Breaking News
recent

হারাম উপার্জন থেকে তাওবাহ

হারাম উপার্জন থেকে তাওবাহ

আমাদের উপার্জনের মধ্যে জেনে বা না জেনে অনেক সময় হারাম উপার্জন হয়ে থাকতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা তাওবা করার মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারি। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ ﴾ [التحريم: ٨] 

‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা, আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’’[52]



হারাম উপার্জন করার জন্য অনুতপ্ত হওয়া

নিজের উপার্জনের মধ্যে হারাম কোনো কিছু থাকলে তার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং অনুশোচনা করতে হবে।  হারাম উপার্জন করার পর নিজের মনের মধ্যে ব্যাকুলতা অনুভব করবে, এজন্য নিজেকে হীন মনে করবে । এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,



﴿ إِنَّمَا ٱلتَّوۡبَةُ عَلَى ٱللَّهِ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسُّوٓءَ بِجَهَٰلَةٖ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٖ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَتُوبُ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١٧ ﴾ [النساء: ١٧] 

‘‘নিশ্চয় তাওবা কবুল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবাহ করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’’[53]



হারাম উপার্জন না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা

হারাম উপার্জন করতে থাকা অবস্থায় তাওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যে কোনো ধরণের হারাম উপার্জন না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ ﴾ [ال عمران: ١٣٥] 

‘‘যারা অশস্নীল কাজ করার পর অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে এরপর নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর আল্লাহ ব্যতীত গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে কেউ সক্ষম নয় এবং তারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর অটল থাকে না এবং তারা (গুনাহের বা পাপের উপর অটল থাকার ভীষণ পরিণাম) জানে।’’[54]



হালাল উপার্জন ও হারাম উপার্জনকে পৃথক করা

বুঝা বা উপলব্ধির সাথে সাথে  হালাল উপার্জন ও হারাম উপার্জনকে পৃথক করে ফেলতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


﴿ قُل لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡخَبِيثُ وَٱلطَّيِّبُ وَلَوۡ أَعۡجَبَكَ كَثۡرَةُ ٱلۡخَبِيثِۚ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٠٠ ﴾ [المائ‍دة: ١٠٠] 

‘‘বল,‘অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। অতএব হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও।’’[55]



অর্জিত হারাম উপার্জন সওয়াবের আশা না করে শুধু দায়মুক্তির জন্য জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা

হারাম পথে উপার্জন করা মাল নিজের কাছে গচ্ছিত রাখার সুযোগ নেই। বরং তা সওয়াবের আশা না করে কেবল দায়মুক্তির আশায় জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে ফেলতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بِ‍َٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ ٢٦٧ ﴾ [البقرة: ٢٦٧] 

‘‘হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি যমীন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্তুর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত’’।[56]



কোনো প্রতিষ্ঠানের হক নষ্ট হলে বা খেয়ে ফেললে তা দ্রুত ফেরত দেওয়া

কেউ কোনো প্রতিষ্ঠান, কোম্পানীর কোনো হক নষ্ট করলে বা মাল হারাম পন্থায় ভোগ করলে তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে। কেননা আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 «مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ فَقَدْ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ النَّارَ وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ». فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ « وَإِنْ قَضِيبًا مِنْ أَرَاكٍ ».

“যে ব্যক্তি তার নিজ হাতে কোনো মুসলিমের হক খেয়ে ফেলে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন। জান্নাত হারাম করে দেন। একজন লোক প্রশ্ন করলো, যদি তা সামান্য বস্তু হয়। তখন তিনি বললেন, দেখতে যদি তা আরাক গাছের ডাল পরিমাণও হয়।”[57]



মাফ চেয়ে নেওয়া 

কারো কোনো মাল খেয়ে ফেলার পর যদি তা ফেরত দেওয়ার সামর্থ না থাকে, তবে সে মাফ চেয়ে নিবে। কেননা হাদীসে এসেছে, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


«مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَحَدٍ مِنْ عِرْضِهِ ، أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ ، وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ»

‘যদি কেউ তার ভাইয়ের ওপর  যুলুম করে থাকে, হোক তা মান-ইজ্জত অথবা সম্পদ বিষয়ক, সে যেন আজই তা থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যখন কোনো টাকা পয়সার লেনদেন হবে না। সেদিন যদি তার নেক আমল থেকে থাকে তবে যুলুম পরিমাণ নেক আমল তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে তবে মাযলুম ব্যক্তির গুনাহ নিয়ে তার ওপর  চাপানো হবে’।[58]



বেশি বেশি সদকাহ বা ভাল কাজ করা

বেশি বেশি সদকাহ বা ভাল কাজ করার মাধ্যমে পরিত্রাণ পাবার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কেননা সওয়াবের কাজের মাধ্যমে গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ ﴾ [هود: ١١٤] 
‘‘নিশ্চয়ই ভাল কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়।’’[59]



আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা

আল্লাহ তা‘আলা চান তার বান্দারা আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করুক। আর কোনো বান্দাহ অন্যায় করার পর তার নিকট ক্ষমা চাইলে তা ক্ষমা করে দেন। সেজন্য বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء: ١١٠] 

‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[60]


No comments:

Powered by Blogger.