সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৬ষ্ট খন্ড, অধ্যায়ঃ জিহাদ ও এর নীতিমালা-১ম
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি' (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
৪৩৭১. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইবনু আউন (রহঃ) থেকে এই একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি "জুওয়ায়রিযা বিনত হারিস" বলেছেন এবং সন্দেহযুক্ত বর্ণনা করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ২. খলীফা কর্তৃক সেনাদলের জন্য আমীর নির্বাচন ও যুদ্ধের আচরন ও পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের উপদেশ প্রদান
৪৩৭২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সেনাবাহিনী কিংবা সেনাদলের উপর আমীর নিযুক্ত করতেন তখন বিশেষ করে তাকে আল্লাহ ভীতি অবলম্বনের এবং তার সঙ্গী মুসলমানদের প্রতি কল্যাণজনক আচরণ করার উপদেশ দিতেন। আর (বিদায়লগ্নে) বলতেন, যুদ্ধ করো আল্লাহর নামে, আল্লাহর রাস্তায়। লড়াই কর তাদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করেছে। যুদ্ধ চালিয়ে যাও, তবে (গনীমতের মালের) খিয়ানত করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করবে না, শক্র পক্ষের অঙ্গ বিকৃতি করবে না। শিশুদেরকে হত্যা করবে না।
যখন তুমি মুশরিক শক্রর সন্মুখীন হবে, তখন তাকে তিনটি বিষয় বা আচরণের প্রতি আহবান জানাবে। তারা এগুলোর মধ্য থেকে যেটই গ্রহণ করে, তুমি তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। প্রথমে তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দিবে। যদি তারা তোমার এই আহবানে সাড়া দেয়, তবে তুমি তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকবো এরপর তুমি তাদের আবাসস্থল ত্যাগ করে মুহাজিরদের এলাকায় চলে যাওযার আহবান জানাবে। এবং তাদের জানিয়ে দিবে যে, যদি তারা তা কার্যকরী করে, তবে মুহাজিরদের জন্য যে সব লাভ লোকসান ও দায়দায়িত্ব রয়েছে, তা তাদের উপর কার্যকরী হবে। আর যদি তারা আবাস ত্যাগ করতে অস্বীকার করে, তবে তাদের জানিয়ে দেবে যে, তারা সাধারণ বেদুঈন মুসলমানদের মত গণ্য হবে। তাদের উপর আল্লাহর সেই বিধান কার্যকরী হবে, যা সাধারণ মুসলমানদের উপর কার্যকরী হয় এবং তারা গনীমত ও ফায় থেকে কিছু পাবে না। অবশ্য মুসলমানের সঙ্গে শামিল হয়ে যুদ্ধ করলে (তার অংশীদার হবে)।
আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তবে তাদের কাছে জিযিয়া, প্রদানের দাবী জানাবে। যদি তারা তা গ্রহণ করে নেয়, তবে তুমি তাদের তরফ থেকে তা মেনে নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। আর যদি তারা এ দাবী না মানে তবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়।
আর যদি তোমরা কোন দুর্গবাসীকে অবরোধ কর এবং তারা যদি তোমার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মা চায়, তবে তুমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের যিম্মা মেনে নিবে না। বরং তাদেরকে তোমার এবং তোমার সাথীদের যিম্মাদারীতে রাখবে। কেননা যদি তোমাদের ও তোমাদের সাথীদের যিম্মাদারী ভঙ্গ করে, তবে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের যিম্মাদারী ভঙ্গের চাইতে কম গুরুতর।
আর যদি তোমরা কোন দুর্গের-অধিবার্সীদেরকে অবরোধ কর, তখন যদি তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক অবতরণ করতে (আত্মসমর্পন) চায় তবে তোমবা তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের উপর আত্মসমর্পন করতে দিবে না, বরং তুমি তাদেরকে তোমার সিদ্ধান্তের উপর আত্মসমর্পন করতে দেবে। কেননা তোমার জানা নেই যে, তুমি তাদের মাঝে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে পারবে কি না?
আবদূর রহমান (রহঃ) এই হাদীস কিংবা এই হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইসহাক (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হার্দীসের শেষাংশে ইয়াহইয়া ইবনু আদম (রহঃ) সুত্রে কিছু অধিক বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এই হাদীসটি মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) এর কাছে বর্ণনা করেছি। তখন তিনি ইয়াহইয়া (রহঃ) অর্থাৎ আলকামা (রহঃ) এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি তা বর্ণনা করেছেন ইবনু হায়্যানের উদ্দেশ্যে। অতএব তিনি বলেন যে, মুসলিম ইবনু হায়সাম (রহঃ), নু'মান ইবনু মুকাররিন (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৩৭৩. হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সেনাপতিকে অথবা সেনাবাদলকে প্রেরণ করতেন, তখন তাঁকে ডেকে কিছু উপদেশ দিয়ে দিতেন ...... অতঃপর তিনি সুফিয়ান (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের মর্মার্থ অনুসারে অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৩৭৪. ইবরাহীম (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. সহজ পন্থা অবলম্বন ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি না করার নির্দেশ
৪৩৭৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন, তখন তাকে বলে দিতেন, তোমরা লোকদেরকে শুভ সংবাদ দেবে; বিরক্তি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করবে না, সহজ পন্থা অবলম্বন করবে; কঠিন পন্থা পরিহার করবে। (সহজরূপে উপস্থাপন করবে, কঠিন করে উপস্থাপন করবে না)।
৪৩৭৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), সাঈদ ইবনু আবূ বুরদা (রহঃ) তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এবং মু’আয (রাঃ) কে যখন ইয়ামানে পাঠান তখন উপদেশ দিলেন তোমরা উভয়েই (সেখানে) সহজ পন্থা অবলম্বন করবে, কঠিন পন্থা আরোপ করবে না, সুসংবাদ দেবে, বিতৃষ্ণা-ঘৃণা সৃষ্টি করবে না, সমঝোতার সাথে কাজ করবে এবং মতবিরোধ করবে না।
৪৩৭৭. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উভয়েই ... সাঈদ ইবনু আবূ বুরদাহ (রহঃ) এর দাদার সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লিখিত শু’বা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। কিন্তু যায়িদ ইবনু আবূ উনায়সা (রহঃ) এর হাদীসে "এবং সমঝোতার সাথে কাজ করবে, মতবিরোধ করবে না" এ কথার উল্লেখ নেই।
৪৩৭৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সহজভাবে কাজ করবে, কঠিনতা আরোপ করবে না, প্রশান্তি-স্থিরতা সৃষ্টি করবে, অশান্তি-বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪. চুক্তিভঙ্গ করা হারাম
৪৩৭৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদূল্লাহ ইবনু নূমাইর (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলকে একত্রিত করবেন, তখন প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য পৃথক পতাকা উড্ডীন করা হবে এবং বলা হবে যে, এটি অমুকের পুত্র অমুকের অঙ্গীকার ভঙ্গের প্রতীক (পতাকা)।
৪৩৮০. আবূ রাবী আতাকী ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৩৮১. ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা উড্ডীন করবেন। তখন বলা হবে যে, এটি অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।
৪৩৮২. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে।
৪৩৮৩. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে। তখন বলা হবে যে, এটি অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।
৪৩৮৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... শু’বা (রাঃ) থেকে একই সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আবদুল রহমান (রাঃ) এর হাদীসে, বলা হবে যে, “এটি অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক” কথাটির উল্লেখ নেই।
৪৩৮৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাকে চেনা যাবে। তখন বলা হবে যে, এটি অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক।
৪৩৮৬. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাকে চেনা যাবে।
৪৩৮৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর পাছার (নিতম্ব) পাশে একটি পতাকা থাকবে।
৪৩৮৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন একটি পতাকা থাকবে আর তা তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী উঁচু করা হবে। সাবধান! জনগণের শাসক হয়েও যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. যুদ্ধে শত্রুকে প্রতারণার শিকার করা বৈধ
৪৩৮৯. আলী ইবনু হুজর সা’দী, আমর আন নাফিদ ও যুবায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুট-কৌশলের নামই যুদ্ধ।
৪৩৯০. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু সাহম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কৌশলই হল যুদ্ধ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দুশমনের সম্মুখীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা মাকরূহ; আর সম্মুখীন হয়ে গেলে সবরের নির্দেশ
৪৩৯১. হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শক্রর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না আর যখন মুখোমুখি হয়ে পড় তখন ধৈর্যধারণ করবে।
