রোগী দেখা ও তাঁর সেবা করার নিয়ম-নীতি
রোগী দেখা ও তাঁর সেবা করার নিয়ম-নীতি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগী দেখাকে ইসলামী অধিকার বলে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু অনেকেই রোগীর সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ও তার সেবা করার নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অবগত নন। বিধায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সেটা রোগীর শান্তনা ও শান্তির পরিবর্তে অশান্তি ও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয় নবীজী (সাঃ) নিজের বাণী ও কর্মের মাধ্যমে আমাদেরকে এতদসংক্রান্ত নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন। প্রতিটি মুসলমানের উচিৎ এ গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া।
(ক) হযরত আয়শা (রাযি.) বলেন–রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভ্যাস ছিল কেউ অসুস্থ হলে নিজের ডান হাত রোগীর শরীরের উপর রেখে দো’আ পাঠ করতন।
(খ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন-রোগী দেখার সুন্নত পদ্ধতি হল তাঁর নিকট গিয়ে কিছু সময় চুপচাপ বসে থাকবে, হৈ চৈ কম করবে।- মেশকাত
(গ) নবীজী (সাঃ) ইরশাদ করেন-উটনির দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময়ের বিরতী পরিমাণ সামান্য সময় রোগীর নিকট বসবে।
(ঘ) হযরত সাঈদ ইবনে মুইসাইয়াব (রাহ.) বলেন- সব থেকে উত্তম রোগী দেখা হল তাঁর নিকট সামান্য সময় বসে দ্রুত উঠে যাওয়া।-মেশকাত
এ সকল বর্ণনার উপর ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে অত্যন্ত জোর দিয়েছেন যে, রোগীর নিকট এত বেশি সময় না বসা চাই, যে সে বিরক্তি ও অস্বস্তি বোধ করে। মোল্লা আলী কারী (রহ.) জনৈক বুযুর্গের ঘটনা বর্ণনা করেন, তিনি বলেন–আমরা একবার বিখ্যাত সূফী বুযুর্গ হযরত সিররী সাফতী (রহ.) কে দেখতে গেলাম, তিনি ছিলেন অসুস্থা। আমরা বেশ কিছুক্ষণ তাঁর নিকট বসে ছিলাম। আর তিনি পেটের ব্যাথায় খুব অস্থির হয়ে গড়াগড়ি দিচ্ছিলেন। পরিশেষে আমরা বললাম-হুযুর ! আমাদের জন্য দু’আ করবেন, আমরা বিদায় নিচ্ছি।
হে আল্লাহ ! আপনি এদেরকে রোগী দেখার নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিন। এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা আছে। কেউ রোগীকে দেখতে গিয়ে সেখানে গেড়ে বসে পড়ল। রোগী বেচারা রোগের জ্বালায় অস্থীর ও পেরেশান ছিল। সে যখন দেখল যে, লোকটি উঠার কোন নামও নিচ্ছে না, তখন বলল “যাতায়াত কারীরাই আমাকে কষ্ট দিচ্ছে”। কিন্তু কিছুতেই আল্লাহর বান্দর বোধ হল না। সে বলল–তাহলে দরজা বন্ধ করে দেব কি ? যাতে লোকজন আসতে না পারে। রোগী বলল- অবশ্যই, তবে বাইর থেকে বন্ধ কর। মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন–কিন্তু কেউ যদ নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারে যে, আমার বসার দ্বারা রোগীর কষ্ট হচ্ছে না, তবে ভিন্ন কথা। -মিশকাত ২/৩১৮
No comments: