মসজিদ সম্বন্ধীয় কতিপয় মাসআলা
মসজিদ সম্বন্ধীয় কতিপয় মাসআলা
মসজিদ সম্বন্ধীয় কতিপয় মাসআলা
মসজিদের মাসআলা দুই প্রকারঃ ১ম ওয়াকফ সম্বন্ধীয়। ২য় নামাযের স্থান হওয়া সম্বন্ধীয়। ওয়াকফ সম্বন্ধীয় মাসায়েল ওয়াকফের বয়ানের মধ্যে লিখা হইবে। এখানে শুধু নামায কিংবা নামাযের স্থান হওয়া সম্বন্ধীয় কয়েকটি মাসআলা লিখা হইল।
১।মাসআলাঃ (মুছল্লীদের নামায পড়িবার জন্য আসিতে বাধ্য হয় এরূপভাবে) মসজিদের দরজা বন্ধ করা মকরূহ তাহরীমী। অবশ্য নামাযের সময় ব্যতিরেকে অন্য সময় মাল-আসবাবের হেফাযতের জন্য দরজা বন্ধ করা জায়েয আছে।
২।মাসআলাঃ মসজিদের ভিতর যেরূপ বাহ্য, প্রস্রাব, স্ত্রীসঙ্গম ইত্যাদি করা নিষিদ্ধ; মসজিদের ছাদের উপরও এই সব কাজ করা নিষিদ্ধ।
৩।মাসআলাঃ যে ঘরে নামাযের জায়গা নির্ধারিত আছে, সে জন্য ঐ পুরা ঘরের উপর মসজিদের হুকুম বর্তিবে না।
৪।মাসআলাঃ ওয়াকফের (বা চাঁদার) টাকা দ্বারা মসজিদের দেওয়ালে কারুকার্য করা জায়েয নহে। যদি কেহ নিজের হালাল টাকা দ্বারা কারুকার্য করিতে চাহে, তবে দোষ নাই; কিন্তু মেহরাবের এবং পশ্চিম দিকের দেওয়ালে সৌন্দর্য্যের জন্য করুকার্য করা নিজের হালাল টাকার দ্বারা হইলেও মকরূহ।
(মাসআলাঃ শিশু বা পাগলকে মসজিদে ঢুকিতে দেওয়া নিষেধ।
মাসআলাঃ শোরগোল করা, উচ্চঃস্বরে চেঁচান, কবিতা পাঠ করা, দুনিয়াবি দরবার করা, ভিক্ষা করা, হারানো জিনিস তালাশের জন্য এ’লান করা, খাওয়া-দাওয়া করা, গল্প-গুযব করাইত্যাদি মসজিদের ভিতর নিষেধ।)
টিকা
১. সকলেই সব সময় বিশেষতঃ রাতে শয়নকালে এবং রুগ্নাবস্থায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকিবে। কাহারও দেনা-পাওনা থাকিলে তাহা পরিশোধ করিবে, কাহাও আমানত থাকিলে তাহা ফেরত দিবে, কাহারও কোন হক নষ্ট করিলে তাহা মা’ফ চাহিয়া লইবে। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাৎ ছুটিয়া গিয়া থাকিলে তাহা আদায় করিবে। নিজের সম্পত্তির কোন অংশ কোন ছদক্বায়ে জারিয়ার জন্য অছীয়ত করিবে। সারা জীবনের গোনাহর জন্য মা’ফ চাহিতে থাকিবে এবং তওবা এস্তাগফার ও এই কলেমা পড়িতে থাকিবে [আরবি] ‘রাযীতু বিল্লাহি রাব্বাওঁ ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাওঁ ওয়া বি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যান।
অর্থআল্লাহকে রব্ব (পালনকর্তা) ইসলামকে ধর্ম এবং মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসাবে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করিয়াছি।
৫।মাসআলাঃ মসজিদের দেওয়ালে বা ছাদে কোরআনের আয়াত বা আল্লাহার নাম লেখা ভাল নয়।
(মাসআলাঃ বিনা যরুরতে মসজিদের ছাদ পা দিয়ে মাড়ান মকরূহ।)
৬।মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের দেওয়ালে থুথু বা বাশ ফেলা মকরূহ। যদি নাক ঝাড়ার বা থুথু ফেলার দরকার পড়ে, তবে বাহিরে গিয়া ফেলিয়া আসিবে, অথবা নিজের রুমালে লইয়া মলিয়া ফেলিবে।
(মাসআলাঃ জুতা যদি পাকও হয়, তবুও বাহিরে হাঁটিবার পর জুতা পায়ে দিয়া মসজিদে প্রবেশ করা মকরূহ।)
৭।মাসআলাঃ ওযূ-গোসল বা কুলির পানি মসজিদে ফেলা মকরূহ তাহরীমী।
৮।মাসআলাঃ জানাবাতের অবস্থায় বা হায়েয-নেফাসের অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা হারাম।
(মাসআলাঃ দুর্গন্ধযুক্ত অথবা নাপাক কোন জিনিস লইয়া মসজিদে প্রবেশ করা মকরূহ তাহরীমী। যেমন গন্ধক বা কেরোসিন তৈল, পিঁয়াজ, রসুন, তামাক অথবা হুক্কার দুর্গন্ধ ইত্যাদি। নাপাক জিনিস, যথা- বাহ্য, প্রস্রাব বা শুক্রযুক্ত কাপড়, গোবর ইত্যাদিসহ জুতা। গোবর বা নাপাক পানি ইত্যাদি দ্বারা মসজিদ লেপা মকরূহ। মসজিদের ভিতর পেটের বায়ু ছাড়া মকরূহ। যদি বায়ুর বেগ টের পাওয়া যায় তখন বাহিরে গিয়া বায়ু ছাড়িয়া ওযূ করিয়া আসিবে।)
৯।মাসআলাঃ মসজিদের ভিতর বেচাকেনা করা মকরূহ তাহরীমী। অবশ্য মো’তাকেফের জন্য মসজিদের ভিতর খাওয়া-দাওয়া এবং শয়ন করা জায়েয আছে। এইরূপে তাহার খরচ চলিবার যোগ্য ক্রয়-বিক্রয়ও মসজিদে থাকিয়া জায়েয আছে, কিন্তু মাল আসবাব মসজিদে আনিতে পারিবে না।
১০।মাসআলাঃ কাহারও পায়ে যদি কাদা থাকে, তবে তাহা মসজিদের দেওয়ালে বা খাম্বায় মোছা জায়েয নহে।
১১।মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে গাছ লাগান মকরূহ। কেননা, ইহা আহলে কিতাবদের প্রথা। অবশ্য যদি উহাতে মসজিদের কোন উপকার হয়, তবে জায়েয। যেমন, মসজিদের মাটি অত্যন্ত সেঁতসেতে দেওয়াল ধসিয়া পড়া আশংকা রহিয়াছে, এমতাবস্থায় যদি গাছ লাগান যায়, তবে গাছ ঐ আর্দ্রতা টানিয়া লইবে।
১২।মসজিদকে রাস্তা বানান জায়েয নহে। যদি কোন সময় একান্ত প্রয়োজন হয়, তবে জায়েয আছে।
১৩।মাসআলাঃ মসজিদের মধ্যে বাসিয়া শিল্প বা ব্যবসায়ের কোন কাজ করা জায়েয নহে। কেননা, মসজিদ নির্মিত হয় দ্বীনের কাজের জন্য, বিশেষতঃ নামাযের জন্য নির্মিত হয়। অতএব, তথায় দুনিয়ার কাজ হওয়া ঠিক নহে। এমন কি যদি কোন লোক কোরআন শরীফও বেতন লইয়া পড়ায়, তাহারও মসজিদে বসিয়া পড়ান উচিত নহে। কারণ, ইহাও এক প্রকার দুনিয়ার পেশা। অবশ্য যদি মসজিদ পাহারা দেওয়ার দরকার পড়ে এবং কেহ পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে বসে এবং ঐ অবস্থায় নামাযীদের কোন ক্ষতি না করিয়া কিছু রোযগারের কাজও করে, যেমন সেলাইর কাজ ইত্যাদি করে, তবে তাহা দুরুস্ত হইবে।
No comments: