Saturday, March 29 2025

সহিহ মুসলিম শরীফ ৮ম খন্ড, অধ্যায়ঃ তাকদীর




পরিচ্ছেদঃ ১. মাতৃ উদরে মানুষ সৃষ্টির অবস্থা (ক্রমধারা), তার রিযক, তার মৃত্যু, তার আমল এবং তার দুর্ভাগ্য ও তার সৌভাগ্য লিপিবদ্ধকরণ


৬৪৮২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাদিকুল মাসদূক (সত্যপরায়ণ ও সত্যনিষ্ঠরূপে প্রত্যায়িত) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি (শুক্র) তার মাতৃ উদরে চল্লিশ দিন জমাট থাকে। এরপর অনুরুপ চল্লিশ দিনে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এরপর অনুরুপ চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত পিণ্ডের রুপ নেয়। এরপর আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে একজন ফিরিশতা পাঠানো হয়। সে তাতে রুহ ফুকে দেয়। আর তাঁকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তা হল এই- তার রিযক, তার মৃত্যুক্ষণ, তার কর্ম, এবং তার বদকার ও নেককার হওয়া। 

সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই! নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ জান্নাতীদের মত আমল করতে থাকে। অবশেষে তার ও জান্নাতের মাঝখানে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের ন্যায় কাজ-কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। অবশেষে তার ও জাহান্নামের মাঝখানে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে। এরপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে দাখিল হয়।
৬৪৮৩.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও সাঈদ আশাজ্জু, উবায়দুল্লাহ ইবন মু'আয (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি (আ'মাশ) ওয়াকী বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের কারো সৃষ্টি (শুক্র) তার মাতৃ উদরে চল্লিশ দিন ও রাত জমাট রাখা হয়। আর তিনি শু'বার সূত্রে মু’আয বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, চল্লিশ রাত কিংবা চল্লিশ দিন। কিন্তু জারীর ও ঈসা (রহঃ) এর হাদীসে "চল্লিশ দিন" কথা উল্লেখ রয়েছে।
৬৪৮৪.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... হুযায়ফা ইবনু উসায়দ (রহঃ) থেকে মারফূ সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জরায়ুতে চল্লিশ কিংবা পঁয়তাল্লিশ দিন শুক্র স্থির থাকার পর সেখানে ফিরিশতা প্রবেশ করে। এরপর সে বলতে থাকে, হে পরওয়ারদিগার! (সে কি) দুর্ভাগা না ভাগ্যবান? তখন বিষয় দু'টির একটি লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর সে বলতে থাকে, সে কি পুরুষ না স্ত্রীলোক? তখন সে দুটির একটি লিপিবদ্ধ করা হয়। তার আমল, কর্ম অবদান, নিয়তি ও জীবিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর খাতা (নথিটি) গুটিয়ে ফেলা হয়। পরে তাতে কোন সংযোজন করা হয় না এবং বিয়োজনও নয়।
৬৪৮৫.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আমির ইবনু ওয়াসিলা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, হতভাগ্য সেই ব্যক্তি, যে তার মাতৃ উদর থেকে হতভাগ্য (রূপে জন্মগ্রহণ করেছে)। আর ভাগ্যবান ব্যক্তি সে, যে অন্যের কাছ থেকে উপদেশ লাভ করে। এরপর তিনি [আমির ইবনু ওয়াসিলা (রহঃ)] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী হুযায়ফা ইবনু আসাদ গিফারী (রাঃ) এর কাছে এলেন। তখন তিনি তার কাছে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর উক্তি বর্ণনা করলেন এবং বললেন, আমল ব্যতীত একজন মানুষ কিভাবে দুর্ভাগা (গুনাহগার) হতে পারে? 

এরপর তিনি [হুযায়ফা (রাঃ)] তাকে বললেন, তুমি কি এতে বিস্ময়বোধ করছ? আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ যখন শুক্রের উপর বিয়াল্লিশ রাত (দিন) অতিবাহিত হয়ে যায় তখন আল্লাহ তাআলা একজন ফিরিশতা পাঠান। সে সেটিকে (শুক্রকে) একটি আকৃতি দান করে, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশত ও হাড় সৃষ্টি করে দেয়। এরপর সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! সে কি পুরুষ, না স্ত্রীলোক হবে? তখন তোমার রব যা চান নির্দেশ দেন এবং ফিরিশতা (নির্দেশ মুতাবিক) লিপিবদ্ধ করেন। 

এরপর সে বলতে থাকে, হে আমার প্রতিপালক! তার বয়স কত হবে? তখন তোমার রব যা চান তাই বলেন এবং সেই মুতাবিক ফিরিশতা লিখেন। এরপর সে বলতে থাকে, হে আমার প্রতিপালক! তার জীবিকা কি হবে, তখন তোমার রব তার মর্জি মাফিক মীমাংসা করেন এবং ফিরিশতা তা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর ফিরিশতা তাঁর হাতে একটি লিপি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সে তাতে বাড়ায়ও না এবং কমায়ও না।
৬৪৮৬.    আহমাদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ... আবূ তুফায়ল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বলতে শুনেছেন ...... এরপর তিনি (পূর্বোক্ত) আমর ইবনুল হারিস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৬৪৮৭.    মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ... আবূ তুফায়ল (রহঃ) আবূ সারীহা হুযায়ফা ইবনু আসীদ গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি আমার এই দুই কানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, শুক্র জরায়ুতে চল্লিশ রাত অবস্থান করে। এরপর একজন ফিরিশতা তাকে আকৃতি দান করেন। রাবী যুহায়র (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা মতে তিনি বলেছেন, (যিনি আল্লাহর হুকুমে) তাকে সৃষ্টি করেন। তখন তিনি বলতে থাকেন, হে আমার প্রতিপালক! সে কি পুরুষ না স্ত্রীলোক? এরপর আল্লাহ তাকে পূরুষ কিংবা স্ত্রীলোক বানিয়ে দেন। এরপর তিনি (ফিরিশতা) বলতে থাকেন, হে আমার প্রতিপালক! সে কি পূর্ণাঙ্গ হবে না অপূর্ণাঙ্গ্য? তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণাঙ্গ কিংবা অপূর্ণ করে দেন। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার প্রতিপালক! তার জীবিকা, তার বয়স, তার চরিত্র কি হবে? এরপর আল্লাহ তাকে দুর্ভাগা কিংবা ভাগ্যবান বানিয়ে দেন।
৬৪৮৮.    আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী হুযায়ফা ইবনু আসীদ গিফারী (রাঃ) থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মারফু' সনদে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একজন ফিরিশতা গর্ভাশয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। যখন আল্লাহ্‌ তার নির্দেশক্রমে কোন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করেন তখন চল্লিশ দিনের কিছু বেশী অতিক্রান্ত হলে ...... এরপর তিনি তাদের হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬৪৮৯.    আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে মারফূ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করে দেন। তখন ফিরিশতা বলতে থাকেনঃ হে আমার প্রতিপালক! (এখন তো) বীর্য। হে আমার প্রতিপালক! (এখনও) জমটি রক্ত। হে আমার প্রতিপালক! (এখনও) গোশতের টুকরা। এরপর যখন আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করার ফয়সালা করেন তখন ফিরিশতা বলেন, হে আমার রব! (সে কি) পুরুষ না স্ত্রীলোক, দুর্ভাগা, না ভাগ্যবান হবে? তার জীবিকা (কি হবে)? তার আয়ু (কী হবে)? এরপর নির্দেশ মুতাবিক তার মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই এ সব কিছু লিপিবদ্ধ করা হয়।
৬৪৯০.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বাকী গারকাদে একটি জানাযাতে ছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর পাশে বসলাম। তার সঙ্গে তাঁর একটি ছড়ি ছিল। তিনি মাথা নিচু করে রেখে ছিলেন। সে সময় তিনি তার ছড়ি দ্বারা যমীনে টোকা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার ঠিকানা আল্লাহ তাআলা জান্নাতে ও জাহান্নামে নির্ধারণ করেননি এবং সে (দুর্ভাগা) বদকার হবে না ভাগ্যবান (পূণ্যবান) হবে, তাও লিপিবদ্ধ করেননি এমন কেউ নেই। 

বর্ণনাকারী বলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ !আমরা কি আমাদের অদৃষ্ট লিপির উপর অবস্থান করে আমল ছেড়ে দেব না? তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি নেককারদের অন্তর্ভুক্ত সে নেক্বকারদের আমলের দিকে পরিচালিত হবে। আর যে ব্যক্তি বদকারদের অন্তর্ভুক্ত সে বদকারদের আমলের দিকে পরিচালিত হবে। এরপর বললেনঃ তোমরা আমল করে যাও। প্রত্যেকের পথ সুগম করে দেওয়া হয়েছে। নেক আমলকারীদের জন্য নেক আমল করা সহজ করে দেওয়া হবে। আর বদকারদের জন্য বদকারের আমল সহজ করে দেওয়া হবে। 

এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى * وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى * فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى * وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى * وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى * فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى‏ “সুতরাং যারা দান করল, তাকওয়ার ইখতিয়ার করল এবং যা উত্তম তা গ্রহন করল (সত্য বাস্তবায়ন করল), আমি তাদের জন্য সুখকর (পরিণামের) পথ সুগম করে দেব এবং যারা কৃপণতা করল এবং নিজকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করল অহংকারবোধে লিপ্ত হল আর যা উত্তম তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, আমি তার জন্য কঠোর (পরিণামের) পথ সুগম করে দেব।” (সূরা আল লায়লঃ ৫-১০।)
৬৪৯১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... মানসুর (রহঃ) থেকে এই সনদে উক্ত মর্মে বর্ণনা করেছেন। তিনি (মানসুর) বলেন, তিনি একটি কাষ্ঠখন্ড হাতে নিলেন এবং ছড়ির কথা তিনি বলেননি। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূল আহওয়াস (রহঃ) এর সুত্রে তার হাদীসে বলেছেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন।
৬৪৯২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরাইব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখন্ড কাঠ হাতে নিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তা দ্বারা যমীনে টোকা দিচ্ছিলেন। এরপর তিনি তার মাথা উঠালেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার জান্নাত ও জাহান্নামের ঠিকানা পরিজ্ঞাত (নির্ণীত) নয়। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাহলে আমরা কাজ-কর্ম ছেড়ে কি ভরসা করে বসে থাকব না? তিনি বললেন, না, বরং আমল করতে থাক। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাই তার জন্য সহজ করা হয়েছে। 

এরপর তিনি তিলওয়াত করলেনঃ “সুতরাং যারা দান করল, তাকওয়ার ইখতিয়ার করল এবং যা ভাল তা বাস্তবায়ন করল, ... ... ... কঠোর পরিণামের পথ সুগম করে দেব, পর্যন্ত। (সূরা আল লায়লঃ ৫-১০।)
৬৪৯৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৪৯৪.    আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের দ্বীন স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন, যেন আমরা এই মাত্র সৃষ্ট হয়েছি। আজকের আমল কি ঐ বিষয়ের সম্পৃক্ত যার সম্পর্কে কলমের লিখন শুকিয়ে গেছে এবং তাকদীর কার্যকরী হয়ে গেছে? নাকি আমরা ভবিষ্যতে যার সম্মুখীন হব? তিনি বললেন, না; বরং ঐ বিষয়ের সম্পৃক্ত যার সম্পর্কে লেখনী শুকিয়ে গিয়েছে এবং তাকদীর কার্যকরী হয়ে গেছে। সূরাকা বললেন, তাহলে আমল করার প্রয়োজন কি? যুহায়র বলেন, এরপর আবূ যুবায়র (রাঃ) কিছু কথা বললেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। তখন আমি (লোকদের) জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছেন। তখন তিনি বলেছেন, তোমরা আমল করতে থাক; প্রত্যেকের জন্য (সেই পথ) সুগম করা হয়েছে।
৬৪৯৫.    আবূ তাহির (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই মর্মে হাদীস বর্ননা করেছেন। এই বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আমলকারীকে তার আমল (পথ) সহজ করে দেওয়া হয়েছে।
৬৪৯৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! জাহান্নামীদের থেকে জান্নাতীদের চিহ্নিত করা হয়ে গেছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন জিজ্ঞাসা করা হল, তাহলে আমলকারী কিসের জন্য আমল করবে? তিনি বললেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সেই কাজই সহজ করে দেওয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৬৪৯৭.    শায়বান ইবনু ফররুখ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু নুমায়র, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সব সুত্রেই ইয়াযীদ রিশক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাম্মাদের হাদীসের মর্মে বর্ণনা করেছেন। আর আবদুল ওয়ারিস বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেছেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ।
৬৪৯৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আবূল আসওয়াদ দুআলী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আজকাল লোকেরা যে সব আমল করে এবং যে কষ্ট করে, সে সম্পর্কে তোমার বক্তব্য কি? তা কি এমন কিছু যা তাদের উপর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং ভাগ্যলিপি দ্বারা তাদের উপর পূর্ব নির্ধারিত? নাকি ভবিষ্যতে তারা করবে যা তাদের কাছে তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন এবং যাদের উপর দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? তখন আমি বললাম, বরং ব্যাপারটি তো তাদের উপর অতীতে সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। রাবী বলেন, তখন তিনি বললেন, তাহলে তা কি যুলুম হবে না। তিনি বললেন, এতে আমি খুবই ঘাবড়ে গেলাম এবং বললাম, প্রতিটি বস্তুই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর ক্ষমতাধীন। সুতরাং তিনি যা করেন, সে বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না বরং তাদেরই জবাব দিহি করতে হবে। 

এরপর তিনি আমাকে বললেন, আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন। আমি তোমাকে প্রশ্ন করে তোমার জ্ঞানের (ইলমের যথার্থতা) উপলব্ধি অনুমান করতে চেয়েছিলাম। মুযায়না গোত্রের দুজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোকেরা বর্তমানে যে সব আমল করে এবং কষ্ট করে, সেগুলি কি তাদের জন্য ফয়সালা হয়ে গিয়েছে, আগেই তাকদীর দ্বারা নির্ধারিত, নাকি ভবিষ্যতে তারা সে সব আমল করবে, যা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে নিয়ে এসেছে এবং তাদের উপর দলীল প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ না বরং বিষয়টি তাদের জন্য ফয়সালা করা হয়েছে এবং পূর্ব থেকেই তাদের জন্য তা সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে? আল্লাহর কিতাবে তার প্রমাণঃ "আর কসম মানুষের এবং তার, তিনি তাকে সুঠাম করেছেন, এরপর তাকে তিনি পাপ-পূণ্যের জ্ঞান দান করেছেন।"
৬৪৯৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি দীর্ঘকাল ধরে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করবে। এরপর জাহান্নামীদের আমলের সঙ্গে তার আমল সমাপ্ত করা হল। আর এক ব্যক্তি দীর্ঘকাল ধরে জাহান্নামীদের ন্যায় আমল করবে। এরপর জান্নাতীদের আমলের সঙ্গে তার আমল সমাপ্ত করা হয়।
৬৫০০.    কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি সাধারণ লোকের দৃষ্টিতে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করবে; অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। আবার কোন ব্যক্তি (সাধারণের দৃষ্টিতে) জাহান্নামীদের ন্যায় কাজ করবে অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।

পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক


৬৫০১.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দীনার, ইবনু আবূ উমর মাক্কী ও আহমাদ ইবনু আবদ দাব্বিয়্যু ও তাঊস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) এর মধ্যে বিতর্ক হয়। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদের বঞ্চিত করেছেন এবং জান্নাত থেকে আমাদের বের করে দিয়েছেন। তখন আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেন, আপনি তো মূসা। আল্লাহ তা’আলা আপনার সঙ্গে কথা বলে আপনাকে মনোনীত (সম্মানিত) করেছেন এবং আপনার জন্য তার হাতে লিখে (কিতাব তাওরাত) দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করছেন যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর তর্কে বিজয়ী হলেন। 

আর ইবনু আবূ উমর ও ইবনু আবাদাহ বর্ণিত হাদীসে তাদের একজন বলেছেন, خَطَّ অন্যজন বলেছেন, كَتَبَ তিনি তার হাতে তোমার জন্য তাওরাত লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন।
৬৫০২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) পরস্পরে বিতর্কে অবতীর্ণ হলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তো সেই আদম (আলাইহিস সালাম) যিনি লোকদের গোমরাহ করেছেন এবং জান্নাত থেকে তাদের বহিস্কার করেছেন। তখন আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তো সেই ব্যক্তি (নাবী) যাতে আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে ইলম দান করেছেন এবং রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হ্যাঁ। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি ব্যাপারে ভৎসনা করেছেন, যা আমার সৃষ্টির পূর্বে আমার উপর নির্ধারণ করা হয়েছে।
৬৫০৩.    ইসহাক ইবনু মূসা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মূসা, ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আনসারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁদের প্রতিপালকের কাছে তর্কে অবতীর্ণ হলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর বিজয়ী হলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তো সেই আদম (আলাইহিস সালাম) যাকে আল্লাহ তা’আলা আপন হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মাঝে তিনি তাঁর রুহ ফুঁকে দিয়েছেন, তিনি তাঁর ফিরিশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং তাঁর জান্নাত আপনাকে বসবাস করতে দিয়েছেন। এরপর আপনি আপনার ভুলের দ্বারা মানুষকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছেন। 

আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তো সেই মূসা (আলাইহিস সালাম) যাকে আল্লাহ তা’আলা রিসালাতের দায়িত্ব ও তার কালামসহ বিশেষ মর্যাদায় মনোনীত করেছেন এবং আপনাকে দান করেছেন ফলকসমূহ (তাওরাত কিতাব), যাতে সব কিছুর বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে এবং একান্তে কথোপকথনের জন্য অন্যান্যকে নৈকট্য দান করেছেন। আচ্ছা আমার সৃষ্টির কত বছর আগে আল্লাহ তায়ালা তাওরাত লিপিবদ্ধ করেছেন বলে আপনি দেখতে পেয়েছেন? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, চল্লিশ বছর আগে। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি তাতে একথা পেয়েছেন, আদম তাঁর প্রতিপালকের নির্দেশ অমান্য করেছে এবং পথ হারা হয়েছে। বললেন, হ্যাঁ।

আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর আপনি আমাকে আমার এমন কাজের জন্য কেন তিরস্কার করছেন যা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগে আল্লাহ তাআলা আমার উপর নির্ধারণ করে রেখেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর বিজয়ী হলেন।
৬৫০৪.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) বিতর্কে লিপ্ত হলেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বলেছেন, আপনি তো সেই আদম (আলাইহিস সালাম) যাকে তাঁর ভুল জান্নাত থেকে বহিস্কৃত করেছে। তখন আদম (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, তুমি তো সেই মূসা আল্লাহ তা’আলা যাকে তার রিসালাত ও কালামের জন্য মনোনীত করেছেন। এরপরও তুমি আমাকে ভৎসনা করছো, এমন একটি বিষয়ের কারণে, যা আমার সৃষ্টির পুর্বেই আমার উপর নির্ধারিত হয়েছিল। ফলে আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর বিজয়ী হলেন।
৬৫০৫.    আমর নাকিদ ও ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ... তাদের হাদীসের মর্মের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৫০৬.    মুহাম্মাদ ইবনু মিনহাল দারীর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৫০৭.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সারহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁআলা সমগ্র সৃষ্টির ভাগ্যলিপি আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সে সময় আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল।
৬৫০৮.    ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামিমী (রহঃ) ... আবূ হানী (রাঃ) এর সুত্রে এই সনদে তার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে পার্থক্য এইটুকু যে, তারা দুজন “তার আরশ পানির উপর” কথাটি উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ৩. আল্লাহ্‌ তা'আলা যেভাবে চান কলবসমূহ পরিবর্তিত করেন


৬৫০৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের কলবসমূহ পরম দয়াময় (আল্লাহ তাআলা) এর দু'আংগুলের মাঝে একটি মাত্র কলবের মত। তিনি যে ভাবে ইচ্ছা তা ওলট পালট করেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "কলব সমূহ পবিচালনাকারী হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কলবকে আপনার আনুগত্যের উপর স্থির রাখুন।"

পরিচ্ছেদঃ ৪. সকল কিছুই পরিমিত মাত্রায় (সৃষ্ট)


৬৫১০.    আবদুল আ'লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবীকে দেখতে পেয়েছি। তারা বলতেন যে, সকল কিছুই পরিমিত মাত্রায় (সৃষ্ট)। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল কিছুই পরিমিত মাত্রায় সৃষ্ট এমনকি অক্ষমতা ও প্রজ্ঞাও অথবা প্রজ্ঞা ও অক্ষমতাও।
৬৫১১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্রের মুশরিকরা তাকদীর সম্পর্কে বিতর্কের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসল। তখন এই আয়াত নাযিল হলঃ "যেদিন তাদের অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং বলা হবে জাহান্নামের আগুনের দহনস্বাদ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই আমিসব কিছুই পরিমিত পরিমাণে সৃষ্টি করেছি।"

পরিচ্ছেদঃ ৫. বনী আদমের যিনা ইত্যাদির অংশ পূর্ব নির্ধারিত


৬৫১২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) যা বলেছেন, 'লামাম' (জাতীয় গোনাহ) সম্পর্কে তার চাইতে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন কিছু আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ আদম সন্তানের যিনার যে অংশ নির্ধারিত করেছেন, তা সে অবশ্যই পাবে (করবে)। আর দু'চোখের যিনা দৃষ্টিপাত করা, কানের যিনা শ্রবণ করা, জিহ্বার যিনা কথোপকথন করা, অন্তরে বাসনা করে। আর লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে কিংবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) তাঊস (রহঃ) এর বর্ণনায় বলেছেন যে, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে শুনেছি।
৬৫১৩.    ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের উপর যিনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। দু'চোখের যিনা হল দৃষ্টিপাত করা, দু’কানের যিনা হল শ্রবণ করা, জিহ্বার যিনা হল কথোপকথন করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হল হেঁটে যাওযা, অন্তরের যিনা হল আকৃষ্ট ও বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।

পরিচ্ছেদঃ ৬. 'প্রত্যেক নবজাতক নিষ্পাপ অবস্থায় জন্মগ্রহন করে' এর অর্থ এবং কাফিরদের ও মুসলিমদের মৃত শিশুদের বিষয়ে হুকুম


৬৫১৪.    হাজিব ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি নবজাতক ফিতরাতে জম্ম গ্রহণ করে। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী বানায়, খ্রীষ্ট্রান বানায় এবং অগ্নিপূজক বানায়, যেমন চতুষ্পদ জানোয়ার পূর্ণাঙ্গ চতুষ্পদ বাচ্চা প্রসব করে। তোমরা কি তাতে কোন কর্তিত অঙ্গ (বাচ্চা) দেখ? এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, তোমরা চাইলে এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতে পারঃ আল্লাহর ফিতরাতে (অবিচল থাক) যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।
৬৫১৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... অন্য সুত্রে আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। রাবী [মা'মার (রহঃ)] বলেছেন, যেমন চতুষ্পদ জানোয়ার বাচ্চা প্রসব করে; তিনি جَمْعَاءَ (পূর্ণাঙ্গ) শব্দটি উল্লেখ করেননি।
৬৫১৬.    আবূ তাহির ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটি শিশু ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করে। এরপর তিনি বলেছেন, তোমরা তিলাওয়াত করতে পারঃ "আল্লাহর ফিতরাত (স্থির থাক) তাই যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এ-ই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন।"
৬৫১৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের (তাওহীদের উপরে নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী বানায়, খ্রীষ্টান বানায় এবং মুশরিক বানায়। তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি সে এর আগেই মারা যায় তাহলে সে সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন, আল্লাহই ভাল জানেন বেঁচে থাকলে তারা কি কাজ করত।
৬৫১৮.    আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইবন নুমায়র (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু নুমায়র বর্ণিত হাদীসে- "প্রত্যেকটি শিশু মিল্লাতে ইসলামীর উপর জন্মগ্রহণ করে" আর আবূ মুআবিয়া (রহঃ) এর সুত্রে আবূ বকর (রহঃ) এর বর্ণনায় “এই মিল্লাতের উপর জন্ম গ্রহণ করে, এমনকি মুখে স্পষ্ট করে কথা বলা পর্যন্ত (তার উপর বাহন থাকে)” এবং আবূ মুআবিয়া (রহঃ) এর সূত্রে আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণনায় "এমন কোন শিশু নেই যা এই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে না, এমনকি তার জিহ্বা তার সম্পর্কে ব্যক্ত করা পর্যন্ত" রয়েছে।
৬৫১৯.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এই হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেন। সেগুলোর একটি এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে শিশু ভূমিষ্ঠ হয় সে এই ইসলামী ফিতরাতের উপরই ভুমিষ্ঠ হয়। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী বানায়, খ্রীঁষ্ট্রান বানায়, যেমন তোমরা উটের বাচ্চা প্রসব করাও। তোমরা কি তাদের মধ্যে কানকাটা দেখতে পাও? বরং তোমরাই সেগুলোর কান কেটে দিয়ে থাক। লোকেরা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে বাচ্চাটি শৈশবেই মারা যাবে, তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।
৬৫২০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি মানব সন্তানকে তার মা ফিতরাতের উপর জন্মদান করে। পরে তার পিতামাতাই তাকে ইয়াহুদী বানায়, খ্রীষ্ট্রান বানায় এবং অগ্নি উপাসক বানায়। যদি তার পিতামাতা মুসলিম হয়ে থাকে, তাহলে শিশুটি মুসলিম হবে। প্রত্যেক মানব শিশুকে তার মাতার প্রসবকালে শয়তান তার দু'পাঁজরে খোচা দিয়ে থাকে। তবে মারইয়াম ও তার পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে শয়তান খোঁচা দিতে পারেনি।
৬৫২১.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের সন্তানাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ সে সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।
৬৫২২.    আবদ ইবনু হুমায়দ, আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু বাহরাম ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে ইউনূস ও ইবনু আবূ যিব (রহঃ) এর সনদে তাদের দু'জনের (শুআয়ব ও মা'কিল) হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে শুআয়ব ও মা'কিল বর্ণিত হাদীসে একটু পার্থক্য আছে। তথায় أَوْلاَدِ الْمُشْرِكِينَ এর স্থলে ذَرَارِيِّ الْمُشْرِكِينَ (মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি) উল্লেখ আছে।
৬৫২৩.    ইবনু উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকদের শিশু যারা মারা যায়, তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হল। তখন তিনি বললেনঃ তারা (বেঁচে থাকলে) যা করত সে বিষয়ে আল্লাহই ভাল জানেন।
৬৫২৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের শিশুদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন তিনি বললেনঃ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। কেননা তিনিই তাদের সৃষ্টি করেছেন।
৬৫২৫.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই যে বালকটিকে খিযির (আলাইহিস সালাম) (আল্লাহর নির্দেশে) হত্যা করেছিলেন সে জন্মগত কাফির ছিল। যদি সে বেঁচে থাকত তাহলে সে তার পিতামাতাকে অবাধ্যতা ও কুফরী কাজে বাধ্য করত।
৬৫২৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি বালক মারা গেলে আমি বললাম, তার জন্য সুসংবাদ। সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের অন্যতম (অর্থাৎ অবাধে বিচরণ করবে)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি জাননা যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন জান্নাত এবং সৃষ্টি করেছেন জাহান্নাম। এরপর তিনি এর (জান্নাতের) জন্য উপযুক্ত অধিবাসী এবং এর (জান্নামের) জন্য যোগ্য অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন।
৬৫২৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আনসার বালকের জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই বালকটি তো ভাগ্যবান। সে ভো জান্নাতের চড়ৃই পাখিদের অন্যতম। সে মন্দকাজ করেনি এবং পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বললেন, এ ছাড়া অন্য কিছু হে আয়িশা! (ভাবো ও বল) নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের অধিবাসীদের সৃষ্টি করেছেন তাদের তার (জান্নাতের) জন্যই পয়দা করেছেন এবং যখন তারা তাদের বাপ দাদা (পূর্ব পুরুষের) ঔরসে ছিল। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন জাহান্নামের জন্য তার যোগ্য অধিবাসীদের। যখন তারা তাদের বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল।
৬৫২৮.    মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ), সুলায়মান ইবন মা'বাদ, ইসহাক ইবন হাফস, ইসহাক ইবন মানসুর (রহঃ) ... তালহা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ওয়াকী (রহঃ) এর সনদে তার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭. বয়স, জীবিকা ইত্যাদি নির্ধারিত তাকদীর থেকে হ্রাস-বৃদ্ধি পায় না


৬৫২৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আমার স্বামী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার পিতা আবূ সুফিয়ান ও আমার ভাই মুআবিয়া (রাঃ) এর দ্বারা আমাকে উত্তম সম্পদ দান করুন (তাদের দীর্ঘজীবী করুন)। আবদুল্লাহ বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তো আল্লাহর কাছে নির্ধারিত বয়স, সীমিত সময় এবং বণ্টনকৃত জীবিকা সম্পর্কে প্রার্থনা করলে। এগুলো কখনোই তার নির্ধারিত সময় থেকে ত্বরান্বিত করবেন না কিংবা বিলম্বিতও করবেন না। 

যদি তুমি আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য কিংবা কবরের আযাব থেকে বাঁচার জন্য দুআ করতে তাহলে উত্তম ও শ্রেয় হত। তিনি বলেন, তাঁর কাছে (বনী ইসরাঈলের) বানরে রুপান্তরিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হল। মিস'আর বলেন, আমি মনে করি, শুকরে রুপান্তরিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তাআলা যাদের আকৃতি পরিবর্তন করেছেন তাদের কোন বংশ বা উত্তরসূরী রাখেননি। ঐ বিকৃতির পূর্বেও পৃথিবীতে বানর ও শূকর ছিল।
৬৫৩০.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... মিসআর থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু বিশর ও ওয়াকী থেকে তার হাদীসে مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ (জাহান্নামের আগুন এবং কবর আযাব থেকে) উল্লেখ রয়েছে।
৬৫৩১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আমার স্বামী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার পিতা আবূ সুফিয়ান ও আমার ভাই মুআবিয়া (রাঃ) দ্বারা আমাকে উত্তম সম্পদ দান করুন (তাদের দীর্ঘজীবী করুন)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি তো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে নির্ধারিত বয়স, সীমাবদ্ধ অবকাশ এবং বণ্টিত জীবিকার, যার কিছুই তার নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ত্বরান্বিত করবেন না এবং নির্ধারিত সময় হওয়ার পরে বিলম্বিত করবেন না। 

যদি তুমি আল্লাহর কাছে দুআ করতে যেন তিনি তোমাকে জাহান্নামের আযাব থেকে এবং কবর আযাব থেকে রেহাই দান করেন তাহলে তা তোমার জন্য খুবই ভাল হতো। বর্ণনাকারী বলেন, জনৈক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই বানর ও শূকরগুলোই কি বিকৃতি প্রাপ্ত দল? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা যে জাতিকে ধ্বংস করেন কিংবা যে জাতিকে (বিকৃতি ঘটিয়ে) আযাব দেন, তাদের বংশধর অবশিষ্ট রাখেন না। আর বিকৃতি ঘটার পূর্বেও পৃথিবীতে বানর ও শূকর ছিল। 

আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনু মা'বাদ (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে آثَارٍ مَوْطُوءَةٍ এর স্থলে آثَارٍ مَبْلُوغَةٍ (সীমিত সঙ্গতি) রয়েছে। ইবনু মা'বাদ (রহঃ) বলেছেন, قَبْلَ حِلِّهِ অর্থাৎ نُزُولِهِ (অবতরনের পূর্বে)।

পরিচ্ছেদঃ ৮. কাজকর্মে শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা পরিহারের নির্দেশ এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ও তাকদীরকে আল্লাহর উপর ভরসা করা


৬৫৩২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শক্তিশালী মুমিন দুর্বলের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয়। প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে, যাতে তোমার উপরকার হবে তার প্রতি তুমি লালায়িত হয়ো এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর এবং অক্ষম হয়ে থেকো না। যদি কোন কিছু (বিপদ) তোমার উপর আপতিত হয় তবে এরূপ বলবে না যে, যদি আমি এরূপ করতাম তবে এরূপ এরূপ হত। বরং এই বল যে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা, তোমার لَوْ (যদি) শব্দটি শয়তানের আমলের দুয়ার খুলে দেয়।

No comments:

Powered by Blogger.