Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ হাজ্জ-১ম




পরিচ্ছেদঃ ১. হজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কি ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়েয ও কি ধরনের পোশাক নাজায়েয এবং ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গ


২৬৬২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জানতে চাইল যে, মুহরিম ব্যাক্তি কি ধরনের পোশাক পরবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করতে পারবে না। তবে কোন ব্যাক্তি চপ্পলের অভাবে মোজা পরিধান করলে তাকে পায়ের টাখনুর নীচ থেকে কেটে ফেলবে। তোমরা এমন কাপড় পরিধান কর না, যা জাফরান বা ওয়ারুস-এর রঙে রঞ্জিত করা হয়েছে।
২৬৬৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ), আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, মুহরিম ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় কী পরিধান করবে? তিনি বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি জামা, পাগড়ী, টুপি, পায়জামা, জাফরান বা ওয়ার্‌স দ্বারা রঞ্জিত কাপড় এবং মোজা পরিধান করবে না। কিন্তু চপ্পল না পেলে সে টাখনুর নীচ থেকে মোজা কেটে তা পরিধান করতে পারবে।
২৬৬৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম ব্যাক্তিকে জাফরান বা ওয়ার্‌স দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, কারও চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরিধান করবে এবং টাখনুর নীচ থেকে তা কেটে ফেলবে।
২৬৬৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূর-রবী যাহরানী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ভাষণে বলতে শুনেছি, মুহরিম ব্যাক্তির কাপড় না থাকলে সে পায়জামা পরতে পারবে এবং তার চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরতে পারবে।
২৬৬৬.    মুহাম্মাদ ইবনু বাসশার ও আবূ গাসসান রাযী (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্নিত হয়েছে যে, আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছেন-- এরপর তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বর্ননা করেন।
২৬৬৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা সুফইয়ান ইবনু উয়াইনাহ থেকে, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া হুশায়ম থেকে, আবূ কুরায়ব ওয়াকীর সুফইয়ান থেকে, আলী ইবনু খাশরম ঈসা ইবনু ইউনুসের মধ্যস্থতায় ইবনু জুরায়জ থেকে ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ইসমাইলের মধ্যস্থতায় আয়্যুব থেকে আর তারা সকলেই আমর ইবনু দীনারের সুত্রে এই সনদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শু'বা ছাড়া তাদের কারও বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “আরাফাতে ভাষণ দিয়েছেন” কথার উল্লেখ নাই।
২৬৬৮.    আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার কাপড় নাই সে পায়জামা পরিধান করতে পারে, আর যার চপ্পল নাই সে মোজা পরতে পারে।
২৬৬৯.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি খালক (সুগন্ধিবিশেষ) অথবা বলেন, হলুদ রং এর চিহ্নযুক্ত জুব্বা পরিহিত অবস্থায় জিরানা নামক স্থানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, উমরা পালনের সময় আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দেন? এই সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল এবং তিনি একটি কাপড় আচ্ছাদিত অবস্থায় ছিলেন। ইয়ালা (রাঃ) বলতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হওয়া অবস্থায় যদি আমি তাঁকে দেখতে পেতাম! উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ওহী নাযিল হওয়ার মুহূর্তে তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখার আগ্রহ রাখ কি? ইয়ালা (রাঃ) বলেন, এরপর উমর (রাঃ) কাপড়ের এক কোণ উন্মুক্ত করলেন এবং আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম যে, তাঁর মুখ দিয়ে যুবা (উঠতি বয়সের) উটের আওয়াজের মত আওয়াজ বের হচ্ছে। যখন তাঁর এ অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, উমরা সমন্ধে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেন, তোমার দেহ থেকে হলুদ রং ধুয়ে ফেল, অথবা বললেন, সুগন্ধির চিহ্ন। তোমার জুব্বা খুলে ফেল। অতঃপর তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে যা করতে, উমরার জন্য তাই কর।
২৬৭০.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। তখন তিনি জিরানা নামক স্থানে ছিলেন এবং আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছেই ছিলাম। লোকটি খালূক (জাতীয় সুগন্ধি) যুক্ত একটি জুব্বা পরিহিত ছিল। সে বলল, আমি উমরার ইহরাম বেধেছি এবং আমার পরিধানে এই জুব্বা রয়েছে এবং আমি খালূক ব্যবহার করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে কি করতে? সে বলল, আমি নিজের এই পরিধেয় খুলে এবং নিজের দেহ থেকে এই সুগন্ধি ধুয়ে ফেলতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে যা করতে, উমরার জন্য তাই কর।
২৬৭১.    যুহায়র ইবনু হারব, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বলতেন, আহা! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যখন ওহী নাযিল হয়, আমি যদি সেই অবস্থায় তাঁকে দেখতে পেতাম! একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরানায় অবস্থান করছিলেন এবং একটি কাপড়ের সাহায্যে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করা হয়েছিল। তার সংগে তার কিছু সংখ্যক সাহাবীও ছিলেন যাদের মধ্যে উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। এই সময় এক ব্যাক্তি সুগন্ধিযুক্ত জুব্বা পরিহিত অবস্থায় তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এক ব্যাক্তি জুব্বায় সুগন্ধি মেখে তা পরিহিত অবস্থায় উমরার ইহরাম বেঁধেছে, তার সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? 

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, অতঃপর নীরব রইলেন। এই সময় তার উপর ওহী আসল। উমর (রাঃ) হাতের ইশারায় ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) কে বললেন, এদিকে আস। ইয়ালা (রাঃ) এসে নিজের মাথা (কাপড়ের মধ্যে) চুকিয়ে দিলেন (এবং দেখলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছে এবং তার মুখ দইয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে। 

অতঃপর এই অবস্থা দূরীভূত হল এবং তিনি বললেন, এইমাত্র যে ব্যাক্তি আমার নিকট উমরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল, সে কোথায়? লোকটিকে খুঁজে এনে তাঁর নিকট উপস্থিত করা হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জুব্বা খূলে ফেল। অতঃপর যে নিয়মে হাজ্জ কর, ঠিক সেই নিয়মে উমরা কর।
২৬৭২.    উকবা ইবনু মুকরাম আম্মী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি জিরানা নামক স্থানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল। লোকটি উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার দাঁড়ি ও মাথার চুল হলুদ রঙে রঞ্জিত ছিল এবং তার পরনে ছিল একটি জুব্বা। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি উমরা করার জন্য ইহরাম বেঁধেছি এবং আমি কি অবস্থায় আছি তা আপনি দেখছেন। তিনি বললেন, তুমি তা খূলে ফেল এবং হলুদ রং ধুয়ে ফেল। অতঃপর হাজ্জে যা কিছু করতে, উমরাতেও তাই কর।
২৬৭৩.    ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... সাফওয়ান তার পিতা সুত্রে (ইবনু উমায়্যা) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে ছিলাম। তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি জুব্বা পরিহিত অবস্থায় উপস্থিত হল। তাতে (খালুক জাতীয়) সুগন্ধির চিহ্ন ছিল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছি, আমাকে কি করতে হবে? তিনি তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। যখন তার উপর ওহী নাযিল হতে আরম্ভ হল তখন উমর (রাঃ) তাকে ছায়া দেওয়ার জন্য একখন্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি (ইয়ালা) উমর (রাঃ) কে বলেছিলাম, তার উপর যখন ওহী নাযিল হয় তখন আমি তাঁর সংগে কাপড়ের অভ্যন্তর ভাগে আমার মাথা ঢুকাতে চাই। যখন ওহী নাযিল হল, উমর (রাঃ) তাঁকে একখন্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি তাঁর নিকট এসে কাপড়ের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে দিলাম এবং তাকে দেখলাম। এই অবস্থা শেষ হলে তিনি বললেন, এইমাত্র উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি তাঁর সামনে দাঁড়াল। তিনি বললেন, তোমার পরিধানের জুব্বা খূলে ফেল এবং সুগন্ধির চিহ্ন ধুয়ে ফেল। অতঃপর তুমি হাজ্জে যা করতে, তোমার উমরায় তাই কর।

পরিচ্ছেদঃ ২. হজ্জের মীকাতসমূহের বর্ণনা


২৬৭৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, খালফ ইবনু হিশাম, আবূর-রাবী ও কুতায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য আল-জুহফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনূল-মানাযিল, ইয়েমেনবাসীদের জন্য ইয়ালামলামকে মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, এগুলো ঐসব এলাকার লোকদের মীকাত এবং এর বাইরের যে সব লোক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার উদ্দেশ্যে ঐসব এলাকা হয়ে আসবে, তাদের মীকাত। আর যেসব লোক উল্লেখিত মীকাত সমূহের অভ্যন্তরে বসবাস করে, তারা স্বস্থান থেকে ইহরাম বাধবে, এভাবে যারা আরো ভিতরে, তারা সে স্থান হতে। এমনকি মক্কাবাসিগণ মক্কা থেকে ইহরাম বাঁধবে।
২৬৭৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার অধিবাসীদের জন্য যূল-হুলায়ফা, সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য আল জুহফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনূল-মানাযীল এবং ইয়েমেনবাসীদের জন্য ইয়ালামলামকে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এগুলো উল্লেখিত এলাকার লোকদের মীকাত এবং বাইরের যেসব লোক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার উদ্দেশ্যে ঐ সব এলাকা হয়ে আসবে, তাদের মীকাত। আর যেসব লোক মীকাতের অভ্যন্তরে বসবাস করে, তারা যে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছা করে, সে স্থান হতে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকে ইহরাম বাঁধবে।
২৬৭৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনাবাসীগণ যুল-হুলায়ফা থেকে, সিরিয়াবাসীগণ আল-জুহ্ফা থেকে এবং নাজদবাসীগণ কারন থেকে ইহরাম বাধবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে খবর পৌছেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়েমেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে।
২৬৭৭.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মদিনাবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান যূল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান মুহায়আ অর্থাৎ আল-জুহফা এবং নাজদবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান কারন্‌। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলেঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়েমেনবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান ইয়ালামলাম, কিন্তু আমি তা তাঁর নিকট থেকে শুনিনি।
২৬৭৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের যুল-হুলায়ফা থেকে, সিরিয়ার অধিবাসীদেরকে আল জুহফা থেকে এবং নাজদবাসীদেরকে কারন্‌ থেকে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, তিনি আরও বলেছেন, ইয়েমেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে।
২৬৭৯.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট ইহরাম বাঁধার স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছেন। এরপর তিনি হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি মনে করি যে, জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে সরাসরি এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৬৮০.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনাবাসীগণ যুল-হুলায়ফা থেকে এবং সিরিয়াবাসীগণ আল-জুহফা থেকে, নাজদবাসীগণ কারন্‌ থেকে ইহরাম বাধবে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমার নিকট উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ইয়ামেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে, কিন্তু একথা আমি সরাসরি তাঁর নিকট থেকে শুনিনি।
২৬৮১.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে ইহরাম বাঁধার স্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি (রাবীর ধারণায় তিনি এই হাদীস তার সাথে সংযুক্ত করেছেনঃ) মদিনাবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান যুল-হুলায়ফা, অপর একটি পথ হচ্ছে আল জুহফা, ইরাকবাসীদের মুহাল হচ্ছে যাতু ইরাক, নাজদবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান হচ্ছে কারন এবং ইয়েমেনবাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান হচ্ছে ইয়ালামলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩. তালবিয়া এর বর্ণনা এবং এর সময়


২৬৮২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়া নিম্নরুপ ছিলঃ 

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ 

অর্থাৎ "আমি তোমার নিকট হাযির হে আল্লাহ! তোমার কাছে হাযির, আমি তোমার কাছে হাযির। তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমার কাছে হাযির। যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব তোমার। তোমার কোন শরীক নাই।" 

নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) নিজের তরফ থেকে তালবিয়ার সাথে আরও যোগ করতেনঃ আমি তোমার কাছে হাযির, তোমার কাছে হাযির, তোমার খিদমতের সৌভাগ্য লাভ করেছি। সমস্ত কল্যাণ তোমার হাতে, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, সমস্ত আকর্ষণ তোমার প্রতি এবং সকল কাজ তোমারই জন্য। ”
২৬৮৩.    মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকট যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উষ্ট্রী তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াত, তখন তিনি তালবিয়া পাঠ শুরু করতেন। তিনি বলতেন, "লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা ...... লা শারীকা লাকা।" আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন,এই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়া। 

নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সাথে আরও যোগ করতেনঃ "লাব্বাইকা লাব্বাইকা ...... ওয়াল আমালু।"
২৬৮৪.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে তালবিয়া শিখেছি...... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
২৬৮৫.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, "লাব্বইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ...... লা শারীকা লাকা।" তিনি এর সাথে আর কোন কথা যোগ করতেন না। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরও বলতেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফায়, দুরাকআত সালার আদায় করতেন। অতঃপর তার উষ্ট্রী যখন তাকে নিয়ে যুল-হুলাইফার মসজিদের সামনে দণ্ডায়মান হতো তখন তিনি শব্দ-সহকারে তালবিয়া, পাঠ শুরু করতেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরও বলতেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই তালবিয়া পাঠ করতেন এবং বলতেন, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ...... ওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমালু।"
২৬৮৬.    আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আম্বারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা বলত, “লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা।” রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, তোমাদের ক্ষতি হোক, ক্ষান্ত হও, ক্ষান্ত হও (সামনে আর বলো না)। তারা এর সাথে আরও বলত, “কিন্তু হে আল্লাহ! তোমার আরও একজন শরীক আছে তুমিই যার মালিক এবং সে কিছুরই মালিক নয়।” তারা এই কথা বলত আর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করত।

পরিচ্ছেদঃ ৪. মদীনাবাসীদেরকে যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকট ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে


২৬৮৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে তার পিতা সুত্রে বর্ণিত। তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেন, তোমাদের এই বায়দা নামক স্থান সম্পর্কে তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্পৃক্ত করে ভুল বর্ণনা করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলমাত্র যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকটেই ইহরাম বাঁধতেন।
২৬৮৮.    কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) কে যখন বলা হল, বায়দা নামক স্থানে ইহরাম বাঁধতে হবে তখন তিনি বললেন, এই বায়দাকে কেন্দ্র করেই তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্পৃক্ত করে ভূল বর্ণনা করে থাক। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গাছের নিকট ইহরাম বেঁধে লাব্বাইকা ধ্বনি উচ্চারণ করতেন- যেখান থেকে তার উট তাকে নিয়ে রওনা হতো।

পরিচ্ছেদঃ ৫. দু'রাক'আত সালাত আদায়ের পর কোন ব্যক্তির উট যখন মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, তখনই ইহরাম বাঁধা উত্তম


২৬৮৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি আপনাকে এমন চারটি কাজ করতে দেখছি- যা আপনার সঙ্গী-সাথীদের কাউকে করতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে ইবনু জুরায়জ! সেগুলো কি কি? তিনি বললেন, আমি দেখেছি আপনি রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত আর কোন রুকন স্পর্শ করেন না। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি পশমবিহীন চামড়ার স্যাণ্ডেল পরিধান করেন। আমি আরও দেখেছি যে, আপনি হলুদ বর্ণ ব্যবহার করেন। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি মক্কায় অবস্থানকালে (যিলহাজ্জ মাসের) আট তারিখে ইহরাম বাধেন। অথচ লোকেরা নতূন চাঁদ দেখার সাথে সাথে ইহরাম বাধে। 

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রুকন সমূহের ব্যাপারে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দিতে দেখিনি। আর পশমবিহীন স্যাণ্ডেলের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পশমবিহীন চামড়ার স্যান্ডেল পরিধান করতে দেখেছি। তিনি তা পায়ে দিয়ে উযুও করতেন। আমিও তাই এ ধরনের স্যাণ্ডেল পছন্দ করি। হলুদ রঙ এর সম্পর্কে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই রং ব্যবহার করতে দেখেছি। অতএব আমিও এই রং পছন্দ করি। ইহরাম সম্পর্কে বলতে হয় যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তখনি তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি যখন তাঁর উট যাত্রা শুরু করেছে।
২৬৯০.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সংগে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা মিলিয়ে ১২ বার করেছি। আমি বললাম, হে আবূ আবদূর রহমান! আমি আপনাকে চারটি কাজ করতে দেখেছি...... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক। কিন্তু তালবিয়া পাঠ প্রসংগে রাবী (ইবনু কুসায়ত) সাঈদ মাকবুরীর বিপরীত বর্ণনা করেছেন, তবে তার উল্লেখ ব্যতীত আর সব বর্ণনায় কোন বিরোধ হয়নি।
২৬৯১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পাদানীতে পা রাখতেন এবং তার বাহন দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে রওনা করত, তখন তিনি যুলহুলায়ফায় “লাব্বাইকা, ধ্বনি উচ্চারণ করতেন।
২৬৯২.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বর্ণনা করতেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উষ্ট্রী যখন তাকে নিয়ে সোজা হয়ে রওনা হতো, তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করতেন।
২৬৯৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন, অতঃপর তা যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হায় দাঁড়াল, তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন।
২৬৯৪.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি শুরু কবার প্রারম্ভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফায় রাত যাপন করেন এবং এখানকার মসজিদে সালাত আদায় করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৬. ইহরামের পূর্বে দেহে সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব এবং তাতে মিশ্‌ক ব্যবহার করা মুস্তাহাব হওয়া। আর সুগন্ধির ঝিলিক অবশিষ্ট থাকা দূষণীয় বা হাওয়া


২৬৯৫.    মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাধার সময় এবং (হাজ্জ (হজ্জ) সমাপনান্তে) ইহরামমুক্ত হওয়ার পর বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পুর্বেও আমি তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি।
২৬৯৬.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাধার প্রাক্কালে এবং ইহরামমুক্ত হওয়ার পর বায়তূল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি।
২৬৯৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাধার জন্য ইহরামের পোশাক পরিধান করার পূর্বে এবং ইহরাম মুক্ত হওয়ার পর বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পুর্বে আমি তাঁকে সূগন্ধি মেখে দিতাম।
২৬৯৮.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাঁধার সময় এবং ইহরামমুক্ত হওয়ার পর আমি তাকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি।
২৬৯৯.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি। বিদায় হাজ্জের সময় নিজ হাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যারীরা (ভারতীয় সুগন্ধি) মেখে দিয়েছি— ইহরাম মুক্ত হওয়ার সময় এবং ইহরাম বাঁধার সময়।
২৭০০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উসমান ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাঁধার সময় তাঁকে কি জিনিস দিয়ে সুগন্ধিযুক্ত করেছিলেন? তিনি বললেন, সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি দ্রব্যের (কস্তুরীর) সাহায্যে।
২৭০১.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধির সাহায্যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধিযুক্ত করতাম, অতঃপর তিনি ইহরাম বাঁধতেন।
২৭০২.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যতদুর সম্ভব সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি দ্রব্যের সাহায্যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ইহরাম বাধার প্রাক্কালে এবং ইহরামমুক্ত হওয়ার পর কিন্তু তাওয়াফে ইফাযা করার পূর্বে, সুগন্ধিযুক্ত করেছি।
২৭০৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মানসূর, আবূর-রবী, খালফ ইবনু হিশাম ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার সিঁথিতে কস্তূরীর ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি, অথচ তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। 

রাবী খালফের বর্ণনায়, "তিনি তখন ইহরামাবস্থায় ছিলেন" কথার উল্লেখ নাই। তবে তাঁর বর্ণনায় আছে, “এটা ছিল তাঁর ইহরামের সময়কার সুগন্ধি।”
২৭০৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার সিঁথিতে কস্তূরীর ঔজ্জূল্য দেখতে পাচ্ছি, তিনি তখন তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
২৭০৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার সিঁথিতে সুগন্ধির ঔজ্জল্য দেখতে পাচ্ছি, তিনি তখন তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
২৭০৬.    আহমদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি...... ওয়াকী (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
২৭০৭.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার সিথিতে তাঁর ইহরামের অবস্থায় সুগন্ধির ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি।
২৭০৮.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিঁথিতে তাঁর ইহরামের অবস্থায় সুগন্ধির ঔজ্জ্বল্য দেখছি।
২৭০৯.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইহরাম বাঁধার সংকল্প করতেন তখন তিনি যথাসাধ্য সর্বোত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। অতঃপর আমি তার মাথায় ও দাঁড়িতে তৈলের চাকচিক্য দেখতে পেতাম।
২৭১০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিথিতে তার ইহরামের অবস্থায় কস্তূরীর চাকটিক্য দেখতে পাচ্ছি।
২৭১১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হাসান ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭১২.    আহমদ ইবনু মানী ও ইয়াকুব দাওরাকী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ইহরাম বাঁধার পুর্বে এবং কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পুর্বে কস্তুরী মিশ্রিত সুগন্ধি মেখে দিতাম।
২৭১৩.    সাঈদ ইবনু মানসূর ও আবূ কামিল (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি (মুহাম্মদ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলম যে সুগন্ধি মেখেছে, অতঃপর ভোর হয়েছে মুহরিম অবস্থায়। তিনি বললেন, আমি এটা পছন্দ করিনা যে, আমি ইহরাম অবস্থায় থাকব আর আমার শরীর থেকে সুবাস ছড়াবে। এই কাজ (সুগন্ধি লাগানো) অপেক্ষা আমি আমার দেহে আলকাতরা মাখা অধিক পছন্দনীয় মনে করি। 

অতঃপর আমি (মুহাম্মদ) আয়িশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে অবহিত করলাম যে, ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, "আমি এটা পছন্দ করিনা যে, আমি ইহরাম অবস্থায় থাকব আর আমার শরীর থেকে সুবাস ছড়াবে। এই কাজ (সুগন্ধি লাগানো) অপেক্ষা আমি আমার দেহে আলকাতরা লাগানো অধিক শ্রেয় মনে করি।" তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার ইহরাম বাধার সময় সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। এরপর তিনি তার স্ত্রীদের নিকট চক্কর দিলেন এরপর ভোরবেলা ইহরাম বাঁধলেন।[১] 

১. ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি মাখা মুস্তাহাব এবং ইহরাম বাঁধার পর তা অবশিষ্ট থাকায় কোন দোষ নেই। কিন্তু ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ, মুহাদ্দিস ও ফিকহবিদদের এই মতঃ তাদের মধ্যে রয়েছেন সা;দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ), ইবন আব্বাস (রাঃ), ইবন যুবায়র (রাঃ), মু'আবিয়া (রাঃ), আয়শা (রাঃ), উম্মু হাবীবা (রাঃ), ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিঈ, আহমাদ, সুফইয়ান সাওরী, আবু ইউসুফ, আবু দাউদ (রহঃ) প্রমুখ। ইমাম যুহরী, মালিক, মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী এবং একদল সাহাবী ও তাবেঈর মতে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার জায়েয নয়। অনুরূপভাবে জামারাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ ও মাথা কামানোর পরে তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার জায়েয, কিন্তু ইমাম মালিকের মতে তা জায়েয নয়। যেসব হাদিসে ইহরাম বাঁধার পূর্বেই সুগন্ধির চিহ্ন দূর করার নির্দেশ রয়েছে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলিমগন বলেন, তা সুগন্ধি ছিল না; বরং তা ছিল জাফরানের রং- তাই তা মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত নির্দেশটি ৮ম হিজরীতে দেওয়া হয় এবং অনুমতি সম্পর্কিত নির্দেশটি ১০ম হিজিরীতে বিদায় হজ্জের সময়কার। অতঃপর পূর্বোক্ত নির্দেশ শেষাক্ত নির্দেশ দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। (আন-নববী ১ম খণ্ড পৃঃ ৩৭৩,৩৭৮; ফাতহুল মুলহিম ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২০৮)
২৭১৪.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহে সুগন্ধি মেখে দিতাম। অতঃপর তিনি তার স্ত্রীদের নিকট চক্কর দিতেন, অতঃপর ভোরবেলা তিনি ইহরাম বাঁধতেন। আর তখন তার দেহ থেকে সুবাস ছড়াত।
২৭১৫.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ সুগন্ধি ছড়ানো অবস্থায় মুহরিম হওয়া অপেক্ষা দেহে আলকাতরা মাখানো অবস্থায় থাকা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। 

রাবী বলেন, এরপর আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে ইবনু উমরের উক্তি সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহে খোশবু লাগিয়েছি। এরপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে গেলেন। অতঃপর তিনি ইহরাম অবস্থায় ভোর করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭. হজ্জ, উমরা অথবা উভয় উদ্দেশ্যে ইহরামকারীর জন্য স্থলের হালাল জন্তু অথবা যে জন্তু মুলত স্থলের, তা শিকার করা নিষিদ্ধ


২৭১৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) মালিক (রহঃ) থেকে ... সা'ব ইবনু জাসসামা লাইসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বন্য গাধা (গোশত) হাদিয়া দিলেন। আর তিনি তখন আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তিনি তাকে তা ফেরত দিলেন। সা'ব (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারা মলিন দেখে বললেন, আমি তোমাকে তা ফেরত দিতাম না, কিন্তু আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি।
২৭১৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, কুতায়বা, লায়স ইবন সা'দ থেকে আবদ ইবনু হুমায়দ আবদুর রাযযাকের মধ্যস্থতায় মা'মার থেকে, ইয়াকুবের মধ্যস্থতায় সালিহ থেকে এবং সকলে হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (সা'বা) তাকে বন্য গাধার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলাম। ইমাম মালিক (রহঃ) যেরূপ বর্ণনা করেছেন। লাইস ও সালিহ এর বর্ণনায় রয়েছে, সা'ব ইবনু জাসসামা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন।
২৭১৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উল্লেখ আছে তিনি (সা'ব) বলেন, আমি তাঁকে বন্য গাধার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলাম।
২৭১৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা'ব ইবনু জাসসামা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য বন্য গাধার গোশত উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। রাবী বলেন, তাই তিনি এই উপটৌকন তাকে ফেরত দিলেন এবং বললেন, আমরা যদি ইহরাম অবস্থায় না থাকতাম তবে তোমার এই উপঢৌকন অবশ্যই গ্রহণ করতাম।
২৭২০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ... মানসুর (রহঃ) হাকাম (রহঃ) থেকে মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও শু'বা (রহঃ) হাকাম (রহঃ) থেকে ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) হাবীব (রহঃ) থেকে তারা সকলে সা'ঈদ ইবন জুবায়র (রহঃ) থেকে তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, সা'ব ইবনু জাসসামা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বন্য গাধার পায়ের গোশত হাদিয়া দেন। তখন তা থেকে রক্ত ঝরছিল। আর হাকামের সুত্রে শু'বা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বন্য গাধার পেছনের অংশের কথা উল্লেখ আছে। আর হাবীবের শু'বা কর্তৃক অপর বর্ণনায় আছে, (সা'ব) বন্য গাধার উরুর পার্শ্বের গোশত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য উপঢৌকন পাঠান। কিন্তু তিনি তা ফেরত দেন।
২৭২১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... তাউস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইহরাম অবস্থায় যে, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শিকার করা জন্তুর গোশত উপঢৌকন দেওয়া হয়েছিল। সে সম্পর্কে আপনি আমার কাছে যেন কী রকম বর্ণনা করেছিলেন? 

রাবী (তাউস) বলেন, তিনি বললেন, তাকে শিকারকৃত জন্তুর একটি অঙ্গ হাদিয়া দেওয়া হয়েছিল, তিনি তা ফেরত দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমরা এই গোশত খেতে পারি না, কারণ আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি।
২৭২২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম, এমনকি ‘কাহা’ নামক স্থানে গিয়ে পৌছলাম। আমাদের কতক ইহরাম অবস্থায় এবং কতক ইহরামবিহীন অবস্থায় ছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার সঙ্গীরা একটা কিছুর দিকে তাকাচ্ছে আমি তাকিয়ে দেখলাম, তা একটি বন্য গাধা। অতএব আমি আমার ঘোড়ার জ্বীন বাঁধলাম এবং বল্লম তুলে নিলাম। এরপর ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলাম। এ অবস্থায় আমার চাবুক নীচে পড়ে গেল। আমি আমার সঙ্গীদের তা তুলে দিতে বললাম, তারা ইহরাম অবস্থায় ছিল। তাই তারা আল্লাহর শপথ করে বলল, আমরা তোমাকে এ ব্যাপারে কিছুমাত্র সাহায্য করতে পারব না। 

অতঃপর আমি নীচে নেমে এসে তা তুললাম। তারপর ঘোড়ায় চড়ে গাধার পশ্চাদ্ধাবন করলাম। তা ছিল একটি টিলার আড়ালে। আমি বল্লমের আঘাতে এটাকে হত্যা করলাম। অতঃপর আমার সঙ্গীদের কাছে নিয়ে এলাম। তাদের কতক বলল, তা খাও, আর কতক বলল, খেও না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সন্মুখভাগে ছিলেন। আমি ঘোড়া হাঁকিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তা হালাল, অতএব তোমরা তা খাও।
২৭২৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা (রহঃ) ... আবূ নাযর নাফি' (থেকে) এবং তিনি আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন। মক্কার একটি পথে যখন আমরা পৌছলাম তখন তিনি তার কতিপয় মুহরিম সঙ্গীসহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে পড়ে গেলেন। তিনি ছিলেন ইহরামমুক্ত। তিনি একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে নিজের ঘোড়ায় চেপে বসলেন এবং সঙ্গীদেরকে তার চাবুকটি তুলে দিতে বললেন। তারা তা তুলে দিতে রাজী হলেন না। তিনি তাদেরকে নিজের বল্লমটি তুলে দিতে বললেন, এবারও তারা তার কথায় রাজী হলেন না। এরপর তিনি নিজেই তা তুলে নিলেন এবং ঘোড়া হাঁকিয়ে গাধাটি শিকার করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী তার গোশত খেলেন এবং কতক তা প্রত্যাখ্যান করলেন। অতএব তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এতো খাদ্য, আল্লাহ তোমাদের তা দান করেছেন।
২৭২৪.    কুতায়বা (রহঃ) ... যায়দ ইবন আসলাম (রহঃ) আতা ইবন ইয়াসার (রহঃ) থেকে এবং তিনি আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে। বন্য গাধা সম্পর্কিত হাদীসটি এ সুত্রে ও আবূ নাযর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যায়দ ইবনু আসলামের বর্ণনায় আরো আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এর কিছু গোশত তোমাদের সাথে আছে কি?
২৭২৫.    সালিহ ইবনু মিসমার সূলামী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা হুদায়বিয়ার বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে গেলেন। তার সঙ্গীগণ ইহরাম বাঁধলেন, কিন্তু আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরাম বাঁধলেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবহিত করা হল যে, শক্ররা গাইকা নামক স্থানে ওত পেতে আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে ছিলাম, তাদের কতক আমার দিকে চেয়ে হাসছিল। আমি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটি বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আমি সেটিকে ধাওয়া করলাম এবং বর্শা ছুড়ে সেটিকে বিদ্ধ করলাম। তারপর সাহাবীদের সাহায্য চাইলাম। কিন্তু তারা আমাকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন। আমরা এর গোশত খেলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকাবোধ করলাম। অতএব আমি তাঁর সন্ধানে চললাম। কখনো ঘোড়া দ্রুত হাকাচ্ছিলাম, আবার কখনো সাধারণভাবে চালাচ্ছিলাম। 

মধ্যরাতে গিফার গোত্রের এক ব্যাক্তির সাক্ষাত পেলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কোথায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত পেয়েছে? সে বলল, আমি তাঁকে তা'হিন নামক স্থানে ছেড়ে এসেছি এবং তিনি সুফয়া নামক স্থানে দুপূরের সময়টা যাত্রা বিরতি করার মনস্থ করেছেন। আমি (আবূ কাতাদা) তাঁর সাথে মিলিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাহাবীগন আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং আপনার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা করছেন। অতএব আপনি তাদের জন্য অপেক্ষা করুন। অতএব তিনি তাদের জন্য অপেক্ষা করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি একটি শিকার ধরেছি এবং তার কিছু অংশ আমার কাছে অবশিষ্ট আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের বললেন, তোমরা খাও। তারা ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৯. কোন অসুবিধার কারণে ইহরাম অবস্থায় মাথা কামানো জায়েয, মাথা কামালে ফিদয়া দেয়া ওয়াজিব এবং ফিদয়ার পরিমাণ


২৭২৬.    আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন এবং আমরাও তাঁর সফর সঙ্গী হলাম। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিন্ন পথ ধরলেন এবং আবূ কাতাদা (রাঃ) সহ কতিপয় সাহাবীকে (অন্য পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে) বললেন, তোমরা আমার সঙ্গে সাক্ষাত না করা পর্যন্ত সমূদ্র তীরবর্তী পথ ধরে অগ্রসর হও। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, অতএব তারা সমুদ্র উপকূল বরাবর পথ ধরলেন। তারা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথে মোড় নিলেন, তখন আবূ কাতাদা (রাঃ) ছাড়া আর সকলে ইহরাম বাঁধলেন, তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। এই অবস্থায় পথ চলতে চলতে তারা কতকগুলো বন্য গাধা দেখতে পেলেন এবং আবূ কাতাদা (রাঃ) এগুলোকে আক্রমণ করে একটি গাধী শিকার করলেন। তারা যাত্রা বিরতি দিয়ে গাধীর গোশত খেলেন। 

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারা বললেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় শিকারের গোশত খেলাম। এরপর তারা এর অবশিষ্ট গোশত সঙ্গে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হায় বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা ইহরাম বেঁধেছি কিন্তু আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরাম বাঁধেন নি। এই অবস্থায় আমরা কয়েকটি বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) এগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি গাধী শিকার করেন। আমরা যাত্রা বিরতি দিয়ে এর গোশত খেয়েছি। অতঃপর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা ইহরাম অবস্থায় শিকারকৃত পশুর গোশত আহার করব কি অথচ আমরা মুহরিম? আমরা অবশিষ্ট গোশত সাথে করে নিয়ে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কেউ কি তা শিকার করার নির্দেশ অথবা ইঙ্গিত করেছে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, তাহলে অবশিষ্ট গোশতও খেতে পার।

পরিচ্ছেদঃ ৭. হজ্জ, উমরা অথবা উভয় উদ্দেশ্যে ইহরামকারীর জন্য স্থলের হালাল জন্তু অথবা যে জন্তু মুলত স্থলের, তা শিকার করা নিষিদ্ধ


২৭২৭.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ... শু'বা (রহঃ) থেকে ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) শায়বান থেকে এবং তারা উভয়ে ... উসমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদ সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। শায়বানের বর্ননায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কেউ কি তাকে গাধাটি আক্রমণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে অথবা এর প্রতি ইঙ্গিত করেছে? আর শু'বার বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমরা কি (শিকারের দিকে) ইঙ্গিত করেছিলে অথবা সাহায্য করেছিলে" অথবা "শিকার করেছিলে", শু'বা বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই "সাহায্য করেছিলে" বলেছেন না "শিকার করেছিলে" বলেছেন, তা আমি জানি না।
২৭২৮.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আদু-দারিমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ-কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তার পিতা তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ছাড়া আর সকলেই উমরা করার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। আমি একটি বন্য গাধা শিকার করলাম এবং আমার মুহরিম সঙ্গীদের এর গোশত খাওয়ালাম। অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে অবহিত করলাম যে, শিকারের অবশিষ্ট গোশত আমাদের সাথে আছে। তিনি বললেন, তোমরা তা খাও। তখন তারা ছিলেন মুহরিম।
২৭২৯.    আহমদ ইবনু আবদা যাব্বী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (সফরে) রওনা হলেন। তারা সবাই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু আবূ কাতাদা (রাঃ) হালাল অবস্থায় ছিলেন। হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বাবৎ। তবে এই বর্ণনায় আরও আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এর কিছু গোশত তোমাদের সাথে আছে কি? তারা বললেন, তার পা আমাদের সাথে আছে। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে আহার করলেন।
২৭৩০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, কুতায়বা ও ইসহাক (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরামকারী একটি দলের সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু তিনি ইহরাম ছাড়া ছিলেন। হাদীসের পরবর্তী বর্ণনা পূর্ববৎ। এতে আছেঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কেউ কি শিকারের দিকে ইঙ্গিত করেছে অথবা কোনরূপ নির্দেশ দিয়েছে? তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ না। তিনি বললেন, তাহলে এটা খেতে পার।
২৭৩১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... মুআয ইবনু আবদুর রহমান ইবনু উসমান তায়মী (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তাকে (শিকার করা) পাখির গোশত উপঢৌকন দেয়া হল। এ সময় তিনি ঘুমে ছিলেন। আমাদের কতক তা খেল এবং কতক বিরত থাকল। তালহা (রাঃ) ঘুম থেকে উঠে গোশত আহারকারীদের অনুক্যুল মত প্রকাশ করলেন এবং বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (ইহরাম অবস্থায়) তা (শিকার করা প্রানীর গোশত) খেয়েছি।

পরিচ্ছেদঃ ৮. হারাম এবং হারামের বাইরে ইহরাম কিংবা ইহরামমুক্ত অবস্থায় কোন কোন জন্তু হত্যা করা জায়েয


২৭৩২.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ এমন চার প্রকার দুষ্ট জন্তু ক্ষতিজর, তা হারাম এবং হারামের বাইরে নিধন করা যায়ঃ চিল (এবং শকুন), কাক, ইঁদুর এবং হিংস্র কুকুর। তিনি (উবায়দুল্লাহ) বলেন, আমি কাসিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাপের বিষয়ে আপনার মত কি? তিনি বললেন, তা হীনভাবে হত্যা করতে হবে।
২৭৩৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ প্রকার দুষ্ট জন্তুকে হারাম এবং হারামের বাইরে নিধন করা যায়ঃ সাপ, আবকা” (যার বুক ও পিঠ সাদা বর্ণের) কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর এবং চিল।
২৭৩৪.    আবূর-রবী যাহরানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি অনিষ্টকর প্রানীকে হারামের ভিতর হত্যা কারা যায়ঃ বিচ্ছু, ইঁদুর, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর।
২৭৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
২৭৩৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি দুষ্ট জন্তু হারামের মধ্যেও হত্যা করতে হবেঃ ইদুর, বিচ্ছু, কাক, চিল এবং হিংস্র কুকুর।
২৭৩৭.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুর রাযযাক (রহঃ) মা'মার থেকে, তিনি যুহরী (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত সনদে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি দুষ্ট অনিষ্টকর জন্তু হারাম ও হারামের বাইরে নিধনের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ ইয়াযীদ ইবনু যুরায় (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
২৭৩৮.    আবূত-তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি জন্তুর প্রতিটই অনিষ্টকর। ইহরাম অবস্থায় তা হত্যা করা যাবেঃ কাক, চিল, হিংস্র কুকুর, বিচ্ছু ও ইঁদুর।
২৭৩৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি জন্তু, হারামের ভিতরে ও ইহরাম অবস্থায় হত্যা করবে, তার কোন অপরাধ হবে না। ইঁদুর, কাক, চিল, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর।
২৭৪০.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হাফসা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি জন্তুর প্রত্যেকটই অনিষ্টকর, কেউ তা হত্যা করলে তার কোন দোষ হবে নাঃ বিচ্ছু, কাক, চিল, ইদুর ও হিংস্র কুকুর।
২৭৪১.    আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... যায়দ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম ব্যাক্তি কোন কোন জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি বললেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা সহধর্মিনী অবহিত করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঁদুর, বিচ্ছু, চিল, হিংস্র কুকুর ও কাক হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন অথবা রাবী বলেন, নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২৭৪২.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... যায়দ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম ব্যাক্তি কোন কোন জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা সহধর্মিনী বলেছেন যে, তিনি হিংস্র কুকুর, ইদুর, বিচ্ছু, চিল, কাক ও সাপ হত্যা করার নির্দেশ দিতেন, এমনকি সালাতরত অবস্থায়ও।
২৭৪৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন পাঁচটি জন্তু আছে যা মুহরিম ব্যাক্তি হত্যা করলে কোন দোষ হবে না; কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর এবং হিংস্র কুকুর।
২৭৪৪.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আমি নাফি (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি ইবনু উমর (রাঃ) কে মুহরিম ব্যাক্তির জন্য কোন কোন প্রানী হত্যার বৈধতা ঘোষণা করতে শুনেছেন? নাফি (রহঃ) আমাকে বললেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, এমন পাঁচ প্রকারের প্রানী আছে, কোন ব্যাক্তি তা হত্যা করলে তার কোন গুনাহ হবে নাঃ কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।
২৭৪৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন পাঁচ ধরনের প্রানী আছে, ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যাক্তি সেগুলো হত্যা করলে তাতে তার কোন গুনাহ হবে নাঃ বিচ্ছু, ইদূর, হিংস্র কুকুর, কাক ও চিল। হাদীসের মূল পাঠ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়ার বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে।
২৭৪৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরি ও আবূর-রবী (রহঃ) ... আয়্যুব মুজাহিদ থেকে, তিনি আবদুর রহমান ইবন আবূ লায়লা হতে এবং তিনি কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন এবং আমি তখন চুলায় আমার হাঁড়ি বা পাতিলের নীচে আগুন জ্বালাচ্ছিলাম। আর উকুন আমার চেহারার উপর গড়িয়ে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মাথার পোকাগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও অথবা একটি কুরবানী কর। আয়্যুব (রহঃ) বলেন, আমার মনে নেই তিনি (মুজাহিদ) কোন শব্দটি আগে বলেছেন।
২৭৪৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন পাঁচ ধরনের প্রানী আছে, ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যাক্তি সেগুলো হত্যা করলে তাতে তার কোন গুনাহ হবে নাঃ বিচ্ছু, ইদূর, হিংস্র কুকুর, কাক ও চিল। হাদীসের মূল পাঠ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়ার বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৯. কোন অসুবিধার কারণে ইহরাম অবস্থায় মাথা কামানো জায়েয, মাথা কামালে ফিদয়া দেয়া ওয়াজিব এবং ফিদয়ার পরিমাণ


২৭৪৮.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরি ও আবূর-রবী (রহঃ) ... আয়্যুব মুজাহিদ থেকে, তিনি আবদুর রহমান ইবন আবূ লায়লা হতে এবং তিনি কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন এবং আমি তখন চুলায় আমার হাঁড়ি বা পাতিলের নীচে আগুন জ্বালাচ্ছিলাম। আর উকুন আমার চেহারার উপর গড়িয়ে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মাথার পোকাগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও অথবা একটি কুরবানী কর। আয়্যুব (রহঃ) বলেন, আমার মনে নেই তিনি (মুজাহিদ) কোন শব্দটি আগে বলেছেন।
২৭৪৯.    আলী ইবনু হুজর সা’দী, যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়্যুব (রহঃ) থেকে এই সনদ সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭৫০.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবন আওন মুজাহিদ থেকে, তিনি আবদুর রহমান ইবন আবু লায়লা হতে এবং তিনি কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছেঃ অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে এবং এ কারণে সে মাথা মুড়িয়ে ফেলে, তবে তাকে ফিদয়া হিসেবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে অথবা সদকা দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬)। 

রাবী বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম এবং তিনি বললেন, আরও নিকটে আস। অতএব আমি নিকটবর্তী হলাম এবং তিনি বললেন, পোকাগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? ইবনু আওন (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ। কা’ব (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অথবা সদকা অথবা সহজলভ্য হলে কুরবানীর মাধ্যমে ফিদয়া আদায়ের নির্দেশ দিলেন।
২৭৫১.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট দাঁড়ালেন এবং তখন তার মাথা থেকে উকুন ঝরে পড়ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তোমার মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, অতএব আমার সম্পর্কে এই আয়াত নাযিল হলঃ অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে (এবং এই কারণে মাথা মুড়িয়ে ফেলবে) তবে তাকে ফিদয়া হিসেবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে অথবা সদকা দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬)। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা এক ফারাক (তিন সা') খাদ্য ছয়জন মিসকীনকে দান কর অথবা কুরবানী কর- যা সহজলভ্য হয়।
২৭৫২.    মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইবন আবু নাজীহ, আয়্যুব, হুমায়দ ও আবদুল কারীম মুজাহিদ হতে, তিনি আবদুর রহমান ইবন আবু লায়লা হতে এবং তিনি কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন-মক্কায় প্রবেশের পূর্বে-তিনি যখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন এবং নিজের হাঁড়ির নীচে আগুন জালাচ্ছিলেন। এই অবস্থায় তার (মাথা থেকে) মুখমণ্ডলে উকুন ঝরে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং ছয়জন মিসকীনকে এক ফারাক খাদ্য দান কর (এক ফারাক এ তিন সা'), অথবা তিনদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা একটি কুরবানী কর। ইবনু আবূ নাজীহ এর বর্ণনায় আছে, “অথবা একটি বকরী কুরবানী কর।”
২৭৫৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... কাব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, পোকাগুলো কি তোমার মাথায় উপদ্রব করছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, মাথা মুড়িয়ে ফেল। অতঃপর একটি বকরী কুরবানী কর অথবা তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে তিন সা খেজুর খেতে দাও।
২৭৫৪.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাকিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে কা'ব ইবনু উজরা (রাঃ) এর নিকট বসলাম। অতঃপর আমি তাকে এই আয়াত "ফিদয়া হিসেবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে অথবা সা’দকা দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে।" সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। কাব (রাঃ) বললেন, এটা আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার মাথায় কিছু কষ্ট ছিল। আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল এবং তখন আমার মুখমণ্ডলে উকুন গড়িয়ে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যা দেখছি এ পর্যায়ে যে তোমার কষ্ট পৌঁছে গেছে তা আমি চিন্তা করিনি। তুমি কি একটি বকরী সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে? আমি বললাম, না। তখন এই আয়াত নাযিল হয়, “ফিদয়া হিসেবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে, সদকা করতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে।” নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে অর্ধ সা' করে খাদ্য দান কর। কা’ব (রাঃ) বলেন, আয়াতটি বিশেষভাবে আমার প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে কিন্তু এর নির্দেশ সাধারণভাবে তোমাদের সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
২৭৫৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... কাব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইহরাম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওনা হলেন। তার মাথা ও দাঁড়িতে উকুন ধরে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতে পেরে তাকে ডেকে পাঠালেন এবং একজন নাপিতও ডাকলেন। সে তার মাথা মুড়িয়ে দিল। অতঃপর তিনি বললেন, তোমার সাথে কুরবানীর পশু আছে কি? তিনি বললেন, আমি তা সংগ্রহ করতে সক্ষম নই। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের অথবা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে এক সা' করে খাদ্য দান করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহ তা’আলা বিশেষ করে তার প্রসঙ্গে নাযিল করলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে... ” অতঃপর এই আয়াতের নির্দেশ সাধারণভাবে সকল মুসলমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

পরিচ্ছেদঃ ১০. ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো জায়েয


২৭৫৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিংগা লাগিয়ে ছিলেন।
২৭৫৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মক্কায় যাওয়ার পথে নিজের মাথার মধ্যস্থলে শিংগা লাগিয়েছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১১. ইহরাম অবস্থায় চোখের চিকিৎসা করান জায়েয


২৭৫৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... নুবাইহ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (ইহরাম অবস্থায়) আবান ইবনু উসমান (রহঃ) এর সাথে রওনা হলাম। আমরা মালাল নামক স্থানে পৌছলে উমর ইবনু উবায়দুল্লাহর চোখে পীড়া দেখা দিল। রাওহা নামক স্থানে পৌছে তার চোখের ব্যথা আরও তীব্রতর হল। তিনি (নূবাইহ) আবান ইবনু উসমান (রহঃ) এর কাছে (কি করতে হবে তা) জিজ্ঞাসা করার জন্য একজনকে পাঠালেন। তিনি বলে পাঠালেন, চোখে মুসব্বরের প্রলেপ দাও, কারণ উসমান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম অবস্থায় এক ব্যাক্তির চক্ষুরোগ দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চোখে মুসব্বরের প্রলেপ দেন।
২৭৫৯.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... নুবাইহ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উবায়দুল্লাহ ইবনু মা'মার এর পূত্র উমরের চোখ ফুলে উঠলে তিনি সূরমা লাগানোর ইচ্ছা করলেন। কিন্তু আবান ইবনু উসমান (রহঃ) তাকে চোখে সূরমা লাগাতে নিষেধ করলেন এবং মুসব্বরের প্রলেপ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এও বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১২. মুহরিম ব্যক্তির জন্য শরীর ও মাথা ধৌত করা জায়েয


২৭৬০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও মিসওয়ার ইবনু মাখরাম (রাঃ) আবওয়া নামক স্থানে পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত হলেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি মাথা ধৌত করতে পারবে, কিন্তু মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, সে মাথা ধৌত করতে পারবে না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে (অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু হুসায়নকে) এ সম্পর্কিত মাসআলা জানার জন্য আবূ আয়্যুব আনসারী (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। আমি তাকে কুপের দুই খুটির মাঝে গোসলরত অবস্থায় পেলাম। তিনি একখন্ড কাপড় টাঙ্গিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন। 

আমি তাকে সালাম করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে? আমি বললাম, আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন-আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আপনার নিকট এই কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় কিভাবে মাথা ধৌত করতেন? আবূ আয়্যুব (রাঃ) তার হাত টানানো কাপড়ের উপর রাখলেন এবং তা (সামান্য) নীচু করলেন যাতে তার মাথা আমার দৃষ্টিগোচর হল। অতঃপর তিনি তার গোসলে সাহায্যকারী ব্যাক্তিকে পানি ঢালতে বললেন। অতএব সে তার মাথায় পানি ঢালল। এরপর তিনি উভয় হাত সামনে ও পিছনে সঞ্চালন করে নিজের মাথা মললেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ করতে দেখেছি।
২৭৬১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) ... যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে এ সনদ সুত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, আবূ আয়্যুব (রাঃ) তার উভয় হাত সামনে-পেছনে সঞ্চালন করে সম্পূর্ণ মাথা ভালভাবে মললেন। এরপর মিসওয়ার (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললেন, আমি আর কখনও আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হব না।

No comments:

Powered by Blogger.