Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খন্ড, অধ্যায়ঃ সিয়াম (রোজা)-১ম




পরিচ্ছেদঃ ১. রমযান মাসের ফযীলত


২৩৬৬.    ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমযান মাস এলে জান্নাতের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলবন্ধী কর হয়।
২৩৬৭.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযান আরম্ভ হলে রহমতের দরাজাসমুহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।
২৩৬৮.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও হুলওয়ানী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রমযান আসে...... এরপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২. চাঁদ দেখার পর সাওম ফরয, এবং চাঁদ দেখার পর ঈদ করা ফরয; মাসের প্রথম ও শেষ তারিখে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তবে ত্রিশ দিনে মাস পূর্ণ হবে


২৩৬৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি রমযান সম্পর্কে আলোচনা করে বললেন, তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করো না এবং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত ইফতারও করো না। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন পূর্ণ করা।
২৩৭০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের কথা আলোচনা করলেন। তারপর তিনি তাঁর উভয় হাতদ্বারা ইংগিত প্রদান করে বললেন, মাস তো এতো দিনে আর এতো দিনে হয়। তৃতীয় দফায় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলীটি বন্ধ করে নিলেন। এরপর বললেন, তোমরা চাঁদ দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার (ঈদ) করবে। যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে, তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।
২৩৭১.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে, তবে ত্রিশ দিন পুর্ণ করবে। হাদীসটি আবূ উসামা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
২৩৭২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের কথা আলোচনা করে বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। এ সময় তিনি তাঁর দু' হাতের আঙ্গুলদ্বারা ইংগিত করে বললেন, মাস এতো দিনে হয়, মাস এতো দিনে হয়, মাস এতো দিনে হয়। তারপর বললেন, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ কর। কিন্তু ত্রিশ দিনের কথা উল্লেখ করেননি।
২৩৭৩.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার (ঈদ) করবে না। যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে, তবে সংখ্যা পূর্ন করবে।
২৩৭৪.    হুমায়দ ইবনু মাসআদা বাহিলী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। যখন চাঁদ দেখবে তখন তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে এবং যখন তোমরা চাঁদ দেখবে তখন ইফতার (ঈদ) করবে। তবে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে (মাস) পূর্ণ করবে।
২৩৭৫.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন চাঁদ দেখবে তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে এবং যখন চাঁদ দেখবে তখন ইফতার (ঈদ) করবে। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।
২৩৭৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাস ঊনত্রিশ রাত্রবিশিষ্ট হয়ে থাকে। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার (ঈদ) করবেনা। হ্যাঁ, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে।
২৩৭৭.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, মাস এরূপ, এরূপ, ও এরূপ। তৃতীয়বারে তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলীটি বন্ধ করে রাখলেন।
২৩৭৮.    হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
২৩৭৯.    সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাস এরূপ, এরূপ ও এরূপ। প্রথম তিনি দশ আঙ্গুলে, দ্বিতীয়বার দশ আঙ্গুলে এবং তৃতীয়বার নয় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন।
২৩৮০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাস এতো দিনে এতো দিনে এবং এতো দিনে হয়ে থাকে। এ সময় তিনি তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করলেন এবং আঙ্গুলগুলো উঠিয়ে রাখলেন। তারপর তৃতীয়বার ইংগিত করার সময় ডান অথবা বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলটি গুটিয়ে রাখলেন।
২৩৮১.    মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এ সময় বর্ণনাকারী শু’বা (রহঃ) তাঁর উভয় হাত দ্বারা তিনবার ইংগিত করলেন এবং তৃতীয়বার একটি বৃদ্ধাঙ্গুল গুটিয়ে রাখলেন। উকবা বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, মাস ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে। এ সময় তিনি তাঁর উভয় হাত তিনবার উত্তোলন করে ইংগিত করলেন।
২৩৮২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উম্মী জাতি। লিখতে জানি না, হিসাব-নিকাশও করতে জানি না। তবে মাস এরূপ, এরূপ ও এরূপ। তৃতীয়বার ইংগিতের সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলটি গুটিয়ে নেন। এরপর (আবার বললেন) মাস এরূপ, এরূপ, ও এরূপ। অর্থাৎ পূর্ণ ত্রিশ দিনে।
২৩৮৩.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আসওয়াদ ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তবে দ্বিতীয় মাসটি ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে, এ কথাটি এ হাদীসের মধ্যে উল্লেখ নেই।
২৩৮৪.    আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... সা’দ ইবনু উবায়দা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) এক ব্যাক্তির নিকট শুনলেন, তিনি বলছেন, এ রাত অর্ধমাসের রাত। তখন তিনি তাকে বললেন, কিসে তোমাকে জানালো এ রাত অর্ধমাসের রাত? অথচ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি দুইবার দুই হাতের দশ আঙ্গুল দিয়ে ইংগিত করে বললেন, মাস এতো দিনে হয়, মাস এতো দিনে হয়। এরপর তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলীটিকে গুটিয়ে রেখে তৃতীয়বার বললেন, মাস এভাবেও হয়ে থাকে।
২৩৮৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা চাঁদ দেখবে তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে এবং যখন চাঁদ দেখবে তখন ইফতার (ঈদ) করবে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন সিয়াম পালন করবে।
২৩৮৬.    আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চাঁদ দেখে সিয়াম পালন শুরু করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার (ঈদ) করবে। যদি মেঘে আকাশ ঢেকে যায় তবে সংখ্যা পূর্ণ করবে।
২৩৮৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চাঁদ দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় তবে ত্রিশ দিন পুরা করবে।
২৩৮৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদের কথা আলোচনা করে বললেন, তোমরা যখন চাঁদ দেখবে তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে এবং যখন চাঁদ দেখবে তখন ইফতার (ঈদ) করবে, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩. রমযানের আগের এক বা দু'দিন রোযা না রাখার নির্দেশ


২৩৮৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমযানের একদিন বা দু'দিন পূর্বে (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। হ্যাঁ, যদি কোন ব্যাক্তি এ সময় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে অভ্যস্ত থাকে, তবে সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারে।
২৩৯০.    ইয়াহইয়া ইবনু বিশর হুরায়রী, ইবনু মূসান্না ও আবূ উমর এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪. মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়


২৩৯১.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শপথ করলেন যে, তিনি এক মাস পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীদের কাছে যাবেন না। যুহরী (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) এর সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন ঊনত্রিশ রাত্র অতিবাহিত হয়ে গেল, আমি তা হিসাব রাখছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন এবং আমার থেকেই আরম্ভ করলেন। এ সময় আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তো একমাস পর্যন্ত আমাদের নিকট না আসার শপথ করেছেন অথচ আপনি ঊনত্রিশ তারিখের পরই চলে এলেন, আমি তো গুণে রেখেছি। তখন তিনি বললেন, মাস তো উনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
২৩৯২.    মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। এরপর ঊনত্রিশ দিন পর তিনি আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন। আমরা বললাম আজ তো ঊনত্রিশতম দিবস। তখন তিনি তাঁর উভয় হাত দিয়ে তিনবার ইশারা করে শেষবার একটি আঙ্গূল গুটিয়ে রেখে বললেন, মাস তো এভাবেও হয়ে থাকে।
২৩৯৩.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে গেলেন। তারপর ঊনত্রিশতম দিবসে ভোর বেলা তিনি আমাদের নিকট আসলেন। কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আজ তো ঊনত্রিশতম দিনের ভোরবেলা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাতের সমস্ত আঙ্গুল খুলে দুবার ইংগিত করলেন এবং তৃতীয়বার ইংগিত করলেন নয় আঙ্গুল দ্বারা।
২৩৯৪.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উম্মু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের কিছু সংখ্যক লোকের নিকট এক মাস পর্যন্ত যাবেন না বলে শপথ করলেন। এরপর যখন ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তিনি সকাল বা বিকালে তাদের নিকট আগমণ করলেন। তখন তাকে বলা হল, হে আল্লাহর নবী! আপনি তো একমাস পর্যন্ত আমাদের নিকট আসবেন না বলে শপথ করেছিলেন। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
২৩৯৫.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৩৯৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক হাত অপর হাতের উপর মেরে বললেন, মাস এভাবে এভাবে হয়ে থাকে। তৃতীয়বার তিনি একটি আঙ্গূল গুটিয়ে রাখলেন।
২৩৯৭.    কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাস এরূপ, এরূপ ও এরুপ-দশ, দশ ও নয় দিন।
২৩৯৮.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) ... ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) থেকে এ সনদে উপরোক্ত দূটো হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রত্যেক দেশের অধিবাসীদের জন্য তাদের চাঁদ দেখা তাদের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য, অন্য দেশী মানুষের জন্য নয়। সুতরাং কোন দেশের লোক যদি চাঁদ দেখে, তবে এ হুকুম তাদের থেকে দূরবর্তী দেশীয় লোকদের জন্য প্রযোজ্য হবে না


২৩৯৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মুল ফযল বিনত হারিস তাকে সিরিয়ায় মু’আবিয়া (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। (কুরায়ব বলেন) আমি সিরিয়ায় পৌছলাম এবং তার প্রয়োজনীয় কাজটি সমাধা করে নিলাম। আমি সিরিয়া থাকা অবস্থায়ই রমযানের চাঁদ দেখা গেল। জুমু'আর দিন সন্ধ্যায় আমি চাঁদ দেখলাম। এরপর রমযানের শেষভাগে আমি মদিনায় ফিরলাম। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট জিজ্ঞাসা করলেন এবং চাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন দিন চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, আমরা তো জুমু'আর দিন সন্ধায় চাঁদ দেখেছি। 

তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি নিজে দেখেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি দেখেছি এবং লোকেরাও দেখেছে। তারা সিয়াম পালন করেছে এবং মুআবিয়া (রাঃ)-ও সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। তিনি বললেন, আমরা কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। আমরা সিয়াম পালন করতে থাকব, শেষ পর্যন্ত ত্রিশ দিন পূর্ণ করব অথবা চাঁদ দেখব। আমি বললাম, মু-আবিয়া (রাঃ) এর চাঁদ দেখা এবং তাঁর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি? তিনি বললেন, না, যথেষ্ট নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৬. চাঁদ বড়-ছোট হওয়ার বিষয়টি ধার্তব্য নয়; দেখার সুবিধার্থে আল্লাহ্‌ তাকে বর্ধিত আকারে উদিত করেন, যদি চাঁদ মেঘে ঢেকে যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করা হবে


২৪০০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূল বুখতারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উমরা করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম এবং ‘বাতনে নাখলা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম তখন আমরা (রমযানের) চাঁদ দেখতে পেলাম। এ সময় কেউ কেউ বলতে লাগলেন, এ তো তিন তারিখের চাঁদ। আবার কেউ কেউ বললেন, এ তো দুই তারিখের চাঁদ। তারপর আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, আমরা তো চাঁদ দেখেছি। কিন্তু আমাদের কেউ কেউ বলছেন, এ তৃতীয় রাত্রির চাঁদ। আবার কেউ কেউ বললেন, এ দ্বিতীয় রাত্রির চাঁদ। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন রাত্রে চাঁদ দেখেছ? আমরা বললাম, অমুক অমুক রাত্রে। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দেখার সুবিধার্থে আল্লাহ একে বর্ধিত করে দিয়েছেন। মূলত এ ঐ রাত্রিরই চাঁদ যে রাত্রে তোমরা দেখেছো।
২৪০১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূল বাখতারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যাতু ইরক' নামক স্থানে অবস্থানকালে আমরা রমযানের চাঁদ দেখতে পেলাম। তখন আমরা এক ব্যাক্তিকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট গাঠালাম, তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চাঁদ দেখার সুবিধার্থে আল্লাহ তা’আলা তাকে বর্ধিত করে দিয়েছেন। চাঁদ যদি মেঘে ঢাকা থাকে, তবে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ন করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৭. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণী- ঈদের দু' মাস হ্রাস পায় না


২৪০২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ঈদের মাস দুটিতে পর পর ঘাটতি হয় না। এ মাস দুটি হল, রমযান ও যুলহিজ্জাহ।
২৪০৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈদের মাস দুটি হ্রাস পায় না। খালিদের হাদীসের মধ্যে আছে, ঈদের মাস দুটো হল, রমযান ও যুলহিজ্জাহ।

পরিচ্ছেদঃ ৮. সুবহে সাদিকের পূর্বে পানাহার করা বৈধ; সুবহে সাদিকের সাথে সাথেই সাওম আরম্ভ হয়ে যায়; কুরআনে বর্ণিত 'ফজর' এর ব্যাখ্যা, যার সাথে সাওমের সূচনা এবং ফজরের সালাতের সময় শুরু হওয়া প্রভৃতি বিধি-বিধান সম্পৃক্ত


২৪০৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ "তোমরা পানাহার কর যতক্ষন ভোরের কালো রশ্মি হতে সাদা রশ্মি পরিস্ফুট হয়ে উঠে" নাযিল হল , তখন আদী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার বালিশের নীচে একটি কালো ও একটি সাদা রংয়ের রশি রেখে দিয়েছি। যাতে এর দ্বারা আমি রাত্র ও দিনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বালিশ তো খুব চওড়া। এ-তো রাতের অন্ধকার এবং ভোরের আলো।
২৪০৫.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরি (রহঃ) ... সালে ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ ’তোমরা পানাহার কর যতক্ষন কালো রশ্মি (অর্থাৎ রাত্রির কৃষ্ণ রেখা) হতে উষার সাদা রশ্মি (অর্থাৎ শুভ্ররেখা) সুস্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়’ নাযিল হল, তখন লোকেরা একটি কালো এবং একটি সাদা রশি রাখত। তারা উভয় রশি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত খেতে থাকত। এরপর আল্লাহ তা’আলা مِنَ الْفَجْرِ‏ বাক্যটি নাযিল করে বিষয়টিকে সুম্পষ্ট করে দিলেন।
২৪০৬.    মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ ’তোমরা পানাহার কর যতক্ষন কালো রশ্মি হতে সাদা রশ্মি পরিস্ফুট না হয় অর্থাৎ (ঊষার শুভ্র রেখা) সুস্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়’ নাযিল হল, তখন লোকেরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে চাইলে প্রত্যেকেই দু' পায়ে কালো ও সাদা সূতা বেঁধে নিত এবং সাদা ও কালো বর্ণ সূস্পষ্টরূপে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে থাকত। এরপর আল্লাহ্‌ তা'আলা مِنَ الْفَجْرِ বাক্যটি নাযিল করলেন। তখন সকলেই জানতে পারল যে, সাদা ও কালো রেখার অর্থ হল, রাত (এর অন্ধকার) ও দিন (এর আলো)।
২৪০৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বিলাল (রাঃ) রাত্রে আযান দেন। তোমরা ইবনু উম্মে মাকতুমের আযান না শোনা পর্যন্ত পানাহার কর।
২৪০৮.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, বিলাল (রাঃ) রাত্রের আযান দেন। সূতরাং ইবনু মাকতুমের আযান না শুনা পর্যন্ত পানাহার কর।
২৪০৯.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু'জন মুয়াযযিন ছিল, বিলাল এবং ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) যিনি ছিলেন অন্ধ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বিলাল তো রাত্রে আযান দেয় সূতরাং ইবনু উম্মে মাকতূম আযান না দেয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। রাবী বলেন, তাদের দু'জনের আযানের মধ্যে তেমন ব্যবধান ছিল না। শুধু এতটুকু ব্যবধান যে, বিলাল (রাঃ) নামতেন এবং ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) উঠতেন।
২৪১০.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৪১১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে ইবনু নূমায়রের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৪১২.    যুবায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিলালের আযান বা আহবান যেন তোমাদের কাউকে সেহরী থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে তো আযান দেয় বা আহবান করে যেন, মুসল্লী লোকেরা বাড়ি ফিরে যায় এবং ঘুমন্ত লোকেরা জাগ্রত হয়। এরপর তিনি হাত উত্তোলন করত আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রেখে বললেন, ফজরের সময় এরূপ নয়। তারপর আঙ্গুলগুলো প্রশস্ত করে বললেন, যতক্ষন না এরূপ হবে।
২৪১৩.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সুলায়মান তায়মী (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে বর্নিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উত্তোলন করে আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখা অবস্থায় বললেন, এটা ফজরের সময় নয়। তারপর তিনি মাটির দিকে হাত নামিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি শাহাদাত অঙ্গুলীকে শাহাদাত অঙ্গুলীর উপর রেখে উভয় হাত সম্প্রসারিত করে বললেন, এ হল ফজরের সময়।
২৪১৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সুলায়মান তায়মী (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। মু'তামিরের হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানী يُنَبِّهُ نَائِمَكُمْ وَيَرْجِعُ قَائِمَكُمْ পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে। তবে ইসহাক বলেন, জারীরের হাদীসে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইশারা করে বললেন, এ ফজরের সময় নয়। বরং ফজরের সময় হচ্ছে এই অর্থাৎ পূর্বাকাশে বিস্থৃত রেখা প্রতিভাত হওয়ার সময় ফজরের ওয়াক্ত হয়। লম্বা রেখা উদ্ভাসিত হবার সময় নয়।
২৪১৫.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, বিলালের আহবান যেন তোমাদেরকে সেহরী খাওয়া থেকে ধোকায় না ফেলে এবং এ শুভ্র রেখাও; যতক্ষন পর্যন্ত না তা বিস্তৃত হয়।
২৪১৬.    যুহায়র ইরন হারব (রহঃ) ... সামূরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে এবং শুভ্ররেখাও, যা স্তম্ভের মত দেখা যায়, যতক্ষণ না তা বিস্তৃত হবে।
২৪১৭.    আবূর রবী যাহরানী (রহঃ) ... সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লম্বা রেখা যেন তোমাদেরকে সেহরী খাওয়ার ব্যাপারে ধোকায় না ফেলে যতক্ষন পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন,এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাতদ্বারা আড়াআড়িভাবে ইংগিত করেছেন।
২৪১৮.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিলালের আযান এ শুভ্ররেখা যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে যতক্ষন পর্যন্ত না সুবহে সাদিক সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়।
২৪১৯.    ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ আলোচনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৯. সেহরীর ফযীলত, সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব, সেহরী বিলম্বে খাওয়া এবং ইফতার তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব


২৪২০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও সেহরীতে বরকত রয়েছে।
২৪২১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের ও কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক হল সেহরী খাওয়া।
২৪২২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূত তাহির (রহঃ) ... মূসা ইবনু উলায়্যা (রহঃ) এর সূত্রে এ সনদে এ অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
২৪২৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সেহরী খেয়ে সালাতে দাঁড়ালাম। [রাবী আনাস (রাঃ) বলেন] আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সেহরী ও আযানের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মত সময়ের।
২৪২৪.    আমরুন নাকিদ ও ইবনু মুনান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদিস বর্ননা করেছেন।
২৪২৫.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যতদিন মানুষ বিলম্ব না করে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
২৪২৬.    কুতায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৪২৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ আতিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও মাসরুক (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে বললাম হে উম্মুল মুমিনীন! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের দুই ব্যাক্তির মধ্যে এক ব্যাক্তি ইফতার ও সালাতে ত্বরান্বিত করে এবং অন্য এক ব্যাক্তি ইফতার ও সালাত বিলম্ব করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন সে কোন ব্যাক্তি; যে ইফতার ও সালাত ত্বরাম্বিত করে? আমরা বললাম আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতে।। আবূ কুরায়ব বলেন অপরজন হলেন, আবূ মূসা (রাঃ)।
২৪২৮.    কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ আতিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ও মাসরুক (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। এরপর মাসরুক (রহঃ) তাকে বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে দুই ব্যাক্তি যারা কল্যাণজনক কাজে কোন প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করেন না। তাঁদের একজন মাগরিব এবং ইফতারের মধ্যে ত্বরা করেন। আর অপর জন মাগরিব ও ইফতারে বিলম্ব করেন। তিনি বললেন কে মাগরিব ও ইফতার ত্বরা করেন? তিনি বললেন তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) বললেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ১০. সাওমের সময় পূর্ণ হওয়া এবং দিবস সমাপ্ত হওয়া


২৪২৯.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রাত আসে দিন চলে যায় এবং সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে। ইবনু নূমায়র (রহঃ) فَقَدْ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
২৪৩০.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রমযান মাসে কোন এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গী ছিলাম। সূর্য ডুবে গেলে তিনি বললেন হে অমূক! অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল ইয়া রাসুলাল্লাহ! এখনো দিন রয়ে গেছে। পুনরায় তিনি বললেন। অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তখন সে অবতরণ করল এবং ছাতু গুলিয়ে তাঁর নিকট পেশ করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন। এবং হাত দ্বারা ইংগিত করে বললেন, সূর্য যখন এদিক থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং রাত্র যখন এদিক থেকে ঘনিয়ে আসবে তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে।
২৪৩১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। যখন সূর্য অদৃশ্য হয়ে গেল তখন তিনি এক ব্যাক্তিকে বললেন, অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি সন্ধ্যা হতে দিতেন। পূনরায় তিনি বললেন, অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন আমাদের আরো বাকী রয়েছে। এরপর সে অতরণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য ছাতু গুলিয়ে আনল। তিনি পান করলেন এবং হাতদ্বারা পূর্বদিকে ইংগিত করে বললেন। যখনী তোমরা দেখবে যে এদিক থেকে রাত্র ঘনিয়ে আসছে, তখন সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময় হবে।
২৪৩২.    আবূ কামিল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ভ্রমণ করলাম। এ সময় তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রত ছিলেন। যখন সূর্য অদৃশ্য হয়ে গেল তখন তিনি বললেন হে অমুক! তুমি অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতূ গুলিয়ে আন। এরপর তিনি ইবনু মূসহির এবং আব্বাদ ইবনু আওআমের অনুরূপ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
২৪৩৩.    ইবনু আবূ উমর, ইসসাক, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু মুসহির আব্বাদ ও আবদূল ওয়াহিদ (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের কারো হাদীসের মধ্যে রমযান মাসের কথা উল্লেখ নেই। অনুরূপভাবে হুশায়ম ব্যতীত কারো বর্ণনায় "এবং যখন রাত্র এদিক থেকে ঘনিয়ে আসে" এ কথাটিও উল্লেখ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ১১. সাওমে বিসাল বা রাতেও পানাহার না করে অবিরত সাওম পালন করা নিষিদ্ধ


২৪৩৪.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে বিসাল করতে নিষেধ করেছেন। এতে সাহাবাগণ বললেন, আপনি তো সাওমে বিসাল করে থাকেন। তিনি বললেন আমার অবস্থা তোমাদের মত নয়। আমাকে খাওয়ান ও পান করান হয়।
২৪৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে সাওমে বিসাল আরম্ভ করলেন। তা দেখে সাহাবাগণও সাওমে বিসাল আরম্ভ করলেন। এরপর তিনি তাদেরকে সাওমে বিসাল করতে নিষেধ করলেন। এতে তাঁকে প্রশ্ন করা হল আপনি তো সাওমে বিসাল করছেন। উত্তরে তিনি বললেন। আমিতো তোমাদের মত নই। আমাকে তো খাওয়ান হয় এবং পনি করান হয়।
২৪৩৬.    আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ননা করেছেন। তবে এতে রমযান মাসের কথা উল্লেখ নেই।
২৪৩৭.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে বিসাল করতে নিষেধ করেছেন। তখন মুসলমানদের এক ব্যাক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিতো সাওমে বিসাল করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছে? আমি রাত্রি যাপন করি এমতাবস্থায় যে আমার প্রতিপালক আমাকে খাওয়ান এবং আমাকে পান করান। সাহাবাগণ যখন সাওমে বিসাল থেকে নিবৃত হলেন না তখন তিনি তাদের সাথে একদিন এবং পরে আরেক দিন সাওমে বিসাল করলেন। এরপর তারা চাঁদ দেখলেন, তখন তিনি বললেন, চাঁদ আরো দেরীতে দেখা গেলে আমিও সাওমে বিসাল দীর্ঘায়িত করতাম। তারা সাওমে বিসাল থেকে বিরত থাকতে অস্বীকার করলে তিনি শাস্তি স্বরূপ এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
২৪৩৮.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা সাওমে বিসাল থেকে বিরত থাক। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো সাওমে বিসাল করে থাকেন? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে তোমরা তো আমার মত নও। আমি এমতাবস্থায় রাত্রি যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। তাই তোমরা তোমাদের সামর্থ্যে যতটুকু কুলায় ততটুকু আমল কর।
২৪৩৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে فَاكْلَفُوا مِنَ الأَعْمَالِ مَا تُطِيقُونَ এর স্থলে فَاكْلَفُوا مَا لَكُمْ بِهِ طَاقَةٌ বাক্যটি বর্নিত আছে (অর্থ একই)।
২৪৪০.    ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি সাওমে বিসাল করতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর বর্ননাকারী আবূ যুরআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন।s
২৪৪১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রমযান মাসে একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন। আমি তার পাশে এসে দাঁড়ালাম। এরপর অন্য এক ব্যাক্তি এসেও তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। এভাবে আমরা এক দল লোক হয়ে গেলাম। এরপর নরী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন যে আমরা তাঁর পেছনে আছি তখন তিনি সালাত সংক্ষেপ করে ফেললেন। তারপর তিনি আপন গৃহে চলে গেলেন এবং এমন (দীর্ঘ) সালাত আদায় করলেন যে এভাবে তিনি আমাদের সাথে সানাত আদায় করতেন না। সকালে আমরা তাকে বললাম, রাত্রে আপনি আমাদের সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, সেটাই তো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ঐ কাজের যা আমি করেছি। 

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষভাগে আবার সাওমে বিসাল করতে আরম্ভ করলেন। এ দেখে কতিপয় সাহাবাও সাওমে বিসাল শুরু করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন লোকদের কি হল তারা যে সাওমে বিসাল আরম্ভ করেছে! তোমরাতো আমার মত নও। আল্লাহর শপথ! যদি মাস দীর্ঘায়িত হতো তবে আমি এমনভাবে সাওমে বিসাল করতাম যার ফলে সীমালংঘনকারীগণ সাওমে বিসাল করা ছেড়ে দিত।
২৪৪২.    আসিম ইবনু নযর তায়মী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রমযান মাসের প্রথমাংশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে বিসাল আরম্ভ করলেন। তা দেখে মুসলমানদের কতিপয় লোক সাওমে বিসাল আরম্ভ করে দিলেন। এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছার পর তিনি বললেন যদি আমাদের জন্য মাস দীর্ঘায়িত করে দেয়া হতো তবে আমি এমনভাবে সাওমে বিসাল করতাম যাতে সীমালংঘনকারীগণ তাদের সীমালংঘন করা ছেড়ে দিত। এরপর বললেন, তোমরা তো আমার মত নও অথবা বললেন, আমি তো তোমাদের মত নই। কারণ আমার প্রতিপালক তো আমাকে পানাহার করান।
২৪৪৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দয়াবশত সবাইকে সাওমে বিসাল করতে নিষেধ করেছেন। সাহাবাগণ বললেন আপনি তো সাওমে বিসাল করেন। তিনি বললেন আমি তো তোমাদের মত নই। আমাকে তো আমার প্রতিপালক পানাহার করান।

পরিচ্ছেদঃ ১২. যার কামোদ্দীপনা জাগে না, সাওমের অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দেওয়া তার জন্য হারাম নয়


২৪৪৪.    আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু দিতেন। তারপর তিনি হেসে দিলেন।
২৪৪৫.    আলী ইবনু হুজর সা’দী ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সুফয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি তোমার আব্বাকে আয়িশা (রাঃ) থেকে এ কথা বর্ণনা করতে শুনেছ যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় তাঁকে চুমু দিতেন? তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন, হ্যাঁ, শুনেছি।
২৪৪৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় আমাকে চুমু দিতেন। তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে নিজের কামোদ্দীপনাকে আয়ত্তে রাখতে পারে যেমন আয়ত্তে রাখতে সক্ষম ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কামোদ্দীপনাকে।
২৪৪৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও সুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় (স্ত্রীদেরকে) চুম্বন ও স্পর্শ করতেন। তবে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ রাখায় তোমাদের সবার চেয়ে তিনি অধিকতর শক্তিশালী ছিলেন।
২৪৪৮.    আলী ইবনু হুজর ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় চুমু দিতেন। তিনি তাঁর প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে তোমাদের সকলের চেয়ে অধিকতর ক্ষমতাবান ছিলেন।
২৪৪৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় (স্ত্রীদেরকে) স্পর্শ করতেন।
২৪৫০.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও মাসরুক (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ করতেন। তবে তিনি তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ছিলেন অথবা বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম? এ ব্যাপারে আবূ আসিম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
২৪৫১.    ইয়াকুর আদ-দাওরাকী (রহঃ) ... আসওয়াদ এবং মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তাঁরা দু’জন এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গমন করলেন। এরপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৪৫২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় তাকে চুমু দিতেন।
২৪৫৩.    ইয়াহইয়া ইবনু বিশর হার্রীরী (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৪৫৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়ামের মাসেও (স্ত্রীদেরকে) চুমু দিতেন।
২৪৫৫.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমযান মাসে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর স্ত্রীদেরকে) চুমু দিতেন।
২৪৫৬.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় (স্ত্রীদেরকে) চুমু দিতেন।
২৪৫৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর অবস্থায় চুমু দিতেন।
২৪৫৮.    আবূর-রাবী যাহরানী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হাফসা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৪৫৯.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তি চুম্বন করতে পারে কি? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালমা (রাঃ) এর প্রতি ইশারা করে বললেন, একে জিজ্ঞেস কর। (তাকে জিজ্ঞােস করলে) তিনি বললেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেন। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগে পরের সমূদয় গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, শোন আল্লার শপথ! আমি আল্লাহ তায়ালাকে তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক ভয় করি।

No comments:

Powered by Blogger.