Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ হাজ্জ-৬ষ্ট




৩১৬০.    সাঈদ ইবনু মানসূর মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালেক, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৬১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই (কাবা) ঘরে (হজ্জের উদ্দেশ্যে) আসে অতঃপর অশ্লীল আচরণও করে না এবং দুষ্কর্মও করে না সে এমন (নিষ্পাপ) ভাবে প্রত্যাবর্তন করে যে তার জননী তাকে (নিষ্পাপ অবস্হায়) প্রসব করেছেন।
৩১৬২.    সাঈদ ইবনু মানসুর আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... মানসূর (রহঃ) থেকে এই সনদের পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসটি এভাবে শুরু হয়েছে "যে ব্যক্তি হাজ্জ (হজ্জ) করে এবং (এ সময়) কোনরূপ অশ্লীল আচরণও করে না, দুস্কর্মও করে না।"
৩১৬৩.    সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৬৪.    আবূ তাহির (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ ইবনু হারিসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি কি মক্কায় আপনার বাড়ীতে অবতরণ করবেন? তিনি বললেনঃ আকীল কি আমাদের জন্য কোন চার দেয়াল বা ঘর অবশিষ্ট রেখেছে? আবূ তালিবের (মৃত্যুর পর তার পুত্র) আকীল ও তালিব তার ওয়ারিস হয়, কিন্তু জাফর ও আলী তার কোন ওয়ারিস হতে পারে নি। কেননা তারা উভযে (আবূ তালিবের মৃত্যুর সময়) ছিলেন মুসলমান এবং আকীল ও তালিব ছিল কাফির।
৩১৬৫.    মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাযী (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আগামীকাল কোথায় অবতরণ করবেন? এটা ছিল তাঁর বিদায় হাজ্জকালীন ঘটনা, যখন আমরা মক্কার নিকটবর্তী হয়েছিলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ আকীল কি আমাদের জন্য কোন বাসস্থান অবশিষ্ট রেখেছে?
৩১৬৬.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর মর্জি আপনি আগামীকাল কোথায় অবতরণ করবেন? এটা মক্কা বিজয়কালের বক্তব্য। তিনি বললেনঃ আকীল কি আমাদের জন্য কোন বাসস্থান অবশিষ্ট রেখেছে?
৩১৬৭.    আবদুল্লাহ মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, হাজ্জ (হজ্জ) সমাপনান্তে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে মুহাজিরগণ তিনদিন মক্কায় অবস্থান করবে। তিনি যেন এ বাক্যের দ্বারা তিন দিনের অধিক না হবার কথা বলেছেন।
৩১৬৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহাজিরগণ হাজ্জ (হজ্জ) সমাপান্তে মক্কায় তিন দিন অবস্থান করতে পারবে।
৩১৬৯.    হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আলা ইনবুল হাযরামী (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছিঃ হাজ্জ (হজ্জ) সমাপনান্তে মুহারিজগণ তিন রাত মক্কায় অবস্থান করবে।
৩১৭০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হজ্জের অনুষ্ঠানাদি শেষ করার পর মুহাজিরগণ মক্কায় তিন দিন অবস্থান করতে পারবে।
৩১৭১.    হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ... ইবনু জুরাইজ (রহঃ) থেকে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৭২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, হিরতের আর প্রয়োজন নেই, কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত থাকবে। তোমাদেরকে যখন জিহাদের আহবান জানানো হয তখন জিহাদে যোগদান কর। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি আরও বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা এই শহরকে সম্মানিত করেছেন- যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকে। অতএব কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা এই শহরের মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখবেন। তিনি এই শহরে আমার পূর্বে আর কারও জন্য যুদ্ধ বৈধ করেননি। আমার জন্য মাত্র একদিনের কিছু সময় এখানে যুদ্ধ বৈধ করেছিলেন। অতএব তথায় যুদ্ধ বিগ্রহ করা হারাম। আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক কিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার কারণে এখানকার কোন কাঁটাযুক্ত গাছ উপড়ানো যাবে না, এখানকার শিকারের পশ্চাদ্ধাবণ করা যাবে না, এখানকার পতিত জিনিস তোলা যাবে না। তখন আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ কিন্তু ইযখির (লম্বা ঘাস) সম্পর্কে (অনুমিত দিন)। কারণ তা স্বর্ণকার ও ঘরের কাজে লাগে। তিনি বললেনঃ কিন্তু ইযখির (তোলার অনুমতি দেয়া হল)।
৩১৭৩.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... মানসূর (রহঃ) থেকে এই সুত্রে সামান্য শাব্দিক পার্থক্য সহোকারে উপরোক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে "যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন" কথাটুকুর উল্লেখ করেননি এবং 'কিতাল' শব্দের পরিবর্তে 'কতল' শব্দ ব্যবহার করেছেন।
৩১৭৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ শুরাইহ আদাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমর ইবনু সাঈদ (ইবনুল আস ইবনু উমায়্যা) যখন মক্কা অভিযানের উদ্দেশ্যে সৈন্য বাহীনিসহ রওনা করেন তখন আবূ শুরায়হ (রাঃ) তাকে বলেন, হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন একটি কথা বলতে যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন সকাল বেলা দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- যা আমার দুই কান শুনেছে, আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে এবং উভয় চোখ সেই দৃশ্য দেখেছে। যখন তিনি তা বলেছিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয়ই মক্কাকে আল্লাহ তা’আলা হারামে পরিণত করেছেন- কোন মানুষ তাকে হারাম সব্যস্ত করে নি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে- তার পক্ষে সেখানে রক্ত প্রবাহিত করা বা সেখানকার কোন গাছ উপড়ানো হালাল নয়।

যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের উদাহরণ পেশ করে এখানে রক্তপাত বৈধ করতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও, আল্লাহ তা’আলা তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এজন্য অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তোমাদের জন্য কখনও অনুমতি দেননি। আর আমার জন্য তিনি এক দিনের সামান্য সময় সেখানে যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছিলেন। আজকে তার সেই হুরমাত (মর্যাদা) গতকালের মত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিত লোকেরা যেন (একথা) অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছে দেয়। 

আবূ শুয়ারাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল- আমর আপনাকে কি জবাব দিল? তিনি বললেন, হে আবূ শুরাইহ! এ সম্পর্কে আমি আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞাত আছি। নিশ্চয়ই হারাম শরীফ কোন পাপীকে, কোন হত্যাকারীকে এবং কোন পলাতক অনিষ্টকারীকে আশ্রয় দেয় না।
৩১৭৫.    যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ওয়ালীদ থেকে, তিনি আওযায়ী থেকে, তিনি ইয়াহইয়া ইবন আবু কাসীর থেকে, তিনি আবু সালামা থেকে তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মক্কা বিজয় দান করলেন- তখন তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চিত আল্লাহ তায়ালা হস্তি বাহিনীর মক্কায় প্রবেশে বাধা প্রদান করেছেন এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিনদেরকে মক্কা অতিযানে বিজয়ী করেছেন। আমার পূর্বে কারও জন্য এখানে রক্তপাত বৈধ ছিল না। আর আমার জন্যও একদিনের কিছু সময় এখানে যুদ্ধ করা হালাল করা হয়েছিল। আমার পরে আর কারও জন্য তা কখনও হালাল হবে না। অতএব এখানকার শিকারের পশ্চাদারণ করা যাবে না, একানকার কাঁটাদার গাছও উপড়ানো যাবে না এবং এখানকার পতিত জিনিস তোলা যাবে না। তবে ঘোষণা প্রদানকারী (তা তুলে নিতে পারবে)। 

কারও কোন আত্নীয় নিহত হলে তার জন্য দুটি অবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের অধিকার রয়েছেঃ হয় ফিদয়া (রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে নতুবা হত্যাকারীকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করবে। আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিন্তু ইযখির ঘাস যা আমরা কবরে দিয়ে থাকি এবং আমাদের ঘরের চালায় ব্যবহার করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিন্তু ইযখির ঘাস (এর কাটার অনুমতি দেওয়া হল)। ইয়ামানের অধিবাসী আবূ শাহ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে (একথাগুলো) লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। ওয়ালীদ (রহঃ) বলেন, আমি আওয়াঈকে (রহঃ) জিজ্ঞাসা করলামঃ "হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন"--- তাঁর একথার অর্থ কি? তিনি বললেন, যে ভাষণ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিতে শুনলেন তা।
৩১৭৬.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বানু খুযা'আ বানু লাইসের এক ব্যাক্তিকে হত্যা করলে তাদের এক নিহতের প্রতিশোধ স্বরুপ তাকে বানু লায়স হত্যা করেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌছলে তিনি নিজ সাওয়ারীতে আরোহণ পূর্বক ভাষণ দেন এবং বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা হস্তি বাহিনীর মক্কায় প্রবেশ প্রতিরোধ করেন এবং তাঁর রাসুল ও মুমিনদেরকে এর উপর বিজয়ি করেন। সাবধান! আমার পর কারও জন্য এখানে রক্তপাত হালাল ছিলনা এবং আমার পরেও কখনও কারও জন্য তা হালাল নয়। জেনে রেখ, আমার জন্যও এক দিনের সামান্য সময় এখানে (রক্তপাত) বৈধ করা হয়েছিল। 

সাবধান! এই মুহূর্তে আবার তা (আমার জন্যও) হারাম হয়ে গেল। অতএব এখানকার কাঁটাযুক্ত বৃক্ষও উপড়ানো যাবে না, গাছপালাও কাটা যাবে না এবং পথে পড়ে থাকা বস্তুও তোলা যাবে না। তবে ঘোষণা প্রদানকারী ব্যক্তি (তা তুলতে পারবে)। যার কোন আত্নীয় নিহত হয়েছে তার দু টি ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। হয় ফিদয়া (রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে, নতুবা কিসাস স্বরুপ হত্যাকারীকে হত্যা করতে হবে। 

রাবী বলেন, আবূ শাহ (রাঃ) নামক ইয়ামানের এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে লিখে দিন। তিনি বললেনঃ তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। কুরায়শ বংশের এক ব্যক্তি বললেন, কিন্তু ইযখির ঘাস আমরা তো তা আমাদের ঘর তৈরির কাজে এবং কবরে ব্যবহার করে থাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইযখির ঘাস ছাড়া।
৩১৭৭.    সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো জন্য মক্কায় অস্ত্র বহন করা হালাল নয়।
৩১৭৮.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা'নাবী ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবন সাঈদ মালিক থেকে তিনি ইবন শিহাব থেকে এবং তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। ইয়াহইয়ার বর্ণনায় হাদিসটি এখানে উদ্ধৃত হল। তিনি বলেন, আমি মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, যুহরী আনাস (রাঃ) সুত্রে কি আপনার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময়ে লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করলেন। তিনি যখন তা মাথা থেকে নামিয়ে রাখলেন তখন এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে হত্যা কর। (ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ইমাম মালিককে জিজ্ঞাসা করেন যে, ইমাম যুহরী (রহঃ) আনাস (রাঃ) এর সুত্রে তাঁকে এই হাদীস বলেছেন, কিনা), তিনি বলেন, হ্যাঁ।
৩১৭৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ সাকাফী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন। কুতায়বা (রহঃ) বলেনঃ তিনি মক্কা বিজয়ের দিন ইহরামবিহীন অবস্থায় কালো পাগড়ী পরিধান করে মক্কায় প্রবেশ করেন। কুতায়বা (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো পাগড়ী পরিধান করে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করেন।
৩১৮০.    আলী ইবনু হাকীম আওদী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন।
৩১৮১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাফর ইবনু আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় লোকদের উদ্দেশ্যে (মক্কা বিজয়ের দিন) ভাষণ দেন।
৩১৮২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও হাসান আল-হুলওয়ানী (রহঃ) ... জাফর ইবনু আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় মিম্বরের উপর (উপবিষ্ট) দেখতে পাচ্ছি এবং তিনি পাগড়ীর দুই প্রান্ত কাঁধের মাঝ বরাবর ঝুলিয়ে রেখেছেন। আবূ বকর (রহঃ) এর বর্ণনায় "মিম্বারের উপর" কথাটুকু উল্লেখ নাই।
৩১৮৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ইবনু আসিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারাম বানিয়েছেন এবং এখানকার বাসিন্দাদের জন্য দুআ করেছেন। আর আমি নিশ্চয়ই মদিনাকে হারামে পরিণত করলাম ঠিক যেভাবে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারামে পরিণত করেছেন। আমি এখানকার মুদ্দ ও সা' (ওজন পরিমাপের দু'টি একক) এর জন্য দুআ করলাম যেরুপ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কার অধিবাসীদের জন্য দু’আ করেছেন।
৩১৮৪.    আবূ কামিল আল জাহদারী আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইরবাহীম (রহঃ) ... আমর ইবনু ইয়াহইয়া মাযিনী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৮৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারামে পরিণত করেছেন, আর আমি দুটি কৃষ্ণ প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম ঘোষণা করছি। তিনি মদিনাকে বুঝিয়েছেন।
৩১৮৬.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... নাফি ইবনু জুবায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মারওয়ান ইবনু হাকাম লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি মক্কা ও তার বাসিন্দা এবং এর হারামের মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। তখন রাফিা ইবনু খাদীজ (রাঃ) তাকে ডাক দিয়ে বললেন, কি ব্যাপার! আমি আপনাকে মক্কা, তার অধিবাসী এবং তার হারামের মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করতে শুনছি, অথচ মদিনা, তার অধিবাসী এবং তার হারামের মর্যাদা সম্পর্কে আপনি কিছুই বললেন না; অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার দুই প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই হাদীস আমাদের নিকট একটি খাওলানী চামড়ায় লিপিবদ্ধ আছে। আপনি চাইলে আমি তা আপনার সামনে পড়ে শোনাতে পাবি। রাবী বলেন, মারওয়ান চুপ হয়ে গেলেন, তারপর বললেন, অবশ্য আমিও এ রকম কিছু শুনেছি।
৩১৮৭.    আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কার হারাম নির্ধারণ করেছেন, আর আমি মদিনাকে হারাম বলে ঘোষণা করছি- এর দুই প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে। অতএব এখানকার কোন কাটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না।
৩১৮৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আমির ইবনু সা'দ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মদিনার দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে হারাম বলে ঘোষণা দিচ্ছি এখানকার কাটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, মদিনা তার অধিবাসীদের জন্য কল্যাণকর স্থান, যদি তারা বুঝে। যে ব্যক্তি অনাগ্রহবশত মদিনা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার চাইতে উত্তম ব্যক্তিকে তার স্থলবর্তী করেন। আর যে ব্যক্তি এখানে ক্ষুধা ও কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করে, আমি তার জন্য কিয়ামতের দিন শাফা'আতকারী অথবা বলেছেন, সাক্ষী হব।
৩১৮৯.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পরবর্তী অংশ উপরোক্ত ইবনু নুমায়রের অনুরূপ। তবে এই হাদীসে অতিরিক্ত আছে যে, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ) যে ব্যক্তিই মদিনাবাসীদের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে দোযখের আগুনে এমনভাবে বিগলিত করবেন, যেভারে আগুনের তাপে সীসা গলে যায় অথবা লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়।
৩১৯০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। সা’দ (রাঃ) আল-আকীকে তার আবাসে রওনা হলেন। পথিমধ্যে তিনি একটি ক্রীতদাসকে একটি গাছ কাটতে অথবা (লাঠি দিয়ে) এর পাতা ঝরাতে দেখলেন। অতএব তিনি তার অস্ত্র কেড়ে নিলেন। তিনি ফিরে এলে ঐ গোলামের মনিব এসে তার সাথে আলাপ করলেন এবং তাদের গোলামের নিকট থেকে তিনি যা কেড়ে নিয়েছেন তা তাদের কাছে অথবা তাদের গোলামের কাছে ফেরত দিতে অনুরোধ করলেন। তিনি বললেন, যে জিনিস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপহার স্বরুপ দিয়েছেন তা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। অতএব তিনি তা ফেরত দিতে অস্বীকার করলেন।
৩১৯১.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব (রহঃ) ... আমর ইবনু আবূ আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ) কে বললেনঃ তোমাদের বালকদের মধ্য থেকে একজন বালক আমার খিদমতের জন্য খুজে আন। অতএব আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে বাহনে তার পিছনে বসিয়ে রওনা হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই (বাহন থেকে) অবতরণ করতেন, আমি তার প্রয়োজনীয় সেবা করতাম। 

এই হাদীসে তিনি আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর হতে থাকলেন এবং উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টি গোচর হল তিনি বললেনঃ "এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।" তিনি যখন মদিনার নিকটবর্তী হলেন তখন বললেনঃ "হে আল্লাহ! তাদের (মদিনার অধিবাসীদের) মুদ্দ ও সা' এ বরকত দান করুন।"
৩১৯২.    সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত এই যে, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "আমি মদিনার দুই প্রান্তের কংকরময় মাঠের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করছি।"
৩১৯৩.    হামিদ ইবনু উমর (রহঃ) ... আসিম (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মদিনাকে হারাম করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এখানে থেকে ওখানের মধ্যেবর্তী স্থান। অতএব যে ব্যাক্তি এখানে কোন পাপ করে, পড়ে তিনি আমাকে বললেন, এটা খুবই কঠিন যে, যে এখানে কোন পাপ করে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতা এবং সমগ্র মানব জাতির লা'নত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফরয অথবা নফল কোন ইবাদতই কবুল করবেন না। রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) এর পুত্র বললেন, “অথবা যে কোন পাপীকে আশ্রয় দিল।”
৩১৯৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আসিম আল আহওয়াল (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকে হারাম করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তা হারাম। অতএব এখানকার উদ্ভিদ উপড়ানো যাবে না। যে ব্যক্তি তা করবে তার উপর আল্লাহ, তার ফিরিশতা এবং সমগ্র মানব জাতির লানত।
৩১৯৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! তাদের বরকত দান করুন দাঁড়িপাল্লায়, তাদের সা’ এ এবং তাদের মুদ্দ-এ।
৩১৯৬.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ সাম্মী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি মক্কায় বরকত দান করেছেন, মদিনায় তার দ্বিগুন বরকত দান করুন।
৩১৯৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবরাহীম তায়মী (রহঃ) থেকে তিনি তাঁর পিতার সূত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষন দিলেন। তিনি বললেন যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আমাদের (আহলে বাইত) কাছে আল্লাহর কিতাব ছাড়া যা আমরা পাঠ করি এবং এ সহীফা রাবী বলেন, অর্থাৎ ঐ সহীফা, যা তার তরবারীর খাপে ঝুলন্ত ছিল তা ছাড়া কিছু আছে, সে মিথ্যা বলে। এই সহীফায় উটের বয়স এবং কিছু যখমের বর্ণনা ছিল। এর মধ্যে আরও ছিল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনার আইর ও সাওর এর মধ্যবর্তী স্থান হারাম। এখানে যে ব্যক্তি কোন বিদআতী কর্মে লিপ্ত হয় অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তার ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লানত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না। 

মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে সকলে সমান। তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকর। যে ব্যক্তি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করে অথবা নিজ মনিবের পরিবর্তে অন্য মনিবের সাথে নিজেকে সম্পর্কিত করে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লানত। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল কোন ইবাদতই গ্রহণ করবেন না। রাবী বলেন, আবূ বকর ও যূহায়রের হাদীস শেষে হয়ে গেছে "তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকরী" এই কথা পর্যন্ত। তারা এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি। তাদের উভয়ের বর্ণনায় "তাঁর তরবারীর খাপে ঝুলন্ত" কথটুকু উল্লেখিত হয় নি।
৩১৯৮.    আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে উল্লেখ আছে যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সাথে (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর) বিশ্বাসঘাতকতা করে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লানত। কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না। তাদের (আলী ও ওয়াকী) উভয়ের বর্ণনায় "যে ব্যক্তি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করে" কথাটুকুর এবং ওয়াকীর বর্ণনায় "কিয়ামতের দিন" কথাটুকুর উল্লেখ নাই।
৩১৯৯.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে ইবনু মুসহির ও ওয়াকীর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এদের বর্ননায় "যে গোলাম নিজের মনিবের পরিবর্তে অন্যকে নিজের মনিব বলে পরিচয় দেয়" কথাটুকু নেই। আর তার প্রতি লা'নতের কথা উল্লেখিত হয়েছে।
৩২০০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনা হারাম। অতএব, যে এখানে কোন পাপে লিপ্ত হয় অথবা কোন পাপীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ এবং সমগ্র মানব জাতির লা'নত। কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল (কিছুই) কবুল করা হবে না।
৩২০১.    আবূ বকর ইবনু নাদর ইবনু আবূ নাদর (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি কিয়ামতের দিন কথাটুকু বলেন নি। তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে সকলে সমান। তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকর। কেউ যদি মুসলিম প্রদত্ত নিরাপত্তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে, তবে তার উপর আল্লাহ্‌, তাঁর ফেরেশতাগণ এবং সমগ্র মানব জাতির লা’নত। কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল কিছুই কবুল হবে না।”
৩২০২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি যদি মদিনায় হরিণ বিচরণ করতে দেখি তবে তাকে ভয় দেখাব না। (কেননা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনায় দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশ হারাম।
৩২০৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু রাফী ও ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশ হারাম ঘোষণা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি যদি মদিনার দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশে হরিণ বিচরণ করতে দেখি, তবে আমি তাকে উত্ত্যক্ত করব না এবং তিনি মদিনার চারপাশের বার মাইল পর্যন্ত চারণভূমি ঘোষণা করেছেন।
৩২০৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা যখন প্রথম (পাকা) ফল দেখতে পেত, তা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তা গ্রহন করতেন তখন নিম্নোক্ত দু’আ পড়তেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আপনি আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) বরকত দান করুন, আমাদের মদিনায় বরকত দান করুন, আমাদের সা’ এ বরকত দান করুন এবং আমাদের মুদ্দ এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ্‌! নিশ্চয়ই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) আপনার বান্দা, প্রিয় বন্ধু ও নাবী। আর আমিও আপনার বান্দা ও নাবী। তিনি মক্কার জন্য আপনার নিকট দু’আ করেছেন। আমিও আপনার নিকট মদিনার জন্য দু’আ করছি – যেমন তিনি মক্কার জন্য আপনার নিকট দু’আ করেছিলেন এবং তার সাথে অনুরূপ আরও।” 

রাবী বলেন, অতঃপর তিনি সর্ব কনিষ্ঠ শিশুকে ডাকতেন এবং তাকে ফল দিয়ে দিতেন।
৩২০৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মৌসুমের প্রথম ফল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেয়া হত। তিনি তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আমাদের মদিনায় আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) আমাদের মুদ্দ এ ও আমাদের সা’ এ বরকত দান করুন, বরকতের উপর বরকত দান করুন।” 

অতঃপর তিনি ফলটি তাঁর নিকট উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন।
৩২০৬.    হাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু উলায়্যা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ মাওলা মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তারা মদিনায় কষ্ট ও দুঃখে পতিত হন। তিনি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক এবং আমরা দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছি। তাই আমি আমার পবিবারকে কোন শস্য শ্যামল এলাকায় স্থানান্তরের মনস্থ করেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, তা করো না বরং মদিনাকে আঁকড়ে থাক। কারণ, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হলাম, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যে এবং উসফান পর্যন্ত পৌছলেন। এখানে তিনি কয়েক রাত অবস্থান করলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি। অথচ আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের পশ্চাতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে এবং আমরা তাদের (নিরাপত্তার) ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। 

একথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি বলেনঃ কি ব্যাপার, তোমাদের একথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। রাবী বলেন, আবূ সাঈদ (রাঃ) কথাটা কিভাবে পুণর্ব্যাক্ত করেছেন তা আমার হুবহু মনে নেই। সেই সত্তার নামে শপথ যার নামে আমি শপথ করে থাকি অথবা সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য আমি মনস্থির করেছি, অথবা যদি তোমরা চাও রাবী বলেন, আবূ সাঈদ (রাঃ) কোনটি বলেছেন তা আমার সঠিক মনে নাই। তবে আমি নিশ্চিত আমার উষ্ট্রীকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিব এবং মদিনায় পৌছা পর্যন্ত তার একটি গিটও খুলব না। (যাত্রা বিরতি করব না)। 

তারপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সন্মানিত হয়েছে। আর আমি মদিনাকে হারাম ঘোষণা করলাম যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্থলে অবস্থিত। অতএব এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতীত গাছপালার পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এই শহরে বরকত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের সা’ এ বকরত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! বরকতের সাথে আমাদের আরো দুটি বরকত দান করুন। 

সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মদিনার এমন কোন প্রবেশ পথ বা গিরি সংকট নেই যেখানে তোমাদের মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু'জন করে ফিরিশতা পাহারায় নিযুক্ত নেই। পূনরায় তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা রওনা হও।” অতএব আমরা রওনা হলাম এবং মদিনায় এসে পৌঁছলাম। সেই সত্তার শপথ যার নামে আমরা শপথ করি অথবা যার নামে শপথ করা হয়- হাম্মাদ তার ঊর্ধ্বতন রাবী কোনটি বলেছেন সে সমন্ধে সন্দেহে পড়েছেন। আমরা মদিনায় প্রবেশ করে বাহনের পিঠের হাওদা তখনও খুলিনি ইত্যাবসরে আবদুল্লাহ ইবনু গাতফান গোত্রের লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে, অথচ এরুপ কিছু করার দুঃসাহস তাদের হয় নি।
৩২০৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ ও সা' এ বরকত দিন এবং বরকতের সাথে আরও দু'টি বরকত দান করুন।
৩২০৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এই সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২০৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ মাওলা যাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আল হাররার রাতগুলোতে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট এলেন এবং মদিনা থেকে (কোথাও) চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তাঁর কাছে এখানকার দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাকে আরও জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও রুক্ষ আবহাওয়া বরদাশত করতে পারছেন না। আবূ সাঈদ (রাঃ) তাঁকে বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদিনা ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এখানকার কষ্টসহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য শাফাআত করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলমান হয়ে থাকে।
৩২১০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ মদিনার দুই প্রান্তের প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। (অধস্তন রাবী) আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবূ সাঈদ (রাঃ) যদি আমাদের কারও হাতে পাখি দেখতে পেতেন তবে তিনি তার হাত থেকে পাখিকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতেন।
৩২১১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে মদিনার দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ ঐ স্থান হারাম ও নিরাপদ।
৩২১২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মদিনায় এলাম এবং তা ছিল অস্বাস্থ্যকর স্থান। আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগনের অসুস্থতা লক্ষ্য করে দুআ করলেনঃ “হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের জন্য প্রিয় স্থান করুন যেমন মক্কাকে প্রিয় স্থান করেছেন অথবা আরও অধিক, তাকে সাস্থ্যকর স্থানে পরিণত করুন, আমাদের জন্য এখানকার সা' ও মুদ্দ এ বরকত দান করুন এবং জ্বর জুহফায় সরিয়ে দিন।”
৩২১৩.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২১৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এখানকার দুঃখ কষ্টে সবর করে আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার জন্য শাফাআত করব অথবা তার পক্ষে সাক্ষী হব।
৩২১৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... যুবায়রের আযাদকৃত গোলাম ইউহান্নিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ফিৎনার সময় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট বসা ছিলেন তার নিকট তার এক আযাদকৃত বাঁদী সালাম দিয়ে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি (মদিনা থেকে) বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা করছি। আমাদের উপর দিয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত হচ্ছে। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বললেন, বোকা মেয়ে, থেকে যাও। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখ কষ্ট ও বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ করবে আমি কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা তার শাফাআতকারী হব।
৩২১৬.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এখানকার দুঃখকষ্ট ও বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ করে আমি কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা তার শাফাআতকারী হব। 'এখানকার' বলতে মদিনাকে বুঝানো হয়েছে।
৩২১৭.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার উাম্মাতের যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখকষ্ট ও বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ করবে, তার জন্যই আমি কিয়ামতের দিন শাফাআতকারী হব অথবা তার পক্ষে সাক্ষী হব।
৩২১৮.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ...... আগের হাদীসের অনুরূপ।
৩২১৯.    ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখকষ্টের উপর সবর করবে ...... আগের হাদীসের অনুরূপ।
৩২২০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার প্রবেশ পথে ফিরিশতাগণ প্রহরারত। সেখানে প্লেগ ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।
৩২২১.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাসীহ (দাজ্জাল) মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে এসে উহুদ পাহাড়ের পশ্চাতে অবতরণ করবে এবং ফিরিশতারা তার মুখ (গতি) সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিবে আর তথায় সে ধ্বংস হবে।
৩২২২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মদিনার) লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন কোন ব্যক্তি তার চাচাত ভাইকে এবং নিকটাত্নীয়কে ডেকে বলবে আস কোন উর্বর এলাকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করি, আস কোন শস্য-শ্যামল এলাকায় গিয়ে বাস করি। কিন্তু মদিনাই তাদের জন্য উত্তম যদি তারা জানত! সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যদি কোন ব্যক্তি মদিনার উপর রিবক্ত হয়ে চলে যায় তবে আল্লাহ তায়ালা তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি তার স্থলবর্তী করবেন। সাবধান! মদিনা হচ্ছে হাপর তুল্য, যা নিজের মধ্য থেকে নিকৃষ্ট জিনিস (ময়লা) বের করে দেয়। কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন মদিনা তার বুক থেকে নিকৃষ্ট লোকদের বের করে না দেবে যেমন হাপর লোহার ময়লা দূর করে দেয়।
৩২২৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এমন একটি জনপদে (হিজরতের) জন্য আদিষ্ট যা সমস্ত জনপদ খেয়ে ফেলবে (আধিপত্য বিস্তার করবে)। লোকেরা তাকে ইয়াসরীব নামে অভিহিত করেছে। আর এটা হল মদিনা। তা লোকদের এমনভাবে বের করবে যেমনিভাবে হাপর লোহার ময়লা বের করে।
৩২২৪.    আমরুন নাকিদ, ইবনু আবূ উমর ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকেও এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছ। তবে এরা দু'জন বলেছেনঃ যেমন হাপর ময়লা দুর করে এবং “লোহা” শব্দের উল্লেখ করেননি।
৩২২৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার) বায়'আত করেন। তারপর বেদুঈন মদিনায় প্রবল জ্বরে আক্রন্ত হল। সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বল, হে মুহাম্মাদ! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। তিনি তার কথা প্রত্যাখ্যান করলেন। সে পুনরায় তার নিকট এসে বলল, আমার বায়আত ফিরিয়ে নিন। তিনি তা অস্বীকার করলেন। সে পুনরায় এসে বলল, ইয়া মুহাম্মাদ! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও অস্বীকার করলেন। তারপর বেদুঈন (মদিনা থেকে) চলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "মদিনা হচ্ছে হাপর স্বরূপ, সে নিজের বুক থেকে ময়লা বহিস্কার করে দেয় এবং পবিত্র জিনিস ধুয়ে মুছে সাফ করে।"
৩২২৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল তায়বা (পবিত্র) অর্থাৎ মদিনা, তা ময়লা দূর করে দেয় যেমন আগুন রুপার ময়লা দূর করে দেয়।
৩২২৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, হান্নাদ ইবনু সারী ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তায়ালা মদিনার নাম রেখেছেন “তাবা”।
৩২২৮.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দীনার ও মুহাম্মাদ রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই শহরের অর্থাৎ মদিনার অধিবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়।
৩২২৯.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দীনার ও ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এখানকার (মদিনার) অধিবাসীদের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করবে, আল্লাহ তাকে গলিয়ে ফেলবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়।
৩২৩০.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২৩১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মদিনাবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে, আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়।
৩২৩২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ...... উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এই সুত্রে 'আকম্মিক আক্রমণ' অথবা 'ক্ষতিসাধন' এর কথা উল্লেখ আছে।
৩২৩৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাবাসীদের মুদ্দ এ বরকত দান করুন ...... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্নবৎ। তবে এতে আরো আছেঃ "যে ব্যক্তি এখানকার অধিবাসীদের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন পানিতে লবণ গলে যায়।"
৩২৩৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শাম (সিরিয়া) বিজিত হবে। ফলে একদল লোক সপরিবারে মদিনা থেকে চলে যাবে উট হাকাতে হাঁকাতে, অথচ মদিনাই তাদের জন্য কল্যাণকর ছিল যদি তারা বুঝতে পারত। এরপর ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক উট হাঁকিয়ে সপরিবারের চলে যাবে (মদিনা থেকে)। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা বুঝতে পারত। এরপর ইরাক বিজিত হবে। ফলে একদল লোক উট হাঁকিয়ে সপরিবারে মদিনা থেকে বের হয়ে যাবে। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত।
৩২৩৫.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে সেখানে চলে যাবে। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত। তারপর শাম (সিরিয়া) বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবার পরিজন ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে সেখানে চলে যাবে। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা বুঝতে পারত। তারপর ইরাক বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবার ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে সেখানে চলে যাবে। অথচ মদিনাই ছিল তদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত।
৩২৩৬.    যুহায়র ইবনু হারব ও হারমালা ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা সম্পর্কে বলেছেনঃ “এখানকার লোকেরা মদিনা ত্যাগ করবে, এ স্থান তাদের জন্য কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও। আর এটা এমনভাবে জনণূন্য হয়ে যাবে যে, তা হিংস্র জন্তু ও পাখির আবাসে পরিণত হবে। 

ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ সাফওয়ান - আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল মলিক ছিলেন ইয়াতীম। তিনি ইবনু জুরায়জের তত্ত্বাবধানে দশ বছর প্রতিপালিত হন।
৩২৩৭.    আবদুল মালিক ইবনু শু'আয়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মদিনা ত্যাগ করবে তাদের জন্য তা (মদিনায় বসবাস) কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও এবং কেবল হিংস্র জন্তু ও পাখিরাই সেখানে বসবাস করবে। তারপর মুযায়না গোত্রের দুটি রাখাল মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবে উচ্চস্বরে নিজেদের মেষপাল হাঁকিয়ে। তারা সে স্থান হিংস্র প্রানীতে ভর্তি দেখতে পাবে। তারা “সানিয়াতুল বিদা” উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছে উপুড় হয়ে পড়ে যাবে।
৩২৩৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ মাযিনী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগান সমূহের একটি।”
৩২৩৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগান সমূহের অন্তর্ভুক্ত।
৩২৪০.    যুহায়র ইবনু হারব ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগান সমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বার আমার (কাওসার নামক) হাওযের উপরে অবস্থিত।
৩২৪১.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা'নাবী (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে রওনা হলাম। তারপর আবূ হুমায়দ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বললেন, (যুদ্ধ শেষে) আমরা পূনরায় অগ্রসর হলাম এবং ওয়াদিল কুরায় পৌছলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দ্রুত অগ্রসর হই। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে চলতে চায় সে আমার সঙ্গে দ্রুত চলুক। আর যার ইচ্ছা। সে থেমে থেমে আসুক। তখন আমরা রওনা হলাম এবং অবশেষে মদিনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই (মদিনা) হচ্ছে তাবা এবং এই হচ্ছে উহুদ আর উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।
৩২৪২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।
৩২৪৩.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়ের দিকে তাকালেন এবং বললেন, উহুদ এমন একটি পাহাড় যে আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।
৩২৪৪.    আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার এই মসজিদে (মসজিদে নবযীতে) এক (রাকআত) সালাত মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে এক হাজার (রাকাআত) সালাতের চেয়েও উত্তম।
৩২৪৫.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরে এই মসজিদে এক (রাক'আত) সালাত মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে আদায়কৃত এক হাজার (রাক'আত) সালাতের অপেক্ষাও উত্তম।
৩২৪৬.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর শাগরিদ আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান ও আবূ আবদুল্লাহ আগার (জুহায়না গোত্রের মুক্তদাস) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে এক (রাকআত) সালাত আদায় মাসজিদ হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে হাজার (রাক’আত) সালাত অপেক্ষাও উত্তম। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবীগণের সর্বশেষ এবং তার মসজিদ (নাবী-রাসুলগণ কর্তৃক নির্মিত মসজিদসমুহের মধ্যে) সর্বশেষ মসজিদ। 

আবূ সালামা ও আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যেসব কথা বলেছেন, তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস থেকেই বলেছেন। এজন্য আমরা তার ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর নিকট থেকে এই হাদীস সত্যায়িত করে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর তাঁর নিকট থেকে এই হাদীসের সত্যায়ন সম্পর্কে আমরা পরস্পর আলোচনা করি এবং একে অপরকে দোষারোপ করি যে কেন আমরা এই হাদীস সম্পর্কে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করি নি যে, তিনি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন কিনা। 

এ অবস্থায় একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনু ইবরাহীম ইবনু কারিযের কাছে বসলাম এবং এই হাদীস ও তা আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে বর্ণিত হওয়া সম্পর্কে আলোচনা উত্থাপন করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু ইবরাহীম ইবনু কারিয (রহঃ) আমাদের বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চিত আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “অতএব অবশ্যই আমি নাবীগণের সমাপ্তি এবং আমার মসজিদ সর্বশেষে মসজিদ।
৩২৪৭.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবরাহীম ইবনু কারিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার এই মসজিদে এক (রাকআত) সালাত অন্য সকল মসজিদে এক হাজার (রাকআত) সালাতের চেয়ে উত্তম অথবা এই মসজিদ ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার (রাকআত) সালাতের সমতূল্য কিন্তু মসজিদুল হারামের কথা স্বতন্ত্র।
৩২৪৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২৪৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার এই মসজিদে এক (রাকআত) সালাত মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার (রাকআত) সালাতের চেয়েও উত্তম।
৩২৫০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২৫১.    ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি উক্ত হাদীসের অনুরূপ।
৩২৫২.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২৫৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি স্ত্রীলোক রোগাক্রান্ত হওয়ার পর বলল, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্তি দান করলে আমি গিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে অবশ্যই সালাত আদায় করব। তারপর সে আরোগ্য লাভ করল এবং (বায়তুল মুকাদ্দাস) যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল এবং সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী মায়মুনা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে সালাম দিয়ে এ সম্পর্কে অবহিত করল। তিনি বললেন, তুমি এখানে থাক, যা কিছু পাথেয় নিয়েছ তা খাও এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদের সালাত আদায় কর। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ "এই মসজিদে এক (রাকআত) সালাত আদায় মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার (রাক’আত) সালাত পড়ার চেয়েও অধিক ফযীলতপূর্ণ।"
৩২৫৪.    আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উটের পিঠে হাওদা আঁটা যাবে না (সফর করা যাবে না) তিনটি মসজিদ ব্যতীতঃ এই মসজিদ, মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আক্‌সা।
৩২৫৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা এভাবে শুরু হয়েছেঃ "তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে।"
৩২৫৬.    হারুন ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবলমাত্র তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্য সফর করা যাবেঃ কা'বা মসজিদ, আমার এই মসজিদ এবং ইলিয়ার মসজিদ (বায়তুল মুকাদ্দাস)।
৩২৫৭.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর পুত্র আবদুর রহমান (রহঃ) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে সেই মসজিদ সম্পর্কে আপনার পিতাকে আপনি কিরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, তাঁর কোন এক স্ত্রীর ঘরে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেই মসজিদ কোনটি যার ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? রাবী (আবূ সাঈদ) বলেন, তিনি একমুষ্টি কাঁকর তুলে তুলে তা যমীনের বুকে নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর বললেনঃ “তা তোমাদের এই মসজিদ মদিনার মসজিদ।” রাবী (আবূ সালামা) বলেন, এখন আমি বললাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চিত আমিও আপনার পিতাকে এভাবেই ঐ মসজিদের উল্লেখ করতে শুনেছি।
৩২৫৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে এই সনদে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এই সনদের মধ্যে আবদুর রহমান ইবনু আবূ সাঈদের নাম উল্লেখিত হয় নি।
৩২৫৯.    আবূ জাফর আহমাদ ইবনু মানী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে কুবার মসজিদে যেতেন।
৩২৬০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে কুবা মসজিদে আসতেন এবং তাতে দু'রাক’আত সালাত আদায় করতেন।
৩২৬১.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজের বা বাহনে চড়ে কুবায় আসতেন।
৩২৬২.    আবূ মা'আন রুকাশী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৩২৬৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে চড়ে এবং পদব্রজে কুবায় আসতেন।
৩২৬৪.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে চড়ে ও পদব্রজে কুবায় আসতেন।
৩২৬৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রতি শনিবার এখানে আসতে দেখেছি।
৩২৬৬.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বাহনে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে এখানে আসতেন। ইবনু দীনার (রহঃ) বলেন, ইবনু উমর (রাঃ)ও অনুরূপ আামল করতেন।
৩২৬৭.    আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম (রহঃ) ... ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এই সুত্রে 'প্রতি শনিবার' কথাটুকু উল্লেখ নাই।

No comments:

Powered by Blogger.