সহিহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ সিয়াম (রোজা)-২য়
পরিচ্ছেদঃ ১৩. জানাবাত অবস্থায় কারো প্রভাত হলে তার সাওম শুদ্ধ হবে
২৪৬০. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ বকর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে ওয়ায করতে শুনলাম, তিনি তাঁর ওয়াযে বললেন, জানাবাত অবস্থায় কারো ভোর হলে তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হবে না। এরপর এ কথাটি আমি আবদুর রহমান ইবনু হারিস (রাঃ) এর নিকট বর্ণনা করলাম। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করলেন। তাঁরপর আবদুর রহমান চললেন। আমিও তাঁর সাথে সাথে চললাম। আমরা আয়িশা (রাঃ) এবং উম্মু সালামা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। এরপর আবদুর রহমান তাঁদের উভয়কে এ সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের অবস্থায়-- যা স্বপ্নদোষের কারণে হত না--- ভোর করতেন এবং সাওম পালন করতেন।
তারপর আমরা মারওয়ানের নিকট আসলাম এবং আবদুর রহমান তার সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলেন। এরপর মারওয়ান বললেন আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি আবূ হুরায়রার নিকট যাও এবং তার কথাটি রদ করে দাও। এরপর আমি আবূ হুরায়রার নিকট গেলাম। এ সময় আবূ বকর আবদুর রহমানের সাথে ছিলেন। আবদুর রহমান এ নিয়ে আবূ হুরায়রার সঙ্গে আলোচনা করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, তোমার নিকট তাঁরা উভয়েই কি এ কথা বলেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তাঁরা উভয়েই এ কথা বলেছেন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, বস্তুত তাঁরাই সর্বাধিক অবগত।
তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর এ কথাটিকে ফযল ইবনু আব্বাসের প্রতি সম্পর্কিত করে বললেন আমি এ কথাটি ফযলের (ইবনু আব্বাস) থেকে শুনেছিলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনিনি। রাবী বলেন এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ বিষয়ে তাঁর মত পরিবর্তন করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবদুল মালিককে জিজ্জাসা করলাম। তারা রমযানের কথা বলেছে কি? তিনি বললেন হ্যাঁ, অনুরূপই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাত অবস্থায় ভোর করতেন যা স্বপ্নদোষের কারণে হত না (বরং স্ত্রীমিলনের কারণে হত) এরপর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
২৪৬১. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমযান মাসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানাবাত অবস্থায়, যা স্বপ্নদোষের কারণে হত না--- ফজরের সালাতের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
২৪৬২. হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবূ বকর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মারওয়ান তাকে উম্মু সালামা (রাঃ) এর-নিকট পাঠালেন ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য যার জানাবাতের অবস্থায় ভোর হলো, সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে কি? তিনি বললেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানাবাত অবস্থায় ভোর হত যা স্ত্রী সহবাসের কারণে হত, স্বপ্নদোষের কারণে নয়। এরপর তিনি রোযা ভাঙতেন না এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কাযাও করতেন না।
২৪৬৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সহধর্মিনী আয়িশা এবং উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ই বলেন, রমযান মাসে স্বপ্নদোষের কারণে নয় বরং স্ত্রী সহবাসের কারণে জানাবাতের অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভোর হতো, এরপর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
২৪৬৪. ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। এ সময় তিনি দরজার পেছন থেকে কথাগুলো শুনছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! জানাবাতের অবস্থায় আমার ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায়, এমতাবস্থায় আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারি কি? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জানাবাতের অবস্থায় আমারও ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায় আমি তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি।
এরপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো আমাদের মত নন। আল্লাহ তা'আলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার আশা, আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে সর্বাধিক ভয় করি এবং আমি সর্বাধিক অবগত ঐ বিষয় সম্পর্কে, যা থেকে আমার বিরত থাকা আবশ্যক।
২৪৬৫. আহমদ ইবনু উসমান নাওফেলী (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উম্মু সালামা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন জানাবাতের অবস্থায় যার ভোর হয় সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে কি? তিনি বললেন জানাবাতের অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভোর হতো যা স্বপ্নদোষের কারণে হত না--- অতঃপর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. রমযানে দিনে সাওমরত অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা কঠোর হারাম; কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে তবে তার উপর বড় ধরনের কাফফারা ওয়াজিব; চাই সে বিত্তশালী হোক বা বিত্তহীন; তবে বিত্তহীন ব্যক্তির পক্ষে যখন সম্ভব হয়, তখন এ কাফফারা আদায় করতে হবে
২৪৬৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। তিনি বললেন কিসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল আমি রমযানে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেন তোমার কি গোলাম আযাদ করার মত সামর্থ্য রয়েছে? সে বলল না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি ক্রমাগত দুই মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে? সে বলল, না। পূনরায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। তারপর সে বসে গেল।
এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হল। তিনি লোকটিকে বললেন এগুলো সদকা করে দাও। তখন সে বলল, আমার চেয়েও অভাবী লোককে সদকা করে দিব? (মদিনার) দুটি কংকরময় ভূমির মধ্যস্থিত স্থানে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবী পরিবার আর একটিও নেই। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। এমনকি তাঁর সামনের দাঁতগুলো প্রকাশ হয়ে পড়ল। তখন তিনি বললেন, তাহলে যাও, এগুলো তোমার পরিবারকে খেতে দাও।
২৪৬৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম যুহুরী (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু উয়ায়না (রহঃ) এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে بِعَرَقٍ فِيهِ تَمْرٌ এরপর وَهُوَ الزِّنْبِيلُ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে এবং এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাসির কথা উল্লেখ নেই।
২৪৬৮. ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া , মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রমযান মাসে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রশ্ন করল। তখন তিনি বললেন, তোমার কোন দাস আছে কি? সে বলল, না। তিনি আবার বললেন, তুমি দুই মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে কি? সে বলল না। তখন তিনি বললেন তাহলে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাও।
২৪৬৯. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেংগে ফেলার কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এর কাফফারা হিসেবে একটি গোলাম আযাদ করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি ইবনু উয়ায়নার অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
২৪৭০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যাক্তি রমযানোর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেংগে ফেলার কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন, হয় তো সে একটি গোলাম আযাদ করবে অথবা দুই মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে অথবা ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে।
২৪৭১. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে ইবনু উয়ায়নার অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৪৭২. মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমি জ্বলে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেন? সে বলল, রমযানের দিনে আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেন তাহলে সদকা দাও, সদকা দাও। সে বলল আমার নিকট কিছুই নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বসার জন্য নির্দেশ দিলেন। এমতাবস্থায় দুই টুকরি ভর্তি খাদ্য আসল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এগুলো সদকা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন।
২৪৭৩. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী হাদীসটি বর্ণনা করলেন। তবে এ হাদীসের প্রথমে تَصَدَّقْ تَصَدَّقْ শব্দ দুটো উল্লেখ নেই এবং এতে দিনের কথাটিও উল্লেখ নেই।
২৪৭৪. আবুত-তাহির (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রমযান মাসে মসজিদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো জ্বলে গিয়েছি, আমি তো জ্বলে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার, কি হয়েছে তার? সে বলল আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেন, তাহলে সদকা কর। সে বলল, আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর নাবী! আমার কিছুই নেই এবং এ ব্যাপারে আমি সক্ষম নই। তিনি বললেন, বস। সে বসল।
লোকটি বসা থাকতেই এক ব্যাক্তি গাধা হাঁকিয়ে আসল। এর উপর ছিল খাদ্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায় যে কিছুক্ষণ আগে এসেছিল? লোকটি দাঁড়াল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো সদকা করে দাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের ছাড়া অন্য লোকদেরকে সদকা করে দিব? আল্লাহর শপথ আমরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, আমাদের কিছুই নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এগুলো তোমরা খেয়ে ফেল।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. অবৈধ নয় এমন কাজে রমযান মাসে সফরকারী ব্যক্তির জন্য সাওম পালন করা এবং ইফতার করা উভয়ই জায়েয যদি দুই বা ততোধিক মঞ্জিলের উদ্দেশ্যে সফর করা হয়; অবশ্য সক্ষম ব্যক্তির জন্য সাওম পালন করা উত্তম এবং অক্ষম ব্যক্তির জন্য সাওম হতে বিরত থাকা উত্তম
২৪৭৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সা’দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, (মক্কা) বিজয়ের বছর রমযান মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত অবস্থায় সফরে বের হলেন। অতঃপর কাদীদ নামক স্থানে পৌছাবার পর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেংগে ফেললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ পর্যায়ক্রমে তার সর্বাপেক্ষা নতুন নির্দেশ অনুসরণ করতেন।
২৪৭৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা আমরুন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া বলেন, সুফয়ান (রহঃ) বলেছেন যে, আমি জানি না এ কার কথা অর্থাৎ "তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষোক্ত কথাটি গ্রহন করতেন।"
২৪৭৭. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যুহরি (রহঃ) থেকে এ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন। যুহরী (রহঃ) বলেন, (সফরে) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বশেষ কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষোক্ত কাজকেই গ্রহণ করা হতো। তিনি বলেন, রমযানের তের দিন অতিবাহিত হবার পর ভোরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা প্রবেশ করেন।
২৪৭৮. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে লায়সের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সাহাবাগণ তাঁর প্রত্যেক নবীনতম বিষয়ের অনুসরণ করতেন। এবং তারা একে রহিতকারী ও চূড়ান্ত বলে মনে করতেন।
২৪৭৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় রমযান মাসে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হলেন। যখন তিনি উসফান নামক স্থানে পৌছলেন তখন তিনি পানি ভর্তি একটি পাত্র আনার জন্য বললেন এবং লোকদেরকে দেখাবার জন্য দিনেই তা পান করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেংগে ফেললেন এবং এ অবস্থায় তিনি মক্কা প্রবেশ করলেন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সফরে কখনো) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন আবার কখনো ইফতার করেছেন তাই কেউ ইচ্ছা করলে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারে আবার কেউ ইচ্ছা করলে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন ছেড়েও দিতে পারে।
২৪৮০. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে তার প্রতি দোষারোপ করো না এবং তার প্রতিও না যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দেয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায (কখনো) সিয়াম পালন করেছেন (আবার কখনও) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিয়েছেন।
২৪৮১. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের বছর রমযান মাসে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর যখন তিনি কুরাউল গামীম নামক স্থানে পৌছলেন তখন লোকেরাও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত ছিল। এরপর তিনি একটি পানির পাত্র চাইলেন। এমনকি লোকেরা তার দিকে তাকাতে লাগল। এরপর তিনি পানি পান করলেন। তখন তাঁকে বলা হল কতিপয় লোক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত রয়েছে। তিনি বললেন তারা অবাধ্য, তারা অবাধ্য।
২৪৮২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাফর (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি অতিরিক্ত বর্ননা করেছেন যে, অতঃপর তাঁকে বলা হল মানুষের জন্য সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা কষ্টাতীত হয়ে পড়েছে। আপনি কি করছেন তারা সেদিকে তাকিয়ে আছে। একথা শুনে তিনি আসরের পর এক পাত্র পানি চাইলেন।
২৪৮৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে ছিলেন। এসময় তিনি এক ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন লোকেরা তার কাছে জটলা করে আছে এবং তাকে ছায়া করে আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তার কি হয়েছে? তারা বললেন লোকটি সিয়াম পালনকারী। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সফরে তোমাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা কোন নেকীর কাজ নয়।
২৪৮৪. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দেখলেন। এরপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৪৮৫. আহমেদ ইবনু উসমান নাওফেলী (রহঃ) ... শুবা (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। শু'বা বলেন, এ সনদে ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীরের মাধ্যমে অতিরিক্ত এ কথাও আমার নিকট পৌছেছে যে, তিনি বলেছেন আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে সুবিধা দিয়েছেন তা গ্রহণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। অতঃপর আমি যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি এটা স্মরণ রাখতে পারেননি।
২৪৮৬. হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমযানের ষোল দিন অতিবাহিত করার পর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ সময় আমাদের কেউ সিয়াম পলন করছিলেন, আবার কেউ তা ছেড়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এতে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভংগকারীকে কোন দোষারোপ করেনি এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভংকারীও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীকে কোন প্রকার দোষারোপ করেনি।
২৪৮৭. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দমী, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে এ সনদে হাম্মামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তায়মী, উমর ইবনু আমির ও হিশামের বর্ণনায় "রমযানের আঠার দিন অতিবাহিত হয়েছে" কথাটি বর্ণিত আছে। সাঈদের বর্ণনায় বার রমযান এবং শু'বার বর্ণনায় সতের অথবা ঊনিশ রমযানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
২৪৮৮. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রমযান মাসে সফর করতাম কিন্তু সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীকে তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কারণে দোষারোপ করা হতো না এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকারীকেও তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গের কারণে দোষারোপ করা হতো না।
২৪৮৯. আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমযান মাসে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এব সাথে ষুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতাম। এ সময় আমাদের কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন আবার কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকারীকে খারাপ মনে করতেন না এরং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকারীও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীকে খারাপ মনে করতেন না। তারা মনে করতেন, যার সামর্থ্য আছে সে-ই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছে, এটাই তার জন্য উত্তম। আর যে দূর্বল সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিয়েছে, এটাও তার জন্য উত্তম।
২৪৯০. সাঈদ ইবনু আমর আশ'আসী, সাহল ইবনু উসমান সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তারা উভয়ে বলেন,আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফর করেছিলাম এমতাবস্থায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) যারা ছাড়তে চেয়েছেন তারা ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করেননি।
২৪৯১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রমযান মাসে সফরকালে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর বিধান কি? এ সমন্ধে আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞানা করার পর তিনি বললেন রমযান মাসে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাথে সফর করেছি। এ সময় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকারী ব্যাক্তির কোন নিন্দা করেনি এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকাকারী ব্যাক্তিও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীর কোন নিন্দা করেনি।
২৪৯২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সফরের উদ্দেশ্যে বের হলাম এবং সিয়াম পালন করলাম। লোকেরা আমাকে বলল তুমি পূনরায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। তখন আমি বললাম আনাস (রাঃ) আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ সফরকালে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকারীকে কোন দোষারোপ করেনি। অনুরূপভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গকারীও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীকে কোন প্রকার দোষারোপ করেনি। অতঃপর আমি ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে আমাকে অনুরূপ হাদীস শোনালেন।
২৪৯৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমরা সফরে ছিলাম। আমাদের কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন আবার কেউ ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর প্রচণ্ড গরমের সময় আমরা এক প্রান্তরে অবতরণ করলাম। চাদরবিশিষ্ট লোকেরা আমাদের মধ্যে সর্বাধিক ছায়া লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের কেউ কেউ হাতদ্বারা সূর্যের কিরণ থেকে নিজেকে রক্ষা করছিলেন। অবশেষে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ল এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ত্যাগকারীরা সুস্থ থাকল। এরপর তারা তাবু খাটালন এবং উটকে পানি পান করালেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পরিত্যাগকারী সওয়াব অর্জন করে নিল।
২৪৯৪. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে ছিলেন। তখন কেউ কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করলেন আবার কেউ কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিলেন। এরপর যারা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা শক্তিমত্তার সাথে কাজ করলেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তিগণ কাজে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আজ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পরিত্যাগকারীরা নেকী অর্জন করে নিল।
২৪৯৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... কাযাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল। যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা জিজ্ঞাসা করব না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাথে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত অবস্থায় মক্কার দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শক্রদের নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের জন্য বিশেষ এক অবকাশ।
তখন আমাদের কতক লোক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করল আবার কতক লোক ইফতার করল। এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করবো। সুতরাং ইফতার তোমাদের জন্য শক্তি বর্ধক। তাই তোমরা তা ছেড়ে দাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ নির্দেশ অবশ্য পাননীয়। তাই আমরা সকলেই রোযা ছেড়ে দিলাম। এরপর আমরা দেখেছি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরের অবস্থায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতাম।
২৪৯৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন হামযা ইবনু আমর আসলামী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সফরের অবস্থায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর আর যদি ইচ্ছা না হয় তবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দাও।
২৪৯৭. আবুর-রাবী যাহরানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হামযা ইবনু আমর আসলামী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো অনবরত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি। সফরের অবস্থায়ও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করব কি? তিনি বললেন, যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর আর যদি ইচ্ছা না হয় তবে ছেড়ে দাও।
২৪৯৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে হাম্মাদ ইবনু যায়দের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন (তিনি বলেন) আমি সর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি।
২৪৯৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে إِنِّي رَجُلٌ أَسْرُدُ الصَّوْمَ স্থলে إِنِّي رَجُلٌ أَصُومُ বর্নিত হয়েছে। অর্থাৎ আমি সর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি। সুতরাং সফরে আমি কি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করব?
২৫০০. আবুত-তাহির ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... হামযা ইবনু আমর আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, সফরের অবস্থায় সিয়াম পালনের ক্ষমতা আমার রয়েছে। এ সময় পালন করলে আমার কোন গুনাহ হবে কি? তিনি বললেন, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিশেষ অবকাশ, যে তা গ্রহন করবে, তাঁর জন্য উত্তম। আর যদি কেউ সিয়াম পালন করতে চায়, তবে তাঁর কোন গুনাহ হবে না। হারুন তাঁর হাদিসের মধ্যে هِيَ رُخْصَةٌ “এটা অবকাশ” কথাটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু مِنَ اللَّهِ “আল্লাহর পক্ষ হতে” কথাটি উল্লেখ করেন নি।
২৫০১. দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) ... আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক প্রচণ্ড গরমের দিনে রমযান মাসে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে বের হলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, আমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহ (রাঃ) ব্যাতিত আমাদের মাঝে কেউই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ছিল না।
২৫০২. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা’নাবী (রহঃ) ... উম্মু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ দারদা (রাঃ) বলেছেন যে, প্রচণ্ড গরমের দিনে কোন এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, লোকেরা নিজ নিজ হাত মাথার উপর রেখে দিয়েছিল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূদল্লাহ ইবনু রাওয়াহ (রাঃ) ব্যাতিত আমাদের মাঝে কেউই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ছিল না।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. হাজীদের জন্য আরাফার দিন আরাফাতের ময়দানে সিয়াম পালন না করা মুস্তাহাব
২৫০৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম উমায়র সুত্রে উম্মুল ফযল বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা আরাফার দিন তাঁর নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিয়াম পালন (করা না করা) সম্পর্কে আলোচনা করছিল। তাদের কেউ কেউ বলল, তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত আর কেউ কেউ বলল তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত নন। কাজেই আমি তাঁর নিকট এক পেয়ালা দুধ পাঠালাম এবং তিনি উটের উপর বসা ছিলেন। তিনি তা পান করলেন।
২৫০৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহিম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সুফয়ান ইবনু উয়ায়না আবূ নযর (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে উটের উপর বসা ছিলেন কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। আর আবূ উমায়রকে উম্মুল ফযলের আযাদকৃত গোলাম বলা হয়েছে।
২৫০৫. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালিম আবূন-নাযর (রহঃ) থেকে এ সনদে ইবনু উয়ায়নার অনূরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানেও উমায়রকে উম্মুল ফযলের আযাদকৃত গোলাম বলা হয়েছে।
২৫০৬. হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম উমায়র বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী মায়মুনা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবা আরাফার দিন তাঁর সিয়াম পালনের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। [উম্মুল ফাযল (রাঃ) বলেন] আমরাও সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমি তাঁর নিকট এক পেয়ালা দুধ পাঠিয়ে দিলাম। তখন তিনি আরাফার ময়দানে ছিলেন। তিনি তা পান করে নিলেন।
২৫০৭. হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন লোকেরা আরাফার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। এরপর মায়মুনা (রাঃ) তাঁর নিকট একপাত্র দুধ পাঠিয়ে দিলেন। এ সময় তিনি ‘মাওকাফ’ এ অবস্থান করছিলেন। তখন তিনি তা পান করে নিলেন। আর লোকেরা তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. আশুরা দিবসে সিয়াম পালন করা
২৫০৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শরা জাহিলী যুগে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সিয়াম পালন করত। রাসুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় হিজরত করলেন, তখনও তিনি আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন এবং লোকদেরকে তা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর যখন রমযানের সিয়ামকে ফরয করা হল, তখন যার ইচ্ছা সে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত।
২৫০৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবনু নুমায়র থেকে এবং তিনি হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে ইবনু নুমায়র এ হাদীসের প্রথমাংশে “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন” এ কথাটির উল্লেখ নেই। অবশ্য এ হাদীসের শেষাংশে বলেছেন, “তিনি আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) ছেড়ে দেন। সুতরাং যার ইচ্ছা সে এ দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত এবং যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিত” এবং তিনি বর্ণনাকারী জারীরের মত এ কথাটিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানীর অন্তর্ভুক্ত করেননি।
২৫১০. আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে আশূরার দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা হতো। এরপর যখন ইসলামের আবির্ভাব হল, তখন যার ইচ্ছা সে এ দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত।
২৫১১. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনে সিয়াম পালন করার নির্দেশ দিতেন। যখন রমযানের সিয়াম ফরয করা হল ,তখন যার ইচ্ছা সে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিলে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত।
২৫১২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শরা জাহিলী যুগে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার নির্দেশ দিতেন। রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা সে এদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দেবে।
২৫১৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুয়ামর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে লোকেরা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সিয়াম পালন করত। রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এদিন সিয়াম পালন করেছেন এবং মুসলমানগণও। যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন আল্লাহর দিনসমূহের একটি দিন। সুতরাং যার ইচ্ছা সে এ দিন সিয়াম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দেবে।
২৫১৪. মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণনা করেছেন।
২৫১৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আলোচনা করা হলে তিনি বললেন, এ দিনে জাহিলী যুগে লোকেরা সিয়াম পালন করত। তোমাদের মধ্যে যে এ দিনে সিয়াম পালন করতে আগ্রহী, সে এ দিনে সিয়াম পালন করতে পারে। আর যে অপছন্দ করে, সে ছেড়ে দিতে পারে।
২৫১৬. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, জাহিলী যুগে লোকেরা এ দিনে সাওম পালন করত। যদি কেউ এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে চায়, সে এ দিনে সিয়াম পালন করবে। আর কেউ যদি এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করতে চায়, সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর অভ্যস্ত দিনে না হলে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন না।
২৫১৭. মুহাম্মাদ ইবনু আহমদ ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিবসের সিয়াম সম্পর্কে কথা তোলা হ’ল। তারপর রাওহ (রহঃ) লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) এর অনুরূপই বর্ণনা করেছেন।
২৫১৮. আহমদ ইবনু উসমান নওফালী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিবস সম্পর্কে কথা তোলা হলে তিনি বললেন, এ দিনে জাহেলী যুগে লোকেরা সিয়াম পালন করত। যার ইচ্ছা সে এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে আর যার ইচ্ছা সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না।
২৫১৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আশ’আস ইবনু কায়স (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট গেলেন। তখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবূ মুহাম্মদ! তুমি খাবারের জন্য কাছে এসো। তিনি বললেন, আজ কি আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন নয়? তিনি বললেন, তুমি কি জানো আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) দিবস কি? আশ’আস (রহঃ) বললেন, সে আবার কি? তিনি বললেন, রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করতেন। যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন তা ছেড়ে দেয়া হ’ল। রাবী আবূ কুরায়ব (রহঃ) تُرِكَ এর স্থলে تَرَكَهُ বলেছেন।
২৫২০. যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁরা বলেছেন, فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ تَرَكَهُ “যখন রমযানের বিধান নাযিল হ’ল তখন তিনই তা ছেড়ে দেন।”
২৫২১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... কায়স ইবনু সাকান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন আশ’আস ইবনু কায়স (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আহার করছিলেন। তিনি আশ’আসকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ মুহাম্মদ! নিকটে এসো, খানা খাও। তিনি বললেন, আমি তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমরা এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতাম। পরে তা ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
২৫২২. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আশ’আস ইবনু কায়স (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর নিকট গেলেন। সেটা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন ছিল। তখন তিনি খানা খাচ্ছিলেন। এ দেখে আশ’আস (রহঃ) বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! আজ তো আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন। তিনি বললেন, রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে সিয়াম পালন করা হতো। কিন্তু রমযানের সিয়াম ফরয হলে এ দিনের সিয়াম পালন ছেড়ে দেয়া হয়। এখন তুমি যদি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) না রেখে থাক তবে খাও।
২৫২৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সমুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন আমাদেরকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিতেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতেন এবং এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোজ-খবর নিতেন। কিন্তু যখন রমযানের সিয়াম ফরয হ’ল, তখন তিনি আমাদেরকে আদেশও করেননি, নিষেধও করেননি এবং কোন খোঁজ-খবর আর নেন নি।
২৫২৪. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইউনুস (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এবং তিনি হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদিন মু'আবিয়া ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) কে মদিনায় ভাষণ দিতে শুনলেন, অর্থাৎ যখন মদিনায় এসেছিলেন, তখন আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিবসে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, হে মদিনাবাসী! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এদিন সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, এ হল আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) দিবস। তোমাদের উপর এদিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয করেন নি। তবে আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। তাই তোমাদের মধ্যে যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পছন্দ করে, সে পালন করবে আর যে পছন্দ করেনি, সে করবে না।
২৫২৫. আবূ তাহির (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৫২৬. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনেদ বর্ণনা করেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ দিন সম্পর্কে বলতে শুনেছেন যে, আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী। যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের ইচ্ছা করে, সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে, অতঃপর তিনি মালিক এবং ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উল্লেখ করেননি।
২৫২৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরত করে) মদিনায় এলেন এবং তিনি ইয়াহুদীদেরকে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সিয়াম পালন করতে দেখতে পেলেন। এরপর তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তারা বলল, এ সে দিন, যে দিন আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) ও বনী ইসরাঈলকে ফির'আউনের উপর বিজয়ী করেছেন। তাই এর সম্মানার্থে আমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে থাকি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা তোমাদের চেয়েও মূসা (আলাইহিস সালাম) এর অধিক নিকটবর্তী। অতঃপর তিনি এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার নির্দেশ দিলেন।
২৫২৮. ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আবূ বিশর (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীসে فَسُئا لَهُمْ عَنْ ذَلِكَ (তারা এ বিষয়ে জ্জিজ্ঞাসা করল) এ স্থলে فَسَأَلَهُمْ عَنْ ذَلِكَ (তিনি তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন) বাক্যটি বর্নিত আছে।
২৫২৯. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে ইয়াহুদীদেরকে আশুরার দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনরত দেখতে পেলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এটা কোন দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছ? তারা বলল, এ মহান দিনে আল্লাহ তায়ালা মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফির'আউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। তাই আমরাও এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা তো তোমাদের থেকে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর অধিক নিকটবর্তী এবং হকদার। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করলেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিলেন।
২৫৩০. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়্যুব (রহঃ) থেকে এ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ইবনু সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) ইবনু সাঈদের নাম উল্লেখ করেননি।
২৫৩১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী সম্প্রদায় আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) দিবসের সম্মান প্রদর্শন করত এবং তারা এ দিনকে ঈদ বলে গণ্য করত। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর।
২৫৩২. আহমদ ইবনুল মুনযির (রহঃ) ... কায়স (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বরের ইয়াহুদীরা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। তারা এ দিনকে ঈদরূপে পালন করত এবং তারা তাদের মহিলাদেরকে অলংকার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও এদিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর।
২৫৩৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনে সিয়াম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, এ দিন ব্যতীত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিনকে অন্য দিনের তূলনায় উত্তম মনে করে সেদিনে সিয়াম পালন করেছেন বলে-আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে রমযান ব্যতীত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসকে অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে সিয়াম পালন করেছেন বলেও আমার জানা নেই।
২৫৩৪. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... উবায়দূল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রহঃ) এর সূত্রে সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. আশুরার কোন দিন রোযা রাখা হবে
২৫৩৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হাকাম ইবনু আরাজ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে পৌছলাম। এ সময় তিনি যমযমের কাছে চাদর বিছানো অবস্থায় বসা ছিলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমাকে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) দিবসের সিয়াম পালন সম্পর্কে সংবাদ দিন। উত্তরে তিনি বললেন, মুহাররম! মাসের চাঁদ দেখার পর তুমি এর তারিখগুলো শুণে রাখবে। এরপর নবম তারিখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অবস্থায় তোমার যেন ভোর হয়। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সেদিন সিয়াম পালন করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, করেছেন।
২৫৩৬. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... হাকাম ইবনু আ'রাজ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যমযমের কাছে ইবনু আব্বাস (রাঃ) চাদর পেতে বসে থাকা অবস্থায় আমি তাকে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিবসে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। এরপর তিনি হাজিব ইবনু উমর (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৫৩৭. হাসান ইবনু আলী দাওয়ানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে সিয়াম পাননের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়াহূদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইনতেকাল হয়ে যায়।
২৫৩৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে মুহাররমের নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। আবূ বকর (রহঃ) বলেন, নবম তারিখই হচ্ছে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. আশুরার দিনে কেউ ভোরে খেয়ে ফেললে অবশিষ্ট সময় সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে
২৫৩৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন আসলাম গোত্রের এক ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন লোকদের মধ্যে এ কথা ঘোষণা করে যে, যে সিয়াম পালন করেনি, সে যেন সিয়াম পালন করে এবং যে আহার করেছে, সে যেন রাত পর্যন্ত তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পূর্ণ করে।
২৫৪০. আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) ... রুবায়্যি বিনত মুয়াওবিয ইবনু আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন ভোরে এক ব্যাক্তিকে মদিনার পার্শ্ববর্তী আনসারী সাহাবীদের জনপদে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন এ ঘোষণা করে দেয় যে, সিয়ামরত অবস্থায় যার ভোর হয়েছে, সে যেন তার সাওম পূর্ণ করে। আর যার ইফতার অবস্থায় ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকে। এরপর আমরা এ দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতাম এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকেও আল্লাহ চাহে তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনে অভ্যস্ত করে তুলতাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম এবং তাদের জন্য পশমের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাওয়ার জন্য কাঁদত, তখন আমরা তাদেরকে সে খেলনা প্রদান করতাম। এমনি করে ইফতারের সময় হয়ে যেত।
২৫৪১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... খালিদ ইবনু যাকওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রুবায়্যি বিনত মুয়াওবিয (রাঃ) থেকে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদের জনপদে তার দূতগণকে প্রেরণ করলেন। এরপর বিশর (রহঃ) এর অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে অতিরিক্ত আছে যে, আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করতাম এবং আমরা তা আমাদের সাথে নিয়ে যেতাম। তারা যখন আমাদের কাছে খাবার চাইত তখন তাদেরকে আমরা সে খেলনা প্রদন করতাম। তারা এ নিয়ে খেলাধুলা করত। এমনিভাবে তারা তাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পূর্ণ করত।
পরিচ্ছেদঃ ২০. দু' ঈদের দিনে সিয়াম পালন করা হারাম
২৫৪২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আযহারের গোলাম আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদের দিন আমি উমর ইবনুল খাত্তাবের সংগে উপস্থিত ছিলাম। তিনি ঈদগাহে এসে সালাত আদায় করলেন এবং লোকদের দিকে মুখ করে ভাষণ দিলেন। তাতে বললেন, এ দু'টি এমন দিন যে দু'দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। এক হ’ল, ঈদুল ফিতরের দিন, আর দ্বিতীয় হল ঐ দিন, যে দিন তোমরা কুরবানীর গোশত খেয়ে থাক।
২৫৪৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'দিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। এক হল কুরবানীর দিন, আর দ্বিতীয় হল ঈদুল ফিতরের দিন।
২৫৪৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... কাযাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে একটি হাদীস শ্রবণ করেছি। হাদীসটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আপনি এ হাদীস শুনেছেন কি? তিনি বললেন, যে কথা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনিনি এমন কথা তাঁর দিকে সম্বোধন করে আমি বলতে পারি কি? আমি শুনেছি তিনি বলেছেন, দু'দিন সিয়াম পালন করা শুদ্ধ নয়ঃ ঈদূল আযহার দিন এবং ঈদূল ফিতরের দিন।
২৫৪৫. আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'দিন অর্থাৎ ঈদূল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন।
২৫৪৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... যিয়াদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আমি এক দিন সিয়াম পালন করার মান্নত করেছিলাম। ঘটনাক্রমে তা ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা মান্নত পূরা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন।
২৫৪৭. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর এবং ঈদূল আযহা এ দু’ দিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২১. আইয়্যামে তাশরীকে সিয়াম পালন করা হারাম
২৫৪৮. সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... নূবায়শা হুযালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আইয়্যামে তাশরীক পানাহারের দিন।
২৫৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... নুবায়শা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ খালিদ বলেছেন আমি অবুল মালীহ এর সাথে সাক্ষাত করে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বুশায়মের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে যে, ."এদিন আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।"
২৫৫০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’ব ও আউস ইবনু হাদসান (রাঃ) কে আইয়্যামে তাশরীকের সময় পাঠালেন এবং বলে দিলেন তোমরা ঘোষণা করে দাও যে, মুমিনগণই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আইয়্যামে মিনা (আইয়্যামে তাশরীক) পানাহার করবার দিন।
২৫৫১. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু তাহমান (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে فَنَادَى এর স্হলে فَنَادَيَا বর্ণিত আছে। অর্থাৎ এক বচনের স্থলে দ্বিবচনের সাথে কথাটি বর্নিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ২২. নিয়মিত সাওম পালনের দিনে না পড়লে শুধু জুমু'আর দিনে সিয়াম পালন করা মাকরূহ
২৫৫২. আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ইবনু জাফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফরত অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম্মার দিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি এ ঘরের মালিকের শপথ করে বলছি।
২৫৫৩. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ইবনু জাফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর উক্তরূপ হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
২৫৫৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু'আর দিন সিয়াম পালন না করে। (যদি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে চায়) তবে জুমুআর আগে বা পরে যেন এক দিন যোগ করে সিয়াম পালন করে।
২৫৫৫. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতসমূহের মাঝে তোমরা কেবল জুমূআর রাতকে সালাত ও জাগ্রত থাকার জন্য নির্ধারন করে নিও না। অনুরূপভাবে দিনসমূহের মধ্যে কেবল জুমু'আর দিনকে সিয়াম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করে নিও না। তবে তা যদি তার নিয়মিত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার দিনে পড়ে তাহলে সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে।
No comments: