বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ ফিতনা অধ্যায় ২ (৬৬১৩-৬৬৫১)
হাদিস ৬৬১৩
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের ইয়ামানে বরকত দাও। লোকেরা বলল, আমাদের নজদেও। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ আমাদের জন্য বরকত দাও আমাদের ইয়ামানে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের নজদেও। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে হয়, তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ সেখানে তো কেবল ভূমিকস্প আর ফিতনা। আর তথা হতে শয়তানের শিং উদিত হবে।
হাদিস ৬৬১৪
ইসহাক আল ওয়াসেতী (রহঃ) সাঈদ ইবনু যূবায়র (রহঃ) থেকে বর্নিতা তিনি বলেনঃ একদা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। আমরা আশা করছিলাম যে, তিনি আমাদের একটি উত্তম হাদীস বর্ননা করবেন। একব্যাক্তি তার দিকে আমাদের চেয়ে অগ্রসর হয়ে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! ফিতনার সময় যুদ্ধ করা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ তাদের সাথে যুদ্ধ কর, তাবত ফিতনার অবসান ঘটে। তখন তিনি বললেনঃ তোমার মা তোমার জন্য বিলাপ করুক। ফিতনা কাকে বলে জানো কি? মুহাম্মাদ তো যুদ্ধ করতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। কেননা, তাদের শিরকের মধ্যে থাকাটাই মুলত ফিতনা। কিন্তু তা তোমাদের রাজ্য নিয়ে লড়াইর মতো ছিল না।
হাদিস ৬৬১৫
উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেনঃ এক সময় আমরা উমর (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেনঃ ফিতনা সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে , স্বরণ রেখেছে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ) মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী সংক্রান্ত ব্যাপারে যে ফিতনায় নিপতিত হয় সালাত (নামায/নামাজ), সাদাকা, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ তার সে পাপকে মোচন করে দেয়। তিনি বললেনঃ আনি তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি এবং সে ফিতনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি যা সাগর লহরীর মত ঢেউ খেলবে। হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! সে ফিতনায় আপনার কোন অসুবিধা হবে না। কেননা, সে ফিতনা ও আপনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাঃ) বললেনঃ দরজাটি কি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে? তিনি বললেনঃ না বরং ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রাঃ) বললেনঃ তা হলে তো সেটা আর কখনো বন্ধ করা যাবে না। (হুযায়ফা বলেন) আমি বললাম, হ্যা। (আকীক বলেন) আমঁরা হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, উমর (রাঃ) কি দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা। যেরুপ আমি সুনিশ্চিতভাবে জানি যে আগামী দিনের পর রাত আসবে। কেননা আমি তাকে এরুপ একটি হাদীস বর্ননা করেছিলাম যা ভ্রান্তিতে। (শাফীক বলেন) দরজাটি কে সে সম্পর্কে হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, তাই আমরা মাসরুককে জিজ্ঞাসা করতে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেনঃ উমর (রাঃ) (নিজেই)।
হাদিস ৬৬১৬
সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) আবূ-মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনবশত মদিনার (দেয়াল ঘেরা) বাগানসমূহের কোন একটি বাগানের উদ্দেশ্যে বের হলেন আমি তার পিছনে গেলাম। তিনি যখন বাগানে প্রবেশ করলেন আমি এর দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে বললাম, অদ্য আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রহরীর কাজ আঞ্জাম দিব। অবশ্য তিনি আমাকে এর নির্দেশ দেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে গেলেন এবং স্বীয় প্রয়োজন সেরে নিলেন। এরপর একটি কুপের পোস্তার উপর বসে পড়লেন এবং হাটুর নিচের অংশের কাপড় তুলে নিয়ে উভয় পা কুপের মধ্যে ঝূলিয়ে দিলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে তার নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি বললাম, আপনি অপেক্ষা করুন, যতক্ষন না আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসছি। তিনি অপেক্ষা করলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আবূ বকর (রাঃ) আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইছেন। তিনি বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের শুভ সংবাদ দাও। আনু বকর (রাঃ) প্রবেশ করলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডান পার্শে গিয়ে বসলেন। এরপর তিনিও হাঁটুর নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুপের মধ্যে ঝূলিয়ে দিলেন। এরপর উমর (রাঃ) আসলেন। আমি বললাম, আপনি স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি। (অনুমতি প্রার্থনা করলে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং জানাতের সুসংবাদ দাও। এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাম দিকে বসলেন এবং তিনি নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুপের মধ্যে ঝূলিয়ে দিলেন। এতে কুপের পোস্তা পরিপূর্ন হয়ে গেল এবং সেখানে বসার আর কোন স্হান অবশিষ্ট রইল না। এরপর উসমান (রাঃ) আসলেন। আমি বললাম, আপনি স্বস্থানে অপেক্ষো করুন, যতক্ষন আমি আপনার জন্য অনুমতিনিয়ে না আসি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে বিপদাক্রান্ত হওয়াসহ জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি প্রবেশ করলেন। বিচ্ছু তাদের সঙ্গে বসার কোন স্হান পেলেন না। ফলতঃ তিনি বিপরীত দিকে এসে তাদের মুখোমুখী হয়ে কুয়ার পাড়ে বসে গেলেন এবং হঁস্তদ্বয়ের নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুয়ার অভ্যন্তরে ঝূলিয়ে দিলেন। আমি তখন আমার অপর এক ভাই-এর (আগমন) কামনা করছিলাম এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করছিলাম যেন সে (এ মুহূর্তে) আগমন করে। ইবনু মূসা ইয়্যাব বলেনঃ আমি এ ঘটনার মর্মার্থ এভাবে গ্রহণ করেছি যে, তা হল তাদের তিনজনের কবরের নমুনা যা এখানে একসঙ্গে হয়েছে। আর উসমান (রাঃ) ভিন্ন স্থানে।
হাদিস ৬৬১৭
বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উসামা (রাঃ)-কে বলা হল আপনি কি এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না? তিনি বললেনঃ আমি এ ব্যাপারে বলেছি, তবে এমন পন্হায় নয় যে, আমি তোমার জন্য একটি দার (ফিতনার) উন্মোচিত করব যাতে আমই হব এর প্রথম উন্মোচনকারী এবং আমি এমন ব্যাক্তি নই- যে, কোন লোক দুই ব্যাক্তির আমীর নিযুক্ত হওয়ার পর তার সম্পর্কে বলব, আপনি উত্তম। কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে (কিয়ামতের দিন) এক ব্যাক্তিকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে গাধা দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে যেমন গম পিষা হয়, সেরুপ পিষে ফেলা হবে। দোযখবাসীরা তার পাশে এসে সমবেত হবে এবং বলবে, হে অমুক! তুমই কি আমাদের ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে না? তখন সে বলবে, হ্যা, আমি ভাল কাজের আদেশ করতাম, তবে আমি নিজে তা করতাম না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, তবে আমি নিজেই তা করতাম।
হাদিস ৬৬১৮
উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একটি কথা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (সে কথাটি হল) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছলে যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কখনই সফলকাম হবে না যারা তাদের শাসনভার কোন রমনীর হাতে অর্পণ করে।
হাদিস ৬৬১৯
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ মারিয়াম আবদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ আসা’দী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তালহা, যুবায়র ও আয়িশা (রাঃ) যখন বসরার দিকে গমন করলেন, তখন আলী (রাঃ) আম্মার ইবনু ইয়াসির ও হাসান ইবনু আলী (রাঃ) -কে প্রেরণ করলেন। তাঁরা আমাদের কুফায় আগমন করলেন এবং (মসজিদের) নিম্বরে উপবেশন করলেন। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) মিম্বরের সর্বোচ্চ ধাপে উপবিষ্ট ছিলেন, আর আম্মার (রাঃ) হাসান (রাঃ)-এর নিচের ধাপে দণ্ডায়মান ছিলেন। আমরা এসে তার নিকট সমবেত হলাম। এ সময় আমি শোনলাম, আম্মার (রাঃ) বলছেন, আয়িশা (রাঃ) বসরা অভিমুখে রওনা হয়ে গেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের (আমাদের) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এ কথা স্পষ্ট করে জেনে নেওয়ার জন্য তোমাদের পরীক্ষায় ফেলেছেন যে, তোমরা কি তাঁরই আনুগত্য কর, না তার অর্থাৎ আয়িশা (রাঃ)-এর আনুগত্য কর।
হাদিস ৬৬২০
আবূ নূআয়ম (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আাম্মার (রাঃ) কুফার (মসজিদের) মিন্বরে দণ্ডায়মান হলেন এবং তিনি আয়িশা (রাঃ)-ও তার সফরের কথা উল্লেখ করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তিনি (আয়িশা (রাঃ) ইহলক ও পরলোকে তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী। কিন্তু বর্তমানে তোমরা তাঁকে নিয়ে ভীষণ পরীক্ষার মুখোমুখী হয়েছ।
হাদিস ৬৬২১
বাদাল ইবনু মুহাব্বার (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) যখন আম্মার (রাঃ)-কে যূদ্ধে অংশ গ্রহনের আহবান জানাতে কুফাবাসীদের নিকট প্রেরণ করলেন, তখন আবূ মূসা ও আবূ মাসউদ (রাঃ) তার নিকট উপস্হিত হয়ে বললেনঃ তোমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমাদের জানামতে বর্তমান বিষয়ে (যুদ্ধের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করার বিষয়ে) দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করার চেয়ে অপছন্দনীয় কোন কাজ করতে আমরা তোমাকে দেখিনি। তখন আম্মার (রাঃ) বললেনঃ যখন থেকে আপনারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন আমি আপনাদের কোন কাজ দেখিনি যা আমার কাছে অপছন্দনীয় বিবেচিত হয়েছে বর্তমানের এ কাজে দেরী করা ব্যতীত। তখন আবূ মাসউদ (রাঃ) তাদের দু-জনকেই একজোড়া করে পোশাক পরিধান করিয়ে দিলেন। এরপর সকলেই (কুফা) মসজিদের দিকে রওনা হলেন।
হাদিস ৬৬২২
আবদান (রহঃ) শাকীক ইবনু সালমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ মাসউদ (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) ও আলার (রাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন আবূ মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ তুমি ব্যতীত তোমার সঙ্গীদের মাঝে এমন কেউ নেই, যার সম্পর্কে আমি ইচ্ছা করলে কিছু না কিছু বলতে না পারি। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গ লাভ করার পর থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার চাইতে আমার দৃষ্টিতে দুষনীয় কোন কাজ তোমার কাছ থেকে দেখিনি। তখন আাম্মার (রাঃ) বললেন, হে আবূ মাসউদ! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে তোমাদের সঙ্গ লাভ করার পর থেকে এ ব্যাপারে গড়িমসি করার চাইতে আমার দৃষ্টিতে অধিক দূন্ননীয় কোন কাজ তোমার থেকে এবং তোমার এ সঙ্গী থেকে দেখিনি। আবূ মাসউদ (রাঃ) ধনবান ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি (তার চাকরকে) বললেনঃ হে বৎস! দু-জোড়া পোশাক নিয়ে এস। এরপর তিনি তার একটি আবূ মূসা (রাঃ)-কে ও অপরটি আম্মার (রাঃ)-কে দিলেন এবং বললেনঃ এগুলো পরিধান করে জুম আর সালাত (নামায/নামাজ) যাও।
হাদিস ৬৬২৩
আবদুল্লাহ ইবনু উসমান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ কোন কাওমের উপর আযাব নাযিল করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকঁলের উপরই সেই আযাব নিপতিত হয়। অবশ্য পরে (কিয়ামতের দিন) প্রত্যেককে তার আমল অনুসারে উঠানো হবে।
হাদিস ৬৬২৪
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন হাসান ইবনু আলী (রাঃ) সেনাবাহিনী নিয়ে মুআবিয়া (রাঃ)-এর মুকাবিলায় রওনা হলেন, তখন আমর ইবনু আস (রাঃ) মুআবিয়া (রাঃ)-কে বললেনঃ আমি এরুপ এক সেনাবাহিনী দেখছি, যারা বিপক্ষকে না ফিরিয়ে কিছু হবে না। মুআবিয়া (রাঃ) বললেনঃ তাহলে মুসলমানদের সন্তান-সন্ততির তত্তাবধান কে করবে? আমর ইবনু আস (রাঃ) বললেনঃ আমি। এ সময় আবদুল্লাহ ইবনু আমির (রাঃ) ও আব্দুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) বললেনঃ আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাত করব এবং তাকে সন্ধির কথা বলবঃ হাসান বসরী (রহঃ) বলেনঃ আমি আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিচ্ছিলেন। এমন সময় হাসান (রাঃ) আসলেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখে) বললেনঃ আমার এ পৌত্র সরদার আর সম্ভবত আল্লাহ-তা-আলা তার মাধ্যমে মুসলমানদের দূটি (বিবদমান) দলের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করবেন।
হাদিস ৬৬২৫
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উসামা (রাঃ) –এর গোলাম হারমালা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ উসামা (রাঃ) আমাকে আলী (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। আর তিনি বলে দিলেন যে, সেখানে যাওয়ার পরই (আলী (রাঃ)) তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তোমার সঙ্গীকে (আমার সহযোগিতা থেকে) কিসে পিছনে (বিরত) রেখেছে? তুমি তাঁকে বলবে, তিনি আপনার কাছে এ কথা বলে পাঠিয়েছেন যে, যদি আপনি সিংহের মুখে পতিত হন, তবুও আমি আপনার সঙ্গে সেখানে থাকাকে ভাল মনে করব। তবে এ বিষয়টি (অর্থাৎ মূসলমানদের পরস্পরিক যুদ্ধ) আমি ভাল মনে করছি না। (হারমালা বলেন) তিনি (আলী (রাঃ)) আমাকে কিছুই দিলেন না। এরপর আমি হাসান, হুসাইন ও আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তাঁরা আমার বাহন (মাল বোঝাই করে দিলেন।
হাদিস ৬৬২৬
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ যখন মদিনার লোকেরা ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া (রাঃ)-এর বায়আত ভঙ্গ করল, তখন ইবনু উমর (রাঃ) তার বিশেষ ভক্তবৃন্দ ও সন্তানদের সমবেত করলেন এবং বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে ঝাণ্ডা (পতাকা) উত্তোলন করা হবে। আর আমরা এ লোকটির (ইয়াযীদের) প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুলের বর্ণিত শর্তানুযায়ী বায়আত গ্রহণ করেছি। বস্তুত কোন একজন লোকের প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুলের বর্নিত শর্তানুযারী বায়আত গ্রহণ করার পর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের চেয়ে বড় কোন বিশ্বাসঘাতকতা আছে বলে আমি জানিনা। আমি যেন কারো সম্পর্কে ইয়াযীদের বায়আত ভঙ্গ করেছে, কিংবা সে আনুগত্য করছে না জানতে না পাই। অন্যথায় তার ও আমার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
হাদিস ৬৬২৭
আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূল মিনহাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু বিয়াদ ও মারওয়ান যখন সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত ছিলেন এবং ইবনু যুবায়র (রাঃ) মকার শাসনক্ষমতা দখল করে নিলেন, আর কারী নামধারীরা (খারেজীরা) বসরায় ক্ষমতায় চেপে বসল, তখন একদিন আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযা আসলামী (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে রওনা করে আমরা তার ঘরে প্রবেশ করলাম। এ সময় তিনি তার বাশের তৈরি কুঠরীর ছায়াতলে বসা ছিলেন। আমরা তার কাছে বসলাম। আমার পিতা তার কাছ থেকে কিছু হাদীস শুনতে চাইলেন। পিতা বললেনঃ হে আবূ বারযা! লোকেরা কি ভীষণ সংকটে পতিত হয়েছে তা কি আপনি লক্ষ্য করছো না? সর্বপ্রথম যে কথাটি তাঁকে বলতে শোনলাম তা হল, আ মি যে কুরায়শের গোত্রসমূহের প্রতি বিরুপ ভাব পোষণ করি, এজন্য আল্লাহর কাছে অবশ্যই সাওয়াবের প্রত্যাশা করি। হে আরববাসীরা! তোমরা যে কিরুপ গোমরাহী, অভাব-অনটন ও লাঞ্চনাকর অবস্হায় ছিলে তা তোমরা জানো। মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ও মুহাম্মাদ -এর মাধ্যমে সে অবস্হা থেকে মুক্ত করে তোমাদের বর্তমান অবস্থায় পৌছিয়েছেন, যা তোমরা দেখছ। আর এ পার্থিব দূনিয়াই তোমাদের মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে। ঐ যে লোকটা সিরিয়ায় (ক্ষমতা দখল করে) আছে, আল্লাহর কসম। একমাত্র দুনিয়ার সার্থ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সে লড়াই করেনি।
হাদিস ৬৬২৮
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) হুযায়ফা ইবনুু-ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বর্তমান যুগের মুনাফিকরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের মুনাফিকদের চাইতেও জঘন্য। কেননা, সে যূগে তারা (মুনাফিকী) করত গোপনে আর আজ করে প্রকাশ্যে।
হাদিস ৬৬২৯
খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নিফাক বস্তুত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে ছিল। আর এখন হল তা ঈমান গ্রহণের পর কুফরী।
হাদিস ৬৬৩০
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ কিয়ামত কায়ম হবে না যতক্ষন এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির কবরের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় না বলবে হায়! যদি আমি তার স্থলে হতাম।
হাদিস ৬৬৩১
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষন ‘যূলখালাসার’ পাশে দাওস গোত্রীয় রমনীদের নিতম্ব দোলায়িত না হবে। ‘যুলখালাসা’ হল দাওস গোত্রের একটি মূর্তি। জাহিলি যুগে তারা এর উপাসনা করত।
হাদিস ৬৬৩২
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন না কাহতান গোত্র থেকে এমন এক ব্যাক্তি আবির্ভূত হবে, যে মানুষকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে নেবে।
হাদিস ৬৬৩৩
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন না হিজাযের যমীন থেকে এমন আগুন বের হবে, যা বসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।
হাদিস ৬৬৩৪
আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ কিন্দী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অদ্য ভবিষ্যতে ফোরাত নদী তার গর্তস্ত্র স্বর্ণের খনি বের করে দেবো সে সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে। উকবা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে ‘কাঞ্জু মিন দাহবি’ এর স্থলে ‘জাবালু মিন জাহাবি’ (স্বর্ণের পাহাড়) উল্লেখ আছে।
হাদিস ৬৬৩৫
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা সাদাকা কর। কেননা, অচিরেই এমন এক যুগ আসবে যে মানুষ সাদাকা নিয়ে ঘোরাফেরা করবে। কিন্তু সাদাকা গ্রহণ করে এমন কাউকে পাবে না। মুসবদ্দাদ (রহঃ) বলেনঃ হারিসা উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর বৈপিত্রেয় ভাই।
হাদিস ৬৬৩৬
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন দুটি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবি হবে অভিন্ন। আর যতক্ষন ত্রিশের কাছাকাছি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল বলে দাবি করবে এবং যতক্ষন ইল্ম তুলে নেওয়া না হবে। আর ভূমিকম্প অধিক হারে না হবে। আর যামানা (কাল) সংক্ষিপ্ত না হবে এবং (ব্যাপক হারে ফিতনা প্রকাশ না পাবে। আবূ হারজ ব্যাপকতর হবে। হারজ হল হত্যা। আর যতক্ষন তোমাদের মাঝে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি না পাবে। তখন সম্পদের এমন সয়লাব শুরু হবে যে, সম্পদের মালিক তার সাদাকা কে গ্রহণ করবে- এ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এমন কি যার নিকট সে সম্পদ পেশ করবে সে বলবে আমার এ মালের কোনই প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষন মানুষ সুউচ্চ প্রাসা’দ নির্মাণের ক্ষেত্রে পরস্পরে প্রতিযোণিতায় অবতীর্ন না হবে। আর যতক্ষন এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলবে হায়! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থলে হতাম এবং যতক্ষন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত না হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে এবং সকল লোক তা দেখবে। এবং সেদিন সকলেই ঈমান আনবে। কিন্তু সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে ব্যাক্তি এর আগে ঈমান আনেনি। কিংবা ইতিপূর্বে যারা ঈমান আনেনি কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি (৬-১৫৮) আর অবশ্যই কিয়ামত এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে দুব্যাক্তি (পরস্পরে বেচাকেনার উদ্দেশ্যে) কাপড় খুলবে। কিন্তু তারা বেচাকেনা ও গুটিয়ে রাখা শেষ করতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামত এমন অবস্হায় কায়েম হবে যে, এক ব্যাক্তি তার উটের দুধ দোহন করে নিয়ে ফিরেছে কিন্তু সে তা পান করতে পারবে না। কিয়ামত এমন অবস্হায় কায়েম হবে যে, এক ব্যাক্তি তার হাওয আন্তর করছে, কিন্তু সে পানি পান করাতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামত এমন (অতর্কিত) অবস্থায় কায়েম হবে যে, এক ব্যাক্তি মুখের কাছে লোকমা তুলবে কিন্তু সে তা আহার করতে পারবে না।
হাদিস ৬৬৩৭
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত বেশি প্রশ্ন করতাম সেরুপ আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেনঃ তা থেকে তোমার কি ক্ষতি হবে? আমি বললাম, লোকেরা বলে যে, তার সাথে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কাছে তা অতি সহজ।
হাদিস ৬৬৩৮
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জালের ডান চক্ষুটি কানা হবে, যেন তা ফোলা আতরের ন্যায়।
হাদিস ৬৬৩৯
সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল আসবে। অবশেষে মদিনার এক পার্শে অবতরণ করবে। (এ সময় মদিনা) তিনবার প্রকম্পিত হবে। তখন সকল কাফের ও মুনাফিক বের হয়ে তার কাছে চলে আসবে।
হাদিস ৬৬৪০
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ মাসীহ দাজ্জালের ভয় থেকে মদিনায় প্রবেশ করবে না। সে সময় মদিনায় সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে দুঁজন করে ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবেন। ইবনু ইসহাক ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যে, আমি যখন বসরায় আগমন করলাম তখন আবূ বাকরা (রাঃ) আমাকে বললেনঃ যে, এ হাদীসটি আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
হাদিস ৬৬৪১
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মদিনায় মাসীহ দাজ্জাল-এর প্রভাব পড়বেনা। সে সময় মদিনার সাতটি প্রবেশদার থাকবে। প্রতি প্রবেশদ্বারে দু-জন করে ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবেন।
হাদিস ৬৬৪২
আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক সমাবেশে দাড়ালেন এবং মহান আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রসংসা করলেন। এরপর তিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে কথা বললেনঃ তার সম্পর্কে আমি তোমাকে সতর্ক করছি। এমন কোন নাবী নেই তিনি তাঁর কাওমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলবঃ যা কোন নাবী তার কাওমকে বলেননি। তা হল যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ তাআলা অবশ্যই কানা নন।
হাদিস ৬৬৪৩
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইরন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কাবার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যাক্তি স্থলকায় লাল বর্ণের কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙুরের ন্যায়। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল! তার সাথে অধিকতর সা’দৃশ্যপূর্ন লোক হল ইবনু কাতান, বনী খুযা আর এক ব্যাক্তি।
হাদিস ৬৬৪৪
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মাঝে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পানাহ চাইতে শুনেছি।
হাদিস ৬৬৪৫
আবদান (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি দাজ্জাল সম্পর্কে বলেছেনঃ তার সাথে পানি ও আগুন থাকবে। বস্তুত তার আগুনই হবে শীতল পানি, আর তার পানি হবে আগুন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমিও এ হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
হাদিস ৬৬৪৬
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন নাবী প্রেরিত হন নাই যিনি তার উম্মতকে এই কানা মিথ্যুক সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কিন্তু কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফের শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে। এ বিষয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিস ৬৬৪৭
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আর সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি তার সম্পর্কে আমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন, তার মাঝে এও বলেছেনঃ যে, দাজ্জাল আসবে তবে মদিনার প্রবেশপথে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মদিনার সংলগ্ন বালুময় একটি স্থানে সে অবস্থান গ্রহণ করবে। এ সময় তার দিকে এক ব্যাক্তি গমন করবে। যিনি মানুষের মাঝে উত্তম। কিংবা উত্তম ব্যাক্তিদের একজন। সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তূই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাঁর হাদীস বর্ননা করেছেন। তখন দাজ্জাল বলবে, তোমরা দেখ - আমি যদি একে হত্যা করে আবার জীবিত করে দেই তাহলে কি তোমরা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে, না। এরপর সে তাকে হত্যা করবে এবং পূনরায় জীবিত করবে। তখন সে লোকটি বলবে, আল্লাহর কসম! তোর সম্পর্কে আজকের মত দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলাম না। তখন দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু সে তা করতে সক্ষম হবে না।
হাদিস ৬৬৪৮
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার প্রবেশ পথ সমূহে ফেরেশতা-নিয়োজিত রয়েছে। অতএব সেখানে রোগ ও দাজ্জাল প্রবেশ করবে না।
হাদিস ৬৬৪৯
ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ যে, মদিনার দিকে দাজ্জাল আসবে, সে ফেরেশতাদেরকে মদিনা পাহারা দেওয়া অবস্হায় দেখতে পাবে। অতএব দাজ্জাল ও প্লেগ এর (মদিনার) নিকটস্থ হবে না ইনশা আল্লাহ।
হাদিস ৬৬৫০
আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্বিগ্ন অবস্হায় এরুপ বলতে বলতে আমার গৃহে প্রবেশ করলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। আক্ষেপ আরবের জন্য মন্দ থেকে যা অতিনিকটবতী। বৃদ্ধাঙ্গুল ও তৎসংলগ্ন আদুল গোলাকৃতি করে তার দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ উন্মোচিত হয়েছে। যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! -আমাদের মাঝে সৎ লোকেরা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধরুংস হয়ে যাব? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা। যদি পাপাচার বেড়ে যায়।
হাদিস ৬৬৫১
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ ইয়াজুজ-মাজূর প্রাচীরটি এ পরিমাণ উন্মোচিত হয়েছে। রাবী শুহায়ব নববই সংখ্যা নির্দেশক গোলাকৃতি তৈরি করে (দেখালেন)।
No comments: