Breaking News
recent

মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও সালাত এর স্থান-৪র্থ




পরিচ্ছেদঃ ৪১. সালাতের বৈধ সময় থেকে বিলম্বে সালাত আদায় মাকরূহ আর ইমাম বিলম্ব করলে মুক্তাদী কি করবে?


১৩৪০.    খালাফ ইবনু হিশাম, আবূ রাবী আয যাহরানী ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, যখন তোমার উপর এমন সব আমীর হবেন, যারা নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে সালাত আদায় করবে অথবা সালাতের সময় ফাওত করে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে? আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনি আমাকে কি করতে বলেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সালাত যথা সময়ে আদায় করে নিবে। তারপর তাদের সঙ্গে যদি পাও তবে তুমি আবার আদায় করে নিবে এবং তা হবে তোমার জন্য নফল। বর্ণনাকারী খালাফ তাঁর বর্ণনায় عَنْ وَقْتِهَا শব্দ উল্লেখ করেন নি।
১৩৪১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ যার! আমার পরে এমন সব শাসক আসবে, যারা সালাতকে মেরে ফেলবে। তখন তুমি তোমার সালাত যথাসময়ে আদায় করে নিবে। আর সময়মত যদি তাদের সঙ্গে পড়তে পার, তবে তা হবে তোমার জন্য নফল। নতুবা তুমি তো তোমার সালাত হিফাযত করেই ফেলেছ।
১৩৪২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খলীল (বন্ধু) আমাকে এই অসিয়্যত করেছেন যে, আমি যেন (আমীরের) কথা শুনি ও মানি, যদিও তিনি হাত-পা কাটা দাস হন এবং আমি যেন যথাসময়ে সালাত আদায় করি। অতএব যদি দেখতে পাও যে লোকেরাও সালাত আদায় করে ফেলেছে, তাহলে তুমি তো তোমার সালাত আদায় করেই নিয়েছ অন্যথায় (তুমি তাদের সঙ্গে সালাত আদায় করলে) তা তোমার জন্য নফল হবে।
১৩৪৩.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরু স্পর্শ করে বললেন, তুমি কি করবে, যখন এমন এক সমাজ থাকবে যারা যথাসময় থেকে বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে? আবূ যার (রাঃ) বললেন, আপনি আমাকে কি নির্দেশ করেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যথাসময় সালাত আদায় করে নিজের প্রয়োজনে বেরিয়ে যাবে। এরপর যদি সালাতের ইকামত হয় এবং তুমি মসজিদে উপস্থিত থাক, তাহলে তুমিও সালাত আদায় করে নিবে।
১৩৪৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূল আলিয়া বাররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন ইবনু যিয়াদ সালাত আদায়ে দেরী করলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) আমার কাছে আসলেন। আমি তার জন্য একটি কুরসী রাখলাম এবং তিনি তাতে বসলেন। আমি তার কাছে ইবনু যিয়াদের এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। (তা শুনে) তিনি তার ঠৌটে কামড় দিলেন এবং আমার রানে হাত মেরে বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞাসা করছ, আমিও তেমনি আবূ যার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আর তিনিও আমার রানে হাত মারলেন যেমনভাবে আমি তোমার রানে হাত মেরেছি।

তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করেছিলাম, যেমনভাবে তুমি আমাকে প্রশ্ন করেছ এবং তিনিও আমার রানে হাত মেরেছিলেন। যেমনভাবে আমি তোমার রানে হাতমেরেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তুমি সালাত যথাসময় আদায় করে নাও। তারপর যদি তাদের সঙ্গে সালাত পাও তাহলে তুমিও আদায় করেনিও। আর এমন বলোনা যে, আমি সালাত আদায় করে ফেলেছি, তাই আবার সালাত আদায় করব না।
১৩৪৫.    আসিম ইবনু নাযর আত তায়মী (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা এমন এক সমাজে থাকবে যারা যথাসময় থেকে বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন কি করবে? অথবা বলেছেন, তুমি কি করবে? অতঃপর বললেন, যথাসময়ে সালাত আদায় করবে। এরপর যদি সালাতের ইকামাত হয়, তাহলে তাদের সঙ্গেও সালাত আদায় করবে এবং তা হবে তোমার জন্য অতিরিক্ত সাওয়াব।
১৩৪৬.    আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) ... আবূল আলিয়া বাররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনুুস সামিত কে বললাম, আমরা জুমুআর দিন এমন শাসকদের পেছনে সালাত আদায় করি, যারা বিলম্ভ করে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবদুল্লাহ ইবনুুস সামিত (রাঃ) আমার রানে এমনভাবে চাপড় মারলেন যে, আমি ব্যথা পেলাম। তারপর বললেন, আমিও আবূ যার (রাঃ) এর নিকট সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এবং তিনি আমার রানে চাপড় মেরে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন যে, তোমরা যথা সময়ে সালাত আদায় করে নিও এবং তাদের সঙ্গে আদায়কৃত সালাত কে নফল ধরে নিও। বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ অপর এক বর্ণনায় বলেছেন, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার (রাঃ)-এর রানে চাপড় মেরেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪২. জামা’আতে সালাত আদায়ের ফযীলত, তা বর্জনকারীর প্রতি কঠোরতা


১৩৪৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো একাকী সালাত আদায় করার চাইতে জামাআতে পড়ার ফযীলত পঁচিশগুন বেশী।
১৩৪৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো একাকী সালাত আদায়ের চাইতে জামাআতে সালাত আদায় করার ফযীলত পঁচিশগুন বেশী। তিনি বলেন, রাতের এবং দিনের ফিরিশতারা ফজরের সালাতে এসে একত্রিত হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যদি তোমরা চাও তাহলে, (প্রমাণ স্বরূপ) এই আয়াতটি পাঠ করঃ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا "আর (কায়েম কর) ফজরের সালাত, কেননা ফজরের সালাত (একত্রে) উপস্থিত হওয়ার সময়।"
১৩৪৯.    আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বলতে শুনেছি। তবে এই বর্ণনায় بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً এর পরিবর্তে بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে।
১৩৫০.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, জামাআতে সালাত একাকী সালাতের পঁচিশগুন সমান।
১৩৫১.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামের সঙ্গে একবার সালাত আদায় করা একাকী পঁচিশবার সালাত আদায়ের চাইতে উত্তম।
১৩৫২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাআতে সালাত আদায় করার মর্যাদা একাকী সালাত আদায়ের চাইতে সাতাশ গুন বেশী।
১৩৫৩.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কোন ব্যাক্তির জামাআতে সালাত আদায় করা একাকী সালাত আদায়ের সাতাশ গুন বেশী।
১৩৫৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) উপরোক্ত সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... তার পিতা থেকে বর্ণনা, করেন, "বিশগুনেরও বেশী; এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর বর্ণনায় বলেন, সাতাশ গুন।
১৩৫৫.    ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিশ গুনেরও বেশী।
১৩৫৬.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সালাতে কোন কোন লোককে অনুপস্থিত পান। তখন তিনি বললেন, আমি সংকল্প করেছিলাম যে, কোন একজনকে এই মর্মে আদেশ করি যে, সে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করূক এবং আমি তাদের পিছনে যাই, যারা সালাতে আসেনি। তারপর আমি নির্দেশ দেই যে, তাদের ঘর কাঠের আঁটি দ্বারা তাদেরসহ জালিয়ে দেওয়া হোক। তারা যদি জানত যে, এখানে আসলে উটের গোশত ভর্তি মোটা হাঁড় পাওয়া যাবে, তবে নিশ্চয়ই এই সালাতে অর্থাৎ এশার সালাতে উপস্থিত হত।
১৩৫৭.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন যে, মুনাফিকদের জন্য সবচাইতে ভারী সালাত হলো এশা ও ফজরের সালাত। তারা যদি এই দুই সালাতে কী মর্যাদা আছে জানতে পারত; তবে হামাগুড়ি দিয়েও এ দুই সালাতে উপস্থিত হতো। আমি মনস্থ করেছিলাম যে, আমি সালাত সম্পর্কে আদেশ করি যে, ইকামত দেওয়া হোক। এরপর একজনকে নির্দেশ করি যে, সে লোকদের নিয়ে-সালাত কায়েম করুক। তারপর আমি লাকড়ীর বোঝাসহ একদল লোক নিয়ে সেই সব লোকের ঘরে চলে যাই যারা সালাতে উপস্থিত হয় না। অতঃপর তাদের ঘর আগুন দিয়ে তাদের সহ জ্বালিয়ে দেই।
১৩৫৮.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কতকগুলো হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার একটি এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি মনস্ত করি যে, আমি আমার যুবকদের লাকড়ীর আঁটি আমার জন্য প্রস্তুত করে দেয়ার নির্দেশ দেই এবং এক ব্যাক্তিকে আদেশ দেই যে, সে লোকদের সালাত কায়েম করে। এরপর যারা (জামাআতে শরীক না হয়ে) ঘরে বসে থাকবে, তাদের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।
১৩৫৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্নিত হয়েছে।
১৩৬০.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সমস্ত লোক যারা জুমুআয় শামিল হয়না তাদের সম্পর্কে বলেছেন, আমি মনস্থ করেছি যে, এক ব্যাক্তিকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেই, আর যারা জুমুআয় শামিল হয় না, সে সব লোকসহ তাদের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩. যে ব্যক্তি আযান শোনে, মসজিদে আসা তার উপর ওয়াজিব


১৩৬১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ), সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও ইয়াকুব আদ-দাওরাকী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক অন্ধ ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার এমন কোন লোক নেই, যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে। তারপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিজ ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। লোকটি চলে যাচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি (জামা'অোতে) হাযির হবে।
১৩৬২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা দেখেছি যে, সেই সমস্ত মুনাফিক, যাদের মুনাফিকী সম্পর্কে জানাজানি হয়ে পড়েছিল তারা এবং রোগী ব্যাক্তিরা ব্যতীত অন্য কেউ জামা'আতে অনুপস্থিত থাকে না; যে সব রোগী দুই জনের কাঁধে ভর করে চলতে সক্ষম তারাও জামাআতে শরীক হতো। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিদায়াতের রীতিনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এই সকল রিতিনিতির একটি হল সেই মসজিদে সালাত আদায় করা যেখানে আযান দেয়া হয়েছে।
১৩৬৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি পছন্দ করে যে, আগামীকাল বিচার দিবসে সে মুসলমান হিসাবে আল্লাহ সাক্ষাত লাভ করবে, তার উচিত এই সালাতসমুহের সংরক্ষণ করা, যেখানে সালাতের জন্য আহবান করা হয়। কারণ, আল্লাহ তোমাদের নাবীকে হিদায়াতের সকল পথ বাতলে দিয়েছেন। আর এই সমস্ত সালাত হল হিদায়াতের পথ সমুহের অন্যতম। তোমরা যদি এই সকল সালাত ঘরে আদায় কর, যেমন একদল লোক জামাআত ছেড়ে ঘরে সালাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নাবীর সূন্নাতকে ছেড়ে দিলে। তোমরা যদি নাবীর সূন্নাত ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা অবশ্যই গুমরাহ হয়ে যাবে। যে উত্তমরুপে পবিত্র হয়ে এই সকল মসজিদের একটির দিকে অগ্রসর হবে তার প্রত্যেক কদমের জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং একটি গুনাহ মাফ করা হবে। তারপর একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া আর কাউকে জামাআত থেকে বাদ পড়তে আমরা দেখিনি। অনেক লোক দু' জনের কাঁধে ভর করে হেচঁড়িয়ে হেচঁড়িয়ে মসজিদে আসত এবং তাদের সারিতে দাঁড় করিয়া দেয়া হতো।
১৩৬৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবু'শ-শা'সা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা একদিন আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম। মুআযযিন আযান দিলেন। তখন এক ব্যাক্তি মসজিদ থেকে উঠে চলে যেতে লাগল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নিজ দৃষ্টিকে তার অনুগামী করলেন। তারপর লোকটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, লোকটি আবূল কাসিম (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথার নাফরমানী করল।
১৩৬৫.    ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) ... আবুশ শা’সা আল মুহারিবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, তিনি এক ব্যাক্তিকে আযানের পরে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, লোকটি আবূল কাসিম (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাফরমানী করল।
১৩৬৬.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আবূ আমরা (রহঃ) বলেন, একদিন উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) মাগরিবের সালাতের পর মসজিদে প্রবেশ করেন এবং একাকী বসে থাকেন; তখন তাঁর কাছে গিয়ে বসলাম। তখন বললেন, ভাতুষ্পূত্র! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি জামাআতে এশার সালাত আদায় করল, সে যেন অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত আদায় করল। আর যে ব্যাক্তি জামাআতে ফজরের সালাত আদায় করল সে যেন সারা রাত সালাত আদায় করল।
১৩৬৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ সাহল উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) থেকে একই সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৩৬৮.    নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) ... আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তোমাদের কারো কাছে কিছু চান না। এমন হবে না যে, তোমাকে ধরে তিনি আধো মূখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
১৩৬৯.    ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আত দাওরাকী (রহঃ) ... আনাস ইবনু সীরিন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুব আল-কাসরী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল। সুতরাং এমন যেন না হয় যে, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তার যিম্মাভুক্ত কোন বিষয়ে তলব করে বসেন। কেননা তিনি তার যিম্মাভুক্ত কোন ব্যাপারে কাউকে তলব করলে নিশ্চিত তাকে ধরে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
১৩৭০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রহঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনূরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। কিন্তু সেখানে فَيَكُبَّهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ এর উল্লেখ নেই।
১৩৭১.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... মাহমূদ ইবনুল রাবী আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী ছিলেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যিনি একজন আনসারও ছিলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং আমি (সালাতে) আমার গোত্রের ইমামতি করি। কিন্তু যখন বৃষ্টি হয় তখন আমার ও তাদের মধ্যকার উপত্যকা পানিতে ডুবে যায়। ফলে তখন আমি তাদের (সালাতের জন্য) মসজিদে আসতে পারি না। অতএব, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার ইচ্ছা হয় যে, আপনি আমার ঘরে আসবেন এবং আমার ঘরের কোন একটি অংশে সালাত আদায় করবেন। আর আমি সেই স্থানটি আমার সালাতের স্থান হিসাবে ব্যবহার করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ শীগ্রই আমি তা করব। 

ইতবান (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরদিন দ্বিপ্রহরে আবূ বাকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে আসেন এবং প্রবেশের অনুমতি চান। আমি তাকে অনুমতি দিলে তিনি প্রবেশ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার ঘরের কোন অংশে আমার সালাত আদায় পছন্দ কর? তখন আমি আমার ঘরের একটি কোণের প্রতি ইঙ্গিত করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন। আমরাও তার পেছনে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। 

ইতবান (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাযীর* পাক করেছিলাম। এই জন্য তাঁকে আটকে রাখলাম। ইতিমধ্যে মহল্লার অন্যান্য প্রতিবেশীরাও এসে একত্রিত হলো। এ সময় তাদের মধ্যে একজন বলল, মালিক ইবনু দাখশান কোথায়? কেউ বলল, সে তো মুনাফিক, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসেনা। তা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরুপ বলবে না। কেননা তোমরা কি দেখনা যে, আল্লাহকে রাযী করার উদ্দেশ্যে সে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে? 

রাবী বলেনঃ উপস্থিত লোকেরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলেই তা ভাল জানেন। এক ব্যাক্তি বলল, আমরা তো মুনাফিকদের প্রতিই তার প্রীতি ও সহানুভূতি দেখতে পাচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে সন্তুষ্ট করার জন্য “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। 

ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমি হুসায়ন ইবনু মুহাম্মাদ আনসারী, যিনি সালিম গোত্রের লোক ছিলেন, তাঁকে মাহমুদ ইবনুুর রাবী (রাঃ) এর হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি হাদীসটির যথার্থতা স্বীকার করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪. কোন ওযরবশত জামা’আতে শরীক না হওয়া


১৩৭২.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে-উপস্থিত হলাম, তারপর তিনি ইউনূস এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। 

তবে এই কথাগুলো বাড়িয়ে বলেন যে, একব্যাক্তি বলল, মালিক ইবনু দাখশান কোথায়? মাহমুদ ইবনুুর রাবী (রাঃ) বলেন, আমি এই হাদীসটি অনেকের কাছে বর্ণনা করেছি। তাদের মধ্যে আবূ আইউব আনসারী (রাঃ)ও শামিল। তিনি বললেন, আমার ধারণা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এইরূপ বলেননি। তখন আমি কসম করে বললাম আমি ইতিবানের কাছে যাব এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করব। তারপর আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং তাকে খুবই বৃদ্ধা দেখতে পেলাম। তাঁর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি তাঁর গোত্রের ইমাম ছিলেন। আমি তাঁর পাশে বসলাম এবং হার্দীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি সেই রকমই বললেন, যে রকম আমি প্রথম বর্ণনা করেছি। যুহরি (রহঃ) বলেন, এরপর আল্লাহর বহু আদেশ নিষেধ অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার জানা আছে। অতএব যে ব্যাক্তি ধোঁকায় না পড়তে সক্ষম হয়, সে যেন ধোঁকায় না পড়ে।
১৩৭৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মাহমূদ ইবনুুর রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই কুলির কথা এখনও আমার স্মরণ আছে, যেটি তিনি আমাদের ঘরে বালতির পানি থেকে আমার উপর ছুঁড়েছিলেন। মাহমুদ (রহঃ) বলেন, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে তারপর তিনি সমুদয় হাদীসটি এই পর্যন্ত বর্ণনা করেন যে, এরপর আমাদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন। আর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বিলম্ব করলাম ঐ জাশীশার জন্য যা আমরা তার জন্য তৈরী করেছিলাম। তিনি ইউনুস ও মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিত পরবর্তী অংশ বর্ণনা করেন নি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫. জামা’আতে নফল সালাত এবং চাটাই, জায়নামাজ ও কাপড় ইত্যাদি পাক বস্তুর সালাত আদায় করা প্রসঙ্গ


১৩৭৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তার দাদী মুলায়কা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাবার তৈরী করে তাঁকে দাওয়াত দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে খেলেন। তারপর বললেন, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমাদের চাটাইয়ের জন্য উঠলাম, যা দীর্ঘ ব্যবহারের কারণে কাল হয়ে গিয়াছিল। আমি তা পানি ছিটিয়ে ধুয়ে নিলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটির উপর দাঁড়ালেন। আমি আর ইয়াতীম বালক তার পেছনে দাঁড়ালাম এবং বৃদ্ধাও আমাদের পেছনে দাড়ালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ফিরে গেলেন।
১৩৭৫.    শায়বান ইবনু ফাররহুখ (রহঃ) ও আবুর-রাবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। কখনো তিনি আমাদের ঘরে থাকাকালে সালাতের ওয়াক্ত হয়ে পড়ত। তিনি আমাদের সেই বিছানা সম্পর্কে, যাতে তিনি বসা ছিলেন, আদেশ করতেন, তখন তা ঝেড়ে তাতে পানি ছিটিয়ে দেয়া হতো। তারপর রাসুলুল্লাহ ইমাম হতেন এবং আমরা তার পেছনে দাঁড়াতাম। আর আমাদের নিয়ে তিনি সালাত আদায় করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের বিছানা খেজুর পাতার তৈরী ছিল।
১৩৭৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের এখানে আসলেন। ঘরে আমি, আমার মা ও আমার খালা উম্মু হারাম ছাড়া কেউ ছিলেন না। তিনি বললেন, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। (সে সময় কোন সালাতের ওয়াক্ত ছিল না)। তখন তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। এক-ব্যাক্তি সাবিতকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাসকে কোথায় দাঁড় করিয়েছিলেন? বললেন, তাঁর ডান পার্শ্বে। তারপর তিনি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গলের জন্য দুআ করলেন। আমার মা আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এইটি আপনার ক্ষুদ্র খাদিম, তার জন্য আল্লাহর কাছে একটু দুআ করুন। আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমার সার্বিক মঙ্গলের জন্য দু’আ করলেন, যার শেষাংশে এইরূপ ছিল, ইয়া আল্লাহ! তাঁর ধন ও সন্তান বৃদ্ধি কর এবং তাতে বরকত দান কর।
১৩৭৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর ডান পার্শ্বে দাঁড় করালেন এবং মহিলাকে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সুত্রে অনুরূপ সনদে বর্ণনা করেছেন।
১৩৭৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন, আর আমি তাঁর পার্শ্বেই ছিলাম। তিনি সিজদায় গেলে কখনো কখনো তাঁর কাপড় আমার গায়ে লেগে যেতো। চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করছিলেন।
১৩৭৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশ করে তাঁকে চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি তার উপর সিজদা করছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬. ফরয সালাত জাম’আতে আদায় করার ফযীলত এবং সালাতের জন্য অপেক্ষা করা ও মসজিদের দিকে অধিক ও যাতায়াতের ফযীলত


১৩৮০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তির জামাআতে সালাত আদায় করা তার ঘরে বা বাজারে সালাত আদায়ের চাইতে বিশ গুণের অধিক ফযীলত রয়েছে। কারণ যখন তাদের কেউ উযু করে, এরপর মসজিদে আসে, একমাত্র সালাতের জন্যই উঠে আসে। সালাত ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্য রাখে না। তখন যে কদম উঠায় তার জন্য তাকে একটি ফযীলত দেওয়া হয় এবং তার থেকে একটি গুনাহ মোচন করা হয়, যে পর্যন্ত না সে মসজিদে প্রবেশ করে। এরপর যখন মসজিদে প্রবেশ করে, যতক্ষন পর্যন্ত সে সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষন সে সালাতে রত গণ্য হয়। আর যতক্ষন পর্যন্ত সে সালাতের স্থানে বসে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত ফিরিশতারা তার জন্য এই বলে দু’আ করতে থাকবে যে, “ইয়া আল্লাহ! তার প্রতি দয়া কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, তুমি তার তাওবা কবুল কর, যতক্ষন না সে অপরকে কষ্ট দেয় এবং অপবিত্র না হয়।
১৩৮১.    সাঈদ ইবনু আমর আল আশ'আসী (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু বাক্‌কার ইবনু রাইয়ান (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
১৩৮২.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতারা তোমাদের মধ্যে তার জন্য দু’আ করতে থাকে, যতক্ষন সে সালাতের স্থানে বসে থাকে। তাঁরা বলতে থাকে ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর, যতক্ষন পর্যন্ত সে অযূ নষ্ট না করে। আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যাক্তি সালাতের মধ্যে গণ্য যতক্ষন তাকে সালাত আটকে রাখে।
১৩৮৩.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতক্ষন কোন বান্দা সালাতের স্থানে থেকে সালাতের অপেক্ষা করে, ততক্ষন তাকে সালাতের মধ্যেই গণ্য করা হয়। আর ফিরিশতারা তার জন্য এই বলে দু'আ করতে থাকে যে, ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমত বর্ষন কর। যতক্ষন না সেই ব্যাক্তি উঠে যায় অথবা হাদাস করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হাদাস কী? তিনি বললেন, নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু নিঃসরণ।
১৩৮৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাক্তিকে যতক্ষন পর্যন্ত সালাত আবদ্ধ রাখে ততক্ষন সে সালাতের মধ্যে গণ্য। সালাত ছাড়া অন্য কিছুই তাকে তার পরিবারের দিকে যেতে বাধা দেয় নি।
১৩৮৫.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল-মুরাদী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে, সে সালাতে আছে বলেই গণ্য করা হয়, যতক্ষন সে হাদাস না করে। আর ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকেন, ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর, ইয়া আল্লাহ! তার উপর রহমত বর্ষণ কর।
১৩৮৬.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হূরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
১৩৮৭.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ’আরি ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যাক্তি সালাতের সব চাইতে বড় প্রতিদানের অধিকারী, যে অধিক দূর থেকে হেঁটে সালাতে আসে। তারপর ঐ ব্যাক্তি যে অপেক্ষাকৃত অল্প দূর থেকে আসে। আর যে ব্যাক্তি ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করার অপেক্ষায় থাকে, সে ব্যাক্তি ঐ ব্যাক্তি অপেক্ষা অধিক সাওয়াবের অধিকারী, যে (একাকী) সালাত আদায় করে নিদ্রা যায়। আবূ করায়বের অপর এক বর্ণনায় "জামা’আতের সাথে ইমামের সঙ্গে সালাত আদায়ের অপেক্ষায় থাকে" উল্লেখ আছে।
১৩৮৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ছিল, যার বাড়ী অপেক্ষা কারো বাড়ী মসজিদ থেকে অধিক দূরে ছিল বলে আমার জানা নাই। কিন্তু তার কোন সালাত বাদ পড়ত না। বর্ণনাকারী বলেন তাকে বলা হল অথবা আমি তাঁকে এ বললাম, তুমি যদি একটি গাধা ক্রয় কর, তাহলে তাতে চড়ে অন্ধকারে এবং গরমের সময় আসতে পারবে। সে বলল,আমার বাড়ী মসজিদের নিকটবর্তি হোক, তাতে আমি খুশি নই। আমি চাই যে, মসজিদে হেটে যাওয়া এবং আমার ঘরে ফিরে আসা আমার আমলনামায় লিখা হোক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা তোমার জন্য পুরাপুরি জমা করেছেন।
১৩৮৯.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) তায়মী থেকে উক্ত সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
১৩৯০.    মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকর অল-মুকাদ্দামী (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যক্তির বাড়ি ছিল মদিনার শেষ প্রান্তে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তার সালাত বাদ পড়ত না। আমার তার জন্য দুঃখিত হলাম এবং আমি তাকে বললাম, হে অমুক! তুমি যদি একটি গাধা কিনে নিতে তাহলে তা তোমাকে তাপ এবং মাটির কীট থেকে রক্ষা করত। লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমার বাড়ী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়ীর নিকটবতীঁ হোক, আমি তা পছন্দ করি না। 

বর্ণানাকারী বলেন তার কথায় আমার মনে বাধল। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাকে তা অবহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ডাকলেন। তার কাছেও সে অনুরূপ কথা বলল এবং জানাল যে, সে তার পায়ে হাটার সাওয়াব কামনা করে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন; তুমি যা আশা করেছ, তা তুমি পাবে।
১৩৯১.    সাঈদ ইবনু আমর আল আশ'আসী, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ও সাঈদ ইবনু আযহার আন-ওয়াসিতী (রহঃ) ... আসিম (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
১৩৯২.    হাজ্জাজ ইবনুুশ-শাঈর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ী মসজিদ থেকে দুরে অবস্থিত ছিল। ফলে আমরা ইচ্ছা করলাম যে, আমরা আমাদের বাড়ীটি বিক্রি করে দেব এবং মসজিদের কাছাকাছি এসে যাব। রাসুলুল্লাহ আমাদের নিষেধ করলেন এবং বললেন, তোমাদের প্রতি কদমে সাওয়াব রয়েছে।
১৩৯৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদের কাছাকাছি কিছু জায়গা খালী হয়। তাতে বানূ সালামার লোকেরা মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করল। এই খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি তাদের বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা নাকি মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা রাখ? তারা বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা মসজিদের কাছাকাছি যাওয়ার মনস্থ করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বানূ সালামা! তোমরা তোমাদের ঘরেই থাক, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হবে।
১৩৯৪.    আসিম ইবনু নাযার আত তায়মী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনূ সালামার লোকেরা বাড়ী পরিবর্তন করে মসজিদের কাছে আসতে ইচ্ছা করে। রাবী বলেন একটি জায়গাও খালী ছিল। এই খবরটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি বললেন, হে বানূ সালামা! তোমরা তোমাদের মহল্লায় থাক, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হবে। তখন তারা বলল, আমরা যদি স্থানান্তরিত হতাম, সেটা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক হত না।
১৩৯৫.    ইসাহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি গৃহে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর হেঁটে আল্লাহর ঘর সমূহের মধ্যে কোন ঘরে গেল, এই জন্য যে আল্লাহর ফরযগুলোর কোন ফরয আদায় করবে। তাহলে তার এক কদমে একটিতে একটি গুনাহ মাফ হবে এবং আরেকটি কদমে এক ধাপ মর্যাদা উন্নীত হবে।
১৩৯৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বর্ণনাকারী বলেন যে, বাক্‌রের হাদীসে আছে যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, বল তো তোমাদের মধ্যে কারো দরজা সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে যদি তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তবে তার (শরীরে) কোন ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা বললেন, কোন মায়লাই থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত এ-ই। আল্লাহ তা’আলা এরদ্বারা পাপ মোচন করেন।
১৩৯৭.    আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির অর্থাৎ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ হল প্রবল স্রোতস্বিণী নদীর মত যা তোমাদের কারো দরজার পাশ দিয়ে প্রবাহিত, যাতে সে ব্যাক্তি প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে। হাসান বলেন, তাতে তার গায়ে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকে না।
১৩৯৮.    আবূ বাকর আবূ শায়বা ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি সকাল-সন্ধা মসজিদে আসা-যাওয়া করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে প্রতি সকাল-সন্ধ্যার জন্য অতিথেয়তার ব্যবস্থা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭. ফজরের সালাতের পর বসে থাকার ফযীলত এবং মসজিদের মর্যাদা


১৩৯৯.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) কে বললাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ এর কাছে বসতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, বহুবার। তারপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে ফজরের অথবা বলেছেন ভোরের সালাত আদায় করতেন, সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকতেন। তারপর যখন সূর্য উদিত হতো তখন তিনি সালাতে দাঁড়াতেন। আর লোকেরা সেথায় জাহিলি যুগের ন্যায় কথাবার্তা বলত ও হাসাহাসি করত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসতেন।
১৪০০.    আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন, তিনি মূসাল্লায় বসে থাকতেন, যতক্ষন না ভালভাবে সূর্যোদয় হত।
১৪০১.    কুতায়বা, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সিমাক (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত। কিন্তু তাতে ভালভাবে (حَسَنًا) শব্দটির উল্লেখ নেই।
১৪০২.    হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) এবং ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালার জন্য নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় স্থান হলো মসজিদ এবং সবচাইতে অপছন্দনীয় স্থান বাজার।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮. ইমামতির জন্য কে বেশী যোগ্য


১৪০৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তিনজন একত্রিত হয় তবে একজন তাদের ইমামতি করবে। আর ইমাম হওয়ার সবচাইতে যোগ্য তিনি, যিনি তাদের মধ্যে কুরআন পাঠ সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ।
১৪০৪.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এবং আবূ গাসসান আল-মিসমাঈ (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
১৪০৫.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও হাসান ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদুরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত।
১৪০৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যাক্তি লোকদের ইমামতি করবেন যিনি আল্লাহর কিতাব পাঠে সবচাইতে অভিজ্ঞ। কুরআন পাঠে যদি সকলেই সমান হয় তবে যিনি তাঁদের মধ্যে সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ। তাতেও যদি সকলে একরকম হয় তবে যিনি আগে হিজরত করেছেন। তাতেও যদি সকলেই সমান হয় তবে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কোন ব্যাক্তি অন্য কোন ব্যাক্তির অধিকারে ইমামতি করবে না এবং অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে তার বিশেষ আসনে বসবে না। আশাজ্জ তাঁর রিওয়ায়াতে ইসলামের স্থলে বয়সের কথা বলেছেন।
১৪০৭.    আবূ কুরায়ব, ইসহাক, আশাজ্জ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণিত।
১৪০৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন, সেই ব্যাক্তই লোকদের ইমামতি করবে যে আল্লাহর কিতাব পাঠে অধিক অভিজ্ঞ এবং তার পাঠে সবার অগ্রগামী। যদি কিতাব পাঠে সকলেই সমান হয়, তবে সে ইমামতি করবে যে আগে হিজরত করেছে। যদি হিজরাতেও সকলেই সমান হয়, তবে বয়সে যে বড়, সে ইমামতি করবে। তোমাদের কেউ অন্য কারো ঘরে কিংবা অন্য কারো কর্তৃত্বের স্থানে ইমামতি করবে না এবং অনুমতি ছাড়া কারো গৃহে তার আসনে বসবে না।
১৪০৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। আমরা সকলেই সমবয়সী যুবক ছিলাম। আমরা বিশ দিন তার কাছে অবস্থান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের জন্য উদগ্রীব আছি। তিনি আমাদের পরিজনদের কাকে কাকে রেখে এসেছি জানতে চাইলেন। আমরা তাঁকে তা জানানাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে অবস্থান কর। আর তাদের শিক্ষা শিক্ষা দাও ও সৎ কাজের আদেশ কর। আর যখন সালাতের সময় হবে, তখন তোমাদের কেউ আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ট ব্যাক্তি সালাতের ইমামতি করবে।
১৪১০.    আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ), খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস আবূ সুলায়মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কয়েকজন লোকসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। আর আমরা সকলেই সমবয়সী যূবক ছিলাম। পরবর্তী অংশ ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরূপ।
১৪১১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমার একজন সাথীসহ এলাম। আমরা যখন তাঁর কাছ থেকে ফিরে যেতে চাইলাম তখন তিনি আমাদের বললেন, যখন সালাতের সময় হয়, তখন আযান দিও; তারপর ইকামত দিও। তারপর তোমাদের মধ্যে যে বয়োজ্যেষ্ট, সে ইমামতি করবে।
১৪১২.    আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) ... খালিদ আল হাযযা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে যে, হাযযা (রহঃ) বলেছেন, তারা উভয়ে কুরআন পাঠে প্রায় সমান ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯. যখন মুসল্মানের উপর কোন বিপদ আসে, তখন সকল সালাতে কুনুতে নাযিলা পাঠ মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ


১৪১৩.    আবু তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাতে কিরা’আত শেষ করতেন ও তাকবীর বলতেন এবং (রুকু থেকে) মাথা উঠাতেন, তখন "সামি’আল্লাহুলিমান হামিদা" "রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ" বলতেন। পরে দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি ওয়ালীদ ইবনুল ওয়ালীদ, সালামা ইবনু হিশাম এবং আয়্যাশ ইবনু আবু রাবী’আকে মুক্তি দাও এবং অন্যান্য দূর্বল মুমিনদের নাজাত দাও। হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর কঠোর শাস্তি অবতীর্ণ কর। তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় দুর্ভিক্ষ নাযিল কর। হে আল্লাহ! লা'নত কর লিহয়ান, রি'ল, যাকওয়ানের উপর এবং উসায়্য গোত্রের উপরও, যারা আল্লাহ্‌ ও রাসুলের অবাধ্যতা করেছে। কিন্তু আমাদের কাছে পরে খবর পৌছেছে যে, কুরআনের এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি লানত করা বাদ দিয়েছেনঃ

لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَىْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ 

"আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন না শাস্তি দিবেন তা আপনার ইখতিয়ারভুক্ত নয়; তারা নিশ্চয়ই যালিম।"
১৪১৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রহঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, "হে আল্লাহ! তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়ের বছরগুলোর অনুরূপ দুর্ভিক্ষ আপতিত কর।" কিন্তু তিনি এর পরের অংশ বর্ননা করেন নি।
১৪১৫.    মুহাম্মাদ ইবন মিহরান আর-রাযী (রহঃ) ... আবু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাদের কাছে হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে রুকুর পর একমাস ব্যাপী কুনূত পড়েছেন। সামি'আল্লাহু লিমান হামিদা বলার পর কুনূতে তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনুল ওয়ালীদকে মুক্তি দাও; হে আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে নাজাত দাও; হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবী'আকে মুক্তি দান কর; হে আল্লাহ! অত্যাচারিত দুর্বল মুমিনদের মুক্তি দাও; হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের শাস্তি কঠোর কর। হে আল্লাহ! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর মত তাদের উপর সেইরূপ দুর্ভিক্ষ নাযিল কর। 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ ছেড়ে দিয়েছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমি মনে করি, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দুআ করা ছেড়ে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, বলা হল, তুমি কি দেখতে পারছ না যে, তারা এসে গেছে (অর্থাৎ কাফিরগণ ইসলাম গ্রহন করেছে এবং নির্যাতিত মুসলিমগণ মুক্তি পেয়ে মদিনায় এসে গেছে)।
১৪১৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রহঃ) তাকে বলেছেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সামনে ইশার সালাত আদায় করছিলেন। তিনি 'সামিআল্লাহু-লিমান হামিদা' বললেন, তারপর সিজদা করার আগে বললেনঃ হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবী'আকে (কাফিরদের হাত থেকে) মুক্তি দান কর। অতঃপর আওযাঈর হাদীসের অনুরূপ ...... ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়ের বছরগুলোর মত দুর্ভিক্ষ নাযিল কর' পর্যন্ত বর্ণনা করেন; কিন্তু এর পরের অংশটি বর্ণনা করেন নি।
১৪১৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... আবু সালামা ইবন আবদুর রহমান (রহঃ), আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শোনেন যে, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের অনুরূপ চিত্র পেশ করব। সুতরাং আবূ হুরায়রা (রাঃ) যুহর, এশা ও ফজরের সালাতে কুনুত পড়তেন। মুসলমানদের জন্য দু’আ করতেন এবং কাফিরদেরকে অভিশাপ দিতেন।
১৪১৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বির-ই মা'উনার মুবাল্লিগদের হত্যাকারীদের প্রতি ক্রমাগত ত্রিশদিন ফজরের সালাতে বদ দু'আ করেছেন। তিনি বদ দু'আ করতেন, রিল যাকওয়ান, লিহয়ান ও উসায়্যা গোত্রের প্রতিও, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করেছে। আনাস (রাঃ) বলেন, বির-ই মা'উনায় শাহাদাত বরণকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনের আয়াত নায়িল করেন। আর আমরা সেই আয়াতটি পাঠ করতাম, অবশেষে তা মানসূখ হয়ে যায়। আয়াতটি হলঃ أَنْ بَلِّغُوا قَوْمَنَا أَنْ قَدْ لَقِينَا رَبَّنَا فَرَضِيَ عَنَّا وَرَضِينَا عَنْهُ "আমার কওমের কাছে সংবাদ পৌঁছে দাও যে, আমরা আমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হয়েছি; তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আমরাও তার প্রতি খুশি।"
১৪১৯.    আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রুকু করার পর কিছু সময়।
১৪২০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আনবারী, আবূ কুরায়ব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে রুকুর পরে এক মাস কুনূত পাঠ করেছেন। রি'ল ও যাক্‌ওয়ান গোত্রদ্বয়ের উপর বদ দু'আ করেছেন। উসায়্যা গোত্র সম্পর্কে বলেছেন, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করেছে।
১৪২১.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ফজরের সালাতের রুকুর পর একমাস পর্যন্ত কুনুত পাঠ করেছেন। উসায়্যা গোত্রের উপর বদদুআ করেছেন।
১৪২২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম, তা কি রুকুর আগে না পরে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আসিম (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, লোকেরা মনে করে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর পরে কুনূত পাঠ করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস কুনূত পাঠ করেছেন, তিনি সেই সমস্ত লোকদের প্রতি বদ দু’আ করেছেন, যারা তাঁর একদল সাহাবীকে হত্যা করেছিল যাদেরকে "ক্বারী" বলা হতো।
১৪২৩.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন সারিয়্যার (বাহিনীর) সম্বন্ধে এত বেশী দুঃখিত হতে দেখিনি। যতখানি দুঃখিত হয়েছিলেন সেই সত্তরজন সাহাবীর জন্য যাদের 'বির-ই মা'উনা-র দিন শহীদ করা হয়েছিল, তাঁদের 'কারী' বলা হতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হত্যাকারীদের এক মাস ধরে বদদু'আ করতে থাকলেন।
১৪২৪.    আবূ কুরায়ব এবং ইবনু উমর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) উক্ত হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের কেউ কারো অপেক্ষা কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
১৪২৫.    আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেন। এতে তিনি লা'নত করেন রি’ল, যাকওয়ান ও উসায়্যা গোত্রের পতি যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করেছে।
১৪২৬.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১৪২৭.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেন। এতে তিনি আরবের কয়েকটি গোত্রের উপর বদদু'আ করেন। এরপর তিনি তা পরিত্যাগ করেন।
১৪২৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ও ইবন বাশশার (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর ও মাগরিবে কুনূত পাঠ করতেন।
১৪২৯.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর ও মাগরিবে কুনূত- পাঠ করেছেন।
১৪৩০.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারাহ আল মিসরী (রহঃ) ... খুফাফ ইবনু ঈমা আল-গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এই দুআ পাঠ করেছেন, হে আল্লাহ! আপনি লানত করুন বানূ লিহয়ান, রি’ল ও যাকওয়ানকে এবং উসায়্যাকে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নাফরমানী করেছে। আর গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদের নিরাপত্তা দান করুন।
১৪৩১.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজ্‌র (রহঃ) ... হারিস ইবনু খুফাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খুফাফ ইবনু ঈমা বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু করে মাথা উঠানোর পর বলেনঃ গিফার, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন; আসলাম, আল্লাহ তাদের নিরাপত্তা দান করুন। আর উসায়্যা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা অমান্য করেছে হে আল্লাহ! বানূ লিহয়ানের প্রতি লানত এবং রি’ল ও যাকওয়ানের প্রতি লানত কর। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় যান। খুফাফ বলেন, এ কারণে কাফিরদের লানত দেওয়া হয়।
১৪৩২.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) ... খূফাফ ঈমা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে "এ কারনে কাফিরদের লানত করা হয়" উল্লেখ করেন নি।

পরিচ্ছেদঃ ৫০. কাযা সালাত আদায় এবং কাযার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব


১৪৩৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজায়বী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় রাত্রে সফর করলেন। অবশেষে যখন তাঁর তন্দ্রা পেল, তখন তিনি শেষ রাত্রে (এক স্থানে) মনযিল করলেন এবং বিলাল (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন, তুমি আমাদের জন্য এ রাতের প্রতি লক্ষ্য রাখ। তারপর বিলাল (রাঃ) সালাত আদায় করেন যা তার সামার্থ ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের সময় ঘনিয়ে এলে বিলাল (রাঃ) পূর্ব দিকে মুখ করে তাঁর বাহনের উপর হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। বিলালের চোখ নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। তখন তিনি তার সাওয়ারীতে হেলান দেয়া অবস্থায়ই ছিলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) বা সাহাবীদের কেউই জাগলেন না, যতক্ষন না সূর্যের কিরণ তাঁদের উপর পতিত হল। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম জাগলেন, এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেরেশান হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হে বিলাল! বিলাল বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান। আপনার আত্মা যিনি ধরে রেখেছেন, আমার তিনি ধরে রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওয়ারীগুলোকে এখান থেকে নিয়ে চল। তারপর কিছুদূর নেওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযু করলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন। তিনি সালাতের ইকামত দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে বললেন, তোমাদের কেউ যদি সালাত ভুলে যায়, তবে স্মরণমাত্র যেন আদায় করে নেয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي "আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর"। ইউনুস (রহঃ) বলেন, এর স্থলে ইবন শিহাব لِلذِّكْرَى পাঠ করতেন।
১৪৩৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা একবার শেষ রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লাম। সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা জাগতে পারনাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সকলেই নিজ সাওয়ারীর মাথায় ধরে নিয়ে চল। কেননা এই মনযিলে আমাদের কাছে শয়তান এসে পড়েছে। বর্ণনাকারী বলেন,-আমরা তা-ই করলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনিয়ে উযু করলেন এবং দুটি সিজদা করলেন; আর ইয়াকুব বলেন, দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। এরপর সালাতের ইকামত দেয়া হলো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করলেন।
১৪৩৫.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে আমাদেরকে বললেন, তোমরা চলতে থাক অপরাহ্নে ও রাত্রিতে, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে পানির নিকট পৌছে যাবে। তারপর লোকেরা এমন ভাবে পথ চলতে লাগল যে, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছিল না। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এভাবে চলছিলেন। এমনকি অর্ধরাত হয়ে গেল, আমি তাঁর পাশে ছিলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তন্দ্রা পেল। তিনি সাওয়ারীর উপর থেকে চলতে লাগলেন। আমি তাঁর কাছে এসে তাকে না জাগিয়ে তাঁকে ঠেস দিলাম। ফলে তিনি সাওয়ারীর উপর সোজা হয়ে গেলেন। 

তিনি বলেন, তারপর চলতে থাকলেন। অবশেষে রাতের বেশী অংশ গত হলে তিনি সাওয়ারীর উপর আবার একদিকে ঢুলতে লাগলেন। আমি তাঁকে না জাগিয়ে আবার ঠেস দিলাম। ফলে তিনি সাওয়ারীর উপর সোজা হয়ে গেলেন। তারপর আবার চলতে লাগলেন। যখন সাহরীর শেষ সময় এলো তখন তিনি পূর্বের দু-বারের চাইতে এত অধিক ঢুলে পড়লেন যে, প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাকে আবার ঠেস দিলাম। তিনি মাথা তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, এই কে? আমি বললাম, আবূ কাতাদা। তিনি বললেন, তুমি কখন থেকে এভাবে আমার সাথে চলেছ? আমি বললাম, সারা রাত ধরে। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করুন, যেহেতু তুমি আল্লাহর নাবীকে হিফাযত করেছ। 

তারপর বললেন, তুমি কি বুঝতে পাচ্ছ? আমরা কি লোকদের থেকে আড়ালে পড়ে গেছি? আবার বললেন, কাউকে কি দেখতে পাচ্ছ? আমি বললাম, এই একজন সাওয়ার। আবার বললাম, এই আর একজন সাওয়ার। এইরুপ আমরা সাতজন সাওয়ারী একত্রিত হলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তা থেকে একটু সরে গেলেন এবং (আরাম করার জন্য) মাথা রাখলেন তারপর বললেন, তোমরা আমাদের সালাতের সময়ের লক্ষ্য রাখবে। যারা জাগলেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। রোদ তার পিঠ স্পর্শ করছিল। 

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমরা সন্ত্রস্ত অবস্থায় উঠলম। তারপর তিনি বললেন, তোমরা আরোহন কর। আমরা আরোহন করলাম এবং চলতে লাগলাম। এমন কি সূর্য যখন উপরে উঠল, তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং উযুর পানির পাত্র চাইলেন। তা আমার কাছে ছিল এবং তাতে অল্প পানি ছিল। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পানি থেকে ভালভাবে উযু করলেন। তিনি বলেন, তাতে কিছু পানি অবশিষ্ট রইল। তারপর আবূ কাতাদা (রাঃ) কে বললেন, তুমি আমাদের জন্য তোমার এ উযুর পাত্রটি হিফাযতে রাখ। শীগ্রই তা থেকে বিরাট ঘটনা প্রকাশ পেতে পারে। তারপর বিলাল (রাঃ) সালাতের আযান দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ফজরের দু-রাক’আত (ফরয) আদায় করলেন। অন্যান্য দিনে যেমন ভাবে আদায় করেন, আজকেও সেভাবেই আদায় করলেন। 

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমরা সাওয়ার হয়ে চললাম। তিনি বলেন, আমরা একে অপরকে চুপে চুপে বলতে লাগলাম, আমরা সালাতের ব্যাপারে যে ক্রটি করেছি, তার কাফফারা কি হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার মধ্যে কি তোমাদের জন্য আদর্শ নেই? তারপর বললেন, ঘুমের ভিতর কোন শৈথিল্য দোষ নেই। শৈথিল্য দোষ তার, যে সালাত আদায় করে না, এমন কি অন্য সালাতের সময় এসে পড়ে। কারো যদি এরুপ হয়, তবে তার উচিত সজাগ হওয়া মাত্র তা আদায় করে নেয়া। তারপর যখন দ্বিতীয়দিন আসবে, তখন যেন ঠিক সময় মত সেই সালাত আদায় করে। 

তারপর বললেন লোকেরা কি করছে বলে তোমরা মনে কর? অতঃপর নিজেই বললেন, "ভোর হলে লোকেরা তাদের নাবীকে দেখতে পেল না। আবূ বকর ও উমার বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনেই রয়েছেন। তিনি তোমাদের পেছনে ফেলে যেতে পারেন না। আর লোকেরা বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চই তোমাদের সামনে রয়েছেন। তারা আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা মেনে নিলেই ঠিক করত"। 

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমরা দুপূরের দিকে তাদের কাছে পৌছলাম। তখন সকল কিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লোকেরা বলতে লাগল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিপাসায় আমরা মরে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বললেন, তোমরা ধ্বংস হবে না। তারপর বললেন, আমার পেয়ালাটি আন। তিনি বলেন, তারপর সেই উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানির পাত্রটি তলব করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে পানি ঢাললেন। আর আবূ কাতাদা (রাঃ) লোকদের পান করাতে লাগলেন। লোকেরা পাত্রের পানি দেখে এতই ভিড় করল যে, সকলেই একে ঘিরে বসল। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখ। তোমরা সকলেই তৃপ্তি লাভ করবে। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারা তাই করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ঢালতে লাগলেন। আর আমি তাদের পান করাতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ছাড়া আর কেউ বাদ রইল না। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ঢেলে আমাকে বললেন, তুমি পান কর। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি পান করার আগে আমি পান করব না। তিনি বললেন, যে লোকদের পানি পান করায় সে সকলের শেষেই পান করে। তিনি বলেন, আমি পানি পান করলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, লোকেরা পানি পান করল আনন্দ ও তৃপ্তি সহকারে। 

রাবী বলেন, [আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী রাবী] আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ বর্ণনা করেন, আমি জামে মসজিদে এই হাদীসটি বর্ণনা করছিলাম। এমন সময় ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বললেন, হে যুবক! তুমি ভেবে দেখ, তুমি কী বলছ। কেননা আমি সে রাতে একজন আরোহী ছিলাম। আমি বললাম, নিশ্চয়ই আপনি হাদীসটি অধিক জানেন। তিনি বললেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? আমি বললাম, আনসার। তিনি-বললেন, তবে তুমি বর্ণনা কর। কারণ তুমি এ সম্পর্কে অবশ্য ভালই জান। তারপর আমি পূর্ণ হাদীসটি লোকদের কাছে বর্ণনা করলাম। ইমরান (রাঃ) বললেন, আমি সেই রাত্রে উপস্থিত ছিলাম; কিন্তু তুমি যেভাবে মনে রেখেছ অন্য কেউ এভাবে মনে রেখেছে বলে আমার জানা নেই।
১৪৩৬.    আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর আদ-দারিমী (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেন এক সফরে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলতে ছিলাম। যখন প্রভাতের কাছাকাছি সময় হল তখন আমরা মনযিল করলাম। আমাদের চোখ বুজে গেল এমন কি সূর্য উঠে গেল। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) সর্বপ্রথম জেগে উঠলেন। আমাদের অভ্যাস ছিল যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাতেন তখন তার ঘূম থেকে তাঁকে জাগাতাম না, যতক্ষন না নিজে জেগে উঠতেন। এরপর উমর (রাঃ) জেগে উঠলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে লাগলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। মাথা তুলে দেখতে পেলেন যে, সূর্য উদিত হয়েছে। 

তিনি বললেন, তোমরা চল। তখন তিনি আমাদের নিয়ে চললেন। যখন সুর্যের আলো পরিষ্কার হয়ে গেল তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। লোকদের মধ্য থেকে একজন আলাদা রইল। সে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করল না। সালাত শেষ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে অমুক! কি সে তোমাকে আমার সাথে সালাত আদায় থেকে বিরত রাখল? সে বলল, ইয়া নবী আল্লাহ্‌, আমি জুনুবী হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের আদেশ করলেন। সে মাটির দ্বারা তায়ামুম করে সালাত আদায় করল। 

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কয়েকজন আরোহীসহ আমাকে পানির তালাশে আগে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা ভীষণ পিপাসার্ত হয়েছিলাম। আমরা যখন পথ চলছিলাম, তখন আমরা এক মহিলাকে দেখতে পেলাম। সে উটের পিঠে দুটি পানির মশকের মধ্যে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, পানি কোথায় আছে? সে বলল, অনেক অনেক দূরে, তোমরা পানি পাবে না। আমরা বললাম, তোমার বাড়ী থেকে পানির স্থানের দুরত্ব কতটুকু? সে বলল, একদিন ও একরাতের পথ। আমরা বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে চলো। সে বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে? আমরা তার সঙ্গে আর কথা না বাড়িয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে চললাম এবং তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে নিয়ে গেলাম। তিনিও তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। সে তাঁর কাছে সেরূপই বলল, যেমন আমাদের কাছে বলেছিল। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এও জানাল যে, সে একজন বিধবা, তার কয়েকজন ইয়াতীম বাচ্চা রয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পানি বাহক উটটি সম্পর্কে নির্দেশ দিলে সেটি বসানো হল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশক দুটির উপরের মুখ দুটিতে কুল্লির পানি ঢেলে দিলেন। তারপর আমরা ৪০ জন পিপাসার্ত ব্যাক্তি তৃপ্তি করে পানি পান করলাম এবং আমাদের সঙ্গে যে মশক ও পাত্র ছিল, তা ভরে নিলাম। আমাদের সে সঙ্গীটিকেও গোসলের পানি দিলাম। সেও ভালভাবে গোসল করল তবে আমাদের উটগুলোকে পানি পান করাইনি। এদিকে মশক দুটি পানিতে ফেটে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। 

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমাদের সঙ্গে যার যা আছে নিয়ে এসো। আমারা তাঁর জন্য রুটি টুকরা ও খেজুর একত্রিত করলাম। আর তাঁর জন্য এগুলো একটি পোটলায় বেঁধে দেওয়া হল। মহিলাকে বললেন, তুমি যাও আর এগুলি তোমার পরিবারকে এবং তোমার ইয়াতীমদের খাওয়াও। আর জেনে রাখ, আমরা তোমার পানি কমাইনি। তারপর সে যখন তার পরিবারের কাছে এল তখন বলল, আমি আজ মানুষের মধ্যে সবচাইতে বড় যাদুকরের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম, অথবা, তার ধারণা অনুযায়ী, তিনি নাবী। তার ব্যাপার ছিল এইরূপ, এইরূপ। ফলে আল্লাহ তা’আলা সেই মহিলার বদৌলতে তার গোত্রটিকে হিদায়াত করলেন। মহিলাটি ও ইসলাম গ্রহণ করল এবং তারাও ইসলাম গ্রহণ করল।
১৪৩৭.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলছিলাম। রাত যখন শেষ হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকটবর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। তখন সেই ঘটনা ঘটল, মুসাফিরের জন্য যার চেয়ে আনন্দের কোন ঘটনা হতে পারে না। তারপর সূর্য কিরণ ছাড়া আমাদের কেউ জাগাতে পারেনি। পরে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সহ সালম ইবনু যারীরের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেনা 

উক্ত হাদীসে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, উমর (রাঃ) জেগে উঠে লোকদের অবস্থা দেখলেন। তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠের অধিকারী এবং খুবই শক্তিশালী। তারপর তিনি উচ্চঃস্বরে তাকবীর দিতে লাগলেন। তাঁর শব্দের উচ্চঃস্বরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তাঁর জাগার পর লোকেরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে নানা অভিযোগ করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন ক্ষতি নেই, এই স্থান ত্যাগ কর। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
১৪৩৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সফরে থাকতেন এবং তখন শেষরাতে নিদ্রা যেতেন, তখন ডান কাতে শুতেন। আর যখন ভোরের পূর্বক্ষণে নিদ্রা যেতেন তখন বাহু খাড়া করে হাতের উপর মাথা রাখতেন।
১৪৩৯.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সালাতের কথা ভুলে যায়, স্মরণ হওয়া মাত্র সে তা আদায় করে নেবে। এর কোন কাফফারার প্রয়োজন নেই। বরং আদায় করাই কাফফারা। কাতাদা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي “আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর।
১৪৪০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসটিতে "এ ছাড়া তার কোন কাফফারার প্রয়োজন নাই" অংশটি উল্লেখ করেন নাই।
১৪৪১.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তি যদি সালাতের কথা ভূলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তবে এর কাফফারা হলো স্মরণ হওয়ামাত্র তা আদায় করে নেয়া।
১৪৪২.    নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ভুলে যায় তাহলে তার স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নিবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, "আমার স্মরণে সালাত আদায় কর"।

No comments:

Powered by Blogger.