সহিহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ সিয়াম (রোজা)-৩য়
পরিচ্ছেদঃ ২৩. আল্লাহ্ তা'আলার বানীঃ "যারা সাওম পালন করতে সক্ষম তাদের জন্য ফিদয়া হচ্ছে খাদ্যদান" এই নির্দেশ রহিত
২৫৫৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ "যারা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে সক্ষম তাদের জন্য ফিদয়া হচ্ছে মিসকীনের খাদ্য দান" এ আয়াত অবর্তীর্ণ হওয়ার পর যার ইচ্ছা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিত এবং ফিদয়া প্রদান করত। এরপর পরবর্তী আয়াত নাযিল হলে এ আয়াত রহিত হয়ে যায়।
২৫৫৭. আমর ইবনু সাওয়াদ আমিরী (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে রমযান মাসে জামাদের অবস্থা এই ছিল যে, আমাদের যে ইচ্ছা করত সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। আর যে ইচ্ছা করত, সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিত এবং ফিদয়া প্রদান করত। এরপর فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ "তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে" এ আয়াত অবর্তীর্ণ হয়।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. যে ব্যক্তি রমযানের সিয়াম পালন করেনি ওযরের কারণে যথাঃ রোগ, সফর ও মাসিক ঋতু ইত্যাদি, তবে তার জন্য রমযানের কাযা পরবর্তী রমযান না আসা পর্যন্ত বিলম্বে আদায় করা জায়েয
২৫৫৮. আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমার উপর রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কাযা থেকে যেত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে শা'বান মাস ব্যতীত আমি তা আদায় করতে পারতাম না।
২৫৫৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, "এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপস্থিতির কারণে শাবানের পূর্বে আমার জন্য তা পালন সম্ভব হতো না।"
২৫৬০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা, এ বিলম্ব করা মূলত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে থাকার কারণেই হয়েছিল।
২৫৬১. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে লিপ্ত থাকার কথা উল্লেখ নেই।
২৫৬২. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর মক্কী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের মঝে এমন অনেকে আছেন যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে রমযানের সিয়াম পালনে সক্ষম হতেন না। অতঃপর শা'বান না আসা পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে থাকার কারণে তার পক্ষে কাযা আদায় করাও সম্ভব হতো না।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে সাওমের কাযা আদায় করা
২৫৬৩. হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযানের কাযা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার পক্ষ হতে তার অভিভাবকগণ সিয়াম পালন করবে।
২৫৬৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈকা মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তার এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কাযা আছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যদি তার উপর কোন ঝণ থাকত তাহলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করা অধিক উপযুক্ত।
২৫৬৫. আহমদ ইবনু উমর আল ওয়াকিঈ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা মুত্যৃবরণ করেছেন। তার উপর রয়েছে এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কাযা। আমি তার পক্ষ হতে এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কাযা আদায় করতে পারি কি? তিনি বললেন যদি তোমার মায়ের উপর কোন ঋন থাকত তাহলে তুমি তা পরিশোধ করতে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তিনি বললেনঃ তাহলে আল্লাহর ঋণ পরিশোধের অধিক হকদার।
সুলায়মান (রহঃ) বলেন, হাকাম ও সালামা ইবনু কুহায়ল উভয়ের বলেছেন, যখন মুসলিম (রহঃ) হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন তখন আমরা সকলে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তারা বললেন, আমরা ঐ হাদীসটি মুজাহিদ (রহঃ) কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি।
২৫৬৬. আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৫৬৭. ইসহাক ইবনু মানসূর, ইবনু আবূ খালফ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, জনৈকা মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তার উপর মান্নতের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ হতে এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করতে পারি কি? তখন তিনি বললেন যদি তোমার মায়ের উপর কোন ঋণ থাকত এবং তুমি তা পরিশোধ করে দিতে, তবে তা তার পক্ষ হতে আদায় হতো কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের পক্ষ হতে তুমি সিয়াম পালন কর।
২৫৬৮. আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় জনৈকা মহিলা এসে বললেন! আমি আমার মায়ের জন্য একটি দাসী সদকা করেছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, তুমি তো তোমার সওয়াব পেয়ে গিয়েছ। তবে উত্তরাধিকার তোমার নিকট তা ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন ঐ মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার উপর এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ হতে ঐ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করতে পারি কি? তিনি বললেন, তুমি তার পক্ষ হতে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। অতঃপর মহিলা বললেন, তিনি তো তখনও হাজ্জও আদায় করেননি আমি তার পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে পারি কি? তিনি বললেন, তুমি তার পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর।
২৫৬৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। অতঃপর তিনি ইবনু মুসহির (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেছেন, দুই মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)।
২৫৭০. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন। অতঃপর তিনি অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)।
২৫৭১. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... সুফয়ান (রহঃ) থেকে এ সনদে (অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন) তবে এ হাদীসের মধ্যে দুই মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কথা বর্ণিত আছে।
২৫৭২. ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন। তাদের হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেন এবং বলেন, এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিকে যদি খাবার জন্য আহবান করা হয় এবং সে সাওম ভাঙার ইচ্ছা না করে অথবা যদি তাকে গালমন্দ করা হয় বা তার সাথে কেউ ঝগড়া-বিবাদ করতে উদ্যত হয়, তখন তার জন্য বলা মুস্তাহাব যে, আমি পালন করছি
২৫৭৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সিয়ামরত কোন ব্যাক্তিকে যদি খানা খাওয়ার জন্য আহবান করা হয়, তবে তার বলা উচিত, আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী।
২৫৭৪. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কারও যদি কোন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনরত অবস্থায় ভোর হয়, তবে সে যেন স্ত্রী সম্ভোগ ও অন্যায় আচরণ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া-বিবাদ করে, তবে সে যেন বলে আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী, আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. সিয়ামের ফযীলত
২৫৭৫. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজীবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ ইরশাদ করেন, আদম সন্তানের যাবতীয় আমল তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম, তা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিব। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) যার হাতে মুহাম্মদ এর প্রাণ তাঁর শপথ! সিয়াম পালনকারী ব্যাক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধি হতেও উৎকৃষ্ট।
২৫৭৬. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সিয়াম হল ঢাল।
২৫৭৭. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ইরশাদ করেন, আদম সন্তানের যাবতীয় আমল তার নিজের জন্য কিন্তু সিয়াম, তা আমারই জন্য। আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম হল ঢাল। তোমাদের কারো সিয়াম পালনের দিন সে যেন স্ত্রীর সাথে উপগত হয় এবং শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালমন্দ করে অথবা কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া বিবাদ করে তবে সে যেন বলে আমি একজন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী।
যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! সিয়াম পালনকারী ব্যাক্তির মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক উত্তম। সিয়াম সাধনাকারী ব্যাক্তির খুশির বিষয় দুটি, যখন সে ইফতার করলো তখন ইফতার এর কারণে সে আনন্দ লাভ করল এবং যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে, তখন সে তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কারণে আনন্দিত হবে।
২৫৭৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল দশ গুন থেকে সাতশত গুণ বাড়য়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, কিন্তু সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম); সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সে আমারই জন্য তার কামাচার এবং পানাহার বর্জন করে। সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তির জন্য খুশির বিষয় দুটি। একটি খুশি ইফতারের সময়, আরেকটি খুশি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। তার মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট।
২৫৭৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তির খুশির সময় দুটি। যখন ইফতার করবে, তখন খুশি হবে এবং যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, তখন খুশি হবে। যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক উত্তম।
২৫৮০. ইসহাক ইবনু উমর ইবনু সুলায়ত হুযালী (রহঃ) ... সিনানের পিতা যিবার ইবনু মুররা (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এ হাদীসে আছে, "যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, তখন আল্লাহ তাকে প্রাতদান দিবেন; এতে সে আনন্দিত হবে।"
২৫৮১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে রায়য়ান নামক একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এটি দিয়ে সিয়াম পালনকারী লোকেরা (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ তাদের সঙ্গে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদেরকে বলা হবে, সিয়াম পালনকারী লোকেরা কোথায়? অতঃপর তারা সে দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। তাদের শেষ লোকটি প্রবেশ করার পরই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর আর কেউ প্রবেশ করবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. ক্ষতিগ্রস্ত না হলে এবং কারও হক নষ্ট না হলে জিহাদের অভিযানে সামর্থ্যবান ব্যক্তির সিয়াম পালন করার ফযীলত
২৫৮২. মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যদি কোন ব্যাক্তি (জিহাদ অভিযানে) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে, তবে এ এক দিনের সিয়াম পালনের বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মূখমণ্ডলকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।
২৫৮৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সুহায়ল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ননা করেছেন।
২৫৮৪. ইসহাক ইবনু মানসুর ও আবদুর রহমান ইবনু বিশর আবদী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ অভিযানে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে, আল্লাহ তাআলা তার মুখমন্ডলকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের ব্যবধান করে রাখবেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৯. নফল সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির জন্য দ্বিপ্রহরের পূর্বে সাওমের নিয়ত করা বৈধ। নফল সাওম পালনকারী ব্যক্তির জন্য বিনা ওযরে সাওম ভঙ্গ করা জায়েয। অবশ্য সাওম পূর্ণ করা তার জন্য উত্তম
২৫৮৫. আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়িশা! তোমার নিকট (খাওয়ার মত) কোন কিছু আছে কি? আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার নিকট কিছুই নেই। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি সিয়াম পালন করছি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে চলে গেলেন। ইত্যবসরে আমাদের নিকট কিছু হাদিয়া আসল কিংবা তিনি বলেছেন, দর্শনার্থী কতিপয় লোক আমাদের নিকট আসলেন।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলে আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের কিছু হাদিয়া দেয়া হয়েছে কিংবা তিনি বলেছেন, কতিপয় দর্শনার্থী আমাদের নিকট এসেছেন। আমি আপনার জন্য কিছু খাবার সযত্নে রেখে দিয়েছি। তিনি বললেন, তা কি? আমি বললাম, হায়স (অর্থাৎ ঘি এবং পনির মিশ্রিত খেজুর)। তিনি বললেন, নিয়ে আস। তখন আমি তা নিয়ে এলাম। তিনি তা খেলেন। তারপর বললেন, আমি ভোরে সিয়াম পাননের নিয়্যত করেছিলাম।
বর্ণনাকারী তালহা (রহঃ) বলেন, আমি এ হাদীস মুজাহিদ (রহঃ) এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, এ কাজটি ঐ ব্যাক্তির মত যে তার মাল থেকে সদকা বের করল। সে ইচ্ছা করলে তা দান করতে পারে, আর ইচ্ছা করলে রেখেও দিতে পারে।
২৫৮৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেন, তোমাদের নিকট কোন কিছু আছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে আমি সিয়াম পালন করছি। এরপর আরেক দিন তিনি আমাদের কাছে এলেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের জন্য হায়স (ঘি এবং পনির মিশ্রিত খেজুর) হাদিয়া পাঠান হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি তা আমাকে দেখাও, আমার তো ভোর হয়েছে সায়িম অবস্থায়। তারপর তিনি তা আহার করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. ভুলক্রমে পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ সওম ভঙ্গ হবে না
২৫৮৭. আমর ইবনু মুহাম্মাদ নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সিয়াম পালনকারী যদি ভুলক্রমে খায় বা পান করে তবে, সে তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পূর্ন করবে। কেননা আল্লাহ তা'আলাই তাকে আহার করিয়েছেন ও পান করিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. রমযান ব্যতীত অন্য মাসেও নবী (ﷺ) এর সাওম পালন এবং কোন মাস সাওম পালন থেকে খালি না থাকা মুস্তাহাব
২৫৮৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত অন্য কোন সময়ে পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! রমযান ব্যতীত অন্য সময়ে তিনি পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেননি, পরিশেষে এভাবেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আবার কিছু সাওম পালন ব্যতীত তিনি পূর্ণ মাস সাওম ভঙ্গও করেননি।
২৫৮৯. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পুর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) (নফল) পালন করেছেন? তিনি বললেন, আমার জানামতে রমযান ব্যতীত পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন কি এবং তিনি কিছু সাওম পালন না করে পূর্ণ মাস সাওমবিহীনও থাকেননি। পরিশেষে এভাবেই তিনি ইনতিকাল করেছেন।
২৫৯০. আবুর-রবী যাহরানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন, এমনকি আমরা বলতাম তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেই যাবেন। আবার তিনি ইফতার অবস্থায় থাকতেন এমনকি আমরা বলাবলি করতাম, তিনি সিয়াম ভংগ করেই চলেছেন (আর সিয়াম পালন করবেন না)। তিনি (আরও) বলেন মদিনায় আগমনের পর থেকে আমি তাঁকে রমযান ব্যতীত পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দেখিনি।
২৫৯১. কুতায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ পুর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ কিন্তু এই সনদে হিশাম ও মুহাম্মাদের নাম উল্লেখ করেন নি।
২৫৯২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যেতেন, এমনকি আমবা বলাবলি করতাম, হয়ত তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছাড়বেন না। আবার কখনও তিনি একাধারে (দীর্ঘদিন) সাওমবিহীন থাকতেন। এমন কি আমরা বলাবলি করতাম, হয়ত তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একমাত্র রমযান মাস ছাড়া কখনও পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দেখিনি। আমি তাকে শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে অধিক সংখ্যক (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেও দেখিনি।
২৫৯৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যেতেন এমনকি আমরা বলতাম তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন (আর কখনও ভংগ করবেন না)। আবার কখনও তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিয়েছেন (আর কখনো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না)।
আমি তাঁকে শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে এত অধিক (নফল) সাওম পালন করতে দেখিনি। তিনি যেন গোটা শাবান মাসই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। তিনি সামান্য (কয়টি দিন) ব্যতীত গোটা শাবান মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
২৫৯৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস ব্যাতীত বছরের অন্য কোন মাসে এত অধিক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন না। তিনি বলতেনঃ "তোমরা যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে ভাল কাজ কর। কারণ আল্লাহ তা’আলা সওয়াব দিতে কখনও ক্লান্ত হন না বরং তোমরাই আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়।" তিনি আরও বলতেনঃ “বান্দা যে কাজ নিরবিচ্ছিন্নভাবে করতে পারে, তাই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়- তার পরিমাণ কম হলেও।”
২৫৯৫. আবূর রবী যাহরানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাত্র রমযান মাস ব্যতীত কখনও পূর্ণমাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেননি। তিনি যখন (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন তা একাধারে করে যেতেন। এমনকি লোক মনে করত, না, আল্লাহর শপথ! তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছাড়বেন না। আবার কখনও, তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা হতে বিরত থাকতেন। যাতে লোকেরা মনে করত আল্লাহর শপথ! তিনি হয়ত আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না।
২৫৯৬. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আবূ বিশর (রহঃ) এই সনদ সুত্রে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন, "তিনি মদিনায় আসার পর থেকে কখনও একাধারে পুরো মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেননি।”
২৫৯৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উসমান ইবনু হাকীম আনসারী (রহঃ) বলেন আমি সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) এর কাছে রজব মাসে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন সেটা রজব মাস। তিনি উত্তরে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যেতেন-- এমনকি আমরা মনে করতাম তিনি হয়ত আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছাড়বেন না। আবার কখনও তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) থেকে বিরত থাকতেন-- এমনকি আমরা মনে করতাম, তিনি হয়ত আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না।
২৫৯৮. আলী ইবনু হুজর ও ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) এর সূত্রে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
২৫৯৯. যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ খালফ ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যেতেন, এমনকি বলা হতো তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যাচ্ছেন, তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যাচ্ছেন। আবার তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন হতে বিরত থাকতেন, এমনকি বলা হতো তিনি বিরত থাকছেন তিনি বিরত থাকছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩২. যে ব্যক্তির পক্ষে ক্ষতির আশংকা থাকে অথবা কারো হক নষ্ট করার আশংকা থাকে অথবা উভয় ঈদ ও তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোতে সাওম ছাড়ে না, এরূপ ব্যক্তির পক্ষে সারা বছর সাওম পালন করা নিষেধ এবং একদিন সাওম পালন করা ও একদিন সাওম পালন না করার ফযীলত
২৬০০. আবূত-তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবহিত করা হল যে, তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি অবশ্য সারা রাত (ইবাদতে) দাঁড়িয়ে থাকব এবং সারা দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করব, যতদিন জীবিত থাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি একথা বলেছ? আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমিই একথা বলেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা করতে সক্ষম হবে না। অতএব তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর ও ছেড়ে দাও এবং ঘুমাও আবার জেগে ইবাদত কর। তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। কারন প্রতিটি নেকীর বিনিময়ে তার দশগুন সওয়াব রয়েছে। আর এটা পূর্ণ বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার সমতূল্য।
আমি বললাম, আমার এর চেয়েও অধিক পরিমাণ করার সামর্থ্য আছে। তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে দুইদিন ছেড়ে দাও। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এর চেয়েও অধিক করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর, একদিন ছেড়ে দাও। আর এটাই হচ্ছে দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং তা সর্বোত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)। আমি বললাম আমি আরও অধিক করতে সক্ষম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়ে উত্তম কিছু নেই।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথামত প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার নিয়ম গ্রহণ করতাম তবে তা আমার জন্য পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের তূলনায় অধিক পছন্দনীয় হতো।
২৬০১. আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ রুমী (রহঃ) ... ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমি ও আবদল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ রওনা হয়ে আবূ সালামার নিকট গেলাম। আমরা তাঁর কাছে একজন লোক পাঠালাম। তিনি বের হয়ে আমাদের নিকট এলেন। তাঁর বাড়ির সামনেই ছিল মসজিদ এবং আমরা সেখানেই তার অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে আমার বাড়িতেও যেতে পার। আর চাইলে এখানেও বসতে পার। আমরা বললাম, না বরং আমরা এখানেই বসি এবং আপনি আমাদের (হাদীস) বর্ণনা করুন।
তিনি বললেন আমার কাছে আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুুূল আস (রাঃ) বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন আমি সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতাম এবং সারা রাত কুরআন পাঠ করতাম। একথা হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উল্লেখ করা হয়েছে অথবা তিনি বলেছেনঃ (অধস্তন রাবীর সন্দেহ) আমাকে ডেকে পাঠান হয়েছে। আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, তুমি সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং সারা রাত্র কুরআন পাঠ কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এরদ্বারা কল্যাণ লাভেরই প্রত্যাশী। তিনি বললেন তাহলে প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
আমি বললাম হে আল্লাহর নাবী! আমি এর চেয়েও অধিক সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে, তোমার সাক্ষাত প্রার্থীর তোমার উপর অধিকার রয়েছে। এবং তোমার দেহেরও তোমার উপর অধিকার রয়েছে। অতএব আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। কারণ তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক ইবাদতকারী। আমি বললাম হে আল্লাহর নাবী! দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কি? তিনি বললেনঃ তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন একদিন ছেড়ে দিতেন।
তিনি আরও বললেন তুমি প্রতি মাসে একবার (পূর্ণ) কুরআন তিলওয়াত খতম কর। আমি বললাম হে আল্লাহর নাবী! আমি এর চেয়েও অধিক পড়তে সক্ষম। তিনি বললেনঃ তাহলে প্রতি বিশ দিনে একবার কুরআন খতম কর। আমি বললাম হে আল্লাহর নাবী! আমি এর চেয়েও অধিক পড়তে সক্ষম। তিনি বললেন তাহলে দশদিনে একবার কুরআন খতম কর। আমি বললামঃ হে আল্লাহর নাবী! আমি এর চেয়েও বেশি পড়তে সক্ষম। তিনি বললেনঃ তাহলে সপ্তাহে একবার খতম কর এর অধিক নয়। কারণ তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে। তোমার দেহেরও অধিকার আছে।
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন আমি নিজের উপর কঠোরতা করেছি ফলে আমি কঠোরতায় নিক্ষিপ্ত হয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আরও বললেনঃ তুমি জান না হয়ত তুমি দীর্ঘজীবি হবে। অতএব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যা বলেছেন আমি তা গ্রহণ করলাম। আমি যখন বার্ধক্যে উপনীত হলাম তখন আকাঙ্ক্ষা করলামঃ আহা, আমি যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেয়া অবকাশ গ্রহন করতাম।
২৬০২. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীস বর্নিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে "প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর" কথার পর আরও আছে কেননা তোমার জন্য প্রতিটি ভাল কাজের পরিবর্তে তার দশগুন প্রতিদনি রয়েছে। অতএব তা এক বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সমানই হল। এই হাদীসে আরও উল্লেখ আছে, "আমি (আবদুল্লাহ) বললাম, আল্লাহর নাবী দাউদ (আঃ) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, অর্ধ বছর (সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা)" এই সুত্রে কুরআন তিলওয়াত সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নাই এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একথাও উল্লেখ নাই "তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও অধিকার রয়েছে।" বরং এতে উল্লেখ আছে “তোমার উপর তোমার সন্তানেরও অধিকার রয়েছে।”
২৬০৩. কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন তুমি প্রতি মাসে একবার কুরআন খতম কর। আমি বললাম, আমার এর অধিক সামর্থ্য আছে। তিনি বললেন প্রতি বিশ দিনে একবার কুরআন খতম কর। আমি বললাম, আমার এর অধিক সামর্থ্য আছে। তিনি বললেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে একবার কুরআন খতম কর, এর অধিক নয়।
২৬০৪. আহমদ ইবনু ইউসূফ আযদী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যাক্তির মত হয়ো না যে সারা রাত জেগে ইবাদত করত পরে তা পরিত্যাগ করে।
২৬০৫. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ কথা পৌছল যে আমি একাধারে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যাচ্ছি এবং রাতে সালাত আদায় করে চলছি। অতএব তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন অথবা (রাবীর সন্দেহ) আমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেন আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যাচ্ছ এবং তা ছাড়ছ না এবং রাতব্যাপি সালাত আদায় করে চলেছ? তুমি (এরূপ) করো না। কেননা তোমার চোখের একটি প্রাপ্য রয়েছে, তোমার দেহের প্রাপ্য রয়েছে এবং তোমার স্ত্রীর প্রাপ্য রয়েছে। অতএব সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং ছেড়ে দাও, সালাত আদায় কর আবার ঘুমাতে যাও।
প্রতি দশ দিনে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এতে তুমি নয় দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সওয়াব পাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আমি নিজেকে এর চেয়ে বেশি সামর্থ্যবান মনে করি। তিনি বললেন তাহলে দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর মত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। আমি বললামঃ দাঊদ (আলাইহিস সালাম) কিভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন?
তিনি বললেন তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পলায়ন করতেন না যখন (শক্র বাহিনীর) সম্মুখীন হতেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী! কে আমার জন্য এ সবের জামিন হবে? অধঃস্তন রারী আতা (রহঃ) বলেনঃ একাধারে সাওমের কথা কীভাবে উল্লেখ করেছেন, তা আমি জানি না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে সে মূলত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি। যে সর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করল সে মূলত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি যে সর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করল সে মূলত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি।
২৬০৬. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি বলেছেনঃ আবূ আব্বাস শায়র (রহঃ) তাকে অবহিত করেছেন। ইমাম মুসলিম বলেন, তিনি হলেন আবূ আব্বাস আস-সায়েব ইবনু ফাররুখ। তিনি মক্কার অধিবাসী এবং বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
২৬০৭. উবায়াদুল্লাহ ইবনু মূআয (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! তুমি তো একাধারে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে যাচ্ছ। সারা রাত ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক। তুমি এরূপ করলে-তাহতে তোমার-চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে। যে ব্যাক্তি সর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করল, সে মূলত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করল না। মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সমতূল্য।
আমি বললাম, আমি এর চেয়েও বেশি সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর ন্যায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন এবং একদিন ছেড়ে দিতেন এবং পলায়ন করতেন না যখন তিনি শক্রর সম্মুর্খীন হতেন।
২৬০৮. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হাবীব ইবনু আবূ সাবিত (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এতে আরও আছে, "এবং তুমি শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়বে।"
২৬০৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমাকে তোমার সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে যে, তুমি সারারাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায়া কর এবং দিনের বেলা রোযা রাখ? আমি বললাম, আমি অবশ্য করি। তিনি বলেন, তুমি এরূপ করতে গেলে অনিদ্রার কারণে তোমার চোখ কোটরাগত হবে এবং তুমি দুর্বল হয়ে পড়বে। তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার দেহের হক রয়েছে এবং তোমার পরিবার-পরিজনের হক রয়েছে। অতএব তুমি রাতে ইবাদতও করবে এবং নিদ্রাও যাবে। সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন করবে, আবার তা বাদও দেবে।
২৬১০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হচ্ছে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং তাঁর নিকট পছন্দনীয় সালাত হচ্ছে দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সালাত। তিনি অর্ধরাত ঘূমাতেন। অতঃপর এক-তৃতীয়াংশ রাত ইবাদতে থাকতেন। অতঃপর এক-ষষ্ঠাংশ রাত ঘূমাতেন। তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন এবং একদিন বাদ দিতেন।
২৬১১. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হচ্ছে দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)। তিনি বছরের অর্ধেককাল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। মহান আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় সালাত হচ্ছে দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সালাত। তিনি অর্ধ রাত ঘূমাতেন, অতঃপর সালাতে দাঁড়াতেন, অতঃপর শেষ রাতে ঘুমিয়ে যেতেন। অর্ধরাত অতিক্রান্ত হওয়ার পর এক-তৃতীয়াংশ রাত ইবাদত করতেন।
রাবী ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আমি আমর ইবনু দীনারকে বললাম, আমর ইবনুল আস (রাঃ) কি একথা বলতেন যে, তিনি অর্ধরাত অতিক্রান্ত হওয়ার পর এক-তৃতীয়াংশ রাত ইবাদতে থাকতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
২৬১২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে আবূল মালীহ (রহঃ) অবহিত করেছেনঃ তিনি বলেছেন, আমি তোমার পিতার সাথে আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি আমাদের নিকট বললেন, যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে উল্লেখ করা হলে তিনি আমার কাছে এলেন। আমি তাঁর জন্য একটি চামড়ার তাকিয়া পেতে দিলাম। যাতে খেজুরগাছের আঁশ ভর্তি ছিল। তিনি মাটির উপর বসে গেলেন এবং তাকিয়াটি তাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল।
তিনি আমাকে বললেন প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ (আমি এর অধিক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে সক্ষম)! তিনি বললেন, তাহলে পাঁচদিন। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ (আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি)! তিনি বললেন, তাহলে সাত দিন? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আমি এর অধিক সামর্থ্য রাখি।) তিনি বললেন, তাহলে নয় দিন! আমি বললাম। ইয়া রাসুলাল্লাহ (আমি এর অধিক সামর্থ্য রাখি)। তিনি বললেন, তাহলে এগার দিন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আমি এর অধিক সামর্থ্য রাখি)।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর উপর কোন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) নেই। তিনি বছরের অর্ধেক অর্থাৎ একদিন যদি এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন, আরেক দিন বাদ দিতেন।
২৬১৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, তুমি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করলে পরের দিনের সওয়াব পাবে। তিনি বলেন, আমি আরও অধিক রাখতে সক্ষম। তিনি বললেন, তুমি দুই দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। তাহলে অবশিষ্ট দিনগুলোর সওয়াব পাবে। তিনি বললেন, আমি আরও অধিক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রাখতে সক্ষম। তিনি বললেন, তুমি তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর তাহলে অবশিষ্ট দিনগুলোরও সওয়াব পাবে। তিনি বললেন, আমি আরও অধিক রাখতে সক্ষম। তিনি বললেন, তুমি চার দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর, তাহলে অবশিষ্ট দিনগুলোরও সওয়াব লাভ করবে। তিনি বললেন, আমি আরও অধিক রাখতে সক্ষম। তিনি বললেন, তুমি দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর যা আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)। তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন এবং পরের দিন বাদ দিতেন।
২৬১৪. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! আমি জনিতে-পেরেছি যে, তুমি দিনের বেলা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর, এবং রাতের বেলা সালাতে থাক। তুমি এরূপ করো না। কারন তোমার উপর তোমার দেহের একটি অংশ (হক) রয়েছে তোমার উপর তোমার চোখের অংশ-রয়েছে এবং তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অংশ রয়েছে। তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন কর এবং বাদও দাও। প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং এটাই হল সারা বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার আরও শক্তি আছে। তিনি বললেন, তাহলে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর মত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। একটি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং একদিন বাদ দাও। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলতেন হায়! আমি যদি সহজটার উপর আমল করতাম!
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. প্রতি মাসে তিন দিন, আরাফাতের দিন, আশুরার দিন, সোম ও বৃহস্পতিবার সাওম পালনের ফযীলত
২৬১৫. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... মু'আযাহ আল-আদাবিয়্যা (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) এর কাছে জানতে চাইলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি পূনরায় তাকে-জিজ্ঞাসা করলাম, মাসের কোন কোন দিন তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন? আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তিনি মাসের যে কোন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দ্বিধা করতেন না।
২৬১৬. আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা যুবাঈ (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন অথবা (অধঃস্তন রাবীর সন্দেহ) তিনি কোন ব্যাক্তিকে বলেছেন এবং তিনি তা শুনছিলেন, হে অমুক! তুমি কি এ মাসের মধ্যভাগে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলে? সে বলল, না। তিনি বললেন, যখন তুমি তা ভংগ করলে তখন দুই দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর।
২৬১৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কিভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন? তার এই কথায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তুষ্ট হলেন। উমর (রাঃ) তার অসন্তোষ লক্ষ্য করে বললেন, "আমরা আল্লাহর উপর (আমাদের) প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামের উপর (আমাদের) দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আমাদের নাবী হিসেবে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর ও তার রাসূলের অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।"
উমর (রাঃ) কথাটি বার বার আওড়াতে থাকলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তোষের ভাব দূরীভূত হল। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যে ব্যাক্তি সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে তার অবস্থা কিরূপ? তিনি বললেন, সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি এবং ছেড়েও দেয়নি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, যে পর্যায়ক্রমে দুই দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে ও একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ত্যাগ করে, তার অবস্থা কিরুপ? তিনি বললেন, এই সামর্থ্য কার আছে?
তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, যে ব্যাক্তি একদিন পর একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে তার অবস্থা কিরূপ? তিনি বললেন, এটা দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন যে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে ও দু'দিন করে না, তার অবস্থা কিরুপ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আশা করি যে আমার এতটা শক্তি হোক।
তিনি পূনরায় বললেন, প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা এবং রমযান মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এক রমযান থেকে পরবর্তী রমযান পর্যন্ত সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সমান। আর আরাফাত দিবসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। আর আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে।
২৬১৮. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ কাতাদা আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তুষ্ট হলেন। তখন উমর (রাঃ) বললেন আমরা আল্লাহর উপর (আমাদের) প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামের উপর (আমাদের) দ্বীন হিসেবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর (আমাদের) রাসুল হিসেবে এবং বায়'আত হিসেবে আমাদের কৃত বায়'আতের উপর আমরা সন্তুষ্ট।
অতঃপর সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)হীনও থাকেনি। অতঃপর একাধারে দুই দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা ও এক দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ত্যাগ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন এভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সামর্থ্য কার আছে? অতঃপর একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন ও দু দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ত্যাগ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, আল্লাহ যেন আমাদের এরূপ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সামর্থ্য দান করেন। অতঃপর একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা ও একদিন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, তা আমার ভাই দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)।
অতঃপর সোমবারের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনই আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি বা আমার উপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে। আরও বললেন, প্রতি মাসে তিন দিন এবং গোটা রমযান মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করাই হল সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সমতুল্য।
অতঃপর আরাফাত দিবসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে।
অতঃপর আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাতে বিগত বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে।
এই হাদীসে শু'বার বর্ণনায় আরও আছে, অতঃপর সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। কিন্তু আমাদের মতে বৃহস্পতিবারের কথা ভুলবশত বর্ণিত হয়েছে, তাই আমরা তার উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম।
২৬১৯. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে উপরোক্ত হাদীস বর্নিত হয়েছে।
২৬২০. আহমদ ইবনু সাঈদ আদ-দারিমী (রহঃ) ... গায়লান ইবনু জারীর (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে শু'বার সুত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে তিনি (গায়লান) সোমবারের উল্লেখ করেছেন, তিনি বৃহস্পতিবারের উল্লেখ করেননি।
২৬২১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সোমবারের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ঐদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং ঐদিন আমার উপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. শা'বান মাসের সাওম
২৬২২. হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শাবান মাসের মধ্যভাগে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সমাপন করবে, তখন দুই দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে নিও।
২৬২৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এ মাসের মধ্যেভাগে কিছু দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তার বদলে রমযানের সিয়াম শেষ করে দুই দিন সিয়াম পালন করবে।
২৬২৪. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেন, তুমি কি এ মাসের অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যেভাগে কিছু দিন সিয়াম পালন করেছ? সে বলল, না। তিনি তাকে বললেন, রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন শেষ করে তুমি এক দিন বা দুই দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। এ সম্পর্কে শু'বার সন্দেহ রয়েছে এবং রাবী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি দুই দিনের কথা বলেছেন।
২৬২৫. মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা ও ইয়াহইয়া লু’লুই (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু হানী মুতাররিফের ভ্রাতুষ্পুত্র (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. মুহাররামের সাওমের ফযীলত
২৬২৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের নামায।
২৬২৭. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হল, ফরয সালাতসমূহের পর কোন সালাত এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর কোন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ফরয সালাতসমূহের পর গভীর রাতের সালাত সর্বোত্তম এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সর্বোত্তম।
২৬২৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল মালিক ইবনু উমায়র (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. রমযানের রোযার পর শাওয়াল মাসে ছয় দিন রোযা রাখার ফযীলত
২৬২৯. ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ আয়্যুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি রমযান মাসের সিয়াম পালন করল, তারপর শাওয়াল মাসে ছয় দিনকে তার অনুগামী করল (অর্থাৎ ৬টি সিয়াম পালন করল), সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।
২৬৩০. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ আয়্যুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
২৬৩১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ আয়্যুব (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্নিত।
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. লায়লাতুল কদরের ফযীলত, এর অনুসন্ধানের প্রতি উৎসাহ দান, তা কখন হবে তার বর্ণনা এবং তার অনুসন্ধানের আশাবঞ্চক সময়
২৬৩২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নে দেখান হল যে, (রমযানের) শেষ সাত দিনের মধ্যে কদরের রাত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি মনে করি যে, শেষের সাতদিন সম্পর্কে তোমাদের সকলের স্বপ্ন পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতএব যে ব্যাক্তি তা অন্বেষণ করবে, সে যেন রমযানের শেষ সাতদিনের রাতগুলোতে তা অন্বেষণ করে।
২৬৩৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, (রমযানের) শেষ সাতদিনের রাতগুলোতে লায়লাতুল কদর অন্বেষণ কর।
২৬৩৪. আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি (পিতা) বলেন, এক ব্যাক্তি (রমযানের) ২৭ তম রাতে লায়লাতুল কদর দেখতে পেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও তোমাদের মত স্বপ্ন দেখান হয়েছে যে, তা রমযানের শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব এর বেজোড় রাতগুলোতে তা অনুসন্ধান কর।
২৬৩৫. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তার পিতা [আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেছেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লায়লাতুল কদর সম্পর্কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কতিপয় লোককে দেখান হল যে, তা রমযানের প্রথম সাতদিনের মধ্যে, আবার কতিপয় লোককে দেখান হয়েছে যে, তা শেষ সাতদিনের মধ্যে। অতএব (রমযানের) শেষ দশকেরে মধ্যে তা অন্বেষণ কর।
২৬৩৬. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... উকবা ইবনু হুরায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশদিনে কদরের রাত অনুসন্ধান কর। তোমাদের কেউ যদি দূর্বল অথবা অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে যেন শেষ সাত রাতে অলসতা না করে।
২৬৩৭. মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... জাবালা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি কদরের রাত অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন (রমযানের) শেষ দশকে তা অনুসন্ধান করে।
২৬৩৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (রমযানের) শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান কর অথবা তিনি বলেছেন, শেষের সাত রাতে।
২৬৩৯. আবূ তাহির ও হারামালা ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে স্বপ্নে কদরের রাত দেখনি হয়েছিল। অতঃপর আমার পরিবারের কেউ আমাকে ঘূম থেকে জাগানোর ফলে আমাকে তা ভূলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা শেষ দশকে অম্বেষণ কর। রাবী হারামালা (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে, "আমি তা ভুলে গেছি।"
২৬৪০. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমযানের) মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। অতঃপর ২০তম দিন অতিবাহিত হওয়ার পর এবং ২১তম দিনের সূচনাতে তিনি নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন এবং তাঁর সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেন, তারাও নিজ নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর একবার রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করলেন। যে রাতে তাঁর ইতিকাফ হতে ফিরে আসার কথা, সে রাতে (পূনরায়) ইতিকাফ আরম্ভ করলেন ও লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন।
এরপর তিনি বললেন, আমি সাধারণত এই (মধ্যম) দশকে ইতিকাফ করতাম। এরপর শেষ দশকেও ইতিকাফ করা আমার কাছে সমীচীন মনে হল। অতএব যে ব্যাক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন নিজ ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করে। আমি এই (কদরের) রাত স্বপ্নে দেখেছিলাম কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোত তা অনুসন্ধান কর। আমি স্বপ্নে নিজেকে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ২১তম রাতে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তিনি যখন ফজরের সালাত থেকে ফিরলেন, তখন আমি তাঁর মুখমন্ডল কাদা ও পানিতে সিক্ত দেখলাম।
২৬৪১. ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করতেন। অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। তবে এই বর্ণনায় আছে, “সে যেন তার ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করে। তিনি আরো বলেন, তাঁর কপাল কাদা ও পানিতে সিক্ত ছিল।
২৬৪২. মুহাম্মাদ ইবনু আবূল আলা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের প্রথম দশকে ইতিকাফ করলেন। এরপর তিনি মাঝের দশকেও একটি তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফ করলেন এবং তাবুর দরজায় একটি চাটাই ঝূলান ছিল। রাবী বলেন, তিনি নিজ হাতে চাটাই ধরে তা তাঁবুর কোণে রাখলেন এরপর নিজের মাথা বাইরে এনে লোকদের সাথে কথা বললেন এবং তারাও তাঁর নিকট এগিয়ে এল। তিনি বললেন, এই রাতের অনুসন্ধানকল্পে আমি (রমযানের) প্রথম দশকে ইতিকাফ করলাম। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করলাম। এরপর আমার নিকট একজন আগন্তুক (ফিরিশতা) এসে আমাকে বলল, লায়লাতুল কদর শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে।
লোকেরা তাঁর সঙ্গে (শেষ দশকে) ইতিকাফ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, স্বপ্নে আমাকে তা কোন এক বেজোড় রাতে দেখনো হয়েছে এবং আমি যেন সেই রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সিজদা করছি। (রাবী বলেন) তিনি ২১তম রাতের ভোরে উপনীত হয়ে ফজরের সালাতে দাঁড়ালেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ফলে ছাদ থেকে মসজিদে পানি বর্ষিত হল এবং আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। তিনি ফজরের সালাত শেষে যখন বের হয়ে এলেন তখন তাঁর কপাল ও নাকের ডগা সিক্ত ও কর্দমাক্ত ছিল। আর তা ছিল রমযানের শেষ দশকের প্রথম (বা ২১তম) রাত।
২৬৪৩. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমরা পরস্পর কদরের রাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এরপর আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট এলাম এবং তিনি ছিলেন আমার বন্ধু। আমি তাকে বললাম, আপনি কি আমাদের সাথে খেজুর বাগানে যাবেন না? তিনি একটি চাঁদর পরিহিত অবস্থায় বের হলেন। আমি তাকে বললাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লায়লাতূল কদর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা রমযান মাসের মাঝের দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে ইতিকাফ করলাম। আমরা ২১তম দিন ভোরে (ইতিকাফ থেকে) বের হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বললেন, আমাকে স্বপ্নযোগে কদরের রাত দেখান হয়েছিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি অথবা আমাকে তা ভূলানো হয়েছে। তোমরা শেষ দশ দিনের প্রতিটি বেজোড় রাতে তা অম্বেষণ কর। আমি আরও দেখেছি যে, আমি কাদা ও পানির মধ্যে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে, সে যেন পূনরায় তার ইতিকাফে ফিরে যায়।
আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমরা (ইতিকাফের অবস্থায়) ফিরে গেলাম। আমরা আকাশে কোন মেঘ দেখতে পাইনি। ইতিমধ্যে একখণ্ড মেঘ এল এবং আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল, এমন কি মসজিদের ছাদ হতে পানি প্রবাহিত হল। মসজিদের ছাদ খেজুর ডাটার ছাউনিযুক্ত ছিল। ফজরের সালাত আদায় করা হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাদা ও পানির মধ্যে সিজদা দিতে দেখলাম, এমনকি আমি তাঁর কপালে কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।
২৬৪৪. আবদ ইবনু হুমায়দ, আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এই সনদ সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে উভয়ের (মা'মার ও আওযাঈ) বর্ননায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করে ফিরলেন তখন আমি তাঁর কপালে ও নাকের ডগায় কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।
২৬৪৫. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আবূ বকর ইবনু খাল্লাদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কদরের রাত অন্বেষণের উদ্দেশ্যে তা তাঁর কাছে সুস্পষ্ট হওয়ার পূর্বে রমযানের মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করলেন। দশদিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি তাঁবু তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। অতএব তা গুটিয়ে ফেলা হল। অতঃপর তিনি জানতে পারলেন যে, তা শেষ দশ দিনের মধ্যে আছে। তাই তিনি পূনরায় তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। তা খাটান হল। এরপর তিনি লোকদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন হে লোক সকল! আমাকে কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু দুই ব্যাক্তি পরস্পর ঝগড়া করতে করতে উপস্থিত হল এবং তাদের সাথে ছিল শয়তান। তাই আমি তা ভুলে গেছি। অতএব তোমরা তা রমযান মাসের শেষ দশ দিনে অন্বেষণ কর। তোমরা তা ৯ম, ৭ম ও ৫ম রাতে অন্বেষণ কর।
রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ সাঈদ! আপনি সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরাই এ বিষয়ে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। আমি বললাম ৯ম, ৭ম ও ৫ম সংখ্যাগুলো কি? তিনি বললেন, যখন ২১তম রাত অতিবাহিত হয়ে যায় এবং ২২তম রাত শুরু হয় এই হচ্ছে ৯ম তারিখ ২৩ রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী রাত হচ্ছে ৭ম তারিখ এবং ২৫তম রাত অতিবাহিত হওয়ার পরের দিনটি হচ্ছে ৫ম তারিখ।
ইবনু খাল্লাদের বর্ণনায় يَحْتَقَّانِ এর শব্দের স্থলে يَخْتَصِمَانِ শব্দের উল্লেখ আছে।
২৬৪৬. সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাহল ইবনু ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আশআস ইবনু কায়স আল-কিনদী ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে কদরের রাত দেখান হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্নে আরও দেখান হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। রাবী বলেন, অতএব ২৩তম রাতে বৃষ্টি হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে (ফজরের) সালাত আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) বলতেন, তা ছিল ২৩তম।
২৬৪৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযান মাসের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত (ইবনু নূমায়রের বর্ণনায়) অন্বেষণ কর এবং (ওয়াকী-এর বর্ণনায়) সন্ধানে সচেষ্ট হও।
২৬৪৮. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... যির ইবনু হুবায়শ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বললাম, আপনার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে, সে কদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি একথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমযনি মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭তম রজনী। অতঃপর তিনি শপথ করে বললেন, তা ২৭তম রজনী। আমি (যির) বললাম, হে আবূল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলছেন? তিনি বললেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে যে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উঠবে কিন্তু তার আলোতে তেজ থাকবে না।
২৬৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কদরের রাত সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর শপথ! কদরের রাত সম্পর্কে আমি খুব ভাল করেই জানি। শু’বা বলেন, আমার জানামতে তা হচ্ছে সেই রাত যে রাতে জেগে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তা হচ্ছে রমযানের ২৭তম রজনী। "তা হচ্ছে সেই রাত যে রাতে আমাদেরকে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।" এই বাক্যটুকু সম্পর্কে শু'বা সন্দেহে পতিত হয়েছেন এবং বলেছেন, আমার এক বন্ধু তার শায়খের সুত্রে আমার নিকট ঐ কথা বর্ণনা করেছেন।
২৬৫০. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে কদরের রাত সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে সেই (রাত) স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরার ন্যায়।
No comments: