Breaking News
recent

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৬ষ্ট খন্ড, অধ্যায়ঃ কাসামা






পরিচ্ছেদঃ ১. 'কাসামা' - খুনের ব্যাপারে হলফ করা


৪১৯৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবন আবু হাসমা ও রাফি ইবনু খাদীজ থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ইবন যায়দ (রাঃ) মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) বাড়ী থেকে বের হয়ে খায়বার পর্যন্ত এলেন। এরপর সেখান থেকে উভয়েই পৃথক হয়ে গেলন। তারপর হঠাৎ মুহায়্যিাসা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সাহলকে একস্থানে নিহত অবস্থায় পেলেন। তখন তিনি তাঁকে দাফন করলেন। এরপর তিনি এবং হুওয়ায়্যিসা ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও আবদুর রহমান ইবনু সাহল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করলেন। আর তিনি হিলেন দলের সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি। আবদুর রহমান (রাঃ) তার উভয় সাথীর আগে কথা বলতে উদ্যত হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমাদের মধ্যে যে (ব্যক্তি বয়সে বড়) তাকে কথা বলতে দাও। সুতরাং তিনি চুপ করে গেলেন এবং তার সঙ্গীদ্বয় কথা বললেন। আর তিনিও (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের দুজনের সাথে কথা বললেন। 

তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) এর নিহত হবার সম্পর্কে আলোচনা করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তোমরা কি এ ব্যাপারে পঞ্চাশবার হলফ (শপখ) করতে পারবে? তা হলে তোমরা তোমাদের প্রতিপক্ষ অথবা হত্যাকারীর রক্তের অধিকার (কিসাস অথবা দিয়্যাত) দাবী করতে পারবে। প্রতি উত্তরে তারা বলল, আমরা কিভাবে এ ব্যাপারে হলফ (শপথ) করবো? আমরাতো সেখানে তখন উপস্থিত ছিলাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তাহলে ইয়াহুদীরা পঞ্চাশবার হলফ করে তোমাদের দাবী থেকে দায়মুক্ত হবে। তাঁরা তখন বলল, আমরা কিভাবে কাফির সম্প্রদায়ের হলফ গ্রহণ করে নেব? (তারা তো মিথ্যা কসম করবে)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঐ অবস্থা অবলোকন করলেন, তখন তার 'দিয়্যাত' দিয়ে দিলেন।

৪১৯৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার কাওয়ারিরী (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা এবং রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) উভয়েই খায়বারের দিকে গমন করলেন। তারা সেখানের এক খেজুর বাগানে (কাজের জন্য) পৃথক হয়ে গেলন। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) তথায় নিহত হলেন। (এই খুনের জন্য) তারা ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে অভিযুক্ত করলেন। এরপর তার ভাই আবদুর রহমান এবং চাচাত ভাই হুওয়ায়্যিসা ও মুহায়্যিসা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমন করলেন। আবদুর রহমান (রাঃ) তার ভাই এর ব্যাপারে কথা শুরু করলেন। আর তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বায়োজেষ্ঠকে কথা বলতে দাও। অথবা বললেন, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরই কথা শুরু করা উচিত। 

তখন তাঁরা দুজন তাদের সাথীর ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের কোন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে পঞ্চাশ বার হলফ করে বলতে হবে, তাহলে তার দিয়্যাত প্রদান করা হবে। তখন তারা বলল, ব্যাপারটি এমন যে, আমরা তথায় তখন উপস্থিত ছিলাম না। এমতবস্থায় আমরা কিভাবে হলফ করে বলবো? 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে হয় ইহুদিদের মধ্য থেকে কেউ পঞ্চাশ বার হলফ করে দায়মুক্ত হবে (তোমাদর খুনের দাবী নাকোচ করে দেবে)। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! তারা তো কাফির সম্প্রদায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে তার "দিয়্যাত" আদায় করে দিলেন। 

সাহল (রাঃ) বলেন, এরপর একদা আমি তাদের উট রাখার আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। তখন ঐ উটের মধ্য হতে একটি উটনী আমাকে তার পা দ্বারা লাথি মারল। হাম্মাদ (রহঃ) এই হাদীস বর্ণনা করেছেন- অথবা এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৪১৯৭.    আল-কাওয়ারিরী (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। আর তিনি فَعَقَلَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ عِنْدِهِ (তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে তার "দিয়্যাত" আদায় করে দেন) এই কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর বর্ণিত হাদীসে فَرَكَضَتْنِي نَاقَةٌ (উটনী আমাকে লাথি মারল) একথা বলেন নি।

৪১৯৮.    আমর আন নাকিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে তাঁদের অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেন।

৪১৯৯.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) ... বুশায়র ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আনসারী বনূ হারিসা গোত্রের আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ইবনু যায়িদ আনসারী ও মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়িদ আনসারী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে খায়বারে গমন করেন। সেখানকার অধিবাসী ছিল ইয়াহুদী সম্প্রদায়। খায়বার তখন (ইয়াহুদী ও মুসলমানদের) আপোষ চুক্তির অধিন ছিল। কোন প্রয়োজনে তারা তখন সেখানে পৃথক হয়ে গেলেন। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) নিহত হলেন। তাকে একটি হাউযের মধ্যে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। তখন তাঁর সাথী তাকে দাফন করলেন। এরপর তিনি মদিনায় ফিরে এলেন। নিহত ব্যক্তির ভাই আবদুর রহমান ইবনু সাহল, (এবং চাচাত ভাই) মুহায়্যিসা ও হুওয়ায়্যিসা (রাঃ) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর মৃত্যুর ঘটনা এবং যে স্থানে নিহত হন সবই বর্ণনা করলেন। 

বুশাইর (রহঃ) বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্য হতে যাদের সাক্ষাত পেয়েছেন এমন ব্যক্তির নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তোমরা এ ব্যাপারে পঞ্চাশবার হলফ করে বলবে, তাহলে তোমরা তোমাদের (ভাইয়ের) হত্যাকারীর (অথবা তোমাদের প্রতিপক্ষের শাস্তির) হকদার হবে। তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো তখন সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম না এবং উপস্থিতও ছিলাম না। তিনি (বুশায়র) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা পঞ্চাশবার এ ব্যাপারে হলফ করে তোমাদের থেকে দায়মুক্ত (তোমাদের খুনের দাবী) নাকচ করে দেবে। তখন তারা বললেনঃ, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কিভাবে একটি কাফের সম্প্রদায়ের হলফ গ্রহণ করতে পারি? বুশায়রা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের পক্ষ হতে তার দিয়্যাত আদায় করেদিয়েছেন।

৪২০০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... বুশায়র ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হারিসা গোত্রের এক আনসারী ব্যক্তি যাকে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ইবনু যায়িদ নামে ডাকা হতো, সে এবং তার এক চাচাতো ভাই যাকে মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়িদ নামে ডাকা হতো ... এর পরবর্তী হাদীসের অংশটুকু লাইস (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তার হাদীসের শেষকথাঃ فَوَدَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ عِنْدِهِ (তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে তার দিয়্যাত আদায় করেছেন) পর্যন্ত বর্ণনা করেন। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমার নিকট বুশায়র ইবনু ইয়াসা (রহঃ) বর্ননা করেছেন, তিনি বলেন, সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, "নিশ্চয় ফরয হিসেবে আদায়কৃত ঐ সমস্ত "দিয়্যাতের" আস্তাবলে একটি উটনী আমাকে লাথি মেরেছিল।"

৪২০১.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাদের মধ্য হতে একদল লোক খায়বারের দিকে গমন করল। এরপর তারা সেখান পৃথক হয়ে গেল। তারপর তারা তাদের একজনকে নিহত অবস্থায় পেল। এভাবে হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ননা করেন। 

বর্ণনাকারী বলেন যে, এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুনের বদলা (দিয়্যাত) বাতিল করে দেওয়াকে অপছন্দ মনে করলেন। অতএব, তিনি সাদাকার উট থেকে একশ উট 'দিয়্যাত' হিসেবে প্রদান করলেন।

৪২০২.    ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অন্তর্গত আবদুল্লাহ ইবনু সাহল এবং মুহায়্যিসা (রাঃ) অনটনগ্রস্ত হয়ে খায়বারের দিকে গমন করলেন। এরপর জনৈক ব্যক্তি মুহায়্যিসা (রাঃ) এর নিকট এসে খবর দিল যে, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) নিহত হয়েছেন এবং তাকে একটি পস্রবণ অথবা পরিত্যক্ত কূপের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে। সুতরাং তিনি সেখানকার ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তোমরা তাকে হত্যা করেছ। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তাঁকে হত্যা করিনি। এরপর তিনি তার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে এলেন এবং তাদের কাছে ঐ ঘটনা বর্ননা করলেন। 

পরিশেষে তিনি এবং তার বড় ভাই হুওয়ায়্যিসা ও আবদুর রহমান ইবনু সাহল (রাঃ) (নাবীজীর কাছে) আগমন করলেন। এরপর মুহায়্যিসা (রাঃ) কথা বলাতে উদ্যত হলেন, যিনি (নিহত ব্যক্তির সঙ্গে) খায়বারে ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহায়্যিসা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেন, বড় জন! বড় জন! (অর্থাৎ বয়স্ক ব্যক্তির কথা বলা চাই)। তখন হুওয়ায়্যিসা (রাঃ) কথাবার্তা বললেন, এরপর মুহায়্যিসা (রাঃ) বললেন। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হয়ত তারা তোমাদের সাথীর খুনের বদলা (দিয়্যাত) আদায় করে দিবে নতুবা যুদ্ধের জন্য তৈরি হবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে ঐ ব্যাপারে পত্র লিখলেন। তারা লিখল যে, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমরা তাকে হত্যা করিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুওয়ায়্যিসা, মুহায়্যিসা এবং আবদুর রহমান (রাঃ) কে বললেন, তোমরা কি এ ব্যাপারে হলফ করে তোমাদের প্রতিপক্ষের (খুনের) হকদার হবে? তাবা বলল, না। 

তখন তিনি বললেনঃ তাহলে ইয়াহুদীরা তোমাদের কাছে হলফ করবে। তারা তখন বলল, তারা তো (ইয়াহুদী) মুসলমান নয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে তার “দিয়্যাত” (খুনের বদলা) আদায় করে দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের একশ উটনী পাঠিয়ে দিলেন এবং ঐগুলো তাদের বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দেয়া হল। সাহল (রাঃ) বলেন, ঐগুলোর মধ্য হতে একটি লাল রংগের উটনী আমাকে লাথি মেরেছিল।

৪২০৩.    আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন আনসারী সাহাবার নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কাসামা’ (قَسَامَةَ) (খুনের ব্যাপারে হলফ করে বলা) যা জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল তা (পুর্বের ন্যায়) বলবৎ রেখেছেন।

৪২০৪.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু শিহাব থেকে একই সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং এ কথা অধিক বর্ণনা করেছেন যেঃ وَقَضَى بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ نَاسٍ مِنَ الأَنْصَارِ فِي قَتِيلٍ ادَّعَوْهُ عَلَى الْيَهُودِ (এবং রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা আনসারী লোকদের একজন নিহত ব্যক্তির ব্যাপারে নিষ্পত্তি করেছিলেন, (যার হত্যার) তারা ইয়াহুদীদের উপর দাবী উত্থাপন করেছিল।)

৪২০৫.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... কতিপয় আনসারী লোকদের সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু জুরাইজ এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২. শত্রু সৈন্য এবং মুরতাদের বিচার


৪২০৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, "উরায়না" গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক মদিনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। (সেখানের আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায়) তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তোমরা ইচ্ছে করলে ঐ সব সাদাকার উটের কাছে গমন করতে পার এবং তার দুধ পান করতে পার ও মূত্র (ব্যবহার করতে পার)। তারা তাই করল এবং এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল। এরপর তারা রাখালদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাদেরকে হত্যা করল। পরিশেষে তারা ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাল সম্পদ নিয়ে পলায়ন করল। 

এই সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছল। তখন তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তারা তাদেরকে পাকড়াও করল। এরপর (আদেশক্রমে) তাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং তাদের চোখ উপড়ে ফেললেন এবং তাদেরকে রোদের মধ্যে ফেলে রাখলেন। এভাবে তারা মারা গেল।

৪২০৭.    আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আট জনের একটি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। অতঃপর তারা ইসলামের ওপর বাইআত গ্রহণ করল। কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায় তাদের শরীর অসুস্থ হায় গেল। তখন তারা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে-গমন করে উটের মূত্র ব্যবহার এবং দুধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী হ্যাঁ। এরপর বের হয়ে গেল এবং তার মূত্র ব্যবহার ও দুধ পান করল। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল। 

অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেল। এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাঁরা ধরা পড়ল এবং তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের প্রতি আদেশ জারি করা হল এবং তাদের হাত-পা কর্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলো। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল। ইবন সাব্বাহ (রহঃ) ... এর বর্ণনা وَطَرَدُوا الإِبِل এর স্থলে وَاطَّرَدُوا النَّعَمَ উল্লেখ রয়েছে এবং তার বর্ণনায় وَسُمِّرَتْ أَعْيُنُهُمْ রয়েছে।

৪২০৮.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট “উকল” অথবা “উবায়না” সম্প্রদায়ের একদল লোক এল। মদিনার আবহাওয়া তাদের (বসবাসের) জন্য অনুপযোগী হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে “লিকাহর” (দুগ্ধবতী উটনীর) ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে আরো নির্দেশ দিলেন এর মূত্র ও দুধ পান করার জন্য। 

এই হাদীসটি হাজ্জাজ ইবনু আবূ উসমানের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণিত হয়েছে। এতে রাবী বলেন যে, এবং তাদের চোখগুলো উপড়ে ফেলা হল ও তাদের রৌদ্রে নিক্ষিপ করা হল। তারা পানি (পান করতে) চাইল, কিন্তু তাদেরকে পানি পান করানো হল না।

৪২০৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) আহমাদ ইবনু উসমান নাওফিলী (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) এর পিছনে বসা ছিলাম। তিনি জনগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা "কাসামাহ" (খুনের ব্যাপারে হলফ করা) সম্পর্কে কি বল? আম্বাসাহ (রহঃ) বললেনঃ আমাদের কাছে আনাস ইরন মালিক (রাঃ) (এ বিষয়ে) এমন এমন হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি বললাম, আনাস (রাঃ) বিশেষ করে আমাকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একদল লোক আগমন করল। এরপর আনাস আইউব এবং হাজ্জাজ এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। 

আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেনঃ, আমি যখন (হাদীসের বর্ণনা) শেষ করলাম, তখন আম্বাসাহ (রহঃ) সুবহানাল্লাহ বললেনঃ। (অর্থাৎ আশ্চর্যান্বিত হলেন।) আবূ কিলাবা (রহঃ) বর্ণনা করে বলেন, আমি তখন বললাম, হে আম্বাসাহ! আপনি কি আমাকে (মিথ্যার ব্যাপারটি) সন্দেহ করছেন? তখন তিনি বললেন, না। আমার কাছে আনাস (রাঃ) এরূপেই হাদীস বর্ণনা করেছেন। হে সিরিয়াবাসী! তোমরা সর্বদাই কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তোমাদের মাঝে এই লোক বিদ্যমান থাকবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তার মত লোক তোমাদের মাঝে অবস্থান করবেন। (অর্থাৎ এ দ্বারা তিনি আবূ কিলাবা (রহঃ) এর প্রশংসা করলেন।)

৪২১০.    হাসান ইবনু আবূ শু'আয়ব হাররানী, আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ‘উকল’ সম্প্রদায়ের আটজন লোক এল ...... এরপর তিনি পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তার বর্ণিত হাদীসে তিনি শুধু وَلَمْ يَحْسِمْهُمْ (রক্ত বন্ধ করার জন্য) “তাদেরকে তিনি দাগ দেননি” এই কথাটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।

৪২১১.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উরায়না’ গোত্রের একদল লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। এরপর তারা ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাঁর কাছে বায়আত গ্রহন করল। মদিনায় তখন 'মূম' রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটল। (الْمُومُ হল ব্যাধি الْبِرْسَامُ মস্তিষ্কের রোগ, কিংবা হার্টের রোগ অথবা উদুরী রোগ।) এরপর তিনি উল্লিখিত হাদীসের বর্ননাকারীদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। 

তবে তার বর্ণনায় অধিক আছে যে, তার কাছে তখন বিশজনের মত আনসারী যুবক ছিল। তাদেরকে তিনি ওদের উদ্দেশ্যে প্রেরন করলেন এবং তাদের সঙ্গে একজন 'কাইফ' (পদচিহ্ন বিশারদ এমন অভিজ্ঞ লোক) প্রেরণ করলেন। যিনি তাদের পদচিহ্ন দেখে গন্তব্য স্থল নির্ণয়ে সক্ষম।

৪২১২.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ, ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হাম্মাম এর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, উরায়না গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। আর সাঈদ এর হাদীসে ‘উকল’ এবং 'উরায়না' এর কথা উল্লেখ আছে। এরপর তিনি উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

৪২১৩.    ফাযল ইবনু সাহল আ'রাজ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ লোকদের চোখে গরম লোহা ঢুকিয়ে দেন। কেননা তারা রাখালদের চোখে গরম লোহা ঢুকিয়ে দিয়েছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩. পাথর ও অন্যান্য ধারাল ও ভারী বস্তু দ্বারা হত্যা করার দায়ে 'কিসাস' সাব্যস্ত হওয়া এবং নারীর বিনিময়ে (হত্যাকারী) পুরুষকে হত্যার বিধান


৪২১৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা এক ইয়াহুদী একটি মেয়েকে (কয়েকটি রূপার টুকরা অর্থাৎ) রূপার গহনার জন্য হত্যা করল। সে তাকে হত্যা করেছিল পাথর দ্বারা। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তাকে এমন অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনা হল যে, তখনও তার জীবন অবশিষ্ট ছিল। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাকে কি অমুক ব্যক্তি মেয়েছে? সে তখন মাথা নেড়ে উত্তর দিল, না। এরপর তিনি তাকে দ্বিতীয়বার (আর একজন সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলেন, তখনও সে মাথা নেড়ে উত্তর দিল, না। আবার তিনি তাকে তৃতীয়বার (আর একজন সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলেন, তখন সে হ্যাঁ বলল এবং মাথা নেড়ে উত্তর দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াহুদীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে খুন করার কথা স্বীকার করল তখন) তাকে আদেশক্রমে দু'পাথরের মাঝে আঘাত করে হত্যা করলেন।

৪২১৫.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী ও আবূ কুরায়র (রহঃ) ... শু’বা (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আর ইবনু ইদরীসের বর্ণিত হাদীসে উল্লেথ আছে যে, فَرَضَخَ رَأْسَهُ بَيْنَ حَجَرَيْنِ (তখন তিনি তার মাথা দু'পাথরের মাঝে রেখেচূর্ণ করে দিলেন)।

strong>৪২১৬.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ইয়াহুদী ব্যাক্তি কোন এক আনাসারী মেয়েকে তার গহনার জন্য হত্যা করল। এরপর তাকে একটি কূপে ফেলে দিল এবং তার মাথায় পাথর দ্বারা আঘাত করল। এরপর তাকে পাকড়াও করা হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনা হল। তিনি নির্দেশ দিলেন, তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করার জন্য, যতক্ষন না তার মৃত্যু হয়। তখন তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা হল। অবশেষে সে মারা গেল।

৪২১৭.    ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আইউব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

৪২১৮.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একদা এক কিশোরীকে এমন অবস্থায় পাওয়া গেল যে, তার মাথা দু'পাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। তখন তারা (পরিবারের লোকেরা) তাকে জিজ্ঞাসা করল, কে তোমাকে এমন করেছে, অমুক-অমূক ব্যক্তি? এভাবে (জিজ্ঞাসা করতে করতে) তারা এক ইয়াহুদীর নাম উল্লেখ করল। তখন সে মাথা নেড়ে (হ্যাঁ-সূচক) উত্তর দিল। তখন ইয়াহুদীকে পাকাড়াও করা হল। সে তা স্বীকার করল। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথা পাথর দ্বারা চূর্ণ করার আদেশ দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪. কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির জীবন অথবা অঙ্গের উপর আক্রমন করলে, তখন যদি আক্রান্ত ব্যক্তি তা প্রতিহত করার সময় যদি আক্রমনকারীর জীবন অথবা অঙ্গের ক্ষতি সাধন করে, তবে তাকে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না


৪২১৯.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ালা ইবনু মুনইয়া অথবা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হল। তখন একজন অপর জনের হাতে দাঁত দিয়ে কামড় দিল। সে যখন তার হাত তার মুখ থেকে সজোরে টেনে আনল তখন তার সামনের একটি দাঁত উপড়ে ফেলল। ইবনু মুসান্না (একটি স্থলে) দু'টি দাঁত বলেছেন। উভয়েই তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে নালিশ করল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কেউ অন্য কাউকে এমনভাবে কামড় দেয় যেমনভাবে উটে কামড়ে দেয়? তবে এর জন্য কোন (দিয়্যাত) ক্ষতিপূরণ নাই।

৪২২০.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু ইয়ালা (রহঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪২২১.    আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যাক্তির হাতে কামড়ে ধরল। তখন সে সজোরে তার হাত টেনে নিল। এতে সে ব্যক্তির দাঁত পড়ে গেল। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মুকাদ্দমা দায়ের করা হল। তখন তিনি তা নাকচ করে দেন এবং বলেন, তুমি তার গোশত খেতে চেয়েছিলে?

৪২২২.    আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) ... সাফওয়ান ইবনু ইয়া'লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ালা ইবনু মুনইয়া (রাঃ) এর এক শ্রমিকের হাত জনৈক ব্যাক্তি কামড়ে ধরল। তখন সে সজোরে তার হাত টেনে নিল। এতে সে ব্যক্তির দাঁত পড়ে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ ব্যাপারে মুকাদ্দমা দায়ের করা হল। তখন তিনি তা নাকচ করে দিলেন এবং বললেন যে, তুমি তো তার হাত এমনভাবে কামড়াতে চেয়েছিলে যেমনভাবে উট কামড়ায়।

৪২২৩.    আহমাদ ইবনু উসমান নাওফেলী (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি অপর এক ব্যক্তির হাতে কামড়ে ধরল। সে তখন তার হাত সজোরে টেনে নিল। এতে তার একটি দাঁত অথবা দুটি দাঁত পড়ে গেল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ ব্যাপারে নালিশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আমার কাছে কি চাও? তুমি কি চাও যে, আমি তাকে আদেশ করবো যে, তার হাত তোমার মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেবে, আর তুমি তা কামড়াবে? যেমন উট কামড়ে থাকে। (তুমি ইচ্ছে করলে) তোমার হাত তার মুখের মধ্যে প্রবেশ কয়িয়ে দাও, সে তখন তা কামড়াবে, এরপর তুমিও তা সজোরে টেনে নিও।

৪২২৪.    শায়বান ইবনুু ফাররুখ (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু মুনইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন এক ব্যক্তি এলে (এসে নালিশ করল-) যে অপর এক ব্যক্তির হাতে কামড় দিয়েছিল। সে যখন তার হাত সজোরে টেনে নিল। এতে তার দুটি দাঁত পড়ে গেল। (অর্থাৎ যে ব্যক্তি দাঁত দ্বারা কামড় দিয়েছিল তার দাঁত পড়ে গেল।) বর্ণনাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এই অভিযোগ নাকচ করলেন এবং বললেনঃ তুমি তার হাত এমনভাবে কামড়াতে চেয়েছিলে যেমন উট কামড়ায়।

৪২২৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাবুকের যুদ্ধ করেছি। বর্ননাকারী বলেন, ইয়ালা বলতেন, ঐ যুদ্ধ আমার নিকট সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য (পূণ্যের) কাজ ছিল। আতা (রহঃ) বলেন, সাফওয়ান (রহঃ) বলেছেন যে, ইয়ালা (রাঃ) বলেছেন, আমার একজন শ্রমিক ছিল সে এবং অপর এক ব্যক্তি পরস্পর সংঘর্যে লিপ্ত হল। এতে একজন অপরজনের হাতে কামড় দিল। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের দু'জনের মধ্যে কে অন্যের হাতে কামড় দিয়েছিল তা সাফওয়ান (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, যে ব্যক্তির হাতে কামড় দিয়েছিল সে ব্যক্তি কামড় দাতার মুখ থেকে তার হাত সজোরে টেনে নিল। এতে তার একটি বা দু'টি দাঁত পড়ে গেল। তখন উভয়েই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে অভিযোগ পেশ করল, তখন তিনি তার দাঁতের দাবী নাকচ করে দিলেন।

৪২২৬.    আমার ইবনু যুরারা (রহঃ) ... ইবনু জুরাইজ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫. দাঁত এবং এর অনুরূপ ব্যাপারে 'কিসাস' আরোপ করা


৪২২৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রুবায়্যি (রাঃ) এর ভগ্নি হারিসার মাতা জনৈক ব্যক্তিকে আহত করল। এ ব্যাপারে তারা (তার আত্নীয়য়েরা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নালিশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল কিসাস! আল কিসাস! (অর্থাৎ এতে কিসাস আরোপিত হবে।) তখন বুবায়্যি এর মা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! অমুকের (উম্মে হারিসার) নিকট হতে কি কিসাস নেয়া হবে? আল্লাহর কসম! তাঁর নিকট হতে কিসাস না নেয়া হবে না। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! (অর্থাৎ আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেন) হে রুবায়্যির মা! কিসাস নেয়া তো আল্লাহর কিতাবের বিধান। তিনি বললেন, জী না। আল্লাহর শপথ নিয়ে আরয করছি, তার নিকট হতে কখনও কিসাস (বদলা) নেয়া হবে না। 

বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বারবার একথা বলতে ছিলেন। পরিশেষে আহত তারা (প্রতিপক্ষ) দিয়্যাত (ক্ষতিপূরণ) নিতে সম্মত হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর বান্দাগণের মখ্যে এমনও লোক আছেন, যদি সে আল্লাহর নামে শপথ করে কোন কথা বলে তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে সত্যে পরিণত করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৬. মুসলমানের হত্যা কি কারণে বৈধ হয়


৪২২৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন মুসলমানের রক্ত (হত্যা করা) বৈধ নয়, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। কিন্তু তিনটি কাজের যে কোন একটি করলে (তা বৈধ)। 

১। বিবাহিত ব্যক্তি ব্যাভিচারে লিপ্ত হলে; 

২। জীবনের বিনিময়ে জীবন, অর্থাৎ কাউকে খুন করলে; 

৩। এবং স্বীয় ধর্ম পরিত্যাগ কারী যে (মুসলমানদের) দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

৪২২৯.    ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমার, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৩০.    আহমাদ ইবনু হাম্বল ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ সে সত্তার কসম যিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই; এমন কোন মুসলিম ব্যক্তির রক্ত (হত্যা করা) বৈধ নয়, যে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। কিন্তু তিন প্রকার ব্যক্তি ব্যতীত- 

১. যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে এবং মুসলমানদের দল পরিত্যাগকারী হয়। (আহমাদ (রহঃ) الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ অথবা الْجَمَاعَةَ শব্দ বর্ণনায় সন্দেহ করেছেন) 

২. বিবাহিত ব্যভিচারী এবং 

৩. জীবনের বিনিময়ে জীবন। (অর্থাৎ কিসাস গ্রহন) আ'মাশ (রহঃ) বলেন যে, আমি ইবরাহীমের নিকট হাদীসটি বর্ণনা করলাম, তিনিও আসওয়াদ (রহঃ) এর সূত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

৪২৩১.    হাজ্জাজ ইবনু শা'য়র ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) ... আ'মাশ থেকে উভয় সনদে সুফিয়ান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার বর্ণিত হাদীসে وَالَّذِي لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ (সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন মা'বুদ নেই) এ কথার উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ৭. যে ব্যক্তি (সর্বপ্রথম) খুনের প্রচলন ঘটাল-তার গুনাহর বর্ণনা


৪২৩২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন ব্যাক্তি অত্যাচারিত হয়ে নিহত হয়, তবে সেই খুনের একাংশ (পাপ) আদম (আলাইহিস সালাম) এর প্রথম পূত্র (কাবিল) এর উপর বর্তায়। কেননা, সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল।

৪২৩৩.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে জারীর এবং ইসহাক (রহঃ) এর হাদীসে لأَنَّهُ سَنَّ الْقَتْلَ (কেননা সে খুনের প্রথা প্রচলন করেছে) এই কথার উল্লেখ আছে। কিন্তু أَوَّلَ "প্রথম" কথাটির উল্লেখ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৮. আখিরাতে খুনের শাস্তি কিয়ামত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্ব প্রথম এরই বিচার করা হবে


৪২৩৪.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে।

৪২৩৫.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব, বিশর ইবনু খালিদ, ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তাদের কেউ কেউ শু'বা (রহঃ) থেকে يُقْضَى (বিচার করা হবে) কথাটি বর্ণনা করেছেন। আর কেউ কেউ يُحْكَمُ بَيْنَ النَّاسِ (মানুষের মাঝে বিচার করা হবে) বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৯. রক্ত (জীবন) মান সম্ভ্রম এবং মালের হক বিনষ্ট করা হারাম হওয়ার ব্যপারে কঠোর হুশিয়ারী


৪২৩৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সময় অতিবাহিত হয়ে যথাযথ অবস্থায় ফিরে এসেছে, যে অবস্থায় আল্লাহ তাআলা আকাশসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। বছর হয় বার মাসে, তম্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ (পবিত্র) মাস। এর তিন মাস হল ক্রমাগত- ১. যুলকাদা, ২. যুলহিজ্জাহ এবং ৩. মুহাররাম। আর রজব মুযার গোত্রের (বিশেষ) মাস (নিষিদ্ধ মাস) যা জামাদিউস সানী এবং শা'বানের মাঝে অবস্থিত। এরপর তিনি বললেনঃ এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত। 

বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। আমরা ভাবলাম যে, তিনি হয়ত এই মাসের নতুন কোন নামকরণ করবেন। এরপর তিনি বলেলেনঃ এ কি “যিলহাজ্জ” মাস নয়? আমরা বললাম, জী- হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত আছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এতে আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়ত এর অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেনঃ এ কি (মক্কা) নগরী নয়? আমরা বললাম, জী-হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ কোন দিন? আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এতে আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়ত এর অন্য কোন নাম বলবেন। তিনি বললেনঃ এ কি ইয়াওমুন্নাহারা (কুরবানীর দিন) নয়? আমরা বললামঃ জী-হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেনঃ তোমাদের জান ও মাল এবং (রাবী মুহাম্মাদ বলেন, আমি ধারণা করি এর সাথে তিনি) তোমাদের মান সম্ভ্রম (একথা যুক্ত করে বললেনঃ) এগুলো তেমন মর্যদাপূর্ণ (ও পবিত্র) যেমন তোমাদের কাছে আজকার দিবস, এই নগর এবং এই মাস মর্যাদাপূর্ণ (ও পবিত্র)। 

তোমরা অতি সত্তরই তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। তখন তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতএব, তোমরা আমার পরে কাফির (দের ন্যায়) হয়ে (অথবা তিনি বললেন পথভ্রষ্ট হয়ে) একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে দিয়ো না (খুনাখুনি কর না)। সাবধান! তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগন অবশ্যই অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে (আমার এই বাণী) পৌঁছে দিবে। সম্ভবতঃ যাদের কাছে আমার বাণী পৌছানো হবে- তাঁরা হয়ত এখানকার শ্রোতাদের চেয়ে অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে। এরপর তিনি বললেনঃ সাবধান! আমি কি (আল্লাহর নির্দেশ) পৌছে দেইনি? 

ইবনু হাবীব তাঁর বর্ণনায় وَرَجَبُ مُضَرَ (মুযার (গোত্রের) এর রজব মাস) রয়েছে। বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকরা এর অপর বর্ননায়ঃ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي (فلا ترجعف স্থলে) বর্ণিত হয়েছে।

৪২৩৭.    নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ঐদিন (ইয়াওমুন্নাহার) উপস্থিত হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উটের উপর আরোহন করলেন। এক ব্যক্তি তার উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান যে, আজ কোন দিন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়ত এর (প্রচলিত) নাম ব্যতীত অপর কোন নাম বলবেন। এরপর তিনি বললেনঃ (আজকের দিন কি) কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, জি-হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। 

তিনি বললেনঃ এটা কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ একি যিলহাজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, জী-হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ এ কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই অধিক জ্ঞাত। বর্ণনাকারী বলেন, এতে আমরা ধারনা করলাম যে, তিনি হয়ত এর অন্য কোন নাম বলবেন। এরপর বললেনঃ এ কি (মক্কা) নগরী নয়? আমরা বললাম, জী-হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! 

তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের জান-মাল এবং মান-সম্ভ্রম তোমাদের (পরস্পরের) উপর এরূপ মর্যাদাপূর্ণ (পবিত্র), যেরূপ তোমাদের জন্য আজকের দিন, এই মাস এবং এই নগরের পবিত্রতা ও মর্যাদা। তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগণ অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এ বানী অবশ্যই পৌছে দিবে। এরপর তিনি ছাই বর্ণের দু'টি দুম্বার প্রতি মনযোগী হলেন এবং সে দুটি যবেহ করলেন ও ছাগলের একটি পালের দিকে (মনযোগী হলেন) এবং সেগুলো আমাদের মাঝে বণ্টন করে দিলেন।

৪২৩৮.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সেই দিন (ইয়াওমুন্নাহারের দিন) উপস্থিত হল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের উপর উপবিষ্ট হলেন। রাবী বলেন, এক ব্যক্তি তার লাগাম ধরে রেখেছিল। (রাবীর সন্দেহ زمَام শব্দের পরিবর্তে خطَام শব্দ বলেছেন) এরপর তিনি ইয়াযিদ ইবনু যুরায় এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেন।

৪২৩৯.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন, মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'ইয়াওমুন্নাহার' (অর্থাৎ ঈদুল আযহার) দিন আমাদের সামনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণ বললেনঃ আজ কোন দিন। এরপর বর্ণনাকারীগণ, ইবনু আউনের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করছেন। কিন্তু তারা وَأَعْرَاضَكُمْ (তোমাদের মানসম্ভ্রম) এই শব্দটি উল্লেখ করেননি এবং ثُمَّ انْكَفَأَ إِلَى كَبْشَيْنِ (অতঃপর তিনি দু'টি ছাগলের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন) এবং এর পরবর্তী অংশটুকুও উল্লেখ করেন নি। আর তিনি তাঁর বর্ণিত হাদীসে 'তোমাদের এই দিন, এই মাস এবং এই শহারর পবিত্রতার ন্যায়' এর পরে يَوْمِ تَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا نَعَمْ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ اشْهَدْ (যেদিন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। সাবধান! আমি কি তোমাদের কাছে (আল্লাহর বানী) পৌছে দিয়েছি? তখন সকলেই বললো, হ্যাঁ, তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন) এভাবে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১০. হত্যার স্বীকারোক্তি করা এবং নিহত ব্যক্তির অভিভাবকদের কিসাসের দাবী করার অবকাশ। বৈধ হত্যাকারী কর্তৃক নিহত ব্যক্তির অভিভাবকের নিকট ক্ষমার আবেদন করা মুস্তাহাব


৪২৪০.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায আম্বারী (রহঃ) ... আলকামা ইবনু ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার পিতা তাঁকে বর্ণনা করেছেন, আমি একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসেছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে চামড়ার রশি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে আগমন করল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এই ব্যক্তি আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে হত্যা করেছ? (তখন সে বলল, যদি সে তা স্বীকার না করে, তবে আমি তার বিপক্ষে সাক্ষী দাঁড় করাব।) সে তখন বলল, হাঁ আমি তাকে হত্যা করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি তাকে কিভাবে হত্যা করেছ? সে বলল, আমি এবং সে বৃক্ষের পত্র সংগ্রহ করছিলাম। এমন সময় সে আমাকে গালি দিল। এতে আমার রাগ চড়ে গেল। তখন আমি কুঠার দ্বারা তার মাথায় আঘাত করলাম। এভাবে আমি তাকে হত্যা করেছি। 

তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার কি এমন কোন সস্পদ আছে যদ্বারা ‘দিয়্যাত’ (রক্তপণ) আদায় করতে পারবে। তখন সে বলল, আমার কাছে একটি কম্বল ও কুঠার ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা কি তোমাকে ক্রয় করবে (মুক্ত করিয়ে নেবে)? সে বলল, আমার সম্প্রদায়ের কাছে আমার এতখানি মর্যাদা নেই। তখন তিনি তার বন্ধনের দড়ি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের দিকে নিক্ষেপ করে দিলেন এবং বললেনঃ তোমার বিবাদীর ব্যাপারে তুমিই বুঝে নাও। সে তাকে নিয়ে চলল। যখন সে পিছনের দিকে ফিরল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে তাকে হত্যা করে- তবে সেও তার সমকক্ষ হয়ে গেল। এ কথা শুনে সে ফিরে এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি শুনলাম, আপনি বলেছেনঃ "যদি সে তাকে হত্যা করে তবে সে তার সমকক্ষ হয়ে যাবে।" আমি তো তাকে আপনার নির্দেশেই ধরেছি। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি চাওনা যে, সে তোমার এবং তোমার ভাইয়ের পাপের বোঝা গ্রহন করুক। তখন সে বলল, জী-হাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, তা এমনই। রাবী বলেন, তখন সে তার বন্ধনের দড়ি ছুড়ে ফেলল এবং তাকে মুক্ত করে দিল।

৪২৪১.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যক্তিকে হাযির করা হল, যে অপর এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। তখন তিনি নিহত ব্যক্তির অভিভাবককে তার কাছে হতে কিসাস গ্রহনের অনুমতি দিলেন। তখন সে তাকে নিয়ে চলল এমন অবস্থায় যে, তার গলায় একটি চামড়ার রশি ছিল, য দিয়ে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। যখন সে ফিরে যাচ্ছিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হত্যাকারীও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামী। 

বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন এক ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির সাথে গিয়ে মিলিত হল এবং তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বাণী জানাল। সে তখন হত্যাকারীকে ছেড়ে দিল। ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) বলেন, আমি এই ঘটনা হাবীব ইবনু সাবিত (রহঃ) এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমাকে ইবনু আশওয়া বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তাকে (ইতিপূর্বে) বলেছিলেন, কিন্তু সে তা অস্বীকার করেছিল।

পরিচ্ছেদঃ ১১. গর্ভের সন্তানের 'দিয়াত' এবং ভুলবশত হত্যা ও সাদৃশ্যপূর্ণ হত্যার ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত (রক্তপণ), অপরাধীর 'আকীলা' (আত্মীয়-স্বজনের) উপর সাব্যস্ত হওয়া সম্পর্কে


৪২৪২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হুযায়ল গোত্রের দু'জন মহিলা একে অপরের প্রতি কিছু পাথর নিক্ষেপ করল তাতে তার গর্ভপাত হয়ে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে (দন্ড স্বরূপ) একটি গোলাম অথবা একটি দাসী আযাদ করে দেওয়ার হুকুম দিলেন।

৪২৪৩.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিহইয়ান গোত্রের এক মহিলার গর্ভপাত ঘটিয়ে দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি একটি গোলাম অথবা একটি দাসী প্রদানের নির্দেশ দেন। এরপর যে মহিলার (বিপক্ষে) গোলাম প্রদানের ফয়সালা দিয়েছিলেন, সে মরে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায়সালা দিলেন যে, তার পবিত্যক্ত সম্পদ তার সন্তান ও স্বামী পাবে। আর দিয়াত প্রদানের হুকুম তার 'আসাবা' (সম্পর্কিত আত্মীয়) এর উপর আরোপিত হবে।

৪২৪৪.    আবূ তাহির হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজীবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হুযাইল গোত্রের দু'জন মহিলা পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে একজন অপরজনকে পাথর দ্বারা আঘাত করল। এর দ্বারা সে ঐ মহিলা ও তার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলল। তখন নিহত মহিলার ওয়ারিসগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে নালিশ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দিলেন যে, সন্তানের দিয়্যাত হল একটি দাস কিংবা দাসী প্রদান করা। নিহত মহিলার দিয়াত হত্যাকারী মহিলার 'আকীলা' (গোত্র সম্পর্কীয় আত্মীয়)-র উপর আরোপিত হবে। আর (নিহত) মহিলার সন্তান এবং যে সব লোক তার সঙ্গে রয়েছে তাদের মীরাসের অধিকার প্রদান করলেন। 

হামাল ইবনু নাবেগা আল-হুযালী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কিভাবে এর ক্ষতিপূরন প্রদান করবো, যে পান করেনি, খায়নি, কথা বলেনি এবং শব্দও করেনি? (সে তো এল আর গেল)। এ ধরনের বিষয় অকেজো (বাতিলযোগ্য)। এমন ছন্দযুক্ত বাক্য বলার কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ যেন গনকদের ভাই (দলভুক্ত)।

৪২৪৫.    আবদ ইবনু ইবনু হুমাইদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দু'জন মহিলা পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হল ...... এরপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। কিন্তু রাবী তাতে وَوَرَّثَهَا وَلَدَهَا وَمَنْ مَعَهُمْ (আর সন্তান ও তাদের সঙ্গীদের ওয়ারিছ সাব্যস্ত করলেন) এ কথা উল্লেখ করেননি। বরং তিনি উল্লেখ করেছেন, فَقَالَ قَائِلٌ كَيْفَ نَعْقِلُ (তখন কোন ব্যক্তি বলল, আমরা কিভারে এর ক্ষতিপূরণ দেব)? আর রাবী তার বর্ণনায় হামাল ইবনু মালিকের নাম উল্লেখ করেন নি।

৪২৪৬.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু'বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা তার সতীনকে তাবুর খুটি দ্বারা আঘাত করল। সে ছিল গর্ডবতী। (আঘাতকারী মহিলা আঘাত দিয়ে) তাকে মেরে ফেলল। বর্ণনাকারী বলেন যে, তাদের একজন ছিল লিহইয়ান গোত্রের মহিলা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারী মহিলার আসাবার ওপর নিহত মহিলার হত্যার (দিয়্যাত) রক্তপণ প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং গর্ভের সন্তানের জন্য একটি দাস (ক্ষতিপূরণ হিসেবে) প্রদানের হুকুম দিলেন। তখন হত্যাকারী মহিলারার গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বলল, আমরা এমনর শিশুর কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেব? যে খায়নি পান করেনি এবং কোন শব্দও করেনি। এ ধরনের বিষয় তো বাতিল যোগ্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে যেন বেদূঈনের মত ছন্দপূর্ণ বাক্যে কথা বলল। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাদের উপর (দিয়্যাত) ক্ষতিপূরণ সাব্যস্ত করলেন।

৪২৪৭.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু'বা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা তার সতীনকে তাবুর খুঁটি দিয়ে মেরে ফেলল। এই মুকদ্দমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দায়ের করা হল। তখন তিনি হত্যাকারী মহিলার 'আকিলা' (গোত্রের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়) এর উপর দিয়্যাত প্রদানের নির্দেশ দিলেন। নিহত মহিলাটি ছিল গর্ভবতী। অতএব, তিনি গর্ভের বাচ্চার জন্য (দিয়্যাত হিসেবে) একটি দাস প্রদানের আদেশ দিলেন। তখন তার (হত্যাকারীর) কোন আসাবা আত্মীয় (ছন্দ মিলিয়ে) বলল, আমরা দিয়াত দিব এমন সন্তানের যে খায়নি, পান করেনি এবং কোন শব্দও করেনি? এ ধরনের বিষয় বাতিলযোগ্য, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতো বেদুঈনদের ছন্দযুক্ত কথার মত একটি কথা।

৪২৪৮.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মানসুর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে জারীর এবং মুফাযযাল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৪৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মানসুর (রহঃ) থেকে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাতে এভাবে আছে ... এবং সে গর্ভপাত ঘটিয়েছিল। তখন এই ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থাপন করা হল। তিনি এতে একটি গোলাম (দিয়্যাত হিসেবে) প্রদানের জন্য হত্যাকারী মহিলার অভিভাবকের প্রতি নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তিনি তার বর্ণিত হাদীসে মহিলার দিয়াতের বিষয়টি উল্লেখ করেননি।

>৪২৫০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) জনগণের কাছে একবার (ملاَصِ الْمَرْأَة) মহিলার গর্ভের (অপূর্ণাঙ্গ) সন্তান হত্যার ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। তখন মুগীরা ইবনু শু'বা (রাঃ) বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একদা উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি এ অপরাধের কারণে একটি দাস অথবা দাসী প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। রাবী বলেন, তখন উমার (রাঃ) মুগীরা (রাঃ) কে বললেন, এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে সাক্ষ্য প্রদানকারী একজন লোক নিয়ে এসো। বর্ণনাকারী বলেন যে, তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলেন।

No comments:

Powered by Blogger.