Breaking News
recent

মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও সালাতের স্থান-৩য়




পরিচ্ছেদঃ ২৯. সালাতে মুকতাদীরা কখন দাঁড়াবে


১২৪২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের ইকামাত দেওয়া হয় আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ইবনু হাতিম সন্দেহ করেছেন, ذَا أُقِيمَتْ (যখন ইকামত দেওয়া হয়) বলেছেন, না أَوْ نُودِيَ (যখন আহবান করা হয়) বলেছেন।
১২৪৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ইসহাক (রহঃ) মামার ও শায়বান সূত্র বর্ণিত আছে, "যাবৎ না দেখ, আমি বের হয়েছি।"
১২৪৪.    হারুন ইবনু মারুফ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইকামাত দেওয়া হয়। তখন আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে বের হয়ে আসার আগে আমরা কাতার গুলো সোজা করে নিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাঁর মূসাল্লায় গিয়ে দাঁড়ালেন। তাকবীর তাহরিমা বাঁধার আগেই হঠাৎ তার (গোসলের কথা) স্মরণ হয়ে গেল। আমরা তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। অবশেষে তিনি গোসল সেরে এমন অবস্থায় আমাদের সামনে এলেন যে, তাঁর মাথা থেকে পানির ফোঁটা পড়ছিল। তারপর তাকবীর বললেন এবং আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন।
১২৪৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সালাতের ইকামাত হলো। লোকেরা তাদের কাতার করে দাঁড়ালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বের হয়ে এসে তাঁর স্থানে গিয়ে দাঁড়ালেন। এরপর তাদেরকে নিজের স্থানে থাকতে হাত দিয়ে ইশারা করে বের হয়ে গেলেন। পরে গোসল করে আসলেন। তখন তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। অনন্তর তিনি তাদের সালাত আদায় করলেন।
১২৪৬.    ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সালাতের ইকামাত বলা হতো। তিনি আপন জায়গায় দাঁড়াবার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ কাতারে দাঁড়িয়ে যেত।
১২৪৭.    সালামা ইবন শাবীব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, তখন বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের না হওয়া পর্যন্ত ইকামাত দিতেন না। তিনি বের হলে তাকে দেখে ইকামাত দিতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০. যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক’আতও পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে


১২৪৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সালাতের এক রাক’আত পেল সে উক্ত সালাত পেল।
১২৪৯.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাকআত পেল সে উক্ত সালাতই পেল।
১২৫০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ব, ইবনু নুমায়র ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইয়াহইয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তাদের কারো হাদিসে مَعَ الإِمَامِ (ইমামের সাথে) কথাটি নেই। উবায়দুল্লাহ এর রিওয়ায়াতে আছে "সে সম্পূর্ণ সালাতই পেয়েছে।"
১২৫১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূর্যদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক’আত পেয়েছে, সে ফজরের সালাত পেয়েছে এবং যে ব্যাক্তি সূর্যাস্তের পুর্বে আসরের এক রাকআত পেয়েছে, সে আসরের সালাত পেয়েছে।
১২৫২.    হাসান ইবনু রাবী, আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের একটি সিজদা পেয়েছে কিংবা সুর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের একটি সিজদা পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে। এখানে সিজদা দ্বারা রাক’আত বুঝানো হয়েছে।
১২৫৩.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মালিকের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১২৫৪.    হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক’আত পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে। আর যে ব্যাক্তি সূর্যোদয়য়ের পূর্বে ফজরের এক রাক’আত পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে।
১২৫৫.    আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... মা'মার (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১. পাঁচ ফরয সালাতের সময়


১২৫৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, উমার ইবনু আবদুল আযিয (রহঃ) একদিন আসরের সালাতে কিছুটা দেরী করলেন। তখন উরওয়া (রহঃ) তাঁকে বললেন, এতে কোন সন্দেহ নাই যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করেন। উমার ইবনু আবদুল আযীঁয (রহঃ) বললেন, হে উরওয়া! তুমি যা বলবে, বুঝে বলবে। তিনি (উরওয়া) বললেন, আমি বাশীর ইবনু আবূ মাসঊদকে বলতে শুনেছিঃ তিনি বলেন, আমি আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাযিল হয়ে আমার ইমামতি করেন। আমি তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি। তারপর তাঁর সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তারপর তার সঙ্গে সালাত আদায় করি। তারপর তার সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তারপর তার সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তারপর তাঁর সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তিনি তাঁর অঙ্গুলি দ্বারা (এরুপ) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গণনা করেন।
১২৫৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) একদা সালাতে দেরী করে ফেললেন। তখন উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) কুফায় থাকতে একদিন সালাত দেরী করে আদায় করেছিলেন। তখন আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, হে মুগীরা। আপনি একি করলেন? আপনি কি জানেন না যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে সালাত আদায় করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর আবার তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। 

তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনাকে এরুপই (সালাত আদায় করতে) নির্দেশ হয়েছে। তখন উমার উরওয়াকে বললেন, হে উরওয়া! তুমি যা বলবে চিন্তা করে বলবে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাতের ওয়াক্ত ঠিক করে দিয়েছেন? উরওয়া বললেন, বাশীর ইবনু আবূ মাসউদ তার পিতা থেকে এরুপই বর্ণনা করেছেন। তারপর উরওয়া বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) আমার কাছে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেছেন, যখন সূর্যের কিরণ হুজরার আঙ্গিনায় ছিল-তা উপরে উঠার আগে।
১২৫৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেন যখন সূর্যের কিরণ আমার হুজরায় পড়ছিল। তখনো তার ছায়া পড়েনি। আবূ বকরের বর্ণনায় রয়েছে, "তখনো ছায়া উপরে উঠেনি।"
১২৫৯.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নবী-সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেন যখন সূর্যের কিরণ তার হুজরার ভিতর ছিল, হুজরা থেকে উপরে উঠেনি।
১২৬০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেন। যখন সূর্য কিরণ আমার হুজরায় পড়ছিল।
১২৬১.    আবূ গাসসান মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন ফজরের সালাত আদায় করবে, সেটাই ফজরের ওয়াক্ত, যতক্ষণ না সূর্যের উপরাংশ উদিত হয়। তারপর যখন তোমরা যূহরের সালাত আদায় করবে, সেটাই যোহরের ওয়াক্ত, যতক্ষণ না আসরের ওয়াক্ত হয়। তারপর যখন তোমরা আসরের সালাত আদায় করবে সেটাই আসরের ওয়াক্ত, সূর্যরশ্মি হলুদ বর্ণ ধারন না করা পর্যন্ত। অনন্তর যখন তোমরা মাগরিবের সালাত আদায় করবে, সেটাই মাগরিবের ওয়াক্ত শাফাক (সন্ধাকাশের পশ্চিম দিগন্তে উদ্ভাসিত সাদা আলো চিহ্ন) অস্ত না হওয়া পর্যন্ত। আর যখন – তোমরা ইশার সালাত আদায় করবে, সেটাই তার ওয়াক্ত অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত।
১২৬২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আম্বারী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুহরের ওয়াক্ত থাকে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। আসরের ওয়াক্ত থাকে সূর্য কিরণ হলুদ বর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের ওয়াক্ত (পশ্চিমাকাশে) শাফাকের অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত। ইশার ওয়াক্ত রয়েছে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং ফজরের ওয়াক্ত সুর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত।
১২৬৩.    যূহায়র ইবনু হারব এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উভয়ে উপরোক্ত সনদে শু'বা (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। এবং এদের হাদীস রয়েছে যে, শুবা (রহঃ) উক্ত হাদীস এক বার 'মারফূ' রূপে বর্ণনা করেন এবং আরো দুই বার বর্ণনা করতে গিয়ে 'মারফু' করেন নি।
১২৬৪.    আহমাদ ইবনু ইবরাহীম আদ-দাওরাকী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য চলে যাওয়ার পর যুহরের ওয়াক্ত হয় এবং মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া ও আসরের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত থাকে। আসরে ওয়াক্ত সুর্য হলুদ না হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে শাফাক গায়েব না হওয়া পর্যন্ত রয়েছে। ইশার ওয়াক্ত থাকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত। এবং ফজরের ওয়াক্ত থাকে ঊষার উদয়কাল হতে সূর্যদয় না হওয়া পর্যন্ত। আর যখন সূর্য উদয় হতে থাকে তখন সালাত থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে উদিত হয়।
১২৬৫.    আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, ফজরের সালাতের ওয়াক্ত সূর্যের ঊর্ধাংশের উদয় না হওয়া পর্যন্ত। যোহরের সালাতের ওয়াক্ত মধ্যাকাশ থেকে সূর্য ঢলার পর আসর না হওয়া পর্যন্ত। আসরের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ না হওয়া এবং তার নিম্নাংশ অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত সূর্যান্ত থেকে শাফাক গায়েব না হওয়া পর্যন্ত এবং এশার সালাতের ওয়াক্ত অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।
১২৬৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, যে, দৈহিক সুখ ভোগের সাথে জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।
১২৬৭.    যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একব্যাক্তি সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে এই দুই দিন সালাত আদায় কর। তারপর (প্রথম দিন) সূর্য ঢলে পড়তেই তিনি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে বললেন। তিনি আযান দিলেন। তারপর তাঁকে নির্দেশ দিলেন তিনি যুহরের ইকামাত দিলেন। তারপর তিনি নির্দেশ দিলেন বিলাল (রাঃ) আসরের ইকামাত দিলেন। তখন সূর্য উপরে-অবস্থিত শুভ্র, স্বচ্ছ। তারপর তাঁকে নির্দেশ দিলেন। তিনি মাগরিবের ইকামাত দিলেন তখন সূর্য অস্তমিত হয়েছে। তারপর তাকে নির্দেশ দিলেন, তিনি ইশার ইকামাত দিলেন। তখন শাফাক অদৃশ্য হয়েছে। তারপর নির্দেশ দিলেন। তিনি ফজরের ইকামাত দিলেন। তখন মাত্র সুবহে সা’দিক হয়েছে। 

তারপর দ্বিতীয় দিন এলে তিনি যুহরের জন্য তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার পর আযানের নির্দেশ দিলেন। তিনি তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার অপেক্ষা করলেন এবং তাপ যথেষ্ট ঠাণ্ডা হওয়ার পর যুহর আদায় করলেন। তিনি অতঃপর আসর পড়লেন। সূর্য তখনও উপরে, কিন্তু প্রথম দিন অপেক্ষা বিলম্বে। অতঃপর মাগরিব আদায় করলেন-শাফাক অদৃশ্য হওয়ার আগে। তারপর ইশা আদায় করলেন-রাত্রির এক তৃতীয়াংশের পর। তারপর ফজর পড়লেন সুবিহ সা’দিক ফর্সা হওয়ার পর। তারপর বললেন, সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, তোমাদের সালাতের সময় এই দুই দিন যা দেখলে তার মাঝখানে।
১২৬৮.    ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর’আরা আল সামী (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একব্যাক্তি সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে সালাতে উপস্থিত থাকবে। তারপর বিলাল (রাঃ)-কে আদেশ করলেন। তিনি আযান দিলেন ভোরের আধারে। তারপর ফজর আদায় করলেন সূবহি সা’দিক হলে। তারপর যোহরের (আযান দিতে) আদেশ করলেন সূর্য মধ্য আকাশ থেকে ঢলে পড়লে। তারপর আসরের (আযান দিতে) নির্দেশ দিলেন যখন সূর্য উপরে রয়েছে। তারপর মাগরিবের নির্দেশ দিলেন সূর্য অস্ত যেতেই। তারপর এশার নির্দেশ দিলেন শাফাক গায়েব হয়ে গেলে। 

তারপর দ্বিতীয় দিন তাঁকে আদেশ করলেন। তিনি ফজর আদায় করলেন ভোরের আলো উদ্ভাসিত হওয়ার পর। তারপর তাকে যুহরের আদেশ দিলেন; সূর্যের তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার পর তা আদায় করলেন। তারপর আসরের নির্দেশ দিলেন শাফাক শুরু হওয়ার কিছু পূর্বে। তারপর মাগরিবের নির্দেশ দিলেন শাফাক ঢুবে যাওয়ার ক্ষণিক আগে। তারপর তাঁকে ইশার নির্দেশ দিলেন রাতের এক তৃতীয়ংশ অথবা রাতের কিছু অংশ অতিবাহীত হলে, হারামীর এতে সন্দেহ রয়েছে। তারপর যখন ভোর তখন বললেন, কোথায় জিজ্ঞাসাকারী? তুমি যা দেখলে এর মাঝখানেই সালাত ওয়াক্ত।
১২৬৯.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক প্রশ্নকারী এসে সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি তখন তার কোনও উত্তর দিলেন না। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, তারপর ফজর আদায় করলেন যখন ফজরের ওয়াক্ত (মাত্র) প্রতিভাত হল। আর লোকেরা (অন্ধকারের জন্য) একে অন্যকে চিনতে পারছিল না। তারপর তাকে (বিলালকে) আদেশ করলেন। অতঃপর তিনি যুহররের ইকামাত দিলেন সূর্য হেলামাত্র। তখন কেউ কেউ বলাবলি করছিল যে, এখন দুপুর হয়েছে মাত্র। অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত ছিলেন। তারপর তাঁকে (বিলালকে) আদেশ করলেন। তিনি আসরের ইকামাত দিলেন সূর্য তখনও উপরেই ছিল। তারপর তাকে (বিলালকে) আদেশ করলেন। তিনি মাগরিব আদায় করলেন সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র। তারপর তাকে (বিলালকে) আদেশ করলেন। তিনি এশার ইকামাত দিলেন শাফাক অদৃশ্য হওয়ার পর। 

এর পরের দিন ফজরের সালাত বিলম্বিত করলেন এমন কি সালাত শেষ করার পর কেউ কেউ বলাবলি করছিল যে, সূর্য উঠে গেছে কিংবা প্রায় উঠে উঠে। তারপর যুহর দেরী করে আদায় করলেন গত দিনের আসরের ওয়াক্তের কাছাকাছি সময়ে। তারপর আসর এতখানি দেরী করে আদায় করলেন যাতে সালাতশেষে লোকেরা বলছিল যে, সূর্য লাল হয়ে গিয়েছে। তারপর মাগরিবে এতখানি দেরী করলেন যে, শাফাক গায়েব হওয়ার কাছাকাছি সময় এসে গেল। তারপর এশা রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করলেন। তারপর ভোর হলে প্রশ্নকারীকে ডেকে বললেন, ওয়াক্ত এই সীমার মধ্যবতী।
১২৭০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন এক প্রশ্নকারী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে সালাতের ওয়াক্ত সমন্ধে প্রশ্ন করল-পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে রয়েছে দ্বিতীয় দিন মাগরিবের সালাত আদায় করলেন 'শাফাক' গায়েব হওয়ার পূর্বে
১২৭১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন গ্রীষ্মের তীব্রতা বেড়ে যায়, তখন সালাত ঠাণ্ডা করে আদায় করবে। কেননা তাপের তীব্রতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত।

পরিচ্ছেদঃ ৩২. তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ কমে আসলে যোহর আদায় করা মুস্তাহাব


১২৭২.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের হুবহু অনুরুপ।
১২৭৩.    হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী, আমর ইবনু সাওয়াদ ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, গ্রীষ্মের দিনে উত্তাপ একটু ঠান্ডা হলে সালাত আদায় করবে। কেননা, তাপের তীব্রতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। 

আমর বলেন, আবূ ইউনূস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উত্তাপ একটু ঠাণ্ডা হলে সালাত আদায় কর। কেননা, গ্রীষ্মের তীব্রতা জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। 

আমর বলেন, ইবনু শিহাব ইবনুল মূসায়্যাব ও আবূ সালামা আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্তরূপ বর্ণনা করেছেন।
১২৭৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই উত্তাপ জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভাত। সূতরাং তোমরা বেলা একটু ঠাণ্ডা হলে সালাত আদায় করবে।
১২৭৫.    ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) আমার নিকট কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গ্রীষ্মের সময় সালাত বেলা একটু ঠাণ্ডা করে পড়বে। কেননা, গ্রীষ্মের প্রখরতা জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভূত।
১২৭৬.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুআযযিন যুহরের আযান দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটু ঠাণ্ডা হতে দাও, একটু ঠান্ডা হতে দাও! অথবা বললেন, একটু অপেক্ষা কর, একটু অপেক্ষা কর! আর বললেন, গ্রীষ্মের প্রখরতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। কাজেই যখন গ্রীষ্ম প্রখর হবে, তখন একটু ঠাণ্ডা হলে সালাত আদায় করবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তিনি এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলার ছায়া দেখতে পেলাম।
১২৭৭.    আমর ইবনু সাওয়াদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (শব্দ হারামালা-এর) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামের আগুন তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলল, হে রব! আমার একাংশ আরেকাংশকে খেয়ে ফেলল। তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে এবং আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। এ কারণেই তোমরা গ্রীষ্মের প্রখরতা ও ঠাণ্ডার তীব্রতা অনুভব করে থাক।
১২৭৮.    ইসহাক ইবনু মূসা আল-আনসারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন গ্রীষ্ম আসে, তখন একটু ঠান্ডা হলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গ্রীষ্মের তীব্রতা জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। তিনি আরও বলেন, জাহান্নামের আগুন তার রবের কাছে অভিযোগ করল, তখন তাকে প্রতি বছর-দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে এবং আরেকটি গ্রীষ্মকালে।
১২৭৯.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম বলল, হে রব! আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলল। আমাকে শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিন। তখন তাকে দুটি শ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং আর একটি গ্রীষ্মকালে। অতএব, তোমরা যে শীত অনুভব কর, তা জাহান্নামের শ্বাস; আর যে গ্রীষ্ম অনুভব কর, তাও জাহান্নামের শ্বাস।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. প্রচণ্ড রোদ না হলে যোহরের সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব


১২৮০.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়লে যূহরের সালাত আদায় করতেন।
১২৮১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রচণ্ড রোদে সালাত আদায় করতে আমাদের অসুবিধার কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেন নি।
১২৮২.    আহমাদ ইবনু ইউনূস ও আওন ইবনু সাল্লাম (রহঃ) ... খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এস রোদের প্রচণ্ডতার অভিযোগ পেশ করলাম, আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেননি। যুহায়র (রহঃ) বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহঃ) এর কাছে জানতে চাইলাম, তা কি যুহরের সালাত ছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম যুহরের সালাত আগে ভাগে আদায় করার বিষয়ে কি ছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
১২৮৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে প্রচণ্ড রোদে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে কপাল রাখতে না পারলে সে তার কাপড় বিছিয়ে তার উপর সিজদা দিত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. আসরের সালাত আগেভাগে আদায় করা মুস্তাহাব


১২৮৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহু (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করতেন তখন সূর্য উচুতে তেজোদীপ্ত থাকত। এরপর কোন লোক মদিনার মহল্লার দিকে গমন করতেন। মহল্লায় পৌছার পরও সূর্য উচুতে থাকত। মহল্লায় পৌছার কথাটি কুতায়বা (রহঃ) উল্লেখ করেন নি।
১২৮৫.    হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করতেন যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হত।
১২৮৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম। এরপর কেউ কেউ কুবায় যেত, সে গন্তব্যে পৌছে যেত অথচ তখনও সূর্য উচুতে থাকত।
১২৮৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়াহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম। এরপর লোকজন বনী আমর ইবনু আউফ এর মহল্লায় যেতেন। সেখানে তাদের আসরের সালাতরত অবস্থায় পেতেন।
১২৮৮.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আলা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি যুহরের সালাত আদায় করে বসরায় আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর গৃহে প্রবেশ করলেন। তার গৃহটি ছিল মসজিদের পাশেই। আমরা তাঁর কাছে গেলে বলেলেন, তোমরা আসরের সালাত আদায় করেছ কি? আমরা তাকে বললাম, আমরাতো এখনই যুহরের সালাত আদায় করলাম। তিনি বললেন, তোমরা এখন আসরের সালাত আদায় কর। আমরা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। সালাত থেকে আমরা যখন ফিরলাম তখন তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, এটা মুনাফিকের সালাত, যে বসে বসে সূর্যের অপেক্ষা করে; এমনকি সূর্যটি শয়তানের দুই শিং এর মাঝামাঝি আসলে সে দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর মারে, আল্লাহকে সে কমই স্মরণ করে।
১২৮৯.    মানসুর ইবনু আবূ মূযাহিম (রহঃ) ... আবূ উমামা ইবনু সাহল (রহঃ) বলেন, আমরা উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) এর সাথে যুহরের সালাত আদায় করলাম। এরপর বের হয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমরা যেয়ে দেখি তিনি আসরের সালাত আদায় করছেন। আমি বললাম, চাচাজান এটি কোন সালাত যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসর, আর এটই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত যা আমরা তাঁর সঙ্গে আদায় করতাম।
১২৯০.    আমর ইবনু সাওয়াদ আল আমিরী, মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে আসরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে বনী সালামার এক ব্যাক্তি তাঁর কাছে এল এবং বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার জন্য একটি উট যবেহ করার ইচ্ছা করেছি, আমরা চাই যে, আপনি সেখানে তাশরীফ নিবেন। তিনি বললেন আচ্ছা। এরপর তিনি রওনা হলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে গেলাম, আমরা যেয়ে দেখলাম তখনও উটটি যবেহ করা হয়নি। এরপর আমরা যবেহ করলাম। তার গোশত টূকরো করা হলো, তারপর তা রান্না করা হলো, এরপর সূর্য ডুবে যাবার আগেই আমরা তা খেলাম। মুরাদী (রহঃ) বলেন, ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) ইবনু লাহী’আ ও আমর ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১২৯১.    মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আর রাযি (রহঃ) ... রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আসর আদায় করতাম। এরপর উঠ যবেহ করা হত এবং তা দশভাগে বিভক্ত করা হত, এরপর তা রান্না করতাম এবং সূর্য ডুবে যাবার আগেই ভূনা গোশত খেতাম।
১২৯২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আওযাঈ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণিত, তবে রাবী বলেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় আসরের সালাত শেষে উট যবেহ করতাম, কিন্তু তিনি বলেননি যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. আসরের সালাত ছুটে যাওয়া সম্পর্কে কঠোর বাণী


১২৯৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আসরের সালাত ছুটে যায় তার অবস্থা এমন যে, যেন তার পরিজন ও সস্পদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
১২৯৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আবূ-নাকিদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমর বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। আবূ বাকর (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মারফু।
১২৯৫.    হারুন ইবনু সাঈদ-আন আয়লী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আসর ছুটে যায় তার অবস্থা এরূপ যে, যেন তার পরিবার ও সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬. যারা বলেন, মধ্যবর্তী সালাত আসরের সালাত, তাদের প্রমান


১২৯৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ তাদের কবর ও ঘরকে আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন। কেননা তারা আমাদের মধ্যবতী সালাত থেকে বিরত রেখেছে এমন কি সূর্য অস্ত গেল।
১২৯৭.    মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকর আলী মুকাদ্দামী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১২৯৮.    ইবনুল মূসান্না, মুহাম্মদ বাশশার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন তারা আমাদেরকে মধ্যবতী সালাত আদায় থেকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে এমন কি সূর্য ডুবে গেল। আল্লাহ তাদের কবর, গৃহ কিংবা উদর অগ্নিতে পরিপূর্ণ করেদিন। [শু'বা (রহঃ) "ঘর নাকি উদর" এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন।]
১২৯৯.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ঘর এবং কবর (এতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করেন নি)।
১৩০০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেনঃ যখন পরিখার কোন এক মুখে বসা ছিলেন। তারা আমাদের মধ্যবতী সালাত থেকে বিরত রেখেছে এমন কি সূর্য ঢুবে গেল। আল্লাহ তাদের কবর ও ঘরকে অগ্নিময় করে দিন। অথবা বলেছেন, কবর, উদরকে আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন।
১৩০১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের দিন বলেছেন, তারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত-আসরের সালাত থেকে বিরত রেখেছে আল্লাহ তাদের ঘর ও কবরকে আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন। এরপর তিনি এ সালাত মাগরিব ও এশার মধ্যবতী সময়ে আদায় করেন।
১৩০২.    আওন ইবনু সালাম আল কুফী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আসরের সালাত থেকে বিরত রাখে। এমনকি সূর্য লাল কিংবা হলুদ বর্ণ হয়ে গেল। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওরা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত আসরের সালাত থেকে বিরত রাখল। আল্লাহ তাদের উদর ও কবরকে অগ্নিময় করে দিন।
১৩০৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবূ ইউনূস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) আমাকে তার জন্য কুরআন শরীফের একটি কপি লিখে দিতে আদেশ করলেন। এবং বললেন, যখন তুমি আয়াত, "যখন তুমি তোমার সালাতের প্রতি যত্নবান হবে বিশেষত মধ্যবতীঁ সালাতের" (বাকারাঃ ২৩৮) এ আয়াতে পৌছবে তখন আমাকে জানাবে। তিনি বলেন আমি উক্ত আয়াতে পৌছলে তাঁকে অবহিত করলাম, এবং তিনি আমাকে দিয়ে লিখালেনঃ তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবতীঁ সালাত ও আসরের সালাত এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীত ভাবে দাঁড়াবে।” (বাকারাঃ ২৩৮) (এরপর) আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরুপ শুনেছি।
১৩০৪.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে এবং আসরের সালাতের প্রতি" (বাকারাঃ ২৩৮) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আর আমরা তা পড়েছি যত দিন আল্লাহর ইচ্ছা। এরপর আল্লাহ তা রহিত করে দিলেন। এরপর অবতীর্ণ হল, "তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবতী সালাতের" (বাকারাঃ ২৩৮)। সে সময়ে এক ব্যাক্তি যিনি ‘শাকীক' এর কাছে বসা ছিলেন তিনি বললেন, তাহলে এ হচ্ছে আসরের সালাত। তখন বারা (রাঃ) বললেন, কিরূপে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে এবং কিভাবে আল্লাহ তা রহিত করে দিলেন আমি তা তোমাকে অবহিত করেছি। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। 

ইমাম মুসলিম বলেন, এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন আশজাঈ (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে। তিনি বলেন, আমরা এ আয়াতটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কিছুকাল পর্যন্ত পাঠ করেছি। ফুযায়ল ইবনু মারযূক (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
১৩০৫.    আবূ গাসসান আল মিসামাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, খন্দকের দিন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কুরাইশ কাফিরদেরকে ভৎসনা করতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি আসরের সালাত আদায় করতে পারলাম না। অথচ-সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও তো ঐ সালাত আদায় করতে পারি নি। এরপর আমরা এক কংকরময় স্থানের দিকে নেমে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযু করলেন, আমরাও উযু করলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যাস্তের পর আসরের সালাত আদায় করলেন এরপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।
১৩০৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. ফজর ও আসরের সালাতের ফযীলত ও এ দু’ সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া


১৩০৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে পালাক্রমে এক দল ফেরেশতা রাতে এবং এক দল ফেরেশতা দিনে আসতে থাকেন এবং তারা- উভয় দল ফজর ও আসরের সালাতে একত্র হন। এরপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি যাপন করেছিলে তাঁরা ঊর্ধ্বলোকে চলে যান। এরপর তাঁদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রশ্ন করেন, অথচ তিনি তাঁদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত- তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? তখন তাঁরা বলেন আমরা যখন তাদেরকে রেখে আসি তখনও তারা সালাত আদায় করছিলেন আর যখন তাদের কাছে গিয়েছিম তখনও তারা আদায় করছিলেন।
১৩০৮.    মুহাস্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনফেরেশতারা তোমাদের মধ্যে পালাক্রমে আসতে থাকেন। এরপর আবূয যিনাদ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১৩০৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্নিমার চাঁদের দিকে নযর করে বললেনঃ ওহে! তোমরা অচিরেই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তোমরা আল্লাহকে দেখতে গিয়ে পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা সক্ষম হও। তোমরা যেন সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করতে পিছপা হয়োনা। অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত। এরপর জারীর (রাঃ) পাঠ করলেনঃ এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর”।[সূরা তাহাঃ ১৩০]

পরিচ্ছেদঃ ৩৮. সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মুহূর্তেই মাগরীবের প্রথম ওয়াক্ত


১৩১০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ উসামা ও ওয়াকী (রহঃ) আমার কাছে এই সনদে রিওয়ায়াত বর্ণনায় বলেনঃ জেনে রেখ, অচিরেই তোমাদেরকে স্বীয় প্রতিপালকের কাছে পেশ করা হবে, তোমরা তাঁকে দেখতে পাবে; যেমন দেখতে পাচ্ছ এ চাঁদকে। বর্ণনাকারী বলেন- এরপর পাঠ করেন। তিনি জারীরের নাম উল্লেখ করেননি।
১৩১১.    আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ বাকর ইবনু উমার ইবনু রূয়াইবা (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যে সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত আদায় করে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তখন বসরাবাসী এক ব্যাক্তি তাঁকে বললেন, আপনি কি এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। তখন সে ব্যাক্তি বলল, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজ কানে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং আমার হৃদয়ে তা গেঁথে রেখেছি।
১৩১২.    ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদ দাওরাকী (রহঃ) ... ইবনু উমারা ইবনু রূয়াইবা থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূর্যদয়ের ও সুর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তখন কাছে বাসরাবাসী এক লোক ছিলেন। তিনি বললেন, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনেছেন? তিনি (বর্ননাকারী) বললেন হ্যাঁ, আমি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি। লোকটি বললেন, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা বলতে শুনেছি সে স্থানে যে স্থানে আপনি তার থেকে শুনেছেন।
১৩১৩.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ আল আযদী (রহঃ) ... আবূ বাকর (রহঃ) তার পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি শান্ত-স্নিগ্ধ দুই সময়ে সালাত অর্থাৎ ফজর ও আসর আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৩১৪.    ইবনু আবূ উমর, ইবনু খিরাশ (রহঃ) ... হাম্মাম (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত, উক্ত সনদে উভয় রাবী আবূ বাকর (রহঃ) এর পিতার নাম উল্লেখ করে বলেন যে, আবূ বাকর ইবনু মূসা।
১৩১৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালামা ইবনুল আক্‌ওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ডুবে গেলে এবং পর্দার অন্তরালে চলে গেলে মাগরিবের সালাত আদায় করতেন।
১৩১৬.    মুহাম্মদ ইবনু মিহরান আর রাযী ইবনু খাদিজ আর-রাযী ... থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম এমন সময়ে যে, আমাদের কেউ ফিরে যেত এবং নিক্ষিপ্ত র্তীর যে স্থানে পৌছত সে স্থান দেখতে পেত।
১১৩১৭.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... রাফী ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ -এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম, অতঃপর পূর্বের অনুরুপ।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯. ইশার সময় ও তাতে দেরী করা


১৩১৮.    আমর ইবনু সাওয়াদ আমিরী ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত, যাকে আতামা বলা হতো, দেরী করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততক্ষন বের হন নাই, যতক্ষন না উমার (রাঃ) বললেন যে, মহিলা ও বালকেরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে মসজিদের লোকদের বললেন, তোমরা ছাড়া পৃথিবীর কেউই এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। এটি ছিল সেই সময়ের ঘটনা, যখন মানুষের মধ্যে ইসলাম বিস্তার লাভ করেনি। 

হারামালা তার বর্ণনায় অতিরিক্ত বলেন, ইবনু শিহাব বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের জন্য উচিত নয় যে, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের জন্য পিড়াপিড়ি করবে। এটি তখনই বলেছিলেন, যখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উচ্চস্বরে আহবান করেছিলেন।
১৩১৯.    আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনুল-লায়স (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এতে যুহরী এ কথা উল্লেখ করেন নি যে, "আমাকে বলা হয়েছে" এবং তার পরবর্তী অংশ।
১৩২০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, হাজ্জাজ ইবনু শাঈর, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইশার সালাতে) দেরী করেন। এমনকি রাতের এক বড় অংশ অতিবাহিত হয়েগেল। যারা মসজিদে ছিল তারও ঘূমিয়ে পড়ল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর বললেন, এই সালাতের প্রকৃত সময়, যদি না আমি আমার উম্মাতের জন্য একে কষ্টকর বলে মনে করতাম। আবদুর রাযযাকের বর্ণনায় রয়েছেঃ যদি আমার উম্মাতের উপর তা কষ্টকর না হতো।
১৩২১.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা শেষ ইশার সালাত আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপেক্ষায় ছিলাম। রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা আরো কিছু বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন। আমরা জানতাম না যে, জরুরী কোন কাজ তাঁকে তাঁর গৃহে ব্যস্ত রেখেছিল, না অন্য কোন কাজে তিনি মশশুল ছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, তোমরা এমন এক সালাতের অপেক্ষা করছ, যার জন্য তোমরা-ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বীগণ অপেক্ষা করেনি। আমার উম্মাতের উপর যদি তা ভারী না হতো, তাহলে তাদের নিয়ে এই সময়ই সালাত আদায় করতাম। তারপর তিনি মু-আযযিনকে আদেশ দিলেন। সে সালাতের ইকামত দিল এবং তিনি সালাত আদায় করলেন।
১৩২২.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাতের সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে সালাতে দেরী করেন। এমন কি আমরা মসজিদে ঘুমিয়ে পড়ি, আবার জেগে উঠি, আবার ঘুমিয়ে পড়ি, আবার জেগে উঠি। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, তোমরা ছাড়া পৃথিবীর কেউই এই রাতে এই সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না।
১৩২৩.    আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) ... সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা আনাস (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-মাঝরাত পর্যন্ত অথবা মাঝরাত অতিবাহিত হওয়ার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত এশার সালাত বিলম্ব করেন। এরপর তিনি এসে বললেন লোকেরা সালাত আদায় করে শুয়ে পড়েছে তোমরা যতক্ষন পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় ছিলে, ততক্ষন তোমরা সালাতেরত ছিলে বলে গণ্য হবে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কনিষ্ঠ আঙ্গুলে রুপার আংটির চমক দেখতে পাচ্ছি। তখন তিনি তাঁর বাম হাতের আঙ্গুল উঠিয়েছিলেন।
১৩২৪.    হাজ্জাজ ইবনুুশ শাঈর ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমনকি মাঝ রাতের কাছাকাছি সময় হয়ে গেল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন। তখন আমি যেন তাঁর হাতের রুপার আংটির চমক দেখছিলাম।
১৩২৫.    আবদুল্লাহ ইবনু সাব্বাহ আ-আত্তার (রহঃ) ... কুবুরা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এতে "তারপর আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন"—অংশটি উল্লেখ করেন নি।
১৩২৬.    আবূ আমির আল আশ’আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার সঙ্গীরা যারা নৌকায় করে আমার সাথে এসেছিল, মদিনার একটি কংকরময় প্রান্তরে অবতরণ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একদল প্রত্যেক রাতে এশার সালাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পালাক্রমে আসত। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, একরাতে আমি ও আমার কতিপয় সাথীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হলাম। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কাজে কাজে মশশুল ছিলেন। ফলে এশার সালাতে দেরী করলেন। এমন কি অর্ধ রাত্রি হয়ে গেল। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি উপস্থিত লোকদের বললেন, তোমরা নিজ জায়গায় থাক, আমি তোমাদের বাতলিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের জন্য সুসংবাদ, তোমাদের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, এই সময় তোমরা ছাড়া আর কেউই সালাত আদায় করছেনা অথবা বললেন, তোমরা ছাড়া আর কেউই এ সময় সালাত আদায় করে নি বর্ণনাকারী বলেন, আমি ঠিক করে বলতে পারছি না, তিনি এই দুটি বাক্যের কোনটি বলেছিলেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা শুনে আনন্দের সাথে এলাম।
১৩২৭.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রাঃ) বলেন যে, আমি আতা-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার নিকট কোন সময়টি উত্তম যে, আমি একাকী বা জামা'আতে ইশার সালাত আদায় করব, যাকে লোকেরা আতামা বলে? আতা বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে এশার সালাতে উপস্থিত হতে দেরী করেন এমন কি লোক জন ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে উঠে। আবার ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে উঠে। তারপর উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আস্‌-সালাত! 

আতা বর্ণনা করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন, আমি এখনও যেন দেখতে পাচ্ছি যে, তার মাথা থেকে পানি পড়ছে, তখন তাঁর হাত তাঁর মাথার এক পাশে রাখা ছিল। আর তিনি বললেন- আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদের এই সময় সালাত আদায় করতে আদেশ দিতাম। 

ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আমি আতা’র কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তার মাথার উপর হাত রেখে ছিলেন এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর কাছে কিভাবে বর্ণনা করেছেন? তখন আতা তার আঙ্গুলগুলো কিছুটা ফাঁক এবং আঙ্গুলের অগ্রভাগগুলো মাথার উপরিভাগে রাখেন। তারপর এভাবে আঙ্গূলটেনে আনেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি চেহারার দিকের কানের পার্শু স্পর্শ করে। এরপর হাত নিয়ে আসেন চখ-কানের মধ্যস্থল ও দাড়ির পার্শ্ব পর্যন্ত। তিনি এটা ধীরেও করেননি, দ্রুতও নয়, এভাবেই নিয়ে আসেন। 

ইবনু জুরায়জ বলেন যে, আমি আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ইশার সালাত কতক্ষণ বিলম্ভ করে আদায় করেছিলেন? তিনি বললেন, আমি জানি না, আতা বলেন, আমি এটাই পছন্দ করি যে, একাকীই হই বা ইমাম হিসাবে আদায় করি ইশার সালাত ততক্ষন পর্যন্ত দেরী করে আদায় করি, যেরূপ দেরী করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন। একাকী আদায় করার সময় দেরী করা যদি তোমার জন্য কষ্টকর হয় অথবা জামা'আতে পড়া অবস্থায় যদি লোকদের জন্য কষ্ট কর হয়, তাহলে মধ্যম সময়ে এই সালাত আদায় করবে। তাড়াতাড়িও করবে না অথবা বেশী দেরীও করবে না।
১৩২৮.    ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত দেরী করে আদায় করতেন।
১৩২৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মতই সালাত আদায় করতেন; তবে ইশার সালাত তোমাদের চাইতে একটু দেরী করে আদায় করতেন এবং সালাত সংক্ষেপে আদায় করতেন। আবূ কামিলের অপর এক বর্ণনায় يُخِفُّ এর স্থলে يُخَفِّفُ বর্ণিত হয়েছে।
১৩৩০.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, বেদুঈনরা যেন তোমাদের সালাতের নামকরণে তোমাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার না করে। স্মরণ রেখো, এ সালাতের নাম ইশা। বেদুঈনরা সে সময় উটের দুগ্ধ দোহন করে (যাকে আতামা বলে) তাই তারা একে আতামা নামে অবহিত করে থাকে।
১৩৩১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, বেদুঈনরা যেন তোমাদের ইশার সালাতের নামকরণে প্রধান্য লাভ না করে। কেননা আল্লাহর কিতাবে একে ইশা নামে অতিহিত করা হয়েছে; কিন্তু বেদুঈনরা সে সময় উটের দুগ্ধ দোহন করে বলে একে আতামা বলে।

পরিচ্ছেদঃ ৪০. ফজরের সালাত প্রত্যুষে প্রথম ওয়াক্তে যাকে ‘তাগলীস’ বলা হয়, আদায় করা মুস্তাহাব এবং তাতে সূরা পাঠের পরিমাণ


১৩৩২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুমিন মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করে ফিরতেন নিজ নিজ চাদর গায়ে জাড়িয়ে এবং কেউ তাদেরকে চিনতে পারত না।
১৩৩৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু'মিন মহিলারা গায়ে চাদর জড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাতে শরীক হতেন। তারপর নিজ গৃহে ফিরে যেতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করতেন বিধায় তাদেরকে চেনা যেতো না।
১৩৩৪.    নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী ও ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন যে, মহিলারা গায়ে চাদর জড়িয়ে চলে যেতেন, কিন্তু অন্ধকার হেতু তাদেরকে চেনা যেতো না। আনসারী তাঁর অপর এক বর্ণনায় مُتَلَفِّعَاتٍ এর স্থলে مُتَلَفِّفَاتٍ বর্ণনা করেছেন।
১৩৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাজ্জাজ মদিনায় উপস্থিত হলে আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে (সালাতের সময় সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য মধ্যাকাশ থেকে ঢলে পড়লেই যুহরের সালাত আদায় করতেন, সুর্যের আলো পরিষ্কার থাকা অবস্থাতেই আসরের সালাত আদায় করতেন, সূর্য ডুবলেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন এবং এশার সালাত কখনো দেরী করে আবার কখনো তাড়াতাড়ি করে আদায় করতেন। যখন দেখতেন যে, লোকজন সমবেত হয়েছে তখন তাড়াতাড়ি করে আদায় নিতেন। আর যখন দেখতেন যে, লোকদের দেরী হচ্ছে তখন তিনিও বিলম্ব করতেন। আর ফজরের সালাত সাহাবাগণ অথবা রাবী বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই আদায় করতেন।
১৩৩৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাজ্জাজ সালাত দেরী করে আদায় করতেন। অতঃপর আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সালাতের সময় সম্পর্কে উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।
১৩৩৭.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... সায়্যার ইবনু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে আবূ বারযা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। শু'বা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি নিজেই শুনেছেন? সায়্যার বলেন, আমি যেন এই মুহূর্তেই শুনতে পাচ্ছি। এরপর সায়্যার বলেন, আমি আমার পিতাকে আবূ বারযা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি আবূ বারযা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কোন কোন সালাত অর্থাৎ এশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করতে কুণ্ঠিত হতেন না। তবে এশার সালাতের পূর্বে নিদ্রা যেতে এবং পরে আলোচনায় মশশুল হতে অপছন্দ করতেন। 

শুবা বলেন, এরপর আমি আবূ বারযা (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, এবং জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য ঢলে পড়ত। আসরের সালাত আদায় করতেন, যখন সালাত শেষে কোন ব্যাক্তি মদিনার শেষ প্রান্তে চলে যেত এবং সূর্য তখনো সজীব থাকত। 

শুবা বলেন, পরে আমি আবার আবূ বারযা (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন যে, সালাত শেষ করে মুসল্লী যখন ফিরে বসত, তখন সামনে বসা লোকটি পরিচিত হলে তাকে চিনতে পারত। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ ফজরের সালাতে ৬০ থেকে ১০০ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।
১৩৩৮.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ এশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ভ করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। তিনি ইশা'র সালাতের পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং সালাতের পরে গল্পগুজব করাকে পছন্দ করতেন না। রাবী শু'বা বলেন এরপর আমি আবার আমার উস্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত।
১৩৩৯.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ বারযা আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করতেন। এশার সালাতের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা তিনি অপছন্দ করতেন। ফজরের সালাতে তিনি ৬০ থেকে ১০০ আয়াত পাঠ করতেন। এমন সময় সালাত শেষ করতেন, যখন আমরা একে অপরের চেহারা চিনতে পারতাম।

No comments:

Powered by Blogger.