বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ আহকাম অধ্যায় ২ (৬৬৯৩-৬৭৩১)
হাদিস ৬৬৯৩
ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উৎবা ইবনু আর ওয়াক্কাস তার ভাই সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসকে এ মর্মে ওসিয়ত করেন যে, যামআ-এর বাদীর গর্ভজাত সন্তানটি আমার ঔরস থেকে জন্মলাভ করেছে। অতএব তাকে তুমি তোমার তত্ত্বাবধানে নিয়ে এসো। মক্কা বিজয়ের বারে সা’দ (রাঃ) তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধরলেন এবং বললেনঃ আমার ভাই এ ছেলের ব্যাপারে আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন। আবদ ইবনু যামআ দাড়িয়ে বলল, এ আমার ভাই, আমার পিতার বাদীর গর্ভজাত সন্তান। আমার পিতার ঔরসে তার জন্ম। তারপর তারা উভয়েই বিষয়টি নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বিচার প্রার্থী হলেন। সা’দ বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ আমার ভাইয়ের ছেলে। আমার ভাই এ সম্পর্কে আমাকে ওসিয়ত করে গেছেন। আবদ ইবনু যামআ বলল, এ আমার ভাই, আমার পিতার বাদীর গর্ভজাত সন্তান। আমার পিতার ঔরসেই তার জন্ম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবদ ইবনু যামআ! এ তোমারই। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সন্তান বিছানার মালিকেরই আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবার সাথে এ ছেলেটির সা’দৃশ্য লক্ষ্য করার কারণে, সাওদা বিনত যামআ (রাঃ)-কে বললেনঃ এর থেকে পর্দা করে চলো। সে জন্য মৃত্যুর পুর্বে সে ছেলে সাওদাকে কোন দিন দেখতে পায়নি।
হাদিস ৬৬৯৪
ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মাল আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা কসম করে, সে আল্লাহ তাআলার সাথে এমন অবস্হায় সাক্ষাৎ করবে যে, তিনি তার প্রতি ভীষণ রাগাম্বিত থাকবেন। এ মর্মে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত অবতীর্ন করেছেনঃ ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তূচ্ছ মূল্য বিক্রয় করে। (৩-৭৭) যখন আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদেরকে হাদীস বর্ণনা করছিলেন, তখন আশআছ ইবনু কায়স (রাঃ) এলেন এবং বললেনঃ যে এই আয়াতই আমি ও অপর একটি লোক সম্পর্কে অবতীর্ন হয়েছে। একটি ফুয়ার বিষয়ে যার সাথে আমি বিবাদ করেছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তোমার কাছে প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম- না। তিনি বললেনঃ তাহলে সে কসম করুক। আমি বললাম সে কসম খাবেই। তখন এই আয়াত অবতীর্ন হয়ঃ যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তূচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে (৩-৭৭)।
হাদিস ৬৬৯৫
আবূল ইয়ামন (রহঃ) উম্মু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দরজার পাশে ঝগড়ার শোরগোল শুনতে পেলেন। তাই তিনি তাদের কাছে বেরিয়ে গেলেন এবং বললেন?, আমি তো একজন মানুষ। বিবদমান ব্যাক্তিরা ফয়সালার জন্য আমার নিকট আসে। হয়ত তাদের কেউ অন্যের তূলনায় অধিক বাকপটু। আমি তার কথার ভিত্তিতে তার পক্ষে ফায়সালা করি এবং আমি মনে করি সে সত্যবাদী। সূতরাং আমি যদি কাউকে অন্য মুসলমানের হকের সাথে ফায়সালা করে দেই তাহলে তা (তার জন্য) একখন্ড আগুন ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং সে চাহে তা গ্রহণ করুক অথবা ছেড়ে দিক।
হাদিস ৬৬৯৬
ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সংবাদ পৌছল যে, তাঁর সাহাবীদের একজন তার গোলামকে মৃত্যুর পরে কার্যকর হবে এই শর্তে আযাদ করলেন। অথচ তার এ ছাড়া আর কোন মাল ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে গোলমটিকে আটশ- দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন এবং প্রাপ্তমুল্য তার নিকট পাঠিয়ে দেন।
হাদিস ৬৬৯৭
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেনাদল প্রেরণ করেন এবং উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেন। কিন্তু তার নেতৃত্বের ব্যাপারেঁ সমালোচনা করা হল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা যদি তার নেতৃত্বের সমালোচনা কর, তোমরা ইতিপূর্বে তার পিতার নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর কসম! সে নেতৃত্বের উপযুক্ত ছিল। আর সে ছিল আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। আর তারপরে এ হল আমার কাছে সবচাইতে প্রিয়।
হাদিস ৬৬৯৮
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে সবচাইতে ঘৃণ্য ব্যাক্তি হল সে, যে সর্বক্ষণ ঝগড়ায় লিপ্ত থাকে।
হাদিস ৬৬৯৯
মাহমুদ ও নূআয়ম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে জায়ীমা গোত্রের দিকে প্রেরণ করলেন। কিন্তু তারা উত্তমরুপে ‘আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি’ কথাটি বলতে পারল না। বরং বলল, সাবানা- ‘সাবানাঁ’ (আমরা পুরাতন ধর্ম ত্যাগ করে নতূন ধর্ম গ্রহণ করেছি)। এরপর খালিদ তাদের হত্যা ও বন্দী করতে শুরু করলেন। আর আমাদের প্রত্যেকের কাছে বাদী হাওয়ালা করলেন এবং প্রত্যেককে নিজ বন্দীকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আমার বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সঙ্গীদের কেউ তার বন্দীকে হত্যা করবে না। এরপর এ ঘটনা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বর্ননা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! খালিদ ইবনু ওয়ালীদ যা করেছে তা থেকে আমি আপনার অব্যাহতি কামনা করছি। এ কথাটি তিনি দু-বার বললেন।
হাদিস ৬৭০০
আবূ নূমান (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বনী আমের গোত্রে (আত্নঘাতী) সংঘর্ষ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ সংবাদ পৌছল। তিনি যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পর তাদের মধ্যে মিমাংসা করার জন্য আসলেন। (আসার সময়) তিনি বিলালকে বললেনঃ যদি সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে যায় আর আমি এসে না পৌছি, তাহলে আবূ বকরকে বলবে, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। যখন আসরের সময় হল, বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। অতঃপর ইকামত দিয়ে আবূ বকরকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বললেনঃ আবূ বকর (রাঃ) সামনে গেলেন। আবূ বকর (রাঃ)-এর সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্হায়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং মানুষকে ফাঁক করে আবূ বকরের পিছনে দাড়ালেন। অর্থাৎ আবূ বকরের সংলগ্ন কাতার পর্যন্ত অগ্রসর হলেন। রাবী বলেন, লোকেরা হাততালি দিল। তিনি আরও বলেন যে, আবূ বকর (রাঃ) যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন তখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ না হওয়া পর্যন্ত এদিক-সেদিক তাকাতেন না। তিনি যখন দেখলেন যে, হাততালি বন্ধ হচ্ছে না তখন তিনি তাকালেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার পিছনে দেখতে পেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় তাকে সালাত (নামায/নামাজ) পুর্ণ করতে বললেনঃ এবং যেভাবে আছো সে ভাবেই থাকতে বললেন। আবূ বকর (রাঃ) কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশের উপর আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর পিছনে সরে আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্হা দেখে সামনে গেলেন এবং লোকদের নিমে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হল, তখন তিনি আবূ বকরকে বললেনঃ আমি যখন তোমাকে ইশারা করলাম, তখন তোমায় কি জিনিস বাধা দিল যে, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ন করলে না। তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইমামত করার দুঃসাহস ইবনু আবূ কুহাফার কখনই নেই। এরপর তিনি লোকদের বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের কোনরুপ জটিলতা সৃষ্টি হলে পুরুষরা সুবহানাল্লাহ বলবে আর নারীরা হাতের উপর হাত মেরে আওয়াজ দেবে।
হাদিস ৬৭০১
আবূ সাবিত মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যে, আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট লোক পাঠালেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদত বরণকারীদের করেণে তখন তার কাছে উমর (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ উমর (রাঃ) আমার কাছে এসে বলেছেনঃ যে, কুরআনের বহু সংখ্যক হাফিয ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। এজন্য আমার ভয় হচ্ছে যে, আরো অনেক স্থানে যদি কুরআনের হাফিযগণ এরুপ ব্যাপক হারে শহীদ হন তাহলে কুরআনের বহু অংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। আমি বললাম, কি করে আমি এমন কাজ করব যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি। উমর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! এটা একটা ভাল কাজ। উমর (রাঃ) আমাকে এ ব্যাপারে বারবার বলছিলেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়ে আমার অন্তরে প্রশান্তি দান করলেন। যে বিষয়ে তিনি উমর (রাঃ)-এর অন্তরেও প্রশান্তি দান করেছিলেন এবং আমিও এ বিষয়ে একমত পোযণ করলাম যা উমর (রাঃ) মত পোষন করেছিলেন। যায়িদ (রাঃ) বলেন যে, এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তুমি একজন বুদ্ধিদীপ্ত যুবক, তোমার ব্যাপারে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তাছাড়া তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহী লিপিবদ্ধ করতে। সুতরাং কুরআনকে তুমি অনুসন্ধান কর এবং তা একত্রিত কর। যায়িদ (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! কুরআন সংগ্রহ করে একত্রিত করার আদেশ না দিয়ে যদি আমাকে একটি পাহাড়কে সরিয়ে নেওয়ার গুরু ভার অর্পণ করতো, তাও আমার জন্য ভারী মনে হত না। আমি বললাম, কি করে আপনারা এমন একটি কাজ করবেন যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! এটি একটি ভাল কাজ। আমার পক্ষ থেকে এ কথা বারবার উন্থাপিত হতে থাকল। এক পর্যায়ে আল্লাহ তা-আলা আমার অন্তরে প্রশান্তি দান করলেন, যে বিষয়ে আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর অন্তরে প্রশান্তি দান করেছিলেন। এবং তারা যা ভাল মনে করলেন আমিও তা ভাল মনে করলাম। সুতরাং আমি কুরআন অনুসন্ধান করতে শুরু করলাম। খেজুরের ডাল, পাতলা চামড়ার টুকরা, শ্বেত পাথর ও মানুষের অন্তঃকরণ থেকে আমি কুরআনকে একত্রিত করলাম। সুরা তাওবার শেষ অংশ “ তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছেন (৯-১২৮) থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত এই অংশটুকু খুযায়মা কিংবা আবূ খুযায়মার কাছে পেলাম। আমি তা সূরার সাথে সংযোজন করলাম। কুরআনের এই সংকলিত সহীফাগুলো আবূ বকরের জীবনকাল পর্যন্ত তাঁর কাছে ছিল। এরপর আল্লাহ তাঁআলা তাকে ওফাত দিলেন। পরে উমরের জীবনকাল পর্যন্ত তার নিকট ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তা হাফসা বিনত উমর (রাঃ)-এর কাছে ছিল। মুহাম্মদ ইবনু উবায়দুল্লাহ বলেনঃ হাদীসে ব্যবহাত ‘আলিলখাফু’ অর্থ হল চাঁড়া।
হাদিস ৬৭০২
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ও ইসমাঈল (রহঃ) সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ও তাঁর গোত্রের কতিপয় বড় বড় ব্যাক্তি বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ও মুহাইয়াসা , ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়ে খায়বারে আসেন। একদা মুহাইয়াসা জানতে পারেন যে, আবদুল্লাহ নিহৎ হয়েছে এবং তার লাশ একটি গর্তে অথবা কুপে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি ইহুদীদের কাছে এসে বললেনঃ আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে তোমরাই তাকে হত্যা করেছ। তারা বলল, আল্লাহর কসম করে বলছি, আমরা তাকে হত্যা করিনি। তারপর তিনি তার গোত্রের নিকট এসে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। পরে তিনি, তার বড় ভাই হুওয়াইয়াসা এবং আব্দুর রহমান ইবনু সাহল আসলেন। মুহাইয়াসা যিনি খায়বারে ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এ ঘটনা বলার জন্য অগ্রসর হলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বড়কে কথা বলতে দাও, বড়কে কথা বলতে দাও। তিনি এতে উদ্দেশ্য করেছেন বয়সে প্রবীণকে। তখন হুওয়াইয়াসা প্রথমে ঘটনা বর্ণনা করলেন। এরপর কথা বললেনঃ মুহাইয়াসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হয়ত তারা তোমাদের মৃত সঙ্গীর রক্তপণ আদায় করবে, না হয় তাদের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এ মর্মে চিঠি লিখলেন। জবাবে তাদের পক্ষ থেকে লেখা হল যে, আমরা তাকে হত্যা করিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুওয়াইয়াসা, মুহাইয়াসা ও আব্দুর রহমানকে বললেনঃ তোমরা কি কসম খেয়ে বলতে পারবে? তাহলে তোমরা তোমাদের সাথীর রক্তপণের অধিকারী হতে পারবে। তারা বলল- না। তিনি বললেনঃ তাহলে ইহুদীরা কি তোমাদের সামনে কসম করবে? তাঁরা বলল, এরা তো মুসলিম নয়। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ থেকে একশ, উট রক্তপণ হিসাবে আদায় করে দিলেন। শেষ পর্যন্ত উটগুলোকে ঘরে প্রবেশ করানো হল। সালে বলেনঃ একটি উট আমাকে লাথি মেরেছিল।
হাদিস ৬৭০৩
আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বর্ননা করেন যে, একজন বেদুঈন এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে বিচার করুন। তার বিবাদী পক্ষ দাঁড়িয়ে বলল, সে ঠিকই বলছে। আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে ফায়সালা করুন। তারপর বেদুঈন বলল যে, আমার ছেলে এই লোকটির এখানে মজুর হিসাবে কাজ করত। সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে ফেলেছে। লোকেরা আমাকে বলল তোমার ছেলেকে রজম (প্রস্তরঘাতে হত্যার দণ্ড) করা হবে। আমি একশ- বকরী ও একটি দাসী দিয়ে আমার ছেলেকে তার থেকে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি এ বিষয়ে আলেমদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেনঃ তোমার পূত্রকে একশ- বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরের শাস্তি ভোগ করতে হবে। (এ শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি অবশ্যই আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব। দাসী ও বকরীগুলো তুমি ফেরত পাবে। আর তোমার ছেলেকে একশ- বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরের শাস্তি ভোগ করতে হবে। হে উনায়স! তুমি কাল এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাও এবং তাকে রজম কর। অতঃপর উনায়স সেই স্ত্রী লোকের কাছে গিয়ে তাকে রজম করল।
হাদিস ৬৭০৪
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, কুরাইশদের কাফেলা নিয়ে অবস্হানকালে সমরাট হিরাক্লিয়াস তাকে ডেকে পাঠালেন। এরপর সমরাট তার দোভাষীকে বললেনঃ তাদেরকে বল যে, আমি এ লোকটিকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। যদি সে আমার সাথে মিথ্যা বলে তাহলে তারা যেন তাকে মিথ্যাবাদী বলে। তারপর দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। পরে হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বললেনঃ একে বলে দাও যে, সে যা বলেছে তা যদি সত্য হয়, তাহলে তিনি (মুহাম্মদ শীঘ্রই আমার পদতলের ভূমিরও মালিক হবেন।
হাদিস ৬৭০৫
মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু লুতাবিয়্যাকে বনী সুলায়ম-এর সাদাকা আদায়ের জন্য নিয়োগ করলেন। যখন সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ফিরে আসল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জবাবদিহি করলেন, তখন সে বলল, এই অংশ আপনাদের আর এগুলো হাদিয়ার মাল যা আমাকে হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি তোমার বাবার ঘরে ও মায়ের ঘরে কেন বসে থাকলে না, যাতে তোমার হাদিয়া তোমার কাছে আসে? এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাড়ালেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুনগান করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ এরপর আল্লাহ তাঁআলা আমার উপর যেসব দায়িত্ব ন্যাস্ত করেছেন তন্মধ্য হতে কিছু কিছু কাজের জন্য তোমাদের কতিপয় লোককে নিযুক্ত করে থাকি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এসে বলে এই অংশ আপনাদের আর এই অংশ হাদিয়া যা আমাকে প্রদান করা হয়েছে। যদি তার কথা সত্য হয় তাহলে সে তার বাবার ঘরে ও মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না, যাতে তার হাদিয়া তার কাছে আসে? আল্লাহব শপথ! তোমাদের কেউ যেন তা থেকে অন্যায়ভাবে কিছু গ্রহণ না করে। অন্যথায় সে কিয়ামতের দিন তা বহন করে আল্লাহর কাছে আসবে। সাবধান! আমি অবশ্যই চিনতে পারব যা নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। এক ব্যাক্তি উট নিয়ে আসবে যা চিৎকার করতে থাকবে অথবা গরু নিয়ে আসবে যে গরুটি হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে, অথবা বকরী নিয়ে আসবে যে বকরী ভ্যা ভ্যা করতে থাকবে। তারপর তিনি দুহস্তদ্বয় উপরের দিকে এতটুকু উত্তোলন করলেন যে, আমি তার বগলের উজ্জ্বল শুভ্রতা দেখতে পেলাম। এবং বললেনঃ শোন! আমি কি (আল্লাহর বিধান তোমাদের নিকট) পৌছিয়েছি।
হাদিস ৬৭০৬
আসবাগ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা কবেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ যাকেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসাবে প্রেরণ করেন এবং যাকেই খলীফা হিসাবে নিযুক্ত করেন, তার জন্য দু-জন করে (একান্ত) গুপ্তচর থাকে। একজন গুপ্তচর তাকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং তাকে তৎপ্রতি অনুপ্রাণিত করে। আর একজন শুপ্তচর তাকে মন্দ কাজের পরামর্শ দেয় এবং তৎপ্রতি উৎসাহিত করে। সুতরাং মাসুম ঐ ব্যাক্তই যাকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেন। সূলায়মান ইবনু শিহাব থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং ইবনু আবূ আতীক ও মূসা র সুত্রে ইবনু শিহাব থেকে অনুরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করেন। তাছাড়া শুআয়ব (রহঃ)-ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। আওযায়ী ও মুআবিয়া ইবনু সাল্লাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইবনু আবূ হুসাইন ও সাঈদ ইবনু যিয়াদ (রাঃ)-ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ জাফবু (রহঃ) আবূ অহিউব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
হাদিস ৬৭০৭
ইসমাঈল (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ মর্মে বায়আত গ্রহণ করলাম যে, সুখে দুঃখে সর্বাবস্হায় আমরা তাঁর কথা শুনব ও তার আনুগত্য করব। রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধাচরণ করব না। যেখানেই থাকি না কেন সর্বদা সত্যের উপর অবিচল থাকব কিংবা বলেছিলেঃ সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর পথে কোন নিন্দাকারীর নিন্দার ভয় করব না।
হাদিস ৬৭০৮
আমর ইবনু আলী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতের এক সকালে বের হলেন। মুহাজির ও আনসাররা তখন খন্দক (পরিখা) খননের কাজে লিপ্ত ছিল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আখেরাতের কল্যাণই তো প্রকৃত কল্যাণ, অতএব তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। তারা এর জবাবে বলল! আমরাও সেই জামাআত যারা আমরণ জিহাদ করার জন্য মুহাম্মাদ -এর হাতে বায়-আত গ্রহণ করেছি।
হাদিস ৬৭০৯
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তাঁর কথা শোনা ও তার আনুগত্যের বায় আত গ্রহণ করতাম। তখন তিনি আমাদের বলতেনঃ যা তোমার সাধ্যের মধ্যে।
হাদিস ৬৭১০
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা যখন আবদুল মালিকের খিলাফতের ব্যাপারে ঐকমতে পৌছল, তখন আমইবনু উমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি পত্র লিখলেন যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদর্শ অনুসারে আল্লাহর বান্দা, আমীরুল মুমিনীন আবদুল মালিকের কথা যথাসাধ্য শোনা ও তার আনুগত্য করার অঙ্গীকার করছি। আমার সন্তানরাও অনুরুপ অঙ্গীকার করছে।
হাদিস ৬৭১১
ইয়াকুব ইবনু ইররাহীম (রহঃ) জারীর ইরন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার কথা শোনা ও তাঁর আনুগত্য করা ও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কল্যাণ কামনার ব্যাপারে বায় আত গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে এ কথা বলতে শিখিয়ে দিলেন যে! আমার সাধ্যের আওতাভুক্ত বিষয়ে।
হাদিস ৬৭১২
আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন লোকেরা আবদুল মালিকের কাছে বায়আত গ্রহন করল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তার কাছে চিঠি লিখলেন। আল্লাহর বান্দা, আবদূল মালিক, আমীরুল মুমিনীনের প্রতি! আমি আমার সাধ্যের আওতাভুক্ত বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল -এর নির্দেশিত পন্থায় তাঁর কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার অঙ্গীকার করছি আর আমার সন্তানরাও অনুরুপ অঙ্গীকার করছে।
হাদিস ৬৭১৩
আবদুল্লাহ ইরন মাসলামা (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- আমি সালামাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হুদায়বিয়ার দিন আপনারা কোন বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়-আত করেছিলেন? তিনি বললেনঃ মৃত্যুর উপর।
হাদিস ৬৭১৪
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ) যে দলটিকে খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে এ ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ আমি তো এমন ব্যাক্তি নই যে এ ব্যাপারে প্রত্যাশা করব। তবে আপনারা যদি চান তাহলে আপনাদের থেকে একজনকে আমি নির্বাচিত করে দিতে পারি। তাঁরা এ দায়িত্ব আবদুর রহমানের উপর অর্পণ করলেন, যখন তারা এ বিষয়টি আবদুর রহমানের উপর অর্পন করলেন, তখন সকল লোক আব্দুর রহমানের প্রতি ঝুঁকে পড়ল। এমনকি আমি একজন লোককেও সেই দলের অনুসরণ করতে কিংবা তাঁদের পিছনে যেতে দেখলাম না। লোকেরা আব্দুর রহমানের প্রতই ঝুকে পড়ল এবং কয়েক রাত তাঁর সাথে পরামর্শ করতে থাকল। অবশেষে সেই রাত আসল, যে রাতের শেষে আমরা উসমান (রাঃ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করলাম। মিসওয়ার (রাঃ) বলেনঃ রাতের একাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর আব্দুর রহমান (রাঃ) আমার কাছে আসলেন এবং দরজা খটখটালেন। ফলে আমি জাগ্রত হয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ তোমাকে দেখছি ঘুমাচ্ছ আল্লাহর কসম! আমি এ তিন রাতের মাঝে খুব একটা ঘুমাতে পারিনি। যাও, যুবায়র ও সা’দকে ডেকে আন। আমি তাদেরকে তার কাছে ডেকে আনি। তিনি তাদের দু-জনের সাথে পরামর্শ করলেন। তারপর আমাকে আবার ডেকে বললেনঃ আলীকে আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাঁকে ডেকে আনলাম। তিনি তাঁর সাথে অর্ধেক রাত পর্যন্ত চুপিচুপি পরামর্শ করলেন। তারপর আলী (রাঃ) তার কাছ থেকে উঠে গেলেন। তবে তিনি আশাবাদী ছিলেন। আর আবদুর রহমান (রাঃ) আলী (রাঃ) থেকে কিছু (বিরোধিতার) আশংকা করছিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ উসমানকে আমার কাছে ডেকে আন। তিনি তাঁর সাথে চুপিচুপি আলাপ করলেন। ফজরের সময় মু’আযযিন তাদের উভয়কে পৃথক করল অর্থাৎ আযান পর্যন্ত আলাপ করলেন লোকদেরকে যখন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) পড়িয়ে দেয়া হলো এবং সেই। দলটি মিম্বরের কাছে একত্রিত হলো তখন তিনি মুহাজির ও আনসারদের যারা উপস্থিত ছিলেন তাদেরকে ডেকে আনতে পাঠালেন এবং প্রত্যেক সেনা প্রধানকেও ডেকে আনতে পাঠালেন এবং এরা সবাই উমরের সাথে গত হাজ্জে (হজ্জ) অংশগ্রণ করেছিলেন। যখন সকলে এসে সমবেত হল, তখন আব্দুর রহমান (রাঃ) ভাষণ শুরু করলেন। তারপর বললেনঃ হে আলী! আমি জনমত পরীক্ষা করেছি, তারা উসমানের সমকক্ষ কাউকে মনে করে না। সুতরাং তুমি তোমার জন্য অন্য পথ অবলম্বন করো না। তখন তিনি আলী ও উসমান (রাঃ)-কে সন্বোধন করে বললেনঃ আমি আল্লাহর নির্দেশ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশিত পরায় ও তারপরবর্তী উভয় খলীফার আদর্শানূযায়ী আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করছি। তারপর আব্দুর রহমান (রাঃ) তাঁর কাছে বায়আত গ্রহন করলেন। এরপর মুহাজির, আনসার! সেনাপ্রধান এবং সাধারণ মুসলমান তাঁর কাছে বায়াআত গ্রহণ করলেন।
হাদিস ৬৭১৫
আবূ আসিম (রহঃ) সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বৃক্ষের নিচে বায়আত (বায়আতে রিদওয়ান) গ্রহণ করেছিলাম। পরে তিনি আমাকে বললেনঃ হে সালামা! তুমি বায়-আত গ্রহণ করবে না? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো প্রথমবার বায়আত গ্রহন করেছি। তিনি বললেনঃ দ্বিতীয়বারও গ্রহণ কর।
হাদিস ৬৭১৬
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) জাবির ইরন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে- এক বেদুইন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ইসলামের বায়আত গ্রহন করল। তারপর সে জ্বরে আক্রান্ত হঁল। তখন সে বলল! আমার বায়ঁআত প্রত্যাহার করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতে অস্বীকৃতি জানালেন। সে পূনরায় তার কাছে আসল। তিনি পূনরায় অস্বীকৃতি জানালেন। সে পূনরায় তার কাছে এসে বলল, আমার বায় আত ফেরত নিন। তিনি আবারও অস্বীকৃতি জানালেন! তখন সে বেরিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা (কামারের) হাঁপরের ন্যায়, সে তার মধ্যকার আবর্জনাকে দূরীভূত করে এবং খাটিটুকু ধরে রাখে।
হাদিস ৬৭১৭
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাক্ষাত লাভ করেছেন। তার মা যয়নব বিনত হুমায়দ (রাঃ) তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে গিয়ে বলেনঃ ইয়া-এরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! একে বায়াআত করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন?, সে তো ছোট। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। এই আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) তার পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে একটি বকরী কুরবানী করতেন।
হাদিস ৬৮১৮
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক বেদুঈন এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করল। মদিনায় সে জ্বরে আক্রান্ত হল। তখন সেই বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অম্বীকৃতি জানালেন। সে পুনরায় এসে বলল, আমার বায়ঁআত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও অম্বীকৃতি জানালেন। সে পূনরায় এসে বলল, আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। তিনি অম্বীকৃতি জানালেন। তখন বেদূঈন বেরিয়ে গেল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা হল কামারের হাপরের ন্যায়, যে তার মধ্যকার আবর্জনাকে বিদুরিত করে এবং খাটিটুকু ধরে রাখে।
হাদিস ৬৭১৯
আবদান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথাও বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (এক) সে ব্যাক্তি, যে বাস্তার পার্শে অতিরিক্ত পানির অধিকারী কিন্তু মূসা ফিরকে তা থেকে পান করতে দেয় না। (দুই) সে লোক যে কেবলমাত্র দুনিয়ার সার্থে ইমামের বায়-আত গ্রহণ করে। (বাদশাহ) যদি তার মনোকামনা পূর্ণ করে তাহলে সে তার বায়আত পূর্ণ করে। আর যদি তা না হয়, তাহলে বায়আত ভঙ্গ করে। (তিন) সে ব্যাক্তি যে আসরের পর অন্য লোকের নিকট দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় করতে যেরে এরুপ কসম খায় যে, আল্লাহর শপথ! এটী এত টাকা দাম হয়েছে। তাকে বিশ্বাস করে সে দ্রব্য ক্রয় করে নিয়ে যায়। অথচ সে দ্রব্যের এত দাম দেওয়া হয়নি।
হাদিস ৬৭২০
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ও লাইছ (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা এক মজলিসে বসা ছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেনঃ তোমরা আমার নিকট এ মর্মে বায়ঁআত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না; তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না এবং কাউকে এরুপ মিথ্যা অপবাদ দেবে না, যা তোমাদেরই গড়া আর শরীয়ত সন্মত কাজে আমার নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এই অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে। আর যারা এর কোন একটি করবে এবং দুনিয়ায় এ কারনে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে, তাহলে এটা তার কাফফারা (পাপ মোচন) হয়ে যাবে। আর যদি কেউ এর কোন একটি অপরাধ করে ফেলে আর আল্লাহ তা গোপন করে রাখেন, তাহলে তার বিযয়াট আল্লাহর উপর ন্যাস্ত থাকবে। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাকে মাফ করে দিবেন। এরপর আমরা এর উপর বায়-আত গ্রহগ করলাম।
হাদিস ৬৭২১
মাহমূদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না”- এই আয়াত পাঠ করে স্ত্রীলোকদের কাছ থেকে বায়আত নিতেন। তিনি আরও বলেনঃ বৈধ অধিকার প্রাপ্ত মহিলা ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাত অন্য কোন স্ত্রী লোকের হাত স্পর্শ করেনি।
হাদিস ৬৭২২
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বায়আত গ্রহন করলাম। তিনি আমার সামলে পাঠ করলেনঃ স্ত্রীলোকেরা যেন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে। এবং তিনি আমাদেরকে বিলাপ করতে নিষেধ করলেন। এমতাবস্থায় আমাদের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক তার হাত গুটিয়ে নিল এবং বলল, অমুক স্ত্রীলোক একবার আমার সাথে বিলাপে সহযোগিতা করেছে। সুতরাং আমি তার প্রতিদান দেওয়ার ইচ্ছা রাখি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বললেন না। স্ত্রীলোকটি চলে গেল এবং পরে এসে বায়আত গ্রহন করল। তবে তাদের মধ্যে উম্মু সুলায়ম, উম্মুল আলা, আর মু’আয (রাঃ)-এর স্ত্রী আবূ সাবরা-এর কন্যা, কিংবা বলেছিলেন, আবূ সাবরা-এর কন্যা ও মু’আয-এর স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন স্ত্রীলোক এই অঙ্গীকার পূর্ণ করেনি।
হাদিস ৬৭২৩
আবূ নুআয়ম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, ইসলামের উপর আমার বায়আত নিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের উপর তার বায়আত নিলেন। পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্হায় এসে বলল, আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। তিনি অম্বীকৃতি জানালেন। যখন সে চলে গেল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা কামারের হাপরের ন্যায়, সে তার মধ্যকার আবর্জনাকে বের করে এবং খাটিটুকু ধরে রাখে।
হাদিস ৬৭২৪
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) একদিন বললেনঃ হায়! আমার মাথা। (এ কথা শুনে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার জীবদ্দশায় যদি তা ঘটে, তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দোয়া করব। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ হায় সর্বনাশ! আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যু পছন্দ করছেন। হ্যা, যদি এমনটি হয়, তাহলে আপনি সেদিনের শেষে অপর কোন স্ত্রীর সাথে বাসর যাপন করবেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি বলছি আক্ষেপ আমার মাথা ব্যথা। অথচ আমি সংকচ করেছি কিংবা রাবী বলেছেনঃ- ইচ্ছে করেছি যে, আবূ বকর ও তার পূত্রের কাছে লোক পাঠাব এবং (তার খিলাফতের) অসিয়্যাত করে যাব, যাতে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে না পারে। কিংবা কোন প্রত্যাশী এ ব্যাপারে কোনরুপ প্রত্যাশা করতে না পারে। (কিন্তু ভেবে চিন্তে) পরে বললাম (আবূ বকরের পরিবর্তে অন্য কারো খলীফা হওয়ার বিষয়টি) আল্লাহ তা অস্বীকার করবেন এবং মুমিনরাও তা প্রত্যাখ্যান করবে। কিংবা বলেছিলেনঃ আল্লাহ প্রত্যাখ্যান করবেন এবং মুমিনরা তা অস্বীকার করবে।
হাদিস ৬৭২৫
মুহাম্মাদ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ)-কে বলা হল, আপনি কি (আপনার পরবর্তী) খলীফা মনোনীত করে যাবেন না? তিনি বললেনঃ যদি আমি খলীফা মনোনীত করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ট ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে গিয়ে ছিলেন, অর্থাৎ আবূ বকর। আর যদি মনোনীত না করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ট্র ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে যাননি। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এতে লোকেরা তার প্রশংসা করল। তারপর তিনি বললেনঃ কেউ এ ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী আর কেউ ভীত। আর আমি পছন্দ করি আমি যেন এ থেকে মুক্তি পাই সমানে সমান, না পূরস্কার না শাস্তি। আমি জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে এর দায়িত্ব বহন করতে পারব না।
হাদিস ৬৭২৬
ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্গিত। তিনি উমর (রাঃ)-এর দ্বিতীয় ভাষণটি শুনেছেন যা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পরদিন মিম্বরে বসে দিয়েছিলেন। তিনি ভাষণ শুরু করলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) কোন কথা না বলে চুপ রয়েছেন। তিনি বলেনঃ আমি তো আশা করছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন এবং আমাদের পিছনে যাবেন। এ থেকে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, তিনি সবার শেষে ইন্তেকাল করবেন। তবে মুহাম্মাদ যদিও ইন্তেকাল করেছেন, তবে আল্লাহ তা-আলা তোমাদের মাঝে এমন এক নূর রেখেছেন, যার দ্বারা তোমরা হেদায়াত পাবে। আল্লাহ তাঁআলা মুহাম্মাদ -কে (এ নুর দিয়ে) হেদায়াত করেছিলেন। আর আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন তাঁর সঙ্গী এবং দুঁজনের দ্বিতীয় জন। তোমাদের এ দায়িত্ব বহনের জন্য মুসলমানদের মধ্যে তিনই সর্বোত্তম। সুতরাং তোমরা উঠ এবং তার হাতে বায়ঁআত গ্রহণ কর। অবশ্য এক জামাআত ইতিপূর্বে বনী সাঈদা গোত্রের ছায়ানীড়ে তার হাতে বায়-আত গ্রহণ করেছিল। আর সাধারণ বায়ঁআত হয়েছিল মিম্বরের উপর। যুহরী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি সেদিন উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি আবূ বকর (রাঃ)-কে বলছেন, মিন্বরে আরোহণ করুন। তিনি বারবার এ কথা বলতে বলতে অবশেষে আবূ বকর (রাঃ) মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর তাঁর কাছে লোকেরা সাধারণ বায়ঁআত গ্রহণ করল।
হাদিস ৬৭২৭
আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) যুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক স্ত্রীলোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসল এবং কোন এক ব্যাপারে তার সাথে কথা বলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পূনরায় আসার নির্দেশ দিলেন। স্ত্রীলোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি পূনরায় এসে যদি আপনাকে না পাই? স্ত্রীলোকটি এ বলে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) ইন্তেকালের কথা বোঝাতে চাই ছিল। তিনি বললেনঃ যদি আমাকে না পাও, তাহলে আবূ বকরের কাছে আসবে।
হাদিস ৬৭২৮
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বুযাখা প্রতিনিধিদলকে বলেছিলেন যতদিন না আল্লাহ তাআলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খলীফা ও মুহাজিরীনদের এমন একটা পথ দেখিয়ে দেন যাতে তারা তোমাদের ওযর গ্রহন করেন, ততদিন পর্যন্ত তোমরা উটের লেজের পিছনে লেগে থাকবে (অর্থাৎ যাযাবর জীবন যাপন করবে)।
হাদিস ৬৭২৯
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, বারজন আমীর হবে। এরপর তিনি একটি কথা বলছিলেন যা আমি শুনতে পারিনি। তবে আমার পিতা বলেছেনঃ যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হবে।
হাদিস ৬৭৩০
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি! আমার ইচ্ছা হয় যে আমি জালানি কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেই। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেওয়ার জন্য হুকুম করি এবং একজনকে লোকদের ইমামত করাতে বলি। এরপর আনি জামায়াতে আসে নাই সেসব লোকদের কাছে যাই আর তাদেরসহ তাদের ঘরগুলো জালিয়ে দেই। আমার প্রাণ যে সত্তার হাতে তার শপথ করে বলছি, যদি তারা জানত যে, একটি মাংসল হাড় কিংবা দুটি বকরীর ক্ষুর পাবে তাহলে তারা এগুলোর জামাআতে অবশ্যই হাযির হত। মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ ‘মারমাহ’ অর্থ বকরীর ক্ষুরের মধ্যবর্তী গোশত।
হাদিস ৬৭৩১
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাঁব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রাঃ), কাব (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সন্তানদের থেকে তিনি তাঁকে (কাঁব) পথ দেখাতেন। তিনি বলেনঃ আমি কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন যে, যখন তিনি তাবুকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যোগদান না করে রয়ে গেলেন। তারপর তিনি পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে বললেনঃ যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। ফলে পঞ্চাশ রাত আমরা এভাবে অবস্হান করলাম। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদের তওবা কবুল করেছেন বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিলেন।
No comments: