বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ দু’আ অধ্যায় ১ (৫৮৬৭-৫৯১৫)
হাদিস ৫৮৬৭
আবূ মামার (রহঃ) শাদ্দাদ ইবনু উস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু’আ পড়া--হে আল্লাহ তুমই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়াঁমত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। যে ব্যাক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যাক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। ((اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ ) উচ্চারণ:“আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা”।
হাদিস ৫৮৬৮
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহব কসম! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে বেশী ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।
হাদিস ৫৮৬৯
আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) দুটি হাদীস বর্ননা করেছেন। একটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আর অন্যটি তার নিজ থেকে। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যাক্তি তার গুনাহ গুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পাহাড়ের নীচে বসা আছে, আর সে আশংকা করছে যে- সম্ভবত পাহাড়টা তার উপর ধসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যাক্তি তার গুনাহুগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবূ শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন। তারপর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মনে কর কোন এক ব্যাক্তি (সফরের অবস্থায় বিশ্রামের জন্য) কোন এক স্থানে অবতরণ করলো, সেখানে প্রানেরও ভয় ছিল। তার সাথে তার সফরের বাহন ছিল। যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো এবং জেগে দেখলো তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। রাবী বলেনঃ আল্লাহ যা চাইলেন তা হল। তখন সে বললো যে, আমি যে জায়গায় ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর জেগে দেখলো যে তার বাহনটি তার পাশে দাড়িয়ে আছে। তখন সে ব্যাক্তি যে পরিমাণ খুশী হলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার তাওবা করার কারণে এর চাইতেও অনেক বেশী খুশী হন। আবূ আওয়ানা ও জারীর আমাশ (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৫৮৭০
ইসহাক ও হুদবাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবার কারণে সেই লোকটির চাইতেও বেশী খুশী হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে পরে তা পেয়ে যায়।
হাদিস ৫৮৭১
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শেষ দিকে এগার রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর যখন সুবহে সা’দিক হতো, তখন তিনি দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর তিনি নিজের ডান পাশে কাত হয়ে বিশ্রাম নিতেন। যতক্ষন না মুয়াযযিন এসে তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর খবর দিতেন।
হাদিস ৫৮৭২
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারা-আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ যখন তুমি শোয়ার বিছানায় যেতে চাও, তখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে। এরপর ডান পাশের উপর কাত হয়ে শুয়ে পড়বে। আর এ দুআ পড়বে, হে আল্লাহ! আমি আমার চেহারাকে (অর্থাৎ যাবতূয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে) তোমার হাতে সঁপে দিলাম। আর আমার সকল বিষয় তোমারই নিকট সমর্পন করলাম এবং আমার পিঠখানা তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। আমি তোমার গযবের ভয়ে ভীত ও তোমার রহমতের আশায় আশান্নিত। তোমার নিকট ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই এবং নেই মুক্তি পাওয়ার স্থান। তুমি যে কিতাব নাযিল করেছ, আমি তার উপর ঈমান এনেছি এবং তুমি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছ আমি তার উপর ঈমান এনেছি। যদি তুমি এ রাতেই মরে যাও, তোমার সে মওত স্বভাবধর্ম ইসলামের উপরই হবে। অতএব তোমার এ দুআ যেন তোমার এ রাতের সর্বশেষ কথা হয়।
হাদিস ৫৮৭৩
কাবীসা (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করতে যেতেন, তখন তিনি এ দু’আ পড়তেন: হে আল্লাহ! আপনারই নাম নিয়ে মরি আর আপনার নাম নিয়েই জীবিত হই। আর তিনি যখন জেগে উঠতেন তখন পড়তেন: যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের (নিদ্রা জাতীয়) মৃত্যুদানের পর আবার আমাদের পুনজীবিত করেছেন। (অবশেষে) আমাদের তারই দরবারে মিলিত হতে হবে।
হাদিস ৫৮৭৪
সাঈদ ইবনু রাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আর-আরা (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিলেন, অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে অসিয়ত করলেন যে, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে, তখন তুমি এ দু’আ পড়বে ইয়া আল্লাহ! আমি আমার প্রাণকে আপনার কাছে সোপর্দ করলাম-আর আমার বিষয় ন্যাস্ত করলাম আপনার দিকে এবং আমার চেহারা আপনার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আপনার রহমতের আশায় এবং আপনার গযবের ভয়ে। আপনার নিকট ছাড়া আপনার গযব থেকে পালিয়েযাওয়ার এবং আপনার আযাব থেকে বেঁচে যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস করছি এবং আপনি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছেন, আমি তার উপর পূর্ণবিশ্বাস স্থাপন করেছি। যদি তুমি এ অবস্থায়ই মরে যাও, তবে তুর্মি স্বভাবধর্ম ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে।
হাদিস ৫৮৭৫
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাতখানা গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেন ইয়া আল্লাহ! আপনার নামেই মরি। আপনার নামেই জীবিত হই। আর যখণি জাগতেন তখন বলতেন সে আল্লাহর জন্য প্রশংসা, তিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তারই দিকে আমাদের পুনরুত্থান।
হাদিস ৫৮৭৬
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের উপর ঘুমাতেন এবং বলতেন: ইয়া আল্লাহ! আমি আমার সর্তাকে আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আমার চেহারা আপনারই দিকে ফিরিয়ে দিন। আর আমার বিষয় ন্যাস্ত করলাম আপনার দিকে আপনার রহমতের আশায়। আপনি ছাড়া কারো আশ্রয় নেই আর নেই কোন গন্তব্য। আপনার নাযিলকৃত কিতাবে ঈমান আনলাম এবং আপনার প্রেরিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতিও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি শোয়ার সময় এ দু’আগুলো পড়বে, আর সে এ রাতেই তার মৃত্যু হবে সে স্বভাব ধর্ম ইসলামের উপরই মরবে।
হাদিস ৫৮৭৭
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটালাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে তার প্রয়োজনাদি সেরে মুখ-হাত ধুয়ে শুইয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার জেগে উঠে পানির মাশকের নিকট গিয়ে এর মুখ খুললেন। এরপর মাঝারি রকমের এমন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন যে; তাতে বেশী পানি লাগালেন না। অথচ পূরা উযূ (ওজু/অজু/অযু)ই করলেন। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে গাগলেন। তখন আমিও জেগে উঠলাম। তবে আমি কিছু দেরী করে উঠলাম। এজন্য যে, আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তিনি আমার অনুসরণকে দেখে ফেলেন। যা হোক আমি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। তখনও তিনি দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। সুতরাং আমি গিয়ে তাঁর বাম দিকে দাড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমার কান ধরে তার ডান দিকে আমাকে ঘুরিয়ে নিলেন। এরপর তার তেরো রাকা আত সালাত (নামায/নামাজ)পূর্ন হলো। তারপর তিনি আবার কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমন কি নাক ডাকাতেও লাগলেন। তার অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঘুমে নাক ডাকাতেন। এরপর বিলাল (রাঃ) এসে তাকে জাগালেন। তখন তিনি নতুন উযূ (ওজু/অজু/অযু) না করেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তার দু আর মধ্যে এ দু’আও ছিলঃ “ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে বামে, আমার উপর-নীচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন। কুরায়ব (রহঃ) বলেন, এ সাতটি আমার তাবুতের মত। এরপর আমি আববাসের পুত্রদের একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তিনি আমাকে এ সাতটি অঙ্গের কথা বর্ণনা করলেন এবং রগ, গোশত! রক্ত, চুল ও চামড়ার উল্লেখ করলেন এবং আরো দুটির কথা উল্লেখ করেন।
হাদিস ৫৮৭৮
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) দাড়াতেন, তখন বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! সন্মুখে প্রশংসা আপনারই জন্য, আপনি রক্ষক আসমান ও যমীনের এবং যা কিছু এগুলোর মধ্যে আছে, আপনই তাদের নূর। আর যাবতীয় প্রশংসা শুধূ আপনারই। আসমান যযীন এবং এ দুএর মধ্যে যা আছে, এসব কিছুকে সুদৃঢ় ও কায়েম রাখার একমাত্র মালিক আপনই। আর সমস্থ প্রশংসা একমাত্র আপনারই। আপনই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার কথা সত্য, আখিরাতে আপনার সাক্ষাত লাভ করা সত্য, বেহেশত সত্য, দোযখ সত্য, কিয়ামত সত্যা পয়গাম্বরগন সত্য, এবং মুহাম্মদ সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পন করেছি। আমি একমাত্র আপনারই উপর ভরসা রাখি। একমাত্র আপনারই উপর ঈমান এনেছি। আপনারই দিকে ফিরে চলছি। শত্রু দের সাথে আপনারই খাতিরে শত্রুতা করি। আপনারই নিকট বিচার চাই। অতএব আমার আগের পরের এবং লুকায়িত প্রকাশ্য গুনাহ আপনি মাফ করে দিন। আপনই কাউকে এগিয়ে দাতা, আর কাউকে পিছিয়ে দাতা আপনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই।
হাদিস ৫৮৭৯
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। একবার গম পেষার চাক্কি ঘূরানোর কারনে ফাতিমা (রাঃ)-এর হাতে ফোস্কা পড়ে গেল। তখন তিনি একটি খাদেম চেয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন তিনি তাকে পেলেন না। তখন তিনি আসার উদ্দেশ্যটি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট ব্যক্ত করে গেলেন। এরপর তিনি যখন ঘরে এলেন তখন আয়িশা (রাঃ) এ বিষয়টি তাকে জানালেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এমন সময় আসলেন যখন আমরা বিছানায় বিশ্রাম গ্রহণ করেছি। তখন আমি উঠতে চাইলে তিনি বললেন নিজ জায়গায়ই থাকো। তারপর আমাদের মাঝখানেই তিনি এমনিভাবে বসে গেলেন যে, আমি তার দু-পায়ের শীতল স্পর্শ আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল বাতলে দেবনা যা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চাইতেও অনেক বেশী উত্তম। যখন তোমরা শয্যা গ্রহন করতে যাবে, তখন তোমরা আল্লাহ আল্লাহ ৩৩ বার, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার। আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার পড়বে। এটা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চাইতেও অনেক বেশী মঙ্গলজনক। ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেনঃ তাসবীহ হল ৩৪ বার।
হাদিস ৫৮৮০
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (ঘূমাবার জন্য) বিছানায় যেতেন, তখন মুয়াওবিযাত (ফালাক ও নাস) পড়ে তাঁর দুহাতে ফুক দিয়ে তা শরীরে মাসেহ করতেন।
হাদিস ৫৮৮১
আহমদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহন করতে যায় তখন সে যেন তার লুঙ্গীর ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানটি ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানেনা যে, বিছানার উপর তার অবর্তমানে কষ্টদায়ক কোন কিছু রয়েছে কিনা। তারপর পড়বে: হে আমার প্রতিপালক! আপনারই নামে আমার দেহখানা বিছানায় রাখলাম এবং অপনারই নামে আবার উঠাবো। যদি আপনি ইতিমধ্যে আমার জানো কবয করে নেন; তা হলে, তার উপর দয়া করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাযত করবেন! সেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযত করে থাকেন।
হাদিস ৫৮৮২
আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে আমাদের প্রতিপালক আমাদের নিকটতম আসমানে অবতরন করে বলতে থাকেনঃ আমার নিকট দুআ করবে কে? আমি তার দুআ কবুল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার গুনাহ মাফ চাইবে? আমি তারে মাফ করে দেবো।
হাদিস ৫৮৮৩
মুহাম্মদ ইবনু আর-আরা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে যাবতীয় পূরুষ ও স্ত্রী জাতীয় শয়তানদের থেকে পানা চাচ্ছি।
হাদিস ৫৮৮৪
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সা’দ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সাইয়্যিদুল ইন্তিগফার হলঃ -ইয়া-আল্লাহ! আপনই আমার পালনকর্তা। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আপনই আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনারই গোলাম। আর আমি আমার সাধ্যানূযায়ী আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর সুদৃঢ়ভারে কায়েম আছি। আমি আমার প্রতি আপনার নিয়ামাত স্বীকার করছি এবং স্বীকার করছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আমি আমার কৃতগুনাহের মন্দ পরিণাম থেকে আপনারা কাছে পানাহ চাচ্ছি। যে ব্যাক্তি সন্ধ্যা বেলায় এ দুআ পড়বে! আর এ রাতেই মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাবী বলেন, অথবা তিনি বলেছেনঃ সে হবে জান্নাতী। আর যে ব্যাক্তি সকালে এ দুআ পড়বে, আর এ দিনই মারা যায় সেও অনুরুপ জান্নাতী হবে।
হাদিস ৫৮৮৫
আবূ নুয়ায়ম (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমাতে চাইতেন, তখন বলতেন:- ইয়া আল্লাহ! আমি আপনায় নামেই মরি এবং জীবিত হই। আর তিনি যখন ঘূম থেকে সজাগ হতেন তখন বলতেন আল্লাহ তা আল্লাহরই যাবতীয় প্রসংসা যিনি আমাদের (নিদ্রা জাতীয়) ওফাত দেওয়ার পর আবার নতুন জীবন দান করেছেন। আর অবশেষে তারই কাছে আমাদের পুনরুত্থান হবে।
হাদিস ৫৮৮৬
আবদান (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে বিছানায় যেতেন তখন দুআ পড়তেন ইয়া আল্লাহ! আমি আপনারই নামে মরি এবং জীবিত হই। আর যখন তিনি জেগে উঠতেন তখন বলতেন: সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদের জীবিত করেছেন- (নিদ্রা জাতীয়) মৃত্যর পর এবং তারই কাছে পুনরুত্থান সুনিশ্চিত।
হাদিস ৫৮৮৭
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ বকর সিদ্দিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বললেনঃ আপনি আমাকে এমন একটি দুআ শিখিয়ে দিন, যা দিয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) দু’আ করব। তিনি বললেনঃ তুমি সালাত (নামায/নামাজ) পড়বে: ইয়া আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশী যুলম করে ফেলেছি। আপনি ছাড়া আমার গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই। অতএব আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ করে দিন। আর আমার প্রতি দয়া করূন। নিশ্চইয় আপনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু।
হাদিস ৫৮৮৮
আলী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে (আল্লাহর বানী) - সালাত (নামায/নামাজ) স্বর উচ্চ করবে না এবং অতিশয় ক্ষীণও করবে না । ” এ আয়াতটি দুআ সম্পর্কেই নাযিল করা হয়েছে।
হাদিস ৫৮৮৯
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) বলতামঃ আসসালামু আলাল্লাহ, আসসালামু আলা ফূলানিন” তখন একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেন আল্লাহ তাআলা তিনি নিজেই সালাম। সূতরাং তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) বসবে, তখন সে যেন ‘আত্যহিয়্যাতু লিল্লাহি’ পড়ে। সে যখন এতটুকু পড়বে তখন আসমান যমীনের আল্লাহর সব নেক বান্দাদের নিকট তা পৌছে যাবে। তারপর বলবেঃ ‘আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অ আশ হাদু আননা মুহাম্মাদান আব্দুহু ও রাসুলুলহু’ তারপর হামদ সানা যা ইচ্ছা পড়তে পারবে।
হাদিস ৫৮৯০
ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। গরীব সাহাবীগণ বলেন: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ধনশীল লোকেরা-তো উচ্চমর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তা কেমন করে? তারা বললেনঃ আমরা যে রকম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি, তারাও সে রকম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমরা সে রুপ জিহাদ করি, তারাও সেরুপ জিহাদ করেন এবং তারা তাদের অতিরিক্ত মাল দিয়ে সাদাকা-খায়রাত করেন; কিন্তু আমাদের কাছে সম্পদ নেই। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের একটি আমল বাতলে দেবনা, যে আমল দ্বারা তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মর্যাদা অর্জন করতে পারবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারবে, আর তোমাদের অনুরুপ আমল কেউ করতে পরেবে না, কেবলমাত্র যারা তোমাদের ন্যায় আমল করবে তারা ব্যতীত। সে আমল হলো তোমরা প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং ১০ বার আল্লাহ আকবর- পাঠ করবে।
হাদিস ৫৮৯১
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) মুগীরা (রাঃ) আবূ সুফিয়ানের পূত্র মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এক পত্র লিখেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ) সালাম ফিরানর পর বলতেনঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি একাই মাবুদ। তার কোন শরীক নেই। মুলক তারই, যাবতীয় প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। ইয়া আল্লাহ! আপনি কাউকে যা দান করেন তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আর আপনি যাকে কোন কিছু দিতে বিরত থাকেন তাকে তা দেওয়ার মতো কেউ নেই। আপনার রহমত না হলে কারো চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না।
হাদিস ৫৮৯২
মুহাম্মাদ (রহঃ) সালামা ইবনু আফওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম। সেনাবাহিনীর এক ব্যাক্তি বললেনঃ ওহে আমির! যদি আপনি আপনার ছোট ছোট কবিতা থেকে কিছুটা আমাদের শোনাতেন? তখন তিনি সাওয়ারী থেকে নেমে হুদী গাইতে গাইতে বাহন হাকিয়ে নিতে শুরু করলেন। তাতে উল্লেখ করলেনঃ আল্লাহ তাআলা না হলে আমরা হেদায়েত পেতাম না। (রাবী বলেন) এ ছাড়া আরও কিছু কবিতা তিনি আবৃতি করলেন, যা আমি স্বরন রাখতে পরিনি। তখন রাসুলুলাহ জিজ্ঞাসা করলেন: এ উট চালক সোকটি কে? সাথীরা বললেনঃ উনি আমির ইবনু আকওয়া। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহম করুন। তখন দলের একজন বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তার দু’আর সাথে আমাদেরকেও শামিল করলে ভাল হতো না? এরপর যখন মুজাহিদগন কাতার বন্ধী হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করলেন। এ সময় আমির (রাঃ) তাঁর নিজের তরবারীর অগ্রভাগের আঘাতে আহত হলেন এবং এ আঘাতের দরুন তিনি মারা গেলেন। এদিন লোকেরা সন্ধ্যার পর (পাকের জন্য) বিচ্ছিন্নভাবে অনেক আগুন জানালেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ সব আগুন কিসের? এসব আগুন দিয়ে তোমরা কি জাল দিচ্ছ। তারা বললেন আমরা গৃহপালিত গাধার মাংস জাল দিচ্ছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ডেগগুলোর মধ্যে যা আছে, তা সব-ফেলে দাও এবং ভেগগুলোও ভেংগে ফেল। এক ব্যাক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! ডেগগুলোর মধ্যে যা আছে তা ফেলে দিলে এবং পাত্রগুলো ধূয়ে নিলে চলবে না? তিনি বললেনঃ তবে তাই কর।
হাদিস ৫৮৯৩
মুসলিম (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) বর্ণনা করতেন, যখন কেউ কোন সাদাকা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসতো তখন তিনি দুআ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি অমুকের পরিজনের উপর রহম নাযিল করেন। একবার আমার আব্বা তার কাছে কিছু সাদাকা নিয়ে এলে তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি আবূ আওফার বংশ ধরের উপর রহমত করুন।
হাদিস ৫৮৯৪
আলী ইবনু অব্দুলাহ (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি যুল-খালাসাহকে নিশ্চিহ্ন করে আমাকে চিন্তামুক্ত করবে? সেটা ছিল এক মূর্তি। লোকেরা এর পূজা করতো। সেটাকে বলা হতো ইয়ামানী কাবা। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পরি না। তখন আমার বুকে জোরে একটা থাবা মারলেন এবং বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে স্থির রাখূন এবং তাকে হিদায়েতকারী ও হিদারেতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন। তখন আমি আমারই গোত্র আহমাসের পঞ্চাশ জন যোদ্ধাসহ বের হলাম। সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেনঃ কোন কোন সময় বলেছেনঃ আমি আমার গোত্রের একদল যোদ্ধার মধ্যে গেলাম। তারপর আমি সেই মুর্তিটির নিকট গিয়ে তাকে জালিয়ে ফেললাম। এরপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি যুল-খালাসাকে জালিয়ে পূড়িয়ে পাচড়াযুক্ত উটের ন্যায় করে ছেড়েই আপনার কাছে এসেছি। তখন তিনি আহমাস গোত্র ও তার যোদ্ধাদের জন্য দুআ করলেন।
হাদিস ৫৮৯৫
সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন উম্মে সুলায়ম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেনঃ আনাস তো আপনারই খাদেম। তিখন তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ সন্তান সন্ততি বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাকে যা কিছু দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।
হাদিস ৫৮৯৬
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে মসজিদে কুরআন তিলাওয়াত করতে বললেন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহমত করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্বরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলে গিয়েছিলাম।
হাদিস ৫৮৯৭
হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আব্দুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বন্টন করে দিলেন তখন এক ব্যাক্তি মন্তব্য করলেনঃ এটা এমন বাটোয়ারা হল যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টির খেয়াল রাখা হয়নি। আমি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালে তিনি রাগান্বিত হলেন। এমনকি আমি তার চেহারার মধ্যে রাগের আলামত দেখতে পেলাম। তিনি বললেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর প্রতি আল্লাহ রহম করুন তাকে এর চাইতে অধিকতর কষ্ট দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।
হাদিস ৫৮৯৮
ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সাকান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তুমি প্রতি জুমুআয় লোকদের হাদীস শোনাবে। যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও তবে সপ্তাহে দুবার। আরও অধিক করতে চাও তবে তিনবার। আরও অধিক ওয়ায করে এ কুরআনের প্রতি মানূষের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করো না। লোকেরা তালের কথাবার্তায় মশগুল থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের উপদেশ দেবে আমি যেন এমন অবস্থায় তোমাকে না পাই। কারন এতে তাদের কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্তি বোধ করবে। বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে। যদি তারা আগ্রহকরে তোমাকে উপদেশ দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের উপদেশ দেবে। আর তুমি দু’আর মধ্যে ছন্দবাক্য কবিতা পরিহার করবে। কারন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণকে তা পরিহার করতেই দেখেছি।
হাদিস ৫৮৯৯
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দু আ করলে দু’আর সময় ইয়াকীনের সাথে দু’আ করবে এবং একথা বলবেনা ইয়া আল্লাহ! আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে কিছু দান করুন। কারর আল্লাহকে বাধ্য করার মত কেউ নেই।
হাদিস ৫৯০০
সুলাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো একথা বলবেনা যে, ইয়া আল্লাহ! আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে মাফ করে দিন। ইয়া আল্লাহ আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে দয়া করুন। বরং দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দু’আ করবে। কারণ আল্লাহকে বাধ্য করার মত কেউ নেই।
হাদিস ৫৯০১
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাঁদের প্রত্যেকের দূআ কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে। আর বলে যে, আমি দুআ করলাম। কিন্তু আমার দু’আ তো কবুল হলো না।
হাদিস ৫৯০২
মুহাম্মদ ইবনু মাহবুব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিনে খুৎবা দিচ্ছিলেন। একব্যাক্তি দাড়িয়ে বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের উপর বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। (তিনি দুআ করলেন) তখনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল এবং এমন বৃষ্টি হল যে, মানুষ আপন ঘরে পৌছতে পারলো না এবং পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত একাধারে বৃষ্টি হতে থাকলো। পরবর্তী জুমুআর দিনে সেই ব্যাক্তি অথবা অন্য একব্যাক্তি দাড়িয়ে বললো: আপনি আল্লাহর কাছে দুঁআ করুন; তিনি যেন আমাদের উপর মেঘ সরিয়ে নেন। আমরা তো ড়ুবে গেলাম। তখন তিনি দু’আ করলেন: ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের আশে-পাশে বর্ষণ করুন। আমাদের উপর (আর) বর্ষণ করবেন না। তখন মেঘ বিক্ষিপ্ত হয়ে আশে-পাশে ছড়িয়ে পড়লো। মদিনাবাসীর উপর আর বৃষ্টি হলো না।
হাদিস ৫৯০৩
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিসকার (বৃষ্টির) সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে এ ঈদগাহে গমন করলেন এবং বৃষ্টির জন্য দুঁআ করলেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে নিজের চাঁদরখানা উলটিয়ে গায়ে দিলেন।
হাদিস ৫৯০৪
আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার মা বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস আপনারই খাদেম। আপনি তার জন্য দু’আ করুন। তিনি দূআ করলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন। আর তাকে আপনি যা কিছু দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।
হাদিস ৫৯০৫
মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় এ দু’আ পড়তেন: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি মহান ও ধৈর্ঘশীল। আল্লাহ ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই। তিনই আসমান যমীনের রব ও মহান আরশের প্রভু।
হাদিস ৫৯০৬
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। সংকটের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু আ পড়তেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসপন্ন ও অশেষ ধৈর্যশীল আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। আরশে আযীমের প্রভূ। আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আসমান যমীনের প্রতিপালক ও সম্মানিত আরশের মালিক।
হাদিস ৫৯০৭
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালামুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিঃপতিত হওয়া, নিয়তির অশুভ পরিণাম এবং দুশমনের খুশী হওয়া থেকে পানাহ চাইলেন। সুফিয়ান (রহঃ) হাদীসে তিনটির কথা বর্নিত হয়েছে। একটি আমি বৃদ্ধি করেছি। জানিনা তা এগুলোর কোনটি।
হাদিস ৫৯০৮
সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুবস্থায় বলতেনঃ জান্নাতের স্থান না দেখিয়ে কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র জানোকবয করা হয় না, যতক্ষণ না তাকে তার ঠিকানা দেখানো হয় এবং তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হয় (দূনিয়াতে থাকবেন না আখিরাতকে গ্রহন করবেন)। এরপর যখন তার মৃত্যুকাল উপস্থিত হলো! তখন তার মাথাটা আমার উরুর উপর ছিল। কিছুক্ষন অজ্ঞান থাকার পর তার জ্ঞান ফিরে এলো। তখন তিনি ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “আল্লাহুম্মা রাফীকাল আলা- ইয়া আল্লাহ! আমি রফীকে আলা (শ্রেষ্ট বন্ধুকে) গ্রহন করলাম। আমি বললামঃ এখন থেকে তিনি আর আমাদের পছন্দ করবেন না। আর এটাও বুঝতে পারলাম যে, তিনি সুস্থ অবস্থায় আমাদের কাছে যা বলতেন এটি তাই। আর তা সঠিক। আয়িশা (রাঃ) এটি ছিল তার সর্বশেষ বাক্য যা তিনি বললেনঃ ইয়া-আল্লাহ! আমি শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে গ্রহণ করলাম।
হাদিস ৫৯০৯
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খব্বাব (রাঃ)-এর কাছে এলাম। তিনি লোহা গরম করে শয়ীরে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তিনি বললেনঃ যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যুর জন্য দু’আ করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে আমি এর জন্য দু’আ করতাম।
হাদিস ৫৯১০
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) কায়স (রহঃ) বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম তিনি তার পেটে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তখন আমি তাকে বলতে শুনলাম যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যুর জন্য দুআ করতে নিষেধ না করতেন! তবে আমি এর জন্য দু’আ করতাম।
হাদিস ৫৯১১
ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি কেউ এমন অবস্থাতে পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যুর কামনা করতেই হয় তবে সে (মৃত্যু কামনা না করে) দু’আ করবে ইয়া আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় ততদিন আমাকে জীবিত রাখো, আর যখন আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয় তখন আমার মৃত্যু দাও।
হাদিস ৫৯১২
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বর্ণনা করেন। আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার এ ভাগ্নেটি অসুস্থ। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। এরপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলে, আমি তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি থেকে কিছুটা পান করলাম। তারপর আমি তার পিঠের দিকে গিয়ে দাড়ালাম। তখন আমি তার উভয় কাঁধের মাঝে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলাম। সেটা ছিল খাটের চাঁদোয়ার ঝালরের মত।
হাদিস ৫৯১৩
আবদুল্লাহ ইবনুু- ইউসুফ (রহঃ) আবূ আকীল (রাঃ) বর্ণনা করেন। তার দাদা আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) তাকে নিয়ে তিনি বাজারের দিকে বের হতেন। সেখান থেকে খাদ্রদ্রব্য কিনে নিতেন। তখন পথে ইবনু যুবায়র (রাঃ) ও ইবনু উমর (রাঃ)-এর দেখা হয়ে, তারা তাকে বলতেন যে, এর মধ্যে আপনি আমাদেরও শরীক করে নিন। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার জন্য বরকতের দুআ করেছেন। তখন তিনি তাঁদের শরীক করে নিতেন। তিনি বাহনের পিঠে লাভের শস্যাদি পুরোপুরি পেতেন, আর তা ঘরে পাঠিয়ে দিতেন।
হাদিস ৫৯১৪
আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) বর্ণনা করেন। মাহমূদ ইবনু রাবী বর্ণনা করেছেন যে, তিনই ছিলেন সে ব্যাক্তি, শিশুকালে তাদেরই কুপ থেকে পানি মুখে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার চেহারার উপর ছিটে দিয়েছিলেন।
হাদিস ৫৯১৫
আবদান (রহঃ) -আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে শিশুদের নিয়ে আসা হতো। তিনি তাদের জন্য দুআ করতেন। একবার একটি শিশুকে আনা হালা। শিশুটি তার কাপড়ের উপর পেশাব করে দিল। তিনি কিছু পানি আনালেন এবং তা তিনি কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন আর তিনি কাপড় ধুলেন না।
No comments: