নমরূদের আগুনে প্রেমের পরশ
নমরূদের আগুনে প্রেমের পরশ
নমরূদ হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রহমতের তাঁকে উক্ত অগ্নিকুন্ডের ক্ষতি হতে হেফাযত করেছেন-এটা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বিদগ্ধ মু’জিযা। তেমনি এক অলৌকিকত্ব আল্লাহ তা’আলা এই উম্মতের এক বুযুর্গকে দান করেছিলেন। তিনি হল হযরত আবু মুসলিম খাওলানী (রহ.)।
ইয়ামেনের মিথ্যা নবীর দাবীদার আসওয়াদে আনাসী হযরত আবু মুসলিম খাওলানী (রহ.) কে ডেকে তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করল, কিন্তু তিনি তাঁর দাবীকে অকপটে উড়িয়ে দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরে অন্য কাউকে নবী মানতে অস্বীকৃতি জানালেন। এর শাস্তি স্বরূপ আসওয়াদ বিশাল একটি অগ্নিকুন্ডের ব্যবস্থা করে হযরত খাওলানী (রহ.) কে তাতে নিক্ষেপ করল। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা উক্ত আগুনকে তাঁর জন্য শান্তির নীড় করে দিলেন। অগ্নিকুন্ড হতে সম্পূর্ণ অক্ষতবস্থায় বের হয়ে আসলেন তিনি। লোকেরা আসওয়াদকে পরামর্শ দিল, আপনি লোকটিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় বার কোন চেষ্টা করা অর্থহীন হবে। তবে তাকে এদেশে থাকতে দিলে সে জনসাধারণের মাঝে আপনার বিরোধিতার আগুন প্রজ্জ্বলিত করবে এবং সংগ্রাম করবে। অতএব, তাকে দেশান্তর করে দিন। তাদের পরামর্শ মোতাবেক আসওয়াদ তাই করল, হযরত খাওলানীকে (রহ.) দেশান্তর করে দিল।
ইয়ামেন ত্যাগ করে তিনি মদিনা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হল। তিনি যখন মদীনায় পৌঁছেন , তাঁর পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এন্তেকাল হয়ে গিয়েছিল। হযরত আবু বকর (রাযি.) ছিলেন তখন খলীফা। খাওলানী (রহ.) মসজিদে নববীর নিকট পৌঁছেই উটকে বেঁধে রাখলেন এবং একটি খুঁটিকে আড়াল করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত ওমর (রাযি.) তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-কোথা হতে এসেছে? জবাবে তিনি বললেন-ইয়ামান থেকে। এদিকে আসওয়াদে আনাছী কর্তৃক জনৈক মুসলমান অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনা মদীনা সহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। এজন্য হযরত ওমর (রাযি.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমাদের সে দোস্তের ঘটনাটি শুনাবেন কি? যাকে আসওয়াদ আগুনে নিক্ষেপ করে ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাকে রক্ষা করেছেন, তাঁর কোন সমস্যাই হয়নি। আবু মুসলিম খাওলানীর (রহ.) মূল নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাউব। তিনি নিজেকে গোপন করতে গিয়ে বললেন- ঘটনার স্বীকার আব্দুল্লাহ ইবনে ছাউব । হযরত ওমর (রাযি.) বললেন- শপথ করে বল, তুমিই আব্দুল্লাহ ইবনে সাউব নও কি ? আবু মুসলিম বললেন হ্যাঁ আমিই সেই আব্দুল্লাহ ইবনে সাউব।
হযরত ওমর তাঁর একথা শুনে তাঁর কপালে চুমু খেলেন এবং হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর নিকট বললেন – ঐ আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে মৃত্যুর পূর্বে এমন লোকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছেন, যাকে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর ন্যায় অলৌকিক ভাবে সাহায্য করেছেন।
পরবর্তীতে আবু মুসলিম খাওলানী (রহ.) হযরত মু’আবিয়ার (রাযি.) শাসনামল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। মু’আবিয়া (রাযি.) তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। তিনি মাঝে মাঝে মু’আবিয়া (রাযি.) কে নরম ও গরম নসীহত করতেন। মু’আবিয়া (রাযি.) ও তাঁর কথা বার্তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে শুনতেন।
হযরত মুআবিয়ার (রাযি.) শাসনামলে একবার সরকারী কর্মচারীরা দু-তিন মাসে বেতন পায়নি। এরই মাঝে একদিন তিনি (আবু মুসলিম (রহ.) বত্তৃতার মাঝে বলে উঠলেনঃ মু’আবিয়া! এই সম্পদ তোমারও নয়, তোমার পিতা-মাতারও নয়।
মু’আবিয়া (রাযি.) উপস্থিত লোকদেরকে অপেক্ষা করার ইঙ্গিত দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ভেতর হতে গোসল করে এসে বললেনঃ লোক সকল! আবু মুসলিম বলেছেন-এই সরকারী সম্পদ আমারও নয়, তোমার পিতা-মাতারও নয়।
আরেকটি কথা হল, আমি প্রিয় নবীজী (রাযি.) কে বলতে শুনেছি গোসবা শয়তানের বিশেষ প্রভাবের কারণে সৃষ্টি হয়। শয়তান হল আগুনের তৈরি আর পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। সুতরাং তোমাদের কারো গোসবা হলে গোসল করে নেবে। এবার তোমরা যার যার বেতন-ভাতা কোষাগার থেকে তুলে নাও। আল্লাহ তা’আলা বরকত দান করুন।- হিলয়াতুল আউলিয়া ১/১৩০
মু’আবিয়া (রাযি.) উপস্থিত লোকদেরকে অপেক্ষা করার ইঙ্গিত দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ভেতর হতে গোসল করে এসে বললেনঃ লোক সকল! আবু মুসলিম বলেছেন-এই সরকারী সম্পদ আমারও নয়, তোমার পিতা-মাতারও নয়।
আরেকটি কথা হল, আমি প্রিয় নবীজী (রাযি.) কে বলতে শুনেছি গোসবা শয়তানের বিশেষ প্রভাবের কারণে সৃষ্টি হয়। শয়তান হল আগুনের তৈরি আর পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। সুতরাং তোমাদের কারো গোসবা হলে গোসল করে নেবে। এবার তোমরা যার যার বেতন-ভাতা কোষাগার থেকে তুলে নাও। আল্লাহ তা’আলা বরকত দান করুন।- হিলয়াতুল আউলিয়া ১/১৩০
No comments: