Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের সালাত ও কসর-২য়




পরিচ্ছেদঃ ১৬. দাঁড়িয়ে ও বসে নফল সালাত আদায় এবং একই রাক’আতের অংশবিশেষ দাঁড়িয়ে ও অংশবিশেষ বসে আদায় করার বৈধতা


১৫৭২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত অর্থাৎ তাঁর নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যুহরের আগে আমার ঘরে চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। এরপর বেরিয়ে গিয়ে লোকদের নিয়ে (যুহর) সালাত জামাতে আদায় করতেন। তারপর ঘরে এসে দু' রাকআত আদায় করতেন। আর তিনি লোকদের নিয়ে মাগরিব সালাত আদায় করতেন। এরপর ঘরে এসে দু' রাকআত সালাত আদায় করতেন। আর ইশার সালাত লোকদের নিয়ে আদায় করতেন। তারপর আমার ঘরে এসে দু' রাকআত পড়তেন এবং তিনি রাতের বেলা নয় রাক’আত সালাত আদায় করতেন, যার মাঝে বিতরও রয়েছে। দীর্ঘ রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে তিনি সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘরাত বসে সালাত আদায় করতেন। আর তাঁর অভ্যাস ছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিরাআত পাঠ করলে রুকু ও সিজদাও তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় থেকে আদায় করতেন, আর যখন বসে কির’আত পাঠ করতেন তখন বসেই রুকু ও সিজদা করতেন এবং ফজর উদিত হওয়ার পর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

১৫৭৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘরাত পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (কিরা'আত) আদায় করতেন তখন রুকু দাঁড়ানো অবস্থায় থেকে করতেন আর বসে সালাত আদায় করার সময় রুকুও বসা অবস্থায় করতেন।

১৫৭৪.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি পারস্য দেশে অসুস্থ অবস্থায় ছিলাম। তখন আমি বসে সালাত আদায় করলাম। পরে আয়িশা (রাঃ) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘরাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন...... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১৫৭৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আল-উকায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি দীর্ঘরাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘরাত পর্যন্ত বসে সালাত আদায় করতেন। যখন দাঁড়িয়ে কিরা'আত পাঠ করতেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় থেকে রুকু করতেন আর বসে কিরা'আত পাঠ করলে রুকুও বসা অবস্থায় থেকেই করতেন।

১৫৭৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আল উকায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে এবং উপবিষ্ট অবস্থায় বহু সালাত আদায় করতেন। দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করলে দাঁড়ানো থেকেই করতেন এবং উপবেশন করে সালাত শুরু করলে উপবিষ্ট অবস্থায় থেকে রুকু করতেন।

১৫৭৭.    আবুর রাবী যাহরানী, হাসান ইবনুল রাবী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) (শব্দ যুহায়রের) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সালাতের কোন অংশেই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বসে কিরা'আত পাঠ করতে দেখি নি। অবশেষে যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন, তখন বসে কিরা'আত পাঠ করতেন এবং যখন সে সূরার ত্রিশ কিংবা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকত তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সেগুলো পাঠ করার পরে রুকু করতেন।

১৫৭৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায় করতেন এবং উপবিষ্ট অবস্থায় কিরা'আত পাঠ করতেন। যখন ত্রিশ কিংবা চল্লিশ আয়াতের পরিমাণ তার কিরাআত বাকী থাকত তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় তা পাঠ করতেন। তারপর রুকু করতেন ও পরে সিজদায় যেতেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপ করতেন।

১৫৭৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা অবস্থায় কির’আত পাঠ করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখন কোন লোকের চল্লিশ আয়াত পাঠ করার পরিমাণ সময় দাঁড়াতেন।

১৫৮০.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উপবিষ্ট অবস্থায় সালাত আদায় করতেন, তখন সে দু' রাক'আতে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, সে দু' রাকা'আতে তিনি কির’আত পাঠ করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখন দাঁড়িয়ে যেতেন, এরপর রুকু করতেন।

১৫৮১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বসে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, লোক সমাজ যখন তাঁকে ভারাক্রান্ত করে ফেলেছিল (অর্থাৎ যখন তিনি বৃদ্ধ হয়েছিলেন)।

১৫৮২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম...... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

১৫৮৩.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেননি যতক্ষন না তাঁর অধিকাংশ সালাত উপবিষ্ট অবস্থায় আদায় হয়েছে।

১৫৮৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স হয়ে গেলে এবং তার শরীর ভারী হয়ে গেলে তাঁর অধিকাংশ সালাত বসা অবস্থায় আদায় করতেন।

১৫৮৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বসে নফল সালাত আদায় করতে দেখি নি। অবশেষে তার ইন্তিকালের এক বছর আগে থেকে নফল সালাত বসে আদায় করতেন এবং যে সূরা পাঠ করতেন তা এতই তারতীলের সাথে (স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে) পাঠ করতেন যে, তা এর চেয়ে দীর্ঘ সূরার চাইতেও দীর্ঘ হয়ে যেত।

১৫৮৬.    আবূ তাহির, হারামালা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহুরি (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ দু’জন (ইসহাক ও আবদ) বলেছেন, "এক বছর অথবা দু-বছর।"

১৫৮৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বসে সালাত আদায় না করা পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকাল হয়নি।

১৫৮৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদূল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে এ হাদীস শোনান হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "ব্যক্তির বসা অবস্থায় সালাত অর্ধেক সালাত।" আমর (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসে সালাত আদায় করতে পেলাম। তখন তার মাথায় হাত রাখলাম। তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! কি ব্যাপার? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে হাদীস শোনানো হয়েছে যে, আপনি বলেছেন যে, কারও উপবিষ্ট অবস্থায় সালাত আদায় অর্ধেক সালাতের সমান। অথচ আপনি বসে সালাত আদায় করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ (আমি তাই বলেছি) কিন্তু আমি তো তোমাদের কারো মত নই।

১৫৮৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু’বা থেকে এবং মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উভয়ে মানসুর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে শু’বা (রহঃ) এর রিওয়ায়েতে রয়েছে 'আবূ ইয়াহয়া আল-আরাজ থেকে'......।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. রাতের সালাত, রাতের বেলা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সালাতের রাক’আত সংখ্যা, বিতর সালাত এক রাক’আত এবং এক রাক’আত সালাতও বিশুদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গ


১৫৯০.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন, এর মধ্যে এক রাকআত বিতর হিসেবে আদায় করতেন। এ সালাত শেষ করে তিনি ডান পার্শ্বে শুইতেন। অবশেষে মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু রাকআত ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করতেন।

১৫৯১.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইশার সালাত যাকে লোকেরা 'আতামা' নামে অভিহিত করে থাকে - থেকে অবসর হওয়ার পর হতে ফজর পর্যন্ত সময়ের মাঝে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং প্রতি দু-রাক'আতের মাঝে (শেষে) সালাম ফিরাতেন। আর বিতর করতেন এক রাকআত। পরে ফজর সালাতের (আযান) থেকে মুয়াযযিন নীরব হলে এবং ফজর এর ওয়াক্ত তার কাছে পুর্ণ উদ্ভাসিত হয়ে উঠলে এবং মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর ইকামতের জন্য মুয়াযযিন তার কাছে আসা পর্যন্ত তিনি ডানপাপার্শ্বের উপর শুয়ে থাকতেন।

১৫৯২.    হারামালা (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে পূর্বোক্ত সনদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে হারামালা (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় "তার কাছে ফজর উদ্ভাসিত হলে এবং মুয়াযযিন তাঁর নিকটে এলে" উল্লেখ করেননি। সেরূপ ইকামত এর কথাও উল্লেখ করেননি। হাদীসের অবশিষ্টাংশ হুবহু আমর (রাঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।

১৫৯৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাক’আত দিয়ে তিনি বিতর আদায় করতেন এর শেষে ব্যতীত কখনও বসতেন না।

১৫৯৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।

১৫৯৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতের বেলা) ফজরের দু’ রাকআত (সুন্নাত) সহ তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

১৫৯৬.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই, তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর তিনি তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘূমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।

১৫৯৭.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি তের রাকআত সালাত আদায় করতেন। আট রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তারপর বিতর। পরে বসে দু' রাক'আত সালাত আদায় করতেন এবং যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখন উঠে রুকু করতেন। তারপর আযান ও ইকামতের মাঝে দু-রাকআত আদায় করতেন।

১৫৯৮.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াহয়া ইবনু বিশর হারীরী (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এদের দু’জনের হাদীসে রয়েছে, নয় রাক’আত আদায় করতেন দাঁড়িয়ে, তার মধ্যে বিতরও রয়েছে।

১৫৯৯.    আমর ইবনু নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আম্মাজান! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে অবহিত করতন। তিনি বললেন, তাঁর সালাত ছিল রমযান এবং রমযানের বাইরে রাতের রেলায় তের রাক’আত। এর মধ্যে ফজরের দু’রাক’আত (সুন্নাত) ও রয়েছে।

১৬০০.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছিল দশ রাক’আত এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফজরের দু' রাকআত (সূন্নাত)ও আদায় করতেন। এই হল তের রাক’আত।

১৬০১.    আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আসওয়াদ ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) কে ঐ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাতে আয়িশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের বর্ণনা দিয়েছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাতের প্রথম অংশে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং শেষ অংশে জাগতেন। পরে তাঁর স্ত্রীর প্রতি তাঁর 'প্রয়োজন' থাকলে তা পূরণ করতেন এবং ঘুমিয়ে পড়তেন। প্রথম আযানের সময় হয়ে গেলে আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, ত্বরিত উঠে পড়তেন। [আল্লাহর কসম! তিনি বলেন নি যে, উঠে পড়তেন)। তারপর তিনি নিজের গায়ে পানি ঢেলে দিতেন। (আল্লাহর কসম, আয়িশা (রাঃ) বলেন, নি যে তিনি গোসল করেছেন কিন্তু আমি তাঁর কথার উদ্দোশ্য বুঝে ফেলি] আর তিনি জুনুবি না থাকলে সালাতের জন্য মানুষ যেমন ওযু করে তেমন ওযু করতেন। এরপর দু' রাকআত সালাত আদায় করতেন।

১৬০২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা সালাত আদায় করতেন। আর তার শেষ সালাত হত বিতর।

১৬০৩.    হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি সর্বদা আমল করা পছন্দ করতেন। মাসরুক (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কোন সময় (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, যখন (মোরগের) ডাক শুনতেন তখন উঠে সালাত আদায় করতেন।

১৬০৪.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ঘরে অথবা (তিনি বলেছেন) আমার কাছে রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘুমন্ত অবস্থা ছাড়া পাইনি। (অর্থাৎ সে সময়ই তিনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতেন)।

১৬০৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, নাসর ইবনু আলী ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের দু’রাক’আত (সূন্নাত) সালাত আদায় করতেন, তখন আমি সজাগ থাকলে আমার সঙ্গে কথা বলতেন, অন্যথায় কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন।

১৬০৬.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ননা করেছেন।

১৬০৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত আদায় করতেন। বিতর আদায় করার সময় হলে বলতেন, হে আয়িশা। উঠ বিতর আদায় কর।

১৬০৮.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাঁর সালাত আদায় করতেন এবং তাঁর সামনে আড়াআড়িভাবে (শুয়ে) থাকতেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কেবল বিতর বাকী থাকত, তখন তাঁকে জাগাতেন। তিনি বিতর আদায় করে নিতেন।

১৬০৯.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন। তবে শেষ দিকে তাঁর বিতর আদায়ের অভ্যাস ছিল সাহরীর সময়।

১৬১০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন রাতের প্রথম অংশে, মাঝরাতে এবং শেষ রাতে। অবশেষ তিনি বিতর আদায় করতেন সাহরীর সময়।

১৬১১.    আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন। পরে তাঁর বিতর উপনীত হয়েছে রাতের শেষভাগে।

১৬১২.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না আনাযী (রহঃ) ... যুরারা (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, সা’দ ইবনু হিশাম ইবনু আমির (রহঃ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ইচ্ছা করে মদিনায় এলেন এবং সেখানে তাঁর একটি সম্পত্তি বিক্রি করে তা যূদ্ধাস্ত্র ও ঘোড়া সংগ্রহে ব্যয় করার এবং মৃত্যু পর্যন্ত রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে আত্ননিয়োগ করার সংকল্প করলেন। মদিনায় আসার পর মদিনাবাসী কিছু লোকের সাথে সাক্ষাত হলে তাঁরা ঐ কাজ করতে নিষেধ করলেন এবং তাঁকে জানালেন যে, ছয় জনের একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় এরূপ ইচ্ছা করেছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করেন এবং বলেন, "আমার মধ্যে তোমাদের জন্য কি কোন আদর্শ নেই"? 

মদিনাবাসীরা তাঁকে এ ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি নিজের স্ত্রীর সাথে রাজ'আত, (পুনরায় স্ত্রীত্বে বরণ) করলেন। কেননা তিনি তাঁকে তালাক দিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর এ রাজ'আতের ব্যাপারে সাক্ষীও রাখলেন। এরপর তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিতর সম্পর্কে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বিজ্ঞ ব্যাক্তি সম্পর্কে কি তোমাকে বলে দিব না? তিনি বললেন, তিনি কে? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি আয়িশা (রাঃ)। তাঁর কাছে গিয়ে তুমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে পরে আমার কাছে এসে তোমাকে দেওয়া তার জবাব সম্পর্কে অবহিত করবে। 

আমি তখন তাঁর কাছে রওয়ানা হলাম। আর হাকীম ইবনু আফলাহ (রাঃ) এর কাছে গিয়ে আমার সঙ্গে আয়িশা (রাঃ) এর কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন, আমি তো তাঁর নিকট যাই না। কেননা (বিবাদমান) দু’দল সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি তাতে অংশগ্রহণ না করতে অস্বীকার করেন। সা’দ (রাঃ) বলেন, তখন আমি তাঁকে কসম দিলাম। তখন তিনি তৈরি হলেন। আমরা আয়িশা (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে চললাম এবং তাঁর কাছে গিয়ে অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাদের অনুমতি দিলেন। 

আমরা তাঁর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি বললেন, হাকীম না কি? তিনি তাঁকে চিনে ফেলেছিলেন। উত্তরে হাকীম (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমার সঙ্গে কে? হাকীম (রাঃ) বললেন, সা’দ ইবনু হিশাম। আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন হিশাম? হাকীম (রাঃ) বললেন, ইবনু আমির। তখন আয়িশা (রাঃ) তাঁর জন্য রহমতের দুআ করলেন এবং তাঁর সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন। রাবী কাতাদা (রহঃ) বলেছেন, আমির (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। আমি (সা’দ) বললাম, হে, উম্মুল মুমিনীন! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আখলাক সম্পর্কে অবহিত করুন! তিনি বললেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র তো ছিল আল কুরআনই। 

সা’দ (রহঃ) বলেন, তখন আমার ইচ্ছে ছিল যে, উঠে যাই এবং মৃত্যু পর্যন্ত কাউকে কোন বিষয় জিজ্ঞাসা করব না। পরে আবার মনে হল (আরো কিছু জিজ্ঞাসা করি) তাই আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের ইবাদত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন! তিনি বললেন, তুমি কি সূরা "ইয়া আয়্যুহাল মুয্‌যামিল" পড় না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ এ সূরার প্রথমাংশ (ইবাদত) রাত্রি জাগরণ ফরয করে দিয়েছিলেন। তখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ এক বছর যাবত (তাহাজ্জুদের জন্য) রাত্রি জাগরণ করলেন। আর আল্লাহ তা’আলা এ সূরার শেষ অংশ বার মাস পর্যন্ত আসমানে রুখে রাখেন। অবশেষে এ সূরার শেষ অংশ নাযিল করে সহজ করে দিলেন। ফলে রাত্রি জাগরণ ফরয হওয়ার পরে নফলে পরিণত হয়। 

সা’দ (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, উম্মুল হে মুমিনীন! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিতর সম্পর্কে অবহিত করুন! তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য তাঁর মিসওয়াক ও ওযুর পানি প্রস্তুত রাখতাম। রাতের যে সময় আল্লাহর ইচ্ছা হত তাকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি তখন মিসওয়াক ও ওযু করতেন এবং নয় রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তিনি এর মাঝে আর বসতেন না অষ্টম রাক’আত ব্যতীত। তখন তিনি আল্লাহর যিকর করতেন, তাঁর হামদ করতেন এবং তাঁর কাছে দু’আ করতেন। তারপর সালাম না করেই উঠে পড়তেন এবং নবম রাক’আত আদায় করে বসতেন এবং আল্লাহর যিকির ও তাঁর হামদ ও তাঁর কাছে দুআ করতেন। পরে এমন ভাবে সালাম বলতেন যা আমরা শুনতে পেতাম। সালাম করার পরে বসে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। বৎস, এ হল মোট এগার রাকআত। 

পরে যখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বায়োঃবৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং তিনি স্থুলদেহী হয়ে গেলেন, তখন সাত রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর শেষ দু' রাক'আতে তাঁর আগের আমলের অনুরূপ আমল করতেন। বৎস, এভাবে হল নয় রাক’আত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সালাত আদায় করতেন তখন তাতে স্থায়িত্ব রক্ষা করা পছন্দ করতেন। আর কখনো নিদ্রা বা কোন ব্যাধি তাঁর রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে তাঁকে সংঘাত ঘটালে দিনের বেলা বার রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন। 

আর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পূর্ণ কুরআন পড়েছেন বলে আমার জানা নেই এবং তিনি ভোর পর্যন্ত সারা রাত সালাত আদায় করেননি এবং রমযান ব্যতীত অন্য কোন পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেননি। 

সা’দ (রহঃ) বলেন, পরে আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস তাঁর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, ঠিকই বলেছেন। আমি যদি তাঁর কাছে যেতাম, অথবা বললেন, আমি যদি তাঁর সঙ্গে যেতাম তাহলে অবশ্যই আমি তাঁর কাছে গিয়ে সরাসরি তার মুখে এ হাদীস শুনতাম। সা'দ (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, আমি যদি জানতাম যে, আপনি তাঁর কাছে যান না, তবে তাঁর হাদীস আমি আপনাকে শোনাতাম না।

১৬১৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... সাহদ ইবনু হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পরে তাঁর সম্পতি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে মদিনা অভিমুখে চললেন...... পরবতীঁ অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

১৬১৪.    আবূ বাকুর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাকে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। এরপর ঘটনা সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর তাতে তিনি বলেছেন, আয়িশা (রাঃ) বলেন, কোন হিশাম? আমি বললাম, ইবনু আমির। তিনি বললেন, আমির ভালো লোক ছিলেন। তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছে।

১৬১৫.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যুরারা ইবনু আওফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা'দ ইবনু হিশাম (রহঃ) তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এরপর রাবী সাঈদ (রহঃ) এর হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে রয়েছে আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন হিশাম? তিনি বললেন, ইবনু আমির আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি ভালো লোক ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উহুদ যূদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাতে আরো রয়েছে হাকীম ইবনু আফলাহ (রাঃ) বললেন, আচ্ছা! আমি যদি জানতাম যে, তুমি তাঁর কাছে যাও না তবে আমি তোমাকে তার হাদীস বলতাম না।

১৬১৬.    সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছুটে যেত, তবে তিনি দিনের বেলা বার রাক'আত সালাত আদায় করে নিতেন।

১৬১৭.    আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন আমল করতেন তখন নিয়মিত করতেন আর যখন রাতের বেলা নিদ্রা মগ্ন হয়ে পড়তেন কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন দিনের বেলা বার রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন রাতে ভোর পর্যন্ত রাত্রি জাগরণ করতে এবং রমযান ব্যতীত কোন মাসে লাগাতার সিয়াম পালন করতে দেখিনি।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. কিয়ামে রমযান অর্থাৎ তারাবীহ সম্পর্কে উৎসাহ দান


১৬১৮.    হারুন ইবনু মা'রুফ, আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্ত তার নিয়মিত ওযীফা বা তার অংশবিশেষ আদায় করতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ল এবং পরে ফজর সালাত ও যুহর সালাতের মধ্যবর্তী সময় তা পড়ে নিল তবে তার জন্য তেমনই লিপিবদ্ধ করা হরে যেন সে তা রাতেই পড়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. রাতের সালাত, রাতের বেলা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সালাতের রাক’আত সংখ্যা, বিতর সালাত এক রাক’আত এবং এক রাক’আত সালাতও বিশুদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গ


১৬১৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... কাসিম আশ-শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) একদল লোককে ‘দুহা’ সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, ওহে! এরা তো জানে না যে, এ সময় ছাড়া অন্য সময় সালাত আদায় করাই বেশী ফযীলতের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আল্লাহর দিকে ধাবিতদের সালাতের ওয়াক্ত উট শাবকের পায়ে গরম সেকা লাগার সময় হয়ে থাকে।

১৬২০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবাবাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহর দিকে ধাবিতদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।

১৬২১.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেন, রাতের সালাত দু' রাকআত দু' রাকআত। পরে যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তখন এক রাকা'আত পড়বে। যা তার আদায়কৃত সালাতকে বিতর করে দেবে।

১৬২২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সালিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন। অন্য সনদে মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে ... অন্য সনদে যুহুরি (রহঃ)-সালিম (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাতের সালাত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, দুই দুই (রাক'আত) পরে যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে, তখন এক রাক’আত দিয়ে বিতর করে নেবে।

১৬২৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাতের সালাত কি রকম? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতের সালাত দুই দুই (রাক'আত)। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাক’আত দিয়ে বিতর করে নেবে।

১৬২৪.    আবুর রাবী যাহরানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করল, তখন আমি ছিলাম তার ও প্রশ্নকারীর মাঝে। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাতের সালাত কি কিরূপ? তিনি বললেন, দুই দুই রাকআত করে। পরে যখন তুমি ভোর হওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাক’আত সালাত আদায় করবে এবং বিতরকে তোমার শেষ সালাত বানাবে। পরে সেই বছরের শেষে এক ব্যাক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল, আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সে অবস্থানে ছিলাম। তবে আমি জানি না যে, এই প্রশ্নকারী সে ব্যাক্তই ছিল না অন্য কোন লোক। এবারও তিনি তাকে অনুরূপ উত্তর দিলেন। “

১৬২৫.    আবূ কামিল, মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ গুবারী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল ...... দু' জনই পূর্বানূরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে "পরের বছরের মাথায় এক ব্যাক্তি তাকে প্রশ্ন করল" ...... এবং এর পরবর্তী বিবরণ তাঁদের দু'জনের হাদীসে নেই।

১৬২৬.    হারূন ইবনু মা'রূফ, সূরায়হ ইবনু ইউনূস ও আবূ কুরায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভোর হওয়ার আগেই বিতর আদায় করে নাও।

১৬২৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি রাতে সালাত আদায় করে সে যেন বিতরকে তার শেষ সালাত বানায়। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদেশ করতেন।

১৬২৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রাতের শেষ সালাত বিতরকে বানিও।

১৬২৯.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, রাতের বেলা যে ব্যাক্তি সালাত আদায় করবে সে যেন ভোরের আগে বিতরকে শেষ সালাত করে নেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের এরূপ নির্দেশ দিতেন।

১৬৩০.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিতর হল এক রাকআত রাতের শেষভাগে।

১৬৩১.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু মিজলায (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বিতর রাতের শেষ ভাগের এক রাক’আত।

১৬৩২.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ মিজলায (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, শেষরাতে এক রাক'আত। আমি ইবন উমর (রাঃ) কেও জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রাতের শেষভাগে এক রাক'আত।

১৬৩৩.    আবূ কুরায়ব ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি রাতের সালাতকে কিরূপে বিতর করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সালাত আদায় করতে চায়, সে যেন দুই দুই (রাকআত) করে সালাত আদায় করে। যখন ভোর হয় বলে অনুভব করবে, তখন যেন এক রাক’আত আদায় করে নেয়। এটি সে যে সালাত আদায় করেছে, তাকে বিতর বানিয়ে দেবে। আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণনায় উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রয়েছে, তিনি ইবনু উমর বলেন নি।

১৬৩৪.    খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ কামিল (রহঃ) ... আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ভোরের সালাতের আগের দু-রাকআত সম্পর্কে আপনার কি অভিমত, আমি কি তাতে কির’আত দীর্ঘ করব? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দুই দুই (রাক’আত) করে সালাত আদায় করতেন এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর করতেন। আনাস বলেন, আমি বললাম, আমি তো এ বিষয় আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেন, তুমি তো স্থুলবুদ্ধির লোক। তুমি কি আমাকে পূরো হাদীস বলার অবকাশ দিবে না? 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে দুই দুই (রাকআত) সালাত আদায় করতেন এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর করতেন এবং ফজরের আগে দু' রাকআত সূন্নাত এত দ্রুত আদায় করতেন যেন আযান অর্থাৎ ইকামত তাঁর কানে বাজছে। খালফ (রহঃ) তাঁর রিওয়ায়াতে বলেছেন ফজরের আগের দু' রাক’আত সম্পর্কে অভিমত কি? 'সালাত' শব্দ উল্লেখ করেননি।

১৬৩৫.    ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম ...... পূর্বোক্ত রিওয়ায়াতের অনুরূপ। তিনি একটু অতিরিক্ত বলেছেন, ‘রাতের শেষ ভাগে এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন’। তাতে আরো রয়েছে, বাঃ বাঃ তুমি তো বড় স্থুলবুদ্ধির লোক।

১৬৩৬.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের সালাত দুই দুই (রাক'আত); পরে যখন তুমি দেখবে যে, সুবহ সাদিক তোমাকে পেয়ে বসেছে তখন তুমি এক (রাক’আত) দিয়ে বিতর আদায় করে নেবে। তখন ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, দুই দুই কি? তিনি বললেন, প্রতি দুই রাক'আতে তুমি সালাম ফিরাবে।

১৬৩৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভোর হওয়ার আগেই তোমরা বিতর আদায় করে নেবে।

১৬৩৮.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সূবহ সা'দিক এর আগে বিতর আদায় করবে।

১৬৩৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আশংকা থাকে যে, শেষ রাতে সে উঠতে পারবে না সে যেন প্রথম রাতেই বিতর আদায় করে নেয়। আর যে ব্যাক্তি শেষ রাতে উঠতে পারবে বলে আশা রাখে সে যেন রাতের শেষ ভাগে বিতর আদায় করে। কেননা শেষ রাতের সালাতে রহমতের ফিরিশতার উপস্থিতির কাল এবং তাই উত্তম। রাবী আবূ মুআবিয়া (রহঃ) مَشْهُودَةٌ শব্দের স্থলে مَحْضُورَةٌ শব্দ বলেছেন।

১৬৪০.    সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমাদের যার আশংকা হবে যে, শেষরাতে সে উঠতে পারবে না, সে যেন বিতর আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। আর যে রাতে ওঠার ব্যাপারে আস্থাবান সে যেন শেষরাতে বিতর আদায় করে। কেননা শেষরাতের কির’আত (ফিরিশতাদের) উপস্থিতির সময় এবং তা উত্তম।

১৬৪১.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতি উত্তম সালাত দীর্ঘ সময় দাঁড়ান (অর্থাৎ লম্বা কিরা'আতের সালাত)

১৬৪২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল কোন সালাত উত্তম? তিনি বললেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়ান।

১৬৪৩.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, রাত্রিকালে এমন একটি সময় রয়েছে যে, কোন মুসলমান ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোন কল্যাণের প্রার্থনা করা অবস্থায় যদি সময়টির আনুকুল্য পায় তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। আর তা রয়েছে প্রতি রাতে।

১৬৪৪.    সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের এমন একটি ক্ষণ রয়েছে যে, কোন মুসলমান বান্দা আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণের প্রার্থনারত অবস্থায় সে সময়টি পেয়ে গেলে আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই দান করবেন।

১৬৪৫.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের বরকতময় ও মহান প্রতিপালক প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকার সময় নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কে আছে আমাকে ডাকবে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব; কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, তবে আমি তাকে দিয়ে দিব, কে আছে আমার কাছে মাগফিরাত কামনা করবে, তবে আমি তাকে মাফ করে দেব।

১৬৪৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি রাতে যখন রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তখন আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন আর তিনি বলতে থাকেন, আমিই বাদশাহ। কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আছে এমন যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে দিয়ে দেব; কে আছে এমন যে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। ফজর উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত এ ভাবেই চলতে থাকে।

১৬৪৭.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের অর্ধেক কিংবা দুই তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালা নিকটবতীঁ আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছে কি কোন প্রার্থী? তাকে প্রদান করা হবে, আছে কি কোন দু'আকারী? তার দু’আ কবুল করা হবে; আছ কি কোন ক্ষমাপ্রাথীঁ? তাকে ক্ষমা কর দেয়া হবে; এরুপ চলতে থাকে ভোর প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত।

১৬৪৮.    হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ...ইবনু মারজানা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের আধাআধির সময় কিংবা রাতের শেষ ভাগের সময় মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কিংবা কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দিয়ে দেব। অতঃপর বলতে থাকেন, কে আছে করয দেবে এমন সত্তাকে যিনি নিঃস্ব নন এবং যিনি যুলুম করেন না। 

মুসলিম (রহঃ) বলেছেন, ইবনু মারাজানা হচ্ছেন সাঈদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) এবং মারজানা (রাঃ) হলেন তাঁর মাতা।

১৬৪৯.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... সা’দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) উপরোক্ত সনদে বর্ণিত এবং তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর দু' হাত প্রসারিত করে বলতে থাকেন, কে আছে করয দেবে এমন সত্তাকে যিনি নিঃস্ব নন এবং যিনি যুলুম করেন না।

১৬৫০.    আবূ শায়বার পূত্র উসমান ও আবূ বাকর এবং ইসহাক ইবন ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ অপেক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে গেলে তিনি নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বলেন, কেউ কি আছে মাগফিরাতকামী? কেউ কি আছে তাওবাকারী? কেউ কি আছে প্রার্থনাকারী? কেউ কি আছে দুআকারী? এরুপ বলতে থাকেন ফজর উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত।

১৬৫১.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শুবা সূত্রে ইসহাক (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে মানসূর (রহঃ) বর্ণিত আবূ ইসহাক (রহঃ) এর হাদীসটি অধিক পূর্ণাঙ্গ ও অধিক বিবরণ সম্বলিত।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. কিয়ামে রমযান অর্থাৎ তারাবীহ সম্পর্কে উৎসাহ দান


১৬৫২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে (সাওয়াব প্রাপ্তির বিশ্বাস নিয়ে) রমযানে রাত্রি জাগরণ করে (তারাবী পড়ে), তার পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

১৬৫৩.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে রাত্রি জাগরণের জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ না দিয়ে তাদের উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমযানে রাত্রি জাগরণ করবে তার বিগত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় আর বিষয়টি এরূপই ছিল। পরে আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফত যুগে অবস্থা অনুরূপ থাকে, উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও অবস্থা অনুরূপ অব্যাহত ছিল।

১৬৫৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি লায়লাতুল কাদরে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রাত জাগরণ (ইবাদত) করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

১৬৫৫.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি লায়লাতুল কাদরে রাত জাগরণ করে রাবী বলেন, আমার ধারনা যে তিনি বলেছেন, ঈমান ও সাওয়াবের আশায়, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।

১৬৫৬.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন তাঁর সঙ্গে লোকজন সালাত আদায় করল। এরপর পরবর্তী রাতে তিনি সালাত আদায় করলেন এতে বহু লোক হল। পরে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতেও তাঁরা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দিকে বের হলেন না। পরে সকালে তিনি বললেন, তোমরা যা করেছ তা তো আমি দেখেছি। তোমাদের কাছে বের হয়ে আসতে আমাকে শুধু এ ই বাধা দিয়েছে যে, আমি আশংকা কছিলাম যে, সে সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যেতে পারে। এ ঘটনা রমযানের।

১৬৫৭.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্য রাতে বেরিয়ে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন একদল লোক তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল এবং সকালে লোকেরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করল। ফলে তাদের চাইতে অনেক বেশী লোক সমবেত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় রাতে বের হলেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল। এদিন সকালেও লোকেরা বিষয়টি আলোচনা করতে থাকল। এতে রাতে মসজিদের লোক সংখ্যা আরো বেশী হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন। লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল। চতুর্থ রাতে মসজিদ লোকদের স্থান সংকুলানে অক্ষম হল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে বের হলেন না। তখন তাদের মাঝে কিছু লোক বলতে লাগল, সালাত! সালাত! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও তাদের কাছে বের হলেন না। অবশেষে ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন। ফজরের সালাত আদায় করার পরে লোকদের দিকে মুখ করলেন এবং তাশাহহুদ পাঠের পরে বললেন, আজ রাতে তোমাদের অবস্থা আমার কাছে গোপন থাকে নি। তবে আমার আশংকা হয়েছিল যে, রাতের (তারাবীহ) সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায়; আর তোমরা তা পাননে অক্ষম হও।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. শবে-ক’দরে রাত্রি জাগরনে উৎসাহ দান এবং তা যে সাতাশে রমাযান তার প্রমান


১৬৫৮.    মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাযী (রহঃ) … উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যখন তাকে বলা হয় যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি সারা বছর (ইবাদতে) রাত্রি জাগরণ করবে সে শবে-কাদর পাবে; তখন উবাই (রাঃ) বললেন, সেই আল্লাহর কসম তিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। তা অবশ্যই রমযানে রয়েছে। তিনি কসম করে বলেছিলেন এবং তিনি কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই কসম করে বলেছিলেন। আবার তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বললেন, ভাল করেই জানি যে, সেটি কোন রাত; সেটি হল সে রাত যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হুকুম করেছিলেন। যে রাতের ভোর হয়, সাতাশে রমযান। আর সে রাতের আলামত হল এই যে, দিনের সূর্য উদিত হয় উজ্জল হয়ে তাতে (কিরণের) তীব্রতা থাকে না।

১৬৫৯.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি লায়লাতুল কাদর সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তা অবশ্যই জানি এবং আমার অধিক ধারণা যে, সেই রাত, যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য আল্লাহর রাসুল আমাদের আদেশ দিয়েছিলেন, সেটি সাতাশের রাত। রাবী শু'বা এ বাক্যে সন্দেহ পোষণ করছেন - "তা সেই রাত যে রাত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।" তিনি বলেন, আমার এক সঙ্গী আমাকে তাঁর কাছ থেকে এ কথাটি বর্ণনা করেছেন।

১৬৬০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে শু'বা (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং পরবর্তী বাক্যটি তিনি উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ২০. রাতের বেলা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সালাত ও দু’আ


১৬৬১.    আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম হায়্যান আন-আবদী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনার ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। রাতের বেলা এক সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে নিজের প্রয়োজন সমাধা করলেন। তারপর নিজের হাত-মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে (পানির) মশকের কাছে গিয়ে বন্ধন খূললেন। তারপর দুই ওযুর মাঝামাঝি ওযু করলেন। অতিরিক্ত পানি খরচ করলেন না। তবে পূর্ণাঙ্গ ওযু করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। আমি জেগে মোড়ামুড়ি দিলাম। আমার পছন্দ ছিল না যে, আমি জেগে জেগে তাঁকে লক্ষ্য করছিলাম, তা তিনি বুঝে ফেলেন। এরপর আমি ওযু করলাম। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে হাতে ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে আনলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) তের রাকআত হল। 

তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং ঘুমিয়ে নাক ডাকতে লাগলেন। তিনি ঘূমালে তাঁর নাক ডাকত। তখন বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সালাতের সময় হওয়ার খবর দিলেন। তিনি উঠে সালাত আদায় করলেন এবং ওযু করলেন না। (এ রাতে) তাঁর দু’আর মধ্যে ছিলঃ 

হে আল্লাহ! আমার কলবে নূর দান করুন, আমার দৃষ্টিতে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নুর দান করুন, আমার ডানদিকে নূর, আমার বামদিকে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর এবং বিরাট নূর দান করুন। 

রাবী কুরায়ব (রহঃ) বলেন, আরও সাতটি বিষয় যা আমার অন্তরে রয়েছে। সালামা ইবনু কুহায়ল বলেন, এরপর আমি আব্বাস পরিবারের কোন একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি ঐ বিষয়গুলো আমাকে বর্ণনা করলেন। আমার শিরায়, আমার গোশতে, আমার রক্তে, আমার পশমে এবং আমার বুকে… আরও দু'টি বিষয় বললেন।

১৬৬২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা (রাঃ) এর কাছে একবার রাত্রি যাপন করেন। তিনি বলেন, আমি বিছানার প্রস্থে শয়ন করলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্ত্রী (মায়মুনা) শয়ন করলেন তার দৈর্ঘে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। রাতের অর্ধেক হলে অথবা তার কিছু আগে বা কিছু পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগলেন এবং নিজের হাতে তাঁর চেহারা মুবারক থেকে ঘুমের আমেজ মুছতে লাগলেন। তারপর সূরা আলে ইমরালের শেষ দশ আয়াত পড়লেন। তারপর একটি লটকিয়ে রাখা মাশকের কাছে গিয়ে তাঁর থেকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করলেন। 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে তেমনই করলাম যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। পরে আমি গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাত আমার মাথায় রাখলেন এবং আমার কান ধরে তা মলতে লাগলেন। তখন তিনি দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর দু' রাকআত তারপর দু' রাকআত তারপর দু' রাকআত তারপর দু' রাকআত তারপর বিতর আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াযযিন তাঁর নিকটে এলেন। তিনি উঠে সংক্ষিপ্ত দু-রাকআত সালাত (ফজরের সুন্নাত) আদায় করলেন। এরপর বের হয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন।

১৬৬৩.    মুহাম্মাদ ইবনু সালামা মুরাদী (রহঃ) উক্ত সনদে ... মাখরামা ইবনু সুলায়মান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এতে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন, তিনি পানির মশক ঝূলিয়ে রাখার খুঁটির কাছে গেলেন এবং মিসওয়াক করলেন ও উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং পূর্ণাঙ্গ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তবে পানি পরিমাণে কমই ঢাললেন। তারপর আমাকে নাড়া দিলে আমি উঠে পড়লাম। হাদীসে বাকী অংশ মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

১৬৬৪.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে শুইলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ রাতে তার ঘরে ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার পরে সালাতে দাঁড়ালেন। আমি গিয়ে তাঁর বামপাশে দাড়ালাম। তখন তিনি আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। তিনি সে রাতে তের রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে পড়লেন এমন কি নাক ডাকতে লাগলেন। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে সাধারণত নাক ডাকতেন। এরপর মুয়াযযিন তাঁর নিকটে এলে তিনি বের হয়ে সালাত আদায় করলেন আর তিনি অযূ করলেন না। 

রাবী আমর (রহঃ) বলেন, পরে আমি বুকায়র ইবনু আশাজ্জ (রহঃ) কে এ হাদীস শুনালে তিনি বললেন, কুরায়ব (রহঃ) আমাকে এরূপ বর্ণনা করেছেন।

১৬৬৫.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মুনা বিনত হারিস (রাঃ) এর ঘরে এক রাত্রি যাপন করলাম এবং আমি তাঁকে বলে রাখলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উঠেন তখন আমাকে জাগিয়ে দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে (সালাত) দাঁড়ালেন। তখন আমি তার বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। এরপর আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেই তিনি আমার কানের লতি ধরতেন (ধরে মোচড় দিতেন) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি তখন এগার রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর হাটু খাড়া করে দু' হাত নিয়ে জড়িয়ে বসলেন। অবশেষে আমি তার ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসের আওয়াজ শুনতে লাগলাম। পরে ফজর প্রকাশ পেলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু' রাক’আত (সালাত) আদায় করলেন।

১৬৬৬.    ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে রাতে ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে উঠে একটি লটকানো পূরানো মশক থেকে হালকাভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। বর্ণনাকারী কুরায়াব (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁর স্বল্পতা ও হালকা ভাবের ব্যাখ্যা দিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে দাঁড়ালাম এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ করেছিলেন আমি সেরূপ করলাম। তারপর এসে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে পিছন দিক দিযে ঘুরিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে নিলেন। তারপর সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন এবং ঘুমিয়ে নাক ডাকতে লাগলেন। এরপর বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাতের (সময় হওয়ার) খবর দেন। তখন তিনি বের হয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন এবং অযূ করেননি। 

সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপার (ঘূমে অযূ ভঙ্গ না হওয়া) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাস কেননা, আমাদের কাছে হাদীস পৌছেছে যে, তাঁর দু' চোখ নিদ্রা যায় কিন্তু তার অন্তর নিদ্রা যায় না।

১৬৬৭.    মুহামাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা মায়মূনা (রাঃ) এর ঘরে আমি রাত্রে ছিলাম। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি প্রকারে সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে পেশাব করলেন, তারপর হাত-মুখ ধুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে উঠে মশকের কাছে গিয়ে তার বাধন খুলে পাত্রে পানি ঢেলে নিলেন। তিনি হাত দিয়ে মশকটি পাত্রের উপরে কাত করে ধরলেন। তারপর দুই ওযুর মাঝামাঝি উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমি এসে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। আমি দাঁড়ালাম তাঁর বামপাশে। 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত তের রাকআত হল। এর পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এমনকি নাক ডাকতে লাগলেন। আমরা তাঁর নাকের আওয়াজ শুনে তাঁর ঘুমিয়ে পড়া বুঝতে পারতাম। তিনি তাঁর সালাতের মধ্যে অথবা (রাবী বলেন) তাঁর সিজদায় বলতে লাগলেন "হে আল্লাহ! আমার কলবে নূর দান করুন, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর এবং আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর, আমরা পিছনে নূর আমার উপরে নূর, এবং আমার নিচে নূর দান করুন এবং আমাকে দান করুন অথবা তিনি বলেছিলেন আমাকে নূরে পরিণত করুন।"

১৬৬৮.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে ছিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। অতঃপর গুনদার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে, এতে তিনি বলেন, "আমাকে নূরে পরিণত করুন" এ রিওয়ায়াতে সন্দেহ নেই।

১৬৬৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। এরপর পূর্ণ ঘটনার বিবরণ দেন। এতে হাত-মুখ ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, তারপর মশকের কাছে গিয়ে তার বাঁধন খুললেন এবং দুই উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মাঝামাঝি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর নিজের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। দ্বিতীয়বার উঠে মশকের কাছে গেলেন এবং তার বাধন খুলে অযূ করলেন ঐ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতই। আর তিনি আমাকে এতে বলেছেন, "আমাকে বিরাট নূর দান করুন।" এ বর্ণনায় "আমাকে নূরে পরিণত করুন" এ কথা উল্লেখ করেননি।

১৬৭০.    আবূ তাহির (রহঃ) ... কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে রাত্রি যাপন করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘূম থেকে উঠে মশকের দিকে গেলেন এবং তা থেকে (পানি) ঢেলে অযূ করলেন। পানি খুব বেশী ব্যবহার করেননি এবং অযূতেও কোন ক্রটি করেন নি। এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। আর এতে রয়েছে যে, তিনি বলেছেন, সে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনিশটি বাক্যের দ্বারা দুআ করলেন। সালামা (রহঃ) বলেন, কুরায়ব (রহঃ) আমাকে সেগুলোর বিবরণ দিয়েছিলেন, আমি তার বারটি মুখস্ত রেখেছি এবং বাকীগুলো ভুলে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ

"হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে নূর দিয়ে দিন, আমার জিহ্বায় নূর, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর দিন, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর এবং আমার পিছনে নূর দিন এবং আমার অন্তরে নূর প্রদান করুন এবং আমাকে বিরাট নূর দান করুন”।

১৬৭১.    আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনা (রাঃ) এর কাছে অবস্থান করার রাতে আমি তাঁর (মায়মুনা) ঘরে রাত্রি যাপন করলাম যাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কেমন হয় তা আমি প্রত্যক্ষ করতে পারি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের সাথে কিছু সময় কথা বললেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। এরপর তিনি পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে রয়েছে এরপর উঠে তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন ও মিসওয়াক করলেন।

১৬৭২.    ওয়াসিল ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি (এক রাতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শয়ন করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক করলেন ও ওযু করলেন। তখন তিনি পাঠ করছিলেনঃ إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لأُولِي الأَلْبَابِ‏ (আকাশ মন্ডল ও সৃষ্টিতে দিন ও রাতের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, -- (আলে ইমরানঃ ১৯০) এই আয়াতগুলো থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে দু' রাক’আত সালাত আদায় করলেন এবং তাতে কিয়াম, রুকু ও সিজদা দীর্ঘায়িত করলেন। তা শেষ করে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডাকতে লাগলেন। এভাবে তিনবারে তিনি ছয় রাকআত আদায় করলেন প্রতিবারে মিসওয়াক ও উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন এবং ঐ আয়াতসমূহ পাঠ করেন। এরপর তিন রাক’আত বিতর আদায় করলেন। তখন মুয়াযযিন আযান দিলে তিনি সালাতের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি তখন বলছিলেন, "হে আল্লাহ! দান করুন আমার ক্বলবে নূর, আমার জিহ্বায় নূর, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর, পিছনে নূর, সম্মুখে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, হে আল্লাহ! আমাকে নূর দিয়ে দিন।"

১৬৭৩.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনার কাছে এক রাত যাপন করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতের নফল সালাতের জন্য উঠলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের কাছে গিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন, যখন তাকে ঐ সব করতে দেখলাম আমিও উঠলাম এবং মশক থেকে (পানি নিয়ে) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। এর পরে তাঁর বামপাশে দাড়ালাম। তিনি তখন তার পিছন দিয়ে আমাকে ডানপাশে নিয়ে এলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম তা কি নফল সালাতে ছিল? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।

১৬৭৪.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্বাস (রাঃ) আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পাঠালেন, তিনি তখন আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে ছিলেন। সে রাতে আমি তাঁর সঙ্গে থাকলাম। রাতের এক অংশে উঠে তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি নিজের পিঠের পিছন থেকে আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে বের করে দিলেন।

১৬৭৫.    ইবনু নুমায়র (র) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর কাছে আমি রাত যাপন করলাম...... (পরবতীঁ অংশ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এবং কায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।

১৬৭৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

১৬৭৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) …যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমি স্থির করলাম) আজ রাতে আমি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের প্রতি লক্ষ্য রাখব। তিনি প্রথমে সংক্ষেপে দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন যা তার পূর্ববর্তী রাকআতের চেয়ে কম। তারপর দু' রাক’আত সালাত আদায় করলেন যা তার পূর্ববর্তী দু’রাকআতের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। তারপর দু' রাক’আত সালাত আদায় করলেন যা ছিল পূর্ববর্তী দু’ রাকআতের চেয়ে কম দীর্ঘ। তারপর বিতর আদায় করলেন। এই হল মোট তের রাকআত।

১৬৭৮.    হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি (পানির) ঘাটে পৌহুলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে, জাবির! তুমি কি উঠকে ঘাটে নামাবে না? আমি বললাম হ্যাঁ। জাবির (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করলেন এবং আমি (উটকে) ঘাটে নামালাম। জাবির (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজনে (পেশাব করতে) গেলেন। আমি তার জন্য অযূর পানি ঠিক করে রাখলাম। জাবির (রাঃ) বলেন, তিনি এসে অযূ করলেন, দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তখন তিনি এক কাপড় পরিহিত ছিলেন যার দু'প্রান্ত বিপরীত দিকে জড়িয়ে ছিলেন। আমি তাঁর পিছনে দাঁড়লাম। তিনি আমার হাতে ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

১৬৭৯.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) …আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে উঠতেন তখন সংক্ষিপ্ত দু'রাকআত দিয়ে তাঁর সালাত আরম্ভ করতেন।

১৬৮০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন রাতে ওঠে, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত দু’রাকআত দিয়ে সালাত শুরু করে।

১৬৮১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝরাতে যখন সালাতের উদ্দেশ্যে উঠতেন তখন (এ দুআ) বলতেনঃ "হে আল্লাহ! আপনারই জন্য যাবর্তীয় প্রশংসা, আপনই আসমান যমীনের নূর (জ্যোতি), আপনারই সকল প্রশংসা, আপনই আসমান যমীনের রক্ষক, আপনারই জন্য সকল প্রশংসা, আপনি আসমান যমীনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সে সবের রব। আপনই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার বানী সত্য, আপনার সাক্ষাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পণ করছি, আপনার প্রতি ঈমান স্থাপন করছি, আপনারই উপর ভরসা করছি, আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, আপনারই প্রদত্ত সত্য প্রমাণ নিয়ে দুশমনের মুকাবিলা করছি, আপনারই কাছে ফয়সালা ন্যস্ত করছি। তাই আমার যা কিছু পুর্বাপর এবং গোপন ও প্রকাশ্য, সে সকল ক্ষমা করুন। মা'বুদ আপনি ব্যতীত আমার কোন ইলাহ নেই।

১৬৮২.    আমরুন নাকিদ, ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তবে এ সনদে উর্ধতন রাবী জুরায়জ (রহঃ) এর হাদীসের শব্দ, ভাষা পূর্ববর্তী সনদের মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। শুধু দু' টি শব্দে তাদের বর্ণনা ব্যবধান রয়েছে। মালিকের قَيَّامُ শব্দের স্থলে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) قَيِّمُ বলেছেন আর أَسْرَرْتُ স্থলে বলেছেন مَا أَسْرَرْتُ তবে ইবনু উয়ায়না (রহঃ) এর হাদীসে কিছু অধিক বিবরণ রয়েছে এবং কয়েকটি শব্দে মালিক ও ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এর সাথে তাঁর বর্ণনায় বিরোধ রয়েছে।

১৬৮৩.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর শব্দ পূর্বোল্লিখিতগণের ভাষ্যের কাছাকাছি।

১৬৮৪.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবূ মা'ন রাকাশী (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নাবী রাতে যখন উঠতেন তখন কি দিয়ে (কোন দুআ পড়ে) তিনি তাঁর সালাত আরম্ভ করতেন। তিনি বলেন, তিনি যখন রাতে উঠতেন তখন সালাত শুরু করতেন 

اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ 

"হে আল্লাহ! জিবরাইল, মীকাইল ও ইসরাফিল (আলাইহিমুস সালাম) এর প্রতিপালক আসমানসমূহ ও যমীনের সৃজনকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞাতা আপনই মীমাংশা করবেন আপনার বান্দাদের মাঝে সে বিষয় যাতে তারা মতবিরোধ করছিল। আপনি আমাকে হিদায়াত ও সঠিক পথ প্রদর্শন করুন, সত্য ন্যায়ের বিপরীত বিষয়ে আপনার হুকুমে, আপনই হিদায়াত করেন যাকে ইচ্ছা হয়, সরল পথের দিকে।”

১৬৮৫.    মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) ... আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন বলতেনঃ 

وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ‏.‏ أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ 

(হে আল্লাহ।) অভিমুখী করলাম একনিষ্ঠ হয়ে আমার চেহারা সে সত্তার দিকে যিনি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার ইবাদত ও কুরবানী এবং আমার হায়াত ও মাওত রাব্বূল আলামীন (বিশ্ব প্রতিপালক) আল্লাহর জন্য যার কোন শরীক নেই। আর আমি এ বিষয় আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের একজন। হে আল্লাহ! আপনই বাদশাহ, আপনি ব্যতীত ইলাহ নেই, আমার প্রতিপালক এবং আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের উপর যুলুম করেছি এবং আমার অপরাধ আমি স্বীকার করছি। অতএব আমাকে আমার সব গুনাহ মাফে করে দিন। আপনি ব্যতীত আর কেউই তো ক্ষমাকারী নেই এবং আমাকে উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত রুকন। আপনি ব্যতীত কেউ উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করতে পারে না এবং মন্দ চরিত্র থেকে আমাকে দুরে নিন। মন্দ চরিত্রগুলো আপনি ব্যতীত কেউ আমা থেকে সরাতে পারে না। আপনার নিকটে আমি হাযির! আনুগত্য আপনারই জন্য নিবেদিত! সকল কল্যাণ আপনারই হাতে, অকল্যান আপনার প্রতি সম্পৃক্ত নয়। আমি আপনার উপর নির্ভরশীল এবং আপনার দিকেই রজ্জু হই। আপনি বরকতময়, আপনি মহামহিম, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করছি, আপনার জন্য বিনীত। আমার কান, আমার চোখ, আমার অস্থি-মজ্জা এবং আমার শিরা-উপশিরা। 

আর যখন রুকু থেকে উঠতেন তখন বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের রব, আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। হে আমাদের প্রতিপালক! আসমান সমুহের মধ্যবর্তি ও যমীন এবং দুয়ের মধ্যবর্তি আকাশভর্তি এবং এরপর আপনি যা কিছু ইচ্ছা করবেন তাও ভর্ভি। 

আর তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনারই জন্য সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান আনছি। আমার চেহারা সিজদাবনত সে সত্তার জন্য যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, তার আকৃতি দান করেছেন, তার মধ্যে কান ও চোখ ফূটিয়েছেন, কতই মহান বরকতময় আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। 

তারপর তাশাহুদও সালামের মাঝে সর্বশেষ এ দুআ পাঠ করতেন। হে আল্লাহ! ক্ষমা করুন আমার পূর্ববর্তী গোনাহ এবং পরবর্তী গোনাহ এবং যা আমি গোপন করেছি ও যা আমি প্রকাশ্যে করেছি এবং যা আমি সীমালঙ্ঘন করেছি এবং সে সকল অপরাধ যা আপনি আমার চেয়ে অধিক অবগত। আপনি এগিয়ে দেওয়ার ও পিছিয়ে দেওয়ার মালিক। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।

১৬৮৬.    যুহায়র ইবনু হারব এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ'রাজ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। এতে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলার পরে তিনি বলতেন, 

"আমি অভিমূখী করলাম আমার চেহারা, তিনি আরো বলেছেন, এবং আমি প্রথম মুসলমান।" রাবী বলেছেন, রুকু থেকে মাথা তুলবার সময় তিনি বলতেন, আল্লাহ শুনেন তার কথা যে তার প্রশংসা করে। হে আমাদের রব! আর আপনার জন্য সকল প্রশংসা। তারপর বলেন, যখন সালাম করতেন তখন বলতেন, হে আল্লাহ! ক্ষমা করুন আমার পূর্ববর্তী গুনাহ এভাবে হাদিসের শেষ পর্যন্ত, এতে তিনি তাশাহুদ ও সালামের মধ্যবর্তীর কথা উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ২১. রাতের সালাতে দীর্ঘ কিরা’আত পাঠ করা মুস্তাহাব


১৬৮৭.    আবূ বাকর ইবনু শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক রাতে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি সুরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে করলাম সম্ভবত একশত আয়াতের মাথায় রুকু করবেন। কিন্তু তিনি অগ্রসর হয়ে গেলেন। তখন আমি ভাবলাম, তিনি সূরা বাকারা দিয়ে সালাত পূর্ণ করবেন। কিন্তু তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করলেন এবং তাও পড়ে আলে ইমরান শুরু করে তাও পড়ে ফেললেন। তিনি ধীর-স্থিরতার সাথে পাঠ করে যাচ্ছিলেন। যখন তাসবীহ যুক্ত কোন আয়াতে উপনীত হতেন তখন তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করতেন এবং যখন প্রার্থনার কোন আয়াতে উপনীত হতেন তখন তিনি প্রার্থনা করে নিতেন। আর যখন (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় গ্রহণের আয়াতে পৌছতেন তখন (আল্লাহর কাছে) পানাহ চাইতেন। 

তারপর রুকু করলেন এবং রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), বলতে থাকেন। তার রুকু ছিল প্রায় তার দাঁড়ানোর সমান (দীর্ঘ)। এরপর বললেন, سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শোনেন)। তারপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুতে যতক্ষন ছিলেন তার কাছাকাছি। তারপর সিজদা করলেন এবং سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى (আমার সুমহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি), বললেন। তাঁর সিজদার পরিমাণ ছিল তার দাঁড়ানোর কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেন, জারীর (রহঃ) এর হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, তিনি তা শোনেন আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্য সকল প্রশংসা)।

১৬৮৮.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে (রাতের) সালাত আদায় করছিলাম। তিনি এত দীর্ঘ করলেন যে, আমার মন্দ ইচ্ছা উদিত হচ্ছিল। বর্ণনাকারী আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি মন্দ ইচ্ছা উদিত হচ্ছিল? তিনি বললেন, "আমি ইচ্ছা করছিলাম যে, আমি বসে পড়ব এবং তাঁকে (তাঁর ইকতিদা) ছেড়ে দেব।"

১৬৮৯.    ইসমাঈল ইবনু খলিল ও সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) সুত্রে পুর্বোক্ত সনদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২২. তাহাজ্জুদের সালাতের প্রতি উৎসাহ দান যদিও তা পরিমানে স্বল্প হয়


১৬৯০.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন একজন লোকের কথা আলোচনা করা হল যে ভোর পর্যন্ত রাতভর ঘুমিয়ে থাকে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ও এমন ব্যাক্তি যার দু' কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে অথবা বললেন, তার কানে।

১৬৯১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রের বেলা তাঁর ও ফাতিমা (রাঃ) এর গৃহে আসলেন এবং বললেন, তোমরা কি সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করছ না? [আলী (রাঃ) বলেন] আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের আত্না আল্লাহর কবজায়, তাই তিনি যখন আমাদের উঠাবার ইচ্ছা করেন, তখন উঠান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে চলে গেলেন, যখন আমি তাকে এ কথা বলি। আর তার একার যাওয়ার সময় আমি শুনতে পেলাম তিনি নিজের রানে হাত মারছেন এবং বলছেন, وَكَانَ الإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَىْءٍ جَدَلاً "মানুষ অধিকংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়" (সুরা কাহফঃ ৫৪)

১৬৯২.    আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছিয়েছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথার তিনটি গিট দেয়- যখন সে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতি গিটে এই বলে ফুঁ দেয় যে, তোমার সামনে দীর্ঘ রাত...... সে যখন জেগে উঠে আল্লাহর নাম নেয় তখন একটি গিঁট খুলে যায় যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তখন দু'টি গিট খুলে যায়। আর যখন সালাত আদায় করে তখন সবকটি গিটই খুলে যায়। ফলে সে উৎফূল্ল ও আনন্দিত মনে ভোর করে। অন্যথায় সে ভোর করে বিমর্ষ মনে ও আলসে অবস্থায়।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. নফল সালাত নিজের ঘরে আদায় করা মুস্তাহাব, মসজিদে আদায় করাও জায়েয


১৬৯৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলন, তোমাদের সালাতের কিছু অংশ তোমাদের ঘরে (আদায়ের জন্য) নির্ধারিত করবে এবং সে (ঘর) গুলোকে কবর বানাবে না।

১৬৯৪.    ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা নিজেদের ঘরে সালাত আদায় করবে এবং সেগুলোকে কবর বানিও না।

১৬৯৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার মসজিদের (ফরয) সালাত সমাধা করে, তখন সে যেন তার ঘরের জন্য তার সালাতের একটি অংশ নির্দিষ্ট করে। কেননা, তার সালাতের কারণে আল্লাহ তার ঘরে বরকত দান করবেন।

১৬৯৬.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ’আরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় এবং যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় না, তার দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃতের।

১৬৯৭.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থান বানিও না। যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।

১৬৯৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাটাই কিংবা একটি মাদূর দিয়ে (মসজিদে) একটি ছোট্ট "হুজরা" তৈরী করলেন। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সেখানে সালাত আদায় করতে লাগলেন। রাবী বলেন, তখন কিছু লোক তাঁকে খোঁজ করে সেখানে সমবেত হল। তারা তার সঙ্গে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে এসেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, পরে আর এক রাতে তারা এসে উপস্থিত হল, কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে বের হয়ে আসতে বিলম্ব করতে লাগলেন এবং তাদের কাছে বের হলেন না। তখন লোকেরা তাদের আওয়াজ উচু করল এবং (হুজরার) দরজায় কংকর মারল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুষ্ট হয়ে তাদের কাছে বের হয়ে এলেন। তিনি তাদের বললেন, তোমাদের কর্ম তো তোমরা চালাতে থাকলে, এমন কি আমার ধারণা হল যে, তা (রাতের সালাত) অচিরেই তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হতে পারে। সুতরাং তোমরা তোমাদের বাড়ী ঘরে সালাত আদায় করবে। কেননা, মানুষের সে সালাতই উত্তম, যা তার ঘরে আদায় করা হয়, তবে ফরয সালাত ছাড়া।

১৬৯৯.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদূর দিয়ে মসজিদে একটি হুজরা তৈরী করেন এবং তিনি কয়েক রাত সেখানে সালাত আদায় করেন। অবশেষে তাঁর কাছে কিছু লোক সমবেত হল। অতঃপর পূর্বানুরুপ উল্লেখ করেছেন। এ রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত আছে, আর তোমাদের উপরে তা ফরয করে দেয়া হলে তোমরা তা পালন করতে না।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. রাতের ইবাদত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্থায়ী ও নিয়মিত আমলের ফযীলত


১৭০০.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি মাদুর ছিল, যা দিয়ে রাতের বেলা তিনি 'হুজরা' বানিয়ে নিতেন এবং সেখানে সালাত আদায় করতেন। লোকেরা ও তাঁর সালাতের সংগে (মুকতাদী হয়ে) সালাত আদায় করতে লাগল। আর দিনের বেলা তিনি সেটা বিছিয়ে দিতেন। এক রাতে তারা উদগ্রীবতার সাথে সালাতের জন্য ফিরে এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, লোক সকল, তোমরা এমন আমল গ্রহণ করবে যদ্দুর করার তোমরা সামর্থ রাখ। কেননা, আল্লাহ নিশ্চয়ই (সাওয়াব দানে) ক্লান্তিবোধ করেন না, যাবৎ না তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড় (ও আমল ছেড়ে দাও)। আর আল্লাহর নিকট সমধিক প্রিয় আমল হল তাই, যা নিয়মিত করা হয়- যদিও তা কম হয়। আর (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজন কোন আমল শুরু করলে তাকে তারা স্থায়ী রাখতেন।

১৭০১.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল- আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, যা স্থায়ী হয়, যদিও তা (পরিমাণে) কম হয়।

১৭০২.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম। ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, হে উম্মুল মু'মিনীন! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল কোন প্রকৃতির ছিল? তিনি কি নিজের জন্য কোন দিন বিশেষভাবে নির্ধারিত করতেন? তিনি বললেন, না; তার আমল ছিল নিয়মানুবর্তিতাসস্পন্ন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে সামর্থ ছিলেন তোমাদের মাঝে কে তা করতে সমর্থ হবে?

১৭০৩.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল অধিক নিয়মানুবর্তিতাসস্পন্ন আমল যদিও তা স্বল্প হয়। আর আয়িশা (রাঃ) যখন কোন আমল শুরু করতেন তখন তাকে স্থায়িভাবে করতেন।

১৭০৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং তখন দুই থামের মাঝে একটি রশি টানানো ছিল। তা দেখতে পেয়ে তিনি বললেন এটি কি? তারা বলল যায়নাবের। সে সালাত আদায় করতে থাকে। যখন অলসতা কিংবা দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করেন তখন ঐ রশির সাথে নিজেকে আটকে রাখেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটি খূলে দাও! তোমাদের যে কেউ তার উদ্যম ও স্ফুর্তি পরিমাণ সালাত আদায় করবে। যখন অলসতা ও ক্লাড়ি অনুভব করবে, তখন বসে পড়বে। যুহায়র (রহঃ) এর হাদীসে 'বসে পড়বে' (قَعَدَ) স্থলে 'সে যেন বসে পড়ে' (فَلْيَقْعُدْ) রয়েছে।

শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

১৭০৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু সালামা মুরাদী (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) খবর দিয়েছেন যে, হাওলা বিনত তুওয়ায়ত ইবনু হাবীব ইবনু আসা’দ ইবনু আবদুল উযযা তাঁর (আয়িশা) নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার কাছে ছিলেন। (আয়িশা (রাঃ) বলেন) আমি বললাম, "এ হচ্ছে হাওলা বিনতে তুওয়ায়ত, লোকেরা বলে যে, সে রাতে ঘূমায় না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন রাতে ঘূমায় না।" ...... এমন আমল তোমরা গ্রহণ কর যাতে তোমরা সমর্থ হবে। কেননা, আল্লাহ তো (সাওয়াব দানে) বিরক্ত হন না, যাবৎ তোমরাই বিরক্ত হয়ে আমল ছেড়ে দাও।

১৭০৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আগমন করলেন, তখন আমার কাছে একটি স্ত্রীলোক ছিল। তিনি বললেন, এটি কে? আমি বললাম, এ এক নারী, যে রাতে ঘুমায় না, সালাত আদায় করতে থাকে। তিনি বললেন, তোমরা এমন আমল গ্রহণ করবে যা পালনে তোমাদের সামর্থ্য রয়েছে। কেননা, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তো (সাওয়াব দানে) ক্লান্ত বিরক্ত হবেন না, ততক্ষনে তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় দ্বীন ছিল যার পালনকারী তাতে নিয়মানূবর্তিতা রক্ষা করত। আবূ উসামা (রহঃ) (প্রথম সনদ) এর হাদীসে রয়েছে, সে ছিল বনূ আসাদ গোত্রের এক নারী!

পরিচ্ছেদঃ ২৫. সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে কিংবা কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরে জিহ্বা জড়িয়ে যেতে লাগলে ঘুমিয়ে পড়া কিংবা বিশ্রাম নেয়ার আদেশ, যাতে তার তন্দ্রাভাব কেটে যায়


১৭০৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নূমায়ার, আবূ কুরায়ব এবং কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন শুয়ে পড়ে যাতে তার ঘূম চলে যায়। কেননা, তোমাদের কেউ যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে সালাত আদায় করবে তখন এমন হতে পারে যে, সে ইসতিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাইবে, অথচ সে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। (দু’আ করতে গিয়ে বদ দু’আ করে ফেলবে।)

১৭০৯.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এটি হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের কাছে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন...... তিনি অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন, যার একটি এই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রাতে জেগে উঠে এবং কুরআন তার জিহ্বায় জড়িয়ে যেতে থাকে এবং কি বলছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে।

No comments:

Powered by Blogger.