Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, অধ্যায়ঃ হায়েয-২য়




পরিচ্ছেদঃ ১৩. হায়েয থেকে গোসলকারিণীর জন্য রক্তের স্থানে (লজ্জাস্থানে) সুঘন্ধিযুক্ত কাপড় বা তুলা ব্যাবহার করা মুস্তাহাব


৬৪১.    আমর ইবনু মুহাম্মাদ আন নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত! এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল যে, কিভাবে সে তার হায়িয থেকে গোসল করবে? হাদীসের রাবী বলেন, আয়িশা (রাঃ) উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহিলাকে কিভাবে গোসল করবে, তারপর সুগন্ধযুক্ত কাপড় বা তুলা ব্যবহার করে তদ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে এসবই শিক্ষা দিলেন। মহিলাটি বলল, তা (সুগন্ধযুক্ত কাপড়) দ্বারা আমি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি বললেন, তার দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে, সুবহানাল্লাহ! (এত সোজা কথাও বোঝ না)। এরপর তিনি (মুখ) আড়াল করলেন। (রাবী বলেন) সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না তার মুখের ওপর হাত দিয়ে আমাদেরকে ইশারা করে দেখালেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে আমার দিকে টেনে আনলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা আমি বুঝে ফেললাম। অতঃপর আমি (মহিলাটিকে) বললাম, তুমি তা (সুগন্ধযুক্ত কাপড় বা তুলা) রক্তের স্থানে (লজ্জাস্হানে) ঝুলিয়ে নিবে। ইবনু আবূ উমর তার বর্ণনায় أَثَرَ الدَّمِ এর স্থানে آثَارَ الدَّمِ বলেছেন।
৬৪২.    আহমাদ ইবনু সাঈদ আদ দারিমী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল সে তুহর (হায়িয থেকে পবিত্র) এর সময় কিভাবে গোসল করবে? তিনি বললেন, একখন্ড সুগন্ধযুক্ত কাপড় বা তুলা তদ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এরপর সুফিয়ানের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৬৪৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আসমা (রাঃ) একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হায়েযের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ পানি এবং বরই-এর পাতা নিয়ে সুন্দরভাবে পবিত্র হবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভালভাবে রগড়ে ফেলবে যাতে সমস্ত চুলের গোড়া পর্যন্ত পৌছে যায়। তারপর তার ওপর পানি ঢেলে দিবে। তারপর সুগন্ধযুক্ত কাপড় নিয়ে তদ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আসমা বলল তা দিয়ে সে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে? তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর আয়িশা (রাঃ) তাঁকে যেন চুপিচুপি বলেন দিলেন, রক্ত বের হবার জায়গায় তা ঝুলিয়ে দিবে। অতঃপর তিনি জানবাতের গোসল সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, পানিদ্বারা সুন্দরভাবে পবিত্র হবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভাল করে রগড়ে ফেলবে যাতে চুলের গোড়ায় পানি পৌছে যায়। তারপর সর্বাঙ্গে পানি বইয়ে দিবে। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আনসারদের মহিলারা কত ভাল! লজ্জা তাদেরকে দ্বীন-এর জ্ঞান থেকে ফিরিয়ে রাখে না।
৬৪৪.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... শু’বা থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূবহানাল্লাহ। তদ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে, এবং তিনি মুখ ঢাকলেন।
৬৪৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসমা বিনতে শাকল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমাদের কেউ যখন হায়িয থেকে পবিত্র হবে তখন সে কি ভাবে গোসল করবে? এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসটির মধ্যে জানবাতের গোসলের কথা উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. মুস্তাহাযা মহিলা এবং তার গোসল ও সালাতের বিবরণ


৬৪৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবূ হুবায়শ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার ইসতিহাযা হয়েছে (সব সময়ই রক্ত ঝরে) কখনো আমি পবিত্র হই না। আমি কি সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দেব? তিনি বললেন, না, ওটা শিরার (ধমনী) রক্ত, হায়িয নয়; যখন হায়িয আসবে তখন সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দেবে আর যখন তা চলে যাবে তখন তোমার শরীর থেকে রক্ত ধুয়ে ফেলবে এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৬৪৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবন সাঈদ, ইবনু নুমায়র ও খালাফ বিন হিশাম (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা বিনতে আবূ হুবায়শ ইবনু আবদুল মুত্তালিব ইবনু আসাদ যিনি আমাদের বংশের একজন মহিলা ছিলেন -- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন......।
৬৪৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবন রুমহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবা বিনতে জাহশ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মাসআলা জানতে চেয়ে বলল, আমার ইস্তিহাযা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটা হল একটা শিরার (ধমনী) রক্ত। তাই তুমি গোসল করে ফেলবে তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। এরপর সে প্রতি সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময়ই গোসল করত। রাবী লায়স ইবনু সা’দ বলেন, ইবনু শিহাব (রহঃ) একথা উল্লেখ করেননি, যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু হাবীবাকে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময়ই গোসলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বরং এটা সে নিজের থেকেই করত। ইবনু রুমহ তার বর্ণনায় জাহশের কন্যার কথা বলেছেন উম্মু হাবীবার নাম উল্লেখ করেননি।
৬৪৯.    মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শ্যালিকা এবং আবদুর রহমান ইবনু আওফের স্ত্রী উম্মু হাবীবা বিনতে জাহশ (রাঃ) সাত বৎসর যাবত “ইসতিহাযার রোগী ছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ ব্যাপারে মাসআলা জানতে চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা হায়িয নয়, বরং ধমনীর (শিরা) রক্ত। তাই তুমি গোসল করে ফেল এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি তার বোন যায়নাব বিনতে জাহশের কক্ষে একটি পাত্রে (থেকে পানি নিয়ে) গোসল করতেন। এমনকি পানি রক্তে লাল হয়ে যেত। 

ইবনু শিহাব বলেন, আমি এ হাদীসটি আবূ বাকর ইবনু আবদুর রহমান ইবনুল হারিস ইবনু হিশাম-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা হিন্দা-এর ওপর রহমত করুন সে যদি এ ফাতওয়া (মাসআলা) শুনতে পেত! আল্লাহর কসম! সে শুধু কাঁধত। কারণ সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত না (এ মাস’আলা তার জানা ছিলনা। ফলে সালাত (নামায/নামাজ) পড়তে না পারার কারণে কাঁধত )।
৬৫০.    আবূ ইমরান মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবা বিনত জাহশ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। আর সাত বছর ধরে তার ইসতিহাযা চলছিল। এরপর রাবী আবূ ইমরান আমর ইবনুল হারিসের হাদীসের অনুরুপ تَعْلُوَ حُمْرَةُ الدَّمِ الْمَاءَ পর্যন্ত বর্ণনা করে যান এর পরবর্তী অংশ তিনি উল্লেখ করেননি।
৬৫১.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাহশের কন্যার সাত বছর যাবত ইসতিহাযা ছিল। এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত।
৬৫২.    মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবন সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এরপর আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তার পাত্র দেখেছি রক্তে পরিপূর্ণ। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার হায়েয যে কয়দিন চলত, সে কয়দিন পরিমাণ তুমি অপেক্ষা কর। তারপর গোসল করে ফেল এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।
৬৫৩.    মূসা ইবনু কুরায়শ আত তামীমী (রহঃ) ... উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবা বিনতে জাহশ (রাঃ) যিনি আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন --- একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে রক্ত সম্পর্কে অভিযোগ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তোমার যে কয়দিন হয়েয চলত, সে কয়দিন পরিমাণ তুমি অপেক্ষা কর। তারপর গোসল কর। এরপর তিনি প্রতি সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময়ই গোসল করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. ঋতুমতী মহিলার ওপর সাওম কাযা জরুরী, সালাত নয়


৬৫৪.    আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) ... মু’আজা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা। আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, আমাদের কেউ কি তার হায়িয এর দিনগুলির সালাত (নামায/নামাজ) কাযা করবে? আয়িশা (রাঃ) বললেন, তুমি কি হারুরিয়্যা (খারেজী)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমাদের কারো হায়িয হলে পরে তাকে (সালাত (নামায/নামাজ) কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত না।
৬৫৫.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... মু’আযা থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন ঋতুমতী মহিলা কি সালাত (নামায/নামাজ) কাযা করবে? আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি হারুরিয়্যা? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নীগণের হায়েয হত, তিনি কি তাদেরকে (সালাত (নামায/নামাজ) কাযা করার হুকুম দিয়েছেন?
৬৫৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... মু’আযা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুমতীর ব্যাপারতা কি যে, সে কি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কাযা করবে অথচ সালাত (নামায/নামাজ) কাযা করবে না? তিনি বললেন , তুমি কি হারুরিয়্যা? আমি বললাম, আমি হারুরিয়্যা নই, বরং আমি (জানার জন্যই কেবল) জিজ্ঞাসা করছি। তিনি (আয়িশা (রা) বললেন , আমাদের এরুপ হত তখন আমাদের কে কেবল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত, সালাত (নামায/নামাজ) কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত না।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. গোসলকারী কাপড় অথবা অনুরূপ কিছু দিয়ে পর্দা করে নিবে


৬৫৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উম্মূ হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন আমি তাঁকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন আর তার কন্যা ফাতিমা একটি কাপড় দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রেখেছিলেন।
৬৫৮.    মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... উম্মু হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্নিত। মক্কা বিজয়ের বছর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। তিনি তখন মক্কার উচু এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করতে গেলে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে আড়াল করে দিল। এরপর তিনি নিজের কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন। তারপর আট রাকআত চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৬৫৯.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু আবূ হিনদ (রাঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত। এবং তিনি বলেন, এরপর তাঁর কন্যা ফাতিমা তাঁর কাপড় দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রেখেছিল। গোসল সমাপন করে তিনি ঐ কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে আট রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর সেটা ছিল চাশতের সময়।
৬৬০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য পানি রাখলাম এবং তাকে আড়াল করলাম। এরপর তিনি গোসল করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. অন্যের সতরের দিকে তাকানো হারাম


৬৬১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সতরের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নিচে শয়ন করবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নিচে শয়ন করবে না।
৬৬২.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যাহহাক ইবনু উসমান (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়েই عَوْرَةِ الرَّجُلِ এর স্থলে عُرْيَةِ الْمَرْأَةِ এর উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. নির্জনে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয


৬৬৩.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করে বলেন, এগুলী আবূ হুরায়রা (রাঃ) মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরাঈলরা উলঙ্গ হয়ে গোসল করত একে অপরের সতরের দিকে তাকাত। আর মূসা (আলাইহিস সালাম) গোসল করতেন একাকী। তাই তারা বলাবলি করত, আল্লাহর কসম! মূসা আমাদের সাথে গোসল করে না কারণ তার একশিরা রোগ রয়েছে। 

একবার তিনি গোসল করতে গিয়ে একটি পাথরের ওপর তাঁর কাপড় রাখলেন। এরপর পাথরটি তার কাপড় নিয়ে দৌড়াতে লাগল। রাবী বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) তার পিছু পিছু ছুটলেন আর বলতে লাগলেন, পাথর! আমার কাপড়, পাথর! আমার কাপড়। এমনিভাবে বনী ইসরাঈলরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সতর দেখে ফেলল এবং তারা বলল, আল্লাহর কসম! মূসার তো কোন খুত নেই। এরপর পাথর দাঁড়িয়ে গেল এবং তাঁকে দেখা হয়ে গেল। 

রাবী বলেন, এরপর তিনি তাঁর কাপড় তুলে নিলেন এবং (রাগে) পাথরকে মারতে শুরু করে দিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! পাথরের ওপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর আঘাতের ছয়টি কি সাতটি চিহ্ন রয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. সতর ঢাকার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা


৬৬৪.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন, ইসহাক ইবন মানসুর ও মুহাম্মাদ ইবন রাফি' (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কাবা নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আব্বাস (রাঃ) পাথর বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, পাথর বহনের সুবিধার্থে তোমার লুঙ্গি কাঁধের ওপর তুলে নাও। এরপর তিনি এরুপ করলেন। সাথে সাথেই তিনি (বেহুশ হয়ে) মাটিতে পড়ে গেলেন। আর তার উভয় চোখ আকাশের দিকে নিবদ্ধ হল। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, আমার লুঙ্গি! আমার লুঙ্গি! এর পর তার লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল। ইবনু রাফি তাঁর রিওয়ায়েতে কাঁধের স্থলে ঘাড়ের উল্লেখ করেছেন।
৬৬৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে কা’বা মেরামতের জন্য পাথর বয়ে নিচ্ছিলেন। আর তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গি। এরপর তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন , ভাতিজা! তোমার লুঙ্গি খূলে যদি কাঁধের ওপর পাথরের নিচে রেখে নিতে (তাহলে খুবই ভাল হত)। তিনি লূঙ্গি খূলে তার কাঁধের ওপর রাখলেন। সাথে সাথেই বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, সেদিনের পর থেকে আর কখনো তাঁকে উলঙ্গ দেখা যায়নি।
৬৬৬.    সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া আল উমাবী (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি ভারী পাথর বয়ে নিয়ে আসছিলাম। আর তখন আমার পরনে ছিল একটি পাতলা লুঙ্গি। তিনি বলেন, এরপর আমার লুঙ্গি খুলে গেল। পাথরটি তখন আমার কাছে ছিল। তাই আমি লুঙ্গি তুলে নিতে পারলাম না। এমনিভাবে আমি পাথরটি যথাস্থানে নিয়ে গেলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাপড়ের কাছে ফিরে গিয়ে তা নিয়ে এস। আর কখনো উলঙ্গ চলো না।

পরিচ্ছেদঃ ২০. পেশাবের সময় পর্দা করা


৬৬৭.    শায়বান ইবনু ফাররুখ ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আদ দুবাঈ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সাওয়ারির উপরে তাঁর পেছনে বসালেন। অতঃপর তিনি চুপিচুপি আমাকে একটা কথা বললেন, যা আমি কাউকে বলব না। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাজত পূরনের সময় যা দিয়ে আড়াল করতেন তার মধ্যে বেশী পছন্দনীয় ছিল টিলা অথবা খেজুরগাছ।

পরিচ্ছেদঃ ২১. ইসলামের প্রাথমিক যুগে সহবাসের দ্বারা বীর্যপাত না হলে গোসল ফরয হত না; কিন্তু পরবর্তীতে এ হুকুম মানসুখ (রহিত) হয়ে যায় এবং শুধু সহবাসের দ্বারাই গোসল ফরয হয় - তার বিবরণ


৬৬৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক সোমবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে (মসজিদে) কুবা’র দিকে রওয়ানা হলাম। আমরা যখন বানূ সালিম-এর এলাকায় পৌছিলাম তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতবান-এর বাড়ীর দরজায় গিয়ে থামলেন এবং তাকে জোরে ডাক দিলেন ও অতঃপর তিনি তার লুঙ্গি হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বেরিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা এ ব্যাক্তিকে তাড়াহুড়ার মধ্যে ফেলেছি। ইতবান আরয করলেন , ইয়া রাসুলাল্লাহ ! কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রী থেকে তাড়াতাড়ি পৃথক হয়ে গেলে এবং ধাতু নির্গত না হলে তার কি হুকুম (সে গোসল করবে কিনা)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , পানি (অর্থাৎ গোসল করা) পানির (বীর্য) ফলেই ফরয হবে।
৬৬৯.    হায়ীন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পানির (ধাতু নির্গত হলে) দ্বারা পানি (গোসল) ফরয হয়।
৬৭০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আনবারী (রহঃ) ... আবূল আলা ইবনু শিখখীর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক হাদীস অপর হাদীসকে মানসূখ (রহিত) করে দেয় যেমনিভাবে কুরআনের এক আয়াত অপর আয়াতকে মানসূখ করে।
৬৭১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না এবং ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর (বাড়ীর) কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সংবাদ পাঠালেন। সে বেরিয়ে এল আর তার মাথা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি বললেন, সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াহুড়োর মধ্যে ফেলেছি। সে বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, যখন (কোন কারণে) তোমাকে তাড়াতাড়ি করতে হয় কিংবা বীর্যপাতের আগেই উঠে পড়তে হয় তখন তোমার ওপর গোসল করা (ফরয) বরং তোমার ওপর শুধু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করা জরুরী। * 

* এই হুকুম ইসলামের প্রাথমিক যূগে ছিল পরে তা রদ হয়ে যায়। সঙ্গমে বীর্য স্খলিত না হলেও গোসল ফরয হবে।
৬৭২.    আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) ও আবু কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আ'লা (রহঃ) ... উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম সেই ব্যাক্তি সম্পর্কে যে স্ত্রী সহবাস করে তারপর বীর্য নির্গত করে না। তিনি বললেন, স্ত্রীর (লজ্জাস্থান) থেকে তার (লজ্জাস্থানে) যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবে। তারপ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৬৭৩.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে ব্যাক্তি তার স্ত্রী সহবাস করে তারপর বীর্য নির্গত করে না --- তার সম্পর্কে তিনি বলেন, সে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে।
৬৭৪.    যূহায়র ইবনু হারব, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল ওয়ারিস ইবন আবদুস-সামাদ (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু খালিদ আন জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন কোন ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এবং বীর্য নির্গত না করে তবে তার হুকুম কি? উসমান (রাঃ) বললেন, সে সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নেবে এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
৬৭৫.    আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ ... আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরুপ শুনেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২২. বীর্যপাত হলেই গোসল ফরয-এ বিধান রহিত হওয়া প্রসঙ্গ


৬৭৬.    যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর চার হাত-পায়ের মাঝখানে বসবে এবং তার সাথে মিলবে তখন তাঁর ওপর গোসল ফরয হবে। মাতার এর হাদীসে যদিও বীর্য নির্গত না করে-বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে। যুহায়র (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় بَيْنَ أَشْعُبِهَا الأَرْبَعِ বলেছেন (অর্থ একই)।
৬৭৭.    মুহাম্মাদ আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবালা ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্নার সুত্রে কাতাদা থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে শু’বার হাদীসে "তারপর চেষ্টা চালায়" কথাটির উল্লেখ আছে। কিন্তু "যদিও বীর্য নির্গত না করে" কথাটির উল্লেখ নেই।
৬৭৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাজির ও আনসারদের একটি দল এ ব্যাপারে মতবিরোধ করল। আনসারগণ বলল সবেগে অথবা স্বাভাবিক গতিতে নির্গত পানি (বীর্য) বের হওয়া ছাড়া গোসল ফরয হয় না। আর মুহাজিরগণ বলল, স্ত্রীর সঙ্গে শুধু মিললেই গোসল ফরয (বীর্য বের হোক বা না হোক)। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, আমি এ ব্যাপারে তোমাদেরকে শান্ত করছি। এরপর আমি উঠে গিয়ে আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে (প্রবেশের) অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হল। আমি তাকে বললাম, মা! অথবা (তিনি বলেছিলেন) হে মুমিনদের মা! আমি আপনার কাছে একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করছি। তিনি বললেন, তুমি তোমার গর্ভধারিনী মাকে যে ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারতে সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করো না। আমি তো তোমার মা। আমি বললাম, গোসল কিসে ফরয হয়? তিনি বললেন, জানা-শোনা লোকের কাছে তুমি প্রশ্ন করেছ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন পুরুষ স্ত্রীর চার হাত-পায়ের মাঝখানে বসবে এবং একের লজ্জাস্থান অপরের লজ্জাস্থানের সাথে স্পর্শ করবে তখন গোসল ফরয হবে।
৬৭৯.    হারুন ইবনু মারুফ ও হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার কোন এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তারপর বীর্য নির্গত হবার পূর্বেই তার পুরুষাঙ্গ বের করে ফেলে তাহলে কি তাদের উভয়ের ওপর গোসল ফরয হবে? এ সময়ে আয়িশা (রাঃ) সেখানে উপবিষ্ট ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং এ (আয়িশা (রাঃ) ঐরুপ করি এরপর আমরা গোসল করে ফেলি।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. অগ্নিস্পর্শ দ্রব্যাদি খেলে উযু করা


৬৮০.    আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, অগ্নি স্পর্শ খাবার খেয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করা জরুরী। 

ইবনু শিহাব বলেন, উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) তাঁকে বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু ইবরাহীম ইবনু কারিয (রহঃ) তাঁকে জানিয়েছেন যে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে মসজিদে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করা অবস্থায় পেলেন। এরপর তিনি [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] বললেন, আমি পনিরের টূকরো খাবার কারণে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছি। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা অগ্নি স্পর্শ খাবার খেয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) কর। 

ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ ইবনু খালিদ ইবনু আমর ইবনু উসমান-এর নিকট যখন এ হাদীসটি বর্ননা করছিলাম তখন তিনি আমাকে জানোান যে, তিনি উরওয়া ইবনুুয যুবায়রকে অগ্নি স্পর্শ দ্রব্যাদি সম্পর্কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তখন উরওয়া বলেছিল যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অগ্নিস্পর্শ খাবার খেয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) কর।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. অগ্নিস্পর্শ দ্রবের ক্ষেত্রে উযুর বিধান রহিত হওয়া প্রসঙ্গে


৬৮১.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একটি বকরীর কাঁধের গোশত খেলেন তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না।
৬৮২.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবন আলী তার পিতা (রহঃ) থেকে ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হাড়ে লাগানো গোশত অথবা গোশত খেলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না বা পানি স্পর্শ করলেন না।
৬৮৩.    মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) ... আমর ইবনু উমায়্যা আদ দামরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার দেখলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বকরীর কাঁধের গোশত কেটে খাচ্ছেন। তারপর তিনি [রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন আর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না।
৬৮৪.    আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আমর ইবনু উমায়্যা আদ দামরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম তিনি একটি বকরীর কাঁধের গোশত (ছুরি দিয়ে) কাটছেন। এরপর তিনি তা খেলেন। ইতিমধ্যেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ডাকা হলে। তিনি তখন দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ছুরিটি ফেলে দিলেন। এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না। 

আমর বলেন, বুকায়র ইবনুল আশাজ্জ কুরায়বের সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী মায়মুনা মূসা (রাঃ) থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর কাছে বসে কাঁধের গোশত খেলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না। 

আমর বলেন, সাঈদ ইবনু আবূ হিলাল এর সুত্রে আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য বকরীর পেটের গোশত ভূনা করতাম (তিনি তা খেতেন) তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন না।
৬৮৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , একবার দুধ পান করলেন। তারপর পানি আনালেন, এরপর কুলি করলেন এবং বললেন, এতে তৈলাক্ত পদার্থ রয়েছে।
৬৮৬.    আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ), যুহায়র ইবনু হারব, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) প্রত্যেকেই ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উকায়ল এর সনদে থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৮৭.    আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হলেন। ইতিমধ্যেই কিছু কাটা ও গোশত হাদিয়া এল। এরপর তিনি (তা থেকে) তিন লুকমা খেলেন। তারপর লোকদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং পানি স্পর্শও করলেন না।
৬৮৮.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা আব্বাস (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। এরপর তিনি ইবনু হালহালার হাদীস (উপরোক্ত হাদীস) এর অনুরুপ বর্ণনা করেন। সেখানে উল্লেখ আছে যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। আর এ হাদীসের রাবী শুধু সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘লোকদেরকে নিয়ে' কথাটির উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ২৫. উটের গোশত আহারে উযু


৬৮৯.    আবূ কামিল ফুদায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমি কি বকরীয় গোশত খেয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব? তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেও পার আর নাও করতে পার। সে বলল, আমি কি উটের গোশত খেয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, উটের গোশত খেয়ে তুমি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে। সে বলল, আমি কি বকরির ঘরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, আমি কি উটের ঘরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, না।
৬৯০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া প্রত্যেকেই নিজ নিজ সনদে জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে আবূ কামিল এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬. পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস থাকার পর উযু ভঙ্গের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে সে উযু দিয়ে সালাত আদায় করা জায়েয হওয়ার দলীল


৬৯১.    আমর আন নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আব্বাদ ইবনু তামীম তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সেই ব্যাক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলেন সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে যার মনে হয় যেন কিছু (বায়ু) বের হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে (সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে) যাবে না যতক্ষন না (বায়ু বের হবার) শব্দ শুনবে অথবা (তার) গন্ধ পাবে। আবূ বাকর ও যুহায়র ইবনু হারব তাঁদের বর্ণনায় উল্লেখ করেন যে, ঐ ব্যাক্তি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ)।
৬৯২.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্যে কিছু অনুভব করে তারপর তার সন্দেহ দেখা দেয় যে, পেট থেকে কিছু বের হল কিনা। তখন সে যেন মসজিদ থেকে কখনো বের নাহয় যতক্ষন না শব্দ শোনে অথবা গন্ধ পায়।

পরিচ্ছেদঃ ২৭. মৃত জন্তুর চামড়া পাকা (দাবা/পাশাগাত) করা দ্বারা পবিত্র হয়


৬৯৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মায়মুনা (রাঃ) এর দাসীকে কেউ একটি বকরী সাদাকা দিল। পরে সে বকরীটি মারা যায়। ইতোমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মরে পড়ে থাকা বকরীটির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থা দেখে তিনি বললেন, তোমরা কেন এর চামড়া খূলে নিয়ে তা পাকা করে তা দিয়ে উপকৃত হওনা? সাহাবীগণ বললেন, এটা যে মৃত। তিনি বললেন, (তাতে কি) এটা খাওয়া হারাম (চামড়া ব্যবহার করা তো হারাম নয়)।
৬৯৪.    আবূত তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মৃত বকরী দেখলেন যা মায়মুনা (রাঃ) এর দাসীকে সাদাকা স্বরুপ দেয়া হয়েছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হওনা কেন? সাহাবীগণ বললেন, এটা তো মৃত। তিনি বললেন, এটা তো কেবল আহার করাই হারাম করা হয়েছে।
৬৯৫.    হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ এই সনদে ইউনূস-এর রিওয়ায়াত এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৯৬.    ইবনু আবূ উমার ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আয যুহুরি (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ফেলে দেয়া মরা বকরীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন যা মায়মুনা (রাঃ) এর দাসীকে সাদাকা স্বরুপ দেয়া হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা এর চামড়া কেন খুলে নিল না? চামড়াটি পাকা করে তা দিয়ে উপকৃত হত!
৬৯৭.    আহমাদ ইবনু উসমান আন নাওফালী (রহঃ) ... আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মায়মুনা (রাঃ) তাঁকে জানান যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক স্ত্রীর একটি পালিত বকরী ছিল সেটি মারা গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কেন এর চামড়া খুলে নাওনা, অতঃপর তা দিয়ে উপকৃত হও না?
৬৯৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মুনা (রাঃ) এর দাসীর একটি মরা বকরীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা এর চামড়া কেন কাজে লাগাও না?
৬৯৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, চামড়া যখন পাকা (দাবা/পাশাগাত) করা হয় তখন তা পবিত্র হয়ে যায়।
৭০০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস থেকে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭০১.    ইসহাক ইবনু মানসুর ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূল খায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু ওয়ালা আস-সাবাঈ কে চামড়ার পোশাক পরিহিত দেখে তা হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম। তিনি বললেন, হাত দিয়ে কি দেখছ? আমি (এ ব্যাপারে) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছি যে, আমরা আল-মাগরিব (আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে) থাকি। আমাদের সঙ্গে বার্বার ও অগ্নিপূজক সম্প্রদায় বাস করে। তারা বকরী যবেহ করে আমাদের কাছে নিয়ে আসে। আমরা তাদের যবেহকৃত জন্তু খাই না। তারা আমাদের কাছে মশক নিয়ে আসে যাতে চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে (তখন আমরা কি করব? )। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, আমরা এ ব্যাপ্যরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন যে, পাকা (দাবা/পাশাগত) করলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে।
৭০২.    ইসহাক ইবনু মানসূর ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... ইবনু ওয়ালা আস-সাবাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমরা মাগরিবে (পশ্চিমাঞ্চল) থাকি। সেখানে আমাদের কাছে অগ্নিপূজকরা মশক নিয়ে আসে, যাতে পানি এবং চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে (আমরা সেগুলো ব্যবহার করব কি?)। তিনি বললেন, তা পান করে নাও। আমি বললাম, এটা কি আপনার নিজের অভিমত? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, চামড়া পাক (দাবা/পাশাগাত) করলেই তা পবিত্র হয়ে যায়।

পরিচ্ছেদঃ ২৮. তায়াম্মুমের বিবরণ


৭০৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ), থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক সফরে আমরা তাঁর সাথে বের হলাম। আমরা যখন বায়দা অথবা যাতুল জায়শ নামক স্থানে পৌছলাম তখন আমার হার খূলে পড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তালাশ করতে সেখানে থেমে গেলেন। আর লোকজনও তারসাথে সাথে থেমে পড়ল। তাদের কাছাকাছি কোথাও পানি ছিলনা এবং তাদের নিজেদের কাছেও পানি ছিল না। 

অতঃপর লোকজন আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে এসে বলতে লাগল, আপনি দেখছেন না আয়িশা (রাঃ) কি করল? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আটকে দিয়েছে এবং সেই সাথে সমস্ত লোককে আটকে রেখেছে। অথচ তাদের কাছাকাছি কোথাও পানি নেই আর না তাদের নিজেদের কাছে পানি আছে। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) আমার কাছে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি এসে বললেন, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সমস্ত লোকজনকে আটকে রেখেছ। অথচ না তারা পানির কাছাকাছি রয়েছে, আর না তাদের নিজেদের কাছে পানি আছে। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ভৎসনা করলেন এবং যতদুর বলার বললেন। তিনি তার হাত দিয়ে আমার পাজরে আঘাত করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর ওপর থাকার কারণে আমি নড়তেও পারলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়েই রইলেন। এমনি করে পানি বিহীনভাবে সকাল হল। 

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তখন উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) যিনি ছিলেন নকীবদের* অন্যতম বললেন, “হে আবূ বকর তনয়া! এটাই আপনার প্রথম বরকত নয়”। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি যে উটের ওপর ছিলাম সেটিকে চলার জন্য উঠালাম। তখন উক্ত হারটি তার নিচে পাওয়া গেল। 

* নাকীব- হিজরতের আগে যে সকল আনসার আকাবায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়'আত গ্রহন করেছিলেন, তাদেরকে নাকীব বলা হয়।
৭০৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবূ আসমা (রাঃ) থেকে একটি হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিযে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের মধ্যে কিছু লোককে তা খুঁজতে পাঠালেন। (পথে) তাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেল। তখন তারা উযূ (ওজু/অজু/অযু) ছাড়াই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। এ সময় উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম বদলা দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার ওপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখন আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য এর সমাধানের পথ করে দিয়েছেন এবং মুসলমানদের জন্য তাতে বরকত রেখেছেন।
৭০৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি একবার আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) ও আবূ মূসা (রাঃ) এর কাছে বসেছিলাম। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে আবূ আবদুল রহমান! কোন ব্যাক্তি যদি জানবাতওয়ালা হয় (যার ফলে তার গোসল ফরয হয়) এবং সে এক মাস যাবত পানি না পায় তাহলে সে কিভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে? 

আবদুল্লাহ বললেন, সে তায়ামুম করবে না যদিও একমাস পানি না পায়। আবূ মূসা বললেন, তাহলে সুরা মায়িদার এ আয়াত فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا (‘যদি তোমরা-পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর—’) এরকি হবে? 

আবদুল্লাহ বললেন, এ আয়াতের দ্বারা তাদেরকে যদি তায়ামুমের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে (ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে পৌছবে যে) পানি ঠান্ডা বোধ হলে তারা মাটি দিয়ে তায়ামুম শুরু করবে। আবূ মূসা (রাঃ) তখন আবদুল্লাহকে বললেন, আপনি কি আম্মারের বর্ণনা শোনেন নি (তিনি বলেন) যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোন এক প্রয়োজনে পাঠালেন। (পথিমধ্যে) আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম এবং পানি পেলাম না। তখন আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম চতুষ্পদ জন্তু যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ ঘটনা বললাম। 

তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য হাত দিয়ে এরুপ করাই যথেষ্ট ছিল-এই বলে তিনি তাঁর দুই হাত একবার মাটিতে মারলেন। তারপর বাম হাত দিয়ে ডান হাত মাসেহ করলেন এবং উভয় হাতের কজির উপরিভাগ ও মুখমন্ডল মাসহ করলেন। আবদুল্লাহ বললেন, তুমি কি দেখনি যে, উমার (রাঃ) আম্মার (রাঃ) -এর কথা যথেষ্ট মনে করেননি?
৭০৬.    আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ... শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বললেন, এরপর আবূ মু’আবিয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জন্য এরুপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তার উভয় হাত মাটিতে মারলেন। অতঃপর ঝেড়ে মুখমন্ডল এবং উভয় হাতের কবজি মাসহ করলেন।
৭০৭.    আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম আন-আবদী (রহঃ) ... আবদূর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি উমার (রাঃ) এর কাছে এসে বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি, কিন্তু পানি পাইনি (তখন কি করব?)। তিনি বললেন, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করোনা। তখন আম্মার (রাঃ) বললেন, “আমিরুল মুমিনীন! আপনার কি স্মরণ নেই যে, আমিও আপনি কোন এক অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর আমরা উভয়েই অপবিত্র হয়ে পড়লাম। আর ফোটাও পানি পেলাম না। তখন আপনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন না, কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। 

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ঘটনা জানালে (তিনি) বললেন, তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল যে, তোমার উভয় হাত মাটিতে মারতে তারপর তা ঝেড়ে ফেলে তা দিয়ে তোমার মূখমশুল ও উভয় হাতের কবজি মাসহ করতে” উমার (রাঃ) বললেন, আম্মার! আল্লাহকে ভয় কর। তিনি (আম্মার) বললেন, আপনি চাইলে আমি এটা আর বর্ননা করব না”। 

হাকাম বলেন, আব্দুর রহমান ইবনু আবযার পূত্র তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে আমার কাছে যার্‌র-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, অতঃপর উমার (রাঃ) বললেন, তোমার বর্ণনার দায়-দায়িত্ব তোমার উপরই অর্পণ করলাম।
৭০৮.    ইসহাক হবন মানসুর (রহঃ) ... আবদূর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে এক ব্যাক্তি উমার (রাঃ) এর কাছে এসে বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি এবং পানি পাইনি (তখন কি কবর?) এর পর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তাতে অতিরিক্ত আছে যে, আম্মার (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ তায়ালা আমার ওপর আপনার যে হক রেখেছেন (অর্থাৎ আপনাকে খলীফা বানিয়েছেন) তার প্রতি লক্ষ্য রেখে বলছিঃ আপনি চাইলে আমি আর কারো কাছে এটা বর্ণনা করব না। 

মুসলিম বলেন, নায়স ইবনু সা’দ এর সুত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস উমায়র থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, আমি এবং উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস আবদুর রহমান ইবনু ইয়াসার একবার আবূল জাহম ইবনুল হারিস ইবনু সিম্মা-আনসারীর কাছে গেলাম। তখন আবূল জাহম (রহঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বার বি'র-ই-জামাল (মদিনার নিকটবর্তি একটি স্থান) এর দিক থেকে আসছিলেন। অতঃপর পথিমধ্যে এক ব্যাক্তি তার সাথে সাক্ষাৎ করে সালাম দিল কিন্তু তিনি তার উত্তর দিলেন না বরং একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে তাঁর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত মাসহ করলেন। তারপর সালামের জবাব দিলেন।
৭০৯.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পেশাব করছিলেন। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করল। কিন্তু তিনি তার জবাব দিলেন না।

পরিচ্ছেদঃ ২৯. মুসলমান অপবিত্র হয় না, এর প্রমান


৭১০.    যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি (আবূ হুরায়রা) তখন (জানবাত) অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। এই কারণে তিনি আস্তে করে পাশ কেটে চলে গেলেন এবং গোসল করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তালাশ করলেন। পরে আসলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ হুরায়রা। তুমি কোথায় ছিলে? তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনার সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি অপবিত্রাবস্থায় ছিলাম। তাই আমি গোসল না করে আপনার মজলিসে বসা ভাল মনে করি নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুবহানাল্লাহ! মুমিন তো অপবিত্র হয় না।
৭১১.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা অপবিত্র থাকা অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। ফলে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাশ কেটে চলে গেলেন এবং গোসল করে পরে এলেন, এবং বললেন আমি জানবাত (গোসল ফরয হওয়ার কারণে নাপাক) অবস্থায় ছিলাম। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুসলিম তো নাপাক হয় না।

পরিচ্ছেদঃ ৩০. জানাবাত বা অন্য কারণে অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহ্‌ তা'আলার যিকর করা


৭১২.    আবূ কুরায়র মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময়ই আল্লাহর যিকর করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১. উযু না থাকা অবস্থায় খানা খাওয়া জায়েয; এতে কোন দোষ নেই। কারণ উযু ভঙ্গের সাথে সাথেই তা করা জরুরী নয়


৭১৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত-তামীমী ও আবূর-রাবী আয যাহরানী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার থেকে বের হলেন। ইতিমধ্যে খানা হাজির করা হল। লোকজন তাকে উজ়ুর কথা স্মরন করিয়ে দিল। তিনি বললেন, আমি কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা করছি যে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব?
৭১৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। তিনি পায়খানা থেকে এলেন। খানা হাযির করা হল। তাকে বলা হল আপনি কি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবেন না? তিনি বললেনঃ কেন আমি কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছি যে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব?
৭১৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার পায়খানায় গেলেন। পরে তিনি যখন (পায়খানা সেরে ফিরে) এলেন তখন তার সামনে খানা পেশ করা হল। অতঃপর তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনি কি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবেন না? তিনি বললেন, কেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য?
৭১৬.    মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবাল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার থেকে প্রয়োজন সেরে এলেন তার সামনে খানা পেশ করা হল। তিনি পানি স্পর্শ না করে (উযূ (ওজু/অজু/অযু) না করে) তা আহার করলেন। আমর ইবনু দিনার এর বর্ণনায় আরো অতিরিক্ত রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হল, আপনি যে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না? তিনি বললেন, আমি তো আর এখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা করিনি যে, উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব। আমর ইবনু দ্বীনার বলেন এ হাদীসটি তিনি সাঈদ ইবনুল হুওয়ায়রিস (রহঃ) থেকে শুনেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২. শৌচাগারে প্রবেশের দু'আ


৭১৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে প্রবেশ করার সময় বলতেন, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ (হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুষ্ট পুরুষ জ্বীন ও নারী জ্বীন থেকে পানাহ চাচ্ছি)।
৭১৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। এই বর্ণনায় أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ এর উল্লেখ আছে।

পরিচ্ছেদঃ বসা অবস্থায় ঘুমালে উযু ভঙ্গ হয় না


৭১৯.    যূহায়র ইবনু হারব ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, (একবার) সালাত (নামায/নামাজ) শুরু হয়ে যাচ্ছিল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির সাথে নিভৃতে আলাপ করছিলেন। অতঃপর তিনি এত দেরি করে এসে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলেন যে, লোকজন তখন (বসে বসে) ঘূমাচ্ছিলেন।
৭২০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আযআল-আনরাবি (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন। একবার সালাত (নামায/নামাজ) শুরু হচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির সাথে একান্তে আলাপ করছিলেন। তিনি এভাবে এতক্ষণ পর্যন্ত আলাপ করতে থাকলেন যে, তাঁর সাহাবীগণ (বসে বসে) ঘুমিয়ে পড়লেন। এরপর তিনি এসে তাদের সহ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৭২১.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... কাতাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ ঘুমিয়ে যেতেন, তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন না। বর্ণনাকারী শুবা বলেন, আমি কাতাদাকে বললাম আপনি কি নিজে আনাস (রাঃ) -এর কাছ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম”!
৭২২.    আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর আদ দারিমী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, (একবার) এশার জামাআত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তখন এক ব্যাক্তি বলল, আমার কিছু প্রয়োজন আছে। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তার সাথে আলাপ করতে লাগলেন। তিনি এতক্ষণ পর্যন্ত আলাপ করলেন যে, উপস্থিত সকলে অথবা কিছু লোক ঘুমিয়ে পড়ল (বসে বসে)। তারপর তাঁরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

No comments:

Powered by Blogger.