জুমু’আর নামাযের ফযীলত এবং তাকীদ
জুমু’আর নামাযের ফযীলত এবং তাকীদ
জুমু’আর নামাযের ফযীলত এবং তাকীদ
জুমা’আর নামায ফরযে আইন; কোরআনের স্পষ্ট বাণী দ্বারা, মোতাওয়াতের হাদীস দ্বারা ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা ইহা প্রমাণিত আছে এবং ইহা ইসলামের একটি প্রধান অঙ্গ। কেহ ইহার ফরযিয়্যত অস্বীকার করিলে সে কাফির হইবে এবং বিনা ওযরে কেহ তরক করিলে, সে ফাসেক হইবে।
১।আল্লাহ্ তা’আলা বলিতেছেনঃ
[আরবি]
‘হে মুমিনগণ! যখন জুমু’আর নামাযের আযান হয়, তখন তোমরা ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করিয়া আল্লাহর যিকরের দিকে দৌড়ায়া চল। তোমরা যদি বুঝ, তবে ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম।’ সূরা জুমু’আ
এই আয়াতে আল্লাহর যিকরের অর্থ জুমু’আর খুৎবা এবং নামায, আর দৌড়াইয়া চলার অর্থ দৌড়ান নহে; বরং কালবিলম্ব না করিয়া তৎক্ষণাৎ দুনিয়ার সব কাজ-কর্ম পরিত্যাগ করিয়া আল্লাহর যিকরের জন্য ধাবিত হওয়া।
২।হাদীস শরীফে আছেঃ যে ব্যক্তি শুক্রবারে গোসল করিয়া যথাসম্ভব পাক-ছাফ হইয়া চুলগুলিতে তৈল মাখাইয়া, খোশবু লাগাইয়া জুমু’আর নামাযের জন্য যাইবে এবং মসজিদে গিয়া কাহাকেও তাহার জায়গা হইতে উঠাইয়া না দিয়া যেখানে জায়গা মিলে সেইখানেই বসিবে এবং যে পরিমাণ নামায তাহার ভাগ্যে জোটে তাহা পড়িবে, তারপর যখন ইমাম খুৎবা দিবেন, তখন চুপ করিয়া খুৎবা শুনিবে, তাহার গত জুমু’আ হইতে এই জুমু’আ পর্যন্ত যত (ছগীরা) গোনাহ হইয়াছে সব মাফ হইয়া যাইবে। বোখারী শরীফ
৩।হাদীস শরীফে আছেঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে গোসল করিয়া পদব্রজে তাড়াতাড়ি জামে মসজিদে যাইবে (গাড়ী বা ঘোড়ায়) সওয়ার হইয়া যাইবে না এবং তারপর খুৎবার সময় বেহুদা কাজ করিবে না বা কথাবার্তা বলিবে না এবং চুপ করিয়া খুব মনোযোগের সহিত খুৎবা শ্রবণ করিবে, তাহার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে পূর্ণ এক বৎসরের এবাদতের (অর্থাৎ, এক বৎসরের রোযার এবং নামাযের) ছওয়াব মিলিবে। তিরমিযী
৬।হাদীস শরীফে আছেঃ শরয়ী গোলাম, স্ত্রীলোক, নাবালেগ ছেলে এবং পীড়িত লোক এই চারি ব্যক্তি ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানের উপরই জুমু’আর নামায জমা’আতের সঙ্গে পড়া ফরয এবং আল্লাহর হক। আবু দাউদ
৭।রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ ‘আমার দৃঢ় ইচ্ছা যে, কাহাকেও আমার স্থলে ইমাম বানাইয়া দেই, তৎপর যাহারা জুমু’আর জমা’আতে না আসে তাহাদের ঘর-বাড়ি জ্বালাইয়া দেই। মেশকাত (এই বিষয়ের হাদীস জমা’আত তরককারীদের সম্পর্কেও বর্ণিত হইয়াছেযাহা পূর্বে লেখা হইয়াছে।
৮।হাদীস শরীফে আছেঃ যে ব্যক্তি বিনা ওযরে জুমু’আর নামায তরক করে, তাহার নাম িএমন কিতাবে লিখা হয় যাহা পরিবর্তন হইতে সংরক্ষিত অর্থাৎ (আল্লাহর দরবারে) মোনাফিকের দপ্তরভুক্ত করিয়া দেওয়া হয়। মেশকাত। (তাহার প্রতি নেফাকের হুকুম সর্বদা থাকিবে। অবশ্য যদি সে তওবা করে কিংবা দয়াল আল্লাহ্ মাফ করিয়া দেন, তবে স্বতন্ত্র কথা।)
৯।হাদীস শরীফে আছেঃ মুসাফির, আওরত, নাবালেগ এবং গোলাম ব্যতীত প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির উপরই জুমু’আর নামায ফরয। অতএব, যদি কেহ এই ফরয হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়া কোন বেহুদা কাজে অর্থাৎ, দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কোন কাজে লিপ্ত হয়, তবে আল্লাহ্ তা’আলা সেই ব্যক্তি হইতে মুখ ফিরাইয়া লন। নিশ্চয় জানিবে আল্লাহ্ তা’আলা বে-নিয়ায, এবং তিনি সর্বাবস্থায় প্রশংসনীয়। অর্থাৎ তিনি কাহারও এবাদতের পরওয়া করেন না, তাহার ফায়েদাও নাই, তিনি সর্বগুণের আধার, কেহ তাঁহার প্রশংসা করুক বা না করুক।
১০।হযরত আবদুল্লাহ-ইবনে-আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন, যদি কোন ব্যক্তি পর পর কয়েক জুমু’আ তরক করে, তবে সে যেন ইসলামকেই তরক করিল।
১১।একজন লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে-আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর নিকট জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, এমন কোন ব্যক্তি যদি মরিয়া যায়, যে জুমু’আ এবং জমা’আতে উপস্থিত হইত না, তবে তাহার সম্বন্ধে আপনার কি মত? তিনি উত্তর দিয়াছিলেন যে, সে ব্যক্তি দোযখী হইবে। প্রশ্নকারী তাঁহাকে এক মাস যাবৎ রোজ এইরূপ প্রশ্ন করিয়াছিল এবং তিনি বরাবর ঐ একই উত্তর দিয়াছিলেন। এহইয়াউল উলুম
এইসব রেওয়ায়ত দ্বারা জুমু্’আ ও জমা’আতের নামায তরককারীর প্রতি বড় কঠোর শাস্তি ও ভীতি আসিয়াছে। এখনও কি কোন ইসলামের দাবীদার এই ফরয তরক করার দুঃসাহস করিতে পারে?
No comments: