Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায় ৪ (৭০০৭-৭০৫৩)


হাদিস ৭০০৭

ইয়াহইয়া (রহঃ) বুকায়র (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম ও মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতর্কে রত হলেন। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আপনি সেই আদম, যিনি আপন সন্তানদের জান্নাত হতে বের করে দিলেন। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আপনি হচ্ছেন সেই মূসা , যাকে আল্লাহ রিসালত দিয়ে সম্মানিত করলেন এবং যার সাথে বাক্যালাপ করে তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিলেন। আপনি এমন একটি বিষয়ে কেন আমাকে অভিযূক্ত করছেন, আমাকে পয়দা করারও আগে যেটির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গিয়েছে। তাই আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ওপর বিজয়ী হল।

হাদিস ৭০০৮

মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ঈমানদারদের সমবেত করা হবে। তখন তারা বলবে- আমরা যদি আমাদের প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ নিয়ে যেতাম তাহলে তিনি আমাদের এই স্হানটি হতে শাস্তি দান করতেন। তখন তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে আবেদন জানোবে, আপনি মানবকুলের পিতা আদম। মহান আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন আপন হাতে। এবং তার ফেরেশতাদের দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছেন। আর সব জিনিসের নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আপনি আমাদের প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন, তিনি যেন আমাদের শাস্তি না দেন। তখন আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের লক্ষ্য করে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তারপর তিনি তাদের কাছে নিজের সে ভুলের কথা উল্লেখ করবেন, যেটিতে তিনি লিপ্ত হয়েছিলেন।

হাদিস ৭০০৯

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত! তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল)অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, -তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘূমন্ত, অন্তর ঘূমায় না। অনুরুপ অন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনেরও (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না। এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কুপের কাছে রাখলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাথীদের থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয়। এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ন করলেন। তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্হাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরাঈল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না। দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পেলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেনঃ তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পূত্র। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসঁমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরাঈল! জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল। এরপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসা’দ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরাঈল! এটি কি? জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্হানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরাঈল! তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তাঁরা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্হানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেনঃ তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ রয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , যায় নাম আমি স্বরন রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আছেন সপ্তম আসমানে। সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এত উদ্ধে আরোহণ করান হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জাননা। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু, ধনূকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসা র কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আপনার উম্মাত তা আদায়ে সম্মহম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যা। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে থামিয়ে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও নামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দূর্বল। সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরাঈলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবাবেও জিবরাঈল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ -হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দূর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার দরবারে হাযির, বাবার-হাযির। আল্লাহ বললেনঃ আমার বান্দার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা “উম্মুল কিতাব- তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা র কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্হা নিয়ে এসেছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য - সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিস্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন। এবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা , আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অবতরন করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।

হাদিস ৭০১০

ইয়াহইয়া ইরন সুলায়মান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তখন জান্নাতীগণ বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাযির, আপনার কাছে হাযির হতে পেরে আমরা সৌভাগ্যবান। কল্যাণ আপনারই হাতে। আল্লাহ বলবেন, তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ কি? তারা বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না? অথচ আপনি আর কোন সৃষ্টিকে যা দান করেননি, তা আমাদেরকে দান করেছেন। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চাইতেও উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবেনঃ হে প্রতিপালক! এর চাইতে উত্তম বস্তুকোনটি? আল্লাহ বলবেন, তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি নির্ধারিত করলাম। এরপর আমি তোমাদের উপর কখনো অসন্তুষ্টি হবো না।

হাদিস ৭০১১

মুহাম্মাদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আলোচনারত ছিলেন। তখন তার সেখানে একজন গ্রাম্য লোকও উপস্থিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, একজন জান্নাতবাসী অনুমতি প্রার্থনা করবে কৃষিকার্য করার জন্য। আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি যা চাও তা কি পাওনি? সে বলবে, হ্যা, পেয়েছি। তবে আমি কৃষিকাজ করতে পছন্দ করছি। অতি সত্তর ব্যবস্হা করা হবে। এবং বীজ বোনা হবে। তখনই নিমিষে চারা গজাবে, সোজা হয়ে দাড়াবে এবং তাঁ কাটা হবে আর তা পর্যাপ্ত পরিমাণ ভুনাকৃত করা হবে। আল্লাহ তখন বলবেন, হে আদম সন্তান! লও। কারণ, তোমাকে কোন কিছুই ত্বড়িৎ দেবে না। এমন সময় জনৈক বেদূঈন বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ঐ লোকটিকে আপনি কুরাইশী কিংবা আনসারী পাবেন। কেননা, তাঁরা হলেন কৃষিজীবী। আর আমরা কৃষিজীবী নই! এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন।

হাদিস ৭০১২

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কাছে গুনাহ কোলটি সবচেয়ে বড়? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম এটি অবশ্যই বড় গুনাহ। এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তান তোমার সঙ্গে খাবে এই আশংকায় তাকে হত্যা করা। আমি বললাম এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ এরপর তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা।

হাদিস ৭০১৩

হুমায়দী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন বায়তুল্লাহর কাছে একত্রিত হলো দুজন সাকাফী ও একজন কুরাইশী অথবা দু-জন কুরাইশী ও একজন সাকাফী। তাদের পেট চর্বিতে পরিপূর্ণ ছিলো বটে; তবে তাদের হৃদয়ে নিতান্তই স্বল্প অনুধাবন ক্ষমতা ছিল। এরপর তাদের একজন বলে উঠল, তোমাদের অভিপ্রায় কি? আমরা যা বলছি আল্লাহ কি সবই শুনতে পান? দ্বিতীয় ব্যাক্তি বলল, হ্যা শোনেন, যদি আমরা উচ্চস্বরে বলি। আর যদি চুপে চুপে বলি। তবে তা আর শোনেন না। তৃতীয় জন বলল, যদি তিনি উচ্চস্বরে বললে শোনেন, তা হলে অনুচ্চস্বরে বললেও শুনবেন। এরই প্রেক্ষাপটে মহান আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ তোমরা কিছু গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কান, চক্ষু তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না আয়াতের শেয পর্যন্ত। (৪১-২২)।

হাদিস ৭০১৪

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমরা আহলে কিতাবদেরকে তাদের কিতাব সম্পর্কে কিভাবে প্রশ্ন করে থাক? অথচ তোমাদের কাছে মহান আল্লাহর কিতাব বিদ্যমান রয়েছে যা অপরাপর আসমানী কিতাবের তূলনায় আল্লাহ কাছে বেশি প্রিয়, যা তোমরা (অহরহ) পাঠ করছ, যা পুরো খাটি, যেখানে কোন প্রকারের ভেজালের লেশ নেই।

হাদিস ৭০১৫

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হে মুসলিম সমাজ! তোমরা কি করে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা কর? অথচ তোমাদের সে কিতাব যেটি আল্লাহ পাক তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র ওপর অবতীর্ন করেছেন, তা আল্লাহর কিতাবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা সময়োপযোগী। যা সনাতন ও নির্ভেজাল। অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আহলে কিতাকাণ আল্লাহর কিতাবসমূহকে রদবদল করেছে এবং , স্বহস্তে লিখে দাবি করছে এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এর দ্বারা তারা তূচ্ছ সুবিধা লুটতে চাচ্ছে। তোমাদের কাছে যে ইল্‌ম বিদ্যমান রয়েছে, তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করতে বাধা দিচ্ছে না? আল্লাহর কসম! তাদের কাউকে তোমাদের ওপর অবতীর্ণ বিষয় সম্পর্কে কখনো জিজ্ঞাসা করতে আমি দেখি না।

হাদিস ৭০১৬

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর বানীঃ-কুরআনের কারণে আপনার জিহবা নাড়াচাড়া করবেন না--, এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেনঃ ওহী অবতীর্ন হওয়া শুরু হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই কষ্টসাধ্য অবস্হার সম্মুখীন হতেন, যে কারণে তিনি ঠোট দুটি নাড়াচাড়া করতেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেনঃ আমি তোমাকে বোঝানোর জন্য ঠোটদুটি সেভাবে নাড়ছি, যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেড়েছিলেন। এহাপর বর্ণনাকারী সাঈদ (রহঃ) বললেনঃ আমিও ঠোটদুটি তেমনি নেড়ে দেখাছি, যেমনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) নেড়ে আমাকে দেখিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ঠোট দুটি নাড়লেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ অবস্হা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা-আলা অবতীর্ন করলেনঃ তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা এর সাথে সঞ্চালন করো না, এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই (৭৫-১৬, ১৭)। তিনি বলেনঃ ‘জামআহ’-এর অর্থ আপনার বক্ষে তা এভাবে সংরক্ষিত করা, যেন পরে তা পড়তে সক্ষম হল। সুৎরাং আমি যখন তা পাঠ করি, তুমি সে পাঠের অনুসরণ কর (৭৫- ১৮ )। এর অর্থ হচ্ছেঃ আপনি তা শ্রবণ করুন এবং চুপ থাকুন। এরপর আপনি কুরআন পাঠ করবেন সে দায়িত্ব আমাদের উপর। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আসতেন, তিনি তখন একাগ্রচিত্তে তা শ্রবণ করতেন। জিবরাইল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চলে গেলে তিনি ঠিক তেমনিভাবে পাঠ করতেন, যেমনি তাকে পাঠ করিয়েছেন।

 হাদিস ৭০১৭

উমর ইবনু যুরারা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মহান আল্লাহর বানীঃ সালাত (নামায/নামাজ) স্বর উচু করবে না এবং অতিশয় ক্ষীনও করবে না- (১৭-১১০)-এ প্রসঙ্গে বলেনঃ এ নির্দেশ যখন নাযিল হল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় গোপনে অবস্হান করতেন। অথচ তিনি যখন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, কুরআন উচ্চস্বরে পড়তেন। মুশরিকরা এ কুরআন শুনলে কুরআন, কুরআন-এর অবতীর্ণকারী এবং বাহক সবাইকে গালমন্দ করত। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলে দিলেন, আপনার সালাত (নামায/নামাজ)কে এমন উচ্চস্বরে করবেন না অর্থাৎ আপনার কিরাআতকে। তাহলে মুশরিকরা শুনতে পেয়ে কুরআন সম্পর্কে গালমন্দ করবে। আর এ কুরআন আপনার -সাহাবীদের কাছে এত ক্ষীন স্বরেও পড়বেন না, যাতে আপনার কিরাআত তারা শুনতে না পায়। বরং এ দুয়ের মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করুন।

হাদিস ৭০১৮

উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ আয়াতটি আপনি আপনার সালাত (নামায/নামাজ)কে উচ্চস্বরেও পড়বেন না এবং ক্ষীনও করবেন না” দোয়া সম্পর্কে অবতীর্ন হয়েছে।

হাদিস ৭০১৯

ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে-বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ভাল আওয়াজে কুরআন পড়ে না, সে আমাদের নয়। আবূ- হুরায়রা (রাঃ) ছাড়া অন্যরা উচ্চসরে কুরআন পড়ে না, কথাটুকু বৃদ্ধি করেছেন।

হাদিস ৭০২০

কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু টি বিষয় ছাড়া ঈর্ঘা করা যায় না। -এক ব্যাক্তি হচ্ছে, আল্লাহ যাকে কুরআন দান করেছেন, আর সে দিবারাত্র তা তিলাওয়াত করে। অপর ব্যাক্তি বলে, এ লোকটিকে যা দেওয়া হয়েছে আমাকে যদি অনুরুপ দেওয়া হতো, তা হলে আমিও অনুরুপ করতাম, সে যেরুপ করছে। আরেক ব্যাক্তি হচ্ছে সে, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন। ফলে সে তা যখাযথভাবে ব্যয় করছে। তখন অপর ব্যাক্তি বলে- একে যা দেওয়া হয়েছে, আমাকেও যদি অনুরুপ দেওয়া হতো, আমিও তাই করতাম, সে যা করেছে।

হাদিস ৭০২১

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সালিম তার পিতা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ, একমাত্র দুটি বিষয়েই ঈর্ষা করা যায়। একজন হচ্ছে, যাকে আল্লাহ কুরআন দান করেহেন, আর সে তা রাতদিন তিলাওয়াত করে, আরেকজন হচ্ছে, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন আর সে রাতদিন তা ব্যায় করে। আমি সুফয়ান (রহঃ)-কে একাধিকবার শুনেছি কিন্তু তাকে ‘আলখামার’ উল্লেখ করতে শুনিনি। অর্থাৎ এটি তার বিরুদ্ধ হাদীসগুলোর অন্যতম।

হাদিস ৭০২২

ফাযল ইবনু ইয়াকুব (রহঃ) মুগীরা (রাঃ) বলেন। আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আমাদের প্রতিপালকের বার্তা সম্পর্কে অবহিত করেছেন যে আমাদের মধ্য থেকে যাকে হত্যা (শহীদ) করা হবে, সে জান্নাতে চলে যাবে।

হাদিস ৭০২৩

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাকে যে বলবে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ওহীর) কিছু জিনিস গোপন করেছেন। মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন আয়িশা (রাঃ) বলেছেনঃ, যে ব্যাক্তি তোমার কাছে বলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর কোন কিছু গোপন করেছেন, তাকে তুমি সত্যবাদী মনে করো না। মহান আল্লাহ বলেনঃ হে রাসুল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা অবতীর্ন হয়েছে, তা প্রচার কর (৫-৬৭)।

হাদিস ৭০২৪

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি আরয করল হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে কোন গুনাহটি সব চাইতে বড়? তিনি বললেনঃ আল্লাহর বিপরীত কাউকে আহবান করা অথচ তিনই (আল্লাহ) তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বলল, এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ এর পর তোমার সঙ্গে আহার করবে এই ভয়ে (তোমার) সন্তানকে হত্যা করা। সে বলল, এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ এরপর তোমাদের প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যাভিচার করা। এরই সমর্থনে আল্লাহ অবতীর্ন করলেন এবং তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা হারাম করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্য করে না এবং ব্যাভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে (২৫-৬৮)।

হাদিস ৭০২৫

আবদান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতীত উম্মাতদের তুলনায় তোমাদের অবস্হানকালের উদাহরণ হচ্ছে, আসরের সালাত (নামায/নামাজ) এবং সূর্যাস্তের মাঝখানের সময়। তাওরাতধারীদেরকে তাওরাত প্রদান করা হলে তারা সে অনুযায়ী আমল করল। এভাবে দুপূর হয়ে গেল এবং তারাও দূর্বল হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেওয়া হল। তারপর ইনজীলের ধারকদেরকে ইনজীল দেওয়া হলে তারা সে অনুযায়ী আমল করল। এমনিতে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা হল। তারাও ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তারপর তাদেরকেও এক কীরাত করে দেওয়া হল। পরিশেষে তোমাদেরকে কুরআন প্রদান করা হয়। তোমরা তদনূযায়ী আমল করেছ। এমনিতে সূর্যাস্ত হয়ে গেল। আর তোমাদেরকে দেওয়া হল দুকীরাত করে। ফলে কিতাবীগণ বললঃ এরা তো আমাদের তুলনায় কাজ করল কম, অথচ পারিশ্রমিক পেল বেশি। এতে আল্লাহ বললেনঃ তোমাদের হক থেকে তোমাদের কিছু জুলম করা হয়েছে কি? এরা বলবে, না। আল্লাহ বললেনঃ এটই আমার অনুগ্রহ- তা আমি যাকে চাই তাকে প্রদান করে থাকি।

হাদিস ৭০২৬

সুলায়মান (রহঃ) ও আববাদ ইবনু ইয়াকুব আসা’দী (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যাক্তি (সাহাবী) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ যথাসময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা, মাতাপিতার সাথে সৎবহার করা। অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।

হাদিস ৭০২৭

আবূ নূমান (রহঃ) আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাচে কিছু মাল এল। এর থেকে তিনি এক দলকে দিলেন। আর একটি দলকে দিলেন না। অতঃপর তার কাছে এ খবর পৌছল যে, যারা পেলো না তারা অন্তুষ্ট হয়েছে। এতে তিনি বললেনঃ আমি একজনকে দিয়ে আবার আরেক জনকে দেই না। পক্ষান্তরে যাকে আমি দেই না, সেই আমার কাছে তূলনামূলক বেশি প্রিয়। কিছু সম্প্রদায়কে আমি দিয়ে থাকি, যাদের অন্তরে রয়েছে অস্হিরতা ও দ্বন্দ। আর কিছু সম্প্রদায়কে আমি মাল না দিয়ে তাদের অন্তরে আল্লাহ যে স্বচ্ছতা ও কল্যাণ রেখেছেন তার উপর সোপর্দ করি। এদেরই একজন হলেন, আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ)। আমর (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এই উক্তিটির বিনিময়ে আমি একপাল লাল বর্নের উটের মালিক হওয়াও পছন্দ করি না।

হাদিস ৭০২৮

মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমার বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী হয় আমি তখন তার দিকে এক হাত পরিমাণ নিকটবর্তী হই। আর সে যখন আমায় দিকে এক হাত পরিমাণ নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে দু-হাত নিকটবর্তী হই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।

হাদিস ৭০২৯

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি একাধিকবার বর্ননা করেছেন যে, (আল্লাহ বলেন) আমার বান্দা যদি আমার কাছে এক বিঘত পরিমাণ এগিয়ে আসে-আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই। আর সে যদি আমার কাছে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে মাসে, আমি তায় দিকে দুই হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই। বর্ণনাকারী এখানে ‘বায়া’ কিংবা ‘বুয়া’ বলেছেন। মুতামির (রহঃ) বলেনঃ আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, তিনি আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ননা করেছেন।

হাদিস ৭০৩০

আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের প্রতিপালক থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেনঃ প্রতিটি আমলের কাফফারা রয়েছে, কিন্তু রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই এর প্রতিদান প্রদান করব। রোযা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের চাইতেও অধিক সুগন্ধময়।

হাদিস ৭০৩১

হাফস ইবনু উমর ও খালীফা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালকের কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ বলেনঃ কোন বান্দার জন্য এ দাবি করা সঙ্গত নয় যে, সে ইউনুস ইবনু মাত্তার চাইতে উত্তম। এখানে ইউনুস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তাঁর পিতার দিকে সম্পর্ক যুক্ত করা হয়েছে।

হাদিস ৭০৩২

আহমদ ইবনু আবূ সুরায়জ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল আল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর উটনীর উপর উপবিষ্ট অবস্থায় সূরা ফাৎহ কিংবা সুরা ফাতহের কিছু অংশ পড়তে দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি তারজীসহ তা পাঠ করলেন। বর্ননাকারী বলেনঃ মুআবিয়া (রহঃ) ইবনুল মুগাফফালের কিরাআত নকল করে পড়ছিলেন। তিনি বললেনঃ যদি তোমাদের কাছে লোকজন ভিড় জমানোর আশংকা না হত, তবে আমিও তারজী করে ঠিক সেভাবে পাঠ করতাম, যেভাবে ইবনুুূল মুগাফফাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এয় কিরাআত নকল করে তারজী সহকারে পাঠ করেছিলেন। তারপর আমি মুআবিয়া (রাঃ)-কে বললাম, তার তারজী কিরুপ ছিল? তিনি বললেনঃ আ, আ, আ, তিনবার।

হাদিস ৭০৩৩

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আহলে কিতাব তাওরাত হিব্রু ভাষায় পাঠ করত, আর মুসলমানদের জন্য আরবী ভাষায় এর ব্যাখা করত। এ প্রেক্ষিতে তিনি বললেনঃ কিতাবধারীদেরকে তোমরা বিশ্বাস করো না আবার তাদেরকে মিথ্যারোপও করো না বরং তোমরা আল্লাহর এ বানিটি (আমরা আল্লাহতে এবং আমাদের ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ন হরেছে তাতে ঈমান এনেছি) বল।

হাদিস ৭০৩৪

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দু-জন ইহুদী নারী-পুরুষকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে আনা হলো। তারা যিনা করেছিল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ইহুদীগণ এ যিনাকারী ও যিনাকারিনাদের সাথে কি আচরণ করে থাক? তারা বলল, আমরা এদেরকে (এক পদ্ধতিতে) মুখ কালো ও লাঞ্ছিত করে থাকি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাওরাত এনে তা তিলাওয়াত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা তাওরাত নিয়ে আসল এবং তাদেরই খুশিমত এক ব্যাক্তিকে ডেকে বলল, হে আওয়ার! তুমি পাঠ কর। সে পাঠ করতে লাগল। পরিশেষে এক স্থানে এসে সে তাতে আপন হাত রেখে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার হাতটি উঠাও। সে হাত উঠাল। হঠাৎ যিনার শাস্তি পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা (রজম)-এর আয়াতটি স্পষ্টত দেখা যাচ্ছিল। তিলাওয়াতকারী বলল, হে মুহাম্মাদ! এদের (দু-জনের) মধ্যখানে শাস্তি পক্ষান্তরে রজমই, কিন্তু আমরা পরস্পর তা গোপন করছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলে তাদেরকে রজমই করা হয়। বর্ণনাকারী বলেনঃ যিনাকারী পূরুষটিকে মেয়ে লোকটির উপর ঝুকে পড়ে তাকে পাথর থেকে রক্ষার চেষ্টা করতে দেখেছি।

হাদিস ৭০৩৫

ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ উচ্চস্বরে মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াতকারী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি যেরুপ সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন, অন্য কিছুর প্রতি সেরুপ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন না।

হাদিস ৭০৩৬

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাকে উরওয়া ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস, উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ), আয়েঁশা (রাঃ)-এর হাদীস সম্পর্কে বলেছেন। তাকে যখন অপবাদকারিগণ অপবাদ দিয়েছিল। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ বর্ননাকারীদের এক একজন সে সম্পর্কে আমার কাছে হাদীসের এক এক অংশে বর্ণনা করেছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এর দরুন আমি আমার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। অথচ আমি তখন জানি, আমি নির্দোষ পবিত্র এবং আল্লাহ আমাকে নির্দোষ বলে প্রমান করবেন। আল্লাহর কসম! কিন্তু আমার মর্যাদা আমার কাছে এরুপ উপযুক্ত ছিল না যে, এ ব্যাপারে ওহীই নাযিল করবেন। যা তিলাওয়াত করা হবে আমার মর্যাদা আমার কাছে তার চাইতে তুচ্ছ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা আমার বিষয়ে এমন কোন কালাম করবেন যা তিলাওয়াত করা হবে। এ প্রসঙ্গে মহামহিম আল্লাহ অবতীর্ন করলেনঃ যারা এমন জঘন্য অপবাদ এনেছে পূর্ন দশটি আয়াত।

 হাদিস ৭০৩৭

আবূ নূআয়ম (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এশার সালাত (নামায/নামাজ) ‘অত্তিনে অযযাইতুন’, পড়তে শুনেছি। তাঁর চেয়ে সুন্দর স্বর কিংবা তাঁর চেয়ে সুন্দর কিরাআত আর কারো থেকে আমি শুনিনি।

হাদিস ৭০৩৮

হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় গোপনে থাকতেন। আর তিনি উচ্চস্বরে (তিলাওয়াত) করতেন। যখনা তা মুশরিকরা শুনল, তারা কুরআন ও এর বাহককে গালমন্দ করল। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিয়ে দিলেন। আপনি আপনার কুরআন উচ্চস্বরেও পড়বেন না এবং খুব চুপে চুপেও পড়বেন না।

হাদিস ৭০৩৯

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবূ সাসাআ (রহঃ)-কে বললেন, আমি তোমাকে লক্ষ্য করছি, তুমি বকরী পাল ও ময়দানকে ভালবাস। সুতরাং তুমি যখন বকরীর পালকিংবা ময়দানে থাকবে- তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উচ্চস্বরে আযান দেবে। কারণ মুয়াজ্জ্বীনের আযানের স্বর যতদূর পৌছাব, ততদুরের জ্বীন, ইনসান, অন্যান্য জিনিস যারাই শুনবে, কিয়ামতের দিন তারা তার সপক্ষে সাক্ষী দেবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

হাদিস ৭০৪০

কাবীসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরআন পাঠ করতেন তখন তার মাথা মুবারক থাকত আমার কোলে অথচ আমি তখন ঋতুমতী অবস্হায় ছিলাম।

হাদিস ৭০৪১

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রহঃ) ও আবদুর রহমান ইবনু আবদুল কারী (রহঃ) থেকে বর্নিত। তাঁরা উভয়ে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় আমি হিশাম ইবনু হাকীম (রাঃ)-কে (সালাত (নামায/নামাজ)) সূরায়ে ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনেছি। আমি একাগ্রচিত্তে তাঁর তিলাওয়াত শুনছিলাম। তিনি এমন অনেকগুলো শব্দ তিলাওয়াত করছিলেন, যেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিলাওয়াত করাননি। এতে আমি তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্হায় ধরে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সালাম ফেরানো পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধরলাম। তারপর আমি তার চাঁদর দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম, আমি তোমাকে যে সূরা পাঠ করতে শুনলাম, তা তোমাকে কে শিখিয়েছে? তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি বললাম, তুমি মিথ্যে বলেছ, তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, তবে তোমার কিরাআতের মত নয়। তারপর আমি তাঁকে টেনে টেনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে চললাম। এরপর আমি বললাম, আমি শুনলাম একে ভিন্ন শব্দ দ্বারা সূরা ফুরকান পাঠ করতে, যা আপনি আমাকে শিখাননি। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ আচ্ছা, তাকে ছেড়ে দাও। তুমি পড়, হে হিশাম! এরপর আমি যেরুপ কিরাআত শুনেছিলাম তিনি সেরুপ কিরাআত পড়লেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -বললেনঃ কুরআন অনুরুপই অবতীর্ন হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উমর! তুমি পাঠ কর। আনি সেভাবে পড়লাম যেভাবে আমাকে শিখানো হয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরুপই অবতীর্ণ হয়েছে। এ কুরআন সাত হরফের (পাঠ) নাযিল করা হয়েছে। অতএব যেভাবে সহজ হয় তা সেভাবে তোমরা পাঠ কর।

হাদিস ৭০৪২

আবূ মামার (রহঃ) ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমলকারীরা কিসে আমল করছে? তিনি বললেনঃ যাকে যে কাজ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ করা সহজ করে দেওয়া হয়।

হাদিস ৭০৪৩

মুহাস্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার কোন জানাযায় ছিলেন। তারপর তিনি একটি কাঠের ইকরা হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি ঘোঁচাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার ঠিকানা জাহান্নাম কিংবা জান্নাতে নির্ধারিত করা হয়নি। সাহাবীগণ বললেনঃ তা হলে আমরা কি এর উপর ভরসা করব না? তিনি বললেনঃ তোমরা আমল করতে থাক। প্রত্যেককেই সহজ করে দেয়া হয়। (অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে ।

হাদিস ৭০৪৪

মুহাম্মাদ ইবনু আবূ গালিব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা আলা সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার পূর্বে একটি লেখা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তা হলো “আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত অগ্রগামী রয়েছে-- এটি তাঁরই নিকটে আরশের ওপর লিপিবদ্ধ আছে।

হাদিস ৭০৪৫

আবদুল্লাহ ইবনু আবদা ওয়াহহাব (রহঃ) যাহদাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জারমের এ গোত্রটির সাথে আশআরী গোত্রের গভীর ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ব ছিল। এক সময় আমরা আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তার কাছে খাবার আনা হল। এতে মুরগীর গোশতও ছিল। এ সময় তার নিকট বনী তায়মুলাহর এক ব্যাক্তি ছিল। সে (দেখতে) যেন আযাদকৃত গোলাম (অনারব)। তাকেও আবূ মূসা (রাঃ) খেতে ডাকলেন। সে বলল, আমি এ মুরগীকে এমন কিছু জিনিস খেতে দেখেছি, যার ফলে এটি খেতে আমি ঘৃণা করি। এই জন্য কসম করেছি, আমি, তা আর খাব না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তুমি এদিকে এসো, এ সম্পর্কে আমি তোমাকে একটি হাদীস শোনাব। আমি এক সময় আশ আরী গোত্রের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের বাহন দেব না। আর তোমাদের দেওয়ার মত আমার কাছে বাহন নেই। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গনীমতের কিছু উট আনা হলে তিনি আমাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং বললেনঃ আশ’আরীদের দলটি কোথায়? তারপর তিনি পাচটি মোটা তাজা ও উত্তম উট আমাদের দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমরা এগুলো নিয়ে ফিরার পথে বলতে লাগলাম, আমরা যে কি করলাম! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কসম করে বললেন- আমাদের বাহন দেবেন না) এবং তাঁর কাছে দেওয়ার মত বাহন নেই। তারপরও তো তিনি আমাদের বাহন দিয়ে দিলেন। হয়ত আমরা তাকে তাঁর কসম সম্পর্কে অজ্ঞাত অবস্থায় পেয়েছিলাম। আল্লাহর কসম! আমরা কখনো সফলকাম হবো না। তাই আমরা তাঁর কাছে আবার গেলাম এবং তা তাকে-বললাম। তিনি বললেনঃ আমিতো মাদের বাধা দেইনি, বরং দিরেছেন আল্লাহ। আল্লাহর কসম! আমি কোন বিষয়ে কসম করি যদি তার বিপরীতে মঙ্গল দেখতে পাই, তবে তা করে নেই এবং (কাফফারা দিয়ে) কসম থেকে বের হয়ে আসি।

হাদিস ৭০৪৬

আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবূ জামরা দূবায়ী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম। তিনি বললেনঃ আবদুল কায়সের প্রতিনিধিদল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমাদের এবং আপনাদের মাঝখানে মুযার গোত্রের মুশরিকদের বসবাস। যদ্দরুন আমরা সম্মানিত মাস (আশহুরে হুরম) ছাড়া আর কোন সময় আপনার কাছে আসতে পারি না। সুতরাং আমাদের সংক্ষিপ্ত কিছু বিষয়ের নির্দেশ দিন, যা মেনে চললে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব এবং আমরা যাদের রেখে এসেছি তাদেরও আহবান জানাতে পারব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের চারটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। আমি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার। আর তোমরা জানো কি, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কাকে বলে? তা হল, সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেয়া, গনীমতের মালের এক , পঞ্চমাংশ দেওয়া। তোমাদের চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি, (তা হলো) লাউয়ের খোল দ্বারা তৈরি পাত্রে, খেজুর গাছের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্রে, আলকাতরা জাতীয় (রাসায়নিক) দ্রব্য দিয়ে প্রলেপ দেওয়া গাত্রে, মাটির সবুজ ঘটিতে তোমরা পান করবে না।

হাদিস ৭০৪৭

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এসব ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন আযাব দেওয়া হবে। তখন তাদেরকে হুকুম করা হবে তোমরা যা তৈরি করেছ তাতে প্রাণ দাও।

হাদিস ৭০৪৮

আবূ নুমান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এসব ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। আর তাদের বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছ, তা জীবিত কর।

হাদিস ৭০৪৯

মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা-আলা ঘোষনা করেছেন। তাদের অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আমার সৃষ্টির সদৃশ সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে? তাহলে তারা একটা শস্যদানা কিংবা যব তৈরি করুক।

হাদিস ৭০৫০

হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ মূসা -আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন তিলাওয়াতকারী ঈমানদারের উদাহরণ উৎরুজ্জার (কমলালেবু) মত। এর স্বাদও উত্তম এবং ঘ্রানও হৃদয়গ্রাহী। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ যেন খেজুর। এটি খেজুর স্বাদ বটে, তবে তার কোন সুঘ্রাণ নেই। কুরআন তিলাওয়াতকারী গুনাহগার ব্যাক্তিটি সুগন্ধি ঘামের তূল্য। এর ঘ্রাণ আছে বটে, তবে স্বাদে তিক্ত। আর যে অতি গুনাহগার হয়ে আবার কুরআনও তিলাওয়াত করে না সে মাকাল ফলের মত। এ ফল স্বাদেও তিক্ত এবং এর কোন সুঘ্রাণও নেই।

হাদিস ৭০৫১

আলী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জ্যোতিষদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ তারা মূলত কিছুই নয়। তারা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কখনো কখনো তারা তো এমন কিছু কথাও বলে ফেলে যা সত্য হয়। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসব কথা সত্য। জ্বীনেরা এসব কথা প্রথম-শোনে, (মনে রেখে) পরে এদের দোসরদের কানে মুরগির মত করকর রবে নিক্ষেপ করে দেয়। এরপর এসব জ্যোতিষী সামান্য সত্যের সাথে শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটায়।

হাদিস ৭০৫২

আবূ নুমান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্বাচল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার (ধনূক) থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেনঃ তাদের আলামত হল মাথা মুণ্ডন।

হাদিস ৭০৫৩

আহমাদ ইবনু আশকাব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি কলেমা (বানী) রয়েছে, যেগুলো দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, উচ্চারণে খুবই সহজ (আমলের) পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। (বানী- দুটি হচ্ছে), সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহান্নাল্লাহিল আযীম- আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।

No comments:

Powered by Blogger.