৪৩৯২. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবুন নাযর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্য থেকে আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি, যার নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা, তার লেখা (চিঠি) থেকে বর্ণনা করেছেন। এ চিঠি তিনি লিখেছিলেন, উমার ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট, যখন তিনি (খারিজীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত) হারুরিয়া অভিযানে যাচ্ছিলেন। এতে তিনি তাকে অবহিত করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন এক অভিযানে যখন দুশমনের সম্মুখীন হলেন তখন অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে যখন সুর্য ঢলে পড়ল তখন তিনি সঙ্গীদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে লোকজন! তোমরা শক্রর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না। বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা কর। আর যখন তোমরা শক্রর সামনাসামনি হয়ে যাও তখন ধৈর্য ধারণ করবে। আর জেনে রেখো যে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে দু’আ করলেন, ইয়া আল্লাহ! তুমি কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী এবং শত্রুদলকে পরাভূতকারী। তুমি তাদের পরাজিত কর এবং তাদের উপর আমাদের সাহায্য কর।
পরিচ্ছেদঃ ৭. শত্রুর মুকাবিলার সময় আল্লাহর কাছে বিজয়ের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা মুস্তাহাব
৪৩৯৩. সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলোন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে এভাবে দুআ করলেন যে, হে আল্লাহ! তুমি কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। তুমি সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাদের পরাস্ত করে দাও এবং তাদের ভীত কম্পিত (উৎখাত) করে দাও।
৪৩৯৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে দুআ করলেন ... পরবর্তী অংশ উল্লিখিত খালিদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ হাদীস اهْزِمْهُمْ এর পরিবর্তে هَازِمَ الأَحْزَابِ শক্র সৈন্যদের পরাস্তকারী বর্ণনা করেছেন। আর তিনি اللَّهُمَّ শব্দটির উল্লেখ করেননি।
৪৩৯৫. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইসমাঈল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু আবূ উমার (রহঃ) তার বর্ণনায় ... “মেঘমালা পরিচালনাকারী” বাক্যটি অধিক বর্ণনা করেছেন।
৪৩৯৬. হাজ্জাজ ইবনু শা'ইর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন বলেছিলেন, হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও (এ সেনাদল ধ্বংস হোক) তা হলে পৃথিবীতে তোমার ইবাদত করা হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৮. যুদ্ধে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হারাম
৪৩৯৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক যুদ্ধে একজন নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। তখন তিনি নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন।
৪৩৯৮. আবু বকর ইবন আবু শায়বা (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন এক নারীকে কোন এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৩৯৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসুর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... সা'ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের নারী ও শিশু সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত।
৪৪০০. আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) ... সা'ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণে মুশরিকদের নারী ও শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্গত।
৪৪০১. মুহাস্মদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... সা'ব ইবনু জছছামা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি অশ্বারোহীদল রাতের আধারে আক্রমণ চালায় এবং তাতে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের আক্রান্ত করে (তবে কি হবে)? তিনি বললেনঃ তারাও তাদের পিতাদের অন্তর্গত।
পরিচ্ছেদঃ ১০. (যুদ্ধ পরিস্থিতিতে) কাফিরদের বৃক্ষাদি কাটা ও জ্বালান বৈধ
৪৪০২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে দিলেন। সে (বাগানের নাম) ছিল 'বুওয়ারা'। কুতায়বা এবং ইবনু রুমহ (রহঃ) উভয়েই তাঁদের হাদীসে আরো বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ (এই আয়াত) নাযিল করেনঃ "তোমরা যে সব খেজুর গাছ কেটে ফেলেছো কিংবা তার মুলের উপর খাড়া রেখেছো, সবই ছিল আল্লাহর নির্দেশে, যাতে তিনি অবাধ্যদের লাঞ্ছিত করেন।"
৪৪০৩. সাঈদ ইবনু মনসুর (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান কেটেছিলেন এবং জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে কবি হাসসান (রাঃ) বলেন, ‘বনী লুওয়াই (অর্থাৎ কুরায়শ) এর সর্দারদের কাছে বুওয়ায়রায় আগুনের লেলিহান শিখা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে।” আর এ সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে এই আয়াতঃ (অর্থ) তোমরা যে সব খেজুর গাছ কেটেছো অথবা তা কাণ্ডের উপর রেখে দিয়েছো ...... শেষ পর্যন্ত।
৪৪০৪. সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১. 'বিশেষভাবে এই উম্মাত' এর জন্য গণীমত হালাল
৪৪০৫. আবূ কুরাইব মুহাম্মাদ ইবনু আলা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল হাদীস আমাদের বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে এটি অন্যতম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাবীগণের মধ্যে কোন এক নাবী জিহাদে রওনা দিলেন। তিনি তার কাওমকে বললেন, এমন লোক যেন আমার সাথে অভিযানে না আসে, যে ব্যক্তি সদ্য বিবাহ করেছে এবং বাসর যাপনে ইচ্ছুক; কিন্তু এখনো তা সস্পন্ন হয়নি। সেই ব্যক্তি যে গৃহ নির্মাণ করেছে এবং তখনও তার ছাদ দেয়নি এবং সে ব্যক্তি যে গর্ভবতী ছাগল বা পশু খরিদ করেছে এবং সেগুলোর বাচ্চা প্রসবের অপেক্ষায় আছে।
রাবী বলেন, তারপর তিনি জিহাদে গমন করেন এবং আসরের সালাতের সময় কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের নিকটবর্তী এক গ্রামে পৌঁছেন। তখন তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমিও আদিষ্ট এবং আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! তুমি একে আমার জন্য কিছুক্ষণ থামিয়ে রাখ। সূর্য থামিয়ে দেওয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে বিজয় প্রদান করলেন।
রাবী বলেন, তারা গনীমতের মাল একত্রিত করলো। তখন তা খাওয়ার জন্য আগুন এগিয়ে এল। কিন্তু আগুন তা খেতে অস্বীকার করল। তখন সে নাবী (আঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্নসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমার কাছে বায়আত করবে। তখন তারা তার কাছে বায়আত করলো। এতে এক ব্যক্তির হাত নাবীর হাতের সাথে লেগে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্নসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমাদের গোত্রের লোকেরা আমার কাছে বায়আত করুক।
অতঃপর তার ঐ গোত্রের লোকেরা বায়আত করলো। রাবী বলেন, তখন নাবী (আঃ) এর হাত দুই বা তিন ব্যক্তির হাতের সাথে লেগে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎকারী রয়েছে। তোমরা আত্নসাৎ করেছ। রাবী বলেন, তারপর তারা নবীর কাছে একটি গাভীর মাথার পরিমাণ স্বর্ণখণ্ড বের করে দিল। তখন তারা সেটিও ঐ সম্পদের সাথে রাখল। তারপর আগুন এগিয়ে এসে তা খেয়ে ফেলল। আমাদের পূর্বে কারো জন্য গনীমতের মাল হালাল ছিল না। আল্লাহ তা'আলা আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. গনীমতের মাল
৪৪০৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ হতে কিছু বস্তু নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেন, এটি আমাকে দান করুন। তিনি অস্বীকার করেন। তখন আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেনঃ “তারা আপনার কাছে যুদ্ধলব্ধ দ্রব্য সম্ভার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলে দিন, যুদ্ধলব্ধ দ্রব্য সম্ভার আল্লাহ ও রাসূলের ... শেষ পর্যন্ত। [সূরা আনফালঃ ১]
৪৪০৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সম্বন্ধে চারটি আয়াত নাযিল হয়েছে। আমি একটি তলোয়ার পেলাম। এরপর তিনি সেটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এসে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি এটি রেখে দাও। তারপর আবার দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি আমাকে দিয়ে দিন। তখনও তিনি বললেন, এটি রেখে দাও। তারপর আবার দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি আমাকে দিয়ে দিন। আমি কি সে ব্যক্তির স্থলে আমি কি সে ব্যক্তির ন্যায় বিবেচিত হব যার (যুদ্ধে) কোন অবদান নেই? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি এটি যেখান থেকে নিয়েছ সেখানে রেখে দাও। তারপর এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) তারা আপনাকে যুদ্ধ লব্ধ দ্রব্যসম্ভার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ ও রাসূলের জন্য......।
৪৪০৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি সেনাদল নাজদের দিকে পাঠান। তন্মধ্যে আমিও ছিলাম। তারা সেখানে অনেক উট গনীমত হিসাবে লাভ করল। প্রত্যেকের অংশে বারটি করে অথবা এগারটি করে উট পড়ল এবং প্রত্যেককেই একটি করে অতিরিক্ত উট (নফল রূপে) দেওয়া হল।
৪৪০৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সেনাদল প্রেরণ করেন এবং তাদের মধ্যে ইবনু উমার (রাঃ)ও ছিলেন। যূদ্ধলব্ধ সম্পদের বন্টনে তাদের ভাগে পড়ল বারটি করে উট। আর তা ছাড়া অতিরিক্তও একটি উট করে দেয়া হল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করেননি।
৪৪১০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সেনাদল প্রেরণ করেন আর আমিও এতে গিয়েছিলাম। আমরা বহু উট এবং ছাগল পেলাম। আমাদের প্রত্যেকের অংশে বারটি করে উট পড়ল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেককে আরো একটি করে অতিরিক্ত উট (নফল রূপে) প্রদান করলেন।
৪৪১১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সনদে (উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ) বর্ণনা করেন।
৪৪১২. আবূ রাবী, আবূ কামিল ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইবনু আওন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নফল সম্পর্কে জানতে চেয়ে নাফি (রহঃ) এর কাছে লিখলাম। তিনি উত্তরে আমাকে লিখলেন যে, ইবনু উমার (রাঃ) একটি সেনাদলে ছিলেন। ইবনু রাফি ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) তারা সকলেই নাফির (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৪৪১৩. সুরাইজ ইবনু ইউনুস ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... সালিম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অতিরিক্ত এক পঞ্চমাংশ থেকে নফল দান করেন। অতএব, আমাদের ভাগে একটি 'শারিফ' মিললো। 'শারিফ' মানে বড় ধরনের বয়স্ক উট।
৪৪১৪. হান্নাদ ইবনু সারী, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুদ্র সেনাদলের মাঝে যুদ্ধলব্ধ মালামাল নফল (বিশেষ পুরস্কার) বন্টন করেন। অতঃপর ইবনু রাজা এর অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪৪১৫. আবদুল মালিক ইবনু শুয়াব ইবনু লাইস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুদ্র সেনাদলে যে সব সৈনিককে প্রেরণ করতেন, তাদের কোন কোন সময় সাধারণ লোকদের অংশের চেয়েও কিছু অতিরিক্ত বিশেষভাবে (নফল) প্রদান করতেন। আর সব অর্জিত গনীমাতের মালের উপরই একপঞ্চমাংশ বের করা ওয়াজিব।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. নিহত শত্রুর ব্যক্তিগত সম্পদ (সালাব) হত্যাকারী মুহাজিরদের প্রাপ্য
৪৪১৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুনাইনের যুদ্ধের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম। আমরা যখন শক্রদের মুখামুখি হলাম তখন মুসলমানদের মধ্যে ছুটাছুটি আরম্ভ হল। এ সময় আমি একজন মুশরিককে দেখতে পেলাম যে, সে একজন মূসলমানের উপর চড়ে বসেছে। তখন আমি একটু ঘুরে এসে তার পিছন দিক দিয়ে তার কাঁধের উপর আঘাত করলাম। তখন সে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে আমাকে এমনভাবে চেপে ধরল যে, আমি এতে মৃত্যুর গন্ধ পেলাম। এপর সে মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ল এবং আমাকে ছেড়ে দিল।
এরপর আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মিলিত হলাম। তিনি বললেন, লোকদের কী হয়েছে? আমি বললাম এ আল্লাহর কাজ (ইচ্ছা)। তারপর (পলায়নপর) লোকেরা এল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন (যুদ্ধ ক্ষেত্রে) বসেছিলেন। তিনি বললেন, যে মুসলিম সৈন্য অপর কোন শক্র সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং এতে তার প্রমান আছে, তবে তার (পরিত্যক্ত) সম্পদ তারই (হত্যাকারী মুজাহিদেরই প্রাপ্য)।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি দাঁড়ালাম এবং বললাম, আমার জন্যে কে সাক্ষ্য দেবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। তারপর তিনি আবার সেরূপ কথা বললেন, আমি দাঁড়ালাম এবং বললাম কে আমার জন্যে সাক্ষ্য দেবে? এবং আমি বসে পড়লাম। তিনি তৃতীয়বারও ঐরুপ বললেন। বর্ণনাকারী বলেন, তা শুনে আমি (আবার) দাঁড়ালাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ কাতাদা! তোমার কি হয়েছে? আমি তখন তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম।
তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (আবূ কাতাদা) সত্য বলেছেন। ঐ নিহত ব্যক্তির (পরিত্যক্ত) সম্পদ আমার কাছে রক্ষিত আছে। আপনি তার হক (আমাকে দেওয়া) এর ব্যাপারে তাঁকে রাজি করিয়ে দেন। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, না, আল্লাহর কসম! তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহসমুহের মধ্য হতে কোন এক সিংহ (যোদ্ধা) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, তার প্রাপ্য সম্পদ যেন তোমাকে প্রদানের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনস্থ না করেন।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (আবূ বকর) ঠিকই বলেছেন। সুতরাং তিনি বললেন, তাকে (আবূ কাতাদাকে) দিয়ে দাও। তখন সে তা দিয়ে দিল। আবূ কাতাদা (রাঃ) বললেন, আমি তা থেকে লৌহ বর্মটি বিক্রি করলাম এবং তা দিয়ে বনী সালামার মহল্লায় একটি ফলের বাগান খরিদ করলাম। এই ছিল আমার ইসলামী জীবনের প্রথম অর্জিত সম্পদ।
লাইস (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন আল্লাহর সিংহসমূহের মধ্য থেকে কোন এক সিংহকে বাদ দিয়ে তা কুরাইশের কোন শৃগালকে (কাপুরুষকে) প্রদান না করেন।
৪৪১৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বদরের দিন যুদ্ধ সারিতে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় আমি আমার ডান ও বাম দিকে তাকিয়ে দেখি যে, আমি দু'জন আনসারী তরুণের মাঝে আছি। আমি তখন আশা করেছিলাম, যদি আমি দু'জন শক্তিশালী যুবকের মাঝে থাকতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে ইঙ্গিতে বলল, হে চাচা! আপনি কি আবূ জাহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে তাকে দিয়ে তোমার কী প্রয়োজন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র? সে বলল, আমি সংবাদ জেনেছি যে, সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গালাগালি করে। সেই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আমি তাকে দেখতে পাই তবে অবশ্যই আমার দেহ তার দীহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না-- যতক্ষন না আমাদের দুজনের মধ্যে যার মৃত্যু পুর্বে হওয়া অবধারিত তার মৃত্যু হয়।
বর্ণনাকারী বলেন, কিশোরের এই কথা শুনে আমি আাচর্যাম্বিত হলাম। তারপর অপর কিশোর আমার দিকে ইঙ্গিত করে অনুরূপ কথা বলল। পরে বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি, হঠাৎ আমি দেখলাম আবূ জাহেল লোকদের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, আমি তখন কিশোর দু'জনকে বললাম, এই সেই যার ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসা করেছ। তারা উভয়ে দৌঁড়ে গিয়ে তাদের তলোয়ার দ্বারা তাকে আঘাত করলো এবং হত্যা করে ফেললো। অতঃপর উভয়েই ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই ঘটনার সংবাদ দিল।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে কে হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেকেই বলল, আমি তাকে হত্যা করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের তলোয়ার কি মুছে ফেলেছ? তারা তখন বললো, না। তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উভয়ের তলোয়ার (পরীক্ষা করে) দেখলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। অতএব, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুআয ইবনু আমর ইবনু জামুহকে 'সালাব' প্রদানের নির্দেশ দেন। (আর সেই দুই ব্যক্তি হলেন, মুয়ায ইবনু আমর ইবনু জামুহ এবং মুয়ায ইবনু আফরা (রাঃ)।)
৪৪১৮. আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হিময়ার গোত্রের এক ব্যক্তি শক্র পক্ষের এক ব্যক্তিকে হত্যা করছেন এবং তার পরিত্যক্ত সম্পদ (সালাব) নিতে চাইছেন। কিন্তু খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) তাকে নিষেধ করলেন। তিনি ছিলেন তাদের সেনাপতি। তারপর আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন এবং ঐ ঘটনার সংবাদ দিলেন। তখন তিনি খালিদ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি (নিহত ব্যক্তির) সম্পদ তাকে দিলে না কেন? খালিদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি তাকে প্রচুর সম্পদ বিবেচনা করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে তা দিয়ে দাও।
তারপর খালিদ (রাঃ) আউফ (রাঃ) এর কাছ দিয়ে গেলেন এবং তাঁর চাঁদর ধরে টান দিয়ে বললেন, আমি তোমার নামে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নালিশ করার কথা বলেছিলাম তা পূর্ণ করেছি কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেলেন। এতে তিনি রাগাম্বিত হলেন। এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খালিদ! তুমি তাকে তা দেবে না। হে খালিদ! তুমি তাকে তা দেবে না। তোমরা কি আমার খাতিরে আমার (সেনাপতি)দের (একটু) ছাড় দিবে না? নিশ্চয়ই তোমাদের এবং তাদের দৃষ্টান্ত এমন, যেমন কোন ব্যক্তি উট কিংবা ছাগল চরাবার জন্য রাখলো। রাখাল মাঠে তা চরালো। তারপর পিপাসার সময় পানি পান করানোর জন্য জনাশয়ে নিয়ে গেল। পরিস্কার পানি পান করতে শুরু করল এবং ঘোলাটে পানি পরিত্যাগ করলো। অর্থাৎ তার পরিস্কার অংশ তোমাদের জন্য এবং অপরিস্কার অংশ (জবাবদিহীতার) তোমাদের নেতাদের উপর।
৪৪১৯. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আউফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়িদ ইবনু হারেসা (রাঃ) এর সঙ্গে যারা মুতার যুদ্ধে গমন করেছিলেন, তন্মধ্যে আমিও ছিলাম। ইয়ামানের একজন 'সহযোগ্য' (সৈনিক) আমার সাথী হল। এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে বলেছেন যে, আউফ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি বললাম, হে খালিদ! তুমি কি জাননা যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শক্র থেকে নেওয়া সম্পদ হত্যাকারীর মুজাহিদের প্রাপ্য বলে নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ, কিন্তু এই সম্পদ আমার কাছে অধিক মনে হল। (তাই আমি নিষেধ করেছিলাম।)
৪৪২০. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাওয়াযিন গোত্রের সঙ্গে যুদ্ধে ছিলাম। একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সকালের খাওয়ায় সামিল ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি লাল রঙের উটে চড়ে এসে তাকে বসাল এবং তার কোমর থেকে একটি চামড়ার রশি বের করে এর দ্বারা সে তার উটকে বাঁধলো। এরপর সে এসে লোকদের সাথে খানা খেতে লাগল এবং এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো (গুপ্তচর)। আমাদের মধ্যে দুর্বলতা ও নম্রতা ছিল। সাওয়ারীও কম ছিল। আমাদের কেউ কেউ পায়ে হেঁটে চলত (পদাতিক ছিল)।
এমন সময় সে ব্যক্তি দ্রুত গতিতে নিজের উটের কাছে এসে এর রশি খুললো। এরপর একে বসিয়ে এর উপর সাওয়ার হল তারপর দাবড়ালো এবং উট তাকে নিয়ে ছুটল। তখন এক ব্যক্তি একটি ধূসর বর্ণের উটনীর উপর আরোহণ করে তার পশ্চাদ্ধাবন করলো। সালামা (রাঃ) বলেন, আমি বের হয়ে দৌড় দিলাম। প্রথমত আমি উটনীর পিছনে গিয়ে পৌছলাম। এরপর আমি আরও অগ্রসর হয়ে সে উটের পশ্চাতে পৌছলাম। অতঃপর আরও অগ্রসর হয়ে আমি উটের লাগাম ধরে ফেললাম এবং আমি একে বসালাম।
যখন উটটি তার হাটু মাটিতে রাখল, তখন আমি তলোয়ার বের করে লোকটির মাথায় আঘাত করলাম। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। এরপর আমি উটটি টেনে নিয়ে এলাম। এর উপর ঐ ব্যক্তির আসবাব পত্র ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন সহ আমাকে এগিয়ে নিলেন। তিনি বললেনঃ কে এই লোকটিকে হত্যা করেছে? লোকেরা বলল, ইবনু আকওয়া। তিনি বললেনঃ তার সালাব (নিহত ব্যক্তির থেকে ছিনিয়ে আনা সমুদয় সম্পদ) তার (আকওয়ার পুত্র সালামার) জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. নফল (বিশেষ পুরস্কার ও অনুদান) হিসাবে কিছু দেওয়া এবং বন্দীদের বিনিময়ে (আটকে পড়া) মুসলমানদের মুক্ত করা
৪৪২১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইয়াস ইবন সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমরা ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের আমীর ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন যখন আমাদের এবং (গোত্রের) পানির স্থানের মাঝে এক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান ছিল, তখন আবূ বাকর (রাঃ) আমাদেরকে শেষ রাতের অবতরণের (বিশ্রামের) নির্দেশ দিলেন। সুতরাং আমরা রাতের শেষাংশেই সেখানে অবতরণ করলাম। এরপর বিভিন্ন দিক দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালালেন এবং পানি পর্যন্ত পৌছলেন। আর যাদের পেলেন হত্যা করলেন এবং বন্দী করলেন।
আমি লোকদের একটি দলের দিকে দেখছিলাম যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছে। আমি আশংকা করছিলাম যে, তারা হয়তো আমার আগেই পাহাড়ে পৌছে যাবে। অতএব, আমি তাদের ও পাহাড়ের মাঝে তীর নিক্ষেপ করলাম। তারা যখন তীর দেখতে পেল থেমে গেল। তখন আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে এলাম। তাদের মাঝে চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফযরার একজন মহিলাও ছিল এবং তার সঙ্গে ছিল তার এক কন্যা। সে ছিল আরবের সব চাইতে সুন্দরী কন্যা। আমি সকলকেই হাকিয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে নিকট এলাম। আবূ বকর (রাঃ) কন্যাটিকে আমাকে নফল হিসাবে প্রদান করলেন।
এরপর আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আমি তখনও তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরে বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার খবুই পছন্দ হয়েছে এবং এখনও আমি তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরের দিন আবারও বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। “আল্লাহ তোমার পিতাকে কতই সুপুত্র দান করেছেন।” তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আপনার জন্যই আল্লাহর কসম! আমি তার বস্ত্র উমোচন করিনি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কন্যাটিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়ে তার কয়েকজন মুসলমানের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন, যারা মক্কায় বন্দী ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. 'ফায়' এর হুকুম
৪৪২২. আহমাদ ইবনু হাম্বল ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে সব হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করেছেন তন্মধ্যে একটি হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যে কোন জনপদে উপনিত হয়ে অবস্থান করবে, সেখান (প্রাপ্ত ফাই এর) এক অংশ পাবে। আর যে কোন জনপদের অধিবাসীরা আল্লাহ্ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করবে, (অর্থাৎ যুদ্ধ করবে) তবে তার (সম্পদের) এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। আর (অবশিষ্ট সম্পদ) তোমাদের জন্য।
৪৪২৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা ও ইসহাক (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী নযীর গোত্রের সস্পদ সে মালের অন্তর্গত যা আল্লাহ তা'আলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিনা যুদ্ধে প্রদান করেন। মুসলমানরা ঘোড়া এঘং উট দাবড়িয়ে (যুদ্ধ করে) দখল করে নি। অতএব, এই সম্পদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সুতরাং তিনি তা থেকে স্বীয় পরিবারের এক বছরের ভরণ-পোষণের খরচ দিতেন এবং অবশিষ্ট সম্পদ যুদ্ধের ঘোড়া এবং প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় খাতে আল্লাহর পথে ব্যয় করেন।
৪৪২৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে (উল্লিখিত হাদীস) বর্ণনা করেছেন।
৪৪২৫. আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসম যুবায়ী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। মালিক ইবনু আউস (রাঃ) তাঁকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। বেলা উঠে গেলে আমি তাঁর নিকট এলাম। তখন আমি তাকে তার বাসস্থানে খাটের উপর বসা অবস্থায় পেলাম। তাতে চাটাই ছাড়া আর কোন বিছানা ছিলনা। তিনি চামড়ার একটি বালিশের উপর হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে মালু! (অর্থাৎ হে মালিক)। হঠাৎ তোমার সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের লোকজন আমার কাছে এলো, আমি তাদেরকে কিছু দেওয়ার মনস্থ করেছি। তুমি তা গ্রহণ কর এবং তাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও।
আমি বললাম, আপনি যদি এর নির্দেশ আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে দিতেন, (তা হলে ভালো হতো)। তখন তিনি বললেন, হে মালু (অর্থাৎ হে মালিক), তুমি তা গ্রহণ কর। এমন সময় ইয়ারফা (রহঃ) তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন উসমান, আবদুর রহমান ইবনু আউফ, যুবাইর এবং সা’দ। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ তাদেরকে আসতে দাও। তখন সকলেই প্রবেশ করলেন। এরপর পূনরায় ইয়ারফা আগমন করলো এবং বলল, আব্বাস এবং আলী (রাঃ) আপনার সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ তাদেরকেও আসতে দাও।
এরপর আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! আমার মধ্যে এবং এই মিথ্যাবাদী, পাপী, প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতকের মধ্যে মীমাংসা করে দিন। তখন লোকেরা বললো, হ্যাঁ- হে আমীরুল মু'মিনীন! তাদের মধ্যে বিযয়টি নিষ্পত্তি করে দিন এবং তাদের নিস্কৃতি দিন। (মালিক ইবনু আউস (রাঃ) বললেন, আমার ধারণা হল যে, তারা দু'জন অর্থাৎ আলী এবং আব্বাস (রাঃ) তাদেরকে পূর্বাহ্নে পাঠিয়ে ছিলেন এ ব্যাপারটির জন্যেই, যেন তাঁরা উমর (রাঃ) কে ব্যপারটি বুঝিয়ে নিষ্পত্তি করে দেন।)
উমার (রাঃ) বললেন, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি আপনাদের সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যার আদেশে আকাশ এবং পৃথিবী যথাস্থানে অবস্থিত। আপনাদের কি জানা নেই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ [আমরা (নাবীগণ) কাউকে ওয়ারিস বানিয়ে যাই না], আমরা যা রেখে যাই তা হবে সাদাকা। তখন তারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা তা জানি।
এবার তিনি আলী এবং আব্বাস (রাঃ) এর দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যার নির্দেশে আকাশ এবং পৃথিবী যথাস্থানে অবস্হিত। আপনারা কি অবগত নন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ [আমরা (নাবী (সম্প্রদায়) কাউকে উত্তরাধিকার করে যাই না।] আমরা যা রেখে যাই, তা হবে সাদাকা। তখন তারা উভয়েই বললেন, হ্যা। আমরা তা জানি।
তখন উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা-আলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন, যা তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রদান করেননি। তিনি বলেন, "আল্লাহ তায়ালা জনপদবাসীর নিকট থেকে তার রাসূলকে যা প্রদান করেছেন- তা আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট।" আমার জানা নেই যে, এ পঠিত আয়াতের পুর্বেও কোন আয়াত পাঠ করেছিলেন কিনা?
অতঃপর উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তোমাদেরকে বনী নাযীর গোত্র থেকে প্রাপ্ত সস্পদ বল্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহর শপথ! তিনি সম্পদকে নিজের জন্য সংরক্ষিত- করে যাননি। আর তিনি এমনও করেননি যে, নিজে সম্পদ নিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তা দেননি। পরিশেষে যে সম্পদ রইল তা থেকে আপন পরিবারের এক বছরের ভরণ পোষণের খরচ রেখে অবশিষ্ট সম্পদ বায়তুল মালে জমা দেন।
এরপর উমর (রাঃ) বললেনঃ, আপনাদেরকে সে মহান আল্লাহর কসম করে বলছি, যার নির্দেশে আকাশ ও পৃথিবী যথাস্থানে অবস্থান। আপনারা কি সে সব কথা অবগত আছেন। তখন তারা বলেন, হ্যাঁ, আমরা তা জানি। এরপর তিনি আব্বাস এবং আলী (রাঃ) উভয়কে অনুরূপ শপথ প্রদান করলেন, যেরূপ তিনি ইতিপুর্বে আগত সম্প্রদায়ের লোকদেরকে প্রদান করেছিলেন। তিনি বললেন, আপনারা উভয়ই কি এসব কথা জানেন? তখন তাঁরা বললেন, হ্যাঁ।
অতঃপর উমর-(রাঃ) বললেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হল তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন যে, আমিই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ালী। আর আপনারা উভয়েই এসেছিলেন, আপনি আপনার ভাতিজা থেকে মীরাস দাবী করতে। আর ইনি এসেছেন, তার স্ত্রী (ফাতেমার) পিতা থেকে মীরাস গ্রহণ করতে। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আমাদের নাবীগণের) সম্পত্তিতে কোন মিরাস-বন্টন নেই। আমরা যা পরিত্যাগ করে যাই তা হবে সাদাকা। আপনারা উভয়েই তো তাকে মিথ্যাবাদী, অপরাধী, বিশ্বাসঘাতক এবং খিয়ানতকারী মনে করছেন। প্রকৃতপক্ষে নিশ্চয়ই তিনি [আবু বাকর সিদীক (রাঃ)] সত্যবাদী, পূণ্যবান, সত্যপথ প্রদর্শক এবং সত্যের অনুসারী ছিলেন।
এরপর আবূ বাকর (রাঃ) ইন্তেকাল করলেন। তখন আমি ওয়ালী হলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর ওয়ালী হলাম। সুতরাং আপনারা উভয়েই আমাকেও তার মত মিথ্যাবাদী, পাপী, বিশ্বাসঘাতক এবং খেয়ানতকারী মনে করছেন। আল্লাহ অবগত আছেন যে, নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, পূণ্যবান, সত্যপথের অনুসারী এবং সত্যের অনুসারী। আমি সে সম্পদেরও অলী বা অভিভাবক। অতঃপর আপনি এবং ইনি এসেছেন। আপনারা উভয়েই এক ছিলেন এবং আপনাদের দাবীও এক ছিল। সুতরাং আপনারা বলছেন যে, এসব আমাদের কাছে দিয়ে দিন।
আমি বলি-যদি আপনারা চান, তবে আমি তা আপনাদেরকে দিয়ে দেব এই শর্তে যে, আপনারা এই সম্পদ দ্বারা সে কাজ করবেন, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। অতএব, আপনারা এ শর্তে আমার নিকট থেকে তা 'গ্রহণ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) বললেন, আমার কথা কি যথার্থ? তখন উভয়েই বললেন, হ্যাঁ। উমর (রাঃ) বললেন, তারপরও আপনারা দু'জন আমার কাছে এসেছেন, আপনাদের মাঝে (সম্পদের) মীমাংসা করে দেয়ার জন্য। আল্লাহর কসম। আমি আপনাদের উভয়ের মাঝে এ ব্যতীত আর কোন মীমাংসা করতে পারবো না কিয়ামত পর্যন্ত। আর যদি আপনারা এতে অপারগ হন, তবে তা আপনারা আমার কাছে ফেরৎ দিন।
৪৪২৬. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু রাফি' ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... মালিক ইবনু আউস ইবনু হাদছান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এরপর বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের কতিপয় পরিবারের লোক আমার কাছে উপস্থিত হল ...... তারপর মালিক (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তার হাদীসে রয়েছে যে, তিনি তাঁর পরিবারের জন্য তা থেকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন। অনেক সময় মা'মার (রহঃ) বলেছেন যে, তার পরিবারের জন্য তা থেকে এক বছরের খোরাকী রেখে দিতেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ আল্লাহর মালের ভাণ্ডারে (বায়তুল মালে) জমা দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. নবী (ﷺ) এর বানীঃ আমাদের (নবীগনের) মীরাস বণ্টন হয় না, আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই সদাকা
৪৪২৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ উসমান (রাঃ) কে আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট পাঠাতে মনস্থ করলেন, যেন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে তাদের মীরাস দাবী করেন। তখন আয়িশা (রাঃ) তাদের বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি একথা বলে যাননি যে, আমদের (নাবীগণের) মিরাস বন্টিত হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সাদাকা।
৪৪২৮. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফাতিমা বিনত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর এর নিকট লোক পাঠালেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্পদ থেকে তার প্রাপ্য মীরাস এর দাবী করে, যা আল্লাহ তা'আলা তাকে মদিনা ও ফাদাক এর ফাই এবং খায়বারের অবশিষ্ট এক পঞ্চমাংশ থেকে প্রদান করেছিলেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেনঃ আমাদের (নাবীগণের) (পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে) মীরাস হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা হবে সাদাকা। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গ তা থেকে জীবিকা গ্রহণ করবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কালে সাদাকার যে অবস্থা চালু ছিল তা আমি পরিবর্তন করব না। আর এতে আমি নিশ্চয়ই সে কাজ করবো, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গিয়েছেন।
অতএব, আবূ বাকর (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) কে তা থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। সুতরাং ফাতিমা (রাঃ) এতে রাগাম্বিত হয়ে তাঁকে পরিত্যাগ করলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে (এ ব্যাপারে) আর কোন কথা বলেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এরপর যখন ইন্তিকাল করলেন তখন তাঁর স্বামী আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাকে রাতে দাফন করলেন এবং ফাতিমা এর মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত আবূ বাকবু (রাঃ) কে দেননি। আলী (রাঃ) তাঁর জানাযার সালাত আদায় করলেন। ফাতিমা (রাঃ) এর জীবিতকাল পর্যন্ত আলী (রাঃ) এর প্রতি জনগণের বিশেষ মর্যাদাবোধ ছিল।
এরপর যখন তাঁর ইন্তেকাল হল তখন তিনি লোকের চেহারায় অন্যভাব দেখতে পেলেন। অতএব, তিনি আবূ বাকর (রাঃ) এর সঙ্গে আপোষ রফা করে, তার বায়আত গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহন করলেন। কয়েক মাস তিনি তার বায়আত করেননি। তারপর আলী (রাঃ), আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট লোক পাঠিয়ে সংবাদ দিলেন যে, আপনি একাকী আমাদের এখানে আসুন। আপনার সাথে অন্য কাউকে আনাবেন না। (কেননা তিনি উমার (রাঃ) এর আগমনকে অপছন্দ করছিলেন।) উমর (রাঃ) আবূ বকরকে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি একাকী তাঁদের কাছে যাবেন না। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, তারা আমার সাথে কীই বা করবেন। আল্লাহর কসম! আমি একাকীই যাব। পরিশেষে আবূ বাকর (রাঃ) তাঁদের কাছে গেলেন।
এরপর আলী ইবনু আবূ তালেব (রাঃ) তাশাহুদ [তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য বানী] পাঠ করলেন, তারপর বললেন, হে আবূ বাকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে সম্মান প্রদান করেছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তা'আলা আপনাকে যে নিয়ামত প্রদান করেছেন, তাতে আমার কোন ঈর্ষা নেই। কিন্তু আপনি আমাদের উপর শাসন ক্ষমতায় (খিলাফতের) একচ্ছত্রতা দেখিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্নীয়তার কারণে আমরা মনে করতাম যে, আমাদেরও অধিকার আছে। আবূ বাকরের সঙ্গে তিনি কথা বলতে থাকলেন।
পরিশেষে আবূ বাকর (রাঃ) এর দু'চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হল। এরপর যখন আবূ বাকর (রাঃ) কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্নীয়তার সৌহার্দ্য-সংযোগ রক্ষা করা আমার আত্নীয়তার প্রতি সংযোগ রক্ষার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে আমার এবং আপনাদের মধ্যে এই সম্পদ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তাতে আমি সত্য পরিহার করি নি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এতে যা করতে দেখেছি তা আমি পরিত্যাগ করি নি।
এরপর আলী (রাঃ), আবূ বাকর (রাঃ) কে বললেন যে, আমি বায়আতের জন্য আপনাকে আজ বিকেল বেলায় কথা দিলাম। যখন আবূ বাকর (রাঃ) যুহরের সালাত শেষ করলেন তখন তিনি মিম্বরে আরোহন করলেন এবং তাশাহুদ পাঠ করলেন। এরপর তিনি আলী (রাঃ) এর ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তার বায়আত গ্রহণে বিলম্ব ও এ বিষয়ে তাঁর ওযর বর্ণনা করেন, যা আলী তার কাছে বর্ণনা করেছিল। এরপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তারপর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাশাহুদ পাঠ করলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর মহত্ত্ব বর্ণনা করলেন। আর তিনি ব্যক্ত করলেন যে, তিনি যা করেছেন, তার কারণ আবূ বাকর (রাঃ) এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা কিংবা আল্লাহ তা’আলা তাকে যে সম্মান দিয়েছেন তার প্রতি অস্বীকৃতি নয়; বরং আমরা মনে করতাম যে, শাসন ক্ষমতায় (খিলাফতের) মধ্যে আমাদেরও অংশ আছে। কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) আমাদের বাদ দিয়ে একচ্ছত্ররূপে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এতে আমরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি।
এ কথা শুনে মুসলিমগণ আনন্দিত হলেন এবং তাঁরা বললেন যে, আপনি ঠিকই করেছেন। যখন তখন তিনি সঙ্গত বিষয়ের দিকে ফিরে এলেন আবূ বাকর (রাঃ) এর বায়আত গ্রহণ করলেন, তখন থেকে মুসলিমগণ আলী (রাঃ) এর সান্নিধ্যে আসতে লাগলেন।
৪৪২৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা এবং আব্বাস (রাঃ) উভয়েই আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট আগমন করলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুত্রে তাদের প্রাপ্য মীরাসের দাবী নিয়ে। তারা তখন ফাদাকের ভূমি এবং খায়বারের অংশের দাবী জানালেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) উভয়কে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি ...... এরপর যুহরী (রহঃ) থেকে উকায়ল কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মর্মার্থের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন।
কিন্তু তিনি এতে বর্ণনা করলেন যে, এরপর আলী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর বিশেষ অধিকার ও বিশাল মর্যাদা বর্ননা করলেন এবং তার ইসলাম গ্রহণের প্রবনতার কথা বললেন। এরপর তিনি আবূ বাকর (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং তার কাছে বায়আত গ্রহণ করলেন। তারপর জনগণ আলী-এর নিকট এসে বললেন, আপনি ঠিকই করেছেন, আপনি সুন্দর করেছেন। যখন আলী (রাঃ) সঙ্গত বিষয়টার নিকটবর্তী হলেন, তখন লোকজনও তার সংস্পর্শে আসতে লাগলো।
৪৪৩০. ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইরন হারব ও হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিত্যক্ত সম্পতির যা আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন নিজের প্রাপ্য অংশ দাবী করেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) তাকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমদের (নাবীগণ) মীরাসে ওয়ারিস হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা হরে সাদাকা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর ফাতিমা (রাঃ) ছয়মাস জীবিত ছিলেন। ফতিমা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট তার সেই প্রাপ্য অংশ চেয়েছিলেন যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার, ফিদাক এবং মদিনার (সাদাকা) দান থেকে রেখে গিয়েছিলেন।
আবূ বাকর (রাঃ) তাঁকে তা প্রদান করতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, আমি এমন কাজ পরিত্যাগ করব না যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। আমি ভয় করি যে, যদি তার কোন কাজ পরিত্যাগ করি, তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো। তবে মদিনার (সাদাকার) দানে মাল উমার (রাঃ) তাঁর সময়ে আলী এবং আব্বাসকে প্রদান করেছিলেন। কিন্তু আলী (রাঃ) একাকীই সে প্রভাবশালী হয়ে পড়েন। আর খায়বার এবং ফাদাকের সম্পদ উমর (রাঃ) নিজের দায়িত্বে রাখলেন এবং বললেন, এ ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ কাজে ব্যয়ের জন্য। এ দু'টো সম্পদের দায়িত্ব থাকে মুসলমানদের আমীরের উপর। বর্ণনাকারী বলেন, এই উভয় সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত তদ্রুপই আছে।
৪৪৩১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরিত্যক্ত সম্পদের এক দিনারও বন্টিত হবে না। আমি যা রেখে যাই তা থেকে আমার স্ত্রীগণের ব্যয় নির্বাহ এবং রাষ্ট্রীয় পরিচালকের বেতন ভাতার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা হবে সাদাকা বা দান।
৪৪৩২. মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবুয যিনাদ (রহঃ) থেকে এই সনদে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেন।
৪৪৩৩. ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমরা উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হবে সাদাকা বা দান।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. উপস্থিত মুজাহিদের মাঝে গনীমতের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের) বণ্টন পদ্ধতি
৪৪৩৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গনীমতের যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মধ্যে) ঘোড়ার (অশ্বারোহী সৈনিকের) জন্য দু'অংশ এবং পদাতিক সৈনিকের জন্য এক অংশ বণ্টন করেন।
৪৪৩৫. ইবনু নুমায়র (রহঃ) এই একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি فِي النَّفَلِ (গনীমতের সম্পদে) কথাটি উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. বদর যুদ্ধে ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করা এবং গনীমত বৈধ হওয়া
৪৪৩৬. হান্নাদ ইবনু সারী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন, দেখলেন যে, তারা সংখ্যায় এক হাজার ছিল। আর তাঁর সাহাবী ছিলেন তিনশ তের জন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হলেন, এরপর দুহাত উঁচু করে উচ্চস্বরে তার পালনকর্তার কাছে দু’আ করতে লাগলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ আমার জন্য তা পূরণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা প্রদানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, তা প্রদান কর। হে আল্লাহ! যদি মুসলিমদের এই ক্ষুদ্র সেনাদল ধ্বংস করে দাও তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদত করার মত আর কেউ থাকবে না। তিনি এমনিভাবে দু'হাত উঁচু করে কিবলামুখী হয়ে তার পালনকর্তার কাছে অনর্গল উচ্চস্বরে দু'আ করতে ছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাঁদর পড়ে গেল। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) তার কাছে এসে তার চারদ খানা তাঁর কাঁধে তুলে দিলেন। তারপর তাঁর পিছন দিক থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আপনার এতটুকু দুআই যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আপনার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন, তা অচিরেই পূর্ণ করবেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ مُرْدِفِينَ (স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করবো যারা একের পর এক আসবে)।
আবূ যুমায়ল বর্ণনা করেন যে, আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, সে দিন একজন মুসলমান সৈনিক তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করছিলেন। এমন সময় তিনি তাঁর উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন এবং তার উপর দিকে অশ্বারোহীর ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি (অদৃশ্য অশ্বারোহী) বলছিলেন, হে হায়মুম, (ফিরিশতার ঘোড়ার নাম) সামনের দিকে অগ্রসর হও। তখন তিনি তার সামনের মুশরিক ব্যক্তির প্রতি তাকিয়ে দেখলেন যে, সে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। এরপর দৃষ্টি করে দেখেন যে, তার নাক ক্ষতযুক্ত এবং তার মুখমন্ডল আঘাতপ্রাপ্ত। যেন কেউ তাকে বেত্রাঘাত করেছে। আহত স্থানগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। এরপর আনসারী ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। এই সাহায্য আকাশ-থেকে এসেছে। পরিশেষে সেদিন মুসলিমগণ সত্তর জন কাফিরকে হত্যা এবং সত্তর জনকে বন্দী করলেন।
আবূ যুমায়ল বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, যখন যুদ্ধ বন্দীদেরকে আটক করা হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে আবূ বাকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) এর পরামর্শ চাইলেন। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী! তারা তো আমাদের চাচাতো ভাই এবং স্বগোত্রীয়। আমি উচিত মনে করি যে, তাদের নিকট থেকে আপনি মুক্তিপণ (فِدْيَة) গ্রহণ করুন। এতে কাফিরদের উপর আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। হতে পারে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিবেন।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনুল খাত্তাব! এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? উমর (রাঃ) বললেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবূ বাকর যা উচিত মনে করেন আমি তা উচিত মনে করি না। আমি মনে করি যে, আপনি তাদেরকে আমাদের হস্তগত করুন। আমরা তাদের গর্দান উড়িয়ে দেব। আকিল-কে আলী-এর হাতে অর্পণ করুন। তিনি তার শিরশ্ছেদ করবেন। আর (আমার বংশের) অমুককে আমার কাছে অর্পণ করুন, আমি তার শিরশ্ছেদ করবো। কেননা তারা হল কাফিরদের মর্যাদাশালী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
তখন আবূ বাকর (রাঃ) যা বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাই পছন্দ করলেন এবং আমি যা বললাম, তা তিনি পছন্দ করেননি। পরের দিন যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তখন দেখি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বাকর (রাঃ) উভয়েই বসে কাঁদছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে বলুন, আপনি এবং আপনার সাথী কেন কাঁদছেন? যদি আমার মধ্যে কান্নার ভাব জাগে তাহলে আমিও কাঁদবো। আর যদি আমার কান্না না আসে তবে আপনাদের কাঁদার কারণে আমিও কান্নার ভান করবো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফিদয়া গ্রহণের কারনে তোমার সাথীদের উপর সমাগত বিপদের কথা স্মরণ করে আমি কাঁদছি। আমার নিকট তাদের শাস্তি পেশ করা হল- এই গাছ থেকেও নিকটে। গাছটি ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটবর্তী। (একটি গাছের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ গাছের চাইতেও কাছে তোমাদের উপর সমাগত আযাব আমাকে দেখানো হয়েছে।) অতঃপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ
{ مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُثْخِنَ فِي الأَرْضِ} إِلَى قَوْلِهِ { فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلاَلاً طَيِّبًا}
"পৃথিবীর বুকে ব্যাপকভাবে শক্রকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নাবীর জন্য সঙ্গত নয় ... যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে তোমরা ভোগ কর।" (সূরা আনফালঃ ৬৭-৬৯) এর ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁদের জন্য মালে গনীমত হালাল করে দেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. যুদ্ধবন্দীকে বেঁধে রাখা, আটক রাখা এবং অনুগ্রহ প্রদর্শন করে মুক্তিপন ব্যতীত ছেড়ে দেয়া বৈধ
৪৪৩৭. কুতায়রা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক অশ্বারোহী সৈান্যকে 'নাজদ' এর দিকে প্রেরণ করেন। অতঃপর বনূ হানীফা গোত্রের এক ব্যক্তিকে তারা ধরে নিয়ে এল। তার নাম ছিল ছুমামা ইবনু উছাল। তিনি ইয়ামামাবাসীদের নেতা ছিলেন। তাঁরা মসজিদের একটি ঘরে সাথে তাকে বেঁধে রাখলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এলেন এবং বললেন, হে ছুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। আপনি যদি (আমাকে) হত্যা করেন, তবে এক (মূল্যবান) রক্ত ধারাকেই হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনার অনুগ্রহ হবে কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর। আর যদি আপনি সম্পদ চান, তবে আপনাকে তাই দেওয়া হবে, যা আপনি চাইবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরের দিন পর্যন্ত সময় দিলেন।
তারপর পরের দিনও তিনি বললেন, হে ছুমামা! তোমার নিকট কি আছে? (কি ভাবছ?) তিনি বললেন, আমার নিকট তাই আছে যা আপনার কাছে বলে দিয়েছি। যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনার অনুগ্রহ হবে এক-কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর। আর যদি আমাকে হত্যা করেন, তবে আপনি একজন সম্মানি ব্যাক্তিকেই হত্যা করবেন। আর যদি সম্পদ চান, তবে বলুন যা চাইবেন তা-ই আপনাকে দেয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরের দিন পর্যন্ত সময় দিলেন।
(পরের দিন) আবার তিনি বললেনঃ হে ছুমামা! তোমার নিকট কি আছে? তিনি বললেন, আমার নিকট তাই আছে যা আমি আপনাকে ইতিপূর্বে বলেছি। যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনি অনুগ্রহ করবেন একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর। আর যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তবে হত্যার উপযৃক্ত ব্যক্তিকেই হত্যা করবেন। আর যদি আপনি সস্পদ চান, তবে বলুন তাই দেওয়া হবে যা আপনি চাইবেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ছুমামাকে ছেড়ে দাও। তারপর তিনি মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগানে গমন করলেন। সেখানে তিনি গোসল করলেন। এরপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও তার রাসূল। হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর শপথ! পৃথিবীতে আপনার চেহারার চাইতে অধিক অপছন্দনীয় (ঘৃণ্য) চেহারা আমার নিকট আর ছিলনা। আর এখন সকল মানুষের চেহারা থেকে আপনার চেহারাই আমার নিকট অধিক প্রিয়।
আল্লাহর শপথ! আপনার ধর্ম থেকে অধিক ঘৃণ্য ধর্ম আমার কাছে আর ছিলনা। আর এখন আপনার ধর্মই আমার নিকট সকল ধর্ম থেকে অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আপনার জনপদ থেকে অধিক অসহনীয় জনপদ আমার কাছে ছিল না। আর এখন আপনার জনপদই আমার নিকট সকল জনপদের চাইতে অধিক প্রিয়।
আপনার অশ্বারোহী সৈনিকেরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছো অথচ আমি তখন উমরা করার মনস্থ করেছিলাম। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? এরপর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সুসংবাদ দিলেন এবং উমরা করার নির্দেশ দিলেন। যখন তিনি মক্কায় আগমন করলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বললো, তুমি কি ধর্মান্তরিত হয়েছ? তখন তিনি বললেন, না। বরং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে একটি গমের দানাও তোমাদের কাছে পৌছবে না, যতক্ষন না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে সম্মতি দেন।
৪৪৩৮. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী সৈনিক প্রেরণ করলেন 'নাজদ' প্রদেশের দিকে। তারা এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে এল, যার নাম ছিল ছিল ছুমামা ইবনু উছাল হানাফী। তিনি ছিলেন ইয়ামামাবাসীদের নেতা। এরপর তিনি লাইস (রহঃ) এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। বিন্তু তিনি বলেছেন, إِنْ تَقْتُلْنِي تَقْتُلْ ذَا دَمٍ (যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তবে খুনের উপযুক্ত ব্যক্তিকেই হত্যা করবেন )।
পরিচ্ছেদঃ ২০. ইয়াহুদীদের হিযায অঞ্চল থেকে বহিস্কার করা
৪৪৩৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। হঠাৎ আমাদের দিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা ইয়াহুদীদের (বসতির) দিকে চল। সুতরাং আমরা তার সঙ্গে বের হলাম। পরিশেষে তাদের কাছে এলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হলেন এবং তাদেরকে (ধর্মের দিকে) আহবান করে বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবূল কাসেম! নিশ্চয়ই আপনি (আল্লাহর নির্দেশ) প্রচার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ আমি একথাই শুনতে চেয়েছি।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবূল কাসেম! নিশ্চই আপনি প্রচার করেছেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তাই চেয়েছিলাম। এরপর তৃতীয়বার তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা জেনে রেখো! নিশ্চয়ই পৃথিবী আল্লাহ ও তার রাসূলের। আর আমার ইচ্ছা যে, তোমাদেরকে আমি এই ভূখণ্ড থেকে বহিস্কার (নির্বাসিত) করবো। অতএব, তোমাদের মধ্য হতে কেউ তার মালের বিনিময়ে কিছু পেতে পারে তবে সে যেন তা বিক্রি করে দেয়। নতুবা জেনে রেখো যে, সমগ্র ভূ-মণ্ডল আল্লাহ ও তার রাসুলের।
৪৪৪০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বনূ নাযীর এবং বনূ কুরায়যা গোত্রদ্বয়ের ইয়াহুদীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ নাযীরকে দেশান্তর করেন এবং বনূ কুরায়যাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। পরিশেষে বনূ কুরায়যাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদ সমগ্র মুসলমানদের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। কিন্তু তাদের কিছু সংখ্যক লোক যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাদেরকে তিনি-নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার সকল ইয়াহুদীকে দেশান্তর করেন। বনূ কায়নূকা গোত্রের ইয়াহুদী (আবদুল্লাহ ইবনু সালামের গোত্র), বনূ হারিছার ইয়াহুদী এবং মদিনায় বসবাসরত সকল হয় ইহুদীকেই (দেশ থেকে বহিষ্কার করেন।)
৪৪৪১. আবূ তাহির (রহঃ) ... মূসা (রহঃ) থেকে এ সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। আর ইবনু জুরাইজ (রহঃ) এর হাদীসটি অনেক সূত্রে বর্ণিত এবং সেটিই পূর্ণাঙ্গ।
পরিচ্ছেদঃ ২১. ইয়াহুদী ও নাসারাদের আরব উপ-দ্বীপ থেকে বহিস্কার
৪৪৪২. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বহিস্কার করবো। পরিশেষে মুসলমান ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না।
৪৪৪৩. যুহায়র ইবনু হারব ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২২. যারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তাদের হত্যা করা বৈধ হওয়া এবং দুর্গের অধিবাসীদের কোন ন্যায়পরায়ণ বিচারিক যোগ্যতা সম্পন্ন বিচারকের ফায়সালার উপরে আত্মসমর্পণ বৈধ
৪৪৪৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, বনূ কুরায়যার অবরুদ্ধ লোকেরা সা’দ ইবনু মুয়ায (রাঃ) এর ফয়সালা মেনে নিতে সম্মত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ (রাঃ) এর নিকট লোক পাঠালেন। তিনি একটি গাধার উপর আরোহণ করে আগমন করলেন। যখন তিনি মসজিদের নিকটবর্তী হলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদেরকে বললেনঃ তোমরা-তোমাদের নেতাকে অথবা বললেন, উত্তম ব্যক্তিকে সম্বর্ধনা প্রদান করে নিয়ে এসো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরা (সব অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা) তোমার ফয়সালায় আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, তাদের মধ্যকার যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হোক এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছেো।
বর্ণনাকারী ইবনু মুসান্না (রহঃ) কোন কোন সময় বলেছেনঃ তেমি বাদশাহর (আল্লাহর) হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ। তিনি وَرُبَّمَا قَالَ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৪৫. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) এর থেকে এ সুত্রে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি এ কথাটুকু তাঁর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছে”। আর একবার বলেছেন, "তুমি বাদশাহর (আল্লাহর) হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ।"
৪৪৪৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন সা’দ (রাঃ) আঘাতপ্রাপ্ত হন। কুরাইশের ইবনুল আরিকা নামক এক ব্যক্তি তাঁর (হাতের প্রধান) শিরায় তীর নিক্ষেপ করেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ (রাঃ) এর জন্যে মসজিদে একটি তাবু স্থাপন করে দিলেন, যেন নিকট থেকে তাকে দেখাশোনা করা যায়। যখন তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খন্দকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন অস্ত্র রেখে সবেমাত্র গোসলের কাজ সমাপ্ত করলেন। এমন সময় জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার মাথা থেকে ধূলিবালি ঝড়তে ঝাড়তে আগমন করলেন।
এরপর বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন? আল্লাহর শপথ! আমরা তো অস্ত্র রাখিনি। তাদের দিকে গমন করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন দিকে? তখন তিনি বনূ কুরাইযার দিকে ইঙ্গিত করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফয়সালা মেনে নেয়ার শর্তে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব করলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিচারের ভার (তাদের নেতা) সা’দ (রাঃ) এর প্রতি প্রত্যর্পণ করলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি ফয়সালা দিচ্ছি যে, তাদের মধ্যে যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হবে, নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের সম্পদ সমূহ বণ্টন করা হবে।
৪৪৪৭. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী বিচার করেছ।
৪৪৪৮. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা’দ (রাঃ) বলেছেন, তঁরে আঘাত শুকিয়ে যাচ্ছিল (এবং তিনি ক্রমান্বয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেন)। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমার নিকট আপনার রাসুলকে যে সম্প্রদায় অস্বীকার করেছে, তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনার পথে যুদ্ধ করার চাইতে অধিক পছন্দনীয় বিষয় আর নেই। হে আল্লাহ! যদি কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করা এখনও বাকী থাকে তবে আপনি আমাকে জীবিত রাখুন, যেন আমি আপনার পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি। হে আল্লাহ! আমি মনে করি যে, আমাদের এবং তাদের মধ্যে আপনি যুদ্ধ রহিত করেছেন। যদি তাই হয়, তবে আপনি আমার এই ক্ষতস্থান প্রবাহিত করে দিন এবং এতেই আমাকে মৃত্যু (শাহাদত) নসীব করুন। তখন তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনু গিফারের একটি তাবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহের কারণে তারা ঘাবড়িয়ে গেল। তখন তারা বলল, হে তাবুবাসী! তোমাদের দিক থেকে এ কি আসছে? দেখা গেল যে, সা’দ (রাঃ) এর ক্ষতস্থান থেকে তখন প্রবল ধারায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল এবং এতেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
৪৪৪৯. আলী ইবনু হাসান ইবনু সুলায়মান কুফী ... হিশাম (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এইটুকু ব্যতিক্রম বলেছেন যে, “সেই রাত থেকেই রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলো এভাবে অনবরতঃ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। অবশেষে তিনি মারা যান। তিনি তার হাদীসে অরো কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। এ সম্পকে (সা'দ (রাঃ) কে ভৎসনা করে) একজন কাবি বলেনঃ
হে সা’দ ইবনু মুয়ায! বনূ কুরায়যা
এবং বনূ নাযীর এর খবর কি? তোমার জীবনের শপথ! সা’দ
ইবনু মুয়াযকে যে প্রভাতে বহন করে আনা হয়েছিল, তিনি
অবশ্যই অতি সহনশীল (হওয়ার পরিচয় দিয়েছেন)। (হে আউস সম্প্রদায়)
তোমরা তোমাদের ডেগগুলো (অর্থাৎ তোমাদের মিত্রদের) খালি রেখে দিয়েছ,
তাতে আজ কোন কিছু নেই। (অর্থাৎ তোমাদের মিত্ররা তোমাদের দ্বারা
কোন সহায়তা লাভ করেনি) হয়েছে। অথচ তোমাদের বিপক্ষের (খাজরাজ সম্প্রদায়ের)
ডেগগুলো গরম তা টগবগ করছে (অর্থাৎ তারা তাদের মিত্ররদের উপকার করেছে)
সভ্রান্ত আবূ হুবাব (আবদুল্লাহ ইবন উবাই) বলেছিলেন, তোমরা হে
বনূ কায়নূকা গোত্র! অবস্হান কতে চলে যেও না।
আর তারা তাদের শহরে ভারী পাথর।
যে রূপে শয়তানে (পাহাড়ে) পাথরগুলো ভারী হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. যুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগামিতা এবং দু'টি বিরোধপূর্ণ কাজের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণটিকে অগ্রাধিকার দেয়া
৪৪৫০. আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা যুবাঈ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের (খন্দকের) যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন তিনি আমাদের মাঝে ঘোষনা দিলেন যে, যতক্ষন না বনী কুরায়যার মহল্লায় গিয়ে পৌছবে কেউ যেন যুহরের সালাত আদায় না করে। তখন কিছু সংখ্যক লোক যুহরের সালাতের সময় চলে যাওয়ার ভয় করলেন। এবং তারা বনূ কুরায়যা গোত্রে পৌছার পর সালাত আদায় করলেন। আর অন্যরা বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে স্থানে সালাত আদায় করতে- বলেছেন সে স্থান ব্যতীত আমরা সালাত আদায় করব না, যদিও সময় চলে যায়। রাবী বলেন, এ ঘটনা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু'দলের কারো প্রতি রুঢ় কথা বলেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. মুহাজিরগণ বিজয় সম্পদ দ্বারা অভাবমুক্ত হওয়ায় আনসারদের দেয়া গাছপালা ও ফলের বাগানসমূহ তাদেরকে ফেরত প্রদান
৪৪৫১. আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মুহাজিরগণ মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করেন তখন তাদের হাতে কোন কিছুই ছিল না। (তারা ছিলেন তখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব) আর আনসারগণ ছিলেন জমা-জমির মালিক। তখন আনসারগণ মুহাজিরদেরকে তাদের (খেজুর বাগানের অর্ধেক) এই শর্তে বণ্টন করে দেন যে, প্রতি বছর বাগানে মুহাজিরগণ পরিশ্রম ও পরিচর্যা করে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাদের দেবেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর মাতা উম্মে সুলাইম, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহার মাতা ছিলেন। আর আবদুল্লাহ ছিলেন আনাস (রাঃ) এর বৈপিত্রেয় ভাই। আনাসের মাতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর খেজুর গাছ দান করেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহা দিলেন তার আযাদকৃত বাঁদি উম্মু আয়মানকে। যিনি উসামা ইবনু যায়েদের মাতা ছিলেন।
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বারের যুদ্ধ শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলেন তখন মুহাজিরগন আনসারদেরকে তাদের দানকৃত ফলের বাগানসমূহ প্রত্যার্পণ করে দেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমার মাতাকে তার দানকৃত বাগান ফেরত দেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু আয়মানকে তার পরিবর্তে নিজের বাগানের এক অংশ প্রদান করেন।
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, উম্মু আয়মান যিনি উসামা ইবনু যায়েদের মাতা ছিলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিবের দাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন হাবশা (আবিসিনীয়) বংশোদ্ভূত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতার ইন্তেকালের পর আমিনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জন্ম দেন তখন উম্মু আয়মান তাঁকে বড় হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করেন। এরপর তিনি তাঁকে আযাদ করে দেন। পরবর্তীতে যায়েদ ইবনু হারিছার সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পাঁচ মাস পর ইন্তেকাল করেন।
৪৪৫২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হামিদ ইবনু উমর আল বাকরারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা কায়সী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেন তখন) এক এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজ নিজ ভূমির কিছু খেজুর দান করেছেন। যখন বনূ কুরায়যা এবং বনূ নাযীর গোত্রদ্বয়ের উপর তার বিজয় প্রতিষ্ঠিত হলে ঐসব গাছ, যা তারা তাকে প্রদান করেছিলেন তিনি তাদের প্রত্যর্পণ করতে লাগলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার পরিবারের লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা দিয়েছিলেন তা অথবা তার অংশ বিশেষ তাঁর নিকট হতে চেয়ে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু আয়মানকে তা দিয়ে দিয়েছিলেন।
এ অবস্হায় আমি তাঁর কাছে এসে যখন তা চাইলাম, তখন তিনি তা আমাকে দিয়ে দিলেন। এ সময় উম্মু আয়মান (রাঃ) সেখানে এলেন এবং আমার গলায় কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ও বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে তা দেবো না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মু আয়মন! আপনি তাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে এই এই সম্পদ প্রদান করছি। তখন তিনি বললেন, কখনো না। সেই আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। তখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, আপনাকে এই এই সম্পদ প্রদান করছি (আপনি তাকে ছেড়ে দিন)। পরিশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু আয়মনকে ঐ সম্পদের দশশুন কিংবা দশগুণের কাছাকাছি প্রদান করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. 'দারুল হারবে' (বিধর্মী শত্রু রাজ্য) প্রাপ্ত খাদ্য দ্রব্য গ্রহন (আহার) করা
৪৪৫৩. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি খায়বার যুদ্ধের সময় চর্বিভর্তি একটি চামড়ার থলে পেলাম। আমি তা একান্তভাবে তুলে নিলাম এবং বললাম, এর থেকে আমি কাউকে কিছু দেবনা। তিনি বলেন, আমি হঠাৎ পিছন ফিরে দৃষ্টিপাত করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলাম, (আমার কথা শুনে) তিনি মৃদু হাসছিলেন।
৪৪৫৪. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার আবদী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের সময় আমাদের দিকে কে যেন একটি থলে নিক্ষেপ করল, তাতে খাদ্য ও চর্বি ভর্তি ছিল। আমি তা তুলে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিযে পড়লাম । হঠাৎ একদিকে তাকিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে দেখে লজ্জিত হলাম।
৪৪৫৫. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) শু'বা (রহঃ) থেকে একই সুত্রে হাদীস বর্ননা করেছেন। কিন্তু তিনি جِرَابٌ مِنْ لحم (চর্বির থলে) কথাটি বলেন এবং لطَّعَام (খাদ্যের) কথা উল্লেখ করেননি।
No comments: