর্ণনায় 'আল-মুত'আ' উল্লেখ আছে 'মুত-আতুল-হাজ্জ' নয় এবং ইবনু জাফর (রহঃ) এর বর্ণনায় শুবা (রহঃ) বলেন, মুসলিম কুররী (রহঃ) বলেছেন, তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) না মুত'আ বিবাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা আমি জানি না।
২৮৭৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... মুসলিম কুররী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তিনি উমরার ইহরাম বাধলেন এবং তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তারা ইহরাম খোলেননি অন্যরা (তাওয়াফ ও সাঈর পর) ইহরাম মুক্ত হয়ে গেলেন। যারা সাথে কুরবানীর পশু এনেছিলেন, তালহা (রাঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অতএব তিনিও ইহরাম খোলেননি।
২৮৭৮.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে তার বর্ণনায় হাদীসের শেষাংশ এইরূপঃ "যাদের সাথে কুরবানার পশু ছিল না, তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এবং আরও এক ব্যাক্তি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অতএব তারা উভয়ে ইহরাম খুলে ফেলেন।"

পরিচ্ছেদঃ ২৬. হজ্জের মাসসমুহে উমরা পালন করা জায়েয


২৮৭৯.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জাহেলী যুগে লোকেরা হাজ্জের (হজ্জ) মাসসমূহে উমরা পালন করাকে পৃথিবীর বুকে সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধ মনে করত এবং মুহাররম মাসকে সফর মাস হিসেবে গণনা করত। তারা বলত, যখন উটের পিঠ ভালো হয়ে যাবে, হাজীদের পদচিহ্ন লুপ্ত হয়ে যারে এবং সফর মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন যে ব্যাক্তি উমরা করতে চায়, তার জন্য তা করা জায়েয হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে যিলহাজ্জের (হজ্জ) চার তারিখে মক্কায় পৌঁছলে তিনি তাদের হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এই নির্দেশ তাদের কাছে গুরুতর কাজ বলে মনে হল। অতএব তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! কি রকমের হালাল হব? তিনি বললেন, সব রকমের হালাল।
২৮৮০.    নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূল আলিয়া আল বাররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন। তিনি যিলহাজ্জ মাসের ৪ তারিখের পর (মক্কা) পৌঁছলেন এবং ফজরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি এই ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করতে চায়, সে তা করতে পারে।
২৮৮১.    ইবরাহীম ইবনু দীনার, রাওহ থেকে আবূ দাঊদ মূবারকী আবু শিহাব থেকে ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ইয়াহইয়া ইবন কাসীর থেকে এবং তারা সকলে শুবা (রহঃ) থেকে। এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। রাওহ ও ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) এর বর্ণনায় নাসর (রহঃ) এর অনুরূপ কথা আছেঃ "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন।" 

আবূ শিহাব (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে “আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম।” 

তাদের সকলের বর্ণনায় আছেঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল-বাতহা নামক স্থানে ফজরের সালাত আদায় করলেন। কিন্তু আল জাহযামী (রহঃ) এর বর্ননায় এ কথার উল্লেখ নাই।
২৮৮২.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে (যিলহাজ্জ মাসের প্রথম) দশ দিনের চার দিন অতিবাহিত হওয়ার পর মক্কায় উপনীত হন। তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন এই ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করে।
২৮৮৩.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যি-তুওয়া নামক স্থানে ফজরের সালাত আদায় করলেন। যিলহাজ্জ মাসের চার দিন অতিক্রান্ত হইয়ার পর (মক্কায়) পৌঁছলেন এবং তাঁর সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন নিজেদের ইহরামকে উমরায় পরিণত করে কিন্তু যার সাথে কুরবানীর পশু আছে, সে ব্যতীত।
২৮৮৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এই সেই উমরা যা থেকে আমরা লাভবান হয়েছি। অতএব যার সাথে কুরবানীর পশু নেই সে যেন সম্পূর্ণরূপে ইহরাম খুলে ফেলে। কেননা উমরাকে কিয়ামত পর্যন্ত হাজ্জের (হজ্জ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২৮৮৫.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ যামরা যুবাঈ (রহঃ) বলেন, আমি তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করলাম। কতিপয় লোক আমাকে তা করতে নিষেধ করল। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা করার নির্দেশ দিলেন। এরপর আমি বায়তূল্লাহ শরীফে আসলাম এবং ঘূমালাম। স্বপ্নে আমার কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, উমরাও কবুল হয়েছে এবং হাজ্জ (হজ্জ)ও কবুল হয়েছে। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে এ স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার! এতো আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত।

পরিচ্ছেদঃ ২৭. ইহরাম বাঁধার সময় কুরবানীর পশুর কুজের কিছু অংশ ফেড়ে দেওয়া এবং গলায় মালা পরানো


২৮৮৬.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর নিজের (কুরবানীর) উষ্ট্রী নিয়ে আসতে বললেন এবং কুজের ডান দিক দিয়ে ফেঁড়ে দিলেন। ফলে রক্ত প্রবাহিত হল। অতঃপর উষ্ট্রী এর গলায় দু'টি পাদুকার মালা পরিয়ে দিলেন। এরপর নিজের বাহনে আরোহণ করলেন। তারপর তা যখন তাঁকে নিয়ে আল বায়দায় পৌছলেন, তখন তিনি হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ করলেন।
২৮৮৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে এই সূত্রে শুবা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য তিনি এখানে বলেছেনঃ "যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফা এলেন” তবে “যোহরের সালাত আদায় করেছেন” এ কথা উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ২৮. পরিচ্ছেদ নাই


২৮৮৮.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হাসসান আ'রাজ কে বলতে শুনেছি, আল হুযায়ম গোত্রের এক ব্যাক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলল, আপনি এ কি ফাতওয়া দিচ্ছেন যা নিয়ে লোকেরা জটিলতায় পড়েছে? (তা এই) যে ব্যাক্তি বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করবে, সে ইহরামমুক্ত হতে পারবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত, তা তোমাদের মনপূত হোক বা না হোক।
২৮৮৯.    আহমদ ইবনু সাঈদ দারিমী (রহঃ) ... আবূ হাসসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলা হল, এই ব্যাপারটি লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, যে ব্যাক্তি বায়তুল্লা -এর তাওয়াফ করে, সে হালাল হয়ে যায় এবং তার ইহরাম উমরায় পরিণত হয় (যদিও হাজ্জের ইহরাম হয়ে থাকে)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত যদিও তোমাদের নাক ধূলি মলিন হয়।
২৮৯০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আতা (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন, যে ব্যাক্তি (মক্কায় পৌছে) বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করল, সে ইহরাম মুক্ত হয়ে গেল- চাই সে হাজ্জ (হজ্জ) পালনকারী হোক অথবা অন্য কিছু (উমরা) পালনকারী। আমি (ইবনু জুরায়জ) আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কিসের ভিত্তিতে একথা বলেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কালামের ভিত্তিতেঃ "অতঃপর এগুলোর কুরবানীর স্থান মর্যাদাবান ঘরের নিকট" (সূরা হাজ্জঃ ৩৩)। আমি বললাম, তা তো আরাফাত থেকে ফিরার পর। তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন, (কুরবানীর স্থান সম্মানিত ঘরের নিকট) তা আরাফাতে উকূফের পর হোক অথবা পূর্বে। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কার্যক্রম থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়ে ইহরাম খোলার নির্দেশ দেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৯. উমরা পালনকারীর জন্য মাথার চুল খাটো করা জায়েয, মাথা মুড়ানো ওয়াজিব নয়। মারওয়া পর্বতের নিকট মাথা মুন্ডান বা চুল খাটো করা মুস্তাহাব


২৮৯১.    আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, মু'আবিয়া (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জান আমি কাঁচি দিয়ে মারওয়া পাহাড়ের নিকট রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার চুল ছেঁটে দিয়েছি? আমি তাঁকে বললাম, এটা আপনার বিরুদ্ধে দলীল।
২৮৯২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) তাকে অবহিত করে বলেছেন, আমি মারওয়া পাহাড়ে একটি কাঁচির সাহায্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার চুল ছেঁটে দিয়েছি। অথবা আমি (অধস্তন রাবীর সন্দেহ) মারওয়া পাহাড়ের উপর কাচির সাহায্যে তার মাথার চুল ছাঁটতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৩০. হজ্জে তামাত্তু ও কিরান উভয়ই জায়েয


২৮৯৩.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরি (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের তালবিয়া পাঠ করতে করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা মক্কায় পৌছলে তিনি আমাদের তা উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন। তালবিয়ার দিন এলে আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওনা হলাম।
২৮৯৪.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) ও আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ করতে করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মক্কায় উপনীত হলাম।
২৮৯৫.    হামিদ ইবনু উমর বাকরাবী (রহঃ) ... আবূ নাদরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যাক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, (তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) ও মুতআ বিবাহ) সম্পর্কে ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর মধ্যে মতবিরোধ চলছে। জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তা করেছি। এরপর উমর (রাঃ) আমাদের তা করতে নিষেধ করেন। অতএব আমরা আর কখনও তা করিনি।
২৮৯৬.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ইয়েমেন থেকে আগমণ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরূপ উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি (উমরা করার পর) ইহরাম খুলে ফেলতাম।
২৮৯৭.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির ও আবদুল্লাহ ইবন হাশিম (রহঃ) ... সালীম ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৮৯৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছিঃ "লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান, লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান"
২৮৯৯.    আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমি উমরা ও হাজ্জ (হজ্জ) উভয়ের ইহরাম বাঁধছি।
২৯০০.    সাঈদ ইবনু মানসুর, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মরিয়ম পূত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম) নিশ্চিত রাওহা উপত্যকায় হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা অথবা উভযের তালবিয়া পাঠ করবেন।
২৯০১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণ। ”
২৯০২.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ...... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ৩১. নবী (ﷺ) এর উমরার সংখ্যা ও সময়


২৯০৩.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার উমরা করেছেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) সাথের উমরা ব্যতীত সকল উমরাই যুল-কা'দায় করেন। (১) হুদায়বিয়া থেকে বা হুদায়বিয়ার সময়ের উমরা যুল-কা'দা মাসে, (২) পরবর্তী বছরের উমরা যুল-কা'দা মাসে, (৩) জিরানা থেকে কৃত উমরা, যেখানে হুনায়নের গনীমতের সম্পদ বণ্টন করা হয়েছিল, সে উমরা যুল-কা'দা মাসে এবং (৪) আর একটি উমরা যা হাজ্জের (হজ্জ) সাথে করেন।
২৯০৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন? তিনি বললেন, একবার এবং উমরা করেছেন চারবার। ...... অবশিষ্ট বর্ণনা হাদ্দাবের হাদীসের অনুরূপ।
২৯০৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থেকে কয়বার যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, সতেরবার। রাবী বলেন, সায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) আমাকে আরও বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনিশবার যুদ্ধ করেছেন এবং তিনি হিজরত করার পর একবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন, তা হল বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)। আবূ ইসহাক আরও বলেন, তিনি মক্কা থেকেও একবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন।
২৯০৬.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি ও ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর ঘরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসা ছিলাম। তখন আমরা মিসওয়াক দিয়ে তার দাঁত মাজার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ আবদুর রহমান ইবনু উমর)! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি রজব মাসে উমরা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি (উরওয়া) বললাম, হে আম্মা, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আবূ আব্দুর রহমান কি বলছেন? তিনি বললেনঃ সে কি বলছে? আমি বললাম, তিনি বলছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে উমরা করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আবূ আবদুর রহমানকে ক্ষমা করুন। আমার জীবনের শপথ, তিনি রজব মাসে কখনও উমরা করেননি। আর তিনি যখনই উমরা করেছেন, অবশ্যই আবূ আবদুর রহমান তাঁর সঙ্গে ছিল। রাবী বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) কথাগুলো শুনছিলেন, কিন্তু তিনি হ্যাঁ-ও বলেননি এবং না-ও বলেননি, বরং নীরব ছিলেন।
২৯০৭.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও উরওয়া ইবনু যুবায়র মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশার (রাঃ) এর হুজরায় বসা ছিলেন এবং লোকেরা মসজিদে চাশতের সালাত আদায় করছিল। আমরা এদের সালাত সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তা বিদআত। তাকে উরওয়া বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার উমরা করেছেন? তিনি বললেনঃ চারটি উমরা, এর একটি রজব মাসে। আমরা তার কথা অসত্য মনে করা ও তা রদ করা অপছন্দ করলাম। আমরা হুজরা থেকে আয়িশা (রাঃ) এর মিসওয়াক করার শব্দ শুনতে পেলাম। উরওয়া বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আবূ আবদুর রহমান কি বলেছেন তাকি আপনি শুনছেন না? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি বলে? উরওয়া বললেন, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার উমরা করেছেন, এর একটি ছিল রজব মাসে। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তাআলা আবূ আবদুর রহমানকে রহম করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই উমরা করেছেন, সে তার সাথেই ছিল। তিনি কখনও রজব মাসে উমরা করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ৩২. রমযান মাসের উমরার ফযীলত


২৯০৮.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি এক আনসারী মহিলাকে বললেন যার নাম ইবনু আব্বাস (রাঃ) উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আমি তার নাম ভুলে গেছি- আমাদের সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমাকে কিসে বাঁধা দিল? মহিলা বলল, আমাদের পানি বহনকারী মাত্র দুটি উট আছে। আমার ছেলের বাপ (স্বামী) ও তার ছেলে এর একটিতে চড়ে হাজ্জ (হজ্জ) করেন এবং অপরটি আমাদের জন্য রেখে যান পানি বহনের উদ্দেশ্যে। তিনি বললেন, রমযান মাস এলে তুমি উমরা কর। কারণ এ মাসের উমরা একটা হজ্জের সমান।
২৯০৯.    আহমাদ ইবনু আবদা যাব্‌বী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সিনান এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? মহিলা বলল, অমুকের পিতা- অর্থাৎ তার স্বামীর দুটি পানি বহনকারী উট আছে। এর একটি নিয়ে সে ও তার ছেলে হজ্জে গিয়েছে। অপরটির সাহায্যে আমাদের গোলাম পানি বহন কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে রমযান মাসের উমরা-হজ্জের সমান কিংবা তিনি বলেছেন, আমাদের সঙ্গে একটি হজ্জের সমান।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. উচ্চ গিরিপথ দিয়ে মক্কায় প্রবেশ, নিম্নপথ দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান এবং যে পথ দিয়ে শহর থেকে বের হয়েছে তার বিপরীত পথ দিয়ে সেখানে প্রবেশ করা মুস্তাহাব


২৯১০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাজারার পথ দিয়ে (মদিনা থেকে) বের হতেন এবং মুআর্‌রাশ এর পথ দিয়ে সেখানে প্রবেশ করতেন। তিনি মক্কায় প্রবেশকালে উচ্চ গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং নিম্ন পথ দিয়ে বের হতেন।
২৯১১.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু রাবী বলেন, যুহায়রের রিওয়ায়াতে রয়েছে বাতহার দিকের উচ্চপথ।
২৯১২.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় পৌঁছলেন, তখন উচ্চ এলাকা দিয়ে প্রবেশ করলেন এবং নীচু এলাকা দিয়ে বের হলেন।
২৯১৩.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর মক্কার উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত 'কাদা'-র দিক দিয়ে প্রবেশ করেন। হিশাম বলেন, আমার পিতা উভয় স্থান দিয়েই প্রবেশ করতেন, তবে অধিকাংশ সময় “কাদা” টিলা দিয়ে প্রবেশ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. মক্কায় প্রবেশের সংকল্প করলে যি-তুওয়াতে রাত যাপন করা এবং গোসল করে দিনের বেলা মক্কায় প্রবেশ করা মুস্তাহাব


২৯১৪.    যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইয়াহইয়া থেকে তিনি উবায়দুল্লাহ থেকে তিনি নাফি' থেকে এবং তিনি ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যু-তুওয়া নামক স্থানে ভোর পর্যন্ত রাত্রি যাপন করলেন, অতঃপর মক্কায় প্রবেশ করলেন। নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ)-ও তাই করতেন। ইবনু সাঈদের বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে ফজরের সালাত আদায় করলেন। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, অথবা তিনি (উবায়দুল্লাহ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করলেন।
২৯১৫.    আবূর-রবী যাহরানী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু উমর (রাঃ) যু-তুওয়ায় ভোর পর্যন্ত রাত যাপন না করে মক্কায় উপনীত হতেন না। তিনি (সেখানে) গোসল করতেন, তারপর দিনের বেলায় মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই করতেন বলে তিনি বলেছেন।
২৯১৬.    মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মূসায়্যাবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমণ করলে প্রথমে যু-তুওয়ায় অবতরণ করতেন, সেখানে রাত যাপন করতেন এরপর ফজরের সালাত আদায় করতেন (তারপর মক্কা শহরে প্রবেশ করতেন)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই সালাতের স্থান ছিলো একটি অসমতল টিলার উপর, সেখানে নির্মিত মসজিদে নয়, বরং নিম্নদিকে অবস্থিত টিলায়।
২৯১৭.    মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মূসায়্যাবী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও কাবার পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত দুই উপত্যকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। টিলার পার্শ্বে নির্মিত মসজিদ তাঁর বাঁ দিকে থাকত। রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের স্থান এই কালো টিলার পাদদেশে দশ হাত বা তার চেয়ে সামান্য কমবেশি দুরত্বে অবস্থিত ছিল। তিনি দুই টিলার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করলেন যা তাঁর ও কাবার পার্শ্ববর্তী বড় পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত ছিল। তাঁর উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. উমরার তাওয়াফে এবং হজ্জের প্রথম তাওয়াফে রামাল (দ্রুত পদক্ষেপে অতিক্রম) করা মুস্তাহাব


২৯১৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ শরীফ প্রথমবারের তাওয়াফে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক পদক্ষেপে তাওয়াফ করতেন। তিনি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈর সময় (বাতনুল মাসীল) মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়াতেন। ইবনু উমর (রাঃ)-ও তাই করতেন।
২৯১৯.    মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে মক্কায় পৌছে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার জন্য বায়তুল্লাহর যে তাওয়াফ করতেন, তাতে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক পদক্ষেপে সম্পন্ন করতেন। তাপর দু'রাকাআত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করতেন।
২৯২০.    আবূত-তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি দেখেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌঁছে যখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতেন, তখন তিনি সাত চক্করের মধ্যে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে সমাধা করতেন।
২৯২১.    আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু আবান আল জুফী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করেছেন।
২৯২২.    আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদ থেকে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপে তাওয়াফ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।
২৯২৩.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ থেকে রমল করেছেন তিন চক্কর এবং হাজারে আসওয়াদে পৌঁছে শেষ করেছেন।
২৯২৪.    আবূত-তাহির (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ থেকে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন তাওয়াফে রমল করেছেন।
২৯২৫.    আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ... আবুত-তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেসা করলাম, বায়তুল্লাহ চারদিক তিনবার রমল করা এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে প্রদক্ষিণ করা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা তা সুন্নাত মনে করে। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও বলেছে। রাবী বলেন, আমি পূনরায় জিজ্ঞাসা করলাম- “তারা সত্য বলেছে এবং অসত্য বলেছে” - আপনার এ কথার ব্যাখ্যা কি? 

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমণ করলে মুশরিকরা বলল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরা শারীরিক দুর্বলতার কারণে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে সক্ষম হবে না। তারা তাঁর প্রতি হিংসা পোষণ করত। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণকে তিনবার রমল করতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে তাওয়াফ করার নির্দেশ দেন। 

আমি তাঁকে (পুনরায়) বললাম, আপনি আমাকে সাফা-মারওয়ার মাঝে সওয়ার অবস্থায় প্রদক্ষিণ সম্পর্কে অবহিত করুন, তা কি সুন্নাত? কারণ আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা মনে করে তা সুন্নাত। বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্য বলেছে। 

আমি তাকে বললাম, “তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও বলেছে” আপনার এ কথার ব্যাখ্যা কি? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলেন। তাঁর আশেপাশে প্রচুর লোক সমাগম হলো। এমনকি যুবতী মেয়েরা পর্যন্ত (তাঁকে একটু দেখার জন্য) ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। লোকেরা বলাবলি করছিল, মুহাম্মাদ, ইনি মুহাম্মাদ। রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে লোকদের প্রহার করা হতো না। তাঁর আশেপাশে প্রচুর লোক সমাগম হওয়ার কারণে তিনি (উষ্ট্রীতে) আরোহণ করেন, অথচ স্বাভাবিক গতিতে পদব্রজে যাওয়া ও সাঈ করা উত্তম।
২৯২৬.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... জুয়ায়রী (রহঃ) সূত্রে অত্র সনদে অনুরূপ বর্ণিত। তিনি বলেন, "মক্কাবাসী হিংসুক সম্প্রদায়।" তবে তিনি يَحْسُدُونَهُ (তারা তাঁকে হিংসা করত) বলেননি।
২৯২৭.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূত-তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, আপনার সম্প্রদায় বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর তাওয়াফে ও সাফা-মারওয়ার সাঈতে রামাল করেছেন, আর এটা সূন্নাত। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং এবং অসত্য বলেছে।
২৯২৮.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূত-তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখছি। তিনি বললেন, আমার কাছে তাঁর বিবরণ পেশ কর। তিনি বললেন, আমি তাকে মারওয়ার নিকট একটি উষ্ট্রীর পিঠে আরহন দেখেছি। তাঁর চারপাশে লোকের ভীড় ছিল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তিনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারণ সাহাবাদের তাড়িয়ে দেয়া হতো না এবং তাদের ধমকও দেয়া হতোনা।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬. তাওয়াফের সময় দুই রুকনে ইয়ামানীতে চুম্বন করা মুস্তাহাব, অপর দুই শামী রুকন ব্যতীত


২৯২৯.    আবূর-রবী যাহরানী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ মক্কায় আগমণ করলেন। ইয়াসরিবের জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছিল। মুশরিকরা বলল, আগামীকাল তোমাদের এখানে একদল লোক আসবে- যাদেরকে জ্বরে দুর্বল করে দিয়েছে এবং তারা তাতে ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। মুশরিকরা হাতীম সংলগ্ন স্থানে বসে থাকল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন তিন চক্করে রমল করে এবং হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে স্বাভাবিক গতিতে চলে-যাতে মুশরিকদেরকে তাদের বীরত্ব দেখানো যায়। মুশরিকরা বলল, তোমরা তো এদের সম্পর্কে ধারণা করেছিলে যে, জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে অথচ তারা এমন শক্তিশালী। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দয়া পরবশ হয়ে তাদেরকে সাত চক্করে রমল করতে নির্দেশ দেননি (যাতে তারা ক্লান্ত হয়ে না যায়)।
২৯৩০.    আমরুন-নাকিদ, ইবনু আবূ উমর ও আহমদ ইবনু আবদাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপে বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করেছেন-যাতে তিনি মুশরিকগণকে স্বীয় শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন।
২৯৩১.    ইয়াহইয়া ইবনুু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল ইয়ামানী রুকন দু'টিই স্পর্শ করতে দেখেছি।
২৯৩২.    আবূত-তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তার পিতার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকনে আসওয়াদ (হাজারে আসওয়াদ সংযুক্ত কোণ) এবং তৎসংলগ্ন দিকের কোণ যা জুমাহী গোত্রের বসতির দিকে অবস্থিত, ব্যতীত বায়তুল্লাহর আর কোন রুকন স্পর্শ করতেন না।
২৯৩৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (ইবনু উমর) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে অসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত আর কিছু স্পর্শ করতেন না।
২৯৩৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, জুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এই দুই রুকন অর্থাৎ ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ কোণ স্পর্শ করা পরিত্যাগ করিনি- যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা স্পর্শ করতে দেখেছি। তা কষ্টকর বা সুবিধাজনক যে কোন অবস্থায় হোক না কেন।
২৯৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে হাজারে আসওয়াদ স্বহস্তে স্পর্শ করে তাতে চুমূ খেতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যেদিন তা করতে দেখেছি, তখন থেকে আমি তা কখনো পরিত্যাগ করিনি।
২৯৩৬.    আবূত-তাহির (রহঃ) ... আবূ তুফায়ল বাকরী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত কখনও অন্য কিছু স্পর্শ করতে দেখিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তাওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করা মুস্তাহাব


২৯৩৭.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে। তার পিতা তাকে বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। অনুরূপ একটি হাদীস যায়দ ইবনু আসলাম থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত হয়েছে।
২৯৩৮.    মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দমী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে চুম্বন করছি বটে কিন্তু অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর পাত্র। কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে দেখেছি।
২৯৩৯.    খালফ ইবনু হিশাম, মুকাদ্দমী, আবূ কামিল ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি টাক মাথাওয়ালা অর্থাৎ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে কালো পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে চুন্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।
২৯৪০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবিস ইবনু রবীআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন আমি অবশ্যই তোমায় চুম্বন করছি এবং আমি জানি যে, তুমি অবশ্যই একটি পাথর। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি কখনও তোমায় চুম্বন করতাম না।
২৯৪১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সুয়ায়দ ইবনু গাফলা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে এবং তা জড়িয়ে ধরতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, আমি তোমার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গভীর ভালোবাসা লক্ষ্য করেছি।
২৯৪২.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... সুফয়ান (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, কিন্তু আমি আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করতে দেখেছি। এই বর্ণনায় "তিনি তা জড়িয়ে ধরলেন" কথার উল্লেখ নাই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮. উট ও অন্যান্য সাওয়ারীতে আরোহণ করে তাওয়াফ করা এবং আরোহীর জন্য লাঠি ইত্যাদির সাহায্যে পাথর স্পর্শ করা জায়েয


২৯৪৩.    আবূত-তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটে সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং একটি ছড়ির (মিহযান) সাহায্যে রুকন (পাথর) স্পর্শ করেন।
২৯৪৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীর উপরে থেকে (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করেন এবং তাঁর ছড়ির সাহায্যে পাথর স্পর্শ করেন- যেন লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়। তিনি উঁচুতে থাকেন যাতে তারা তাঁকে মাসআলা-মাসায়েল জিজ্ঞাসা করতে পারে, কেননা তিনি লোকদ্বারা বেষ্টিত ছিলেন।
২৯৪৫.    আলী ইবনু খাশরম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করেছেন- যাতে লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়; তিনি সবার উপরে থাকেন এবং তাঁর নিকট তারা (প্রয়োজনীয় বিষয়) জিজ্ঞাসা করতে পারে। কারণ লোকেরা তাঁকে বেষ্টন করে রেখেছিল। ইবনু খাশরম কেবল “তারা যেন তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারে” কথাটুকুর উল্লেখ করেননি।
২৯৪৬.    হাকাম ইবনু মূসা কানতারী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটে সওয়ার হয়ে কা'বার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করেন এবং রুকন স্পর্শ করেন- লোকদের তার নিকট থেকে হটিয়ে দেয়াটা অপছন্দ হওয়ার কারণে।
২৯৪৭.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... মারুফ ইবনু খাররাবুয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূত-তুফাহাল (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে, তার সাথের লাঠি দিয়ে রুকন স্পর্শ করতে এবং লাঠিতে চুম্বন করতে দেখেছি।
২৯৪৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উম্মু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার অসুস্থতার কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ তুমি সওয়ারী অবস্থায় লোকদের পেছনে থেকে তাওয়াফ কর। উম্মু সালমা (রাঃ) বলেন, আমি (সেভাবে) তাওয়াফ করলাম- তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর পাশে সালাত আদায় করছিলেন। আর তিনি তাতে তিলাওয়াত করছিলেনঃ আত-তূর, ওয়া কিতাবিম-মাসতূর।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯. সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়ানো (সাঈ) হজ্জের অন্যতম রুকন, এ ছাড়া হজ্জ শুদ্ধ হয় না


২৯৪৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে তার পিতা সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম, আমি মনে করি কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ না করলে তার কোন ক্ষতি হবে না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কেন? আমি বললাম, কেননা আল্লাহ তা-আলা বলেছেনঃ সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম... এ দুটোর তাওয়াফ করলে কোন ক্ষতি নেই (সূরা বাকারাঃ ১৫৮)। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করলে আল্লাহ তার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা পূর্ণ করেন না। 

তুমি যা বলেছ যদি তাই হতো তবে আয়াতটি এভাবে হতোঃ “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন অসুবিধা নেই।” তুমি কি জান ব্যাপারটি কী? ব্যাপার তো ছিল এই যে, আনসারগণ জাহেলী যুগে দুটি প্রতিমার নামে সমূদ্রের তীরে ইহরাম বাঁধত। একটির নাম ইসাফ, অপরটির নাম নায়েলা। তারা এসে সাফা-মারওয়া সাঈ করত। অতঃপর মাথা কামাতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা জাহেলী যুগে যা করত, সে কারণে সাফা-মাওয়ার মাঝে সাঈ করা খারাপ মনে করল। তাই আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেনঃ "সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, এ দুটোর তাওয়াফ করলে কোন ক্ষতি নেই" অতঃপর লোকেরা সাঈ করে।
২৯৫০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম, আমি যদি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করি তবে এতে আমার জন্য কোন দোষ মনে করি না। তিনি বললেন, কেন? আমি বললাম, কেননা মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম......।” তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, তুমি যেরূপ বলছ, যদি তাই হতো, তবে আয়াতের বক্তব্য এরূপ হতোঃ “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন দোষ নেই।” 

এ আয়াত আনসারদের সম্পর্কে নাযিল করা হয়। জাহেলী যুগে তারা যখন ইহরাম বাঁধত- তা বাঁধত মানাত দেবীর নামে। তাই তারা মনে করত যে, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা তাদের জন্য ঠিক নয়। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে (বিদায়) হজ্জে এসে তাঁর নিকট এই বিষয়ে উল্লেখ করলে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। অতএব আমার জীবনের শপথ! যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করে- আল্লাহ তার হাজ্জ (হজ্জ) পূর্ণ করবেন না।
২৯৫১.    আমরুন নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) কে বললাম, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করলে এতে আমি দোষের কিছু দেখি না এবং আমি নিজেও এতদুভয়ের মাঝে সাঈ বর্জন করায় কিছু মনে করি না। আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে বোনপূত্র! তুমি যা বলেছ তা মন্দ বলেছ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাফা-মারওয়ার মাঝে) তাওয়াফ (সাঈ) করেছেন এবং মুসলমানরাও তাওয়াফ করেছ। অতএব তা সুন্নাত। যে সব লোক (জাহিলি যুগে) মেশাল্লাল এ অবস্থিত মানাত দেবীর নামে ইহরাম বাঁধত, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করত না। ইসলামের আবির্ভাবের পর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তখন আল্লাহ তা,আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেনঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ কাবা ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা পালন করে, এ দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ করলে কোন পাপ নেই (সূরা বাকারাঃ ১৫৮)। তুমি যা বলেছ, ব্যাপারটি যদি তদ্রুপ হতো তবে বলা হতো, “এই দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ না করলে তার কোন পাপ নেই।” 

ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, এ প্রসঙ্গটি আমি আবূ বকর ইবনু আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশামের কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি তাতে বিস্মিত হলেন এবং বললেন, এর নামই জ্ঞান। তিনি আরও বললেন, জ্ঞানবান সমাজের অনেক লোককে বলতে শুনেছি- সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ বর্জনকারী আরবের অধিবাসীরা বলত এই দুই পাথরের মাঝে তাওয়াফ করা জাহিলী যুগের কাজা আর আনসার সম্প্রদায়ের লোকেরা বলত, আমাদেরকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন, “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নির্দশনসমূহের অন্যতম।” আবূ বকর ইবনু আব্দুর রহমান বলেন, আমিও মনে করি যে, উল্লেখিত সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে।
২৯৫২.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম ...... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এই বর্ণনায় আছে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফকে খারাপ মনে করি। তখন আল্লাহ তা-আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেনঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। সূতরাং যে কেউ বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা পালন করে, এ দুটির মাঝে তাওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই।” আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করাকে বিধিবদ্ধ করেছেন। অতএব এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ বর্জন করার অধিকার কারো নেই।
২৯৫৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, আনসার সম্প্রদায় ও গাসসান গোত্রের নিয়ম ছিল, তারা ইসলাম গ্রহনের পুর্বে মানাত দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধত। অতএব তারা সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করাকে পাপ মনে করতা এটা তাদের পূর্বপুরুষদের রিতী যে, তাদের কোন ব্যক্তি মানাত দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধলে সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করত না। তারা ইসলাম গ্রহণের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তখন এই প্রসঙ্গে মহামহিম আল্লাহ নাযিল করেনঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব যে কেউ বায়তুল্লাহ হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা পালন করে, এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই এবং স্বতঃস্ফুর্তভাবে সৎকাজ করলে আল্লাহ পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ (সূরা বাকারাঃ ১৫৮)।
২৯৫৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফকে খারাপ কাজ মনে করত। অতএব এই প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়ঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমুহের অন্যতম। অতএব যে কোন ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা পালন করে এতদুভয়ের মাঝে তাওয়াফ করলে, তার কোন দোষ নেই......।”

পরিচ্ছেদঃ ৪০. সাঈ একাধিকবার করতে হবে না


২৯৫৫.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির ইবনুু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারই সাঈ করেছেন।
২৯৫৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “একবারমাত্র (সাত পাক), তা হচ্ছে প্রথমবারের সাঈ।”
২৯৫৭.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু হুজর ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... কুরায়ব (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে এবং তিনি উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরাফাতের ময়দান থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে তাঁর বাহনে আরোহণ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার নিকটবর্তী পাহাড়ের বামপাশে পৌঁছে উটকে হাঁটু গেড়ে বসালেন, এরপর (নেমে গিয়ে) পেশাব করলেন এবং ফিরে এলেন। আমি তাকে উযুর পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সংক্ষেপে (অল্প পানি ব্যবহার করে) উযু সেরে নিলেন। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাতের সময় হয়েছে। বললেনঃ আরও সামনে গিয়ে সালাত আদায় করব। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে আরোহণ করলেন এবং মুযদালিফায় পৌঁছে সালাত আদায় করলেন। এরপর সকালবেলা ফযল (রাঃ) কে তাঁর (বাহনে) পেছন দিকে বসিয়ে রওনা হলেন। কুরায়ব বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ফযলের সুত্রে আমাকে অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় না পৌঁছা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
২৯৫৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় ফযলকে বাহনে তার পিছনে বসালেন। রাবী বলেন, এরপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিযা পাঠ করতে থাকেন।
২৯৫৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে তার ভাই ফযল ইবনু আব্বাস। (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাহনে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতে সন্ধ্যাবেলা এবং মুযদালিফায় ভোর বেলা লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, যখন তারা অগ্রসর হচ্ছিল- "তোমরা ধীরে-সুস্থে অগ্রসর হও।" তিনিও নিজ উষ্ট্রীর গতি শ্লথ করে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং এভাবে মুহাস্‌সির পৌঁছলেন- যা মিনার অন্তর্গত। তিনি (এখানে) বললেন, তোমরা নুড়ি পাথর তুলে নাও যা জামরায় নিক্ষেপ করা হয়। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অবিরত তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন।
২৯৬০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে রাবী এ কথাটি উল্লেখ করেননি যে, "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন।" কিন্তু এতে উল্লেখ আছেঃ "নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন (নিক্ষেপের জন্য) নুড়ি কিভাবে ধরবে।"
২৯৬১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা মুযদালিফায় (সমবেত) ছিলাম। এ সময় আমি যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তাকে এই স্থানে বলতে শুনলামঃ “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা।”

No comments:

Powered by Blogger.