জমা’আতে (নামায পড়ার) হেকমত ও উপকারিতা
জমা’আতে (নামায পড়ার) হেকমত ও উপকারিতা
জমা’আতে (নামায পড়ার) হেকমত ও উপকারিতা
জমা’আতে নামায পড়ার হেকমত সম্বন্ধে শ্রদ্ধেয় ওলামাগণ অনেকে অনেক কিছু আলোচনা করিয়াছেন। কিন্তু হযরত শাহ ওলিউল্লাহ (রঃ) মুহাদ্দিসে দেহলভীর সার্বিক ও সূক্ষ্ণ তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট অন্য কোনটি আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই। শাহ ছাহেবের পবিত্র ভাষায় ঐগুলি শুনিতে পারিলে পাঠকবৃন্দ পূর্ণরূপে স্বাদ গ্রহণ করিতে পারিতেন। সংক্ষেপে আমি এখানে শাহ ছাহেবের বর্ণনার সারমর্ম লিখিতেছিঃ
১।ইহাই একমাত্র উত্তম পন্থা যে, কোন এবাদতকে মুসলিম সমাজে এমনভাবে প্রথায় প্রচলিত করিয়া দেওয়া, যেন উহা একটি অত্যাবশ্যকীয় হিতকর এবাদতে পরিগণিত হয় এবং পরে উহা বর্জন করা চিরাচরিত অভ্যাস বর্জন করার ন্যায় দুষ্কর ও দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে।
ইসলামে একমাত্র নামাযই সর্বাধিক শানদার এবং গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। কাজেই নামাযকে অত্যধিক গুরুত্ব ও যত্ন সহকারে বিশেষ ব্যবস্থাপনার সহিত আদায় করিতে হইবে। ইহা একমাত্র জমা’আতে নামায পড়ার মাধ্যমেই সম্ভব।
২।সমাজে বিভিন্ন প্রকারের লোক থাকে। জাহেলও থাকে আলেমও থাকে। সুতরাং ইহা খুবই যুক্তিযুক্ত যে, সকলে একস্থানে মিলিত হইয়া পরস্পরের সম্মুখে এই এবাদতকে আদায় করে। কাহারো কোন ভুল ভ্রান্তি হইলে অন্যে তাহা সংশোধন করিয়া দিবে। যেন আল্লাহ্ তা’আলার এবাদত একটি অলংকার বিশেষ। যেমন যাহারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়া দেখে, তাহারা উহাতে দোষ থাকিলে বলিয়া দেয়, আর যাহা ভাল হয় তাহা পছন্দ করে। নামাযকে পূর্ণাঙ্গ করিবার ইচ্ছা একটি উত্তম পন্থা।
৩।যাহারা বে-নামাযী তাহাদের অবস্থাও প্রকাশ হইয়া পড়িবে। ইহাতে তাহাদের ওয়ায নছীহতের সুযোগ হইবে।
৪।কতিপয় মুসলমান মিলিতভাবে আল্লাহর এবাদত করা এবং তাঁহার নিকট দো’আ প্রার্থনা করার মধ্যে আল্লাহর রহমত নাযিল হওয়ার ও দো’আ কবুল হওয়ার একটি আশ্চর্যজনক বিশেষত্ব।
৫।এই উম্মত দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য হইল তাঁহার বাণীকে সমুন্নত করা এবং কুফরকে অধঃপাতিত করা-ভূপৃষ্ঠে কোন ধর্ম যেন ইসলামের উপর প্রবল না থাকে। ইহা তখনই সম্ভব হইতে পারে, যখন এই নিয়ম নির্ধারিত হইবে যে, সাধারণ ও বিশিষ্ট মুকীম মুসাফির, ছোট বড় সকল মুসলমান নিজেদের কোন বড় ও প্রসিদ্ধ এবাদতের জন্য এক স্থানে সমবেত (একত্রিত) হইবে এবং ইসলামের শান শওকত প্রকাশ করিবে। এই সমস্ত যুক্তিতে শরীঅতের পূর্ণ দৃষ্টি জমা’আতের দিকে নিবন্ধ হইয়াছে এবং উহার প্রতি উৎসাহিত করা হইয়াছে এবং জমা’আত ত্যাগ করিতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হইয়াছে।
৬।জমা’আতে এই উপকারিতাও রহিয়াছে যে, সকল মুসলমান একে অপরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হইতে থাকিবে। একে অপরের ব্যথা বেদনায় শরীক হইতে পারিবে, যদ্দ্বারা ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব এবং ঈমানী ভালবাসার পূর্ণ বিকাশ ও উহার দৃঢ়তা সাধিত হইবে। ইহা শরীঅতের একটি মহান উদ্দেশ্যও বটে। কোরআন মজীদ ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন স্থানে ইহার তাকীদ ও ফযীলত বর্ণিত হইয়াছে।
অতীব দুঃখের বিষয় যে, আমাদের এযুগে জমা’আত তরক করা একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হইয়াছে। জাহেলদের তো কথা নাই, অনেক আলেমও এই গর্হিত কাজে লিপ্ত দেখা যায়। পরিতাপের বিষয়, ইহারা হাদীস পড়ে এবং অর্থ বুঝে, অথচ- জমা’আতের নামায পড়ার কঠোর তাকীদগুলি তাহাদের প্রস্তর হইতেও কঠিন হৃদয়ে কোন ক্রিয়া করিতেছে না। কিয়ামতে মহাবিচারকের সামনে যখন নামাযের মোকদ্দমা পেশ করা হইবে এবং উহা অনাদায়কারী বা অপূর্ণ আদায়কারীদিগকে জিজ্ঞাসা শুরু হইবে, তখন ইহারা কি জবাব দিবে?
No comments: