Breaking News
recent

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৬ষ্ট খন্ড, অধ্যায়ঃ কসম






পরিচ্ছেদঃ ১. আল্লাহ্‌ তা'আলা ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করা নিষেধ


৪১০৮.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা'আলা তোমাদের বাপ-দাদাদ নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি, আর তখন থেকে কখনও সে নামে কখনি কসম করিনি। নিজের পক্ষ থেকেও নয় (অপরের) উদ্বৃতি দিয়েও নয়।

৪১০৯.    আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) এর এর সূত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ননা করেছেন। অবশ্য উকায়ল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বর্নিত আছে যে আমি আর সে নামে কসম করিনি যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। আর এ নামের কসমের উচ্চারণও করিনি। তবে তিনি "নিজের পক্ষ থেকে এবং উদ্বৃতি দিয়েও" কথাটি উল্লেখ করেননি।

৪১১০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা উমার (রাঃ) কে তাঁর পিতার নামে শপথ করতে শুনলেন। পরবর্তী অংশ ইউনুস ও মামার (রহঃ) এর বর্ণনার অনুসারে বর্ণনা করেন।

৪১১১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক কাফেলায় উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে পেলেন। উমার (রাঃ) তখন তার পিতার নামে শপথ করছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ডেকে বললেনঃ সাবধান! মহান আল্লাহ তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে তোমাদের নিষেধ করেছেন। সুতরাং যে কেউ কসম খেতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম খায় অথবা সে যেন চুপ থাকে।

৪১১২.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইয়াহইয়া, বিশর ইবনু হিলাল, আবূ কুরায়ব, ইবনু আবূ উমার, ইবনু রাফি, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ইবনু রাফি (রহঃ) ... তারা সকলেই ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে অনুরূপ ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।

৪১১৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নাম ব্যতীত শপথ না করে। কুরায়শরা তাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতো। কাজেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামের উপর শপথ করো না।

পরিচ্ছেদঃ ২. যে ব্যক্তি লা'ত ও উযযা এর নামে কসম করে সে যেন لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে


৪১১৪.    আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কসম করে এবং সে কসম করতে গিয়ে বলে, লা'তের কসম, সে যেন (এর পরপরই) বলে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, এসো, তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন (এর সাথে সাথেই) কিছু সাদাকা করে দেয়।

৪১১৫.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। আর মা'মার (রহঃ) এর হাদীস ইউনুস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। তবে মামার বলেছেন, "সে যেন কোন কিছু সাদাকা করে দেয়"। আর আওযাঈর হাদীসে আছে, যে 'লাত' ও 'মানাত' এর শপথ করবে। আবূল হুসায়ন (ইমাম) মুসলিম (রহঃ) বলেন, এ কথাটি অর্থাৎ তার কথা ‘তুমি এসো, তোমার সাথে আমি জুয়া খেলি, তবে সে যেন সাথে সাথে সাদাকা দেয়’ যুহরী ব্যতীত অন্য কেউই বর্ণনা করেনি। ইমাম মুসলিম (রহঃ) আরো বলেন, যুহরীর নিকট উত্তম সনদের প্রায় নব্বইটি হাদীস আছে, যা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যাতে আর কেউ শরীক নেই।

৪১১৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দেবতার নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করো না।

পরিচ্ছেদঃ ৩. যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে এর বিপরীত বিষয়কে তার চেয়ে উত্তম মনে করে তবে তার জন্য উত্তমটিই করা এবং কসমের কাফফারা দেওয়া মুস্তাহাব


৪১১৭.    খালফ ইবনু হিশাম, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আশ'আরী গোত্রের কয়েকজন লোককে নিয়ে সাওয়ারী চাওয়ার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসি। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না। আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যাতে আমি তোমাদের সাওয়ার করাতে পারি। আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) বললেন, আমরা অপেক্ষা করলাম, যতক্ষন আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। তারপর তার কাছে কিছু উট আসে। তিনি আমাদেরকে তিনটি সাদা কুঁজ বিশিষ্ট উট দেওয়ার হুকুম করেন। 

যখন আমরা (তা নিয়ে) চলে আসি। তখন আমরা বললাম, (রাবী বলেন, অথবা বলেছেন, আমাদের একে অপরকে বলল) (এতে) আল্লাহ তাআলা আমাদের বরকত দিবেন না। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাওয়ারী চাইতে এসেছিলাম। তখন তিনি কসম করেছিলেন যে, আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। এরপর সাওয়ারী আমাদের দিলেন। এরপর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে (তাঁর কসমের কথা) অবগত করালেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের সাওয়ারী দেইনি; বরং আল্লাহ তোমাদের সাওয়ারী দিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম! ইনশা আল্লাহ আমি যখনই কোন বিষয়ের উপর কসম করি এরপর যদি এর তুলনায় (বিপরীতটিকে) উত্তম মনে করি, তবে আমি আমার কসমের কাফফারা দিয়ে দিব এবং যা উত্তম তাই করবো।

৪১১৮.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সাথীরা তাদের জন্য সাওয়ারী চাইতে আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠায়, যখন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ‘জায়শুল উসরা’ (সৎকারকালীন বাহিনী) (অর্থাৎ তাবুকের যুদ্ধে) তার সঙ্গে ছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমার সঙ্গীরা আমাকে আপনার নিকট তাদেরকে সাওয়ারী দেয়ার জন্য পাঠিয়েছে। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কোন বাহন দিব না। আর যখন আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি তখন তিনি ক্রোধান্বিত ছিলেন, অথচ আমি বুঝতে পারিনি। আমি চিন্তিত মনে ফিরে আসি। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসম্মতির কারণে এবং এই ভয়ে যে, সম্ভবত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উপর মনে মনে ক্রোধানিত হয়েছেন। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট চলে আসি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা তাদের জানাই। অল্পক্ষণর অতিবাহিত না করতেই হঠাৎ শুনতে পাই যে, বিলাল (রাঃ) ডাক দিচ্ছেন হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি উত্তর দিলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডাকে সাড়া দিন। তিনি আপনাকে ডাকছেন। 

যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসি, তখন তিনি বললেনঃ এ জোড়া নাও, এ জোড়া নাও এবং এ জোড়া নাও। ছয়টি উট সম্পর্কে বললেন, (যা তিনি তখনই সা’দ (রাঃ) কাছ থেকে কিনেছিলেন) এবং এগুলো নিয়ে তোমার সাথীদের কাছে যাও আর বলো যে, আল্লাহ অথবা বলেন, আল্লাহর রাসুল তোমাদের এগুলো বাহনের জন্য দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এর উপর আরোহণ করো। 

আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ, আমি এগুলি নিয়ে আমার সাথীদের নিকট আসি এবং বলি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তোমাদের বাহন হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ছাড়বো না, যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ আমার সাথে সেই ব্যক্তির নিকট না যায়, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শোনেছে, যখন আমি তার নিকট তোমাদের জন্য (বাহন) চেয়েছিলাম এবং তিনি প্রথমবারে নিষেধ করেন এবং পরে আমাকে তা প্রদান করেন। তোমরা ধারণা করোনা যে, আমি তোমাদের এমন কথা বলেছি যা তিনি বলেন নি। 

তারা আমাকে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি আমাদের নিকট অবশ্যই সত্যবাদী। আর আপনি যা চাইছেন তাও আমরা অবশ্যই করবো। তারপর আবূ মূসা (রাঃ) তাদের মধ্য থেকে করেকজনকে সাথে নিযে ঐসব লোকদের নিকটে এলেন যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা এবং তাদের দিতে তার নিষেধাজ্ঞা শুনেছিলেন এবং পরবর্তীতে তাঁর দেওয়া প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তারা তাদের কাছে হুবহু সেই বর্ণনাই দিলেন যা আবূ মূসা (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন।

৪১১৯.    আবু রাবী' আতাকী (রহঃ) ... যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ মূসা (রাঃ) এর নিকটে ছিলাম। তাঁর (খানার) দস্তরখান নিয়ে আসতে বললেন। তাতে মুরগীর গোশত ছিল। ইত্যবসরে তায়মুল্লাহ গোত্রের লাল বর্ণের এক লোক উপস্থিত হয়। যে গোলাম বা নও মুসলিম সদৃশ ছিল। আবূ মূসা (রাঃ) তাকে বললেন, এসো। সে ইতস্তত করে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, এসো। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা খেতে দেখেছি। লোকটি বললো, আমি একে এমন কিছু খেতে দেখেছি যাতে আমার ঘৃণা হয়, তাই আমি কসম করেছি যে, তা আর খাবো না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, এসো, এ ব্যাপারে আমি তোমাকে একটি হাদীস বলছি। 

আমি একবার আশ'আরী গোত্রের কতিপয় লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাওয়ারী চাইতে আসি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না। আর তোমাদের দেওয়ার মত সাওয়ারীও আমার কাছে নাই। তারপর যতক্ষন আল্লাহর মর্জি হয়, আমরা অপেক্ষা করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে কিছু গনীমতের উট আসে। তিনি আমাকে ডেকে পাঠান এবং সাদা কুঁজ বিশিষ্ট পাঁচটি উট আমাদের দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। 

যখন আমরা চললাম তখন আমাদের একে অন্যকে বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার কসম সম্বন্ধে অমনোযোগী রেখেছি, আমাদের বরকত হবে না। তখন আমরা তার নিকট ফিরে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনার নিকট সাওয়ারী চাইতে এসেছিলাম। আর আপনি আমাদেরকে সাওয়ারী না দেয়ার কসম করেছিলেন এবং তারপর আপনি আমাদের সাওয়ারী দিয়ে দিয়েছিলেন। আপনি কি তা ভুলে গেছেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! ইনশা আল্লাহ, আমি যখনই কোন কসম করি, তারপর তার বিপরীতটিকে উত্তম মনে করি তখন আমি উত্তমটিই করব এবং কসম থেকে হালাল হয়ে যাব (অর্থাৎ কাফফারা আদায় করব) সুতরাং তোমরা যাও, কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সাওয়ারী দান করেছেন।

৪১২০.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘জারম’ এর এই গোত্র এবং আশ'আরীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। একবার আমরা আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) এর নিকটে ছিলাম। তখন তাঁর সামনে খাদ্য উপস্থিত করা হলো, যার মধ্যে মুরগির গোশতও ছিল। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

৪১২১.    আলী ইবনু হুজর সা’দী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমার ও আবূ বাকুর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ মূসা (রাঃ) এর নিকটে ছিলাম। অতঃপর সকলেই হাম্মাদ ইবনু যায়দের হাদীসের মর্মানুসারে ঘটনা বর্ণনা করেন।

৪১২২.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা (রহঃ) এর নিকট গমন করি। তখন তিনি মুরগির গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি হাদীসের পরবর্তী অংশ উক্ত বর্ণনাকারীদের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতে এতটুকু অধিক বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর কসম! আমি তা ভুলে যাইনি।

৪১২৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাওয়ারী চাইতে উপস্থিত হই। তিনি বললেনঃ আমার নিকট এমন কিছু নাই যা তোমাদেরকে সাওয়ারী হিসেবে দিতে পারি। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ছাই বর্ণের) সাদা কুঁজ বিশিষ্ট তিনটি উট আমাদের নিকট পাঠান। আমরা আলোচনা করলাম যে, সাওয়ারী চাওয়ার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিলাম। তখন তিনি কসম খেয়েছিলেন যে, তিনি আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। এরপর আমরা তাঁর নিকট গিয়ে তাকে কসমের কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ আমি কোন বিষয়ের উপর কসম করলে তার বিপরীত কাজ যদি উত্তম দেখি তবে অবশ্যই সে উত্তমটি করব।

৪১২৪.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা তামীম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা পদাতিক ছিলাম। তাই আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে সাওয়ারী চাইতে এলাম। এরপর জারীরের হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেন।

৪১২৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে গভীর রাত পর্যন্ত দেরী করে (ইশার সালাত আদায় করে)। এরপর তার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখে যে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী তার খাবার নিয়ে এলে সে সন্তানদের কারণে কসম করলো যে, সে খাবে না। পরে তার ভাবান্তর ঘটলো এবং সে খেয়ে নিল। এরপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে ও তাঁকে উক্ত ঘটনা বলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে তার বিপরীতটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, সে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারা দেয়।

৪১২৬.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে তার বিপরীতটিকে তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন তার কসমের কাফফারা দেয় এবং (ঐ কাজটি) করে ফেলে।

৪১২৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম করে, পরে তার বিপরীতটিকে তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন সেই উত্তম বিষয়টি সম্পাদন করে এবং কসমের কাফফারা আদায় করে দেয়।

৪১২৮.    কাসিম ইবনু যাকায়িয়া (রহঃ) ... সুহায়ল (রহঃ) এর সূত্রে উক্ত সনদে মালিক বর্ণিত হাদীসের মর্মানুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে আছে, "সে যেন তার কসমের কাফফারা দেয় এবং তাই করে যা উত্তম।"

৪১২৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... তামীম ইবনু তারফা (রহঃ) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন যাঞ্ছাকারী আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) এর নিকট এলো। সে একজন দাসের মূল্য কিংবা দাসের মূল্যের কিছু অংশ সাহায্য করার প্রার্থনা জানায়। তিনি বললেন, একটা বর্ম ও লোহার টুপি ব্যতীত আমার নিকট তোমাকে দেওয়ার মত আর কিছুই নেই। আমি আমার পরিবারকে লিখে দিচ্ছি যেন তারা এ দু'টি তোমাকে দিয়ে দেয়। রাবী বলেন, সে ব্যক্তি এতে রাজি হলো না। আদী এতে ক্রোধাম্বিত হয়ে বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে দিব না। 

পরে লোকটি রাযি হয়ে গেল। তখন তিনি বললেনঃ জেনে রাখ, আল্লাহর কসম! আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে না শুনতাম যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যাপারে কসম করে, অতঃপর তা অপেক্ষা আল্লাহর অধিক ভয় সম্পন্ন বিষয় দেখে, তবে সে যেন তাকওয়াপূর্ণ বিষয়টিই করে, তাহলে আমি আমার কসম প্রত্যাহার করতাম না।

৪১৩০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কসম করে, এরপর তার বিপরীতকে উত্তম মনে কবে, তবে সে যেন উত্তমটিই করে, এবং কসম পরিত্যাগ (ভঙ্গ) করে।

৪১৩১.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনু তারিফ বাজালী (রহঃ) ... আদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন কসম করে, এরপর তার চেয়ে উত্তম কিছু দেখে, তবে সে যেন তার কাফফারা আদায় করে এবং তাই যেন করে যা উত্তম।

৪১৩২.    মুহাম্মদ ইবনু তারীফ (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বলতে শুনেছেন।

৪১৩৩.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার তার নিকট এক ব্যক্তি এসে একশ দিরহামের সাওয়াল করে। তিনি বললেন, তুমি আমার নিকট একশ দিরহাম সওয়াল করছ! অথচ আমি হাতিম (তাই) এর পুত্র। আল্লাহর কসম! তোমাকে আমি দান করব না। এরপর তিনি বললেন, আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে না শোনতাম যে, যে ব্যক্তি কসম করে, পরে তদপেক্ষা উত্তম কিছু দেখে, তবে সে যেন সেই উত্তমটিই পালন করে।

৪১৩৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার নিকট সাওয়াল করে। এরপর উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং আরো বলেছেন যে, আমার প্রাপ্য (সরকারী) দান থেকে চারশ তোমার জন্য।

৪১৩৫.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবদর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি শাসন ক্ষমতা চেয়ো না। কারণ, যদি তোমাকে চাওয়ার কারণে তা দেওয়া হয়, তবে তার দায়িত্ব, তোমার উপর বর্তাবে। আর চাওয়া ব্যতীত তোমাকে তা অর্পণ করা হলে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে। 

আর যখন তুমি কোন কাজের ব্যাপারে কসম কর; তারপর তার বিপরীত কাজকে তুমি উত্তম মনে কর, তবে তুমি তোমার কসমের কাফফারা আদায় করবে এবং যা উত্তম তা পালন করবে। 

আবূ আহমাদ আল জালুদী ... জারীর ইবনু হাযিম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

৪১৩৬.    আলী ইবনু হুজর সা’দী, আবূ কামিল জাহদারী, ওয়াবদুল্লাহ ইবনু মুয়ায ও উকবা ইবনু মুকাররম আম্মী ... আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে মুতামির তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণিত হাদীসে 'শাসন ক্ষমতার' (ইমারাত) কথা উল্লেখ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৪. কসম হবে কসম গ্রহণকারীর নিয়্যাত অনুযায়ী


৪১৩৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার কসম ঐ উদ্দেশ্যের উপর ধরা হবে, যে উদ্দেশ্যের ব্যাপারে তোমার কসম গ্রহণকারী তোমাকে সত্য মনে করে। আমর বলেন, এ ভাবে যে, তোমার কসম গ্রহণকারী যে উদ্দেশ্যে তোমাকে সত্য মনে করে।

৪১৩৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কসম কসমগ্রহীতার নিয়্যাতে অনুযায়ী সাব্যস্ত হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫. কসম ও অন্যান্য ব্যপারে "ইনশা-আল্লাহ্‌" বলা


৪১৩৯.    আবূ রাবী আতাকী ও আবূ কামিল জাহদারী ও ফুযায়ল ইবনু হুসাইন (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর ষাটজন স্ত্রী ছিলো। একদা তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি আজ রাতে তাদের (সকল স্ত্রীর) কাছে গমন করবো (অর্থাৎ সহবাস করবো)। অতএব, প্রত্যেকেই গর্ভবতী হবে এবং প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা (ভবিষ্যতে) আল্লাহর পথে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করবে। কিন্তু পরিশেষে একজনস্ত্রী ব্যতীত আর কেউই গর্ভবতী হননি। 

এরপর তিনি অর্ধ মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) একটি সন্তান প্রসব করলেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ বলতেন, তবে নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করতেন, যারা প্রত্যেকেই অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতেন।

৪১৪০.    মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, একদিন আল্লাহর নবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেনঃ অবশ্যই আমি আজ রাত সত্তরজন স্ত্রীর প্রত্যেকের কাছেই যাব। এতে তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। তখন তাঁর কোন সাথী অথবা কোন ফিরিশতা তাঁকে বললেন যে, আপনি ইনশা আল্লাহ বলুন! কিন্তু তিনি ভুলে যাওয়ার কারণে তা বলেননি। 

অতএব, তাঁর স্ত্রীদের, মধ্য হতে একজন ব্যতীত অন্য কেউ সন্তান প্রসব করেননি। আর তিনিও অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করলেন। রাসুসুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেনঃ যদি তিনি ইনশা আল্লাহ বলতেন, তবে তিনি শপথ ভঙ্গকারী হতেন না। আর তিনি তখন তার উদ্দেশ্য সাধনে সফলকাম হতেন।

৪১৪১.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরাররা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ শব্দের অথবা অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৪২.    আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুলায়মান ইবনু দাউদ (আলাইহিস সালাম) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি আজ রাতে সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাব। এতে তাদের প্রত্যেকেই এমন এক একটি সন্তান প্রসব করবে যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। তখন তাকে বলা হল যে, আপনি ইনশা আল্লাহ বলুন। কিন্তু তিনি তা বলেননি। এরপর তিনি তাদের সাথে সহবাস করলেন। কিন্তু তাদের মধ্য হতে কেবলমাত্র একজন স্ত্রীর একটি অর্ধ মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) সন্তান প্রসব করা ব্যতীত আর কোন স্ত্রী কোন সন্তান প্রসব করেননি। 

রাবী বলেনঃ যে, এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ বলতেন, তবে তিনি শপথ ভঙ্গকারী হতেন না। আর উদ্দেশ্য পূরণে তিনি সফলকাম হতেন। <

৪১৪৩.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সুলায়মান ইবনু দাউদ (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি আজ রাতে নব্বইজন স্ত্রীর প্রত্যেকের কাছেই যাবো। এতে তারা সকলেই অশ্বারোহী সৈনিক হওয়ার যোগ্যতা সস্পন্ন এমন সন্তান প্রসব করবে যারা (ভবিষ্যতে) আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তখন তাঁর কোন সাথী তাঁকে বললেন, আপনি ইনশা আল্লাহ বলুন। কিন্তু তিনি ইনশা আল্লাহ বলেননি। 

এরপর তিনি সকল স্ত্রীর সঙ্গেই সহবাস করলেন। কিন্তু মাত্র একজন স্ত্রী ব্যতীত আর কোন স্ত্রী গর্ভবতী হলেন না। তিনিও অর্ধ মানবাকৃতির অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করলেন। সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন, যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ বলতেন, (তবে তারা সকলেই এমন সব যোগ্যতা সম্পন্ন অশ্বারোহী সৈনিক সন্তান জন্ম দিতেন) যারা-সকলেই (ভবিষ্যতে) অশ্বারোহী সৈনিক হয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতো।

৪১৪৪.    সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কিছু শাব্দিক পরিবর্তন করে বলেছেন যে- প্রত্যেক স্ত্রী এমন সব সন্তান প্রসব করবে, যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৬. আল্লাহর নামে এমন শপথের ব্যপারে অনমনীয়তা নিষিদ্ধ; যাতে শপথকারীর পরিবার কষ্ট পায় অথচ (বাস্তবে) তা হারাম নয়


৪১৪৫.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মান ইবন মুনাব্বিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। সে সবের মধ্যে অন্যতম- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাদের কারো তার পরিবারের সাথে (কোন বিষয়ে) আল্লাহর নামে কসম করে তাতে অনমনীয়তা দেখানো অধিক গুনাহের কারণ বলে বিবেচিত হবে- কসম করে আল্লাহর (ফরযকৃত) নির্ধারিত (শপথ ভঙ্গের) কাফফারা আদায় করার তুলনায়।

পরিচ্ছেদঃ ৭. ইসলাম গ্রহনের পর কুফরী অবস্থায় মানতের ব্যপারে করণীয়


৪১৪৬.    মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দামী মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি (ইসলামপূর্ব) জাহেলিয়াতের যুগে মাসজিদুল হারামে এক রাত ‘ইতিকাফ’ করার মানত করেছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর।

৪১৪৭.    আবূ সাঈদ আশাজ্জ, মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু আলা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) ... সকলেই উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে এবং তাঁদের মধ্য হতে হাফস (রাঃ) উমর (রাঃ) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। 

আর আবূ উমামা এবং সাকিফী (রহঃ) উভয়ের বর্ণিত হাদীসে اعْتِكَافُ لَيْلَة (এক রাত্রির ইতিকাফের) কথা উল্লেখ আছে। আর শুবা (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে جَعَلَ عَلَيْهِ يَوْمًا يَعْتَكِفُهُ (তিনি তাঁর উপর একদিনের ইতিকাফ করা ধার্য (মানত) করে নিয়েছিলেন)। উল্লেখিত হাফস (রাঃ) এর বর্নিত হাদীসে দিন বা রাত এর উল্লেখ নেই।

৪১৪৮.    আবূ তাহির (রহঃ) ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর জিইররানা নামক স্থানে অবস্থান কালে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অজ্ঞতার যুগে মাসজিদুল হারামে একদিন ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? তখন তিনি বললেনঃ যাও এবং একদিন ইতিকাফ করে নাও। বর্ণণাকারী বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের (গনীমতের) এক-পঞ্চমাংশ থেকে একটি দাসী প্রদান করেন। 

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধ বন্দিদের মুক্ত করে দেন- তখন উমার (রাঃ) তাদের কলরব শুনতে পান। তারা বলাবলি করছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। উমর (রাঃ) (পুত্র আবদুল্লাহ) কে বললেন, ব্যাপার কি? তখন তারা বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ বন্দীদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে আবদুল্লাহ! ঐ দাসীটির কাছে যাও এবং তাকে মুক্ত করে দাও।

৪১৪৯.    আব্বাদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন তখন উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর জাহেলী যুগের একদিনের ইতিকাফ করার মানত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর জারীর ইবনু হাযিম এর হাদীসটি উল্লেখ করেন।

৪১৫০.    আহমাদ ইবনু আবদাতাদ্দাব্বী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট জি’ইররানা থেকে প্রত্যবর্তনের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উমরা, করার কথা উল্লেখ করা হল। তখন তিনি বললেন, সেখান থেকে তিনি উমরা করেননি। বর্ণনাকারী বলেন যে উমর (রাঃ) জাহেলী যুগে একরাত্রি ইতিকাফ করার মানত করেছিলেন। এরপর জারীর ইবনু হাযিম ও মা'মার সূত্রে আইউব থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।

৪১৫১.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী, ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ (রহঃ) ... উভয়েই নাফি (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে মানত স্পম্পর্কে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর উভয়ের বর্ণিত হাদীসে সকলেই اعْتِكَافُ يَوْمٍ (একদিনের ইতিকাফ) কথাটি বর্ননা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৮. ক্রীতদাসের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং দাসকে চপোটাঘাতের কাফফারা


৪১৫২.    আবূ কামিল ফুযাইল ইবনু হুসাইন জাহদারী (রহঃ) ... আবূ উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি একদা ইবনু উমার (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখি যে, তিনি একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়েছেন বা বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু ধারণ করে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এর (কাঠির) সমতূল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আপন ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফফারা হল তাকে আযাদ করে দেয়া।

৪১৫৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... যাযান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমার (রাঃ) তার এক গোলামকে ডাকালেন। এরপর তার পিঠে (প্রহারের) দাগ দেখতে পেলেন। তিনি তাকে বললেনঃ তুমি কি এতে ব্যথা অনুভব করছ? সে বলল না। তখন তিনি বললেন, তুমি মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি মাটি থেকে কোন বস্তু তুলে নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এতটুকু পুণ্যও মেলেনি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করস কিংবা চপোটাঘাত করল, এর কাফফারা হল তাকে মুক্ত করে দেয়া।

৪১৫৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) উভয়ই সুফায়ান (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু মাহদী (রহঃ) এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন যে, এতে حَدًّا لَمْ يَأْتِهِ (বিনা অপরাধে) কথাটি উল্লেখ আছে। আর ওয়াকী (রহঃ) কতৃক বর্ণিত হাদীসে مَنْ لَطَمَ عَبْدَهُ (যে ব্যক্তি তার গোলামকে চপোটাঘাত করল) বাক্যটির উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর হাদীসে حد (অপরাধের শাস্তি) কথাটি উল্লেখ করেননি।

৪১৫৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমাইর (রহঃ) ... মুয়াবিয়া ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, একদা আমি আমাদের এক গোলামকে চপোটাঘাত করলাম। এরপর আমি পলায়ন করলাম এবং যোহরের সালাতের পূর্বক্ষণে ফিরে এলাম। আমি আমার পিতার পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি তাকে এবং আমাকে ডাকালেন। গোলামকে বললেন, তুমি তার কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কর। সে মাফ করে দিল। 

এরপর তিনি বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কালে বনী মুকাররিন গৌত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি গোলাম (দাস) ছিল। আমাদের কোন একজন তাকে চপোটাঘাত করল এবং এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে মুক্ত করে দাও। তারা বলল, সে ব্যতীত আমাদের অন্য কোন খাদিম নেই। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তার কাছ হতে সেবা গ্রহণ করতে থাকবে, যখনই তার থেকে মুখাপেক্ষীহীন হবে তখনই তোমরা তাকে মুক্ত করে দিবে।

৪১৫৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বৃদ্ধ তার দাসীকে তড়িঘড়ি করে চপোটাঘাত করল। সুওয়ায়েদ ইবনু মুকাররিন (রহঃ) তাকে বললেন, আপনি (প্রহারের জন্য) তার চেহারা ব্যতীত আর কোন স্থান পেলেন না। তুমি আমাকে বনী মুকাররিন গোত্রের সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের সপ্তম লোক হিসেবে দেখছ। আমাদের একজন ব্যতীত অন্য কোন দাসী ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার কনিষ্ঠ ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাকে আযাদ করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন ।

৪১৫৭.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নোমান ইবনু মুকাররিন (রহঃ) এর ভাই সুওয়াইদ ইবনু মুকাররিন এর বাড়িতে কাপড় বিক্রি করছিলাম। এমন সময় একজন দাসী বেরিয়ে এসে আমাদের একজন লোকের সাথে তর্ক করল। তখন সে তাকে একটি চপোটাঘাত করল। এতে সুওয়াইদ (রাঃ) রাগান্বিত হলেন। তখন তিনি ইবনু ইদরীস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪১৫৮.    আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ (রহঃ) ... সুওয়াইদ ইবনু মুকাররিন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তার একজন দাসী ছিল। জনৈক ব্যক্তি একদা তাকে এক চপোটাঘাত মারল। তখন সুয়াইদ (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি জাননা যে, চেহারায় (আঘাত করা) নিষিদ্ধ? তিনি আরো বললেন, আমার নিশ্চিতরূপে মনে আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমি ছিলাম সাত ভাইয়ের সপ্তম (একজন)। আমাদের একজন গোলাম ব্যতীত আর কোন গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকরে এক ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য আদেশ দিলেন।

৪১৫৯.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কি? অতঃপর তিনি আবদুস সামাদ এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৪১৬০.    আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবূ মাসউদ বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক ক্রীতদাসকে বেত্রাঘাত করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছনে থেকে একটি শব্দ শুনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো! রাগের কারণে (আওয়াজ কার) তা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি আমার নিকটে এলেন- হঠাৎ দেখতে পেলাম, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তিনি বলছেনঃ হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো, হে আবূ মাসঊদ! তুমি জেনে রেখো! বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর আমি বেতটি আমার হাত থেকে ফেলে দিলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো যে, এই দাসের উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে তোমার উপর আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয়ই অধিক ক্ষমতাবান। বর্ননাকারী বলেন, আমি বললাম, এরপর কখনও কোন কৃতদাসকে আমি প্রহার করবো না।

৪১৬১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সকলেই আ’মাশ (রহঃ) সূত্রে আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জারীর (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসে فَسَقَطَ مِنْ يَدِي السَّوْطُ مِنْ هَيْبَتِهِ (তাঁর ভয়ে আমার হাত থেকে বেতটি পড়ে গেল) এই বাক্যটি রয়েছে।

৪১৬২.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুু আ'লা (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছন দিক থেকে একটি আওয়ায শুনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো, তুমি তার ওপর যেরূপ ক্ষমতাবান, আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমার ওপর এর চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। হঠাৎ পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শোন! যদি তুমি তা না করতে তাহলে অবশ্যই (জাহান্নামের) আগুন তোমাকে ঝলসে দিত। কিংবা (তিনি বললেন) আগুন তোমাকে অবশ্যই-স্পর্শ করতো।

৪১৬৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রাঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একবার তার গোলামকে প্রহার করছিলেন। তখন সে বলতে লাগলো- আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। বর্ণনাকারী বলেন, তখনও তিনি তাকে প্রহার করছিলেন। এরপর সে বলল, আমি আল্লাহর রাসূলের কাছে সাহায্য চাই। তখন তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর শপথ! তুমি তার উপর যতটুকু ক্ষমতাবান, আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমার উপর তার চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাকে মুক্ত করেছেন।

৪১৬৪.    বিশর ইবনু খালিদ উক্ত হাদীসটি শুবা (রহঃ) থেকে এই একই সুত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি أَعُوذُ بِاللَّهِ أَعُوذُ بِرَسُولِ اللَّهِ (আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই, আমি আল্লাহর রাসূলের কাছে সাহায্য চাই) এই বাক্যটির উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ৯. দাসীর প্রতি যিনার অপবাদদাতার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী


৪১৬৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আপন গোলামকে ব্যাভিচারের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করল, কিয়ামত দিবসে তার ওপর এই মিথ্যা অভিযোগের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু সে যদি সত্যই অপরাধী হয় (তবে অভিযোগীকারী আর শাস্তি পাবে না)।

৪১৬৬.    আবূ কুরায়ব যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... উভয়ে ফুযায়ল ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) থেকে একই সুত্রে বর্ণনা করেছেন। আর তাদের উভয়ের হাদীসে سَمِعْتُ أَبَا، الْقَاسِمِ صلى الله عليه وسلم نَبِيَّ التَّوْبَةِ (তাওবার নাবী আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি) এর উল্লেখ আছে।

পরিচ্ছেদঃ ১০. নিজে যা খাবে ও পরবে দাস-দাসীকেও তা খেতে ও পরতে দেয়া এবং তাদের সাধ্যাতীত কাজের ভার না দেয়া


৪১৬৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... মা'রূপ ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমারা ‘রাবাযাহ’ নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ) এর নিকট দিয়ে গমন করছিলাম। তখন তার গায়ে একটি চাঁদর ছিল এবং তাঁর গোলামের ওপরও অনুরূপ একটি চাঁদর ছিল। তখন আমরা বললাম, হে আবূ যার (রাঃ)! যদি আপনি উভয়টি একত্রিত করতেন, তাহলে দু'জোড় (এক ধরনের দু'কাপড়) হতো। তিনি বললেন, আমার মধ্যে এবং আমার ভাইদের একজন (অর্থাৎ) আমার গোলামের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তার মা ছিল অনারব। একদা আমি তার মাকে উল্লেখ করে তাকে গালি দিলাম। তখন সে আমার বিরুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নালিশ করল। এরপর যখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম তখন তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি এমন ব্যক্তি, যার মধ্যে অজ্ঞতা (জাহেলী) যুগের স্বভাব বিদ্যমান। 

আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে ব্যক্তি মানুষদেরকে গালি দেয় তার প্রতি উত্তরে তারাও তার পিতা মাতাকে উল্লেখ করে গালি দেয়া স্বভাব। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ যার! তোমার মধ্যে অজ্ঞতা যুগের স্বভাব এখনও বিদ্যমান। তারা (কালিমার) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা থেকে খাওয়াবে এবং তোমরা যেমন পোশাক পরবে তাদেরকেও তা থেকে পরারে। তোমরা তাদের উপর এমন কোন কাজের ভার চাপিয়ে দিবে না, যা করতে তারা হিমশিম খেয়ে যায়। যদি তোমরা তাদেরকে (ভারী কাজ) চাপিয়ে দাও, তাহলে একাজে (তোমরাও) তাদের সাহায্যও করবে।

৪১৬৮.    আহমাদ ইবনু ইউনূস, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সকলেই আ’মাশ (রহঃ) ... থেকে এই একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তিনি যুহায়র ও আবূ মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে "তোমার মধ্যে অজ্ঞতা যুগের কর্মকাণ্ড বিদ্যমান" এই কথার পর কিছু অতিরিক্ত সংযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, তা কি আমার বৃদ্ধ বয়সেও? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আর আবূ মুয়াবিয়ার বর্ণনায় আছে- হ্যাঁ, তোমার এ বৃদ্ধ বয়সেও। 

আর ঈসা (রহঃ) এর হাদীসে আছে, যদি সে তাকে সাধ্যাতীত কোন কাজ চাপিয়ে দেয়, যা সে করতে অক্ষম, তবে তাকে বিক্রি করে দেবে। আর যুহায়র (রহঃ) এর হাদীসে আছে “তবে সে তাকে সাহায্যও করবে”। আবূ মুয়াবিয়ার (রাঃ) হাদীসে “সে তাকে বিক্রি করে দিবে” অথবা “সাহায্য করবে” কোন কথার উল্লেখ নেই। "তুমি তাকে এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না, যা করতে সে অক্ষম" একথা পর্যন্তই হাদীস শেষ করা হয়েছে।

৪১৬৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মারুর ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ) কে দেখতে পেলাম যে, তাঁর গায়ে জোড়া (সেট) চাঁদর এবং তাঁর গোলামের গায়েও অনুরূপ এক জোড়া চাঁদর রয়েছে। তখন আমি এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন যে, সে (আবু যার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিল। এবং সে ব্যক্তি তার মাকে উল্লেখ করে গালি দিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁর কাছে ঐ ঘটনা বর্ণনা করলো। 

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে জাহেলী যুগের স্বভাব বিদ্যমান। তারা তোমাদের ভাই, তোমাদের খাদিম। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির অধীনে তার কোন ভাই (গোলাম) থাকে তার উচিত তাকে এমন খাদ্য দেওয়া যা সে নিজে খায় এবং এমন পরিচ্ছদ দেওয়া যা সে নিজে পরিধান করে। আর তোমরা তাদের উপর এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না যা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়। আর, যদি তোমরা তাদেরকে সাধ্যতীত কাজ দাও তবে তোমরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতাও করো।

৪১৭০.    আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ কৃতদাসের জন্যে খানা-পিনা ও পোশাক-পরিচ্ছেদ ক্রীতদাসের অধিকার। (তার ব্যবস্থা করা মনিবের কর্তব্য) তার সাধ্যাতীত কোন কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেয়া যাবে না।

৪১৭১.    কা’নাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন গোলাম খাবার রান্না করে তার (মনিবের) কাছে নিয়ে আসে। এমন খাবার যার তাপ ও ধোঁয়া সে সহ্য করেছে, তখন তার উচিত হবে তাকে কাছে বসিয়ে তা থেকে কিছু খাবার প্রদান করা। আর যদি খাবারের পরিমাণ অতি অল্প হয়, তবে সে যেন তার হাতে অন্তত এক-গ্রাস অথবা দুগ্রাস খাবার তুলে দেয়। বর্ণনাকারী দাঊদ (রহঃ) ... বলেন যে, أُكْلَةً أَوْ أُكْلَتَيْنِ এর অর্থ لُقْمَةً أَوْ لُقْمَتَيْنِ --এক লুকমা অথবা দু'লুকমা।

পরিচ্ছেদঃ ১১. আন্তরিকতার সাথে মনিবের সেবা ও উত্তমরূপে আল্লাহর ইবাদতকারী দাস-দাসীর সাওয়াব


৪১৭২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন গোলাম যখন আন্তরিকতার সাথে তার মনিবের কাজ করে (মনিবের কল্যাণ কামনা করে) এবং আল্লাহ্‌র ইবাদতেও উত্তমরূপে সমাধা করে-- তখন তার জন্য পুরস্কার দুই গুণ।

৪১৭৩.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর আবূ শায়বা ও হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) ... সকলেই ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিক (রহঃ) ... এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৭৪.    আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রীতদাস সৎ গোলামের জন্যে দুটি পুরস্কার রয়েছে। সেই মহান আল্লাহর শপথ। যার হাতে আবূ হুরায়রার জীবন, যদি আল্লাহর পথে জিহাদ করা, হজ্জ করা এবং আমার মায়ের সেবা করা এসব কর্তব্য (আমার দায়িত্বে) না থাকত তবে গোলাম অবস্থায় মৃত্যু বরণকেই আমি অধিক পছন্দ করতাম। 

বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জানতে পারলাম যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হজ্জে গমন করেননি তাঁর মায়ের মৃত্যুর আগে। কেননা, তিনি সর্বদা তাঁর সাহচর্যে থেকে সেবা করতেন। বর্ননাকারী আবূ তাহের তাঁর বর্ণিত হাদীসে لِلْعَبْدِ الْمُصْلِحِ (সৎ গোলামের জন্যে) কথাটির উল্লেখ করেছেন। কিন্তু الْمَمْلُوكَ (ক্রীতদাস) শব্দটি তিনি উল্লেখ করেন নি।

৪১৭৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি بَلَغَنَا وَمَا بَعْدَهُ (আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছছে থেকে নিয়ে এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি)

৪১৭৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে গোলাম আল্লাহর হক এবং তার মনিবের হক আদায় করল, তার জন্য দু'গুন সাওয়াব রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, আমি হাদীসটি কা’ব (রাঃ) নিকট বর্ণনা করলাম তখন কা’ব (রাঃ) বললেন, কিয়ামত দিবসে তার ওপর কোন হিসাব নেই এবং ঐ মুমিনের ওপরও কোন হিসাব নেই যার সম্পদ কম। 

উপরোক্ত হাদীস যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আমাশ (রাঃ) থেকে একই সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪১৭৭.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার অন্যতম (হাদীস) তিনি (আবু হুরায়রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ গোলামের জন্য কতইনা উত্তম (পুরস্কার রয়েছে) যে, উত্তমরূপে আল্লাহর ইবাদত করে এবং আপন মনিবের উত্তম সেবা করে মৃত্যুবরণ করেছে, তার জন্য কতইনা উত্তম প্রতিদান রয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ১২. শরীকী গোলাম আযাদ করা


৪১৭৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কয়েক শরীকের মালিকানাধীণ কোন গোলামের নিজ অংশ যে ব্যক্তি আযাদ করে দিল আর তার কাছে এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যা গোলামের মূল্য পরিমাণ হয় তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে মূল্য নির্ধারণ করে অন্যন্য অংশীদারদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করে দিবে এবং গোলাম (সম্পূর্ণভাবে) তার পক্ষ থেকে আযাদ হবে। অন্যথা সে যে অংশ আযাদ করল, তাই (শুধু) আযাদ হবে।

৪১৭৯.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন গোলামের (মালিকানা হবে তার) নিজ অংশ আযাদ করে দিল, তার কর্তব্য হবে সম্পূর্ণ গোলাম আযাদ করে দেয়া, যদি তার কাছে সম্পূর্ণ গোলামের মূল্য পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান থাকে। আর যদি তার সম্পদ বিদ্যমান না থাকে, তবে সে যে অংশ আযাদ করল, তাই (শুধু) আযাদ হবে।

৪১৮০.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যৌথভাবে ক্রয় করা কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করে দেয় এবং তার কাছে গোলামের সম্পূর্ণ মূল্যের পরিমাণ সম্পদও থাকে তখন ন্যায়সঙ্গতভাবে গোলামও মূল্য নিরূপণ করা হবে এবং সকলের পাওনা পরিশোধ করে তাকে সম্পূর্ণ আযাদ করে দেবে। অন্যথা সে যে অংশ আযাদ করল তাই (শুধু) আযাদ হবে।

৪১৮১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহামদ ইবনু রুহম, মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না, আবূ রাবী, আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসুর, মুহাম্মদ ইবনু রাফি, হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) ... সকলেই ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আয়্যুব ও ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ (রহঃ) ব্যাতিত অন্য সকলে তাদের বর্ণিত হাদীসে وَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ مَالٌ فَقَدْ عَتَقَ مِنْهُ مَا عَتَقَ (আর যদি তার কাছে প্রচুর সম্পদ বিদ্যমান না থাকে, তবে সে যে অংশ আযাদ করল তাই শুধূ আযাদ হবে) এইরূপ বাক্যের উল্লেখ নেই। আর তারা (দু'জন) একথাও বলেছেন যে, আমরা জানিনা যে, প্রকৃতপক্ষেই এই শব্দগুলো হাদীসের অন্তর্ভুক্ত, না বর্ননাকারী নাফি (রহঃ) নিজের পক্ষ হতেই এইগুলো বলেছেন। উল্লিখিত বর্ণনাকারীদের কারো বর্ণনায় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনিনি কথাটা নেই, একমাত্র লাইস ইবনু সা’দ এর হাদীস ব্যতিত।

৪১৮২.    আমর আন-নাকিদ ও ইবনু আবী উমর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশীদারিত্ব আছে, তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে কমবেশি করা ব্যতীত তার মূল্য নিরূপণ করা হবে। এরপর তার সম্পদ হতে তাকে মুক্ত করে দেয়া উচিত, যদি সে সচ্ছল হয়।

৪১৮৩.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন গোলামের তার অংশ আযাদ করল, বাকী অংশটুকু তার সম্পদ থেকে আযাদ হয়ে যাবে, যদি তার এমন সস্পদ থাকে যদ্বারা গোলামের মূল্য পরিশাধ করা যায়।

৪১৮৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উভয়েই ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ দু'ব্যক্তির অংশীদারিত্বে কোন গোলামের একজন মালিক যদি তার অংশ আযাদ করে দেয়, তবে সে (অপরের অংশের) যামিন হবে।

৪১৮৫.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) সূত্রে হাদীসটি একই সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, যদি কেউ কোন গোলামের এক অংশ আযাদ করল, সে স্বাধীন হবে তার মাল থেকেই। (অর্থাৎ নিজ দায়িত্বে স্বীয় সম্পদ দ্বারা তাকে সম্পূর্ণ আজাদ করে দেয়া তার কর্তব্য)।

৪১৮৬.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (যৌথ মালিকানার) কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করল, তবে তার মাল থেকেই তাকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেওয়া কর্তব্য, যদি তার সম্পদ থাকে। আর যদি তার সম্পদ না থাকে তবে (পূর্ণ মুক্ত হওয়ার জন্য) গোলামকে সে (তার অবশিষ্ট মূল্য পরিমাণ) শ্রম করানো হবে। (এবং মূল্য পরিশোধ হলে সে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে), তবে তার উপর কোন কঠোরতা আরোপ করতে পারবে না।

৪১৮৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... ইবনু আবূ আরূবা (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর ঈসা (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে "এরপর যে অংশ আযাদ করেনি শ্রম দ্বারা সে চেষ্টা করবে, কিন্তু তার উপর কোন কঠোরতা আরোপ করা যাবে না" বর্ণিত রয়েছে।

৪১৮৮.    আলী ইবনু হুজর সা’দী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে নিজের ছয়জন গোলামকে আযাদ করল অথচ তারা ব্যতীত তার আর কোন সম্পদও ছিল না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকালেন এবং তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করলেন। তারপর তাদের মাঝে লটারী করে দু'জনকে (সম্পৃর্ণভাবে) আযাদ করলেন এবং বাকী চারজনকে গোলাম বানিয়ে রাখলেন। আর তার সম্পর্কে (মৃতের প্রতি) কঠোর ভাষা প্রয়োগ করলেন।

৪১৮৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আইউব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর হাম্মাদ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসটি ইবনু উলাইয়া (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। আর সাকাফী (রহঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, “আনসারী এক লোক তাঁর মৃত্যুকালে ওয়াসিয়াত করলেন এবং (সে ওয়াসিয়াতে) তাঁর ছয়জন গোলামকে আযাদ করলেন”।

৪১৯০.    মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল দারীর ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) উভয়ে ... ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) সূত্রে নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু উলাইয়া (রহঃ) ও হাম্মাদ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. মুদাব্বার গোলাম বিক্রি করা বৈধ


৪১৯১.    আবূ রাবী সূলায়মান ইবনু দাউদ আতাকী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আনসারী একজন লোক তাঁর গোলামকে এই শর্তে আযাদ করল যে, তুমি আমার মৃত্যুর পর স্বাধীন। সে গোলাম ব্যতিত তার আর কোন সম্পদও ছিলনা। এই সংবাদ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছল। তখন তিনি বললেনঃ কে আছ যে, তাকে আমার নিকট হতে ক্রয় করবে। তখন নু'আয়ম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আটশ দিরহামের বিনিময়ে তাকে ক্রয় করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ অর্থ আনসারীকে দিয়ে দিলেন। আমর (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, সে ছিল একজন কিবতী গোলাম। সে (আবদুল্লাহ ইবনু যুবাহার (রাঃ) এর খিলাফতের) প্রথম বছর মৃত্যুবরণ করেছে।

৪১৯২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আনসারী এক লোক তার গোলামকে এই বলে আযাদ করল যে, আমার মৃত্যুর পর তুমি স্বাধীন। কিন্তু সে গোলাম ব্যতীত তার আর কোন সম্পদ ছিস না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিক্রি করলেন। জাবির (রাঃ) বলেন যে, ইবনু নাহহাম (রাঃ) তাকে ক্রয় করলো। সে ছিল একজন কিবতি গোলাম। ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর খিলাফত কালের প্রথম বছর সে ইন্তেকাল করে।

৪১৯৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে “মুদাব্বার” সম্পর্কে হাম্মাদ (রহঃ) কর্তৃক আমর ইবনু দ্বীনারের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৯৪.    কুতায়বা, আবদুল্লাহ ইবনু হাশেম ও আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) সকলই-নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাম্মাদ (রহঃ) এবং ইবনু উয়ায়না (রাঃ) কর্তৃক আমর (রাঃ) ও জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

No comments:

Powered by Blogger.