বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ আচার ব্যবহার ৩ (৫৬৪৭-৫৬৯৭)
হাদিস ৫৬৪৭
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ো না, হিংসা করো না এবং একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেো না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে থেকো। কোন মুসলমানের জন্য জায়েয নয় যে, সে তার ভাই থেকে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকবে।
হাদিস ৫৬৪৮
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জন্য হালাল নয় যে সে তার ভাই-এর সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু-জনে সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে আর অপর জন সে দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের মধ্যে যে সর্ব প্রথম সালামের সূচনা করবে, সেই উত্তম ব্যাক্তি।
হাদিস ৫৬৪৯
মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন (একদিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার রাগ ও খূশী উভয়ই বুঝতে পারি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি তা কি ভাবে বুঝে নেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ যখন তুমি খুশী থাক, তখন তুমি বলোঃ হাঁ, মুহাম্মদের রবের কসম! আর যখন তুমি রাগান্বিত হও, তখন তুমি বলে থাকোঃ না, ইবরাহীমের রবের কসম! আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি বললাম হাঁ। আমিতো শুধু আপনার নামটি বর্জন করি।
হাদিস ৫৬৫০
ইবরাহীম ইবনু মূসা ও লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার বুঝ হওয়ার পর থেকেই আমি আমার বাবা-মাকে ইসলামের অন্তর্ভুক্তই পেয়েছি। আমাদের উপর এমন কোন দিন অতিবাহিত হতো না, যে দিনের উভয় প্রান্তে সকালে ও বিকেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসতেন না। একদা ঠিক দুপূর বেলায় আমরা আবূ বকর (রাঃ)-এর কক্ষে বসা ছিলাম। একজন বলে উঠলেনঃ এই সে রাসুল! তিনি এমন সময় এসেছেন, যে সময় তিনি আমাদের এখানে আসেন না। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তাকে কোন গুরত্বপূর্ন বিষয়ই এ মুহর্তে নিয়ে এসেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে মক্কা থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
হাদিস ৫৬৫১
মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন এরপর তিনি তাদের সেখানে খাবার খেলেন। এরপর যখন তিনি বেরিয়ে আসার ইচ্ছা করলেন, তখন ঘরের মধ্যে এক জায়গায় (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) বিছানা করতে নির্দেশ দিলেন। তখন তার জন্য পানি ছিটিয়ে একখানা চাটাই বিছিয়ে দেয়া হল। তারপর তিনি এর উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তাদের জন্য দু’আ করলেন।
হাদিস ৫৬৫২
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ ইসহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইস্তাবরাক কী? আমি বললামঃ তা মোটা ও সুন্দর রেশমী বস্ত্র। তিনি বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমরকে বলতে শুনেছি যে, উমর (রাঃ) এক ব্যাক্তির গায়ে একজোড়া মোটা রেশমী বস্ত্র দেখলেন। তখন তিনি সেটা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি এটি কিনে নিন। যখন আপনার নিকট কোন প্রতিনিধি দল আসবে, (তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য) তখন আপনি এটি পরবেন। তিনি বললেনঃ রেশমী বস্ত্র একমাত্র ঐ ব্যাক্তই পরবে, যার (আখিরাতে) কোন হিসসা নেই। এরপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ)-এর নিকট এরুপ একজোড়া কাপড় পাঠালেন। তখন তিনি সেটি নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এসে বললেনঃ আপনি এটা আমার নিকট পাঠালেন, অথচ নিজেই এ জাতীয় বস্ত্র সম্পর্কে যা বলার তা বলেছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো এটা একমাত্র এ জন্য তোমার নিকট পাঠিয়েছি, যেন তুমি এর বিনিময়ে কোন মাল গ্রহন করতে পার। এ হাদীসের প্রেক্ষিতে ইবনু উমর (রাঃ) কারুকার্য খচিত কাপড় পড়তে অপছন্দ করতেন।
হাদিস ৫৬৫৩
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) আমাদের নিকট এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সা-দ ইবনু রাবী-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিয়ের পর তাকে বললেনঃ তুমি ওয়ালিমা করো অন্তত একটি বকরী দিয়ে হলেও।
হাদিস ৫৬৫৪
মুহাম্মদ ইবনু সাববাহ (রহঃ) আসিম (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, আমি আনাস ইবনু মাসিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম। আপনি জানেন কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে প্রতিশ্রুতির সম্পর্ক নেই? তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আমার ঘরে বসে কুরায়শ আর আনসারদের মধ্যে পরস্পর প্রতিশ্রুতির বন্ধন স্থাপন করেন।
হাদিস ৫৬৫৫
হিব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রিফাআ কুরাবী (রাঃ) তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেন এবং অকাট্য তালাক দেন। এরপর আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র তাকে বিয়ে করেন। পরে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ তিনি রিফাআর কাছে ছিলেন এবং রিফাআ তাকে শেষ তিন তালাক দিয়ে দেন এবং তাঁকে আবূদর রহমান ইবনু যুবায়র বিয়ে করেন। আল্লাহর কসমা ইয়া রাসুলুল্লাহ! এর কাছে তো শুধূ এ কাপড়ের মত রঁয়েছে। (একথা বলে) তিনি তাঁর ওড়নার আচল ধরে উঠালেন। রাবী বলেনঃ তখন আবূ বকর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বসা ছিলেন এবং সাঈদ ইবনু আসও ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি লাভের অপেক্ষায় হুজরার দরজার কাছে বসা ছিলেন। তখন স্বাদ (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) কে উচ্চস্বরে ডেকে বললেনঃ হে আবূ বকর আপনি এই মহিলাকে কেন ধমক দিচ্ছেন না, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে (প্রকাশ্যে) এসব কথাবার্তা বলছে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল মুচকি হাসছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত তুমি আবার রিফাআ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে যেতে চাও। তা হবে না। যতক্ষন না তুমি তার এবং সে তোমার মিলন স্বাদ গ্রহন করবে।
হাদিস ৫৬৫৬
ইসমাঈল (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওক্কাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একদিন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তখন তার নিকট কুরাইশের কয়েকজন মহিলা প্রশ্নাদি করছিলেন এবং তাঁদের আওয়াজ তার আওয়াজের উপর চড়া ছিল। যখন উমর (রাঃ) অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁরা তাড়াতাড়ি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেওয়ার পর যখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসছিলেন। উমর (রাঃ) বললেন আল্লাহ আপনাকে হাসি মুখে রাখুন ইয়া রাসুলুল্লাহ! তখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার নিকট যে সব মহিলা ছিলেন, তাদের প্রতি আমি আশ্চার্যান্বিত যে তারা তোমার আওয়াজ শোনা মাত্রই তাড়াতাড়ি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। উমর (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এদের ভয় করার জন্য আপনই অধিক যোগ্য ছিলেন। এরপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন হে নিজের জানের দূশমনরা! তোমরা কি আমাকে ভয় কর, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভয় কর না? তারা জবাব দিলেন আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক বেশী কঠিন ও কঠোর ব্যাক্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে ইবনু খাত্তাব! শোনো! সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন; যখন শয়তান পথ চলতে তোমার সম্মুখীন হয়, তখনই শয়তান তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরে।
হাদিস ৫৬৫৭
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে (অবরোধ করে) ছিলেন, তখন একদিন তিনি বললেনঃ ইনশাআল্লাহ আগামী কাল আমরা ফিরে যাব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কয়েকজন সাহাবী বললেনঃ আমরা তায়েফ জয় না করা পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করব না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তবে ভোর হলেই তোমরা যূদ্ধে নেমে পড়বে। রাবী বলেনঃ তারা ভোর থেকেই তাদের সাথে ভীষণ লড়াই আরম্ভ করলেন। এতে তাদের মধ্যে বহুলোক জখম হয়ে পড়লেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাবো এবং তারা সবাই নীরব রইলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন।
হাদিস ৫৬৫৮
মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, এক বাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আমি রামাযানে (দিনে) আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ তুমি একটি গোলাম আযাদ করে দাও। সে বলল আমার গোলাম নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে একধারে দুমাস সিয়াম পালন কর। সে বলল: এতেও আমি সক্ষম নই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে ষাটজন মিসকীনকে খাবার দাও। সে বলল: তারও আমার সামর্থ নেই। তখন এক ঝূড়ি খেজুর এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী ব্যাক্তিটি কোথায়? এইটি নিয়ে সাদাকা করে দাও। লোকটি বললঃ আমার চেয়ে বেশী অভাবগ্রস্ত আর কে? আল্লাহর কসম! মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থলে এমন কোন পরিবার নেই, যে আমাদের চেয়ে বেশী অভাবগ্রস্ত। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তার চোয়ালের দাতগুলো প্রকাশ পেল এবং তিনি বললেনঃ তাহলে এখন এটা তোমরাই খেয়ে নাও।
হাদিস ৫৬৫৯
আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হেঁটে চলছিলাম। তখন তার গায়ে একখানা গাঢ় পাড়যুক্ত নাজরানী চাঁদর ছিল। এক বেদূঈন তাঁকে পেয়ে চাঁদরখানা ধরে ভীষণ জোরে টান দিল। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাঁধের উপর তাকিয়ে দেখলাম যে, জোরে চাঁদরখানা টানার কারনে তার কাঁধে চাঁদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুঈনটি বললোঃ হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে আল্লাহর দেওয়া সে সম্পদ আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার নির্দেশ দাও। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ফিরে হেসে দিলেন এবং তাকে কিছু দান করার নির্দেশ দিলেন।
হাদিস ৫৬৬০
ইবনু নূমায়র (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহন করার পর থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার কাছে যেতে বাধা দেননি। তিনি আমাকে দেখামাত্রই আমার সামনে মুচকি হাসি হাসতেন। একদিন আমি অভিযোগ করে বললাম: আমি গোড়ার পিঠে চেপে বসে আকড়ে থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত রেখে দু’আ করলেন। হে আল্লাহ! তাকে দৃঢ়মনা করে দিন এবং তাকে হেদায়েতকারী ও হেদায়েত প্রাপ্ত বানিয়ে দিন।
হাদিস ৫৬৬১
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) যায়নাব বিনত উম্মে সালামা (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, একবার উম্মে সুলায়ম (রাঃ) বলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহ তো সত্য কথা বলতে লজ্জা করেন না। মেয়েলোকের স্বপ্নদোষ হলে তাদেরও কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। যদি সে পানি (বীর্য) দেখতে পায়। তখন উম্মে সুলায়মা (রাঃ) হেসে দিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন মেয়ে লোকেরও কি স্বপ্নদোষ হতে পারে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা না হলে, সন্তানের মধ্যে সা’দৃশ্য হয় কেমন করে?
হাদিস ৫৬৬২
ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে মুখভরে হাসতে দেখিনি যে, তার আলা জিহ্বা দেখা যেত। তিনি তো শুধূ মুচকি হাসতেন।
হাদিস ৫৬৬৩
মুহাম্মাদ ইবনু মাহবুব ও খালীফা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জুমুআর দিন মদিনায় এল, যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। সে বললোঃ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে আপনি বৃষ্টিপাতের জন্য আপনার রবের নিকট দুআ করুন। তখন আকাশের দিকে তাকালেন তখন আমরা আকাশে কোন মেঘ দেখছিলাম না। তখন তিনি বৃষ্টিপাতের জন্য দু আ করলেন। এ সময় মেঘ এসে মিলিত হতে লাগলো। তারপর এমন বৃষ্টিপাত হল যে, মদিনার খাল- নালাগুলো প্রবাহিত হতে লাগল এবং ক্রমাগত পরবর্তী জুমূআ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে থাকল, মাঝে আর বিরতি হয়নি। পরবর্তী জুমুআয় যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন ঐ ব্যাক্তি অথবা অন্য এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল, আমরা তো ড়ুবে গেছি। আপনি আপনার রবের কাছে দু’আ করুন, যেন তিনি আমাদের উপর থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। তখন তিনি হেসে দিলেন এবং দুবার অথবা তিন বার দুআ করলেন। ইয়া আল্লাহ! (বৃষ্টি) আশে পাশে নিয়ে যান, আমাদের উপর নয়। তখন মেঘপূঞ্জ দূর হয়ে গিয়ে মদিনার আশে-পাশে বর্ষণ করতে লাগল। আমাদের উপর আর বর্ষিত হলো না। এতে আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুজিযা ও তার দুআ কবুল হওয়ার নিদর্শন দেখান।
হাদিস ৫৬৬৪
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতের নিকে পৌছায়। আর মানুষ সত্যের উপর প্রতিষ্টিত থেকে অবশেষে সিদ্দীক-এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানূষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহামিথ্যাবাদী রুপে সাব্যস্ত হয়ে যায়।
হাদিস ৫৬৬৫
ইবনু সালাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি: যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, আর যখন সে ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তাতে খিয়ানত করে।
হাদিস ৫৬৬৬
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) সাহল ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আজ রাতে (স্বপ্নে)! দু-জন লোককে দেখলাম। তারা বললোঃ আপনি যে লোকটির গাল চিরে ফেলতে দেখলেন, সে বড় মিথ্যাবাদী। সে এমন মিথ্যা বলত যে দুনিয়ার (লোক) আনাচে কানাচে তা ছড়িয়ে দিত। ফলে, কিয়ামত পর্যন্ত তার সাথে এরুপ ব্যবহার হতে থাকবে।
হাদিস ৫৬৬৭
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, মানুষের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে চাল-চলনে, রীতি-নীতিতে ও স্বভাব-চরিত্রে, যার সবচেয়ে বেশী সামঞ্জস্য বিদ্যমান, তিনি হলেন ইবনু উম্মে আবদ। যখন তিনি নিজ ঘর থেকে বের হন, তখন থেকে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত এ সামঞ্জস্য দেখা যায়। তবে তিনি একাকী নিজ গৃহে কিরুপ ব্যবহার করেন, তা আমরা জানিনা।
হাদিস ৫৬৬৮
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উত্তম বানী হলো আল্লাহর কিতাব। আর সবচে উত্তম চরিত্র হল মুহাম্মদ -এর চরিত্র।
হাদিস ৫৬৬৯
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কষ্টের কথা শোনার পর আল্লাহ তা আমার চেয়ে অধিক ধৈর্যধারনকারী কেউ বা কোন কিছুই নেই। লোকেরা তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে; এরপরও তিনি তাদের বিপদ মুক্ত রাখেন এবং রিবিক দান করেন।
হাদিস ৫৬৭০
উম্মুল ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বণ্টন করলেন। তখন এক আনসারী ব্যাক্তি বললঃ আল্লাহর কসম এ বণ্টনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। তখন আমি বললাম: জেনে রেখো, আমি নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ কথা বলব। সুতরাং আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তার সাহাবীগণের মধ্যে ছিলেন। এজন্য তার কাছে কথাটা চুপেচুপে বললাম। একথাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বড়ই কষ্টদায়ক হল, তার চেহারার রং বদলে গেল এবং তিনি এত রাগাম্বিত হলেন যে, আমি ভাবলাম, হায়! যদি আমি তার কাছে এ খবর না দিতাম, তবে কত ভাল হত। এরপর বললেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নিশ্চই এর চেয়েও বেশী কষ্ট দেয়া হয়েছে। তাতেও তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।
হাদিস ৫৬৭১
উম্মে ইবনু হাফয (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোন কাজ করলেন এবং অন্যদের তা করার অনুমতি দিলেন। তথাপি একদল লোক তা থেকে বিরত রইল। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছলে তিনি ভাষণ দিলেন এবং আল্লাহর প্রশংসার পর বললেন কিছু লোকের কি হয়েছে। তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, যা আমি নিজে করছি। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর সম্পর্কে তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং আমি তাকে তাদের চাইতে অনেক বেশী ভয় করি।
হাদিস ৫৬৭২
আবদান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ পর্দার ভেতরে কুমারীদের চেয়েও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী লাজুক ছিলেন। যখন তিনি তার কাছে অপছন্দনীয় কিছু দেখতেন, তখন আমরা তার চেহারাতেই এর আভাস পেয়ে যেতাম।
হাদিস ৫৬৭৩
মুহাম্মাদ ও আহমাদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন কোন ব্যাক্তি তার মুসলমান ভাইকে ‘হে কাফির’ বলে ডাকে, তখন তা তাদের দু-জনের কোন একজনের উপর বর্তায়।
হাদিস ৫৬৭৪
ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ তার ভাইকে কাফির বলবে, তাদের দু-জনের একজনের উপর তা বর্তাবে।
হাদিস ৫৬৭৫
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের মিথ্যা কসম খায়, সে যা বলে তাই হবে। আর যে বস্তু দিয়ে কেউ আত্নহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনে তাকে সে বস্তু দিয়েই আযাব দেওয়া হবে। ঈমানদারকে লানত করা! তাকে হত্যা করার সমান। আর যে কেউ কোন ঈসানদারকে কুফরীর অপবাদ দিবে, তাও তাকে হত্যা করার সমান হবে।
হাদিস ৫৬৭৬
মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে মুঁআয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। পূনরায় তিনি নিজ কাওমের নিকট এসে তাদের তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। একবার তিনি তাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) সুরা বাকারা পড়লেন। তখন এক ব্যাক্তি; সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করতে চাইল। সুতরাং-সে (আলাদা হয়ে) সংক্ষেপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এ খবর মু’আয (রাঃ)-এর কাছ পৌছলে তিনি বললেনঃ সে মুনাফিক! লোকটীর কাছে এ খবর পৌছলে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এসে বললঃ ইইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা এমন এক কাওমের লোক, যারা নিজের হাতে কাজ করি, আর নিজের উট দিয়ে সেঁচের কাজ করি। মুআয (রাঃ) গত রাত্রে সূরা বাকারা দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে আরম্ভ করলেন, তখন আমি সংক্ষেপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিলাম। এতে মু’আয (রাঃ) বললেন যে, আমি মুনাফিক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মু’আয। তুমি কি (লোকদের) দ্বীনের প্রতি বিতৃঞ্চ করতে চাও? একথাটি তিনি তিন বার বললেন। পরে তিনি তাকে বললেনঃ তুমি ওয়াশ শামসি ওয়াদ দু-হা আর সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা এবং এর অনুরুপ ছোট সূরা পড়বে।
হাদিস ৫৬৭৭
ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি কসম খায় এবং লাত ও উযযার কসম করে, তবে সে যেন (সাথে সাথেই) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। আর যদি কেউ তার সাথীকে বলে, এসো আমরা জুয়া খেলি; তবে সে যেন (কোন কিছু) সাদাকা করে।
হাদিস ৫৬৭৮
কুতায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে একদিন আরোহীর মাঝে এমন সময় পেলেন, যখন তিনি তার পিতার নামে কসম খাচ্ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে তাদের বললেনঃ জেনে রাখ! আল্লাহ তোমাদের নিজের পিতার নামে কসম খেতে নিষেধ করেছেন। যদি কাউকে কসম খেতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামেই কসম খায়, অন্যথায় সে যেন চুপ থাকে।
হাদিস ৫৬৭৯
ইয়াসারাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন। তখন ঘরে একখানি পর্দা ঝূলানো ছিল। যাতে ছবি ছিল। তা দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারার রং বদলিয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাখানা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে বললেন কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে ঐসব লোকদের যারা এ সকল ছবি আকে।
হাদিস ৫৬৮০
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন অমুক ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) দীর্ঘ করার কারণে আমি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) থেকে পিছনে থাকি। বর্ননাকারী বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কোন ওয়াক্তের মধ্যে সেদিন থেকে বেশী রাগান্বিত হতে আর দেখিনি। রাবী বলেন, এরপর তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিতৃষ্ণ আছে। সুতরাং তোমাদের সে কেউ লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ এবং কর্মব্যাস্ত লোক থাকে।
হাদিস ৫৬৮১
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তখন তিনি মসজিদের কিবলার দিকে নাকের শ্লেষ দেখতে পান। এরপর তিনি তা নিজ হাতে খুটিয়ে পরিস্কার করলেন এবং রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষন সালাত (নামায/নামাজ) থাকে, ততক্ষন আল্লাহ তার চেহারার সামনে থাকেন। সুতররাং সালাত (নামায/নামাজ)-এর অবস্থায় কখনো সামনের দিকে নাকের শ্লেষ ফেলবেনা।
হাদিস ৫৬৮২
মুহাম্মদ (রহঃ) যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পথে পড়ে থাকা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন তুমি তা এক বছর পর্যন্ত প্রচার করতে থাকো, তারপর তার বাধন চিনে রাখ। তারপর তা তুমি ব্যয় কর। এরপর যদি এর মালিক এসে যায়, তবে তুমি তাকে ফিরিয়ে দাও। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল: ইয়া রাসুলুল্লাহ! হরিয়ে যাওয়া ছাগলের কি হুকুম? তিনি বললেন সেটা তুমি নিয়ে যাও। কারণ এটা হয়ত তোমার জন্য অথবা তোমার কোন ভাই এর অথবা চিতারাঘের। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল। ইয়া রাসুলুল্লাহ! আর হারানো উটের কি হুকুম? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেগে গেলেন। এমন কি তার গন্ডদ্বয় রক্তিমাভ হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ তাতে তোমার কি? তাঁর সাথেই তার চলমান পা ও পানি রয়েছে এবং এ পর্যন্ত সেটি তার মালিকের নাগাল পেয়ে যাবে।
হাদিস ৫৬৮৩
মাক্কী ও মুহম্মদ ইবনু বিয়াদ (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুররর পাতা দিয়ে, অথবা চাটাই দিয়ে একটি ছোট হুজরা তৈরী করলেন এবং ঘর থেকে বেবিয়ে এসে ঐ হুজরায় (রাতে নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। তখন একদল লোক তাঁর খোজে এসে তার সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগল। পরবর্তী রাতও লোকজন সেখানে এসে হাযির হল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরী করলেন এবং তাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন না। তারা উচ্চস্বরে আওয়াজ দিতে লাগলেন এবং ঘরের দরজায় কংকর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। তখন তিনি রাগাম্বিত হয়ে তাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেন তোমরা যা করছ তাতে আমি আশংকা করছি যে সম্ভবত এটি না তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়। সূতরাং তোমাদের উচিত তোমরা ঘরেই সালাত (নামায/নামাজ) আঁদায় করবে। কারন ফরয ব্যতীত অন্য সালাত (নামায/নামাজ) নিজ নিজ ঘরে পড়াই উত্তম।
হাদিস ৫৬৮৪
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন প্রকৃত বীর সে নয়, সে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, সে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম।
হাদিস ৫৬৮৫
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুলায়মান ইবনু সুরদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দু-ব্যাক্তি পাগলামী করছিল। আমরাও তার কাছেই বসাছিলাম, তাদের একজন অপর জনকে এত রাগান্বিত হয়ে গালী দিচ্ছিল যে তার চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি একটি কালেমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়তো, তা হলে তার ক্রোধ চলে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি “আউযূবিল্লাহি মিনাষশাইতানির রাজীম” পড়তো। তখন লোকেরা সে ব্যাক্তিকে বলল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন, তা কি তুমি শুনছো না? সে বললো:-আমি নিশ্চয়ই পাগল নই।
হাদিস ৫৬৮৬
ইয়াহইয়া ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে- এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বললোঃ আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেনঃ তুমি রাগ করো না। লোকটা কয়েকবার তা বললেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বারই বললেনঃ রাগ করো না।
হাদিস ৫৬৮৭
আদম (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ব্যতীত কোন কিছুই বয়ে আনে না। তখন বুশায়র ইবনু কাব (রাঃ) বললেন হিকমতের পূস্তকে লিখা আছে যে, কোন কোন লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোনকোন লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ইমরান (রাঃ) বললেন, আমি তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করছি। আর তুমি (এর মোকাবিলায়) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ।
হাদিস ৫৬৮৮
আহমদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উঁমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটিলোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় লোকটি (তার ভাইকে) লজ্জা সম্পর্কে তিরস্কার করছিল এবং বলছিল যে, তুমি বেশী লজ্জা করছ, এমনকি সে যেন এ কথাও বলছিল যে, এ তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। কারণ নিশ্চই লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ।
হাদিস ৫৬৮৯
আলী ইবনু জায়দ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ গৃহে অবস্হানরত কুমারী মেয়েদের চেয়েও বেশী লাজুক ছিলেন।
হাদিস ৫৬৯০
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুর্বেকার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কর্তব্য থেকে মানুষ যা বর্জন করেছে তার একটি হল, যদি তুমি লজ্জাই ছেড়ে দাও তবে তুমি যা চাও তা কর।
হাদিস ৫৬৯১
ইসমাঈল (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একদিন উম্মে সুলায়ম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন-ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহ তো সত্য কথা বলার ব্যাপারে লজ্জা করতে নির্দেশদেন না। সুতরাং মেয়ে লোকের স্বপ্নদোষ হলে কি তার উপরও গোসল করা ফরয? তিনি বললেনঃ হা, যদি সে পানি, বীর্য দেখতে পায়।
হাদিস ৫৬৯২
আাদম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনের দৃষ্টান্ত হল এমন একটি সবুজ গাছ, যার পাতা ঝরে পরে না এবং একটির সঙ্গে আর একটির ঘর্ষণ লাগে না। তখন কেউ কেউ বললঃ এটি অমুক গাছ, আবার কেউ বললঃ এটি অমুক গাছ। তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, এটি খেজুর গাছ। তবে, যেহেতু আমি অল্প বয়স্ক ছিলাম, তাই বলতে সংকোচবোধ করলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিলেন যে, সেটি খেজুর গাছ। আর শুবা (রহঃ) থেকে ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে অতিরিক্ত বর্নিত আছে যে, তারপর আমি উমর (রাঃ) এর নিকট এ সম্বন্ধে বললাম। তখন তিনি বললেনঃ যদি তুমি সে সময় একথা বলে দিতে তবে তা আমার নিকট এত এত (ধন সম্পদ থেকেও) বেশী খুশীর বিষয় হতো।
হাদিস ৫৬৯৩
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর কাছে এলো এবং তার সামনে নিজেকে পেশ করে বললঃ আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? তখনঁ আনাস (রাঃ) এর মেয়ে বললঃ এ মহিলার লজ্জা কত কম। আনাস (রাঃ) বললেনঃ সে তোমার চেয়ে ভাল। সে তো (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র সহধর্মিনা হওয়ার সৌভাগ্য) লাভের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে নিজেকে (বিবাহের জন্য) পেশ করেছেন।
হাদিস ৫৬৯৪
আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নম্য ব্যভার করো এবং কঠোর ষ্যবহার করো না। আর মানুষকে শান্তি দাও এবং মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।
হাদিস ৫৬৯৫
ইসহাক (রহঃ) আবূ-মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আর মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানে পাঠান, তাদের অসিয়ত করেন। তোমরা (লোকের সাথে) নম্য ব্যবহার করবে, কঠোর ব্যবহার করবে না। শুভ সংবাদ দেবে এবং তাদের মনে বিদ্ব্যেষ সৃষ্টি করবে না। আর তোমরা দু-জনের মধ্যে সম্ভ্রাব বজায় রাখবে। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা এমন এক দেশে যাচ্ছি, যেখানে মধূ থেকে শরাব তৈরী হয়। একে ‘বিতউ’ বলা হল। আবূ -যব- থেকেও শরাব তৈরী, করা হয় তাকে বলা হয় মিযর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক নেশ্বাসৃষ্টিকারী বস্তু হারাম।
হাদিস ৫৬৯৬
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন কোন দুটি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হয়। তখন তিনি দুটিরু মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহর কাজ না হতো। আর যদি তা গুনাহের কাজ হতো, তা হলে তিনি তা থেকে সবার চাইতে দূরে সরে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ নিতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্গন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন।
হাদিস ৫৬৯৭
আবূ নুঁমান (রহঃ) আযরাক ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমরা আহওয়ায নামক স্থানে একটা খালের কিনারায় অবইান করছিলাম। খালটির পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। এমন সময় আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) একটি ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে সেখানে এলেনঃ তিনি ঘোড়াটিকে ছেড়ে দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। তখন ঘোড়াটা (দুরে) চলে গেল দেখে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দিয়ে ঘোড়ার অনুসরণ করলেন এবং ঘোড়াটি পেয়ে ধরে আনলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ন করলেন। এ সময় আমাদের মধ্যে একজন বিরুপ সমালোচক ছিলেন। তিনি তা দেখে বললেনঃ এই বৃদ্ধের দিকে তাকাও, সে ঘোড়ার খাতিরে সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দিল। তখন আবূ বারযাহ (রাঃ) এগিয়ে এসে বললেনঃ যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হারিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এরুপ তিরস্কার করেননি। তিনি আরও বললেনঃ আমার বাড়ী বহু দূরে। সুতরাং যদি আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম এবং ঘোড়াটিকে এভাবেই ছেড়ে দিতাম তাহলে আমি রাতে নিজ পরিবারের নিকট পৌছতে পারতাম না। তিনি আরও উল্লেখ করলেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তার নমর ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছেন।
No comments: