সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৬ষ্ট খন্ড, অধ্যায়ঃ জিহাদ ও এর নীতিমালা-২য়
পরিচ্ছেদঃ ২৬. বাদশাহ হিরাকল (হিরোক্লিয়াস) এর নিকট ইসলামের দাওয়াত প্রদান করে নবী (ﷺ) এর পত্র
৪৪৫৬. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, ইবনু আবূ উমর, মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) মুখোমুখি (সরাসরি) এ হাদীস অবহিত করেছেন। যখন আমার মধ্যে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে (হুদায়বিয়ার) সন্ধির সময়কাল কার্যকর ছিল (ষষ্ঠ হিজরীতে) তখন আমি (সফরে) বের হলাম। যখন আমি শাম দেশে উপস্থিত হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেরিত একটি পত্র হিরাকল (হিরাকলিয়াস) বাদশাহর নিকট পৌঁছল। দিহইয়া আল-কালবী (রাঃ) (দূত) এই পত্র নিয়ে গিয়েছিলন। তিনি সেই পত্র ‘বুসরার’ প্রধান শাসনকর্তাকে প্রদান করেন। এরপর বুসরার প্রধান, হিরাকল বাদশাহর নিকট পত্রটি হস্তান্তর করেন। তখন হিরাকল বাদশাহ বললেন, এখানে ঐ লোকটির (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) সম্প্রদায়ের কোন লোক আছে কি, যিনি নিজেকে নাবী বলে দাবী করেছেন? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন কুরায়শদের এক দল লোকের সঙ্গে আমাকেও ডাকা হল।
এরপর আমরা হিরাকল বাদশাহর নিকটে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে তার সম্মুখেই বসান হল। তখন তিনি জিজ্ঞাস করলেন, যিনি নাবী দাবী করছেন আত্মীয়তার দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে অধিক নিকটবর্তী? তখন আবূ সুফিয়ান বললেন, আমি। তখন তাঁরা আমাকে বাদশাহর সামনেই বসালেন এবং আমার সঙ্গীদেরকে আমার পিছনে বসালেন। এরপর তিনি তার দোভাষীকে ডাকলেন এবং তাকে বললেন, “আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে বলে দাও যে, আমি তাকে (আবূ সুফিয়ানকে) ঐ লোকটি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করব, যিনি নিজেকে নাবী বলে দাবী করছেন। যদি তিনি (আবূ সুফিয়ান) আমার নিকট মিথ্যা কথা বলেন, তবে আপনারা তাকে মিথ্যাবাদী বলে ঘোষণা দেবেন। তখন আবূ সুফিয়ান বলেন, আল্লাহ্র শপথ! যদি আমার এই ভয় না হত যে, মিথ্যা বললে তা আমার নামে উদ্ধৃত হতে থাকবে তবে নিশ্চয়ই (তাঁর সম্পর্কে) মিথ্যা কথা বলতাম।
অতঃপর বাদশাহ তার দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে (আবূ সুফিয়ানকে) জিজ্ঞাস কর, আপনাদের মাঝে ঐ লোকটির বংশ পরিচয় কেমন? আমি বললাম, তিনি আমাদের মাঝে সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এরপর তিনি বললেন, তাঁর পিতৃ পুরুষদের মধ্যে কি কেউ কখনও বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। এরপর তিনি জিজ্ঞাস করলেন, আপনারা কি কখনও তাঁকে এ কথা বলার পূর্বে, যা তিনি বলেছেন, মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন? আমি বললাম না। তিনি আবার বললেন, সমাজের কোন শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসরন করে? সম্ভ্রান্ত প্রভাবশালীরা, না দুর্বলেরা? আমি বললাম, (সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা নয়); বরং দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা।
তিনি বললেন, তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, না কমছে? আমি বললাম, (কমছে না), বরং (দিনদিন) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপর তিনি বললেন, যে সব লোক তাঁর ধর্মে প্রবেশ করছে তারা কি পরবর্তীতে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হচ্ছে? আমি বললাম, না। এরপর তিনি বললেন, আপনারা কি কখনও তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনাদের এবং তাঁর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ? আমি বললাম, আমাদের এবং তাঁর মাঝে যুদ্ধের অবস্থা পালাবদল হচ্ছে। কখনও তিনি বিজয়ী হন এবং কখনও বা আমরা বিজয়ী হই। সম্রাট হিরাকল বললেন, তিনি কি (কখনও সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে) বিশ্বাস ভঙ্গ করেন? আমি বললাম না। কিন্তু আমরা বর্তমানে তাঁর সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা (পর্যন্ত সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ আছি)। আমরা জানি না যে, পরিশেষে তিনি তাতে কী করবেন। আবূ সুফিয়ান বললেন, আল্লাহ্র শপথ! (প্রশ্ন উত্তরে) আমার পক্ষ হতে একথাটি ছাড়া অন্য কোন দ্বিধামূলক কথা সংযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এরপর সম্রাট হিরাকল বললেন, (আপনাদের দেশে) তাঁর (নবুওয়াত দাবীর) পূর্বে কি কোন ব্যক্তি কখনও এরূপ দাবী করেছে? আমি বললাম, না। এরপর সম্রাট হিরাকল তার দোভাষীকে বললেন, আমি তাকে (আবূ সুফিয়ানকে) বলে দাও যে, আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) বংশ পরিচয় সম্পর্কে। আপনি তখন বলেছিলেন যে, তিনি সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এমনিভাবে রাসূলগণ তাদের সম্প্রদায়ের উত্তম বংশে প্রেরিত হয়ে থাকেন। এরপরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর পিতৃ পুরুষগণের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলন? আপনি প্রতি উত্তরে বলেছিলেন, না। আমি মনে মনে বললাম যে, যদি তাঁর পিতৃপুরুষগণের মধ্যে হতে কেউ বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি মনে করতাম যে, হয়তবা তিনি তাঁর পিতৃপুরুষের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে চান। তারপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, তাঁর অনুসারী কি দুর্বল শ্রেণীর লোক, না সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর লোক? আপনি বলেছিলেন, দুর্বল শ্রেণীর লোক (আমি বলছি,) তারাই রাসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে।
এরপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, যে তিনি (নবুওয়াতের) যে কথা বলছেন এর পূর্বে কি আপনারা তাঁকে কখনও মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন? আপনি বলেছিলেন যে, না। এতে আমি বুঝতে পারলাম, যে ব্যক্তি (জাগতিক ব্যপারে) মানুষের সাথে মিথ্যা বলেন না, তিনি কি কারনে আল্লাহ্র উপর মিথ্যারোপ করতে যাবেন? এরপর আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, কোন ব্যাক্তি কি তাঁর ধর্ম গ্রহন করার পর তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর ধর্ম পরিত্যাগ করেছে? আপনি বলেছিলেন, না। ঈমানের প্রকৃত অবস্থা এটাই। যখন অন্তরের অন্তস্থলে একবার তা সংমিশ্রিত হয় (তখন সেখানেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে)। এরপর আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম, তাঁর অনুগামীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, না কমছে? আপনি বলেছিলেন, তারা সংখায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাই হল ঈমানের পকৃত অবস্থা। তা বৃদ্ধি পেতে পেতে অবশেষে পূর্ণতা লাভ করে।
এরপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কি তাঁর সঙ্গে কোন যুদ্ধ করেছেন? আপনি বলেছিলেন, হ্যাঁ, আপনারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন। তবে আপনাদের মাঝে ও তাঁর মাঝে-যুদ্ধের অবস্থা হল পালাবদলের মত। কখনও তিনি বিজয়ী হন, আবার কখনও আপনারা বিজয়ী হন। এভাবে রাসূলগণকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। পরিণামে তাঁরাই বিজয়ী হয়ে থাকেন। এরপর আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি কি কখনও (কোন সন্ধির) চুক্তি ভঙ্গ করেন? আপনি বলেছিলেন, তিনি কোন চুক্তিভঙ্গ করেন না, এভাবে রাসূলগণ কখনও কোন চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আর আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম যে, তাঁর এই কথা (নবুওতের কথা) বলার পূর্বে কি কোন ব্যক্তি অনুরূপ কথা বলেছেন? আপনি বলেছিলেন যে, না। আমি তা এ কারনে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ,যদি তাঁর পূর্বে কেউ এরূপ দাবী করে থাকতো , তবে আমি মনে করতাম যে, সে ব্যক্তি তাঁর পূর্বে যে কথা বলা হয়েছিল তার অনুকরণ করেছে।
রাবী বলেন এরপর হিরাকল জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি আপনাদের কি করতে আদেশ করেন? আমি (আবূ সুফিয়ান) বললাম, তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, আত্মীয় সম্বন্ধ অটুট রাখতে (নিকট আত্মীয় ও হকদার ব্যক্তিদের প্রতি সদ্ব্যব্যবহার করতে) এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করতে (অবৈধ ও অসৌজন্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে) আদেশ করে থাকেন।
তিনি (বাদশাহ হিরাকল) বললেন, আপনি তাঁর সম্পর্কে যা বললেন তাঁর অবস্থা যদি ঠিক তাই হয় তবে তিনি অবশ্যই নাবী। আমি জানতাম যে, একজন নাবীর আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু আমি ধারণা করিনি যে, তিনি আপনাদের থেকে হবেন। যদি আমি জানতাম যে, আমি তাঁর নিকট নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারবো? তবে নিশ্চয়ই আমি তাঁর মুবারক পদদ্বয় ধুইয়ে দিতাম। (জেনে রেখো) নিশ্চয়ই তাঁর রাজত্ব আমার দু’পায়ের নীচ পর্যন্ত পৌঁছাবে। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চিঠিটি তলব করলেন এবং তা পাঠ (করার আদেশ) করলেন। এতে ছিল
“দয়াবান দয়ালু আল্লাহ্র নামে! এটা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান ব্যক্তি হিরাকল এর প্রতি। সালাম সেই ব্যক্তির উপর, যিনি (হিদায়াতের) সঠিক পথ অনুসরন করেন। অতঃপর নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ইসলামের আহবান জানাচ্ছি। ইসলাম গ্রহন করুন, নিরাপদ থাকবেন। আপনি মুসলমান হউন, আল্লাহ্ আপনাকে আপনার প্রতিদান দ্বিগুণ করে দান করবেন। আর যদি আপনি (ইসলাম থেকে) বিমুখ থাকেন, তবে নিশ্চয়ই প্রজাদের পাপ আপনার উপর আরোপিত হবে।
“হে আহলে কিতাব! তোমরা এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যে আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করব না, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক করব না, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় (অবাধ্য হয়) তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক আমরা মুসলিম”
এরপর তিনি পত্র পাঠ শেষ করলে তাঁর নিকটে শোরগোল এবং হৈ চৈ হতে লাগল। এদিকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হল। আমরা বেরিয়ে এলাম। আবূ সুফিয়ান বলেন, আমরা যখন বেরিয়ে এলাম তখন আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আবূ কাবাশার পুত্রের ব্যপারটি অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়েছে। বনী আসফার (লাল চামড়াদের) বাদশাহও তাঁকে ভয় করছে। অবশেষে এক সময় আল্লাহ্ তা’আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন।
৪৪৫৭. হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এই একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই হাদীসে অধিক বর্ণনা করেছেন, “যখন আল্লাহ তা'আলা রোম সম্রাট (কায়সার) দ্বারা পারস্যের সেনাদলকে পরাজিত করলেন, তখন তিনি এই বিজয়ের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে 'হেমস' থেকে 'ইলিয়া' (বায়তুল মুকাদ্দাস) পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যান আর তিনি এই হাদীসে “এই পত্র মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে” এবং أارِيسِين শব্দের পরিবর্তে يَرِيسِيِّينَ শব্দ বলেছেন। আর তিনি دعاية الاسلام শব্দের পরিবর্তে داعية الاسلام ইসলাম’ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. মহামহিম আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিধর্মী শাসকদের নিকট নবী (ﷺ) এর পত্রাবলী
৪৪৫৮. ইউসুফ ইবনু হাম্মাদ মা'নী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসরা (পারস্যের সম্রাট), কায়সার (রোমের সম্রাট) ও নাজ্জাশী (আবিসিনিয়ার সম্রাট) এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শাসকগণের নিকট পত্র লিখেন, যাতে তিনি তাদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেন। ইনি সে নাজ্জাশী নন, যার জানাযার সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন।
৪৪৫৯. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রাযী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ননা করেছেন। কিন্তু তিনি একথা বলেননি যে, "তিনি সেই নাজ্জাশী নন, যার জানাযার সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন।"
৪৪৬০. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি একথা উল্লেখ করেননি যে, ”তিনি সেই নাজ্জাশী নন, যার জানাযার সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন।”
পরিচ্ছেদঃ ২৮. হুনায়নের যুদ্ধ
৪৪৬১. আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমি এবং আবূ সুফিয়ান ইবনু হারেস ইবনু আবদুল মুত্তালিব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একেবারে সঙ্গেই ছিলাম। আমরা কখনও তাঁর থেকে পৃথক হইনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা বর্ণের খচ্চরের উপর আরোহণ করেছিলেন। সে খচ্চরটি ফারওয়া ইবনু নূফাসা হুযামী তাঁকে হাদিয়া স্বরূপ দিয়েছিলেন। (উহাকে দুলদুল নামে ডাকা হতো।) যখন মুসলমান এবং কাফির পরস্পর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হল তখন মুসলমানগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পাশ্চাৎ দিকে পলায়ন করতে লাগলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দিয়ে নিজের খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন।
আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি তার খচ্চরের লাগাম ধরে রেখে ছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যেন দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে না পারে। আর আবূ সুফইয়ান (রাঃ) তাঁর খচ্চরের ‘রেকাব’ (পাদানি) ধরে রেখেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আব্বাস! আসহাবে সামুরাকে (হুদায়বিয়ার বাবলা গাছের তলায় বায়আতকারী দল) আহবান কর। আব্বাস (রাঃ) বলেন, আর তিনি ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী ব্যক্তি। তখন আমি উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে বললাম, হে আসহাবে সামুরা! (তোমরা কোথায় যাচ্ছ?) তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তা শোনামাত্র তাঁরা এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করলেন যেমনভাবে গাভী তার বাচ্চার আওয়াজ শুনে দ্রুত দৌড়ে আসে। এবং তারা বলতে লাগলো, আমরা আপনার নিকট হাযির, আমরা আপনার নিকট হাযির।
রাবী বলেন, এরপর তারা কাফিরদের সাথে পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি আনসারদের প্রতি আহবান ছিল যে, হে আনসারগণ! রাবী বলেন, এরপর আহবান সমাপ্ত করা হল বনী হারেস ইবনু খাযরাযের মাধ্যমে (তাঁরা আহবান করলেন, হে বনী হারেস ইবনুল খাযরাজ।) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খচ্চরের উপর আরোহণ অবস্থায় তার গর্দান উঁচু করে তাদের যুদ্ধের অবস্থা অবলোকন করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটাই হল তন্দুর উত্তপ্ত হওয়ার সময় (যুদ্ধের উত্তেজনাপূর্ণ চরম মুহূর্ত।)
রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর হাতে নিলেন। এবং এগুলি তিনি কাফিরদের মুখের উপর ছুড়ে মারলেন। এরপর বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রবের কসম! তারা পরাজিত হয়েছে। আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধের অবস্থান পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখলাম যে, যথারীতি যুদ্ধ চলছে। এমন সময় তিনি কংকরগুলো নিক্ষেপ করলেন। আল্লাহর শপথ! তখন হঠাৎ দেখি যে, কাফিরদের শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেল এবং তাদের যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল।
৪৪৬২. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু রাফে ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ফারওয়া ইবনু 'নুআছা' স্থলে নু'আমা জুযামী কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, তারা পরাজিত হয়েছে, কাবার রবের কসম! তারা পরাজিত হয়েছে কাবার রবের কঁসম”
তিনি তাঁর হাদীসে একথাটিও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, “অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পরাজিত করলেন”। রাবী বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের পিছন থেকে দেখলাম যে, তিনি তার খচ্চরের উপর থেকে নিজ পায়ের গোড়ালী দিয়ে একে আঘাত করে তাদের পিছনে ধাবিত করছিলেন।
৪৪৬৩. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে ছিলাম ...... এরপর তিনি উল্লিখিত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে ইউনূস এবং মা'মার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস বর্ণনার দিক দিয়ে অধিক বিস্তারিত এবং পরিপূর্ন।
৪৪৬৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বারা (রাঃ) কে বললেন, হে আবূ উমারা! আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। বরং তাঁর সাহাবীদের মধ্যে একটি কম বয়সের অনভিজ্ঞ দল, যাদের কোন অস্ত্র কিংবা উল্লেখযোগ্য কোন ধরনের কোন হাতিযারও ছিলনা, (তাঁরা সরে পড়েন)। তাঁরা এমন একদল তীরান্দাযের মোকাবিলা করছিলেন, যাদের তীরের লক্ষ্য ব্যর্থ হত না। তারা ছিল হাওয়াযিন ও নযর গোত্রের লোক।
তারা এমনভাবে প্রবল ধারায় তীর ছুড়ছিল যে, তারা লক্ষ্যস্থলে আঘাত করতে ব্যর্থ হচ্ছিল না। তখন তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে এগিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় তার সাদা রঙের খচ্চরের উপর ছিলেন। আর আবূ সুফিয়ান ইবনু হারেস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) একে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। রাবী বলেন, যেন তিনি বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই নবী, একথা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবএ পুত্র (বংশধর)। তারপর তিনি তার সেনাদলকে সারিবদ্ধ করলেন।
৪৪৬৫. আহমাদ ইবনু জানাব মিসসিসী (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বারা (রাঃ) এর নিকট এসে বললো, আপনারা কি হুনায়নের দিনে পলায়ন করেছিলেন? তখন তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি পলায়ন করেন নি। কিন্তু কিছু সংখ্যক অতি ব্যস্ত ও বর্মহীন লোক হাওয়ায়িন গোত্রের দিকে গিয়েছিল। আর তারা ছিল তীরন্দায সম্প্রদায়। তারা তাদের প্রতি ঝাঁকে ঝাঁকে তীর ছুড়লো, যেন সেগুলো পঙ্গপালের পায়ের মত। তখন তারা পিছন দিকে হটে গেল। আর লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এগিয়ে এলো। আবূ সুফিয়ান ইবনু হারেস (রাঃ) তাঁর খচ্চর টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দুআ করলেন এবং তিনি বললেনঃ আমি অবশ্যই আল্লাহর নাবী, একথা মিথ্যে নয়। আমি আবদূল মুত্তালিব এর পুত্র। “ইয়া আল্লাহ! আপনার সাহায্য নাযিল করুন”।
বারা (রাঃ) বললেনঃ, আল্লাহর কসম! যুদ্ধের-উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠল, তখন আমরা তার মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে বীরপুরুষ তিনিই যিনি যুদ্ধে তাঁর অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়াতে সাহসী হত।
৪৪৬৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বারা (রাঃ) এর কাছে শুনেছি, বনী কায়েসের এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনারা কি হুনায়নের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পলায়ন করেছিলেন? তখন বারা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই পলায়ন করেননি। (তবে ব্যাপার এ ছিল যে,) হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা দক্ষ তীরান্দায ছিল। আমরা যখন তাদেঁর উপর আক্রমণ করলাম তখন তারা বিক্ষিপ্ত হলো। তখন আমরা গনীমতের মালের দিকে ছুটে গেলাম। তখন তারা ফিরে এসে আমাদের উপর (অতর্কিতে) পাল্টা আক্রমন করে তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর সাদা বর্ণের খাচ্চরের উপর দেখতে পেলাম। আর আবূ সূফিয়ান ইবনু হারেস (রাঃ) তার লাগাম ধরে রেখেছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেনঃ আমি অবশ্যই নাবী, একথা মিথ্যে নয়। আমি আবদুল মুত্তালিব এর পুত্র।
৪৪৬৭. যুহাইর ইবনু হারব মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, হে আবূ উমারা! ...... তারপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন। এই হাদীস ছিল তাঁদের বর্ণিত হাদীস থেকে সংক্ষিপ্ত। আর তাদের হাদীস ছিল পূর্ণ।
৪৪৬৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুনায়নের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছি। যখন আমরা শক্রদের সন্মুখীন হলাম, তখন এ পর্যায়ে আমি অগ্রসর হয়ে একটি টিলার উপর আরোহণ করলাম। তখন শক্রদলের এক ব্যক্তি আমার মোকাবিলায় অগ্রসর হল। আমি একটি তীর নিক্ষেপ করলাম, তখন সে আমার থেকে আত্নগোপন করল। আমি তখন বুঝতে পারিনি তার ব্যাপারটি কী হয়েছে। তারপর যখন শক্রদের প্রতি লক্ষ্য করলাম, তখন দেখতে পেলাম যে, তারা অপর এক টিলায় আরোহণ করেছে। তারপর তারা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথীরা সামনাসামনি হলো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ পিছনে সরে পড়তে লাগল। আমি পরাজিত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলাম। তখন আমার পরিধানে ছিল দু'টি চাঁদর। তার একটি চাঁদর ছিল লুঙ্গী (ইযার) রূপে এবং অপরটি চাদর রূপে পরেছিলাম।
এক, পর্যায়ে আমার লুঙ্গিটি খুলে গেল। তখন আমি সে দু'টি একত্র করে করলাম। এবং পরাজিত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ দিয়ে গমন করলাম। আর তিনি তখন তাঁর সাদা রং এর খচ্চরের উপর আরোহিত ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনুল আকওয়া ভীতিকর কিছু দেখেছে। এরপর (তারা) শক্ররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘিরে ফেললো। তখন তিনি তার খচ্চর থেকে অবতরণ করলেন।
তারপর এক মুষ্টি মাটি যমিন থেকে তুলে নিলেন। এরপর তাদের মুখমন্ডলে তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, তাদের মুখমন্ডল বিকৃত হোক। এরপর তাদের সকলের দু'চোখ-ই সে এক মুষ্টি মাটির ধুলায় ভরে গেল। তারা পাচাৎ দিকে পলায়ন করলো। আল্লাহ তা’আলা এ দ্বারাই তাদেরকে পরাস্ত করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৯. তায়েফের যুদ্ধ
৪৪৬৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফবাসীদের অবরোধ করলেন এবং এতে তিনি তাদের কাছ থেকে কিছু পেলেন না। এরপর তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আমরা প্রত্যাবর্তন করবো। তখন তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি প্রত্যাবর্তন করবো অথচ আমরা তায়িফ জয় করলাম না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, আগামীকাল সকালে তোমরা যুদ্ধ কর। সূতরাং তারা পরবর্তী দিন সকালে যুদ্ধ করল এবং অনেকেই আহত হলো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা আগামীকাল প্রত্যাবর্তন করবো। রাবী বলেন, এতে তাঁরা খুশি হলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁসলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. বদর যুদ্ধ
৪৪৭০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যখন আবূ সুফিয়ানের (মদিনায়) আগ্রাভিযানের সংবাদ পৌছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবূ বকর (রাঃ) এ ব্যাপারে কথা বললেন, কিন্তু তাঁর কথার উত্তর দিলেন না। এরপর উমর (রাঃ) কথা বললেন। তিনি তার কথারও কোন উত্তর দিলেন না। পরিশেষে সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) দন্ডায়মান হলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের জবাব প্রত্যাশা করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তবে-নিশ্চয়ই আমরা তাতে ঝাঁপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে বারকুল গিমাদ পর্যন্ত পৌছার জন্য তবে নিশ্চয়ই আমরা তাই করবো।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে আহবান (উদ্বুদ্ধ) করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে উপনীত হলেন। আর তাদের (সাহাবীগণের) সামনে সেখান কুরাইশের পানিবাহী উটপালও (রাখালসহ) উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবূ সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তখন সে বলতে লাগলো, আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে আবূ জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবনু খালফ (দলবল নিয়ে আসছে)।
যখন সে এরূপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যাঁ, আমি আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পুনরায় আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। তবে আবূ জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবনু খালফ লোকদের সঙ্গে নিয়ে (আসছে)। যখন সে পুনরায় এ একই কথা বলল, তখন তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন।
সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন তিনি এ অবস্থা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেন, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমির উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, এ স্থান অমুকের (কাফির) ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্থ। এ কথা বলার সময় তিনি মাটিতে এখানে ওখানে হাত রাখছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে যার নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয়নি।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. মক্কা বিজয়
৪৪৭১. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) বলেন, আমি একটি প্রতিনিধি দলের সাথে (যার মধ্যে আবূ হুরায়রা (রাঃ)ও ছিলেন) মুয়াবিয়া (রাঃ) এর কাছে গেলাম। সেই সময় ছিল রামাযান মাস। তখন তাঁরা একে অন্যের জন্য খানা তৈরি করতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) অধিকাংশ সময় আমাদেরকে তাঁর বাসস্থানে দাওয়াত করতেন। সুতরাং আমি মনে মনে বললাম, আমিও খানা তৈরি করবো এবং সলকেই আমার বাসস্থানে দাওয়াত করবো। আমি খানা তৈরীর নির্দেশ দিলাম। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে আমি বিকালে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, আজ রাতের দাওয়াত আমার বাসায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আপনি আজ আমার পূর্বেই (দাওয়াত) দিয়ে দিলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর আমি তাদের দাওয়াত করলাম। তখন আবূ হুরায়রা-(রাঃ) বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ননা করবে না?
তারপর তিনি মক্কা বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে অগ্রসর হলেন এবং পরিশেষে তিনি তথায় উপনীত হলেন। এরপর যুবাইরকে মক্কার একদিকে এবং খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে অপর দিকে প্রেরণ করলেন। আর আবূ উবায়দা (রাঃ) কে সেইসব লোকদের উপর নেতা বানিয়ে পাঠালেন যাদের কাছে লৌহ বর্ম ছিলনা। তারা উপত্যকার নিম্নভূমির পথ ধরে চললেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একটি বড় সেনাদলের মধ্যে। তিনি তাকালেন এবং আমাকে দেখে বললেনঃ,হে আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি উপস্থিত। এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট আনসার ব্যতীত আর কেউ যেন না আসে।
শায়বান ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তারপর তিনি বললেনঃ আনসারদেরকে আহবান কর। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আনসারগণ তার চারপাশে জমায়েত হলেন। এদিকে কুরাইশগণও তাদের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং অনুগতদেরকে একত্রিত করলো। এরপর তারা বলল, আমরা তাদেরকে আগে প্রেরণ করব। যদি তাদের- ভাগে কিছু জুটে, তবে আমরাও তো তাদের সঙ্গেই আছি। আর যদি তারা বিপদের সম্মুখীন (আক্রান্ত) হয় তবে তারা (প্রতিপক্ষ) আমাদের কাছে যা চাইবে, তাই আমরা মেনে নেব।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা কি কুরাইশের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং তাদের অনুগতদেরকে দেখতে পাচ্ছ? এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর একহাত অপর হাতের উপর রেখে ইঙ্গিত করলেন, (মক্কার পথে যারা তোমাদের বাধা দেয় তোমরা তাদের খতম করে দিবে।) এরপর বললেন, অবশেষে সাফা পাহাড়ে তোমরা আমার সঙ্গে মিলিত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা অগ্রসর হতে লাগলাম। আমাদের মধ্য হতে কেউ কাউকে হত্যা করতে চাইলেই তাকে হত্যা করতে পারছিল। তাই তাদের মধ্য হতে কেউই আমাদের উপর আক্রমণ করতে সাহস পায়নি।
বর্ণনাকারী বলেনঃ, তখন আবূ সুফিয়ান এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আজ কুরাইশ সম্প্রদায়ের সমষ্টিকে (রক্ত) হালাল করে দেওয়া হয়েছে। আজকের পরে আর কোন কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি আবূ সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। তখন আনসারগণ একে অপরের সাথে বলাবলি করতে লাগল যে, লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) স্বদেশের প্রতি আকর্ষণ এবং নিজ গোত্রের প্রতি মমতা পেয়ে বসেছে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, তখনই ওহী অবতীর্ণ হল। যখন ওহী অবতীর্ণ হতো তখন তা আমাদের নিকট গোপন থাকত না। ঐ সময় কারো সাধ্য হতো না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে চোখ তোলে দেখে, যতক্ষন না ওহী শেষ হতো। এরপর যখন ওহি শেষ হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আনসার সম্প্রদায়! তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনার কাছে উপস্থিত। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি বলেছ যে, লোকটিকে স্বদেশের আকর্ষণ পেয়ে বসেছে”। তখন তারা বললেন, এ রকম কিছু হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনও না। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসুল। আমি আল্লহর উদ্দেশ্যে স্বদেশ এবং তোমাদের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছি। (আমার) জীবন তোমাদের জীবন ও মরণ তোমাদের মরণ।
তারা কাঁদতে কাঁদতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে অগ্রসর হলেন এবং কাঁদতে লাগলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা যা বলেছিলাম, তা ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আমাদের ভালবাসা ও লোভ এর কারণে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমাদের বক্তব্য বিশ্বাস করেন এবং তোমাদের ওযর গ্রহণ করেছেন।
বর্ননাকারী বলেনঃ এরপর মক্কার জনগণ আবূ সুফিয়ানের বাড়ীর দিকে চলে গেল (জীবন রক্ষার জন্যে) আর অন্যান্য মানুষ আপন ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে রইল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসওয়াদ’ এর নিকটবর্তী হয়ে একে চুম্বন এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করলেন। এরপর তিনি বায়তুল্লাহর পার্শ্বে রক্ষিত একটি মূর্তির নিকটবর্তি হলেন, যাকে তারা উপাসনা করতো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে তখন একটি ধনুক ছিল, তিনি এর এক প্রান্তে ধরে রেখেছিলেন। যখন তিনি মূর্তিটির নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি তা দ্বারা এর চোখে খুচাতে লাগলেন এবং বললেন, “সত্য আগমন করেছে এবং বাতিল (মিথ্যা) চলে গিয়েছে।”
এরপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শেষে তিনি সাফা পাহাড়ের দিকে গমন করলেন। এরপর তাতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহর দিকে চেয়ে দেখলেন এবং দুহাত উচু করে আলাহর প্রশংসা প্রকাশ করতে লাগলেন এবং তার যা দু'আ করার ছিল সে বিষয়ে দু'আ করলেন।
৪৪৭২. উবায়দুল্লাহ ইবনু হাশিম (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু মুগীরা (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে এই হাদীসটি বর্ননা করেছেন। তবে তার হাদীসে একথা অধিক উল্লেখ রয়েছে যে, তারপর তিনি তার এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ইশারা করলেন অর্থাৎ তাদের খতম করে দাও। এতে আরো উল্লেখ রয়েছে সে, তখন তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা এ রকম কিছু বলেছি। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমার নামের কী মর্যাদা থাকবে। সুতরাং এমনটি কখনো হবে না। আমিতো আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
৪৪৭৩. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দীরেমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, আমরা ভ্রমন করে মুয়াবিয়া ইবনু আবূ সূফিয়ান (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমাদের মধ্যে তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ)ও ছিলেন। প্রত্যেকেই এক দিন তার সাথীর জন্য খাবার তৈয়ার করতেন। একদিন আমার পালা আসল। তখন আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আজতো আমার পালা। অতএব, সকালেই আমার বাসস্থানে এলেন, তখনও খানা পাকানো শেষ হয় নাই। তখন আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আপনি যদি আমাদেরকে খানা তৈরির পূর্ব পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন হাদীস বর্ণনা করতেন! (তবে ভাল হতো)
অতএব, তিনি বললেনঃ আমরা মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) বাহিনীর কে ডান অংশের এবং যুবাইর (রাঃ) কে বাহিনীর বাম অংশের সেনাপতিত্ব প্রদান করলেন। আবূ উবায়দা (রাঃ) কে পদাতিক বাহিনীর এবং উপত্যকার নিম্নভুমির অধিনায়ক নিযুক্ত করলেন। এরপর তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আনসারদেরকে আমার কাছে আসার জন্য আহবান কর। অতএব আমি তাদেরকে আহবান করলাম। এরপর তাঁরা দ্রুত আসলেন। তখন তিনি বললেনঃ হে আনসারগণ! তোমরা কি কুরাইশের বিভিন্ন (বিচ্ছিন্ন) দলের লোক দেখতে পাচ্ছ? তারা বললেন, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, আগামীকাল যখন তোমরা (যুদ্ধক্ষেত্রে) তাদের মোকাবিলা করবে তখন তাদেরকে সম্পূর্ণ নির্মূল করে দেবে। তারপর তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে ইঙ্গিতে বললেন (তাদেরকে সমূলে বিনষ্ট করে দেবে)। তারপর বললেনঃ আমার সাথে তোমাদের (খালিদ বাহিনীর) একত্রিত হবার স্থান সাফা পাহাড়। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন যে কোন (বিধর্মী) তাদের (আনসারদের) লক্ষ্যস্থলে পড়েছে, তাকেই তারা নির্মুল করেছে। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। তখন আনসারগণ তথায় উপনীত হয়ে সাফা পাহাড় ঘিরে ফেললো। তখন আবূ সুফিয়ান এলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কুরাইশদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে আর কোন কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আবূ সুফিয়ানের বাড়িতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। যে অস্ত্র ফেলে দিবে সেও নিরাপদ এবং যে স্বীয় গৃহের দরজা বন্ধ করে রাখবে সেও নিরাপদ। তখন আনসারগণ বলাবলি করছিল যে, এ লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) স্বীয় গোত্রের আকর্ষণ এবং স্বদেশের অনুরাগ পেয়ে বসেছে।
এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হল। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরাই কি বলেছিলে যে, “এ লোকটিকে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) তার গোত্রের ভালবাসা এবং স্বদেশের অনুরাগে পেছো বসেছে।” শোন! তাহলে আমার নামের মর্যাদা (ও অর্থ) কি? একথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।
আমি হলাম মুহাম্মাদ, আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। আমি আল্লাহর নির্দেশেই তোমাদের কাছে হিজরত করেছি। সুতরাং (আমার) জীবন (প্রশংসিত) তোমাদের জীবন (এবং আমার মৃত্যু তোমাদের মৃত্যু ওতপ্রোতভাবে জড়িত)। তখন তাঁরা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা একথা বলেছিলাম আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশেষ লোভ এর কারণে। (যেন তিনি আমা দেরকে ছেড়ে না যান।) তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমাদের সত্য বলে গ্রহন করেছেন এবং তোমাদের ওযর কবুল করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩২. কা'বার চারপাশ থেকে মূর্তি অপসারণ
৪৪৭৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন। তখন কাবার (অভ্যন্তরে) চারদিকে তিনশত ষাটটি মূর্তি ছিল। তার হাতে একটি ছড়ি ছিল তিনি তা দিয়ে মূর্তিগুলোকে খোঁচা দিতে ছিলেন এবং বলছিলেনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; মিথ্যাতো বিলুপ্ত হবারই। (১৭ঃ ৮১) সত্য এসেছে এবং অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃজন করতে না পারে পুনরাবৃত্তি করতে। (৩৪ঃ ৪৯) ইবনু আবূ উমার (রহঃ) يَوْمَ الْفَتْحِ (বিজয়ের দিন) কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
৪৪৭৫. হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) থেকে এ সনদে উন্নিখিত হাদীস, আযাতের শেষ زَهُوقًا (বিলুপ্ত হবারই) পর্যন্ত বর্ননা করেছেন। কিন্তু তিনি অপর আয়াতটি বর্ণনা করেন নি। আর তিনি نُصُبًا (মূর্তি, পূজার বেদী) শব্দের পরিবর্তে صَنَمًا (মূর্তি) শব্দ ব্যবহার করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. বিজয়ের পর কুরায়শদের গ্রেফতার করে হত্যা করা হবে না
৪৪৭৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুতী (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মক্কা বিজয়ের দিন বলতে শুনেছি যে, আজকের দিনের পর কিয়ামত পর্যন্ত কুরাইশগণকে (বেধ রেখে) হত্যা করা হবে না।
৪৪৭৭. ইবনু নুমাইর (রহঃ) ... যাকারিয়া (রহঃ) থেকে এ সুত্রে উল্লিখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি অধিক বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশদের মধ্য থেকে কোন “আসী” (নামের লোক) ইসলাম গ্রহণ করে নি, 'মুতি' ব্যতীত তার নাম ছিল “আসী” (অবাধ্য)। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখলেন মুতী (অনুগত)।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পর্কে
৪৪৭৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায আম্বরী (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হুদাইবিয়া দিবসে আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকদের মধ্যে সন্ধি পত্র লিপিবদ্ধ করলেন, তিনি লিখলেন-- এই (সন্ধিটি) চুক্তি করেছেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। তখন তারা বললো, ‘রাসুলুল্লাহ' কথাটি লেখবেন না। যদি আমরা বিশ্বাস করতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসুল, তবে তো আপনার সাথে আমরা যুদ্ধ করতাম না।
তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আলী (রাঃ) কে বললেন, এ অংশটি মুছে দাও। তখন আলী বললেন, আমি তা মুছবার লোক নই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই নিজ হাতে তা মুছে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধির একটি শর্ত এ ছিল যে, তারা মক্কায় প্রবেশ করে তিন দিন অবস্থান করতে পারবে এবং তখন তাঁরা কোন অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা। কিন্তু খাপেবদ্ধ তলোয়ার নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। আমি আবূ ইসহাককে জিজ্ঞাসা করলাম, جلبانُ السِّلاَحِ এর অর্থ কি? তিনি তখন বলেন, এর অর্থ খাপ এবং এর মধ্যে যা থাকে।
৪৪৭৯. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনুু, বাশশার (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়াবাসীদের মধ্যে সন্ধি করলেন, আলী (রাঃ) উভয়ের মধ্যে একটি সন্ধিপত্র লিখলেন। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) লিখলেন, 'মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ' তারপর মুয়ায বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি তার হাদীসে مَا كَاتَبَ (যা চুক্তি করেছেন) কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৮০. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও আহমাদ ইবনু জানাব মিসসিসী (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (উমরার জন্য আগমন করে) বায়তুল্লাহ শরীফের নিকট বাধাগ্রস্ত হলেন, তখন মক্কাবাসীরা এমর্মে তার সঙ্গে সন্ধি করলো যে, (পরবর্তী বছর) তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং সেখানে তিনদিন অবস্থান করবেন এবং কোষবদ্ধ তরবারী ছাড়া আর কিছু নিয়ে সেখানে ঢুকবেন না এবং কোন অধিবাসীকে নিয়ে মক্কা থেকে তার সাথে নিয়ে যাবেন না। পক্ষান্তরে তার সাথীদের কেউ যদি সেখানে থেকে যেতে চায়, তবে তাকে বারণ করবেন না।
তখন তিনি আলী (রাঃ) কে বললেনঃ আমাদের মধ্যকার শর্তগুলো এভাবে লিখে নাও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এ হচ্ছে সেই সন্ধি যা মুহাম্মামদ রাসুলুল্লাহ চুড়ান্ত করেছেন। তখন মুশরিকরা তাঁকে বললো, আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূলই জানতাম তবে আপনার অনুসরণই করতাম, বরং লিখুন, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ। তখন তিনি আলী (রাঃ) কে তা মুছে ফেলতে নির্দেশ দিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তা মুছতে পারবনা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে আমাকেই তার স্থান দেখিয়ে দাও। তিনি সে স্থান দেখিয়ে দিলেন আর তিনি তা (স্বহস্তে) মূছে ফেললেন এবং [আলী (রাঃ)] লিখলেন মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ।
তারপর (পরের বছর তিনি সাহাবাদের নিয়ে) সেখানে তিনি তিনদিন অবস্থান করলেন। যখন তৃতীয় দিন সমাগত হলো, তখন তারা আলী (রাঃ) কে বললে। এটা হচ্ছে তোমার সাথীর (নেতার) শর্তের স্থিরকৃত শেষ দিবস। তাঁকে বল তিনি যেন বের হয়ে যান। তখন তিনি তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি বেরিয়ে গেলেন।
ইবনু জানাব তার রিওয়ায়াতে بَايَعْنَاكَ এর স্থলে تَابَعْنَاكَ বলে বর্ণনা করেছেন।
৪৪৮১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরাইশরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সন্ধি করল। তাদের মধ্যে (কুরায়শ পক্ষ) সুহায়ল ইবনু আমরও ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বললেনঃ লিখ, بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ সুহায়ল বললো, বিসমিল্লাহ? আমরা তো জানিনা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কী? তবে আমরা যা জানি বি-ইসমিকা আল্লাহুম্মা, (হে আল্লাহ্! তোমার নামে) তাই লিখ।
তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লিখ, মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ এর পক্ষ থেকে। তখন তারা বলে উঠলো, আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূলই জানতাম, তাহলে তো আমরা আপনার অনুসরণই করতাম। বরং আপনি আপনার নাম এবং আপনার পিতার নাম লিখুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লিখ, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে।
তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এ মর্মে শর্ত আরোপ করলো যে, যারা আপনাদের নিকট থেকে চলে আসবে, আমরা তাকে ফেরৎ পাঠাবোনা, কিন্তু আমাদের কেউ যদি আপনাদের নিকট চলে যায়, তবে আপনারা তাকে অবশ্যই ফেরৎ পাঠাবেন।
তখন সাহাবীগণ বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কি এরূপ লিখবো? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি তাদের কাছে যায় তবে আল্লাহই তাকে (রহমত থেকে) সরিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে যে আমাদের কাছে আসবে (তাকে ফেরত দিলেও) আল্লাহ অচিরেই তার কোন ব্যাবস্থা ও পথ বের করে দিবেন।
৪৪৮২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবুল ওয়ায়েল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) সিফফিন দিবসে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের (অধিক) হওয়ার সম্ভাবনামুক্ত মনে করবে। আমরা হুদায়বিয়ার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। আমরা এটিকে (সিফফীনের চলমান বিরোধকে যথার্থ) যুদ্ধ মনে করলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। আমি বলতে চাই সেই সন্ধির কথা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকদের মধ্যে হয়েছিল।
তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কি সত্যের উপর নই আর তারা বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তাই। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের নিহত (শহীদ)রা কি জান্নাতী এবং তাদের নিহতরা কি জাহান্নামী নয়?। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তাহলে কী কারণে আমরা দ্বীনের ব্যাপারে যিল্লাতি মেনে নিয়ে ফিরে যাবো, অথচ এখনো এ ব্যাপারে তাদের ও আমাদের মধ্যে আল্লাহর কোন ফয়সালা করেন নি!
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে খাত্তাব পুত্র! নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর রাসুল। আর তিনি অবশ্যই কখনো আমাকে বিনাশ করবেন না। রাবী বলেন, তখন উমার (রাঃ) চলে গেলেন। তিনি ক্রোধে ধৈর্যধারণ করতে পারছিলেন না। তাই আবূ বাকরের কাছে এলেন এবং তাঁকে বললেন, হে আবূ বাকর! আমরা কি হকের উপর এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, অবশ্যই। আবার তিনি বললেন, আমাদের নিহতরা কি জান্নাতী আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামী নয়? বললেন, নিশ্চয়ই। তখন তিনি বললেনঃ তা হলে কি কারণে আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে যিল্লাতি নিয়ে ফিরে যাবো, অথচ এখনো এব্যাপারে আমাদের এবং তাদের মধ্যে আল্লাহ কোন ফয়সালা দেননি! তখন তিনি বললেন, হে খাত্তাব তনয়! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ কখনও তাঁর বিনাশ করবেন না।
রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে কুরআন অবতীর্ণ হলো। তখন তিনি উমারকে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর সম্মুখে তা পাঠ করলে তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই কি বিজয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন তাঁর অন্তর শান্ত হল এবং তিনি ফিরে গেলেন।
৪৪৮৩. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) ... শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সিফফীন দিবসে সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) কে আমি বলতে শুনেছি হে লোক সকল! তোমাদের নিজেদের অভিমতকে (অধিক হওয়ার সম্ভাবনায়) অভিযুক্ত মনে করবে। আল্লাহর কসম! আমি আবূ জান্দালের সে দিনটি (অর্থাৎ হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন) প্রত্যক্ষ করেছি। যদি আমার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ প্রত্যাখ্যান করার সাধ্য থাকতো, তরে অবশ্যই তা প্রত্যাখ্যান করতাম। আল্লাহর কসম! যখন আমরা কখনো কোন (ভীষণ) সমস্যার (যুদ্ধের) সমাধানের জন্য তরবারি কাঁধে তুলে তা (অবশেষে) এমন সমাধানের পর্যায়ে পৌঁছে যা আমাদের জন্য বোধগম্য ছিল। কিন্তু তোমাদের এ ব্যপারটি তার বিপরীত।
ইবনু নুমায়র তার বর্ণনায় إِلَى أَمْرٍ قَطُّ (কোন ব্যাপারে) কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৮৪. উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ্ব (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের হাদীসে إِلَى أَمْرٍ يُفْظِعُنَا (এমন বিষয় যা আমাদের ঘাবড়িয়ে দেয়) উল্লেখ রয়েছে।
৪৪৮৫. ইবরাহীম ইবনু সাঈদ জাওহারী (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাহল ইবনুু হুনায়ফ (রাঃ) কে সিফফীনে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের নিজেদের মতকে তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অভিযুক্ত মনে করবে। কারণ, আমি আবূ জান্দলের দিনটি প্রত্যক্ষ করেছি। যদি আমার সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ সীমালংঘনের সামর্থ্য থাকতো (তবে তাই করতাম, এখন ব্যাপার এত সঙ্গীন হয়ে দাড়িয়েছে যে) আমরা এক দিকের ছিদ্রবন্ধ করলে অন্য দিকের ছিদ্র ফূটে উঠে।
৪৪৮৬. নসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তাঁদের বলেছেন, হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যবর্তনের সময় যখন এ আয়াত নায়িল হলোঃ “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়, যেন আল্লাহ (তোমার ক্রটিসমূহ) মার্জনা করেন ...... মহা সাফল্য” পর্যন্ত (সূরা ফাতহঃ ১-৪) তখন তাদের মন দুঃখ বেদনা ক্ষোভে পূর্ন ছিলো। আর তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হুদায়বিয়াতেই (কুরবানীর) পশুগুলো কুরবানী করলেন। তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল হয়েছে, যা সমগ্র দুনিয়া থেকে আমার কাছে অধিক প্রিয়।
৪৪৮৭. আসিফ ইবনু নাযার তায়মী (রহঃ) ... ইবনু মুসান্না, আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) ও ইবনু আবূ আরুবা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্নিত রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. ওয়াদা পূর্ণ করা
৪৪৮৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে বদর যুদ্ধে যোগদান থেকে এছাড়া অন্য কিছু বিরত রাখেনি যে, আমি এবং আমার পিতা হুসায়ল ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম। এমন সময় কোরায়শ কাফির আমাদের ধরে বসে এবং বলে যে , তোমরা অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যেতে মনস্থ করেছো। জবাবে আমরা বললাম, আমরা তার কাছে যেতে চাইনা বরং আমরা মদিনায় (ফিরে) যেতে চাই। তখন তারা আল্লাহর নামে আমাদের নিকট অঙ্গীকার নিল যে, আমরা অবশ্যই মদিনায় ফিরে যাবো এবং তাঁর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করবো না। তারপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম এবং সে সংবাদ তাকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা ফিরে যাও। আমরা তাদের কৃত ওয়াদা পুর্ণ করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবো।
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. আহযাবের (খন্দক ও পরীখার) যুদ্ধ
৪৪৮৯. যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবরাহীম তায়মীর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, আমরা হুযায়ফা (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো, হায়, আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেতাম, তবে তাঁর সঙ্গে মিলে একত্রে যুদ্ধ করতাম এবং তাতে যথাসাধ্য করতাম (কোনরূপ পিছপা হতাম না)। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, তুমি তাই করতে? কিন্তু আমি তো আহযাবের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। (সে রাতে) প্রচন্ড বায়ু ও তীব্র শীত আমাদের কাবু করে ফেলেছিল। এমনি সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোযণা করলেন, ওহে! এমন কেউ আছে কি, যে আমাকে শক্রর খবর এনে দেবে; আল্লাহর তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে রাখবেন?
আমরা তখন চুপ করে রইলাম এবং আমাদের মধ্যে কেউ তার সে আহবানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার বললেন, “ওহে! এমন কোন ব্যক্তি আছে কি” যে আমাকে শক্রপক্ষের খবর এনে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে রাখবেন” এবারও আমরা চুপ রইলাম আর আমাদের মধ্যে কেউ তাঁর আহবানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার ঘোষণা করলেন, ওহে! এমন কেউ আছে কি যে আমাকে শক্র পক্ষের খবর এনে দেবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিন তাকে আমার সঙ্গে রাখবেন, এবারও আমরা চুপ করে রইলাম এবং আমাদের কেউ তাঁর আহবানে সাড়া দেয়নি।
এবার তিনি বললেনঃ হে হুযায়ফা ওঠো এবং তুমি শক্র পক্ষের খবর আমাদের এনে দাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এবার আমার নাম ধরেই ডাক দিলেন, তাই উঠা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলনা। এবার তিনি বললেনঃ শক্রপক্ষের খবর আমাকে এনে দাও, কিন্তু সাবধান তাদের আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করোনা।
তারপর আমি যখন তাঁর নিকট থেকে প্রস্থান করলাম, তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন হাম্মামের (উষ্ণ আবহাওয়ার) মধ্য দিয়ে চলেছি। এভাবে আমি তাদের (শক্রপক্ষের) নিকটে পৌছে গেলাম। তখন আমি লক্ষ্য করলাম আবূ সুফিয়ান আগুনের দ্বারা তাঁর পিঠে ছেক দিচ্ছেন। আমি তখন একটি তীর ভুলে ধনুকে সংযোজন করলাম এবং তা নিক্ষেপ করতে মনস্থ করলাম এমন সময় আমার মনে পড়ে গেল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন, "তাদেরকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে-তুলোনা।" আমি যদি তখন তীর নিক্ষেপ করতাম তবে তীর নির্ঘাৎ লক্ষ্যভেদ করতো।
অগত্যা আমি ফিরে আসলাম এবং ফিরে আসার সময়ও উষ্ণ হাম্মামের মধ্য দিয়ে অতিক্রমের মতো উষ্ণতা অনুভব করলাম। তারপর যখন ফিরে এলাম, তখন প্রতিপক্ষের খবর তাঁকে প্রদান করলাম। আমার দায়িত্ব পালন করে অবসর হতেই আবার আমি শীতের তীব্রতা অনুভব করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খোলা অতিরিক্ত জুব্বার অংশ দিয়ে আমাকে আবৃত করে দিলেন, যা তিনি সালাত আদায়ের সময় গায়ে দিতেন। তারপর আমি ভোর পর্যন্ত একটানা নিদ্রায় আচ্ছন্ন রইলাম। যখন ভোর হল তখন তিনি বললেনঃ হে ঘুমকাতুরে! এখন উঠে পড়ো।
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. উহুদ যুদ্ধ
৪৪৯০. হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওহুদ যুদ্ধের দিন কেবল সাতজন আনসার ও দুজন কোরায়শ (মুহাজির) সাথীসহ (শক্রবাহিনী কর্তুক) অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং তারা তাকে বেষ্টন করে ফেলে তিনি বললেনঃ কে আমার পক্ষ থেকে শক্রদের প্রতিহত করবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। অথবা বললেনঃ সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে। তখন আনসারদের মধ্যকার একব্যক্তি অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ শুরু করল এবং পরিশেষে শহীদ হন। তারপর পুনরায় তারা তাঁকে বেষ্টন করে ফেললো এবং অনুরূপভাবে (লড়াই করতে করতে তাঁদের) সাতজনই শহীদ হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমরা সঙ্গীদের প্রতি সুবিচার করিনি। (আমরা বেঁচে রইলাম, অথচ তারা শহীদ হলেন।)
৪৪৯১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উহুদ যুদ্ধের দিন আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (পবিত্র) মুখমন্ডল যখম করা হয়, তার ‘রুবাঈ’* দাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং তার মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে ঢুকে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ঢাল দিয়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) যখন দেখলেন যে, তাতে রক্তপড়া আরো বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন তিনি একটি মাদুর খন্ড পোড়ালেন এবং ছাই হয়ে গেলে তা যখমের উপর জড়িয়ে দিলেন। এতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।
* সামনের দু' দাঁতের পার্শ্ববর্তী ডান ও বামের দাঁত।
৪৪৯২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবু হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। সাহল ইবনু সাঈদ (রাঃ) কে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি (আবু হাযিম) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি সম্যকভাবে জানি, কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যখম ধুয়ে দিচ্ছিলেন, কে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং কিসের দ্বারা তাঁর চিকিৎসা করা হয়েছিল। তারপর তিনি আবদুল আযীযের মাধ্যমে বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তাঁর বর্ণনায় এ পার্থক্য রয়েছেঃ “তার মুখমন্ডল যখম করা হয় এবং هُشِمَتْ এর স্থলে كُسِرَتْ শব্দ ব্যাবহার করেছেন।
(নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আহত হওয়া সংক্রান্ত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর এ বর্ণনাটি সামান্য শাব্দিক পরিবর্তন সহ অন্য সুত্রেও বর্ণিত হয়েছে।)
৪৪৯৩. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমার সকলেই ইবনু উয়ায়না থেকে এবং আমর ইবনু সাওয়াদ আমেরী, মুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী ... সকলেই ইবনু হাযিম সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবূ হিলাল এর হাদীসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমন্ডলে আঘাত লেগে ছিল। আর মুতাররিফ এর হাদীসে আছে তার মুখমন্ডলে যখম হয়েছিল।
৪৪৯৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উহুদ দিবসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুবাঈ দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তার মাথায় আঘাত করা হয় এবং তিনি তার শরীর থেকে রক্ত মুছতে মুছতে বলছিলেন, সে জাতি কিভাবে সাফল্য অর্জন করবে, যারা তাদের নাবীকে আহত করলো এবং তাঁর সন্মুখের দু'টি দাত ভেঙ্গে দিল অথচ তিনি তাদের আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছিলেন? তখন আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করলেনঃ "হে রাসুল! এ ব্যাপারে আপনার করনীয় কিছুই নেই।" (আল ইমরানঃ ১২৮)
৪৪৯৫. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিখতে পাচ্ছি যে, তিনি এমন একজন নাবীর কথা (কাহিনীরূপে) বর্ণনা করছেন, যাকে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকজন আঘাত করেছে। আর তিনি তাঁর নিজের চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, "পালনকর্তা! আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা কর, কেননা তারা বুঝে না।" (আ'মাশ (রহঃ) থেকে সামান্য পার্থক্য সহ অন্য সুত্রেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।)
৪৪৯৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ননা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি তার কপাল থেকে রক্ত মুছছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যাকে হত্যা করেন তার উপর আল্লাহর প্রচণ্ড ক্রোধ
৪৪৯৭. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সব হাদীস বর্ণনা করেছেন এর মধ্যে এটিও বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর রোষ প্রচন্ড হয়, যারা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এরূপ আচরণ করে”। একথা বলতে বলতে তিনি তার সম্মুখের (দু'টি ভগ্ন) দাঁতের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ মহামহিম আল্লাহর রোষ তার উপরও প্রচন্ড হয়, যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পথে (জিহাদের ময়দানে) হত্যা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. মুশরিক ও মুনাফিকদের হাতে নবী (ﷺ) এর দুঃখ কষ্ট ভোগ
৪৪৯৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান জু'ফি (রহঃ) ... ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ শরীফের নিকট সালাত আদায় করছিলেন। আবূ জাহল ও তার কতক সাথী (অদুরে) উপবিষ্ট ছিল। আগেরদিন সেখানে একটি উট যবাই করা হয়েছিলো। আবূ জাহল বলল, কে অমুক গোত্রের উটের (নাড়িভুড়িসহ) জরায়ু নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ যখন সিজদায় যারে, তখন তার দুই কাঁদের মধ্যবর্তী স্থানে তা রেখে দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন তার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে তা রেখে দিল। তখন তারা হাসাহাসি করতে লাগলো এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো আর আমি তখন দাঁড়িয়ে তা দেখলাম। যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাচ্ছিলেন না। অবশেষে একব্যক্তি গিয়ে ফাতিমাকে খবর দিল। ফাতিমা তৎক্ষনাৎ আসলেন। আরা তিনি তখন কিশোরী (বালিকা)। তিনি তা তাঁর উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে বকা দিতে থাকেন।
তারপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন তখন উচ্চঃস্বরে তাদেরকে বদ দু’আ দিলেন আর তিনি যখন দু'আ করতেন (সাধারণত) তিনবার করতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা করতেন তখন তিনি তিনবার করতেন। তারপর তিনি তিন তিনবার বললেনঃ “ইয়া আল্লাহ! তোমার উপরেই কোরেশদের (বিচারের ভার) ন্যস্ত করলাম।
যখন তারা তার আওয়ায শুনতে পেল তখন তাদের হাসি চলে গেল এবং তারা তার বদ দু'আয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উৎবা ইবনু রাবীআ, শায়বা ইবনু রাবীআ, ওলীদ ইবনু উকবা, উমাইয়া ইবনু খালফ ও উকবা ইবনু আবূ মুআইতের শাস্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত।
রাবী বলেন, তিনি সপ্তম জনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে পবিত্র সত্তা সত্যসহ রাসুলরূপে প্রেরণ করেছেন, তার কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি। তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বদরের একটি কাঁচা কুপে নিক্ষেপ করা হয়।
আবূ ইসহাক বলেন, ওলীদ ইবনু উকবার নাম এখানে ভুলে উক্ত হয়েছে।
৪৪৯৯. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদারত ছিলেন এবং তার আশেপাশে কুরায়শের কিছু লোকজন জড়ো ছিল। এমন সময় উকবা ইবনু আবূ মুআইত (উটনীর নাড়িভুড়িসহ) জরায়ু নিয়ে এল এবং তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠের উপর নিক্ষেপ করলো। তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। তারপর ফাতিমা আসলেন এবং তা তার পিঠ থেকে সরিয়ে দিলেন এবং যে ব্যক্তি তা করেছে, তাকে বদ দুআ করলেন।
তখন তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ইয়া আল্লাহ!। তোমার উপরই কুরাইশ সম্প্রদায়ের আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উকবা ইবনু রাবীআ, শায়বা ইবনু রাবীআ, উকবা ইবনু আবূ মুআইত, উমাইয়া ইবনু খালফ অথবা উবাই ইবনু খালফ (এদের বিচারের ভার) ন্যস্ত। রাবী শুবা (শেষের দুই নামের কোনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, সে ব্যাপারে) সন্দেহ করেন।
রাবী বলেন, এরপর আমি বদরের দিন তাদের দেখেছি যে, তারা সকলে নিহত হয়েছে এবং একটি কুপে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কেবল উমাইয়া বা উবাই এর লাশ বাদ ছিল। কেননা তার লাশ জোড়ায় জোড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বিধায় কুপে নিক্ষেপ করা হয়নি।
৪৫০০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) বাড়িয়ে বলেছেন, “এবং তিনি তিনবার (বলা) পছন্দ করতেন। তিনি বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! কুরাইশের (এদের) (বিচারের ভার) তোমার উপর ন্যস্ত। ইয়া আল্লাহ! কুরাইশদের (বিচারের ভার) তোমার উপর ন্যস্ত। ইয়া আল্লাহ! কুরায়শের (বিচারের ভার) তোমার উপরই ন্যস্ত। এভাবে তিনবার তিনি বলেন, এবং এদের মধ্যে ওয়ালীদ ইবনু উতবা ও উমাইয়া ইবনু খালফের কথা উল্লেখ করেন এবং রাবী তাতে কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ করেননি। রাবী আবূ ইসহাক বলেন, আমি সপ্তম (অভিশপ্ত) ব্যক্তির নাম ভুলে গেছি।
৪৫০১. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে কুরায়শের ছয় ব্যক্তির জন্য বদ দুআ করলেন। তাদের মধ্যে আবূ জাহল, উমাইয়া ইবনু খালফ, উতবা ইবনু রবীআ, শায়বা ইবনু রাবীআ, উকবা ইবনু আবূ মু'আইত রয়েছে। আল্লাহর কসম করে বলছি আমি তাদের পতিত শবদেহগুলো, বদরে দেখেছি! সূর্যতাপ তাদের বিকৃত করে ফেলেছিল। আর সেই দিনটিও ছিল অত্যন্ত গরমের।
৪৫০২. আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারাহ, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আমর ইবনু সাওয়াদ আমেরী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার জীবনে কি উহুদ দিবসের চাইতেও কঠোরতর কোন দিন এসেছে? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের হাতে আকাবার দিন যে নিগ্রহের সম্মুখীন হয়েছি, তা এর চাইতেও কঠোরতর ছিল। যখন আমি (আল্লাহর পানে দাওয়াত দিতে গিয়ে) ইবনু আবদ ইয়ালীল ইবনু আবদ কিলালের কাছে নিজেকে পেশ করেছিলাম। কিন্তু সে আমার ডাকে (আশানুরূপ) সাড়া দেয়নি।
তখন আমি অত্যন্ত দিকভ্রান্ত অবস্থায় সম্মুখের দিকে চলতে লাগলাম এবং 'কারনুস ছা'আলিব' নামক স্থানে না পৌছা পর্যন্ত আমি (কেন কোথায় যাচ্ছি তার) সম্বিৎ ফিরে পাইনি। তারপর যখন আমি মাথা উঠলাম তখন দেখি, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়াপাত করছে এবং এর মধ্যে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দিখতে পেলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, মহা মহিমানিত আল্লাহ আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের উক্তি এবং আপনাকে প্রদত্ত তাদের উত্তরও শুনেছেন এবং তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপারে যেরূপ ইচ্ছা সেরুপ আদেশ তাকে করেন।
তখন পাহাড়ের ফিরিশতাও আমাকে ডাক দিলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, ইয়া মুহাম্মাদ! আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের উক্তি আল্লাহ তা’আলা শুনেছেন। আর আমি হা-নাম পাহাড়ের (তত্ত্বাবধানকারী) ফিরিশতা। আপনার রব আপনার কাছে আমাকে এজন্যে পাঠিয়েছেন যেন আপনি আপনার ইচ্ছামত আমাকে নির্দেশ দেন। (আপনি বললে) আমি এ পাহাড় দুটিকে তাদের উপর চাপা দিয়ে দিব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি বরং আশা করছি যে, আল্লাহ তাআলা হয়তো এদের ঔরস থেকেই এমন বংশধরদের জন্ম দিবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সঙ্গে কিছুকে শরীক করবে না।
৪৫০৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জুন্দব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি আঙ্গুল কোন একটি অভিযানে রক্তাক্ত (আহত) হয়। তখন তিনি (উক্ত আঙ্গুলকে লক্ষ্য করে) বললেনঃ তুমি তো একটি আঙ্গুল মাত্র, তুমি আহত হয়েছ এবং তুমি যে কষ্ট পেয়েছ, তা আল্লাহর পথেই (গন্য)।
৪৫০৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আসওয়াদ ইবনু কায়েস (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে রাবী আরও বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন এক গুহায় (বাহিনীতে) ছিলেন, তখন তার আঙ্গুলের যখম হয়।
৪৫০৫. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আসওয়াদ ইবনু কায়েস থেকে বর্ণিত যে, তিনি জুন্দুব (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসতে বিলম্ভ করেন। এতে মুশরিকরা বলতে লাগলো, মুহাম্মাদ পরিত্যক্ত হয়েছেন। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন, “শপথ পূর্বাহ্ণের , শপথ রজনীর, যখন তা হয় নিঝুম, তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হন নি।”
৪৫০৬. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... আসওয়াদ ইবনু কায়িস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, (একবার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিড়িত হন বিধায় দুই বা তিন রাত্রি জাগতে পারেন নি (তাহাজ্জুদের জন্য)। তখন একটি মহিলা এসে বললো, “মুহাম্মাদ, আশা করি, এবার তোমার শয়তান তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে। কেননা, দুই বা তিন রাত যাবৎ তোমার নিকটে তার আগমন লক্ষ্য করছিনা।” তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন, “শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর, যখন তা হয় নিঝুম, তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি নারাজও হননি।”
৪৫০৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শু'বা (রহঃ) থেকে এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উভয়ে উক্ত সনদে আসওয়াদ ইবনু কায়েস (রহঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪০. মুনাফিকদের অত্যাচারে আল্লাহর নিকট নবী (ﷺ) এর দু'আ ও ধৈর্যধারন
৪৫০৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধায় আরোহণ করলেন যার উপর জীন (বসার গদি) ছিল এবং তার নীচে একটি ফাদাকী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পাশ্চাতে উসামা (রাঃ) কে বসালেন। বনী হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্রের এলাকায় তিনি সাঈদ ইবনু উবাদা (রাঃ) কে (তার অসুস্থ অবস্থায়) দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তিনি এমন একটি সমাবেশ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মুশরিক পৌত্তলিক ও ইয়াহুদীরা একত্রে বসা ছিল। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উবাইও ছিল এবং মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ও ছিলেন। যখন মজলিসটি সাওয়ারীর ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার নাক চাঁদর দিয়ে ঢেকে নিল।
এরপর বলল, আপনারা আমাদের উপর ধুলি উড়াবেন না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সালাম দিলেন। তারপর তিনি সেখানে থামলেন এবং নামলেন। আর তাদের আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। এবং তাদের সম্মুখে কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই বলে উঠলো, ওহে লোক! আপনি যা বলছেন, তা যদি সত্যই হয় তবে এর চাইতে উত্তম আর কিছুই নয়, যে আপনি আমাদের মজলিসে এসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। আপনি আপনার বাসস্থানে ফিরে যান। সেখানে আমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি যায়, তার কাছে আপনি এসব উপদেশ বিতরন করবেন।
তখন আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বলে উঠলেন, (ইয়া রাসুলাল্লাহ) আমাদের মজলিসে (যতখুশী ইচ্ছা) আগমন করবেন। কেননা, আমরা তা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক, ইয়াহুদীরা পরস্পরে বাদানুবাদ ও গালাগালিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এমন কি রীতিমত একটা দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হয়।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিবৃত করতে লাগলেন। তারপর তাঁর বাহনে সাওয়ার হয়ে সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর বাড়ীতে গিয়ে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, সা’দ! তুমি কি শোননি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী বলেছে? সে এরু এরূপ উক্তি করেছে। সা’দ (রাঃ) বললেন, একে ক্ষমা করে দেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! এবং মার্জনা করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ যে মর্যাদা দিয়েছেন, তা তো দিয়েছনই। (কিন্তু তার ব্যাপার?)
এই জনপদের লোকজন স্থির করেছিল যে, তাকে রাজ মুকুট ও (সর্দারের) পাগড়ী পরাবে। (অর্থাৎ তাকে তাদের নেতা বানাবে) কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে সত্য দান করেছেন, তা দিয়ে যখন আল্লাহ তায়াআলা তার আকাঙ্খা ঠুকরে দিলেন, তাতে সে বিদ্বিষ্ট হয়ে পড়ে। তাই সে এরূপ আচরণ করেছে যা আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মার্জনা করে দিলেন।
৪৫০৯. মুহাম্মদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তাতে এতটুকু বর্ধিত উল্লেখ করেছেন, এটা আবদুল্লাহর (বাহ্যতঃ) ইসলাম গ্রহনের পুর্বের কথা।
৪৫১০. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আ'লা কায়সী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো, (ইয়া রাসুলাল্লাহ) যদি আপনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কাছে যেতেন! তিনি তখন একটি গাধায় চড়ে তার কাছে রওনা হলেন। একদল মুসলমানও তার সঙ্গে গেলেন। এলাকাটি ছিল একটি লোনা ঊষর ভূমি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন, তখন সে বললো, দুরে থাকবেন। আল্লাহর কসম! আপনার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
রাবী বলেন, তখন আনসারদের একজন উঠে (তৎক্ষণাৎ) জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গাধার গন্ধ তোমার দুর্গন্ধের চাইতে অনেক উত্তম।” রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহর সম্প্রদায়ের একব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। রাবী বলেন, তারপর উভয় পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। রাবী বলেন, তখন তাদের মধ্যে লাঠি, হাতাহাতি ও জুতা মারামারি লেগে গেল। পরে আমরা জানতে পারলাম তাদের উদ্দেশ্য কুরআনের আয়াতঃ “যদি ঈমানদারদের দুটি দল পরস্পরে হানাহানিতে লিপ্ত হয়, তবে তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দাও।” নাযিল হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. আবু জাহলের নিধন
৪৫১১. আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধের দিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ জাহলের কী হলো, কে আমাদের জানাবে। তখন ইবনু মাসউদ বেরিয়ে গেলেন এবং (যুদ্ধক্ষেত্রে) গিয়ে দেখলেন, আফরা (রাঃ) এর দুই পুত্র তাকে এমনি আঘাত করেছে যে, সে ঠান্ডা হয়ে গেছে। রাবী বলেন, তখন ইবনু মাসউদ তার দড়ি ধরে বললেন, তুমি কি আবূ জাহল? সে বললো, একজন পুরুষের চাইতেও বড় কিছু তোমরা হত্যা করেছ কি? অথবা সে বললো, যাকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা হত্যা করেছে? রাবী বলেন, আবূ মিজলায (রহঃ) বলেছেন, আবূ জাহল বলেছে হায়! চাষা ছাড়া অন্য কেউ যদি আমাকে হত্যা করতো।
৪৫১২. হামিদ ইবনু উমর বাকরাবী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ “আবূ জাহল কি করলো, তা কে আমার জন্য জেনে আসবে”? অতঃপর তিনি ইবনু উলায়্যা ও আবূ মিজলায (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীসটি বর্ননা করেছেন, যেমন ইসমাঈল (রহঃ) বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. ইয়াহুদী দুর্ধর্ষ নেতা কা'ব ইবন আশরাফের নিধন
৪৫১৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু মিসওয়ার যুহরী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কাব ইবনু আশরাফের (নিধনের) জন্য কে আছ? কেননা, সে আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিয়েছে। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তবে আমাকে (প্রয়োজনমত কথা বানিয়ে) বলার অনুমতি দিন। তিনি বললেন, বলো।
তারপর তিনি তার কাছে এলেন। তিনি (কথা প্রসঙ্গে তাদের পূর্বেকার) পারস্পরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, “এ ব্যক্তি তো (অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদাকা উসূল করতে চায় এবং সে আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।” সে যখন তা শুনতে পেলো, তখন বললো, আরো অপেক্ষা কর। আল্লাহর কসম, তোমরা তার কারণে বিরক্ত হবেই। তখন তিনি বললেন, আমরা সবে মাত্র তাঁর অনুসারী হয়েছি। তাই ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে গড়ায় তা না দেখে এ মুহূর্তেই তাকে ত্যাগ করাটাও সমীচীন মনে করছিনা।
এখন আমি চাই তুমি আমাকে কিছু ধার দাও। সে বললো, তুমি আমার কাছে কী বন্ধক রাখবে? তিনি বললেন, তুমি কি চাও সে বললো, তোমাদের নারীদের আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, “তুমি হলে আরবের সবচাইতে সুন্দর পুরুষ। এ অবস্থায় তোমার কাছে আমাদের রমনীদের কি বন্ধক রাখতে পারি? তখন সে বললো, তা হলে তোমাদের সন্তানদের আমার কাছে বন্ধক রাখ। জবাবে তিনি বললেন, “আমাদের কারো সন্তানকে এ বলে গালি দেয়া হবে যে, তাকে মাত্র দুই ওসাক (প্রায় দশ মণ পরিমাণ) খেজুরের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। আমরা বরং তোমার কাছে যুদ্ধাস্ত্র বন্ধক রাখবো। সে বললো, ঠিক আছে।”
তখন তার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হলেন যে, হারিস, আবূ আবস ইবনু জাব্র ও আব্বাদ ইবনু বিশর সহ তার কাছে আসবেন। তারপর রাতের বেলা তারা তার কাছে আসলেন এবং তাকে ডাকলেন। সে তাদের কাছে নেমে এল। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, রাবী আমর ব্যতীত অন্যরা বলেন, তখন তার স্ত্রী তাকে বললো, আমি এমন একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি তা যেন খুনের স্বর। সে বললো, এ হচ্ছে মুহাম্মাদ আর তার দুধ ভাই আবূ নাইলা। সম্ভ্রান্ত লোককে যদি রাতের বেলা অস্রঘাতের মুখে ডাকা হয় তবুও সে ডাকে সে সাড়া দেয়।। মুহাম্মাদ (তার সঙ্গীদের) বললেন, সে যখন আসবে, তখন আমি তার শির লক্ষ্য করে আমার হাত বাড়াবো। যখন আমি তা ভালমতো ধরে নেবো, তখন তোমরা তোমাদের কাজ সেরে নেবে।
তিনি বলেন, তারপর সে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে নীচে নেমে এল। তারা বললেন, আমরা তোমার নিকট থেকে অতি সুঘ্রাণ পাচ্ছি। সে বললো, হ্যাঁ আমার স্ত্রী অমুক হচ্ছেন আরবের সর্বাধিক সুঘ্রাণের মহিলা। তখন তিনি বললেন, আমাকে তা থেকে একটু সুবাস নিতে অনুমতি দিবেন? তখন সে বললো, হ্যাঁ। তখন মাথা কাছে টেনে শুকলেন। তারপর আবার শুকলেন। এরপর পুনরায় বললেন, আমাকে কি আবারও একটু ঘ্রাণ নিতে দিবেন একথা বলে তিনি তার মাথা শক্ত করে ধরে সাথীদের বললেন, তোমরা সেরে ফেল। তিনি বলেন, তখন তাঁরা তাকে হত্যা করে ফেললো।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. খায়বার যুদ্ধ
৪৫১৪. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধে যাত্রা করেন। আমরা সেদিন তাঁর সঙ্গে সকালের সালাত (ফজর) অন্ধকারে (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করি। তারপর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন এবং আবূ তালহা (রাঃ)ও তার সাওয়ারীতে চড়লেন। আর আমি (আরোহী) ছিলাম আবূ তালহার পশ্চাতে। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের গলিপথে চললেন। (আমরা এত পাশাপাশি পথ চলছিলাম যে) আমার আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরু স্পর্শ করেছিলো।
এমন সময় আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লুঙ্গি তাঁর উরুদেশ থেকে সরে গেল। আর আমি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরুর শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি যখন খায়বরের জনপদে প্রবেশ করলেন, তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার, খায়বর ধ্বংস হলো। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় পৌঁছি, তখন যাদের সতর্ক করা হয়েছে, তাদের সকাল অশুভ হয়ে যায়। তিনি একথা তিনবার বললেন।
রাবী বলেন, লোকজন তাদের কাজকর্মে বেরিয়ে গেল। তারা বলে উঠলো, “মুহাম্মাদ (এসে পড়েছেন দেখছি)”। রাবী আবদুল আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন সঙ্গী বললেন, আর তাঁর পঞ্চবাহিনীও (এসে পড়েছে)। রাবী বলেন, আমরা শক্তি বলে (যুদ্ধ করে) তা জয় করে নিলাম।
৪৫১৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বরের যুদ্ধের দিন আমি আবূ তালহার পিছনে (একই ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার) ছিলাম। আমার দু'পা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদদ্বয়কে স্পর্শ করছিল। রাবী বলেন, সুর্যোদয়ের সময় আমরা সেখানে এলাম। তখন লোকজন তাদের পশুগুলি সবেমাত্র ঘর থেকে বের করেছে এবং তারা তাদের কোদাল, কুড়াল, জাম্বিল নিয়ে (কাজের জন্য) বেরিয়ে পড়েছে। তখন তারা (সবিস্ময়ে) বললো, “মুহাম্মাদ পঞ্চবাহিনীসহ! রাবী বলেন, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খায়বর ধ্বংস হলো। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্ককৃতদের সকাল অশুভ হয়ে যায়। রাবী বলেন, মহান আল্লাহ তা'আলা তাদের ধ্বংস করে দিলেন।
৪৫১৬. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বরে এলেন, তখন বললেন, আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় পৌছি, তখন সতর্ককৃতদের সকাল অশুভ হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. খন্দকের যুদ্ধ
৪৫১৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খায়বর অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলা সফর করলাম। তখন এক ব্যক্তি (আমার ভাই) আমির ইবনু আকওয়া (রাঃ) কে বললোঃ ওহে! তুমি কি তোমার রণ সঙ্গীত থেকে আমাদেরকে কিছু কবিতা শুনাবে না? আমির (রাঃ) ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সওয়ারী থেকে অবতরন করে সকলকে শুনিয়ে জানিয়ে তার হুদী সঙ্গীত শোনাতে লাগলেন। তাতে তিনি বললেনঃ
“ইয়া আল্লাহ! আপনি না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, আমরা সাদাকা ও সালাত আদায় করতাম না। আপনার জন্য আমাদের জান কোরবান, আমাদের পিছনের সকল অপরাধ আপনি মাফ করে দিন শক্রর সম্মুখীন হলে আমাদের পা অটল রাখুন। আমাদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করুন। যখন আমাদের (জিহাদের জন্য) ডাকা হয় আমরা উপস্থিত হই এবং তারা চীৎকার করে আমাদের বিরুদ্ধে লোক জমা করে।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ চালকটি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমির। তিনি বললেন, আল্লাহ তার প্রতি রহমত করুন। তখন দলের একব্যক্তি বলল, তার জন্যে তো শাহাদত অবধারিত হয়ে গেছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের যদি তাঁর দ্বারা আরো উপকৃত করতেন। রাবী বলেন, তারপর আমরা খায়বরে আসলাম এবং তাদের অবরোধ করলাম। (অবরোধ দীর্ঘ হল) এমন কি আমাদের দারুন খাদ্যাভাব দেখা দিল।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করেছেন। তারপর বিজয়ের দিন যখন লোকদের সন্ধ্যা হলো তখন তারা বহু স্থানে আগুন জ্বালালো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেঃ এ আগুন কিসের? কিসের উপর (কি রান্না করার জন্যে) লোকজন এ আগুন জ্বালিয়েছে? তারা বললেন, গোশতের উপরে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিসের গোশত? তারা বললেন, গৃহপালিত গাধার গোশত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এগুলো ফেলে দাও আর রান্নার পাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেল। এক ব্যক্তি বলল, তারা কি এগুলো ফেলে দেবে এবং রান্নার পাত্রগুলো ধুয়ে ফেলবে? তিনি বললেনঃ তা হতে পারে।
রাবী বলেন, এরপর যখন লোকজন (যুদ্ধের জন্য) সারিবদ্ধ হল, আমির (রাঃ) এর তরবারীখানা ছিল খাটো। তিনি জনৈক ইয়াহুদীর পায়ের নলা লক্ষ্য করে যেই আঘাত করলেন, অমনি তরবারির ধারাল দিক তার নিজ হাটুতে এসে লাগলো। এতে আমির (রাঃ) শহীদ হলেন। রাবী বলেন, তারপর যখন লোকজন (খায়বর থেকে) ফিরে এলো, তখন সালামা আমার হাত ধরে বললেন, (রাবী বললেনঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাকে (সালামাকে) নির্বাক অবস্থায় দেখতে পেলেন, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, “আমার পিতামাতা আপনার জন্যে কুরবান হোক! লোকজনের ধারণা আমের (আত্নহত্যা) করে তাঁর (সারা জীবনের) আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তা কে বলেছে? আমি বললাম, অমুক অমুক এবং উসায়দ ইবনু হুযায়র আনসারী।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে এরূপ বলেছে, সে যথার্থ বলেনি। অবশ্যই তার (আমেরের) জন্যে দুটি পুরস্কার রয়েছে। তখন তিনি তার দুটি আঙ্গুল একত্রি করলেন (এবং বললেনঃ), সে (আল্লাহর রাস্তায়) সত্যিকার সাধক মুজাহিদ। খুব কম আরবই তাঁর মতো চলেছে (বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছে)।
কুতায়বা এ হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মাদের সাথে দুটি শব্দে দ্বিমত করেছেন। ইবনু আব্বাদ (রহঃ) এর রেওয়ায়েতে والقين سَكِينَة عَلَيْنَا স্থলে وَأَلْقِ سَكِينَةً عَلَيْنَا উল্লেখ রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. খায়বার যুদ্ধ
৪৫১৮. আবূ তাহির (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বরের যুদ্ধের দিন আমার ভাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থেকে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তাঁর তরবারী ফিরে এসে স্বয়ং তাঁকেই নিহত করে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তার ব্যাপারে নানা মন্তব্য করতে থাকেন এবং তার শাহাদাতের ব্যাপারে সন্দেহ করেন। তাঁরা বলাবলি করেন যে, সে এমন লোক, যে তার নিজ অস্রের আঘাতে মারা গেছে। আর তারা তার কোন কোন ব্যাপারেও সন্দেহ করেন।
সালামা বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তাঁর কবিতার কয়েকটি পংক্তি আবৃতি করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তখন বলে উঠলেন, আমি জানি, তুমি কি বলবে। রাবী বলেন, তারপর আমি আবৃত্তি করলামঃ
“ইয়া আল্লাহ! আপনি না হলে, আমরা হিদায়াত পেতাম না, আমরা সাদাকা দিতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না।” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যথার্থই বলেছো। তখন আমি আবৃতি করে চললামঃ “আমাদের প্রশাস্তি দান করুন এবং শত্রুর সম্মুখীন হলে আমাদের পা অটল রাখুন। মুশরিকরা আমাদের প্রতি বিদ্রোহী হল। যখন আমি আমার কবিতা পড়ে শেষ করলাম, তখন বললেনঃ এ কবিতাটি কে রচনা করেছে? আমি বললাম, আমার ভাই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তাঁর প্রতি সদয় হোন।
তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিছু লোক তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষনে দ্বিধাগ্রস্ত! তারা বলেন, সে এমন লোক, যে তার নিজ অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জিহাদ করতে করতে মুজাহিদের মত মরেছে।
রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, তারপর আমি সালামার এক পুত্রকে প্রশ্ন করলে তিনি আমাকে তার পিতার সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ব্যতিক্রম এতটুকু যে, তিনি বলেন, আমি যখন বললাম, কোন কোন লোক তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণে দ্বিধাগ্রস্ত, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা মিথ্যা বলেছে। সে জিহাদ করতে করতে মুজাহিদের মত মারা গেছে। তার দুটি পুরস্কার নির্ধারিত রয়েছে এবং তিনি তখন তার দুটি অঙ্গুলি দ্বার ইশারা করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. খন্দকের যুদ্ধ
৪৫১৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধের দিন আমাদের সঙ্গে একত্রে মাটি বহন করেন। মাটি তার পেটের শুভ্রতাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর তখন তিনি আবৃতি করছিলেনঃ আল্লাহর কসম! আপনি না হলে আমরা হেদায়াত পেতাম না, সাদাকা দিতাম না এবং সালাতও আদায় করতাম না। আমাদের প্রশান্তি দান করুন, আর তারাতো বিদ্রোহী দল আমাদের বিরুদ্ধে।
আবার কখনও কখনও বলছিলেনঃ সর্দাররা আমাদের মানতে অস্বীকার করল, তারা যখন ফিতনা চাইল, তখন আমরা অস্বীকার করলাম।
আর তা উচ্চারণের সময় তিনি তাঁর স্বর উচ্চ করছিলেন।
৪৫২০. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বারা (রাঃ) কে অনুরূপ বলতে শুনেছি। তবে তিনি বলেন যে, ওরা আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল।
৪৫২১. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা'নাবী (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন, আমরা তখন পরিখা (খন্দক) খনন করছিলাম এবং কাঁধে করে মাটি স্থানান্তরিত করছিলাম। তিনি বললেন, "ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের সুখ ছাড়া সুখ নেই, মুহাজির ও আনসারদের আপনি ক্ষমা করুন।"
৪৫২২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের জীবন ছাড়া জীবন নেই। আপনি ক্ষমা করে দিন আনসার ও মুহাজিরদের।
৪৫২৩. ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর অন্য রেওয়ায়েতে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেনঃ ”ইয়া আল্লাহ! (প্রকৃত) জীবন (কেবল) আখিরাতের জীবন। শুবা বলেন, অথবা তিনি বলেছেনঃ ইয়া ! আল্লাহ! আখিরাতের জীবন ছাড়া কোনজীবন নেই। আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি দয়া করুন।
৪৫২৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁরা (সেদিন) সমবেত সুরে গাইতে ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। তাঁরা বলছিলেনঃ "ইয়া আল্লাহ! প্রকৃত মঙ্গল তো আখিরাতে মঙ্গল। আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য করুন।"
শায়বানের বর্ণনায় فَانْصُرْه স্থলে فَاغْفِرْه বলেছেন।
৪৫২৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ খন্দকের দিন বলছিলেনঃ আমরা সেই লোক যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়আত হয়েছি। আর ইসলামের উপরই আছি। রাবী মুহাম্মদ সন্দেহ করে বলেন, অথবা বলেছিলেনঃ জিহাদের উপরই আছি সর্বদা।
আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেনঃ "ইয়া আল্লাহ! সকল মঙ্গল তো আখিরাতের মঙ্গল। আনসারদের এবং মুহাজিরদের ক্ষমা করুন।"
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. যু-কারদ ও অন্যান্য যুদ্ধ
৪৫২৬. কুতাহাবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ফজরের আযানের আগেই বের হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুধেল উঠনি তখন যু-কারদে (চারণ ভূমিতে) চরছিল। তখন আমার সাথে রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) এর গোলামের সাক্ষাৎ হলে সে বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুধেল উটনী সমুহকে নিয়ে গেছে। আমি বললাম, কে সেগুলো নিয়ে গেছে? সে বলল, গাতফান গোত্রের লোকেরা। রাবী বলন, তখন আমি উচ্চস্বরে তিনবার হাকঁ দিলাম; আগমন! (ভোররাতে) (সাহায্য চাই, সাহায্য)। রাবী (সালামা ইবনু আকওয়া) বলেন, মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যবর্তী সবাইকে আমি আমার সে হাক শুনালাম তারপর সোজা বেরিয়ে পড়লাম এবং যু-কারদের গিয়ে তাদের (লুটেরাদের) নাগালে পেলাম।
তখন তারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিলাম। তখন আমি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। আমি ছিলাম একজন (দক্ষ) তীরন্দাজ। আর তখন আমি বীরত্ব সূচক কবিতা আবৃতি করছিলাম, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরদের ধ্বংসের দিন। (কিংবা আজ তার দিন, যে শৈশব থেকে যুদ্ধের স্তন্য পান করেছে)।
আমি আমার তীর নিক্ষেপ ও বীরত্বব্যঞ্জক কখিতা আবৃতি করতে থাকলাম। অবশেষে আমি উটনীগুলো মুক্ত করলাম এমনকি আমি তাদের ত্রিশটি (বড়) চাদরও ছিনিয়ে নিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকজন এসে পড়লেন। তখন আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাদের পানির পথ রুদ্ধ করে রেখেছি, তাই তারা পিপাসার্ত। এবার আপনি একটি বাহিনী প্রেরণ করুন। তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আকওয়া, যথেষ্ট (বিরত্ব) দেখিয়েছ। এবার দয়স দেখাও। রাবী বলেনঃ তারপর আমরা ফিরে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁরই উঠিনি পিছনে বসিয়ে নিলেন। এভবাএ আমরা মদিনায় পৌছলাম।
৪৫২৭. আবূ বাকর ইবনু শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহিম ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... ইয়াস ইবনু সালামা (রাঃ) সুত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হুদায়বিয়ায় পৌঁছলাম। তখন সংখ্যায় আমরা চৌদ্দশ। তদুপরি সেখানে ছিল পঞ্চাশটি বকরী, যাদের পানি পানের জন্য পর্যাপ্ত পানি ছিল না। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুয়ার কিনারায় বসলেন এবং দু’আ করলেন অথবা তাতে থুথু দিলেন। রাবী বলেন, আর অমনি পানি উথ্লে উঠলো। তখন আমরাও পানি পান করলাম এবং (পশুদেরকেও) পানি পান করালাম।
রাবী বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বায়আতের জন্য গাছ তলায় ডাকলেন। রাবী বলেন, তারপর লোকদের মধ্যে আমি সর্বাগ্রে বায়আত হলাম। তারপর একে একে অন্যান্য লোকেরাও বায়আত হল। তিনি যখন বায়আত গ্রহন করতে করতে লোকজনের মধ্যবর্তী স্থানে (অর্থাৎ অর্ধ পরিমানে) পৌঁছলেন, তখন বললেন, হে সালামা! তুমি বায়আত হও। রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, লোকদের মধ্যে প্রথমেই আমি বায়াআত হয়েছি ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, আবারও হও না! রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অস্ত্রহীন অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি “জাহাদ” বা “দারাবা” (ঢাল) দান করলেন।
তিনি যখন বায়আত করতে করতে লোকদের শেষপ্রান্তে পৌঁছলেন এবং বললেন, তুমি কি আমার কাছে বায়আত হবে না, হে সালামা! রাবী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো লোকদের মধ্যে প্রথমভাগে এবং মধ্যভাগে (দু দু’বার) আপনার কাছে বায়আত হয়েছি। তিনি বললেন, আবারও হও না। তখন আমি তৃতীয়বার বায়আত হলাম। এরপর তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! তোমার সেই ঢালটি কোথায় যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম? রাবী (সালামা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার চাচা আমিরের আমার সাথে অস্ত্রবিহীন অবস্থায় আমার দেখা হলে আমি তাকে তা দিয়ে দিয়েছি। রাবী বলেন, এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি দেখছি পূর্ববর্তীযুগের সেই লোকদের মত, যে বলেছিল, হে আল্লাহ্! আমি এমন একজন বন্ধু চাই, যে আমার প্রানের চাইতেও আমার নিকট অধিক প্রিয় হবে।
এরপরে মুশরিকরা আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালো। আমাদের একপক্ষের লোকজন অন্যপক্ষের শিবিরে যাতায়াত করতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত আমরা উভয় পক্ষ পরস্পরে সন্ধিবদ্ধ হলাম। রাবী [সালাম (রাঃ)] বলেন, আমি তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমি তাঁর ঘোড়াকে পানি পান করাতাম এবং তাঁর পিঠ মালিশ করতাম (আঁছড়ে দিতাম) এবং তাঁর অন্যান্য খিদমত করতাম। আমি তার ওখানে খাওয়া দাওয়া করতাম। নিজের পরিবার পরিজন ও ধন সম্পদ পরিত্যাগ করে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রাসুলের রাহে মুহাজির হয়েছিলাম। রাবী বলেন, তারপর যখন আমরা ও মক্কাবাসীরা সন্ধিতে আবদ্ধ হলাম এবং আমাদের একপক্ষ অপর পক্ষের সাথে মেলামেশা করতে লাগলাম তখন আমি একটি গাছতলায় গিয়ে তাঁর নিচের কাঁটা প্রভৃতি পরিষ্কার করে তাঁর গোঁড়ায় একটু শুয়ে পড়ি। এমনসময় মক্কাবাসী চারজন মুশরিক এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অপ্রীতিকর কথা বলতে লাগলো।
আমার কাছে ওদের কথাবার্তা অত্যন্ত খারাপ লাগলো এবং আমি স্থান পরিবর্তন করে আর একটি গাছের তলায় চলে গেলাম। তারা তাদের অস্ত্র গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল। এমন সময় প্রান্তরের নিম্নাঞ্চল থেকে কে যেন চিৎকার করে বলল, হে মুহাজিরগণ! সাহায্য! ... ইবনু যুনায়ম নিহত হয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার তরবারী উঠিয়ে ধরলাম এবং ঐ চারজনের উপর আক্রমন চালালাম। তখন তারা ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাদের অস্ত্রগুলি হস্তগত করলাম এবং তা আটি বেঁধে আমার হাতে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, যে মহান সত্তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মানিত করেছেন তাঁর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মাথা তুলে, তবে তাঁর সেই অঙ্গে আঘাত (করে বিচ্ছিন্ন) করব যেখানে তাঁর চোখদুটি রয়েছে (অর্থাৎ ঘাড়ে)।
রাবী বলেন, তারপর তাদেরকে আমি হাঁকিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, এমন সময় আমার চাচা আমির ‘আবালাত’ গোত্রের একজনকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে এসেছেন। তাকে বলা হত মিকরায। সে ছিল আঘাত নিরোধক বস্ত্রাকৃত একটি ঘোড়ায় আসীন। আর তাঁর সাথে সত্তরজন মুশরিক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ “ওদেরকে ছেড়ে দাও, যাতে অপকর্মের সূচনা ওদের পক্ষ থেকেই হয় এবং পুনরাবৃত্তিও তারাই করে” একথা বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ষমা করে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “সেই পবিত্র সত্তা যিনি মক্কা প্রান্তরে তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে বিরত রেখেছেন তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর”।
রাবী বলেন, তারপর মদিনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। পথে এমন একটি মনযিলে আমরা অবতরন করলাম যেখানে আমদের ও লিহয়ান গোত্রের মধ্যে কেবল একটি পাহাড়ের ব্যবধান ছিল। আর তারা ছিল মুশরিক। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ব্যাক্তির জন্য আল্লাহর নিকটে দু’আ করলেন, যে ব্যাক্তি রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের পক্ষ থেকে খবরদারীর জন্য পাহাড়ের উপরে আরোহণ করবে। সালামা বলেন, সে রাতে আমি দুই কি তিনবার ঐ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলাম। তারপর আমরা মদিনায় এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গোলাম রাবাহকে দিয়ে তাঁর উটগুলি পাঠালেন। আর আমিও তালহা (রাঃ) এর ঘোড়ায় চলে তাঁর সাথে সাথে উটগুলি চারণ ভুমির দিকে নিয়ে গেলাম সেটাকে ঘাস পানি খাওয়ানোর জন্য। যখন আমাদের ভোর হল, আবদুর রহমান ফাজারী চড়াও হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (বিচরনকৃত) সমস্ত উট ছিনিয়ে নিয়ে গেল এবং তাঁর রাখালকে হত্যা করল। আমি তখন রাবাহকে বললাম, হে রাবাহ! লও এই ঘোড়া নিয়ে তুমি তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহকে পৌঁছে দিও আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ দাও যে, মুশরিকেরা তাঁর চারণ ভুমির উটগুলো লুটে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তখন আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম। তারপর মদিনার দিকে মুখ করে তিনবার হাক দিলাম, ইয়া সাবাহা! (ভোরের আক্রমণ)
তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম এবং তাদের উপর তীর নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আর আমি মুখে এই চরন উচ্চারন করছিলাম, “আমি আকওয়ার পুত্র, আজ সেই দিন, আজ ইতরকে (শায়েস্তা করার) দিন। আজকে কেমন মায়ের দুধ (খেয়েছ তা স্মরণের দিন)”। তখন আমি তাদের যে কাউকে পেয়েছি, তাঁর উপর এরকমভাবে তীর নিক্ষেপ করেছি যে, তীরের অগ্রভাগ তাঁর কাঁধের কোমল হাড় ছেদ করে বেরিয়েছে। তিনি বলেন, আমি বলতে লাগলাম, এ আঘাত নাও, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরের দিন (দুধপান স্মরণের দিন)। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম এবং ঘায়েল করতে লাগলাম এবং যখনই কোন ঘোড় সওয়ার আমার দিকে ফিরত তখনই আমি গাছের আড়ালে এসে তাঁর গোঁড়ায় বসে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করতাম আর তাকে জখম করে ফেলতাম।
অবশেষে যখন তারা পাহাড়ের সংকীর্ণ পথে আসে এবং তারা সে সংকীর্ণ পথে ঢোকে আমি তখন পাহাড়ের উপর উঠে সেখান থেকে (অবিরাম) তাদের উপর পাথর গড়িয়ে দিতে থাকলাম। তিনি বলেন, এভাবে আমি তাদের পশ্চাদ্ধবন করতে থাকলাম যে পর্যন্ত না আল্লাহর সৃষ্ট উটগুলোর প্রতিটি উট যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভারবাহী রূপে ছিল তা আমার পিছনে রেখে না যাই। তারা এগুলি আমার আওতায় ফেলে চলে গেল। তারপরও আমি তাদের অনুসরণ করে তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। এমনকি তারা ত্রিশটির বেশি চাঁদর এবং ত্রিশটি বল্লম নিজেদের বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্য ফেলে গেল। তারা যে সব বস্তু ফেলে যাচ্ছিল আমি তাঁর প্রত্যেকটিকে পাথর দিয়ে চিহ্নিত করে যাচ্ছিলাম, যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ তা চিনতে পারেন।
অবশেষে তারা পাহাড়ের একটি সংকীর্ণ স্থানে গিয়ে পৌঁছল। এমন সময় বদর ফাজারির অমুক পুত্র এসে তাদের সাথে মিলিত হল। এবার তারা সকলে মিলে সকালের খাবার খেতে বসল। আমি পাহাড়ের একটি শৃঙ্গে বসে পড়লাম। তখন সে ফাজারি বলল, ঐ যে লোকটাকে দেখছি সে কে? তারা বলল, লোকটির হাতে আমরা অনেক দুর্ভোগ পোহায়েছি। আল্লাহর কসম! সেই রাতের আধার থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত লোকটা আমাদের পিছন থেকে সরছে না, সে আমাদের প্রতি (অবিরাম) তীর নিক্ষেপ করেছে, এমনকি আমাদের যথাসর্বস্ব সে কেড়ে নিয়েছে। তখন সে বলল, তোমাদের মধ্যকার চারজন উঠে গিয়ে তাঁর উপর চড়াও হও। তখন তাদের চার ব্যাক্তি পাহাড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর তারা যখন আমার কথা শোনার মত নিকটবর্তী স্থানে এসে পৌঁছল, তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, তোমরা কি আমাকে চেন? তারা বলল, না। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি সালামা ইবনু আকওয়া। কসম সেই পবিত্র স্বত্বার, যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মানিত করেছেন। আমি তোমাদের যাকেই পেতে চাইব (লক্ষ্য বানাব) তাকে ধরে ফেলব। কিন্তু তোমাদের কেউ চাইলেই আমাকে ধরতে পারবে না।
তখন তাদের একজন বলল, আমিও তাই মনে করি। তিনি বলেন, তারপর তারা ফিরে গেল। আর আমি সেই স্থানেই বসে রইলাম। অবশেষে আমি গাছ গাছালির মাঝ দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অশ্বারোহীদের অগ্রসর হতে দেখলাম। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আখারাম আসা’দী। তাঁর পিছনে আবূ কাতাদা আনসারী। তাঁর পিছনে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ কিন্দী। তিনি বলেন, আমি তখন আখরামের ঘোড়ার লাগাম ধরলাম। তিনি বলেন, তখন তারা (শত্রুরা) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে গেল। আমি বললাম, হে আখরাম! ওদের থেকে সতর্ক থাকবে। তারা যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ এসে মিলিত হওয়ার পূর্বেই তোমাদের বিচ্ছিন্ন করে না ফেলে। আখারাম বললেন, যে সালামা! তুমি যদি আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিনের প্রতি বিশ্বাসী হও এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে সত্য মনে কর তবে আমার এবং শাহাদতের মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি করো না। সালামা বলেন, তখন আমি তাঁর পথ ছেড়ে দিলাম।
তখন তিনি আবদুর রহমানের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হলেন। আখরাম আবদুর রহমানের ঘোড়াকে আহত করলেন, আর আব্দুর রহমান বর্শার আঘাতে তাকে কতল করে দিল এবং আখরামের ঘোড়ার উপর চড়ে বসল। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোড় সাওয়ার আবূ কাতাদা (রাঃ) এসে পৌঁছলেন। তিনি আবদুর রহমানকে বর্শার আঘাতে হত্যা করলেন। সেই পবিত্র সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মর্যাদা মণ্ডিত করেছেন, আমি তখন এতই দ্রুতগতিতে তাদের পিছু ধাওয়া করে যাচ্ছিলাম যে, আর পিছনে (অনেক দূর পর্যন্ত) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন সাহাবীকেই দেখতে পেলাম না, এমনকি তাদের ঘোড়ার খুরের ধুলিও আমার দৃষ্টিগোচর হোল না। এভাবে চলতে চলতে সূর্যাস্তের প্রাক্কালে তারা এমন একটি গিরি পথে উপনীত হল যেখানে যু-কারাদ নামক একটি প্রস্রবণ রয়েছে। অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তারা পানি পান করতে অবতরন করল। তখন তারা আমাকে তাদের পিছু ধাওয়া করে দৌড়ে আসতে দেখতে পেল। এক জায়গায় পানি পান করার পূর্বেই আমি সেখান থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দিলাম। তখন তারা পাহাড়ের একটি ঢালু উপত্যকার দিকে দৌড়াতে লাগলো আর আমিও তাদের পিছু ধাওয়া করতে লাগলাম।
আমি তাদের যে কোন একজনের নিকটবর্তী হলে তাঁর কাঁধের অস্তিতে তীর নিক্ষেপ করে বললাম, আমি আকওয়ার পুত্র, ইতরদের (বোঝাবার) দিন আজ (দুধপান স্মরণের দিন)। সে তখন বলল, তাঁর মা (পুত্র হারা হয়ে) তাঁর জন্য কাদুক তুমি কি সে আকওয়া যে আমাদের সেই ভোর থেকে অতিষ্ঠ করে রেখেছ? আমি বললাম হ্যাঁ, তোমার জানের দুশমন, (আমি) সেই তোমার ভোরবেলার আকওয়াই। তিনি বলেন, অতঃপর তারা দুটি ক্লান্ত ঘোড়া উপত্যকায় ছেড়ে চলে গেল। তিনি বলেন, তখন আমি ঐ দুটোকে হাকিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে এলাম। তিনি বলেন, সেখানে একটি অল্প দুধভর্তি ‘সাতীহা’ (চামড়ার তৈরি পাত্র) এবং একটি পানিভর্তি সাতীহা নিয়ে এসে আমির আমার সাথে মিলিত হলেন। আমি তখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম এবং (দুধ) পান করলাম। তারপর এমন অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম যখন তিনি ঐ পানির কাছে ছিলেন, যা থেকে আমি ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সমস্ত উট ও মুশরিকদের নিকট থেকে আমার ছিনিয়ে আনা সব কিছু বর্শা ও চাঁদর প্রভৃতি হস্তগত করেছেন। তখন বিলাল, লোকদের কাছে থেকে আমার উদ্ধারকৃত একটি উট জবাই করেছেন এবং তাঁর কলিজা ও কুজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য ভুনছিলেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সুযোগ দিন, আমি আমাদের লোকদের থেকে একশ জনকে বাছাই করে নিয়ে সেই দুশমনদের পিছু ধাওয়া করি যাতে তাদের সকলকে এমনিভাবে হত্যা করব যে, তাদের খবর বয়ে নিয়ে যাওয়ার মত একটি লোকও অবশিষ্ট থাকবেনা। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হাসলেন যে, চুলার আগুনের আভায় তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলি প্রকাশ পেল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালামা! তুমি কি মনে কর যে, তুমি তা-ই করবে? আমি বললাম হ্যাঁ, সেই পবিত্র সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, এতক্ষণে তো তারা গাতফান পল্লিতে আতিথ্য ভোগ করছে।
তিনি বলেন, পরে গাতফান গোত্রের একটি লোক এল, সে বলল, অমুক তাদের জন্য একটি উট জবেহ করেছে। তারা যখন তাঁর চামড়া ছড়াচ্ছিল তখন তারা ধুলোরাশি উড়তে দেখতে পায়। তখন তারা বলে উঠল ওরা (আকওয়া ও তাঁর বাহিনী) তোমাদের নিকট এসে পড়েছে। তখন তারা পালিয়ে যায়। এরপর আমাদের ভোর হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের আজকের সেরা অশ্বারোহী হচ্ছে আবূ কাতাদা আর আমাদের সেরা পদাতিক হচ্ছে সালামা। তিনি বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসাবে গণিমতের দুই অংশ দিলেন। আমাকে তিনি একত্রে দুই অংশ দিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মদিনায় প্রত্যাবর্তন কালে আমাকে তাঁর সাথে তাঁর উটনী ‘আদবার’ পিছনে বসিয়ে নিলেন। তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা পথ অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় আনসারের এমন এক ব্যাক্তি যাকে দৌড়ে কেউ পরাজিত করতে পারতো না, সে বলতে লাগলোঃ কেউ কি আছে যে, মদিনায় সর্বপ্রথম পৌছার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করবে? এ কথাটি সে বারবার বলছিল। তিনি বলেন, যখন আমি তাঁর এ (চ্যালেঞ্জমূলক) কথাটি শুনলাম, তখন বললাম, তুমি কি কোন সম্মানিত লোককে সম্মান দিতে জানো না বা কোন ভদ্রলোককেই পরোয়া করবে না? সে বলল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাতিত অন্য কাউকে নয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতা মাতা আপনার উপর কোরবান, আপনি আমায় ঐ ব্যাক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দিন।
তখন তিনি বললেনঃ তোমার ইচ্ছা হলে। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, চল! ধর। তারপর আমি লাফ দিয়ে নিচে দৌড় দিলাম। তারপর এক বা দুই টিলা অতিক্রম করার দূরত্বে রইলাম তখন পর্যন্ত আমার দম নিয়ন্ত্রনে রেখে তাঁর পিছু পিছু দৌড় দিলাম। আরও দুই এক টিলা পর্যন্ত ধীরগতিতে চলার পর সাজোরে দৌড় দিয়ে তাঁর নিকট পৌঁছে গেলাম এবং তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘুষি মেরে বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! তুমি হেরে গেছ। তখন সে বলল, আমিও তাই মনে করছি। তিনি বলেন, অতএব আমি তাঁর পূর্বেই মদিনায় পৌঁছে গেলাম।
তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর আমরা তিনরাতের অধিক মদিনায় থাকতে পারিনি। এমনি সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা খায়বারের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। তিনি বলেন, তখন আমার চাচা আমির (রাঃ) প্রেরণামূলক কবিতা আবৃতি করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর অনুগ্রহ না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, সাদাকাও দিতাম না আর সালাতও আদায় করতাম না। আমরা আপনার অনুগ্রহ থেকে কখনও বেপরওয়া হতে পারি না, তাই আপনি আমাদের কদম দৃঢ় রাখুন, যখন আমরা শত্রুদের সম্মুখীন হই এবং আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি বর্ষণ করুন।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ ব্যাক্তি কে? তিনি বললেন, আমি আমির। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার রব তোমাকে ক্ষমা করুন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারো জন্য বিশেষভাবে দু’আ করতেন সে শহীদ হত। তিনি বলেন, তখন নিজ উটে বসা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দুর থেকে আওয়াজ করে বললেন, ইয়া নাবী আল্লাহ্! আমিরকে দিয়ে যদি না আমাদের আরো উপকার করতেন? তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা খায়বারে উপস্থিত হলাম, তখন খায়বার অধিপতি মুরাহহাব (মারহাব) তরবারি দোলাতে দোলাতে বেরিয়ে এল এবং বলল, খায়বার জানে যে, আমি মুরাহহাব, পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, অভিজ্ঞতাপূর্ণ এক বীরপুরুষ। রাবী বলেন, আমার চাচা আমির (রাঃ) কবিতা আবৃতি করতে করতে বললেন, “খায়বার জানে যে, আমি আমির অস্ত্রে শস্ত্রে সুসজ্জিত যুদ্ধে অবতীর্ণ বীর বাহাদুর নির্ভীক ব্যাক্তি।
রাবী বলেন, তারপর তাদের মধ্যে আঘাত বিনিময় হল। আমির (রাঃ) নিচে থেকে যখন তাকে আঘাত করতে চাইলেন, তখন তা ফিরে এসে তাঁর নিজের উপরই লাগল। আর তাতে তাঁর পায়ের গোছার সংযোগ শিরা কেটে গিয়ে মৃত্যু হল। (রাবী) সালামা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বেরোলাম। নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবীকে বলাবলি করতে শুনলাম যে, আমিরের আমল বরবার হয়ে গেছে, সে আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমিরের আমলগুলি কি বরবার হয়ে গেল? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (একথা) কে বলেছে? রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনারই কয়েকজন সাহাবী। তিনি বললেন, যারা এরূপ বলেছে তারা মিথ্যা বলেছে এবং তাঁর প্রতিদান সে দু’বার পাবে।
তারপর তিনি আমাকে আলী (রাঃ) এর নিকটে পাঠালেন। তখন তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এমন এক ব্যাক্তিকে (আজ) পতাকা সমর্পণ করব, যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে এবং (অথবা বলেলন) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। তিনি বলেন, তারপর আমি আলী (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তখন তাঁর চোখ ব্যাথাগ্রস্থ হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে থুথু দিলেন আর তাতেই তিনি সুস্থ হলেন। তখন তিনি তাঁর হাতে পতাকা দিলেন।
এবারো মুরাহহাব বেরিয়ে এল এবং কবিতা আওড়াতে লাগল খায়বার জানে যে, আমি মুরাহহাব, যুদ্ধের অস্ত্রে সজ্জিত এক অভিজ্ঞতাপূর্ণ বীর বাহাদুর ব্যাক্তি। যখন যুদ্ধ তাঁর লেলিহান শিখা নিয়ে অগ্রসর হয়, তখন আলী (রাঃ) বললেন, “আমি সে ব্যাক্তি যাকে আমার মা ‘হায়দর’ (সিংহ) নাম রেখেছেন, যার দর্শন বন্য সিংহের মত ভয়ঙ্কর। আমি তাদের (দুশমনদের) প্রতিদান দেই বড় বড় পাত্র দিয়ে (অর্থাৎ তাদের অবলীলায়) হত্যা করি”। এরপর তিনি মুরাহহাবের মাথায় তলোয়ার মারলেন এবং তাকে হত্যা করলেন। তারপর তারই হাতে (খায়বার) বিজয় হল।
ইবরাহিম ... ইকরামা ইবনু আম্মার সুত্রেও এই হাদিস সুদীর্ঘরূপে বর্ণনা করেছেন।
৪৫২৮. আহমাদ ইবনু ইউসুফ আযদী সুলামী (রহঃ) ... ইকরামা ইবনু আম্মার (রাঃ) এর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. মহান আল্লাহর বানীঃ তিনি সেই সত্তা যিনি তাদের হাতকে তোমাদের উপর (আক্রমন করা) থেকে বিরত রেখেছেন
৪৫২৯. আমর ইবনু মুহাম্মাদ নাকিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসীদের মধ্য থেকে সশস্র আশি ব্যক্তি তানঈম পাহাড় থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে অবতরণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণের অসতর্কতার সুযোগ নিবে। তিনি তাদের বিনা যুদ্ধে বন্দী করলেন, এরপর তাদের জীবিত ছেড়ে দিলেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ (তিনি সেই পবিত্র সত্তা যিনি মক্কা প্রান্তরে তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে (আক্রমন করা হতে) বিরত রেখেছেন তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীলোকের যুদ্ধযাত্রা
৪৫৩০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (তার মা) উম্মে সুলাইম হুনাইনের যুদ্ধের দিন একটি খঞ্জর ধারন করেছিলেন, আর সেটি তার সঙ্গে ছিল। আবূ তালহা তাঁকে দেখতে পেয়ে বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইনি উম্মে সুলাইম। আর তার সাথে একটি খঞ্জর রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এ খঞ্জর কিসের জন্য? তিনি বললেন, এটা এজন্য নিয়েছি যদি কোন বিধর্মী মুশরিক আমার কাছাকাছি আসে, তবে এদিয়ে আমি তার পেট চিরে ফেলবো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসতে লাগলেন।
তখন তিনি (উম্মে সুলাইম) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (মক্কা বিজয়ের দিন) আমাদের ছাড়া তুলামা যারা (যারা সাধারণ ক্ষমার আওতায়) ছাড়া পেয়ে গিয়েছে এবং পরাজয়ের মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদের হত্যা করে ফেলুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে সুলাইম! প্রবল প্রতাপান্বিত ও মহামহিম আল্লাহই (মুশরিকদের বিরুদ্ধে) যথেষ্ট ও সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি (আমাদের প্রতি) সদয় রয়েছেন। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত উম্মে সুলাইমের কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে পূর্বে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৫৩১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সূলাইম ও আনসার কতিপয় মহিলাকে তার সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতেন। তারা (আর্তদের) পানি পান করাতেন এবং তাদের শুশ্রূষা করতেন।
৪৫৩২. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন পরাস্ত হয়ে কতিপয় লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আবূ তালহা (রাঃ) তার সামনে একটি ঢাল দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আড়াল করে রেখেছিলেন। আর আবূ তালহা (রাঃ) ছিলেন একজন অতি দক্ষ তীরন্দাজ। সেদিন (যুদ্ধে) তিনি দুই বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে ফেলেন। রাবী বলেন, যখনই কোন ব্যক্তি তীর ভর্তি তুনীর নিয়ে পাশ দিয়ে যেতো, তখনই তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, এগুলো আবূ তালহার জন্য রেখে যাও। রাবী বলেন, যখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুলে লোকজনের প্রতি তাকাতেন, তখনই আবূ তালহা (রাঃ) বলে উঠতেন, হে আল্লাহর নাবী! আপনার জন্য আমার পিতামাতা কোরবান! আপনি মাথা উঠাবেন না; এমন না হয় শক্র পক্ষের তীর এসে আপনার গায়ে লাগে। আপনার সীনার রক্ষার্থে আমার সীনা নিবেদিত। আবূ তালহা বলেন, আমি (সেদিন) আবূ বাকর তনয়া আয়িশা ও উম্মে সুলায়মকে এমন অবস্থায় দেখেছি, তারা তাদের পিঠে পানির মশক বয়ে আনছিলেন। তখন তারা এমনভাবে কাপড় গুছিয়ে চলছিলেন যে, ”আমি তাদের নলীর খাড়ু দেখতে পাচ্ছিলাম। তারা আহতদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তারা আবার গিয়ে মশক ভরে পনি এনে আহতদের মুখে পানি দিচ্ছিলেন। আবূ তালহার হাত থেকে সেদিন তন্দ্রার ঘোরে দুবার বা তিনবার তলোয়ার পড়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. জিহাদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের অনুদান রূপে কিছু দেয়া যাবে। তাদের জন্য গনীমতের নির্ধারিত অংশ নেই। শত্রুপক্ষের (অযোদ্ধা) শিশুদের হত্যা করা নিষিদ্ধ
৪৫৩৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবনু হরমুয (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাজদা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে পাঁচটি ব্যাপারে প্রশ্ন করে পত্র লিখলেন। তখন ইবনুু, আব্বাস (রাঃ) বললেন, যদি আমি ইলম গোপনকারীর হওয়ার আশংকা না করতাম তা হলে আমি তার কাছে জবাব লিখতাম না। নাজদ সে পত্রে তাকে লিখেছিলেন, হামদ ও সালাতের পর আমাকে অবহিত করুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মহিলাদেরকে নিয়ে যুদ্ধযাত্রা করতেন? তিনি তাদেরকে কি গনীমতের ভাগ দিতেন কি? শত্রুপক্ষের বালকদেরকে হত্যা করতেন? আর কখন ইয়াতীমের ইয়াতীমদের অবসান ঘটে? আর গনীমতের এক পঞ্চমাংশের হকদার কারা?
জবাবে ইবনু আব্বাস (রাঃ) লিখলেন, তুমি আমাকে লিখিত প্রশ্ন করেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মহিলাদেরকে নিয়ে যুদ্ধযাত্রা করতেন? হ্যাঁ, তিনি তাদেরকে নিয়ে যুদ্ধ যাত্রা করতেন এবং তাঁরা আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন এবং গনীমতের মাল থেকে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হতো, কিন্তু গনীমতের ভাগ তাদের জন্য বরাদ্দ করা হতো না। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও শিশুদের হত্যা করতেন না। সুতরাং তুমিও শিশুদেরকে হত্যা করবে না। আর তোমার লিপিতে আমাকে এও প্রশ্ন করেছে যে, কখন ইয়াতীমের ইয়াতীমদের অবসান হয়? আমার জীবনের শপথ! অনেক সময় কোন ব্যক্তির দাড়ি গজিয়ে যায়; অথচ সে তার নিজের হক গ্রহণে দূর্বল থাকে এবং অন্য কারো হক দানের বেলায়ও কাল থাকে। সুতরাং যখন সে লোকদের মতো নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারে তখনই তার ইয়াতীমদের অবসান ঘটে।
আর তুমি লিখেছ, খুমুস কাদের প্রাপ্য ?আমবা বলি, তা আমাদের (আহলে বাইতদের) জন্যই, কিন্তু আমাদের গোত্রের লোকেরা (বনূ উমাইয়া) তা অস্বীকার করছে।
৪৫৩৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু হরমুয (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাজদা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রা) কে কয়েকটি ব্যাপারে প্রশ্ন করে পত্র লিখেন। পরবর্তী অংশ সুলায়মান ইবনু বিলালের হাদীসের অনুরূপ। তবে হাতীমের এ হাদীসে রয়েছে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে হত্যা করতেন না। সুতরাং তুমিও শিশুদেরকে হত্যা করবে না। তবে যদি তুমি তা জানতে পারো, যে খিযির সেই বালক সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, যাকে তিনি হত্যা করছিলেন, তবে স্বতন্ত্র কথা।
এ হাদীসের একজন রাবী ইসহাক (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় সূত্র এতটুকু বাড়িয়েছেন- আর যদি তুমি বেছে বের করতে পারো মুমিনকে, তবে তুমি কাফিরকে হত্যা করবে এবং মুমিনকে ছেড়ে দেবে।
৪৫৩৫. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবনু হুরমুয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাজদা ইবনু আমির হারুরী (খারেজী) ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট পত্র লিখে জানতে চাইলেন, জিহাদে উপস্থিত গোলাম ও মহিলাদের গনীমতের অংশ দেওয়া হবে কি? আর (শক্রপক্ষের) বালকদের হত্যা সম্পর্কে এবং ইয়াতীম সম্পর্কে যে, কখন তার ইয়াতীমতের অবস্থান ঘটবে? এবং যাবিল কুরবা বা (রাসুলের) নিকটাত্নীয় কারা? তখন তিনি ইয়াযিদকে বললেন, তুমি তাকে লিখ, তার নির্বুদ্ধিতায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে আমি তাকে পত্র লিখাতাম না। লিখ তুমি আমাকে লিখেছো এ প্রশ্ন করে সে, যারা জিহাদে যোগ দিয়েছে এমন নারী এবং গোলামকে কি গনীমতের কিছু দেওয়া হবে? তাদের (নির্ধারিত) কিছুই দেওয়া হবে না। তবে বখশীশরুপে অনুদান (রূপে) দেওয়া হবে। তুমি আমাকে প্রশ্ন করে লিখেছ বালকদের হত্যা সম্পর্কে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাদেরকে হত্যা করেননি এবং তুমিও তাদেরকে হত্যা করবে না। যদি তুমি তাদের ব্যাপারে তা জানতে পারো যা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সঙ্গী [খিযির (আ)] জানতে পেরেছিলেন, যে ছেলেটিকে তিনি হত্যা করেছিলেন, তার সম্পর্কে তবে (তা স্বতন্ত্র কথা)। তার ইয়াতীম নাম ঘুচবেনা যতক্ষণ না সে বালিগ হবে এবং তার মধ্যে বুদ্ধিমত্তা পরিলক্ষিত হবে। আর তুমি আমাকে যাবিল কুরবা, সম্বন্ধে প্রশ্ন করে লিখেছ যে, তারা কারা? আমরা মনে করতাম, আমরাই তারা। কিন্তু আমাদের (ক্ষমতাসীন) লোকেরা তা অস্বীকার করেছে।
৪৫৩৬. আবদুর রহমান ইবনু বাশশার আবদী (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবনু হরমূয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাজদা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে পত্র লিখে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ ইসহাক বলেন,... সুফিয়ান (রহঃ) অনুরূপ হাদীস বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
৪৫৩৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াযীদ ইবনু হরমুযকে আমি এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইয়াযীদ ইবনু হরমুয থেকে বর্ণিত। তিনি বলে, নাজদা ইবনু আমির ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে পত্র লিখেন। রাবী বলেন , ইবনু আব্বাস (রাঃ) যখন তাঁর পত্রখানি পাঠ করেন এবং যখন তিনি তার জবাব লিখেন তখন আমি তার (ইবনু আব্বাস) সামনেই উপস্থিত ছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি সে (অপকর্মের) দুর্গন্ধে পতিত হবে বলে আশংকা না করতাম তবে আমি তার কাছে জবাব লিখতাম না। তার চোখ কোন দিন না জুড়াক।
রাবী বলেন, তারপর তিনি তাকে লিখলেন, তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ, আল্লাহ (গনীমতের অংশ সংক্রান্ত আয়াতে) (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) সে ঘনিষ্ঠজন সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন তাহা কারা? আমরা মনে করি, আমরাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই ঘনিষ্ঠজন। তিনি লোকেরা তা অস্বীকার করে। আর তুমি ইয়াতীম সম্পর্কে প্রশ্ন করেছ যে, কখন তার ইয়াতীমত্বের অবসান ঘটে? যখন সে বিবাহযোগ্য হয়, তার মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনা পরিলক্ষিত হয় এবং তার সস্পদ তার কাছে প্রত্যার্পণ করা হয়, তখন তার ইয়াতীমদের অবসান ঘটে।
আর তুমি প্রশ্ন করেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুশরিকদের কোন ছেলে সন্তানকে হত্যা করতেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিন তাদের ছেলে সন্তানদের কাউকে হত্যা করেননি। সুতরাং তুমিও তাদের কাউকে হত্যা কররে না। অবশ্য যদি তুমি অবগত হও, যা অবগত হয়েছিলেন খিযির (আলাইহিস সালাম) সে বালকটির সম্পর্কে যখন তিনি তাকে হত্যা করেন। আর তুমি প্রশ্ন করেছ, নারী ও গোলাম সম্পর্কে, যখন তারা যুদ্ধে উপস্থিত থাকে, তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ নেই। তরে লোকদের গনীমাতের মাল থেকে তারা বখশীশ (অনুদান) পায়।
৪৫৩৮. আবূ কুরায়েব (রহঃ) ... ইয়াযিদ ইবনু হরমুয (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, নাজদা ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে লিখেছিলেন, রাবী এ হাদীসের কিছু অংশ রেওয়ায়েত করেছেন। তবে তাঁদের হাদীসসমুহের মতো তিনি কাহিনী পুরোপুরি বর্ণনা করেননি।
৪৫৩৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মে আতিয়্যা আনসারীয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁদের শিবিরের পশ্চাতে অবস্থান করতাম। তাদের খাবার তৈরী করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম এবং রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা (দেখা-শুনা) করতাম।
৪৫৪০. আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... হিশাম ইবনু হাসসান (রহঃ) এর সুত্রেও হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. নবী (ﷺ) এর যুদ্ধসমূহের সংখ্যা
৪৫৪১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) লোকজনকে নিয়ে ইস্তিস্কার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি দু'রাকআত সালাত আদায় করলেন, এরপর বৃষ্টির জন্যে দু'আ করলেন। রাবী বলেন, সেদিন আমি যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বলেন, আমার এবং তাঁর মাঝখানে একজন ছাড়া কোন লোক ছিলনা। অথবা তিনি বলেছেন, আমার এবং তার মাঝখানে কেবল একজন লোক ছিলেন। আমি তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতগুলো যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, ঊনিশটি তখন আমি বললাম, আপনি তার সঙ্গে কত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি বললেন, সতেরটি যুদ্ধে। রাবী বলেন, তখন আমি প্রশ্ন করলাম, সর্ব প্রথম তিনি কোন যুদ্ধটি করেছেন? তিনি বললেন, যাতুল-উসায়র বা (যাতুল) উশায়র।
৪৫৪২. আবূ বাকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনিশটি যুদ্ধ করেছেন। হিজরতের পর একটি-মাত্র হজ্জ করেছিলেন, যেটি ছাড়া আর কোন হজ্জ করেননি তা হল বিদায় হজ্জ।
৪৫৪৩. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঊনিশটি যুদ্ধ করেছি। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। আমার পিতা আমাকে তা থেকে বিরত রেখেছিলেন। তারপর যখন উহুদ যুদ্ধে (আমার পিতা) আবদুল্লাহ (রাঃ) শহীদ হলেন তারপর থেকে আমি আর কখনো কোন যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পশ্চাৎপদ হইনি।
৪৫৪৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ জারমী (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে আটটিতে তিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। রাবী আবূ বকর এর মধ্যে (مِنْهُنَّ) শব্দটি বলেন নি এবং তিনি তাঁর বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু বুরায়দা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
৪৫৪৫. আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ষোলটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
৪৫৪৬. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাস (রহঃ) ... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। তিনি যতগুলি অভিযানে সৈন্য প্রেরণ করেছেন তার মধ্যে নয়টিতে আমি অংশগ্রহণ করি। একবার আমাদের সেনাপতি ছিলেন আবূ বকর (রাঃ) আর একবার আমাদের সেনাপতি ছিলেন উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)।
৪৫৪৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... হাতিম (রহঃ) এ হাদীসটি উল্লেখিত সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তাঁর বর্ণনায় উভয় ধরনের সাতটি অভিযানের সংখ্যা বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. যাতুর-রিকা যুদ্ধ অভিযান
৪৫৪৮. আবূ আমির আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা হামদানী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি যুদ্ধ অভিযানে বের হলাম। আমাদের প্রতি ছয়জনের মধ্যে ছিল একটি উট, যার উপর আমরা পালাক্রমে সাওয়ার হতাম। তিনি বলেন, এতে আমাদের পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। আমার দুপা এতই বিক্ষত হয়েছে যে, আমার পায়ের নখগুলো উপড়ে পড়ে যায়। তাই আমরা আমাদের পায়ে পট্টী বেধেছিলাম। এ কারণে এ অভিযান যাতুর-রিকা (رقعة কাপড়ের টুকরা, এর বহুবচন رقاع) নামে অভিহিত হই। যেহেতু আমরা আমাদের পা কাপড়ের টুকরা দিয়ে পেঁচিয়েছিলাম।
আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) এ হাদীসটি একবার বর্ণনা করার পর পুনরায় বর্ণনা করা পছন্দ করেননি। রাবী বলেন, এ দ্বারা তার আমলের প্রকাশ পায় বলে তিনি তা উল্লেখ করা পছন্দ করেননি। আবূ উসামা বলেন, বুরায়দ ছাড়া এ হাদীসের অন্য রাবী একথা বলেছেন, “আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন”।
পরিচ্ছেদঃ ৫১. যুদ্ধ অভিযানে কোন কাফিরের সাহায্য গ্রহন করা মাকরূহ
৪৫৪৯. যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি ‘হাররাতুল ওবারা’ নামক স্থানে পৌছলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলো, যে থেকে তার শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার জন্য মশহুর ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাকে দেখতে পেয়ে অত্যান্ত আনন্দিত হলেন। সে যখন সাক্ষাৎ করলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো, আমি আপনার সঙ্গে যেতে এবং আপনার সঙ্গে (গনীমত) পেতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বললো, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন লোকটি চলে গেল। যখন আমরা ‘শাজারায়’ উপনীত হলাম, তখন সে ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করলো এবং তার পূর্বের কথার পূনরোক্তি করলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পূর্বের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং বললেন, তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না। এবারও সে চলে গেল। তারপর সে আবার বায়দা তে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমবারের মত জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস পোষণ কর? সে বললো, জ্বী হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এখন (আমাদের সাথে) চল।
No comments: