Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড, অধ্যায়ঃ যাকাত-২য়




পরিচ্ছেদঃ ২৯. যার জন্য সাওয়াল করা হালাল


২২৭৫.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া ও কুতায়বা সাঈদ (রহঃ) ... কাবীসা ইবনু মুখারিক আল হিলালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অন্যের দায়ভার বহন করতে গিয়ে ঋণী হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাওযার জন্য তার কাছে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নিকট সাদাকার সামগ্রী আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অপেক্ষা কর, আমি তা থেকে তোমাকে কিছু দিতে বলে দিব। তারপর তিনি বললেন, হে কাবীসা! তিন ব্যাক্তি ছাড়া কারো সাওয়াল করা বৈধ নয়। 

১. ঐ ব্যাক্তি, যে কারো দায়ভার বহন করে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, তার ঝণ পরিশোধের পরিমাণ সাওয়াল করা, তারপর সে বিরত থাকবে।

২. ঐ ব্যাক্তি, বিপর্যয় যার ধন সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে, তার জীবিকা নির্বাহের কোন উপায় না পাওয়া পর্যন্ত।

৩. আর যে ব্যাক্তি ক্ষুধাক্লিষ্ট এবং তার গোত্রের তিনজন লোক তার সম্পর্কে এ সাক্ষ্য দেয় যে, সে ব্যাক্তি অবশ্যই ক্ষুধাক্লিষ্ট; তার জীবিকা নির্বাহের কোন উপায় না পাওয়া পর্যন্ত সাওয়াল করা বৈধ। হে কাবীসা! এ তিনজন ছাড়া যে ভিক্ষা করে খায় সে হারাম খায়।

পরিচ্ছেদঃ ৩০. সাওয়াল ও লালসা ব্যতীত দান গ্রহন বৈধ


২২৭৬.    হারুন ইবনু মারুফ ও হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ... উমর উবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করতে চাইলেন। আমি বললাম, আমার চাইতে যারা বেশী দারিদ্র তাদের দান করুন। অবশেষ একবার আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার চাইতে বেশী দারিদ্র তা দান করুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এটি নাও। সাওয়াল ও লালসা ছাড়া যে মাল তোমার নিকট আসে তুমি তা গ্রহণ কর। আর যে সম্পদ এভাবে আসে না তুমি তার পেছনে লেগো না।
২২৭৭.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ) কে কিছু দান করলেন। উমর (রাঃ) তাকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার চেয়ে যে অধিক মুখাপেক্ষী, এটি তাকে দান করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এটি গ্রহণ কর ও সঞ্চয় কর কিংবা দান কর। সাওয়াল ও লালসা ব্যতীত যে মাল তোমার কাছে আসে তুমি তা গ্রহণ কর। আর যে মাল এভাবে আসে না তুমি নিজে তার পেছনে লেগো না। 

সালিম (রহঃ) বলেন, এ কারণেই ইবনু উমর (রাঃ) কারো নিকট কোন কিছু সাওয়াল করতেন না এবং তাঁকে কোনবস্তু (উপঢৌকন) দেয়া হলে, তা ফিরিয়েও দিতেন না।
২২৭৮.    আবূ তাহির (রহঃ) ... উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২২৭৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু সাঈদী মালিকী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে সাদাকা উসূলকারী নিযুক্ত করেন। যখন আমি কাজ সমাধা করে সাদাকার মালামাল তাঁর নিকট অর্পণ করলাম, তখন তিনি আমাকে আমার পারিশ্রমিক দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আমি তো আল্লাহর ওয়াস্তে কাজ করেছি। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহর নিকটই আছে। বললেন, তোমাকে যা দেওয়া হায়ছে তা তুমি গ্রহণ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ও আমি উসূলকারীরূপে কাজ করেছি। তিনি আমাকে উসূলকারী নিয়োগ করেছিলেন। আামিও তোমার মত বলেছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, যদি সাওয়াল ছাড়া তোমাকে কিছু দেওয়া হয় তবে তা খাও এবং সাদাকা কর।
২২৮০.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... ইবনু সাঈদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি লায়স (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করে বললেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে সাদাকা উসূলকারী নিযুক্ত করেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১. পার্থিব সম্পদের প্রতি লোভ করা অপছন্দনীয়


২২৮১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বৃদ্ধ মানুষের হদয় দুটি বস্তুর ভালবাসার ব্যাপারে অত্যন্ত তরুণ ১. জীবনের মায়া ও ২. ধন সম্পদের মায়া।
২২৮২.    আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বৃদ্ধ লোকের হৃদয় দুটি বস্তুর ভালবাসার ব্যাপারে যুবক (তা হলোঃ) ১. দীর্ঘায়ু কামনা ও ২. প্রাচুর্যের লোভ।
২২৮৩.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তান বৃদ্ধ হয় এবং তার দুটি জিনিস যুবক হয়। ১. প্রাচুর্যের আকাঙ্ক্ষা ও ২. দীর্ঘায়ু কামনা।
২২৮৪.    আবূ গাসশান মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২২৮৫.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
২২৮৬.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা পরিপূর্ণ সম্পদ জমা হয় তবে সে তৃতীয় উপত্যকা কামনা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত কিছু পূর্ণ করতে পারবে না। (কিন্তু) যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।
২২৮৭.    ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি (আনাস) বলেন, আমি জানি না, এটা তাঁর প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছিল না তিনি নিজের পক্ষ থেকেই এ কথা বলছিলেন। তারপর তিনি আওয়ানার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৮৮.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আদম সন্তানের স্বর্ণের একটি ময়দান থাকে তবু সে অনুরূপ আরেকটি প্রান্তর কামনা করবে। মাটি ব্যতীত কিছুই মানুষের মুখ পূর্ণ করতে পারবে না, যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।
২২৮৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি তিনি বলেন, যদি আদম সন্তানের ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ একটি উপত্যকা থাকে তবু সে অনুরুপ অপর একটি উপত্যকা কামনা করবে। মানুষের কামনাকে মাটি ব্যতীত অন্য কিছু পূর্ণ করতে পারবে না। যে ব্যাক্তি তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ কথা কুরআনে বানী কিনা আমি জানি না। যুহায়রের অপর বর্ণনায় “ইহা কুরআনের বানী কিনা আমি জানি না” এ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। তবে তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নাম উল্লেখ করেননি।
২২৯০.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) কে বসরাবাসী ক্বারীগনের নিকট প্রেরণ করা হল। তিনি তথায় গিয়ে এমন তিনশ লোকের সাক্ষাৎ পেলেন, যারা কুরআনের ক্বারী ছিলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা বসরা শহরের সম্রান্ত লোক এবং আল কুরআনের ক্বারী, আপনারা আল-কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকুন। বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনাদের মন যেন কঠিন না হয়ে যায়, যেমন পূর্বেকার লোকদের মন কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমি একটি সূরা পাঠ করতাম যা দৈর্ঘ ও কাঠিন্যের দিক থেকে সূরা (বারা-আত) তাওবার অনুরূপ। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার থেকে এ কথাটি আমার স্মরণ আছে “যদি আদম সন্তানের জন্য দুই মাঠ পরিপূর্ণ ধন-দৌলত হয়, তবে সে তৃতীয় মাঠ অবশ্যই খুজে বেড়াবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছু আদম সন্তানের পেট পুরা করতে পারবে না”। 

আমি অন্য একটি সূরাও পাঠ করতাম যা কোন একটি মুশাববিহতের সম পরিমাণ (দৈর্ঘ্য)। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তা থেকে আমার এতটুকু মুখস্থ আছেঃ "হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল”? বললে তা সাক্ষ্য তা সাক্ষ্য স্বরুপ তোমাদের গর্দানে লিখে দেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে কিয়ামতের দিন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩২. অল্পে তুষ্টির ফযীলত


২২৯১.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অধিক ধন-সম্পদে ঐশ্বর্য নেই। অন্তরের অভাব মুক্তই প্রকৃত ঐশ্বর্য।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. পার্থিব জাঁকজমক ও প্রাচুর্যে প্রতারিত হওয়া সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন


২২৯২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! আল্লাহর কসম, আমি তো তোমাদের জন্য আশংকা করি কেবল সেই পার্থিব ধনৈশ্বর্যের, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উদগত করে দিবেন। তখন এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একথা শুনে) কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, তুমি কী বলেছিলেন? লোকটি বলল, আমি বলেছিলাম, কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কল্যাণ কেবল কল্যাণইআনয়ন করে। যেমন, বসন্তকাল যা (তৃণলতা) উদগত করে তা জীবজন্তুকে পেট ফুলিয়ে মারে বা মরার নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে তৃণভোজী পশু তা খায় এবং খেয়ে উদরপূর্তি করে, তারপর সূর্যের আলোকে থাকে, পেশাব ও পায়খানা করে এবং জাবর কাটে এরপর আবার আসে এবং খায়। অতএব যে ব্যাক্তি ন্যায়ভাবে মাল উপার্জন করে তার জন্য এ মাল বরকত পূর্ণ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি; অন্যায়ভাবে মাল উপার্জন করে সে ঐ লোকের অনুরুপ যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।
২২৯৩.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে সর্বাধিক আশংকা করি পার্থিব চাকচিক্যের, যা আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করে দিবেন। তখন সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! পার্থিব চাকচিক্য কি? তিনি বললেন, যমীনের বরকতসমূহ। তারা আবার বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? তিনি বললেন, কল্যাণ কল্যাণই আনয়ন করে। একথা তিনি তিনবার বললেন। তবে বসন্তকাল যা উদগত করে তা হয় তো (জীব জন্তুকে) মেরে ফেলে অথবা মরার নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে পশু তা খেয়ে উদরপূর্তি করে, তারপর রৌদ্রে গিয়ে জাবর কাটে এবং পেশাব পায়খানা করে, তারপর ফিরে আসে এবং খায়, তার কথা ভিন্ন। 

পার্থিব সম্পদ মধুর ও চাকচিক্যময়! যে ন্যয়ভাবে মাল উপার্জন করে এবং যথাস্থানে তা ব্যয় করে তবে তা হয় উত্তম সহায়ক আর যে অন্যায়ভারে সস্পদ উপার্জন করে সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।
২২৯৪.    আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর বসলেন। আমরাও তার চতুষ্পার্শ্বে বসলাম। তারপর তিনি বললেন, আমার পর তোমাদের ব্যাপারে আমি যে সব বিষয়ের আশংকা করি এর মধ্যে প্রধানতম বিষয় হচ্ছে পার্থিব জাঁকজমক ও এর চাকচিক্য। তখন এক ব্যাক্তি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। তাঁকে বলা হল, তোমার কী ব্যাপার তুমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলছ, আর তিনি তোমার সাথে কথা বলছেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। তারপর তিনি স্বাভাবিক হয়ে নিজের ঘাম মুছে ফেলে বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? মনে হল, তিনি তার প্রশ্ন পছন্দ করেছেন। 

এরপর তিনি বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ আনেনা। অবশ্য বসন্তকাল যা কিছু উদগত করে (ভক্ষণকারী) পশুকে পেট ফুলিয়ে মেরে ফেলে বা মৃত্যুর নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে তৃণভোজী পশু তা খায় এমনকি যখন তার উভয় কোঁক পূর্ণ হয়ে যায় তখন সে উত্তাপ গ্রহণ করে, এরপর সে মল ত্যাগ ও পেশাব করে এবং পূনরায় চরতে যায়। 

মনে রাখবে, এ ধন সস্পদ সবুজ শ্যামল ও মধূর! এ সম্পদ ঐ মুসলমানের উত্তম সঙ্গী যে এ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরদেরকে দান করে। অথবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শব্দ বলেছেন। আর যে ব্যাক্তি এ সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জন করে সে ঐ ব্যাক্তির মত যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না। অধিকন্তু কিয়ামতের দিন এ সম্পদ তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. ভিক্ষা থেকে বিরত থাকা, ধৈর্যধারন ও অল্পে তুষ্ট থাকার ফযীলত এবং এগুলোর প্রতি উৎসাহ দান


২২৯৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কয়েকজন আনসারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাওয়াল করলে তিনি তখন তাদের কিছু দান করলেন। আবার তারা সাওয়াল করলেন তিনি তাদেরকে আবার দান করলেন। এমনকি তার নিকট যা ছিল তা নিঃশেষ হয়ে গেলে। তিনি বললেন, আমার নিকট আরও মাল থাকলে আমি তা কখনো তোমাদের না দিছো মউজুদ রাখব না। যে ব্যাক্তি ভিক্ষা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে ভিক্ষা থেকে পবিত্র রাখেন এবং যে ব্যাক্তি পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে পরমূখাপেক্ষী করেন না এবং যে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল করেন। ধৈর্যের চাইতে অধিক কল্যাণকর ও প্রশস্ততর সম্পদ কাউকে দান করা হয়নি।
২২৯৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) এর সূত্রে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২২৯৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করল, তাকে প্রয়োজন মাফিক জীবিকা প্রদান করা হল এবং তাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকল সেই সফলকাম হল।
২২৯৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনকে জীবন ধারণ করা যায় এ পরিমাণ রিযক দান করুন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. ইসলামের প্রতি কাউকে আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য, তাকে এবং ঐ ব্যক্তি, যাকে দান না করলে ঈমান থেকে ফিরে যাবার আশংকা রয়েছে, তাদের দান করা এবং মূর্খতার কারণে কঠোরতার সাথে সাওয়াল করলে তা সয্য করা আর খারিজীদের বর্ণনা ও তাদের বিধান


২২৯৯.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ ক্ষেত্রে বন্টন করলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের ছাড়া অন্যেরা এর অধিক হকদার ছিল। তিনি বললেন, এরা দু'টি কাজের একটি গ্রহনের এখতিয়ার দিয়েছে। এরা হয় অভাবে আমার কাছে সাওয়াল করবে অথবা আমার প্রতি কৃপণতার অভিযোগ আনবে। অথচ আমি কৃপণ হতে রাজী নই।
২৩০০.    আমরুন নাকিদ ও ইউনুস ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন নাজরানে তৈরি মোটা পাড়বিশিষ্ট একটি চাঁদর তাঁর গায়ে ছিল। তাঁর সঙ্গে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হয়। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাঁদর ধরে এমন জোরে টান দিল যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গর্দানের উপরিভাগে তাকিয়ে দেখলাম এ শক্ত টানের কারণে তাঁর গর্দানের উপর চাঁদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ প্রদত্ত যে মাল তোমার নিকট মউজুদ আছে এর থেকে আমাকে কিছু দেয়ার জন্য আদেশ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং হেসে দিলেন! এরপর তাকে দান করার জন্য নির্দেশ দিলেন।
২৩০১.    যুহায়র ইবনু হারব ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইকরিমা ইবনু আম্মারের হাদীসে এ কথাটি উল্লেখ আছে যে, বেদুঈন লোকটি চাদর ধরে তার দিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে টান দিলে যে, তিনি বেদুঈনের বুকের উপর পড়ে গেলেন। আর হাম্মামের বর্ণনায় আছে যে, “সে তার সঙ্গে এমনভাবে টানাটানি করল যে, চাঁদরটি ছিড়ে একপার্শ্ব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘাড়ের উপর আটকে রইল।
২৩০২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি ‘কাবা’ বিতরণ করলেন এবং মাখরামা (রাঃ) কে কিছু দিলেন না। তখন মাখরামা (রাঃ) বললেন, হে বৎস! তুমি আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে চল। আমি তাঁর সঙ্গে চললাম। তারপর তিনি বললেন, তুমি যাও এবং তাঁকে আমার পক্ষ থেকে ডাক। তিনি বলেন, আমি তাঁর পক্ষ থেকে তাঁকে ডাকলাম। তিনি বের হয়ে নিকট এলেন। এ সময় ঐগুলোর একটি ‘কাবা’ তাঁর সঙ্গে ছিল। তিনি বললেন, এটি আমি তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। তারপর তিনি মাখরামা (রাঃ) এর দিকে তাকিয়ে বললেন, মাখরামা খুশী হয়েছে।
২৩০৩.    আবূল খাত্তাব যিয়াদ ইবনু ইয়াহয়া হাসসানী (র) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কয়েকটি ‘কাবা’ আসল। তখন আমার পিতা মাখরামা আমাকে বললেন, তুমি আমাকে তাঁর নিকট নিয়ে চল হয় তো এর থেকে তিনি আমাকেও কিছু দিবেন। তারপর আমার পিতা (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) গূহ দ্বারে গিয়ে দাঁড়িয়ে একথা বলতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আওয়াজ চিনে ফেললেন এবং বেরিয়ে এলেন, এ সময় তাকে সঙ্গে একটি ‘কাবা’ ছিল। তিনি মাখরামাকে ‘কাবা’ সৌন্দর্য দেখাতে দেখাতে বললেন, এটি তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম, এটি আমি তোমার জন্য আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম।
২৩০৪.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে (কিছু মাল) দান করলেন। আমিও তাদের মাঝে বসাছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থেকে এক ব্যাক্তিকে এড়িয়ে গেলেন, তাকে দিলেন না। অথচ এ লোকটি এদের তুলনায় আমার কাছে অধিক যোগ্য ছিল। তাই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে তাকে গোপনে বললাম, অমুক লোকটির ব্যাপারে আপনার কি খেয়াল? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে একজন মূমিন বলে ধারণা করি। তিনি বলেন, বরং মুসলমান। এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। কিন্তু তার সমন্ধে আমি যা জানি তা আমাকে প্রভাবিত করল। ফলে পূনরায় আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অমুকের ব্যাপারে আপনার কি খেয়াল? আল্লাহর শপথ! আমি তো তাকে অবশ্যই একজন মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেন, বরং মুসলিম। পুনরায় আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অমুকের ব্যাপারে আপনার কি খেয়াল? আল্লাহর শপথ! আমি তো তাকে অবশ্যই একজন মুমিন বলে মনে করি তিনি বললেন, বরং মুসলিম। তার পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কোন এক জনকে কিছু দান করি অথচ অন্যজন তার চাইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়, এই আশংকায় যে, অধোমুখী হয়ে সে জাহান্নামে পতিত হতে পারে। হুলওয়ানীর হাদীসে কথাটি তিনবারের স্থলে দু'বার বর্ণিত আছে।
২৩০৫.    ইবনু আবূ উমর, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে সালিহ (রহঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মর্মে বর্ণনা করেছেন।
২৩০৬.    হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু সা’দ (রহঃ) এর সুত্রে যুহরী কর্তৃক হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত আমার ঘাড় ও কাঁধের উপর মারলেন এবং বললেন, হে সা’দ! তুমি কি আমার সাথে লড়াই করতে চাইছ? আমি অবশ্যই কোন ব্যাক্তিকে দান করি......।
২৩০৭.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া তুজীবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধের দিন আল্লাহ তাঁর রাসুলকে হাওয়াযিন গোত্রের যে সম্পদ দান করলেন তা থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শদের কিছু লোককে একশত উট দান করলেন। আনসারগণ বলতে লাগলেন, আল্লাহ তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরায়শদের দিচ্ছেন, আর আমাদেরকে বাদ দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারী থেকে এখনো তাদের রক্ত ঝরছে। 

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তাদের এ কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করা হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং তাদের চামড়ার একটি তাঁবুর মধ্যে সমবেত করলেন। তাঁরা সকলে সমবেত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট আসলেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কথাটি কী, যা তোমাদের থেকে আমার নিকট পৌছেছে? তখন প্রজ্ঞাবান আনসারগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের জ্ঞানী লেকেরা কিছুই বলেনি, অবশ্য আমাদের মধ্যে কিছু অল্প বয়সের লোক বলেছে যে, আল্লাহ তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ক্ষমা করুন, তিনি কুরায়শদের দান করছেন। আর আমাদের বাদ দিচ্ছেন। অথচ তাদের রক্ত এখনো আমাদের তরবারী থেকে ঝরছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা সবেমাত্র কুফুরি বর্জন করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, এমন কতিপয় ব্যাক্তিকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আমি দান করেছি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা ধন দৌলত নিয়ে যাবে আর তোমরা আপন গৃহে প্রস্থান করবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে? আল্লাহর কসম! তোমরা যা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে তা উত্তম এ জিনিস থেকে যা নিয়ে তারা প্রত্যাবর্তন করছো। তারপর-আনসারগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা এতে সন্তুষ্ট আছি। এরপর তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার পেতে দেখবে। এমতাবস্থায় তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করবে। আমি অবশ্য হাউযে কাওসারের পাশে থাকব (সেখানে আমাকে তোমরা পাবে)।
২৩০৮.    হাসান আল-হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাওয়াযিন গোত্রের যে ধন সম্পদ থেকে আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (ফায় হিসেবে) দিয়েছেন......... এরপর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, আনাস (রাঃ) বললেন, আমরা ধৈর্য্যধারণ করতে পারিনি কারণ আমাদের মধ্যে অল্প বয়সী রয়েছে।
২৩০৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আনাস (রাঃ) বলেছেন যে, তারা বললেন, “আমরা ধৈর্য্যধারণ করব”। যেমন যুহরি থেকে ইউনূসের রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে।
২৩১০.    মুহাম্মদ ইবনুল মাসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের একত্রিত করলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে অন্য গোত্রের কেউ আছে কি? তারা বললেন, নেই। তবে আমাদের ভগ্নিপূত্রগণ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভগ্নিপূত্রগণ কাওমেরই অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি পূনরায় বললেন, কুরায়শ লোকেরা সবেমাত্র জাহেলী যুগ বর্জন করেছে এবং সদ্য বিপদমুক্ত হয়েছে। অতএব আমার ইচ্ছা, আমি তাদের ক্ষতির প্রতিদান দিব এবং তাদের হদয়কে আকৃষ্ট করব। তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে আর তোমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করবে। যদি সমস্ত মানুষ এক প্রান্তরে চলতে থাকে আর আনসারগণ চলে অন্য একটি ঘাটি দিয়ে তাহলে আমি অবশ্যই আনসারদের ঘাটিতে তাদের সাথে চলব।
২৩১১.    মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনিমতের মাল কুরায়শদের মধ্যে বন্টন করলেন। এতে আননারগণ বলতে লাগল যে, একি আাশ্চর্য। আমাদের তরবারী থেকে তাদের রক্ত ঝরছে আর আমাদের গনিমত তাদের দেওয়া হচ্ছে! এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছলে তিনি তাদেরকে একত্রিত করলেন এবং বললেন, কী তা, যা তোমাদের পক্ষ হতে আমার নিকট পৌছেছে? তারা বললেন, যা আপনার কাছে পৌছেছে তা ঠিকই আর আনসাররা মিথ্যা কথা বলতেন না। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব ধন-সম্পদ নিয়ে নিজ বাড়ীতে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ীতে ফিরে যাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে। যদি লোকজন কোন প্রান্তর বা ঘাঁটি দিয়ে চলে আর আনসারগণ চলে অন্য প্রান্তর বা ঘাঁটি দিয়ে, তবে অবশ্যই আমি আনসারদের প্রান্তর বা ঘাঁটিতেই চলব।
২৩১২.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর'আরা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে হাওয়াযিন, গাতফান ও অন্যান্য গোত্রের লোকেরা তাদের সন্তান সন্ততি এবং পশুপাল নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে দশ হাজার সৈন্য ছিল এবং তাঁর সঙ্গে আরো ছিল ক্ষমাপ্রাপ্ত মক্কাবাসী। যুদ্ধ আরম্ভ হলে তারা সবাই পালিয়ে গেল, এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী রয়ে গেলেন। 

এ সময় তিনি উচ্চস্বরে দু'বার ডাক দিলেন। এ দু'য়ের মধ্যে কথা মিলিত ছিল না। আনাস (রাঃ) বলেন যে, তিনি ডান দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তাঁরা বললেন, লাব্বায়ক ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর বাম দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তারা বললেন, লাব্বায়ক ইয়া রাসুলাল্লাহ! সুসংবাদ গ্রহণ করুন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা খচ্চরের উপর ছিলেন এরপর তিনি নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। অবশেষে মুশরিকরা পরাজিত হল। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাভ করেন তাদের থেকে বহু গনিমতের মাল। 

তিনি ঐগুলো মুহাজির এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত মক্কাবাসীদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। কিন্তু আনসারদেরকে কিছু দিলেন না। এতে আনসারগণ বলতে লাগল, বিপদকালে আমাদের ডাকা হয় আর গনিমত আমাদের ছাড়া অন্যদেরকে দেওয়া হয়। এ খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছার পর তিনি তাদের একটি তাঁবুতে সমবেত করলেন এবং বললেন হে আনসার সম্প্রদায়! এ কি কথা তোমাদের পক্ষ হতে আমার নিকট পৌছেছে? তারা নীরব রইলেন। 

তারপর তিনি বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তোমার কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব ধন-সম্পদ নিয়ে চলে যাবে আর তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে ফিরে যাবে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকার সৌভাগ্য লাভ করবে। তারা বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এতে আমরা সন্তুষ্ট আছি। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকেরা একটি প্রান্তরে চলে আর আনসারগণ চলে অন্য একটি ঘাঁটিতে তাহলে আমি আনসারদের ঘাঁটই অবলন্বন করব। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ হামযা (আনাস)! তুমি কি এ সময় উপস্থিত ছিলে? তিনি বললেন, আমি তাঁকে ছেড়ে কোথায় যেতে পারি?
২৩১৩.    ঊবায়দুল্লাহ ইবনু মু'আয, হামিদ ইবনু উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মক্কা বিজয় করলাম। তারপর হুনায়নের যুদ্ধে অগ্রসর হলাম। এ সময় মুশরিকরা সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হল। প্রথম কাতারে ছিল তাদের অশ্বারোহী দল, তারপর পদাতিক বাহিনীর কাতার, তারপর মহিলাদের কাতার, তারপর বকরীর কাতার, তারপর উটের কাতার। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা। ছিলাম সংখ্যায় অনেক। আমারা সংখ্যা ছয় হাজার গিয়ে পৌছেছিল। আমাদের ডান দিকের অশ্বরোহী দলের সেনাপতি ছিলেন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)। এক সময় আমাদের ঘোড়াগুলো পাশ্চাদপদ হতে লাগল এবং আমাদের ঘোড়াগুলো দ্রুত ময়দান ছেড়ে গেল। আর বেদুঈন লোকেরা এবং আমদের কিছু জানা লোকও পালাল। 

আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে ডাক দিলেন, হে মুহাজির সম্প্রদায়! হে মুহাজির সম্প্রদায়! তিনি আবার বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! হে আনসার সম্প্রদায়! রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, হাদীসের পরবর্তী অংশ আমার চাচাদের কাছ থেকে বর্ণিত। আমরা বললাম, লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্মুখের দিকে অগ্রসর হলেন। 

আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম আমরা আমাদের স্থানে পৌছার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের পরাজিত করে দিলেন। আমরা তাদের সকল সম্পদ হস্থগত করলাম। তারপর আমরা তায়িফের দিকে চললাম এবং তায়িফবাসীদের চল্লিশ দিন পর্যন্ত অবরোধ করে রাখলাম। তারপর আমরা মক্কার দিকে ফিরে এলাম এবং সেখানে অবতরণ করলাম। 

রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে একশ করে উট দিতে লাগলেন। হাদীসের পরবর্তী অংশ কাতাদা, আবূ তায়্যাহ ও হিশাম ইবনু যায়িদ (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
২৩১৪.    মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর আল মাক্কী (রহঃ) ... রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব, সাফওয়ান ইবনু উমায়্যা, উয়ায়না ইবনু হিসন ও আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) কে একশ করে উট প্রদান করলেন। আব্বাস ইবনু মিরদাস (রাঃ) কে ঐ পরিমাণ সংখ্যা থেকে কিছু কম দিলেন। তখন আব্বাস ইবনু মিরদাস (রাঃ) বললেনঃ 

আপনি আমার ও আমার ঘোড়ার অংশকে বণ্টন করেছেন, উয়ায়না এবং আকরার মাঝে। 

অথচ উয়ায়না ও আকরার কোন সমাবেশে - মিরদাস হতে অগ্রগামী হতে পারেনি। 

আমি তাদের চেয়ে কম বাহাদূর নই, আজকে যাকে নীচে রাখা হবে 

তাকে উপরে ওঠানো হবে না। 

বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তকেও একশ উট পূর্ণ করে দিলেন।
২৩১৫.    আহমাদ ইবনু আবদা আদ-দাব্বী (রহঃ) ... উমর ইবনু সাঈদ ইবনু মাসরুক (রহঃ) সুত্রে এ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধলব্ধ সস্পদ বণ্টন করলেন এবং আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব (রাঃ) কে একশ উট প্রদান করলেন। তারপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে একথাও রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলকামা ইবনু উলাসা (রাঃ) কে একশ উট প্রদান করলেন।
২৩১৬.    মাখলাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) ... উমর ইবন সাঈদ (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার হাদীসের মধ্যে আলকামা ইবনু উলাসা ও সাফওয়ান ইবনু উমায়্যার কথা উল্লেখ করেননি এবং তার হাদীসে কবিতারও উল্লেখ নেই।
২৩১৭.    সূরায়জ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন বিজয় হয়ে গেলে গনীমতের মাল বন্টন করলেন এবং আকর্ষণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নওমুসলিমদের তা থেকে দিলেন। পরে তার কাছে এ খবর পৌছল যে, আনসারদের পছন্দ এই যে, তাদেরও অন্যান্য লোকদের সমান দেওয়া হোক। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আনসারদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা এবং গুনাবলী বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদের পথহারা পাইনি? পরে আল্লাহ তায়ালা আমার দ্বারা তোমাদের হিদায়াত করেছেন। আমি কি তোমাদের নিঃস্ব পাইনি? তারপর আল্লাহ তাআলা আমার দ্বারা তোমাদের বিত্তশালী করেছেন। আমি কি তোমাকের বিচ্ছিন্ন পাইনি? তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার মাধ্যমে তোমাদের সংহত করেছেন। 

আনসারগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুগ্রহশীল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোনরা কি আমার কথার উত্তর দিবে না? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অনুগ্রহশীল। তিনি বললেন, তোমরা চাইলে এরূপ, এরূপ বলতে পার এবং বিষয়টা সে রকমই ছিল? তিনি কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করলেন। (বর্ণনাকারী) আমর (রাঃ) বলেন যে, তিনি তা স্মরণ রাখতে পারেন নি। 

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি খুশী হবে না যে, লোকেরা বকরী এবং উট নিয়ে (ফিরে) যাবে আর তোমরা তোমাদের গৃহে যাবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে? আনসারগণ আমার অন্তর্বাসস্বরূপ আর অন্যান্যরা আমার বহির্বাসস্বরূপ। যদি হিজরত না হত তবে অবশ্যই আমি আনসারদেরই একজন হতাম। যদি লোকেরা এক প্রান্তরে বা এক ঘাঁটিতে চলে তবে আমি অবশ্যই আনসারদের প্রান্তর ও ঘাটি দিয়েই পথ চলব। তোমরা আমার পর একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিতে দেখবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে, হাউযে কাওসারে আমার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত।
২৩১৮.    যুহায়র ইবনু হারব, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বন্টনে কতিপয় ব্যাক্তিকে প্রাধান্য দিলেন। তিনি আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) কে একশ উট দিলেন। উয়ায়না (রাঃ) কেও অনুরূপ দিলেন। আরবের শীর্য স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তিকেও গনীমতের মাল দিলেন। বণ্টনে তাদের সেদিন অন্যদের উপর প্রাধান্য দিলেন। তখন এক ব্যাক্তি বললেন, আল্লাহর কসম! এ বন্টনে ইনসাফ করা হয়নি। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। 

আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম, এ সংবাদ অবশ্যই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছিয়ে দিব। তারপর আমি তাঁর নিকট এসে সে যা বলেছিল তা বলে দিলাম। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ন্যায়বিচার করেননি তবে ন্যায়বিচার আর কেই বা করবে? তারপর তিনি বলেলন, আল্লাহ মূসা (আঃ) এর প্রতি দয়া করুন। তাকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন। রাবী বলেন, আমি মনে মনে করলাম, ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ কখনো আমি তার নিকট আর পৌছাব না।
২৩১৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বণ্টন করলেন। তখন এক ব্যাক্তি বলল, এ বন্টনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। রাবী বলেন, তারপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে চুপিচুপি তাকে এ কথা বললাম। এতে তিনি ভীষণ রাগান্বিত হলেন এমনকি তাঁর চেহারা লাল হয়ে গেল। আমি ভাবলাম, যদি আমি তার নিকট (এ কথা) না বলতাম! বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি বললেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) কে এর চাইতেও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে। আর তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।
২৩২০.    মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় জি-রানাতে অবস্থানকালে এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল। এ সময় বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ের মধ্যে কিছু রৌপ্য ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে নিয়ে নিয়ে লোকদের দান করতে লাগলেন। তখন লোকটি বলল, হে মুহাম্মদ! ন্যায়ভারে বণ্টন রুকন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধ্বংস হোক, আমি যদি ন্যায় না করি, তবে কে ন্যায় করবে? 

যদি আমি ন্যায় না করি তবে তো আমি বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিককে কতল করে ফেলি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পানাহ, এতে লোকেরা রটাবে যে, আমি আমার সঙ্গীদের হত্যা করছি। এ ব্যাক্তি এবং তার সঙ্গীরা তো কুরআন পাঠ করে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। তারা কুরআন থেকে রেরিয়ে যায় যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়।
২৩২১.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের সম্পদ বণ্টন করছিলেন। উক্ত হাদীস শেষ পর্যন্ত বর্ননা করেন।
২৩২২.    হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে কিছু মাটি মিশ্রিত স্বর্ণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা চারজন লোকের মধ্যে বন্টন করলেন। আকরা ইবনু হাবিস হানযালী, উয়ায়না ইবনু বাদর ফাযারী, আলকামা ইবনু উলাসা আমিরী তিনি বনী কিলাবের একজন আর যায়দ আন খায়র তাঈ তিনি বনী নাবহানের একজন। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এতে কুরায়শারা ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ল এবং বলল, তিনি নজদের সর্দারদের দিচ্ছেন আর আমাদের বাদ দিচ্ছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তাদের মন আকৃষ্ট করার জন্যই তা করেছি। 

ইতিমধ্যে ঘন দাঁড়ি, ফোলা গাল কোটরাগত চোখ, উঁচু ললাট এবং মুণ্ডিত মস্তক এক ব্যাক্তি এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি আল্লাহর নাফরমানী করি তবে তার আনুগত্য করবে কে? এ পৃথিবীর অধিবাসীদের ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে বিশ্বাস করেছেন। অথচ তোমরা আমাকে বিশ্বাস করছ না। রাবী বলেন, এরপর লোকটি চলে গেল। 

তখন উপস্থিত সাহাবীদের একজন তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন, সম্ভবত তিনি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) হবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোকটির বংশ থেকে এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি হবে যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর ভিতরে প্রবেশ করবেনা। তারা মূর্তি পূজকদের বাদ দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করবে। তারাই ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে বেরিয়ে যায় তীর শিকার ভেদ করে। আমি যদি তাদের পাই তাহলে অবশ্যই আদ সম্প্রদায়ের মত তাদের হত্যা করতাম।
২৩২৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামান থেকে আলী (রাঃ) দাবাগাত করা চামড়ার থলিতে করে কিছু সোনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। তখনো স্বর্নগুলো মাটি থেকে পৃথক করা হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো চার ব্যাক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। উয়ায়না ইবনু হিসন, আকরা ইবনু হাবিস, যায়িদ জাল-খায়ল, চতুর্থ ব্যাক্তি হয়তো আলকামা ইবনু উলাসা অথবা আমির ইবনু তুফায়ল (রাঃ)। তখন সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, তাদের থেকে আমরাই এ মালের অধিক হকদার ছিলাম। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছার পর তিনি বললেন, তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন, তাঁর কাছে আমি আমানতদার। আমার কাছে সকাল সন্ধ্যায় আসমানের খবর আসে। 

রাবী বলেন, তখন কোটরাগত চোখ, ফোলা গাল, উঁচু ললাট, ঘন দাঁড়ি, মুন্ডিত মস্থক এবং লুঙ্গি কাঁচানো এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেছেন, তোমার সর্বনাশ হোক। আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে পৃথিবীতে আমি কি সর্বাধিক যোগ্য নই? রাবী বলেন, অতঃপর লোকটি ফিরে চলে গেল। এ সময় খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না সম্ভবত সে সালাত আদায় করে। 

খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক মুসল্লী আছে যারা মুখ দিয়ে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষের হদয় অনুসন্ধানের এবং পেট বিদীর্ণ করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকালেন, সে ঘাড় ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, তার বংশে এমন লোক জন্মগ্রহণ করবে যারা অনায়াসে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার শিকার ভেদ করে। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যদি আমি তাদের পাই তবে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ সম্প্রদায়ের মত হত্যা করব।
২৩২৪.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উমর ইবনু কা’কা (রহঃ) সূত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারীর এ হাদীসের মধ্যে আলকামা ইবনু উলাসার কথা রয়েছে। কিন্তু আমির ইবনু তুফায়লের কথা উল্লেখ নেই। অনুরূপভাবে এ হাদীসের মধ্যে نَاشِزُ এর স্থলে نَاتِئُ الْجَبْهَةِ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। 

এ হাদীসের মধ্যে অতিরিক্ত এ কথাও বর্ণিত আছে যে, এরপর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না। তারপর লোকটি পেছনের দিকে চলে গেল। এরপর খালিদ সাইফুল্লাহ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না। এরপর বললেন, অচিরেই তার বংশ থেকে এমন কাওম হবে, যারা নমরভাবে মধুর সূরে আল্লাহর কিতাব পাঠ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেনঃ যদি আমি তাদেরকে পাই তবে সামূদ সম্প্রদায়ের মত অবশ্যই তাদের হত্যা করব।
২৩২৫.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উমারা ইবনু কা’কা (রহঃ) সুত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোনাগুলো যায়দ আল খায়র, আকরা ইবনু হাবিস, উয়ায়না ইবনু হিসন ও আলকামা ইবনু উলাসা বা আমির ইবনু তুফায়ল (রাঃ) এই চার ব্যাক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। আবদুল ওয়াহিদের হাদীসের মত এ হাদীসেও نَاشِزُ الْجَبْهَةِ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। 

এ হাদীসে আছে যে, "এর ঔরষ থেকে এমন এক কাওম বের হবে"। তবে এ হাদীসের মধ্যে "যদি আমি তাদেরকে পাই; তবে সামূদ সম্প্রদায়ের হত্যা করার মত আমিও তাদেরকে হত্যা করব" কথাটি উল্লেখ নেই।
২৩২৬.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সালামা ও আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তারা দু'জন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট এসে হারুরিয়্যা (খারেজী সম্প্রদায়)-দের সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন এবং বললেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হারুরিয়্যাদের আলোচনা করতে শুনেছো কি? তিনি বললেন, হারুরিয়্যা কারা আমি জানি না, তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি যে, এ উম্মাতের মাঝে, তিনি "এ উম্মাত থেকে" (এ কথা বলেন নি) এমন কাওম বের হবে তোমরা তোমাদের সালাতকে তাদের সালাতের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু এ কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্থল ভেদ করে। এরপর তীর নিক্ষেপকারী ব্যাক্তি তার তীর, নাসল রুসাফ এর ফুকার (ধনূকের অংশের আরবী নাম) প্রতি তাকিয়ে দেখে যে, এগুলি রক্তে লেগেছে কিনা?
২৩২৭.    আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহয়া ও আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান ফিহরী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি কিছু সম্পদ বন্টন করলেন। এ সময় বনী তামীম গোত্রের যুল খুওয়াইসিরা নামক এক ব্যাক্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ইনসাফ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধ্বংস হোক, কে ইনসাফ করবে যদি আমি ইনসাফ না করি! আমি যদি ইসনাফ না করি তবে তো আমি অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। 

তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তার সঙ্গী সাথীরা তো এমন যে, তোমরা তোমাদের সালাতকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে এবং তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তাদের সিয়ামের তুলনায় নগণ্য মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্থল অতিক্রম করে। তখন তীর নিক্ষেপকারী ব্যাক্তি ধনুকের নাসল পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। এরপর সে এর রুসাফ পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তারপর সে এর নাদীহ পরীক্ষা করে দেখবে এতে ও কিছুই পাওয়া যাবে না। কিদাহকেই নাাদী বলা হয়। তারপর সে এর কুযায পরীক্ষা করে দেখবে এতেও পাওয়া যাবে না। তীর এত তীব্র গতিতে বেরিয়ে যায় যে মল বা রক্তের দাগ এতে লাগতেই পারে না। 

এ সম্প্রদায়ের লোকদের পরিচয় এই যে, এক কৃষ্ণকায় ব্যাক্তি যার উভয় বাহু হতে একটি বাহু হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায় অথবা এক টূকরা বাড়তি গোশতের ন্যায়। এদের আবির্ভাব তখন হবে যখন লোকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি একথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী (রাঃ) তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, তখন আমি তার সাথে ছিলাম। আলী (রাঃ) এ লোকটিকে খোজ করার নির্দেশ দেওয়ার পর তাকে তালাশ করে পাওয়া গেল। এরপর তাকে আনা হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যে নিদর্শন করেছেন তা তার মধ্যে দেখতে পেলাম।
২৩২৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যারা তাঁর উম্মাতের মাঝেই সৃষ্টি হবে। তারা আবির্ভুত হবে ঐ সময় যখন মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে। তাদের নিদর্শন এই যে, তাদের মাথা মুন্ডান থাকবে। তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট বা সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হবে। তাদেরকে দু'দলের এমন দলটি হত্যা করবে যারা সত্যের দিকে অধিক নিকটবর্তী। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের একটি উপমা বর্ণনা করলেন অথবা বললেন, এক ব্যাক্তি লক্ষ্যস্থল নিরুপন করে তীর নিক্ষেপ করে। এরপর তার ফলা পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতে বিন্দুমাত্র রক্তও সে দেখতে পায় না। এরপর এর নাযীহ পরীক্ষা করে দেখে, এতেও বিন্দুমাত্র রক্ত সে দেখে না। তারপর সে এর ফুক পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতেও সে বিন্দুমাত্র কোন কিছু দেখতে পায় না। বর্ণনাকারী আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, হে ইরাকবাসী! তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছ।
২৩২৯.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদের মতবিরোধের সময় একটি দল বের হবে, তাদেরকে হত্যা করবে, দু'দলের এমন দলটি যারা হকের অধিক নিকটবর্তী।
২৩৩০.    আবূর রাবী যাহরানী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতে দু'টি দল সৃষ্টি হবে। তখন তাদের থেকে অন্য আরেকটি দল সৃষ্টি হবে। এ দলকে দু' দলের ঐ দল হত্যা করবে যারা হকের অধিক নিকটবর্তী।
২৩৩১.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মধ্যে যখন মতবিরোধ দেখা দিবে তখন একদল লোক বের হবে। তাদেরকে হত্যা করবে দু’দলের যে দলটি হকের অধিক নিকটবর্তী।
২৩৩২.    উবায়দুল্লাহ কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি এক কাওম সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, এক ভীষণ মতবিরোধ চনাকালীন অবস্থায় তারা আবির্ভুত হবে। দু’দলের যে দলটি সত্যের অধিক নিকটবর্তী হবে, তারা তাদেরকে হত্যা করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬. খারিজীদের হত্যা করতে উৎসাহ দান


২৩৩৩.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... সুওয়ায়দ ইবনু গাফালা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন নি এরূপ কোন কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে বলার চেয়ে আমার নিকট আকাশ হতে পতিত হওয়া অধিক পছন্দনীয়। যখন আমি এবং তোমরা পরস্পর কোন কথা বলি তখন মনে রাখবে যে, যুদ্ধে প্রতারণা সা’দৃশ্য কৌশল বৈধ। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি; তিনি বলেন, শেষ যুগে একদল লোক বের হবে, তাদের বয়স কম হবে এবং জ্ঞানের দিক থেকে তারা হবে মুর্খ। তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের ন্যায় উত্তম কথা বলবে, কুরআন পাঠ করবে। কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্থল ভেদ করে। যখন তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে তখন তাদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। কেননা তাদেরকে হত্যা করার মাঝে রয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট প্রতিদান ঐ ব্যাক্তির জন্য যে তাদেরকে হত্যা করবে।
২৩৩৪.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দমী, আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৩৩৫.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে “তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর তার লক্ষ্যস্থল ভেদ করে বের হয়ে যায়” কথাটি উল্লেখ নেই।
২৩৩৬.    মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দমী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, এদের মধ্য এক ব্যাক্তি এমন হবে যার হস্থদ্বয় খাটো হবে। তোমরা ঔদ্ধত প্রদর্শন না করলে, আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যবানীতে তাদেরকে যারা হত্যা করবে তাদের সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি এ কথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছো কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনেছি, এ কা'বা গৃহের মালিকের শপথ, এ কা'বা গৃহের মালিকের শপথ, এ কা’বা গৃহের মালিকের শপথ।
২৩৩৭.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু আবীদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার থেকে আমি যা শুনেছি তাই তোমাদের নিকট বর্ণনা করছি। এরপর তিনি আলী (রাঃ) থেকে আয়্যুবের অনুরূপ মারফুরূপে বর্ণনা করলেন।
২৩৩৮.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যায়দ ইবনু ওয়াহব জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ঐ সৈন্যদলের মধ্যে ছিলেন, যারা আলী (রাঃ) এর সাথে খারেজী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সফর করেছিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মাত থেকে এমন একদল সেনাক বের হবে যারা কুরআন পাঠ করবে। কিন্তু তোমাদের কিরা'আত তাদের কিরআতের সামনে কিছুই নয়। তোমাদের সালাত তাদের সালাতের তুলনায় কিছুই নয় এবং তোমাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) তাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর তুলনায় কিছুই নয়। তারা কুরআন পাঠ করবে আর ভাববে তা তাদের পক্ষে। প্রকৃতপক্ষে তা তাদের বিপক্ষে। তাদের সালাত তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর তার লক্ষ্যস্থল ভেদ করে বের হয়ে যায়, যে সেনাদল কর্তৃক তারা আক্রান্ত হবে তাদের সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে তা যদি সৈন্যগণ জানত তবে অবশ্যই তারা আমল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকত। 

তাদের নিদর্শন এই যে, তাদের মাঝে এমন এক ব্যাক্তি হবে যার বাহুর সঙ্গে হাত থাকবে না। স্তনের বোটার ন্যায় এর উপরে থাকবে সাদা কতগুলো পশম। [আলী (রাঃ)] বলেন, তোমরা মু’আবিয়া (রাঃ) ও সিরিয়াবাসীদের দিকে আগ্রসর হচ্ছে এবং তাদেরকে এড়িয়ে যাচ্ছ অথচ তারা তোমাদের পেছনে তোমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে কষ্ট দিবে এবং তোমাদের ধন সম্পদ নষ্ট করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আশংকা করি তারাই ঐ কাওম যারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটাবে এবং মানুষের পশুগুলো লূণ্ঠন করবে। অতএব তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য চল। 

সালামা ইবনু কুহায়ল (রাঃ) বলেন, এরপর যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) আমার নিকট সৈন্যদের বিভিন্ন মনজিলে অবতরণের কথা বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, যেতে যেতে আমরা একটি পুল অতিক্রম করলাম। এরপর আমরা তাদের সাক্ষাত পেলাম। সে দিন খারেজীদের সেনাপতি ছিল, আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব রাসিবী। সে তাদেরকে নির্দেশ দিল, তোমরা বর্শা রেখে দাও এবং তরবারী খাপ মুক্ত কর। আমি আশংকা করছি, তারা তোমাদের প্রতি হামলা করবে যেমন হারুরার দিন হামলা করেছিল। এরপর তারা ফিরে গিয়ে নিজ বর্শা খুলে রেখে দিল এবং তরবারী কোষমুক্ত করল। মুসলমানগণ বর্শা দ্বারা তাদের প্রতি আক্রমণ করলে তারা নিতে হয়ে একের পর এক ধরাশায়ী হতে লাগল। সে দিন মুসলমানদের দুই ব্যাক্তই কেবল শহীদ হয়েছিলেন। 

তখন আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা এদের মধ্যে খাটো হাত বিশিষ্ট লোকটিকে তালাশ কর। তারা সকলেই তাকে তালাশ করলেন কিন্তু কোথাও পেলেন না। এরপর আলী (রাঃ) স্বয়ং দাঁড়ালেন এবং একের পর এক পতিত লাশগুলোর কাছে গেলেন। এরপর তিনি লাশগুলো সরাবার নির্দেশ দিলেন। এ সময় তারা মাটির সাথে লেগে থাকা অবস্থায় খাটো হাত বিশিষ্ট লোকটিকে পেয়ে গেলেন। 

তখন আলী (রাঃ) “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি দিলেন এবং বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথভাবে পৌছিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবীদা সালমানী (রাঃ) তার নিকট দাঁড়িয়ে বললেন, হে আমীযুল মুমিনীন! তিনিই আল্লাহ , যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আপনি এ হাদীস শুনেছো কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। এভাবে আবীদা তাকে তিনবার কসম করতে বললেন এবং তিনি তার কোথায় কসম করলেন।
২৩৩৯.    আবুত তাহির ও ইউনূস ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যখন খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা বেরিয়ে গেল তখন তিনি (রাবী) আলী (রাঃ) এর সাথে ছিলেন, তারা বলতে লাগল যে, "হুকুম একমাত্র আল্লাহর" তখন আলী (রাঃ) বললেন, কথা তো হক কিন্তু এর উদ্দেশ্য বাতিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোকের নিদর্শন বর্ণনা করেছেন, এ নিদর্শনগুলো এদের মাঝে আমি অবশ্যই দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি তারা মুখে সত্য কথা বলবে কিন্তু এ কথা তাদের এস্থানও অতিক্রম করবে না। এ সময় তিনি কণ্ঠনালীর দিকে ইশারা করেছেন। তারা সৃষ্টি জগতের সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত লোক। তাদের মধ্যে একজন কাল লোক রয়েছে। তার একটি হাত বকরীর স্তনের মত অথবা স্তনের বোটার মত। 

যখন আলী (রাঃ) তাদেরকে হত্যা করলেন তখন তিনি বললেন, তোমরা (তাকে) তালাশ কর। তারা তালাশ করলেন কিন্তু কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি বললেন, তোমরা ফিরে যাও, আল্লাহর শপথ! আমি মিথ্যা বলিনি এবং আমার নিকট মিথ্যা বলা হয়নি, একথা তিনি দু'বার কিংবা তিনবার বললেন। অতঃপর তারা তাকে লাশের স্তুপের মধ্যে পেয়ে আলী (রাঃ) এর নিকট নিয়ে আসলেন এবং তার সামনে রেখে দিলেন। 

উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, তাদের বিষয়টি আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং তাদের সম্পর্কে আলী (রাঃ) যা বলেছেন আমি তা শুনেছি। ইউনূস (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে তিনি এ কথা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, বুকায়র বলেন, এক ব্যাক্তি ইবন হুনায়ন থেকে আমাকে বর্ণনা করেছেন, ইবনু হুনায়ন (রহঃ) বলেছেন, আমি কাল লোকটিকে দেখেছি।
২৩৪০.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পর আমার উম্মাতের থেকে অথবা অচিরেই আমার পর আমার উম্মাত থেকে এমন কাওম আবির্ভুত হবে যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যারে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্থল ভেদ করে। এরপর তারা আর দ্বীনের দিকে আসবে না। তারা সৃষ্টি জগতের সর্ব নিকৃষ্ট লোক হবে এবং তাদের স্বভাবও হবে নীচু ধরনের। 

ইবনু সামিত (রাঃ) বলেন, হাকাম গিফারীর ভাই রাফি ইবনু আমর গিফারী (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বললাম, এ কেমন কেমন হাদীস শুনতে পেলাম আবু যার (রাঃ) থেকে। তার নিকট আমি হাদীসটি উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন, এ হাদীস আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি।
২৩৪১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইউসায়র ইবনু আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজীদের সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন, তা কি আপনি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি তা শুনেছি। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পূর্ব দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে) বললেন, তারা এমন কাওম যারা মুখে কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্থল ভেদ করে।
২৩৪২.    আবূ কামিল (রহঃ) ... সুলায়মান শায়বানী (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ উম্মাতের থেকে কতিপয় সম্প্রদায় আবির্ভুত হবে।
২৩৪৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক (রহঃ) ... সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলে এমন এক সম্প্রদায় আবির্ভূত হবে যাদের মাথা মুন্ডান থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এবং তার বংশধরদের জন্য যাকাত গ্রহন করা অবৈধ; তার বংশধর হল, বনী হাশিম এবং বনী মুত্তালিব গোত্রের লোকজন, অন্য কেউ নয়


২৩৪৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু'আয আম্বারি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) সাদাকার একটি খেজুর হাতে নিয়ে তা মুখে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কাখ-কাখ’, ধ্বনি দ্বারা ইংগিত করে বললেন, এ ফেলে দাও। তুমি কি জাননা আমরা সাদাকা খাই না?
২৩৪৫.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, আবু বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে যে, সাদাকা আমাদের জন্য হালাল নয়।
২৩৪৬.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে ইবনু মু'আয (রাঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাদাকা আমরা খাই না।
২৩৪৭.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করে আমার বিছানার উপর একটি খেজুর পড়ে আছে দেখতে পেলাম। এরপর খাওয়ার জন্য আমি তা উঠিয়ে নিই। তারপর আমার আশংকা হয় তা সাদাকার হতে পারে তাই আমি তা ফেলে দেই।
২৩৪৮.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ননা করেছেন। এ বলে তিনি তার থেকে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করলেন। এরপর বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করে একটি খেজুর বিছানায় অথবা ঘরের ভেতর পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলাম এবং খাওয়ার জন্য তা উঠিয়ে নিই। এরপর আমার ভয় হল, হয়ত তা সাদাকা হবে। তাই আমি তা ফেলে দেই।
২৩৪৯.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর পেয়ে বললেন, এটা যদি সাদাকার খেজুর না হত তাহলে অবশ্যই আমি তা খেয়ে ফেলতাম।
২৩৫০.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তায় পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় বললেন, যদি এটা সাদাকা না হত তাহলে অবশ্যই আমি খেয়ে ফেলতাম।
২৩৫১.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর পেয়ে বললেন, যদি সাদাকার না হত তাহলে অবশ্যই আমি এটা খেয়ে ফেলতাম।
২৩৫২.    আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয যুবাঈ (রহঃ) ... আবদুল মুত্তালিব ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাবী’আ ইবনুল হারিস এবং আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব। (রাঃ) একত্রিত হলেন। এরপর তারা আমার এবং ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) সম্পর্কে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা যদি এ দু'জন যুবককে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠাই এবং তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে কথা বলে; ফলে তিনি তাদেরকে যাকাত উসূলকারী নিয়োগ করেন এবং মানুষ যা যাকাত প্রদান করবে তা তারা তার নিকট পৌছিয়ে দেয় এবং তারা পারিশ্রমিক হিসাবে ঐ পরিমাণ পায় যা অন্যান্য লোকেরা পেয়ে থাকে; তবে ভাল হবে। 

এ সময় আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এসে তাদের নিকট দাঁড়ালেন। তারা এ বিষয়টি তার নিকট উল্লেখ করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন, আপনারা পাঠাবেন না। কারণ আল্লাহর শপথ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করবেন না। তখন রাবী'আ ইবনুল হারিস (রাঃ) আলী (রাঃ) এর প্রতি রেগে গেলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ। আপনি আমাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে এ আচরণ করছেন। আল্লাহর কসম! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামাতা হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। কিন্তু আমরা তো এতে আপনার প্রতি ঈর্ষা করিনা। 

এ কথা শুনে আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা তাদেরকে পাঠিয়ে দাও। এরপর তারা চললেন এবং আলী (রাঃ) শুয়ে পড়লেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুহরের সালাত আদায় করলেন তখন তারা অগ্রে গিয়ে হুজরার নিকট দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাদের উভয়ের কান ধরে বললেন, তোমাদের মনে কি কথা জমা আছে বল। তারপর তিনি হুজরায় প্রবেশ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে প্রবেশ করলাম। এ সময় তিনি যয়নব বিনত জাহশের গৃহে অবস্থান করছিলেন। রাবী বলেন, আমরা একে অন্যের উপর ভরসা করে ছিলাম। এ সময় আমাদের একজন কথা বলতে আরম্ভ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দয়াবান এবং আত্নীয়তা রক্ষাকারী। আমরা বিবাহের বয়সে পদার্পণ করেছি আমরা এসেছি, যেন আপনি আমাদেরকে এই যাকাতের মাল উসুলকারী নিয়োজিত করেন। আমরাও আপনার নিকট পৌছিয়ে দিব যেমন অন্যান্য লোকেরা পৌছিয়ে দেন এবং আমরাও (এর থেকে কিছু) পাব যেমন অন্যান্যরা পান। 

বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে তিনি দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকলেন। অবশেষে পূনরায় আমরা তার সাথে (এ বিষয়ে) কথা বলার ইচ্ছা করলাম। তখন যয়নাব (রাঃ) পর্দার অন্তরাল থেকে আমাদেরকে ইশারা করে বললেন, তাঁর সাথে এখন কোন কথা বলো না। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের জন্য সাদাকার মাল ভক্ষণ করা বৈধ নয়। এতো মানুষের ময়লা। তোমরা মাহমিয়াকে আমার নিকট ডেকে আন। সে খুমুসের রক্ষণাবেক্ষণকারী ছিল। আর নাওফল ইবনুল হারিস ইবনু আবদুল মুত্তালিব কেও। 

তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন। তিনি মাহমিয়াকে বললেন, তুমি তোমার কন্যাকে ফযল ইবনু আব্বাসের নিকট বিয়ে দিয়ে দাও। তিনি তাই করলেন। এরপর নাওফল ইবনু হারিস (রাঃ) কে বললেন, তুমিও তোমার কন্যাকে এ ছেলেটির নিকট বিয়ে দিয়ে দাও। বর্ণনাকারী আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, সুতরাং তিনি আমার নিকট নিজ কন্যাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি মাহমিয়াকে বললেন, খুমুসের মাল থেকে তাদেরকে এই এই পরিমাণ সাদাকা দিয়ে দাও। ইমাম যুহরী বলেন, তিনি আমার নিকট তার নাম উল্লেখ করেন নি।
২৩৫৩.    হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) ... আবদুল মুত্তালিব ইবনু রাবী'আ ইবনু হারিস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর পিতা রাবী’আ ইবনুল হারিস ও আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আবদুল মুত্তালিব ইবনু রাবী'আ ও ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললেন, তোমরা উভয়েই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাও। এরপর তিনি মালিক (রহঃ) এর বর্ণিত অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করবেন। 

তবে এতে এও আছে যে তারপর আলী (রাঃ) চাঁদর বিছিয়ে এর উপর শুয়ে পড়লেন এবং বললেন, আমি প্রজ্ঞাবান ও রায় প্রদানে বলিষ্ঠ। আল্লাহর শপথ! আমি এ স্থান পরিত্যাগ করার পূর্বেই তোমাদের উভয়ের ছেলে ঐ উত্তর নিয়ে ফিরে আসবে যার জন্য তোমরা তাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়েছ। 

এ হাদীসের মধ্যে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, অতঃপর তিনি আমাদেরকে বললেন, এতো সাদাকা এতো মানুষের ময়লা এ মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার পরিজনের জন্য হালাল নয়। 

হাদীসে এ কথাও বর্নিত আছে যে, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নিকট মাহমিয়া ইবনু জু'আ (রাঃ) কে ডেকে নিয়ে আস। তিনি ছিলেন বর্নী আসাদের এক ব্যাক্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গনীমতের মালের খুমুস (এক পঞ্চমাংশ) উসূলকারী নিয়োগ করেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮. নবী (ﷺ), বনী হাশিম এবং বনী মুত্তালিবের জন্য হাদিয়া গ্রহন করা বৈধ, যদিও হাদিয়াদাতা তার মালিক হয়েছে সদকা হিসেবে


২৩৫৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী জুওয়রিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করে বললেন, কিছু খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আমার নিকট কোন খাবার নেই। তবে বকরীর কিছু হাড়গোড় আছে যা আমার আযাদকৃত দাসীকে সাদাকা হিসাবে দেয়া হয়েছিল। একথা শুনে তিনি বললেন, তা আমার নিকট আন। বস্তুত সাদাকা তার আপন স্থানে পৌঁছে গিয়েছে।
২৩৫৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা আমরুন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... যুহুরি (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৩৫৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়াদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বারীরা (রাঃ) সাদাকা হিসাবে প্রাপ্ত কিছু গোশত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাদিয়া দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহা তার জন্য সাদাকা আর আমার জন্য হাদিয়া।
২৩৫৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু গরুর গোশত আসল। তখন তাকে বলা হল, এগুলো বারীরা (রাঃ) কে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি বললেন, ইহা বারীরার জন্য সাদাকা, আর আমর জন্য হাদিয়া।
২৩৫৮.    যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ) কে কেন্দ্র করে তিনটি বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। লোকেরা তাকে সাদাকা দিত। আর সে তা আমাকে হাদিয়া করত। আমি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আলোচনা করার পর তিনি বললেন, এ তার জন্য সাদাকা, আর তোমাদের জন্য হাদিয়া সুতরাং তোমরা তা খাও।
২৩৫৯.    আবূ বাকর আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত।
২৩৬০.    আবূত-তাহির (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে "তা আমাদের জন্য তার পক্ষ থেকে হাদিয়া।"
২৩৬১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট সাদাকার একটি বকরী পাঠালেন। আমি তা থেকে কিছু অংশ আয়িশা (রাঃ) এর নিকট পাঠিয়ে দিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আয়িশা (রাঃ) এর নিকট আসলেন তখন জিজ্ঞাসা তোমার নিকট কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না কোন কিছুই নেই। তবে নূসায়বা আমাদের জন্য বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছেন যা আপনি তাকে দিয়েছিলেন তা আছে, তখন তিনি বললেন, বস্তুতঃ সাদাকা তার স্থানে পৌঁছে গেছে।
২৩৬২.    আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোন খাদ্যদ্রব্য আসলে তিনি সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। যদি বলা হত, হাদিয়া, তবে তা খেতেন। আর যদি বলা হত সাদাকা, তবে তা খেতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯. যাকাতদাতার জন্য দু'আ করা


২৩৬৩.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন কাওম তাদের সাদাকা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসত তখন তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। একদা আবূ আওফা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার সাদাকা নিয়ে আসলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আবূ আওফার পরিবারের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
২৩৬৪.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِمْ এর স্থলে صَلِّ عَلَيْهِمْ আছে।

পরিচ্ছেদঃ ৪০. যাকাত উসূলকারীকে সন্তুষ্ট করা, যতক্ষণ না সে হারাম বস্তু যাঞ্চা করে


২৩৬৫.    ইয়াহহয়া ইবনু ইয়াহয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যাকাত উসূলকারী তোমাদের নিকট আসবে, তখন সে যেন তোমাদের থেকে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রত্যাবর্তন করে।

No comments:

Powered by Blogger.