Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ দু’আ অধ্যায় ২ (৫৯১৬-৫৯৬৯)

 হাদিস ৫৯১৬

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সা-আলাবা ইবনু সুয়ায়র (রাঃ), যার মাথায় (শৈশবে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত বুলিয়ে ছিলেন, তিনি বর্ননা করেন যে, তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওকাসকে বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) এক রাকা-আত আদায় করতে দেখেছেন।

হাদিস ৫৯১৭

আদম (রহঃ) আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ (রাঃ)-এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এই: একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমৎ বর্ষন করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল।

হাদিস ৫৯১৮

ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। একবার আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই যে আসসালামু আলাইকা- তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে ইয়া আল্লাহ আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ -এর উপর খাছ রহমত বর্ষন করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত বর্ষন করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর এবং ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাবিল করেছেন।

হাদিস ৫৯১৯

সূলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ আওফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, যখন কেউ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তার সাদাকা নিয়ে আসতেন, তখন তিনি দুআ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি তারউপর রহমত বর্ষণ করুন। এভাবে আমার পিতা একদিন সাদাকা নিয়ে তার কাছে এলে তিনি দু আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি আবূ আওফার পরিবারবর্গের উপর রহমত করুন।

হাদিস ৫৯২০

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুমায়দ সাঈদী (রহঃ) বর্ণনা করেন। একবার লোকেরা বললো: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনার উপর কিভাবে দরুদ পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে, ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের ও তার সহধর্মিনাগণ এবং তার সন্তান-সন্ততিগণের উপর রহমত নাযিল করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ, তার সহধর্মিনাগণ এবং তার আওলাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাষিল করেছেন। আপনি অতি প্রশংসিত এবং উচ্চ মর্যাদাশীল।

হাদিস ৫৯২১

আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ দু’আ করতে শুনেছেন: ইয়া আল্লাহ! যদি আমি কোন মুমিন ব্যাক্তিকে মন্দ বলে থাকি, তবে আপনি সেটাকে কিয়ামতের দিন তার জন্য আপনার নৈকট্য লাভের উপায় বানিয়ে দিন।

হাদিস ৫৯২২

হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। একবার লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নানা প্রশ্ন করতে লাগল, এমনকি প্রশ্ন করতে করতে তাকে বিরক্ত তবে ফেললো। এতে তিনি রাগ করলেন এবং মিম্বরে আরোহন করে বললেনঃ আজ তোমরা যত প্রশ্ন করবে আমি তোমাদের সব প্রশ্নেরই বর্ণনা সহকারে জবাব দিব। এ সময় আমি ডানে ও বামে তাকাতে লাগলাম এবং দেখলাম যে, প্রতিটি লোকই নিজের কাপড় দিয়ে মাথা পেচিয়ে কাঁদছে। এমন সময় একজন লোক, যাকে লোকের সাথে বিবাদের সময় তার বাপের নাম নিয়ে ডাকা হতো না, সে প্রশ্ন করলো: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ ইসায়ফা। তখন উমর (রাঃ) বলতে লাগলেন আমরা আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ কে রাসুল হিসেবে গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট। আমরা ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি ভাল মন্দের যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তা আর কখনো দেখিনি। জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য আমাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে, যেন এ দুটি এ দেয়ালের পেছনেই অবস্থিত। রাবী কাতাদাহ (রহঃ)- হাদীস উল্লেখ করার সময় এ আয়াতটি পড়তেন। (অর্থ) হে মুমিনগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে।

হাদিস ৫৯২৩

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে আমার খিদমত করার জন্য একটি ছেলে নিয়ে এস। আবূ তালহা (রাঃ) গিয়ে আমাকে তার সাওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নিয়ে এলেন। তখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমত করে আসছি। যখনই কোন বিপদ দেখা দিত, তখন আমি তাঁকে বেশী করে এ দুআ পড়তে শুনতাম: ইয়া আল্লাহ! আমি দুশ্চিতা, পেরেশানী, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, ভীরুতা! ঋন এর বোঝা এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আমি সর্বদা তার খিদমত করে আসছি , এমন কি যখন আমরা খায়বার অভিযান থেতে ফিরে আসছিলাম, তখন তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে সঙ্গে নিয়ে আসলেন, তিনি তাকে গনীমতের মাল থেকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তখন আমি তাকে দেখছিলাম যে, তিনি তাকে একখানা চাঁদর অথবা একখানা কম্বল দিয়ে ঢেকে নিজের পেছনে বসিয়েছিলেন। যখন আমরা সবাই সাহবা নামক স্থানে পৌছলাম, তখন আমরা (সেখানে থেমে) -হাইস- নামক খাবার তৈরী করে এবং চামড়ার দস্তরখানে রাখলাম। তিনি আমাকে পাঠালেন, আমি গিয়ে কয়েক জন লোককে দাওয়াত করলাম। তারা এসে খেয়ে গেলেন। এটি ছিল সাফিয়্যার সঙ্গে তার বাসর যাপন। তারপর তিনি রওয়ানা হলে ওহোদ পর্বত তাঁর সামনে দেখা গেল তখন তিনি বললেনঃ এ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসী। তারপর যখন মদিনার কাছে পৌছলেন, তখন তিনি বললেন ইয়া আল্লাহ! আমি মদিনার দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম (সম্মানিত) করছি, যে রকম ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে হারাম (সম্মানিত) করেছিলেন। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের মুদ্দ ও সা এর মধ্যে বরকত দিন।

হাদিস ৫৯২৪

হুমায়দী (রহঃ) মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) বর্ননা করেছেন। উম্মে খালিদ বিনত খালিদ (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে শুনেছি। রাবী বলেন যে, এ হাদীস আমি উম্মে খালিদ ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আর কাউকে বলতে শুনি নি।

হাদিস ৫৯২৫

আদম (রহঃ) মুসআব (রহঃ) বর্ণনা করেন, সা-দ (রাঃ) পাচটি জিনিস থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে নির্দেশ দিতেন এবং তিনি এগুলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখ করতেন। তিনি এগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে এ দুআ পড়তে নির্দেশ দিতেন: ইয়া আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আমি কাপুরষতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি , আমি অবহেলিত বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আর আমি দুনিয়ার ফিতনা অর্থাৎ দাজ্জালের ফিতনা থেকেও আপনার আশ্রয় চাচ্ছি এবং আমি কবরের আযাব থেকেও আপনার আশ্রয় চাচ্ছি।

হাদিস ৫৯২৬

উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ঁআয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার আমার নিকট মদিনার দু-জন ইয়াহুদী বৃদ্ধা মহিলা এলেন। তারা আমাকে বললেন যে, কবরবাসীদের তাদের কবরে আযাব দেওয়া হয়ে থাকে। তখন আমি তাদের একথা মিথ্যা বলে অভিহিত করলাম। আমার বিবেক তাদের কথাটিকে সত্য বলে মানতে চাইল না। তারা দুজন বেরিয়ে গেলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন। আমি তাকে বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার নিকট দু-জন বৃদ্ধা এসেছিলেন। তারপর আমি তাকে তাদের কথা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তারা দু-জন সত্যই বলেছে। নিশ্চয়ই কবরবাসীদের এমন আযাব দেওয়া হয়ে থাকে যা সকল চতুষ্পদ জীবজন্তু শুনে থাকে। এরপর থেকে আমি তাকে সর্বদা প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ) কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে দেখেছি।

হাদিস ৫৯২৭

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপূরষতা এবং বার্ধক্য থেকে। আরও আশ্রয় চাচ্ছি, কবরের আযাব থেকে। আরও আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মুত্যুর ফিতনা থেকে।

হাদিস ৫৯২৮

মুআল্লাহ ইবনু আস্বাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাই অলসতা, অতিরিক্ত বার্ধক্যা গুনাহ আর ঝণ থেকে, আর কবরের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে। আর জাহান্নামের ফিতনা এবং এর আযাব থেকে, আর ধনবান হওয়ার পরীক্কার মন্দ পরিনাম থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই দারিদ্রের অভিশাপ থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই মসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ইয়া আল্লাহ! আমার গুনাহ-এর দাগগুলো থেকে আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার করে দিন এবং আমার অন্তরকে সমস্ত গুনাহ এর ময়লা থেকে এমনভাবে পরিস্কার করে দিন, যেভাবে আপনি সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে সাফ করার ব্যবস্থা করে থাকেন। আর আমার ও আমার গুনাহগুলোর মধ্যে এতটা দূরত্ব করে দিন, যত দূরত্ব আপনি দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন।

হাদিস ৫৯২৯

খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই-দুশ্চিতা, পেরেশানী, অক্ষমতা, অলসতা, কাপূরষতা! কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও লোকজনের আধিপত্য থেকে।

হাদিস ৫৯৩০

মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি পাচটি কাজ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করতেন। তিনি দু’আ-করতেন: ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আমি আশ্রয় চাই কাপুরষতা থেকে, আমি আশ্রয় চাই অবহেলিত বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই দুনিয়ার বড় ফিতনা (দাজ্জালের ফিতনা) থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে।

হাদিস ৫৯৩১

আবূ মামার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই এবং আমি আপনার কাছে কাপূরষতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাই দুঃসহ দীর্ঘায়ু থেকে এবং আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

হাদিস ৫৯৩২

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি যেভাবে মক্কাকে আমাদের জন্য প্রিয় করে দিয়েছেন, মদিনাকেও সেভাবে অথবা এর চাইতে বেশী আমাদের কাছে প্রিয় করে দিন। আর মদিনার জুর “জুহফা” নামক স্থানের দিকে সরিয়ে দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের মাপের ও ওযনের পাত্রে বরকত দিন।

হাদিস ৫৯৩৩

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় আমি রোগে আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়েছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় আমাকে দেখতে এলেন। তখন আমি বললাম আমি যে রোগ-ষন্ত্রনায় আক্রান্ত তাতো আপনি দেখছেন। আমি একজন ধনবান লোক। আমার একাটি মেয়ে ছাড়া আর কেউ ওয়ারিস নেই। তাই আমি কি আমার দু তৃতীয়াংশ মাল সাদাকা করে দিতে পারি? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম তবে অর্ধেক মাল? তিনি বললেনঃ না। এক তৃতীমাংশ অনেক। তোমার ওয়ারিসদের লোকের কাছে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করার মত অভাবী রেখে যাওয়ার চাইতে তাদের ধনবান রেখে যাওয়া তোমার জন্য অনেক উত্তম। আর তুমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিটি লাভের জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেওয়া হবে। এমন কি (সে উদ্দেশ্যে) তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে লুকমাটি তুলে দিয়ে থাকো তোমাকে এর প্রতিদান দেওয়া হবে। আমি বললাম তা হলে আমার সঙ্গীগণের পরেও কি আমি বেচে থাকবো? তিনি বললেন নিশ্চয়ই তুমি তাদের পরে বেচে থাকলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু নেক আমল করনা কেন, এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা ও সম্মান আরও বেড়ে যাবে। আশা করা যায় যে, তুমি আরও কিছু দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। এমন কি তোমার দ্বারা অনেক কাওম উপকৃত হবে। আর অনেক কাওম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারপর তিনি দুআ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার (মুহাজির) সাহাবীগণের হিজরতকে বহাল রাখুন। আর তাদের পেছনে ফিরে যেতে দিবেন না। স্বাদ ইবনু খাওলাহ (রাঃ)-এর দূর্ভাগ্য (কারণ তিনি ইচ্ছা না থাকা সত্তেও বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় মক্কায় মারা যান) সা’দ (রাঃ) বলেন মক্কাতে ওফাতের কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। 

 হাদিস ৫৯৩৪

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । যে সব বাক্য দিয়ে আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন, সে সব বাক্যদ্বারা তোমরাও আশ্রয় চাও। তিনি বলতেন “ইয়া আল্লাহ! আমি কাপুরষতা থেকে, আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আমি বয়সের অসহায়ত্ব থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আর আমি দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

হাদিস ৫৯৩৫

ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি অলসতা, অতি বার্ধক্য, ঝণ আর থেকে আপনার আশ্রয় চাই। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব, জাহান্নামের ফিতনা, কবরের আযাব, প্রাচুর্যের ফিতনার কুফল, দারিদ্রের ফিতনার কুফল এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ইইয়া আল্লাহ আপনি আমার সমুদয় গুনাহ বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধূয়ে দিন। আমার অন্তর যাবতীয় পাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করুন, যেভাবে সাদা কাপড় ময়লাথেকে পরিচ্ছন্ন করা হয়। আঁমার ও আমার গুনাহ সমূহের মধ্যে এতটা ব্যবধান করে দিন যতটা ব্যবধান আপনি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যে করেছেন।

হাদিস ৫৯৩৬

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) -আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে বলতেন ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই জাহান্নামের ফিতনা, জাহান্নামের আযাব থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই কবরের ফিতনা থেকে এবং আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই প্রাচুর্যের ফিতনা থেকে, আর আমি আশ্রয় চাই আজাবের ফিতনা থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।

হাদিস ৫৯৩৭

মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পাঠ করতেন ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দোযখের সংকট, দোযখের আযাব, কবরের সংকট, কবরে আযাব, প্রাচুর্যের ফিতনা, ও অভাবের ফিতনা থেকে পানাহ চাই। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট মসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই। আয় আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধূয়ে দিন। আর আমার অন্তর গুনাহ থেকে এমনভাবে সাফ করে দিন, যেভাবে আপনি সাদা কাপড়ের ময়লা পরিস্কার করে থাকেন এবং আমাকে আমার গুনাহ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রাখুন, পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে যত দুরে রেখেছেন। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অলসতা গুনাহ এবং রোগ থেকে।

হাদিস ৫৯৩৮

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উম্মে সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস আপনার খাদিম আপনি আল্লাহর নিকট তার জন্য দুআ করুন। তিনি দুআ করলেন: ইয়া আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বাড়িয়ে দিন, আর আপনি তাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন। হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে অনুরুপ বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদিস ৫৯৩৯

আবূ যায়েদ সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মে সূলায়ম বলেন, ইইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস আপনার খাদিম। তখন তিনি দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।

হাদিস ৫৯৪০

মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ আবূ মুসআব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যাবতীয় কাজের জন্য ইতিখারা শিক্ষা দিতেন, যেমনভাবে তিনি কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। (আর বলতেন) যখন তোমাদের কারো কোন বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয়, তখন সে যেন দূ”রাক আত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে এরুপ দূ”আ করে। (অর্থ ৪) ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের দ্বারা আমার উদ্দিষ্ট কাজের মঙ্গলামংল জানতে চাই এবং আপনার ক্ষমতা বলে আমি কাজে সক্ষম হতে চাই। আহা আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। কারণ, আপনি ক্ষমতাবান আর আমার কোন ক্ষমতা নেই এবং আপনি জানেন আর আমি জানিনা। আপনই গায়িব সম্পর্কে জ্ঞাল রাখেন। ইয়া আল্লাহ! যদি আপনার জানে এ কাজটিকে আমার দ্বীনের ব্যাপারে, আমার জীবন ধারণে ও শেষ পরিণতিতে; রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেনঃ আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে মঙ্গলজনক বলে জানেন তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন। আর যদি আমার এ কাজটি আমার দ্বীনের ব্যাপারে, জীবন ধারণে ও শেষ পরিণতিতে রাবী বলেন কিংবা তিনি বলেছেন দুনিয়ায় আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে, আপনি আমার জন্য অমঙ্গলজনক মনে করেন, তবে আপনি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নিন। আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আর যেখানেই হোক, আমার জন্য মঙ্গলজনক কাজ নির্ধারিত করে দিন। তারপর আমাকে আমার নির্ধারিত কাজের প্রতি তৃপ্ত রাখুন। রাবী বলেন, সে যেন এসময় তার প্রয়োজনের বিষয়ই উল্লেখ করে।

হাদিস ৫৯৪১

মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার পানি আনিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি উবায়দ আবূ আমরকে ক্ষমা করে দিন। আমি তখন তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। আরও দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে কিয়ামতের দিন অনেক লোকের উপর মর্যাদাবান করুন।

হাদিস ৫৯৪২

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক সফরে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা উচু জায়গায় উঠতাম তখন উচ্চস্বরে আল্লাহ আল্লাহ বলতাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে লোকেরা! তোমরা নিজেদের জানের উপর দয়া করো। কারণ তোমরা কোন বধির অথবা অনুপস্থিতকে আহবান করছ না বরং তোমরা আহবান করছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা সত্তাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার কাছে এলেন- তখন আমি মনে মনে পড়ছিলাম: লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ তখন তিনি বলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তুমি পড়বে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। কারণ এ দু’আ হল বেহেশ্তের রত্ন ভাণ্ডার সমূহের অন্যতম। অথবা তিনি বললেন আমি কি তোমাকে এমন একটি বস্তুর সন্ধান দেব না যে বাক্যটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? সেটি থেকে একটি রত্নভাণ্ডার হল লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

হাদিস ৫৯৪৩

ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা থেকে ফিরতেন, তখন প্রতিটি উচু জায়গার উপর তিনবার আল্লাহ আল্লাহ- বলতেন। তারপর বলতেন আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব, হামদও তারই জন্য, তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী, আপন প্রতিপালকের প্রশংসাকারী, আল্লাহ তা-আলা নিজ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। তিনি তাঁর বান্দা-কে সাহায্য করেছেন, আর মুশরীক দলকে তিনি একাই প্রতিহত করেছেন।

হাদিস ৫৯৪৪

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) বর্ননা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু আওফের গায়ে হলুদ রং দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: ব্যাপার কি? তিনি বললেনঃ আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি এক খণ্ড সোনার বিনিময়ে। তিনি দুআ করলেন: আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন। একটা বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওলীমা করো।

হাদিস ৫৯৪৫

আবূ নূমান (রহঃ) জাবির (রাঃ) -বলেন- আমার আব্বা সাত অথবা নয়জন মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেন। তারপর আমি একজন-মহিলাকে বিয়ে করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললামঃ হা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, সে মহিলাটি কুমারী না অকুমারী? আমি বললামঃ অকুমারী। তিনি বললেন, তুমি একজন কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তা হলে তুমি তার সঙ্গে ক্রীড়া -কৌতুক করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে ক্রীড়া কৌতুক করত। আর তুমি তার সাথে এবং সেও তোমার সাথে হাসীখুশী করতো। আমি বললাম: আমার আব্বা সাত অথবা নয়জন মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেছেন। সূতরাং আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তাদের মত কুমারী বিয়ে করে আনি। এজন্য আমি এমন একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি যে তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। তখন তিনি দুআ করলেন আল্লাহ! তোমাকে বরকত দিন।

হাদিস ৫৯৪৬

উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ স্ত্রীর সঙ্গে সংত হওয়ার ইচ্ছা করলে সে বলবে আল্লাহর নামে! হে আল্লাহ আপনি আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আপনি আমাদেরকে যা দান করেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন তারপর তাদের এ মিলনের মধ্যে যদি কোন সন্তান নির্ধারিত থাকে তা হলে শয়তান এ সন্তানকে কখনো ক্ষতি করতে পরবে না।

হাদিস ৫৯৪৭

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দুআ পড়তেন: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের অগ্নিযন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর। (২: ২০১)

হাদিস ৫৯৪৮

ফারওয়া ইবনু আবূল মাগরা (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেভাবে লেখা শিখাণো হতো ঠিক এভাবেই আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুঁআ শিখাতেন। ইয়া আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আর আমি ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আর আপনার আশ্রয় চাই আমাদের বার্ধক্যের অসহায়ত্বের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া থেকে। আর আনি আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে।

হাদিস ৫৯৪৯

ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আয়িশা। (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর উপর যাদু করা হলো। এমন কি তার খেয়াল হতো যে! তিনি একটা কাজ করেছেন। অথচ তিনি তা করেন নি। সে জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। এরপর তিনি (আয়িশা (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি জানতে পেরেছ কি? আমি যে বিষয়টা আল্লাহর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম, তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। -আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ তা কি? তিনি বললেনঃ (স্বপ্নের মধ্যে) আমার নিকট দু-জন লোক আসলেন এবং একজন আমার মাথার কাছে, আরেক জন আমার উভয় পায়ের কাছে বসলেন। তারপর একজন তার সাথীকে জিজ্ঞাসা করলেন এ ব্যাক্তির রোগটা কি? তখন অপর জন বললেনঃ তিনি যাদুতে আক্রান্ত। আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাকে কে যাদু করেছে? অপর জন বললেনঃ লাবীদ ইবনু আসাম। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তা কিসের মধ্যে করেছে? তিনি বললেন! চিরুনী, ছেড়া চুল ও কাঁচা খেজুর গাছের খোশার মধ্যে। পূনরায় তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কোথায়? তিনি বললেনঃ যুরাইক গোত্রের -মুআরওয়ান- নামক কুপের মধ্যে। আয়িশা। (রাঃ) বর্ণনা করেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং (তা কুপ থেকে বের করিয়ে নিয়ে) আয়িশার কাছে ফিরে এসে বললেনঃ আল্লাহর কসম! সেই কুপের পানি যেন মেহেন্দি তলানী পানি এবং এর (নিকটস্থ) খেজুর গাছগুলো ঠিক যেন শয়তানের মাথা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে তার কাছে কুপের বিস্তারিত অবস্থা জানালেন। তখন আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এ ব্যাপারটা লোক সমুক্ষে প্রকাশ করে দিলেন না কেন? তিনি বললেন আল্লাহ তা-আলা তো আমাকে রোগমুক্ত করেছেন। সুতরাং আমি লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিস্তার করা পছন্দ করি না। ঈসা ইবনু ইউনূস ও লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু করা হলে তিনি বারবার দুআ করলেন, এভাবে পূর্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। 

 হাদিস ৫৯৫০

ইবনু সালাম (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খন্দকের যুদ্ধে) শত্রু বাহিনীর উপর বদ দু আ করেছেন: ইয়া আল্লাহ! হে কিতাব অবর্তীর্ণকারী! হে ত্বরিৎ হিসাব গ্রহণকারী! আপনি শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করুন। তাদের পরাস্ত করুন। এবং তাদের প্রকিম্পত করুন।

হাদিস ৫৯৫১

মুয়ায ইবনু ফাযালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষ রাকঁআতে যখন সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ- বলতেন তখন কুনূতে (নাবিলা) পড়তেন ইয়া আল্লাহ! আইয়্যাশ ইবনু আবূ রাবীয়াকে নাযাত দিন। ইয়া আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে মুক্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে মুক্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি দুর্বল মুমিনদের নাযাত দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুযার গোত্রকে কঠোর শাস্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরের ন্যায় দূর্ভিক্ষ দিন।

হাদিস ৫৯৫২

হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা সারিয়্যা (ক্ষুদ্র বাহিনী) পাঠালেন। তাদের কুররা বলা হতো। তাদের হত্যা করা হলো। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এদের ব্যাপারে যেরুপ রাগাম্বিত দেখেছি অন্য কারণে সেরুপ রাগান্বিত দেখিনি। এজন্য তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) মাসব্যাপি কুনুত পড়লেন। তিনি বলতেন: উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর নাফফরমানী করেছে।

হাদিস ৫৯৫৩

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করার সময় বলতো -আসসামু আলাইকা” (ধংস তোমার প্রতি)। আয়িশা (রাঃ) তাদের এ বাক্যের কুমতলব বুঝতে পেরে বললেন -আলাইকুমুসসাম ওয়াললানত- (ধংস তোমাদের প্রতি ও লা-নত)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আয়িশা থামো! আল্লাহ তাআলা সমুদয় বিষয়েই নমরতা পছন্দ করেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন তারা কি বলেছে আপনি কি তা শুনেনি? তিনি বললেন- আমি তাদের প্রতি উত্তরে -ওয়াআলাকুম- বলেছি - তা তুমি শুননি? আমি বলেছি তোমাদের উপর।

হাদিস ৫৯৫৪

মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তাদের গৃহ এবং কবরকে আগুন ভর্তি করে দিন। কেননা তারা আমাদের সালাতুল (নামায) উস্তা- থেকে বিরত রেখেছে। এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল। আর , সালাতুল (নামায) উস্তা- হল আসর সালাত (নামায/নামাজ)।

হাদিস ৫৯৫৫

আলী ইনন আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তুফাইল ইবনু আমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন দাওস গোত্র নাফরমানী করেছে ও অবাধ্য হয়েছে এবং ইসলাম গ্রহন করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের উপরবদ দুআ করুন। সাহাবীগণ ধারণা করলেন যে! তিনি তাদের উপর বদ দু’আই করবেন। কিন্তু তিনি (তাদের জন্য-) দু আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন। আর তাদের মুসলমান বানিয়ে নিয়ে আসুন।

হাদিস ৫৯৫৬

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ দুআ করতেন হে আল্লাহ! আপনি মাফ করে দিন আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আমার যেসব গুনাহ আপনি আমার চাইতে বেশী জানেন। ইয়া আল্লাহ আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটিআমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ ও আমার অজ্ঞতা এবং আমার উপহাসমূলক গুনাহ আর এ রকম গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে। ইয়া আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করে দিন; যেসব গুনাহ আমি আগে করেছি। আপনই আগে বাড়ান আপনই পশ্চাতে ফেলেন এবং আপনই সব কিছুব উপর সর্বশক্তিমান।

হাদিস ৫৯৫৭

মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঁআ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি মাফ করে দিন আমার ভূল-ক্রটিজনিত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আর যা আপনি আমার চাইতে অধিক জানেন। ইয়া আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার হাসি-তামাশামুলক গুনাহ, আমার অবাধ্যতামূলক গুনাহ, আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ এবং ইচ্ছাকৃত গুনাহ, আর এসব গুনাহ যে আমার মধ্যে রয়েছে।

হাদিস ৫৯৫৮

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আবূল কাসিম বলেন, জুমু আর দিনে এমন একটি মুহর্ত আছে যদি সে মুহর্তটিতে কোন মুসলমান দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণের জন্য দুআ করে, তবে তা আল্লাহ তাকে দান করবেন। তিনি এ হাদীস বর্ণনার সময় আপন হাত দিয়ে ইশারা করেন (ইশারাতে) আমরা বুঝলাম যে, তিনি মুহর্তটির সংক্ষিপ্ততার দিকে ইংগিত করেছেন।

হাদিস ৫৯৫৯

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার একদল ইয়াহুদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে সালাম দিতে গিয়ে বললো:- আসসামু আলাইকা-। তিনি বললেনঃ ওয়াআলাইকুম-। কিন্তু আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ -আলসামু আলাইকুম ওয়া লালানাকুমূল্লাহ ওয়া গাযাবা আলাইকুম” (তোমাদের উপর ধংস নাযিল হোক, আল্লাহ তোমাদের উপর লানত করুন আর তোমারদের উপর গযব নাযিল করুন)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে আয়িশা তুমি থামো! তুমি নমর ব্যবহার করো, আর তুমি কঠোরতা পরিহার করো। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তারা কি বলেছে আপনি কি শুনেন নি? তিনি বললেনঃ আমি যা বললাম, তা কি তুমি শুননি? আমি তো তাদের কথাটা তাদের উপরই ফিরিয়ে দিলাম। সূতরাং তাদের উপর আমার বদ দুআ কবুল হয়ে যাবে। কিন্তু আমার সম্বন্ধে তাদের বদ দুআ কবুল হবে না।

হাদিস ৫৯৬০

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কারী (ইমাম) আমীন বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারন এ সময় ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে! অগ্র পূর্বের সবগুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

হাদিস ৫৯৬১

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আলা কুল্লি সায়ইন কাদির) যে ব্যাক্তি দিনের মধ্যে একশ বার পড়বে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, হামদ তারই, সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান- সে একশ- গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য একশটি নেকী লেখা হবে, আর তার একশ-টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওইয়ালা আমল আর কারো হবে না। তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে।

হাদিস ৫৯৬২

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আমর ইবনু মায়মুন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (এ কালেমাগুলি) দশবার পরবে সে ঐ ব্যাক্তির সমান হয়ে যাবে, যে ব্যাক্তি ইসমাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বংশ থেকে একটা গোলাম আযাদ করে দিয়েছে। আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিসটা তার কাছেও বলেছেন।

হাদিস ৫৯৬৩

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি প্রত্যহ একশত বার সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গুনাহগুলি মাফ করে দেওয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হলেও।

হাদিস ৫৯৬৪

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি বাক্য এমন যে, মুখে তার উচ্চারন অতি সহজ কিন্তু পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলঃ সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবাহানআল্লাহিল আযীম।

হাদিস ৫৯৬৫

মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার রবের যিকর করে, আর যে ব্যাক্তি যিকর করে না, তাদের দু-জনের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের।

হাদিস ৫৯৬৬

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যারা আল্লাহর যিকরে রত লোকদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। যখন তারা কোথাও আল্লাহর যিকরে রত লোকদের দেখতে পান, তখন তাঁদের একজন অন্যজনকে ডাকাডাকি করে বলেনঃ তোমরা নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদনের জন্য এদিকে চলে এসো। তখন তাঁরা সবাই এসে তাদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটস্থ আসমান পর্যন্ত। তখন তাদের রব তাদের জিজ্ঞাসা করেন (অথচ এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের চাইতে তিনই বেশি জানেন) আমার বান্দ্বারা কি বলছে? তখন তারা জবাব দেন, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করছে, তারা আপনার প্রশংসা করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ব বর্ণনা করয়ে তখন তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তারা বলবেনঃ হে আমাদের রব, আপনার কসম! তালা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তারা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও বেশি আপনার ইবাদত করত, আরো অখিক আপনার মাহাত্ব বর্ননা করত, আর বেশি বেশি আপনার পবিত্রতা বর্ননা করত। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি বলবেন, তারা আমার কাছে কি চায়? তারা বলবেন! তারা আপনার কাচে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম হে রব। তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন যদি তারা তা দেখত তবে তারা কি করত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরো বেশি লোভ করত, আরো অধিক চাইত এবং এর জন্য আরো অতিশয় উৎসাহী হয়ে উঠত। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কিসের থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলবেন, জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দিবেন, আল্লাহর কসম! হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন তাদের কি হত? তারা বলবেন, যদি তারা তা দেখত, তবে তারা এ থেকে দ্রুত পালিয়েযেত এবং একে সাংঘাতিক ভয় করত। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবেন, তাদের মধ্যে অমুক ব্যাক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তারা এমন উপবিষ্টকারীবৃন্দ যাদের বৈঠকে অংশগ্রহনকারী বিমুখ হয় না।

হাদিস ৫৯৬৭

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল আবূল হাসান (রহঃ) আবূ মূসা আল আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গিরিপথ দিয়ে অথবা বর্ণনাকারী বলেনঃ একটি চুড়া হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি এর উগরে উঠে জোরে বললঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। আবূ মূসা বলেনঃ তখন রাসুল তার খচ্চরে আরোহী ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুপস্হিত কাউকে ডাকছো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা বললেনঃ হে আবদুল্লাহ আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনাগারের একটি বাক্য বাতলে দেব না? আমি বললাম, হ্যা, বাতলে দিন। তিনি বললেনঃ তা হল “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।

হাদিস ৫৯৬৮

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাঁআলার নিরানব্বই নাম আছে (এক কম একশ নাম)। যে ব্যাক্তি এগুলোর হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা-আলা বেজোড়। তাই তিনি রেজোড়ই পছন্দ করেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ “মান আহসাহা” অর্থ যে হিফাযত করল।

হাদিস ৫৯৬৯

উমর ইবনু হাফস (রহঃ) শাকীক (রহঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর (ওয়ায শোনার) জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ইয়াযিদ ইবনু মুয়াবিয়া (রাঃ) এসে পড়লেন। তখন আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি বসবেন না? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি ভেতরে প্রবেশ করব এবং আপনাদের কাছে আপনাদের সঙ্গীকে নিয়ে আসব। নতূবা আমি ফিরে এসে বসব। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বেরিয়ে এলেন। তিনি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমি তো আপনাদের এখানে উপস্থিতির কথা অবহিত ছিলাম। কিন্তু আপনাদের নিকট বেরিয়ে আসতে আমাকে বাধা দিচ্ছি এ কথাটা যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ায নসীহত করতে আমাদের অবকাশ দিতেন, যাতে আমাদের বিরক্তির কারণ না হয়। 

No comments:

Powered by Blogger.