Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড, অধ্যায়ঃ ফাযাইলুল কুরআন




পরিচ্ছেদঃ ১. কুরআন সংরক্ষণে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ; অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি বলার অপচন্দনীয়তা ও আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলার বৈধতা প্রসঙ্গে


১৭১০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এক ব্যাক্তিকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনালেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন! সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা অমুক সূরা থেকে আমি বাদ দিয়েলাম।
১৭১১.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এক ব্যাক্তির তিলাওয়াত শুনছিলেন। তখন তিনি বললেন, "আল্লাহ তাকে রহম করুন! আমাকে এমন আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।"
১৭১২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআনওয়ালা ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত তো বেধে রাখা উটের মত। তার দেখাশুনা করলে তাকে আটকে রাখতে পারে, আর তাকে ছেড়ে দিলে সে (নিরুদ্দেশে) চলে যায়।
১৭১৩.    যুহাযর ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমর (রহঃ) কুতায়বা ইবনু সাঈদ এবং মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল মূসায়্যিবী (রহঃ) ... সকলেই নাফি (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বোক্ত (ইয়াহয়া সনদের) মালিক (রহঃ) এর হাদীসের অর্থসস্পন্ন হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে (মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ও সহযোগী সনদের) মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) এর হাদীসে আরও আছে, "যখন কুরআনওয়ালা ব্যাক্তি (ইবাদতে) সচেষ্ট হয় এবং রাতে ও দিনে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকে তখন সে তা স্মরণ রাখতে পারে, আর তার জন্য যত্নবান না হলে তা ভুলে যায়।"

পরিচ্ছেদঃ ১৩. কুরআন অধ্যয়ন ও শিক্ষাদানে রত ব্যক্তির ফযীলত এবং যে ব্যক্তি ফিক্‌হ ইত্যাদির সূক্ষ্ম জ্ঞান আরোহন করে, তদানুসারে আমল করে ও শিক্ষা দেয়, তার ফযীলত


১৭১৪.    যুহায়র ইবনু হারব, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তাদের যে কোন ব্যাক্তির জন্য এমন করে বলা কতই নিন্দনীয় যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি।" বরং (এরূপ না বলে সে বলবে যে,) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কুরআন মুখস্ত করতে থাকবে। কেননা, উটের রশি হতে উটের পলায়নের চেয়ে অবশ্যই তা (কুরআন) মানুষের হৃদয় হতে অধিক হারে পলায়নকারী ও বিচ্ছিন্নতা প্রয়াসী।

পরিচ্ছেদঃ ১. কুরআন সংরক্ষণে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ; অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি বলার অপচন্দনীয়তা ও আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলার বৈধতা প্রসঙ্গে


১৭১৫.    ইবনু নুমায়র এবং ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... শাকীক (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এ মুসহাফ (পবিত্র গ্রন্থ)-সমূহের এবং অনেক সময় বলেছেন, এ কুরআনের হিফাযত সংরক্ষন করবে। কেননা, দড়ি ছিড়ে উট (পশু) পলায়নের চেয়ে তা মানুষের হৃদয়পট থেকে অধিক পলায়নকারী। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি বলবে না; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
১৭১৬.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... শাকীক ইবনু সালামা (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে আমি বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, মানুষের জন্য এরূপ বলা খুবই নিন্দনীয় যে, আমি অমুক অমুক সূরা ভুলে গিয়েছি, কিংবা আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি। বরং তাকে ভুলয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৭১৭.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ, আল আশ'আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ কুরআন সংরক্ষণে তোমরা যত্নবান হও। কেননা যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার কসম! অবশ্যই রশি ছিড়ে পলায়নরত উটের তুলনায় তা অধিক পলায়নপর। এ হাদীসের ভাষ্য ইবনু বাররাদ (রহঃ) এর।

পরিচ্ছেদঃ ২. কুরআন পাঠের আওয়াযে মাধুর্য সৃষ্টি করা মুস্তাহাব


১৭১৮.    আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হাবর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি সনদটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ কোন কিছুর প্রতি এত কান দেন না (সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন না) যত কান দেন কোন নবীর প্রতি, যিনি মধুর কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করেন।
১৭১৯.    হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া ও ইউনুস ইবনু আবদুল আালা (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে ঐ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেছেন, যেমন কান দিয়ে থাকেন মধূর সুরে কুরআন পাঠকারী কোন নাবীর প্রতি।
১৭২০.    বিশর ইবনুল হাকাম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ অত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন না, যত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে থাকেন সুকণ্ঠ কোন নাবীর প্রতি, যিনি সূর দিয়ে কুরআন পাঠ করেন এবং সশব্দে তা পাঠ করতে থাকেন।
১৭২১.    ইবনু ওয়াহবের ভাতিজা (রহঃ) ... ইবনুল হাদ (রহঃ) সূত্রে ঐ সনদে অবিকল অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন" বলেন নি।
১৭২২.    হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা শব্দ করে সূর দিয়ে কুরআন তিলাওয়াতকারী নবীর প্রতি কান দেয়ার মত অন্য কোন কিছুর প্রতি কান লাগান না।
১৭২৩.    ইয়াহয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইয়াহয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
১৭২৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... বুবায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু কায়স কিংবা তিনি বলেছিলেন, (আবূ মূসা) আল-আশ'আরীকে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) পরিবারের বাশরী সমুহের একটি বাশরী (অর্থাৎ সুমধুর সূর) দান করা হয়েছে।
১৭২৫.    দাঊদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি যদি আমাকে দেখতে, গত রাতে যখন আমি তোমার কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম (তখন আমার মনে হয়েছিল যে,) তোমাকে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর বাশরীসমূহের (সূরমালার) একটি বাশরী (সুর) দান করা হয়েছে।
১৭২৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মক্কা) বিজয়ের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন একটি সফরে তাঁর বাহনে থেকে সূরা ফাতহ তিলাওয়াত করছিলেন এবং তিলাওয়াতে তিনি "তারজী" (কণ্ঠনালীতে আওয়াযের উত্থান পতন) করছিলেন। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, আমার কাছে লোকের ভিড় জমে যাওয়ার আশংকা না থাকলে আমি তোমাদের (ছাত্রদের) সামনে তার কিরা'আত নকল করে শোনাতাম।
১৭২৭.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে সূরা আল ফাতহ তিলাওয়াত করতে দেখলাম। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, (এ হাদীস বর্ণনার সময়) ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিলাওয়াত করলে এবং তাতে গলায় আওয়াযের দোলা তুললেন। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, লোকেদের ভীড়ের আশংকা না হলে আমি তোমাদের জন্য ঐ (কিরাআতের) বিষয়টি তুলে ধরতাম যা ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উদ্বৃত করেছেন।
১৭২৮.    ইয়াহয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) এবং উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) সুত্রে পূর্বোক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে, (ইয়াহ্‌য়া সনদের) খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ) এর এর হাদীসে রয়েছে একটি বাহনের উপরে বসা অবস্থায় তিনি সূরা ফাতহ তিলাওয়াত করছিলেন ...…।

পরিচ্ছেদঃ ৩. কুরআন তিলাওয়াতের সময় সাকীনা বা প্রশান্তি অবতরন


১৭২৯.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি সূরা কাহফ তিলাওয়াত করছিল। আর দু' গাছি পাকানো দড়ি দিয়ে একটি ঘোড়া তার কাছে বাধা ছিল। সে সময় এক খন্ড মেঘ এসে তাকে আচ্ছাদিত করে ফেলল এবং তা চক্কর দিতে লাগল ও নিকটবর্তী হতে লাগল। তার ঘোড়াটি সে কারণে ভয়ে চটপট করছিল। ভোর হলে লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এসে বিষয়টি আলোচনা করল। তখন তিনি বললেন, ও হল সাকীনা (প্রশান্তি) যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে অবর্তীর্ণ হয়েছিল।
১৭৩০.    ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি সূরা কাহফ পাঠ করলেন। এ সময় তার বাড়ীতে একটি পশু বাধা ছিল। তা পলায়ন করতে উদ্যত হল। তখন সে তাকিয়ে দেখল যে একখন্ড মেঘ তাকে আচ্ছাদিত করে নিয়েছে। এ ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করা হলে তিনি বললেন এ হচ্ছে সাকীনা (প্রশান্তি), কুরআন তিলাওয়াতের সময় বা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে অবর্তীর্ণ হয়েছিল।
১৭৩১.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... বারা (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে তারা تَنْقُزُ শব্দটি বলেছেন।
১৭৩২.    হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও হাজ্জাজ ইবনুুশ শাইর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) যখন তাঁর আস্তাবলে তিলাওয়াত করছিলেন, তখন হঠাৎ তার ঘোড়াটি অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগল। তিনি আবার তিলাওয়াত করলে ঘোড়া আবার অস্থির হয়ে উঠল। তিনি পূনরায় তিলাওয়াত করলে ঘোড়াটি আবারও অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগল। উসায়দ (রাঃ) বলেন, আমার এখন আশংকা হল যে, ঘোড়া (ওখানে কাছেই শুয়ে থাকা আমার পূত্র) ইয়াহয়াকে মাড়িয়ে দিতে পারে তাই আমি উঠে তার (ঘোড়ার) কাছে গেলাম। তখন দেখলাম যে, আমার মাথার উপরে একটি প্রদীপের মত কিছু, যার মাঝে প্রদীপের ন্যায় কিছু শূন্যে লটকে রয়েছে। পরে আমি তা আর দেখলাম না। 

উসায়দ (রাঃ) বলেন, সকালে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! গত মাঝরাতে যখন আমি আমার আস্তাবলে তিলাওয়াত করছিলাম, হঠাৎ আমার ঘোড়া অস্থির হয়ে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবনু হুযায়র! পাঠ করতে থাকতে, তিনি বললেন, আমি পাঠ করতে থাকলাম, সে আবার অস্থির হয়ে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবনু হুযায়র! পাঠ করতে থাকতে, তিনি বলেন, আমি আবার পাঠ করতে থাকলাম, ঘোড়াটি আবারো অস্থির হয়ে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবনু হুযায়র! তুমি পাঠ করতে থাকতে! ইবনু হুযায়র (রাঃ) বলেন, তখন আমি পাঠ সমাপন করলাম। 

(আমার ছেলে) ইয়াহয়া ছিল ঘোড়াটির কাছে। তাই আমার আশংকা হল যে, সে তাকে মাড়িয়ে দিতে পারে। আমি তখন দেখলাম একটি চাঁদোয়ার মত যার নিচে যেন অনেক প্রদীপ ঝূলে রয়েছে। পরে আর তা দেখতে পেলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, এরা ছিলেন ফিরিশতা। তারা তোমার তিলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। তুমি যদি তিলাওয়াত করতে থাকতে তবে তারা সকাল পর্যন্ত থেমে যেত এবং লোকেরা তা দেখতে পেত তাঁরা তাদের নিকট হতে আত্মগোপন করত না।

পরিচ্ছেদঃ ৪. হাফিযুল কুরআনের মর্যাদা


১৭৩৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তারা দৃষ্টান্ত হচ্ছে উতরুজ্জা (লেবু তুল্য ফল) যার ঘ্রাণ মনোহর এবং যার স্বাদও আকর্ষনিয়। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে খুরমা, যার (বিশেষ কোন) ঘ্রাণ নেই এবং তার স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত সুগন্ধী ফূল। যার ঘাণ আকর্ষনীয় অথচ সা’দ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে না তার দৃষ্টান্ত মাকাল। যার কোন ঘ্রাণ নেই এবং স্বাদও নেই।
১৭৩৪.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ এবং মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) হাতে উল্লিখিত সনদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে (হাদ্দাব সনদের) হাম্মাম (রহঃ) এর হাদীসে 'মুনাফিক' শব্দের বদলে ‘ফাজির’ (পাপি) শব্দ রয়েছে।
১৭৩৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ উবায়দ গুবারী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআন পাঠে সুদক্ষ ব্যাক্তি পুণ্যবান, মহান দুতবর্গের (ফিরিশতাকুলের) সঙ্গী। আর যে ব্যাক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তাতে সে তো- তো, তো করে ও তার উচ্চারণ তার কাছে কঠিন মনে হয়, তার জন্য দ্বিগুন সাওয়াব।
১৭৩৬.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) এর অনুরূপ সনদে বর্ণিত হয়েছে। তবে ওয়াকী (রহঃ) এর হাদিসে বলেছেন, "আর যে ব্যাক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কঠিন অনুভূত হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুন সাওয়াব।"

পরিচ্ছেদঃ ৫. বিশিষ্ট ও দক্ষ লোকদের কুরআন তিলাওয়াত করে শোনানো মুস্তাহাব; তিলাওয়াতকারী শ্রোতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হলেও।


১৭৩৭.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই (রাঃ) কে বললেন, মহান আল্লাহ তোমাকে পড়ে শোনাবার জন্য আমাকে হুকুম করেছেন। উবাই (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা (নির্দিষ্ট করে) আপনার কাছে আমার নাম নিয়েছেন কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ আমার কাছে বিশেষ করে তোমার নাম বলেন। রাবী বলেন, উবাই (রাঃ) তখন কাঁদতে লাগলেন।
১৭৩৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেন, لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ (বায়্যিনা) সূরাটি তোমাকে শোনাবার জন্য মহান আল্লাহ আমাকে হুকুম করেছেন। উবাই (রাঃ) বললেন, আল্লাহ কি আপনার কাছে আমার নামসহ উল্লেখ করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, তখন উবাই (রাঃ) কেঁদে ফেললেন।
১৭৩৯.    ইয়াহয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই (রাঃ) কে অনুরূপ বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৬. কুরআন তিলওয়াত শোনার ফযীলত, তিলাওয়াত শোনার জন্য হাফিযুল কুরআনকে তিলওয়াত করার অনুরোধ ও তিলওয়াতকালে ক্রন্দন এবং মনোনিবেশ করা


১৭৪০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাও। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে আমি পড়ে শোনাব, অথচ আপনার উপরেই তো তা নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, অন্য কারো নিকট থেকে শুনতে আমার ভাল লাগে। তখন আমি সূরা নিসা পাঠ করলাম যখন فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا‏ “যখন প্রত্যেক উম্মাত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবে এবং তোমাকে ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উপস্থিত করব তখন অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে? (নিসাঃ ৪১) এ আয়াত পৌঁছলাম, আমি মাথা তুললাম কিংবা আমার পাশের এক ব্যাক্তি আমাকে হাত দিয়ে চাপ দিলে আমি আমার মাখা তুললাম। দেখলাম, তাঁর অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।
১৭৪১.    হান্নাদ ইবনু সারী ও মিনজাব ইবনু হারিস তামীমী (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। হান্নাদ (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় বাড়িয়ে বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমাকে পড়ে শোনাও যখন তিনি মিম্বরের উপর ছিলেন।
১৭৪২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে বললেন, আমাকে পড়ে শোনাও। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আপনাকে আমি পড়ে শোনাব? অথচ আপনার উপরেই তো তা নাযিল হয়েছে! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি অন্যের নিকট থেকে তা শুনতে পছন্দ করি। বর্ণনাকারী (ইবরাহীম) বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) সূরা নিসার শুরু হতে فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا‏ (সূরা নিসাঃ ৪১ আয়াত) পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পড়ে শোনালেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে ফেঁলেন। 

মিস’আর (রহঃ) ... ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী যতক্ষন তাদের মাঝে বর্তমান ছিলাম" কিংবা (রাবী মিস’আরের সন্দেহ) তিনি বলেছেন "যতক্ষন তাদের মাঝে ছিলাম।"
১৭৪৩.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘হিমস’ এ অবস্থান করছিলাম। তখন উপস্থিত এক ব্যাক্তি আমাকে বলল, আমাদের তিলাওয়াত করে শোনান। আমি তখন তাদের সামনে সূরা ইউসুফ তিলাওয়াত করে শোনালাম। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তখন উপস্থিত দলের এক ব্যাক্তি আমাকে বললেন, "আল্লাহর কসম! এভাবে তো নাযিল করা হয়নি।" আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, তোমার জন্য আফসোস! আমি তো (খোদ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা পড়ে শুনিয়েছি। তিনি বললেন, ভালো পড়েছ। আমি তার সঙ্গে কথা বলাছিলাম, এ অবস্থায় হঠাৎ তার মুখ থেকে মদের দুর্গন্ধ পেলাম। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, তুমি মদ পান কর আর আল্লাহর কিতাবকে বেঠিক প্রতিপন্ন করছ? (আচ্ছা) তুমি যেতে পারছ না, যতক্ষন না আমি তোমাকে চাবুকের ঘা লাগাচ্ছি! আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাকে (মদ পান করার অপরাধে) হদ্দ ও দন্ডের চাবুক লাগালাম।
১৭৪৪.    ইসহাক ইবন ইবরাহীম, আলী ইবনু খাশরাম এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী আবূ মু’আবিয়া (রহঃ) এর হাদীসে "তিনি আমাকে বলেছেন, ভালো পড়েছ" কথাটির উল্লেখ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৭. সালাতে কুরআন তিলওয়াত এবং কুরআন শিক্ষা করার ফযীলত


১৭৪৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এ কথা পছন্দ করে যে, যখন সে তার বাড়ীতে ফিরে যায় তখন সেখানে সে তিনটি গর্ভবর্তী তাজা উট পেয়ে যাবে? আমরা বললাম জ্বী, হ্যাঁ! তিনি বললেন তা হলে তিনটি আয়াত যা তোমাদের কেউ তার সালাতে পাঠ করে তা তার জন্য তিনটি গর্ভবর্তী মোটা তাজা উটের চেয়ে উত্তম।
১৭৪৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসলেন, আমরা তখন সুফফায় ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমনটা পছন্দ করবে যে, সে প্রতিদিন সকালে ‘বুতহান’ কিংবা আকীক নামক স্থানে যাবে এবং সেখান থেকে কোন পাপের আশ্রয় না নিয়ে কিংবা কোন প্রকার আত্নীয়তা ছিন্ন না করে বড় বড় কূঁজবিশিষ্ট দুটি উটনী নিয়ে আসবে? আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তা পছন্দ করি। তিনি বললেন, তবে, তোমাদের যে কেউ সকাল বেলা মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত শিখে অথবা তিলাওয়াত করে যা তার জন্য দুটি উটনীর চেয়ে উত্তম। আর তিন আয়াত তার জন্য তিনটি উটনীর চেয়ে উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনীর চেয়ে উত্তম। এমনিভাবে যত আয়াত তিলাওয়াত করবে ততো উটনীর চেয়ে উত্তম।

পরিচ্ছেদঃ ৮. কুরআন তিলওয়াত এবং সূরা বাকারা তিলওয়াতের ফযীলত


১৭৪৭.    হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ... আবূ উমামা বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করবে। কেননা, কিয়ামতের দিন তা তিলাওয়াতকারীদের জন্য সুপারিশকারীরুপে উপস্থিত হবে। সুপারিশকারী দু সমুজ্জ্বল সুরা বাকারা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করবে। কেননা, এ দুটি কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে যেন সে দুটি ‘গামামা’ কিংবা (তিনি বলেছিলেন) সে দুটি দুটি ‘গায়ায়া’ (মেঘ) কিংবা যেন সে দুটি ডানা বিস্তারকারী দুটি পাখীর ঝাঁক যারা তাদের তিলাওয়াতকারীদের পক্ষে সাহায্যকারী হবে। তোমরা সূরা বাকারা তিলাওয়াত করবে। কেননা, তা তিলাওয়াত করাতে বরকত রয়েছে। এবং তা বর্জন করা আফসোসের। কারণ বাতিলপন্থীরা তার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। (সনদের মধ্যবর্তী রাবী) মু’আবিয়া (রহঃ) বলেন, আমার কাছে এ তথ্য পৌছেছে যে, “বাতালা” (বাতিলপন্থীরা) অর্থ হল যাদুকর।
১৭৪৮.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আাবু দারিমী (রহঃ) ... মুআবিয়া (রহঃ) সুত্রে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি (তুলনার) উভয় স্থানে এবং সে দুটি যেন, বলেছেন এবং তিনি মুআবিয়া (রহঃ) এর উক্তি ‘আমার কাছে তথ্য পৌছেছে’... উল্লেখ করেননি।
১৭৪৯.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাওয়াস ইবনু সাম’আন কিলাবী (রাঃ) বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন ওয়ালাদের যারা তদনূসারে আমল করেছে উপস্থিত করা হবে, সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান তার সামনে পেশ করা হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটির জন্য তিনটি উপমা উল্লেখ করেছেন যেগুলো এখনও আমি ভুলে যাইনি। তিনি বললেন, সে দুঁটি যেন দুটি ‘গামামা’ বাদল কিংবা দুঁটি কাল শামিয়ানা যার মাঝে রয়েছে দ্যুতি; কিংবা সে দুটি যেন পাখা বিস্তারকারী পাখীর দুঁটি ঝাঁক যারা তিলাওয়াতকারীদের জন্য সাহায্যকারী হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৯. সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ অংশের ফযীলত, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াতে উৎসাহ দান


১৭৫০.    হাসান ইবনুর রাবী ও আহমাদ ইবনু জাওয়াস হানাফী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপবিষ্ট ছিলেন, ইত্যবসরে উপরের দিকে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজের মাথা তুললেন এবং বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা যা আজই খুলে দেয়া হল; আজকের দিন ব্যতীত কখনও তা খোলা হয়নি। তখন সে দরজা দিয়ে একজন ফিরিশতা অবতরণ করলেন। তিনি বললেন, ইনি একজন ফিরিশতা যিনি পৃথিবীতে অবতরণ করলেন, আজ ছাড়া অন্য কখনো তিনি অবতরণ করেননি। এরপর উক্ত ফিরিশতা সালাম করে বললেন, দুটি নূর এর সুসংবাদ গ্রহণ করুন যা আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং যা আপনার আগে আর কোন নাবীকে দেয়া হয়নি। তা হল সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারা’র শেষাংশ। এ দু' টির যে কোন হরফ আপনি পাঠ করবেন তা আপনাকে দিয়েই দেয়া হবে।
১৭৫১.    আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বায়তুল্লাহর নিকটে আমি আবূ মাসউদ (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে বললাম, সূরা বাকারার দুটি আয়াত সম্পর্কে আপনার পক্ষ হতে এক হাদীসের খবর আমার কাছে পৌছেছে। তিনি বলেন, হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াতে যে ব্যাক্তি কোন রাতে তিলাওয়াত করবে আয়াত দুটি তার জন্য যথেষ্ট হবে।
১৭৫২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মানসুর (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১৭৫৩.    মিনজাব ইবনু হারিস তামীমী (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ আয়াতদ্বয় রাতে পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। রাবী আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, পরে আমি আবূ মাসউদ (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম, তখন তিনি বায়তূল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। আমি তাকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাকে হাদীসটি শুনিয়ে দিলেন।
১৭৫৪.    আলী ইবনু খাশরাম ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
১৭৫৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১০. সূরা কাহ্‌ফ এবং আয়াতুল কুরসীর ফযীলত


১৭৫৬.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।
১৭৫৭.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী শু’বা (রহঃ) বলেছেন, সূরা কাহফের শেষ অংশ থেকে এবং রাবী হাম্মাম (রহঃ) বলেছেন, সূরা কাহফের শুরু হতে যেমন হিশাম (রহঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে।
১৭৫৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আবূল মুনযির! তুমি জান কি তোমার কাছে যে আল্লাহর কিতাব রয়েছে এর কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান? উবাই (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবার) বললেন, হে আবূল মুনযির তুমি জান কি, তোমার কাছে আল্লাহর যে কিতাব রয়েছে এর কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান? উবাই (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ (অর্থাৎ আয়াতুল কুরসী) উবাই (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হাত মেরে বললেন, আবূল মুনযির! মুবারক হোক তোমার জন্য ইলম।

পরিচ্ছেদঃ ১১. সূরা ইখলাস পাঠের ফযীলত


১৭৫৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এতে অক্ষম যে, এক রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়বে? সাহাবাগণ বললেন, কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ কেমন করে পড়তে পারব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
১৭৬০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তবে দু' জনের হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানীর এ অংশও রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা কুরআনকে তিন-ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ কে কুরআনের অংশ সমুহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে সাব্যস্ত করেছেন।
১৭৬১.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সমবেত হও! আমি তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ব। ফলে যাদের পক্ষে সম্ভব তারা সমবেত হল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন এবং তিলাওয়াত করে আবার ঘরে গেলেন। তখন আমাদের একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, মনে হয়, এই যে আসমান হতে (এখনই) কোন খবর পড়েছে এবং তাই তাঁকে (ঘরে) প্রবেশ করিয়েছে। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে বললেন, আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করব। শোন সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
১৭৬২.    ওয়াসিল ইবনু আব্দুল আ'লা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে এসে বললেন, আমি তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করছি। তিনি তখন قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ‏ শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন।
১৭৬৩.    আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওয়হব (র) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে একটি সেনাদলের অধিনায়ক করে পাঠালেন। তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে সালাত আদায় করতে গিয়ে তার কিরাআত قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ দ্বারা শেষ করতেন। তারা ফিরে এলে বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উল্লেখ করলেন। তখন তিনি বললেন তাঁকে জিজ্ঞাসা কর সে কিসের জন্য এমন করে থাকে? তখন তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কেননা, এ সূরাটি রাহমানের গুনাবলিলী সম্বলিত। কাজেই আমি তা পাঠ করতে ভালবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালবাসেন।

পরিচ্ছেদঃ ১২. মু’আব্বিযাতায়ন (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পাঠের ফযীলত


১৭৬৪.    কুতায়াবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে আয়াতসমূহের প্রতি লক্ষ্য করেছ কি, যা আজ রাতে অবর্তীর্ণ হয়েছে। সেগুলোর সদৃশ আর কখনও দেখা যায়নি। (তা হল) "কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক" ও "কুল আউযূ বি রাব্বিন নাস"।
১৭৬৫.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উপরে এমন কতক আয়াত নাযিল করা হয়েছে যার মত আর কখনও দেখা যায়নি। তা হল মু'আববিযাতাইন।
১৭৬৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইসমাঈল (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ উসামা (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে রয়েছে, উকবা ইবনু আমির জুহানী (রাঃ) থেকে ... এবং তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান সাহাবীগনের অন্যতম।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. কুরআন অধ্যয়ন ও শিক্ষাদানে রত ব্যক্তির ফযীলত এবং যে ব্যক্তি ফিক্‌হ ইত্যাদির সূক্ষ্ম জ্ঞান আরোহন করে, তদানুসারে আমল করে ও শিক্ষা দেয়, তার ফযীলত


১৭৬৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাসাদ (ঈর্ষা) করা যায় না। কিন্তু দু'ব্যাক্তির ব্যাপারেঃ ১. এমন এক ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ কুরআন দান করেছেন, আর সে দিন রাতের মুহুর্তগুলোতে তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ২. এমন এক ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সস্পদ দিয়েছেন, আর সে রাত দিনের মুহূর্তগুলোতে তা ব্যায় করতে থাকে।
১৭৬৮.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) বলেছেন, দুই ব্যাক্তি ব্যতীত অন্য কারো প্রতি হাসাদ (ঈর্ষা) করা যায় না। এক ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ এ কিতাব দান করেছেন এবং সে দিবারাতের মুহূর্তগুলোতে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর এক ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন এবং সে দিবারাতের মুহুর্তগুলোতে তা দান করতে থাকে।
১৭৬৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু' ব্যাক্তি ব্যতীত অন্য কারো প্রতি হাসাদ (ঈর্ষা) করা যায় নাঃ সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং তাকে তা হক পথে উজাড় করার ক্ষমতা দিয়েছেন, আর এক ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ দ্বীনের সূক্ষজ্ঞান দান করেছেন এবং সে তার আলোকে ফয়সালা করে এবং তা শিক্ষা দেয়।
১৭৭০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আমির ইবনু ওয়াসিলা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাফি ইবনু আব্দুল হারিস (রাঃ) উসফানে উমর (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করেছিলেন। উমর (রাঃ) তাকে মক্কার আমির ও শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। (পথিমধ্যে সাক্ষাতে) উমর (রাঃ) বললেন, উপত্যকাবাসীদের (মক্কাবাসীদের) জন্য কাকে ভারপ্রাপ্ত শাসনকর্তা নিয়োগ করে এসেছ? তিনি (নাফি (রাঃ) বলেন, আবযা (রাঃ) কে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইবনু আবযা আবার কে? তিনি (নাফি (রাঃ) বললেন, আমাদের আযাদকৃত গোলামদের মধ্যে একজন। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি কি একজন ক্রীতদাসকে তাদের জন্য তোমার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করে এসেছ? নাফি (রাঃ) বললেন, সে তো মহা মহীয়ান আল্লাহর কিতাবের একজন কারী (হাফিয) ও আহকামে শরীয়াত সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যাক্তি। উমর (রাঃ) বললেন, শোন! তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই তো বলেছেন যে, আল্লাহ এই কিতারের মাধ্যমে অনেক জাতির উত্থান সাধন করবেন এবং এরই কারণে অনেক জাতির পতন ঘটাবেন।
১৭৭১.    আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আমির ইবনু ওয়াসিলা লায়সী (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, নাফি ইবনু আব্দুল হারিস খুযাঈ (রাঃ) উসফানে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন...... (পূর্বোক্ত সনদের) ইবরাহীম সা’দ কর্তৃক যুহুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হওয়ার বিবরণ ও এর মর্মার্থ


১৭৭২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আব্দুর রহমান ইবনু আবদ কারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর ইবনুুূল খাত্তাব (রাঃ) কে আমি বলতে শুনেছি যে, আমি যেভাবে সূরা ফূরকান তিলাওয়াত করি, হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) কে তা থেকে ভিন্ন কায়দায় তিলাওয়াত করতে শুনলাম। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই এ সূরাটি এভাবে পড়তে আমাকে শিখিয়েছেন। আমি তখনই তাকে পাকড়াও করতে উদ্যত হয়েছিলাম। কিন্তু তাকে অবকাশ দিলাম। তিনি সালাত সমাপ্ত করলেন। এরপরই আমি তার চাঁদর দিয়ে তাঁকে পেঁচিয়ে ধরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে এসে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি একে সূরা ফুরকান পাঠ করতে শুনেছি। আপনি আমাকে যেমন পাঠ করতে শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে ভিন্নরূপ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, তাঁকে ছেড়ে দাও, (এবং তাকে বললেন) পড় তো। সে তখন ওই কিরা'আতই পড়ে শোনাল, যেমন তাঁকে আমি পড়তে শুনেছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আয়াতটি) অনুরূপ নাযিল করা হয়েছে। অতঃপর আমাকে বললেন, তুমি পড়! আমি তিলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, এ ভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত হরফে (ধরনে) নাযিল করা হয়েছে। সূতরাং যার যেভাবে সহজ হয় তোমরা তা (সেভাবে) পাঠ করবে।
১৭৭৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও আবদুর রহমান ইবনু আবদ কারী (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তারা দু'জন শুনেছেন যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত থাকাকালে একবার হিশাম ইবনু হাকীম (রাঃ) কে সূরা ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনলাম। হাদীসটির পূর্বানুরূপ বিবরণ দিয়েছেন। তবে তিনি এতে আরো বলেছেন, "সালাতের মাঝেই আমি তাকে পাকড়াও করতে উদ্যত হয়েছিলাম। পরে সালাম করা পর্যন্ত কোন রকমে সবর করে থাকলাম।"
১৭৭৪.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে ইউনূস (রহঃ) এর রিওয়ায়াতের অনুরূপ তারই সনদে বর্ননা করেছেন।
১৭৭৫.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরীল (আঃ) (প্রথমে) আমাকে এক হরফে কুরআন পাঠ করালে আমি তাঁর কাছে (আরো বৃদ্ধির) আবদার জানালাম। এভাবে আমি তাঁর কাছে কিরআতের ধরন বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করতে থাকি তিনিও প্রতিবার বাড়াতে থাকেন। অবশেষে সাত হরফে গিয়ে পরিসমাপ্তি হয়। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেছেন, আমার কাছে রিওয়ায়াত পৌছেছে যে, সে সাত হরফ সে সব নির্দেশের ব্যাপারে প্রযোজ্য যেখানে অর্থ এক হয়, হালাল-হারামের ব্যাপারে কোনো বিরোধ সৃষ্টি করে না।
১৭৭৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে ঐ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
১৭৭৭.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে ছিলাম। এক ব্যাক্তি প্রবশে করে সালাত আদায় করতে লাগল। সে এমন এক ধরনের কিরাআত করতে লাগল আমার কাছে অভিনব মনে হল। পরে আর একজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী ব্যাক্তি হতে ভিন্ন ধরনের কিরআত করতে লাগল। সালাত শেষে আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, এ ব্যাক্তি এমন কিরআত করেছে যা আমার কাছে অভিনব ঠেকেছে এবং অন্যজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী জন হতে ভিন্ন কিরআত পাঠ করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে (কিরআত পাঠ করতে) নির্দেশ দিলেন। তারা উভয়েই কিরআত পাঠ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দু' জনের (কিরআতের) ধরনকে সুন্দর বললেন। ফলে আমার মনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুরআনের প্রতি মিথ্যা অবিশ্বাস ও সন্দেহের উন্মেষ দেখা দিল। এমন কি জাহিলী যুগেও আমার এমন খটকা জাগেনি। 

আমার ভেতরে সৃষ্ট খটকা অবলোকন করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে সজোরে আঘাত করলেন। ফলে আমি ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম এবং যেন আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহকে দেখছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে উবাই! আমার কাছে[(জিবরীল (আলাইহিস সালাম)] কে প্রেরণ করা হয়েছে যে, আমি যেন কুরআন এক হরফে তিলাওয়াত করি। আমি তখন তাঁর কাছে পূনরায় অনুরোধ করলাম আমার উম্মাতের জন্য সহজ করুন। দ্বিতীয়বার আমাকে বলা হল যে, দুই হরফে তা তিলাওয়াত করবে। তখন তাঁর কাছে আবার অনুরোধ করলাম, আমার উম্মাতের জন্য সহজ করে দিতে। তৃতীয়বার আমাকে বলা হল যে সাত হরফে তা তিলাওয়াত করবে এবং যতবার আপনাকে জবাব দিয়েছি তার প্রতিটির বদলে আপনার জন্য একটি প্রার্থনা বরাদ্দ করা হল যা আপনি করতে পারতেন। আমি বললাম হে আল্লাহ্‌! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় প্রার্থনাটি বিলম্বিত করে রেখেছি সে দিনের জন্য যে দিন সারা সৃষ্টি এমন কি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)ও আমার প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
১৭৭৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আব্দুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) খরব দিয়েছেন যে, তিনি মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন। তখনই এ ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, নামায পড়ল এবং কিরআত পাঠ করলেন যে...... ইবনু নুমায়র (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
১৭৭৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ গিফারের জলাভূমি (ডোবা) এর কাছে ছিলেন। উবাই (রাঃ) বলেন, তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর নিকটে এসে বললেন, আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন যে আপনার উম্মাত এক ধরনের কুরআন পাঠ করবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহর কাছে তার মার্জনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার উম্মাততো এ হুকুম পালনে সমর্থ হবে না। পরে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দ্বিতীয়বার তার কাছে আগমন করে বললেন, আল্লাহ আপনাকে হুকুম করেছেন যে, আপনার উম্মাত দু’ধরনের কুরআন পাঠ করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহর সকাশে তার মার্জনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমার উম্মাততো তা পালনে সমর্থ হবে না। তারপর তিনি তাঁর কাছে তৃতীয়বার এসে বললেন, আল্লাহ আপনাকে হুকুম করেছেন যে, আপনার উম্মাত তিন হরফে কুরআন পাঠ করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহর সমীপে তাঁর মার্জনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আমার উম্মাত তো এটি পালনের সমর্থ রাখে না। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চতূর্থবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, আল্লাহ আপনাকে হুকুম করেছেন যে, আপনার উম্মাত সাত হরফে কুরআন পাঠ করবে এবং এর যে কোন হরফ ও ধরন অনুসারে তারা পাঠ করলে তা-ই যথার্থ হবে।
১৭৮০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) সুত্রে সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. ধীরস্থিরতার সাথে কিরা’আত পড়া। অতিদ্রুত পাঠ বর্জন করা এবং একরাক’আতে দুই ও ততোধিক সূরা পড়ার বৈধতা


১৭৮১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) একত্রে আবূ ওয়াইল (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাহীক ইবনু সিনান নামের এক ব্যাক্তি আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) এর কাছে এসে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! এ শব্দটি আপনি কি ভাবে পাঠ করে থাকেন "আলিফ" সহকারে নাকি "ইয়া" সহকারে অর্থাৎ مِنْ مَاءٍ غَيْرِ آسِنٍ না مِنْ مَاءٍ غَيْرِ يَاسِنٍ আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আর এ শব্দটি ছাড়া বাকী কুরআনের সবটাই তুমি আয়ত্ত করে ফেলেছ? সে বলল, আমি তো মুফাসসাল (সূরাসমূহ) এক রাকআতেই পড়ে থাকি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কবিতার ফড়ফড়ানির ন্যায় ফড়ফড় করে কী? 

একদল লোক কুরআন পাঠ করে থাকে যা তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করে না। তবে যখন তা কলবে পতিত হয় এবং তা তাতে দৃঢ় অবস্থান নেয় তখনই তা উপকারে আসে। উত্তম সালাত হল রুকু ও সিজদা (-র আধিক্য)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাকআতে যে সদৃশ্য দু'টি দু'টি সূরা মিলিয়ে পাঠ করতেন আমি সেগুলোর কথা ভালভাবেই জানি। 

অতঃপর আবদুল্লাহ (রাঃ) উঠে দাঁড়ালে আলকামা (রহঃ) তাঁর পিছনে পিছনে প্রবেশ করলেন। পরে বের হায় এসে বললেন, তিনি আমাকে সেগুলো সম্পর্কে অবগত করেছেন। (এ ছিল আবূ বাকর (রহঃ) এর বিবরণ) আর ইবনু নুমায়র (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় বলেছেন, বনূ বাজীলার এক ব্যাক্তি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সাথে আসল। তিনি নাহীক ইবনু সিনান (নামটি) বলেন নি।
১৭৮২.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাহীক ইবনু সিনান নামে এক ব্যাক্তি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে এলেন (পূর্ববর্তী সনদের) ওয়াকী (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। তবে তিনি বলেছেন, পরে আলকামা (রহঃ) তাঁর কাছে প্রবেশ করার জন্য আসলেন। আমরা তাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক'আতে যে সদৃশ সূরাগুলো (র দু'টি করে) তিলাওয়াত করতেন সে বিষয় আপনি তাকে (আবদুল্লাহকে) জিজ্ঞাসা করুন। তখন আলকামা (রহঃ) তাঁর কাছে গেলেন এবং পরে আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেন, তা হল আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কুরআন সংকলনের বিশটি মুফাসসাল সূরা।
১৭৮৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে পূর্ববর্তী দু'জনের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বললেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি সে নযীর সূরাগুলো জানি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতেন, দুই সূরা প্রতি রাক’আতে, বিশটি সূরা দশ রাক'আতে।
১৭৮৪.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, একদিন সকালে (ফজরের) সালাত আদায়ের পরে আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। আমরা দরজায় দাঁড়িয়ে সালাম করলে তিনি আমাদের অনুমতি দিলেন। রাবী আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন, আমরা কিছুক্ষণ দরজায় অবস্থান করলাম। রাবী বলেন, তখন বেরিয়ে এসে বলল, আপনারা প্রবেশ করছেন না কেন? আমরা তখন প্রবেশ করলাম। তিনি (আবদুল্লাহ) বসে বসে তাসবীহ পড়ছেন। তিনি বললেন, তোমাদের অনুমতি দেওয়া সত্তেও কিসে তোমাদের প্রবেশে বাধা দিয়েছিল? তখন আমরা বললাম, না (তেমন কিছু নয়) তবে কিনা আমরা ধারণা করেছিলাম যে, ঘরের কেউ হয়ত ঘুমিয়ে রয়েছে। 

তিনি বললেন, ইবনু উাম্মু আবদ এর পরিবারে তোমরা আলসেমী ও উদাসীনতার ধারণা করলে? রাবী (ওয়াইল) বলেন, তারপর তিনি তাসবীহ পাঠ শুরু করলেন। পরে যখন ধারণা করলেন যে সূর্য উদিত হয়েছে, তখন বললেন, হে দাসী! দেখ তো সূর্য উঠেছে কি না? রাবী বলেন, সে নযর করে দেখল যে, তখনও সূর্য উঠেনি। তিনি আবার তাসবীহ পাঠ শুরু করলেন। অবশেষে যখন তাঁর ধারণা হল যে সূর্য উদিত হয়েছে, তখন বললেন, হে দাসী! দেখ তো সূর্য উঠেছে কি? তখন সে নযর করে দেখতে পেল যে, তা উদিত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, সমস্ত প্রশংসা সেই সত্তার যিনি আমাদের এ দিনটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। 

[মাহদী (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা যে, আবদুল্লাহ (রাঃ) আরও বলেছেন] এবং তিনি আমাদের পাপের কারনে আমাদের ধ্বংস করে দেননি। রাবী বলেন, তখন (উপস্থিত) দলের একজন বলল, গতরাতে আমি (সালাতে) মূফাসসাল সম্পূর্ণটা পাঠ করেছি। রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কবিতার মত দ্রুত? আমর তো সেই জোড়া জোড়া সূরাগুলো আছে যেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতেন। মুফাসসালের আঠারটি সূরা এবং হা মীম শ্রেণীর দু'টি সূরা।
১৭৮৫.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাহিক ইবনু সিনান (রহঃ) নামে পরিচিত বনূ বাজীলার এক ব্যাক্তি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে এসে বলল, আমি এক রাকআতেই মুফাসসাল সূরা পাঠ করে থাকি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কবিতা আবৃতি করার ন্যায় (তাড়াতাড়ি)? আমি তো সে সদৃশ সূরাগুলোর কথা জানি, যেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাক'আতে দূই সূরা করে পাঠ করতেন ।
১৭৮৬.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আমর ইবনু মুররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবূ ওয়াইল (রহঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, এক ব্যাক্তি ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কাছে এসে বলল, আজ (গত)রাতে আমি মুফাসসাল (সূরাগুলো) সম্পূর্ণই এক রাক'আতে পড়ে ফেলেছি। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কবিতা আবৃতি করার মত তাড়াতাড়ি করে? পরে আবদুল্লাহ (রাঃ) আরো বললেন, আমি তো সে সদৃশ (সূরা) গুলো জানি, যেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিলিয়ে পাঠ করতেন। রাবী বলেন, তিনি তখন মূফাসসালভুক্ত বিশটি সূরার নাম উল্লেখ করলেন (যার) দুই দুই সূরা প্রতি রাক'আতে (পাঠ করা হত)।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. কিরা’আত সম্পর্কিত বিষয়াবলী


১৭৮৭.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখলাম এক ব্যাক্তি আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) এর কাছে প্রশ্ন করছে। তিনি তখন মসজিদে কুরআনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। লোকটি বলল, فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ আয়াতটি কি ভাবে পাঠ করেন مُدَّكِرٍ শব্দে দাল দিয়ে না যাল দিয়ে? আসওয়াদ (রহঃ) বললেন, مُدَّكِرٍ দাল দিয়ে। আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে مُدَّكِرٍ "দাল" সহকারে বলতে শুনেছি
১৭৮৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আসওয়াদ সুত্রে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি এ শব্দটি مُدَّكِرٍ (দাল) সহকারে) পাঠ করতেন।
১৭৮৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা শাম দেশে (সিরিয়ায়) গেলাম। আবূ দারদা (রাঃ) আমাদের কাছে এসে বললেন, তোমাদের মাঝে কি এমন কেউ আছে যে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কিরা'আত অনুসরণে কুরআন পাঠ করতে পারে? আমি বললাম, হ্যাঁ আমি। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ আয়াত وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى‏ কিভাবে পাঠ করতে শুনেছ? আমি বললাম আমি তাকে পড়তে শুনেছি وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى * وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى‏ আবূ দারদা (রাঃ) বললেন, আামিও আল্লাহর ‘কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে পাঠ করতে শুনেছি। কিন্তু এরা তো চাচ্ছে وَمَا خَلَقَ সহ পাঠ করি, আমি তাদের অনুরণ করব না।
১৭৯০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, আলকামা (রহঃ) সিরিয়ায় আগমন করলেন এবং মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলেন। তারপর একটি (তালিমী) হাল্‌কার দিকে অগ্রসর হয়ে সেখানে বসে পড়লেন। আলকামা (রহঃ) বলেন, তারপর এক ব্যাক্তি আগমন করলেন। আমি তার প্রতি লোকের সমীহ ও শুদ্ধাভাবে দেখতে পেলাম। আলকামা (রহঃ) বলেন, ঐ ব্যাক্তি আমার পার্শ্বে বসে পড়লেন। তারপর আমাকে বললেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) যেভাবে পড়েন তা কি তোমার স্মরণ আছে? পরবর্তী অংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ......।
১৭৯১.    আলী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) ... আলকামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ দারদা (রাঃ) এর সাথে আমার সাক্ষাত ঘটে। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কোত্থেকে? আমি বললাম, ইরাকের বাসিন্দা। তিনি বললেন, কোন অঞ্চলের? আমি বললাম, কুফার অধিবাসী। তিনি বললেন, তুমি কি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিরাআত অনুযায়ী কুরআন পাঠ করতে পার? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى পড়োতো। আলকামা (রহঃ) বলেন, আমি পড়লাম وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى * وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى * وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى (আমার পড়া শুনে) তিনি হেসে দিলেন। তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এভাবে সূরাটি পড়তে শুনেছি।
১৭৯২.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আলকামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গমন করলাম এবং আবূ দারদা (রাঃ) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটল। পরবর্তী অংশ ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. যে সকল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা নিষেধ


১৭৯৩.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের পর সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন যাবৎ না সূর্য অস্ত যায় এবং ফজরের পর সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন যাবৎ না সূর্যোদয় হয়।
১৭৯৪.    দাঊদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বহু সাহাবী হতে শুনেছি, তাঁদের মধ্যে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)ও রয়েছেন। আর তাঁদের মধ্যে তিনিই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ব্যাক্তি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর সালাত আদায় করা হতে নিষেধ করেছেন, যে পর্যন্ত না সূর্য উদিত হয়। তিনি আসরের পরও (নিষেধ করেছেন) সূর্যাস্ত না হওযা পর্যন্ত।
১৭৯৫.    যুহায়র ইবনু হারব, আবূ গাসসান মিসমায়ী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সবাই কাতাদা (রহঃ) হতে ঐ সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে সাঈদ ও হিশামের বর্ণনায় এ কথাটি অতিরিক্ত আছে "ফজরের পর সূর্য আলোকোজ্জল না হওয়া পর্যন্ত।"
১৭৯৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আসরের পর কোন সালাত নেই সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর কোন সালাত নেই সুর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত।
১৭৯৭.    ইয়াইয়া ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত যাওয়ার সময় সালাত আদায় করার ইচ্ছা না করে।
১৭৯৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের সালাত সূর্যাদয় ও সূর্যাস্তের সময় আদায় করার ইচ্ছা করবে না। কেননা সূর্য শয়তানের দুটি শিং এর মাঝখানে উদিত হয়।
১৭৯৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্যের কিনারা যখন প্রকাশিত হয় তখন তোমরা সূর্য পূরাপূরি প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে বিলম্ব কর এবং যখন কিনারা অদৃশ্য হয়ে যায় তখন পূরাপূরি অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তোমরা সালাত আদায় বিলম্ব কর।
১৮০০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ বাসরা আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে মুখাম্মাস নামক স্থানে আসরের সালাত আদায় করলেন এবং বললেন, এ সালাত তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতদের কাছে পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এ সালাতকে বিনষ্ট করল। অতএব যে ব্যাক্তি এ সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হবে তাকে দ্বিগুন সাওয়ার দেয়া হবে। এ সালাতের পর অন্য কোন সালাত নেই 'শাহিদ' উদয় না হওয়া পর্যন্ত। (শাহিদ হল তারকা)
১৮০১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ বাসরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত পড়লেন। তারপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৮০২.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... উলাঈ (রহঃ) বলেন, আমি উকবা ইবনু আমির জুহানী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি সময়ে সালাত আদায় এবং মৃত ব্যাক্তিকে কবরস্থ করা হতে আমাদেরকে নিষেধ করতেন, সূর্য যখন আলোকজ্জ্বল হয়ে উদয় হতে থাকে তখন থেকে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত। যখন সূর্য ঠিক মধ্যাকাশে থাকে তখন থেকে ঢলে না পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য অস্ত যাওয়া শুরু হলে, যাবৎ না সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত হয়।
১৮০৩.    আহমাদ ইবনু জাফর আল মা'কিরী (রহঃ) ... ইকরামা (রহঃ) বলেন, শাদ্দাদ, আবূ উমামা ও ওয়াসিলার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সিরিয়া ভ্রমণকালেও আনাস (রাঃ) এর সহচর ছিলেন। তিনি তার প্রশংসা করেছেন ও তার মহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, আমর ইবনু আবাসা সুলামী (রাঃ) বলেন, আমি প্রাক ইসলাম যুগে সকল মানুষকে পথভ্রষ্ট বলে ধারণা করতাম। তারা কোন ধর্মের উপর নেই। তারা সবাই মুর্তি পূঁজা, দেব-দেবীর পূঁজা করত। তিনি বলেন, তখন আমি মক্কায় এমন এক ব্যাক্তির কথা শুনলাম যিনি বিভিন্ন সংবাদ বর্ণনা করেন। তখন আমি সাওয়ারীর উপর আরোহণ করে তাঁর নিকট এলাম এবং আমি জানতে পারলাম যে তিনি জনসমাবেশ থেকে নিজকে দুরে রাখেন। তাঁর কাওম তাঁর উপর নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মক্কায় তার নিকট পৌছিলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার পরিচয় কি? 

তিনি বললেন, আমি নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহ আপনাকে কি দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আমাকে আত্নীয়তার বন্ধন সুদূঢ় করা, দেব-দেবী ও মূর্তি ভেঙ্গে দেওয়া, আল্লাহকে এক বলে জানা এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছু শরীক না করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কারা আছে? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন ব্যাক্তি ও একজন কৃতদাস। তিনি বলেন যে, তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তাদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হাত চাই। তিনি বললেন, বর্তমান অবস্থায় তুমি তা পারবে না। তুমি আমার অবস্থা ও লোকজনের অবস্থা কি দেখছ না? তুমি বরং পরিজনদের কাছে ফিরে যাও। যখন আমি বিজয় লাভ করেছি বলে শুনতে পাবে তখন আমার কাছে এসো। 

তিনি বললেন, আমি পরিজনদের কাছে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনায় গমন করলেন। তখন আমি পরিজনদের মাঝে অবস্থান করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় গমন করার পর থেকে আমি সর্বদা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর এবং মানুষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। মদিনাবাসীদের একদল লোক আমার কাছে এলেন। তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। যে ব্যাক্তি মদিনায় আগমন করেছেন তিনি কি করছেন, তাঁর অবস্থা কি? তারা বললেন, লোকজন অতি দ্রুত তাঁর সাহচর্যে যাচ্ছে তাঁর কাওম তাঁকে হত্যা করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তারা সফলকাম হয়নি। আমি এ কথা শুলে মদিনায় গেলাম এবং তাঁর কাছে পৌছলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তুমি সে ব্যাক্তি যে আমার সাথে মক্কায় সাক্ষাৎ করেছিলে। 

(বর্ণনাকারী) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, ইয়া-নাবী আল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন, অথচ আমি তা জানি না, তা আমাকে শিক্ষা দিন। আমাকে সালাত সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, ফজরের সালাত আদায় করবে। এরপর সূর্য উদিত হয়ে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত তুমি সালাত থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য যখন উদিত হয় তখন সেটা উদিত হয় শয়তানের দু' শিং-এর মাঝখান দিয়ে। সে সময়ে কাফির তাকে সিজদা করে। এরপর সালাত আদায় কর, তীরের ছায়া তার সমান না হওয়া পর্যন্ত। সালাতে ফিরিশতাগণের উপস্থিতি এবং সাক্ষ্যের ব্যাপার রয়েছে। এরপর সালাত থেকে বিরত থাকো কেননা এ সময়ে জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর যখন ছায়ায় পরিবর্তন শুরু হয় তখন সালাত পড়তে থাক। ফিরিশতাগণ সালাতে উপস্থিত থাকেন। অর্থাৎ আসরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত, তারপর সালাত হতে বিরত থাক সূর্য অস্তমিত না যাওয়া পর্যন্ত। কেননা সূর্য শয়তানের দু'শিং-এর মধ্যে দিয়ে অস্ত যায়। ঐ সময় কাফিররা তাকে সিজদা করে। 

রাবী বলেন,আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উযূ (ওজু/অজু/অযু) সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কোন ব্যাক্তির কাছে যখন ওযুর পানি পেশ করা হয়, এরপর সে কুলি করে ও নাকে পানি দেয় ও তা পরিষ্কার করে। তখন তার মুখমন্ডলের মূখ গহব্বর ও নাকের সকল গুনাহ ঝরে যায়। তারপর যখন সে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে মুখমন্ডল ধোয় তখন মুখমন্ডলের চারিদিক থেকে সকল গুনাহ পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর যখন দু' হাত ধোয় কুনূই পর্যন্ত, তখন তার উভয় হাতের গুনাহসমূহ আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর উভয় পা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করলে উভয় পায়ের গুনাহগুলো আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর যদি সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে, যথাযথভাবে ও তাঁর অন্তরকে আল্লাহর জন্য মুক্ত করে নেয়, তাহলে সে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে সেদিনের মত যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করোছিল। 

আমর ইবনু আবাসা (রাঃ)ও হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ উমামা (রাঃ) এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন আবূ উমামা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমর ইবনু আবাসা! ভেবে দেখ, তুমি কি বলছ! একই স্থানে ঐ ব্যাক্তিকে এত মর্যাদা দেয়া হবে? তখন আমর (রাঃ) বললেন, হে আবূ উমামা (রাঃ)! আমি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমার হাড়গুলো নরম হয়ে গিয়েছে। আমার মৃত্যুকাল নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপের কোন প্রয়োজন আমার নেই। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে না শুনতাম একবার দু'বার, তিনবার এমনকি তিনি সাত বার পর্যন্ত গণনা করলেন। তবে আমি কখনো এ হাদীস বর্ণনা করতাম না। আমি হাদীসটি সাত বারের চেয়েও অনেক বেশীবার শুনেছি।
১৮০৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) এর ধারণা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যোদয় ও সূর্যস্তের সময়কালে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
১৮০৫.    হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের পর দু' রাকআত সালাত ত্যাগ করেননি। রাবী বলেন, আয়িশা (রাঃ) আরো বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ের অপেক্ষায় থেকে না এবং সে সময় সালাত আদায় করো না।
১৮০৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহয়া তুজীবী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্দুর রহমান ইবনু আযহার এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) সবাই তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) এর নিকট প্রেরণ করলেন এবং বলে দিলেন, তাকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে এবং তাঁকে আসরের পরের দু’রাকআত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে এবং এ কথাও বলবে যে আমরা জানতে পেরেছি, আপনিও সে দু রাকআত সালাত আদায় করে থাকেন, অথচ আমাদের নিকট হাদীস পৌছেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিষেধ করেছেন। 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে এ সালাত হতে লোকদের ফিরিয়ে রাখতাম। কুরায়ব (রাঃ) বলেন, আমি তার নিকট গেলাম এবং তাঁরা যে সব কথা বলে দিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছিলেন তা সব পৌছে দিলাম। আয়িশা (রাঃ) বললেন, উম্মে সালামাকে (রাঃ) জিজ্ঞাসা কর। আমি সেখান থেকে বেরিয়ে যারা আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁদের কাছে এলাম এবং তাঁদেরকে আয়িশা (রাঃ) যা বলেছিলেন তা অবহিত করলাম। তারা আমাকে পূনরায় উম্মে সালামা (রাঃ) এর নিকট প্রেরণ করলেন, যেভাবে আমাকে পাঠিয়েছিলেন আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে। 

(আমার বক্তব্য শুনে) উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সালাত নিষেধ করতে শুনেছি, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সালাত আদায় করতে দেখেছি। যে দু' রাকআত সালাত আদায় করেছিলেন (তার ব্যাপার এই) তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হুজরায় প্রবেশ করলেন তখন আমার কাছে আনসারের বনী হারাম গোত্রের কতিপয় মহিলা বসাছিলেন। এরপর দু- রাকআত সালাত আদায় করলেন। আমি দাসীকে তাঁর নিকট পাঠালাম এবং বলে দিলাম, তুমি তার পার্শ্বে দাঁড়াবে এবং তাঁকে বলবে ইয়া রাসুলাল্লাহ! উম্মে সালামা (রাঃ) বলেছেন যে, আপনাকে এ দু- রাক'আত হতে নিষেধ করতে শুনেছেন। অথচ এখন দেখছি আপনি সে দু' রাকআত আদায় করেছেন। তখন তিনি যদি হাত দ্বারা ইশারা করেন তাহলে পিছনে সরে দাঁড়াবে। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, দাসী তাই করল। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দ্বারা ইশারা করলেন। দাসী পিছনে সরে দাঁড়াল। সালাত শেষ করে যখন বললেন, হে আবূ উমাইয়ার কন্যা! তুমি আমাকে আসরের পরের দু' রাকআত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছ? (ঘটনা হল) আমার নিকট আবদুল কায়স গোত্রের কতিপয় লোক ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছিল। তাদের সাথে ব্যস্ততার কারণে যুহরের পরের দু' রাক’আত আদায় করতে পারিনি। এ হল সেই দু' রাকআত।
১৮০৭.    ইয়াহয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের পর যে দু' রাকআত সালাত আদায় করতেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু' রাকআত আসরের পূর্বেই আদায় করতেন। অবশ্য অধিক ব্যস্ততা অথবা ভুলে যাওয়ার ক্যরণে ঐ দু' রাকআত আদায় করতে না পারায় তা আসরের পর আদায় করলেন। 

তারপর থেকে এ দু' রাক’আত নিয়মিত আদায় করতে লাগলেন। তাঁর নিয়ম ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সালাত আদায় করলে তা নিয়মিত আদায় করতেন। ইয়াহয়া ইবনু আয়্যুব (রহঃ) বলেন, ইসমাঈল বলেছেন যে, তিনি তা সর্বদা আদায় করতেন।
১৮০৮.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকটে (অবস্থানকালে) আসরের পরের দু' রাকআত কখনো ত্যাগ করেন নি।
১৮০৯.    আবূ বাকর ইবনু শায়বা (রহঃ), আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, দুটি সালাত আমার গৃহে অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ত্যাগ করেননি গোপনেও নয় প্রকাশ্যে নয়; ফজরের (ফরযের) পুর্বে দু- রাক’আত ও আসরের (ফরযের) পর দু’রাক'আত।
১৮১০.    ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আসওয়াদ ও মাসরুক (রহঃ) বলেন, আমরা আয়িশা (রাঃ) এর সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, তিনি বলেন, আমার নিকট পালাক্রমে অবস্থানের দিনটিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গৃহে ঐ দু' রাক’আত অবশ্যই আদায় করতেন। অর্থাৎ আসরের পরের দু' রাকআত।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. মাগরিবের (ফরয) সালাতের পূর্বক্ষণে দু’ রাক’আত পড়া মুস্তাহাব


১৮১১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... মুখতার ইবনু ফুলফুল (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে আসরের পর নফল সালাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, উমর (রাঃ) আসরের পর নফল সালাত পড়ার কারনে মানুষের হাতে আঘাত করতেন। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের সালাতের পূর্বক্ষণ দু’রাকআত পড়তাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এ দু-রাকআত পড়তেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পড়তে দেখেছেন কিন্তু তিনি আমাদেরকে এ সম্পর্কে আদেশ-নিষেধ কিছুই করেননি।
১৮১২.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রা,) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন মদিনা ছিলাম তখন মুয়াযযিন মাগরিবের সালাতের আযান দিলে তারা তাড়াতাড়ি করে স্তম্ভের দিকে যেয়ে দু' রাকআত সালাত আদায় করে নিত। ফলে কোন আগন্তুক মসজিদে প্রবেশ করলে মুসল্লিদের সংখ্যাধিক্য দেখে ধারণা করত যে, (ফরয) সালাত শেষ হয়ে গেছে।
১৮১৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল আল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উভয় আযানের (আযান ও ইকামত) মাঝে সালাত (নফল) রয়েছে এ কথাটি তিনবার বলেছেন। তৃতীয়বারে বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ সালাত আদায় করতে ইচ্ছুক হয়।
১৮১৪.    আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি চতূর্থবারে বলেছেন, "যে ব্যাক্তি ইচ্ছা করে।"

পরিচ্ছেদঃ ১৯. ভয়-ভীতিকালে সালাত আদায়ের পদ্ধতি


১৮১৫.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শংকার সময় দুই দলের একটি দলকে নিয়ে এক রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং অপর দলটি শক্রর মুখোমুখি থাকল। এরপর প্রথম দল ফিরে গিয়ে তাদের সাথীদের স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে শক্রর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালেন এবং দ্বিতীয় দলটি আসল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। তারপর এদল এক রাকআত আদায় করলেন এবং ঐ দল আরেক রাক’আত আদায় করলেন।
১৮১৬.    আবূর রাবী যাহরানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শংকাকালীন সালাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলতেন যে, "আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে এ সালাত আদায় করেছি।" উপরোক্ত বর্ণনানুযায়ী।
১৮১৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে ভয় ভীতির মধ্যে সালাতুল-খাওফ আদায় করলেন। তখন একটি দল তাঁর সাথে সালাতে দাঁড়ালেন এবং অন্য দল শক্রর মুকাবিলায় অবস্থান নিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের নিয়ে এক রাক’আত আদায় করলেন। এরপর তারা চলে গেলেন এবং অপর দল আগমন করলে তাঁদেরকে নিয়েও এক রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর উভয় দল এক এক রাকআত আদায় করলেন। রাবী বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) আরো বলেন, যখন ভয়-তীতি অত্যধিক হয়ে পড়ে তখন কোন বাহনে আরোহণ অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইশারায় সালাত আদায় করে নেবে।
১৮১৮.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাতুল খাওফে হাযির ছিলাম। তিনি আমাদের দু’দলে বিভক্ত করলেন। এক দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে। আর শক্র ছিল আমাদের ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝখানে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন, আমরাও একত্রে তাকবীর বললাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু’ করলেন এবং আমরাও একত্রে রুকু’ করলাম। এরপর তিনি রুকু’ হতে মাথা উঠালে আমরাও সকলে মাথা উঠালাম। এরপর তিনি সিজদায় গেলেন এবং তার সঙ্গে যে দলটি ছিল, সে দলটিও। তাঁর পিছনের দল শক্রর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলেন। 

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা সমাপ্ত করলেন এবং তাঁর সংলগ্ন পেছনের দলটি দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন পেছনের দলটি সিজদায় গেল। এরপর তারা দাঁড়াল। অতঃপর পেছনের দলটি সামনে গেল এবং সামনের দলটি পেছনে এল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু’ করলেন এবং আমরাও সবাই রুকু’ করলাম। এরপর তিনি রুকু’ থেকে মাথা উঠালেন। আমরাও মাথা উঠালাম। এরপর তিনি সিজদায় গেলেন এবং তাঁর সংলগ্ন যারা প্রথম রাকআতে পেছনে ছিলেন তাঁরাও। আর পেছনের দলটি শক্রর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলেন যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সংলগ্ন দল সিজদা সমাপন করলেন, তখন পেছনের দলটি সিজদায় গেল এবং তারা সকলে এভাবে সিজদা করল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমরা সকলে সালাম ফিরালাম। জাবির (রাঃ) বলেন, যেমন তোমাদের প্রহরীগণ তাদের আমীরগণের পাহারা দেন।
১৮১৯.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুহায়না গোত্রের একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। তারা আমাদের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আমরা যখন যুহরের সালাত আদায় করে নিলাম তখন মুশরিকরা বলতে লাগল, আমরা যদি এক যোগে আক্রমণ করতাম তাহলে মুসলমানদেরকে পরাজীত করে দিতে পারতাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সংবাদ দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানালেন। তিনি বলেন, মুশরিকরা আরো বলেছে যে, মুসলমানদের নিকট এমন একটি সালাতের সময় উপস্থিত হচ্ছে যে সালাত তাদের নিকট নিজেদের সন্তান থেকেও অধিক প্রিয়। তিনি বলেন, যখন আসরের সময় হল, তখন তিনি আমাদের- দু' কাতারে বিভক্ত করলেন। আর মুশরিকরা ছিল আমাদের এবং কিবলার মাঝখানে। 

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন, আমরাও তাকবীর বললাম। তিনি রুকু’ করলেন, আমরাও রুকু’ করলাম। এরপর তিনি সিজদা করলেন। তাঁর সাথে প্রথম সারির লোকেরাও সিজদা করল। এরপর প্রথম সারির লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর পেছনের সারির লোকেরা সিজদা করলেন। এরপর প্রথম সারির লোকেরা পেছনে এলেন এবং দ্বিতীয় সারির লোকেরা সামনে আসলেন এবং প্রথম কাতারের লোকদের স্থানে দাঁড়াল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন, আমরাও তাকবীর বললাম। তিনি রুকু’ করলেন আমরাও রুকু’ করলাম। এরপর তাঁর সাথে প্রথম সারির লোকেরা সিজদা করলেন এবং পিছনের সারির লোকেরা দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর যখন দ্বিতীয় সারির লোকেরা সিজদা করল, তারপর সকলে বসে গেল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নিয়ে সালাম ফিরালেন।

আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, এরপর জাবির (রাঃ) বিশেষভাবে বললেন, যেভাবে তোমাদের বর্তমানকালের আমীরগণ সালাত আদায় করেন।
১৮২০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরকে নিয়ে সালাতুল খাওফ আদায় করলেন। তাদেরকে তাঁর পেছনে দু' কাতারে দাঁড় করালেন। তার সংলগ্ন কাতারে লোকদের নিয়ে তিনি এক রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর পিছনের কাতারের লোকেরা এক রাকআত সালাত আদায় না করা পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁরা সন্মুখে অগ্রসর হলেন এবং যারা সম্মুখ ভাগে ছিলেন তারা পিছনে সরে এল। তিনি তাঁদেরকে নিয়ে আরেক রাক'আত সালাত আদায় করলেন এবং পেছনে অবস্থানকারীগণ আরেক রাকআত আদায় না করা পর্যন্ত তিনি বসে থাকলেন। তারপর তিনি সালাম ফিরালেন।
১৮২১.    ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... সালিহ ইবনু খাওওয়াত (রহঃ) যাতূর রিকার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাতুল খাওফ আদায়কারী জনৈক সাহাবী সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি দল কাতারে দাঁড়ান এবং অন্য দল শক্রর মুখোমুখি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে যারা কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদেরকে নিয়ে এক রাক’আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং তাঁরা নিজেরা তাদের সালাত পূর্ণ করল। এরপর তাঁরা চলে গেলেন এবং কাতারবন্দী হয়ে শক্রর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর দ্বিতীয় দল এল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাকআতটি আদায় করলেন। এরপর তিনি বসে থাকলেন এবং তাঁরা তাঁদের সালাত পূর্ণ করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের নিয়ে সালাম ফিরালেন।
১৮২২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধে যাত্রা করলাম এবং যাতুর-রিকা নামক স্থানে পৌহুলাম। তিনি বলেন আমাদের অবস্থা এরূপ ছিল যে, আমরা যখন কোন ছায়াযূক্ত গাছের কাছে পৌছতাম তখন আমরা তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য ছেড়ে দিতাম। রাবী বলেন, হঠাৎ মুশরিকদের এক ব্যাক্তি এল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরবারী গাছে ঝূলানো ছিল। মুশরিক লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরবারীটি হাতে তুলে নিয়ে খাপ থেকে বের করে নিল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় কর? তিনি বললেন, না। 

মুশরিক বলল, তোমাকে আমার থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করবেন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ ঐ ব্যাক্তিকে তাড়া দিলেন। সে তরবারী খাপে ডুকিয়ে গাছের সঙ্গে ঝূলিয়ে রাখল। রাবী বলেন, ইতিমধ্যে সালাতের জন্য আযান দেওয়া হল। তখন একটি দলকে নিয়ে তিনি দু' রাকআত সালাত আদায় করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর দলকে নিয়ে দু-রাকআত সালাত আদায় করলেন। রাবী বলেন, অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হল চার রাক'আত এবং সাহাবীগণের হল দু’ রাক’আত।
১৮২৩.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাতূল খাওফ আদায় করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু' দলের একটি দলকে নিয়ে দু-রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর আরেক দল নিয়ে দু’রাক’আত সালাত আদায় করলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু' রাক’আত করে চার রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং প্রত্যেক দলকে নিয়ে আদায় করলেন দু' রাকআত।

No comments:

Powered by Blogger.