তোমার দর্শন তোমারই দান
তোমার দর্শন তোমারই দান
কাজী বাক্কার ইবনে কুতাবইবা (রাহ.) মিশরের বিখ্যাত একজন মুহাদ্দিস ও ফকীহ ছিলেন। যিনি ইমাম তাহাবীর (রহ.) উস্তাদও ছিলেন। ইমাম তাহাবী (রহ.) স্বীয় কিতাবের কোন কোন স্থানে তাঁর সনদে বর্ণিত কয়েকটি হাদীসও উল্লেখ করেন । সে যুগে মিশরের শাসনকর্তা ছিল আমম্মদ ইবনে তুলুন। আহমাদ ইবনে তুলুন ইমাম বাক্কারের হাদীসের দরসে অংশ গ্রহণ করতেন। দরসের শুরুতে রাজার প্রহরীরা ঘোষণা করতঃ আপনারা কেউ নিজ স্থান হতে সরবেন না। সকলেই যার যার স্থানে স্থির ভাবে বসে থাকুন। অতঃপর রাজা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সারিতে বসে পড়তেন এবং হাদীসের দরসে অংশগ্রহণ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজা ইমাম বাক্কারকে নির্দিষ্ট ভাতা ছাড়াও বাৎসরিক এক হাজার দীনার হাদিয়া পেশ করবেন। ঘটনাক্রমে একটি রাজনৈতিক ব্যাপারে তাদের মধ্যে মত বিভক্তি দেখা দিল। ইবনে তুলুন চাচ্ছিলেন কাজী বাক্কারের সুপারিশ ও সমর্থনে তাঁর প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে অন্য কাউকে তাঁর স্থলভিষিক্ত করতে। কিন্তু কাজী সাহেব এটাকে অসঙ্গত মনে করে সমর্থন দানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর সম্পর্কে যথেষ্ট টানাপোড়ন সৃষ্টি হল।
বিষয়টি এক পর্যায়ে এতদূর গড়াল যে, বাদশা কাজী সাহেবকে গ্রেফতার করলেন এবং তাকে ইতিপূর্বে হাদিয়া স্বপ্রূপ দেওয়া সকল স্বর্ণ মুদ্রা ফেরৎ দিতে বললেন। বাদশা কাজী সাহেবকে আঠার বৎসর যাবৎ এক হাজার দীনার করে দিয়ে আসছিলেন। বিধায় এখন আঠার হাজার স্বর্ণ মুদ্রা তাৎক্ষণিক ফেরৎ দেওয়ার ফরমান জারি করলেন। ইবনে তুলুন ভেবেছিলেন যে, এ প্রস্তাব কাজী সাহেবকে যথেষ্ট স্তবদ্ধ ও জব্দ করে ফেলবে। কিন্তু কাজী সাহেব নিশ্চিন্তে পয়গাম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজ কক্ষের ভেতরে গেলেন এবং আঠারটি থলে নিয়ে আসলেন, যার প্রত্যেক টিতে এক হাজার দীনার করে ছিল। ইবনে তুলুন থলে গুলো ভাল করে উলটে পালটে দেখলেন যে, হুবুহু সে থলেই যা তিনি কাজী সাহেবের নিকট প্রতি বছর পাঠাতেন। তাঁর মুখে আটা সীল মোহর পর্যন্ত অক্ষতবস্থায় রয়েছে। ইবনে তুলুন রীতিমত হতভম্ব হয়ে গেলেন যে, কাজী সাহেব একটি থলে খুকেও দেখেননি! যেভাবে দেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই হেফাযত করে রেখেছেন । পরবর্তীতে জানা গেল যে, কাজী বাক্কার থলেগুলো এই ভেবে খোলেননি যে, আজ আমার সঙ্গে বাদশাহ যে ভাল সম্পর্ক আছে তা সর্বদা অটুট নাও থাকতে পারে। তখন ইচ্ছে করলে এ গুলো তাকে হস্তান্তর করা যাবে। ইবনে তুলুন কাজী বাক্কারের (রহ.) দূরদর্শীতা, বিচক্ষণতা, আত্মপ্রত্যয়, চাঙ্গা মনোবল ও পরনির্ভরশীলতা মুক্তির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনে লজ্জায় বিগলিত হয়ে মাথা নোয়াতে বাধ্য হল।-আন – নুজুমুয-যাহেরা ৩/১৯
No comments: