হযরতের (দঃ) খুৎবায় কতিপয় উপদেশ
হযরতের (দঃ) খুৎবায় কতিপয় উপদেশ
হযরতের (দঃ) খুৎবায় কতিপয় উপদেশ
অনেক সময় হযরত (দঃ) বলিতেনঃ [আরবি] উপমা স্বরূপ শাহাদত অঙ্গুলী এবং মধ্যমা অঙ্গুলী এই দুইটি অঙ্গুলীকে মিলাইয়া হযরত বলিতেনঃ ‘আমার নবুওত এবং কিয়ামতের মধ্যে ব্যবধান এইরূপ’ অর্থাৎ, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। (আমার নবুওত এবং কিয়ামতের মধ্যে অন্য কোন নবুওতের ব্যবধান নাই।) তারপর বলিতেনঃ
[আরবি]
অর্থ তোমরা সুনিশ্চিতরূপে জানিয়া রাখ যে, সর্বোৎকৃষ্ট নছীহত আল্লাহর কোরআন এবং সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা মোহাম্মদ (দঃ) এর পন্থা (সুন্নত তরীকা) এবং সবচেয়ে খারাব জিনিস বেদআত এবং সব বেদআত গোমরাহী। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাহার নিজের চেয়ে আমি অধিক খায়েরখাহ (হিতাকাঙ্খী)। মৃত্যুকালে যে যাহা সম্পত্তি রাখিয়া যাইবে, তাহা তাহার ওয়ারিশগণ পাইবে; কিন্তু যদি কেহ ঋণ রাখিয়া যায় বা নিরাশ্রম এতীম বাচ্চা রাখিয়া যায়, তবে তাহার দায়িত্ব আমার উপর। কখনও কখনও এই খুৎবা পড়িতেনঃ
[আরবি]
অর্থ হে মানব-সমাজ! তোমরা মৃত্যুমুখে পতিত হইবার পূর্বেই সকলে আল্লাহর দিকে রুজু হইয়া তওবা করিয়া আল্লাহর দিকে ফিরিয়া আস এবং সময় থাকিতে ত্রস্ত হইয়া সকলে নেক আমলের দিকে এবং ভাল কাজের দিকে ধাবিত হও। আর খুব বেশী করিয়া আল্লাহর যিকর কর, এবং অপ্রকাশ্যে ও প্রকাশ্যে খুব বেশী করিয়া দান-খয়রাত করিয়া আল্লাহর যে অসংখ্য-অগণিত প্রাপ্য হক তোমাদের যিম্মায় পাওনা আছে তাহার কিয়দংশ পরিশোধ কর। এইরূপ করিলে আল্লাহর নিকটে উহার ছওয়াব পাইবে, প্রশংসনীয় হইবে এবং রুজী-রোজগারেও বরকত পাইবে। তোমরা জানিয়া রাখ যে, বর্তমান বৎসরের বর্তমান মাসের বর্তমান সময়ে আল্লাহ তা’আলা জুমু’আর নামায তোমাদের উপর অকাট্যভাবে ফরয করিয়াছেন। যে কেহ জুমু’আ পর্যন্ত পৌঁছিতে পারে তাহার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ফরয আকাট্যরূপে বহাল থাকিবে। অতএব, খবরদার! এইরূপে ফরয হওয়ার পরও আমার জীবিতাবস্থায় অথবা আমার মৃত্যুর পর যদি কেহ অন্যায়কারী বা ন্যায়কারী ইমাম পাওয়া সত্ত্বেও এই ফরয অস্বীকার করে অথবা তুচ্ছ করিয়া তরক করে, তবে আল্লাহ তাহার বিশৃঙ্খল ভাব দূর করিবেন না, তাহার কোন কাজে বরকত দিবেন না এবং তাহার নামাযও কবুল হইবে না, যাকাৎও কবুল হইবে না, হজ্জও কবুল হইবে না এবং অন্য কোন নেক কাজও কবুল হইবে না, যে পর্যন্ত সে তওবা না করিবে। অবশ্য যদি তওবা করে আল্লাহ তা’আলা দয়া করিয়া তাহার তওবা কবুল করিবেন। আরও জানিয়া রাখ যে, খবরদার! স্ত্রীজাতি যেন কখনও পুরুষ জাতির ইমামত না করে, খবরদার! জাহেল যেন কখনও আলেমের ইমামত না করে, খবরদার! ফাসেক যেন কখনও মো’মিন মুত্তাকির ইমামত না করে। অবশ্য যদি জোরপূর্বক এমন কেহ ইমামত করে যে, তাহার তরবারির বা লাঠির ভয় করিতে হয়, তবে সে ভিন্ন কথা। কখনো কখনো এইরূপ খুৎবা দিতেনঃ
[আরবি]
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা আল্লাহর প্রশংসা করিতেছি এবং তাঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। আমাদের কু-প্রবৃত্তির দুষ্টামি এবং যাবতীয় অন্যায় কাজ হইতে রক্ষা পাইবার জন্য আল্লাহর আশ্রয় ভিক্ষা করিতেছি। আল্লাহ যাহাকে হেদায়ত দান করিবেন, তাহাকে অন্য কেহ গোমরাহ করিতে পারিবে না এবং (স্বেচ্ছায় গোমরাহীর পথ অবলম্বন করায়) আল্লাহ যাহাকে গোমরাহ করিবেন, তাহাকে অন্য কেহ হেদায়তে আনিতে পারিবে না। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন মা’বূদ নাই, আল্লাহ্ এক, তাঁহার কোন শরীক নাই এবং ইহাও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মোহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর বন্দা এবং আল্লাহর রসূল, (আল্লাহর বাণী বহনকারী) আল্লাহ্ তাঁহাকে সত্য বাণী মান্যকারীদের জন্য বেহেশতের (মুক্তি) সুসংবাদদাতা এবং অমান্যকারীদের জন্য দোযখের আযাবের ভয় প্রদর্শনকারীরূপে দুনিয়াতে পাঠাইয়াছেন। কিয়ামতের পূর্বক্ষণে তিনি আসিয়াছেন। যাহারা আল্লাহর বাণী এবং আল্লাহর রসূলের বাণী মান্য করিয়া চলিয়াছে, তাহারা হেদায়তের পথ পাইয়াছে এবং তাহাদের জীবন সার্থক হইয়াছে এবং যে আল্লাহর এবং আল্লাহ্ রসূলের বাণী অমান্য করিবে, সে নিজেরই সর্বনাশ সাধন করিবে, তাহাতে আল্লাহর কোনই অনিষ্ট হইবে না।
এক ছাহাবী বলেন, অধিকাংশ সময় হযরত (দঃ) খুৎবায় সূরা-ক্বাফ পড়িতেন। আমি সূরা-ক্বাফ হযরতের নিকট হইতে মুখস্থ করিয়াছি যখন তিনি মিম্বরে দাঁড়াইয়া পড়িতেন। মুসলিম।
সূরা-ক্বাফের মধ্যে হাশর-নশর এবং অনেক মা’রেফতের বিষয় বর্ণিত হইয়াছে। কখনও সূরা-আছর পড়িতেনঃ
[আরবি]
অর্থ আল্লাহ্ বলেন, সময়ের সাক্ষ্যনিশ্চয়ই সব মানুষ ধ্বংসে পতিত, শুধু তাহারা ব্যতীত যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক আমল করিয়াছে এবং সত্যের জন্য একে অন্যকে ওছিয়ত করিয়াছে এবং ধৈর্যের জন্য একে অন্যকে ওছিয়ত করিয়াছে।
কখনও কোরআন শরীফের এই আয়াত পাঠ করিতেনঃ
[আরবি]
অর্থ দোযখবাসী এবং বেহেশতবাসী সমান হইতে পারে না, যাহারা বেহেশতবাসী তাহারাই সফলকাম। কখনও কখনও নিম্ন আয়াত পড়িতেনঃ
[আরবি]
অর্থ দোযখবাসীরা চীৎকার করিয়া বলিবে, হে দোযখরক্ষী ফেরেশতা মালেক! (দোযখের যন্ত্রণা আর আমাদের সহ্য হয় না, এরচেয়ে ভাল) তোমার মা’বুদ আমাদের জীবন শেষ করিয়া দেউক। (উত্তরে) তিনি বলিবেন, (না, না, তোমাদের মৃত্যু নাই।) তোমরা চিরকাল এখানে (এই শাস্তি ভোগ করিতে) থাকিবে।
No comments: