সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৬ষ্ট খন্ড, অধ্যায়ঃ রাষ্টখমতা ও প্রশাসম-১ম
পরিচ্ছেদঃ ১. জনগন কুরায়শ এর অনুগামী এবং খিলাফত কুরায়শ এর জন্য
৪৫৫০. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জনগণ এর বিষয়ে (প্রশাসনিক ব্যাপারে) কুরায়শদের অনুসারী। মুসলিমরা তাদের মুসলমানদের এবং কাফেররা তাঁদের কাফেরদের (অনুসারী)।
৪৫৫১. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে সকল হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন তন্মধ্যে একটি হল যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন এই ব্যাপারে কোরায়শের অনুসারী মুসলিমরা মুসলিমদের অনুসারী এবং কাফেররা কাফেরদের অনুসারী।
৪৫৫২. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন ভাল-মন্দ (উভয় ব্যাপারেই) কুরায়শের অনুসারী।
৪৫৫৩. আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ কর্তৃত্ব সর্বদা কুরায়শের মধ্যেই থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত (দুনিয়ার) দুটি লোকও বেঁচে থাকবে।
৪৫৫৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও রিফা'আ ইবনু হায়সাম ওয়াসেতী (রহঃ) ... সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তখন আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, শাসন ক্ষমতার ব্যাপারটা চলতে থাকবে যতক্ষন না উম্মাতের মধ্যে বারজন খলীফা অতিবাহিত হবেন। তারপর তিনি কিছু বললেন, যা আমার কাছে অস্পষ্ট ছিল। তখন আমি আমার-পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বললেন? তিনি বললেন যে, তিনি বলেছেন, তাদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশোদ্ভূত।
৪৫৫৫. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মানুষের (শাসনের) বিষয়টি চলমান (মুসলিম শাসন) থাকবে যতক্ষন না তাদের মধ্যে বারজন শাসক শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। জাবির (রাঃ) বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, যা আমার কাছে অস্পষ্ট। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন কি বলেছেন? তিনি বললেন, (বলেছেন) সবাই কুরায়শ বংশোদ্ভূত হবে।
৪৫৫৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি তাতে "লোকদের মধ্যে শাসন ক্ষমতা চলতে থাকবে" কথাটির উল্লেখ করেননি।
৪৫৫৭. হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, বারজন খলীফা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম (প্রবল পরাক্রান্ত অবস্থায়) চলতে থাকবে। তারপর তিনি একটি শব্দ কি বললেন যা আমি বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন? তিনি বললেন, (বলেছেন,) তাদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশোদ্ভূত।
৪৫৫৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ বিষয়টি (ইসলামী রাষ্ট্র) পরাক্রমশালী থাকবে বারজন খলীফা পর্যন্ত। রাবী বলেন, তারপর তিনি কিছু বললেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বললেন? তিনি বললেন, (বলেছেনঃ) তাঁদের সকলেই হবে কুরায়শ থেকে।
৪৫৫৯. নসর ইবনু আলী জাহযামী আহমদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। আমার সাথে আমার পিতাও ছিলেন। আমি তখন তাকে বলতে শুনলাম, এ দ্বীন পরাক্রান্ত, সংরক্ষিত থাকবে বারজন খলীফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। তারপর তিনি কোন কথা বললেন, লোকজনের কথাবার্তার দরুন আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে বললাম, তিনি কি বললেন? (তিনি বললেন,) বলেছেন, তাদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশের লোক।
৪৫৬০. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আমর ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) এর নিকট আমার গোলাম নাফি' মারফত পত্র পাঠালাম যে, আপনি আমাকে এমন কিছু সম্পর্কে অবহিত করুন যা আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছেন। রাবী বলেন, তিনি আমাকে লিখলেনঃ জুমার দিন সন্ধ্যায় যে দিন (মা'ইজ) আসলামীকে রজম করা হয়, সেদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, এ দিন অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষন কিয়ামত কায়েম হয় অথবা তোমরা বারজন খলীফা কর্তৃক শাসিত হও, এদের সকলেই হবে কুরায়শ থেকে।
আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, মুসলমানদের একটি ছোট দল জয় করবে শ্বেতভবন যা কিসরা (কিংবা কিসরা বংশের) মহল। আমি আরও বলতে শুনেছি, কিয়ামতের প্রাক্কালে অনেক মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজনকে দিয়ে (ব্যয়) শুরু করবে। আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, হাওযে (কাওসারে) আমি তোমাদের অগ্রগামী হবো।
৪৫৬১. মূহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আমর ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি ইবনু সামুরা আদবীর নিকট চিঠি পাঠান যে, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন তা বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি ...... পরবর্তী অংশ হাতীমের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. খলিফা মনোনয়ন করা এবং না করা
৪৫৬২. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা যখন আহত হলেন তখন আমি তার কাছে গিয়ে হাযির হলাম। লোকজন তাঁর প্রশংসা করল তারপর বললো, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। তিনি তখন বললেন, আমি আশাবাদী ও সন্ত্রস্ত। তখন লোকেরা বললো, আপনি কাউকে খলীফা মনোনীত করে যান। তখন তিনি বললেন, আমি কি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়ই তোমাদের বোঝা বহন করব? আমার আকাংখা খিলাফতের ব্যাপারে আমার সমান সমান হোক (শুধু নিস্কৃতি জুটুক)। আমার উপর কোন অভিযোগও অর্পিত না হোক, আর আমি লাভবানও না হই।
আমি যদি কাউকে খলীফা মনোনীত করি (তবে তার দৃষ্টান্ত আছে কেননা) আমার চাইতে যিনি উত্তম ছিলেন তিনি [অর্থাৎ আবূ বাকর (রাঃ)] খলীফা মনোনীত করে গিয়েছেন। আর যদি আমি তোমাদের (খলীফা মনোনীত না করেই) ছেড়ে যাই, তবে আমার উত্তম যিনি ছিলেন অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের ছেড়ে গিয়েছিলেন।
রাবী আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) বলেনঃ তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা উল্লেখ করলেন তখনই আমি বুঝে গেলাম যে, তিনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না।
৪৫৬৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মদ রাফি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হাফসা (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি কি জান যে, তোমার পিতা কাউকে খলীফা মনোনীত করছেন না। আমি বললাম, তিনি এমনটা করবেন না। তিনি বললেন, তিনি তাই করবেন। ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, তখন আমি এ মর্মে শপথ করলাম যে, আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলাপ করবো। এরপর আমি নীরব থাকলাম। পরের দিন ভোর পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে তা আলাপ করলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হলো যেন, আমি আমার শপথের কারণে একটি পাহাড় বহন করেছি। অবশেষে আমি ফিরে এলাম এবং তাঁর (অর্থাৎ উমার (রাঃ) এর) কাছে প্রবেশ করলাম।
তিনি আমাকে লোকদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আমি তাকে তা অবহিত করলাম। তারপর আমি তাঁকে বললাম, আমি লোকজনকে একটি কথা বলাবলি করতে শুনে আমি তা আপনাকে বলবো বলে শপথ করেছি। লোকেরা বলছে যে, আপনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না। অথচ আপনার যদি কোন উট রাখাল বা ছাগল রাখাল থাকে আর সে (রাখাল বিহীন রূপে) তার পাল পরিত্যাগ করে আপনার কাছে চলে আসে, তা হলে আপনি মনে করবেন যে, সে পশুপালের সর্বনাশ করেছে।
মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারটি তার চাইতেও গুরুতর। আমার কথা তার অন্তরে রেখাপাত করলো এবং তিনি কিছুক্ষণ মাথা নত করে রইলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, অবশ্যই মহিমান্বিত মহান আল্লাহ তাঁর দ্বীনের হিফাযত করবেন। আমি যদি কাউকে খলীফা মনোনীত না করি তবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তো কাউকে খলীফা মনোনীত করে যাননি। আর যদি আমি কাউকে খলীফা মনোনীত করি তবে আবূ বাকর (রাঃ) খলীফা মনোনীত করে গেছেন।
তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) এর কথা উল্লেখ করলেন, তখনই আমি বুঝে ফেলি যে, তিনি আর কাউকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ করবেন না এবং তিনি কাউকে খলীফাও মনোনীত করবেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. নেতৃত্ব প্রার্থনা ও ক্ষমতার প্রতি লোভের নিষেধাজ্ঞা
৪৫৬৪. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে, আবদুর রাহমান! তুমি শাসন ক্ষমতা চাইবে না। কেননা, যদি তুমি তোমার চাওয়ার মাধ্যমে তা প্রাপ্ত হও, তবে তার দায়িত্ব তোমার উপর বার্তাবে। আর যদি তুমি চাওয়া ব্যতীত তা প্রাপ্ত হও, তবে এ ব্যাপারে তুমি (আল্লাহর তরফ থেকে) সাহায্য প্রাপ্ত হবে।
৪৫৬৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আলী ইবনু হুজর সা’দী, আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) এর সুত্রেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪৫৬৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আমি এবং আমার দু'চাচাত ভাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। ঐ দুই ব্যক্তির একজন বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সমস্ত রাজ্যের কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন তার কিছু অংশে আমাদেরকে আমীর নিযুক্ত করুন। অপরজনও অনুরূপ বললো। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা এমন কাউকে নের্তৃত্বে আসীন করিনা, যে তার জন্য প্রার্থী হয় এবং যে তার জন্য লালায়িত হয়।
৪৫৬৭. উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন (একদা) আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আমার সাথে আশ'আরী বংশের দু'জন লোক ছিল। তাদের একজন আমার ডানে অপরজন আমার বামে ছিল। তাদের দু'জনই (পদে) নিযুক্তি প্রার্থনা করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মেসওয়াক করছিলেন। তখন তিনি (আমাকে লক্ষ্য করে) বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস! তুমি কি বল? তিনি বলেন, আমি বললাম, যে পবিত্র সত্তা আপনাকে নাবী করে পাঠিয়েছেন, তার কসম! তাদের অন্তরে যে কি রয়েছে সে সম্পর্কে তারা আমাকে মোটেও অবহিত করেনি, আর আমি মোটেও টের পাইনি যে, তারা আপনার কাছে (পদে) নিযুক্তি প্রার্থনা করবে।
রাবী বলেন, আমি যেন (স্পষ্টই) তাঁর ওষ্ঠ মোবারকের নীচে মেসওয়াক দেখতে পাচ্ছি (তার) মাড়ি গোশত মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ আমরা আমাদের কোন কাজে কখনো এমন লোককে নিযুক্তি প্রদান করিনা- যে তার জন্য লালায়িত। বরং তুমি যাও হে আবূ মূসা অথবা তিনি বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস! এবং তাঁকে ইয়েমেনের গভর্ণর করে পাঠালেন। এরপর তিনি মু'আয ইবনু জাবালকে তাঁর সাহায্যার্থে পাঠালেন। তিনি (মু'আয) যখন তার (আবূ মূসার) নিকট গিয়ে পৌছলেন, তখন তিনি বললেনঃ অবতরণ করুন এবং সাথে সাথে তিনি একটি আসন পেতে দিলেন। তখন তার নিকট হাত পা বাঁধা অবস্থায় একটি লোক ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটি কে? জবাবে তিনি বললেন, লোকটি প্রথমে ইয়াহুদী ছিল, তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করো এরপর সে আবার তার বাতিল ধর্মে ফিরে যায় এবং ইয়াহুদী হয়ে যায়।
মু'আয (রাঃ) বললেন, যতক্ষন আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধান অনুসারে তাকে হত্যা করা না হবে, ততক্ষন আমি বসবো না। তিনি (আবু মুসা) বললেন, বসুন তা-ই হবে। তিনি (মু'আয) বললেন, বসলাম। যতক্ষন না আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধান অনুসারে তাকে হত্যা করা হয়। এরূপ তারা তিনবার বলাবলি করলেন। এরপর তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন এবং তাকে হত্যা করা হলো।
তারপর তারা রাত্রি জাগরণ (তাহাজ্জুদ) সম্পর্কে পরস্পরের আলাপ আলোচনা করলেন। তাদের দুজনের মধ্যে মু’আয (রাঃ) বললেন, আমার অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি (রাত্রির কতক অংশে) নিদ্রাও যাই আবার (কতক অংশে) ইবাদতে জাগারণও করি, এবং আমার নিদ্রায়ও সেরূপ সাওয়াবই প্রত্যাশা করি যেরূপ সাওয়াব প্রত্যাশা করি আমার জাগরগে (ও ইবাদতে)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. বিনা প্রয়োজনে ক্ষমতা গ্রহন করা অনভিপ্রেত
৪৫৬৮. আবদুল মালিক ইবনু শুআইব ইবনু লাইস (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে কোন কাজে (দায়িত্বে) নিযুক্তি করবেন না? রাবী বলেন, তিনি তখন তার পবিত্র হাতে আমার কাঁধে আঘাত করে বললেনঃ হে আবূ যার! তুমি দূর্বল অথচ এটা হচ্ছে একটা আমানত। আর কিয়ামতের দিন এ হবে লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা। তবে যে এটি যথাযথ রূপে গ্রহন করবে এবং তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে (তার কথা স্বতন্ত্র)।
৪৫৬৯. যুহায়র ইবনু হারব এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে লক্ষ্য করে) বললেনঃ হে আবূ যার! আমি দেখছি তুমি দুর্বল আর আমি তোমার জন্য তাই পছন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য পছন্দ করি। কোন দুই ব্যক্তির উপরও কর্তৃত্বেতের দায়িত্ব গ্রহণ করোনা এবং ইয়াতীমের সম্পদের মুতাওয়াল্লীও (তত্ত্বাবধায়ক) হতে যেয়ো না।
পরিচ্ছেদঃ ৫. ন্যায়পরায়ণ শাসকের ফযীলত ও যালিম শাসকের শাস্তি। শাসিতদের প্রতি নম্রতা অবলম্বন ও কঠোরতা বর্জন
৪৫৭০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ন্যায় বিচারকগণ (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিকটে নুরের মিম্বর সমূহে মহিমান্বিত দয়ালু (আল্লাহ্) এর ডানপার্শ্বে উপবিষ্ট থাকবেন। আর উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ সমান মহিমান্বিত)। (সেই ন্যায়পরায়ণ হচ্ছে) ঐ সব লোক, যারা তাদের শাসনকার্যে তাদের পরিবার পরিজনের ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে।
৪৫৭১. হারশি ইবনু সাঈদ আয়েলী (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু শুমাসাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা আয়িশা (রাঃ) এর নিকট কোন এক ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য গেলাম। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কোথাকার লোক? আমি বললাম, আমি একজন মিসরবাসী। তখন তিনি বললেন, তোমাদের নেতা (সেনাপতি) তোমাদের অভিযান পরিকল্পনায় কেমন লোক ছিলেন? রাবী বলেন, আমরা তো তার নিকট থেকে কোন অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা লাভ করিনি। যদি আমাদের কোন ব্যক্তির উট মারা যেতো তিনি তাকে উট দিতেন। গোলাম মারা গেলে গোলাম দিতেন কারো জীবিকার প্রয়োজন হলে তিনি তাকে জীবিকা প্রদান করতেন।
তখন তিনি বললেনঃ আমার ভাই মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকরের সাথে যা (দুর্ব্যবহার) করা হয়েছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার এই ঘরে যা বলতে শুনেছি তা তোমাকে অবহিত করা থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারছিনা (তিনি বলেছিলেন) হে আল্লাহ! যে আমার উম্মাতের কোনরূপ কর্তৃত্ব ভার লাভ করে এবং তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করে তুমি তার প্রতি রূঢ় হও, আর যে আমার উম্মাতের উপর কোনরূপ কর্তৃত্ব ভার লাভ করে তাদের প্রতি নম্র আচরণ করে তুমি তার প্রতি নম্র ও সদয় হও।
৪৫৭২. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫৭৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমূহ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আমীর বা নেতা তার অধীনস্থ লোকদের উপর দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবার পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের উপর দায়িত্ববান, সে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। গোলাম তার মুনিবের মাল সস্পদের উপর দায়িত্ববান, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ওহে! তোমাদের প্রত্যেকেই (স্ব-স্ব স্থানে) এক এক জন দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
৪৫৭৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ সকলেই উবাযুদুল্লাহ ইবনু উমার থেকে অন্য সনদে আবূ রাবী ও আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) সকলেই ... নাফি' (রহঃ) এর সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে লায়স (রহঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫৭৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইযুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু হুজর ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তার পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি ... তারপর নাফি (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করতে শুনেছি। যুহরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, আমার মনে হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষ তার পৈত্রিক সম্পদের উপর দায়িত্ববান এবং সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
৪৫৭৬. আহমদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওহহাব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪৫৭৭. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ মা'কিল ইবনু ইয়াসার মুযানী (রাঃ) কে তাঁর মৃত্যুরোগে আক্রান্ত অবস্থায় দেখতে যান। তখন মা’কিল তাকে বলেনঃ আমি তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে আমার শ্রুত হাদীস বর্ণনা করবো। যদি আমি জানতাম যে, আমার আরও আয়ু আছে তবে আমি তোমার কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে বান্দাকে আল্লাহু কোন প্রজাকুলের (জনতার) উপর দায়িত্বশীল করেছেন অথচ সে যখন মারা যায় তখনও সে তার প্রজাকুলের প্রতি প্রতারণাকারী থাকে তবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দেন।
৪৫৭৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু যিয়াদ (রহঃ) মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রহঃ) এর কাছে উপনীত হলেন। তিনি তখন (গুরুতর) পিড়ায় ভুগছেন। তারপর আবূল আশহাব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। রাবী অধিক বলেছেন, আপনি আজকের আগে এ হাদীস আমার কাছে ব্যক্ত করেননি কেন? তিনি বলেন, আমি পূর্বে তোমার কাছে (ইচ্ছা করেই) ব্যক্ত করিনি, অথবা বলেছেন আমি তা (বিশেষ কারণে) তোমার কাছে ব্যক্ত করতে চাইনি।
৪৫৭৯. আবূ গাসসান মিসমাঈ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ মালীহ (রহঃ) থেকে রর্ণিত যে, উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ মাকিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) এর পিড়িত অবস্থায় তার কাছে যান। তখন মাকিল (রাঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি এমন একটা হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করবো যে, যদি আমি মৃত্যুর মুখোমুখি না হতাম তবে তোমার কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, এমন আমীর যার উপর মুসলিমদের শাসনভার অর্পিত হয় অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টিত না হয় বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ তাকে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।
৪৫৮০. উকবা ইবনু মুকাররাম আম্মী (রহঃ) ... আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) পিড়িত হলেন। তখন উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তাঁকে রোগ শয্যায় দেখতে যান। অবশিষ্ট অংশ মা’কিল থেকে হাসান (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
৪৫৮১. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী আ'ইয ইবনু আমর (রাঃ) একদা উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়ার এর কাছে গেলেন। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, বৎস! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি নিকৃষ্টতম রাখাল (দায়িত্বশীল ও প্রশাসক) হচ্ছে অত্যাচারী শাসক। তুমি তাদের অন্তর্তুক্ত হওয়া থেকে সাবধান থাকবে। তখন সে বললো, বসে পড়! তুমি হচ্ছো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের ভূষি স্বরূপ। জবাবে তিনি বললেন, তাঁদের মধ্যেও কি ভূষি রয়েছে? ভূষি তো তাদের পরবর্তীদের এবং অন্যান্যদের মধ্যে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. গনীমতের মাল আত্মসাৎ হারাম হওয়ার কঠোরতা
৪৫৮২. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে (ভাষণ দিতে) দাঁড়ালেন এবং (আমানতের ও গনীমতের) মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন। তিনি বিষয়টিকে ভয়াবহ ও অতি ভয়ংকর রূপে উপস্থাপন করলেন। তারপর বললেনঃ আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামত দিবসে যেন এমন অবস্থায় উপস্থিত না পাই যে, আওয়াজকারী উট তার ঘাড়ের উপর সাওযার আর সে বলছে (ফরিয়াদ করছে) ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন! আমি তখন বলবোঃ তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই। আমি (এর পূর্বেও) তোমাকে (এ ব্যাপারে) জানিয়ে দিয়েছি।
আমি যেন কিয়ামত দিবসে তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় না পাই যে, ভ্যাঁ ভ্যাঁ কারী ছাগল তার ঘাড়ে রয়েছে। সে বলছে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। তখন আমি বলবোঃ তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই, আমি তো তোমাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে যেন কিয়ামত দিবসে এমন অবস্থায় উপস্থিত না পাই যে, কোন আর্তনাদরতকে সে বয়ে নিয়ে আসছে আর ফরিয়াদ করবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলবোঃ তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই। আর আমি (ইতিপূর্বেই তা) তোমার নিকট প্রচার করেছি। আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় যেন উপস্থিত না পাই যে, তার ঘাড়ের উপর পতপত করে কাপড় উড়ছে আর সে ফরিয়াদ করছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলবো যে, তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই। আমি তো (ইতি পুর্বেই তা) তোমাকে জানিয়ে রেখেছি। আর এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যকার কাউকে এ অবস্থায় পাই যে, তার ঘাড়ে স্বর্ণ, রৌপ্য নিয়ে আসবে আর ফরিয়াদ করবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলবোঃ আমার তোমাকে সাহায্য করার কোন সাধ্য নেই, আমি তো (পূর্বেই সে বিষয়ে) তোমাকে অবহিত করে এসেছি।
৪৫৮৩. আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইসমাঈল (রহঃ) এর সুত্রে আবূ হাইয়ান (রাঃ) থেকে ইসমাইলের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৪৫৮৪. আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু শাখর দারেমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল আত্মসাত করণ এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে উল্লেখ করেন। এভাবে তিনি পূর্ণ হাসীস বর্ণনা করেন।
৪৫৮৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাসান ইবনু খাওয়াশ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত রাবীদের বর্নিত হাদাসের অনুরূপ বর্ননা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৭. কর্মচারীদের উপঢৌকন গ্রহন হারাম
৪৫৮৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ (রহঃ) ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসাদ গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে কর্মচারী নিযুক্ত করলেন- যাকে ইবনুল লুৎবিয়া নামে অভিহিত করা হতো। রাবী আমর ও ইবনু আবূ উমার বলেন, সাদাকা উসূলের জন্য। যখন সে ব্যক্তি ফিরে এলো তখন সে বললো, এটা আপনাদের (অর্থাৎ বায়তুল মালের) এবং ওটা আমাকে উপটোকন হিসেবে দেয়া হয়েছে। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপরে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করার পর বললেনঃ সে কর্মচারীর কি হলো, যাকে আমি (তহশীলদার রূপে) প্রেরণ করি, আর সে বলে, ওটা আপনাদের আর এটা আমাকে উপটোকন দেয়া হয়েছে। সে তার পিতার বা মাতার ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন যে তাকে উপটোকন দেয়া হয় কিনা? মুহাম্মাদের প্রাণ যে পবিত্র সত্তার হাতে তাঁর কসম! যে কেউ এরুপ সম্পদের কিছুমাত্র হস্তগত করবে, কিয়ামতের দিন তাই সে তার ঘাড়ে বহন করে নিয়ে আসবে (তার ঘাড়ের উপর) চিৎকার রত উট হবে অথবা হাম্বা-হাম্বারত গাভী হবে অথবা ম্যাঁ ম্যাঁরত বকরী হবে। তারপর তিনি দু'হাত ঊর্ধ্ব দিকে উঠালেন, এমন কি তার বগলের শুভ্রতা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি (তোমার নির্দেশ) পৌছে দিয়েছি একথা তিনি দু'বার বললেন।
৪৫৮৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের ইবনুল লুৎবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সাদাকা উসুলের উদ্দেশ্য কর্মচারী নিয়োগ করেন। সে যখন (সাদাকার উসূলকৃত) মালামাল নিয়ে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অর্পণ করলো, তখন সে বললো, এগুলো হচ্ছে আপনাদের, আর ওটা আমাকে উপটোকন স্বরূপ দেয়া হয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার পিতা-মাতার ঘরে বসে থেকে দেখলে না কেন, কেউ তোমার জন্য উপঢৌকনাদি প্রেরিত হয় কিনা? তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দিতে দাড়ালেন। এরপর রাবী সুফিয়ান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা দেন।
৪৫৮৮. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে বনূ সূলাইম গোত্রের সাদাকা উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করেন। লোকটিকে ইবনু উৎবিয়া বলে ডাকা হতো। যখন সে (কাজ সম্পাদন করে) আসলো, তখন তিনি তার হিসাব-নিকাশ চাইলেন। সে বলছেন এগুলো হচ্ছে আপনাদের মাল আর ওটা (আমাকে প্রদত্ত) উপটোকন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার পিতামাতার ঘরে বসে থাকলে না কেন? তোমার উপটোকন এসে পৌছে যেতো। যদি তুমি সত্যবাদী হও। তারপর আমাদেরকে লক্ষ্য করে খুৎবা দিলেন। তাতে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেনঃ আমি তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তিকে কোন কাজে নিযুক্ত করি যার দায়িত্ব আল্লাহ আমার অর্পণ করেছেন।
তারপর সে (কর্ম সম্পাদন করে) এসে বলে, এটা আপনাদের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকন স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতামাতার ঘরে বসে রইলো না। দেখত তার উপটোকন সেখানে তার কাছে এসে পৌছে কিনা? যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যকার যে কেউ তার প্রাপ্য ব্যতিরেকে সে সব সম্পদের অংশবিশেষও হস্তগত করবে, কিয়ামতের দিন সে তা বহন করে, আল্লাহ তায়াআলার সমীপে উপস্থিত হবে। তোমাদের মধ্যকার যে কেউ চিৎকাররত উট, গাভী বা বকরী বহন করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে, আমি তাকে সম্যক চিনতে পারবো।
তারপর তিনি দু'হাত এমনিভাবে ঊর্ধ্বে তুললেন যে তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা গেল। তিনি বলছিলেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি (তোমার নির্দেশ) পৌছিয়ে দিয়েছি! (রাবী বলেন, (সে দৃশ্যটি) আমার চোখ দেখেছে এবং সে বক্তব্য আমার কান শুনেছে।
৪৫৮৯. আবূ কুরাইব, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) সুত্রে হিসাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদেও উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত আছে। আবওদা ইবনু নুমায়ের (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে আবূ উসামা (রহঃ) এর বর্ণনার অনুরূপ উল্লেখ আছে যে সে যখন এলো তখন তার থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসাব নিলেন। ইবনু নূমায়ের (রহঃ) এর হাদীসে বর্ণিত আছে তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ তোমাদের মধ্যে এর কিছুই আত্মসাৎ করবে না ...... আর সুফিয়ান (রহঃ) এর হাদিসে "আমার দুটি চোখ দেখেছে, আমার দুটি কান শুনেছে।" এরপর আছে যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) কে তোমরা জিজ্ঞাসা কর, কেননা তিনি তখন আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন।
৪৫৯০. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উরওয়া ইবন যুবায়র সুত্রে আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সাদাকা উসূলের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করেন। সে প্রচুর মাল নিয়ে আসলো আর বলতে লাগলো যে এটা আপনাদের আর ওটা আমাকে হাদিয়া (উপঢৌকন) দেয়া হয়েছে। তারপর রাবী অনুরূপ বর্ণনা করেন। রাবী উরওয়া বলেন, আমি আবূ হুমায়দ সা’দী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি নিজে কি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছেন? জবাবে তিনি বললেনঃ তাঁর (পবিত্র) মুখ থেকে সরাসরি আমার কানে শুনেছি।
৪৫৯১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আদী ইবনু আমির আল-কিন্দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে কোন কাজে (তহশীলদার) নিযুক্ত করি, আর সে একটি সূঁচ পরিমান বা তার চাইতেও স্বল্প মাল আমাদের নিকট গোপন করে, তাই আত্নসাত বলে গণ্য হবে এবং তা নিয়েই কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে। রাবী বলেন, তখন একজন কৃষ্ণকায় আনসারী (সাহাবী) তাঁর দিকে অগ্রসর হলেন আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার দায়িত্বভার আপনি বুঝে নিন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ (কঠিন কথা) বলতে শুনেছি। তখন তিনি বললেনঃ আমি এখনও বলছি, তোমাদের মধ্যকার যাকেই আমি কর্মচারী নিযুক্ত করি আর সে যেন অল্প বিস্তর যা-ই উসূল করে তা এনে হাযির করে, তারপর তাকে যাই দেয়া হয় তাই গ্রহণ করে এবং যা থেকে বারণ করা হয় তা থেকে বিরত থাকে (তার জন্য এটাই উত্তম)।
৪৫৯২. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইসমাঈল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৪৫৯৩. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আদী ইবনু আমীর আল-কিন্দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুরূপ বলতে শুনেছি।
পরিচ্ছেদঃ ৮. পাপের কাজ ছাড়া অন্য সব ব্যাপারে শাসকের আনুগত্য ওয়াজিব। পাপের কাজে আনুগত্য হারাম
৪৫৯৪. যুহায়র ইবনু হারব ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বানীঃ) হে ঈমাদারগণ! আল্লাহ ও রাসুল এবং তোমাদের মধ্যকার শাসকের আনুগত্য করবে” আয়াতখানা আবদুল্লাহ ইবনু হুযায়ফা ইবনু কায়েস ইবনু আদী সাহমী (রাঃ) এর শানে নাযিল হয়েছে। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একটি সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেছিলেন। ইয়ালা ইবনু মুসলিম, সাঈদ ইবনু জুবায়রের সুত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে এ হাদীস খানা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন।
৪৫৯৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহর অবাধ্যতা করলো। যে ব্যক্তি আমীরের (শাসকের) আনুগত্য করে সে আমারই আনুগত্য করলো আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো।
৪৫৯৬. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি "যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো" অংশটুকু উল্লেখ করেননি।
৪৫৯৭. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি। বলেন যে আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো। আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের আনুগত্য করলো সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো।
৪৫৯৮. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ...... অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
৪৫৯৯. আবূ কামিল জাহদারী উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রাবীগণের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৪৬০০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবন মুনাব্বিহ এর মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬০১. আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে এ হাদীসে 'আমার আমীর' শব্দ স্থলে শুধু আমীর শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হাম্মাম (রহঃ) এর সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে।
৪৬০২. সাঈদ ইবনু মনসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি অবশ্যই আমীরের কথা শুনবে এবং মানবে (পূর্ণ আনুগত্য করবে) তোমার সংকট কালে ও সাচ্ছন্দ্যের সময়, অনুরাগ ও বিরাগে এবং যখন তোমার উপর অন্যকে অগ্নাধিকার দেয়া হচ্ছে তখনও।
৪৬০৩. বাকর ইবনু আবূ শায়রা ও আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ'আরী ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পরম বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন। আমি যেন (আমীরের নির্দেশ) শুনি ও মানি যদি আমীর হাত পা কাটা গোলামও হয়।
৪৬০৪. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) বর্ণিত রেওয়ায়েতে আছে "হাত-পা কাটা কাফ্রী গোলামও যদি আমীর হয়।"
৪৬০৫. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবু ইমরান সুত্রে উক্ত সনদে (যরূপ ইবন ইদরীস বলেছেন) বর্ণিত হাদীসে আছে “হাত পা কাটা গোলাম”।
৪৬০৬. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার দাদী থেকে শুনেছি, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিদায় হজ্জের ভাষণদানকালে তাকে বলতে শুনেছেনঃ "যদি তোমাদের উপর একজন গোলামকেও কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালনা করে, তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মানবে”।
৪৬০৭. ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে “কাফ্রী গোলাম” শব্দটি আছে।
৪৬০৮. শু'বা (রহঃ) থেকে ... আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বার বর্ণনায় আছে “হাত পা কাটা হাবশী গোলাম”।
৪৬০৯. আবদুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) বর্ণিত রেওয়াতে "হাত-পা কাটা হাবশী" শব্দদ্বয়ের উল্লেখ নেই। তাতে বর্ধিত বর্ণনা এতটুকু আছে। তিনি (বর্ণনাকারিনী ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়নের দাদী) মিনায় ও আরাফাতে “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ বলতে শুনেছেন।
৪৬১০. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন এর দাদী উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী (ইয়াহইয়া ইবনুু হুসাইন) বলেন যে, আমি তাকে বলতে শুনেছি- আমি বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জ আদায় করি। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন অনেক কথাই বলেছিলেন। এরপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, যদি তোমাদের উপর কোন হাত পা কাটা গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয় (ইয়াহইয়া ইবনু হুসাইন বলেন) আমার মনে পড়ে তিনি (দাদী আরও) বলেছেন- কালো (অর্থাৎ কৃষ্ণকায় হাবশী গোলাম) আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালিত করে তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মানবে। (আনুগত্য করবে)।
৪৬১১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হচ্ছে তার প্রতিটি প্রিয় ও অপ্রিয় ব্যাপারে আনুগত্য করা যাবৎ না তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ করা হয়। যদি আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ করা হয় তাতে আনুগত্য (করার বিধান) নেই।
৪৬১২. যুহায়র ইবনু হারব, এবং মুহাম্মাদ ইবন মুসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৬১৩. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং এক ব্যক্তিকে তার আমীর নিযুক্ত করে দেন। সে একটা অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জলিত করলো এবং তাদেরকে তাতে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ দিল। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলো এবং অপর একদল বললো, আমরা (ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তো) আগুন থেকেই আত্নরক্ষা করেছি। (সূতরাং আগুনে ঝাপ দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা) (যথা সময়ে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে সে প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো। তখন তিনি যারা আগুনে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয়েছিল তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তখন তোমরা যদি সত্যি সত্যি আগুনে ঝাঁপ দিতে তবে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাতেই অবস্থান করতে। অপরদলকে লক্ষ্য করে তিনি উত্তম কথা বললেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবলই সৎ (শরী'আত সম্মত) কাজে।
৪৬১৪. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হাবর এবং আবূ সাঈদ আশাজ (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক অভিযানে একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং এক আনসারীকে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাদেরকে তার কথা শুনতে ও আনুগত্য করতে আদেশ করলেন। তারপর কোন ব্যাপারে তারা তাকে রাগিয়ে তুলল। সে তখন বললো, আমার জন্য কাঠ (কুড়িয়ে এনে) একত্রিত করো। তারা তা করলো। এরপর সে বললো, আগুন প্রজ্জ্বলিত কর। তখন তারা আগুন প্রজ্জ্বলিত করল তারপর সে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার কথা শুনতে এবং আমার আনুগত্য করতে নির্দেশ দেননি? তারা বললো, জী হ্যাঁ।
তখন সে বললো, তাহলে তোমরা এবারও এ আগুনে ঢুকে পড়। তখন তারা পরস্পরে পরস্পরের দিকে তাকাতে শুরু করলো। তারপর তারা জবাব দিলো- আমরাতো এ আগুন থেকে বাঁচাবার জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরণ নিয়েছি। তারা আগুনে ঝাপ দিলেন না। তার ক্রোধ প্রশমিত হলো এবং আগুন নিভিয়ে দেয়া হলো।
তারপর যখন তারা ফিরে এলো এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রসঙ্গটি বর্ণনা করলো তখন তিনি বললেনঃ যদি তারা তখন আগুনে ঝাঁপ দিতো, তা হলে আর বেরোতে পারতো না। আনুগত্য কেবল পূণ্য (শরী'আত সম্মত) কাজে।
৪৬১৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আ'মাশ (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৬১৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়'আত হলাম এ মর্মে যে, আমরা শুনবো ও মানবো, সংকটের সময় ও সাচ্ছন্দের সময়, অনুরাগে ও বিরাগে এবং আমাদের উপর অন্যদের প্রধান্য দিলেও। আর এ মর্মে যে, আমরা যোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্ব বরণ করে নিতে কোনরূপ কোন্দল করবো না। আর এ মর্মে যে, আমরা যেখানেই থাকবো হক কথা বলব। আল্লাহর ব্যাপারে কোন ভৎসনাকারীর ভৎসনাকে ভয় করবো না।
৪৬১৭. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উবাদা ইবনু ওয়ালীদের হাদীসখানা অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬১৮. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়আত হই। এরপর ইবনু ইদ্রীস-এর হাদীসে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৬১৯. আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওহাব ইবনু মুসলিম (রহঃ) ... জুনাদা ইবনু আবূ উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, আমরা উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর খেদমতে গেলাম। তখন তিনি রোগগ্রস্ত। আমরা আরয করলাম, আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আমাদেরকে এমন কোন হাদীস বলুন- যদ্দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে উপকৃত করবেন; যা আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে শুনেছেন।
তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা বায়আত হলাম। তিনি তখন আমাদেরকে যে শপথ (বায়আত) গ্রহণ করান তার মধ্যে ছিল- আমরা শুনবো ও মানবো, আমাদের অনুরাগে ও বিরাগে, আমাদের সংকটে ও সাচ্ছন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রধান্য দিলেও এবং যোগ্যপাত্রের সাথে আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না। তিনি বলেন- যাবৎ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. শাসক যখন আল্লাহ্ ভীতি ও ন্যায়ের আদেশ দেন তখন তার জন্য প্রতিদান রয়েছে
৪৬২০. ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম (শাসক) ঢাল স্বরূপ। তার নেতৃতে যুদ্ধ করা হয় এবং দুশমনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওযা যায় সে যদি তাকওয়া (বা আল্লাহ ভীতি) ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনা করে, তবে তার জন্য রয়েছে প্রতিদান। আর যদি (শাসনকার্যে) এর অন্যথা করেন তবে তা তার উপর বার্তাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১০. বায়'আত গ্রহনকৃত খলীফা পরম্পরায় তাদের বায়'আতের (আনুগত্যের) শপথ অবশ্য পালনীয়
৪৬২১. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হাসেম (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে পাঁচ বছর অবস্থান করেছি। আমি তার কাছে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনি ইসরাঈলদের পরিচালনা (রাজত্ব) করতেন নাবীগণ। তাদের মধ্যকার একজন নাবী মৃত্যুবরণ করলে অপর একজন নাবী তাঁর স্থলালাভিষিক্ত হতেন। আমার পরে আর কোন নাবী নেই বরং খলীফাগণ হবেন এবং তারা সংখ্যায় প্রচুর হবেন। তখন সাহাবীগণ বললেনঃ তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ যার হাতে প্রথম বায়ঁআত (আনুগত্যের শপথ) করবে, তারই আনুগত্য করবে এবং তাদেরকে তাঁদের হক (অধিকার) প্রদান করবে, আর আল্লাহ্ তা'আলা তাদের কর্তৃত্তাধীনে প্রদত্ত ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
৪৬২২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা এবং আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী (রহঃ) ... হাসান ইবনু ফুরাতের পিতা (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৬২৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ সাঈদ আশাজ্জ, আবূ কুরাইব, ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আলী ইবনু খাশরাম ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরে স্বজনপ্রীতি ও তোমাদের অপছন্দীয় অনেক ঘটনাই ঘটবে। তখন তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমাদের মধ্যকার যারা তা পাবে তাঁদের ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব তোমরা পালন করে যাবে, আর তোমাদের প্রাপ্যের (হকের) জন্য তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে।
৪৬২৪. যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আবদে রাব্বিল কাবা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একদা) মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) কা’বার ছায়ায় বসেছিলেন। লোকজন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরেছিল। আমি তাদের নিকট গেলাম এবং তার পাশেই বসে পড়লাম। তখন তিনি বললেন, কোন সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। আমরা একটি মনযিলে অবতরণ করলাম। আমাদের মধ্যকার কেউ তখন তার তাবু ঠিকঠাক করছিল, কেউ তীর ছুড়ছিল, কেউ তার পশুপাল দেখাশুনা করছিল। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নকীব আওয়ায দিল সালাত (এর জামা'আত) প্রস্তুত! তখন আমরা গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে সমবেত হলাম।
তিনি বললেন, আমার এমন কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিবাহিত হননি যার উপর এ দায়িত্ব বর্তায়নি যে, তিনি তাদের জন্য যে মঙ্গলজনক ব্যাপার জানতে পেরেছেন তা উম্মাতদেরকে বলে দেননি এবং তিনি তার জন্য যে অনিষ্টকর ব্যাপার জানতে পেরেছেন সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করেননি। আর তোমাদের এই উম্মাত (উম্মাতে মুহাম্মদ) এর প্রথম অংশে তার মঙ্গল নিহীত এবং এর শেষ অংশ অচিরেই নানাবিধ পরীক্ষা ও বিপর্যয়ের এবং এমন সব ব্যাপারে সম্মুর্খীন হবে, যা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় হবে। এমন সব বিপর্যয় একাধিক্রমে আসতে থাকবে যে, একটি অপরটিকে লঘুরত প্রতিপন্ন করবে।
একটি বিপর্যয় আসবে তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে- এটা আমার জন্য প্রাণ হরণকারী, তারপর যখন তা দূর হয়ে অপর বিপর্যয়টি আসবে তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে (প্রাণান্তর তো হচ্ছে) এটা, এটা। সুতরাং, যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে দুরে থাকতে (রক্ষা পেতে) চায় এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়- তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহর ও আখিরাতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সে যেন মানুষের সাথে এমনি আচরণ করে যে আচরণ সে তার নিজের জন্য পছন্দ করে।
আর যে ব্যক্তি কোন ইমাম (বা নেতা) এর হাতে বায়আত হয় (আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে) তার হাতে হাত দিয়ে এবং অন্তরে সে ইচ্ছা পোষণ করে তবে সে যেন সাধ্যানুসারে তার আনুগত্য করে যায়। তারপর যদি অপর কেউ তার সাথে (নের্তৃত্ব লাভের অভিলাষে) কোন্দলে প্রবৃত্ত হয় তবে ঐ পরবর্তী জনের গর্দান উড়িয়ে দেবে।
(রাবী বলেন) তখন আমি তার নিকটে ঘেঁষলাম এবং তাকে বললাম, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি সত্যই আপনি (নিজ কানে) কি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছেন? তখন তিনি তার দু'কান ও অন্তঃকরণের দিকে দু'হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ আমার দু'কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তকরণ তা সংরক্ষণ করেছে।
তখন আমি তাকে লক্ষ্য করে বললাম, ঐ যে আপনার চাচাতো ভাই মুয়াবিয়া (রাঃ) তিনি আমাদেরকে আদেশ দেন যেন আমরা আমাদের পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করি আর নিজেদের মধ্যে পরস্পরে হানাহানি করি অথচ মহান আল্লাহ বলেছেনঃ হে ঈমানদারগণ! ব্যবসা সূত্রে পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ছাড়া তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, এবং তোমরা পরস্পরে হানাহানি করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল।
রাবী বলেন, তখন তিনি কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলেন। তারপর বললেন, আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারসমূহে তুমি তার আনুগত্য করবে এবং আল্লাহর অবাধ্যতার ব্যাপারসমূহে তার অবাধ্যতা করবে।
৪৬২৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা ইবনু নুমায়র,আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও আবূ কুরাইব (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৬২৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু আবদি রাব্বিল কা’বা সায়িদী (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদল লোককে কাবার নিকট দেখলাম। এর পরবর্তীতে আ'মাশ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১. শাসকের অত্যাচার অবিচার ও অন্যায় পক্ষপাতিত্বের সময় ধৈর্যধারন
৪৬২৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উসায়দ ইবনু হুযায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক আনসার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করলো এবং বললো আপনি ওমুককে যেভাবে কর্মচারী নিযুক্ত করেছেন, সেভাবে আমাকেও কি কর্মচারী নিয়োগ করুন না! তখন তিনি বললেন, আমার পরে তোমরা অনেক পক্ষপাতিত্ব দেখবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে যাবৎ না তোমরা হাওযে (কাওসারে) আমার সাথে মিলিত হও।
৪৬২৮. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) ... উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক আনসার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করল। এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হাদীসখানা উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকেও উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একান্তে মিলিত হন" উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রাপ্য অধিকার না দিলেও শাসকের অনুগত থাকা
৪৬২৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ওয়াইল হাযরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালামা ইবনু ইয়াযিদ আল জু'ফী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ মর্মে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর নবী! যদি আমাদের উপর এমন শাসকেরা ক্ষমতাবান হয় যে, তারা তাদের হক তো আমাদের কাছে দাবী করে কিন্তু আমাদের হক তারা দেয়না। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে কি করতে বলেন? তিনি তার উত্তর এড়িয়ে গেলেন।
তিনি আবার তাকে প্রশ্ন করলেন, আর তিনি এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আশআস ইবন কায়েস (রাঃ) তাকে (সালামাকে) টান দিলেন এবং বললেন, তোমরা শুনবে এবং মানবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।
৪৬৩০. আবূ বাকর আবূ শায়বা (রহঃ) ... সিমাক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেছেন, আশআছ ইবন কায়স তাকে টান দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তোমরা আনুগত্য করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. ফিতনাকালে (দাঙ্গা ও দুর্যোগ অবস্থায়) মুসলমানদের জামা'আত আঁকড়ে থাকা অপরিহার্য। আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করা ও দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিষিদ্ধ
৪৬৩১. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ ইদরীস খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কল্যাণের বিষয়ে প্রশ্ন করতো আর আমি তাঁর নিকট প্রশ্ন করতাম অকল্যাণ সম্পর্কে এই ভয়ে পাছে না তা আমাকে পেয়ে বসে। তাই আমি একদা প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও অমঙ্গলের মধ্যে। তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য এই কল্যাণ প্রদান করলেন। এ মঙ্গলের পরও কি কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর আমি বললাম, ঐ অমঙ্গলের পর কি আবার মঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তাতে কলুষ আছে। আমি বললাম, কি সে কলুষ? তিনি বললেনঃ তখন এমন একদললোকের উদ্ভব হবে যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হেদায়েতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হেদায়েত ও পথের দিশা খুজবে। তাদের মধ্যে ভাল মন্দ উভয়টাই তুমি দেখবে।
তখন আমি বললাম, এ মঙ্গলের পর কি কোন মঙ্গল আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জাহান্নামের দরজার দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তাদেরকে তারা তাতে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাদের পরিচয় ব্যক্ত করুন। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাদের বর্ণ (বা ধরন-ধারণ) হবে আমাদের মতো এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুর্খীন হই তবে আমাদেরকে আপনি কি করতে বলেন? তিনি বললেন, তোমরা মুসলমানদের জামা'আত ও তাদের ইমামকে আকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোন জামায়াত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে সব ফের্কা থেকে তুমি আলাদা থাকবে-যদিও তুমি একটি গাছের গোড়া দাঁত দিয়ে আচঁড়ে থাক এবং এ অবস্হায়ই মৃত্যু তোমার লাগাল পায়।
৪৬৩২. মুহাম্মাদ ইবনু সাহল ইবনু আসকার তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) ... হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা ছিলাম অমঙ্গলের মধ্যে; তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসলেন। আমরা তাতে অবস্থান করছি। এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললাম এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি বললাম, এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি বললাম, তা কিভাবে?
তিনি বললেন, আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে, যারা আমার হেদায়েতে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে না এবং আমার সুন্নাতও তারা অনুসরণ করবে না। তাদের মধ্যে এমন সব লোকের উদ্ভব হবে, যাদের অন্তঃকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের অন্তঃকরণ। রাবী বলেন, তখন আমি বললামঃ তখন আমরা কি করবো ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতীর সম্মুখীন হই? বললেনঃ তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সস্পদ কেড়েও নেয়া হয়, তবুও তুমি আনুগত্য করবে।
৪৬৩৩. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নের্তৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রের দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার থাকেনা) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। সে ব্যক্তি আমার উম্মাতের ভাল মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করেছে মুমিনকেও রেহাই দেয়না এবং যার সাথে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করে না, সে আমার (কেউ) নয় আমিও তার (কেউ) নই।
৪৬৩৪. উবায়দুল্লাহ উমার কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি لاَ يَتَحَاشَ স্থলে لاَ يَتَحَاشَى বলেছেন।
৪৬৩৫. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং মৃত্যুবরণ করলো, সে জাহেলিয়াতে মৃত্যুবরণ করলো। এবং যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃতের পতাকাতলে যুদ্ধ করে গোত্রের টানে ক্রুদ্ধ হয় এবং গোত্র প্রীতির জন্যেই যুদ্ধ করে সে আমার উম্মাত নয়। আর আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি অস্র ধারন করে আমার উম্মাতেরই নেককার ও বদকার সকলের গর্দান কাটে, আর মুমিনকেও রেহাই দেয়না এবং যার সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তার অঙ্গীকারও পালন করে না, সে আমার উম্মাত নয়।
৪৬৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না এবং ইবনু বাশশার ও গায়লান ইবন জারীর (রহঃ) হতে উক্ত সনদে এ হাদীস রেওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু ইবনু মুসান্না তাঁর বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উল্লেখ করেননি। পক্ষান্তরে ইবনু বাশশার তার বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। যা উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
৪৬৩৭. হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কোন ব্যাপার প্রত্যক্ষ করে, যা সে অপছন্দ করে তবে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে এক বিঘত (কিঞ্চিৎ পরিমাণ) সরে গেল এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল (তার মৃত্যু) জাহেলিয়তের মৃত্যু।
৪৬৩৮. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার আমীরের কোন কার্যকলাপ অপছন্দ করে, তার উচিত ধৈর্যধারণ করা। কেননা এমন কেউই সুলতান থেকে (শাসকের আনুগত্য) থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিঘৎ পরিমাণ সরে যাবে এবং তারপর যে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, আর তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যুই হবে।
৪৬৩৯. হুরায়ম ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... জুনদব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্র প্রীতির দিকে আহবান জানায় এবং গোত্রপ্রীতির কারণেই সাহায্য করে তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু।
৪৬৪০. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বরী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুতী (রাঃ) এর নিকট এলেন যখন হারবা-র দুঃখময় ঘটনা ঘটেছিল। যুগটা ছিল ইয়াযিদ ইবনু মুআবিয়ার যুগ। তখন তিনি (ইবনু মুতী) বললেন, আবূ আবদুর রহমানের জন্য বিছানা পেতে দাও। তখন তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে বসতে আসিনি, এসেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যে হাদীস শুনেছি তা তোমাকে শুনাতে। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে কিয়ামতের দিন দলিল বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হবে। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো যে তার ঘাড়ে আনুগত্যের কোন শিকল নেই তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে।
৪৬৪১. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) থেকে। তিনি ইবন মুতী' এর কাছে গেলেন ...... অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
৪৬৪২. আমর ইবনু আলী (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন জাবালা (রহঃ) ... নাফি' (রহঃ) সুত্রে ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
No comments: