Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ আচার ব্যবহার ৪ (৫৬৯৮-৫৭৪৮)

 হাদিস ৫৬৯৮

আবূল ইয়ামান ও লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক বেদূঈন মসজিদে পেশাব করে দিলো। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি অথবা একপাত্র পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদের নমর ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয় নি।

হাদিস ৫৬৯৯

আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে মেলামেশা করতেন এমনকি একদিন তিনি আমার এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ওহে আবূ উমায়র। নূগায়র পাখিটি কেমন আছে?

হাদিস ৫৭০০

আমার সঙ্গে খেলতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পেলাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।

হাদিস ৫৭০১

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশ করে অনুমতি চাইলে তখন তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে তার বংশের নিকৃষ্ট সন্তান। অথবা বললেনঃ সে তার গোত্রের ঘৃন্যতম ভাই। যথন সে প্রবেশ করল তখন তিনি তার সাথে নম্যভাবে কথা বার্তা বললেন। আমি বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি এর সম্পর্কে যা বলার তা বলেছেন। এখন আপনি তার সাথে নম্যভাবে কথা বললেন। তিনি বললেনঃ হে আরেশা! আল্লাহর কাছে মর্যাদায় নিকৃষ্ট সে ব্যাক্তি! যার অশালীন আচরন থেকে বেচে থাকার জন্য মানুষ তার সংশ্রব ত্যগ করে।

হাদিস ৫৭০২

আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুল ওহহাব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে। তিনি একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কয়েকটি রেশমের তৈরী (সোনার বোতাম লাগান) কাবা হাদিয়া দেওয়া হলো। তিনি এগুলো সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন এবং তা থেড়ে একটি মাখরামা (রাঃ)-এর জন্য আলাদা রেখে দিলেন। পরে যখন তিনি এলেন, তখন তিনি (সেটি তাকে দিয়ে) বললেনঃ আমি এটি তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। আইউব নিজের কাপড়ের দিকে ইশারা করলেন, তিনি যেন তার কাপড় মাখরামাকে দেখাচ্ছিলেন। মাখরামা (রাঃ)-এর মেজাজের মধ্যে কিছু (অসন্তসের ভাব) ছিল।

হাদিস ৫৭০৩

কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত মূমিন একই গর্ত থেকে দু-বার দংশিত হয় না।

হাদিস ৫৭০৪

ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেনঃ আমাকে কি এ খবর জানানো হয় নি যে, তুমি সারা রাত সালাত (নামায/নামাজ) কাটাও। আর সারা দিন সিয়াম পানানা কর। তিনি বললেনঃ তুমি (এরোকম) করো না। রাতের কিছু অংশ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর, আর ঘূমাও। কয়েকদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর, আর কয়েকদিন ইফতার কর (সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ কর)। তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে। তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার মেহমানের হক আছে, আর তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। নিশ্চয়ই তুমি তোমার আয়ু লম্বা হওয়ার আশা কর। সুতরাং প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালনই তোমার পড়ে যথেষ্ঠ। কেননা, নিশ্চয়ই প্রতিটি নেক কাজের বদলে তার দশ গুন পরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়। সুতরাং এভাবে সারা বছরেই সিয়ামের সাওয়াব পাওয়া যায়। তখন আমি কঠোর ব্যবস্থা চাইলে, আমাকে কঠোর ব্যবস্থা দেয়া হলো। আমি বললাম এর চেয়েও বেশী পালনের সামর্থ আমার আছে। তিনি বললেনঃ তা হলে তুমি প্রতি সপ্তাহে তিন দিন সিয়াম পালন কর। তখন আমি আরও কঠোর ব্যবস্হা চাইলে, আমাকে কঠোর ব্যবস্থা দেওয়া হল। আমি বললাম আমি এর চেইয়ে বেশী সিয়ামের সামর্থ রাখি। তিনি বললেনঃ তবে তুমি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সিয়াম পালন করা আমি বললাম ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সিয়াম কি রকম? তিনি বললেন? আধা বছর সিয়াম পালন।

হাদিস ৫৭০৫

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) আবূ সূরায়হ কাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সম্মান করে। মেহমানের সম্মান একদিন ও একরাত। আর সাধারণ মেহমানদারী তিন দিন ও তিনরাত। এরপরে (তা হলে) -সাদাকা-। মেহমানকে কষ্ট দিয়ে, তার কাছে মেহমানের অবস্থান হালাল নয়। (অন্য সূত্রে) মালিক (রহঃ) অনুরুপ বর্ণনা করার পর অতিরিক্ত বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে, অথবা সে যেন চূপ থাকে।

হাদিস ৫৭০৬

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেয দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সাম্মান করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অথবা যেন চুপ থাকে।

হাদিস ৫৭০৭

কুতায়বা (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একবার আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের কোথাও পাঠালে আমরা এমন কোন কাওমের কাছে উপস্থিত হই, যারা আমাদের মেহমানদারী করে না। এ ব্যাপারে আপনার মত কি? তখন তিনি আমাদের বললেনঃ যদি তোমরা কোন কাওমের নিকট গিয়ে পৌছ আর তারা তোমাদের মেহমানের উপযোগী যত্ন নেয়, তবে তোমরা তা স্বাদরে গ্রহণ করবে। আর যদি তারা না করে, তা হলে, তাদের অবস্থানূযায়ী তাদের থেকে মেহমানের উপযোগী দাবী আদায় করে নেবে।

হাদিস ৫৭০৮

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক যুক্ত রাখে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।

হাদিস ৫৭০৯

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রহঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমাঁন (রাঃ) ও আবূ দারদা (রাঃ)-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে দেন। এরপর একদিন সালমান- (রাঃ) আবূ দারদা (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তখন তিনি উম্মে রাদদা (রাঃ) কে অতি সাধারন পোশাকে দেখতে পেলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেনঃ তোমার ভাই আবূ দারদা (রাঃ)-এর দুনিয়াতে কিছুর প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যে আবূ দারদা (রাঃ) এলেন। তারপর তার জন্য খাবার প্রস্তুত করে তাঁকে বললেনঃ আপনি খেয়ে নিন। আমি তো সিয়াম পালন করছি। তিনি বললেনঃ আপনি যতক্ষণ না খাবেন ততক্ষণ আমিও খাব না। তখন তিনিও খেলেন তারপর যখন রাত হল, তখন আবূ দারদা (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) দাড়ালেন। তখন সালমান (রাঃ) তাকে বললেনঃ আপনি ঘুমিয়ে নিন। তিনি শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পরে আবার উঠে দাড়ালে, তিনি বললেনঃ (আরও) ঘূমান। অবশেষে যখন রাত শেষ হয়ে এল, তখন সালমান (রাঃ) বললেনঃ এখন উঠূন এবং তারা উভয়েই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর সালমান(রাঃ) বললেনঃ তোমার উপর তোমার রবের দাবী আছে, (তেমনি) তোমার উপর তোমার দাবী আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার উপর দাবী আছে। সুতরাং তুমি প্রত্যেক দাবীদারের দাবী আদায় করবে। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে! তার কাছে তার কথা উল্লেখ করলেন তিনি বললেনঃ সালমান সত্যই বলেছে।

হাদিস ৫৭১০

আয়্যাশ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) কিছু লোককে মেহমান হিসাবে গ্রহন করলেন। তিনি (তার পূত্র) আবদুর রহমান কে নির্দেশ দিলেন, তোমার এ মেহমানদের নিয়ে যাও। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যাচ্ছি। আমি ফিরে আসার পূর্বে তুমি তাদের খাইয়ে দহিয়ে অবসর হয়ে যেয়ো। আব্দুর রহমান (রাঃ) তাদের নিয়ে চলে গেলেন এবং তার ঘরে যা ছিল তা সামনে , পেশ করে দিয়ে তাদের বললেনঃ আপনারা খেয়ে নিন। তাঁরা বললেন আমাদের এ বাড়ীর মালিক কোথায়? তিনি বললেনঃ আপনারা খেয়ে নিন। তারা বললেন বাড়ীর মালিক না আসা পর্যন্ত আমরা খাবো না। তিনি বললেনঃ আমাদের পাত্র থেকে আপনারা আপনাদের খাবার খেয়ে নিন। কারন আপনারা না খেলে তিনি এসে আমার উপর রাগ করবেন। কিন্তু তাঁরা অস্বীকার করলেন। আমি ভাবলাম যে তিনি অবশ্যই আমার উপর ক্ষুধ্ব হবেন। তারপর তিনি ফিরে আসলে আমি তার থেকে এক পাশে সরে পড়লাম। তিনি তাদের জিজাসা করলেন, আপনারা কি করেছেন। তখন তারা তাঁকে সব বর্ণনা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ হে আব্দুর রগমান! তখন আমি চুপ করে রইলাম। তিনি আবার ডাকলেন, হে আব্দুর রহমান। এবারেও আমি চুপ করে রইলাম। তিনি আবার ডেকে বললেনঃ ওহে মূর্খ! আমি তোকে কসম দিচ্ছি। যদি আমার ডাক শুনে থাকিস, তবে কেন আসছিস না? তখন আমি বেরিয়ে এসে বললামঃ আপনি আপনার মেহমানদের জিজ্ঞাসা করুন। তখন তারা বললেন সে ঠিকই আমাদের খাবার এনে দিয়েছিল। তিনি বঁললেন তবুও কি আপনারা আমার অপেক্ষা করছেন? আল্লাহর কসম! আমি আজ রাতে তো খাবো না। মেহমানরাও বললেনঃ আল্লাহর কসম আপনি যতক্ষন না খাবেন ততক্ষন আমরাও খাব না। তখন তিনি বললেনঃ আমি আজ রাতের মত খারাপ রাত আর দেখিনি। আপনাদের প্রতি আক্ষেপ। আপনারা কি আমাদের খাবার গ্রহণ করবেন না? তখন তিনি (আবদুর রহমানকে ডেকে)বললেনঃ তোমার খাবার নিয়ে এসো। তিনি তা নিয়ে আসলে তিনই খাবারের উপর নিজ হাত রেখে বললেন, বিসমিল্লাহ এ প্রথম ঘটনাটা শয়তানের কারনেই ঘটেছে। তারপর তিনি খেলেন এবাং তারাও খেলেন।

হাদিস ৫৭১১

মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আবূ বকর (রাঃ) তার একজন কিংবা কয়েকজন মেহমান নিয়ে এলেন এবং সন্ধ্যার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলেন। তিনি ফিরে এলে আমার আম্মা তাকে বললেনঃ আপনি মেহমানকে, কিংবা বললেন, মেহমানদের (ঘরে) রেখে (এতো) রাত কোথায় আটকা পড়েছিলেন? তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেনঃ আমি তাদের সামনে খাবার দিয়েছিলাম কিন্তু তারা, বা সে তা খেতে অস্বীকার করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) রেগে গাল মন্দ বললেন ও বদ দু’আ করলেন। আর শপথ করলেন যে, তিনি খাবার খাবেন না। আমি লুকিয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে ডেকে বললেন ওরে মূর্খ! তখন মহিলা (আমার আম্মা) ও কসম করলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি না খাবেন ততক্ষন আম্মাও খাবেন না। এদিকে মেহমানটি বা মেহমানরাও কসম খেয়ে বললেনঃ যে, যতক্ষন তিনি না খান, ততক্ষন পর্যন্ত তারাও খাবেন না। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে শয়তান থেকে। তারপর তিনি খাবার আনতে বললেন। আর তিনি খেলেন এবং মেহমানরাও খেলেন। কিন্তু তারা খাওয়া আরম্ভ করে যতবারই লুকমা উঠাতে লাগলেন! তার নীচে থেকে তার চেয়েও বেশী খাবার বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তখন তিনি তার স্ত্রীকে ডেকে বললেন হে বনী ফেরাসের বোন এ কি? তিনি বললেন আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো আমাদের পূর্বের খাবার থেকে এখন অনেক বেশী দেখছি। তখন সবাই খেলেন এবং তা থেকে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে কিছু পাঠিয়ে দিলেন। তারপর তিনি বর্ণনা করেন যে, তা থেকে তিনিও খেয়েছিলেন। 

 হাদিস ৫৭১২

সুনায়মাল ইবনুু-হারব (রহঃ) রাফে ইবনু খাদীজ (রাঃ) ও সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ও মুহাসইসা ইবনু মাসউদ (রহঃ) খায়বারে পৌছে উভয়েই খেজ্বরের বাগানের ভিন্ন ভিন্ন পথে চলে গেলেন। সেখানে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) কে হত্যা করা হল। এ ঘটনার পর আবদর রহমান ইবনু সাহল ও ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর দুই ছেলে হুওয়াইসা (রাঃ) ও মুহায়ইসা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন এবং তাঁর কাছে নিহত ব্যাক্তির কথা বলতে লাগলেন। আব্দুর রহমান (রাঃ) কথা শুরু করলেন। তিনি ছোট ছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ তুমি বড়দের সম্মান করবে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া বলেনঃ কথা বলার দায়িত্ব যেন বড়রা পালন করে। তখন তারা তাদের লোক সম্পর্কে কথা বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ তোমাদের পঞ্চাশ জন লোক কসমের মাধ্যমে তোমাদের নিহত ভাইয়ের হত্যার হক প্রমাণ কর। তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরাতো আমরা দেখিনি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে ইয়াহুদীরা তাদের থেকে পঞ্চাশ জনের কসমের মাধ্যমে তোমাদের কসম থেকে মূক্তি দিবে। তখন তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! ওরা তো কাফির সম্প্রদায়। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তরফ থেকে তাদের নিতে ব্যাক্তির ফিদইয়া দিয়ে দিলেন। সাহল (রাঃ) বললেনঃ আমি সেই উটগুলো থেকে একটি উট পালাম। সেটি নিয়ে আমি যখন আস্তাবলে গেলাম তখন উটনীটি তার পা দিয়ে আমাকে লাথী মারলো।

হাদিস ৫৭১৩

মূসা’দ্দাদ (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমাকে এমন একটা বৃক্ষের খবর দাও, মুসলমানের সাথে যার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তা সর্বদা তার প্রতিপালকের নির্দেশে খাদ্য দান করে, আর তার পাতাও ঝরে না। তাখন আমার মনে আসলো যে, এটি খেজুর গাছ। কিন্তু যেহেতু সে স্থানে আবূ বকর ও উমর (রাঃ) উপস্থিত থেকেও কথা বলছিলেন না, তাই আমিও কথা বলা পছন্দ করি নি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বললেনঃ সেটি হলো, খেজুর গাছ। তারপর যখন আমি আমার আব্বার সঙ্গে বেরিয়ে এলাম, তখন আমি বললাম আব্বা! আমার মনেও খেয়াল এসেছিল যে, এটা নিশ্চয়ই খেজুর গাছ। তিনি বললেনঃ তোমাকে তা বলতে কিসে বাধা দিয়েছিল? যদি তুমি তা বলতে তাহলে একথা আামার কাছে এত এত ধন-সম্পদ পাওয়ার চেয়েও বেশী প্রিয় হতো। তিনি বললেনঃ আমাকে শুধু একথাই বাধা দিয়েছিল যে, আমি দেখলাম আপনি ও আবূ বকর (রাঃ) কেউই কথা বলছেন না। তাই আমিও কথা বলা পছন্দ করলাম না।

হাদিস ৫৭১৪

আবূল ইয়ামান (রহঃ) উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চই কোন কোন কবিতার মধ্যে জ্ঞানের কথাও রয়েছে।

হাদিস ৫৭১৫

আবূ নূয়াইম (রহঃ) জুনদূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জিহাদে- হেটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন এবং তার একটা আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে গেল। তখন তিনি কবিতার ছন্দে বলেন তুমি একটি রক্তাক্ত আংগুল বৈ কিছুই নও, আর যে কষ্ট ভোগ করছ তা তো একমাত্র আল্লাহর পথেই।

হাদিস ৫৭১৬

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবিরা যে সব কথা বলে না তার মধ্যে কবি লবীদের কথাটাই সবচেয়ে বেশী সত্য কথা। (তিনি বলেছেন) শোন! আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুই বাতিল। তিনি আরও বলেছেনঃ কবি উমাইয়া ইবনু আবূ সালত ইসলাম গ্রহনের কাছাকাছি হয়ে গিয়েছিল।

হাদিস ৫৭১৭

কুতায়বা (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলায় চলছিলাম। দলের মধ্যে থেকে একজন আমির ইবনু আকওয়া (রাঃ)-কে বলল যে, আপনি কি আপনার (ছেটি) কবিতাগুলো থেকে কিছু পড়ে আমাদের শোনাবেন না? আমির (রাঃ) ছিলেন একজন কবি। সুতরাং তিনি দলের লোকদের হুদী গেয়ে শোনাতে লাগলেন। হে আল্লাহ! তুমি না হলে, আমরা হেদায়েত পেতাম না। আমরা সাদাকা দিতাম না, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম না। আমাদের আগেকার-গুনাহু ক্ষমা করতন; যা আমরা করেছি। আমরা আপনার জন্য উৎসর্গিত। যদি আমরা শত্রার সন্মুখীন হই, তখন আমাদের পদদ্ব্য সূদৃঢ় রাখূন। আমাদের উপর শান্তি বর্ষন করুন। শত্রুর ডাকের সময় আমরা যেন বীরের মত ধাবিত হই, যখন তারা হৈ-হুল্লোড় করে, আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ উট চালক লোকটি কে? সে যে এ রকম উট চালিয়ে যাচ্ছে। লোকেরা বললেনঃ তিনি আমির ইবনু আকওয়া। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহম করুন। দলের একজন বললেন ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য তো শাহাদাত নির্দিষ্ট হয়ে গেলো। হায়! যদি আমাদের এ সুযোগ দান করতেন। তারপর আমরা খায়বারে পৌছে শত্রুদের অবরোধ করে ফেললাম। এ সময় আমরা অতিশয় ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লাম। অবশেষে আল্লাহ (খায়বার যুদ্ধে) তাদের উপর আমাদের বিজয় দান করলেন। তারপর যেদিন খায়বার বিজিত হলো, সেদিন লোকেরা অনেক আগুন জালাল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন: তোমরা এত সব আগুন কি জন্য জালাচ্ছ? লোকেবা বললোঃ গোশত রান্নার জন্য। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিসের গোশত? তারা বললঃ গৃহপালিত গাধার গোশত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসব গোশত ফেলে দাও এবং হাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেল। এক ব্যাক্তি বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! বরং গোশতগুলো ফেলে আমরা হাড়িগুলো ধূয়ে নেই? তিনি বললেনঃ তবে তাই কর। রাবী বলেন যখন লোকের যুদ্ধে সারিবদ্ধ হল। আমির (রাঃ)-এর তলোয়ার খানা খাঁটো ছিল। তিনি এক ইয়াহুদীকে মারার উদ্দেশ্য এটি দিয়ে তার উপর আক্রমণ করলেন। তিনি তার তলোয়ারের ধারাল অংশ আমির (রাঃ)-এর হাটুতে এসে আঘাত করল। এতে তিনি মারা গেলেন। তারপর ফিরার সময় সবাই ফিরলেন। সালামা (রাঃ) বলেনঃ আমার চেহারার রং পরিবর্তন দেখে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম আমার বাপ-মা আপনার উপর কুরবানী হউন! লোকেরা বলছে যে- আমিরের আমল সব বরবাদ হয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ এ কথাটা কে বলেছে? আমি বললাম অমুক, অমুক অমুক এবং উসায়দ ইবনু হুয়াইর আনসারী (রাঃ)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা এ কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে। তিনি বললেনঃ তার দুটি পূরস্কার রয়েছে, সে জাহিদ এবং মুজাহিদ। আরব ভূ-খণ্ডে তার মত লোক অল্পই জন্ম নিয়েছে।

হাদিস ৫৭১৮

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতক সহধর্মিনার কাছে আসলেন। তখন তাদের সঙ্গে উম্মে সুলায়মও ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সর্বনাশ, হে আনজাশাহ! তুমি (উট) চালাও। কেননা, তুমি কাচপাত্র (মহিলা) নিয়ে চলেছ। সাবী আবূ কিলাবা বলেনঃ নরী -সাওকাড়া বিল কাওয়ারীর- বাক্য দ্বারা এমন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করলেন, যা অন্য কেউ বললে, তোমরা তাকে ঠাট্টা করতে।

হাদিস ৫৭১৯

মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট মুশরিকদের নিন্দা করার অনুমতি চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে এ নিন্দা থেকে আমার বংশ মর্যাদা কিভাবে বাচাবে? তখন হাসসান (রাঃ) বললেনঃ আমি তাদের থেকে আপনাকে এমনভাবে বের করে দেয়, যেভাবে মাখানো আটা থেকে চুল বের করে আনা হয়। রাবী উরওয়া বর্ননা করেন একদিন আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে হাসসান (রাঃ)-কে গালি দিতে শুরু করলাম তখন তিনি বললেনঃ তুমি তাকে গালমন্দ করো না। কারণ, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরফ থেকে মুশরিকদের প্রতিরোধ করতেন।

হাদিস ৫৭২০

আসবাগ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তার বর্ননায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ভাই অর্থাৎ কবি ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) অশ্লীল কথা বলেনি। তিনি বলতেন: আমাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি কুরআন তিলাওয়াত করেন: যখন ভোরের মনোরম আলো ফূটে উঠে। পথভ্রষ্ট হওয়ার পর তিনি আমাদের সুপথ দেখিয়েছেন। আর আমরা অন্তরের সাথে একীন করলাম যে- তিনি যা বলছেন তা ঘটবেই। তিনি নিজ পিঠ বিছানা থেকে সরিয়ে রেখেই রাত কাটান। যখন কাফিরদের শয্যা-সুখ ত্যাগ করা তাদের পক্ষে ভারী কষ্টকর হয়।

হাদিস ৫৭২১

আবূল ইয়ামান ও ইসরাঈল (রহঃ) হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন যে ওহে হাসসান! তুমি আল্লাহর রাসুলের তরফ থেকে পাণ্টা জবাব দাও। হে আল্লাহ! তুমি জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাধ্যমে তাকে সাহায্য করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ হাঁ।

হাদিস ৫৭২২

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি কাফিরদের নিন্দা করো। জীবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার সহায়।

হাদিস ৫৭২৩

উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো উদর কবিতা দিয়ে ভর্তি হওয়ার চেয়ে পূজ দিয়ে ভর্তি হওয়া অনেক ভাল।

হাদিস ৫৭২৪

উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির পেট কবিতা নিয়ে ভর্তি হওয়ার চাইতে এমন পূজে তর্তি হওয়া উত্তম যা তোমাদের পেটকে ধবংস করে ফেলে।

হাদিস ৫৭২৫

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর আবূ কুয়ায়সের ভাই আফলাহ আমার গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুমতি না নিয়ে, তাকে অনুমতি দেব না। কারন, আবূ কুয়ায়সের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ ব্যাক্তি তো আমাকে দূধ পান করান নি। বরং তার স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। তিনি বললেন অনুমতি দাও। কারণ এ লোকটি তোমার (দূধ) চাচা। তোমার জন হাত ধূলায় ধূসরিত হোক। রাবী উরওয়া বলেন, এ কারণেই আয়িশা (রাঃ) বলতেন যে, বংশগত সম্পর্কে বিবাহে যারা হারাম হয় দুধ পান সম্পর্কেও তোমরা তাদের হারাম গন্য করবে।

হাদিস ৫৭২৬

আদম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসার ইচ্ছা করলেন। তখন সাফিয়্যা (রাঃ) ঋতুস্রাব আরম্ভ হওয়ায় তার দরজার সামনে চিন্তিত ও বিষদ বদনে দাঁড়িয়ে আছেন দেখতে পেলেন। তখন তিনি কুরাইশদের বাগধারায় বলেনঃ ‘আকরা হালকী’। তুমি তো দেখছি, আমাদের আটকিয়ে দিবে। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কুরবানীর দিনে ফরয তাওয়াফ আদায় করেছিলে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তখন তিনি বললেনঃ:- তাহলে এখন তুমি চলো।

হাদিস ৫৭২৭

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মক্কা বিজয়ের বছর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে গিয়ে তাকে গোসল করতে পেলাম। তখন তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা দিয়ে আড়াল করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এ কে? আমি বললাম আমি আবূ তালিবের মেয়ে উম্মে হানী। তিনি বললেনঃ উম্মে হানীর জন্য মারহাবা। তারপর তিনি যখন গোসল শেষ করলেন। তখন তিনি দাড়ালেন এবং এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে আট রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি হুবায়রার পূত্র অমুককে নিরাপত্তা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভাই বলছে, সে তাকে হত্যা করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে হানী। তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উলে হানী (রাঃ) বলেন এই সময়টি ছিল চাশতের সময়।

হাদিস ৫৭২৮

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে একটি কুরবানীর উট হাকিয়ে নিতে দেখে, তাকে বললেনঃ এতে সাওয়ার হয়ে যাও। সে বললঃ এটি তো কুরবানীর উট। তিনি আবার বললেন সাওয়ার হয়ে যাও। সে বললঃ এটি তো কুরবানীর উট। তিনি বললেন এতে সাওয়ার হয়ে যাও। সে বলল, এটি তো কুরবানীর উট। তিনি বললেনঃ ওয়াইলাকা (তোমার অকল্যাণ হোক) তুমি এটির উপর সাওয়ার হয়ে যাও।

হাদিস ৫৭২৯

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে একটা কুরবানীর উট হাকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে বললেনঃ তুমি এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। সে বলল ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি তো কুরবানীর উট। তখন তিনি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার বললেনঃ ওয়াইলাকা (তোমার অনিষ্ট হোক) তুমি এতে সাওয়ার হয়ে যাও। 

 হাদিস ৫৭৩০

মূসা’দ্দাদ ও আইউব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। তার সঙ্গে তখন আনজাশা। নামক একজন কালো গোলাম ছিল। সে পুথি গাইতে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ওহে আনজালা তোমার সর্বনাশ। তুমি উটটিকে কাচপাত্র সদৃশ সাওয়ারীদের নিয়ে ধীরে চালিয়ে যাও।

হাদিস ৫৭৩১

মূসা ইবনু ইসমাঈস (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে অনেক জনের প্রশংসা করলো। তিনি বললেনঃ -ওয়াইলাকা- (তোমার অনিষ্ট হোক) তুমি তো তোমার ভাই এর গর্দান কেটে দিয়েছ। তিনি এ কথাটি তিনবার বললেনঃ তিনি আরও বললেনঃ যদি তোমাদের কাউকে কারেই প্রশংসা করতেই হয়। আর সে তার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত থাকে, তবে শুধূ এতটুকু বসবে যে, আমি এ ব্যাক্তি সম্পর্কেই এরুপ ধারনা পোষণ করি। প্রকৃত হিসাব নিকাশের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর আমি নিশ্চিতভাবে আল্লাহর সামনে কারো পবিত্রতা বর্ণনা করছি না।

হাদিস ৫৭৩২

আবদুর রহমান ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নিজ অধিকারভূক্ত কিছু মাল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাগ করে দিলেন। এমন সমর তামীম গোত্রের যুল খোয়াইসীরা নামক এক ব্যাক্তি বলে উঠল ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইনসাফ করুন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়ায়লাকা (তোমার অমঙ্গল হোক) আমি ইনসাফ না করলে আর কে ইনসাফ করবে? তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি এর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেনঃ না। কারন, তার এমন কতক সাথী রয়েছে; যাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সামনে নিজেদের সালাত (নামায/নামাজ)কে তুচ্ছ মনে করবে এবং তাদের সিয়ামের সম্বন্ধে তোমাদের নিজেদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে! যেমনিভাবে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায় গোবর ও রক্তকে এমনভাবে অতিক্রম করে যায় যে তীরের অগ্রভাগ লক্ষ্য করলে তাতে কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না, তার উপরিভাগে লক্ষ্য করলেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায়না। তার কাঠামোতে ও কোন চিহ্ন নেই। তার পাতির মধ্যে ও, কোন চিহ্ন নেই। এমন সময় তাদের আবির্ভাব হলো যখন মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিবে। তাদের পরিচয় হল, তাদের নেতা এমন এক ব্যাক্তি হবে- যার একহাত স্ত্রীলোকের রক্তের মত অথবা শিড়ের মত তা কাপতে থাকবে। রাবী আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি যে- আমি নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শুনেছি এণং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজে আলী (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম যখন তিনি এ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তখন সে লোকটিকে যুদ্ধের নিহত ব্যাক্তিদের মধ্য থেকে খুজে বের করে আনার পর তাকে ঠিক সেই অবস্থায়ই পাওয়া গেল, যে অবস্হার বর্ণনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়ে ছিলেন।

হাদিস ৫৭৩৩

আবূল হাসান মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এসে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো ধবংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ ওয়ায়লাকা- (আফসোস তোমার জন্য) এরপর সে বলল আমি রামযানের মধ্যেই দিনের বেলায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেন একটা গোলাম আযাদ করে দাও সে বলল: আমার কাছে তা নেই। তিনি বললেনঃ তা হলে তুমি লাগাতার দুমাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। সে বলল আমি এতেও সক্ষম নই। তিনি বললেনঃ তবে তুমি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াও। লোকটি বলল: আমি এর সামর্থ রাখি না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে এক ঝূড়ি খেজুর এলো। তখন তিনি বললেনঃ এটা নিয়ে যাও এবং সাদাকা করে দাও। সে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! তা কি আমার পরিবার ব্যতীত অন্যকে দেব? সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রান। মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার চেয়ে অভাবী আর কেউ নেই। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হেসে দিলেন যে- তার পার্শের দাত পর্যন্ত প্রকাশ পেল। তিনি বললেনঃ তবে তুমই নিয়ে যাও।

হাদিস ৫৭৩৪

সূলায়মান ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একজন গ্রাম্য লোক এসে বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে হিজরত সম্পর্কে কিছু বর্ননা করুন। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার প্রতি হিজরত তো খুব কঠিন ব্যাপার। তোমার উট কি আছে? সে বলল: হা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি এর যাকাত দিয়ে থাক? লোকটি বলল: হ্যা। তিনি বললেনঃ তবে তুমি সমুদ্রের ঐ পাশ থেকেই আমল করে যাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সাওয়াব একটুও কমাবেন না।

হাদিস ৫৭৩৫

আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়ায়লাকুম অথবা ওয়ায়হাকুম (তোমাদের জন্য আফসোস) আমার পরে তোমরা আবার কাফির হয়ে যেয়ো না। যাতে তোমরা একে অন্যের গর্দান মারবে।

হাদিস ৫৭৩৬

আমর ইবনু আসিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক গ্রাম্য লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এসে বলল: ইয়া রাসুলুল্লাহ কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? তিনি বললেনঃ তোমার জন্য আক্ষেপ তুমি এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? সে জবাব দিলঃ আমি তো তার জন্য কিছু প্রস্তুতি নেই নি, তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস, কিয়ামতের দিন তুমি তার সঙ্গেই থাকবে। তখন আমরা বললাম: আমাদের জন্যও কি এরুপ? তিনি বললেনঃ হ্যা। এতে আমরা সে দিন যারপরনাই আনন্দিত হলাম। আনাস (রাঃ) বলেন এ সময় মুগীরা (রাঃ)-এর একটি যুবক ছেলে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে ছিল আমার সমবয়সী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি এ যুবকটি বেশী দিন বেঁচে থাকে, তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই কিয়ামত সংঘটিত হতে পারে।

হাদিস ৫৭৩৭

বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসবে (বলছিলেনঃ) সে তারই সঙ্গী হবে।

হাদিস ৫৭৩৮

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন ব্যাক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যে ব্যাক্তি কোন দলকে ভালবাসে, কিন্তু (আমলের দিক দিয়ে) তাদের সমান হতে পারে নি। তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে সে তারই সঙ্গী হবে।

হাদিস ৫৭৩৯

আবূ নুয়াইম (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো: কোন ব্যাক্তি একদলকে ভালবাসে কিন্তু (আমলে)তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সঙ্গী হবে।

হাদিস ৫৭৪০

আবদান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল: ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে হবে? তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি এর জন্য কি যোগাড় করেছ? সে বলল: আমি এর জন্য তো বেশী কিছু সালাত (নামায/নামাজ), সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ও সাদাকা আদায় করতে পারি নি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস তারই সঙ্গী হবে।

হাদিস ৫৭৪১

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু সাঈদকে বললেনঃ আমি তোমার জন্য একটি কথা গোপন রেখেছি, তুমি বলতো সেটা কি? সে বলল: ‘দুখ’ তখন তিনি বললেনঃ দূর হও। (অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরীক্ষার জন্য সূরা দুখান কল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সে পূর্ন নাম না বলে কেবল দূখ- বলেছে। এতে বোঝা যায় যে তার জানো স্পষ্ট ছিল না। )

হাদিস ৫৭৪২

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন উমব ইবনু খাত্তাব (রাঃ) একদল সাহাবীসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ইবনু সহিয়্যাদের নিকট গমন করেন। তারা সেখানে গিয়ে তাকে বনূ মাগালাহের দূর্গের পাশে ছেলেদের সাথে খেলায় রত গেলেন। তখন সে বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌছেছেন। সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন টের পেল না যতক্ষন না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দিয়ে তার পিঠে মারলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আমই আল্লাহর রাসুল? তখন সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উষ্মি সম্প্রদায়ের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এরপর ইবনু সাইয়্যাদ বললো: আপনি কি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমই আল্লাহর রাসূল? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধাক্কা মেরে বললেন আমি আল্লাহ ও তার রাসুলদের উপর ঈমান রাখি। তারপর আবার তিনি ইরনে সাইয়্যেদকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কী দেখতে চাও? সে বললো আমার নিকট সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী উভয়ই আসেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিষয়টি তোমার উপর এলোমেলো করে দেয়া হয়েছে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন আমি তোমার (পরীক্ষার) জন্য কিছু গোপন রাখছি। সে বলছেনঃ তা দুখ। তখন তিনি বললেনঃ দূর হও। তুমি ক-ধনো তোমার ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারবেনা। উমরু (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি তার ব্যাপারে আমাকে অনূমতি দেন যে, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ যদি সেই (দাজ্জালই) হয়ে থাকে , তবে তার উপর তোমাকে ক্ষমতা দেওয়া হবে না। আর এ যদি সে না হয়ে থাকে, তবে তাকে হত্যা করা তোমার জন্যই ভাল হবে না। সালিম (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এ ঘটনার পর একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উবাই ইবনু কাব (রাঃ) সেই খেজুর বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, যেখানে ইবনু সাইয়্যাদ ছিল। অবশেষে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাগানে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি খেজ্বরের কাণ্ডের আড়ালে আড়ালে চলতে লাগলেন। তার লক্ষ্য ছিল যে, ইবনু সাইয়্যাদ তাকে দেখার আগেই যেন তিনি তার কিছু কথাবার্তা শুনে নিতে পারেন। এ সময় ইবনু সাইয়্যাদ তার বিছানায় একখানা চাঁদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল। আর তার চাঁদরের ভেতর থেকে বিড়বিড় শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে ইবনু সাইয়্যাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখল যে, তিনি খেজ্বরের কাণ্ডের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে আসছেন। তখন তার মা তাকে ডেকে বললোঃ ওহে সাফ এটা তার ডাক নাম ছিলো। এই যে, মুহাম্মদ। তখন ইবনু সাইয়্যাদ (যে বিষয়ে মগ্ন ছিল তা থেকে) বিরত হন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তার মা তাকে সতর্ক না করতো তবে তার (রহস্য) প্রকাশ পেয়ে যেতো। রাবী সালিম আবূও বলেনঃ আবদুল্লাহহ (রাঃ) বর্ননা করেছেনঃ যে, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা-আমার যথোপযূক্ত প্রশংসার পর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেনঃ আমি তোমাদের তার সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নাবী ই এর সম্পর্কে তার কওমকে সতর্ক করে গিয়েছেন। আমি এর সম্পর্কে এমন কথা বলছি যা অন্য কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাওমকে বলেন নি। তবে তোমরা জেনে রাখ সে কানা কিন্তু আল্লাহ কানা নন।

হাদিস ৫৭৪৩

ইমরান ইবনু মায়সারা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলে তিনি বললেনঃ এই প্রতিনিধি দলের প্রতি -মারহাবা- যারা লাঞ্চিত ও লজ্জিত অবস্থায় আসে নি। তারা বলল: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা রাবিয়া কাওমের লোক। আমরা ও আপনার মধ্যখানে অবস্থান করছে “মুযার’ কাওম। এজন্য আমরা হারম মাস ছাড়া আপনার খেদমতে পৌছতে পারি না। সুতরাং আপনি আমাদের এমন কিছু চুড়ান্ত বিধি নিষেধ বাৎলিয়ে দেন যা অনুসরন করে আমরা জান্নাতে যেতে পারি এবং আঁমাদের পাচাতে যারা রয়েছে তাদের হেদায়েত দিতে পারি। তিনি বললেনঃ আমি চারটি (মেনে চলা) ও চারটি (হতে বিরত থাকার) নির্দেশ। তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত দেবে। রামযান মাসের সিয়াম পালন করবে এবং গনীমতের মালের পঞ্চমাংশ দান করবো আর কদুর খোলে, সবুজ রং করা কলসে, খেজুর মূলের পাত্রে এবং আলকাতসা মাখানো পাত্রে পান করবে না।

হাদিস ৫৭৪৪

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আব্দূল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (কিয়ামতের দিন) প্রতিজ্ঞা ভংকারীর জন্য একটি পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং বলা হবে যে, এ হল অমুকের পূত্র অমুকের নিদর্শন।

হাদিস ৫৭৪৫

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিজ্ঞা ভংকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটা পতাকা স্থাপন করা হবে। আর বলাহবে যে, এটা অমুকের পূত্র অমুকের নিদর্শন।

হাদিস ৫৭৪৬

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউ যেন একথা না বলে যো আমার আত্না খবীস হয়ে গেছে। তবে একথা বলতে পার যে আমার আত্মা কলুষিত হয়ে গেছে।

হাদিস ৫৭৪৭

আবদান (রহঃ) আবূ ইমাম ইবনু সাহল তার পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউ যেন একথা না বলে, আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে। বরং সে বলবেঃ আমার আত্মা কলুষিত হয়েছে।

হাদিস ৫৭৪৮

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেনঃ মানুষ যামানাকে গালি দেয়, অথচ আমই যামানা, (এর নিয়স্ত্রণের মালিক)। একমাত্র আমারই হাতে রাত ও দিনের পরিবর্তন হয়। 

No comments:

Powered by Blogger.