জুমু’আর দিনের আদব
জুমু’আর দিনের আদব
জুমু’আর দিনের আদব
১।প্রত্যেক মুসলমানেরই বৃহস্পতিবার দিন (শেষ বেলা) হইতেই জুমু’আর জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং যত্ন লওয়া কর্তব্য। বৃহস্পতিবার আছরের পর দুরূদ, এস্তেগফার এবং এবং তসবীহ তাহলীল বেশী করিয়া পড়িবে। পরিধানের কাপড় ধুইয়া পরিষ্কার করিবে! যদি কিছু সুগন্ধি ঘরে না থাকে অথচ আনাইবার সঙ্গতি থাকে, তবে ঐ দিনই আনাইয়া রাখিবে, যাহাতে জুমু’আর দিনে এবাদৎ ছাড়িয়া এইসব কাজে লিপ্ত না হইতে হয়। অতীতের বুযুর্গানে দ্বীন বলিয়াছেন যে, জুমু’আর ফযীলত সবচেয়ে বেশী সে ব্যক্তি পাইবে, যে জুমু’আর প্রতীক্ষায় থাকে এবং বৃহস্পতিবার হইতে জুমু’আর জন্য প্রস্তুত হয়। আর সর্বাপেক্ষা অধিক হতভাগা সেই ব্যক্তি, যে জুমু’আ কবে তাহার খবরও রাখে না, এমন কি, জুমু’আর দিন সকাল বেলায় লোকের নিকট জিজ্ঞাসা করে যে, আজ কি বার? অনেক বুযুর্গ লোক জুমু’আর জন্য তৈয়ার থাকিবার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার দিন গত রাত্রে মসজিদে গিয়া থাকিতেন।
২।প্রত্যেক জুমু’আর দিন (প্রত্যেকেই হাজামত বানাইয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হইবে)। গোসল করিবে, মাথার চুল এবং সর্বশরীর উত্তমরূপে পরিষ্কার করিবে এবং মিসওয়াক করিয়া দাঁতগুলিকে পরিষ্কার করা বেশী ফযীলতের কাজ।
৩।যাহর নিকট যেরূপ উত্তম পোশাক থাকে, তাহা পরিধান করিয়া খোশবু লাগাইয়া মসজিদে যাইবে, নখ ইত্যাদি কাটিবে।
৪।জামে মসজিদে খুব সকালে যাইবে। যে যত সকালে যাইবে সে ততই অধিক ছওয়াব পাইবে। হযরত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ ‘জুমু’আর দিনে ফেরেশতাগণ জামে’ মসজিদের দরজায় দণ্ডায়মান থাকিয়া মুছল্লিগণ যে যে সময় আসিতে থাকে তাহাদের নাম লিখিতে থাকেন। যে প্রথমে আসে, তাহার নাম সকলের উপরে লেখা হয়। তারপর দ্বিতীয়, তারপর তৃতীয় এইভাবে পর্যায়ক্রমে সকলের নাম লেখা হয়। যে সর্বপ্রথম আসে, সে আল্লাহর রাস্তায় একটি উট কোরবানী করার সমতূল্য সওয়াব পায়। যে দ্বিতীয় নম্বরে আসে, সে একটি গরু কোরবানী করার সমান সওয়াব পায়। (যে তৃতীয় নম্বরে আসে, সে একটি বকরী কোরবানী করার সওয়াব পায়) তারপর যে আসে, সে আল্লাহর রাস্তায় একটি মোর যবাহ করিার সমতূল্য সওয়াব পায় এবং তারপর যে আসে সে আল্লাহর রাস্তায় একটি আণ্ডা দান করার মত সওয়াব পায়। তারপর যখন খুৎবা আরম্ভ হয়, তখন ফেরেশতাগণ ঐ খাতা বন্ধ করিয়া খুৎবা শুনিতে থাকেন। বোখারী
পূর্বের যমানায় শুক্রবারে লোক এত সকালে এবং জাঁকজমক ও আগ্রহের সহিত জামে মসজিদে যাইত যে, ফজরের পর হইতেই শহরের রাস্তাগুলিতে ঈদের দিনের মত লোকের ভিড় জমিয়া যাইত। তারপর যখন এই রীতি মুসলমানদের মধ্য হইতে ক্রমশঃ লোপ পাইতে লাগিল, তখন (বিজাতি) লোকেরা বলিল যে, ‘ইসলামের মধ্যে এই প্রথম বেদ’আত জারি হইল।’ এই পর্যন্ত লিখিয়া ইমাম গাযযালী (রঃ) বলিতেছেন, মুসলমানঘন ইয়াহুদী এবং নাছারাদের অবস্থা দেখিয়া কেন শরমিন্দা হয় না? ইয়াহুদীগণ শনিবারে এবং নাছারাগণ রবিবারে কত সকাল সকাল তাহাদের প্রার্থনালয়ে ও গীর্জা গৃহে গমন কর। ব্যবসায়িগণ প্রাতঃকালে কেনা-বেচার জন্য বাজারে যাইয়া উপস্থিত হয়। অতএব, দ্বীন অণ্বেষণকারীগণ কেন অগ্রসর হয় না? এহইয়াউল উলুম। প্রকৃত প্রস্তাবে মুসলমানঘন এই যমানায় এই মুবারক দিনের মর্যাদা একেবারে নষ্ট করিয়া দিয়াছে। তাহারা এতটুকু জানে না যে, আজ কোন দিন এবং তাহার কি-ই বা মর্তবা? অতীব পরিতাপের বিষয় যে দিনটি এক কালে মুসলমানদের নিকট ঈদ অপেক্ষা বেশী প্রিয় ও মর্যাদাবান ছিল, যে দিনের প্রতি রসূলুল্লাহর (দঃ) গর্ব ছিল, পূর্ব যুগের উম্মতদের যাহা জুটে নাই, আজ মুসলমানদের হাতে সেই দিন এমন অসহায়ভাবে অপদস্থ হইতেছে। আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামতকে এভাবে বরবাদ করা অতি বড় নাশোকরী, যাহার অশুভ প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে দেখিতেছি। ইন্নালিল্লাহ ......
৫।জুমু’আর নামাযের জন্য পদব্রজে গমন করিলে প্রত্যেক কদমে এক বৎসরকাল নফল রোযা রাখার ছওয়াব পাওয়া যায়। তিরমিযী শরীফ
৬।হযরত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিনে ফজরের নামাযে “আলিফ-লাম-মী সজদা” এবং “হাল আতা আলাল ইনসান” এই দুইটি সূরা পাঠ করিতেন। কাজেই মোস্তাহাব মনে করিয়া কোন কোন সময় পড়িবে, আবার কোন কোন সময় ছাড়িয়া দিবে লোকেরা যেন ওয়াজিব মনে না করে।
৭।জুমু’আর নামাযে রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “সূরায়ে জুমু’আ” এবং “সূরায়ে মোনাফিকূন” এবং কখনও কখনও “সাব্বিবহিসমা” এবং “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ” এই দুইটি সূরা পাঠ করিতেন।
৮।জুমু’আর দিনে জুমু’আর নামাযের আগে কিংবা পরে সূরায়ে কাহফ তেলাওয়াত করিলে অনেক ছওয়াব পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে আছে, ‘যে ব্যক্তি জুমা’আর দিনে সূরায়ে কাহফ তেলাওয়াত করিবে, কিয়ামতের দিন তাহার জন্য আরশের নীচে আকাশতূল্য উচ্চ একটি নূর প্রকাশ পাইবে, যদ্দ্বারা তাহার হাশরের ময়দানে সব অন্ধকার দূর হইয়া যাইবে এবং বিগত জুমু’আ হইতে এই জুমু’আ পযৃন্ত তাহার যত (ছগীরা) গোনাহ হইয়াছে, সব মাফ হইয়া যাইবে। (তওবা ব্যতীত কবীরা গোনাহ মাফ হয় না।) শরহে ছেফরুস সা’আদাত
৯।জুমু’আর দিনে দুরূদ শরীফ পড়িলে অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়, এই জন্যই হাদীস শরীপে জুমু’আর দিনে বেশী করিয়া দরূদ শরীফ পড়িবার হুকুম আসিয়াছে।
No comments: