জানাযা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন মাসআলা
জানাযা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন মাসআলা
জানাযা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন মাসআলা
১।মাসআলাঃ ভুলিয়া যদি মাইয়্যেতকে কবরে কেবলামুখী করিয়া শোয়ান না হয় এবং মাটি দেওয়ার প৪র স্মরণ হয়, তখন আর ক্বেবলামুখী করিবার জন্য পুনরায় কবর খোলা জায়েয নাই। অবশ্য যদি শুধু বাঁশ, তক্তা দেওয়ার পর স্মরণ হয়, তবে বাঁশ সরাইয়া ক্বেবলামুখী করিয়া দিবে।
২, ৩।মাসআলাঃ জানাযার সহিত মেয়েলোকের যাওয়া মকরূহ তাহরীমী। চিৎকার করিয়া ক্রন্দনকারিণী মেয়েলোকের যাওয়া নিষেধ।
৪।মাসআলাঃ মাইয়্যেতকে কবরে রাখার সময় আযান দেওয়অ বেদ’আত।
৫।মাসআলাঃ জানাযার নামাযের মধ্যে ইমাম যদি চারি তকবীর হইতে বেশী বলে, তবে হানাফী মুক্তাদিগণ ৪র্থ তকবীরের পর বেশী তকবীর বলিবে না; বরং চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিবে। তারপর যখন ইমাম সালাম ফিরায়, তখন মুক্তাদিগণ সেই সঙ্গে সালাম ফিরাইবে। অবশ্য যদি বেশী তকবীর ইমামের মুখ হইতে না শোনে বরং মুকাব্বির হইতে শোনে, তবে মুক্তাদিদের পায়রবী করা উচিত এবং প্রত্যেক তকবীরকে তকবীরে তাহরীমা মনে করিবে এবং ধারণা করিবে যে, ইহার পূর্বে মোকাব্বির যেই তকবীর নকল করিয়াছে হয়ত তাহা ভুল, ইমাম এখন তকবীরে তাহরীমা বলিয়াছেন।
৬।মাসআলাঃ নৌকায়, ষ্টীমারে বা জাহাজে যদি কোন লোক মারা যায় এবং কিনারা এত তফাৎ যে, তথায় পৌঁছিয়া দাফন করিতে গেলে লাশ পচিয়া দুর্গন্ধময় হইয়া যাইবে, তবে মাইয়্যেতকে নিয়ম মত গোসল দিয়া কাফন পরাইয়া জানাযার নামায পড়িয়া দরিয়ার মধ্যে ছাড়িয়া দিবে। আর যদি কিনারা তত তফাৎ না হয়, তবে লাশ রাখিয়া দিবে এবং যথাসম্ভব শীঘ্র কিনারায় পৌঁছিয়া মাটিতে দাফন করিবে।
৭।মাসআলাঃ যদি কাহারও জানাযার দো’আ মুখস্থ না থাকে, তবে শুধু [আরবি] বলিয়া দিলেও চলিবে, আর যদি তাহাও বলিতে না পারে, তবে অগত্যা শুধু চারিবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলিয়া দিলেও জানাযার নামাযের ফরয আদায় হইয়া যাইবে। কারণ, দো’আ দুরূদ পড়া ফরয নহে, সুন্নত।
৮।মাসআলাঃ কবর দিবার পর আবার কবর খুলিয়া মাইয়্যেতকে বাহির করা দুরুস্ত নহে। অবশ্য যদি কোন বন্দার হক নষ্ট হয়, যেমন যদি অন্যের জমিনে মাটি দেওয়া হয় এবং জমিনওয়ালা ঐ জমিনের পরিমাণ বা তাহার মূল্য লইয়াও ক্ষান্ত না হয়, বা কাহারও মূল্যবান কোন জিনিস যদি কবরে থাকিয়া যায়, তবে কবর খোলা জায়েয হইবে।
৯।মাসআলাঃ যদি গর্ভবতী স্ত্রীলোকের মৃত্যু হয় এবং পেটের মধ্যে বাচ্চা নড়া-চড়া করে, তবে পেট কাটিয়া বাচ্চা বাহির করিতে হইবে। এইরূপে যদি কেহ কাহারও টাকা বা গিনি গিলিয়া মরিয়া যায় এবং টাকাওয়ালা মাফ না করে বা মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তিও না থাকে, তবে পেট কাটিয়া বাহির করিতে হইবে। ত্যাজ্য সম্পত্তি থাকিলে তাহা হইতে পরিশোধ করিবে, পেট কাটিবে না।
১০।মাসআলাঃ যে স্থানে যাহার মৃত্যু হয় সেই স্থানের কবরস্থানেই তাহাকে মাটি দেওয়া উত্তম, অন্য স্থানে লইয়া যাওয়া ভাল নহে, যদি ঐ স্থান দুই এক মাইলের বেশী দূরে না হয়। আর যদি তদপেক্ষা অধিক দূরবর্তী হয়, তবে তথায় লইয়া যাওয়া জায়েয নাই (মকরূহ)। কিন্তু মাটি দিয়া ফেলিলে অন্যত্র লইয়া যাওয়া কেনরূপেই জায়েয নহে।
১১।মাসআলাঃ গদ্যে বা পদ্যে মৃত ব্যক্তির গুণ প্রকাশ করা বা প্রশংসা করা জায়েয আছে। কিন্তু অতিরঞ্জিত করা বা মিথ্যা প্রশংসা করা জায়েয নহে।
১২।মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির শোকাতুর আত্মীয়দিগকে ছবরের ফযীলত ও সওয়াব বর্ণনা করিয়া সান্ত্বনা দেওয়া এবং মৃতের জন্য নাজাতের এবং তাহার আত্মীয়-স্বজনের জন্য ছবর ও সওয়াবের দো’আ করা জায়েয। শোকাতুরকে সান্ত্বনা দেওয়াকে আরবিতে তা’যিয়াত বলে। তিন দিনের পর তা’যিয়াত করা মাকরূহ। একবারের পার দ্বিতীয় বার তা’যিয়াত করা মকরূহ তানযীহী; কিন্তু যদি আত্মীয়-স্বজন বিদেশ হইতে দেরীতে আসে বা খবর দেরীতে পৌঁছে, তবে মকরূহ নহে।
১৩।মাসআলাঃ নিজের জন্য কাফন প্রস্তুত করিয়া রাখা মকরূহ নহে, কিন্তু কবর প্রস্তুত করিয়া রাখা মকরূহ।
(মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য বিচ্ছেদ-বেদনায় চোখ দিয়া পানি ফেলা জায়েয আছে, কিন্তু চেঁচাইয়া ক্রন্দন করা, বুকে মাথায় পিটান, জামা কাপড় ছিড়িয়া ফেলা বা মুখে কোন না-জায়েয কথা বলা দুরুস্ত নহে।)
১৪।মাসআলাঃ মাইয়্যেতের কাফনের উপর কালি ছাড়া শুধু আঙ্গুল দিয়া কপালে [আরবি] এবং সিনায় [আরবি] লিখিয়া দেওয়া দুরুস্ত আছে। কিন্তু ছহীহ হাদীসে ইহার কোন প্রমাণ নাই; কাজেই ইহাকে সুন্নত বা মোস্তাহাব ধারণা করা উচিত নহে।
১৫।মাসআলাঃ কবরের উপর কোন তাজা ডাল রাখিয়া দেওয়া মোস্তাহাব, আর যদি কবরের উপর (বা পার্শ্বে) কোন গাছপালা জন্মে, তবে তাহা কাটিয়া বা মারিয়া ফেলা মকরূহ। (কিন্তু নিজে নিজে শুকাইয়া বা মরিয়া গেলে কাটিয়া ফেলা মকরূহ নহে।)
১৬।মাসআলাঃ এক কবরে একজনের বেশী মাইয়্যেত দাফন করা উচিত নহে, তবে অত্যন্ত ঠেকাবশতঃ জায়েয আছে। এইরূপ করিতে হইলে মাইয়্যেত যদি শুধু পুরুষ হয়, তবে তাহাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ভাল তাহাকে সামনে অর্থাৎ, ক্বেবলার দিকে রাখিতে হইবে এবং যদি পুরুষ, স্ত্রী (ও বালক) মিশ্রিত হয়, তবে প্রথমে (ক্বেবলার দিকে) পুরুষ, (তারপর বালক) তারপর স্ত্রীলোকগণকে রাখিতে হইবে। (এবং প্রত্যেক দুইজনের মধ্যে মাটি দ্বারা কিছু আড়ালের মত করিয়া দিতে হইবে।)
১৭।মাসআলাঃ পুরুষদের জন্য কবর যেয়ারত করা মোস্তাহাব। যিয়ারত করার অর্থ দেখাশুনা। সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কবর যিয়ারত করা উচিত। সেই দিন শুক্রবার হওয়াই সবচেয়ে ভাল। বুযুর্গানে দ্বীনের কবর যিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়াও দুরুস্ত আছে, কিন্তু খেলাফে শরা কোন আকীদা বা আমল হওয়া ঠিক নহে। যেরূপ বর্তমানে ওরসের সময় হইয়া থাকে। (যেমন আজকাল অনেকে মাযার যিয়ারত করিতে গিয়া এইরূপ ধারণা করে যে, বুযুর্গ মনের ভেদ জানিতে পারেন বা মনের বাসনা পূর্ণ করিয়া দিতে পারেন। কেহ বা মাযারকে সজদা করে, মাযারের উপর ফুল, বাতি বা শিরনি চড়ায়; এইরূপ করিলে মহাপাপ হইবে।)
(মাসআলাঃ কোন ব্যক্তির যিম্মায় যদি রোযা, নামায তেলাওয়াতের সজদা, কসমের কাফফারা বা মান্নত বাকী থাকিয়া যায়, জীবিতাবস্থায় পূর্ণ করিতে না পারে, তবে এই সমস্ত ফিদিয়া আদায় করিবার জন্য ওছিয়ত করিয়া যাওয়া তাহার উপর ওয়াজিব। যদি সে ওছিয়ত করিয়া যায়, তবে সেই ওছিয়ত তাহার সম্পূর্ণ ত্যাজ্য সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত খরচ করিয়া না গেলে সম্পূর্ণ ফিদিয়া আদায় করিয়া দেওয়া ওয়ারিসগণের জন্য মোস্তাহাব।)
No comments: