Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড, অধ্যায়ঃ যাকাত-১ম




পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই


২১৩৫.    আমর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু বুকায়র আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ মালে যাকাত নেই, পাঁচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই এবং পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণে (রৌপ্যে) যাকাত নেই।
২১৩৬.    মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আমর ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) তার সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২১৩৭.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি তাঁর হাতের পাঁচ আঙ্গূলের দ্বারা ইংগিত করেছিলেন। তারপর রাবী ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বর্ণিত পূর্ব হাদীসটির অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২১৩৮.    আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ মালে যাকাত নেই, পাঁচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই এবং পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ (রুপায়) যাকাত নেই।
২১৩৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ খেজুরে যাকাত নেই এবং ঐ পরিমাণ শস্যের কমেও যাকাত নেই।
২১৪০.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শস্য এবং খেজুরের পাঁচ ওয়াসাকের কমে যাকাত নেই, পাঁচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই এবং পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণে (রুপায়) যাকাত নেই।
২১৪১.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইসমাঈল ইবনু উমায়্যা (রহঃ) এর সূত্রে এই সনদে আবদুর রহমান ইবনু মাহর্দী (রহঃ) এর অনুরূপ হার্দীস বর্ণনা করেছেন।
২১৪২.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইসমাঈল ইবনু উমায়্যা (রহঃ) এর সূত্রে এই সনদে আবদুর রহমান ইবনু মাহদী ও ইয়াহয়া ইবনু আদম (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এই হাদীসের মধ্যে খেজুরের (تَّمْرِ) স্থলে ফলের (ثَمَرٍ) কথা উল্লেখ রয়েছে।
২১৪৩.    হারুন ইবনু মারুফ ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ উকিয়ার কম রুপায় যাকাত নেই, পাঁচ উটের কমে যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ খেজুরে যাকাত নেই।
২১৪৪.    আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর সারহ, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী, আমর ইবনু সাওয়াদ এবং ওয়ালীদ ইবনু সূজা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ভূমি নদ-নদী ও বৃষ্টির পানি দ্বারা সঞ্চিত হয়, তাতে উশর (এক দশমাংশ) ওয়াজিব হবে। আর যে ভূমিতে উটের দ্বারা পানি সেচ করা হয় তাতে অর্ধ ওশর ওয়াজিব হবে।
২১৪৫.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া তামীমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমের উপর তার গোলাম (ব্যাক্তিগত প্রয়োজনের) এবং ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই।
২১৪৬.    আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানের উপর তার (ব্যাক্তিগত প্রয়োজনের) গোলাম এবং ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই।
২১৪৭.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া কুতায়বা ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনূরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২১৪৮.    আবূ তাহির হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গোলামের জন্য (মনিবের উপর) যাকাত নেই। তবে সাদাকায়ে ফিতর আছে।
২১৪৯.    জুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার (রাঃ) কে যাকাত আদায়ের জন্য প্রেরণ করেন। এরপর তাঁকে বলা হল ইবনু জামীল খালিদ ইবনু ওয়ালীদ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা আব্বাস (রাঃ) যাকাত দিতে অস্বীকার করেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনু জামীল তো নিঃস্ব ছিল অতঃপর আল্লাহ তাকে বিত্তশালী করেছেন এখন সে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। আর খালিদের কথা এই যে তোমরা তার প্রতি যুলূম করছ, কেননা সে তার লৌহ বর্ম ও যুদ্ধ সরঞ্জমাদি আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছে। আর আব্বাস, তাঁর (উপর দাবীকৃত) যাকাত এবং তৎসঙ্গে অনুরূপ পরিমাণ আদায় করা আমার দায়িত্বে। এরপর তিনি বললেন, হে উমর! তুমি কি জান না, চাচা বাপের সমমর্যাদা সস্পন্ন।

পরিচ্ছেদঃ ১. সাদকা-ই-ফিতর


২১৫০.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকের উপর রমযানের সাদাকা-ই-ফিতর ধার্য করেছেন। প্রতিজন মুসলিম স্বাধীন পুরুষ ও মহিলার উপর এক সা' খেজুরে অথবা এক সা' যব নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
২১৫১.    ইবনু নুমায়র ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রীতদাস ও স্বাধীন ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা' খেজুর অথবা এক সা যব নির্ধারিত করেন।
২১৫২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের সাদাকা (সাদাকাতুল ফিতর) বাবদ স্বাধীন ও ক্রীতদাস পুরুষ ও মহিলা সকলের উপর এক সা' খেজুর অথবা এক সা' যব নির্ধারিত করেন। রাবী বলেন, এরপর লোকেরা অর্ধ সা' গমকে এক সার সমান করে নিয়েছে।
২১৫৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা' খেজুর অথবা এক সা' যব আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, (পরবতীঁকালে) লোকেরা গমের দু'মুদকে তার সমপরিমাণ ধরে নিয়েছে।
২১৫৪.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত য়ে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাধীন ও ক্রীতদাস, নর ও নারী, ছেটি ও বড় প্রত্যেক মুসলমানের উপর রমযানের সাদাকাতুল ফিতর বাবদ এক সা' খেজুর অথবা এক সা’ যব নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
২১৫৫.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা সাদাকাতুল ফিতর বাবদ এক সা' খাদ্য (গম) অথবা এক সা' যব অথবা এক সা' খেজুর অথবা এক সা' পনির কিংবা এক সা' কিশমিশ প্রদান করতাম।
২১৫৬.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা ছোট ও বড় স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ হতে সাদাকাতুল ফিতর বাবদ এক সা' পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা' পনির অথবা এক সা' যব অথবা এক সা' খেজুর অথবা এক সা' কিশমিশ প্রদান করতাম। এভাবেই আমরা তা আদায় করতে থাকি। 

পরে মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরার উদ্দেশ্যে যখন আমাদের নিকট আসলেন তখন তিনি মিম্বরে আরোহণ করে উপস্থিত লোকদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, আমার মতে সিরিয়ার দু’মুদ গম এক সা' খেজুরের সামান। লোকেরা তা গ্রহণ করে নিলেন। 

আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি তো যত দিন জীবিত থাকব ঐভাবেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করব, যেভাবে আমি (পূর্বে) আদায় করতাম।
২১৫৭.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা ছোট ও বড়, স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ হতে তিন প্রকার বস্তু থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। এক সা' খেজুর, এক সা' পনির অথবা এক সা' যব। এভাবে আমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করছিলাম। অতঃপর মুআবিয়া (রাঃ) এর সময় আসল। তখন তিনি দু’মুদ গম এক সা’ খেজুরের সমান ধার্য করেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি তো সর্বদা পূর্বের ন্যায়ই আদায় করতে থাকব।
২১৫৮.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা পনির, খেজুর ও যব এ তিন প্রকার বস্তু থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম।
২১৫৯.    ২১৫৯। আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুআবিয়া (রাঃ) যখন অর্ধ সা' গমকে এক সা' খেজুরের সমপরিমাণ নির্ধারণ করলেন, তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) তা মেনে নিলেন না এবং বললেন, আমি সাদাকাতুল ফিতর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে যা আদায় করতাম এখনও তাই আদায় করব-এক সা' খেজুর অথবা এক সা' কিশমিশ অথবা এক সা' যব কিংবা এক সা' পণির।
২১৬০.    ২১৬০। ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের (ঈদের) সালাতে গমনের পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২১৬১.    ২১৬১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের (ঈদের) সালাতে গমনের পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২. যাকাত অনাদায়কারীর অপরাধ


২১৬২.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যদি এগুলোর হক (যাকাত) আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিনে তার জন্য আগুনের পাত তৈরি করা হবে। তারপর জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করে তা দিয়ে তার পার্শ্বে ও ললাটে, পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। এরপর যখন উত্তপ্ততা কমে যাবে তখন পূনরায় তা উত্তপ্ত করা হরে। এভাবে চলতে থাকবে, দিনভর যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, যে পর্যন্ত না বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা হবে। অতঃপর দেখান হবে তার পথ হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে। 

বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উট সম্বন্ধে বিধান কি? তিনি বললেন, আর উটের হক হল, পানি পান করার দিন তা দোহন করা। উটের কোন মালিক যদি এর হক আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত প্রান্তরে অধঃমূখী করে শয়িত করা হবে। তারপর ঐ উট পূর্বের চাইতেও অধিক মোটাতাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এমন কি একটি বাচ্চাও বাদ পড়বেনা এবং স্বীয় খুর দ্বারা উটের মালিক যদি তার হক আদায় না করে তাকে পায়ে মাড়াতে থাকবে ও মুখে কাটতে থাকবে। মালিককে দলিত করে একটি উট চলে গেলে অপরটি আসবে। এমনি করে চলতে থাকবে ঐ দিন, যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। 

অতঃপর লোকদের ফয়সালা হরে। পথ দেখানো হবে তাকে হয় তো জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! গরু ও ছাগলের হক কি? তিনি বললেন, গরু-ছাগলের কোন মালিক যদি তাদের হক আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে শোয়ানো হবে। অতঃপর গরু-ছাগল তাকে স্বীয় খুর দ্বারা দলিত এবং শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সেদিন সেগুলোর কোন একটিকেও অনুপস্থিত দেখতে পাবে না এবং তাদের মধ্যে কোন গরু-ছাগল শিংবিহীন, উল্টো শিং এবং ভাংগা শিং বিশিষ্টও থাকবে না। এদের প্রথম দলটি যখন চলে যাবে তৎক্ষণাৎ অন্য দলটি এসে যাবে। এভাবে চলতে থাকবে চলতে থাকবে ঐ দিন, যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। 

অবশেষে যখন লোকদের বিচার অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে তখন পথ প্রদর্শন করা হবে তাকে হয় তো জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! ঘোড়ার হক কি? উত্তরে তিনি বললেন, ঘোড়া তিন প্রকার। ঘোড়া কারো জন্য বোঝা হবে। আর কারো জন্য হবে আবরণ। আর কারো জন্য তা হবে পূণ্য। যার জন্য ঘোড়া বোঝা স্বরূপ হবে তা সে ব্যাক্তি যে তার ঘোড়াকে বেধে রেখেছে লোকদের দেখানো, গর্ব প্রকাশ এবং মুসলমানদের শক্রতা পোষণের জন্য। এ ঘোড়াই হবে তার জন্য বোঝা স্বরূপ। যে ঘোড়া কারো জন্য আবরন স্বরূপ হবে, তা সে ব্যাক্তির ঘোড়া যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য বেঁধে রেখেছে এবং এর পিঠ ও ঘাড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আল্লাহর হকের কথাও সে ভুলে যায়নি। এ ঘোড়াই হরে তার জন্য ঢাল স্বরূপ। আর যে ঘোড়া মালিকের জন্য পূণ্য স্বরূপ হবে তা ঐ ব্যাক্তির ঘোড়া, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বাগান বা সবুজ তৃণভূমিতে বেঁধে রেখেছে। ঘোড়াটি ঐ চারণভূমি বাগান থেকে যে পরিমাপ ভক্ষণ করবে এর বিনিময়ে তাকে দেয়া হবে পুণ্য। অনরূপভাবে এর মল মূত্রের বিনিময়েও পরিমাণ তাকে পূণ্য দেয়া হবে। আর ঘোড়াটি যদি তার রশি ছিড়ে এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করে; তবে তার প্রতিটি পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও তাকে পুণ্য দেয়া হবে। যদি মালিক ঘোড়াটি নিয়ে কোন নদী-নালা অতিক্রম করে এবং মালিক ঘোড়াটিকে পানি পান করানোর ইচ্ছা না করা সত্ত্বেও যদি ঘোড়াটি কিছু পানি পান করে নেয়, তবে যে পরিমাণ পানি পান করেছে সে পরিমাণ নেকী তাকে দেয়া হবে। 

অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! গাধা (সমন্ধে কোন বিধান আছে কি?) উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন গাধা সম্পর্কে আমার নিকট কোন আদেশ অবর্তীর্ণ হয়নি। তবে ব্যাপক অর্থবোধক এই একটি আয়াত বিদ্যমান আছেঃ فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ * وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ "কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে। (সুরা যিলযালঃ ৭-৮)।
২১৬৩.    ইউনুস ইবনু আবদুল আ'লা আল সাদাফী (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে এই সনদে হাফস ইবনু মায়সারা (রহঃ) এর হাদীসের মর্মানুযায়ী শেয পর্যন্ত হাদীসটি বর্ননা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন مَا مِنْ صَاحِبِ إِبِلٍ لاَ يُؤَدِّي حَقَّهَا আর তিনি مِنْهَا حَقَّهَا বলেননি এবং এ হাদীসে لاَ يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيلاً وَاحِدًا উল্লেখ করেছেন এবং يُكْوَى بِهَا جَنْبَاهُ وَجَبْهَتُهُ وَظَهْرُهُ বলেছেন ।
২১৬৪.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সোনা-রুপা সঞ্চয়কারী ব্যাক্তি যদি এর যাকাত আদায় না করে তবে জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর এগুলোকে পাতের ন্যায় বানিয়ে এর দ্বারা তার পার্শ্ব এবং ললাটে দাগ দেয়া হবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করা পর্যন্ত, এমন দিনে যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এরপর দেখানো হবে তাকে তার পথ জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। 

কোন উটের মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে তবে তাকে এক প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে অধোমুখী করে শায়িত করা হবে। এরপর সে উট পূর্বের চাইতেও অধিক মোটাতাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং তাকে পদদলিত করতে থাকবে। এদের শেষটি চলে গেলে আবার প্রথমটি ফিরে আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করা পর্যন্ত এমন এক দিনে, যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এরপর দেখান হবে তাকে তার পথ জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। 

বকরীর কোন মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে তবে তাকে প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে শায়িত করা হবে। এরপর সে বকরী পূর্বের চেয়েও অধিক মোটাতাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং স্বীয় খুর দ্বারা তাকে দলিত ও শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। এদের মধ্যে সেদিন কোনটাই শিংবিহীন এবং উল্টো শিং বিশিষ্ট থাকবে না। যখন এদের শেষটি চলে যাবে তখন আবার প্রথমটি ফিরে আসবে। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করা পর্যন্ত এমন দিনে, যে দিনের পরিমাণ হবে তোমাদের হিসাব অনুসারে পঞ্চাশ হাজার বছর। এরপর তাকে দেখান হবে তার রাস্তা জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। 

রাবী সুহায়ল (রাঃ) বলেন, তিনি গরুর কথা উল্লেখ করছেন কি না, আমি জানি না। এরপর সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঘোড়ার হুকুম কি? তিনি বললেন, ঘোড়ার কপালে আছে কল্যাণ অথবা বললেন ঘোড়া তার কপালের সাথে আবদ্ধ করা হয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। [বর্ণনাকারী সুহায়ল (রাঃ) বলেন, এ সন্দেহ আমার] 

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘোড়া তিন প্রকার। এক ব্যক্তির জন্য তা পুণ্য, এক ব্যক্তির জন্য আবরন স্বরূপ এক ব্যাক্তির জন্য হবে বোঝা স্বরূপ। যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য পূণ্য স্বরূপ হবে, তা সে ব্যাক্তি, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় নিয়োজিত রাখে এবং সদা তৈরী রাখে তাকে তাঁরই জন্য। এ ঘোড়া যা কিছু গলধ করণ করে এর প্রতিটির বিনিময়ে তাকে দেওয়া হবে পুণ্য। যদি সে তাকে কোন সবুজ চারণ ভুমিতে চরায় তবে তার যা কিছু আহার করে তার প্রতিটি তৃণের বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য সওয়াব লিখবেন।। যদি সে ঘোড়াকে কোন নদী হতে পানি পান করায়, তবে যতটা পান করল তার প্রতিটি ফোটার বিনিময়ে সে সাওয়াব পাবে। এমনকি অবশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাওয়াবের উল্লেখ করলেন এর পেশাব এবং গোবরের ব্যাপারে)। যদি তা এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করে, তবে এর প্রতিটি কদমের বিনিময়ে রয়েছে মালিকের জন্য পূণ্য। 

যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য আবরণ স্বরূপ তা সেই ব্যাক্তি, যে তার ঘোড়াকে আদর-যত্ন সহকারে সুন্দরভাবে প্রতিপালন করে 'এবং তার ভাল অবস্থায় ও মন্দ অবস্থায় তার পেট ও পিঠের হকের কথা কখনো ভুলেনা। 

আর ঘোড়া বোঝা স্বরুপ সে ব্যাক্তির জন্য, যে ঘোড়া প্রতিপালন করে মানুষের সাথে অহংকার ও গরিমা প্রকাশ এবং লোক দেখানোর জন্য, এ ঘোড়াই তার উপর বোঝা স্বরুপ হবে। 

তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! গাধা সম্পর্কে হুকুম কি? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ তা'আলার ব্যাপক অর্থবোধক আয়াতটি ব্যতীত এ সম্পর্কে আমার প্রতি কিছু নাযিল করেননিঃ فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ * وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ "কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে" (সূরা যিলযালঃ ৭-৮)
২১৬৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সূহায়ল (রাঃ) থেকে এ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
২১৬৬.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) ... সুহায়ল ইবনু আবূ সালিহ (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি উল্টো শিং এর স্থলে কোন কাটা বলেছেন এবং ললাটে দাগ দেয়ার কথা উল্লেখ করা ছাড়া কেবল পার্শ্ব এবং পৃষ্ঠে দাগ দেয়া হবে কথাটি উল্লেখ করেছেন।
২১৬৭.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি মানুষ আল্লাহর হক আদায় না করে অথবা (বলেছেন) উটের সাদাকা আদায় না করে- এরপর রাবী হাদীসটি সুহায়ল (রহঃ) কর্তৃক তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হাদীসটির অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২১৬৮.    সহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে উটের মালিক তার (যাকাত) আদায় করবে না, কিয়ামতের দিন সে উট পুর্বের চেয়ে অধিক মোটাতাজা হয়ে মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। এরপর তাকে একটি প্রশস্ত সমতল মাঠে বসান হবে এবং ঐ উট তার পা ও খুরের দ্বারা তাকে পিষ্ট করবে। 

যদি কোন গরুর মালিক তার হক আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন সে গরু পূর্বের চেয়েও অধিক মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। এরপর তাকে এক প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে বসান হবে এবং সেগুলো তাকে শিং দ্বারা গুতাবে ও খুর দ্বারা পিষ্ট করবে। 

যদি কোন ছাগলের মালিক তার হক আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন সে ছাগল পূর্বের চেয়েও অধিক মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। আর তাকে এক প্রশস্ত প্রান্তরে বসান হবে এবং সে ছাগল তাকে শিং দ্বারা গুতাবে ও খুর দ্বারা পিষ্ট করতে থাকবে। সেদিন এ ছাগল সমুহে কোনটি শিংবিহীন এবং শিংভাঙ্গা হবে না। 

আর যদি সোনা-এরুপা সঞ্চয়কারী কোন ব্যাক্তি এর হক আদায় না করে, তবে তার এ সঞ্চয় কিয়ামতের দিন মাথার চুলপড়া বিষধর সাপরূপে মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং মুখ হা করে তার পেছনে ধাওয়া করবে। যখন সে সাপ তার নিকট আসবে তখন সে এর থেকে পালাবে। তখন সে তাকে ডেকে বলবে, তুমি তোমার সঞ্চয় গ্রহণ কর, যা তুমি লুকিয়ে রেখেছিলে। আমার তার কোন প্রয়োজন নেই। মালিক যখন দেখবে যে, এর থেকে বাচবার কোন উপায় নেই তখন সে সাপটির মুখে হাত ঢুকিয়ে দিবে। এরপর সাপটি তার হাতকে ষাঁড়ের মত কামড় দিয়ে ধরবে। 

আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়র (রাঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি। এরপর আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম তিনিও উবায়দ ইবনু উমায়র (রাঃ) এর মত বললেন। রাবী আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়রকে বলতে শুনেছি, এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উটের হক কি? তিনি বললেন, এর হক হল, পানি পান করাবার স্থানে এদেরকে দোহন করা, এদের (দ্বারা পানি উঠাবার) পাত্র অন্যকে ধার দেয়া, এগুলোর মধ্যে ষাড় উট ও দুগ্ধবতী উটনী অন্যকে ধার দেয়া এবং আল্লাহর পথে লোকদেরকে এগুলোর উপর আরোহণ করান।
২১৬৯.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উট এবং গরু-ছাগলের কোন মালিক যদি এগুলোর যাকাত না দেয় তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত সমতল ভূমিতে বসান হবে। এরপর খূর বিশিষ্ট প্রানী তাকে স্বীয় খুর দ্বারা দলিত করবে এবং শিংবিশিষ্ট পশু তাকে স্বীয় শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সেদিন এদের মধ্যে শিংবিহীন এবং শিং ভাঙ্গা কোন পশু থাকবে না। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের হক কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উটকে উটনীর পাল নিতে দেয়া, এদের পাত্রসহ পানি উঠাবার জন্য কাউকে ধার দেয়া। দুগ্ধবর্তী উষ্ট্রী অন্যকে ধার দেয়া, পানি পান করবার স্থানে এদের দুগ্ধদোহন করা এবং আল্লাহর পথে এদের উপর লোকদেরকে আরোহণ করতে দেয়া। 

যে বিত্তশালী ব্যাক্তি তার তার মালের যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য মাথার চুলপড়া বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে। অতঃপর সে সাপ যাকাত অস্বীকারকারী ব্যাক্তি যেখানে যাবে সেখানেই তাকে ধাওয়া করবে। তখন সে সাপ থেকে পলায়ন করতে থাকবে। কিন্তু তাকে বলা হবে, এই তোমার সম্পদ যার ব্যাপারে তুমি কার্পণ্য করতে। অতঃপর যখন সে দেখবে এর থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই, তখন সে তার হাত এর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিবে। সে সাপ তার হাত চিবাতে থাকবে, ষাড়ের চিবানোর মত।

পরিচ্ছেদঃ ৩. যাকাত উসুলে কর্মরতদের সন্তুষ্ট রাখা


২১৭০.    আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকজন বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, যাকাত উসূলকারী লোকজন আমাদের প্রতি যুলুম করে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যাকাত আদায়কারী লোকদেরকে সন্তুষ্ট করে দাও। জারীর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ বানী শুনার পর কোন যাকাত আদায়কারী ব্যাক্তি আমার নিকট হতে সন্তুষ্ট না হয়ে যায় নি।
২১৭১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইসহাক (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ইসমাঈল (রহঃ) তাঁরা সকলেই মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪. যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না, তার প্রতি কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা


২১৭২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তিনি কাবা গৃহের ছায়ায় উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেন, কা’বা গৃহের মালিকের শপথ, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর নিকট গিয়ে বসলাম, কিন্তু বিলম্ব না করে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক, তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হল অধিক সম্পদের মালিকরা। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা এদিক ওদিকে, (ডানে, বামে, সন্মুখে, পশ্চাতে) ব্যয় করেছে। তবে এদের সংখ্যা অনেক কম। উট ও গরু মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট আসবে এবং তাকে ওদের শিং দ্বারা আঘাত করবে ও খুর দ্বারা পদদলিত করতে থাকবে। পদদলিত করে যখনই সর্বশেষটি চলে যাবে, তৎক্ষণাৎ প্রথমটি পূনরায় ফিরে আসবে এবং তা চলতে থাকবে লোকদের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত।
২১৭৩.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আতনা (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তিনি কাবা গৃহের ছায়াতলে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর ওয়াকীর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! যমীনের উপর এমন কোন লোক নেই যে, মরে যাবে এবং রেখে যাবে এমন উট অথবা গরুর অথবা ছাগল যার যাকাত সে আদায় করে নি...।
২১৭৪.    আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এতে আমি খুশী নই যে, আমার জন্য উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ হোক এবং তিন দিন এ অবস্থায় অতিবাহিত হোক যে, সে স্বর্ণ থেকে আমার কাছে একটি দ্বীনার অবশিষ্ট থাকবে। তবে সে দীনার ব্যতীত, যা আমি কারো ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রস্তৃত রাখি।
২১৭৫.    মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫. দান-সদকায় উৎসাহ প্রদান


২১৭৬.    ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহহিয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইশার সময় মদিনার হাররা অঞ্চলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমরা উহুদ পর্বতের দিকে তাকিয়ে ছিলম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ যার! আমি বললাম, লাব্বাইক- ইয়া রাসুলাল্লাহ! অতঃপর তিনি বললেন, আমি এটা পছন্দ করি না যে, এই উহুদ পাহাড়টি আমার জন্য স্বর্ণ হয়ে যাক আর আমি তিন রাত এ অবস্থায় অতিবাহিত করি যে, স্বর্ণের একটি দীনারও আমার কাছে থাকছে, তবে সে দীনারের কথা সতন্ত্র যা আমি ঝণ পরিশোধ করার জন্য রেখে থাকি। 

বরং আমি তা ডানে, বামে, সামনে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমনিভাবে বিতরণ করব। তিনি উভয় হাতে অঞ্জলি দেখালেন। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা পথ চলতে লাগলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! আমি বললাম লাব্বাইক, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, বিত্তশালী লোকেই হবে কিয়ামতের দিন গরীব। তবে যারা ব্যয় করেছে এভাবে এভাবে এভাবে যেরূপ তিনি প্রথমবার করেছিলেন সেরূপ করলেন। আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমরা পথ চলতে লাগলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! আমি তোমার কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অবস্থান কর।

রাবী বলেন, অতঃপর তিনি যেতে যেতে আমার দৃষ্টি হতে অদূশ্য হয়ে গেলেন। আবূ যার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি কতিপয় অর্থহীন শব্দ এবং আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিপদের সস্মুর্খীন হয়েছেন। তখন আমি তার অনুসরণ করার ইচ্ছা করলাম। হঠাৎ স্মরণ হল, "আমি তোমার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই অবস্থান করবে" তার এ নির্দেশটি। 

আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে তিনি ফিরে আসার পর, আমি যা শুনতে পেলাম তা তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমার নিকট এসে বললেন, আপনার উম্মাতের কোন লোক যদি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক না করে মৃত্যৃবরণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি সে চুরি এবং ব্যভিচার করে তবুও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি সে চুরি এবং ব্যভিচার করে তবুও।
২১৭৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি বের হলাম। দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী পায়চারী করছেন। তাঁর সঙ্গে অন্য কোন মানুষ ছিল না। তিনি বলেন, আমি মনে করলাম, হয়ত তাঁর সঙ্গে কারো হাঁটা তিনি পছন্দ করছেন না। তাই আমি চাঁদের ছায়ায় হাটতে আরম্ভ করলাম। এরপর তিনি এদিকে তাকালেন এবং আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি বললাম, আবূ যার। আল্লাহ তা'আলা আপনার প্রতি আমাকে উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেন, হে আবূ যার! এসো। এরপর আমি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ পথ চললাম। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন বিত্তশালী লোকেরাই নিঃস্ব হবে, কিন্তু সে ব্যতীত যাকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, এরপর সে বিলিয়ে দিয়েছে সে সস্পদ ডানে বামে সামনে ও পেছনে এবং এর দ্বারা কল্যাণকর কাজ করেছে। 

তিনি বলেন, এরপর আমি তার সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ চললাম। তিনি বললেন এখানে বস। এ বলে তিনি আমাকে পাথরঘেরা একটি সমতল মাঠে বসালেন এবং বললেন, আমি তোমার কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে বসে থাকবে। রাবী বলেন, এর পর তিনি "হাররা" এর দিকে চলতে লাগলেন। এমনকি আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার থেকে পৃথক হয়ে দীর্ঘ সময় বিলম্ভ করলেন। এরপর তিনি ফিরে আসার পথে আমি শুনতে পেলাম তিনি বলছেন, "যদিও সে চুরি করে থাকে" "যদিও সে ব্যাভিচার করে থাকে"। আবূ যার (রাঃ) বলেন, যখন তিনি আসলেন, তখন আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর নাবী! আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গিত করুন, আপনি হাররা অঞ্চলে কার সাথে কথা বলছিলেন? আমি তো কাউকে আপনার কথার কোন উত্তর দিতে শুনলাম না। 

তখন তিনি বললেন, এ হলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) হাররা অঞ্চলে তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আপনি আপনার উম্মাতকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরপর আমি বললাম, হে জিবরীল! যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। পুনরায় আমি বললাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে ব্যভিচার করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আবার আমি বললাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে ব্যভিচার করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদিও সে মদ্যপান করে।”
২১৭৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আহনাফ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদিনায় এলাম। সে সময় কুরায়শ নেতৃবৃন্দের একটি হালকায় বসাছিলাম। তখন খসখসে বস্ত্র, খসখসে শরীর ও খসখসে চেহারা নিয়ে এক ব্যাক্তি এসে তাদের কাছে দাঁড়িয়ে বললেন, সম্পদ পূঞ্জীভূতকারী ব্যাক্তিদেরকে সুসংবাদ দিন, এমন গরম পাথরের যা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের বুকের উপর রাখা হবে। ফলে তাদের গ্রীবা দেশের হাড় বিদীর্ণ করে অপর দিকে বের হয়ে যাবে। আবার তার ঘাড়ের হাড়ের উপর রাখা হবে। এমনকি তা স্তনাগ্র ভেদ করে বের হবে। 

রাবী বলেন, এ সময় লোকেরা তাদের মাথা নত করে রাখলেন। উপস্থিত কাউকে তার এ কথার প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। এরপর লোকটি ফিরে গেলেন। আমি তাঁর পেছনে পেছনে গেলাম। অবশেষে তিনি একটি থামের নিকট গিয়ে বসলেন। আমি বললাম, আপনি তাদেরকে যা বলেছেন, আমার ধারণা তারা তা অপছন্দ মনে করছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তারা এমন লোক যারা কিছুই বুঝতে পারছে না। আমার বন্ধু আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি তাঁর নিকট যাওয়ার পর তিনি বললেন, তুমি কি উহুদ পাহাড়টি দেখতে পাচ্ছ? তখন আমি লক্ষ্য করলাম, আমার উপর সূর্য আর কতটূকু অবশিষ্ট আছে এবং তিনি তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে তথায় পাঠাবেন। আমি বললাম, জী হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। 

তখন তিনি বললেন, আমাকে আনন্দিত করবেনা এ সমপরিমাণ স্বর্ণ আমার কাছে হোক, আর আমি এসব ব্যয় করি তিনটি স্বর্ণ মুদ্রা ব্যতীত। এরপর এসব লোক দুনিয়া সঞ্চয় করছে। অথচ তারা কোন কিছুই বুঝছে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কুরায়শী ভাইদের সাথে আপনার কী হয়েছে যে, আপনি তাদের সাথে মেলামেশা করেন না, যাননা এবং তাদের কাছ থেকে কিছু লাভ করেন না? তিনি বললেন, না তোমার রবের কসম! আমি তাদের নিকট দুনিয়াও চাইব না এবং দ্বীন সম্পর্কেও কোন কথা জিজ্ঞাসা করব না। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত।
২১৭৯.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আহকাফ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কুরায়শের একদল লোকের মধ্যে ছিলাম। তখন আবূ যার (রাঃ) এলেন। আবূ যার (রাঃ) এদিক দিয়ে যাওয়ার পথে বলছিলেন, সুসংবাদ দাও সস্পদ সঞ্চয়কারীদেরকে। গরম লোহা দ্বারা তাদের পৃষ্ঠদেশ দাগ দেয়ার যে গরম লোহা তাদের দেহের হাড় পাশ দিয়ে বের হয়ে আসবে এবং তাদের ঘাড়ের দিকে গরম লোহা দ্বারা এমনভাবে দাগ দেয়া হবে যে, ললাটের দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি একটু সরে বসে পড়লেন। 

রাবী বলেন, এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ লোকটি কে? তারা বললেন, তিনি আবূ যার (রাঃ)। তখন আমি তার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিছুক্ষণ পুর্বে আপনাকে যা বলতে শুনলাম, এ-কি? তিনি বললেন, আমি তাই বলেছি, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। এরপর আমি বললাম, এ সরকারী অনুদান সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, তুমি-তা গ্রহণ কর কেননা আজকের দিন এতে রয়েছে সাহায্য। কিন্তু তা যদি হয় দ্বীন বিক্রয়ের মূল্যস্বরূপ তবে তুমি তা গ্রহণ করবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৬. দানের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান এবং দাতাকে বিনিময় প্রদানের সুসংবাদ


২১৮০.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান কর, আমি তোমাকে দান করব। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেন, এমন পরিপুর্ণ দিবারাত্রির অনবরত দানই তাতে কিছু কমায় না।
২১৮১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন, তন্মধ্যে একটি হল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ আমাকে বলেছেন, তুমি দান কর, আমি তোমাকে দান করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। রাত-দিনের অনবরত দান তা হ্রাস করতে পারে না। তোমরা কি দেখনি, আকাশ ও পৃথিবীর পর হতে তিনি কি পরিমাণ দান করেছেন? কিন্তু এ দান তাঁর হাতের সস্পদের কিছুই কমাতে পারে নি। তিনি বলেন, তাঁর আরশ পানির উপর। তার অপর হস্তে রয়েছে মৃত্যু। তিনি (যাকে ইচ্ছা) উন্নীত করেন এবং (যাকে ইচ্ছা) অবনমিত করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭. পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীদের প্রতি ব্যায় করার ফযীলত এবং তাদের হক নষ্টকারী ব্যক্তির পাপ


২১৮২.    আবূ রাবী যাহরানী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম সে দীনার (মূদ্রা) সেটি, যা মানুষ তার পরিবারের জন্য ব্যয় করে এবং সেই দীনার, যা আল্লাহর পথে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখা জানোয়ারের জন্য ব্যয় করে এবং সেই দীনার, যা আল্লাহর পথে জিহাদকারী সঙ্গী-সাথীদের জন্য ব্যয় করে। 

বর্ণনাকারী আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজনের- কথা প্রথমে বলেন। এরপর আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি তার ছোট ছোট সন্তান-সন্ততির প্রতি ব্যয় করে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র রাখেন, অভাবমুক্ত করেন অথবা উপকৃত করেন এবং তাদের অভাবমুক্ত রাখেন তার চাইতে মহান পারিশ্রমিকের অধিকারী আর কে হতে পারে?
২১৮৩.    । আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ, কোন দীনার তুমি ব্যয় করেছ ক্রীতদাসকে মুক্ত করার জন্য, কোন দীনার তুমি সাদাকা করেছ মিসকীনের জন্য এবং কোন দীনার তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ। সাওয়াবের দিক সর্বোত্তম হল যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ।
২১৮৪.    সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ জারমী (রহঃ) ... খায়সামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় তার কাছে তার খাজাঞ্চী এলেন এবং ভিতরে প্রবেশ করলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি ভৃত্যদেরকে তাদের খোরাকী দিয়েছ কি? তিনি বললেন, না দেই নি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও তাদেরকে দিয়ে দাও। এরপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "পাপের জন্য এই যথেষ্ট যে, যাদের খোরপোষ তোমার দায়িত্ব তুমি তাদের খোরাকী আটকিয়ে রাখবে।"

পরিচ্ছেদঃ ৮. ব্যয়ের ব্যাপারে প্রথমে হক নিজের, এরপর পরিবার পরিজনের, তারপর নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের


২১৮৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী ওযরার এক ব্যাক্তি তার মৃত্যুর পরবর্তীকালের জন্য তার এক গোলামকে আযাদ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ খবর শুনার পর (মালিককে) বললেন, তোমার নিকট ইহা ব্যতিরেকে অন্য কোন মাল আছে কি? সে বলল, নেই। তখন তিনি বললেন, আমার কাছ থেকে এ গোলামকে খরিদ করবে কি? তখন নুয়াইম ইবনু আবদুল্লাহ আবদী (রাঃ) আটশ রৌপ্য দিরহামের বিনিময়ে তাকে খরিদ করলেন। এরপর তিনি এ মুদ্রাগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তাকে দিয়ে বললেন, প্রথমে নিজের জন্য ব্যয় কর। এরপর অবশিষ্ট থাকলে পরিজনের জন্য ব্যয় কর। নিজ পরিজনের জন্য ব্যয় করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে নিকটাত্নীয়দের জন্য ব্যয় কর। আতীয়-স্বজনদেরকে দান করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে এদিক অর্থাৎ সম্মুখে-ডানে-বামে ব্যয় করবে।
২১৮৬.    ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ মাযকুর নামক এক আনসারী নিজের মরণের পর ইয়াকুব নামক তার এক গোলামকে আযাদ হওয়ার ঘোষণা দিল। এরপর লায়স বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৯. নিকটাত্মীয়, স্বামী, সন্তান-সন্তুতি ও মাতা-পিতার জন্য খরচ করার ফযীলত, যদিও তারা মুশরিক হয়


২১৮৭.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনার আনসারী সাহাবীদের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সর্বাপেক্ষা বিত্তবান ছিলেন। তার সস্পড়ির মধ্যে ‘বায়রুহাই’ ছিল সর্বাধিক প্রিয় সম্পদ। সেটি মসজিদুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অবস্থিত ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গিয়ে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, "তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা তোমরা কখনো পূন্যতা লাভ করবে না" এ আয়াত নাযিল হলে তখন আবূ তালহা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলছেন, "তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূন্যতা লাভ করবে না।" 

‘বায়রুহা’ আমার সর্বপেক্ষা প্রিয় সম্পদ। অতএব আমি তা আল্লাহর রাহে সাদাকা করলাম। বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে নেকী ও সঞ্চয় আশা করি এবং আখিরাতে পুজির আশা রাখি। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার মর্জি মাফিক আপনি তা স্বদ্ব্বব্যবহার করুন। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহ! সম্পদটি লাভজনক। সম্পদটি লাভজনক। এ সম্পর্কে তুমি যা বললে, অবশ্যই আমি তা শুনেছি তবে আমার পছন্দ হচ্ছে তা তুমি তোমার আত্নীয়-স্বজনদের মাঝে বন্টন করে দাও। অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) আত্নীয়-স্বজন ও তার চাচাতো ভাইদের মাঝে তা বন্টন করে দিলেন।
২১৮৮.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় নাকরা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূণ্য লাভ করবে না" এ আযাতটি নাযিল হওয়ার পর আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি আমাদের রব আমাদের সম্পদ থেকে কিছু চাচ্ছেন। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনাকে সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার, ‘বায়রুহা’ নামক ভূমি আল্লাহর রাহে দান করলাম। তিনি বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা তোমার আত্নীয়-স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। তিনি তা হাসসান ইবনু সাবিত ও উবাই ইবনু কাব (রাঃ) এর মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।
২১৮৯.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... মায়মুনা বিনত হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দায় একটি বাদী আযাদ করেছিলেন। এ কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তোমার মামাদের দান করতে তাহলে তুমি অধিকতর সাওয়াব পেতে।
২১৯০.    হাসান ইবনুর রাবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে নারী সমাজ! তোমাদের অলংকার দিয়ে হলেও তোমরা সাদাকা কর। তিনি বলেন, এ কথা শুনে আমি আমার স্বামী আবদুল্লাহর নিকট চলে গেলাম এবং তাকে বললাম, আপনি তো অসচ্ছল। রাসুলুল্লাহ আমাদেরকে সাদাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনি গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করুন যদি আপনাকে দিলে আমার সাদাকা আদায় হয়ে যায় তা হলে তো হলই। আর যদি আদায় না হয় তাহলে আমি আপনাকে ছাড়া অন্যকে দিয়ে দিব। 

তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, বরং তাঁর নিকট তুমি যাও। যায়নাব (রাঃ) বলেন, আমি গেলাম এবং এক আনসারী মহিলাকে আমার মত একই প্রয়োজনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত দেখতে পেলাম। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারায় ভীতিকর গাম্ভীর্য দেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় বিলাল (রাঃ) আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গিয়ে বলুন, দরজার নিকট দু-জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে, তাদের নিজ নিজ স্বামীকে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ইয়াতীমদের সাদাকা দিলে তাঁদের সাদাকা আদায় হবে কি? তবে আমরা কারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা জানাবেন না। 

অতঃপর বিলাল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে এ কথা জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, এরা কারা? বিলাল (রাঃ) বললেন, একজন আনসারী মহিলা এবং যায়নাব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন যায়নাব? তিনি বললেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের জন্য দ্বিগুন সাওয়াব রয়েছে। আত্নীয়তার সাওয়াব এবং সাদাকার সাওয়াব।
২১৯১.    আহমাদ ইবনু ইউসুফ আযদী (রহঃ) ... আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী আ’মাশ (রহঃ) বলেন, আমি ইবরাহীমকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি আবূ উবায়দা আমর ইবনু হারীস (রহঃ) সুত্রে আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নব থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। এতে রয়েছে যে, আমি ছিলাম মসজিদে তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখলেন এবং বললেন, নিজেদের অলংকার থেকে হলেও তোমরা সাদাকা কর। হাদীসের পরবর্তী অংশ আবূল আহওয়াসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২১৯২.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আবূ সালামার সন্তানদের জন্য যা খরচ করে থাকি তাতে আমি সাওয়াব পাব কি? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছাড়তে পানি না। তারা তো আমারই সন্তান। উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের জন্য তুমি ব্যয় করবে, তাতে তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে।
২১৯৩.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদ পূর্বক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২১৯৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আনবারী (রহঃ) ... আবূ মাসউদ বাদরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মুসলিম যদি সাওয়াবের আশায় স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু ব্যয় করে, তবে তার জন্য সাদাকা হবে।
২১৯৫.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার, আবূ বকর ইবনু নাফি ও আবূ কুবায়ব (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) এর সুত্রে উক্ত সনদে পুর্বের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২১৯৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার আম্মা আমার নিকট এসেছেন। তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণে বিমুখ বা অনাগ্রহী, আমি তার সাথে সদাচরণ করবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
২১৯৭.    আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা আমার নিকট এসেছেন। সে তো মুশরিক মহিলা। আসমা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা সে সময় জিজ্ঞাসা করেছিলাম যখন কুরায়শদের সাথে তিনি সন্ধিচুক্তি করেছিলেন। আমি তাকে বললাম, আমার আম্মা আমার কাছে এসেছেন আশা নিয়ে। আমি আমার আম্মার সাথে ভাল ব্যবহার করব কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার আম্মার সাথে ভাল ব্যবহার কর।

পরিচ্ছেদঃ ১০. মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে সদাকা করা এবং করলে এর সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে যাওয়া


২১৯৮.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার আম্মা হঠাৎ মৃত্যু বরন করেছেন। তিনি অসিয়্যত করে যেতে পারেন নি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তা হলে সাদাকা করতেন। অতএব আমি যদি তার পক্ষ হাত সাদাকা করি তবে এর সাওয়াব তিনি পাবেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, পাবেন।
২১৯৯.    যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ব, আলী ইবনু হুজর ও হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ উসামার হাদীসের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনু বিশরের হাদীসের মত "অসিয়ত করে যেতে পারেননি" কথাটি বর্ণিত আছে। কিন্তু অন্যরা এ কথাটি উল্লেখ করেন নাই।

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রত্যেক কল্যাণকর কাজই সদকা


২২০০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তবে কুতায়বার হাদীসে আছে যে, "তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন" আর ইবনু আবূ শায়বার হাদীসে রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক কল্যাণকর কাজই সাদাকা।
২২০১.    আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয-যুবাঈ (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কয়েকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! বিত্তবানরা সাওয়াব নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের মত সালাত আদায় করেন, আমাদের মত সিয়াম সাধনা করেন এবং তারা নিজেদের ধন সম্পদ হতে কিছু দান করে থাকেন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কী আল্লাহ তাআলা সাদাকা করার ব্যবস্থা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ সাদাকা, প্রতিটি তাকবীর সাদাকা, প্রতিটি তাহমীদ সাদাকা, প্রতিটি তাহলীল সাদাকা, সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎকাজ হতে বিরত রাখা সাদাকা এবং স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও সাদাকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদি স্ত্রী সংগম করে এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে।
২২০২.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বনী আদমের প্রতি মানুষকে ৩৬০ টি গ্রন্থিবিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যাক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্লাহু আকবর বলবে, আল হামদুলিল্লাহ বলবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, সুবহানাল্লাহ বলবে, আসতাগফিরুল্লাহ বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে কোন পাথর সরাবে কিংবা কাটা বা হাড় সরাবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে। সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করবে যে, সে নিজকে জাহান্নামের আগুন থেকে দুরে রেখে দিয়েছে। আবূ তাওবা (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী يَمْشِي এর স্থলে يُمْسِي বলতেন (অর্থাৎ তার সন্ধ্যা হবে এ অবস্থায় যে সে নিজকে......)।
২২০৩.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... যায়িদ সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত। তবে "সৎকাজের আদেশ দেবে" কথাটি ব্যতীত। অন্য সুত্রে তিনি বলেন, "সে দিন যে সন্ধ্যা করবে।"
২২০৪.    আবূ বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর রাবী যায়িদের হাদীসের অনূরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর হাদীসের মধ্যে "সে দিন সে চলাফেরা করবে" কথাটি বর্ণিত রয়েছে।
২২০৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু আবূ বুরদা (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে তার দাদা থেকে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদাকা করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হল, যদি সাদাকা করার জন্য কিছু না পায়? তিনি বললেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করবে এবং নিজে উপকৃত হবে ও সাদাকা করবে। পূনরায় জিজ্ঞাসা করা হল যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কি হবে? তিনি বললেন, তাহলে সে অসহায় আর্ত মানুষের সাহায্য করবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞাসা করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, তাহলে সৎকাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবারো জিজ্ঞাসা করা হল যদি সে তাও না করে? তিনি বললেন, তবে মন্দকাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও সাদাকা।
২২০৬.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
২২০৭.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,এ হচ্ছে আবূ হুরায়রা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা। এরপর তিনি কিছু হাদীস বর্ণনা করলেন, তার মধ্যে এটিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক দিন যখন সূর্য উদিত হয়, তখন মানুষের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কর জন্য সাদাকা ওয়াজিব। তিনি বলেন, দু'ব্যাক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করা সাদাকা, কোন ব্যাক্তিকে তার সাওয়ারীর ব্যাপারে সাহায্য করা অথবা তার মাল সামগ্রী তুলে দেয়া সাদাকা। তিনি আরও বলেছেন, ভাল কথা বলা সাদাকা, সালাতের উদ্দেশ্যে গমনের পথে প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা। চলার পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া সাদাকা।

পরিচ্ছেদঃ ১২. দানশীল ও কৃপণ প্রসঙ্গ


২২০৮.    কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যহ মানুষের যখন ভোর হয়, তখন দু-জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। অতঃপর তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার বদলা দাও। অপরজন বলেন, কৃপনের ধন ধ্বংস কর।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. সেই দিন আসার আগে দান-সদকায় উৎসাহ প্রদান যেদিন তার কোন গ্রহীতা পাওয়া যাবে না


২২০৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... হারিসা ইবনু ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা সাদাকা দাও। অচিরেই এমন হবে যে, যখন এক মানুষ তার সাদাকার সামগ্রী নিয়ে ঘুরবে। যাকে দিতে চাইবে সে বলবে, যদি গতকালও নিয়ে আসতে তাহলে আমি তা গ্রহণ করতাম। কিন্তু আমার আজ এর কোন প্রয়োজন নেই। অবশেষে সাদাকা গ্রহণের জন্য কাউকেই পাওয়া যাবে না।
২২১০.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ'আরী ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের এমন এক সময় আসবে যখন সোনা নিয়ে সাদাকা করার জন্য লোক ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা নেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। আরো দেখা যাবে যে, পুরুষের সংখ্যা সল্পতা ও নারীদের আধিক্যের দরুন চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অধীনস্থ হবে এবং তারা তার আশ্রয় গ্রহন করবে। ইবনু বাররাদ (রহঃ) এর অপর এক রিওয়ায়াতে আছে "তুমি এক ব্যাক্তিকে দেখতে পাবে।"
২২১১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না প্রঢ়ুর ধন-সম্পদ ও বিপূল প্রাচুর্য প্রকাশ পায়। এমনকি তখন মানুষ তাঁর মালের যাকাত নিয়ে বের হবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাওয়া যাবে না। আরব দেশ চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।
২২১২.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমাদের মাঝে এত প্রাচুর্য দেখা দেবে যে, তা উপচে পড়বে। এমনকি সম্পদের মালিক তখন ভাবনা করবে যে, কে তার সাদাকা গ্রহণ করবে? সাদাকা দেয়ার জন্য লোকদেরকে আহবান করা হবে। তখন সে বলবে, আমার প্রয়োজন নেই।
২২১৩.    ওয়াসিল ইবনু আবদুল আ'লা, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযীদ রিফাঈ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভূমি তার বক্ষস্থিত বস্তুসমূহ সোনা স্তম্ভের মত বের করে দেবে। তখন হত্যাকারী ব্যাক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য হত্যা করেছি। আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যাক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছি। চোর এসে বলবে, এরই কারণে আমার হাত কাটা হয়েছে। অতঃপর সকলেই তা ছেড়ে দেবে। এর থেকে তাঁরা কেউ কিছুই গ্রহণ করবে না।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. হালাল উপার্জন থেকে সদকা গৃহীত হওয়া ও তার পরিচর্যা


২২১৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যাক্তি হালাল সম্পদ হতে সাদাকা করলে, বস্তুত আল্লাহ হালাল ছাড়া গ্রহণ করেন না। রহমান তা ডান হস্তে গ্রহণ করবেন। যদি তা একটি খেজুরও হয়, তবে তা রহমান আল্লাহর হাতে লালিত হবে। ফলে তা পাহাড়ের চাইতেও বড় হবে। যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের ঘোড়ার বাচ্চা ও উটের শাবককে পালন করে।
২২১৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হালাল উপায়ে উপার্জিত সম্পদ হতে যদি কোন ব্যাক্তি একটি খেজুর সাদাকা করে তবে আল্লাহ তা তাঁর ডানহস্তে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা পালন করেন যেমন তোমার তোমাদের ঘোড়ার বাচ্চা ও উটের শাবক পালন করে থাক। অবশেষে তা পর্বতসম হয়ে যায় কিংবা তার চেয়েও অধিক গুনে বেড়ে যায়।
২২১৬.    উমায়্যা ইবনু বিসতাম ও আহমাদ ইবনু উসমান আওদী (রহঃ) ... সুহায়ল (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাওহ (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে "হালাল উপার্জন থেকে, অতঃপর ব্যয় করে সে তা তার প্রাপ্য স্থানে" এবং সূলায়মানের হাদীসে রয়েছে "অতঃপর ব্যয় করে সে তা যথাস্থানে।"
২২১৭.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুহায়লের বরাত দিয়ে ইয়াকুব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
২২১৮.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আ'লা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে না। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে সেই আদেশ করেছেন, যে আদেশ করেছেন তিনি রাসুলগণকে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, "হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর, সে সমন্ধে আমি অবহিত।" (সূরা মু'মিনুনঃ ৫১) তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, "হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে সব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা থেকে আহার কর।" (সূরা বাকারাঃ ১৭২) 

এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে, দীর্ঘ সফর করে, যার এলোমেলো চুল ধুলায় ধুসরিত সে আকাশের দিকে দু'হাত তুলে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম এবং তাঁর শরীর গঠিত হয়েছে হারামে। অতএব, তাঁর দু’আ কিভাবে কবুল করা হবে?

পরিচ্ছেদঃ ১৫. সদকায় উৎসাহ দান, যদিও তা এক টুকরা খেজুর অথবা উত্তম কথার দ্বারা হয়, সদকা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকবচ


২২১৯.    আওন ইবনু সাল্লাম আল কুফী (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে সমর্থ, এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও সেটা তাঁর করা উচিত।
২২২০.    আলী ইবনু হুজর আস-সা’দী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই সাথে আল্লাহ নিশ্চয়ই কথা বলবেন। তাঁর ও বান্দার মাঝখানে কোন দোভাষী থাকবে না। অতঃপর বান্দা তাঁর ডানদিকে তাকাবে, কিন্তু কৃতকর্মগুলো ছাড়া আর কোন কিছুই সে দেখবে না। এরপর বান্দা তার বামদিকে তাকবে। কিন্তু কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। অতঃপর সামনের দিকে তাকাবে, কিন্তু চোখের সামনে সে আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। সুতরাং এক টুকরা খেজুর সাদাকা করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। 

ইবনু হুজর (রহঃ) ... খায়সামা (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় بِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ "উত্তম কথা হলেও" কথাটি অতিরিক্ত বর্ণিত আছে। ইসহাক আমর ইবনু মুররা (রহঃ) সূত্রে খায়সামা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
২২২১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আলোচনা করলেন। অতঃপর তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং ভ্রুকুঞ্চিত করলেন। এরপর বললেন, তোমরা আগুন থেকে বাঁচ। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং ভ্রুকুঞ্চিত করলেন। এমনকি আমাদের ধারণা হল তিনি যেন আগুন দেখতে পাচ্ছেন। এরপর বললেন, এক টূকরা খেজুর দিয়ে হলেও তোমরা আগুন থেকে বাঁচ। যদি সে তা না পায় তবে একটি উত্তম কথার বিনিময়ে হলেও। 

ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ কুয়ায়ব (রহঃ) তাঁর বর্ণনায়, كَأَنَّمَا শব্দটি উল্লেখ করেননি এবং বলেন, আমাদের কাছে আবূ মু’আবিয়া রিওয়ায়াত করেছেন যে, আ'মাশ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২২২২.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের অগ্নি সম্পর্কে আলোচনা করলেন। এরপর তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন এবং মুখমন্ডল তিনবার ফিরিয়ে নিলেন। এরপর তিনি বললেন, এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও তোমরা অগ্নি থেকে বেঁচে থাক। যদি তা না পাও তবে অন্তত ৪ একটি ভাল কথার বিনিময়ে হলেও।
২২২৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না আনাযী (রহঃ) ... মুনযির ইবনু জারীর (রহঃ) কর্তৃক তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দিনের পূর্বভাগে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। এ সময় নগ্নপদ, খালি মাথা, চামড়ার বস্ত্র পরিহিত ও তরবারী গলায় লটকিয়ে এক দল লোক তাঁর নিকট আসল। তাদের অধিকাংশ বরং সকলেই ‘মুযার’ গোত্রের লোক ছিল। তাদের মাঝে অনাহারের নিদর্শন দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি (গৃহাভ্যন্তরে) প্রবেশ করলেন এবং বেরিয়ে এলেন। এরপর বিলাল (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন। তিনি (বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন ও ইকামত দিলেন। 

সালাত আদায় করার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন এবং তিলাওয়াত করলেন, “হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপাল কে ভয় কর; যিনি তোমাদেরকে এক ব্যাক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন; যিনি তাদের দু'জন থেকে বহু নর নারী ছড়িয়ে দেন এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞা কর এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন” (সূরা নিসাঃ ১)। 

(অন্য আয়াত) "হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, প্রত্যেকেই ভেবে দেখ আগামী কালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। (সূরা হাশরঃ ১৮)। পূরুষ তার দীনার হতে, তার দিরহাম হতে, তার বস্র হতে সদাকা করুক এবং গম থেকে এক সা' খেজুর থেকে এক সা' দান করুক। এমন কি তিনি বললেন, এক টূকরো খেজুর দিয়ে হলেও। 

বর্ণনাকারী বলেন, তখন এক আনসারী ব্যাক্তি একটি থলে নিয়ে আসল তার হাত যেন তা তুলতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। বরং অপারগই হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকজন একের পর এক সাদাকা নিয়ে আসতে লাগল। অবশেষে আমি খাদ্য ও বস্ত্রের দুটি স্থুপ দেখতে পেলাম। তখন আমি দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা সমুজ্জল হল যেন এক টুকরা সোনা। 

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি ইসলামে কোন নেক প্রথা চালু করবে, সে তার নেককর্মের সাওয়াব পাবে এবং ঐ ব্যাক্তির সম পরিমাণ সাওয়াবও লাভ করবে যে ব্যাক্তি তার পরে ঐ নেক আমল করবে, এতে তাদের নেকী বিন্দুমাত্র ও কমবে না। পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যাক্তি ইসলামে কোন কুপ্রথা চালু করে তবে এ অসৎকর্মের গুনাহ তার উপর বর্তাবে এবং ঐ ব্যাক্তির গুনাহও, যারা তার পরবর্তীতে সে অসৎকর্ম করবে, এতে তাদের গুনাহ বিন্দু পরিমাণও কমবে না।
২২২৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দিনের প্রথম ভাগে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তারা ইবনু জাফরের অনুরূপ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে মু’আয (রাঃ) এর হাদীসের ম্যধ্য ثُمَّ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ خَطَبَ “অতঃপর তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন এবং ভাষণ দিলেন” কথাটি অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
২২২৫.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী, আবূ কামিল এবং মুহাম্মদ আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন চামড়ার বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় একদল লোক তার নিকট আসল। তারপর তারা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে, তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর ছোট একটি মিম্বরে আরোহন করে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, আম্মা বা'দ! আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে অবর্তীর্ণ করেছেন। "হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর......। (সূরা নিসাঃ ১)
২২২৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কয়েকজন বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। তাদের গায়ে পশমের কাপড় ছিল। ...... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ অবস্থা দেখে বুঝলেন যে, তারা অভাবগ্রস্থ। তারপর তাদের হাদীসের মর্ম বর্ণনা করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দান-সদকা করার উদ্দেশ্যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করা এবং স্বল্প পরিমাণ দান-সদকাকারী ব্যক্তিকে হেয় মনে না করা


২২২৭.    ইয়াহয়া ইবনু মুঈন ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের সাদাকা প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হল। আমরা এ উদ্দেশ্যে বোঝা বহন করতাম। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, তখন আবূ আকীল (রাঃ) অর্ধ সা' সাদাকা করলেন এবং অন্য এক ব্যাক্তি তার-চাইতে অধিক সাদাকা নিয়ে আসলেন। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তার সাদাকার মুখাপেক্ষী নন। আর এ দ্বিতীয় লোকটি তো লোক দেখানোর জন্যই দান করেছেন। তখন অবর্তীর্ণ হল, "মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাদাকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যাতিরেকে কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি বিদ্রুপ করেন।" (সূরা তাওবাঃ ৭৯) বিশর (রহঃ) بِالْمُطَّوِّعِينَ শব্দটি এখানে উল্লেখ করেননি।
২২২৮.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) এর থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) এর হাদীসের মধ্যে আছে, "আমরা পিঠের উপর বোঝা বহন করতাম।"

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দুগ্ধবতী পশু দান করার ফযীলত


২২২৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এ হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। জেনে রেখ, যে ব্যাক্তি কোন গৃহবাসীকে দুগ্ধবতী এমন একটি উষ্ট্রী দান করল, যা সকাল সন্ধা বড় পাত্র ভর্তি দুধ দেয়, অবশ্য তার জন্য রয়েছে মহা পূরস্কার।
২২৩০.    মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি কাজ নিষেধ করলেন। সেগুলোর উল্লেখ করার পর তিনি বললেন, যে দুগ্ধবতী পশু দান করে সে সকালে এক সাদাকা করে এবং বিকেলেও একটি সাদাকা করে। অর্থাৎ সকালে তার দুধ ও বিকালে তার দূধ পান (দাতার জন্য সদকাস্বরূপ গণ্য হয়)।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. দানশীল ও কৃপণের দৃষ্টান্ত


২২৩১.    আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ ব্যয়কারী ও সাদাকাকারীর দৃষ্টান্ত ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যার গায়ে বক্ষ থেকে কণ্ঠনালী পর্যন্ত দুটি লৌহবর্ম রয়েছে, যখন ব্যয়কারী ইচ্ছা করে, (অন্য রাবী বলেন, যখন সাদাকাকারী সাদাকা করার ইচ্ছা করে) তখন তা তার উপর প্রশস্ত বা সম্প্রসারিত হয়ে যায়। আর কৃপণ ব্যাক্তি যখন দান করার ইচ্ছা করে তখন তা তার উপর সংকোচিত হয়ে যায় এবং বর্মের প্রতিটি আংটা সস্থানে দৃঢ়ভাবে এটে যায়। এমন কি তা তার নখাগ্র পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ সে বর্মটিকে প্রশস্ত ও বিস্তৃত করতে চায় কিন্তু তা বিস্তৃত হয় না।
২২৩২.    সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ আবূ আয়্যুব গায়লানী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যাক্তির উপমা ঐ ব্যাক্তির ব্যাক্তির অনুরূপ, যাদের গায়ে রয়েছে দুটি লৌহবর্ম এবং যাদের উভয় হাত তাদের বক্ষ ও কন্ঠনালীর সাথে জড়িয়ে আছে। অতঃপর দানশীল ব্যাক্তি যখনই দান করতে চায় তখন এ বর্ম প্রশস্ত হয়ে যায়। এমনকি তার নখগ্র পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর কৃপণ ব্যাক্তি যখনই সাদাকা করার ইচ্ছা করে তখন লৌহ বর্মটি সংকোচিত হয়ে যায় এবং এর প্রতিটি আংটা স্বস্থানে এটে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দেখতে পাই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জামার ফোকরে অঙ্গুলি দিয়ে দেখাচ্ছেন। তুমি যদি তাকে এমন দেখতে যে, তিনি তা প্রশস্ত করতে চাইছে কিন্তু তা প্রশস্ত হচ্ছে না।
২২৩৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যাক্তিদ্বয়ের দৃষ্টান্ত ঐ দুই ব্যাক্তির অনুরূপ যাদের গায়ে রয়েছে দুঁটি লৌহবর্ম; দানশীল ব্যাক্তি যখনই দান করার ইচ্ছা করে তখন তা তার শরীরে বিস্তূত হয়ে যায়, এমনকি তার পদচিহ্ন পর্যন্ত মুছে যায়। আর কৃপণ যখন সাদাকা করার জন্য উদ্যত হয় তখন তা তার শরীরে সংকুচিত হয়ে যায়। তার উভয় হাত তার কণ্ঠনালীর সাথে মিলে যায় এবং তার প্রতিটি আংটা অন্য আংটাকে আঁকড়িয়ে ধরে। বর্ণনাকারী বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, সে ঐ বর্ম প্রশস্ত করার প্রয়াস পাবে। কিন্তু প্রশস্ত করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. সদকাদাতা সাওয়াব পাবে, যদিও তা কোন ফাসিক এবং অনুরূপ কারো হস্তগত হয়


২২৩৪.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক ব্যাক্তি বলল, আমি অদ্য রাত্রে কিছু সাদাকা করব। তারপর সে সাদাকা নিয়ে বের হল এবং একজন ব্যভিচারিনীর হাতে তা প্রদান করল। ভোর হলে, লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, আজ রাতে এক ব্যভিচারিনীকে সাদাকা প্রদান করা হয়েছে। দাতা একথা শুনে বলল, আয় আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমারই, (আমার সাদাকা) ব্যাভিচারিনীর হাতে পড়লেও অবশ্য আমি আবার সদাকা করব। 

তারপর সে তার সাদাকা নিয়ে বের হল এবং তা এক ধনীর হাতে প্রদান করল। ভোর হলে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, একজন ধনীকে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি তখন বলল, আয় আল্লাহ! সকল প্রশংসা তোমারই, (আমার সাদাকা) ধনী ব্যাক্তির হাতে পড়ল। সে বলল, আমি অবশ্যই আবার সাদাকা দিব। 

তারপর সে তার সাদাকা নিয়ে বেল হল এবং একজন চোরের হাতে তা অর্পণ করল। ভোর হলে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, একটি চোরকে সাদাকা দেয়া হয়েছে এ কথা শুনে সে বলল, আয় আল্লাহ! তোমারই সকল প্রশংসা (আমার দান) ব্যাভিচারিনী, ধনী ও চোরের হাতে অর্পিত হল। 

পরে (স্বপ্নযোগে) এক ব্যাক্তি তার নিকট এসে বলল, তোমার সাদাকা কবুল হয়েছে। জেনে রাখ, ব্যভিচারিনী হয়তো এর কারণে ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবে, ধনী ব্যাক্তি হয় তো এর থেকে উপদেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে খরচ করবে এবং চোর হয়তো এর বদোলতে তার চুরি থেকে বিরত থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ২০. আমানতদার খাজাঞ্জি এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ হতে তার স্পষ্ট অনুমতি বা প্রচলিত নিয়মানুসারে ক্ষতি করার ইচ্ছা ব্যতীত যা দান করে, তার সাওয়াব পাবে


২২৩৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ আমির আশ'আরী, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আমানতদার মুসলিম খাজাঞ্চি, তাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পুরোপুরিভাবে সন্তুষ্টচিত্তে কার্যকরী করে, অথবা বলেছেনা, দান করে এবং যাকে প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাকে তা পৌছিয়ে দেয়, সে দুই দানকারীর একজন।
২২৩৬.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহিয়া, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন স্ত্রীলোক ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা না করে তার ঘরের খাদ্য থেকে কিছু দান করে তবে সে দান করার কারণে সাওয়াব লাভ করবে। আর তার স্বামী তা উপার্জনের কারণে সাওয়াব পাবে; আর খাজাঞ্চিও অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবে। তাদের একের দ্বারা অন্যের সাওয়াব কিছুই কমবে না।
২২৩৭.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... মানসুর (রহঃ) এর সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে, "তার স্বামীর খাদ্য সামগ্রী থেকে।"
২২৩৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, যদি কোন মহিলা ক্ষতি না করে তার স্বামীর ঘর থেকে ব্যয় করে, তবে তার জন্য রয়েছে প্রতিদান, তার সামীর জন্যও রয়েছে অনুরূপ প্রতিদান, যেহেতু সে উপার্জন করেছে। মহিলার জন্য এ কারণে, যেহেতু সে খরচ করেছে। আর খাজাঞ্চির জন্যও রয়েছে অনুরূপ প্রতিদান, এতে তাদের প্রতিদান বিন্দুমাত্রও কমবে না।
২২৩৯.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) এর সুত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২১. মনিবের মাল থেকে দাসের ব্যয় করা


২২৪০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবিল লাহমের আযাদকৃত গোলাম উমায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম একজন গোলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি আমার মনিবের মাল থেকে কিছু সাদাকা করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পার। তবে সাওয়াব উভয়ই অর্ধেক অর্ধেক পাবে।
২২৪১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবিল লাহমের গোলাম উমায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে আমার মনিব গোশত শুকাবার নির্দেশ দিলেন। এ সময় একজন মিসকীন আসল। আমি এর থেকে কিছু তাকে খেতে দিলাম। আমার মনিব এ কথা জানতে পেরে আমাকে প্রহার করলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কেন প্রহার করেছ? সে বলল, সে আমার নির্দেশ ছাড়াই আমার খাদ্যদ্রব্য অন্যকে দিয়ে দিচ্ছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওয়াব তোমাদের উভয়ের জন্যই।
২২৪২.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে কিছু হাদীস বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। স্বামীর উপস্থিতিতে কাউকে তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিবে না, স্বামীর উপার্জন থেকে তার হুকুম ছাড়া কোন স্ত্রীলোক যে পরিমাণ দান করবে; তার সাওয়াব স্বামীও অর্ধেক পাবে।

পরিচ্ছেদঃ ২২. সদকার সাথে অন্যান্য নেককাজ মিলিয়ে করার ফযীলত


২২৪৩.    আবূ-তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহয়া তুজায়বী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া দান করবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য আহবান করা হবেঃ হে আল্লাহর বান্দা! এ কাজ উত্তম। যে ব্যাক্তি সালাত আদায়ে নিষ্ঠাবান, তাকে ‘বাবুস সালাত’ থেকে আহবান জানান হবে। যে ব্যাক্তি মুজাহিদ, তাকে 'বাবুল জিহাদ' থেকে আহবান জানান হবে। যে ব্যাক্তি দানশীল, তাকে ‘বাবুস সাদাকা' থেকে আহবান জানান হবে। যে ব্যাক্তি সিয়াম পালনকারী তাকে 'বাবুর রায়্যান' থেকে আহবান জানান হবে। 

আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এর সকল দরজা থেকে কাউকে আহবান করা তো জরুরী নয়। তবে এমন কি কেউ হবে যাকে এ সকল দরজা থেকে আহবান জানান হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, এবং আমি আশা করি তুমিও তাঁদের একজন হবে।
২২৪৪.    আমরুন নাকিদ, হাসান আল হুলওয়ানি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) সূত্রে ইউনূস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২২৪৫.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া বস্তু দান করবে তাকে জান্নাতের প্রত্যেক দরজা থেকে দ্বার রক্ষকগণ আহবান করবে, হে অমুক! তুমি এদিকে এসো। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তবে তো তার কোন ধ্বংস নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্যই আশা করি তুমি ও তাঁদের একজন হবে।
২২৪৬.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে আজ কে সিয়ামরত আছে? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি আছি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কে জানাযার সাথে চলেছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কেউ রোগীর শশ্রুষা করেছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার মধ্যে এই কাজ সমূহের সমাবেশ ঘটবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. ব্যয় করার প্রতি উৎসাহ দান এবং গুনে গুনে দান করা অপছন্দ হওয়া


২২৪৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি খরচ কর অথবা ছড়িয়ে দাও অথবা ঢেলে দাও। আর গুণে রেখ না তা হলে আল্লাহও তোমকে গুণে গুণে দিবেন।
২২৪৮.    আমরুন নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি ছড়িয়ে দাও অথবা বিলিয়ে দাও অথবা ব্যয় কর। গুণে গুণে রেখ না, তাহলে আল্লাহও তোমাকে গুণে গুনে দিবেন। আর গুটিয়ে রেখ না তবে আল্লাহ ও তোমা থেকে গুটিয়ে রাখবেন।
২২৪৯.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, পরবর্তী অংশ তাদের হাদীসের অনুরূপ।
২২৫০.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী! যুবায়র আমাকে যা দেন তা ব্যতীত আমার কিছুই নেই। তিনি আমাকে যা দেন তা থেকে আমি যদি দান করি তবে আমার কোন গুনাহ হবে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা তোমার সামর্থে আছে, তা দান কর। গুটিয়ে রেখ না, তাহলে আল্লাহও তোমা থেকে গুটিয়ে রাখবেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. পরিমাণ অল্প হলেও তা থেকে সদকা দেওয়ার উৎসাহ দান, অল্প পরিমাণ দান তুচ্ছ মনে করে বিরত না থাকা


২২৫১.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ! এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে অল্প পরিমাণ দান করাকে যেন তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা বকরীর একটি খুরও হয়।

পরিচ্ছেদঃ ২৫. গোপনে দান করার ফযীলত


২২৫২.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাত ব্যাক্তিকে আল্লাহ তার (আরশের) ছায়াতলে ছায়া দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। 

১. ন্যায়পরায়ণ ইমাম (রাষ্ট্রনায়ক)।

২. ঐ যুবক যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছে।

৩. ঐ ব্যাক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে জড়িত।

৪. ঐ ব্যাক্তি যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালবাসে এবং মিলিত হয় এ প্রেরণা নিয়ে এবং পৃথক হয় এ প্রেরণাসহ।

৫. ঐ ব্যাক্তি যাকে কোন অতিজাত সুন্দরী মহিলা (অসৎ কাজে) আহবান করে, আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।

৬. ঐ ব্যাক্তি, যে কিছু দান করল এবং এত গোপনভাবে করল যে, তার ডান হাত জানতে পারল না, তার বাম হাত কি দান করেছে,

৭. ঐ ব্যাক্তি যে একাকী বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁর দুই চোখে (আল্লাহর ভয়ে) অশ্রু ঝরে।
২২৫৩.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কিংবা আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরবর্তী অংশ উবায়দুল্লাহর হাদীসের অনুরূপ তবে এ হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যাক্তি মসজিদের সাথে জড়িত থাকে মসজিদ থেকে পূনরায় মসজিদে ফিরে আসা পর্যন্ত।

পরিচ্ছেদঃ ২৬. সুস্থ অবস্থায় সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থাকাকালের সদকাই হল উত্তম সদকা


২২৫৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উত্তম সাদাকা কি? তিনি বললেন, অর্থের প্রতি লোভ থাকাকালে সুস্থ অবস্থায় তোমার দান করা, যখন তুমি দারিদ্রের ভয় কর এবং ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখ। আর (সাদাকা প্রদানে) এত বিলম্ব করবে না যে, যখন তোমার প্রাণ কন্ঠনালীতে এসে যায়, তখন তুমি বলতে থাকবে যে, অমুকের জন্য এ পরিমাণ এবং অমুকের জন্য এ পরিমান। জেনে রাখ, এ সম্পদ তো অমুকের হয়েই আছে।
২২৫৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! বিরাট সাওয়াব কোন সাদাকায়? তিনি বললেন, জেনে রাখ, তোমার পিতার শপথ! (অবশ্য) তোমাকে অবহিত করা হচ্ছে যে, অর্থ লোভ থাকাকালে সুস্থ অবস্থায় তোমার সাদাকা করা, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশংকা কর এবং দীর্ঘায়ু কামনা কর। (সাদাকা প্রদানে) এত বিলম্ব করবে না যে, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হয়ে যাবে তখন তুমি বলতে থাকবে, এ পরিমাণ অমুকের জন্য এবং এ পরিমাণ অমুকের জন্য। অথচ তা তো অমুকের জন্য হয়েই আছে।
২২৫৬.    আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... উমারা ইবনু কা’কা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে জাবির (রাঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে তিনি أَىُّ الصَّدَقَةِ أَعْظَمُ এর স্থলে أَىُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭. উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম; উপরের হাত হল দানকারীর এবং নিচের হাত হল যাচনাকারীর


২২৫৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) মিম্বরে দাঁড়িয়ে দান খয়রাত ও ভিক্ষা থেকে নিবৃত্তির কথা উল্লেখ করে বললেন, উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী আর নিচের হাত হল যাচাঞ্ছাকারী।
২২৫৮.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) ... হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধনী অবস্থায় যে দান করা হয়, তাই উত্তম সাদাকা অথবা বলেছেন উৎকৃষ্ট সাদাকা। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। আর যাদের লালন পালন কর, তাদের দিয়ে (দান) শুরু কর।
২২৫৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাওয়াল করলাম। তিনি আমাকে দান করলেন। আমি আবার তার নিকট সাওয়াল করলাম। তিনি আবার আমাকে দান করলেন। আমি আবার ও তাঁর নিকট সাওয়াল করলাম। তিনি আমাকে দান করলেন। এরপর বললেন, এই ধন সম্পদ আকর্ষনীয় ও মধুর। যদি কোন ব্যাক্তি সাওয়াল ব্যতিরেকে নির্লোভ অবস্থায় তা গ্রহণ করে তবে তাঁর জন্য একে বরকতময় করে দেওয়া হয়। আর যদি কোন ব্যাক্তি নির্লোভ অন্তরের সাথে তা গ্রহণ করে তবে এতে তাঁর জন্য বরকত দেওয়া হয় না। সে ঐ ব্যাক্তির মত হয় যে খায় কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।
২২৬০.    নাসর ইবনু আলী জাহযামী, যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি অতিরিক্ত সম্পদ ব্যয় কর। তা তোমার জন্য উত্তম। আর তুমি যা আটকিয়ে রাখ তা তোমার জন্য মন্দ। প্রয়োজন পরিমাণ রাখার ব্যাপারে তোমাকে অভিযুক্ত করা হবে না। আর যাদের লালন পালনের দায়িত্ব তোমার-উপরে তাদের দিয়ে শুরু কর এবং উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম।

পরিচ্ছেদঃ ২৮. সাওয়াল করা নিষিদ্ধ হওয়া


২২৬১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইয়াহসাবী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়া (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, উমর (রাঃ) এর সময় প্রচলিত হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস বর্ণনা করা থেকে তোমরা আত্নসংবরণ কর। কারণ তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে লোকদের আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করতেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকেই দ্বীনের সুক্ষ বোধশক্তি দান করেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আরো শুনেছি, তিনি বলতেন, আমি (স্বীয় সস্পদের) খাজাঞ্চি মাত্র। সন্তুষ্টচিত্তে আমি যা যাকে দান করি, তা তার জন্য বরকতপূর্ণ হবে। আর যে ব্যাক্তিকে সাওয়ালের ও লোভের কারণে দান করি, তার অবস্থা ঐ ব্যাক্তির মত যে আহার করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।
২২৬২.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সাওয়ালে করো না। আল্লাহর কসম, তোমাদের কেউ আমার কাছে কিছু সাওয়াল করে, এবং তার সে সাওয়াল আমার অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছ থেকে কিছু বের করে নেয়, তাতে আমার এ দানে তার জন্য কোন বরকত হবে না।
২২৬৩.    ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) ... আমর ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘সান'আ’ অঞ্চলে অবস্থিত ওয়াহব ইবনু মুনাব্বিহ (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি আখরোট এনে তার ঘরে আমাকে খাওয়ালেন। তারপর তিনি বললেন, আমি মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) কে বলতে শুনেছি......... আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি......... এরপর তিনি অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
২২৬৪.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ভাষণ দানকালে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকেই তিনি দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন। আমি তো বণ্টনকারী মাত্র, দানকারী আল্লাহ তাআলা।
২২৬৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ ব্যাক্তি মিসকীন নয় যে মানুষের মধ্যে ঘোরাফেরা করে এবং দু'এক লুকমা (খাদ্য) অথবা দু' একটি খেজুর পেয়ে ফিরে যায়। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাহলে মিসকীন কে? তিনি বললেন, প্রকৃত মিসকীন সেই যে অতটুকু মালের অধিকারী নয় যা তাকে অভাবমুক্ত করতে পারে এবং তার অবস্থাও বুঝা যায় না, যাতে তাকে সাদাকা প্রদান করা হবে; আর সে লোকের কাছে চায় না।
২২৬৬.    ইয়াহহয়া ইবনু আয়্যুব ও কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ঐ ব্যাক্তি মিসকীন নয়, যে দু'একটি খেজুর এবং দু'একটি লুকমা খাদ্য পেয়ে ফিরে যায়। প্রকৃত মিসকীন সেই দরিদ্র, যে সাওয়াল থেকে বেঁচে থাকে। ইচ্ছা হলে তোমরা (আল্লাহর এ বানী) পাঠ করঃ "যারা লোকের কাছে পীড়াপীড়ি করে সাওয়াল করে না।" (সূরা আলে ইমরান)
২২৬৭.    আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন......... পরবর্তী অংশ ইসমাঈলের হাদীসের অনুরূপ।
২২৬৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ ভিক্ষা করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে যে, তার মুখমন্ডলে গোশতের এক টুকরাও থাকবে না। 

আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... মা'মার (রহঃ) যুহরীর ভাই এর সুত্রে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি مُزْعَةُ (টুকরা) কথাটি উল্লেখ করেননি।
২২৬৯.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সর্বদা মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, কিয়ামতের দিন সে এমতাবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার মুখমন্ডলে গোশতের এক টূকরাও থাকবে না।
২২৭০.    আবূ কুরায়ব ও ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সম্পদ বাড়ানোর জন্য লোকের কাছে মাল ভিক্ষা করে, সে যেন আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করল। চাইলে সে তা কম করুক বা বেশী করুক।
২২৭১.    হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের যে কেউ ভোর বেলা বের হয়ে কাঠের বোঝা পিঠে বহন করে আনে এবং তা থেকে সে সাদাকা করে ও লোকের কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে মুক্ত থাকে, সে ঐ ব্যাক্তি থেকে অনেক ভাল, যে কারো কাছে সাওয়াল করে, যে তাকে দিতেও পারে, নাও পারে। উপরের হাত নিচের হাত হতে উত্তম। যাদের লালন-পাননের দায়িত্ব তোমার উপর রয়েছে তাদের দিয়ে (সাদাকা) শুরু কর।
২২৭২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর কসম, তোমাদের যে কেউ ভোরবেলা বের হয়ে পিঠে করে কাঠের বোঝা বহন করে এনে তা বিক্রি করে...... পরবর্তী অংশ রাবী বায়ানের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
২২৭৩.    আবূ তাহির ও ইউনুস ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ কাঠের একটি আটি বেঁধে তা পিঠে বহন করে এনে বিক্রি করে তা ঐ ব্যাক্তি থেকে অনেক ভাল যে লোকের কাছে সাওয়াল করে। সে হয় তো তাকে দান করবে অথবা ফিরিয়ে দিবে।
২২৭৪.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নয় বা আট কিংবা সাতজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? অথচ আমরা কিছু দিন আগে তার হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলাম। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? 

তখন আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি। এখনি আবার কিসের উপর বায়অোত গ্রহণ করবো? বললেন, (এ কথার উপর বায়আত গ্রহণ করবে যে,) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করবে না। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। আল্লাহর আনুগত্য করবে। তারপর তিনি ফিসফিস করে একটি কথা বললেন, মানুষের নিকট কোন কিছু সাওয়াল করবে না। আমি দেখেছি, এই কাফিলার কারো পশুর পৃষ্ট থেকে চাবুক পড়ে যাওয়ার পর সে কাউকে তা তুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানায়নি।

No comments:

Powered by Blogger.